শুরু হোক অগ্রযাত্রা
| ১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০
নির্বাচনে আশাতীত জয় পেয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। জোটমিত্রদের ছাড়া দলীয়ভাবেই একাদশ জাতীয় সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে আওয়ামী লীগ। এ অবস্থায় নির্বাচনী ইশতেহারে অঙ্গীকার করা প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংসদে কোনো প্রকার বাধার সম্মুখীন হতে হবে না তাদের। যে কোনো দেশে যে কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য রাজনৈতিক এবং জাতীয় উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এটি বিশাল সুযোগ। এ সুযোগ নবনির্বাচিত সরকার ইতিবাচকভাবে কাজে লাগাবে বলে আশা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রেখে উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিত করার দায়িত্বও সরকারের। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে নতুন সরকার সে পথে এগিয়ে যাক।
এর আগে ২০০৮ সালে তত্ত্ববাধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল আওয়ামী লীগ। সেবার দলটির নির্বাচনী ইশতেহারের শিরোনাম ছিল ‘দিনবদলের সনদ’। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ছিল ওই ইশতেহারের সবচেয়ে আলোচিত দুটি বিষয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনের ইশতেহার ছিল ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। আর এবারের ইশতেহার ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’। এবার অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে আগামী ৫ বছরে জিডিপি ১০ শতাংশে উন্নীত করা, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনকালে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা এবং ২০৩০ সালে মাথাপিছু আয় ৫ হাজার ৪৭৯ ডলারে উন্নীত করার অঙ্গীকার করেছে দলটি।
বিগত এক দশকের শাসনামলে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া পদ্মাসেতু প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর এবং রাজধানী ঢাকায় মেট্রোরেল প্রকল্পসহ অনেকগুলো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ এরইমধ্যে এগিয়ে চলেছে। সারা দেশে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলাসহ এমন আরো প্রকল্প নিয়ে জনগণের মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে সমালোচনা ও বিরোধিতাও রয়েছে। তবে, দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে এ ধরনের বৃহৎ প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া অর্থনৈতিক অগ্রগতি যেমন সম্ভব হয় না তেমনি সামাজিক অগ্রগতিও সাধিত হয় না। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গতিধারা সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন মন্তব্য করেছিলেন, বাংলাদেশের এখন অর্থনৈতিক অগ্রগতির পাশাপাশি মানবিক প্রগতি অর্জন করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এই কাজটি করতে হলে অবশ্যই সমাজের বিপুল অংশের মানুষের মধ্যে কতগুলো সাধারণ মূল্যবোধ এবং রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। এ জন্য সমাজে শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাকাঠামোর সংস্কার এবং সাংস্কৃতিক চেতনার মানোন্নয়নে ভবিষ্যৎ নাগরিকদের গড়ে তোলার সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যেতে হবে।
রাষ্ট্র ও সমাজে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি প্রতিষ্ঠা করা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা ছাড়া এমন সুদূরপ্রসারী লক্ষ্যগুলো অর্জন করা সম্ভব নয়। এজন্য জাতীয় সংসদ এবং দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহে গণতন্ত্রকে আরো সংহত করার বিষয়ে আগামী সরকারকে মনোযোগী হতে হবে। সরকার এবং নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ জনসেবা প্রদানকারী সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে জনগণের আরো আস্থায় আনার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
তিন বছর পর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের দিকে তাকিয়ে আমরা আশাবাদী হতে চাই যে, স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগের উদ্যোগেই, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দেশীয় দোসরদের মতোই, যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের বিচারের প্রক্রিয়া অচিরেই শুরু করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধ, মানবিক ও আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে।
শেয়ার করুন
| ১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০

নির্বাচনে আশাতীত জয় পেয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। জোটমিত্রদের ছাড়া দলীয়ভাবেই একাদশ জাতীয় সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে আওয়ামী লীগ। এ অবস্থায় নির্বাচনী ইশতেহারে অঙ্গীকার করা প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংসদে কোনো প্রকার বাধার সম্মুখীন হতে হবে না তাদের। যে কোনো দেশে যে কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য রাজনৈতিক এবং জাতীয় উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এটি বিশাল সুযোগ। এ সুযোগ নবনির্বাচিত সরকার ইতিবাচকভাবে কাজে লাগাবে বলে আশা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রেখে উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিত করার দায়িত্বও সরকারের। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে নতুন সরকার সে পথে এগিয়ে যাক।
এর আগে ২০০৮ সালে তত্ত্ববাধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল আওয়ামী লীগ। সেবার দলটির নির্বাচনী ইশতেহারের শিরোনাম ছিল ‘দিনবদলের সনদ’। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ছিল ওই ইশতেহারের সবচেয়ে আলোচিত দুটি বিষয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনের ইশতেহার ছিল ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। আর এবারের ইশতেহার ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’। এবার অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে আগামী ৫ বছরে জিডিপি ১০ শতাংশে উন্নীত করা, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনকালে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা এবং ২০৩০ সালে মাথাপিছু আয় ৫ হাজার ৪৭৯ ডলারে উন্নীত করার অঙ্গীকার করেছে দলটি।
বিগত এক দশকের শাসনামলে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া পদ্মাসেতু প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর এবং রাজধানী ঢাকায় মেট্রোরেল প্রকল্পসহ অনেকগুলো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ এরইমধ্যে এগিয়ে চলেছে। সারা দেশে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলাসহ এমন আরো প্রকল্প নিয়ে জনগণের মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে সমালোচনা ও বিরোধিতাও রয়েছে। তবে, দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে এ ধরনের বৃহৎ প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া অর্থনৈতিক অগ্রগতি যেমন সম্ভব হয় না তেমনি সামাজিক অগ্রগতিও সাধিত হয় না। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গতিধারা সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন মন্তব্য করেছিলেন, বাংলাদেশের এখন অর্থনৈতিক অগ্রগতির পাশাপাশি মানবিক প্রগতি অর্জন করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এই কাজটি করতে হলে অবশ্যই সমাজের বিপুল অংশের মানুষের মধ্যে কতগুলো সাধারণ মূল্যবোধ এবং রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। এ জন্য সমাজে শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাকাঠামোর সংস্কার এবং সাংস্কৃতিক চেতনার মানোন্নয়নে ভবিষ্যৎ নাগরিকদের গড়ে তোলার সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যেতে হবে।
রাষ্ট্র ও সমাজে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি প্রতিষ্ঠা করা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা ছাড়া এমন সুদূরপ্রসারী লক্ষ্যগুলো অর্জন করা সম্ভব নয়। এজন্য জাতীয় সংসদ এবং দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহে গণতন্ত্রকে আরো সংহত করার বিষয়ে আগামী সরকারকে মনোযোগী হতে হবে। সরকার এবং নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ জনসেবা প্রদানকারী সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে জনগণের আরো আস্থায় আনার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
তিন বছর পর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের দিকে তাকিয়ে আমরা আশাবাদী হতে চাই যে, স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগের উদ্যোগেই, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দেশীয় দোসরদের মতোই, যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের বিচারের প্রক্রিয়া অচিরেই শুরু করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধ, মানবিক ও আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে।