অন্যদেশের ভাইস চ্যান্সেলর
এম এ মোমেন | ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০
[এই রচনাটির সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো ভাইস চ্যান্সেলর, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়, কোনো ছাত্রসংগঠন, কোনো গ্র্যান্টস কমিশন, কোনো চ্যান্সেলর, কোনো রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক দল কারও কোনো সম্পর্ক নেই ]
আমি দুটো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি (কতটুকু শিখেছি সে প্রশ্ন আপাতত থাকুক একটি ওয়েলশে, একটি ইংল্যান্ডে। একদিনও ক্লাস ফাঁকি না দিয়ে ওয়েলশ থেকে স্নাতকোত্তর পাঠ (এমএসসি, ইকোনমিক্স) গ্রহণের সময় একদিনও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরকে দেখিনি। এমনকি তার নাম কী ছিল তাও মনে করতে পারছি না। এক ধরনের বাঙালিপনা থেকে আমাদের চটপটে নারী শিক্ষক উইঙ্কি উইলিয়ামসনকে একদিন বললাম, ভাইস চ্যান্সলরকে তো এ পর্যন্ত দেখলাম না। তিনি বললেন, তার সঙ্গে তোমার কী কাজ? প্রফেসর অ্যালান রু-কি তোমার জন্য যথেষ্ট নন? উইঙ্কি যে প্রফেসরের নাম বললেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে স্কুলে পড়ছি তার প্রধান, তিনি আমাদের পলিসি অ্যানালিসিস পড়ান। আমি আমতা আমতা করতে থাকি। উইঙ্কি বললেন, তোমাদের এমএসসির সার্টিফিকেটে অবশ্যই তার সই
থাকবে। তারপর এমনভাবে তাকালেন, তার চোখের ভাষা (ততদিনে নীল চোখের ভাষা কিছুটা বুঝতে শিখেছি) বলে দিল, আদার ব্যাপারীর জাহাজের খোঁজ নেওয়ার দরকার নেই। পিএইচডির দ্বিতীয় বর্ষে এসে ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ফ্রাঙ্ক উইলিয়াম গুল্ডের সঙ্গে প্রথম করমর্দন। সেটাও সম্ভব হয়েছে একটি কমিটিতে বিদেশি ছাত্র প্রতিনিধি হওয়ার কারণে। একটি বৈঠকে ঢোকার আগে ওয়াশরুমে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি আমার ঠিক পেছনেই তিনি। ইউরিনাল ব্যবহার শেষে বেরোতে বেরোতে বললেন, হাই, নাও উই হ্যাভ অ্যাট লিস্ট ওয়ান কমন প্ল্যাটফর্ম। অর্থাৎ ওয়াশরুম। দি¦তীয় মহাযুদ্ধ চলাকালে বিরোধীদলীয় নেতা ক্লেমেন্ট এটলিকে ঠিক এমন একটি কথাই বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল। প্রফেসর ফ্রাঙ্ক গুল্ডকে মনে করা হতো ‘ভিশনারি ভাইস চ্যান্সেলর’। তার নিজের পড়াশোনা অর্থনীতি ও আইন নিয়ে। তার প্রিয় প্যাশন ছিল ঘোড়ায় চড়া। অনেক বছর পর ২০০৮-এ একবার খবর পাই তিনি ক্যানসারে ভুগছেন, ঘোড়ায় চড়তে পারছেন নাÑ এছাড়া আর কোনো আফসোস নেই তার। ক্যামব্রিজ ও অ্যাবারডিন বিশ^বিদ্যালয়ের প্রফেসর গ্রেগ লয়েডের সামনে দীর্ঘ সময় থিসিস ডিফেন্ড করার পর হাত বাড়িয়ে তিনি যখন বললেন, কংগ্র্যাচুলেশনস, তখনো বুঝিনি পিএইচডি হয়ে গেছে। স্কুলের প্রধান প্রফেসর অ্যালেন ব্রিমিকোম খবর পাওয়ামাত্র কমন মেইলে একসঙ্গে অনেককে সংবাদটি জানিয়ে দিয়েছেন। আমি নিজের মেইল খুলে সবিস্ময়ে দেখি, ভাইস চ্যান্সেলর ফ্রাঙ্ক উইলিয়াম গুল্ডের অভিনন্দন এবং আহ্বান ‘জয়েন দ্য ক্লাব’। এই ক্লাব মানে আদৌ কোনো সনাতন ক্লাবঘরের সদস্য হওয়া নয়। এই ক্লাব মানে এক ধরনের এলিটিস্ট পিএইচডি ক্লাব। ভাইস চ্যান্সেলরের আগ্রহ মূলত তার শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা, সাফল্য ইত্যাদি। ভাইস চ্যান্সেলর টোরি না লেবার এ আলোচনা কাউকে করতে শুনিনি। টোরি কিংবা লেবারের ছাত্রফ্রন্ট অন্তত আমার অবস্থানকালে সেখানে দেখিনি।
কয়েকটি ভিসি এপিসোড
বছর পাঁচেক আগের ইংরেজি পত্রিকার একটি সংবাদ দেখে আঁতকে উঠেছিলাম : ‘এক্স-ভিসি অব ডিইউ সেন্ট টু জেল’। ডিইউ মানে আমার কাছে এবং আমার মতো আরও অনেকের কাছে ঢাকা ইউনিভার্সিটি। কাজেই আঁতকে ওঠা মোটেও অপ্রত্যাশিত নয়। তবে ভেতরের খবরটা পড়ার পর স্বস্তিবোধ করি। কারণ এই ডিইউ অবশ্যই ঢাকা নয়। দিল্লি ইউনিভার্সিটি। ২০০৫ থেকে ২০১০ পর্যন্ত জেনেটিক্স বা সুপ্রজননবিদ্যার অধ্যাপক দীপক পেন্টাল ছিলেন দিল্লি ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর। তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন অধ্যাপক দীপক নায়ারের কাছ থেকে। মসুর এবং তুলাবীজ গবেষণায় তিনি অগ্রনায়কদের একজন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পার্থসারথী তার বিরুদ্ধে গবেষণায় প্রতারণা ও নকলের অভিযোগে মামলা করেন। তার বিরুদ্ধে জেনেটিক্যালি মডিফায়েড বীজ অপব্যবহারের অভিযোগ ছিল। ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাকে জেলে পাঠায়, হাইকোর্টের আদেশে জামিনে তিহার জেল থেকে ছাড়া পান। আশ^স্ত হই যে এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়। এই বিশ^বিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেসলরের স্বাক্ষরিত একাধিক সার্টিফিকেট আমিও ধারণ করছি।
২. রবার্ট মুগাবের শাসনের শেষাংশে তাকে স্বৈরাচার খেতাব পেতে হয় এবং বাস্তবেই তিনি, তার স্ত্রী এবং দলের ঘনিষ্ঠজনের অনাচারে স্বাধীন জিম্বাবুয়েতে ত্রাহি ত্রাহি রব ওঠে। সে দেশেও দলদাস ভাইস চ্যান্সেলর আছেন। জিম্বাবুয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর লেডি নিয়াগুরা দেশের ফার্স্টলেডি গ্রেস মুগাবেকে (তিনি পরে ডিসগ্রেস মুগাবে হিসেবেই পরিচিত হন। রাষ্ট্রীয় অর্থ লুণ্ঠন এবং বহুমূল্য পোশাক কেনাকাটা করে তিনি গুসিগ্রেস নামেও চিহ্নিত হন) ডক্টরেট বানাতে মরিয়া হয়ে উঠলেন। কোনো ডিপার্টমেন্টের সুপারিশ কিংবা বোর্ডের পরীক্ষা-নিরীক্ষার তোয়াক্কা না করে তিনি এককভাবে তাকে পিএইচডি ডিগ্রি দিয়ে ডক্টর গ্রেস মুগাবেতে পরিণত করলেন। ২০১৭ সালে মুগাবের পতনের পর যারা জেলে যান তাদের একজন ভাইস চ্যান্সেলর নিয়াগুরা, তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ। গ্রেসের নামে একটি অভিসন্দর্ভ দাখিল করা আছে : ‘দ্য চেঞ্জিং সোশ্যাল স্ট্রাকচার অ্যান্ড দ্য ফাংশন অব দ্য ফ্যামিলি।’ তার পিএইচডির সমর্থনে অন্তত একটা কিছু তো আছে!
৩. বিশ্বভারতীর সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর দিলীপ সিনহা জেলে গেলেন এ বছর ফেব্রুয়ারিতে। তার পাঁচ বছরের কারবণ্ড এবং এক হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড প্রাপ্ত হয়েছেন অ্যাডিশনাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের রায়ে। একই রায় হয়েছে সাবেক রেজিস্ট্রার দিলীপ মুখার্জি এবং গণিতের প্রভাষক মুক্তি দেবের বিরুদ্ধে। প্রত্যেকের এই শাস্তি হয়েছে জালিয়াতির অভিযোগে। জালিয়াতির মাধ্যম বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ করার অপরাধও সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় তিনি আরও দুই বছরের কারাদণ্ড লাভ করেছেন। তবে দুটো শাস্তি তারা একই সঙ্গে ভোগ করবেন। মূল অভিযোগ মুক্তি দেবের বিরুদ্ধে, তিনি ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে বিশ্বভারতীতে গণিতের প্রভাষক নিযুক্ত হয়েছেন, তার সার্টিফিকেট প্রত্যয়ন করেছেন স্বয়ং ভাইস চ্যান্সেলর। রেজিস্ট্রার সার্টিফিকেটের সত্যাসত্য যাচাই না করেই নিয়োগ প্রক্রিয়াকরণ করেছেন। অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে আপিল হয়েছে ঠিকই; কিন্তু মুক্তি দেবের আলমা মেটার কলিকাতা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় লিখিতভাবে আদালতকে জানিয়ে দিয়েছে এসব সার্টিফিকেট ভুয়া।
৪. ডক্টর গণপতি বায়োটেকনোলজির প্রফেসর এবং তামিলনাড়র বারাতিয়ার ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর। তামিল কবি সুব্রামানিয়াম বারাতিয়ার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ। তিরিশ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের সময় তিনি ডাইরেক্টরেট অব ভিজিল্যান্স অ্যান্ড অ্যান্টিকরাপশনের ফাঁদে ধরা পড়েন এবং তাকে জেলে পাঠানো হয়। ডক্টর গণপতি রসায়ন বিভাগের অস্থায়ী সহকারী অধ্যাপক সুরেশকে স্থায়ীকরণের জন্য ৩০ লাখ রুপি দাবি করেন। তিনি যথারীতি রাজি হয়ে এক লাখ নগদ টোকেন রুপি এবং বাকি টাকার পোস্ট ডেটেড চেক প্রদানের সময় আগে থেকে অবহিত দুর্নীতি দমন কর্মকর্তারা তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। ডক্টর গণপতি রাজনৈতিক সরকারের আনুকূল্য নিয়ে ভিসি হয়েছিলেন। তামিলনার শিক্ষাবিদরা বলছেন, ভাইস চ্যান্সেলরের রাজনৈতিক চরিত্র এবং অযোগ্য শিক্ষকদের অর্থশক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
৫. দক্ষিণ আফ্রিকার নর্দান ট্রান্সভাসালে লিমপোপো ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর মাহলো মকগলাঙ্গ নারীঘটিত কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পরবর্তী টার্মে ভিসি হতে পারলেন না। প্রফেসর মকগলাঙ্গ একজন অধ্যাপকের স্ত্রীর সঙ্গে সহবাসের ইচ্ছে ব্যক্ত করেন এবং তাকে একটি গাড়ি কিনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেনদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর একজন প্রফেসর যিনি ভাইস চ্যান্সেলর পদের জন্য প্রতিযোগীদের একজন তার একজন ছাত্রীকে নিয়ে ইতালি সফর করেন এবং সে ছাত্রী পরে তার স্ত্রীতে পরিণত হয়। ভাইস চ্যান্সেলর বিষয়টি ভালোভাবে নেননি, ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে তাকে পদচ্যুত করেন এবং তার বিরুদ্ধে মামলা জোরদার করার জন্য তার স্ত্রীর শরণাপন্ন হন। ২০১৭ সালে ধারণকৃত ভিসি ও অধ্যাপকের স্ত্রীর কথোপকথনের টেপ থেকে ভিসির জৈবিক আকাক্সক্ষা ও গাড়ি উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি স্পষ্ট হয়ে পড়ে। হায়ার এডুকেশন কাউন্সিল সেই অধ্যাপকের অভিযোগ আমলে নেয়।
৬. ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর স্টুয়ার্ট ক্রফট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ‘ধর্ষণ কথোপকথন কলঙ্ক’ ঠিকভাবে সামাল দেননি বলে বিবিসির কাছে স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। ফেইসবুকে নির্দিষ্ট কজন ছাত্রীকে নিয়ে কজন ছাত্রের অশ্লীল ও ইঙ্গিতধর্মী উপস্থাপন, ছবিতে গণধর্ষণ ও যৌনাঙ্গ বিনষ্টকরণের মতো পোস্টিং অভিযোগ আকারে দাখিল করার পর ছ’জন ছাত্রকে ১ থেকে ১০ বছরের জন্য ক্যাম্পাসে নিষেধাজ্ঞা শাস্তি প্রদান করা হয়। কিন্তু ১০ বছরের শাস্তিপ্রাপ্ত ছাত্র ভাইস চ্যান্সেলরের কাছে আপিল করলে তিনি তা এক বছরে নামিয়ে আনেন। ফলে তা ছাত্রীদের জন্য আতঙ্কজনক ও মানসিক পীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিবিসির অনুসন্ধানে ভাইস চ্যান্সেলরকে অবিবেচক মনে করা হয়। শেষ পর্যন্ত তিনি তার সিদ্ধান্তকে ‘এক্সট্রিমলি আনফরচুনেট মিসটেক’ অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ভুল বলে স্বীকার করেন এবং নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা দূরে থাকুক, দক্ষিণ এশিয়ায় ভাইস চ্যান্সেলরের প্রশ্রয়ে ধর্ষক শ্রেণির দৌরাত্ম্য বৃদ্ধির নজির রয়েছে।
৭. বাথ ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর নিজের বেতন বাড়িয়ে ৪,৬৮,০০০ পর্যন্ত করায় শুধু হইচই নয়, তার পদত্যাগের জোর দাবি আসে। শেষ পর্যন্ত ভিসি ডেইম গ্লানিস ব্রেকওয়েল পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে ধমকের সুরেই বলেছেন অধ্যাপকরা যে সামান্য পড়ান এবং যে বিশাল বেতন নেন তা মোটেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
৮. ইউনিভার্সিটি অব কুইনসল্যান্ডের ভাইস চ্যান্সেলর পল গ্রিনফিল্ড বিশ^বিদ্যালয়ের ১০২ বছরের ইতিহাসে পদত্যাগে বাধ্য হওয়া প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর। তিনি অভিযুক্ত হন স্বজনপ্রীতির অপরাধে। একটি কোর্সে যোগ দেওয়ার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকার পরও ভাইস চ্যান্সেলর তার আত্মীয়কে কোর্সে ভর্তি করে দেন। অমনি আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। এক পর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন আন্দোলনের চাপ তার ও তার পরিবারের পক্ষে সহ্য করা সম্ভব হচ্ছে না, সুতরাং তিনি পদ থেকে নেমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যেহেতু তিনি নিজেই সরে যাচ্ছেন, কোনো ধরনের টার্মিনেশন বেনিফিট পাবেন না।
৯. সোয়ানসি ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর রিচার্ড ডেভিস ‘গ্রস মিসকন্ডাক্ট’-এর কারণে তাৎক্ষণিকভাবে চাকরিচ্যুত হয়েছেন। কুয়েতের সঙ্গেবিশ্ববিদ্যালয়ের একটি যৌথ প্রকল্পে অর্থনৈতিক অস¦চ্ছতাই তার পতনের কারণ।
১০. ইউনিভার্সিটি অব বোস্টনের ভাইস চ্যান্সেলর লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে বিলিয়নিয়র, সেলিব্রেটি এবং রাজনীতিবিদদের সঙ্গে এক চ্যারিটি ডিনারে অংশগ্রহণ করে কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছেন। কালো কোট ও কালো টাই পরা পুরুষদের এই বিচারে কালো প্যান্টি পরা ওয়েট্রেস পরিবেশনকারী ড্রিঙ্ক সার্ভ করেছে, ডিনারে অংশগ্রহণকারীদের কেউ কেউ তাদের সংবেদনশীল অঙ্গে হাত দিয়েছেন। বিবিসির আন্ডারকাভার নারী রিপোর্টারও ভেতরে থেকে সব পর্যবেক্ষণ করেছেন। এরকম একটি ডিনারে ভাইস চ্যান্সেলরের অংশগ্রহণ নিয়ে নৈতিকতার প্রশ্ন উঠছে। ভাইস চ্যান্সেলর নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেছেন, এ ধরনের পার্টিতে তিনি এর আগে কখনো যাননি। বোল্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ট্রাস্টির আমন্ত্রণে তিনি গিয়েছিলেন। তিনি ‘শকড’ ব্যথিত, লজ্জিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।
১১. ইস্টার্ন মিশিগান ইউনিভার্সিটিতে এক ছাত্রের খুনের ঘটনায় প্রেসিডেন্ট (ভাইস চ্যান্সেলর) জন ফ্যালন চাকরি হারিয়েছেন। অভিযোগ বিষয়টিকে তিনি যথাযথ গুরুত্ব দেননি।
লেখক: সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, লেখক ও কলামনিস্ট
শেয়ার করুন
এম এ মোমেন | ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০

[এই রচনাটির সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো ভাইস চ্যান্সেলর, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়, কোনো ছাত্রসংগঠন, কোনো গ্র্যান্টস কমিশন, কোনো চ্যান্সেলর, কোনো রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক দল কারও কোনো সম্পর্ক নেই ]
আমি দুটো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি (কতটুকু শিখেছি সে প্রশ্ন আপাতত থাকুক একটি ওয়েলশে, একটি ইংল্যান্ডে। একদিনও ক্লাস ফাঁকি না দিয়ে ওয়েলশ থেকে স্নাতকোত্তর পাঠ (এমএসসি, ইকোনমিক্স) গ্রহণের সময় একদিনও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরকে দেখিনি। এমনকি তার নাম কী ছিল তাও মনে করতে পারছি না। এক ধরনের বাঙালিপনা থেকে আমাদের চটপটে নারী শিক্ষক উইঙ্কি উইলিয়ামসনকে একদিন বললাম, ভাইস চ্যান্সলরকে তো এ পর্যন্ত দেখলাম না। তিনি বললেন, তার সঙ্গে তোমার কী কাজ? প্রফেসর অ্যালান রু-কি তোমার জন্য যথেষ্ট নন? উইঙ্কি যে প্রফেসরের নাম বললেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে স্কুলে পড়ছি তার প্রধান, তিনি আমাদের পলিসি অ্যানালিসিস পড়ান। আমি আমতা আমতা করতে থাকি। উইঙ্কি বললেন, তোমাদের এমএসসির সার্টিফিকেটে অবশ্যই তার সই
থাকবে। তারপর এমনভাবে তাকালেন, তার চোখের ভাষা (ততদিনে নীল চোখের ভাষা কিছুটা বুঝতে শিখেছি) বলে দিল, আদার ব্যাপারীর জাহাজের খোঁজ নেওয়ার দরকার নেই। পিএইচডির দ্বিতীয় বর্ষে এসে ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ফ্রাঙ্ক উইলিয়াম গুল্ডের সঙ্গে প্রথম করমর্দন। সেটাও সম্ভব হয়েছে একটি কমিটিতে বিদেশি ছাত্র প্রতিনিধি হওয়ার কারণে। একটি বৈঠকে ঢোকার আগে ওয়াশরুমে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি আমার ঠিক পেছনেই তিনি। ইউরিনাল ব্যবহার শেষে বেরোতে বেরোতে বললেন, হাই, নাও উই হ্যাভ অ্যাট লিস্ট ওয়ান কমন প্ল্যাটফর্ম। অর্থাৎ ওয়াশরুম। দি¦তীয় মহাযুদ্ধ চলাকালে বিরোধীদলীয় নেতা ক্লেমেন্ট এটলিকে ঠিক এমন একটি কথাই বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল। প্রফেসর ফ্রাঙ্ক গুল্ডকে মনে করা হতো ‘ভিশনারি ভাইস চ্যান্সেলর’। তার নিজের পড়াশোনা অর্থনীতি ও আইন নিয়ে। তার প্রিয় প্যাশন ছিল ঘোড়ায় চড়া। অনেক বছর পর ২০০৮-এ একবার খবর পাই তিনি ক্যানসারে ভুগছেন, ঘোড়ায় চড়তে পারছেন নাÑ এছাড়া আর কোনো আফসোস নেই তার। ক্যামব্রিজ ও অ্যাবারডিন বিশ^বিদ্যালয়ের প্রফেসর গ্রেগ লয়েডের সামনে দীর্ঘ সময় থিসিস ডিফেন্ড করার পর হাত বাড়িয়ে তিনি যখন বললেন, কংগ্র্যাচুলেশনস, তখনো বুঝিনি পিএইচডি হয়ে গেছে। স্কুলের প্রধান প্রফেসর অ্যালেন ব্রিমিকোম খবর পাওয়ামাত্র কমন মেইলে একসঙ্গে অনেককে সংবাদটি জানিয়ে দিয়েছেন। আমি নিজের মেইল খুলে সবিস্ময়ে দেখি, ভাইস চ্যান্সেলর ফ্রাঙ্ক উইলিয়াম গুল্ডের অভিনন্দন এবং আহ্বান ‘জয়েন দ্য ক্লাব’। এই ক্লাব মানে আদৌ কোনো সনাতন ক্লাবঘরের সদস্য হওয়া নয়। এই ক্লাব মানে এক ধরনের এলিটিস্ট পিএইচডি ক্লাব। ভাইস চ্যান্সেলরের আগ্রহ মূলত তার শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা, সাফল্য ইত্যাদি। ভাইস চ্যান্সেলর টোরি না লেবার এ আলোচনা কাউকে করতে শুনিনি। টোরি কিংবা লেবারের ছাত্রফ্রন্ট অন্তত আমার অবস্থানকালে সেখানে দেখিনি।
কয়েকটি ভিসি এপিসোড
বছর পাঁচেক আগের ইংরেজি পত্রিকার একটি সংবাদ দেখে আঁতকে উঠেছিলাম : ‘এক্স-ভিসি অব ডিইউ সেন্ট টু জেল’। ডিইউ মানে আমার কাছে এবং আমার মতো আরও অনেকের কাছে ঢাকা ইউনিভার্সিটি। কাজেই আঁতকে ওঠা মোটেও অপ্রত্যাশিত নয়। তবে ভেতরের খবরটা পড়ার পর স্বস্তিবোধ করি। কারণ এই ডিইউ অবশ্যই ঢাকা নয়। দিল্লি ইউনিভার্সিটি। ২০০৫ থেকে ২০১০ পর্যন্ত জেনেটিক্স বা সুপ্রজননবিদ্যার অধ্যাপক দীপক পেন্টাল ছিলেন দিল্লি ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর। তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন অধ্যাপক দীপক নায়ারের কাছ থেকে। মসুর এবং তুলাবীজ গবেষণায় তিনি অগ্রনায়কদের একজন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পার্থসারথী তার বিরুদ্ধে গবেষণায় প্রতারণা ও নকলের অভিযোগে মামলা করেন। তার বিরুদ্ধে জেনেটিক্যালি মডিফায়েড বীজ অপব্যবহারের অভিযোগ ছিল। ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাকে জেলে পাঠায়, হাইকোর্টের আদেশে জামিনে তিহার জেল থেকে ছাড়া পান। আশ^স্ত হই যে এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়। এই বিশ^বিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেসলরের স্বাক্ষরিত একাধিক সার্টিফিকেট আমিও ধারণ করছি।
২. রবার্ট মুগাবের শাসনের শেষাংশে তাকে স্বৈরাচার খেতাব পেতে হয় এবং বাস্তবেই তিনি, তার স্ত্রী এবং দলের ঘনিষ্ঠজনের অনাচারে স্বাধীন জিম্বাবুয়েতে ত্রাহি ত্রাহি রব ওঠে। সে দেশেও দলদাস ভাইস চ্যান্সেলর আছেন। জিম্বাবুয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর লেডি নিয়াগুরা দেশের ফার্স্টলেডি গ্রেস মুগাবেকে (তিনি পরে ডিসগ্রেস মুগাবে হিসেবেই পরিচিত হন। রাষ্ট্রীয় অর্থ লুণ্ঠন এবং বহুমূল্য পোশাক কেনাকাটা করে তিনি গুসিগ্রেস নামেও চিহ্নিত হন) ডক্টরেট বানাতে মরিয়া হয়ে উঠলেন। কোনো ডিপার্টমেন্টের সুপারিশ কিংবা বোর্ডের পরীক্ষা-নিরীক্ষার তোয়াক্কা না করে তিনি এককভাবে তাকে পিএইচডি ডিগ্রি দিয়ে ডক্টর গ্রেস মুগাবেতে পরিণত করলেন। ২০১৭ সালে মুগাবের পতনের পর যারা জেলে যান তাদের একজন ভাইস চ্যান্সেলর নিয়াগুরা, তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ। গ্রেসের নামে একটি অভিসন্দর্ভ দাখিল করা আছে : ‘দ্য চেঞ্জিং সোশ্যাল স্ট্রাকচার অ্যান্ড দ্য ফাংশন অব দ্য ফ্যামিলি।’ তার পিএইচডির সমর্থনে অন্তত একটা কিছু তো আছে!
৩. বিশ্বভারতীর সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর দিলীপ সিনহা জেলে গেলেন এ বছর ফেব্রুয়ারিতে। তার পাঁচ বছরের কারবণ্ড এবং এক হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড প্রাপ্ত হয়েছেন অ্যাডিশনাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের রায়ে। একই রায় হয়েছে সাবেক রেজিস্ট্রার দিলীপ মুখার্জি এবং গণিতের প্রভাষক মুক্তি দেবের বিরুদ্ধে। প্রত্যেকের এই শাস্তি হয়েছে জালিয়াতির অভিযোগে। জালিয়াতির মাধ্যম বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ করার অপরাধও সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় তিনি আরও দুই বছরের কারাদণ্ড লাভ করেছেন। তবে দুটো শাস্তি তারা একই সঙ্গে ভোগ করবেন। মূল অভিযোগ মুক্তি দেবের বিরুদ্ধে, তিনি ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে বিশ্বভারতীতে গণিতের প্রভাষক নিযুক্ত হয়েছেন, তার সার্টিফিকেট প্রত্যয়ন করেছেন স্বয়ং ভাইস চ্যান্সেলর। রেজিস্ট্রার সার্টিফিকেটের সত্যাসত্য যাচাই না করেই নিয়োগ প্রক্রিয়াকরণ করেছেন। অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে আপিল হয়েছে ঠিকই; কিন্তু মুক্তি দেবের আলমা মেটার কলিকাতা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় লিখিতভাবে আদালতকে জানিয়ে দিয়েছে এসব সার্টিফিকেট ভুয়া।
৪. ডক্টর গণপতি বায়োটেকনোলজির প্রফেসর এবং তামিলনাড়র বারাতিয়ার ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর। তামিল কবি সুব্রামানিয়াম বারাতিয়ার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ। তিরিশ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের সময় তিনি ডাইরেক্টরেট অব ভিজিল্যান্স অ্যান্ড অ্যান্টিকরাপশনের ফাঁদে ধরা পড়েন এবং তাকে জেলে পাঠানো হয়। ডক্টর গণপতি রসায়ন বিভাগের অস্থায়ী সহকারী অধ্যাপক সুরেশকে স্থায়ীকরণের জন্য ৩০ লাখ রুপি দাবি করেন। তিনি যথারীতি রাজি হয়ে এক লাখ নগদ টোকেন রুপি এবং বাকি টাকার পোস্ট ডেটেড চেক প্রদানের সময় আগে থেকে অবহিত দুর্নীতি দমন কর্মকর্তারা তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। ডক্টর গণপতি রাজনৈতিক সরকারের আনুকূল্য নিয়ে ভিসি হয়েছিলেন। তামিলনার শিক্ষাবিদরা বলছেন, ভাইস চ্যান্সেলরের রাজনৈতিক চরিত্র এবং অযোগ্য শিক্ষকদের অর্থশক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
৫. দক্ষিণ আফ্রিকার নর্দান ট্রান্সভাসালে লিমপোপো ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর মাহলো মকগলাঙ্গ নারীঘটিত কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পরবর্তী টার্মে ভিসি হতে পারলেন না। প্রফেসর মকগলাঙ্গ একজন অধ্যাপকের স্ত্রীর সঙ্গে সহবাসের ইচ্ছে ব্যক্ত করেন এবং তাকে একটি গাড়ি কিনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেনদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর একজন প্রফেসর যিনি ভাইস চ্যান্সেলর পদের জন্য প্রতিযোগীদের একজন তার একজন ছাত্রীকে নিয়ে ইতালি সফর করেন এবং সে ছাত্রী পরে তার স্ত্রীতে পরিণত হয়। ভাইস চ্যান্সেলর বিষয়টি ভালোভাবে নেননি, ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে তাকে পদচ্যুত করেন এবং তার বিরুদ্ধে মামলা জোরদার করার জন্য তার স্ত্রীর শরণাপন্ন হন। ২০১৭ সালে ধারণকৃত ভিসি ও অধ্যাপকের স্ত্রীর কথোপকথনের টেপ থেকে ভিসির জৈবিক আকাক্সক্ষা ও গাড়ি উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি স্পষ্ট হয়ে পড়ে। হায়ার এডুকেশন কাউন্সিল সেই অধ্যাপকের অভিযোগ আমলে নেয়।
৬. ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর স্টুয়ার্ট ক্রফট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ‘ধর্ষণ কথোপকথন কলঙ্ক’ ঠিকভাবে সামাল দেননি বলে বিবিসির কাছে স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। ফেইসবুকে নির্দিষ্ট কজন ছাত্রীকে নিয়ে কজন ছাত্রের অশ্লীল ও ইঙ্গিতধর্মী উপস্থাপন, ছবিতে গণধর্ষণ ও যৌনাঙ্গ বিনষ্টকরণের মতো পোস্টিং অভিযোগ আকারে দাখিল করার পর ছ’জন ছাত্রকে ১ থেকে ১০ বছরের জন্য ক্যাম্পাসে নিষেধাজ্ঞা শাস্তি প্রদান করা হয়। কিন্তু ১০ বছরের শাস্তিপ্রাপ্ত ছাত্র ভাইস চ্যান্সেলরের কাছে আপিল করলে তিনি তা এক বছরে নামিয়ে আনেন। ফলে তা ছাত্রীদের জন্য আতঙ্কজনক ও মানসিক পীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিবিসির অনুসন্ধানে ভাইস চ্যান্সেলরকে অবিবেচক মনে করা হয়। শেষ পর্যন্ত তিনি তার সিদ্ধান্তকে ‘এক্সট্রিমলি আনফরচুনেট মিসটেক’ অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ভুল বলে স্বীকার করেন এবং নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা দূরে থাকুক, দক্ষিণ এশিয়ায় ভাইস চ্যান্সেলরের প্রশ্রয়ে ধর্ষক শ্রেণির দৌরাত্ম্য বৃদ্ধির নজির রয়েছে।
৭. বাথ ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর নিজের বেতন বাড়িয়ে ৪,৬৮,০০০ পর্যন্ত করায় শুধু হইচই নয়, তার পদত্যাগের জোর দাবি আসে। শেষ পর্যন্ত ভিসি ডেইম গ্লানিস ব্রেকওয়েল পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে ধমকের সুরেই বলেছেন অধ্যাপকরা যে সামান্য পড়ান এবং যে বিশাল বেতন নেন তা মোটেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
৮. ইউনিভার্সিটি অব কুইনসল্যান্ডের ভাইস চ্যান্সেলর পল গ্রিনফিল্ড বিশ^বিদ্যালয়ের ১০২ বছরের ইতিহাসে পদত্যাগে বাধ্য হওয়া প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর। তিনি অভিযুক্ত হন স্বজনপ্রীতির অপরাধে। একটি কোর্সে যোগ দেওয়ার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকার পরও ভাইস চ্যান্সেলর তার আত্মীয়কে কোর্সে ভর্তি করে দেন। অমনি আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। এক পর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন আন্দোলনের চাপ তার ও তার পরিবারের পক্ষে সহ্য করা সম্ভব হচ্ছে না, সুতরাং তিনি পদ থেকে নেমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যেহেতু তিনি নিজেই সরে যাচ্ছেন, কোনো ধরনের টার্মিনেশন বেনিফিট পাবেন না।
৯. সোয়ানসি ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর রিচার্ড ডেভিস ‘গ্রস মিসকন্ডাক্ট’-এর কারণে তাৎক্ষণিকভাবে চাকরিচ্যুত হয়েছেন। কুয়েতের সঙ্গেবিশ্ববিদ্যালয়ের একটি যৌথ প্রকল্পে অর্থনৈতিক অস¦চ্ছতাই তার পতনের কারণ।
১০. ইউনিভার্সিটি অব বোস্টনের ভাইস চ্যান্সেলর লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে বিলিয়নিয়র, সেলিব্রেটি এবং রাজনীতিবিদদের সঙ্গে এক চ্যারিটি ডিনারে অংশগ্রহণ করে কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছেন। কালো কোট ও কালো টাই পরা পুরুষদের এই বিচারে কালো প্যান্টি পরা ওয়েট্রেস পরিবেশনকারী ড্রিঙ্ক সার্ভ করেছে, ডিনারে অংশগ্রহণকারীদের কেউ কেউ তাদের সংবেদনশীল অঙ্গে হাত দিয়েছেন। বিবিসির আন্ডারকাভার নারী রিপোর্টারও ভেতরে থেকে সব পর্যবেক্ষণ করেছেন। এরকম একটি ডিনারে ভাইস চ্যান্সেলরের অংশগ্রহণ নিয়ে নৈতিকতার প্রশ্ন উঠছে। ভাইস চ্যান্সেলর নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেছেন, এ ধরনের পার্টিতে তিনি এর আগে কখনো যাননি। বোল্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ট্রাস্টির আমন্ত্রণে তিনি গিয়েছিলেন। তিনি ‘শকড’ ব্যথিত, লজ্জিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।
১১. ইস্টার্ন মিশিগান ইউনিভার্সিটিতে এক ছাত্রের খুনের ঘটনায় প্রেসিডেন্ট (ভাইস চ্যান্সেলর) জন ফ্যালন চাকরি হারিয়েছেন। অভিযোগ বিষয়টিকে তিনি যথাযথ গুরুত্ব দেননি।
লেখক: সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, লেখক ও কলামনিস্ট