ইভো মোরালেসের পতনের নেপথ্যে
জি. কে. সাদিক | ১৯ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০
সম্প্রতি বৈশ্বিক রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক অস্থিরতা চলছে। জনগণ শাসকশ্রেণির দুর্নীতির বিরুদ্ধে, অর্থনৈতিক মুক্তির দাবিতে, আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এবং রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলমান জন-বিক্ষোভ সব ক্ষেত্রেই যে জনতার স্বার্থেই হচ্ছে এমনটা নয়। কোথাও জনতার ক্ষোভ কাজে লাগিয়ে আধ্যিপত্যকামী গোষ্ঠী তাদের স্বার্থ হাসিল করছে। কোথাও জনগণের অভ্যুত্থান সফলে হলেও কার্যত এর ফল যাচ্ছে ক্ষমতালোভী ও উগ্র-ডানপন্থিদের পকেটে। সম্প্রতি নির্বাচনে কারচুপি করে ক্ষমতায় আসা এবং স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের অভিযোগে বলিভিয়াতে বামপন্থি আদিবাসী রাষ্ট্রনেতা ইভো মোরালেসের বিরুদ্ধে জনগণ তার পদত্যাগ ও নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেছে। জন-বিক্ষোভের তোড়ে গত ১০ নভেম্বর প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে দাঁড়ান মোরালেস। এবং রাজনৈতিক আশ্রয় প্রত্যাশী হয়ে মেক্সিকোতে চলে যান। মোরালেসের পদত্যাগের আগেই ভাইস-প্রেসিডেন্ট আলভারো গার্থিয়া, সিনেটর নেতা আদ্রিয়ানা সালভাতিয়ার এবং হাউজ অব ডেপুটিসের নেতা ভিক্টর বোর্দা পদত্যাগ করেন। ফলত মোরালেসের পদত্যাগের পর ক্রমানুযায়ী অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টের পদ ফাঁকা থাকায় ১২ নভেম্বর বিরোধীদলীয় সিনেটর জিনাইন আনিয়েজ নিজেকে প্রেসিডেন্ট বলে ঘোষণা দেন। তবে মোরালেস সমর্থকদের সিনেট বর্জনের ফলে কোরাম পূর্ণ না হওয়ায় প্রস্তাব পাস হয়নি। তারপরও জিনাইনের প্রতি আমেরিকা, জার্মানি, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল ও কলম্বিয়া সমর্থন জানিয়েছে।
বলিভিয়াতে চলমান বিক্ষোভের সূচনা হয় গত ২০ অক্টোবর দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মতো ইভো মোরালেসের জয়ের পর থেকে। অভিযোগ আনা হয় মোরালেস নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছেন। নির্বাচনে ফল প্রকাশের আগে কোনো ধরনের ঘোষণা ও সিদ্ধান্ত ছাড়াই ২৪ ঘণ্টা সময় নেওয়া হয়। মোরালেস এই নির্বাচনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ১০ শতাংশ ভোট বেশি পেয়ে ক্ষমতায় আসেন। এর পর থেকেই বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে মোরালেস ফল নিজের অনুকূলে নিয়েছেন। বিরোধী দল এই ফলকে প্রত্যাখ্যান করে এবং মোরালেসকে পদত্যাগ করে দ্রুত নির্বাচন দাবি করে। তখন থেকেই দেশটিতে আন্দোলন চলমান ছিল। গত ১০ নভেম্বর আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস (ওএএস) নির্বাচনের কারচুপির অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা নিশ্চিত করার পর জন-বিক্ষোভে নতুন মাত্রা যোগ হয়। এরপরই টেলিভিশনে ভাষণে মোরালেস পদত্যাগের কথা জানান। বিক্ষুব্ধ জনগণ মোরালেসের সমর্থকদের ওপর এবং তাদের বাড়িঘরে হামলা করছে। দেশটির সেনাপ্রধান এবং পুলিশের পক্ষ থেকেও মোরালেসকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। মোরালেসের দাবি, দেশকে সেনা-অভ্যুত্থানের হাত থেকে রক্ষা করতে এবং নিজের কর্মী-সমর্থকদের আক্রমণের থেকে রক্ষার জন্যই মূলত তিনি পদত্যাগ করেছেন। এই ক্ষমতাচ্যুতিকে তিনি ‘নীরব সেনা-অভ্যুত্থান’ বলছেন।
ইভো মোরালেস ২০০৬ সালের জানুয়ারির নির্বাচনে মুভমেন্ট ফর সোশ্যালিজম (এমএএস) দল থেকে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করে প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতায় আসেন। এর পর থেকে টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় ছিলেন। মোরালেসের জন্ম বলিভিয়ার আয়মা আদিবাসী গোত্রে। দেশটির জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ আদিবাসী। বৃহৎ এই জনসংখ্যার মধ্য বলিভিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসে তিনিই প্রথম নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি। ক্ষমতায় আসার পর মোরালেসের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচির ফলে বলিভিয়ার অর্থনীতি, শিক্ষা ও চিকিৎসা আগের চেয়ে আমূল পরিবর্তন হয়েছে। ক্ষমতায় আসার পর মোরালেস প্রথমে দেশটির খনিজ সম্পদ ও বৃহৎ উৎপাদন কারখানাগুলোকে রাষ্ট্রীয়করণের পদক্ষেপ নেন। সাম্রাজ্যবাদী বিরোধী রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করে সর্বস্তরের জনতার ঐক্যের ডাক দেন। তিনি বলিভিয়ার দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা ‘শ্বেত-শ্রেষ্ঠত্ব’র মূলে আঘাত করেন এবং ভূমি সংস্কার করে আদিবাসীদের ভূমি-অধিকার নিশ্চিত করেন। দীর্ঘ শাসনামলে বলিভিয়ার দেশজ উৎপাদন বেড়ে ছিল তিনগুণ। জাতীয় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৪ থেকে ৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। গত বছরও প্রবৃদ্ধি ছিল ৪.২ শতাংশ। গোটা মহাদেশের মধ্যে যা সবচেয়ে বেশি। বলিভিয়ার ধনবৈষম্য কমিয়ে আনতে এবং দারিদ্র্য দূরীকরণেও মোরালেস ছিলেন বেশ সফল। দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালে ৩৮ শতাংশ থেকে ২০১৮ সালে ১৫ শতাংশে নেমে এসেছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং দ্রব্যমূল্যের দামও নিয়ন্ত্রণে আসে। মোরালেসের অর্থনৈতিক সংস্কারকে বলা হয় ‘ইভোনোমিক্স’। দেশীয় অর্থব্যবস্থার সঙ্গে নয়া-উদারনৈতিক বাজার অর্থনীতির মিশ্ররূপÑ বলা হয় মিশ্র-অর্থনীতি। কিন্তু মোরালেসের এই মিশ্র-অর্থব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে। ফলে রাষ্ট্রের ব্যয় বেড়ে যায় এবং ২০১৮ সালে দেশটির বাজেট ঘাটতি প্রবৃদ্ধির ৮ শতাংশে পৌঁছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে দেশের নাগরিকদের বিলাসিতা বেড়েছিল। উন্নয়ন নীতির ভাটা পড়ায় জনজীবনে প্রভাব সৃষ্টি হয়। ফলত নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয় এবং এটাকে কাজে লাগায় বিরোধী দলগুলো।
ইভো মোরালেস ক্ষমতায় আসার পর দেখটির খনিজ সম্পদ জাতীয়করণ শুরু করে। বলিভিয়ায় অনেক খনিজ সম্পদ আছে। এর মধ্যে লিথিয়াম উল্লেখযোগ্য। বিশ্বের মোট মজুদের ৫০ শতাংশ আছে বলিভিয়াতে। দেশটির আন্দিজ পবর্তমালার ওপরের দিকে পটোসি অঞ্চলে এই লিথিয়াম রয়েছে। লিথিয়াম হচ্ছে সব ধরনের বৈদ্যুতিক যন্ত্রের ব্যাটারি তৈরির মূল উপাদান। স্মার্টফোনের এবং সব ধরনের ব্যাটারিচালিত বৈদ্যুতিক যন্ত্রের উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে লিথিয়াম ‘একুশ শতকের স্বর্ণে’ পরিণত হয়েছে। পুঁজি ও দক্ষতার অভাবে দশকের পর দশক বহুজাতিক মাইনিং ফার্মগুলো এই লিথিয়াম উত্তোলন ও ব্যবহার করছে। এসব বহুজাতিক মাইনিং ফার্মগুলোর মধ্যে কানাডার ‘ট্রাইমেটাল মাইনিং’, আর্জেন্টিনার ‘প্যান আমেরিকান এনার্জি’, ভারতের ‘জিন্দাল স্টিল’, ব্রিটিশ-সুইস ‘গ্লেনকোর’ ইত্যাদি প্রধান। এসব মাইনিং ফার্মগুলো একপ্রকার লুটপাটের মতো করে স্থানীয় আদিবাসীদের জীবন ও পরিবেশের প্রতি কোনো ধরনের তোয়াক্কা না করে নামমাত্র মুনাফা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে লিথিয়াম উত্তোলন ও ব্যবহার করে আসছিল। ‘লিথিয়াম করপোরেশন অব আমেরিকা’ ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বলিভিয়া থেকে লিথিয়াম উত্তোলন ও ব্যবহার করেছে মাত্র ৮ শতাংশ মুনাফায়। ২০০৬ সালে মোরালেস ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্রীয় খনিজ সম্পদের এই লুটপাটের লাগাম টেনে ধরেন। খনিজ সম্পদে জাতীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হন। এরকম মাইনিং রাষ্ট্রীয়ভাবে দেখভালেরও সিদ্ধান্ত হয়। বিদেশি বহুজাতিক মাইনিং ফার্মগুলোকে বলিভিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ‘ওয়াইএলবি’ ও ‘কমিবল’র সঙ্গে কাজ করার শর্ত বেঁধে দেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে লিথিয়াম উত্তোলন করে ৪ লাখ লিথিয়াম ব্যাটারি তৈরি এবং উত্তোলিত লিথিয়ামের ওপর রপ্তানি ‘মূল্য সংযোজন কর’ আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যা বহুজাতিক মাইনিং ফার্মগুলোর ব্যবসায়িক স্বার্থে চরম আঘাত ছিল।
২০০৭ সালে ‘জিন্দাল স্টিল’র সঙ্গে বলিভিয়া পুরনো চুক্তি বাতিল করে এবং রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত মেনে নতুন চুক্তির আহ্বান জানায়। এসময় জিন্দাল আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হয় এবং আদালতের রায় জিন্দালের পক্ষে যায়। ২০১২ সালে কানাডার ‘ট্রাইমেটাল মাইনিং’র সঙ্গে বলিভিয়া পুরনো চুক্তি বাতিল করে রাষ্ট্রীয় শর্ত মেনে নতুন চুক্তির আহ্বান জানায়। মোরালেসের অটল সিদ্ধান্তের কারণে রাষ্ট্রীয় শর্ত মেনে ২০১৯ সালে আবার চুক্তি নবায়ন করে। ২০১৪ সালে ‘প্যান আমেরিকান এনার্জি’র পুরনো চুক্তি বাতিল ও কর আরোপের বিপক্ষে ফার্মটি আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে। ব্রিটিশ-সুইস মাইনিং ফার্ম ‘গ্লেনকোর’কে প্রদত্ত সুবিধাও কমানো হয়। কিছুদিন আগে জার্মানির ‘এসিআই সিস্টেমস আলেমানিয়াম’র সঙ্গেও চুক্তি বাতিল করে। ফলে বৃহৎ পুঁজিপতি ফার্মগুলো পানির দামে লিথিয়াম উত্তোলন ও ব্যবহার থেকে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিল। ফলত ফার্ম সংশ্লিট দেশগুলো মোরালেসের ওপর ক্ষেপে ছিল। অন্যদিকে একই সময়ে মোরালেস চীনা এবং রাশিয়ান মাইনিং ফার্মগুলোর সঙ্গে লিথিয়াম ও দেশটির খনিজ সম্পদ উত্তোলনের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। ২০১৮ সালে চীন বলিভিয়া বাণিজ্য অংশীদারিত্বে চতুর্থ রাষ্ট্রের স্থান অর্জন করে। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে চীনের ‘টিবিইএ গ্রুপ’ ও ‘চায়না মেশিনারি’র সঙ্গে বলিভিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ‘ওয়াইএলবি’র ২.৩ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যচুক্তি করে। চুক্তির অর্থ লিথিয়াম খাতে ব্যয় করা হবে। গত জুলাই মাসে আমেরিকার ‘টেলসা’ ও কানাডার ‘পিউর এনার্জি মিনারেলস’র বিনিয়োগ প্রস্তাব পাশ কাটিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে খনিজ সম্পদ উত্তোলনের জন্য বাড়তি বিনিয়োগের আলোচনা করেন। এসব কারণে বিশ্বশক্তিধর বৃহৎ পুঁজিবাদী দেশগুলো এবং তাদের বহুজাতিক মাইনিং ফার্মগুলোর আরাধ্য ছিল মোরালেসের পতন। বিশ্বব্যাপী লিথিয়ামের চাহিদার বড় কারণ হচ্ছে, বর্তমানে বিশ্ববাজারে লিথিয়াম ব্যাটারির যে চাহিদা রয়েছে তা ২০২৫ সালে দ্বিগুণ হবে। অন্যদিকে মোরালেস গত নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার ফলে প্রায় ২০২৫ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা পোক্ত করে ফেলেছিলেন। এই মুহূর্তে মোরালেসের পতন বহুজাতিক মাইনিং ফার্মগুলোর জন্য হাতে চাঁদ ধরার মতো আনন্দ এনে দিয়েছে।
ইভো মোরালেস দক্ষিণ আমেরিকায় ইউরোপ এবং আমেরিকার আধ্যিপত্য এবং সাম্রাজ্যবাদবিরোধী শাসক। কিউবার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, আমেরিকার মদদে হন্ডুরাসের সেনা-অভ্যুত্থান এবং ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে মার্কিন হস্তপেক্ষের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন তিনি। ফকল্যান্ড নিয়ে ব্রিটেন-আর্জেন্টিনার দ্বন্দ্বের বিষয়ে ছিলেন সোচ্চার। মার্কিন গোপন নথি ফাঁসকারী এডওয়ার্ড স্নোডেনের মুক্তির দাবিতেও তিনি সোচ্চার ছিলেন। ভেনেজুয়েলার সাবেক প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজের সঙ্গে মিলে ‘ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ’-এ যোগ দিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, এই জোটে আমেরিকাকে রাখা হয়নি। এসব কারণে মোরালেস আমেরিকা ও ইউরোপের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। আমেরিকা দক্ষিণ আমেরিকার ভূ-রাজনীতি ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রভাব খাটাতে চায়। কিন্তু মোরালেসের কর্মকা- আমেরিকার স্বার্থে আঘাত হানে। নির্বাচনের কারচুপি নিয়ে ওএএস যে অভিযোগ এনেছে এটাও আমেরিকার চালেই হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এই সংস্থাটির সঙ্গে লাপাজে অবস্থিত আমেরিকান দূতাবাসের যোগাযোগের প্রমাণ সংবলিত ১৬টি অডিও রেকর্ড প্রকাশ করেছে রেডিও এডুকেশ নেটওয়ার্ক। এ থেকে মনে করা হচ্ছে মোরালেসকে ক্ষমতা থেকে সরাতেই পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। এবং উগ্র-ডানপন্থিদের উসকে দিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। বলিভিয়ার সেনাপ্রধান মোরালেসকে পদত্যাগের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এমএএসের কর্মী বা সমর্থকদের ওপর কোনো ধরনের নিপীড়ন করবে না। কিন্তু এ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। এমএএস কর্মী-সমর্থকদের ও আদিবাসী কৃষকদের আন্দোলনে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ইতিমধ্যে অনেককে হত্যা করা হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে বলিভিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যায় সেটা বলা মুশকিল। দেশটিতে গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার জন্য আগামী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে সেটা কতটা বাস্তবায়ন হয় এবং মোরালেসের ভাগ্যে কী আছে তা সময়ই বলে দেবে।
শেয়ার করুন
জি. কে. সাদিক | ১৯ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০

সম্প্রতি বৈশ্বিক রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক অস্থিরতা চলছে। জনগণ শাসকশ্রেণির দুর্নীতির বিরুদ্ধে, অর্থনৈতিক মুক্তির দাবিতে, আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এবং রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলমান জন-বিক্ষোভ সব ক্ষেত্রেই যে জনতার স্বার্থেই হচ্ছে এমনটা নয়। কোথাও জনতার ক্ষোভ কাজে লাগিয়ে আধ্যিপত্যকামী গোষ্ঠী তাদের স্বার্থ হাসিল করছে। কোথাও জনগণের অভ্যুত্থান সফলে হলেও কার্যত এর ফল যাচ্ছে ক্ষমতালোভী ও উগ্র-ডানপন্থিদের পকেটে। সম্প্রতি নির্বাচনে কারচুপি করে ক্ষমতায় আসা এবং স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের অভিযোগে বলিভিয়াতে বামপন্থি আদিবাসী রাষ্ট্রনেতা ইভো মোরালেসের বিরুদ্ধে জনগণ তার পদত্যাগ ও নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেছে। জন-বিক্ষোভের তোড়ে গত ১০ নভেম্বর প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে দাঁড়ান মোরালেস। এবং রাজনৈতিক আশ্রয় প্রত্যাশী হয়ে মেক্সিকোতে চলে যান। মোরালেসের পদত্যাগের আগেই ভাইস-প্রেসিডেন্ট আলভারো গার্থিয়া, সিনেটর নেতা আদ্রিয়ানা সালভাতিয়ার এবং হাউজ অব ডেপুটিসের নেতা ভিক্টর বোর্দা পদত্যাগ করেন। ফলত মোরালেসের পদত্যাগের পর ক্রমানুযায়ী অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টের পদ ফাঁকা থাকায় ১২ নভেম্বর বিরোধীদলীয় সিনেটর জিনাইন আনিয়েজ নিজেকে প্রেসিডেন্ট বলে ঘোষণা দেন। তবে মোরালেস সমর্থকদের সিনেট বর্জনের ফলে কোরাম পূর্ণ না হওয়ায় প্রস্তাব পাস হয়নি। তারপরও জিনাইনের প্রতি আমেরিকা, জার্মানি, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল ও কলম্বিয়া সমর্থন জানিয়েছে।
বলিভিয়াতে চলমান বিক্ষোভের সূচনা হয় গত ২০ অক্টোবর দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মতো ইভো মোরালেসের জয়ের পর থেকে। অভিযোগ আনা হয় মোরালেস নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছেন। নির্বাচনে ফল প্রকাশের আগে কোনো ধরনের ঘোষণা ও সিদ্ধান্ত ছাড়াই ২৪ ঘণ্টা সময় নেওয়া হয়। মোরালেস এই নির্বাচনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ১০ শতাংশ ভোট বেশি পেয়ে ক্ষমতায় আসেন। এর পর থেকেই বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে মোরালেস ফল নিজের অনুকূলে নিয়েছেন। বিরোধী দল এই ফলকে প্রত্যাখ্যান করে এবং মোরালেসকে পদত্যাগ করে দ্রুত নির্বাচন দাবি করে। তখন থেকেই দেশটিতে আন্দোলন চলমান ছিল। গত ১০ নভেম্বর আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস (ওএএস) নির্বাচনের কারচুপির অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা নিশ্চিত করার পর জন-বিক্ষোভে নতুন মাত্রা যোগ হয়। এরপরই টেলিভিশনে ভাষণে মোরালেস পদত্যাগের কথা জানান। বিক্ষুব্ধ জনগণ মোরালেসের সমর্থকদের ওপর এবং তাদের বাড়িঘরে হামলা করছে। দেশটির সেনাপ্রধান এবং পুলিশের পক্ষ থেকেও মোরালেসকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। মোরালেসের দাবি, দেশকে সেনা-অভ্যুত্থানের হাত থেকে রক্ষা করতে এবং নিজের কর্মী-সমর্থকদের আক্রমণের থেকে রক্ষার জন্যই মূলত তিনি পদত্যাগ করেছেন। এই ক্ষমতাচ্যুতিকে তিনি ‘নীরব সেনা-অভ্যুত্থান’ বলছেন।
ইভো মোরালেস ২০০৬ সালের জানুয়ারির নির্বাচনে মুভমেন্ট ফর সোশ্যালিজম (এমএএস) দল থেকে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করে প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতায় আসেন। এর পর থেকে টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় ছিলেন। মোরালেসের জন্ম বলিভিয়ার আয়মা আদিবাসী গোত্রে। দেশটির জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ আদিবাসী। বৃহৎ এই জনসংখ্যার মধ্য বলিভিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসে তিনিই প্রথম নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি। ক্ষমতায় আসার পর মোরালেসের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচির ফলে বলিভিয়ার অর্থনীতি, শিক্ষা ও চিকিৎসা আগের চেয়ে আমূল পরিবর্তন হয়েছে। ক্ষমতায় আসার পর মোরালেস প্রথমে দেশটির খনিজ সম্পদ ও বৃহৎ উৎপাদন কারখানাগুলোকে রাষ্ট্রীয়করণের পদক্ষেপ নেন। সাম্রাজ্যবাদী বিরোধী রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করে সর্বস্তরের জনতার ঐক্যের ডাক দেন। তিনি বলিভিয়ার দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা ‘শ্বেত-শ্রেষ্ঠত্ব’র মূলে আঘাত করেন এবং ভূমি সংস্কার করে আদিবাসীদের ভূমি-অধিকার নিশ্চিত করেন। দীর্ঘ শাসনামলে বলিভিয়ার দেশজ উৎপাদন বেড়ে ছিল তিনগুণ। জাতীয় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৪ থেকে ৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। গত বছরও প্রবৃদ্ধি ছিল ৪.২ শতাংশ। গোটা মহাদেশের মধ্যে যা সবচেয়ে বেশি। বলিভিয়ার ধনবৈষম্য কমিয়ে আনতে এবং দারিদ্র্য দূরীকরণেও মোরালেস ছিলেন বেশ সফল। দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালে ৩৮ শতাংশ থেকে ২০১৮ সালে ১৫ শতাংশে নেমে এসেছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং দ্রব্যমূল্যের দামও নিয়ন্ত্রণে আসে। মোরালেসের অর্থনৈতিক সংস্কারকে বলা হয় ‘ইভোনোমিক্স’। দেশীয় অর্থব্যবস্থার সঙ্গে নয়া-উদারনৈতিক বাজার অর্থনীতির মিশ্ররূপÑ বলা হয় মিশ্র-অর্থনীতি। কিন্তু মোরালেসের এই মিশ্র-অর্থব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে। ফলে রাষ্ট্রের ব্যয় বেড়ে যায় এবং ২০১৮ সালে দেশটির বাজেট ঘাটতি প্রবৃদ্ধির ৮ শতাংশে পৌঁছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে দেশের নাগরিকদের বিলাসিতা বেড়েছিল। উন্নয়ন নীতির ভাটা পড়ায় জনজীবনে প্রভাব সৃষ্টি হয়। ফলত নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয় এবং এটাকে কাজে লাগায় বিরোধী দলগুলো।
ইভো মোরালেস ক্ষমতায় আসার পর দেখটির খনিজ সম্পদ জাতীয়করণ শুরু করে। বলিভিয়ায় অনেক খনিজ সম্পদ আছে। এর মধ্যে লিথিয়াম উল্লেখযোগ্য। বিশ্বের মোট মজুদের ৫০ শতাংশ আছে বলিভিয়াতে। দেশটির আন্দিজ পবর্তমালার ওপরের দিকে পটোসি অঞ্চলে এই লিথিয়াম রয়েছে। লিথিয়াম হচ্ছে সব ধরনের বৈদ্যুতিক যন্ত্রের ব্যাটারি তৈরির মূল উপাদান। স্মার্টফোনের এবং সব ধরনের ব্যাটারিচালিত বৈদ্যুতিক যন্ত্রের উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে লিথিয়াম ‘একুশ শতকের স্বর্ণে’ পরিণত হয়েছে। পুঁজি ও দক্ষতার অভাবে দশকের পর দশক বহুজাতিক মাইনিং ফার্মগুলো এই লিথিয়াম উত্তোলন ও ব্যবহার করছে। এসব বহুজাতিক মাইনিং ফার্মগুলোর মধ্যে কানাডার ‘ট্রাইমেটাল মাইনিং’, আর্জেন্টিনার ‘প্যান আমেরিকান এনার্জি’, ভারতের ‘জিন্দাল স্টিল’, ব্রিটিশ-সুইস ‘গ্লেনকোর’ ইত্যাদি প্রধান। এসব মাইনিং ফার্মগুলো একপ্রকার লুটপাটের মতো করে স্থানীয় আদিবাসীদের জীবন ও পরিবেশের প্রতি কোনো ধরনের তোয়াক্কা না করে নামমাত্র মুনাফা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে লিথিয়াম উত্তোলন ও ব্যবহার করে আসছিল। ‘লিথিয়াম করপোরেশন অব আমেরিকা’ ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বলিভিয়া থেকে লিথিয়াম উত্তোলন ও ব্যবহার করেছে মাত্র ৮ শতাংশ মুনাফায়। ২০০৬ সালে মোরালেস ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্রীয় খনিজ সম্পদের এই লুটপাটের লাগাম টেনে ধরেন। খনিজ সম্পদে জাতীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হন। এরকম মাইনিং রাষ্ট্রীয়ভাবে দেখভালেরও সিদ্ধান্ত হয়। বিদেশি বহুজাতিক মাইনিং ফার্মগুলোকে বলিভিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ‘ওয়াইএলবি’ ও ‘কমিবল’র সঙ্গে কাজ করার শর্ত বেঁধে দেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে লিথিয়াম উত্তোলন করে ৪ লাখ লিথিয়াম ব্যাটারি তৈরি এবং উত্তোলিত লিথিয়ামের ওপর রপ্তানি ‘মূল্য সংযোজন কর’ আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যা বহুজাতিক মাইনিং ফার্মগুলোর ব্যবসায়িক স্বার্থে চরম আঘাত ছিল।
২০০৭ সালে ‘জিন্দাল স্টিল’র সঙ্গে বলিভিয়া পুরনো চুক্তি বাতিল করে এবং রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত মেনে নতুন চুক্তির আহ্বান জানায়। এসময় জিন্দাল আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হয় এবং আদালতের রায় জিন্দালের পক্ষে যায়। ২০১২ সালে কানাডার ‘ট্রাইমেটাল মাইনিং’র সঙ্গে বলিভিয়া পুরনো চুক্তি বাতিল করে রাষ্ট্রীয় শর্ত মেনে নতুন চুক্তির আহ্বান জানায়। মোরালেসের অটল সিদ্ধান্তের কারণে রাষ্ট্রীয় শর্ত মেনে ২০১৯ সালে আবার চুক্তি নবায়ন করে। ২০১৪ সালে ‘প্যান আমেরিকান এনার্জি’র পুরনো চুক্তি বাতিল ও কর আরোপের বিপক্ষে ফার্মটি আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে। ব্রিটিশ-সুইস মাইনিং ফার্ম ‘গ্লেনকোর’কে প্রদত্ত সুবিধাও কমানো হয়। কিছুদিন আগে জার্মানির ‘এসিআই সিস্টেমস আলেমানিয়াম’র সঙ্গেও চুক্তি বাতিল করে। ফলে বৃহৎ পুঁজিপতি ফার্মগুলো পানির দামে লিথিয়াম উত্তোলন ও ব্যবহার থেকে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিল। ফলত ফার্ম সংশ্লিট দেশগুলো মোরালেসের ওপর ক্ষেপে ছিল। অন্যদিকে একই সময়ে মোরালেস চীনা এবং রাশিয়ান মাইনিং ফার্মগুলোর সঙ্গে লিথিয়াম ও দেশটির খনিজ সম্পদ উত্তোলনের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। ২০১৮ সালে চীন বলিভিয়া বাণিজ্য অংশীদারিত্বে চতুর্থ রাষ্ট্রের স্থান অর্জন করে। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে চীনের ‘টিবিইএ গ্রুপ’ ও ‘চায়না মেশিনারি’র সঙ্গে বলিভিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ‘ওয়াইএলবি’র ২.৩ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যচুক্তি করে। চুক্তির অর্থ লিথিয়াম খাতে ব্যয় করা হবে। গত জুলাই মাসে আমেরিকার ‘টেলসা’ ও কানাডার ‘পিউর এনার্জি মিনারেলস’র বিনিয়োগ প্রস্তাব পাশ কাটিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে খনিজ সম্পদ উত্তোলনের জন্য বাড়তি বিনিয়োগের আলোচনা করেন। এসব কারণে বিশ্বশক্তিধর বৃহৎ পুঁজিবাদী দেশগুলো এবং তাদের বহুজাতিক মাইনিং ফার্মগুলোর আরাধ্য ছিল মোরালেসের পতন। বিশ্বব্যাপী লিথিয়ামের চাহিদার বড় কারণ হচ্ছে, বর্তমানে বিশ্ববাজারে লিথিয়াম ব্যাটারির যে চাহিদা রয়েছে তা ২০২৫ সালে দ্বিগুণ হবে। অন্যদিকে মোরালেস গত নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার ফলে প্রায় ২০২৫ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা পোক্ত করে ফেলেছিলেন। এই মুহূর্তে মোরালেসের পতন বহুজাতিক মাইনিং ফার্মগুলোর জন্য হাতে চাঁদ ধরার মতো আনন্দ এনে দিয়েছে।
ইভো মোরালেস দক্ষিণ আমেরিকায় ইউরোপ এবং আমেরিকার আধ্যিপত্য এবং সাম্রাজ্যবাদবিরোধী শাসক। কিউবার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, আমেরিকার মদদে হন্ডুরাসের সেনা-অভ্যুত্থান এবং ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে মার্কিন হস্তপেক্ষের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন তিনি। ফকল্যান্ড নিয়ে ব্রিটেন-আর্জেন্টিনার দ্বন্দ্বের বিষয়ে ছিলেন সোচ্চার। মার্কিন গোপন নথি ফাঁসকারী এডওয়ার্ড স্নোডেনের মুক্তির দাবিতেও তিনি সোচ্চার ছিলেন। ভেনেজুয়েলার সাবেক প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজের সঙ্গে মিলে ‘ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ’-এ যোগ দিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, এই জোটে আমেরিকাকে রাখা হয়নি। এসব কারণে মোরালেস আমেরিকা ও ইউরোপের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। আমেরিকা দক্ষিণ আমেরিকার ভূ-রাজনীতি ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রভাব খাটাতে চায়। কিন্তু মোরালেসের কর্মকা- আমেরিকার স্বার্থে আঘাত হানে। নির্বাচনের কারচুপি নিয়ে ওএএস যে অভিযোগ এনেছে এটাও আমেরিকার চালেই হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এই সংস্থাটির সঙ্গে লাপাজে অবস্থিত আমেরিকান দূতাবাসের যোগাযোগের প্রমাণ সংবলিত ১৬টি অডিও রেকর্ড প্রকাশ করেছে রেডিও এডুকেশ নেটওয়ার্ক। এ থেকে মনে করা হচ্ছে মোরালেসকে ক্ষমতা থেকে সরাতেই পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। এবং উগ্র-ডানপন্থিদের উসকে দিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। বলিভিয়ার সেনাপ্রধান মোরালেসকে পদত্যাগের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এমএএসের কর্মী বা সমর্থকদের ওপর কোনো ধরনের নিপীড়ন করবে না। কিন্তু এ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। এমএএস কর্মী-সমর্থকদের ও আদিবাসী কৃষকদের আন্দোলনে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ইতিমধ্যে অনেককে হত্যা করা হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে বলিভিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যায় সেটা বলা মুশকিল। দেশটিতে গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার জন্য আগামী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে সেটা কতটা বাস্তবায়ন হয় এবং মোরালেসের ভাগ্যে কী আছে তা সময়ই বলে দেবে।