
করোনাকালে চলে গেলেন কামাল লোহানী। শেষ পর্যন্ত করোনা তাকে পরাজিত করল। অবশ্য বার্ধক্যজনিত অনেক সমস্যাই তার দেহে বাসা বেঁধেছিল। কিন্তু ঐসব রোগের সঙ্গে লড়াই করে প্রতিবারই তিনি জীবনে ফিরে এসেছেন। এবারও সে রকমই আশা করেছিলাম। কিন্তু করোনা সংক্রমণ ঐসব রোগকে প্রকট করে তাকে জীবনে ফিরতে দিল না। কেবল এই ক্ষেত্রেই নয়, জীবনের সব ক্ষেত্রেই ছিলেন তিনি লড়াকু ব্যক্তিত্ব।
আজীবন সংগ্রামী এই মানুষটির পুরো নাম ছিল আবু নঈম মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল খান লোহানী। তার জন্ম সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার খান সনতলা গ্রামে ১৯৩৪ সালের ২৬ জুন। মাকে হারান মাত্র ৬-৭ বছর বয়সে। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকার মধ্যেই তার স্কুলজীবন শুরু হয়। ১৯৪৮ সালে চলে আসেন পাবনায়। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের বছরই মাধ্যমিক পরীক্ষা পাস করেন। ভাষা আন্দোলনেই তার রাজনীতির শুরু। এরপর পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ইতি টানেন। রাজনীতি, সাংবাদিকতা ও সংস্কৃতিচর্চা মনপ্রাণ ঢেলে দিয়ে কাজ করতে থাকেন।
১৯৫৩ সালে পাবনার তৎকালীন জিন্নাহ্ পার্কে মুসলিম লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠানে নুরুল আমীনের আগমনের প্রতিবাদে যে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদী বিক্ষোভ করেন, তাদেরই একজন ছিলেন কামাল লোহানী। পাবনার রাজনৈতিক নেতা, এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যাপক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কামাল লোহানীও গ্রেপ্তার হন। এরপর একাধিকবার তার জায়গা হয় জেলখানায়।
এভাবে স্কুল পাস করার সময় ভাষা আন্দোলনে যোগদান করে তার যে রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় তা অব্যাহত থাকে আজীবন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের পক্ষে কাজ করেন। ১৯৫৪ সালের ২৯ মে ৯২-(ক) ধারা দিয়ে পূর্ববাংলায় ‘গভর্নরের শাসন’ চালু করার পর আবার ধরপাকড় শুরু হয়। এ সময় আবার গ্রেপ্তার হন তিনি। ১৯৫৫ সালের জুলাই মাসে ছাড়া পান। বাড়িতে পড়াশোনা নিয়ে মতবিরোধ হয়। ছোট চাচা তাসাদ্দুক লোহানীর কাছ থেকে ১৫ টাকা নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। শুরু হয় জীবনসংগ্রাম। তিনি ততদিনে মার্ক্সবাদের অনুসারী হয়ে উঠেছেন। শুরু হয় সাংবাদিকতার জীবন। ১৯৫৫ সালে যোগ দেন দৈনিক ‘মিল্লাত’ পত্রিকায়। ইতিমধ্যে গোপন কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাপ গঠিত হলে যোগ দিয়েছেন তাতে।
গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মী হিসেবে যেমন, তেমনি সাংবাদিকতায়ও তিনি বিশিষ্ট হিসেবে পরিচিত হন। বাষট্টির সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে আবার জেলে। এর আগে আইয়ুবের রবীন্দ্রবিরোধী চক্রান্তের বিরোধিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবার্ষিকী পালনে রাখেন বিশিষ্ট ভূমিকা। সংস্কৃতি জগতে কেবল নাটকেই বিশিষ্ট নন, নৃত্যে ও নৃত্যনাট্যে হয়ে ওঠেন অনন্য। এ দেশের প্রথিতযশা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট গড়ে তুলতে যেমন ভূমিকা রাখেন, তেমনি রাজনৈতিক মতান্তরের কারণে গড়ে তোলেন ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী। এই ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠীই ষাটের দশকে গণসঙ্গীত, গণনাট্য ও গণধর্মী নৃত্যনাট্য প্রসারে বিশিষ্ট ভূমিকা রাখে। ঢাকার পল্টন ময়দানে নৃত্যনাট্য ‘আলোর পথ যাত্রী’ লাখো মানুষকে মাতিয়েছিল।
ষাটের দশকের শেষভাগে এসে মস্কো-পিকিং প্রশ্নে কমিউনিস্ট পার্টি বিভক্ত হলে তিনি পিকিং অংশে অবস্থান নেন। সে সময় তার নয়া পল্টনের বাসা যেমন ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠীর কেন্দ্র ছিল, ছিল আমাদের মতো কমিউনিস্ট কর্মীদের আড্ডার জায়গা।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অনন্য ভূমিকা রাখেন কামাল লোহানী। এই সময় চিত্রপরিচালক জহির রায়হানসহ তিনি ‘কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের পূর্ব বাংলা সমন্বয় কমিটি’র বুদ্ধিজীবী সেলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে কাজ করেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি দেশে ফিরে বাংলাদেশ বেতার পুনর্গঠন করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে ঢাকায় ফিরে এলে তিনি সেই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ঘটনার সরাসরি ধারা বিবরণী দেন রেডিওতে। পরে তিনি আবার সাংবাদিকতায় ফিরে আসেন এবং প্রথমে সাপ্তাহিক নয়াযুগ ও দৈনিক বঙ্গবার্তা গড়ে তুলতে কাজ করেন।
বাকশাল গঠন করা হলে সাংবাদিকদের মধ্যে কামাল লোহানী, নির্মল সেন, কবি শামসুর রাহমানসহ তাতে যোগ দিতে অস্বীকার করেন। পঁচাত্তর পরবর্তীকালে রাজশাহী থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক বার্তা’র সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। তবে বিএনপির তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মতান্তর হওয়ায় ‘দৈনিক বার্তা’ ছেড়ে দেন। আশির দশকে সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের হয়েও তিনি অনন্য ভূমিকা রাখেন। এ কারণে এরশাদের পতনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাকে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়। কিন্তু এবারও বিএনপির সংস্কৃতিমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় ঐ পদ ছেড়ে দেন। শেখ হাসিনার সরকার তাকে পুনরায় শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়।
কিন্তু প্রথাবিরোধী কামাল লোহানী আবার সাংস্কৃতিক ও সাংবাদিকতার জীবনে ফিরে আসেন। এই সময়কালে তিনি পত্র-পত্রিকায় কলাম লেখার পাশাপাশি ওয়ার্কার্স পার্টির মুখপত্র সাপ্তাহিক ‘নতুন কথা’র উপদেষ্টা সম্পাদকের দায়িত্ব নেন এবং পত্রিকাটিকে নতুন রূপ দেন।
কামাল লোহানী পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ গণশিল্পী সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করলেও শেষদিকে সংগঠনটি নিয়ে তার সাংগঠনিক অতৃপ্তি কাজ করছিল। এ সময় ‘উদীচী’ তাকে সভাপতি করে তাদের সংগঠনে নিয়ে যায় এবং জানা যায় এই সময় সিপিবিও তাকে তাদের পার্টির সদস্যপদ দেয়।
শেষ দিকে তার চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও তিনি তার কলাম লেখার কাজ অব্যাহত রেখেছিলেন। আর মাঠে সক্রিয় ছিলেন সাম্প্রদায়িকতাবিরোধিতা ও ধর্মীয় রাজনীতির বিরুদ্ধে। সারা জীবনের লড়াকু যোদ্ধা কামাল লোহানী শেষ পর্যন্ত করোনা সংক্রমণে চলেই গেলেন। তবে বাংলাদেশের সংস্কৃতি জগৎ ও সাংবাদিকতার জগৎই কেবল নয়, দেশের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনীতি তাকে স্মরণ করবে চিরকাল।
লেখক
সংসদ সদস্য এবং সভাপতি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি
করোনাভাইরাস মহামারী বিস্তারের প্রেক্ষাপটে লকডাউন ও অন্যান্য কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ যেমন ব্যাহত হচ্ছে তেমনি খাদ্য নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়ছে। বাংলাদেশেও খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তার অন্যতম মৎস্য খাত। প্রাণিজ আমিষের ৬০ ভাগ জোগানই আসে মৎস্য খাত থেকে। অভ্যন্তরীণ ও সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ এবং মৎস্যচাষের ওপর ভিত্তি করে খাতটির অর্জন কম নয়। সরকারের মৎস্য অধিদপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট ৪২ দশমিক ৭৭ লাখ মেট্রিক টন মৎস্য উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে, অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত জলাশয় থেকে ১২ লাখ ১৬ হাজার ৫৩৯ মেট্রিক টন মাছ আহরণ করা সম্ভব হয়েছে। আর অভ্যন্তরীণ বদ্ধ জলাশয়ে চাষ করে ২৪ লাখ ৫ হাজার ৪১৫ মেট্রিক টন উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। একই সময়ে বঙ্গোপসাগরের বুক থেকে আহরিত হয়েছে ৬ লাখ ৫৪ হাজার ৬৮৭ মেট্রিক টন মৎস্য।
ঐতিহ্যগতভাবে ‘মাছে ভাতে বাঙালি’ হিসেবে আমাদের খ্যাতি আছে। আধুনিক কালে এসে এখন শুধু খাদ্য হিসেবেই নয়; আয়-উপার্জনের অবলম্বন হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিয়েছে মৎস্য চাষ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০১৮ সালের প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে উন্মুক্ত জলাশয় থেকে মাছ আহরণে তৃতীয় শীর্ষস্থানে রয়েছে। আর চাষাবাদের মাধ্যমে মাছ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। এছাড়া ‘তেলাপিয়া’ জাতের মাছ উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ ও এশিয়া মহাদেশে তৃতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। এভাবে মোট জাতীয় উৎপাদন বা জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য স্থান করে নিয়েছে মৎস্য চাষ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জিডিপিতে মৎস্য খাতের অবদান ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ। বর্তমান সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ ও প্রচেষ্টায় জিডিপিতে মৎস্য খাতের অবদান ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলেছে। তবে এখন করোনাভাইরাসের মহামারী বিস্তারের কারণে দেশের বিভিন্ন খাতের মতো এদেশের মৎস্য খাতেও বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে।
দেশে যখন করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হয় তখনই মাছের মাধ্যমে ভাইরাসটির সংক্রমণের ভয়াবহ ও আতঙ্কজনক গুজব রটেছিল। তবে সরকারের মৎস্য অধিদপ্তর সঠিক সময়ে কার্যকর ভূমিকা নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে সচেতনতা তৈরি করায় গুজবটি খুব প্রভাব ফেলতে পারেনি। কিন্তু লকডাউনের প্রবল প্রভাবে বিদেশে পণ্য রপ্তানি ও অভ্যন্তরীণ পরিবহন সেবা ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। ফলে দেশে উৎপাদিত মাছের বিপণন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থায় বেশ বড় আঘাত লেগেছে। পরিবহন সংকটে মাছচাষিরা রেণু পোনা সংগ্রহ করতে পারছেন না। ফলে রেণু উৎপাদন বন্ধ রেখেছেন সারা দেশের উৎপাদনকারীরা। এই পোনা উৎপাদনকারী হ্যাচারিগুলোতে শ্রমিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। চাষিরা তাদের উৎপাদন বাজারজাত করতে না পারায় পুকুরে মাছ ফেলে রেখেছেন। ফলে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। যে সময় বিক্রি করে আবার নতুন পোনা ছাড়ার কথা, সে সময় তারা তা করতে পারছেন না। চাষের জন্য খাদ্য ও অন্যান্য উপকরণ দুর্লভ হওয়ার কারণেও মৎস্যচাষিদের জীবিকা সংকটে পড়েছেন। লকডাউনে মাছের দাম কমে যাওয়া, বাজার বন্ধ হওয়াসহ বেশ কিছু সংবাদও নানা গণমাধ্যমে এসেছে। লকডাউনের কারণে হোটেল রেস্তোরাঁ ও নানা ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় মাছের চাহিদার ওপর প্রচুর প্রভাব পড়ছে। এতসব কিছুর ফলে মৎস্য উৎপাদন ও বিপণনের যে শৃঙ্খল, সেটি বিঘিœত হচ্ছে।
এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দেশের প্রান্তিক মৎস্যচাষি, পোনা উৎপাদনকারী, মৎস্য ব্যবসায়ী, মৎস্য পরিবহন, মৎস্য উৎপাদন ও পোনা উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত সবাই; শ্রমিকরা পর্যন্ত। এই শৃঙ্খল থমকে যাওয়ায় আগামীতে বাংলাদেশের মৎস্য চাষ ও উৎপাদন ব্যবস্থায় বড় ধরনের প্রভাব পড়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। পেটের দায়ে অনেকে মৎস্য আহরণের কাজ নিয়মিত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলমান রাখলেও কোনোভাবেই উপযুক্ত দাম পাচ্ছেন না। ফলে তাদের পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তা যেমন হুমকির মুখে তেমনি অর্থনৈতিকভাবেও তারা দৈন্যদশায় পতিত হচ্ছেন। দেশের ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী, যারা বিশ্বজুড়ে ‘স্মল স্কেল ফিশারিজ’-এর বড়সড় অংশীদার, তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা করোনাভাইরাস পরবর্তী সময়ে আরও অবনতির সমূহ আশঙ্কা করছেন মৎস্য খাত সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশের প্রক্রিয়াজাত মাছ রপ্তানিতে স্থবিরতা নেমে আসায় বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে। রপ্তানি বন্ধ থাকায় চিংড়ি, কাঁকড়া ও কুঁচিয়া শিল্পের ওপর বিরূপ প্রভাবের সংবাদ গণমাধ্যমে ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। এদিকে, প্রলয় সৃষ্টিকরা ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে আমাদের মাছ উৎপাদনের প্রধান বিভাগ খুলনার ছয় জেলার ১৯৭টি ইউনিয়নের বিরাট মৎস্য খাতে মোট ২৮৪ কোটি ৮ লাখ ৮৪ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর, খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়। কার্প জাতের মাছ (সাদা মাছ), চিংড়ি, কাঁকড়া, কুঁচিয়ার পাশাপাশি সেখানকার অবকাঠামোগত ক্ষতিও ব্যাপক।
সার্বিকভাবে মহামারী ও ঘূর্ণিঝড়ের ফলে আমাদের মৎস্য খাতে জড়িত সব শিল্প অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ও হচ্ছে। ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ ও ভবিষ্যতে করণীয় খুব দ্রুত ভাবা প্রয়োজন। মৎস্য খাতের প্রবৃদ্ধির হার সচল রাখতে ও দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং উন্নয়ন সংস্থা, দাতা সংস্থা ও গবেষকদের একত্রে কাজ করতে হবে। উল্লেখ্য, দেশের উপকূলের জেলেদের করোনাভাইরাস ও দুর্যোগ মোকাবিলায় সচেতনতা বৃদ্ধিতে নৌবাহিনী কাজ করছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রথম থেকেই একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করে প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ মৎস্য চাষ, ব্যবস্থাপনা, মাছের খাদ্যপ্রয়োগ, মাছের চিকিৎসা ও মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণে সৃষ্ট সমস্যায় সেবা দিতে বিনা পয়সায় ‘টেলিফোন সহায়তা সেবা’ চালু করেছে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত খামারি, মৎস্য উৎপাদক, মৎস্য উদ্যোক্তাদের অর্থ সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সরকার ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম ঘোষণা করেছে। এসব সহযোগিতা যাতে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষি ও মৎস্যশ্রমিকরা দ্রুত পান সেই বিষয়টি খুবই জরুরি।
একই সঙ্গে জরুরি করোনা মহামারীর প্রভাব থেকে মৎস্য খাতকে রক্ষায় মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে গবেষণাগারের বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং প্রকৃত ক্ষতি নিরূপণে গবেষকদের কাজ করা। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করে মহামারী পরবর্তী সময়ের করণীয় ঠিক করতে গবেষণায় অর্থ বরাদ্দ করা প্রয়োজন। দাতা সংস্থাগুলোর ঠিক করা উচিত, মৎস্য খাতের আসন্ন বিপদে কীভাবে কোথায় সহযোগিতা করবেন। মহামারী পরবর্তী সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে খাদ্য নিরাপত্তা। বাংলাদেশের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে বড় অবদান রাখা মৎস্য খাতের ক্ষতি কাটিয়ে উঠে অগ্রগতি অব্যাহত রাখার জন্য তাই সরকারি-বেসরকারি কর্র্তৃপক্ষ ও উদ্যোক্তাদের সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
লেখক : স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী ও গবেষক, জলজ সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
স্কুল থেকে ফেরার পথে কিছু ছেলে নিয়মিত মেয়েটিকে ‘টিজিং’ করে। মেয়েটি এক দিন বাড়ি ফিরে মাকে জানায়। মা শোনেন, তারপর নরম গলায় বলেন, ছেলেরা একটু অমন করেই থাকে। তুই ওদের দিকে তাকাস না। একটু মানিয়ে নে। আদরের মেয়েটিকে বিয়ে দেওয়ার সময়ও বারবার মানিয়ে চলার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। সেজন্য হয়তো আদরের মেয়েটি সংসার টিকিয়ে রাখার স্বার্থে পরিবার থেকে প্রাপ্ত ‘মানিয়ে চলো’ শিক্ষার কারণে শ্বশুরবাড়ির লোকদের নানাবিধ অত্যাচার মুখ বুঝে সহ্য করে। বাংলাদেশের হাজার হাজার নারী এভাবে মানিয়ে নেওয়ার দুর্বিপাকে পড়ে জীবন খুইয়ে চলেছে। তারপরও মানিয়ে নেওয়ার শিক্ষা আমরা দিয়েই যাচ্ছি।
অফিসে অন্যায়ভাবে আপনাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। সুপারভাইজার বাজে আচরণ করছে। একজন শুভাকাক্সক্ষী সহকর্মীর সঙ্গে শেয়ার করুন। সেও বলবে, অফিসে এমন হয়েই থাকে। একটু মানিয়ে নিন, অ্যাডজাস্ট করে চলুন। সমাজে এটা বেশ প্রচলিত তত্ত্ব যে, বস ইজ অলয়েস রাইট। কাজেই বস যদি ঠিক নাও থাকেন তারপরও বসের কথা শুনতে হবে বা বসের আদেশ পালন করতে হবে। নিজের বিবেকবুদ্ধি দিয়ে যেটা যেটা অন্যায় বলে মনে হচ্ছে, বসের আদেশ বলে সেটাই করতে হচ্ছে। নিজের বিচার-বুদ্ধি-বিবেক বা চিন্তাশক্তি এখানে প্রবলভাবে ব্যর্থ। নিয়োগকর্তার প্রতি আনুগত্য হয়তো প্রত্যাশিত। নিয়োগকর্তা বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আদেশ মেনে চলা অনেক ক্ষেত্রে দায়িত্বের মধ্যেও পড়ে। তেমনিভাবে নিয়োগকর্তারও উচিত অধস্তন কর্মীকে প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না করা। বঞ্চিত করলে সেটাকে কখনোই সততা বলে ধরে নেওয়া যায় না। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে হামেশাই দেখা যায় অধিকার হরণের ঘটনা, যা কর্মীর মনোবল দুর্বল করে দেয়। তারপরও সবাই মেনে নিয়ে এবং মানিয়ে নিয়েই চলছে!
আমাদের সমাজে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সন্তান-সন্ততিদের মানিয়ে চলা বা খাপখাইয়ে নেওয়ার শিক্ষাটা বেশ জোরেশোরেই দেওয়া হয়। জীবনে চলার ক্ষেত্রে প্রতি পদে আমরা শিখি এই অ্যাডজাস্ট করা বা মানিয়ে নেওয়ার শিক্ষা! সেটা অন্যায়-অবিচার হলেও। এই মানিয়ে চলার অর্থই হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে অন্যায়ের সঙ্গে এক ধরনের আপস করা। অন্যায়কারীর সঙ্গে সমঝোতা করে টিকে থাকা। এভাবে সৃষ্টি হচ্ছে একটি প্রতিবাদহীন ‘মানিয়ে নেওয়া’ প্রজন্ম।
হ্যাঁ, পরিস্থিতি বিবেচনায়, বাস্তবতার কারণে হয়তো অনেক সময় মানিয়ে নিতেই হয়। মানিয়ে নেওয়ার কোনো বিকল্প থাকে না। কিন্তু সব ক্ষেত্রে মানিয়ে নেওয়ার প্রবণতা কি সুস্থ এবং স্বাভাবিক বলে গণ্য হতে পারে? আসলে সবকিছুকে মানিয়ে নিতে নিতে এখন এমন একটা অবস্থায় আমরা পৌঁছে গিয়েছি, যখন কোথাও অন্যায়, অবিচার হতে দেখলে আমরা প্রতিবাদে না করে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টাটাই সবার আগে করি। সে দুর্নীতি দেখলেও, অন্যায় হতে দেখলেও! খুন, ডাকাতি, ধর্ষণ, জুলুম দেখলেও। রাষ্ট্রশক্তির অন্যায়-অনাচার-জুলুম দেখলেও। মানিয়ে চলার মধ্যেই যেন মেলে এক ধরনের আত্মতুষ্টি! বড়রা ছোটদের বলবে, মানিয়ে চলো। ছোটরাও বিশেষ পরিস্থিতিতে বড়দের বলবে মানিয়ে চলতে। আমরা ছোট-বড় নির্বিশেষে শিখে গিয়েছি মানিয়ে চলতে!
বলা হয়, অন্যায়কারী আর অন্যায়ের সমর্থনকারী সমান অপরাধী। কিন্তু আমরা এটা বিশ্বাস করি না। আমরা বরং প্রবলভাবে বিশ্বাস করতে শিখেছি যে, বোবার কোনো শত্রু নেই। সেজন্য আমরা কথা বলতে পারলেও বলি না, বোবা সেজে থাকি অথবা বোবা বানানোর চূড়ান্ত আয়োজন বিদ্যমান থাকায় বোবার মতো আচরণ করি। অহেতুক শত্রু সৃষ্টি করে কী লাভ? সব সময় সবার কাছে সমান গ্রহণযোগ্য হওয়ার মানসে অন্যায়ের প্রতিবাদ না করে মুখ বুজে থাকি এবং শত্রু-মিত্র, অন্যায়কারী, সবার সঙ্গে সমঝোতা করে চলি। কিন্তু প্রশ্নটা দাঁড়ায়, এভাবে আর কত দিন? আর কত দিন মানিয়ে চলতে হবে? অনেকের কাছে হয়তো মানিয়ে চলাই চলতি সময়ের পক্ষে সবচেয়ে ভালো পরিস্থিতি! তাতে কারও সঙ্গেই অশান্তিতে জড়াতে হয় না! এভাবে দেখলে বেশির ভাগ পরিস্থিতিই মোটামুটি এড়িয়ে চলা সম্ভব। তা সে বিপদই হোক বা আপদ! আর এই ভাবনাটাই ভালো করে বুঝেছে শাসকযন্ত্র। সাধারণ মানুষের মনের এই সুবিধাবাদী নীতিকে দেখেই শাসক বুঝতে পারে, তারা কত দূর অবধি মানিয়ে নিতে পারে।
পৃথিবী বদলায়, সমাজ পাল্টায়। তাও মানিয়ে নেওয়ার মধ্যে যে নেতিবাচক মনোভাবই কাজ করে, তা বোধ হয় আমরা বুঝেও না-বোঝার ভান করি। কিন্তু সমাজের মধ্যে এক শ্রেণির মানুষও থাকেন, যারা এই নেতিবাচক দিকের কুফল বুঝেই মানিয়ে নেওয়ার ‘সংস্কৃতি’র বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যান। তাদেরই শাসক তথা সমাজপ্রভুরা দেশদ্রোহী বা সমাজের পক্ষে ক্ষতিকর বলে অভিহিত করে। রাজনীতির খেলায় মানিয়ে নেওয়ার প্রবণতার বিরুদ্ধে লড়াই করে যাওয়া মানুষজনকেই আক্রমণের শিকার হতে হয় চিরকাল।
আমরা সারা পৃথিবীর যেকোনো মানিয়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদকেই দুহাত তুলে সমর্থন জানাই! অথচ, ঘরের পাশে অন্যায় ঘটলে, মানিয়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হলে তাকে কতটা স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন করি, সে এক বিরাট প্রশ্ন! কেউ প্রতিবাদ করলেই তাকে আগে থেকে স্থির করা কিছু তকমা দিয়ে দেগে দিয়ে বিষয়টাকে সরলীকৃত করে তোলার চেষ্টা করি। আবার তার প্রতিক্রিয়ায় কেউ প্রতিবাদ করলে তাকেও আক্রমণ করতে দ্বিধা বোধ করি না। সমস্যার গভীরে না গিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি আর যত সেই সিদ্ধান্তকে নিজেদের মনের মতো যুক্তিতে বাঁধতে যাই, ততই তা শাসকের সমর্থন পায়। মূল সমস্যাকে গৌণ করে অন্য সমস্যাকে মুখ্য করে তোলা হয় এভাবেই।
আমরা অনেক কিছুই মেনে নিয়েছি! রাষ্ট্রশক্তির যথেচ্ছাচার মেনে নিয়েছি! সংকীর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি! আসলে, এই মানিয়ে নেওয়াই এখন আমাদের ‘সংস্কৃতি’! কিন্তু মুশকিল হলো, সবাই তো আমাদের মতো নয়! কেউ কেউ তো একটু অন্যভাবেও ভাবতে পারেন! পৃথিবীর যেকোনো দেশেই প্রতিবাদ মূলত নবীন প্রজন্মই করে। ছাত্রসমাজই করে। তা সে তিয়েনআন মেন স্কয়ারই হোক বা টিএসসি কিংবা শাহবাগে অথবা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই হোক। ছাত্রসমাজই এই মানিয়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে। তাই চিরকাল শাসকের চক্ষুশূল বুদ্ধিদীপ্ত উজ্জীবিত ছাত্রছাত্রীরাই। সমস্যা হলো, ছোট মাপের রাজনীতি নবীন প্রজন্মকে দিশা না দেখিয়ে নিজেদের ফায়দা তোলার জন্যই ব্যস্ত থাকে। এটাই গণতন্ত্রের করুণ বাস্তবতা!
আমরা এক সর্বনাশা ভাবনায় আচ্ছন্ন। ‘কী হবে এসব করে’ বা ‘ঝামেলা বাড়িয়ে কী লাভ’, আমাদের এই নির্বিকার অবস্থান ক্রমেই দৈত্যদের অবাধ বিচরণের পথ করে দিচ্ছে। আমরা মেনে নিতে শিখে গিয়েছি আর ভেবে নিয়েছি, যাই ঘটুক না কেন, আমাদের কিছু হবে না!
এক অন্য রকম ঝরা সময় এখন। সব সময় নিরাপত্তাহীনতা আর আতঙ্ক সর্বস্তরে সর্বক্ষেত্রে বয়ে চলেছে। প্রতিবাদে মুখর হওয়াই সম্ভবত পরিত্রাণের পথ। কিন্তু শাসকের কাছে কতটা সেই প্রতিবাদ পৌঁছাতে পেরেছে, সেটা প্রশ্ন। পরিবর্তন কখনোই প্রবীণরা একা আনতে পারেননি। সব সময়ই উদ্যম দেখিয়েছে যৌবনই। তা সে রাশিয়ায় বিপ্লবই হোক বা আমেরিকার পুলিশি ব্যবস্থা পরিবর্তনের চলমান আন্দোলনই হোক। বাংলাদেশে প্রতিটি অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে কিন্তু তরুণসমাজই রুখে দাঁড়িয়েছিল।
সব ধরনের অন্যায়-অপকর্ম আমরা নির্বিকার চিত্তে মেনে নিচ্ছি আর অন্য প্রান্ত আরও উৎসাহিত হচ্ছে। সর্বস্তরে যেভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ হওয়া দরকার, তা হয়ে উঠছে না। যাদের প্রতিবাদ করার কথা তারাও কেমন যেন চুপচাপ! আসলে, ওই মানিয়ে নেওয়ার অভ্যাস! আর আমরা অভ্যাসের দাস! সমস্যার গভীরে গেলে দেখা যায়, যেকোনো সমস্যার ক্ষেত্রে দিশাহীনতাই এ দেশে প্রকটভাবে দেখা দিচ্ছে। নেই স্বচ্ছতা, জবাবদিহি। নেই সমস্যা থেকে উত্তরণের কোনো আন্তরিক উদ্যোগ।
এদিকে ক্রমেই সমাজ দেহের দগদগে ঘা উন্মোচিত হচ্ছে। সবখানে অনিয়ম, সবখানে দুর্নীতি, অনাচার। অথচ আমরা এজন্য কোথাও কোনো কার্যকর প্রতিবাদের ভাষা রচনা করতে পারছি না। রাজনীতির খেলায়, মানিয়ে নেওয়ার খেলায় আজ অভ্যস্ত আমরা! যাই ঘটুক, চুপচাপ থাকো, মানিয়ে নাও! মানিয়ে নাও, সবকিছু মানিয়ে নাও!
না, সব ক্ষেত্রে মানিয়ে নেওয়া বা মেনে নেওয়ার শিক্ষা থেকে আমাদের বের হয়ে আসার সময় হয়েছে। সমস্ত স্তাবকতা, ভীরুতা আর আপসকামিতার ঊর্ধ্বে উঠে আসুন আমরা প্রতিবাদী হই।
লেখক
লেখক ও কলামনিস্ট
বিগত বছরগুলোতে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যে সব বড় পরিবর্তন দেখা গেছে তার মধ্যে বহুল আলোচিত একটি বিষয় জনপ্রতিনিধিদের জনবিচ্ছিন্নতা। সমালোচকরা বলছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এখন আর আগের মতো নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার তৃণমূলের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত নন। চলমান এমন পরিস্থিতির মধ্যেই সারা দেশ যখন ইতিহাসের ভয়াবহতম মহামারীর কবলে পড়ল তখন আবারও আলোচনায় চলে আসেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। বিশেষত মহামারী মোকাবিলার শুরুর দিকে জাতীয় সংসদের সদস্য বা এমপিদের দৃশ্যমান কোনো ভূমিকা না থাকায় বিষয়টি নিয়ে তুমুল সমালোচনা হয়। রাজনৈতিক অঙ্গন তো বটেই সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেও মন্ত্রী-এমপিদের নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা হয়। এ সময় জনপ্রতিনিধিদের বদলে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদেরই মহামারী মোকাবিলায় সম্মুখসারিতে দেখা গেলে তারও সমালোচনা হয়। অবশ্য এরপর দৃশ্যপট কিছুটা বদলায় এবং রাজনীতিকদের সক্রিয়তাও দেখা যায়। এখন আবার করোনাকালে এমপিদের জন্য স্থানীয় উন্নয়ন প্রকল্পের সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমোদন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
শনিবার দেশ রূপান্তরে ‘করোনার মধ্যেই সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা পাচ্ছেন এমপিরা’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে স্থানীয় উন্নয়ন প্রকল্পের এই বরাদ্দ পাশের জন্য রবিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) উত্থাপনের খবর জানানো হয়। পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক এ প্রকল্পটি নেওয়া হচ্ছে। এটি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের চলমান একটি প্রকল্পেরই তৃতীয় পর্যায়ের প্রকল্প। এতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৬ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা। ২০২৪ সাল নাগাদ এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। প্রতি বছর ৫ কোটি করে চার বছরে মোট ২০ কোটি করে টাকা পাবেন প্রত্যেক এমপি। এ অর্থে নিজ নিজ সংসদীয় এলাকার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে রাস্তাঘাট, সেতু ও কালভার্ট নির্মাণে এ অর্থ ব্যয় করবেন তারা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতীতেও এ ধরনের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ টাকা মূলত এমপিদের তুষ্ট করার জন্য দেওয়া হয়; স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যয় হয় না। নতুন করে প্রকল্প শুরুর আগে পুরনো প্রকল্পগুলোর নিরপেক্ষ মূল্যায়ন প্রয়োজন।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর প্রত্যেক এমপি নিজ নিজ আসনের অবকাঠামো উন্নয়নে ১৫ কোটি টাকা করে বরাদ্দ পেয়েছিলেন। সে সময় প্রকল্প ব্যয় ছিল ৪ হাজার ৮৯২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এ প্রকল্প ২০১০ সালের মার্চে শুরু হয়ে ২০১৬ সালের জুনে শেষ হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে এ প্রকল্পের দ্বিতীয় দফায় এমপিদের ২০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এ পর্যায়ে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৬ হাজার ৭৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন মাস। এখন সেই প্রকল্প শেষ না করেই তৃতীয় মেয়াদে এমপিদের ফের ২০ কোটি টাকা করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এমপি বা জনপ্রতিনিধিদের প্রতি স্থানীয় ভোটারদের অনেক চাহিদা বা দাবি থাকে। বাস্তবতার খাতিরে এসব দাবির অনেক কিছুই পূরণ করতে হয়। মন্ত্রী আরও বলেন, করোনার সময় এ প্রকল্প নেওয়া হলেও এখনই বাস্তবায়ন হয়ে যাবে তা নয়। কিন্তু করোনার পরে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি আমাদের রাখতে হবে।
নানা সমালোচনা সত্ত্বেও স্থানীয় উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য এমপিদের জন্য এমন বরাদ্দ দেশে দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। মূলত স্থানীয় রাজনীতিতে এমপিদের অবস্থান শক্তিশালী করা এবং স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মীদের হাতে রাখার কাজেই বিলিবণ্টন হয়ে থাকে এ ধরনের বরাদ্দগুলো। অবশ্য, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী এই প্রকল্পের আওতায় এমপিরা সরাসরি টাকা পান না। এমপিরা শুধু তাদের নির্বাচনী আসনে পছন্দ মোতাবেক বিভিন্ন প্রকল্পের নাম দেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। প্রশ্ন হচ্ছে, করোনা মহামারীর দুর্যোগ সামলাতে যখন জনপ্রতিনিধিদের জরুরি কর্মকাণ্ডে মনোনিবেশ করার কথা তখন এমন রাজনৈতিক প্রকল্প স্থানীয় জনসাধারণের কী উপকারে আসবে? আগে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে কী উপকার হয়েছে, জনগণের কী কল্যাণ হয়েছে সেটা জানা যেমন জরুরি তেমনি এসব প্রকল্পের আওতায় অর্থ ব্যয়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। নইলে দুর্নীতি বাড়াবে। বিচ্ছিন্নতা বজায় রেখে এমন প্রকল্প বরাদ্দের নীতি দিয়ে নয়, জনপ্রতিনিধিদের জনসংশ্লিষ্টতা বাড়াতে সত্যিকারের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বাড়ানো জরুরি।
১৯০৫ সালের ২১ জুন জন্মগ্রহণ করেন দার্শনিক ও সাহিত্যিক জাঁ-পল সার্ত্রে। প্রথম জীবনের ১০ বছর কাটে পিতামহ শার্ল শোয়াইৎজারের তত্ত্বাবধানে। শৈশবে তিনি মাতামহের বিশাল গ্রন্থাগারের প্রায় সব পুস্তকই পড়ে ফেলেছিলেন। তার বয়স যখন ৯ বছর তখন দ্বিতীয় বিয়ের কারণে মায়ের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে তার। ১৯২৫ সালে তিনি ভর্তি হন ফরাসি বুদ্ধিজীবীদের সূতিকাগার বলে খ্যাত ইকোলে নরমাল সুপিরিয়রে। পরীক্ষায় প্রথমবার অকৃতকার্য হলেও দ্বিতীয়বার কৃতকার্য হন। দর্শনশাস্ত্রে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করার পর ফ্রান্স ও বিশ্বের খ্যাতনামা একাধিক দার্শনিকের সঙ্গে তার আলাপ হয়। ক্রমে কান্ট, হেগেল ও হেইডেগারের মতো দার্শনিকদের তত্ত্ব অধ্যয়ন করেন তিনি। ১৯২৯ সালে পরিচয় ঘটে লেখিকা সিমন দ্য বোভোঁয়ার সঙ্গে, যার সঙ্গে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত চমৎকার সম্পর্ক বজায় ছিল তার। ১৯৩১ সালে দর্শনের অধ্যাপক হিসেবে তিনি লা হার্ভেতে যোগ দেন। ১৯৩২ সালে বৃত্তি নিয়ে জার্মানিতে দর্শনশাস্ত্রের ওপর উচ্চতর শিক্ষার জন্য যান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ফরাসি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন একজন ‘মেটেরোলজিস্ট’ হিসেবে। তিনি নাৎসি পার্টির হাতে বন্দিও হন। জার্মানদের কাছে যুদ্ধবন্দি থাকা অবস্থায়ই রচনা করেন তার প্রথম নাটক। যুদ্ধ ও যুদ্ধকালীন বাস্তবতা গভীর ছাপ ফেলে তার মনে। তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘বিয়িং অ্যান্ড নাথিংনেস’ প্রকাশিত হয় ১৯৪৩ সালে। ব্যক্তিজীবনে কোনো সমাজতান্ত্রিক দলের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক না রাখলেও নানা সময়ে তার লেখায় খুঁজে পাওয়া যায় এ ধারার প্রতি প্রচ্ছন্ন সমর্থন। ১৯৬৪ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করলেও তিনি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৮০ সালের ১৫ এপ্রিল তিনি মারা যান।
ধারাবাহিকভাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় চলতি বোরো মৌসুমে সেচে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সরকার নানারকম প্রস্তুতি নিয়েছে বলে দাবি করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুতের যে পরিস্থিতি তাতে গ্রীষ্মে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। বেশি দাম দিয়েও কৃষক ঠিকমতো বিদ্যুৎ না পেলে উৎপাদন ব্যাহত হবে। এতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়তে পারে।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, জ্বালানি তেল, সার ও বীজের দাম বেড়েছে। এখন আবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো। তার মানে চারদিক থেকে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এর ফলে কৃষকের ‘সিগনিফিকেন্ট লস’ হবে। এভাবে দাম বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, বোরো উপকরণনির্ভর ফসল। কিন্তু উপকরণের দাম এভাবে বাড়তে থাকলে, কৃষক আগ্রহ হারিয়ে ফেললে; সে ঠিকমতো উপকরণ ব্যবহার করতে পারবে না। এতে উৎপাদন ব্যাহত হবে। উৎপাদন খারাপ হলে চালের ঘাটতি হবে। এমনিতেই এখন প্রায় ৭০ লাখ টন গম ও ভুট্টা আমদানি করতে হচ্ছে। এরমধ্যে যদি চাল আমদানি করতে হয়; তাহলে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
ড. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘সারাবিশ্ব নানারকম সংকটে ভুগছে। এ অবস্থায় আমাদের অন্তত খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সুযোগ রয়েছে। সেজন্য যে পরিমাণ দাম বেড়েছে সে পরিমাণ নগদ অর্থ সহায়তা দিতে হবে কৃষককে। ২০০৯-১০ সালের দিকে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে এক কোটির বেশি কৃষককে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা সরাসরি নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। এজন্য তারা ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্টও খুলেছিলেন। তাদের সেই অ্যাকাউন্ট এখনো আছে, কিন্তু সহায়তা দেওয়া হয় না। এখন যদি সেই সহায়তা দেওয়া হয় তাহলে কৃষক আবার উৎসাহ পাবে।’
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, প্রতি বছর সেচ মৌসুমে (ফেব্রুয়ারি থেকে মে) বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যায়। গত মৌসুমে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। চলতি বছর সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। গত বছরের তুলনায় এ বছর সেচ সংযোগের সংখ্যা ১ হাজার ৯১টি বেড়ে মোট ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৪৫৯টি হয়েছে। এজন্য বিদ্যুৎ লাগবে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট।
সেচ মৌসুমে অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। সম্প্রতি তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিদ্যুতের চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় রেখে উৎপাদনও বাড়ানো হচ্ছে। সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গ্যাস, ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল সরবরাহ বৃদ্ধি করা, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সার্বিকভাবে পরিস্থিতি ভালো হবে।’
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে প্রতিদিন ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস, ৭৭ হাজার ৪০০ টন ফার্নেস অয়েল এবং ৬৬ হাজার ১০০ টন ডিজেলের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। সূত্রমতে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের সরবরাহ করা বাস্তবে খুব কঠিন ব্যাপার। গত বছর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পিডিবির দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট ছিল। বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এ বছর জ¦ালানির ঘাটতি আরও বেশি। তবে সরকার খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানি করে ঘাটতি মেটানোর উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু আমদানিকৃত গ্যাস দিয়ে চাহিদা অনুযায়ী কতটা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে তা নিয়ে কর্মকর্তাদের অনেকেই সন্দিহান।
পিডিবির তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ২২ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে ১০ হাজার থেকে ১০ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। গ্যাস ও কয়লা সংকটের কারণে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। এ ছাড়া রক্ষণাবেক্ষণের কারণেও কিছু কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে।
দেশে নির্মাণাধীন ও আমদানিকৃত বিদ্যুৎকেন্দ্রের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আগামী মার্চের শেষ দিকে ভারতের আদানি থেকে অতি উচ্চ দামে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ছাড়া মে মাসের দিকে চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের নির্মাণাধীন তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে ৬১২ মেগাওয়াট এবং অন্যান্য কিছু ছোট বা মাঝারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৫০ থেকে ২০০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হতে পারে। এপ্রিল-মে মাসের দিকে বিদ্যুতের চাহিদা সবচেয়ে বেশি হবে। তখন এসব কেন্দ্র সময়মতো উৎপাদনে এলেও ১৩ হাজার মেগাওয়াটের জোগান দেওয়া সম্ভব হবে। এর বাইরে উচ্চ মূল্যের জ্বালানি আমদানির মাধ্যমে কিছু কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম মনে করেন, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করার সক্ষমতা সরকারের নেই। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি সরবরাহ করতে সরকারের ডলার খরচের যে সক্ষমতা দরকার তা সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘জ্বালানি খাতে সরকারের ভুলনীতি আর অন্যায্য ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয়ের কারণে দাম বেড়েই চলেছে। সেই ব্যয় মেটাতে এখন বিদ্যুৎ জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করে ভর্তুকি সমন্বয় করতে চাইছে। এই পরিস্থিতিতে উচ্চ দামে বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানি করে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা অসম্ভব ব্যাপার।’
এদিকে ডলার সংকট এবং ঋণপত্র (এলসি) খোলার বিলম্বের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানি আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। সরকারের কাছে বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মোটা অঙ্কের বিল পাওনা থাকলেও তারা ঠিকমতো না পাওয়ার কারণে প্রয়োজনীয় জ্বালানি আমদানি করতে পারছেন না। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর নির্মাণকাজ এবং জ্বালানি আমদানির যে অগ্রগতি তাতে চাহিদার তুলনায় আগামী গ্রীষ্মে বিদ্যুতের ঘাটতি হবে আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার মেগাওয়াট। তবে সাশ্রয় নীতি অবলম্বনের মাধ্যমে ১ হাজার মেগাওয়াট এবং উচ্চ মূল্যের জ্বালানি আমদানির মাধ্যমে আরও ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণ করতে পারে সরকার। এরপরও অন্তত ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থাকবে।
এদিকে দাম সমন্বয়ের নামে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পাশ কাটিয়ে গণশুনানি ছাড়াই নির্বাহী আদেশে জানুয়ারি মাসে ১৮ দিনে চার দফা গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করেছে সরকার। এর মধ্যে দু’দফায় অন্তত ১০ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর আগে গত বছরের আগস্টে সেচে ব্যবহৃত ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ২৯ টাকা দাম বাড়ানো হয়। বিদ্যুৎ ও জ¦ালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে কৃষিতে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে।
কুমিল্লার নাঙলকোট উপজেলার বাসন্ডা গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম মজুমদার বলছিলেন, গত বছর এক বিঘা বা ৩৩ শতক জমিতে ধান চাষ করতে সেচের জন্য ২৭৫০ টাকা ব্যয় হয়েছে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চলতি বোরো মৌসুমে এ ব্যয় বেড়ে অন্তত ৪ হাজার টাকা হবে। এর বাইরে অন্যান্য খরচও আনুপাতিক হারে অনেক বেড়েছে। ফলে এখন ধান চাষ করলে প্রতি বিঘা জমিতে অন্তত দেড় থেকে দুই হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে।
ডিজেলচালিত ইঞ্জিনের মাধ্যমে জমিতে সেচ দেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর গ্রামের শিয়ালা গ্রামের কৃষক নাঈম। শনিবার রাতে টেলিফোনে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রতিবিঘা জমিতে এ বছর সেচের ব্যয় বেড়েছে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা। সার, বীজ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণের দামও বেড়েছে।
এর আগে মূল্যবৃদ্ধির গণশুনানির সময় বিইআরসি কৃষক ও প্রান্তিক মানুষের কথা বিবেচনা করলেও নির্বাহী আদেশের সময় এসব কিছুই বিবেচনা করা হয় না।
অতীতে সামাজিক সুরক্ষার অংশ হিসেবে প্রতিমাসে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীকে লাইফলাইন বা প্রান্তিক ব্যবহারকারী হিসেবে বিবেচনা করে তাদের বিদ্যুতের দাম তুলনামূলক কম বাড়াত কমিশন। দেশে এ ধরনের গ্রাহক রয়েছে ১ কোটি ৬৩ লাখ, যাদের অধিকাংশই কৃষক। কিন্তু সর্বশেষ বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির আদেশে এ সুবিধা বাতিল করা হয়েছে।
লাইফ লাইন শ্রেণির প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিল ছিল ৩.৭৫ টাকা। গত ডিসেম্বরে তা বাড়িয়ে ৩.৯৪ টাকা করেছিল মন্ত্রণালয়। সেখান থেকে এবার আরেক দফা বাড়িয়ে ৪.১৪ টাকা করা হয়েছে। ফলে গত দুই মাসের ব্যবধানে দরিদ্র মানুষকে এখন প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ৩৯ পয়সা বাড়তি ব্যয় করতে হবে।
কৃষকের কথা বিবেচনা করে আগে সেচে ব্যবহৃত বিদ্যুতের দাম সবসময়েই তুলনামূলক সাশ্রয়ী রাখার চেষ্টা করা হতো। কিন্তু এখন কৃষকেরাও রেহাই পাচ্ছে না। গত ১২ ডিসেম্বর কৃষিতে ব্যবহৃত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ২১ পয়সা বাড়িয়ে ৪.৩৭ টাকা করা হয়। সেখান থেকে এবার আরও ২২ পয়সা বাড়িয়ে ৪.৫৯ টাকা করা হয়েছে।
রংপুরের একজন কৃষক আনোয়ার আলী খানিকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দফায় দফায় যেভাবে সবকিছুর দাম বাড়ছে তাতে চাষি তো আর বেশিদিন বাঁচতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘ধান চাষ করে এখন লাভ তো দূরের কথা খরচই ওঠে না। তাই আগের চেয়ে ধান চাষ কমিয়ে দিয়েছি। এখন সারা বছর খাওয়ার জন্য যতটুকু ধান দরকার ততটুকুই চাষ করি। তাতে লোকসান হলেও কী করব? ডাল-ভাত তো খাওয়া লাগবে।’
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খারের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তারা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গতিশীল হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। শ্রীলঙ্কার ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে যোগ দিতে দেশটিতে সফরে আছেন মোমেন ও হিনা। গতকাল শনিবার সেখানে তাদের মধ্যে সাইডলাইন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
রেডিও পাকিস্তান ও নিউজ নেটওয়ার্কের প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার পাকিস্তান-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন। তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে অর্থনীতি ও বাণিজ্যে পারস্পরিক উপকারী দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংযোগ জোরদার করার এবং পর্যটন ও জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। অনেক আন্তর্জাতিক ইস্যুতে বিশেষ করে মুসলিম উম্মাহ সংক্রান্ত বিষয়ে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে মতের মিল রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সহযোগিতা জোরদারের আশা : এদিকে গত শুক্রবার বিকেলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী পদুজানা পেরামুনা পার্টির দিনেশ গুনাবর্ধনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এ সময় তারা দুই দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীর মধ্যে চলমান সেক্টরাল সহযোগিতা আরও বাড়ানোর গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেন। বিশেষ করে বাণিজ্য সহজীকরণ, ব্যবসা ও বিনিয়োগ, পর্যটন ও সংযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতার ওপর জোর দেন তারা।
গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, এর আগে সেদিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী সাবরির দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মর্যাদাপূর্ণ ‘লক্ষ্মণ কাদিরগামার স্মারক বক্তৃতা’ শিরোনামে ‘শেয়ারড প্রসপারটি : এ ভিশন ফর সাউথ এশিয়া’ প্রদান করেন। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দক্ষিণ এশীয় সম্প্রদায়ের সম্মিলিত আকাক্সক্ষা এবং যৌথ সমৃদ্ধির জন্য দক্ষিণ এশিয়া সম্মিলিতভাবে যে লক্ষ্যগুলো অনুসরণ করতে পারে সে সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। শ্রীলঙ্কার ঐতিহ্যবাহী পারফরমিং আর্ট সমন্বিত ঐতিহাসিক ইন্ডিপেন্ডেন্স হলে সাংস্কৃতিক উৎসব ‘লঙ্কারলঙ্কা’তে অংশগ্রহণ করেন।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, শ্রীলঙ্কার ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে অংশগ্রহণের জন্য দেশটিতে সফর করছেন ড. মোমেন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি সকালে স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এ সফরে তিনি প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী সাবরি, নেপালের সদ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করা বিমলা রায় পাওডেলের সঙ্গে এবং মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খারের সঙ্গেও বৈঠক করেন। আশা করা হচ্ছে, সফর শেষে আজ ঢাকায় পৌঁছাবেন ড. মোমেন।
'পাঠান' মুক্তির আগে থেকেই অনুরাগীদের সঙ্গে শাহরুখের যোগাযোগের একটাই মাধ্যম, টুইটার। শনিবার ফের টুইটারে 'আস্ক এসআরকে' সেশনে ধরা দিলেন শাহরুখ। হালকা মেজাজে, খোলামেলা আড্ডায় মাতলেন অনুরাগীদের সঙ্গে। অনুরাগীদের প্রশ্ন উত্তর দিলেন। সেখানেই একজন টুইটার ব্যবহারকারীর উপদেশ- বয়স অনুযায়ী চরিত্রে অভিনয়ের করার। পাল্টা জবাব দেন শাহরুখও। বলেন, 'তিনি হিরো ছিলেন, আছেন, থাকবেন'।
অনুরাগীরা যেমন রয়েছেন, তেমনই ট্রোল করার লোকের সংখ্যাও কম নয় শাহরুখের সোশালে। বছর সাতান্নর 'তরুণ' এই অভিনেতাকে একজনের প্রশ্ন, 'আপনি কি এভাবেই হিরোর চরিত্রেই অভিনয় করবেন, নাকি কোনো দিন নায়ক-নায়িকার বাবার চরিত্র করার পরিকল্পনাও রয়েছে?' তাতে শাহরুখ যা জবাব দিয়েছেন, তা রীতিমত ছড়িয়ে পড়েছে সোশালে।
এমনিতেই রসিক মানুষ শাহরুখ। তবে কোন কথায় কাকে কী উত্তর দেবেন, তা ভালোই জানা তার। বাদশাহ লেখেন, 'তুই বাপ হ… আমি হিরোর চরিত্রেই ঠিক আছি।'
শনিবারের 'আস্ক এসআরক'-এ সেশনে, শাহরুখের কাছে জানতে চাওয়া হয় 'পাঠান'-এর মোট আয়ের পরিসংখ্যান। তাকেও ফেরাননি শাহরুখ। উত্তর দিয়ে লেখেন, 'ভালোবাসা ৫ হাজার কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে, ৩ হাজার কোটি প্রশংসা, ৩২৫০ কোটি হাগ, ২০০০ কোটি হাসি এখনও গণণা চলছে। তোমার অ্যাকাউন্ট্যান্ট কী বলছেন?'
'পাঠান' ঘিরে উন্মাদনা নজিরবিহীন। প্রেক্ষাগৃহের বাইরে এই ছবি দেখার ঢল। শাহরুখ অভিনীত ছবিটি লম্বা রেসের ঘোড়া, বলেছেন সিনেমা বিশেষজ্ঞরা। ৪ বছর পর শাহরুখ পর্দায় ফিরেছেন বলেই শুধু নয়, ৭ দিনে বক্স অফিসে ৭০০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে 'পাঠান', যা বলিউডে বছরের সেরা ব্লকবাস্টার হিসাবে গণ্য হতে চলেছে।
বিশ্বে জনপ্রিয় ফলগুলোর মধ্যে পেঁপে একটি। পুষ্টিগুণের জন্যই সবাই এই ফলটি বেশি পছন্দ করেন।
চিকিৎসক থেকে পুষ্টিবিদ— সকলেই এই ফলকে ‘মহৌষধ’ বলে থাকেন। শিশুদের প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে, বয়স্কদের অর্শের সমস্যায় আবার কম বয়সীদের ওজন কমানোর ডায়েটে পাকা পেঁপের স্থান সকলের আগে। বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজের প্রাকৃতিক উৎস পাকা পেঁপে চোখের জন্যও উপকারী। বিটা ক্যারোটিনে ভরপুর পাকা পেঁপে ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর
ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি অক্সিড্যান্টে ভরপুর পাকা পেঁপে ক্যানসারের মতো দুরারোগ্য ব্যধির প্রতিরোধক। এ ছাড়াও পেঁপেতে ছড়েছে ক্যারোটিনয়েড, ভিটামিন সি এবং ই, যা ত্বকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হজমে সহায়ক
পেঁপে মুখের রুচি ফেরায়। সেই সঙ্গে খিদেও বাড়ায় এবং পেট পরিষ্কার রাখে। পেট পরিষ্কার থাকলে গ্যাস অম্বলের সমস্যাও নিয়ন্ত্রণে থাকে। শুধু তাই নয়, যাদের অর্শের সমস্যা রয়েছে, চিকিৎসকরা তাদের পেঁপে খাওয়ার পরামর্শ দেন।
প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সক্ষম
পেঁপে কিন্তু শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ১০০ শতাংশ ভিটামিন সি পাওয়া যায় এই পাকা পেঁপে থেকেই। শরীরে কোনও সংক্রমণ হলে, তা কমাতে চিকিৎসকরা পাকা পেঁপে খাওয়ার পরামর্শ দেন।
ওজন কমাতে
পাকা পেঁপেতে যথেষ্ট পরিমাণ ফাইবার থাকায় তা অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। পাশাপাশি বিপাক হারও বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়াও যারা ওজন কমাতে ডায়েট মেনে খাবার খেয়ে থাকেন, তাদের জন্যও ভাল পাকা পেঁপে।
হার্টের স্বাস্থ্যরক্ষা করে
হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে পটাশিয়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগ সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করে এই যৌগ। প্রাকৃতিকভাবে পটাশিয়ামের উৎস হল পাকা পেঁপে।
সংক্ষিপ্ত সফরে নেপাল হয়ে বিকেলে ঢাকায় এসেছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল। আজ শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনা মো. হাশিম।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি শ্রমবাজারের জটিলতা নিয়ে আলাপ করবেন। কিভাবে দেশটিতে আমরা সহজে কর্মী পাঠাতে পারি; সেগুলো আলোচনায় উঠে আসবে। আমাদেরও কিছু প্রস্তাব রয়েছে। আমাদের কর্মীদের স্বার্থ আগে আমরা চাই, সবার জন্য বাজার খুলে দেওয়া হোক। নিয়োগকর্তার পছন্দমতো রিক্রুটিং এজেন্সি নিয়োগ— এটা আমরা চাই না। অভিবাসন ব্যয়
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার গত কয়েক বছর ধরে অস্থির। দেশটিতে প্রত্যাশিত শ্রমিক পাঠাতে পারছে না বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমবাজারটির জটিলতা নিরসনে আলোচনা করতে সংক্ষিপ্ত সফরে নেপাল হয়ে ঢাকায় আসছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল।
তার সফরে শ্রমবাজারটি গতিশীল করতে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) পরিবর্তন, অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় কমানোসহ দেশের সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য বাজার উন্মুক্ত করার প্রস্তাব দেবে ঢাকা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ২৪ ঘণ্টার সফরে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পাশাপাশি তিনি সেনাকল্যাণ সংস্থার সঙ্গেও একটি বৈঠক করবেন।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৫০ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা খরচের হিসাব ধরে বাজেট প্রস্তাব প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৭২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বেশি। অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে খরচের বেশিরভাগ অর্থ জোগাড়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৯ শতাংশ বাড়ানো হবে। আসছে জুনের প্রথমভাগে জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগামী বাজেট হবে জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট। তাই এখানে নেওয়া কোনো পদক্ষেপে যেন আওয়ামী লীগ সরকার সমালোচনার মুখে না পড়ে এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের থাকছে বিশেষ নজর। এ ছাড়া রয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। তাই সংকট ও নির্বাচন দুটোই মাথায় রাখতে হচ্ছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে মোটাদাগে একটি রূপরেখা পাঠানো হয়েছে। নতুন পরিকল্পনার পাশাপাশি গত তিন মেয়াদে সরকার কী কী উন্নয়ন করেছে আগামী বাজেট প্রস্তাবে তা মনে করিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং উচ্চপর্যায়ের সরকারি নীতিনির্ধারকদের উপস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো আগামী বাজেটের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি পাঠিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে হিসাব ধরে অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট প্রস্তাব প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে তা কয়েক দফা খতিয়ে দেখা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধন, যোগ-বিয়োগ করে আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত হওয়ার আগেও অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে।
ডলার সংকটে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র বা এলসি খুলতে পারছেন না সাধারণ ব্যবসায়ীরা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় পণ্যের দাম বাড়ছে। কাঁচামাল সংকটে বিপাকে শিল্প খাত। ব্যাংক খাতে অস্থিরতা। নতুন চাকরির সুসংবাদ নেই বললেই চলে। দফায় দফায় জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। খুব শিগগিরই এসব সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছেন না অর্থনীতিবিদরা। অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ঋণদাতা সংস্থার কঠিন শর্তের বেড়াজালে আছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতেই আগামী অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশি^ক অস্থিরতা মোকাবিলায় সরকার কী কী পদক্ষেপ নেবে তা আগামী বাজেটে স্পষ্ট করা হবে। দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথাও বলা হবে। তবে শত সংকটের মধ্যেও আগামী বাজেটে ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী যতটা সুবিধা দেওয়া সম্ভব তা দিতে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে কাঁচামাল আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দিতে হিসাব কষা হচ্ছে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকটে আমদানি রপ্তানি প্রায় বন্ধ। ব্যবসা-বাণিজ্যে সংকটকাল চলছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটে আমাদের দাবি অনুযায়ী নগদ সহায়তা দিতে হবে। রাজস্ব ছাড় দিতে হবে। কর অবকাশ ও কর অব্যাহতি বাড়াতে দিতে হবে।’
ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া সংস্কারের শর্ত মানার অঙ্গীকার করে সরকার ঋণ পেয়েছে। শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে ঋণের যেকোনো কিস্তি আটকে দিতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। পর্যায়ক্রমে প্রতি অর্থবছরের বাজেটে এসব সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়ন করা হবে। আসছে বাজেটে শর্ত মানার চেষ্টা থাকবে। বিশেষভাবে অতীতের মতো ঢালাওভাবে কর অব্যাহতি দেওয়া হবে না। আর্থিক খাতের সংস্কারের কিছু ঘোষণা থাকবে। বিশেষভাবে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দেওয়া হবে। আইএমএফের সুপারিশে এরই মধ্যে ভ্যাট আইন চূড়ান্ত হয়েছে। আয়কর আইন মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন হয়েছে। শুল্ক আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে আছে। এ তিন আইন অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণ করা হবে। আসছে বাজেটে টেকসই অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার কথা বলা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছু উদ্যোগের কথা শোনানো হবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঋণদাতা সংস্থার শর্ত মানার কথা বলা হলেও সব আগামী বাজেটে একবারে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে অর্থনীতির গতি কমে যাবে।’
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত খাত এবং এনবিআর খাতের জন্য মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হতে পারে। এতে লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা হবে। এনবিআর এ লক্ষ্যমাত্রা কমানোর জোরালো আবেদন করেছে। কিন্তু তা আমলে আনেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) হিসেবে, ৩৪ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা আয়কর হিসেবে এবং ৩১ শতাংশ বা বাকি ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা শুল্ক হিসেবে সংগ্রহ করার কথা বলা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার কথা শুধু বললেই হবে না। কীভাবে অর্জিত হবে, সেটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা না থাকলে প্রতিবারের মতো ঘাটতি থাকবে। রাজস্ব ঘাটতি হলে অর্থনীতিতে আয় ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত।’
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআর উৎসে করের আওতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। সম্পদশালীদের ওপর নজর বাড়ানো হবে। শুধু বেশি সম্পদ থাকার কারণে অতিরিক্ত কর গুনতে হবে। সারচার্জ বহাল রাখা হবে। সুপারট্যাক্স গ্রুপকে উচ্চহারে গুনতে হবে কর। আগামী অর্থবছরেও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা থাকবে। অর্থ পাচারোধে আইনের শাসন কঠোর করা হবে। অর্থ পাচার আটকাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হবে। করপোরেট কর কমানোর দাবি থাকলেও তা মানা হবে না। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করতে খোদ অর্থমন্ত্রী বললেও রাজস্ব আদায় কমে যাবে এমন যুক্তি দেখিয়ে এনবিআর রাজি নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে। কমানো হবে শিল্পের অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানি শুল্ক। ডলারের ওপর চাপ কমাতে বেশি ব্যবহৃত পণ্য আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হবে। বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কমাতে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হবে। তৈরি পোশাক খাতের সব সুবিধা বহাল রাখা হবে। শিল্পের অন্যান্য খাতেও কতটা সুবিধা বাড়ানো যায় তা নিয়ে এনবিআর হিসাব করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বাজেট প্রস্তুতিবিষয়ক প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং ঘাটতি ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হতে পারে। আগামী অর্থবছরে জিডিপির ৬ শতাংশ ঘাটতি ধরে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হতে পারে বলে জানা যায়। ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে ভর্তুকি কমানোর চাপ থাকলেও আগামীবার এ খাতে বেশি ব্যয় ধরা হতে পারে। এ খাতে ১ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যয় আছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ অনুমোদন করে। ঋণদাতা সংস্থাটির কাছ থেকে বাংলাদেশ ছয় কিস্তিতে তিন বছরে ৪৭০ কোটি ডলার পাচ্ছে। ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের দিন আইএমএফ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিয়ে পূর্বাভাস দেয়। সংস্থাটি বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা হতে পারে ৭ দশমিক ১ শতাংশ।
এতে রিজার্ভ সম্পর্কে বলা হয়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমে দাঁড়াবে ৩ হাজার কোটি ডলার। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে তা ধারাবাহিকভাবে বাড়বে এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।