অবৈধ গ্যাস সংযোগে দুর্ঘটনার ঝুঁকি
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের বায়তুস সালাত জামে মসজিদে গ্যাস লাইনে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ইমাম ও মুয়াজ্জিনসহ ৩১ জন মুসল্লির নিহত হওয়ার ঘটনায় তিতাস গ্যাসের সঞ্চালন লাইনে লিকেজ ও দুর্ঘটনার ঝুঁকির কথা নতুন করে সামনে আসে। মসজিদ ট্র্যাজেডির পর দুর্ঘটনার আতঙ্কে পুরো নারায়ণগঞ্জজুড়ে বিভিন্ন এলাকায় তিতাসের সঞ্চালন লাইনে অগুনতি লিকেজের কথা মানুষের মুখে মুখে ফিরতে থাকে। এসবের সূত্র ধরে উঠে আসে নারায়ণগঞ্জে তিতাস গ্যাসের বিপুল সংখ্যক অবৈধ সংযোগের বিষয়টিও। বিগত কয়েকদিনে তিতাসের অবৈধ সংযোগ ও নিম্নমানের সঞ্চালন লাইনে লিকেজ নিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলোতে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। দেশ রূপান্তরসহ বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের সদর, বন্দর, রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ, সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লাসহ বিভিন্ন থানা এলাকায় তিতাস গ্যাসের অন্ততপক্ষে ২ লাখের মতো অবৈধ সংযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলেও তিতাসের কর্মকর্তা, ঠিকাদার ও প্রভাবশালী স্থানীয় রাজনীতিকদের ছত্রছায়ায় অচিরেই আবার পুনসংযোগ পেয়ে যান অবৈধ সংযোগগ্রহীতারা। এসব অবৈধ সংযোগের কারণে যেমন রাষ্ট্রীয় সম্পদের বিপুল অপচয় হচ্ছে এবং সরকার বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে তেমনি নিম্নমানের পাইপ আর লিকেজের কারণে প্রতিদিনই দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে।
বুধবার দেশ রূপান্তরে ‘অবৈধ গ্যাসের ফাঁদ’ শিরোনামের প্রতিবেদনে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জজুড়ে তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয় এসব অবৈধ সংযোগের ৯০ ভাগই নেওয়া হয়েছে নিম্নমানের পাইপ ও সামগ্রী দিয়ে। জরাজীর্ণ লোহার পাইপ, এমনকি মাটির ওপর দিয়ে প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমেও নেওয়া হয়েছে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সংখ্যার হিসাবে রূপগঞ্জে অন্তত ২০ হাজারের বেশি অবৈধ সংযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিতাস গ্যাস সংশ্লিষ্টরা। কয়েক বছর আগে তিতাস গ্যাস আবাসিক সংযোগ দেওয়া বন্ধ করার পর থেকেই বেড়ে যায় অবৈধ সংযোগ নেওয়ার তোড়জোড়। রাতের আঁধারে রাস্তা কেটে হাইপ্রেসার লাইন ছিদ্র করে ২-৩ ইঞ্চি ব্যাসের নিম্নমানের লোহার বা প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে নেওয়া হয়েছে এসব অবৈধ গ্যাস সংযোগ। অবৈধ গ্যাস সংযোগ সহজলভ্য হওয়ায় নতুন বাড়িঘর ও বহুতল ভবনগুলোতেও অবৈধ সংযোগ নেওয়া হচ্ছে। এসব সংযোগের জন্য কোনো ধরনের মাসিক বিল দিতে হয় না গ্রাহককে। এই চিত্র কেবল রূপগঞ্জেরই নয়, শহর-বন্দর ও পাশর্^বতী এলাকাগুলোসহ পুরো নারায়ণগঞ্জের। তিতাস গ্যাস সূত্রে জনা যায়, ২০১০ সালের ১৩ জুলাই থেকে আবাসিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ ঘোষণা করা হলেও গত ১০ বছরে পুরো নারায়ণগঞ্জ জেলায় প্রায় ১৭৯ কিলোমিটার অবৈধ গ্যাস সংযোগ নেওয়া হয়েছে। যার গ্রাহক সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। গত বছরের নভেম্বরে তিতাস কর্র্তৃপক্ষ বন্দর ও রূপগঞ্জ উপজেলায় ১০ দিন অভিযান চালিয়ে ১১ হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে বন্দরের বিভিন্ন ইউনিয়নে ১৫ হাজার এবং আগস্টে বন্দরের কলাগাছিয়া ইউনিয়নেই ৬ হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করে বিচ্ছিন্ন করা সংযোগের সংখ্যা থেকেই বোঝা যায় সারা জেলায় কত সংখ্যক অবৈধ সংযোগ রয়েছে তিতাসের। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে যে, তিতাস গ্যাস কেন বিপুল সংখ্যক অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় আরও উদ্যোগী হচ্ছে না।
শুধু নারায়ণগঞ্জেই নয়, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেই তিতাস গ্যাসের বিপুল সংখ্যক অবৈধ সংযোগ থাকার অভিযোগ দীর্ঘদিনের পুরনো। তিতাসের একশ্রেণির কর্মকর্তা ও ঠিকাদার, প্রভাবশালী ব্যবসায়ী আর ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের যোগসাজশে সব সরকারের আমলেই তিতাস গ্যাসের হরিলুট চলছে। অথচ রাষ্ট্রীয় সম্পদের বিপুল অপচয় ও রাজস্ব বঞ্চিত হওয়া রোধ করতে কোনো আন্তরিক উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। প্রসঙ্গত, সারা দেশে তিতাসের মোট সঞ্চালন লাইন রয়েছে ১২ হাজার ২৫৩ কিলোমিটার। বৈধ গ্রাহক সংখ্যা ২০ লাখেরও বেশি। কিন্তু এসব পাইপলাইনের বেশিরভাগ অংশই ইতিমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। যা থেকে বিভিন্ন স্থানে লিকেজ আর মারাত্মক দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। অথচ তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির পাইপলাইন প্রতিস্থাপনে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিয়ে দুবছর ধরে ফাইল চালাচালি হলেও তা আলোর মুখ দেখছে না। এমতাবস্থায় অবিলম্বে তিতাসের সব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা এবং এসব সংযোগ প্রদানে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। পাশাপাশি সারা দেশে তিতাসের মানসম্মত ও নিরাপদ গ্যাস সঞ্চালন লাইন নিশ্চিত করা আবশ্যক। সরকার এ বিষয়ে আশু পদক্ষেপ নেবে সেটাই কাম্য।
শেয়ার করুন

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের বায়তুস সালাত জামে মসজিদে গ্যাস লাইনে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ইমাম ও মুয়াজ্জিনসহ ৩১ জন মুসল্লির নিহত হওয়ার ঘটনায় তিতাস গ্যাসের সঞ্চালন লাইনে লিকেজ ও দুর্ঘটনার ঝুঁকির কথা নতুন করে সামনে আসে। মসজিদ ট্র্যাজেডির পর দুর্ঘটনার আতঙ্কে পুরো নারায়ণগঞ্জজুড়ে বিভিন্ন এলাকায় তিতাসের সঞ্চালন লাইনে অগুনতি লিকেজের কথা মানুষের মুখে মুখে ফিরতে থাকে। এসবের সূত্র ধরে উঠে আসে নারায়ণগঞ্জে তিতাস গ্যাসের বিপুল সংখ্যক অবৈধ সংযোগের বিষয়টিও। বিগত কয়েকদিনে তিতাসের অবৈধ সংযোগ ও নিম্নমানের সঞ্চালন লাইনে লিকেজ নিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলোতে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। দেশ রূপান্তরসহ বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের সদর, বন্দর, রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ, সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লাসহ বিভিন্ন থানা এলাকায় তিতাস গ্যাসের অন্ততপক্ষে ২ লাখের মতো অবৈধ সংযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলেও তিতাসের কর্মকর্তা, ঠিকাদার ও প্রভাবশালী স্থানীয় রাজনীতিকদের ছত্রছায়ায় অচিরেই আবার পুনসংযোগ পেয়ে যান অবৈধ সংযোগগ্রহীতারা। এসব অবৈধ সংযোগের কারণে যেমন রাষ্ট্রীয় সম্পদের বিপুল অপচয় হচ্ছে এবং সরকার বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে তেমনি নিম্নমানের পাইপ আর লিকেজের কারণে প্রতিদিনই দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে।
বুধবার দেশ রূপান্তরে ‘অবৈধ গ্যাসের ফাঁদ’ শিরোনামের প্রতিবেদনে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জজুড়ে তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয় এসব অবৈধ সংযোগের ৯০ ভাগই নেওয়া হয়েছে নিম্নমানের পাইপ ও সামগ্রী দিয়ে। জরাজীর্ণ লোহার পাইপ, এমনকি মাটির ওপর দিয়ে প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমেও নেওয়া হয়েছে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সংখ্যার হিসাবে রূপগঞ্জে অন্তত ২০ হাজারের বেশি অবৈধ সংযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিতাস গ্যাস সংশ্লিষ্টরা। কয়েক বছর আগে তিতাস গ্যাস আবাসিক সংযোগ দেওয়া বন্ধ করার পর থেকেই বেড়ে যায় অবৈধ সংযোগ নেওয়ার তোড়জোড়। রাতের আঁধারে রাস্তা কেটে হাইপ্রেসার লাইন ছিদ্র করে ২-৩ ইঞ্চি ব্যাসের নিম্নমানের লোহার বা প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে নেওয়া হয়েছে এসব অবৈধ গ্যাস সংযোগ। অবৈধ গ্যাস সংযোগ সহজলভ্য হওয়ায় নতুন বাড়িঘর ও বহুতল ভবনগুলোতেও অবৈধ সংযোগ নেওয়া হচ্ছে। এসব সংযোগের জন্য কোনো ধরনের মাসিক বিল দিতে হয় না গ্রাহককে। এই চিত্র কেবল রূপগঞ্জেরই নয়, শহর-বন্দর ও পাশর্^বতী এলাকাগুলোসহ পুরো নারায়ণগঞ্জের। তিতাস গ্যাস সূত্রে জনা যায়, ২০১০ সালের ১৩ জুলাই থেকে আবাসিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ ঘোষণা করা হলেও গত ১০ বছরে পুরো নারায়ণগঞ্জ জেলায় প্রায় ১৭৯ কিলোমিটার অবৈধ গ্যাস সংযোগ নেওয়া হয়েছে। যার গ্রাহক সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। গত বছরের নভেম্বরে তিতাস কর্র্তৃপক্ষ বন্দর ও রূপগঞ্জ উপজেলায় ১০ দিন অভিযান চালিয়ে ১১ হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে বন্দরের বিভিন্ন ইউনিয়নে ১৫ হাজার এবং আগস্টে বন্দরের কলাগাছিয়া ইউনিয়নেই ৬ হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করে বিচ্ছিন্ন করা সংযোগের সংখ্যা থেকেই বোঝা যায় সারা জেলায় কত সংখ্যক অবৈধ সংযোগ রয়েছে তিতাসের। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে যে, তিতাস গ্যাস কেন বিপুল সংখ্যক অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় আরও উদ্যোগী হচ্ছে না।
শুধু নারায়ণগঞ্জেই নয়, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেই তিতাস গ্যাসের বিপুল সংখ্যক অবৈধ সংযোগ থাকার অভিযোগ দীর্ঘদিনের পুরনো। তিতাসের একশ্রেণির কর্মকর্তা ও ঠিকাদার, প্রভাবশালী ব্যবসায়ী আর ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের যোগসাজশে সব সরকারের আমলেই তিতাস গ্যাসের হরিলুট চলছে। অথচ রাষ্ট্রীয় সম্পদের বিপুল অপচয় ও রাজস্ব বঞ্চিত হওয়া রোধ করতে কোনো আন্তরিক উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। প্রসঙ্গত, সারা দেশে তিতাসের মোট সঞ্চালন লাইন রয়েছে ১২ হাজার ২৫৩ কিলোমিটার। বৈধ গ্রাহক সংখ্যা ২০ লাখেরও বেশি। কিন্তু এসব পাইপলাইনের বেশিরভাগ অংশই ইতিমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। যা থেকে বিভিন্ন স্থানে লিকেজ আর মারাত্মক দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। অথচ তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির পাইপলাইন প্রতিস্থাপনে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিয়ে দুবছর ধরে ফাইল চালাচালি হলেও তা আলোর মুখ দেখছে না। এমতাবস্থায় অবিলম্বে তিতাসের সব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা এবং এসব সংযোগ প্রদানে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। পাশাপাশি সারা দেশে তিতাসের মানসম্মত ও নিরাপদ গ্যাস সঞ্চালন লাইন নিশ্চিত করা আবশ্যক। সরকার এ বিষয়ে আশু পদক্ষেপ নেবে সেটাই কাম্য।