ইন্টারনেটের নেতিবাচক ব্যবহার নয়
শাহীন হাসনাত | ২৭ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০
প্রযুক্তি মানুষের দৈনন্দিন কার্যক্রমকে সহজতর করতে ভূমিকা রাখে। প্রযুক্তির সহযোগিতায় জীবন হয় আরও সুশৃঙ্খল। তবে এটাও ঠিক যে, প্রযুক্তির ভালো-মন্দ দু’টি দিকই রয়েছে। ইন্টারনেটও তেমনি একটি প্রযুক্তি, যা সঠিকভাবে ব্যবহার করলে জীবন আরও সুন্দর হয়ে উঠতে পারে। আবার উল্টোও ঘটতে পারে, যদি ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা সচেতন না হই। ফেইসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই নিজের সঠিক পরিচয় গোপন করেন এবং নিজেকে বড় কোনো ব্যক্তি হিসেবে প্রকাশ করেন। গবেষকরা বলছেন, এ ধরনের কাজের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার নিজের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছেন।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা সহজেই নিজের পরিচয় গোপন রাখতে পারে বলে, যে কাউকে হুমকি দিতে পারে। মিথ্যা ও গুজব ছড়িয়ে অশান্তি-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ ভুয়া সম্পর্কের ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নেওয়া এবং প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য ব্যক্তিগত অন্তরঙ্গ মুহূর্তের দৃশ্য অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়ার মতো অপরাধ অনায়াসেই করতে পারে। এভাবে পরিচয় গোপন করার ফলে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পায় অনেকের মধ্যে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয় এবং বিষয়গুলো সমাজের জন্য সুখকরও নয়। আগেই বলেছি, ইন্টারনেটের ভালো-মন্দ উভয় দিক রয়েছে। তবে ইন্টারনেটের নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবহারের কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু-কিশোররা। আর এর প্রভাব পড়ছে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে। ‘টিকটক সোসাইটি’ ও ‘কিশোরগ্যাং কালচার’-এর অন্যতম দৃষ্টান্ত। ইন্টারনেটের কিছু ধ্বংসাত্মক প্রভাব মানুষের জীবনশৈলীতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। অথচ অনেক অভিভাবক ইন্টারনেট সম্পর্কে অজ্ঞ হওয়ায় তারা বুঝতে পারেন না পরিবারের সদস্যদের আচার-আচরণ, কথাবার্তায় আকস্মিক পরিবর্তনের উৎস কোথায়? ফলে এক ধরনের নিয়ন্ত্রণহীন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। এ ধরনের নিয়ন্ত্রণহীনতা দিন দিন বাড়ছে, শিক্ষার পরিবর্তে আধুনিক সংস্করণের নামে কুশিক্ষা গ্রহণ করছে। এর প্রভাব পোশাক-আশাক থেকে শুরু করে আচার-ব্যবহার ও চলাফেরায় দৃশ্যমান।
শিশু-কিশোরদের সহজাত প্রবণতা হলো নিজেকে প্রকাশ করা এবং অন্যকে অনুসরণ করা। আত্মপ্রকাশ ও অনুসরণের প্রবণতা তাদের কৌতূহলপ্রিয় করে তুলে। কৌতূহলবশত তারা নতুন কিছু জানতে চায়, শিখতে চায়। এ স্বতঃস্ফূর্ত আকাক্সক্ষাকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে হবে। তাহলেই তারা ভবিষ্যৎ জীবনে, কর্মক্ষেত্রে এবং সমাজে সফল মানুষ হতে পারবে। এর বিপরীতে শিশু-কিশোর বয়সে তাদের নিয়ন্ত্রণ না করে তাদের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দিলে তারা নানাবিধ অন্যায়-অপরাধ ও অনাচারে জড়িয়ে পড়তে পারে। এ কারণে অভিভাবকদের সচেতনতা জরুরি। তারা ইন্টারনেটে কী করছে, কার সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলছে এ বিষয়ে মাতা-পিতা, অভিভাবক ও শিক্ষকদের পক্ষ থেকে খোঁজ-খবর রাখতে হবে।
তবে এটা ঠিক যে, ভার্চুয়াল জগৎকে কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়টি। এ কারণে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। পরিবারের অল্প বয়সী সদস্যদের সঠিক পথ দেখাতে হবে, ভালো পরামর্শ দিতে হবে। শিশুরাই হচ্ছে গোটা বিশ্বের ভবিষ্যৎ কর্ণধার। তারাই যদি ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে বিপথে পরিচালিত হয়, তবে তা গোটা বিশ্বকে গভীর অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেবে। আসলে কোনো মানুষ অপরাধী হয়ে জন্মায় না। পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থাসহ বিভিন্ন কারণে মানুষ অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে মানুষের আবেগও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ অবস্থায় ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে শিশু-কিশোরদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা না করলে মাতা-পিতা, অভিভাবক ও শিক্ষকদের অজান্তে তারা ভয়াবহ ক্ষতির শিকার হতে পারে।
প্রতিটি ধর্মের মানুষই একটি নিজস্ব প্রথা ও সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত। সব ধর্মের সদাচারের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে ইন্টারনেট এসব প্রথা কিংবা সংস্কৃতিকে উল্টে-পাল্টে দিচ্ছে। ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা ইহকালের পাশাপাশি পরকালীন জীবনে বিশ্বাস করেন। আধ্যাত্মিকতা তাদের অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে আছে। মুসলমানরা বিশ্বাস করেন, প্রতিটি কাজের জন্য পরকালে জবাবদিহি করতে হবে, সেই জবাবাদিহিপূর্ণ মনোভাব থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হবে। ইন্টারনেট ব্যবহার করে কোনো ধর্মকে হেয় করা, কারও ব্যক্তিত্বে আঘাত করা, গুজব ছড়ানো, মিথ্যা প্রচার করা, অপসংস্কৃতির চর্চা, অনৈতিক সম্পর্ক গড়া, কোনো অন্যায় কাজ করা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতির কারণ। এসব কাজ নানা ধরনের অস্থিরতার জন্ম দেয়। যা কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়, এমন অনৈতিক কাজ থেকে নিজে বিরত থাকার পাশাপাশি অন্যকেও বিরত রাখতে হবে। ইন্টারনেট জগতে বিচরণের ক্ষেত্রে সবাইকে আরও সতর্ক হতে হবে।
লেখক : মুফতি ও ইসলামবিষয়ক লেখক
শেয়ার করুন
শাহীন হাসনাত | ২৭ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০

প্রযুক্তি মানুষের দৈনন্দিন কার্যক্রমকে সহজতর করতে ভূমিকা রাখে। প্রযুক্তির সহযোগিতায় জীবন হয় আরও সুশৃঙ্খল। তবে এটাও ঠিক যে, প্রযুক্তির ভালো-মন্দ দু’টি দিকই রয়েছে। ইন্টারনেটও তেমনি একটি প্রযুক্তি, যা সঠিকভাবে ব্যবহার করলে জীবন আরও সুন্দর হয়ে উঠতে পারে। আবার উল্টোও ঘটতে পারে, যদি ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা সচেতন না হই। ফেইসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই নিজের সঠিক পরিচয় গোপন করেন এবং নিজেকে বড় কোনো ব্যক্তি হিসেবে প্রকাশ করেন। গবেষকরা বলছেন, এ ধরনের কাজের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার নিজের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছেন।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা সহজেই নিজের পরিচয় গোপন রাখতে পারে বলে, যে কাউকে হুমকি দিতে পারে। মিথ্যা ও গুজব ছড়িয়ে অশান্তি-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ ভুয়া সম্পর্কের ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নেওয়া এবং প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য ব্যক্তিগত অন্তরঙ্গ মুহূর্তের দৃশ্য অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়ার মতো অপরাধ অনায়াসেই করতে পারে। এভাবে পরিচয় গোপন করার ফলে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পায় অনেকের মধ্যে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয় এবং বিষয়গুলো সমাজের জন্য সুখকরও নয়। আগেই বলেছি, ইন্টারনেটের ভালো-মন্দ উভয় দিক রয়েছে। তবে ইন্টারনেটের নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবহারের কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু-কিশোররা। আর এর প্রভাব পড়ছে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে। ‘টিকটক সোসাইটি’ ও ‘কিশোরগ্যাং কালচার’-এর অন্যতম দৃষ্টান্ত। ইন্টারনেটের কিছু ধ্বংসাত্মক প্রভাব মানুষের জীবনশৈলীতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। অথচ অনেক অভিভাবক ইন্টারনেট সম্পর্কে অজ্ঞ হওয়ায় তারা বুঝতে পারেন না পরিবারের সদস্যদের আচার-আচরণ, কথাবার্তায় আকস্মিক পরিবর্তনের উৎস কোথায়? ফলে এক ধরনের নিয়ন্ত্রণহীন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। এ ধরনের নিয়ন্ত্রণহীনতা দিন দিন বাড়ছে, শিক্ষার পরিবর্তে আধুনিক সংস্করণের নামে কুশিক্ষা গ্রহণ করছে। এর প্রভাব পোশাক-আশাক থেকে শুরু করে আচার-ব্যবহার ও চলাফেরায় দৃশ্যমান।
শিশু-কিশোরদের সহজাত প্রবণতা হলো নিজেকে প্রকাশ করা এবং অন্যকে অনুসরণ করা। আত্মপ্রকাশ ও অনুসরণের প্রবণতা তাদের কৌতূহলপ্রিয় করে তুলে। কৌতূহলবশত তারা নতুন কিছু জানতে চায়, শিখতে চায়। এ স্বতঃস্ফূর্ত আকাক্সক্ষাকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে হবে। তাহলেই তারা ভবিষ্যৎ জীবনে, কর্মক্ষেত্রে এবং সমাজে সফল মানুষ হতে পারবে। এর বিপরীতে শিশু-কিশোর বয়সে তাদের নিয়ন্ত্রণ না করে তাদের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দিলে তারা নানাবিধ অন্যায়-অপরাধ ও অনাচারে জড়িয়ে পড়তে পারে। এ কারণে অভিভাবকদের সচেতনতা জরুরি। তারা ইন্টারনেটে কী করছে, কার সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলছে এ বিষয়ে মাতা-পিতা, অভিভাবক ও শিক্ষকদের পক্ষ থেকে খোঁজ-খবর রাখতে হবে।
তবে এটা ঠিক যে, ভার্চুয়াল জগৎকে কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়টি। এ কারণে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। পরিবারের অল্প বয়সী সদস্যদের সঠিক পথ দেখাতে হবে, ভালো পরামর্শ দিতে হবে। শিশুরাই হচ্ছে গোটা বিশ্বের ভবিষ্যৎ কর্ণধার। তারাই যদি ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে বিপথে পরিচালিত হয়, তবে তা গোটা বিশ্বকে গভীর অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেবে। আসলে কোনো মানুষ অপরাধী হয়ে জন্মায় না। পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থাসহ বিভিন্ন কারণে মানুষ অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে মানুষের আবেগও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ অবস্থায় ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে শিশু-কিশোরদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা না করলে মাতা-পিতা, অভিভাবক ও শিক্ষকদের অজান্তে তারা ভয়াবহ ক্ষতির শিকার হতে পারে।
প্রতিটি ধর্মের মানুষই একটি নিজস্ব প্রথা ও সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত। সব ধর্মের সদাচারের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে ইন্টারনেট এসব প্রথা কিংবা সংস্কৃতিকে উল্টে-পাল্টে দিচ্ছে। ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা ইহকালের পাশাপাশি পরকালীন জীবনে বিশ্বাস করেন। আধ্যাত্মিকতা তাদের অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে আছে। মুসলমানরা বিশ্বাস করেন, প্রতিটি কাজের জন্য পরকালে জবাবদিহি করতে হবে, সেই জবাবাদিহিপূর্ণ মনোভাব থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হবে। ইন্টারনেট ব্যবহার করে কোনো ধর্মকে হেয় করা, কারও ব্যক্তিত্বে আঘাত করা, গুজব ছড়ানো, মিথ্যা প্রচার করা, অপসংস্কৃতির চর্চা, অনৈতিক সম্পর্ক গড়া, কোনো অন্যায় কাজ করা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতির কারণ। এসব কাজ নানা ধরনের অস্থিরতার জন্ম দেয়। যা কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়, এমন অনৈতিক কাজ থেকে নিজে বিরত থাকার পাশাপাশি অন্যকেও বিরত রাখতে হবে। ইন্টারনেট জগতে বিচরণের ক্ষেত্রে সবাইকে আরও সতর্ক হতে হবে।
লেখক : মুফতি ও ইসলামবিষয়ক লেখক