চিনিকল বন্ধের বিকল্প খুঁজতে হবে
গাজী তানজিয়া | ২৩ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০
লোকসানের কবলে পড়া চিনিকলগুলো বন্ধ হতে চলেছে এমন আভাস বেশ আগে থেকেই পাওয়া যাচ্ছিল। এখন লোকসানের বোঝা কমাতে সরকারি ছয় চিনিকল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)। আপাতত এসব চিনিকলে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের আখমাড়াই বন্ধ করা হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগে জরাজীর্ণ কারখানাগুলো আধুনিকায়ন করে চিনির পাশাপাশি স্পিরিট, অ্যালকোহলসহ অন্যান্য উপজাত পণ্য উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়ে সংস্থাটি এগোচ্ছে বলে জানা গেছে। ছয়টি চিনিকলে এবার আখমাড়াই বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের খবরে ৬০ হাজার আখচাষি, ৫ হাজার শ্রমিক ও ২ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর চোখে-মুখে আঁধারের ছায়া নেমে এসেছে। চিনিকলগুলো যাতে বন্ধ না হয়, এ জন্য মিলগেটে আন্দোলন করছেন চাষি ও শ্রমিকরা।
রংপুরের শ্যামপুর সুগার মিল, পাবনা সুগার মিল, পঞ্চগড় সুগার মিল, সেতাবগঞ্জ সুগার মিল, রংপুর সুগার মিল ও কুষ্টিয়া সুগার মিলে এ বছর চিনি উৎপাদনের কাজ বন্ধ থাকবে। যে ছয়টি চিনিকল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেগুলোতে গড়ে ৬০০ থেকে ৮০০ শ্রমিক কাজ করেন। সেই হিসাবে ছয়টি চিনিকল বন্ধ হয়ে গেলে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বেন। এ ছাড়া প্রতিটি মিল এলাকায় গড়ে ৮ থেকে ১২ হাজার আখচাষি রয়েছেন। ছয়টি মিল এলাকায় ৬০ হাজারের বেশি আখচাষি এবার আখ আবাদ করেছেন। তাদের আখের কী হবে, সে বিষয়েও কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আসেনি। ফলে আখচাষিরাও রয়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়। এ ছাড়া ছয়টি মিলে দুই শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি হারানোর আতঙ্কে রয়েছেন। তাদের আশঙ্কা একবার মিল বন্ধ হয়ে গেলে, সেটি চালু হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে দেশের সরকারি চিনিকলগুলো বন্ধ না করে পণ্য বহুমুখীকরণের জন্য কারখানাগুলো আধুনিকায়ন ও দুর্নীতি দূর করে চিনিকলগুলো লাভজনক করা সম্ভব বলে জানিয়েছে সুগার মিলস চিল্ড্রেন্স ফোরাম (এসএমসিএফ)। সংস্থাটি জানায়, সরকারি চিনিকলগুলোর লোকসানের জন্য দায়ী কিছু লোকের দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনা। এর দায় হাজার হাজার সাধারণ শ্রমিক আর আখচাষিদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও সরকারি চিনিকলগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে আখচাষি ও শ্রমিক-কর্মচারীদের জীবন হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আখচাষিদের ভবিষ্যতে আখ উৎপাদনে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। তারা বলেন, করোনা মহামারীর সময় সরকার বিভিন্ন সেক্টরে হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিলেও চিনি শ্রমিকদের মাসের পর মাস বেতন দেওয়া বন্ধ রেখেছে। এর ফলে অত্যন্ত শোচনীয়ভাবে তাদের দিন কাটছে। এ জন্য দ্রুত বকেয়া বেতন পরিশোধ করে চিনিকলগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
বাস্তবতা হলো, চিনিকলগুলো আধুনিকায়নের কথা মুখে বলেও আজ অবধি বাস্তবায়িত হয়নি। দুটি চিনিকল আধুনিকায়ন করার জন্য দুটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও গত সাত বছরে কয়েকটি গাড়ি কেনা ছাড়া প্রকল্পের কোনো কাজ হয়নি। অথচ এর দায় বহন করতে হচ্ছে হাজার হাজার আখচাষি আর চিনিশিল্প শ্রমিক-কর্মচারীদের।
এ ছাড়া সরকার বিএডিসি, বিমান, রেলসহ বিভিন্ন সংস্থায় হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে আসছে। সে তুলনায় চিনিশিল্পের ভর্তুকির পরিমাণ অত্যন্ত কম। অথচ এই শিল্পে মূল্যসংযোজন এক শ ভাগ। টেকসই উন্নয়নের সরকারি নীতির সঙ্গে চিনিশিল্পের উন্নয়ন সামঞ্জস্যপূর্ণ। সরকারি ভাষ্যমতে, বেসরকারি রিফাইনারিতে উৎপাদিত সাদা চিনি বাজারে প্রতি কেজি ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকার মধ্যে পাওয়া গেলেও সরকারি চিনিকলগুলোর উৎপাদিত চিনির দাম পড়ে যাচ্ছে প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। বলা হচ্ছে ঋণের কারণে কারখানাগুলো সময়মতো আখচাষিদের পাওনা পরিশোধ করতে পারছে না। গত কয়েক বছরে মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া ভর্তুকির টাকা দিয়ে মাড়াই মৌসুম শুরু হলেও গত অর্থবছরে ভর্তুকি কমিয়ে দেওয়ায় মিলগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শ্যামপুর আখচাষি ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, বন্ধ হয়ে যাওয়া মিলগুলোর এলাকার আখ অন্য মিলে নিয়ে মাড়াই করা হবে বলে বলা হয়েছে; যা শুভংকরের ফাঁকি। ডিসেম্বরে আখমাড়াই শুরু হলে বন্ধ মিল এলাকার আখ অন্য মিলে নিয়ে মাড়াই করতে গেলে ৭০ থেকে ৮০ দিন লেগে যাবে। তত দিন আখের আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে যাবে। চাষিরাও আখের দাম পাবেন না। এ ছাড়া বকেয়া টাকা কীভাবে পরিশোধ হবে তার কোনো নির্দেশনাও আসেনি। এ অবস্থায় মিল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক বলে দাবি করেন তিনি।
বাজারে গিয়ে দেশি লাল চিনি খুঁজলে আপনি পাবেন না। অথচ একটা সরকারি বিজ্ঞাপনে গ্রাহককে লাল চিনি কিনতে বলা হচ্ছে, নতুবা চিনিকলের কর্মচারীদের বেতন দিতে না পারায় তা বন্ধ হয়ে যাবে। এখন কথা হলো, সাদা চিনিতে যে রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া হয় তা এড়ানোর জন্য হলেও এ দেশের ৫০ শতাংশ মানুষ লাল চিনি কিনতে চান, যার জোগান দেওয়ার মতো সক্ষমতা চিনিকলগুলোর নেই। একটা দোকানেও সরকারি কোম্পানির এই লাল চিনি পাওয়া যায় না। এখন ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা না করেই যদি বলে, মানুষ কেনে না বলে চিনিকল বন্ধ করে দিতে হবে- এর চেয়ে প্রহসন আর কিছু হয় না। পাটের মতো সরকারি চিনিও যাতে বেসরকারি খাতে বা আমদানিনির্ভর পণ্য হয়ে উঠতে পাওে, সেই ব্যবস্থা করার পাঁয়তারা চলছে না তো! অথচ একটা সঠিক মার্কেটিং পলিসি প্রয়োগ করলেই সব চিনি বিক্রি হয়ে যায়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো সফল মার্কেটিং কনসেপ্ট প্রয়োগ করে তাদের সব প্রোডাক্ট বিক্রি করে দিতে পারছে, আর দেশের সরকারি কর্মকর্তারা তাদের কর্মদক্ষতা প্রয়োগ করে সামান্য চিনি বিক্রি করতে পারছেন না, এ কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এর আগে আমরা দেখেছি সরকারি পাটকলগুলো কীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের নামে, অথচ দেশ হয়ে পড়ছে গুটিকয় স্বার্থান্বেষী মানুষের জন্য আমদানিনির্ভর এবং ঋণে জর্জরিত। আমদাানিনির্ভরতা উন্নয়নের বিপরীত।
প্রত্যন্ত অঞ্চলের আর্থসামাজিক ও অবকাঠামো উন্নয়নে এই চিনিকলগুলোর ব্যাপক অবদান রয়েছে। তাই বন্ধ না করে দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে চিনিকলগুলো আধুনিকায়ন ও বহুমুখী পণ্য উৎপাদন করার জন্য দক্ষ ও দুর্নীতিমুক্ত বিনিয়োগ করা প্রয়োজন।
লেখক : কথাসাহিত্যিক
শেয়ার করুন
গাজী তানজিয়া | ২৩ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০

লোকসানের কবলে পড়া চিনিকলগুলো বন্ধ হতে চলেছে এমন আভাস বেশ আগে থেকেই পাওয়া যাচ্ছিল। এখন লোকসানের বোঝা কমাতে সরকারি ছয় চিনিকল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)। আপাতত এসব চিনিকলে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের আখমাড়াই বন্ধ করা হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগে জরাজীর্ণ কারখানাগুলো আধুনিকায়ন করে চিনির পাশাপাশি স্পিরিট, অ্যালকোহলসহ অন্যান্য উপজাত পণ্য উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়ে সংস্থাটি এগোচ্ছে বলে জানা গেছে। ছয়টি চিনিকলে এবার আখমাড়াই বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের খবরে ৬০ হাজার আখচাষি, ৫ হাজার শ্রমিক ও ২ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর চোখে-মুখে আঁধারের ছায়া নেমে এসেছে। চিনিকলগুলো যাতে বন্ধ না হয়, এ জন্য মিলগেটে আন্দোলন করছেন চাষি ও শ্রমিকরা।
রংপুরের শ্যামপুর সুগার মিল, পাবনা সুগার মিল, পঞ্চগড় সুগার মিল, সেতাবগঞ্জ সুগার মিল, রংপুর সুগার মিল ও কুষ্টিয়া সুগার মিলে এ বছর চিনি উৎপাদনের কাজ বন্ধ থাকবে। যে ছয়টি চিনিকল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেগুলোতে গড়ে ৬০০ থেকে ৮০০ শ্রমিক কাজ করেন। সেই হিসাবে ছয়টি চিনিকল বন্ধ হয়ে গেলে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বেন। এ ছাড়া প্রতিটি মিল এলাকায় গড়ে ৮ থেকে ১২ হাজার আখচাষি রয়েছেন। ছয়টি মিল এলাকায় ৬০ হাজারের বেশি আখচাষি এবার আখ আবাদ করেছেন। তাদের আখের কী হবে, সে বিষয়েও কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আসেনি। ফলে আখচাষিরাও রয়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়। এ ছাড়া ছয়টি মিলে দুই শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি হারানোর আতঙ্কে রয়েছেন। তাদের আশঙ্কা একবার মিল বন্ধ হয়ে গেলে, সেটি চালু হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে দেশের সরকারি চিনিকলগুলো বন্ধ না করে পণ্য বহুমুখীকরণের জন্য কারখানাগুলো আধুনিকায়ন ও দুর্নীতি দূর করে চিনিকলগুলো লাভজনক করা সম্ভব বলে জানিয়েছে সুগার মিলস চিল্ড্রেন্স ফোরাম (এসএমসিএফ)। সংস্থাটি জানায়, সরকারি চিনিকলগুলোর লোকসানের জন্য দায়ী কিছু লোকের দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনা। এর দায় হাজার হাজার সাধারণ শ্রমিক আর আখচাষিদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও সরকারি চিনিকলগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে আখচাষি ও শ্রমিক-কর্মচারীদের জীবন হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আখচাষিদের ভবিষ্যতে আখ উৎপাদনে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। তারা বলেন, করোনা মহামারীর সময় সরকার বিভিন্ন সেক্টরে হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিলেও চিনি শ্রমিকদের মাসের পর মাস বেতন দেওয়া বন্ধ রেখেছে। এর ফলে অত্যন্ত শোচনীয়ভাবে তাদের দিন কাটছে। এ জন্য দ্রুত বকেয়া বেতন পরিশোধ করে চিনিকলগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
বাস্তবতা হলো, চিনিকলগুলো আধুনিকায়নের কথা মুখে বলেও আজ অবধি বাস্তবায়িত হয়নি। দুটি চিনিকল আধুনিকায়ন করার জন্য দুটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও গত সাত বছরে কয়েকটি গাড়ি কেনা ছাড়া প্রকল্পের কোনো কাজ হয়নি। অথচ এর দায় বহন করতে হচ্ছে হাজার হাজার আখচাষি আর চিনিশিল্প শ্রমিক-কর্মচারীদের।
এ ছাড়া সরকার বিএডিসি, বিমান, রেলসহ বিভিন্ন সংস্থায় হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে আসছে। সে তুলনায় চিনিশিল্পের ভর্তুকির পরিমাণ অত্যন্ত কম। অথচ এই শিল্পে মূল্যসংযোজন এক শ ভাগ। টেকসই উন্নয়নের সরকারি নীতির সঙ্গে চিনিশিল্পের উন্নয়ন সামঞ্জস্যপূর্ণ। সরকারি ভাষ্যমতে, বেসরকারি রিফাইনারিতে উৎপাদিত সাদা চিনি বাজারে প্রতি কেজি ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকার মধ্যে পাওয়া গেলেও সরকারি চিনিকলগুলোর উৎপাদিত চিনির দাম পড়ে যাচ্ছে প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। বলা হচ্ছে ঋণের কারণে কারখানাগুলো সময়মতো আখচাষিদের পাওনা পরিশোধ করতে পারছে না। গত কয়েক বছরে মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া ভর্তুকির টাকা দিয়ে মাড়াই মৌসুম শুরু হলেও গত অর্থবছরে ভর্তুকি কমিয়ে দেওয়ায় মিলগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শ্যামপুর আখচাষি ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, বন্ধ হয়ে যাওয়া মিলগুলোর এলাকার আখ অন্য মিলে নিয়ে মাড়াই করা হবে বলে বলা হয়েছে; যা শুভংকরের ফাঁকি। ডিসেম্বরে আখমাড়াই শুরু হলে বন্ধ মিল এলাকার আখ অন্য মিলে নিয়ে মাড়াই করতে গেলে ৭০ থেকে ৮০ দিন লেগে যাবে। তত দিন আখের আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে যাবে। চাষিরাও আখের দাম পাবেন না। এ ছাড়া বকেয়া টাকা কীভাবে পরিশোধ হবে তার কোনো নির্দেশনাও আসেনি। এ অবস্থায় মিল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক বলে দাবি করেন তিনি।
বাজারে গিয়ে দেশি লাল চিনি খুঁজলে আপনি পাবেন না। অথচ একটা সরকারি বিজ্ঞাপনে গ্রাহককে লাল চিনি কিনতে বলা হচ্ছে, নতুবা চিনিকলের কর্মচারীদের বেতন দিতে না পারায় তা বন্ধ হয়ে যাবে। এখন কথা হলো, সাদা চিনিতে যে রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া হয় তা এড়ানোর জন্য হলেও এ দেশের ৫০ শতাংশ মানুষ লাল চিনি কিনতে চান, যার জোগান দেওয়ার মতো সক্ষমতা চিনিকলগুলোর নেই। একটা দোকানেও সরকারি কোম্পানির এই লাল চিনি পাওয়া যায় না। এখন ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা না করেই যদি বলে, মানুষ কেনে না বলে চিনিকল বন্ধ করে দিতে হবে- এর চেয়ে প্রহসন আর কিছু হয় না। পাটের মতো সরকারি চিনিও যাতে বেসরকারি খাতে বা আমদানিনির্ভর পণ্য হয়ে উঠতে পাওে, সেই ব্যবস্থা করার পাঁয়তারা চলছে না তো! অথচ একটা সঠিক মার্কেটিং পলিসি প্রয়োগ করলেই সব চিনি বিক্রি হয়ে যায়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো সফল মার্কেটিং কনসেপ্ট প্রয়োগ করে তাদের সব প্রোডাক্ট বিক্রি করে দিতে পারছে, আর দেশের সরকারি কর্মকর্তারা তাদের কর্মদক্ষতা প্রয়োগ করে সামান্য চিনি বিক্রি করতে পারছেন না, এ কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এর আগে আমরা দেখেছি সরকারি পাটকলগুলো কীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের নামে, অথচ দেশ হয়ে পড়ছে গুটিকয় স্বার্থান্বেষী মানুষের জন্য আমদানিনির্ভর এবং ঋণে জর্জরিত। আমদাানিনির্ভরতা উন্নয়নের বিপরীত।
প্রত্যন্ত অঞ্চলের আর্থসামাজিক ও অবকাঠামো উন্নয়নে এই চিনিকলগুলোর ব্যাপক অবদান রয়েছে। তাই বন্ধ না করে দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে চিনিকলগুলো আধুনিকায়ন ও বহুমুখী পণ্য উৎপাদন করার জন্য দক্ষ ও দুর্নীতিমুক্ত বিনিয়োগ করা প্রয়োজন।
লেখক : কথাসাহিত্যিক