ই-সিগারেট নিষিদ্ধে নতুন নীতিমালা জরুরি
ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত | ২৮ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০
রঙচঙে বিজ্ঞাপন আর মুখরোচক প্রচারণা। বলা হচ্ছে, কাগুজে সিগারেটের চেয়ে ই-সিগারেট ‘কম’ ক্ষতিকর। সেই বিজ্ঞাপনে সায় দিয়ে দেশের কোটি ধূমপায়ী ছুটছে এর পেছনে। ফলে বাড়ছে তামাকজাত পণ্যের বাজার, বাড়ছে ক্যানসার, হৃদরোগ, যকৃতের রোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসসহ নানান অসংক্রামক রোগের সংখ্যা। বাংলাদেশ যখন হাজারো স্বপ্ন সঙ্গে নিয়ে সাফল্যের সিঁড়িতে উঠছে, তখন তামাকের হানায় ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুমিছিল। তামাকের জগতে নতুন করে যুক্ত হওয়া ই-সিগারেট পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। সবমিলিয়ে, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্ন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।
ই-সিগারেট বা ভ্যাপিং জনপ্রিয় ছিল, এমন ৪২টি দেশে এই পণ্য সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এখন তা নিষিদ্ধ। সেখানে বাংলাদেশে এ বিষয়ে কোনো আইন তো দূরের কথা, কোনো প্রকার অধ্যাদেশ পর্যন্ত জারি করা হয়নি। একাধিকবার স্বাস্থ্যের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ ই-সিগারেট নিষিদ্ধের ব্যাপারে আলোচনা হলেও, তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের বিশেষ সংবেদনশীল হতে দেখা যায়নি। তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার পথে সরকার যখন সর্বোচ্চ আন্তরিক, তখন সব পর্যায়ে সমন্বয় না হওয়াটা সাফল্যের পথে অন্তরায় হতে পারে।
তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে কেন ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন, তা বুঝতে হলে দেশের ধূমপায়ী ও তামাকজাত পণ্যের বাজার ও ক্ষয়ক্ষতি প্রসঙ্গে জানা দরকার। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০১৭ তথ্যানুসারে, বাংলাদেশে ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সীদের ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ কোনো না কোনোভাবে তামাক ব্যবহার করে। সারা বিশ্বে তামাক উৎপাদনে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮ম। এ দেশে প্রতি বছর মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশ ঘটে অসংক্রামক ব্যাধির কারণে। এর মধ্যে সবার ওপরে রয়েছে ক্যানসার ও হৃদরোগ। আর এসব অসংক্রামক ব্যাধির প্রধানতম কারণ তামাক ও তামাকজাত পণ্য। টোব্যাকো এটলাস ২০২০ অনুযায়ী, প্রতি বছর তামাক ব্যবহারজনিত রোগে দেশে প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। এ বিষয়ক রোগব্যাধি, চিকিৎসা ব্যয় ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক কারণে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১.৪ শতাংশ।
বাংলাদেশে ই-সিগারেটের ক্রেতা মূলত কিশোর ও তরুণরা। এই পণ্য আমদানির বিষয়ে কোনো প্রকারের নিয়মনীতি না থাকায়, আগামী প্রজন্ম আরও ঝুঁকির মুখে পড়ছে। তবে সাম্প্রতিককালে বয়োবৃদ্ধদের মাঝেও ই-সিগারেটের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রেতা ধরার জন্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মুখে বুলি একটাই ই-সিগারেটে তামাকের সিগারেটের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ কম।
তবে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের গবেষণা বলছে, ই-সিগারেট কাগুজে সিগারেটের চেয়েও বেশি নিকোটিনযুক্ত। ক্ষতির পরিমাণও বেশি। মোদ্দা কথা, ই-সিগারেট কাগুজে সিগারেটেরই ভিন্নরূপ। এতে ব্যবহৃত তরল ই-জুসের মূল উপাদান হিসেবে থাকে ভেজিটেবল গ্লিসারল ও প্রোপাইলিন গ্লাইকল, যা খাদ্যদ্রব্য হিসেবে বিষাক্ত না হলেও এর বাষ্প শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করতে পারে। একই সঙ্গে, এর বাষ্প শ্বাসনালির নিজস্ব সুরক্ষা ব্যবস্থাকে নষ্ট করে দেয়, ফলে বারবার শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ হয়। ই-সিগারেটে ভোলাটাইল অর্গানিক কম্পাউন্ড (ভিওসি), বিভিন্ন ক্ষুদ্রকণা, ভারী ধাতব কণিকা ও ফরমালডিহাইডের মতো বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ থাকে যা শরীরে ক্যানসারসহ বিভিন্ন জটিল রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ই-সিগারেটের নিকোটিন শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের জন্য ভয়ানক বিপজ্জনক। উচ্চমাত্রার এই নিকোটিন স্নায়ুতন্ত্রের স্টেম সেলকে ধ্বংস করে অকাল বার্ধক্যসহ স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের কারণ। একই সঙ্গে ই-সিগারেটের নিকোটিন হৃদরোগের ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি করে।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের একই গবেষণায় বলা হয়েছে, ই-সিগারেট ব্যবহারে স্ট্রোকের ঝুঁকি ৭১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে, হার্ট অ্যাটাক ও হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় যথাক্রমে ৫৯ ও ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। ই-জুসে থাকা ক্ষতিকর ফ্লেভারিং এজেন্টের কারণে শ্বাসতন্ত্র, লিভার, কিডনির দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। ভুলে গেলে চলবে না, একজন ১০০ বা ৯০ পাউন্ড ওজনের মানুষের মৃত্যুর জন্য এক চা-চামচ তরল নিকোটিনই যথেষ্ট।
শুধু অসংক্রামক রোগমুক্ত করতেই নয়, বরং বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানোর জন্য হলেও; ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করা জরুরি। ই-সিগারেট আমদানি, স্থানীয়ভাবে তৈরি, বিক্রি ও বিপণন কেন্দ্রগুলোকে নিষিদ্ধ করতে আইন ও নীতিমালার আওতায় আনা জরুরি। এগুলোকে দন্ডনীয় অপরাধের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
এজন্য সবার আগে প্রয়োজন একটি বাস্তবিক নীতিমালা। সেই নীতিমালা প্রণয়নে আইনপ্রণেতা ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয় করতে হবে। সরকারের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এ ব্যাপারে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থাগুলোও এগিয়ে আসতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, মাঠ পর্যায়ে ই-সিগারেটের বিরুদ্ধে প্রচার ও প্রচারণা চালানোর মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরি করা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো জনসচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। পাশাপাশি, তামাকপণ্য বিষয়ক আইনের সঠিক প্রয়োগ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার শেষ নেই। কেবল এগিয়ে আসতে হবে এ বিষয়ক সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অন্যদের।
ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে কয়েকটি জায়গায় বাংলাদেশ এগিয়ে থাকবে। প্রথমত, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে আমরা আরও একধাপ এগিয়ে যাব। দেশে অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার কমবে, রোগ নিয়ন্ত্রণে সাফল্য আসবে এবং চিকিৎসা ব্যয় কমবে; যা সার্বিকভাবে জীবনমানের উন্নয়ন সাধিত করবে।
জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং সংসদ সদস্য হিসেবে আমাদের অন্যতম কাজ, জনগণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা। দেশের উন্নয়নে সবাইকে একাত্ম করা। তাই জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা এক হয়ে দাবি জানাই প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করার এবং প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়নের। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত পরিবেশ উপহার দিতে এবং তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আমাদের এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
লেখক : অধ্যাপক এবং সংসদ সদস্য, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিয়িং, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন
শেয়ার করুন
ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত | ২৮ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০

রঙচঙে বিজ্ঞাপন আর মুখরোচক প্রচারণা। বলা হচ্ছে, কাগুজে সিগারেটের চেয়ে ই-সিগারেট ‘কম’ ক্ষতিকর। সেই বিজ্ঞাপনে সায় দিয়ে দেশের কোটি ধূমপায়ী ছুটছে এর পেছনে। ফলে বাড়ছে তামাকজাত পণ্যের বাজার, বাড়ছে ক্যানসার, হৃদরোগ, যকৃতের রোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসসহ নানান অসংক্রামক রোগের সংখ্যা। বাংলাদেশ যখন হাজারো স্বপ্ন সঙ্গে নিয়ে সাফল্যের সিঁড়িতে উঠছে, তখন তামাকের হানায় ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুমিছিল। তামাকের জগতে নতুন করে যুক্ত হওয়া ই-সিগারেট পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। সবমিলিয়ে, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্ন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।
ই-সিগারেট বা ভ্যাপিং জনপ্রিয় ছিল, এমন ৪২টি দেশে এই পণ্য সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এখন তা নিষিদ্ধ। সেখানে বাংলাদেশে এ বিষয়ে কোনো আইন তো দূরের কথা, কোনো প্রকার অধ্যাদেশ পর্যন্ত জারি করা হয়নি। একাধিকবার স্বাস্থ্যের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ ই-সিগারেট নিষিদ্ধের ব্যাপারে আলোচনা হলেও, তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের বিশেষ সংবেদনশীল হতে দেখা যায়নি। তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার পথে সরকার যখন সর্বোচ্চ আন্তরিক, তখন সব পর্যায়ে সমন্বয় না হওয়াটা সাফল্যের পথে অন্তরায় হতে পারে।
তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে কেন ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন, তা বুঝতে হলে দেশের ধূমপায়ী ও তামাকজাত পণ্যের বাজার ও ক্ষয়ক্ষতি প্রসঙ্গে জানা দরকার। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০১৭ তথ্যানুসারে, বাংলাদেশে ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সীদের ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ কোনো না কোনোভাবে তামাক ব্যবহার করে। সারা বিশ্বে তামাক উৎপাদনে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮ম। এ দেশে প্রতি বছর মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশ ঘটে অসংক্রামক ব্যাধির কারণে। এর মধ্যে সবার ওপরে রয়েছে ক্যানসার ও হৃদরোগ। আর এসব অসংক্রামক ব্যাধির প্রধানতম কারণ তামাক ও তামাকজাত পণ্য। টোব্যাকো এটলাস ২০২০ অনুযায়ী, প্রতি বছর তামাক ব্যবহারজনিত রোগে দেশে প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। এ বিষয়ক রোগব্যাধি, চিকিৎসা ব্যয় ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক কারণে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১.৪ শতাংশ।
বাংলাদেশে ই-সিগারেটের ক্রেতা মূলত কিশোর ও তরুণরা। এই পণ্য আমদানির বিষয়ে কোনো প্রকারের নিয়মনীতি না থাকায়, আগামী প্রজন্ম আরও ঝুঁকির মুখে পড়ছে। তবে সাম্প্রতিককালে বয়োবৃদ্ধদের মাঝেও ই-সিগারেটের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রেতা ধরার জন্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মুখে বুলি একটাই ই-সিগারেটে তামাকের সিগারেটের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ কম।
তবে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের গবেষণা বলছে, ই-সিগারেট কাগুজে সিগারেটের চেয়েও বেশি নিকোটিনযুক্ত। ক্ষতির পরিমাণও বেশি। মোদ্দা কথা, ই-সিগারেট কাগুজে সিগারেটেরই ভিন্নরূপ। এতে ব্যবহৃত তরল ই-জুসের মূল উপাদান হিসেবে থাকে ভেজিটেবল গ্লিসারল ও প্রোপাইলিন গ্লাইকল, যা খাদ্যদ্রব্য হিসেবে বিষাক্ত না হলেও এর বাষ্প শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করতে পারে। একই সঙ্গে, এর বাষ্প শ্বাসনালির নিজস্ব সুরক্ষা ব্যবস্থাকে নষ্ট করে দেয়, ফলে বারবার শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ হয়। ই-সিগারেটে ভোলাটাইল অর্গানিক কম্পাউন্ড (ভিওসি), বিভিন্ন ক্ষুদ্রকণা, ভারী ধাতব কণিকা ও ফরমালডিহাইডের মতো বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ থাকে যা শরীরে ক্যানসারসহ বিভিন্ন জটিল রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ই-সিগারেটের নিকোটিন শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের জন্য ভয়ানক বিপজ্জনক। উচ্চমাত্রার এই নিকোটিন স্নায়ুতন্ত্রের স্টেম সেলকে ধ্বংস করে অকাল বার্ধক্যসহ স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের কারণ। একই সঙ্গে ই-সিগারেটের নিকোটিন হৃদরোগের ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি করে।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের একই গবেষণায় বলা হয়েছে, ই-সিগারেট ব্যবহারে স্ট্রোকের ঝুঁকি ৭১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে, হার্ট অ্যাটাক ও হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় যথাক্রমে ৫৯ ও ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। ই-জুসে থাকা ক্ষতিকর ফ্লেভারিং এজেন্টের কারণে শ্বাসতন্ত্র, লিভার, কিডনির দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। ভুলে গেলে চলবে না, একজন ১০০ বা ৯০ পাউন্ড ওজনের মানুষের মৃত্যুর জন্য এক চা-চামচ তরল নিকোটিনই যথেষ্ট।
শুধু অসংক্রামক রোগমুক্ত করতেই নয়, বরং বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানোর জন্য হলেও; ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করা জরুরি। ই-সিগারেট আমদানি, স্থানীয়ভাবে তৈরি, বিক্রি ও বিপণন কেন্দ্রগুলোকে নিষিদ্ধ করতে আইন ও নীতিমালার আওতায় আনা জরুরি। এগুলোকে দন্ডনীয় অপরাধের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
এজন্য সবার আগে প্রয়োজন একটি বাস্তবিক নীতিমালা। সেই নীতিমালা প্রণয়নে আইনপ্রণেতা ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয় করতে হবে। সরকারের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এ ব্যাপারে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থাগুলোও এগিয়ে আসতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, মাঠ পর্যায়ে ই-সিগারেটের বিরুদ্ধে প্রচার ও প্রচারণা চালানোর মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরি করা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো জনসচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। পাশাপাশি, তামাকপণ্য বিষয়ক আইনের সঠিক প্রয়োগ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার শেষ নেই। কেবল এগিয়ে আসতে হবে এ বিষয়ক সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অন্যদের।
ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে কয়েকটি জায়গায় বাংলাদেশ এগিয়ে থাকবে। প্রথমত, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে আমরা আরও একধাপ এগিয়ে যাব। দেশে অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার কমবে, রোগ নিয়ন্ত্রণে সাফল্য আসবে এবং চিকিৎসা ব্যয় কমবে; যা সার্বিকভাবে জীবনমানের উন্নয়ন সাধিত করবে।
জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং সংসদ সদস্য হিসেবে আমাদের অন্যতম কাজ, জনগণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা। দেশের উন্নয়নে সবাইকে একাত্ম করা। তাই জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা এক হয়ে দাবি জানাই প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করার এবং প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়নের। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত পরিবেশ উপহার দিতে এবং তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আমাদের এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
লেখক : অধ্যাপক এবং সংসদ সদস্য, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিয়িং, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন