
দীর্ঘ ৮ বছর বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থেকেও নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের কৈজুরি উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখার সহকারী শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। দেশ রূপান্তরে রবিবার প্রকাশিত এমন সংবাদকে উদ্বেগজনক বললেও কম বলা হয়। শিক্ষকতার মতো মহান পেশার সঙ্গে জড়িত এমন ঘটনা নৈতিক স্খলনের পাশাপাশি সমাজে ক্ষমতাবানদের অনিয়ম ও দম্ভের বাস্তব চিত্রকেই নির্দেশ করছে। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, অভিযুক্ত শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পরিষদের সভাপতি, কৈজুরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও শাহজাদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামের ছোট ভাই। আর এ সুবাদেই জাহাঙ্গীর হোসেন স্কুলে উপস্থিত না থেকেও নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলে আসছেন।
সংবাদ সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন রাজধানী ঢাকার মিরপুর-১ নম্বরের শাহআলীবাগ কলওয়ালাপাড়ায় গার্মেন্টস সুতার রঙের কারখানার ব্যবসা করেন। কাগজে-কলমে বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় হাজিরা ঠিক থাকলেও তিনি গত আট বছরে কোনোদিনই স্কুলে উপস্থিত ছিলেন না। ক্লাস রুটিনেও তার নাম নেই। এমন পরিস্থিতিতে এলাকাবাসী জাহাঙ্গীর হোসেনের ‘অনিয়ম-দুর্নীতির’ বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও দুদকসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. শামসুজ্জোহা, উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাসুদ হোসেন ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহাদাৎ হোসেন কৈজুরি উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজে গিয়ে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেন।
শিক্ষকদের কর্মস্থলে অনুপস্থিতি নিয়ে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে শিক্ষামন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার কথা বলেছেন। কিন্তু এ পর্যন্ত কয়জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে কিছু জানা যায় না। শিক্ষকদের কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার প্রথম দায় শিক্ষকের, যিনি শ্রেণিকক্ষে অনুপস্থিত থেকে পেশাগত ওয়াদার ব্যত্যয় ঘটিয়ে চলেছেন। এরপরে দ্বিতীয় দায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের। তারপরে সরকার তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। তারা শিক্ষা প্রশাসনকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির আওতায় আনতে পারেননি। ঊর্ধ্বতনরা যদি নিয়মনীতি মেনে চলেন, অধস্তনদের সেটি মানতে বাধ্য করতে পারেন। আর সেখানে ঘাপলা থাকলে তার জের গিয়ে পড়বে তৃণমূল পর্যন্ত। সিরাজগঞ্জের কৈজুরি উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজে যেটি ঘটেছে, সেটি তারই পুনরাবৃত্তি। কৈজুরি উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ তার আপন বড় ভাই আব্দুল খালেক আর সভাপতি সেজ ভাই সাইফুল ইসলাম। এছাড়া তার মেজ ভাই আব্দুল মালেক একই প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক। ফলে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি তাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ঢাকায় অবস্থান করে তার ব্যবসা পরিচালনা করেন বলে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে।
শিক্ষকের অনুপস্থিতির কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি দেশের আর্থিক লোকসানও হচ্ছে। এইভাবে দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলন রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতের নামান্তর। একইসঙ্গে সমাজে শিক্ষকদের প্রতি যে স্বাভাবিক নৈতিক শ্রদ্ধা ও ভক্তি প্রদর্শন করা হয় সে ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা আঘাত করবে বলেই মনে হয়। কৈজুরি এলাকার লোকজন ও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী অভিভাবকদের অভিযোগের ভিত্তিতে এখানকার অনিয়মের খবর প্রকাশ পায় । যেসব এলাকায় এমন অভিযোগ প্রকাশ না করে গোপন করা হয়, সেসব প্রতিষ্ঠানের অবস্থা এর চেয়ে খুব ভালো তা বলা যাবে না।
শিক্ষকদের কর্মস্থলে উপস্থিত থাকা নিশ্চিত করতে হলে তাদের বেতনভাতা উত্তোলনে কঠোরভাবে আইন ও বিধিমালা মেনে চলতে হবে; কোনো ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে অধিদপ্তরের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কঠোর মনিটরিং ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি অভিযুক্ত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার করলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে।
করোনায় ভয়াবহতা বাড়ছে। ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ও মৃত্যু ঘটছে। এটা শুধু বাংলাদেশে নয় ইউরোপ, ব্রাজিল, ভারতেও বেড়েছে মৃত্যু। ভারতে ও ব্রাজিলে মৃত্যু গত বছরের রেকর্ড অতিক্রম করছে। বাংলাদেশে করোনার তিনটি ভ্যারিয়েন্টের কথা বলা হচ্ছে। যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিলিয়ান ভ্যারিয়েন্ট। তবে শনাক্তের ৮১ শতাংশই হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট। এর সংক্রমণে দ্রুত রোগীর ফুসফুস আক্রান্ত হয়, প্রচুর অক্সিজেন প্রয়োজন হয়, হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ফিরতে সময় লাগছে বেশি। ফলে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এক দিনে এত মৃত্যু বাংলাদেশেও গত বছর ঘটেনি। গত বছরের তুলনায় সংক্রমণ, শনাক্ত ও মৃত্যু তিনটাই বেশি করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে। এ পর্যন্ত ১০ হাজারের মতো মৃত্যুবরণ করলেও অনেকেই বলছেন মৃত্যুর সংখ্যা হয়তো আরও বেশি। নিঃসন্দেহে পরিস্থিতি গত বছরের তুলনায় ভীতিকর। কিন্তু মৃত্যু, শনাক্ত বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারি লকডাউন ঘোষণা কেন যেন কোনো প্রভাব ফেলছে না।
ঢাকা মহানগর হাসপাতালগুলোয় ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই অবস্থা। এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে রোগী নিয়ে ছুটছেন স্বজনরা। তাদের উদ্বেগ, আশঙ্কা, অসহায়ত্ব যে কেমন তা ভুক্তভোগীরা ছাড়া আর কেউ বুঝবেন না। শ্বাসকষ্ট হলে সবচেয়ে আগে প্রয়োজন অক্সিজেন। আর তা নিরবচ্ছিন্নভাবে সরবরাহ করতে গেলে প্রয়োজন হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা। সেটা পাওয়া যাবে কোথায় বা কোন হাসপাতালে? হাসপাতালের বেড খালি পাওয়া যাবে তো? আর গুরুতর আক্রান্ত রোগীর জন্য আইসিইউ খালি পাওয়া যাবে কি? প্রায় দুই কোটি জনসংখ্যার ঢাকা শহরে সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ ১০৪টি আর বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় ৩৭৬টি। আইসিইউতে প্রতিদিন সর্বনিম্ন খরচ ৩০ হাজার টাকা আর কোনো কোনো হাসপাতালে তা দুই লাখ টাকার বেশি। টাকা যায় যাক! প্রিয়জন বাঁচুক এই ভাবনায় অনেকে আইসিইউর আশায় হাসপাতালে ভিড় করছেন। ফলে ভর্তির অপেক্ষায় থাকা সংকটাপন্ন রোগীর স্বজনরা প্রতি মুহূর্তে কামনা করতে থাকে যারা ভর্তি হয়ে আছে তাদের মৃত্যু। কারণ মৃত্যু ছাড়া আইসিইউ বেড খালি হওয়ার উপায় নেই। করোনা মহামারী মানুষকে কতটা অসহায় আর অমানবিক করে ফেলছে! মুখে না বললেও মনে মনে ভাবতে থাকে, একটা বেড দরকার। নিজের স্বজন ছাড়া বাকিরা মরে যাক!
২০২০ সালের মার্চের ৮ তারিখে প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়ার পর এক বছর এক মাস পার হয়েছে। করোনা স্বাস্থ্যব্যবস্থার বেহাল দশা আর স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বেফাঁস কথা জনগণের সামনে উন্মোচন করেছিল। এরপর করোনাকালে বাজেট প্রণীত হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ জনগণের প্রত্যাশা কতটা পূরণ হয়েছে সে বাজেটে সেটা ভিন্ন আলোচনা, তা করলে হয়তো দায়িত্বপ্রাপ্তরা বিরক্ত হবেন। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতে বিশেষত করোনা মোকাবিলায় সীমিত বাজেটের উদ্যোগগুলো কেমন নেওয়া দরকার তা নিয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অন্তত বাস্তবায়িত হবে সে প্রত্যাশা নিশ্চয়ই অমূলক ছিল না। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে সবাই বলেছেন, মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউটা প্রথমটার চেয়ে মারাত্মক হয়ে থাকে। কে বা শোনে কার কথা! প্রথমবার ছিল দম্ভ। আমরা করোনার চেয়ে শক্তিশালী। আর দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রাক্কালে দেখা গেল আত্মতৃপ্তির ঢেকুর। আমরা করোনা জয় করতে পেরেছি, বাকি সবকিছুই জয় করতে পারব। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রথম ধাক্কাতেই আতঙ্কের শিহরণ জেগেছে মানুষের মনে। তাই কোনো আশ্বাসে মানুষ আর বিশ্বাস করতে পারছে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত বছর জানিয়েছিল, দেশে সরকারি হাসপাতাল ৬৫৪টি, এখানে শয্যাসংখ্যা ৫১৩১৬টি। বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ৫০৫৫টি, যেখানে শয্যাসংখ্যা ৯০৫৭৮টি। সব মিলিয়ে প্রতি ১১৫৯ জন মানুষের জন্য ১টি শয্যা। শতকরা একজনের জন্য হাসপাতাল শয্যা প্রয়োজন হলেও হাসপাতাল শয্যা ১০ গুণ বাড়াতে হবে। আইসিইউর সংখ্যা বলা হয়েছিল ১১৬৯টি। এর মধ্যে সরকারি পর্যায়ে ৪৩২ এবং বেসরকারি হাসপাতালে ৭৩৭। গত এক বছরে এসবের কতটুকু বৃদ্ধি হয়েছে তা জানার খুব ইচ্ছা হয়। যে তথ্য আতঙ্কের সঙ্গে ক্ষোভ জাগায় তা হলো, ৩৫০টি আইসিইউ কিনে আনা হয়েছে, সেগুলো নাকি প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের অভাবে এখনো স্থাপন করা হয় নাই। কথায় কথায় উন্নয়নের বিবরণ শুনে এখন কী অব্যবস্থাপনার উন্নয়নের চিত্র দেখতে হবে?
প্রথম ঢেউ বা ধাক্কার শিক্ষাটা কী ছিল? তা কি কর্তা ব্যক্তিদের মনে আছে? প্রথম ধাক্কায় যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের ৭৫ শতাংশ ছিলেন পুরুষ। বাকিরা ছিলেন নারী। বয়স বিবেচনায় ৬০ বছরের বেশি বয়সী ৫৬ শতাংশ, ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সী ২৫ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ১১ শতাংশ মৃত্যুবরণ করেছেন সে কথা পরিসংখ্যান বলছে। মৃত্যুর সংখ্যার শীর্ষে ছিল ঢাকা, প্রায় ৫৭ শতাংশ। করোনার উচ্চঝুঁকিতে ছিল ৩১টি জেলা। গত এক বছরে করোনায় কাজ হারিয়েছে, আয় কমেছে সাধারণ মানুষের। কাজ জোগাড় করা এবং বেঁচে থাকা দুটোই কঠিন হয়ে পড়েছে শ্রমজীবীদের পক্ষে। বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা এবং বিবিএস পর্যন্ত জরিপ করে দেখিয়েছে, কীভাবে মানুষের জীবনে কষ্ট বেড়েছে করোনার আঘাতে। প্রায় ১ কোটি ৫৬ লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছিল এবং ৯৫ শতাংশ শ্রমজীবী মানুষের অন্তত ২০ শতাংশ আয় কমে গিয়েছিল। কিন্তু এসব তো তথ্য। তথ্যের কি শক্তি থাকে, যদি তা কেউ বিবেচনায় না নেয়? বিশেষ করে, যারা ক্ষমতায় আছেন তারা। যে যাই বলুক না কেন, ক্ষমতায় যারা থাকেন কিছু করার ক্ষমতা তো তাদেরই থাকে। কারণ ট্যাক্সের টাকা বা রাজস্ব আয় সব তো তাদের হাতে, প্রশাসন তাদের নিয়ন্ত্রণে। সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ যত পরামর্শই দিন না কেন বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা তো ক্ষমতাসীনদের হাতেই।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সম্প্রতি রাজধানীর মহাখালীতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মার্কেট হাসপাতালের নতুন ২০০টি করোনা আইসিইউ বেড ও ১০০০টি আইসোলেশন বেডের প্রস্তুতকরণ ও কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন শেষে বলেছেন, ‘এ মুহূর্তে সরকারের লকডাউন ব্যবস্থা জরুরি ছিল, তাই সরকার দিয়েছে। যখন লকডাউন তুলে নেওয়ার প্রয়োজন হবে, সরকার সেই সিদ্ধান্ত নেবে। এখন এসব সরকারি নির্দেশনা মেনে না চললে ভবিষ্যতে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু উভয়ই নিয়ন্ত্রণহীন হতে পারে।’ এই কথার সঙ্গে দ্বিমত করার কি কিছু আছে? কিন্তু যখন সিদ্ধান্তগুলো পালটে যায়, তখন হতবাক হয়ে যাওয়া ছাড়া আর কিছু করার আছে কি? ঢাকাসহ আটটি মেট্রোপলিটন শহরে গণপরিবহন চলবে, মার্কেট খোলা থাকবে বলে জানানো হয়েছে। এ যেন এক বেদনা জাগানো রসিকতা! কঠোর সিদ্ধান্ত আর সীমিত বাস্তবায়নের ট্র্যাজিক নাটকের মঞ্চায়ন চলছে।
করোনার ইনকুবেশন পিরিয়ড ধরা হয় ১৪ দিন, সে কারণেই ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন কথা বলা হয়। তাহলে সাত দিনের লকডাউন দেওয়া হলো কোন বিবেচনায়? এখানেই সিদ্ধান্তহীনতার শেষ নয়, একবার বলা হচ্ছে লকডাউন কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে আবার দুদিন পরেই নগরে গণপরিবহন চলার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। অফিস-আদালত চলবে, কারখানা চলবে, ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা চলবে, বইমেলা চলবে, মার্কেট খুলবে। ঢাকাকে যদি করোনার সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত এলাকা ধরা হয় তাহলে সাধারণ ছুটি বা লকডাউনের সঙ্গে সঙ্গে যে মানুষ ছুটল গ্রামের দিকে তারা কি সংক্রমণের বিস্তার ঘটিয়ে দিতে সহায়তা করল না? এর ফলে কেন্দ্র থেকে প্রান্তে করোনা ছড়ানোর আশঙ্কা কি উড়িয়ে দেওয়া যাবে? জনগণ করোনাকে ভয় পাচ্ছে না, লকডাউন মানছে না, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করছে, দোকানপাট খুলতে চাইছে, এসব কথা বলে তাদের দায়ী করা যাবে, কিন্তু তাদের ওপর দায় চাপিয়ে করোনা সংক্রমণ ঠেকানো যাবে কি? করোনার হাত থেকে সুরক্ষার একমাত্র উপায় বলে কিছু এখনো সুনির্দিষ্ট করা যায়নি কিন্তু প্রধান উপায় বলে মানুষের সংস্পর্শ এড়ানোর কথা সব চিকিৎসা বিজ্ঞানী বলছেন। এ ক্ষেত্রে সবার সমন্বিত সুরক্ষাই ব্যক্তিকে সুরক্ষিত করতে পারে। তাই জীবিকার চাপে যেন শ্রমজীবী মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিতে না হয় সে ব্যাপারটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। করোনার চেয়ে পেটের ক্ষুধা আর মুনাফার লালসা দুটোরই ক্ষমতা বেশি। গরিব মানুষ লকডাউন মানবে না ক্ষুধার জ্বালায়। মালিকরা কারখানা চালু রাখবেন, ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে থাকবেন আর গরিবকে ধমক দিয়ে ঘরে থাকতে বললে কোনোভাবেই সাধারণ মানুষকে ঘরে রাখা যাবে না।
লেখক রাজনৈতিক সংগঠক ও কলামনিস্ট
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, আগাম বন্যা ও সিডর, আইলা, আম্পান, বুলবুলের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখন বাংলাদেশের মানুষের নিত্যসঙ্গী। বিশেষ করে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি খাত। শত প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে এ দেশের কৃষক জমিতে ফসল ফলায়। স্বপ্ন দেখে বেঁচে থাকার। অথচ মুহূর্তেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে সবকিছু সর্বস্বান্ত হয়ে যায়। গত ৪ এপ্রিল রাতে ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে গরম ‘লু’ হাওয়ায় গোপালগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলায় হাজার হাজার হেক্টর জমির বোরো ধানের শীষ নষ্ট হয়ে সাদা হয়ে গেছে। গোপালগঞ্জ কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর গোপালগঞ্জে ৭৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর চাষ হয়েছে। এসব জমিতে এখন ফ্লাওয়ারিং স্টেজ চলছে। অর্থাৎ ধানের শীষে দুধ এসেছে। মাত্র আধা ঘণ্টার ‘লু’ হাওয়ায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়া ও কাশিয়ানী উপজেলার শত শত হেক্টর জমির বোরো ধানের শীষ সাদা হয়ে গেছে। একই সময়ে কিশোরগঞ্জ জেলায়ও ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে গরম হাওয়ায় হাওরের ধানের শীষও সাদা হয়েছে। অর্থাৎ এসব শীষে কোনো চাল নেই। সব পুড়ে গেছে। ধান তো পুড়েনি, পুড়েছে কৃষকের কপাল।
মূলত জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সময়ে-অসময়ে নানা রূপে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে। যে আঘাতে খান খান হয়ে যায় কৃষকের স্বপ্ন। অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়ে ভিটেমাটি ছেড়ে নগর-মহানগরে বস্তিবাসী হয়ে যান। এভাবেই গোটা দুনিয়ার উন্নয়নশীল দেশের লাখ লাখ মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছেন। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আইলার আঘাতে ল-ভ- হয়ে যাওয়া নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ খুলনার বস্তিতে আশ্রয় নিয়ে পেশা পরিবর্তন করে কোনো রকমে বেঁচে আছেন। শুধু খুলনায় নয়, জলবায়ু উদ্বাস্তুরা এখন গোটা দেশের নগর-মহানগরে বস্তিবাসী হয়েই মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
বাস্তবেই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কৃষিনির্ভর অর্থনীতির দেশ হিসেবে আমাদের ক্ষতির পরিমাণ প্রতিনিয়তই বাড়ছে। মূলত বৈশ্বিক উষ্ণতার দরুণ প্রকৃতি রুক্ষ হয়ে উঠছে। ফলে খরা, অতিবৃষ্টি, আগাম বন্যা, ঝড়ের প্রকোপের কারণে কৃষি চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে উফশী ধানের ফলন কমে যাচ্ছে এবং গমের ক্ষেতে পোকার আক্রমণও বাড়ছে। এমনকি অতিরিক্ত তাপ ও আর্দ্রতার কারণে গাছের ছত্রাক রোগ বেড়ে যাচ্ছে। আবার বোরো মৌসুমে রাতে যদি ঠান্ডা ও কুয়াশা পড়ে ধানের পাতায় পানি জমে এবং দিনে গরম পড়ে, তাহলে ব্লাইট রোগের আক্রমণ বেড়ে যায়। যদিও বিগত ২৫ বছরের আবহাওয়ার উপাত্ত থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের গড় উষ্ণতা তেমন বাড়েনি। তবে আশঙ্কা করা হয়, আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ গড় তাপমাত্রা ১.০ ডিগ্রি, ২০৫০ সাল নাগাদ ১.৪ ডিগ্রি ও ২১০০ সালে ২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যেতে পারে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তাপমাত্রা কম-বেশি হওয়ায় ফলনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। যেমন কৃষিতে খরা একটি বহুল প্রচলিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি বছরই ৩০ থেকে ৪০ লাখ হেক্টর জমি বিভিন্ন মাত্রায় আক্রান্ত হয়। ফলে গাছের বৃদ্ধিতে বাধার সৃষ্টি হয় এবং বৃষ্টিপাতের অভাবে মাটিতে পানিশূন্যতা সৃষ্টি হয়, যা গাছের বেড়ে ওঠার পথে বড় অন্তরায় সৃষ্টি করে। অর্থাৎ আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে কৃষকদের নানা প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে চাষাবাদ করতে হয়। শুধু তাই নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের দরুন পানি স্তরে পানির শূন্যতা, লবণাক্ততাও বেড়ে যাচ্ছে।
বিশেষ করে, লোনা পানির অনুপ্রবেশ বাংলাদেশের জন্য একটি মারাত্মক সমস্যা। ১৯৭৩ সালে ১৫ লাখ হেক্টর জমি মৃদু লবণাক্ততায় আক্রান্ত হলেও ১৯৯৭ সালে এসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ২৫ লাখ হেক্টরে। বর্তমানে এর পরিমাণ ৩০ লাখ হেক্টরেরও বেশি। উজান থেকে স্বাভাবিক পানির প্রবাহে বাধা, কম বৃষ্টিপাতের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ত জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা ভবিষ্যতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও পরিমিত বৃষ্টির অভাবে সমস্যা প্রকট হতে পারে। লবণাক্ততা কৃষি চাষাবাদের জন্য অনুকূল নয়। কারণ লবণাক্ত পানিতে কৃষি চাষাবাদ হয় না। যদিও বাংলাদেশের কৃষি বিজ্ঞানীদের অভাবনীয় সফলতায় লবণাক্ত সহনীয় খাদ্যশস্যের জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। কিন্তু মিঠা পানির চাষাবাদ আর লবণাক্ত পানির চাষাবাদের মধ্যে যথেষ্ট ফারাক রয়েছে। শুধু লবণাক্ততাই নয়, জলবায়ু পরিবর্তন ও ভূ-উপরিস্থ পানির বদলে ভূ-গর্ভস্থ পানি অতিমাত্রায় ব্যবহার করায় ইতিমধ্যেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঝিনাইদহ জেলার ছয় উপজেলায় ভূ-গর্ভস্থ পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। সেখানকার বসবাসরত মানুষ এখন বেঁচে থাকার নিয়ামক বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকটে পড়েছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় লক্ষাধিক নলকূপ অকেজো হয়েছে। আবার দুর্ভোগেও পড়েছেন চাষিরা। পানির অভাবে জমিতে সেচ দিতে পারছেন না। অনেকেই ২০-২৫ ফুট পর্যন্ত মাটি খুঁড়ে গর্ত করে নিচে সাবমারসিবল পাম্প বসিয়ে কোনো রকমে সেচ দিচ্ছেন এবং খাবার পানি সংগ্রহ করছেন।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত নিয়ে অতিসম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন উপমহাদেশের দেশগুলোকে সবচেয়ে বেশি নাজুক অবস্থায় ফেলেছে। যদিও জলবায়ু পরিবর্তনে আমাদের কোনো ভূমিকা নেই, তারপরও আমরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তের সম্মুখীন। অভিযোজনের মাধ্যমে আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারলেও এই জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান ধারা বন্ধ করা না গেলে অভিযোজন প্রক্রিয়ায় দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা দেওয়া কঠিন হবে। তিনি বলেন, আমরা এমন একটি অঞ্চলে বসবাস করি, যা প্রাকৃতিক ভাবে দুর্যোগপূর্ণ। হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত দেশগুলো যেমন ভূমিকম্প, ফ্লাউডবার্স, বরফ ধস, ভূমি ধস, ফ্লাশ বা হরকাবানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ, তেমনি বাংলাদেশের মতো সাগর উপকূলীয় অঞ্চলগুলো বারবার বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প, অতিবৃষ্টি বা খরার মতো দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছে।
বাস্তবতা হচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার এক বিশাল সংখ্যক মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। বিপুল সংখ্যক মানুষ এখনো অর্ধাহারে, অনাহারে প্রতি রাতে ঘুমাতে যায়। আমাদের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ যারা জীবন ধারণের ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা থেকে আজও বঞ্চিত। এ সংকট দিন দিন আরও প্রকট হচ্ছে। গত ১১ মার্চ নিরাপত্তা পরিষদের খাদ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক এক বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস বলেছেন, কভিড-১৯ মহামারী ও জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি বৃদ্ধি এবং ক্ষুধার কারণে বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষ মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ না নিলে লাখ লাখ মানুষ ক্ষুধা ও মৃত্যুর মুখে পড়বে। তিনি শঙ্কার কথা জানিয়ে বলেন, তিন ডজনের বেশি দেশের ৩০ মিলিয়ন লোক দুর্ভিক্ষ ঘোষণা থেকে ‘মাত্র এক পা দূরে রয়েছে।’
আসলে ওই বৈঠকে যেসব উন্নত দেশের প্রতিনিধিরা বলেছেন, মূলত বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য তারাই দায়ী। এমনকি উষ্ণায়ন কমানোর ক্ষেত্রে তাদের কোনো আন্তরিকতাই নেই। আর এর বিরূপ প্রভাবে আমাদের কৃষি ও অর্থনীতি দিন দিন মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে। এ অবস্থা থেকে আমাদের দেশের মানুষকে বাঁচাতে হলে নিজ উদ্যোগেই জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় নিজেদের তহবিল গঠন করেই পরিকল্পনা মাফিক কাজ করতে হবে, যা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প পথ আমাদের সামনে খোলা নেই।
লেখক : কৃষিবিষয়ক লেখক
আজ থেকে দু’বছর আগের কথা। দুলাভাইয়ের অনুপ্রেরণায় ১৩ শতক জমিতে ব্রয়লার মুরগির খামার গড়ে তুলেন চকপাঁচপাড়া গ্রামের একাদুল হক। চকপাঁচপাড়া ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার একটি বর্ধিষ্ণু গ্রাম। একাদুল হক এসএসসি পরীক্ষায় পাস করার পর আর পড়াশোনা করেনি। বাড়ির পাশে পতিত জমিতে সবজি ও ব্রয়লার মুরগি চাষে মনোনিবেশ করে। মাত্র ৮০ হাজার টাকা দিয়ে পুরাতন টিনের একটি ঘর কিনে তার মেঝে পাকা করে, একদিন বয়সের এক হাজার বাচ্চা, খাবার ও ভ্যাকসিন কিনে একাদুলের যাত্রা ব্রয়লার মুরগি পালনে। একাদুল গত এপ্রিল মাসে তার তের শতকের ক্ষুদ্র খামারে উৎপাদিত এক হাজার মুরগি বিক্রি করে ৪০ হাজার টাকা লাভ করে। শুধু একাদুল কেন? ওই গ্রামের মুজিবুর রহমান, বাহার উদ্দিন, আব্দুল জব্বার ও সানাউল্লাহসহ অনেক যুবক মুরগি পালন করে প্রতি মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় করছে। এই টাকায় কারও সংসার চলছে। ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগাড় হচ্ছে। এনজিওর ঋণের সাপ্তাহিক কিস্তি পরিশোধ হচ্ছে। বৃদ্ধ বাবা-মায়ের চিকিৎসার ওষুধ কেনা হচ্ছে। এই আয় থেকে সন্তানের প্রাইভেট পড়ার খরচও জোগাড় করছেন অনেক অভিভাবক।
গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে প্রাণিসম্পদ খুবই সম্ভাবনাময় খাত হলেও নিকট অতীতে খাতটির বিকাশে কখনই তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এক দশক আগেও উন্নয়ন কর্মকা-ের জন্য প্রাণিসম্পদ খাতে সামান্য বরাদ্দের বিষয় ছিল অকল্পনীয়। আজ থেকে কয়েক বছর আগেও কোরবানির গরুর চাহিদার জন্য নির্ভর করতে হতো পাশর্^বর্তী দেশের ওপর। ২০১৪ সালে ভারতের গরু রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে দুই বছরের মধ্যেই ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। এখন দেশে উৎপাদিত পশুতেই কোরবানির চাহিদা পূরণ হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে উৎপাদিত পশু দিয়ে কোরবানির চাহিদা পূরণ প্রাণিসম্পদ খাতের একটি বিশাল অর্জন ও সফলতার স্বাক্ষর। তবে এ খাতের উন্নয়নের আরও অনেক সুযোগ রয়েছে। যেমন দুধের চাহিদা পূরণে যদি সম্পূর্ণভাবে দেশীয় খামারের ওপর নির্ভর করা হয়, তাহলে দুধ ও দুগ্ধপণ্য আমদানি বাবদ ব্যয় হওয়া বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। পরিকল্পিতভাবে দুগ্ধ শিল্পের উন্নয়ন ঘটানোর মাধ্যমে সেটা করা সম্ভব। এতে শুধু বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে তা নয়, তরুণ-তরুণীদের একটি বড় অংশের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে।
হালাল মাংসের কয়েক হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক বাজারে আমাদের প্রবেশাধিকার খুবই সীমিত। ছোট, বড়, মাঝারি উদ্যোক্তা তৈরি করে প্রাণীর জাত প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে ভ্যালু চেইন উন্নয়ন করা সম্ভব হলে খুবই সহজে রপ্তানি বাজার তৈরি করা যেতে পারে। এতে হালাল মাংস রপ্তানির মাধ্যমে দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে বৈচিত্র্য আনা সম্ভব হবে বলেও মনে করেন দেশের প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞরা।
১৯৭১ সালে দেশে জনপ্রতি দুধের প্রাপ্যতা ছিল ৩০ মিলি। গত ১০ বছরে সরকার কর্র্তৃক গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের ফলে বর্তমানে জনপ্রতি দৈনিক ২৫০ মিলি চাহিদার বিপরীতে দুধের গড় প্রাপ্যতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৭৬ মিলি। দেশে বার্ষিক দুধের চাহিদা ১৫.২০ মিলিয়ন মেট্রিক টন। উৎপাদন ১০.৬৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন। ঘাটতি ৪৫.২ মিলিয়ন মেট্রিক টন। দেশে চাহিদার তুলনায় দুধের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। রোজার সময় এই ঘাটতি আরও প্রকট আকার ধারণ করে। ফলে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ হাজার ৮২১ কোটি টাকার দুধ আমদানি করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। আর গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সেই দুধ আমদানি বাবদ ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা। শিক্ষিত কয়েক লাখ তরুণ দুগ্ধ শিল্পে নিয়োজিত হওয়ার কারণে দেশে চাহিদা ও জোগানের ঘাটতি দিন দিন কমে আসছে। তারপরও দেশের দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের আমদানি হয় প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার। তবে উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে জাত উন্নয়ন, কৃত্রিম প্রজনন মানসম্পন্ন ব্রিড তৈরিতে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। উন্নত জাতের অভাবে দেশি গাভির দুধ উৎপাদন সক্ষমতায় বিশে^র অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
করোনাকালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন প্রাণিসম্পদ খাতের ক্ষুদ্র খামারিরা। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ক্ষুদ্র খামারিদের নিবন্ধন করে ভর্তুকির আওতায় আনতে হবে। তরুণ উদ্যোক্তাদের এ খাতে নিয়োজিত করতে পারলে খাতটির সব ধরনের উৎপাদনে দক্ষতার ছোঁয়া লাগবে। এরই মধ্যে গুঁড়োদুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের আমদানি নির্ভরতা বেড়েছে। তাই আমিষের চাহিদা পূরণ ও দেশের মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তায় প্রাণিসম্পদ খাতকে ঢেলে সাজাতে বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারের আরও বড় পরিকল্পনা নিতে হবে। প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনতে পোল্ট্রি ও দুগ্ধ খামার তৈরি, গরু মোটাতাজাকরণের মাধ্যমে খামারের সংখ্যা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। উৎপাদন ছাড়াও বিপণন ব্যবস্থায় নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করা যেতে পারে। গ্রামের ছোট পরিসরে প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রাথমিক কারখানা গড়ে তোলা দরকার। কাঁচা ও ঘাস জাতীয় খাদ্যের চাহিদা পূরণে পতিত জমিকে কাজে লাগাতে কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে প্রাণিসম্পদ খাত।
আজ থেকে ৪০ বছর আগে অর্থাৎ আশির দশকেও বাংলাদেশে মাথাপিছু দৈনিক দুধের প্রাপ্যতা ছিল ৩০ মিলির কম। অধিকাংশ মধ্যবিত্ত পরিবারে সপ্তাহে একদিন রান্না হতো মাংস, তাও যৎসামান্য। ডিম খাওয়া হতো ভাগভাগি করে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশের জনসংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বাড়লেও জনপ্রতি দৈনিক দুধের প্রাপ্যতা বেড়ে হয়েছে ১৭৬ মিলি। এ ছাড়া সব শ্রেণি ও পেশার মানুষের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যুক্ত হয়েছে ডিম ও মাংস। পুষ্টি চাহিদা পূরণের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মানুষের গড় আয়ু ও কর্মক্ষমতা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে বাংলাদেশে প্রায় ৩ কোটি ২৪ লাখ ৬৫ হাজার গবাদিপশু ছিল এবং হাঁস-মুরগি ছিল ২ কোটি ১০ লাখ। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে পাকসেনা ও তার দোসররা প্রায় ২৫ শতাংশ হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশু জবাই করে খেয়ে ফেলে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে দেখা দেয় খাদ্য ও পুষ্টি সংকট। সেই বাংলাদেশে আজ চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদন হচ্ছে মাংস ও ডিম। ২০২০ সালে বাংলাদেশে গবাদি পশুর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৬০ হাজার ও হাঁস-মুরগি ৩৫ কোটি ৬৩ লাখ ২০ হাজার। জাত উন্নয়নের ফলে গরু-মহিষের দুধ উৎপাদন বেড়েছে ৬ থেকে ১৫ গুণ পর্যন্ত।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে জনসংখ্যার প্রায় ২০ ভাগ প্রত্যক্ষ ও ৫০ ভাগ পরোক্ষভাবে প্রাণিসম্পদ খাতের ওপর নির্ভরশীল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপিতে স্থিরমূল্যে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান ১ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। এছাড়া সস্তায় সব শ্রেণির মানুষের জন্য প্রাণিজ আমিষের জোগান দিচ্ছে পোলট্রি শিল্প। বর্তমানে পোলট্র্রি খাতে সরাসরি কর্মসংস্থান হচ্ছে ২৫ লাখ মানুষের। এই শিল্পের ওপর ভর করে সারা দেশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ও ফাস্টফুডের দোকান। পোল্ট্রি শিল্পে উৎপাদিত মাংসের বড় একটি অংশই বিক্রি হচ্ছে এসব খাবারের দোকানে। আর এ খাতেও কর্মসংস্থান হচ্ছে বিপুল সংখ্যক মানুষের। এর বাইরে বর্তমানে গড়ে উঠেছে অসংখ্য কোয়েল, কবুতর ও টার্কি খামার। প্রাণিজ আমিষ সরবরাহে এসবের অবদানও কম নয়।
১৯৭১-৭২ অর্থবছরে দেশে দুধ উৎপাদন হয় ১০ লাখ মেট্রিক টন, মাংস উৎপাদন হয় ৫ লাখ মেট্রিক টন ও ডিম উৎপাদন হয় ১৫০ কোটি। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে দুধের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ৬ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন, মাংসের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ৭৬ লাখ ৭৪ হাজার মেট্রিক টন এবং ডিমের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৭৩৬ কোটি। বছরে জনপ্রতি ১০৪টি হিসাবে বর্তমানে দেশে ডিমের চাহিদা ১ হাজার ৭৩২ কোটি এবং দৈনিক জনপ্রতি ১২০ গ্রাম হিসেবে বছরে মাংসের চাহিদা ৭২ লাখ ৯৭ হাজার টন। সে বিবেচনায় বাংলাদেশ ডিম ও মাংস উৎপাদনে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, উদ্বৃত্ত একটি দেশ। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে মাংস উৎপাদনে এবং ২০১৯ সালে ডিম উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে করোনা সংক্রমণরোধে প্রাণিজ আমিষের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই লকডাউনের কারণে প্রাণিজ আমিষ বিশেষ করে দুধ, ডিম ও মাংসের উৎপাদন, সরবরাহ ও বিপণন যাতে ব্যাহত না হয় সেদিকেও সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে।
লেখক সাবেক মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন
১৮৮৫ সালের ১২ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন বাঙালি প্রতœতত্ত্ববিদ এবং সাহিত্যিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। তার বাবা মতিলাল ও মা কালিমতী। তিনি ১৯০৭ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইতিহাসে সম্মানসহ স্নাতক এবং ১৯১০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯১১ সালে তিনি ভারতের প্রতœতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগে সহকারী তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯১৭ সালে প্রতœতাত্ত্বিক তত্ত্বাবধায়ক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯২৬ সালে তিনি স্বেচ্ছায় অবসরগ্রহণ করেন। ১৯২৮ সালে তিনি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতির মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী অধ্যাপক পদে যোগ দেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি ভারতীয় সভ্যতার সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিক ছিলেন। উৎকীর্ণ লিপিতত্ত্ব ও প্রাচীন হস্তলিপি বিদ্যা, মুদ্রাতত্ত্ব, স্থাপত্য ও ভাস্কর্যবিদ্যা ইত্যাদি বিষয়ে তার একাধিক গ্রন্থ রয়েছে। ভারতীয় শিল্পকলার চর্চায় তার উল্লেখযোগ্য কীর্তি তার মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয় ‘ইস্টার্ন ইন্ডিয়ান মেডিয়েভাল স্কুল অব স্কাল্পচার’ নামক গ্রন্থটি। প্রায় ৪০০ শোভাবর্ধক চিত্র সংবলিত এ গ্রন্থে তিনি পূর্ব ভারতীয় কলার নির্মাণ কৌশল, উৎপত্তি ও বিকাশ, বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণদের দেব-দেবীদের মূর্তিতত্ত্ব, জৈন প্রতিমা ও পূর্ব ভারতের মধ্যযুগীয় স্থাপত্য সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি উৎকীর্ণ মূর্তিতে উল্লিখিত তারিখ ও তারিখবিহীন মূর্তির অভিলেখের ওপর ভিত্তি করে কালানুক্রমে পাল-সেন যুগের ভাস্কর্যকে বিন্যস্ত করেন। ঔপন্যাসিক হিসেবেও তার পরিচিতি রয়েছে। তার কয়েকটি উপন্যাস ভারতের নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯৩০ সালের ২৩ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে চলতি বছর মে মাসে। গত শুক্রবার ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে দেশটি। নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে এ নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করার ঘোষণার তিন দিন পার হলেও কারও নাম প্রকাশ হয়নি। তবে বিভিন্ন মহলে নানা দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের নামে আলোচনা এখন সর্বত্র।
কারা যুক্তরাষ্ট্রের এ ভিসা নিষেধাজ্ঞায় পড়েছেন বা পড়তে যাচ্ছেন তা নিয়ে রাজনৈতিক, কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ ও ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্বকারী একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, যেহেতু নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, তাতে এর লক্ষ্য নির্বাচনী ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারাই। তারাই ভিসানীতির আওতায় পড়বেন, এটাই স্পষ্ট।
তারা আরও বলেন, ভিসানীতি প্রয়োগের কথা জানালেও যুক্তরাষ্ট্র কারও নাম প্রকাশ করেনি। তবুও বলা যেতে পারে, কাদের ওপর ভিসানীতি প্রয়োগ করবে পশ্চিমা এ প্রভাবশালী দেশটি।
এ ব্যক্তিরা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয়ই একটা তালিকার বেশিরভাগ নামই চূড়ান্ত করে ফেলেছে। অল্পসংখ্যক বাকি থাকতে পারে। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে সেগুলোরও চূড়ান্ত করা হবে। যেখানে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জড়িত প্রতিষ্ঠান, দপ্তর, অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা থাকতে পারেন।
বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে ধারণা পাওয়া গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির উদ্দেশ্যই যেহেতু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে, ফলে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা যারা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকবেন তারাই ভিসানীতির আওতায় আসবেন। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারাও থাকতে পারেন। থাকতে পারেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রাজনৈতিক নেতা, তারা যেকোনো দলের হতে পারেন। অল্পসংখ্যক ব্যবসায়ীও থাকতে পারেন।
জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন,‘ভিসানীতির বিষয়টি আমেরিকা প্রশাসন পরিষ্কার করে ঘোষণা না করলেও বুঝিয়ে দিয়েছে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারেন, এমন যে কেউ এ ভিসানীতির আওতায় পড়তে পারেন। যেমন রাজনীতিবিদ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাহী প্রশাসন, জুডিশিয়ারি অর্থাৎ যারাই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট থাকবেন, অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যাহত করবেন তারাই এর আওতায় আসবেন।’ তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের এর আওতায় পড়ার সুযোগ নেই। তবে হ্যাঁ, নির্বাচন ব্যাহত করার ছোট্ট সুযোগ তাদের হাতেও থাকে, তারা যদি জড়িত হন, ভিসানীতির আওতায় পড়বেন।’
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ভিসানীতির চেয়েও আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে নেগোশিয়েশন জরুরি। কে ভিসানীতির আওতায় পড়ল, কে পড়ল না এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঐক্য।’ তিনি বলেন, ‘ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়ায় কারা রয়েছেন সেটা আমেরিকা প্রশাসন ঘোষণা না করলেও বোঝা খুব জটিল কিছু নয়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘আমেরিকা যেহেতু ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে তাদের ভিসানীতি, ফলে পরিষ্কার হয়ে গেছে কারা পড়তে পারেন এর আওতায়। যারা নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, নিশ্চয়ই তারাই এর আওতায়।’
বিভিন্ন পর্যায়ের ও পেশার নিয়োজিত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজনৈতিক নেতারা ভিসানীতিকে তেমন আমলে না নিলেও বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা ও সিভিল প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ভেতরে আমেরিকার ভিসানীতি ভীষণ ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে এর নানা কারণ জানা গেছে। এর মধ্যে বিদেশে টাকা পাচার, ব্যবসাবাণিজ্য, পরিবারের সদস্যদের বিদেশে থাকা এসব কারণে বেশি ভীতিতে ফেলেছে তাদের। আবার একটা অংশ বিদেশে কিছু না থাকলেও ভিসানীতির আওতায় পড়লে ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হওয়ার ভয় পাচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করায় যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে পারেন এমন দুুশ্চিন্তা যেমন কারও কারও মনে ভর করেছে, তেমনি ভিসানীতিতে পড়ার সুযোগ নেই তারাও দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। কারণ এই শ্রেণির লোকজন মনে করছেন, কখনো যদি যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান, তখন যদি ভিসা না হয়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন এমন নামের তালিকাও চারদিকে ঘুরপাক খাচ্ছে। আরও অগ্রসর হয়ে কোনো কোনো মহল লম্বা তালিকা হাতে নিয়ে ঘুরছে। তবে এসব নামের তালিকার উৎস বা সূত্র নিশ্চিত নয় বলে কেউ কেউ বিষয়টি গুজব মনে করছেন। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের বাইরে প্রায় সবাই ভিসানীতি আতঙ্কে ভুগছেন।
একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ভিসানীতিকে জয়-পরাজয় হিসেবে প্রচার করে এলেও ভেতরে ভীতি সবারই রয়েছে। কারণ পশ্চিমা দেশে তাদের অনেকেই ইতিমধ্যে সেকেন্ড হোম গড়ে তুলেছেন। ফলে রাজনীতির বাইরেও ব্যক্তিজীবনের প্রয়োজনে ভিসানীতি তাদের ওপর যদি প্রভাব ফেলে, সে আশঙ্কা তো আছেই।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সব বিষয়ে আমি কথা বলি না। আমি একটাই কথা বলব, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আওয়ামী লীগ সে কাজই করছে।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘ভিসানীতি আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এর সঙ্গে গণতন্ত্র ও নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।’ তিনি বলেন, গণতন্ত্রের বিষয়ে বলতে হলে আরও অনেক বিষয় রয়েছে। এ ভিসানীতি কারা লক্ষ্যবস্তু জানতে চাইলে ইনু বলেন, ‘এটি নিয়ে মাথাব্যথা নেই আমাদের। তারাই বলতে পারবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কারও পরামর্শে সরকার কোনো প্রতিষ্ঠান অদলবদল করবে না, পরিবর্তনও আনবে না।’
‘প্রতি অপারেশনের আগে আমার মা আমাদের বলে, ‘আমার চোখের দুই মণি (ইনায়া এবং ইলহাম) দুজনকে তোমরা দেখে রেখো।’ আর আমরা হাসিমুখে বলি, ‘আম্মু এই অপারেশনের পরে তুমি আমাদের চাইতেও স্ট্রং হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। তখন তুমি তোমার দুই নাতনির বিয়ে খাইতে পারবা।’ ডিসেম্বরের ২২ তারিখে আম্মুর বাইপাস হয়েছিল। এক বছর যেতে না যেতে আজ আম্মুর আরেকটা অপারেশন হচ্ছে (শহবব রিপ্লেসমেন্ট)। প্রত্যেক অপারেশনের আগে বন্ড সাইন করার সময় হাতটা কেঁপে ওঠে। আমার মায়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন। পৃথিবীর সব মায়েরা সুস্থ থাকুক। আমিন!’
গত ২০ সেপ্টেম্বর এই ছবিটি পোস্ট করে ফেসবুক পেইজে কথাগুলো লেখেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা। তার মায়ের অপারেশন ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু বাবা-মায়ের অসুস্থতায় সন্তানের আকুতি ঠিকই ফুটে উঠেছে এই স্ট্যাটাসে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে আসাদুর রহমান কিরণের বিরুদ্ধে অনুমোদন ছাড়াই সহস্রাধিক প্রকল্প গ্রহণ, পদোন্নতি এবং কেনাকাটায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রায় ২১ মাস দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে কাউন্সিলরদের নিয়ে মাসিক না করে এসব অনুমোদন দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে। আর এসব অনিয়মের তদন্ত দাবি করেছেন সিটি করপোরেশনের একাধিক কাউন্সিলর।
অভিযোগের ব্যাপারে সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তার মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কিরণের বিরুদ্ধে গত ২১ মাসে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ও প্রায় ৩০০ কোটি টাকার রাজস্ব তহবিল থেকে নেওয়া প্রকল্পগুলোতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের কার্য সহকারী ছিলেন আবু সাঈদ চৌধুরী। ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর আসাদুর রহমান কিরণ তাকে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) হিসেবে পদোন্নতি দেন। এভাবে রোলার চালক মো. জাকির হোসেন রুমনকে লাইসেন্স সহকারী, সার্ভেয়ার ফারুক আলমকে লাইসেন্স কর্মকর্তা, কমিউনিটি কর্মী মাহমুদুল ইসলামকে কর নির্ধারণ কর্মকর্তা, সাঁটলিপিকার কাম ক্লার্ক আজমল হোসেনকে লাইসেন্স পরিদর্শক, উচ্চমান সহকারী আশরাফ হোসেনকে প্রথম শ্রেণির পদ সহকারী সচিব হিসেবে পদোন্নতি দিয়েছেন। এ ছাড়া মেকানিক্যাল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুদেব বসাককে বিদ্যুৎ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তার দায়িত্ব দেন। পদোন্নতি কমিটির সুপারিশ ছাড়াই একক সিদ্ধান্তে আসাদুর রহমান কিরণ তার পছন্দের ও আস্থাভাজন আরও অসংখ্য কর্মচারী-কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছেন।
গত ১০ মাসে সিটি করপোরেশনের চারটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর একটি সভাতেও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক (৫১ শতাংশ) কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন না। সভায় কোরাম পূর্ণ না হলেও সভার পরে কাউন্সিলরদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর আনা হয়েছে। সভায় প্রয়োজনীয়সংখ্যক কাউন্সিলর উপস্থিত না থাকলেও আসাদুর রহমান কিরণের একক সিদ্ধান্তে ওইসব সভায় সড়ক ও ড্রেন নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার সহস্রাধিক প্রকল্প গ্রহণ করেন। সিটি করপোরেশনের আইন অনুযায়ী, কাউন্সিলরদের মাসিক সভায় ওইসব সিদ্ধান্ত অনুমোদিত না হলে সব কর্মকা- অবৈধ।
কয়েকজন কাউন্সিলর অভিযোগ করেন, সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আকবর হোসেন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মজিবুর রহমান কাজল ও ঠিকাদার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ এসব প্রকল্প থেকে ১০ থেকে ৩০ ভাগ কমিশন নিয়ে বিল পরিশোধ করেছেন।
গাজীপুর নগরীর ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের দায়িত্ব পালনকালে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার ডিপিপি ও প্রায় ৩০০ কোটি টাকার রাজস্ব তহবিল থেকে নেওয়া প্রকল্পগুলোতে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। কাউন্সিলরদের মাসিক সভায় অনুমোদন ছাড়াই আসাদুর রহমান কিরণ এককভাবে এসব প্রকল্প গ্রহণ করেন। এতে কাউন্সিলরদের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি।
ওই কাউন্সিলররা আরও অভিযোগ করেন, অনেক প্রকল্পের কাজ না করেই শুধু কাগজপত্র ঠিক রেখে কোটি কোটি টাকার বিল তুলে নেওয়া হয়েছে। আবার কোনো কোনো কাজ নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে যেনতেনভাবে সম্পন্ন করে বিল নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে শিডিউলের শর্ত উপেক্ষা করা হয়েছে। নির্ধারিত রেটের বাইরে অতিরিক্ত রেট দিয়ে ভারপ্রাপ্ত মেয়র কিরণ, প্রকৌশলী এবং ঠিকাদাররা লাভবান হয়েছেন। নগরীর গাছা, টঙ্গী, পুবাইল, জয়দেবপুর, কাশিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় এসব কাজ হয়েছে। গত ৭ ফেব্রুয়ারির সভায় ৩০৬টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। অথচ ওই সভায় অনুমোদন নেওয়ার মতো প্রয়োজনীয়সংখ্যক কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন না। সর্বশেষ একাধিক সভায় প্রকল্পগুলো অনুমোদন না হওয়ায় যেসব ঠিকাদার তাদের কাজ শেষ করতে পারেননি, তারা রয়েছেন আতঙ্কে।
অভিযোগ উঠেছে, বিদ্যুৎ খাতে বিশাল দুর্নীতি হয়েছে। সিটি করপোরেশনে চার হাজার সড়কবাতি স্থাপনের জন্য ২৫ কোটি টাকার কাজ চলমান ছিল। কিন্তু তিন ভাগের এক ভাগ খুঁটি স্থাপন না করেই প্রকল্পের পুরো টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এসব বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন, সড়কবাতি লাগানোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতির টাকা ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, বিদ্যুৎ শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইব্রাহিম খলিল, আরিফুল ইসলাম এবং ঠিকাদার মিলে ভাগ-বাটোয়ারা করেছেন। নির্বাহী প্রকৌশলী ইব্রাহিম খলিলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলা চলমান রয়েছে।
জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের আটটি অঞ্চলে তিন হাজারের মতো কলকারখানা রয়েছে। প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা এবিএম এহসানুল হক মামুন, কর নির্ধারণ কর্মকর্তা জাকির হোসেনসহ আস্থাভাজন লোকদের মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ কর কম দেখিয়ে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম ও ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিজানুর রহমান জানান, সিটি করপোরেশনের কর আদায়ের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে হার নির্ধারণ করা আছে। কোনো প্রতিষ্ঠানের কর নির্ধারণের পর কমাতে হলে রিভিউ বোর্ডের মাধ্যমে আপিল করতে হয়। আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত ছাড়া কর কমানোর সুযোগ নেই। ভারপ্রাপ্ত মেয়র দায়িত্ব পালনকালে আপিল বোর্ড না করে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়ে কর কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় তার নিজের ইচ্ছেমতো কর নির্ধারণ করেন। অথচ আবেদন করলেও অনেকের প্রতিষ্ঠানের কর কম দিতে গেলে তা গ্রহণ করা হয়নি।
নিয়ম ভেঙে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএসএম সফিউল আজম বলেন, গত দুই বছরে সিটি করপোরেশনে কোনো পদোন্নতির বোর্ড হয়নি। যাদের পদোন্নতির কথা বলা হয়েছে, আসলে তাদের ওইসব পদে ভারপ্রাপ্ত মেয়র চলতি দায়িত্বে পদায়ন করে গেছেন। সভায় প্রকল্পসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র বলতে পারবেন। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে অনিয়মের বিষয়ে তিনি বলেন, এসব বিষয় তার জানা নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আকবর হোসেন, সদ্য অবসরে যাওয়া তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মজিবুর রহমান কাজল তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র জায়েদা খাতুন গত ১১ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আজ সোমবার নির্বাচিত কাউন্সিলরদের নিয়ে প্রথম সভা হবে।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) চলতি মেয়াদ আর দেড় বছর। ইতিমধ্যে অন্তত ২ পুলিশ কর্মকর্তা (ওসি) ও এক জেলা প্রশাসক (ডিসি) দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটারদের কাছে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়েছেন। ইসি এসব কর্মকর্তার শাস্তির সুপারিশ করেছে এবং প্রাপ্য দ- নিশ্চিত করতে বলেছে।
প্রশ্ন হচ্ছে কয়েক মাসের মধ্যে হতে যাওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এক শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তার রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে কেন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নিতে না পারাই এর মূল কারণ। যদিও সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচনে ডিসি-ওসিদের পক্ষপাতমূলক আচরণ কাক্সিক্ষত নয়।
ইসির বিভিন্ন সূত্র বলছে, জাতীয় নির্বাচনে বিতর্ক এড়াতে এ বিষয়ে আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২২ অক্টোবর পুলিশ ও প্রশাসনের মাঠ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
প্রথমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ শুরু হবে। পরে ধাপে ধাপে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি ও পুলিশ কমিশনারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনী আইনে কিছু পরিবর্তন আসায় বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের অবগত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর অংশ হিসেবে প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ১৮ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে।’
সূত্র বলছে, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বারবার বলা হলেও সরকারি কর্মকর্তাদের অতি তৎপরতায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছে তারা। এর সুযোগ নিচ্ছে বিরোধী দলগুলো। সাধারণ মানুষের কাছেও নির্বাচনের আগে এমন বক্তব্য নেতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে। ‘এ প্রশাসন দিয়ে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়’ বিরোধী দলের এমন অভিযোগের সঙ্গে বিদেশিদের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগিদ আসছে। সার্বিক বিবেচনায় কঠোর বার্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। যেসব কর্মকর্তা এ ধরনের কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকবেন তাদের গুরুদ-সহ ভবিষ্যতে নির্বাচনী দায়িত্বে না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
ইসির এক কর্মকর্তা জানান, তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত যেহেতু সরকারি কর্মকর্তারা তাদের অধীনে থাকেন না তাই সরাসরি শাস্তির নির্দেশ তারা দিতে পারেন না। সম্প্রতি যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তার প্রত্যেকটির বিষয়ে ইসির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়ে শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে। সর্বশেষ জামালপুর জেলার ডিসি মো. ইমরান আহমেদের বিরুদ্ধে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে চিঠি দিয়ে বদলির কথা বলা হয়। তাকে যেন আগামীতে কোনো ধরনের নির্বাচনী দায়িত্ব দেওয়া না হয় সে কথাও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইসির চিঠিতে বলা হয়, সরকার, গণতন্ত্র, নির্বাচনব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশনের ওপর জনমানুষের আস্থা অক্ষুণœ রাখার স্বার্থে একই সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের এ ধরনের আচরণের বিষয়ে সতর্কবার্তা দেওয়া প্রয়োজন।
সূত্রমতে, কমিশনের মিটিংয়ে সিদ্ধান্তের পর এ চিঠি ইস্যু করা হয়। কমিশনের সিদ্ধান্ত হচ্ছে কোনো ঘটনার পরই চিঠি ইস্যু করে শাস্তির ব্যবস্থা করা ও ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচনে তাদের দায়িত্বে না রাখা নিশ্চিত করা। এ ধরনের বিষয়গুলোর মনিটরিংয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১১ সেপ্টেম্বর জামালপুরের মাদারগঞ্জ পৌরসভার নতুন ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমের উপস্থিতিতে জেলা প্রশাসক ইমরান আহমেদ নৌকায় ভোট চান। গত ১৫ আগস্ট জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানার ওসি শ্যামল চন্দ্র ধর আওয়ামী লীগকে ‘নিজের দল’ উল্লেখ করে আগামী নির্বাচনে দলকে জেতাতে কাজ করার আহ্বান জানান। একই দিন কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফারুক হোসেন অর্থমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য আ হ ম মুস্তফা কামালকে আবারও নির্বাচনে জয়ী করতে স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতি ‘মিনতি’ জানিয়ে বক্তব্য দেন।
এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়। ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট শরীয়তপুরের সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচিতে পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আক্তার হোসেন দলীয় সেøাগান দিয়েছিলেন। ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটারদের নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে বলেছিলেন সাতক্ষীরার কলারোয়া থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ আহম্মেদ।
সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার ১৯৭৯-এর ২৫(৩) ধারায় বলা আছে, সরকারি কর্মচারী বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অথবা অন্য কোনো আইনসভার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে অথবা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে বা অন্য কোনোভাবে হস্তক্ষেপ করতে বা প্রভাব খাটাতে পারবেন না। ১৯৭৩-এর বিধিমালার (৫) ধারায়ও এর বিহিতের কথা বলা আছে।
ইসি সূত্র বলছে, ইতিমধ্যে সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে প্রশিক্ষণের জন্য তিন হাজার ২শ প্রশিক্ষক তৈরির প্রশিক্ষণ গত ২ সেপ্টেম্বর শুরু করেছে ইসি। পরে মাঠ পর্যায়ের প্রায় দশ লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পুলিশ ও প্রশাসনের প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইউএনও এবং নির্বাচন কর্মকর্তাদের ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৪১টি ব্যাচে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের আগামী ৭ থেকে ২২ অক্টোবরের মধ্যে ৯টি ব্যাচে দুদিনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘জামালপুরের ডিসির মতো প্রশাসন দিয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচন হলেও তা গ্রহণযোগ্য হবে না। এদের বিষয়ে যেমন কঠোর হতে হবে, তেমনি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচনের মাঠকে ‘সমতল’ করতে হবে।’
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।