পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী
মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শেই কল্যাণ
মুফতি এনায়েতুল্লাহ | ২০ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০
আজ ১২ রবিউল আউয়াল। এদিন পবিত্র মক্কা নগরীতে জন্ম হয়েছিল মানবতার মুক্তির দূত, ইসলামের শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের। একই দিন পৃথিবী থেকে তিনি বিদায় নেন। এ দিনটি নিয়ে তাই বিশ্বজুড়েই মুসলমানদের মধ্যে বিশেষ আবেগ রয়েছে। এবার দিনটি এমন একসময় এসেছে, যখন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ধর্মীয় বাতাবরণে স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে সমাজের একশ্রেণির লোক হিংসা-বিদ্বেষ ছড়ানোর হীন অপচেষ্টায় লিপ্ত। তাদের এমন ঘৃণ্য কাজ কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। হিংসুকদের হিংসা শেষ পর্যন্ত কোনো ভালো কিছু বয়ে আনে না। আমরা যথাযথ দায়িত্বশীল কর্র্তৃপক্ষের কাছে উদ্ভূত বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া, সমঝদার নাগরিকদের এ বিষয়ে ভূমিকা রাখা এবং সাধারণ নাগরিকদের সচেতনতা অবলম্বনের আহ্বান জানাই।
প্রতি বছর মুসলমানরা ১২ রবিউল আউয়াল পালন করেন নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শকে স্মরণ করে। কোরআনে কারিমের বর্ণনা অনুযায়ী, তিনি একটি পরিপূর্ণ জীবনবিধান নিয়ে এসেছিলেন। সেটি তিনি বাস্তবায়ন করে মানুষের মধ্যে অনুপম নিদর্শন হয়েছিলেন। নবী জীবনের শিক্ষা হচ্ছে, নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে সম্পূর্ণ বিসর্জন দিয়ে সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালার কাছে আত্মসমর্পণ করে মানবতার কল্যাণে আজীবন নিয়োজিত হওয়া এবং রাব্বুল আলামিনের নির্দেশিত সত্য ও ন্যায়ের পথকে নিজের জীবনের পরম লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করা। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, বর্তমান মুসলমান সমাজের সঙ্গে এর মিল কমই পাওয়া যায়। তাই, আজকের এদিনে সবাইকে সে শিক্ষার দিকে ফিরে যাওয়ার শপথ নিতে হবে।
রাজা-বাদশাহ-আমির-ফকির কেউ ছোট, কেউ বড় নয়। কেউ কারও চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়। সব মানুষ সমান। আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে কোনো অবস্থাতেই মাথা নোয়ানো যাবে না। নবী মুহাম্মদ (সা.) প্রচার করেছেন, মানুষের প্রকৃত মর্যাদা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব মেনে আল্লাহর নির্দেশিত পথে সারাজীবন নিষ্ঠার সঙ্গে চলার মধ্যে। মানুষ ইহকালে যে কাজ করবে, পরকালে আল্লাহর কাছে এজন্য জবাবদিহি করতে হবে এবং এজন্য প্রতিফল পাবে। যারা আল্লাহ, তার প্রেরিত আসমানি কিতাব, নবী-রাসুল, আখেরাতে এবং শেষ বিচারের দিনের প্রতি বিশ্বাস রেখে ন্যায় ও কল্যাণের পথ অনুসরণ করবে, তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে মহান পুরস্কার। তারা পাবেন শাশ্বত শান্তিময় স্থান বেহেশত। যারা সত্যের পথে চলবে না এবং নিজের প্রবৃত্তির দাসত্ব করবে, তাদের জন্য রয়েছে চরম শাস্তির চিরন্তন স্থান জাহান্নাম। সেখান থেকে কখনো তারা বের হতে পারবে না।
মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতিটি কাজের লক্ষ্য ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা। এমন কাজ করতে গেলে সাধারণভাবে আশপাশের লোকরা উপকৃত হয়। আমরা দেখেছি, তার আগমনের মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে পুরো আরব উপদ্বীপের মানুষ আল্লাহর কাছে মাথা নত করেছিল। ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব শুধু আরবে সীমাবদ্ধ থাকেনি। তৎকালীন দুটো সভ্যতা পারস্য ও রোম সাম্রাজ্যও গ্রহণ করেছিল ইসলামকে। ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে পুরো বিশ্বে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এ পথে শত্রুকে বুকে নিয়ে করেছেন মিত্র। তিনি মানুষের পরম আস্থাভাজন ছিলেন। সেই সূত্রে তার সময়ের আরব দুনিয়ায় নিজেকে সবার কাছে প্রতিষ্ঠিত করেছেন আল-আমিন বা বিশ্বাসী হিসেবে। ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি অসি হাতে যুদ্ধ করেছেন; কিন্তু অন্যায়ভাবে সামান্য আঘাতও দেননি। যুদ্ধবন্দিদের দিয়েছেন অতুলনীয় মানবাধিকার। তিনি মানবজাতির সর্বাঙ্গীণ আদর্শ। অপরাধীদের ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য তিনি তাগিদ দিয়েছেন। ওয়াদা রক্ষায় তিনি ছিলেন শতভাগ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
আদর্শ ও ন্যায়ের পথে মুসলমানরা যখন ছিলেন অঙ্গীকারবদ্ধ, তখন সাফল্য তাদের হাতের মুঠোয় এসেছিল। তবে মূল আদর্শ বাস্তবায়নে তারা যখন উদাসীনতা দেখাতে শুরু করেন, তখন থেকেই মুসলমানদের পতনের শুরু। আজ তারা আদর্শচ্যুত হয়ে পতনের শেষপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। আমরা যদি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর চিরন্তন আদর্শের দিকে ফিরে যেতে না পারি, তবে এ অধঃপতন থেকে উত্তরণের কোনো উপায় নেই।
লেখার শুরুতে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ধর্মীয় বাতাবরণে স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে সমাজের একশ্রেণির লোক হিংসা-বিদ্বেষ ছড়ানোর হীন অপচেষ্টা করছে।’ এ বিষয়ে
বিস্তারিত বলার দরকার নেই। প্রায় দেশেই একশ্রেণির কপট ধর্মীয় সংখ্যাগুরুদের দ্বারা সংখ্যালঘু নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করছি। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সভ্যতার এ সময়ে এসে এমন পৈশাচিক কাজ কোনোভাবেই কাম্য নয়।
বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু জনসংখ্যা মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপে কোরআন অবমাননাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু অমুসলিমদের উপাসনালয়, ঘরবাড়ি ইত্যাদির ওপর দুর্বৃত্তদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের খবরের সঙ্গে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল প্রমাণ ছাড়া একে অন্যকে দোষারোপ করছে। ইসলাম কখনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উসকে দেওয়াকে সমর্থন করে না। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তারা শুধু ইসলামের শত্রু নয়, বিশ্বমানবতার শত্রু।
আমরা মনে করি, কোরআন অবমাননার যেমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার, তেমনি অমুসলিমের উপাসনালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়ার কাজে জড়িতদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত ও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণসহ অপরাধীকে খুঁজে বের করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সুনিশ্চিত প্রমাণ ছাড়া কাউকে হয়রানি করা গর্হিত অপরাধ।
এসব কাজ দেশে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির নামান্তর। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ এসব কর্মকাণ্ডকে কঠোর ভাষায় নিষিদ্ধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং পৃথিবীতে ফেতনা-ফ্যাসাদ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হলো, তাদের হয়তো হত্যা করা হবে, নয়তো শূলে চড়ানো হবে অথবা হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেওয়া হবে কিংবা তাদের দেশান্তর করা হবে। এটা হলো তাদের পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্য আছে আরও কঠোর শাস্তি।’ সুরা মায়েদা : ৩৩
বর্ণিত আয়াতে বিশৃঙ্খলা, ফেতনা-ফ্যাসাদ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে। প্রকৃত মুমিন-মুসলমানরা পবিত্র কোরআনের এই আদর্শ অনুসরণ করলে দুনিয়ার অন্যায়, অশান্তি, অনাচার, অবিচার, দ্বন্দ্ব-সংঘাতের অবসান হওয়ার পথ তৈরি হবে। এ পথ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা রয়েছে সর্বশেষ আসমানি কিতাব কোরআনে। আসুন, আমরা সবাই এ পবিত্র কোরআনের দিকে ফিরে যাই, নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ গ্রহণ করি। সবাই মিলে শান্তি-সম্প্রীতির দেশ গড়ি।
লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক
শেয়ার করুন
মুফতি এনায়েতুল্লাহ | ২০ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০

আজ ১২ রবিউল আউয়াল। এদিন পবিত্র মক্কা নগরীতে জন্ম হয়েছিল মানবতার মুক্তির দূত, ইসলামের শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের। একই দিন পৃথিবী থেকে তিনি বিদায় নেন। এ দিনটি নিয়ে তাই বিশ্বজুড়েই মুসলমানদের মধ্যে বিশেষ আবেগ রয়েছে। এবার দিনটি এমন একসময় এসেছে, যখন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ধর্মীয় বাতাবরণে স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে সমাজের একশ্রেণির লোক হিংসা-বিদ্বেষ ছড়ানোর হীন অপচেষ্টায় লিপ্ত। তাদের এমন ঘৃণ্য কাজ কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। হিংসুকদের হিংসা শেষ পর্যন্ত কোনো ভালো কিছু বয়ে আনে না। আমরা যথাযথ দায়িত্বশীল কর্র্তৃপক্ষের কাছে উদ্ভূত বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া, সমঝদার নাগরিকদের এ বিষয়ে ভূমিকা রাখা এবং সাধারণ নাগরিকদের সচেতনতা অবলম্বনের আহ্বান জানাই।
প্রতি বছর মুসলমানরা ১২ রবিউল আউয়াল পালন করেন নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শকে স্মরণ করে। কোরআনে কারিমের বর্ণনা অনুযায়ী, তিনি একটি পরিপূর্ণ জীবনবিধান নিয়ে এসেছিলেন। সেটি তিনি বাস্তবায়ন করে মানুষের মধ্যে অনুপম নিদর্শন হয়েছিলেন। নবী জীবনের শিক্ষা হচ্ছে, নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে সম্পূর্ণ বিসর্জন দিয়ে সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালার কাছে আত্মসমর্পণ করে মানবতার কল্যাণে আজীবন নিয়োজিত হওয়া এবং রাব্বুল আলামিনের নির্দেশিত সত্য ও ন্যায়ের পথকে নিজের জীবনের পরম লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করা। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, বর্তমান মুসলমান সমাজের সঙ্গে এর মিল কমই পাওয়া যায়। তাই, আজকের এদিনে সবাইকে সে শিক্ষার দিকে ফিরে যাওয়ার শপথ নিতে হবে।
রাজা-বাদশাহ-আমির-ফকির কেউ ছোট, কেউ বড় নয়। কেউ কারও চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়। সব মানুষ সমান। আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে কোনো অবস্থাতেই মাথা নোয়ানো যাবে না। নবী মুহাম্মদ (সা.) প্রচার করেছেন, মানুষের প্রকৃত মর্যাদা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব মেনে আল্লাহর নির্দেশিত পথে সারাজীবন নিষ্ঠার সঙ্গে চলার মধ্যে। মানুষ ইহকালে যে কাজ করবে, পরকালে আল্লাহর কাছে এজন্য জবাবদিহি করতে হবে এবং এজন্য প্রতিফল পাবে। যারা আল্লাহ, তার প্রেরিত আসমানি কিতাব, নবী-রাসুল, আখেরাতে এবং শেষ বিচারের দিনের প্রতি বিশ্বাস রেখে ন্যায় ও কল্যাণের পথ অনুসরণ করবে, তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে মহান পুরস্কার। তারা পাবেন শাশ্বত শান্তিময় স্থান বেহেশত। যারা সত্যের পথে চলবে না এবং নিজের প্রবৃত্তির দাসত্ব করবে, তাদের জন্য রয়েছে চরম শাস্তির চিরন্তন স্থান জাহান্নাম। সেখান থেকে কখনো তারা বের হতে পারবে না।
মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতিটি কাজের লক্ষ্য ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা। এমন কাজ করতে গেলে সাধারণভাবে আশপাশের লোকরা উপকৃত হয়। আমরা দেখেছি, তার আগমনের মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে পুরো আরব উপদ্বীপের মানুষ আল্লাহর কাছে মাথা নত করেছিল। ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব শুধু আরবে সীমাবদ্ধ থাকেনি। তৎকালীন দুটো সভ্যতা পারস্য ও রোম সাম্রাজ্যও গ্রহণ করেছিল ইসলামকে। ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে পুরো বিশ্বে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এ পথে শত্রুকে বুকে নিয়ে করেছেন মিত্র। তিনি মানুষের পরম আস্থাভাজন ছিলেন। সেই সূত্রে তার সময়ের আরব দুনিয়ায় নিজেকে সবার কাছে প্রতিষ্ঠিত করেছেন আল-আমিন বা বিশ্বাসী হিসেবে। ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি অসি হাতে যুদ্ধ করেছেন; কিন্তু অন্যায়ভাবে সামান্য আঘাতও দেননি। যুদ্ধবন্দিদের দিয়েছেন অতুলনীয় মানবাধিকার। তিনি মানবজাতির সর্বাঙ্গীণ আদর্শ। অপরাধীদের ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য তিনি তাগিদ দিয়েছেন। ওয়াদা রক্ষায় তিনি ছিলেন শতভাগ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
আদর্শ ও ন্যায়ের পথে মুসলমানরা যখন ছিলেন অঙ্গীকারবদ্ধ, তখন সাফল্য তাদের হাতের মুঠোয় এসেছিল। তবে মূল আদর্শ বাস্তবায়নে তারা যখন উদাসীনতা দেখাতে শুরু করেন, তখন থেকেই মুসলমানদের পতনের শুরু। আজ তারা আদর্শচ্যুত হয়ে পতনের শেষপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। আমরা যদি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর চিরন্তন আদর্শের দিকে ফিরে যেতে না পারি, তবে এ অধঃপতন থেকে উত্তরণের কোনো উপায় নেই।
লেখার শুরুতে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ধর্মীয় বাতাবরণে স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে সমাজের একশ্রেণির লোক হিংসা-বিদ্বেষ ছড়ানোর হীন অপচেষ্টা করছে।’ এ বিষয়ে
বিস্তারিত বলার দরকার নেই। প্রায় দেশেই একশ্রেণির কপট ধর্মীয় সংখ্যাগুরুদের দ্বারা সংখ্যালঘু নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করছি। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সভ্যতার এ সময়ে এসে এমন পৈশাচিক কাজ কোনোভাবেই কাম্য নয়।
বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু জনসংখ্যা মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপে কোরআন অবমাননাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু অমুসলিমদের উপাসনালয়, ঘরবাড়ি ইত্যাদির ওপর দুর্বৃত্তদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের খবরের সঙ্গে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল প্রমাণ ছাড়া একে অন্যকে দোষারোপ করছে। ইসলাম কখনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উসকে দেওয়াকে সমর্থন করে না। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তারা শুধু ইসলামের শত্রু নয়, বিশ্বমানবতার শত্রু।
আমরা মনে করি, কোরআন অবমাননার যেমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার, তেমনি অমুসলিমের উপাসনালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়ার কাজে জড়িতদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত ও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণসহ অপরাধীকে খুঁজে বের করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সুনিশ্চিত প্রমাণ ছাড়া কাউকে হয়রানি করা গর্হিত অপরাধ।
এসব কাজ দেশে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির নামান্তর। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ এসব কর্মকাণ্ডকে কঠোর ভাষায় নিষিদ্ধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং পৃথিবীতে ফেতনা-ফ্যাসাদ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হলো, তাদের হয়তো হত্যা করা হবে, নয়তো শূলে চড়ানো হবে অথবা হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেওয়া হবে কিংবা তাদের দেশান্তর করা হবে। এটা হলো তাদের পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্য আছে আরও কঠোর শাস্তি।’ সুরা মায়েদা : ৩৩
বর্ণিত আয়াতে বিশৃঙ্খলা, ফেতনা-ফ্যাসাদ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে। প্রকৃত মুমিন-মুসলমানরা পবিত্র কোরআনের এই আদর্শ অনুসরণ করলে দুনিয়ার অন্যায়, অশান্তি, অনাচার, অবিচার, দ্বন্দ্ব-সংঘাতের অবসান হওয়ার পথ তৈরি হবে। এ পথ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা রয়েছে সর্বশেষ আসমানি কিতাব কোরআনে। আসুন, আমরা সবাই এ পবিত্র কোরআনের দিকে ফিরে যাই, নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ গ্রহণ করি। সবাই মিলে শান্তি-সম্প্রীতির দেশ গড়ি।
লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক