হাফ ভাড়া ও সড়ক পরিবহন আইন
| ২ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি কয়েকটি শর্ত জুড়ে দিয়ে হাফ ভাড়ার দাবি মানার ঘোষণা দিলেও ছাত্র-ছাত্রীরা তা প্রত্যাখ্যান করেছে। এদিকে, রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখে ছাত্র-ছাত্রীরা এখন তাদের ৯ দফা দাবিকে ১১ দফায় রূপান্তরিত করেছে। শিক্ষার্থীরা বলছে, সব দাবি মেনে নেওয়া না হলে তারা রাজপথ ছাড়বে না। সংগত কারণেই প্রশ্ন উঠছে যে, এই সংকটের সমাধান কোথায়? লক্ষ করা জরুরি যে, বাসে হাফ ভাড়ার দাবিতে শিক্ষার্থীদের এবারের আন্দোলনের সূচনা হয়েছে, ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্তের ফলাফলের কারণে। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা ২৩ শতাংশ জ¦ালানি মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ২৭ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির দাবি আদায় করে নিয়েছিলেন তিনদিনের আকস্মিক ধর্মঘটে দেশের মানুষকে জিম্মি বানিয়ে। কিন্তু সরকারিভাবে ভাড়া বৃদ্ধির পরও বিভিন্ন রুটের বাস নানা অজুহাতে কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া না নিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে শুরু করে এবং দীর্ঘদিনের প্রথানুসারে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নিতে অস্বীকার করে। বাসের চালক ও সহকারীরা এতটাই বেপরোয়া হয়ে ওঠে যে, সাধারণ যাত্রী ও ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে বাগ্বিত-া মারামারিতে পৌঁছায়। হাফ ভাড়া দিতে চাওয়ায় ঢাকায় সরকারি বদরুন্নেসা কলেজের এক ছাত্রীকে প্রকাশ্যে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া এবং চট্টগ্রামে এক স্কুল শিক্ষককে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। একই সময়ে ঢাকার গুলিস্তানে নটর ডেম কলেজে ছাত্র নাঈম হাসান এবং পান্থপথে সংবাদকর্মী আহসান কবির নিহত হন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাকের চাপায়। এই সবকিছুই ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনকে আরও বেগবান করেছে এবং তাতে সাধারণ যাত্রী ও দেশের মানুষের সমর্থনও দিন দিন বেড়েছে।
সবার আগে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বাসে হাফ ভাড়ার দাবি আর এক্ষেত্রে পরিবহন মালিকদের শর্তগুলো পর্যালোচনা করা দরকার। ছাত্রছাত্রীরা সারা দেশে গণপরিবহনে হাফ ভাড়া দাবি করেছে। কিন্তু পরিবহন মালিকরা বলছেন, সারা দেশ নয় কেবল রাজধানী ঢাকায় হাফ ভাড়া নেওয়া হবে। তাও তা কেবল, সকাল সাতটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত। এছাড়া সাপ্তাহিক ছুটি, সরকারি ছুটি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মৌসুমি ছুটির সময় হাফ ভাড়া দেওয়া যাবে না। হাফ ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর ছবিযুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। পরিচয়পত্র দেখানোর শর্ত অবশ্যই যৌক্তিক। কিন্তু সকাল-সন্ধ্যার সময় বেঁধে দেওয়া আর ছুটির দিনের শর্ত দেওয়ারই বা কী যুক্তি থাকতে পারে? সারা দেশের শিক্ষার্থীরা যেসব শহর-নগর-বন্দরে পড়তে আসে তারা কেবলই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতই করে না, টিউশনি করা এবং টিউটরের কাছে যাতায়াতসহ অনেক কাজেই তাদের গণপরিবহনে উঠতে হয়। তাই শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার সুযোগ সার্বক্ষণিক হওয়াই যুক্তিযুক্ত। আর রাজধানী ঢাকার শিক্ষার্থীরা হাফ ভাড়ার সুযোগ পাবে কিন্তু দেশের বাকি শিক্ষার্থীরা পাবে নাএমন একটি অগণতান্ত্রিক শর্ত পরিবহন মালিকরা দাবি করলেন কোন যুক্তিতে? হাফ ভাড়ার নিয়ম অবশ্যই সারা দেশের জন্য প্রযোজ্য হতে হবে। এক্ষেত্রে দূরপাল্লার বাসযাত্রায় ছাড় না পেলেও শহরাঞ্চলের সব পরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার দাবি মেনে নেওয়া উচিত।
এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, রাজপথে শিক্ষার্থীদের অনড় অবস্থানের মধ্য দিয়ে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ প্রণীত হলেও পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের আপত্তি আর একচেটিয়া দাপটের কারণে সরকার এখনো এই আইন বাস্তবায়ন করতে পারছে না। অন্যদিকে, নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নসহ সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শিক্ষার্থীদের অন্যতম প্রধান দাবি। এছাড়া শিক্ষার্থীদের ১১ দফা দাবির অনেকগুলোই আসলে সড়কের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত। পাশাপাশি পরিবহন ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে সব গণপরিবহনে কাউন্টার ও টিকিটভিত্তিক সার্ভিস চালুর দাবি তুলেছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া পরিবহন শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষা করে চুক্তিভিত্তিক পরিচালনার বদলে নিয়োগপ্রাপ্ত চাকুরে হিসেবে চালক ও সহকারীদের অধিকারের দাবিও তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। চালকের কর্মঘণ্টা একনাগাড়ে ছয় ঘণ্টার বেশি না রাখা এবং চালক ও শ্রমিকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার দাবিও রয়েছে শিক্ষার্থীদের ১১ দফায়। একইভাবে বিভিন্ন কোম্পানির বাসের মধ্যে বেপরোয়া প্রতিযোগিতা বন্ধের জন্য ‘এক রুটে এক বাস’ সার্ভিস চালু করতে বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানিকে একছাতার নিচে আনারও দাবি তুলেছে তারা। পাশাপাশি সব রুটে বিআরটিসির বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করা, গাড়ি ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে বিআরটিএ’র দুর্নীতি এবং ট্রাফিক পুলিশের ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও রয়েছে। লক্ষ করলে দেখা যাবে এসব দাবির বেশিরভাগই দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত হচ্ছে এবং গণপরিবহন বিশেষজ্ঞদের সুপারিশগুলোও প্রায় অনুরূপ। প্রশ্ন হচ্ছে, রাজধানীসহ দেশের শহর-নগরগুলোর বিশৃঙ্খল পরিবহন ব্যবস্থা আর কবে শৃঙ্খলায় আসবে বা কীভাবে আসবে? এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর নিষ্ক্রিয়তা আর পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের বেপরোয়া অবস্থানের বিপরীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বারবার পথ দেখাচ্ছে। কিন্তু পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ সরকারের নীতিনির্ধারকরা কেন সেই পথে হাঁটছেন না?
শেয়ার করুন
| ২ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি কয়েকটি শর্ত জুড়ে দিয়ে হাফ ভাড়ার দাবি মানার ঘোষণা দিলেও ছাত্র-ছাত্রীরা তা প্রত্যাখ্যান করেছে। এদিকে, রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখে ছাত্র-ছাত্রীরা এখন তাদের ৯ দফা দাবিকে ১১ দফায় রূপান্তরিত করেছে। শিক্ষার্থীরা বলছে, সব দাবি মেনে নেওয়া না হলে তারা রাজপথ ছাড়বে না। সংগত কারণেই প্রশ্ন উঠছে যে, এই সংকটের সমাধান কোথায়? লক্ষ করা জরুরি যে, বাসে হাফ ভাড়ার দাবিতে শিক্ষার্থীদের এবারের আন্দোলনের সূচনা হয়েছে, ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্তের ফলাফলের কারণে। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা ২৩ শতাংশ জ¦ালানি মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ২৭ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির দাবি আদায় করে নিয়েছিলেন তিনদিনের আকস্মিক ধর্মঘটে দেশের মানুষকে জিম্মি বানিয়ে। কিন্তু সরকারিভাবে ভাড়া বৃদ্ধির পরও বিভিন্ন রুটের বাস নানা অজুহাতে কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া না নিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে শুরু করে এবং দীর্ঘদিনের প্রথানুসারে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নিতে অস্বীকার করে। বাসের চালক ও সহকারীরা এতটাই বেপরোয়া হয়ে ওঠে যে, সাধারণ যাত্রী ও ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে বাগ্বিত-া মারামারিতে পৌঁছায়। হাফ ভাড়া দিতে চাওয়ায় ঢাকায় সরকারি বদরুন্নেসা কলেজের এক ছাত্রীকে প্রকাশ্যে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া এবং চট্টগ্রামে এক স্কুল শিক্ষককে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। একই সময়ে ঢাকার গুলিস্তানে নটর ডেম কলেজে ছাত্র নাঈম হাসান এবং পান্থপথে সংবাদকর্মী আহসান কবির নিহত হন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাকের চাপায়। এই সবকিছুই ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনকে আরও বেগবান করেছে এবং তাতে সাধারণ যাত্রী ও দেশের মানুষের সমর্থনও দিন দিন বেড়েছে।
সবার আগে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বাসে হাফ ভাড়ার দাবি আর এক্ষেত্রে পরিবহন মালিকদের শর্তগুলো পর্যালোচনা করা দরকার। ছাত্রছাত্রীরা সারা দেশে গণপরিবহনে হাফ ভাড়া দাবি করেছে। কিন্তু পরিবহন মালিকরা বলছেন, সারা দেশ নয় কেবল রাজধানী ঢাকায় হাফ ভাড়া নেওয়া হবে। তাও তা কেবল, সকাল সাতটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত। এছাড়া সাপ্তাহিক ছুটি, সরকারি ছুটি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মৌসুমি ছুটির সময় হাফ ভাড়া দেওয়া যাবে না। হাফ ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর ছবিযুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। পরিচয়পত্র দেখানোর শর্ত অবশ্যই যৌক্তিক। কিন্তু সকাল-সন্ধ্যার সময় বেঁধে দেওয়া আর ছুটির দিনের শর্ত দেওয়ারই বা কী যুক্তি থাকতে পারে? সারা দেশের শিক্ষার্থীরা যেসব শহর-নগর-বন্দরে পড়তে আসে তারা কেবলই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতই করে না, টিউশনি করা এবং টিউটরের কাছে যাতায়াতসহ অনেক কাজেই তাদের গণপরিবহনে উঠতে হয়। তাই শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার সুযোগ সার্বক্ষণিক হওয়াই যুক্তিযুক্ত। আর রাজধানী ঢাকার শিক্ষার্থীরা হাফ ভাড়ার সুযোগ পাবে কিন্তু দেশের বাকি শিক্ষার্থীরা পাবে নাএমন একটি অগণতান্ত্রিক শর্ত পরিবহন মালিকরা দাবি করলেন কোন যুক্তিতে? হাফ ভাড়ার নিয়ম অবশ্যই সারা দেশের জন্য প্রযোজ্য হতে হবে। এক্ষেত্রে দূরপাল্লার বাসযাত্রায় ছাড় না পেলেও শহরাঞ্চলের সব পরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার দাবি মেনে নেওয়া উচিত।
এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, রাজপথে শিক্ষার্থীদের অনড় অবস্থানের মধ্য দিয়ে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ প্রণীত হলেও পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের আপত্তি আর একচেটিয়া দাপটের কারণে সরকার এখনো এই আইন বাস্তবায়ন করতে পারছে না। অন্যদিকে, নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নসহ সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শিক্ষার্থীদের অন্যতম প্রধান দাবি। এছাড়া শিক্ষার্থীদের ১১ দফা দাবির অনেকগুলোই আসলে সড়কের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত। পাশাপাশি পরিবহন ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে সব গণপরিবহনে কাউন্টার ও টিকিটভিত্তিক সার্ভিস চালুর দাবি তুলেছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া পরিবহন শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষা করে চুক্তিভিত্তিক পরিচালনার বদলে নিয়োগপ্রাপ্ত চাকুরে হিসেবে চালক ও সহকারীদের অধিকারের দাবিও তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। চালকের কর্মঘণ্টা একনাগাড়ে ছয় ঘণ্টার বেশি না রাখা এবং চালক ও শ্রমিকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার দাবিও রয়েছে শিক্ষার্থীদের ১১ দফায়। একইভাবে বিভিন্ন কোম্পানির বাসের মধ্যে বেপরোয়া প্রতিযোগিতা বন্ধের জন্য ‘এক রুটে এক বাস’ সার্ভিস চালু করতে বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানিকে একছাতার নিচে আনারও দাবি তুলেছে তারা। পাশাপাশি সব রুটে বিআরটিসির বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করা, গাড়ি ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে বিআরটিএ’র দুর্নীতি এবং ট্রাফিক পুলিশের ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও রয়েছে। লক্ষ করলে দেখা যাবে এসব দাবির বেশিরভাগই দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত হচ্ছে এবং গণপরিবহন বিশেষজ্ঞদের সুপারিশগুলোও প্রায় অনুরূপ। প্রশ্ন হচ্ছে, রাজধানীসহ দেশের শহর-নগরগুলোর বিশৃঙ্খল পরিবহন ব্যবস্থা আর কবে শৃঙ্খলায় আসবে বা কীভাবে আসবে? এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর নিষ্ক্রিয়তা আর পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের বেপরোয়া অবস্থানের বিপরীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বারবার পথ দেখাচ্ছে। কিন্তু পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ সরকারের নীতিনির্ধারকরা কেন সেই পথে হাঁটছেন না?