সামাজিক নিরাপত্তায় কোরআনের নির্দেশ
মুফতি এনায়েতুল্লাহ | ২১ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০
আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমের সুরা আনআমে ইরশাদ করেন, ‘বলুন! (হে উম্মত) তোমাদের রব (আল্লাহ) তোমাদের ওপর যা হারাম করেছেন তোমাদেরকে তা তেলাওয়াত করি, তা হচ্ছে, তোমরা তার সঙ্গে কোনো শরিক করবে না, পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে, দারিদ্র্যের ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, আমরাই তোমাদেরকে ও তাদেরকে রিজিক দিয়ে থাকি। প্রকাশ্যে হোক বা গোপনে হোক, অশ্লীল কাজের ধারেকাছেও যাবে না। আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তোমরা তাকে হত্যা করবে না। তিনি তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিলেন যেন তোমরা বুঝতে পার। আর এতিম বয়ঃপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত উত্তম ব্যবস্থা ছাড়া তোমরা তার সম্পত্তির ধারেকাছেও যাবে না এবং পরিমাপ ও ওজন ন্যায্যভাবে পুরোপুরি দেবে। আমরা কাউকেও তার সাধ্যের চেয়ে বেশি ভার অর্পণ করি না। আর যখন তোমরা কথা বলবে তখন ন্যায্য বলবে সম্পর্কে স্বজন হলেও এবং আল্লাহকে দেওয়া অঙ্গীকার পূর্ণ করবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। আর এ পথই আমার সরল পথ। কাজেই তোমরা এর অনুসরণ কর এবং বিভিন্ন পথ অনুসরণ করবে না, করলে তা তোমাদেরকে তার পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন যেন তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হও।’ সুরা আনআম : ১৫১-১৫৩
আলোচ্য আয়াত তিনটিতে ৯টি হারাম কাজের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এরপর দশম নির্দেশ হিসেবে আল্লাহ বলেছেন, এই দ্বীনই হচ্ছে আমার সরল পথ এবং এ পথের অনুসরণ কর। আয়াতসমূহে যে ১০টি বিষয়ে নিষেধ করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে : ১. আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা, ২. পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার না করা, ৩. দারিদ্র্যের ভয়ে সন্তান হত্যা করা, ৪. অশ্লীল কাজ করা, ৫. কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা, ৬. এতিমের ধন-সম্পদ অবৈধভাবে আত্মসাৎ করা, ৭. ওজন ও মাপে কম দেওয়া, ৮. সাক্ষ্য ও কথাবার্তায় অবিচার করা, ৯. আল্লাহর অঙ্গীকার পূর্ণ না করা এবং ১০. আল্লাহর সোজা-সরল পথ ছেড়ে অন্য পথ অবলম্বন করা।
ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো, বর্ণিত আয়াতগুলোর মাধ্যমে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হারাম বিষয়গুলো সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এখানে কোনো আন্দাজ-অনুমানের বিষয় নেই, কাজেই এসব বিষয় থেকে আত্মরক্ষা করতে যতœবান হওয়া মুমিনের কাজ। আয়াতে বর্ণিত হারাম বিষয়গুলোর দিকে তাকালে বোঝা যায়, সমাজে শান্তি-নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির নিমিত্তে ইসলাম কতটা সচেষ্ট। কোনো সমাজে এ বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ না করা হলে, সেই সমাজ টেকে না; সমাজে শান্তি বিঘি্নত হয়, সম্প্রীতি নষ্ট হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার না করা ও সন্তান হত্যার মতো জঘন্য বিষয়। বর্তমান সময়ে এ দুই বিষয় নিয়ে আলাদা করে বলার আর কিছু নেই। জাহেলি যুগে কন্যাসন্তানকে জীবন্ত হত্যার বিষয়টি ছিল তার সঙ্গে অসদ্ব্যহারের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। আর এখন নবজাতক ফেলে দেওয়া হয় নর্দমায় কিংবা ডাস্টবিনে।
এ অবস্থার প্রেক্ষিতে বলা যায়, সময় বদলেছে বটে মানুষের অন্যায় করার মানসিকতা বদলায়নি; পাপের ধরন বদলায়নি। তদ্রুপ নির্লজ্জ ও অশ্লীল নানা কাজে জড়ানো, অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা, এতিমের ধন-সম্পদ অবৈধভাবে ভক্ষণ করা, ওজন ও মাপে কম দেওয়া, ন্যায় ও সুবিচারের বিপরীত কাজের মতো অন্যায় কাজ সমাজে অহরহ ঘটছে। এগুলো থেকে বিরত থাকার জন্য আল্লাহ নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার পূরণ করতে।’ এ অঙ্গীকারের দাবি হলো, আল্লাহর কোনো নির্দেশ অমান্য করা যাবে না। তিনি যে কাজের আদেশ দেন, তাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তিনি যে কাজে নিষেধ করেছেন, তার ধারেকাছেও যাওয়া যাবে না, এমনকি সন্দেহযুক্ত কাজ থেকেও বাঁচতে হবে। সবশেষে আয়াতে কারিমায় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ইসলামকে আঁকড়ে থাকা। বলা হচ্ছে, হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনীত শরিয়তই সরল পথ। অতএব তোমরা এ পথে চল এবং অন্যপথে চলো না। কেননা সেসব পথ তোমাদের আল্লাহর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে।
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ একটি উদাহরণ পেশ করেছেন এভাবে: একটি সরল পথ। এ পথের দু’পাশে প্রাচীর রয়েছে, তাতে দরজাগুলো খোলা। আর প্রত্যেক দরজার ওপর রয়েছে পর্দা। পথটির মাথায় একজন আহ্বানকারী বলছে যে, আল্লাহ শান্তির আবাসের দিকে আহ্বান করেন এবং যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন। পথের দু’পাশের দরজাগুলো আল্লাহর সীমারেখা, যে কেউ আল্লাহর সীমারেখা লঙ্ঘন করবে তার জন্য সে পর্দা তুলে নেওয়া হবে। উপরের আহ্বানকারী হলোতার রব আল্লাহর পক্ষ থেকে উপদেশ প্রদানকারী। সুনানে তিরমিজি : ২৮৫৯
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, একদিন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের সামনে একটি সরল রেখা টানলেন। অতঃপর এর ডানে ও বামে আরও কয়েকটি রেখা টেনে বললেন, ডান-বামের এসব রেখা শয়তানের আবিষ্কৃত পথ। এর প্রত্যেকটিতে একটি করে শয়তান নিয়োজিত রয়েছে। সে মানুষকে সে পথেই চলার উপদেশ দেয়। অতঃপর তিনি মধ্যবর্তী সরল রেখার দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, ‘আর এটা আমার সরল পথ সুতরাং তোমরা এরই অনুসরণ কর।’ মুসনাদে আহমাদ : ১/৪৩৫
কাজেই দ্বীনের ব্যাপারে শাখা-প্রশাখা বের করা ও বিভেদ সৃষ্টি করা হারাম ও শয়তানের কাজ। আল্লাহ প্রদত্ত এ পথনির্দেশ গ্রহণ না করলে মানুষকে দুটি বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এক. অন্যপথ অবলম্বনের কারণে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের অনিবার্য পথ থেকে মানুষ সরে যায়। দুই. এ সঠিক পথ থেকে সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অসংখ্য সরু পথ সামনে এসে যায়। এ পথে চলতে গিয়ে গোটা মানবসমাজ দিকভ্রান্ত, বিক্ষিপ্ত ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং দুনিয়ার সুখ-শান্তি উন্নতি ও স্বপ্নগুলোকে চিরতরে ধূলিসাৎ করে দেয়। এজন্য মহান আল্লাহ বলেন, অন্যপথে চলো না, কারণ তা তোমাদেরকে তার পথ থেকে সরিয়ে ছিন্ন ভিন্ন করে দেবে। সংক্ষেপে বর্ণিত তিনটি আয়াত থেকে যেসব শিক্ষা পাওয়া যায় এর অন্যতম হলো:
১. আল্লাহ প্রদত্ত হালাল-হারামের সীমারেখা মেনে চলার ব্যাপারে কোনো ধরনের শিথিলতা প্রদর্শন না করা।
২. আল্লাহ প্রদত্ত সরল সঠিক পথই মুক্তির পথ। এ পথের মধ্যে বক্রতা তৈরি করা যাবে না।
৩. আয়াতে উল্লিখিত হারাম বিষয়গুলো সকল নবী ও রাসুলদের সময় কার্যকর ছিল, তাই সেগুলো মেনে চলার ব্যাপারে কোনো দ্বিধা না করা। সেই সঙ্গে বিষয়গুলোকে সামাজিক নিরাপত্তা বিধান ও শান্তি-শৃঙ্খলার মূল বিষয় ধরে সেগুলো প্রতিপালনে সচেষ্ট হওয়া।
লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক
শেয়ার করুন
মুফতি এনায়েতুল্লাহ | ২১ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০

আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমের সুরা আনআমে ইরশাদ করেন, ‘বলুন! (হে উম্মত) তোমাদের রব (আল্লাহ) তোমাদের ওপর যা হারাম করেছেন তোমাদেরকে তা তেলাওয়াত করি, তা হচ্ছে, তোমরা তার সঙ্গে কোনো শরিক করবে না, পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে, দারিদ্র্যের ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, আমরাই তোমাদেরকে ও তাদেরকে রিজিক দিয়ে থাকি। প্রকাশ্যে হোক বা গোপনে হোক, অশ্লীল কাজের ধারেকাছেও যাবে না। আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তোমরা তাকে হত্যা করবে না। তিনি তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিলেন যেন তোমরা বুঝতে পার। আর এতিম বয়ঃপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত উত্তম ব্যবস্থা ছাড়া তোমরা তার সম্পত্তির ধারেকাছেও যাবে না এবং পরিমাপ ও ওজন ন্যায্যভাবে পুরোপুরি দেবে। আমরা কাউকেও তার সাধ্যের চেয়ে বেশি ভার অর্পণ করি না। আর যখন তোমরা কথা বলবে তখন ন্যায্য বলবে সম্পর্কে স্বজন হলেও এবং আল্লাহকে দেওয়া অঙ্গীকার পূর্ণ করবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। আর এ পথই আমার সরল পথ। কাজেই তোমরা এর অনুসরণ কর এবং বিভিন্ন পথ অনুসরণ করবে না, করলে তা তোমাদেরকে তার পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন যেন তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হও।’ সুরা আনআম : ১৫১-১৫৩
আলোচ্য আয়াত তিনটিতে ৯টি হারাম কাজের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এরপর দশম নির্দেশ হিসেবে আল্লাহ বলেছেন, এই দ্বীনই হচ্ছে আমার সরল পথ এবং এ পথের অনুসরণ কর। আয়াতসমূহে যে ১০টি বিষয়ে নিষেধ করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে : ১. আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা, ২. পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার না করা, ৩. দারিদ্র্যের ভয়ে সন্তান হত্যা করা, ৪. অশ্লীল কাজ করা, ৫. কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা, ৬. এতিমের ধন-সম্পদ অবৈধভাবে আত্মসাৎ করা, ৭. ওজন ও মাপে কম দেওয়া, ৮. সাক্ষ্য ও কথাবার্তায় অবিচার করা, ৯. আল্লাহর অঙ্গীকার পূর্ণ না করা এবং ১০. আল্লাহর সোজা-সরল পথ ছেড়ে অন্য পথ অবলম্বন করা।
ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো, বর্ণিত আয়াতগুলোর মাধ্যমে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হারাম বিষয়গুলো সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এখানে কোনো আন্দাজ-অনুমানের বিষয় নেই, কাজেই এসব বিষয় থেকে আত্মরক্ষা করতে যতœবান হওয়া মুমিনের কাজ। আয়াতে বর্ণিত হারাম বিষয়গুলোর দিকে তাকালে বোঝা যায়, সমাজে শান্তি-নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির নিমিত্তে ইসলাম কতটা সচেষ্ট। কোনো সমাজে এ বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ না করা হলে, সেই সমাজ টেকে না; সমাজে শান্তি বিঘি্নত হয়, সম্প্রীতি নষ্ট হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার না করা ও সন্তান হত্যার মতো জঘন্য বিষয়। বর্তমান সময়ে এ দুই বিষয় নিয়ে আলাদা করে বলার আর কিছু নেই। জাহেলি যুগে কন্যাসন্তানকে জীবন্ত হত্যার বিষয়টি ছিল তার সঙ্গে অসদ্ব্যহারের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। আর এখন নবজাতক ফেলে দেওয়া হয় নর্দমায় কিংবা ডাস্টবিনে।
এ অবস্থার প্রেক্ষিতে বলা যায়, সময় বদলেছে বটে মানুষের অন্যায় করার মানসিকতা বদলায়নি; পাপের ধরন বদলায়নি। তদ্রুপ নির্লজ্জ ও অশ্লীল নানা কাজে জড়ানো, অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা, এতিমের ধন-সম্পদ অবৈধভাবে ভক্ষণ করা, ওজন ও মাপে কম দেওয়া, ন্যায় ও সুবিচারের বিপরীত কাজের মতো অন্যায় কাজ সমাজে অহরহ ঘটছে। এগুলো থেকে বিরত থাকার জন্য আল্লাহ নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার পূরণ করতে।’ এ অঙ্গীকারের দাবি হলো, আল্লাহর কোনো নির্দেশ অমান্য করা যাবে না। তিনি যে কাজের আদেশ দেন, তাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তিনি যে কাজে নিষেধ করেছেন, তার ধারেকাছেও যাওয়া যাবে না, এমনকি সন্দেহযুক্ত কাজ থেকেও বাঁচতে হবে। সবশেষে আয়াতে কারিমায় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ইসলামকে আঁকড়ে থাকা। বলা হচ্ছে, হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনীত শরিয়তই সরল পথ। অতএব তোমরা এ পথে চল এবং অন্যপথে চলো না। কেননা সেসব পথ তোমাদের আল্লাহর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে।
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ একটি উদাহরণ পেশ করেছেন এভাবে: একটি সরল পথ। এ পথের দু’পাশে প্রাচীর রয়েছে, তাতে দরজাগুলো খোলা। আর প্রত্যেক দরজার ওপর রয়েছে পর্দা। পথটির মাথায় একজন আহ্বানকারী বলছে যে, আল্লাহ শান্তির আবাসের দিকে আহ্বান করেন এবং যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন। পথের দু’পাশের দরজাগুলো আল্লাহর সীমারেখা, যে কেউ আল্লাহর সীমারেখা লঙ্ঘন করবে তার জন্য সে পর্দা তুলে নেওয়া হবে। উপরের আহ্বানকারী হলোতার রব আল্লাহর পক্ষ থেকে উপদেশ প্রদানকারী। সুনানে তিরমিজি : ২৮৫৯
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, একদিন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের সামনে একটি সরল রেখা টানলেন। অতঃপর এর ডানে ও বামে আরও কয়েকটি রেখা টেনে বললেন, ডান-বামের এসব রেখা শয়তানের আবিষ্কৃত পথ। এর প্রত্যেকটিতে একটি করে শয়তান নিয়োজিত রয়েছে। সে মানুষকে সে পথেই চলার উপদেশ দেয়। অতঃপর তিনি মধ্যবর্তী সরল রেখার দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, ‘আর এটা আমার সরল পথ সুতরাং তোমরা এরই অনুসরণ কর।’ মুসনাদে আহমাদ : ১/৪৩৫
কাজেই দ্বীনের ব্যাপারে শাখা-প্রশাখা বের করা ও বিভেদ সৃষ্টি করা হারাম ও শয়তানের কাজ। আল্লাহ প্রদত্ত এ পথনির্দেশ গ্রহণ না করলে মানুষকে দুটি বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এক. অন্যপথ অবলম্বনের কারণে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের অনিবার্য পথ থেকে মানুষ সরে যায়। দুই. এ সঠিক পথ থেকে সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অসংখ্য সরু পথ সামনে এসে যায়। এ পথে চলতে গিয়ে গোটা মানবসমাজ দিকভ্রান্ত, বিক্ষিপ্ত ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং দুনিয়ার সুখ-শান্তি উন্নতি ও স্বপ্নগুলোকে চিরতরে ধূলিসাৎ করে দেয়। এজন্য মহান আল্লাহ বলেন, অন্যপথে চলো না, কারণ তা তোমাদেরকে তার পথ থেকে সরিয়ে ছিন্ন ভিন্ন করে দেবে। সংক্ষেপে বর্ণিত তিনটি আয়াত থেকে যেসব শিক্ষা পাওয়া যায় এর অন্যতম হলো:
১. আল্লাহ প্রদত্ত হালাল-হারামের সীমারেখা মেনে চলার ব্যাপারে কোনো ধরনের শিথিলতা প্রদর্শন না করা।
২. আল্লাহ প্রদত্ত সরল সঠিক পথই মুক্তির পথ। এ পথের মধ্যে বক্রতা তৈরি করা যাবে না।
৩. আয়াতে উল্লিখিত হারাম বিষয়গুলো সকল নবী ও রাসুলদের সময় কার্যকর ছিল, তাই সেগুলো মেনে চলার ব্যাপারে কোনো দ্বিধা না করা। সেই সঙ্গে বিষয়গুলোকে সামাজিক নিরাপত্তা বিধান ও শান্তি-শৃঙ্খলার মূল বিষয় ধরে সেগুলো প্রতিপালনে সচেষ্ট হওয়া।
লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক