নিরাপত্তা নীতির যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি
আইজাজ আহমদ চৌধুরী | ২২ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০
একটি ধারণা হিসেবে ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ কথাটি বিশ্বব্যাপী নিরন্তর নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত হচ্ছে। কারণ, জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়টির প্রকৃতিই গতিশীল। আর এ কারণেই বিশ্বের অনেক দেশই তাদের জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য এ-সংক্রান্ত কৌশলকে ক্রমাগতভাবে পরিবর্তন করে। পাকিস্তানে ‘বিস্তৃত’ জাতীয় নিরাপত্তার ধারণাকে কেন্দ্র করে প্রথম একটি জাতীয় নিরাপত্তা নীতি (ন্যাশনাল সিকিউরিটি পলিসি বা এনএসপি) প্রণয়ন করা হয়েছে। এর পক্ষে যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, সামরিক নিরাপত্তার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও মানবিক নিরাপত্তা থাকলেই কেবল পাকিস্তান দেশ হিসেবে সত্যিকার অর্থে নিরাপদ হবে। কথাগুলো বেশ আবেদনময়ই শোনায়। তবে বিষয়টি আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য আমাদের ধারণাটিকে খোলাসা করে নেড়েচেড়ে দেখতে হবে।
ঐতিহ্যগতভাবে, পাকিস্তান রাষ্ট্রের ওপর হুমকি আসে তার সীমান্ত থেকে। এর বেশির ভাগই ভারত থেকে উদ্ভূত। এ কারণে একটি শক্তিশালী সামরিক অবকাঠামো গড়ে তোলা পাকিস্তানের জন্য একটি কৌশলগত বাধ্যবাধকতা হয়ে ওঠে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিগুলো শুধু বাইরে থেকে নয়, দেশের ভেতর থেকেও উদ্ভূত হতে শুরু করেছে। শত্রুরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা সামাজিকভাবেও বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। এর মাধ্যমে তারা ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার মতো একই উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারে। অথচ এটি করতে সরাসরি হামলার চেয়ে সহজে ও অনেক কম খরচ হবে। এভাবেই সামনে উঠে আসে জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি ‘অপ্রথাগত হুমকি’ মোকাবিলার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি।
গবেষকের অনেকে ‘অপ্রথাগত’ শব্দটিকে অত্যন্ত ‘ধোঁয়াটে’ বিবেচনা করেন। তাই এ কথাটিকে আরও নির্দিষ্ট করা যাক। আকস্মিক বন্যা, তাপপ্রবাহ বা খরার মতো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো যুদ্ধের চেয়ে অনেক বেশি মানুষের মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। সংক্রামক রোগ আর অতিমারি একটি দেশকে বিপর্যস্ত করে দেয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণ হারায় হাজার হাজার মানুষ। সন্ত্রাসবাদ এবং সহিংস চরমপন্থা অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক দুই ধরনের উৎস থেকেই উদ্ভূত হয়। বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা একটি জাতির মনোবল নষ্ট করে দেয়। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মতো জবরদস্তি গুরুতর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। দারিদ্র্য, ক্ষুধা এবং লাগামহীন জনসংখ্যা বৃদ্ধি টেকসই উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। সাইবার হামলা পঙ্গু করে দিতে পারে দূরের বা কাছের যেকোনো রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
স্পষ্টতই নানা ধরনের হুমকির সমাহার ও আওতা অনেকটাই বেড়ে গেছে। তা এতটাই বেড়েছে যে, শুধু একটি ব্যাপকভিত্তিক জাতীয় নিরাপত্তা নীতিই কোনো দেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সাহায্য করতে পারে।
সদ্যঘোষিত জাতীয় নিরাপত্তা নীতি ২০২২-২৬-এ বলা হয়েছে এর চূড়ান্ত লক্ষ্য ‘আমাদের নাগরিকদের নিরাপত্তা, সুরক্ষা, মর্যাদা ও সমৃদ্ধিকে এগিয়ে নেওয়া’। নিঃসন্দেহে মহান লক্ষ্য। এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, অর্থনৈতিক নিরাপত্তাই হবে জাতীয় নিরাপত্তার মূল বিষয়। এটাও বোধগম্য। পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক সংস্থান না থাকলে আমরা এমনকি প্রথাগত সামরিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তাও দিতে পারব না, নাগরিকদের নিরাপত্তা, সুরক্ষা, মর্যাদা নিশ্চিত করা তো দূরের কথা।
আমরা অনেকবার দেখেছি দাতাদের ওপর অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা কীভাবে আমাদের নীতিবিষয়ক পছন্দকে ব্যাপকভাবে সংকুচিত করে ফেলে। সুতরাং, এত বিচিত্রধর্মী অভ্যন্তরীণ, বাহ্যিক এবং প্রাকৃতিক হুমকির মোকাবিলায় একটি বিস্তৃত জাতীয় নিরাপত্তা ক্রমশ গড়ে তোলার পক্ষে যুক্তিটা পুরোপুরিই সঠিক। আসল চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে আমরা কীভাবে এত বিস্তৃত পরিসরের একটি কৌশল বাস্তবায়ন করব।
গত সপ্তাহে নীতিটি উত্থাপন করার সময় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেছেন, আমরা এনএসপি নিয়ে একটি ‘বুদ্ধিবৃত্তিক বিতর্কের’ সূচনা করতে পারি। প্রথমে আমার মনে হয়েছিল, এটি দলিলটিকে বিতর্কিত করে তুলবে। তবে গভীরভাবে চিন্তা করার পর আমি এখন তার অভিমতের সঙ্গে একমত। কারণ, প্রতিটি নাগরিকের জীবনকে স্পর্শ করবে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিতর্ক এড়িয়ে যাওয়া দেশের কারও জন্য উচিত হবে না।
বস্তুত, শুধু আলোচনা ও বিতর্কের মাধ্যমেই ঘোষিত জাতীয় নিরাপত্তা নীতির ঘাটতির জায়গাগুলো খুঁজে বের করা এবং যেসব ক্ষেত্রে আরও বেশি জোর দেওয়ার প্রয়োজন, তা চিহ্নিত করা সম্ভব হতে পারে। জাতীয় নিরাপত্তা নীতি নিয়ে তাত্ত্বিক বিতর্কের বাইরে আরও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ যেটা তা হচ্ছে, সরকার কীভাবে এ রকম একটি রূপান্তরমূলক ধারণাকে বাস্তবে রূপ দেবে। বলা হয়েছে, এ নীতির কেন্দ্রে থাকবে নাগরিক আর একটি মূল লক্ষ্য হবে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা। এজন্য প্রয়োজন হবে এটি বাস্তবায়নের একটি বিশদ কর্মকাঠামো। সংশ্লিষ্ট সব খাতের প্রতিটি সংস্থা বা বিভাগ এটি বাস্তবায়নের কৌশল স্থির করবে। এই কর্মকৌশলে সুস্পষ্টভাবে এর লক্ষ্য, কৌশল, অর্জন পরিমাপের সূচক, নজরদারি ও জবাবদিহি এবং চলমান ফলোআপের বিষয়গুলোর উল্লেখ থাকতে হবে।
সরকারি দপ্তরগুলো খুব স্বার্থপরের মতো নিজেদের ঘাঁটি আগলে রাখে। তাই কেন্দ্রীয় কোন কর্তৃপক্ষ নিয়মিতভাবে এর অগ্রগতি যাচাই করবে? আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কি এ ধরনের কেন্দ্রীয় নজরদারির অবকাশ আছে? জাতীয় নিরাপত্তা বিভাগ বা জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি কি জাতীয় নিরাপত্তা নীতি বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে পারবে? এ দুটির মধ্যে তো সামরিক ও বেসামরিক দুই ধরনের নেতৃত্বই আছে। ‘কাউন্সিল অন কমন ইন্টারেস্ট’-এর কি কোনো ভূমিকা থাকবে? কীভাবে প্রদেশগুলোকে এর সঙ্গে যুক্ত করা হবে যাতে তারা নিজেদেরও কৌশলটির অংশ মনে করতে পারে? তৃণমূল পর্যায়ের উন্নয়ন কাজগুলো যাতে এনএসপিতে চিহ্নিত অগ্রাধিকারগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তা নিশ্চিত করতে কীভাবে এলাকাগুলোর কর্তৃপক্ষকে এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হবে?
এই প্রশ্নগুলো গুরুত্বপূর্ণ। আর এনএসপি নিয়ে দেশব্যাপী রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরির জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা চালানো হলেই শুধু এসবের জবাব মিলতে পারে। সরকারের বিভিন্ন অঙ্গ এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মধ্যে সমন্বয় আর সুসংগতি থাকাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি আগামী দিনগুলোতে এ নিয়ে আলোচনা জাতীয় নিরাপত্তা নীতির ব্যবহারিক বাস্তবায়নের ওপর জোর দেবে, শুধু মোটাদাগে এর রূপরেখার ওপর নয়।
লেখক : পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও ‘ডিপ্লোমেটিক ফুটপ্রিন্টস’ বইয়ের লেখক
পাকিস্তানের ‘ডন’ পত্রিকা থেকে ভাষান্তর : আবু ইউসুফ
শেয়ার করুন
আইজাজ আহমদ চৌধুরী | ২২ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০

একটি ধারণা হিসেবে ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ কথাটি বিশ্বব্যাপী নিরন্তর নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত হচ্ছে। কারণ, জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়টির প্রকৃতিই গতিশীল। আর এ কারণেই বিশ্বের অনেক দেশই তাদের জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য এ-সংক্রান্ত কৌশলকে ক্রমাগতভাবে পরিবর্তন করে। পাকিস্তানে ‘বিস্তৃত’ জাতীয় নিরাপত্তার ধারণাকে কেন্দ্র করে প্রথম একটি জাতীয় নিরাপত্তা নীতি (ন্যাশনাল সিকিউরিটি পলিসি বা এনএসপি) প্রণয়ন করা হয়েছে। এর পক্ষে যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, সামরিক নিরাপত্তার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও মানবিক নিরাপত্তা থাকলেই কেবল পাকিস্তান দেশ হিসেবে সত্যিকার অর্থে নিরাপদ হবে। কথাগুলো বেশ আবেদনময়ই শোনায়। তবে বিষয়টি আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য আমাদের ধারণাটিকে খোলাসা করে নেড়েচেড়ে দেখতে হবে।
ঐতিহ্যগতভাবে, পাকিস্তান রাষ্ট্রের ওপর হুমকি আসে তার সীমান্ত থেকে। এর বেশির ভাগই ভারত থেকে উদ্ভূত। এ কারণে একটি শক্তিশালী সামরিক অবকাঠামো গড়ে তোলা পাকিস্তানের জন্য একটি কৌশলগত বাধ্যবাধকতা হয়ে ওঠে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিগুলো শুধু বাইরে থেকে নয়, দেশের ভেতর থেকেও উদ্ভূত হতে শুরু করেছে। শত্রুরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা সামাজিকভাবেও বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। এর মাধ্যমে তারা ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার মতো একই উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারে। অথচ এটি করতে সরাসরি হামলার চেয়ে সহজে ও অনেক কম খরচ হবে। এভাবেই সামনে উঠে আসে জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি ‘অপ্রথাগত হুমকি’ মোকাবিলার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি।
গবেষকের অনেকে ‘অপ্রথাগত’ শব্দটিকে অত্যন্ত ‘ধোঁয়াটে’ বিবেচনা করেন। তাই এ কথাটিকে আরও নির্দিষ্ট করা যাক। আকস্মিক বন্যা, তাপপ্রবাহ বা খরার মতো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো যুদ্ধের চেয়ে অনেক বেশি মানুষের মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। সংক্রামক রোগ আর অতিমারি একটি দেশকে বিপর্যস্ত করে দেয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণ হারায় হাজার হাজার মানুষ। সন্ত্রাসবাদ এবং সহিংস চরমপন্থা অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক দুই ধরনের উৎস থেকেই উদ্ভূত হয়। বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা একটি জাতির মনোবল নষ্ট করে দেয়। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মতো জবরদস্তি গুরুতর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। দারিদ্র্য, ক্ষুধা এবং লাগামহীন জনসংখ্যা বৃদ্ধি টেকসই উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। সাইবার হামলা পঙ্গু করে দিতে পারে দূরের বা কাছের যেকোনো রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
স্পষ্টতই নানা ধরনের হুমকির সমাহার ও আওতা অনেকটাই বেড়ে গেছে। তা এতটাই বেড়েছে যে, শুধু একটি ব্যাপকভিত্তিক জাতীয় নিরাপত্তা নীতিই কোনো দেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সাহায্য করতে পারে।
সদ্যঘোষিত জাতীয় নিরাপত্তা নীতি ২০২২-২৬-এ বলা হয়েছে এর চূড়ান্ত লক্ষ্য ‘আমাদের নাগরিকদের নিরাপত্তা, সুরক্ষা, মর্যাদা ও সমৃদ্ধিকে এগিয়ে নেওয়া’। নিঃসন্দেহে মহান লক্ষ্য। এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, অর্থনৈতিক নিরাপত্তাই হবে জাতীয় নিরাপত্তার মূল বিষয়। এটাও বোধগম্য। পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক সংস্থান না থাকলে আমরা এমনকি প্রথাগত সামরিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তাও দিতে পারব না, নাগরিকদের নিরাপত্তা, সুরক্ষা, মর্যাদা নিশ্চিত করা তো দূরের কথা।
আমরা অনেকবার দেখেছি দাতাদের ওপর অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা কীভাবে আমাদের নীতিবিষয়ক পছন্দকে ব্যাপকভাবে সংকুচিত করে ফেলে। সুতরাং, এত বিচিত্রধর্মী অভ্যন্তরীণ, বাহ্যিক এবং প্রাকৃতিক হুমকির মোকাবিলায় একটি বিস্তৃত জাতীয় নিরাপত্তা ক্রমশ গড়ে তোলার পক্ষে যুক্তিটা পুরোপুরিই সঠিক। আসল চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে আমরা কীভাবে এত বিস্তৃত পরিসরের একটি কৌশল বাস্তবায়ন করব।
গত সপ্তাহে নীতিটি উত্থাপন করার সময় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেছেন, আমরা এনএসপি নিয়ে একটি ‘বুদ্ধিবৃত্তিক বিতর্কের’ সূচনা করতে পারি। প্রথমে আমার মনে হয়েছিল, এটি দলিলটিকে বিতর্কিত করে তুলবে। তবে গভীরভাবে চিন্তা করার পর আমি এখন তার অভিমতের সঙ্গে একমত। কারণ, প্রতিটি নাগরিকের জীবনকে স্পর্শ করবে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিতর্ক এড়িয়ে যাওয়া দেশের কারও জন্য উচিত হবে না।
বস্তুত, শুধু আলোচনা ও বিতর্কের মাধ্যমেই ঘোষিত জাতীয় নিরাপত্তা নীতির ঘাটতির জায়গাগুলো খুঁজে বের করা এবং যেসব ক্ষেত্রে আরও বেশি জোর দেওয়ার প্রয়োজন, তা চিহ্নিত করা সম্ভব হতে পারে। জাতীয় নিরাপত্তা নীতি নিয়ে তাত্ত্বিক বিতর্কের বাইরে আরও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ যেটা তা হচ্ছে, সরকার কীভাবে এ রকম একটি রূপান্তরমূলক ধারণাকে বাস্তবে রূপ দেবে। বলা হয়েছে, এ নীতির কেন্দ্রে থাকবে নাগরিক আর একটি মূল লক্ষ্য হবে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা। এজন্য প্রয়োজন হবে এটি বাস্তবায়নের একটি বিশদ কর্মকাঠামো। সংশ্লিষ্ট সব খাতের প্রতিটি সংস্থা বা বিভাগ এটি বাস্তবায়নের কৌশল স্থির করবে। এই কর্মকৌশলে সুস্পষ্টভাবে এর লক্ষ্য, কৌশল, অর্জন পরিমাপের সূচক, নজরদারি ও জবাবদিহি এবং চলমান ফলোআপের বিষয়গুলোর উল্লেখ থাকতে হবে।
সরকারি দপ্তরগুলো খুব স্বার্থপরের মতো নিজেদের ঘাঁটি আগলে রাখে। তাই কেন্দ্রীয় কোন কর্তৃপক্ষ নিয়মিতভাবে এর অগ্রগতি যাচাই করবে? আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কি এ ধরনের কেন্দ্রীয় নজরদারির অবকাশ আছে? জাতীয় নিরাপত্তা বিভাগ বা জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি কি জাতীয় নিরাপত্তা নীতি বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে পারবে? এ দুটির মধ্যে তো সামরিক ও বেসামরিক দুই ধরনের নেতৃত্বই আছে। ‘কাউন্সিল অন কমন ইন্টারেস্ট’-এর কি কোনো ভূমিকা থাকবে? কীভাবে প্রদেশগুলোকে এর সঙ্গে যুক্ত করা হবে যাতে তারা নিজেদেরও কৌশলটির অংশ মনে করতে পারে? তৃণমূল পর্যায়ের উন্নয়ন কাজগুলো যাতে এনএসপিতে চিহ্নিত অগ্রাধিকারগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তা নিশ্চিত করতে কীভাবে এলাকাগুলোর কর্তৃপক্ষকে এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হবে?
এই প্রশ্নগুলো গুরুত্বপূর্ণ। আর এনএসপি নিয়ে দেশব্যাপী রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরির জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা চালানো হলেই শুধু এসবের জবাব মিলতে পারে। সরকারের বিভিন্ন অঙ্গ এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মধ্যে সমন্বয় আর সুসংগতি থাকাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি আগামী দিনগুলোতে এ নিয়ে আলোচনা জাতীয় নিরাপত্তা নীতির ব্যবহারিক বাস্তবায়নের ওপর জোর দেবে, শুধু মোটাদাগে এর রূপরেখার ওপর নয়।
লেখক : পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও ‘ডিপ্লোমেটিক ফুটপ্রিন্টস’ বইয়ের লেখক
পাকিস্তানের ‘ডন’ পত্রিকা থেকে ভাষান্তর : আবু ইউসুফ