রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে উচ্চশিক্ষা ধ্বংস করা হয়েছে
ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন | ২৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০
ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন খ্যাতনামা অধ্যাপক ও ইতিহাসবিদ। ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে শিক্ষকতায় যোগ দিয়ে তিনি ২০১৪ সালে অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং দ্য ডেইলি সান পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) এর বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ, উপাচার্য নিয়োগের প্রক্রিয়াসহ দেশের উচ্চতর বিদ্যাপীঠগুলোর শিক্ষা-সংস্কৃতি নিয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রবীণ এই অধ্যাপক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সম্পাদকীয় বিভাগের আহমেদ মুনীরুদ্দিন
দেশ রূপান্তর : আধুনিক বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যলয় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল শতবর্ষ আগে। সদ্য পেরিয়ে আসা ২০২১ সালে সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষ উদযাপন করেছে। একই বছরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হয়েছে। ইতিহাসের এই সন্ধিক্ষণে দেশের শিক্ষা পরিস্থিতিকে কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?
সৈয়দ আনোয়ার হোসেন : বাংলাদেশে শিক্ষার ‘হ য ব র ল’ অবস্থা। এবং বর্তমান সরকার শিক্ষা এবং শিক্ষানীতি সম্পর্কে যে কর্মকা- পরিচালনা করেছে তাতে আমার কাছে মনে হয়েছে যে তারা শিক্ষা সংক্রান্ত কোনো ধারণাই রাখেন না। প্রথমত, পরীক্ষা সংক্রান্ত নানাবিধ নিরীক্ষা হলো, তারপর সেটা আবার বাতিল হলো, এখন নতুন পাঠক্রম হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, কিন্তু আমি যেটা বলি, সবসময়ই বলেছি যে কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের যে সুপারিশ ছিল সেসব বাস্তবায়ন করলে বাংলাদেশে শিক্ষার বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হতো। প্রকৃতপক্ষে কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনই বাংলাদেশের একমাত্র শিক্ষা কমিশন, পরবর্তীকালে যেসব কমিশন গঠন করা হয়েছে তার কোনোটিকেই আদতে শিক্ষা কমিশন বলা যায় না। সর্বসম্প্রতি ২০১০ সালে যে শিক্ষা কমিশন হয়েছিল সেটি সম্পর্কে আমি গণমাধ্যমে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। যারা সদস্য হয়েছিলেন তারা সবাই আমার শ্রদ্ধাভাজন-প্রীতিভাজন মানুষ, কিন্তু তারা কেউই কোনোদিন শিক্ষা নিয়ে ভাবেননি, বলেননি, লেখেননি। এই জন্যই তারা যে প্রতিবেদন দিয়েছিলেন সেটি শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিবেদন, সেটিকে শিক্ষানীতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন বলা যায় না। প্রধানত তারা কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনকেই অনুসরণ করেছিলেন। তাহলে প্রশ্ন ওঠে যে কেন এভাবে অর্থ ও সময় অপচয় করা হলো। এই অর্থ সরকারের নয়, জনগণের অর্থ।
দেশ রূপান্তর : দেশে এখন ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই বছরজুড়ে সংবাদ মাধ্যম ও নাগরিক সমাজের আলোচনায় থাকছে উপাচার্যদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এবং শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিয়ে। বিশেষভাবে দেশের উচ্চশিক্ষা বা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পর্কে জানতে চাই।
সৈয়দ আনোয়ার হোসেন : আমি বলি ‘জন বিশ্ববিদ্যালয়’। দেশের উচ্চশিক্ষাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু যে প্রক্রিয়ায় উপাচার্য নিয়োগ করতেন সেটিও অনুসরণ করা হয়নি। কাজেই বঙ্গবন্ধুর ধারেকাছেও নেই বর্তমান সরকারের শিক্ষা সংক্রান্ত কর্মকান্ড। বঙ্গবন্ধু ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করে প্রখ্যাত ব্যক্তিদের উপাচার্য পদে নিয়োগ দিতেন। আর এখন উপাচার্য পদ লাভের জন্য যারা উপযাচক হয় তারাই উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। কারণ এখন কেবল রাজনৈতিক আনুগত্যের বিবেচনায় গুণে-মানে-যোগ্যতায় প্রশ্নবিদ্ধ ব্যক্তিদের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। যারা ছাত্রছাত্রীদের কাছে কোনোদিন তেমন পরিচিত নন, গ্রহণযোগ্য নন।
দেশ রূপান্তর : আপনি জানেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলনরত। সেখানে অনশনরত ২৪ শিক্ষার্থীর প্রায় অর্ধেককে ইতিমধ্যে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। শিক্ষার্থীরা সেখানে কাফন মিছিল করছেন। আন্দোলনটি এখন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের এক দফা দাবির আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।
সৈয়দ আনোয়ার হোসেন : শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার একটি পটভূমি রয়েছে। এই সরকারের আমলে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েই আমরা এ ধরনের ঘটনা দেখছি। যেমন গোপালগঞ্জের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন দেখেছি। সবশেষ এখন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন চলছে। গোপালগঞ্জ ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্যকে প্রত্যাহার করা হলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অপসারণ করা হয়নি। এতে সরকারের ভাবমূর্তি বিপন্ন হয়েছে। কারণ যিনি উপাচার্য হবেন তার অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি হওয়ার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এসব ক্ষেত্রে তারা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্য নন বলেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন সংকট হচ্ছে।
দেশ রূপান্তর : বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগে তদন্ত করছে। ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে এরই মধ্যে তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
সৈয়দ আনোয়ার হোসেন : বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ১১টি বিশ^বিদ্যালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সরকার কোনো ক্ষমতাসীন উপাচার্যের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বিষয়টা এমন যে, তাদের চাকরির মেয়াদ শেষ হলে একটা তদন্তের ব্যবস্থা করা হয়, প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয় কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এখানে গলদটা গোড়াতেই, উপাচার্য নিয়োগের পদ্ধতিতেই। উপাচার্য নিয়োগ হয় একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা-অনিচ্ছাতেই। এটা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি নয়। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি হলো সার্চ কমিটি। সেটা প্রতিবেশী ভারতে আছে। যোগ্যতা, দক্ষতা মূল্যায়ন করে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়, বাংলাদেশে হয় না। এক্ষেত্রে বিএনপি আমলে যে অবস্থা ছিল এখনো তা-ই আছে। তবে, বিএনপির সময় এমন অনেককেই উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল যারা আসলে গুণে-মানে অনেক ভালো ছিলেন।
দেশ রূপান্তর : কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে কোনো রকম ব্যবস্থা গ্রহণের এখতিয়ার ইউজিসির নেই, ইউজিসি কেবল সুপারিশই করতে পারে। কিন্তু আমরা তো সরকার কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখছি না। এক্ষেত্রে দুর্বলতাটা কোথায়? সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয় না কেন?
সৈয়দ আনোয়ার হোসেন : বিষয়টা হচ্ছে, সংবিধানে সংসদীয় গণতন্ত্রের কথা বলা আছে। কিন্তু সরকার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলে না। এখানে ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপরই অনেক কিছু নির্ভর করে। তেমনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আসলে ঠুঁটো জগন্নাথ। একেবারেই কোনো ক্ষমতা নেই। কেবল সুপারিশ করতে পারে। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয় হচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আজ্ঞাবহ। কাজেই কোনো পদক্ষেপ নিতে হলে সেটা প্রধানমন্ত্রী নেবেন। তিনি নিচ্ছেন না সেটা বোঝা যাচ্ছে।
এক্ষেত্রে প্রথমত, আমার সুপারিশ থাকবে বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে উপযুক্ত ক্ষমতা দিয়ে প্রকৃত অর্থে ‘উচ্চশিক্ষা কমিশন’-এ রূপান্তরিত করা দরকার। বহুদিন থেকেই আমি এই কথা বলে আসছি। কিন্তু কোনো সরকারই তা করছে না। বঙ্গবন্ধু এই মঞ্জুরি কমিশন দিয়ে গিয়েছিলেন যে উদ্দেশ্যে, সেটা বাস্তবায়িত হয়নি। বঙ্গবন্ধু প্রথম চেয়ারম্যান করেছিলেন অধ্যাপক মুজাফফর আহমেদ চৌধুরীকে। ডাকসাইটে পণ্ডিত এবং প্রখর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ। এরপর থেকে আর তেমন যোগ্যতা সম্পন্ন কাউকে দেখা যায়নি। যোগ্যতা নয় রাজনৈতিক আনুগত্যই বিবেচিত হয়েছে। সেটা বিএনপি আমলেও না, আওয়ামী লীগ আমলেও না।
এখন দেখা যাচ্ছে, উপাচার্যরা দুর্নীতিতে যুক্ত হয়ে যান। কিন্তু প্রশ্ন হলো দুর্নীতিমুক্ত থাকার মতো মানুষকে তো উপাচার্য করা হয় না। যারা অযোগ্য তাদের যদি নিয়োগ দেওয়া হয় তাহলে তারা তো দুর্নীতিতে জড়াবেনই। সাধারণত দেখা গেছে দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্যরা আরও বেশি দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
দেশ রূপান্তর : উপাচার্যদের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগের পাশাপাশি এই অভিযোগও প্রবল যে, শিক্ষাঙ্গনগুলোতে উপাচার্যদের ভূমিকা শিক্ষাবান্ধব নয় শিক্ষার্থীবান্ধবও নয়। সংবাদ মাধ্যমেই এমন অনেক লেখা দেখা যাচ্ছে, যেখানে অভিযোগ করা হচ্ছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যের পদটি এখন আর কোনো শিক্ষাবিদের পদ নেই, এটা যেন একজন আমলা বা প্রশাসকের পদে পরিণত হয়েছে। আপনি কী মনে করেন?
সৈয়দ আনোয়ার হোসেন : মন্তব্যটি সঠিক। প্রথমত, শাহজালাল বিশ^বিদ্যালয়ের যে বর্তমান উপাচার্য তিনি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা নিয়োগকৃত। কিন্তু গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী তিনি একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপিপন্থি সাদা দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তারপর যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলো তিনি আওয়ামী লীগ হয়ে গেলেন। ডিন হলেন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি হলেন। সমস্যাটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে, শিক্ষকদের মধ্যে। এখন আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষক’ নিয়োগ হয় না ‘ভোটার’ নিয়োগ হয়। কারণটি এটাই। সংবাদ মাধ্যমে প্রচুর লেখা আছে যেখানে দেখা যাচ্ছে, চারটি প্রথম শ্রেণির প্রার্থীকে বাদ দিয়ে ছাত্রলীগ কর্মী কিংবা সরকারের রাজনৈতিক অনুসারী অযোগ্য প্রার্থীকে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আর শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কোনো উচ্চতর ডিগ্রি যেমন নেই তেমনি কোনো একাডেমিক প্রকাশনাও নেই। কিন্তু নিয়মে বলা আছে, অধ্যাপক হতে গেলে ১২ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা, উচ্চতর ডিগ্রি কিংবা মানসম্মত জার্নালে অন্তত ১৫টি প্রকাশনা থাকতে হবে। তাহলে তিনি অধ্যাপক হলেন কীভাবে? আর উপাচার্যই বা হলেন কীভাবে?
দেশ রূপান্তর : শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান আন্দোলনের মধ্যেই উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের একটি অডিও ভাইরাল হয়েছে। অডিওতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে তার অত্যন্ত আপত্তিকর মন্তব্যে সারা দেশে নিন্দার ঝড় উঠেছে। সমালোচকরা বলছেন যে ব্যক্তি এমন নারী বিদ্বেষী মন্তব্য করতে পারেন তার শিক্ষক হওয়ারই যোগ্যতা নেই। এমন মন্তব্যের পর তিনি উপাচার্য থাকেন কীভাবে? অন্যদিকে, ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই কয়েকজন শিক্ষক উপাচার্যের মন্তব্য নিয়ে নিশ্চুপ থাকলেও মানববন্ধন করে বলেছেন, শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সম্মান করছে না, গালাগাল করছে। একজন এটাও বলেছেন যে, ‘আমরা তো চাষাভুষা নই যে যা ইচ্ছে তাই গালাগাল করবে। আমরা বুদ্ধিজীবী শ্রেণিতে বিলং করি।’ এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?
সৈয়দ আনোয়ার হোসেন : হা হা হা। ওই উপাচার্যের কথা আর কী বলব! তার তো ওই পদে থাকারই কথা না। আর শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কের সংকটে দুটো সমস্যা। প্রথমত দেখাই যাচ্ছে শিক্ষকরা নিজেদের সম্মান রাখতে পারেননি। দ্বিতীয়ত, সরকারও শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান করে না। কারণ এখন যারা উপচাযক হন তারাই উপাচার্য হন। তৃতীয়ত, আমি মনে করি, শিক্ষক হতে হলে আচরণ-বচন-বসন-বিচরণে অনুসরণীয়-অনুকরণীয় হতে হবে। সেক্ষেত্রে সবখানেই যথেষ্ট ঘাটতি রয়ে গেছে। এভাবে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়ের সম্পর্কের যে নৈতিক ভিত্তি থাকে সেটা এখন নষ্ট হয়ে গেছে।
দেশ রূপান্তর : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
সৈয়দ আনোয়ার হোসেন : আপনাকে এবং দেশ রূপান্তরকেও ধন্যবাদ।
শেয়ার করুন
ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন | ২৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০

ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন খ্যাতনামা অধ্যাপক ও ইতিহাসবিদ। ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে শিক্ষকতায় যোগ দিয়ে তিনি ২০১৪ সালে অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং দ্য ডেইলি সান পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) এর বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ, উপাচার্য নিয়োগের প্রক্রিয়াসহ দেশের উচ্চতর বিদ্যাপীঠগুলোর শিক্ষা-সংস্কৃতি নিয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রবীণ এই অধ্যাপক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সম্পাদকীয় বিভাগের আহমেদ মুনীরুদ্দিন
দেশ রূপান্তর : আধুনিক বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যলয় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল শতবর্ষ আগে। সদ্য পেরিয়ে আসা ২০২১ সালে সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষ উদযাপন করেছে। একই বছরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হয়েছে। ইতিহাসের এই সন্ধিক্ষণে দেশের শিক্ষা পরিস্থিতিকে কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?
সৈয়দ আনোয়ার হোসেন : বাংলাদেশে শিক্ষার ‘হ য ব র ল’ অবস্থা। এবং বর্তমান সরকার শিক্ষা এবং শিক্ষানীতি সম্পর্কে যে কর্মকা- পরিচালনা করেছে তাতে আমার কাছে মনে হয়েছে যে তারা শিক্ষা সংক্রান্ত কোনো ধারণাই রাখেন না। প্রথমত, পরীক্ষা সংক্রান্ত নানাবিধ নিরীক্ষা হলো, তারপর সেটা আবার বাতিল হলো, এখন নতুন পাঠক্রম হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, কিন্তু আমি যেটা বলি, সবসময়ই বলেছি যে কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের যে সুপারিশ ছিল সেসব বাস্তবায়ন করলে বাংলাদেশে শিক্ষার বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হতো। প্রকৃতপক্ষে কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনই বাংলাদেশের একমাত্র শিক্ষা কমিশন, পরবর্তীকালে যেসব কমিশন গঠন করা হয়েছে তার কোনোটিকেই আদতে শিক্ষা কমিশন বলা যায় না। সর্বসম্প্রতি ২০১০ সালে যে শিক্ষা কমিশন হয়েছিল সেটি সম্পর্কে আমি গণমাধ্যমে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। যারা সদস্য হয়েছিলেন তারা সবাই আমার শ্রদ্ধাভাজন-প্রীতিভাজন মানুষ, কিন্তু তারা কেউই কোনোদিন শিক্ষা নিয়ে ভাবেননি, বলেননি, লেখেননি। এই জন্যই তারা যে প্রতিবেদন দিয়েছিলেন সেটি শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিবেদন, সেটিকে শিক্ষানীতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন বলা যায় না। প্রধানত তারা কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনকেই অনুসরণ করেছিলেন। তাহলে প্রশ্ন ওঠে যে কেন এভাবে অর্থ ও সময় অপচয় করা হলো। এই অর্থ সরকারের নয়, জনগণের অর্থ।
দেশ রূপান্তর : দেশে এখন ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই বছরজুড়ে সংবাদ মাধ্যম ও নাগরিক সমাজের আলোচনায় থাকছে উপাচার্যদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এবং শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিয়ে। বিশেষভাবে দেশের উচ্চশিক্ষা বা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পর্কে জানতে চাই।
সৈয়দ আনোয়ার হোসেন : আমি বলি ‘জন বিশ্ববিদ্যালয়’। দেশের উচ্চশিক্ষাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু যে প্রক্রিয়ায় উপাচার্য নিয়োগ করতেন সেটিও অনুসরণ করা হয়নি। কাজেই বঙ্গবন্ধুর ধারেকাছেও নেই বর্তমান সরকারের শিক্ষা সংক্রান্ত কর্মকান্ড। বঙ্গবন্ধু ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করে প্রখ্যাত ব্যক্তিদের উপাচার্য পদে নিয়োগ দিতেন। আর এখন উপাচার্য পদ লাভের জন্য যারা উপযাচক হয় তারাই উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। কারণ এখন কেবল রাজনৈতিক আনুগত্যের বিবেচনায় গুণে-মানে-যোগ্যতায় প্রশ্নবিদ্ধ ব্যক্তিদের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। যারা ছাত্রছাত্রীদের কাছে কোনোদিন তেমন পরিচিত নন, গ্রহণযোগ্য নন।
দেশ রূপান্তর : আপনি জানেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলনরত। সেখানে অনশনরত ২৪ শিক্ষার্থীর প্রায় অর্ধেককে ইতিমধ্যে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। শিক্ষার্থীরা সেখানে কাফন মিছিল করছেন। আন্দোলনটি এখন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের এক দফা দাবির আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।
সৈয়দ আনোয়ার হোসেন : শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার একটি পটভূমি রয়েছে। এই সরকারের আমলে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েই আমরা এ ধরনের ঘটনা দেখছি। যেমন গোপালগঞ্জের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন দেখেছি। সবশেষ এখন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন চলছে। গোপালগঞ্জ ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্যকে প্রত্যাহার করা হলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অপসারণ করা হয়নি। এতে সরকারের ভাবমূর্তি বিপন্ন হয়েছে। কারণ যিনি উপাচার্য হবেন তার অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি হওয়ার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এসব ক্ষেত্রে তারা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্য নন বলেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন সংকট হচ্ছে।
দেশ রূপান্তর : বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগে তদন্ত করছে। ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে এরই মধ্যে তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
সৈয়দ আনোয়ার হোসেন : বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ১১টি বিশ^বিদ্যালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সরকার কোনো ক্ষমতাসীন উপাচার্যের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বিষয়টা এমন যে, তাদের চাকরির মেয়াদ শেষ হলে একটা তদন্তের ব্যবস্থা করা হয়, প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয় কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এখানে গলদটা গোড়াতেই, উপাচার্য নিয়োগের পদ্ধতিতেই। উপাচার্য নিয়োগ হয় একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা-অনিচ্ছাতেই। এটা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি নয়। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি হলো সার্চ কমিটি। সেটা প্রতিবেশী ভারতে আছে। যোগ্যতা, দক্ষতা মূল্যায়ন করে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়, বাংলাদেশে হয় না। এক্ষেত্রে বিএনপি আমলে যে অবস্থা ছিল এখনো তা-ই আছে। তবে, বিএনপির সময় এমন অনেককেই উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল যারা আসলে গুণে-মানে অনেক ভালো ছিলেন।
দেশ রূপান্তর : কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে কোনো রকম ব্যবস্থা গ্রহণের এখতিয়ার ইউজিসির নেই, ইউজিসি কেবল সুপারিশই করতে পারে। কিন্তু আমরা তো সরকার কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখছি না। এক্ষেত্রে দুর্বলতাটা কোথায়? সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয় না কেন?
সৈয়দ আনোয়ার হোসেন : বিষয়টা হচ্ছে, সংবিধানে সংসদীয় গণতন্ত্রের কথা বলা আছে। কিন্তু সরকার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলে না। এখানে ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপরই অনেক কিছু নির্ভর করে। তেমনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আসলে ঠুঁটো জগন্নাথ। একেবারেই কোনো ক্ষমতা নেই। কেবল সুপারিশ করতে পারে। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয় হচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আজ্ঞাবহ। কাজেই কোনো পদক্ষেপ নিতে হলে সেটা প্রধানমন্ত্রী নেবেন। তিনি নিচ্ছেন না সেটা বোঝা যাচ্ছে।
এক্ষেত্রে প্রথমত, আমার সুপারিশ থাকবে বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে উপযুক্ত ক্ষমতা দিয়ে প্রকৃত অর্থে ‘উচ্চশিক্ষা কমিশন’-এ রূপান্তরিত করা দরকার। বহুদিন থেকেই আমি এই কথা বলে আসছি। কিন্তু কোনো সরকারই তা করছে না। বঙ্গবন্ধু এই মঞ্জুরি কমিশন দিয়ে গিয়েছিলেন যে উদ্দেশ্যে, সেটা বাস্তবায়িত হয়নি। বঙ্গবন্ধু প্রথম চেয়ারম্যান করেছিলেন অধ্যাপক মুজাফফর আহমেদ চৌধুরীকে। ডাকসাইটে পণ্ডিত এবং প্রখর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ। এরপর থেকে আর তেমন যোগ্যতা সম্পন্ন কাউকে দেখা যায়নি। যোগ্যতা নয় রাজনৈতিক আনুগত্যই বিবেচিত হয়েছে। সেটা বিএনপি আমলেও না, আওয়ামী লীগ আমলেও না।
এখন দেখা যাচ্ছে, উপাচার্যরা দুর্নীতিতে যুক্ত হয়ে যান। কিন্তু প্রশ্ন হলো দুর্নীতিমুক্ত থাকার মতো মানুষকে তো উপাচার্য করা হয় না। যারা অযোগ্য তাদের যদি নিয়োগ দেওয়া হয় তাহলে তারা তো দুর্নীতিতে জড়াবেনই। সাধারণত দেখা গেছে দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্যরা আরও বেশি দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
দেশ রূপান্তর : উপাচার্যদের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগের পাশাপাশি এই অভিযোগও প্রবল যে, শিক্ষাঙ্গনগুলোতে উপাচার্যদের ভূমিকা শিক্ষাবান্ধব নয় শিক্ষার্থীবান্ধবও নয়। সংবাদ মাধ্যমেই এমন অনেক লেখা দেখা যাচ্ছে, যেখানে অভিযোগ করা হচ্ছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যের পদটি এখন আর কোনো শিক্ষাবিদের পদ নেই, এটা যেন একজন আমলা বা প্রশাসকের পদে পরিণত হয়েছে। আপনি কী মনে করেন?
সৈয়দ আনোয়ার হোসেন : মন্তব্যটি সঠিক। প্রথমত, শাহজালাল বিশ^বিদ্যালয়ের যে বর্তমান উপাচার্য তিনি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা নিয়োগকৃত। কিন্তু গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী তিনি একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপিপন্থি সাদা দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তারপর যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলো তিনি আওয়ামী লীগ হয়ে গেলেন। ডিন হলেন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি হলেন। সমস্যাটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে, শিক্ষকদের মধ্যে। এখন আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষক’ নিয়োগ হয় না ‘ভোটার’ নিয়োগ হয়। কারণটি এটাই। সংবাদ মাধ্যমে প্রচুর লেখা আছে যেখানে দেখা যাচ্ছে, চারটি প্রথম শ্রেণির প্রার্থীকে বাদ দিয়ে ছাত্রলীগ কর্মী কিংবা সরকারের রাজনৈতিক অনুসারী অযোগ্য প্রার্থীকে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আর শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কোনো উচ্চতর ডিগ্রি যেমন নেই তেমনি কোনো একাডেমিক প্রকাশনাও নেই। কিন্তু নিয়মে বলা আছে, অধ্যাপক হতে গেলে ১২ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা, উচ্চতর ডিগ্রি কিংবা মানসম্মত জার্নালে অন্তত ১৫টি প্রকাশনা থাকতে হবে। তাহলে তিনি অধ্যাপক হলেন কীভাবে? আর উপাচার্যই বা হলেন কীভাবে?
দেশ রূপান্তর : শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান আন্দোলনের মধ্যেই উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের একটি অডিও ভাইরাল হয়েছে। অডিওতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে তার অত্যন্ত আপত্তিকর মন্তব্যে সারা দেশে নিন্দার ঝড় উঠেছে। সমালোচকরা বলছেন যে ব্যক্তি এমন নারী বিদ্বেষী মন্তব্য করতে পারেন তার শিক্ষক হওয়ারই যোগ্যতা নেই। এমন মন্তব্যের পর তিনি উপাচার্য থাকেন কীভাবে? অন্যদিকে, ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই কয়েকজন শিক্ষক উপাচার্যের মন্তব্য নিয়ে নিশ্চুপ থাকলেও মানববন্ধন করে বলেছেন, শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সম্মান করছে না, গালাগাল করছে। একজন এটাও বলেছেন যে, ‘আমরা তো চাষাভুষা নই যে যা ইচ্ছে তাই গালাগাল করবে। আমরা বুদ্ধিজীবী শ্রেণিতে বিলং করি।’ এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?
সৈয়দ আনোয়ার হোসেন : হা হা হা। ওই উপাচার্যের কথা আর কী বলব! তার তো ওই পদে থাকারই কথা না। আর শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কের সংকটে দুটো সমস্যা। প্রথমত দেখাই যাচ্ছে শিক্ষকরা নিজেদের সম্মান রাখতে পারেননি। দ্বিতীয়ত, সরকারও শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান করে না। কারণ এখন যারা উপচাযক হন তারাই উপাচার্য হন। তৃতীয়ত, আমি মনে করি, শিক্ষক হতে হলে আচরণ-বচন-বসন-বিচরণে অনুসরণীয়-অনুকরণীয় হতে হবে। সেক্ষেত্রে সবখানেই যথেষ্ট ঘাটতি রয়ে গেছে। এভাবে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়ের সম্পর্কের যে নৈতিক ভিত্তি থাকে সেটা এখন নষ্ট হয়ে গেছে।
দেশ রূপান্তর : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
সৈয়দ আনোয়ার হোসেন : আপনাকে এবং দেশ রূপান্তরকেও ধন্যবাদ।