মন্ত্রীখেকো ইঁদুর ও হ্যামেলিনের বংশীবাদক
ড. এম এ মোমেন | ১৬ মে, ২০২২ ০০:০০
উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ তার মন্ত্রীদের ১৮টি দলে বিভক্ত করে ১৮টি বিভাগে পাঠালেন, তারা সরকারের কল্যাণমূলক কাজগুলো সরেজমিনে দেখবেন, জনগণের কথা শুনবেন, সমস্যা থাকলে উত্তরণের নির্দেশনা দেবেন। উত্তর প্রদেশে তারকাখচিত আরামদায়ক হোটেল এত বেশি মন্ত্রীরা সরকারি সার্কিট হাউজকে আর আমলেই নেন না। হোটেলে থাকেন, একটু আরাম-আয়েশ করেন, টাকা ভূতে জোগায়। যোগী আদিত্যনাথ মন্ত্রীদের হুকুম দিলেন, হোটেলে থাকা যাবে না, সার্কিট হাউজেই থাকতে হবে।
ক্রীড়া ও যুবকল্যাণমন্ত্রী গিরিশ চন্দ্র যাদবের ভাগে পড়ল বান্দা। সার্কিট হাউজেই উঠলেন। ভ্রমণক্লান্ত, কর্মক্লান্ত মন্ত্রী যখন ঘুমিয়ে এমন সময় কিছু একটা তার পায়ে কামড় বসাল। সার্কিট হাউজের চারদিকে গাছপালা ও ঝোপ। মন্ত্রী ভাবলেন, সাপের জন্য এটাই উত্তম পরিবেশ। তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন এবং ধরেই নিলেন সাপের কামড়ে তিনি মৃত্যুবরণ করতে যাচ্ছেন। তিনি চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলেন। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলো, রাত্রিকালীন ডাক্তারদের হুড়োহুড়ি লেগে গেল। দ্রুত চিকিৎসা শুরু হলো। বিষ দংশনের কথা শুনে ঘুমভাঙা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট, অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট, সিটি ম্যাজিস্ট্রেট, সার্কেল অফিসার হাসপাতালে ছুটে এলেন। তিন ঘণ্টা চিকিৎসার পর ডাক্তাররা তাকে আশ^স্ত করলেন এটা সাপের কামড় নয়। ইঁদুরের কামড়।
সাপ হলে ততক্ষণে বিষক্রিয়া শুরু হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। মন্ত্রী আশ্বস্ত হলেন এটা সর্প দংশন নয়, মূষিক দংশন। কিন্তু তাই বা হবে কেন। ইঁদুর কেন বেছে বেছে মন্ত্রীকে খেতে যাবে? নাকি ইঁদুরের র্যানডম স্যাম্পলিং-এর শুরুতেই দৈব বাছাইয়ে মন্ত্রী উঠে এসেছে? ভারতের পত্রপত্রিকায়, ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে বিষয়টি এমনভাবে প্রকাশিত হয়েছে যে ইঁদুরের মন্ত্রী কামড়ানো একটা মজার ব্যাপার। ইঁদুর যদি ভাইপারের মতো বিষাক্ত হতো তাহলে তো মন্ত্রীর শেষকৃত্যের আয়োজন করতে হতো।
আর মন্ত্রী যদি গিরিশই হয়ে থাকেন তিনি তো ‘লর্ড অব দ্য মাউন্টেইন’। পর্বত প্রভু লর্ড শিব, আবাস হিমালয় পর্বতমালা। পঞ্চতন্ত্রের গল্পগুলো যাদের জানা আছে তারা জানেন ইঁদুর আর পর্বতের সম্পর্ক। ইঁদুরের জন্য তো পাত্র হিসেবে গিরিশকে ঠিক করা হয়েছিল। যদি মন্ত্রীর নামের মধ্যাংশ ‘চন্দ্র’কে বিবেচনায় আনা হয়, তাহলে এটা স্পষ্ট ইঁদুর আর চাঁদের সম্পর্ক যেমনই হোক ইঁদুর কামড়ে চাঁদের একটি অংশ খেয়ে ফেলেছে। আর যদি শেষাংশ ‘যাদবের জোর দেওয়া হয় তাহলে ইঁদুর আতঙ্কের এমনকি সর্পাতঙ্কের কারণ নেই। যাদব নন-এলিট, অনভিজাত কৃষি সম্প্রদায়। সাপ-বিচ্ছু, ইঁদুর-ছুঁচো এসবের সঙ্গে তাদের নিত্যকার সাক্ষাৎ। তবুও যেহেতু তিনি মন্ত্রী তার মর্যাদা তো আর যেনতেন যাদবের মতো হতে পারে না। তবে পুরাণে এটাও আছে যাদবরা পৌরাণিক রাজা যদুর বংশধর। ভারতবর্ষে শতবর্ষের পুরনো একটি অল ইন্ডিয়া যাদব মহাসভাও রয়েছে।
গিরিশ চন্দ্র যাদব হয়তো রাজস্থানের করনি মাতা মন্দিরে কখনো যাননি। এখানে মা হিসেবেই ইঁদুরের পূজা করা হয়। করনি মাতা দুর্গারই পুনর্জন্মলব্ধ একটি রূপ। এই মন্দিরে খালি পায়ে প্রবেশ করতে হয়। হাজার ইঁদুর চারদিকে। কোনো পুণ্যাত্মার পায়ের ওপর দিয়ে যদি কোনো ইঁদুর ছুটে যায় তাহলে তাকে আর পায় কে! এই পুণ্যাত্মার স্বর্গ নিশ্চিত। কিন্তু যদি দুর্ঘটনাক্রমে কোনো পামরের পায়ের তলায় চাপা পড়ে একটি ইঁদুরের মৃত্যু হয় তাহলে এর ক্ষতিপূরণও পাপস্খলন বাবদ তাকে সলিড গোল্ড নির্মিত একটি ইঁদুর মন্দিরে প্রতিস্থাপন করতে হয়।
গিরিশ চন্দ্র ভড়কে গিয়েছিলেন, ইঁদুরের কামড়ও সৌভাগ্যের বার্তা এনে দেয়। হাঁকডাক করে, সাপখোপের কথা বলে হাসপাতালে ছুটোছুটি করে, পত্রিকায় নিজের ছবি ছাপিয়ে, টেলিভিশনে চেহারা দেখিয়ে তিনি গুরুপাপ করেছেন। ‘ঐদুরিক শাপ’-এ তিনি হয়তো মন্ত্রিসভা রিশাফলিংয়ের সময় পোর্টফোলিও হারাতে পারেন।
করনি মাতা মন্দিরের ইঁদুরকে যত পবিত্র জ্ঞানই করা হোক না কেন পৃথিবী প্লেগের ইতিহাস ভোলেনি। আর তা তো সর্প দংশনের চেয়েও ভয়ংকর। গিরিশ চন্দ্র যাদব যখন জানলেন তার পায়ের কামড় সাপের নয়, বলা হয়েছে তিনি তখন আশ^স্ত হলেন। যখন বলা হলো কামড়টা ইঁদুরের, তখন যদি প্লেগের কথা মন্ত্রীর মনে পড়ত তখনই তো তীব্র আর্তচিৎকার করে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ার কথা। বড় বাঁচা তিনি বেঁচে গেছেন? শুধু প্লেগ নয়, আর পাঁচটি অতি ভয়ংকর রোগের বাহন ইঁদুর হান্টাভাইরাস লিম্ফোটিক কোরিওমেনিনজাইটিস ভাইরাস, সালমোনেলা, র্যাট বাইট ফিভার ও টুলারেমিয়া। ইঁদুরবান্ধব নয় এ পৃথিবী, পাকিস্তান আমলে ষোলোটি ইঁদুর মেরে লেজ জমা দিতে পারলে ১৬ আনা বা এক টাকা দেওয়া হতো। বাংলাদেশ আমলে এই দর এক সিকি থেকে এক টাকা এমনকি পাঁচ টাকা পর্যন্ত উঠেছে।
* * *
জার্মানির বেসার নদীর তীরবর্তী ছোট্ট শহর হ্যামেলিনের কথা মনে পড়ে? হ্যামেলিনের বংশীবাদকের কথা? যে জার্মান কাহিনী পৃথিবীর প্রায় সব মানুষের কাছে পৌঁছেছে, তা হচ্ছে ‘পাইড পাইপার অব হ্যামেলিন’ হ্যামেলিনের বংশীবাদকের কাহিনী। ১০২ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়ানো এই শহরটির গোড়াপত্তন ৮৫১ সালে একটি আশ্রম স্থাপনের মাধ্যমে। শুরুতে একটি গ্রাম, দ্বাদশ শতকে এসে একটি ছোট শহর। ইঁদুর আর বংশীবাদকের কাহিনীটি ১২৮৪ সালের। হ্যামেলিন শহরে ইঁদুরের অত্যাচার ভীষণ বেড়ে যায়। কবি রবার্ট ব্রাউনিং-এর লেখা ‘দ্য পাইড পাইপার অব হ্যামেলিন’ আমাদের স্কুলপাঠ্য ছিল। ব্রাউনিং সে ইঁদুরের কী যে ভয়ংকর বর্ণনা দিয়েছেন! হ্যামেলিনের ইঁদুর কুকুরের সঙ্গে লড়াই করত, বিড়াল হত্যা করত, দোলনার শিশুকে কামড়ে দিত, পনির খেয়ে ফেলত, স্যুপে চুমুক দিত। ইঁদুরের অত্যাচারে নাগরিক জীবন যখন দুর্বিষহ, মেয়র যখন নিত্যসমালোচনার মুখে, ইঁদুরের হাত থেকে বাঁচার আর যখন কোনো উপায় নেই, তখনই এক বহুবর্ণ (পাইড) পোশাক পরা বংশীবাদকের আবির্ভাব ঘটে। বংশীবাদক প্রতিজ্ঞা করলেন ইঁদুরের হাত থেকে শহর ও শহরের মানুষকে রক্ষা করবেন। মেয়র জানালেন এজন্য তাকে এক হাজার গিল্ডার দেওয়া হবে। বংশীবাদক মেয়রের প্রতিশ্রুতি শুনে বাঁশি বাজাতে শুরু করলেন। শহরের যত ইঁদুর এমনকি সুর শুনে আকৃষ্ট হয়ে গর্তের ইঁদুরও রাস্তায় নেমে গেল। তিনি বাঁশি বাজিয়ে তাদের বেসার নদীর ধারে নিয়ে এলেন। তিনি যখন নদীতে নামলেন সব ইঁদুর ঝাঁপিয়ে নদীতে পড়ল এবং তাদের সমাধি রচিত হলো সেখানেই।
প্রতিশ্রুত অর্থ গ্রহণের জন্য তিনি যখন মেয়রের কাছে এলেন তার শতভাগ সাফল্যের পরও মেয়র মনে করলেন এই ভবঘুরে বাঁশিওয়ালার জন্য ৫০ গিল্ডারই যথেষ্ট। এমনও বললেন, আসলে এই ইঁদুর বংশীবাদক নিজেই নিয়ে এসেছে আর এসব তুকতাক দেখিয়ে চাঁদাবাজি করছে। ক্ষুব্ধ বংশীবাদক রাগ করে শহর থেকে বেরিয়ে যান। এর প্রতিশোধ তাকে নিতেই হবে।
কদিন পর ‘সাধু জন ও পল দিবসে’ বয়স্করা যখন চার্চে, সবুজ পোশাক পরা শিকারির মতো শহরে হাজির হলেন সেই বংশীবাদক। অদ্ভুত এক সুরে বাঁশি বাজাতে শুরু করলেন। এবার সুরে আকৃষ্ট হলো হ্যামেলিনের শিশুরা। ঘর ছেড়ে দ্রুত রাস্তায় নেমে এলো ১৩০ জন শিশু। তারা বংশীবাদককে অনুসরণ করতে করতে একটি পার্বত্য গুহায় ঢুকে পড়ল। তারা হারিয়ে গেল চিরদিনের জন্য। তবে একটি খোঁড়া শিশু, একটি বধির শিশু এবং একটি অন্ধ শিশু কুলিয়ে উঠতে না পেরে পেছনে পড়ে যায়। তারাই গ্রামবাসীকে অন্য শিশুদের দুর্ভাগ্যের কথা জানায়। বংশীবাদকের কাহিনীটি বিভিন্ন লেখকের হাতে বিভিন্নভাবে উঠে এসেছে। কারও মতে বংশীবাদক শিশুদের কোপেলবার্গ পাহাড়ে নিয়ে যায়, কারও মতে ট্রান্সসিলভানিয়া পাহাড়ে; কারও মতে সেখান থেকে বেসার নদীতে শিশুদের ডুবিয়ে মারেন; অপর একটি ভাষ্য হচ্ছে প্রতিশ্রুত অর্থ হাতে পাওয়ার পর এবং শিশুদের অভিভাবকদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের অর্থ পেয়ে তিনি শিশুদের শহরে ফিরিয়ে আনেন। হ্যামেলিন শহরের বাঙ্গেলোসেন্সট্রাসে নামের রাস্তাটির মানে ‘ড্রামবাদনবিহীন সড়ক’। এখানেই শেষবারের মতো শিশুদের দেখা যায়।
* * *
মন্ত্রীকে ইঁদুরের কামড়-গিরিশ চন্দ্র যাদবের আতঙ্কের কাহিনী যদি গণ ও সামাজিক মাধ্যম লুফে না নিত মন্ত্রীও আমাদের দৃষ্টির আড়ালেই থেকে যেতেন। একইভাবে হ্যামেলিনের মেয়র যদি ইঁদুর বিদায়ের পর বংশীবাদকের প্রাপ্য প্রতিশ্রুত হাজার গিল্ডার দিয়ে দিতেন তাহলে বংশীবাদক গত সাড়ে সাতশত বছরে বিস্মৃত হয়ে যেতেন। তিনি প্রতিশোধের নামে শিশু হরণ করে অমরত্বের পথ খুঁজে নিলেন। তাকে প্রতিষ্ঠা করলেন গ্যায়টে ব্রাদার্স গ্রিম, রবার্ট বাউনিং প্রমুখ। কিন্তু এই ইঁদুর কাহিনী কি সত্য? বাঁশির সুরে মাতোয়ারা হয়ে হ্যামেলিনের সব ইঁদুর সত্যিই কি নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহনন করেছে? ১২৮৪ সালের ২৬ জুন হ্যামেলিনের ১৩০ জন শিশু কি সত্যিই বংশীবাদকের সুরের টানে চিরদিনের জন্য নিরুদ্দিষ্ট হয়ে গেছে? এমন কোনো ঘটনা আদৌ ঘটেনি, পুরোটাই কল্পপুরাণ এমন দাবি এখন পর্যন্ত কেউ করেননি।
ভারত চায় কোনো বংশীবাদক এসে সার্কিট হাউজের সব ইঁদুর নিয়ে যাক। কিন্তু শিশুদের নিয়ে যাক এটা ভারত কেন পৃথিবীর কোনো দেশই চায় না। কিন্তু যখন কথা উঠল, বংশীবাদক যদি এমন একটা সুর বাজাতেন যে সুরমুগ্ধ হয়ে সব দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী তাকে অনুসরণ করে ইঁদুরের মতো নদীতে ঝাঁপিয়ে আত্মহনন করতেন, ভারত বেঁচে যেত। বাংলাদেশও বলত, কোথায় সেই বংশীবাদক?
একটি পাদটীকা : ১৯৮৪-৮৬ আমি সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসনে চাকরি করেছি। আমার কাজগুলোর একটি ছিল অতিথি ব্যবস্থাপনা। জেলাতে সার্কিট হাউজ না থাকায় বিভিন্ন দপ্তরের রেস্ট হাউজে সরকারি অতিথিদের থাকার ব্যবস্থা করতে হতো। বাহিরগোলা রোডে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একটি রেস্ট হাউজের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত একটি কক্ষে একজন মন্ত্রী অবস্থান করলেন। পরদিন সকালে আমাকে বললেন, ‘ইঁদুরের অত্যাচারে ঘুমের ব্যাঘাত হয়েছে।’ আমি দুঃখ প্রকাশ করি, তিনি আঙুল উঁচিয়ে দেখালেন পুরনো মডেলের এয়ার কন্ডিশনার যন্ত্রে কোথাও ইঁদুরের বাসা আছে, সারারাতই খসখস শব্দ করেছে। বিষয়টি কর্মকর্তাদের জানানোর আগেই এলেন আর একজন অতিথি, ১৯৮৬-এর অক্টোবরের প্রথম দিকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জি হুজুর। আমরা সরকারি নির্দেশনা পেয়েছি, প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সবার সঙ্গে সৌজন্যমূলক আচরণ এবং জেলায় অবস্থানকালে সার্কিট হাউজে (রেস্ট হাউজ) ভিআইপি মর্যাদায় থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আমি হাফেজ্জি হুজুরকে একই রেস্ট হাউজে নির্ধারিত কক্ষে এনে সবিনয়ে বলি, আমাদের সার্কিট হাউজ নেই, কষ্ট করে এখানেই থাকতে হবে। একজন অতিথি বলে গেছেন, এয়ার কন্ডিশনারের ফাঁকফোকরে সম্ভবত ইঁদুর আছে। তিনি বললেন, আমি এয়ার কন্ডিশনার চালাই না। আর ইঁদুরের তো বসবাসের অধিকার আছে। তিনি খাটে শুতে রাজি হলেন না। কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে মেঝের কার্পেটের ওপর শোয়ার আয়োজন করলেন। ইঁদুর সম্ভবত তাকে বিরক্ত করেনি। ১৯৮৬-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনিই হলেন এরশাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী, অর্থাৎ দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন।
লেখক সরকারের সাবেক কর্মকর্তা ও কলামনিস্ট
শেয়ার করুন
ড. এম এ মোমেন | ১৬ মে, ২০২২ ০০:০০

উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ তার মন্ত্রীদের ১৮টি দলে বিভক্ত করে ১৮টি বিভাগে পাঠালেন, তারা সরকারের কল্যাণমূলক কাজগুলো সরেজমিনে দেখবেন, জনগণের কথা শুনবেন, সমস্যা থাকলে উত্তরণের নির্দেশনা দেবেন। উত্তর প্রদেশে তারকাখচিত আরামদায়ক হোটেল এত বেশি মন্ত্রীরা সরকারি সার্কিট হাউজকে আর আমলেই নেন না। হোটেলে থাকেন, একটু আরাম-আয়েশ করেন, টাকা ভূতে জোগায়। যোগী আদিত্যনাথ মন্ত্রীদের হুকুম দিলেন, হোটেলে থাকা যাবে না, সার্কিট হাউজেই থাকতে হবে।
ক্রীড়া ও যুবকল্যাণমন্ত্রী গিরিশ চন্দ্র যাদবের ভাগে পড়ল বান্দা। সার্কিট হাউজেই উঠলেন। ভ্রমণক্লান্ত, কর্মক্লান্ত মন্ত্রী যখন ঘুমিয়ে এমন সময় কিছু একটা তার পায়ে কামড় বসাল। সার্কিট হাউজের চারদিকে গাছপালা ও ঝোপ। মন্ত্রী ভাবলেন, সাপের জন্য এটাই উত্তম পরিবেশ। তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন এবং ধরেই নিলেন সাপের কামড়ে তিনি মৃত্যুবরণ করতে যাচ্ছেন। তিনি চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলেন। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলো, রাত্রিকালীন ডাক্তারদের হুড়োহুড়ি লেগে গেল। দ্রুত চিকিৎসা শুরু হলো। বিষ দংশনের কথা শুনে ঘুমভাঙা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট, অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট, সিটি ম্যাজিস্ট্রেট, সার্কেল অফিসার হাসপাতালে ছুটে এলেন। তিন ঘণ্টা চিকিৎসার পর ডাক্তাররা তাকে আশ^স্ত করলেন এটা সাপের কামড় নয়। ইঁদুরের কামড়।
সাপ হলে ততক্ষণে বিষক্রিয়া শুরু হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। মন্ত্রী আশ্বস্ত হলেন এটা সর্প দংশন নয়, মূষিক দংশন। কিন্তু তাই বা হবে কেন। ইঁদুর কেন বেছে বেছে মন্ত্রীকে খেতে যাবে? নাকি ইঁদুরের র্যানডম স্যাম্পলিং-এর শুরুতেই দৈব বাছাইয়ে মন্ত্রী উঠে এসেছে? ভারতের পত্রপত্রিকায়, ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে বিষয়টি এমনভাবে প্রকাশিত হয়েছে যে ইঁদুরের মন্ত্রী কামড়ানো একটা মজার ব্যাপার। ইঁদুর যদি ভাইপারের মতো বিষাক্ত হতো তাহলে তো মন্ত্রীর শেষকৃত্যের আয়োজন করতে হতো।
আর মন্ত্রী যদি গিরিশই হয়ে থাকেন তিনি তো ‘লর্ড অব দ্য মাউন্টেইন’। পর্বত প্রভু লর্ড শিব, আবাস হিমালয় পর্বতমালা। পঞ্চতন্ত্রের গল্পগুলো যাদের জানা আছে তারা জানেন ইঁদুর আর পর্বতের সম্পর্ক। ইঁদুরের জন্য তো পাত্র হিসেবে গিরিশকে ঠিক করা হয়েছিল। যদি মন্ত্রীর নামের মধ্যাংশ ‘চন্দ্র’কে বিবেচনায় আনা হয়, তাহলে এটা স্পষ্ট ইঁদুর আর চাঁদের সম্পর্ক যেমনই হোক ইঁদুর কামড়ে চাঁদের একটি অংশ খেয়ে ফেলেছে। আর যদি শেষাংশ ‘যাদবের জোর দেওয়া হয় তাহলে ইঁদুর আতঙ্কের এমনকি সর্পাতঙ্কের কারণ নেই। যাদব নন-এলিট, অনভিজাত কৃষি সম্প্রদায়। সাপ-বিচ্ছু, ইঁদুর-ছুঁচো এসবের সঙ্গে তাদের নিত্যকার সাক্ষাৎ। তবুও যেহেতু তিনি মন্ত্রী তার মর্যাদা তো আর যেনতেন যাদবের মতো হতে পারে না। তবে পুরাণে এটাও আছে যাদবরা পৌরাণিক রাজা যদুর বংশধর। ভারতবর্ষে শতবর্ষের পুরনো একটি অল ইন্ডিয়া যাদব মহাসভাও রয়েছে।
গিরিশ চন্দ্র যাদব হয়তো রাজস্থানের করনি মাতা মন্দিরে কখনো যাননি। এখানে মা হিসেবেই ইঁদুরের পূজা করা হয়। করনি মাতা দুর্গারই পুনর্জন্মলব্ধ একটি রূপ। এই মন্দিরে খালি পায়ে প্রবেশ করতে হয়। হাজার ইঁদুর চারদিকে। কোনো পুণ্যাত্মার পায়ের ওপর দিয়ে যদি কোনো ইঁদুর ছুটে যায় তাহলে তাকে আর পায় কে! এই পুণ্যাত্মার স্বর্গ নিশ্চিত। কিন্তু যদি দুর্ঘটনাক্রমে কোনো পামরের পায়ের তলায় চাপা পড়ে একটি ইঁদুরের মৃত্যু হয় তাহলে এর ক্ষতিপূরণও পাপস্খলন বাবদ তাকে সলিড গোল্ড নির্মিত একটি ইঁদুর মন্দিরে প্রতিস্থাপন করতে হয়।
গিরিশ চন্দ্র ভড়কে গিয়েছিলেন, ইঁদুরের কামড়ও সৌভাগ্যের বার্তা এনে দেয়। হাঁকডাক করে, সাপখোপের কথা বলে হাসপাতালে ছুটোছুটি করে, পত্রিকায় নিজের ছবি ছাপিয়ে, টেলিভিশনে চেহারা দেখিয়ে তিনি গুরুপাপ করেছেন। ‘ঐদুরিক শাপ’-এ তিনি হয়তো মন্ত্রিসভা রিশাফলিংয়ের সময় পোর্টফোলিও হারাতে পারেন।
করনি মাতা মন্দিরের ইঁদুরকে যত পবিত্র জ্ঞানই করা হোক না কেন পৃথিবী প্লেগের ইতিহাস ভোলেনি। আর তা তো সর্প দংশনের চেয়েও ভয়ংকর। গিরিশ চন্দ্র যাদব যখন জানলেন তার পায়ের কামড় সাপের নয়, বলা হয়েছে তিনি তখন আশ^স্ত হলেন। যখন বলা হলো কামড়টা ইঁদুরের, তখন যদি প্লেগের কথা মন্ত্রীর মনে পড়ত তখনই তো তীব্র আর্তচিৎকার করে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ার কথা। বড় বাঁচা তিনি বেঁচে গেছেন? শুধু প্লেগ নয়, আর পাঁচটি অতি ভয়ংকর রোগের বাহন ইঁদুর হান্টাভাইরাস লিম্ফোটিক কোরিওমেনিনজাইটিস ভাইরাস, সালমোনেলা, র্যাট বাইট ফিভার ও টুলারেমিয়া। ইঁদুরবান্ধব নয় এ পৃথিবী, পাকিস্তান আমলে ষোলোটি ইঁদুর মেরে লেজ জমা দিতে পারলে ১৬ আনা বা এক টাকা দেওয়া হতো। বাংলাদেশ আমলে এই দর এক সিকি থেকে এক টাকা এমনকি পাঁচ টাকা পর্যন্ত উঠেছে।
* * *
জার্মানির বেসার নদীর তীরবর্তী ছোট্ট শহর হ্যামেলিনের কথা মনে পড়ে? হ্যামেলিনের বংশীবাদকের কথা? যে জার্মান কাহিনী পৃথিবীর প্রায় সব মানুষের কাছে পৌঁছেছে, তা হচ্ছে ‘পাইড পাইপার অব হ্যামেলিন’ হ্যামেলিনের বংশীবাদকের কাহিনী। ১০২ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়ানো এই শহরটির গোড়াপত্তন ৮৫১ সালে একটি আশ্রম স্থাপনের মাধ্যমে। শুরুতে একটি গ্রাম, দ্বাদশ শতকে এসে একটি ছোট শহর। ইঁদুর আর বংশীবাদকের কাহিনীটি ১২৮৪ সালের। হ্যামেলিন শহরে ইঁদুরের অত্যাচার ভীষণ বেড়ে যায়। কবি রবার্ট ব্রাউনিং-এর লেখা ‘দ্য পাইড পাইপার অব হ্যামেলিন’ আমাদের স্কুলপাঠ্য ছিল। ব্রাউনিং সে ইঁদুরের কী যে ভয়ংকর বর্ণনা দিয়েছেন! হ্যামেলিনের ইঁদুর কুকুরের সঙ্গে লড়াই করত, বিড়াল হত্যা করত, দোলনার শিশুকে কামড়ে দিত, পনির খেয়ে ফেলত, স্যুপে চুমুক দিত। ইঁদুরের অত্যাচারে নাগরিক জীবন যখন দুর্বিষহ, মেয়র যখন নিত্যসমালোচনার মুখে, ইঁদুরের হাত থেকে বাঁচার আর যখন কোনো উপায় নেই, তখনই এক বহুবর্ণ (পাইড) পোশাক পরা বংশীবাদকের আবির্ভাব ঘটে। বংশীবাদক প্রতিজ্ঞা করলেন ইঁদুরের হাত থেকে শহর ও শহরের মানুষকে রক্ষা করবেন। মেয়র জানালেন এজন্য তাকে এক হাজার গিল্ডার দেওয়া হবে। বংশীবাদক মেয়রের প্রতিশ্রুতি শুনে বাঁশি বাজাতে শুরু করলেন। শহরের যত ইঁদুর এমনকি সুর শুনে আকৃষ্ট হয়ে গর্তের ইঁদুরও রাস্তায় নেমে গেল। তিনি বাঁশি বাজিয়ে তাদের বেসার নদীর ধারে নিয়ে এলেন। তিনি যখন নদীতে নামলেন সব ইঁদুর ঝাঁপিয়ে নদীতে পড়ল এবং তাদের সমাধি রচিত হলো সেখানেই।
প্রতিশ্রুত অর্থ গ্রহণের জন্য তিনি যখন মেয়রের কাছে এলেন তার শতভাগ সাফল্যের পরও মেয়র মনে করলেন এই ভবঘুরে বাঁশিওয়ালার জন্য ৫০ গিল্ডারই যথেষ্ট। এমনও বললেন, আসলে এই ইঁদুর বংশীবাদক নিজেই নিয়ে এসেছে আর এসব তুকতাক দেখিয়ে চাঁদাবাজি করছে। ক্ষুব্ধ বংশীবাদক রাগ করে শহর থেকে বেরিয়ে যান। এর প্রতিশোধ তাকে নিতেই হবে।
কদিন পর ‘সাধু জন ও পল দিবসে’ বয়স্করা যখন চার্চে, সবুজ পোশাক পরা শিকারির মতো শহরে হাজির হলেন সেই বংশীবাদক। অদ্ভুত এক সুরে বাঁশি বাজাতে শুরু করলেন। এবার সুরে আকৃষ্ট হলো হ্যামেলিনের শিশুরা। ঘর ছেড়ে দ্রুত রাস্তায় নেমে এলো ১৩০ জন শিশু। তারা বংশীবাদককে অনুসরণ করতে করতে একটি পার্বত্য গুহায় ঢুকে পড়ল। তারা হারিয়ে গেল চিরদিনের জন্য। তবে একটি খোঁড়া শিশু, একটি বধির শিশু এবং একটি অন্ধ শিশু কুলিয়ে উঠতে না পেরে পেছনে পড়ে যায়। তারাই গ্রামবাসীকে অন্য শিশুদের দুর্ভাগ্যের কথা জানায়। বংশীবাদকের কাহিনীটি বিভিন্ন লেখকের হাতে বিভিন্নভাবে উঠে এসেছে। কারও মতে বংশীবাদক শিশুদের কোপেলবার্গ পাহাড়ে নিয়ে যায়, কারও মতে ট্রান্সসিলভানিয়া পাহাড়ে; কারও মতে সেখান থেকে বেসার নদীতে শিশুদের ডুবিয়ে মারেন; অপর একটি ভাষ্য হচ্ছে প্রতিশ্রুত অর্থ হাতে পাওয়ার পর এবং শিশুদের অভিভাবকদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের অর্থ পেয়ে তিনি শিশুদের শহরে ফিরিয়ে আনেন। হ্যামেলিন শহরের বাঙ্গেলোসেন্সট্রাসে নামের রাস্তাটির মানে ‘ড্রামবাদনবিহীন সড়ক’। এখানেই শেষবারের মতো শিশুদের দেখা যায়।
* * *
মন্ত্রীকে ইঁদুরের কামড়-গিরিশ চন্দ্র যাদবের আতঙ্কের কাহিনী যদি গণ ও সামাজিক মাধ্যম লুফে না নিত মন্ত্রীও আমাদের দৃষ্টির আড়ালেই থেকে যেতেন। একইভাবে হ্যামেলিনের মেয়র যদি ইঁদুর বিদায়ের পর বংশীবাদকের প্রাপ্য প্রতিশ্রুত হাজার গিল্ডার দিয়ে দিতেন তাহলে বংশীবাদক গত সাড়ে সাতশত বছরে বিস্মৃত হয়ে যেতেন। তিনি প্রতিশোধের নামে শিশু হরণ করে অমরত্বের পথ খুঁজে নিলেন। তাকে প্রতিষ্ঠা করলেন গ্যায়টে ব্রাদার্স গ্রিম, রবার্ট বাউনিং প্রমুখ। কিন্তু এই ইঁদুর কাহিনী কি সত্য? বাঁশির সুরে মাতোয়ারা হয়ে হ্যামেলিনের সব ইঁদুর সত্যিই কি নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহনন করেছে? ১২৮৪ সালের ২৬ জুন হ্যামেলিনের ১৩০ জন শিশু কি সত্যিই বংশীবাদকের সুরের টানে চিরদিনের জন্য নিরুদ্দিষ্ট হয়ে গেছে? এমন কোনো ঘটনা আদৌ ঘটেনি, পুরোটাই কল্পপুরাণ এমন দাবি এখন পর্যন্ত কেউ করেননি।
ভারত চায় কোনো বংশীবাদক এসে সার্কিট হাউজের সব ইঁদুর নিয়ে যাক। কিন্তু শিশুদের নিয়ে যাক এটা ভারত কেন পৃথিবীর কোনো দেশই চায় না। কিন্তু যখন কথা উঠল, বংশীবাদক যদি এমন একটা সুর বাজাতেন যে সুরমুগ্ধ হয়ে সব দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী তাকে অনুসরণ করে ইঁদুরের মতো নদীতে ঝাঁপিয়ে আত্মহনন করতেন, ভারত বেঁচে যেত। বাংলাদেশও বলত, কোথায় সেই বংশীবাদক?
একটি পাদটীকা : ১৯৮৪-৮৬ আমি সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসনে চাকরি করেছি। আমার কাজগুলোর একটি ছিল অতিথি ব্যবস্থাপনা। জেলাতে সার্কিট হাউজ না থাকায় বিভিন্ন দপ্তরের রেস্ট হাউজে সরকারি অতিথিদের থাকার ব্যবস্থা করতে হতো। বাহিরগোলা রোডে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একটি রেস্ট হাউজের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত একটি কক্ষে একজন মন্ত্রী অবস্থান করলেন। পরদিন সকালে আমাকে বললেন, ‘ইঁদুরের অত্যাচারে ঘুমের ব্যাঘাত হয়েছে।’ আমি দুঃখ প্রকাশ করি, তিনি আঙুল উঁচিয়ে দেখালেন পুরনো মডেলের এয়ার কন্ডিশনার যন্ত্রে কোথাও ইঁদুরের বাসা আছে, সারারাতই খসখস শব্দ করেছে। বিষয়টি কর্মকর্তাদের জানানোর আগেই এলেন আর একজন অতিথি, ১৯৮৬-এর অক্টোবরের প্রথম দিকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জি হুজুর। আমরা সরকারি নির্দেশনা পেয়েছি, প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সবার সঙ্গে সৌজন্যমূলক আচরণ এবং জেলায় অবস্থানকালে সার্কিট হাউজে (রেস্ট হাউজ) ভিআইপি মর্যাদায় থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আমি হাফেজ্জি হুজুরকে একই রেস্ট হাউজে নির্ধারিত কক্ষে এনে সবিনয়ে বলি, আমাদের সার্কিট হাউজ নেই, কষ্ট করে এখানেই থাকতে হবে। একজন অতিথি বলে গেছেন, এয়ার কন্ডিশনারের ফাঁকফোকরে সম্ভবত ইঁদুর আছে। তিনি বললেন, আমি এয়ার কন্ডিশনার চালাই না। আর ইঁদুরের তো বসবাসের অধিকার আছে। তিনি খাটে শুতে রাজি হলেন না। কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে মেঝের কার্পেটের ওপর শোয়ার আয়োজন করলেন। ইঁদুর সম্ভবত তাকে বিরক্ত করেনি। ১৯৮৬-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনিই হলেন এরশাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী, অর্থাৎ দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন।
লেখক সরকারের সাবেক কর্মকর্তা ও কলামনিস্ট