
আমাকে যারা একটু-আধটু চেনেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে সামান্য হলেও আমার লেখালেখির সঙ্গে পরিচিত, তারা জানেন বাম রাজনীতির প্রতি আমার কিঞ্চিৎ দুর্বলতা আছে। আমি এখনো বিশ্বাস করি, পুঁজির বল্গাহীন অত্যাচারের বিরুদ্ধে একমাত্র বামপন্থাই জনতাকে স্বস্তি দিতে পারে।
তবে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই, আমি যান্ত্রিকভাবে বামেদের যাবতীয় বিষয়কে মেনে নিই। বামেদের বলতে আপাতত আমি পশ্চিমবঙ্গের মূলধারার বামেদের কথা বলছি। কয়েক বছর আগে দেয়ালে লেখা হতো ‘মার্ক্সবাদ সর্বশক্তিমান, কারণ ইহা বিজ্ঞান।’ এ ধরনের উদ্ভট স্লোগান দেওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই ৩৪ বছরের বাম শাসন আক্ষরিক অর্থেই তাসের ঘরের মতো হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল।
কিছুমাত্র রাজনৈতিক দিশা ছাড়াই রাজ্যের ক্ষমতা দখল করল কংগ্রেসের ভেতরের চরমপন্থি অংশ। তৃণমূল ক্ষমতায় এলো স্রেফ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তি ক্যারিশমা ও অন্ধ সিপিআই এম বিরোধিতাকে কাজে লাগিয়ে। এখনো তৃণমূল কংগ্রেসের মূল শক্তি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন মোহিনী ভাবমূর্তি। এবং নিশ্চিতভাবেই কিছু কিছু সামাজিক প্রকল্প গ্রাম স্তরে পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু হালে মমতার অতি বড় সমর্থকও স্বীকার করবেন তৃণমূল কিছুটা হলেও আজ ব্যাকফুটে।
তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই যে, সিবিআই, ইডি, এনআইএ প্রমুখ কেন্দ্রীয় সরকারের এজেন্সি রাজনৈতিক স্বার্থে তৃণমূল দলকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলছে, যা কিছুটা ঠিক, তাহলেও গ্রামে-গঞ্জে, মফস্বলে তৃণমূল কংগ্রেসের দুর্নীতি যে চরমে উঠেছে তা একটু-আধটু খোঁজ করলেই জানা যায়। তার সঙ্গে প্রবল হয়ে উঠেছে ঔদ্ধত্য ও সীমাহীন স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতা।
তার ওপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইদানীং অনেক কর্মসূচিতেই যেভাবে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি প্রকট হচ্ছে, তাতে তৃণমূলের বড় শক্তি মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে এরই মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মুসলমানদের আরও খারাপ লেগেছে ছাত্রনেতা আনিস খানকে যেভাবে রাতের অন্ধকারে বাড়ি ঢুকে খুন করা হলো, হিন্দু বা মুসলমান বলেও নয়, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে ভালো নয়, তা চোখ-কান খোলা রাখলে যে কেউই বুঝবেন।
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠবেই যে, পরের বিধানসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের ক্ষমতায় আসতে পারবেন কি না! বিধানসভা ভোটের অবশ্য অনেক দেরি আছে। ছাব্বিশ সালে। তার আগে সেমিফাইনাল চব্বিশ সালে। লোকসভা ভোট। তারও আগে, সামনের বছর পঞ্চায়েত নির্বাচন। গ্রামের মানুষ যেদিকে, ক্ষমতাও সেদিকে; এ রকম একটা কথা অনেক দিন ধরেই এ রাজ্যে চালু রয়েছে। ফলে পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফল আগামী দিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে অল্প হলেও একটা আভাস দেবে।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসবে যদি তৃণমূল হারে তাহলে কি বিজেপি ক্ষমতায় আসবে! দেখুন, বহুদিন ধরে মিডিয়ায় আছি। ঠান্ডা ঘরে না বসে গ্রামে গ্রামে ঘুরে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে যেটুকু যা বুঝছি, তাতে বিজেপি এ রাজ্যে আসবে না। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারাও তা বোধহয় চান না। বরং ঔপনিবেশিক কায়দায় জো হুজুর কাউকে রাজ্যে বসিয়ে নিজেদের এজেন্ডা হাসিল করলে লাভ বেশি এটা বিজেপির মূল চালিকাশক্তি সংঘ পরিবারের নেতৃত্ব বোঝেন। গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবির পরেও আরএসএস নেতারা খোলাখুলি বলেছিলেন যে বিজেপি না জিতলেও আমরা চিন্তিত না। দেখতে হবে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জিতেছে কি না!
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এরই মধ্যে বলতে শুরু করেছেন যে আরএসএসএ অনেক ভালো লোক আছেন। এমনকি নরেন্দ্র মোদি ভালো। অমিত শাহ খারাপ এসব ভুলভাল কথাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন। আবেগের তোড়ে অথবা ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে তিনি ভুলে গেছেন ব্যক্তি নয়, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির কাছে বিপদ সংঘ পরিবারের মতাদর্শ।
তা ছাড়া বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে এখনো তেমন কোনো শক্তি নয়। তাদের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছেন। বিজেপি কাগুজে বাঘ। তাকে প্রবল পরাক্রমশালী আসল বাঘ করা দেখানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মিডিয়া। এ নিয়ে কোথাও কোনো সন্দেহ নেই। কোনোদিন কেউ শুনেছেন যে বিজেপির সামান্য আইন অমান্য কর্মসূচি বিভিন্ন চ্যানেলে লাইভ টেলিকাস্ট হচ্ছে। পৃথিবীর কোথাও এমন হয়!
আসলে করপোরেট পুঁজি বিনিয়োগ করে মিডিয়াকে শাসকদের পুতুল করে তুলেছে। শাপে বর হয়েছে তৃণমূলের। বিজেপির জুজু দেখিয়ে মুসলিম ও ধর্মনিরপেক্ষ ভোটের একাংশকে সংহত করা সহজ হয়ে গেছে।
আমি দীর্ঘদিন অনেক বিষয়েই পশ্চিমবঙ্গের বামেদের সমালোচনা করি। তাদের অতিরিক্ত নরম সংসদনির্ভরতা বিরক্ত লাগে। তা ছাড়া তাদের, বিশেষ করে বামফ্রন্টের বড় শরিকের রাজত্বকালের শেষ দিকে অজস্র নেতিবাচক দিক জনমনে তাদের সম্পর্কে খুব খারাপ ইমেজ তৈরি করেছিল। আমার বাম বন্ধুরা ক্ষুব্ধ হবেন। তাও না বললে মিথ্যে বলা হবে যে নিজেদের কবর নিজেরাই না খুঁড়লে, হাজার যুক্তি থাকলেও বামেদের হটিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্যমন্ত্রী হতে পারা সহজ ছিল না। বামেদের পাশ থেকে অনেক দিন ধরেই গরিব মানুষ মুখ ফেরাচ্ছিলেন। মুসলিম, আদিবাসী, দলিত জনগোষ্ঠীর বড় অংশ একদা ছিল সিপিআই এমের জন ভিত্তি। তাদের জায়গায় ক্রমে ক্রমে পার্টির নীতিনির্ধারক হয়ে উঠতে লাগল শহরের বাবু ভদ্দরলোকরা। পঞ্চায়েত, প্রশাসন হয়ে উঠল পার্টির কুক্ষিগত। পাড়ায় পাড়ায় পার্টি অফিস হয়ে উঠতে লাগল বিকল্প প্রশাসনিক দপ্তর।
তার সঙ্গে ছিল ছোট-বড়-মাঝারি নেতাদের অনেকের মধ্যে গগনচুম্বী অহংকার। পাশাপাশি আর এক বিষয় হয়ে উঠেছিল সিপিআই এমের পতনের কারণ। পার্টির মধ্যে রাজনৈতিক পড়াশোনা শিকেয় উঠেছিল। তৈলমর্দন ছিল দলে ওপরে ওঠার গুরুত্বপূর্ণ পথ। জনবিচ্ছিন্ন এই আমলাতান্ত্রিক দলকে সরাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খুব অসুবিধে হয়নি। পালাবদলের পরপরই রাতারাতি পার্টি কর্মী সমর্থক, এমনকি নেতাদের কেউ কেউ ভোল বদলে তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য হয়ে গেলেন।
তাহলে দলে থাকলেন কারা? যারা পার্টি ও বাম মতাদর্শকে ভালোবাসেন তারা। সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে ক্ষমতা চলে যাওয়ার পর যে বেনো জল চলে গেল তা একদিকে সিপিআই এমকে অনেক সংহত করেছে। গত নির্বাচনে বামেদের ভরাডুবি হয়েছে। তারা স্বাধীনতার পরে এই প্রথম একটি আসনেও জিততে পারেনি। তবুও আজ যদি আমাকে কেউ জিজ্ঞেস করেন, বামেদের অবস্থা কেমন! তারা কতটা রাজনৈতিক জমি পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে! আগামী নির্বাচনে তারা কতটা সফল হতে পারেন! জ্যোতিষী না। ওই বিদ্যের ওপর আস্থাও নেই, তাই সব প্রশ্নের উত্তর এখনই দিতে পারব না। কিন্তু এটা জোরের সঙ্গে বলতে পারি, এ মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বিরোধী পরিসরে ধীরে ধীরে উঠে আসছে সিপিআই এম ও তার জোট সঙ্গীরা।
মহম্মদ সেলিম সিপিআই এমের রাজ্য সম্পাদক হওয়ার পরপরই দলটির মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সেলিমের নেতৃত্বে গোটা দল এখন যথেষ্ট উজ্জীবিত ভূমিকায় প্রায় প্রত্যেক দিন বহুবিধ কর্মসূচি নিয়ে জেলায় জেলায় প্রশাসনকে বেকায়দায় ফেলছে। মিছিল-মিটিংয়ে ভিড় হচ্ছে চোখে পড়ার মতো।
অনেক বামপন্থি বন্ধু আক্ষেপ করে বলেন, গ্রামের গরিবরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দান-খয়রাতির লোভে এখনো শত অন্যায় দেখেও ভোট দেবে সেই তৃণমূলকেই। ভুল। সম্পূর্ণ ভুল চিন্তা। শহরে বসে রাজনীতি করার ফলে জনচেতনা সম্পর্কে এই অজ্ঞতা। আমি গ্রামে গ্রামে ঘুরি। গরিবের বড় অংশ মমতার দিক থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন। ভয়ে, আতঙ্কে তারা সেভাবে এখনো মুখ খুলতে পারছেন না। এমনকি মুসলিম ভোটারদের অনেকেই আজ বামমুখী হচ্ছেন। বিশেষ করে তরুণ, শিক্ষিত অংশ। মুসলমানদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে বুঝতে পেরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেশি বেশি করে চ-ীপাঠ থেকে দুর্গা পুজো, গঙ্গা সাগর মেলা, গণেশ চতুর্থী, রথযাত্রা, জগন্নাথ দেবের মূর্তি নির্মাণে মন দিচ্ছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অর্থনৈতিক নীতি আজ সব মহলেই সমালোচনার মুখে। ধমক-ধামক দিয়ে নিজেকে এখনো প্রাসঙ্গিক করে রাখলেও, ছবিটা বদলাচ্ছে। গ্রামে-গঞ্জে প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া বৈছে, তা স্পষ্ট। এই মৃদু হাওয়াকে ঝড়ে পরিণত করতে সিপিআই এমকে আরও অনেক পথ যেতে হবে। পথ খুবই কঠিন। ভোট করতে তৃণমূল দেবে বলে মনে হয় না। তাদের হাতে আজ প্রচুর টাকা। এ দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় টাকা সময়ে নির্ণায়ক শক্তি হয়ে ওঠে। সিপিআই এমের সামনে নিরন্তর গণ-আন্দোলন ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। আর দরকার লড়াকু কর্মীবাহিনী। ভোট লুট আটকাতে না পারলে হাজারো মিছিল-মিটিং কোনো কাজে আসবে না।
লেখক: ভারতীয় প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা ও লেখক
বাংলাদেশে সড়কে হত্যাকাণ্ড বাড়ছে। বাড়ছে গৃহের অভ্যন্তরে আত্মহত্যাও। প্রত্যেকটি আত্মহত্যাই একেকটি মর্মবিদারক ঘটনা, পরিবারের জন্য তো অবশ্যই, সমাজের জন্যও। বোঝা যায় মানুষ কতটা যন্ত্রণার ভেতর রয়েছে। ব্যবস্থাটা এমনই যে মানুষকে তার ন্যূনতম যে অধিকার বেঁচে থাকার অধিকার তারও নিশ্চয়তা দিতে সে ব্যর্থ হচ্ছে। একটি মেয়ের আত্মহত্যার ঘটনা আমাদের বিশেষভাবে মর্মাহতও করেছে।
মেয়েটি খুবই প্রাণবন্ত ছিল। হাসিখুশি থাকত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়েছে; তারপর গেছে সাংবাদিকতায়। করোনাকালে সংবাদপত্র শিল্প পড়েছে বড় ধরনের ধাক্কার মুখে, সাংবাদিকদের অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। এই মেয়েটিও যে পত্রিকায় ছিল সেখানে থাকতে পারেনি; হাজির হয়েছে একটি অনলাইন পত্রিকায়। সেখানেও সুবিধা হয়নি। পরে যোগ দিয়েছিল একটি এনজিওতে; কিন্তু কাজটা তার পছন্দ হওয়ার মতো ছিল না। তারপর মেয়েটি একটি সাহসী পদক্ষেপ নেয়। দুঃসাহসিকও বলা চলে। অনলাইনে ব্যবসা শুরু করে। ঠিক করেছে রান্নার মসলা সরবরাহ করবে বাসায় বাসায়। টাকা বিনিয়োগ করেছিল, কিন্তু যতটা বিনিয়োগ প্রয়োজন ততটা করতে পারেনি। ফলে ব্যবসাটা জমছিল না। মেয়েটির বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী, মা অসুস্থ। একটি মাত্র ভাই, সে ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। মেয়েটির বিয়ে হয়েছিল, টেকেনি। ঢাকা শহরে থাকত সে বাসাভাড়া করে। একা। নিশ্চয়ই দায়িত্ববোধ ছিল; বাবা-মাকে সাহায্য করতে পারছে না, এই বোধ তাকে পীড়া না দিয়ে ছাড়বে কেন? জীবন অবশ্যই দুঃসহ এক বোঝা হয়ে উঠেছিল তার জন্য। ক্লান্ত অবস্থায় ভারমুক্ত হয়েছে আত্মহত্যা করে।
নাকি জোর পুলিশি তদন্ত শুরু হয়েছে, কেউ তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করেছিল কি না তা নিয়ে। তদন্তে কোনো রহস্য উদঘাটিত হয়েছে কি না তা আমরা জানি না, জানার কৌতূহলও নেই; কারণ এটা তো কোনো রহস্যই নয়, আমরা পরিষ্কারই জানি যে বিদ্যমান সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থাই তাকে বেঁচে থাকতে দেয়নি। চেষ্টাও করেনি বাঁচিয়ে রাখতে। ওইখানে কোনো প্রকার রহস্য নেই। আর মেয়েটি একা তো নয়, এ রকম অসংখ্য মানুষ এখন বিষাদময় ও ক্লান্তিকর জীবনের ঘানি টানছে। আত্মহত্যা করছে না, আশা করি করবেও না, কিন্তু পৌঁছে গেছে একেবারে দ্বারপ্রান্তে।
আর এই বিষাদ ও হতাশা শুধু যে বাংলাদেশের ব্যাপার তাও তো নয়, এটি ঘটেছে বিশ্বময়। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে। এর কারণকে ব্যক্তিগত বলে ধরে নিয়ে ব্যাপারটাকে খাটো করার উপায় নেই। ব্যক্তিগত কারণ নিশ্চয়ই আছে; একই দুর্দশায় পড়ে দুজন মানুষ একই ধরনের কাজ করে না, সমান মাত্রায় বিষন্নও হয় না। কিন্তু তার বাইরে সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণ যে খুব ভালোভাবেই রয়ে গেছে সেটাকে উপেক্ষা করলে ঘটনা বোঝার ব্যাপারের ধারে-কাছেও পৌঁছাতে পারব না, তা যতই গবেষণা কিংবা তদন্ত করি না কেন।
আন্তর্জাতিক একটি গবেষণা সংস্থা তাদের এক প্রতিবেদনে মানসিক স্বাস্থ্যের ভেঙে পড়ার জন্য কয়েকটি রাজনৈতিক-সামাজিক কারণকে চিহ্নিত করেছে, দেখতে পেলাম। এক নম্বর কারণ দারিদ্র্য; দুই নম্বরে আছে সৎসঙ্গের দুর্লভতা। এরপর রয়েছে ক্ষুধা, একাকিত্ব, এবং ভালো কাজের নিশ্চয়তার অভাব। কারণগুলোর চিহ্নিতকরণ মনে হয় অযথার্থ নয়। অন্যগুলো তো রয়েছেই; কিন্তু ওই যে সৎসঙ্গের অভাব ও একাকিত্ব, এ দুটিকে বিশেষ রকমের গুরুত্ব দিতে হয়। মানুষে মানুষে বিচ্ছিন্নতা বাড়ছে; কেউ কাউকে সঙ্গ দিতে চায় না, শুধু নিজের কথাই ভাবতে ভালোবাসে, ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত হয়Ñ ক্লান্ত এবং আরও ক্লান্ত। এবং একা হয়ে পড়ে। জীবনের বোঝা বহন করাটা দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়।
এই ব্যাধির প্রতিকারের প্রশস্ত উপায় হচ্ছে আন্দোলন। সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলন। এই কথাটি দিয়ে শেষ করা যায় আমাদের এই আলোচনা। কিন্তু তার আগে আরেকটি সাম্প্রতিক প্রসঙ্গের দিকে নজর দেওয়া যাক। সেটি হলো জনশুমারির প্রতিবেদন।
এবারের জনশুমারি একটি ভালো খবর দিচ্ছে। খবরটি জনসংখ্যার বৃদ্ধিতে নিম্নগতি। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে অনুমান করা গিয়েছিল; অতটা বাড়েনি, সাড়ে ১৬ কোটিতে পৌঁছে ক্ষান্ত দিয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি না ঘটার একটি কারণ প্রজনন-হারের নিম্নগতি। অন্যটি (যেটা হয়তো সেভাবে উল্লিখিত হয়নি) মানুষের মৃত্যু। বহু মানুষ মারা গেছে। স্বাভাবিক মৃত্যু তো ছিলই, সেটা অবধারিত। কিন্তু অস্বাভাবিক মৃত্যুও ঘটেছে। যেমন সড়ক দুর্ঘটনায়; বিদেশে যাওয়ার পথে পানিতে ডুবে। বজ্রাঘাতেও প্রাণহানি ঘটেছে। হত্যা, পারিবারিক সহিংসতা, চিকিৎসার অভাব এসব ছিল। করোনা ও ডেঙ্গু উভয়কেই তৎপর অবস্থায় দেখা গেছে। আগুনে পুড়েও অনেকে চলে গেছেন।
তবে তাৎপর্যপূর্ণ হচ্ছে এই সংবাদ যে, এই প্রথমবারের মতো সংখ্যার দিক থেকে মেয়েরা ছাড়িয়ে গেছে পুরুষদের। এর একাধিক কারণ নিশ্চয়ই রয়েছে। একটা হলো বহুবিধ কষ্ট সহ্য করেও আমাদের দেশের মেয়েদের টিকে থাকার ক্ষমতা। আরেকটা কারণ, বহু পুরুষ মানুষ বিদেশে চলে গেছে, কাজের খোঁজে। মেয়েরা রয়ে গেছে। স্কুল-কলেজেও তাই মেয়েদের সংখ্যা বছরে বছরে বেড়েছে। আর অর্থনৈতিক জীবনে মেয়েদের অংশগ্রহণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি ‘আদমশুমারি’কে যে এখন জনশুমারি বলা হচ্ছে সেটাও তাৎপর্যহীন নয়; শুমারিতে আদমদের গোনা হবে, হাওয়া’রা কি বাদ? ভাষাগত সমস্যাটার এই মীমাংসাও ভালো খবর। কিন্তু তাই বলে এ কথা বলার কোনো উপায়ই নেই যে, মেয়েদের এই সংখ্যানুপাতিক অগ্রগতি বিদ্যমান পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো পরিবর্তনের বার্তা বহন করছে। না, মোটেই না। নারী নির্যাতন, যৌন হয়রানি, বাল্যবিয়ে, মজুরি-বৈষম্য, মেয়েদের কোণঠাসা করে রাখার চেষ্টাÑ সবকিছুই অব্যাহত থাকবে। অধ্যাপক যদি ছাত্রীকে বিয়ে করেন তবে সেটা কোনো খবর হবে না, কিন্তু কোনো অধ্যাপিকা যদি ছাত্রকে বিয়ে করেন তবে হইচই পড়ে যাবে, নাটোরে যেমনটা ঘটেছে। পুরুষতান্ত্রিক নানা প্রকারের চাপে ছাত্রকে বিয়ে-করা একজন অধ্যাপিকা শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করে জীবনযন্ত্রণার হাত থেকে বেঁচেছেন। এর কারণ পিতৃতান্ত্রিকতা জিনিসটা বাইরের কোনো ব্যাপার নয়, ঘটনা নয় ওপর কাঠামোগত। রাষ্ট্রীয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থার ভেতরই সে প্রোথিত; পুঁজিবাদী অর্থনীতি ও মতাদর্শের সঙ্গে এর সম্পর্ক একেবারেই অবিচ্ছেদ্য।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সারা পৃথিবীতেই স্পষ্ট। একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ পৃথিবীর সবকিছু যেন ওলটপালট করে দিচ্ছে, আর বারবারই মনে করিয়ে দিচ্ছে এ অবস্থার জন্য কারা দায়ী ও ক্ষতিগ্রস্ত কারা। ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীকে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি এজন্য প্রাসঙ্গিক যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো প্রতিনিয়ত তাদের জীবনকে যেমন দুর্বিষহ করে তুলছে, তেমনি ধীরে ধীরে দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর করছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে দরিদ্রতার যোগ সরাসরি, এই রূঢ় বাস্তবতা অতিসম্প্রতি দেখতে পাচ্ছি সুনামগঞ্জ ও সিলেট অঞ্চলে। এবারের নজিরবিহীন বন্যা ওই অঞ্চলের মানুষের সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলোচনায় সাধারণত দুর্যোগ মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমন ইত্যাদি সম্পর্কিত আলোচনাই বেশি থাকে, যা পদ্ধতিগতভাবে বেশ কিছুটা তাত্ত্বিক কিন্তু বেশি আলোচিত হওয়া উচিত এর ফলাফল নিয়ে, এবং এর কেন্দ্রে থাকা মানুষদের নিয়ে, অবশ্যই যারা সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী তাদের নিয়ে। জলবায়ু পরিবর্তনের ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় এই জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল, জীবন-জীবিকা ও জীবনধারায় ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসতে বাধ্য করে। আর প্রয়োজনীয় সহযোগিতার অভাবে ধীরে ধীরে তারা দরিদ্র থেকে আরও দরিদ্রতর হয়। আর এ অবস্থাই তাকে সম্ভাবনাময় সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রাণীর পক্ষান্তরে জীবন রক্ষায় অর্থনৈতিক দাসে রূপান্তর করে। যার সহজ কিছু দৃষ্টান্ত নদীভাঙনের শিকার মানুষের শহরমুখিতায়, একইভাবে নোনাজলের প্রভাবে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর বাস্তুচ্যুত ও সহায়-সম্বলহীন হওয়া যেন এই বাস্তবতারই প্রতিচ্ছবি। অন্যদিকে ঋতুচক্রের পরিবর্তন প্রচলিত কৃষি ও কৃষি-পদ্ধতির পরিবর্তন শুধু খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রেই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে না, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় ব্যাপক প্রান্তিকতা তৈরি করছে। আর এ বিষয়গুলো যতটা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত তার থেকে কোনো অংশে কম নয় মানবাধিকারের সঙ্গে এর যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া।
এ সময় সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাচ্ছে। এই পরিকল্পনায় বাংলাদেশকে জলবায়ুগত পার্থক্য বিবেচনায় এগারোটি অঞ্চলে বিভক্ত এবং চৌদ্দটি বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ চিহ্নিত করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সুনাম সারা পৃথিবীতে সমাদৃত। কিন্তু দুর্যোগ মোকাবিলা করে বেঁচে থাকা আর দুর্যোগ মোকাবিলা করে উত্তরোত্তর এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে কিছু সক্ষমতা ও সামর্থ্যগত পার্থক্য আছে। দুর্যোগ মোকাবিলা করে বেঁচে থাকাই যথেষ্ট না, বরং প্রশ্ন হচ্ছে দুর্যোগ মোকাবিলা করে মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকা যাচ্ছে কি না যেখানে এই জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজনীয় রসদ, সেবা ও এর কার্যকর ব্যবস্থাপনাই মুখ্য।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীর যে অধিকারহীনতা তৈরি হয়, তার নিশ্চয়তা বিধান করাই জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত আলোচনার মুখ্য বিষয় হওয়া উচিত। কারণ অধিকারহীনতাই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে আরও বেশি প্রান্তিক করে তোলে। শুধু দুর্যোগের মধ্যে টিকে থাকা না, ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকার রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপদ আবাসন, কর্মসংস্থান ও কৃষি, সুপেয় পানি ইত্যাদির নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে এবং এজন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। এখানেই ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীর প্রতি ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সামনে চলে আসে। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী না হলেও এরাই সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী।
আমরা সবাই জানি বিশ্বের ধনী দেশগুলো গত ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে প্রকৃতির নির্বিচার শোষণের মাধ্যমে, শিল্পবিপ্লব নামক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিজেদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এনেছে। তাদের এই নির্বিচার
প্রকৃতিবিনাশী কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে জলবায়ুর পরিবর্তন ত্বরান্বিত হচ্ছে এবং ভুক্তভোগী দেশগুলোর দরিদ্র জনগোষ্ঠী মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার শিকার হচ্ছে। আর এদের সহযোগিতা নিশ্চিত করার জন্য দায়ী দেশগুলোকে জবাবদিহি করতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো ক্ষতিপূরণ আদায়ে উন্নত দেশগুলোর কাছে দাবি করে আসছিল। এর অগ্রগতি সামান্য। তবে আশার কথা হলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর কিছুটা স্বীকৃতি আসতে শুরু করেছে। গত বছরের গ্লাসগো বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের সময়ে স্কটল্যান্ড সরকার সর্বপ্রথম ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সাহায্যের প্রস্তাব করে। সর্বশেষ অতিসম্প্রতি ডেনমার্ক জাতিসংঘের প্রথম সদস্য হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিপূরণ প্রদানে প্রতিশ্রুতি দেয়। তর পরও পুনঃপুন দাবি সত্ত্বেও উন্নত ও জীবাশ্ম জ্বালানি-সমৃদ্ধ দেশগুলো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অভিযোজনে সহায়তার বিষয়টিতে যেমন সহযোগিতা করছে না, একই সঙ্গে ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টিও এড়িয়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে এবারের (২০২২) সাধারণ পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশনে জাতিসংঘের মহাসচিব তার ভাষণে উন্নত দেশগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলোর ওপর বেশি বেশি কর আরোপের কথা বলেছেন, যাতে দুর্গত দেশগুলোকে সাহায্য করা যায়। তবে শুধু জীবাশ্ম কোম্পানিগুলোই একমাত্র সুফলভোগী না, ধনী দেশগুলোও এর সুফলভোগী। আবার এদের মধ্যে যে দেশগুলো ধীরে ধীরে কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বের হয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এদের অনেকেই আবার কয়লায় ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়লার মজুদ শুরু করেছে।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর ক্ষতিপূরণে ধীরে ধীরে বহুপক্ষীয় উদ্যোগ কিছুটা হলেও সক্রিয় হচ্ছে। জাতিসংঘ এই প্রথম একজন বিশেষ প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়েছে যিনি জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মানবাধিকারের উন্নয়ন ও সুরক্ষা পর্যালোচনা করে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল এ প্রতিবেদন পেশ করবেন। গত ৪ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ এই বিশেষ প্রতিবেদক বাংলাদেশের বিভিন্ন জলবায়ু দুর্গত অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন। তিনি তার প্রাথমিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে তাদের বাড়িঘর ছাড়তে হচ্ছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অন্য অঞ্চলে এবং আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করতে বাধ্য হচ্ছে। নারী, বয়স্ক ব্যক্তি ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তিনি তার প্রাথমিক প্রতিবেদনে যে সুপারিশ প্রদান করেছেন সেখানে বলেছেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কিত একটি তহবিল গঠন করা দরকার, পাশাপাশি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার সংরক্ষণে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ে উন্নত দেশগুলো থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের পাশাপাশি এই জনগোষ্ঠীর প্রতি দেশ ও সরকারের ভূমিকাও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আর এজন্য ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীকে কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হচ্ছে সেটা যেমন বিবেচ্য, পাশাপাশি তাদের জন্য পরিকল্পনা কী তাও বিশেষভাবে বিবেচনা পাওয়ার দাবি রাখে। আর এখানেই তাদের জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের বিষয়টি সামনে চলে আসে। এবারের সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা কিংবা উপকূলীয় অঞ্চলে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে মানুষের সম্পদের যে ক্ষয়ক্ষতি তা মোকাবিলায় বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। এজন্য ওই অঞ্চলের সেবা সংস্থাসমূহকে এমনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে যে তারা জলবায়ু পরিবর্তনের এই বিরূপ পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করতে তো পারবেই পাশাপাশি প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধা ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে কাক্সিক্ষত পরিবর্তনের পথ নিশ্চিত করবে।
লেখক : উন্নয়নকর্মী
বিভিন্ন সময় দেশে জনপরিসরে প্রশাসনিক নির্বাহী বা আমলাদের আচরণ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে কোনো কোনো ঘটনার খবর পরিবেশিত হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে নাগরিক পরিসর থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অঙ্গনেও তা আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারকে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ওপর অনেকাংশেই নির্ভর করতে হয়। মূলত সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তাদের ভূমিকাই থাকে মুখ্য। ফলে শাসনব্যবস্থায় দেশের রাজনৈতিক নির্বাহীরা বেশি মাত্রায় প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ওপর বা আমলাতন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কাছাকাছি সময়েই দেশে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্থানীয় রাজনীতিকদের সংঘাত নিয়েও রাজনীতিবিদ ও আমলাদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি দৃশ্যমান হয়েছে। এই বিভক্তি নিরসনে শীর্ষ পর্যায় থেকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ঘটনায় সাধারণ জনগণের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আচরণকে অনেকে ঔপনিবেশিক বলেও অভিযোগ করেন। ১৯৭৫ সালে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘সরকারি কর্মচারীদের বলি, মনে রেখো এটা স্বাধীন দেশ। এটা ব্রিটিশের কলোনি নয়। পাকিস্তানের কলোনি নয়। ঘুণে ধরা ইংরেজ আমলের, পাকিস্তানি আমলের যে শাসনব্যবস্থা তা চলতে পারে না।’ মূলত আমলাদের সাধারণের সঙ্গে ঔদ্ধত্য ও দুর্নীতিগ্রস্ততার কারণে তিনি এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন। সরকারি কর্তাব্যক্তিদের এসব আচরণ প্রকারান্তরে সরকারকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।
সম্প্রতি স্থানীয় প্রশাসনের বিশেষ করে কয়েকজন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) আচরণ আবারও সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। রবিবার দেশ রূপান্তরে ‘টুর্নামেন্টের ট্রফি আছড়ে ভাঙলেন ইউএনও’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্রে জনপরিসরে সরকারি কর্মকর্তাদের আচরণের বিষয়টি ফের সামনে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত শুক্রবার একটি ফুটবল টুর্নামেন্টের সমাপনী বক্তব্যের সময় হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে উপস্থিত সবার সামনে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলের ট্রফি আছড়ে ভেঙে ফেলেন আলীকদমের ইউএনও মেহরুবা ইসলাম। ঘটনার একটি ভিডিও ক্লিপ ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ইউএনওকে নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। এমন আচরণ করায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় একাধিক জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। যদিও ইউএনও দাবি করেছেন, ‘বক্তব্য রাখার সময় টাইব্রেকার নিয়ে হট্টগোল হচ্ছিল। ওরাই বলেছে ট্রফিটা ভেঙে ফেলা হোক। তাই ভেঙে ফেলা হয়েছে।’ পরিস্থিতি যাই হোক, প্রশ্ন হলো ইউএনও কি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জনসম্মুখে বক্তব্যদানরত অবস্থায় এ ধরনের আচরণ করতে পারেন? এই দৃশ্য কি সরকারি কর্মকর্তাদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধি ও ভাবমূর্তির সঙ্গে যায়? বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজি এ বিষয়ে বলেছেন, ‘এ রকম আচরণ করার কথা নয়। বিতর্ক থাকলে ট্রফি না ভেঙে নিজের হেফাজতে রেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারতেন।’ অন্যদিকে, বগুড়া সদরের ইউএনও সমর কুমার পালের বিরুদ্ধে এলজিইডির চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারীকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় এসএসসির পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ইউএনও দীপক কুমার দেব শর্মাকে কারণ দর্শাও (শোকজ) নোটিস দেওয়া হয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তারাই সময় ও প্রয়োজন অনুসারে তাদের চরিত্র এবং আচরণগত পরিবর্তন এনেছেন কালে কালে। অন্যদিকে, জনপ্রশাসনের সব ক্যাডার সার্ভিসের মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের একাধিপত্য এবং অন্যান্য ক্যাডারের প্রতি বৈষম্যের বিষয়টি নিয়েও দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে। এমন অভিযোগ রয়েছে যে, প্রশাসনের ক্যাডাররা অন্য ক্যাডার যেমন শিক্ষা, চিকিৎসা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মূল্যায়নই করেন না। অবশ্য দীর্ঘ ৩৯ বছর পর প্রশাসনিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে সব মন্ত্রণালয়ের অর্গানোগ্রাম হালনাগাদ করার প্রয়াস নিয়েছে সরকার। কিন্তু তার সুফল দৃশ্যমান নয়। যদিও আন্তঃক্যাডার তো বটেই, সেবা নিতে আসা সাধারণ জনগণ এবং জনপরিসরে আমলাদের বিশেষ করে স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের আচরণ কী হবে, সে বিষয়ে দেশে-বিদেশে তারা প্রশিক্ষণ নেন। তারপরও এসব প্রশিক্ষণ কেন ব্যর্থ হচ্ছে এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সৃষ্ট এসব আচরণগত সমস্যা বারবার কেন আলোচনায় আসছে তা নিয়ে ভাবতে হবে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর্মকর্তাদের ‘আচার-ব্যবহারের’ বাস্তবভিত্তিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে কেবল প্রশাসনের কিছু কর্তাব্যক্তির আচরণের জন্যই সরকারের অনেক ভালো উদ্যোগ নস্যাৎ হয়ে যেতে পারে। ইউএনওদের অনেকে অভিযোগ করেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা শিক্ষা-সংস্কৃতি-আচরণে পশ্চাৎপদ। সেটা হতেই পারে, তবে কর্মকর্তাদের বুঝতে হবে জনপ্রতিনিধিরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত। ফলে তাদের সঠিক মূল্যায়ন করে এবং তাদের সঙ্গে নিয়েই সরকারের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম ঔপনিবেশিক মানসিকতামুক্ত, দক্ষ, মেধাসম্পন্ন ও সৃজনশীল জনপ্রশাসন গড়ার ওপর প্রধানমন্ত্রীও গুরুত্বারোপ করেছেন। মূলকথা হলো প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের নিজেদের ‘প্রশাসক’ আর জনগণকে তাদের প্রজা বা অধীনস্থ ভাবার মানসিকতা থেকে মুক্ত হতে হবে। অন্য ক্যাডার, জনপ্রতিনিধি, সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে চলার মানসিকতা থাকতে হবে।
১৯৮৯ সালের এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন সংগীতশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। জন্ম ১৯২০ সালের ১৬ জুন ভারতের কাশীতে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যান। কিন্তু তিনি সংগীতের জন্য অধ্যয়ন ত্যাগ করেন। তার সাহিত্যিক হওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিছুদিন তিনি দেশ পত্রিকার জন্য লেখেন। শৈলেশ দাসগুপ্তর সাহায্যে হেমন্তর প্রথম গান করেন ১৯৩৫ সালে। ১৯৩৭ সালে তিনি গ্রামোফোন রেকর্ড ঈড়ষঁসনরধ লেবেলে জানিতে যদি গো তুমি ও বলো গো বলো মোরে গানগুলো করেন। এরপর থেকে প্রতি বছর তিনি গ্রামোফোন কোম্পানি অব ইন্ডিয়ার জন্য গান রেকর্ড করেছেন। ১৯৪০ সালে সংগীতপরিচালক কমল দাসগুপ্ত হেমন্তকে দিয়ে ফাইয়াজ হাস্মির কথায় কিতনা দুঃখ ভুলায়া তুমনে ও প্রীত নিভানেভালি গাওয়ান। প্রথম ছায়াছবির গান তিনি গেয়েছেন ‘নিমাই সন্ন্যাস’ ছবির জন্য। ১৯৪৭ সালে ‘অভিযাত্রী’ সিনেমায় সংগীত পরিচালনা করেন। আধুনিক গান ছাড়াও হেমন্ত মুখোপাধ্যায় রবীন্দ্রসংগীত ও রজনীকান্তের গান গেয়েছেন। স্বীকৃতি হিসেবে বিভিন্ন পুরস্কারের পাশাপাশি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেয়েছেন সম্মানসূচক ডি.লিট।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
সফররত চীনের ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইডংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। বৈঠকে রোহিঙ্গা, কানেকটিভিটি, ইন্দো-প্যাসিফিক ও বৈশ্বিক উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অনলাইন জুয়া এবং মাদক পাচারের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষমতা তৈরিতে বাংলাদেশকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। আর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ ও চীনের পররাষ্ট্র সচিবপর্যায়ের বৈঠকে দুই দেশের পক্ষ থেকে এসব প্রস্তাব এসেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে ওয়েইডংয়ের দুই দদফা বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন চীনা ভাইস মিনিস্টার। তবে বৈঠক শেষে ঢাকা কিংবা চীন কোনো পক্ষই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেনি।
বৈঠক শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মা থেকে পররাষ্ট্র সচিব ও চীনা ভাইস মিনিস্টার প্রতিনিধিদল নিয়ে বের হন। সেখান থেকে ওয়েইডং যান পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে। সেখানে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তরের সামনে চীনের একটি প্রতিনিধিদল পদ্মা সেতু নিয়ে ভাইস মিনিস্টারকে চায়নিজ ভাষায় বিস্তারিত ব্রিফ করেন। ব্রিফ শেষে গাড়ি নিয়ে পদ্মা সেতুতে ওঠেন ওয়েইডং এবং তার সঙ্গে থাকা প্রতিনিধিদল। সঙ্গে ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনতো।
রোহিঙ্গা ইস্যু : বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব উঠেছে। কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে মধ্যস্থতাকারী দেশ হিসেবে কাজ করে আসছে চীন। ভাইস মিনিস্টার ওয়েইডংয়ের সফর মূলত গত ১৮ এপ্রিল রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ-চীন বৈঠকের ফলোআপ। একই সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ইতিমধ্যে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সমঝোতা করাতে পেরেছে চীন। এরপর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে প্রমাণ করতে পারলে সেটি চীনের জন্য ভালো একটি অর্জন হবে। সেজন্য চীনের বিশেষ আগ্রহ আছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে। এ ছাড়া তারা এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা চায়।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বৈঠকে ভাইস মিনিস্টার উল্লেখ করেন, রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন বাংলাদেশ ও মিয়ানমার এবং সমগ্র অঞ্চলের জন্য উপকার হবে। পাইলট প্রজেক্টের প্রথম ব্যাচের প্রত্যাবাসনের সুবিধার্থে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নিজ নিজ প্রতিনিধিদের মিয়ানমারে “যান এবং দেখুন” এবং বাংলাদেশে “আসুন এবং কথা বলুন” সফরের ব্যবস্থা করার জন্য বাংলাদেশের উদ্যোগের প্রশংসা করেছে চীনা পক্ষ।’
জিডিআই : বৈঠকে চীনের নতুন বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভে (জিডিআই) বাংলাদেশকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
গত বছরের আগস্টে চীনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ঢাকা সফরের সময় জিডিআই বিষয়ে বাংলাদেশকে অবহিত করেন। জিডিআই উদ্যোগে বাংলাদেশ যুক্ত হোক, চীন এটি চায় এবং এ বিষয়ে তারা বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় আলোচনা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, উভয় পক্ষ চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের পৃষ্ঠপোষকতায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সংযোগে বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। উভয় পক্ষ বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে নিয়মিত স্টাফপর্যায়ের আলোচনা ও বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছে।
দুই দেশের মধ্যে সফর করার প্রস্তাব : উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সফরে চীনের আগ্রহের বিষয়টি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর করেছিলেন। এরপর আর কোনো উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সফর হয়নি। এ বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছে বেইজিং কর্র্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, সান ওয়েইডংকে গত নভেম্বরে এশিয়াবিষয়ক ভাইস মিনিস্টার হিসেবে পদায়ন করা হয়। এর আগে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকায় ভাইস মিনিস্টার হিসেবে এটি তার প্রথম সফর। তবে ১০ বছর আগে তিনি ভিন্ন পদে বাংলাদেশ সফর করেছেন।
আজ রবিবার চীনের ভাইস মিনিস্টার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। গত শুক্রবার রাতে প্রতিনিধিদল নিয়ে ঢাকায় পৌঁছান চীনের ভাইস মিনিস্টার ওয়েইডং। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইস্ট এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক অনুবিভাগের মহাপরিচালক তৌফিক হাসান এবং ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে চীনা ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইডং উল্লেখ করেন, তিনি ১০ বছর পর বাংলাদেশ সফর করছেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন অর্জন দেখে খুবই মুগ্ধ। উভয় প্রতিনিধিদল পারস্পরিক স্বার্থ এবং বহুপক্ষীয় ফোরামে সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে। চীনা পক্ষ ‘এক চীননীতি’তে অব্যাহত সমর্থনের জন্য বাংলাদেশের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতা পুনর্ব্যক্ত করেছে। তারা সাম্প্রতিক উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক বৈঠক বিনিময় স্মরণ করেছেন, যা সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারত্বকে আরও গভীর করেছে।
এতে আরও বলা হয়, বৈঠকে কভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় চীনের টিকা সহায়তার জন্য বাংলাদেশ আবারও ধন্যবাদ জানিয়েছে। উভয় পক্ষ বাংলাদেশের বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে। এ সময় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল এবং পদ্মা সেতু রেল সংযোগের মতো মেগা প্রকল্পের আসন্ন উদ্বোধনকে স্বাগত জানায় চীন।
উভয় পক্ষই বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাতে কয়েকটি অতিরিক্ত প্রকল্প প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছে। এ ছাড়া গত বছর ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া ৯৮ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা ব্যবহার করে চীনে রপ্তানি বাড়ানোর উপায় নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চীনা পক্ষ গ্রীষ্মকালীন ফল আমদানিতে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা বাংলাদেশ থেকে আম, কাঁঠাল, পেয়ারা এবং হিমায়িত খাবার আমদানিতে আগ্রহী। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চীনের সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা কমাতে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধার আওতায় শাকসবজি, ওষুধ, কাঁচা চামড়া, ফুটওয়্যার, পোশাক ইত্যাদির মতো অন্যান্য রপ্তানি আইটেম অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, চীনা ভাইস মিনিস্টার চট্টগ্রামে চীনা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে চীনা কোম্পানির বিনিয়োগে উৎসাহিত করার আশ্বাস দেন। তারা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ঢাকা-গুয়াংঝু সরাসরি ফ্লাইট আবার চালুর জন্য চীনা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্র্তৃপক্ষের সঙ্গে সময়মতো আলোচনার পরামর্শ দেন। বিশেষ করে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা-সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে উভয় পক্ষ নিয়মিত কনস্যুলার পরামর্শ চালু করতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশ ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং বায়োটেকনোলজিতে উদ্ভাবনের বিষয়ে চীনের সঙ্গে একত্রে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এতে আরও বলা হয়, জননিরাপত্তা ইস্যুতে সংলাপ আয়োজনে দুই পক্ষ নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আবহাওয়া স্যাটেলাইটের তথ্য শেয়ার করার জন্য বাংলাদেশ চীনকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। চীনা পক্ষ বাংলাদেশ থেকে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ, টেকসই এবং স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।