
বিভিন্ন সময় দেশে জনপরিসরে প্রশাসনিক নির্বাহী বা আমলাদের আচরণ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে কোনো কোনো ঘটনার খবর পরিবেশিত হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে নাগরিক পরিসর থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অঙ্গনেও তা আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারকে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ওপর অনেকাংশেই নির্ভর করতে হয়। মূলত সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তাদের ভূমিকাই থাকে মুখ্য। ফলে শাসনব্যবস্থায় দেশের রাজনৈতিক নির্বাহীরা বেশি মাত্রায় প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ওপর বা আমলাতন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কাছাকাছি সময়েই দেশে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্থানীয় রাজনীতিকদের সংঘাত নিয়েও রাজনীতিবিদ ও আমলাদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি দৃশ্যমান হয়েছে। এই বিভক্তি নিরসনে শীর্ষ পর্যায় থেকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ঘটনায় সাধারণ জনগণের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আচরণকে অনেকে ঔপনিবেশিক বলেও অভিযোগ করেন। ১৯৭৫ সালে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘সরকারি কর্মচারীদের বলি, মনে রেখো এটা স্বাধীন দেশ। এটা ব্রিটিশের কলোনি নয়। পাকিস্তানের কলোনি নয়। ঘুণে ধরা ইংরেজ আমলের, পাকিস্তানি আমলের যে শাসনব্যবস্থা তা চলতে পারে না।’ মূলত আমলাদের সাধারণের সঙ্গে ঔদ্ধত্য ও দুর্নীতিগ্রস্ততার কারণে তিনি এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন। সরকারি কর্তাব্যক্তিদের এসব আচরণ প্রকারান্তরে সরকারকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।
সম্প্রতি স্থানীয় প্রশাসনের বিশেষ করে কয়েকজন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) আচরণ আবারও সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। রবিবার দেশ রূপান্তরে ‘টুর্নামেন্টের ট্রফি আছড়ে ভাঙলেন ইউএনও’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্রে জনপরিসরে সরকারি কর্মকর্তাদের আচরণের বিষয়টি ফের সামনে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত শুক্রবার একটি ফুটবল টুর্নামেন্টের সমাপনী বক্তব্যের সময় হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে উপস্থিত সবার সামনে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলের ট্রফি আছড়ে ভেঙে ফেলেন আলীকদমের ইউএনও মেহরুবা ইসলাম। ঘটনার একটি ভিডিও ক্লিপ ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ইউএনওকে নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। এমন আচরণ করায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় একাধিক জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। যদিও ইউএনও দাবি করেছেন, ‘বক্তব্য রাখার সময় টাইব্রেকার নিয়ে হট্টগোল হচ্ছিল। ওরাই বলেছে ট্রফিটা ভেঙে ফেলা হোক। তাই ভেঙে ফেলা হয়েছে।’ পরিস্থিতি যাই হোক, প্রশ্ন হলো ইউএনও কি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জনসম্মুখে বক্তব্যদানরত অবস্থায় এ ধরনের আচরণ করতে পারেন? এই দৃশ্য কি সরকারি কর্মকর্তাদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধি ও ভাবমূর্তির সঙ্গে যায়? বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজি এ বিষয়ে বলেছেন, ‘এ রকম আচরণ করার কথা নয়। বিতর্ক থাকলে ট্রফি না ভেঙে নিজের হেফাজতে রেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারতেন।’ অন্যদিকে, বগুড়া সদরের ইউএনও সমর কুমার পালের বিরুদ্ধে এলজিইডির চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারীকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় এসএসসির পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ইউএনও দীপক কুমার দেব শর্মাকে কারণ দর্শাও (শোকজ) নোটিস দেওয়া হয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তারাই সময় ও প্রয়োজন অনুসারে তাদের চরিত্র এবং আচরণগত পরিবর্তন এনেছেন কালে কালে। অন্যদিকে, জনপ্রশাসনের সব ক্যাডার সার্ভিসের মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের একাধিপত্য এবং অন্যান্য ক্যাডারের প্রতি বৈষম্যের বিষয়টি নিয়েও দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে। এমন অভিযোগ রয়েছে যে, প্রশাসনের ক্যাডাররা অন্য ক্যাডার যেমন শিক্ষা, চিকিৎসা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মূল্যায়নই করেন না। অবশ্য দীর্ঘ ৩৯ বছর পর প্রশাসনিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে সব মন্ত্রণালয়ের অর্গানোগ্রাম হালনাগাদ করার প্রয়াস নিয়েছে সরকার। কিন্তু তার সুফল দৃশ্যমান নয়। যদিও আন্তঃক্যাডার তো বটেই, সেবা নিতে আসা সাধারণ জনগণ এবং জনপরিসরে আমলাদের বিশেষ করে স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের আচরণ কী হবে, সে বিষয়ে দেশে-বিদেশে তারা প্রশিক্ষণ নেন। তারপরও এসব প্রশিক্ষণ কেন ব্যর্থ হচ্ছে এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সৃষ্ট এসব আচরণগত সমস্যা বারবার কেন আলোচনায় আসছে তা নিয়ে ভাবতে হবে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর্মকর্তাদের ‘আচার-ব্যবহারের’ বাস্তবভিত্তিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে কেবল প্রশাসনের কিছু কর্তাব্যক্তির আচরণের জন্যই সরকারের অনেক ভালো উদ্যোগ নস্যাৎ হয়ে যেতে পারে। ইউএনওদের অনেকে অভিযোগ করেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা শিক্ষা-সংস্কৃতি-আচরণে পশ্চাৎপদ। সেটা হতেই পারে, তবে কর্মকর্তাদের বুঝতে হবে জনপ্রতিনিধিরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত। ফলে তাদের সঠিক মূল্যায়ন করে এবং তাদের সঙ্গে নিয়েই সরকারের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম ঔপনিবেশিক মানসিকতামুক্ত, দক্ষ, মেধাসম্পন্ন ও সৃজনশীল জনপ্রশাসন গড়ার ওপর প্রধানমন্ত্রীও গুরুত্বারোপ করেছেন। মূলকথা হলো প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের নিজেদের ‘প্রশাসক’ আর জনগণকে তাদের প্রজা বা অধীনস্থ ভাবার মানসিকতা থেকে মুক্ত হতে হবে। অন্য ক্যাডার, জনপ্রতিনিধি, সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে চলার মানসিকতা থাকতে হবে।
বাংলাদেশে সড়কে হত্যাকাণ্ড বাড়ছে। বাড়ছে গৃহের অভ্যন্তরে আত্মহত্যাও। প্রত্যেকটি আত্মহত্যাই একেকটি মর্মবিদারক ঘটনা, পরিবারের জন্য তো অবশ্যই, সমাজের জন্যও। বোঝা যায় মানুষ কতটা যন্ত্রণার ভেতর রয়েছে। ব্যবস্থাটা এমনই যে মানুষকে তার ন্যূনতম যে অধিকার বেঁচে থাকার অধিকার তারও নিশ্চয়তা দিতে সে ব্যর্থ হচ্ছে। একটি মেয়ের আত্মহত্যার ঘটনা আমাদের বিশেষভাবে মর্মাহতও করেছে।
মেয়েটি খুবই প্রাণবন্ত ছিল। হাসিখুশি থাকত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়েছে; তারপর গেছে সাংবাদিকতায়। করোনাকালে সংবাদপত্র শিল্প পড়েছে বড় ধরনের ধাক্কার মুখে, সাংবাদিকদের অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। এই মেয়েটিও যে পত্রিকায় ছিল সেখানে থাকতে পারেনি; হাজির হয়েছে একটি অনলাইন পত্রিকায়। সেখানেও সুবিধা হয়নি। পরে যোগ দিয়েছিল একটি এনজিওতে; কিন্তু কাজটা তার পছন্দ হওয়ার মতো ছিল না। তারপর মেয়েটি একটি সাহসী পদক্ষেপ নেয়। দুঃসাহসিকও বলা চলে। অনলাইনে ব্যবসা শুরু করে। ঠিক করেছে রান্নার মসলা সরবরাহ করবে বাসায় বাসায়। টাকা বিনিয়োগ করেছিল, কিন্তু যতটা বিনিয়োগ প্রয়োজন ততটা করতে পারেনি। ফলে ব্যবসাটা জমছিল না। মেয়েটির বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী, মা অসুস্থ। একটি মাত্র ভাই, সে ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। মেয়েটির বিয়ে হয়েছিল, টেকেনি। ঢাকা শহরে থাকত সে বাসাভাড়া করে। একা। নিশ্চয়ই দায়িত্ববোধ ছিল; বাবা-মাকে সাহায্য করতে পারছে না, এই বোধ তাকে পীড়া না দিয়ে ছাড়বে কেন? জীবন অবশ্যই দুঃসহ এক বোঝা হয়ে উঠেছিল তার জন্য। ক্লান্ত অবস্থায় ভারমুক্ত হয়েছে আত্মহত্যা করে।
নাকি জোর পুলিশি তদন্ত শুরু হয়েছে, কেউ তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করেছিল কি না তা নিয়ে। তদন্তে কোনো রহস্য উদঘাটিত হয়েছে কি না তা আমরা জানি না, জানার কৌতূহলও নেই; কারণ এটা তো কোনো রহস্যই নয়, আমরা পরিষ্কারই জানি যে বিদ্যমান সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থাই তাকে বেঁচে থাকতে দেয়নি। চেষ্টাও করেনি বাঁচিয়ে রাখতে। ওইখানে কোনো প্রকার রহস্য নেই। আর মেয়েটি একা তো নয়, এ রকম অসংখ্য মানুষ এখন বিষাদময় ও ক্লান্তিকর জীবনের ঘানি টানছে। আত্মহত্যা করছে না, আশা করি করবেও না, কিন্তু পৌঁছে গেছে একেবারে দ্বারপ্রান্তে।
আর এই বিষাদ ও হতাশা শুধু যে বাংলাদেশের ব্যাপার তাও তো নয়, এটি ঘটেছে বিশ্বময়। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে। এর কারণকে ব্যক্তিগত বলে ধরে নিয়ে ব্যাপারটাকে খাটো করার উপায় নেই। ব্যক্তিগত কারণ নিশ্চয়ই আছে; একই দুর্দশায় পড়ে দুজন মানুষ একই ধরনের কাজ করে না, সমান মাত্রায় বিষন্নও হয় না। কিন্তু তার বাইরে সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণ যে খুব ভালোভাবেই রয়ে গেছে সেটাকে উপেক্ষা করলে ঘটনা বোঝার ব্যাপারের ধারে-কাছেও পৌঁছাতে পারব না, তা যতই গবেষণা কিংবা তদন্ত করি না কেন।
আন্তর্জাতিক একটি গবেষণা সংস্থা তাদের এক প্রতিবেদনে মানসিক স্বাস্থ্যের ভেঙে পড়ার জন্য কয়েকটি রাজনৈতিক-সামাজিক কারণকে চিহ্নিত করেছে, দেখতে পেলাম। এক নম্বর কারণ দারিদ্র্য; দুই নম্বরে আছে সৎসঙ্গের দুর্লভতা। এরপর রয়েছে ক্ষুধা, একাকিত্ব, এবং ভালো কাজের নিশ্চয়তার অভাব। কারণগুলোর চিহ্নিতকরণ মনে হয় অযথার্থ নয়। অন্যগুলো তো রয়েছেই; কিন্তু ওই যে সৎসঙ্গের অভাব ও একাকিত্ব, এ দুটিকে বিশেষ রকমের গুরুত্ব দিতে হয়। মানুষে মানুষে বিচ্ছিন্নতা বাড়ছে; কেউ কাউকে সঙ্গ দিতে চায় না, শুধু নিজের কথাই ভাবতে ভালোবাসে, ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত হয়Ñ ক্লান্ত এবং আরও ক্লান্ত। এবং একা হয়ে পড়ে। জীবনের বোঝা বহন করাটা দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়।
এই ব্যাধির প্রতিকারের প্রশস্ত উপায় হচ্ছে আন্দোলন। সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলন। এই কথাটি দিয়ে শেষ করা যায় আমাদের এই আলোচনা। কিন্তু তার আগে আরেকটি সাম্প্রতিক প্রসঙ্গের দিকে নজর দেওয়া যাক। সেটি হলো জনশুমারির প্রতিবেদন।
এবারের জনশুমারি একটি ভালো খবর দিচ্ছে। খবরটি জনসংখ্যার বৃদ্ধিতে নিম্নগতি। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে অনুমান করা গিয়েছিল; অতটা বাড়েনি, সাড়ে ১৬ কোটিতে পৌঁছে ক্ষান্ত দিয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি না ঘটার একটি কারণ প্রজনন-হারের নিম্নগতি। অন্যটি (যেটা হয়তো সেভাবে উল্লিখিত হয়নি) মানুষের মৃত্যু। বহু মানুষ মারা গেছে। স্বাভাবিক মৃত্যু তো ছিলই, সেটা অবধারিত। কিন্তু অস্বাভাবিক মৃত্যুও ঘটেছে। যেমন সড়ক দুর্ঘটনায়; বিদেশে যাওয়ার পথে পানিতে ডুবে। বজ্রাঘাতেও প্রাণহানি ঘটেছে। হত্যা, পারিবারিক সহিংসতা, চিকিৎসার অভাব এসব ছিল। করোনা ও ডেঙ্গু উভয়কেই তৎপর অবস্থায় দেখা গেছে। আগুনে পুড়েও অনেকে চলে গেছেন।
তবে তাৎপর্যপূর্ণ হচ্ছে এই সংবাদ যে, এই প্রথমবারের মতো সংখ্যার দিক থেকে মেয়েরা ছাড়িয়ে গেছে পুরুষদের। এর একাধিক কারণ নিশ্চয়ই রয়েছে। একটা হলো বহুবিধ কষ্ট সহ্য করেও আমাদের দেশের মেয়েদের টিকে থাকার ক্ষমতা। আরেকটা কারণ, বহু পুরুষ মানুষ বিদেশে চলে গেছে, কাজের খোঁজে। মেয়েরা রয়ে গেছে। স্কুল-কলেজেও তাই মেয়েদের সংখ্যা বছরে বছরে বেড়েছে। আর অর্থনৈতিক জীবনে মেয়েদের অংশগ্রহণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি ‘আদমশুমারি’কে যে এখন জনশুমারি বলা হচ্ছে সেটাও তাৎপর্যহীন নয়; শুমারিতে আদমদের গোনা হবে, হাওয়া’রা কি বাদ? ভাষাগত সমস্যাটার এই মীমাংসাও ভালো খবর। কিন্তু তাই বলে এ কথা বলার কোনো উপায়ই নেই যে, মেয়েদের এই সংখ্যানুপাতিক অগ্রগতি বিদ্যমান পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো পরিবর্তনের বার্তা বহন করছে। না, মোটেই না। নারী নির্যাতন, যৌন হয়রানি, বাল্যবিয়ে, মজুরি-বৈষম্য, মেয়েদের কোণঠাসা করে রাখার চেষ্টাÑ সবকিছুই অব্যাহত থাকবে। অধ্যাপক যদি ছাত্রীকে বিয়ে করেন তবে সেটা কোনো খবর হবে না, কিন্তু কোনো অধ্যাপিকা যদি ছাত্রকে বিয়ে করেন তবে হইচই পড়ে যাবে, নাটোরে যেমনটা ঘটেছে। পুরুষতান্ত্রিক নানা প্রকারের চাপে ছাত্রকে বিয়ে-করা একজন অধ্যাপিকা শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করে জীবনযন্ত্রণার হাত থেকে বেঁচেছেন। এর কারণ পিতৃতান্ত্রিকতা জিনিসটা বাইরের কোনো ব্যাপার নয়, ঘটনা নয় ওপর কাঠামোগত। রাষ্ট্রীয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থার ভেতরই সে প্রোথিত; পুঁজিবাদী অর্থনীতি ও মতাদর্শের সঙ্গে এর সম্পর্ক একেবারেই অবিচ্ছেদ্য।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সারা পৃথিবীতেই স্পষ্ট। একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ পৃথিবীর সবকিছু যেন ওলটপালট করে দিচ্ছে, আর বারবারই মনে করিয়ে দিচ্ছে এ অবস্থার জন্য কারা দায়ী ও ক্ষতিগ্রস্ত কারা। ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীকে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি এজন্য প্রাসঙ্গিক যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো প্রতিনিয়ত তাদের জীবনকে যেমন দুর্বিষহ করে তুলছে, তেমনি ধীরে ধীরে দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর করছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে দরিদ্রতার যোগ সরাসরি, এই রূঢ় বাস্তবতা অতিসম্প্রতি দেখতে পাচ্ছি সুনামগঞ্জ ও সিলেট অঞ্চলে। এবারের নজিরবিহীন বন্যা ওই অঞ্চলের মানুষের সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলোচনায় সাধারণত দুর্যোগ মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমন ইত্যাদি সম্পর্কিত আলোচনাই বেশি থাকে, যা পদ্ধতিগতভাবে বেশ কিছুটা তাত্ত্বিক কিন্তু বেশি আলোচিত হওয়া উচিত এর ফলাফল নিয়ে, এবং এর কেন্দ্রে থাকা মানুষদের নিয়ে, অবশ্যই যারা সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী তাদের নিয়ে। জলবায়ু পরিবর্তনের ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় এই জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল, জীবন-জীবিকা ও জীবনধারায় ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসতে বাধ্য করে। আর প্রয়োজনীয় সহযোগিতার অভাবে ধীরে ধীরে তারা দরিদ্র থেকে আরও দরিদ্রতর হয়। আর এ অবস্থাই তাকে সম্ভাবনাময় সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রাণীর পক্ষান্তরে জীবন রক্ষায় অর্থনৈতিক দাসে রূপান্তর করে। যার সহজ কিছু দৃষ্টান্ত নদীভাঙনের শিকার মানুষের শহরমুখিতায়, একইভাবে নোনাজলের প্রভাবে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর বাস্তুচ্যুত ও সহায়-সম্বলহীন হওয়া যেন এই বাস্তবতারই প্রতিচ্ছবি। অন্যদিকে ঋতুচক্রের পরিবর্তন প্রচলিত কৃষি ও কৃষি-পদ্ধতির পরিবর্তন শুধু খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রেই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে না, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় ব্যাপক প্রান্তিকতা তৈরি করছে। আর এ বিষয়গুলো যতটা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত তার থেকে কোনো অংশে কম নয় মানবাধিকারের সঙ্গে এর যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া।
এ সময় সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাচ্ছে। এই পরিকল্পনায় বাংলাদেশকে জলবায়ুগত পার্থক্য বিবেচনায় এগারোটি অঞ্চলে বিভক্ত এবং চৌদ্দটি বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ চিহ্নিত করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সুনাম সারা পৃথিবীতে সমাদৃত। কিন্তু দুর্যোগ মোকাবিলা করে বেঁচে থাকা আর দুর্যোগ মোকাবিলা করে উত্তরোত্তর এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে কিছু সক্ষমতা ও সামর্থ্যগত পার্থক্য আছে। দুর্যোগ মোকাবিলা করে বেঁচে থাকাই যথেষ্ট না, বরং প্রশ্ন হচ্ছে দুর্যোগ মোকাবিলা করে মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকা যাচ্ছে কি না যেখানে এই জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজনীয় রসদ, সেবা ও এর কার্যকর ব্যবস্থাপনাই মুখ্য।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীর যে অধিকারহীনতা তৈরি হয়, তার নিশ্চয়তা বিধান করাই জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত আলোচনার মুখ্য বিষয় হওয়া উচিত। কারণ অধিকারহীনতাই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে আরও বেশি প্রান্তিক করে তোলে। শুধু দুর্যোগের মধ্যে টিকে থাকা না, ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকার রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপদ আবাসন, কর্মসংস্থান ও কৃষি, সুপেয় পানি ইত্যাদির নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে এবং এজন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। এখানেই ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীর প্রতি ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সামনে চলে আসে। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী না হলেও এরাই সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী।
আমরা সবাই জানি বিশ্বের ধনী দেশগুলো গত ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে প্রকৃতির নির্বিচার শোষণের মাধ্যমে, শিল্পবিপ্লব নামক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিজেদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এনেছে। তাদের এই নির্বিচার
প্রকৃতিবিনাশী কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে জলবায়ুর পরিবর্তন ত্বরান্বিত হচ্ছে এবং ভুক্তভোগী দেশগুলোর দরিদ্র জনগোষ্ঠী মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার শিকার হচ্ছে। আর এদের সহযোগিতা নিশ্চিত করার জন্য দায়ী দেশগুলোকে জবাবদিহি করতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো ক্ষতিপূরণ আদায়ে উন্নত দেশগুলোর কাছে দাবি করে আসছিল। এর অগ্রগতি সামান্য। তবে আশার কথা হলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর কিছুটা স্বীকৃতি আসতে শুরু করেছে। গত বছরের গ্লাসগো বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের সময়ে স্কটল্যান্ড সরকার সর্বপ্রথম ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সাহায্যের প্রস্তাব করে। সর্বশেষ অতিসম্প্রতি ডেনমার্ক জাতিসংঘের প্রথম সদস্য হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিপূরণ প্রদানে প্রতিশ্রুতি দেয়। তর পরও পুনঃপুন দাবি সত্ত্বেও উন্নত ও জীবাশ্ম জ্বালানি-সমৃদ্ধ দেশগুলো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অভিযোজনে সহায়তার বিষয়টিতে যেমন সহযোগিতা করছে না, একই সঙ্গে ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টিও এড়িয়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে এবারের (২০২২) সাধারণ পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশনে জাতিসংঘের মহাসচিব তার ভাষণে উন্নত দেশগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলোর ওপর বেশি বেশি কর আরোপের কথা বলেছেন, যাতে দুর্গত দেশগুলোকে সাহায্য করা যায়। তবে শুধু জীবাশ্ম কোম্পানিগুলোই একমাত্র সুফলভোগী না, ধনী দেশগুলোও এর সুফলভোগী। আবার এদের মধ্যে যে দেশগুলো ধীরে ধীরে কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বের হয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এদের অনেকেই আবার কয়লায় ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়লার মজুদ শুরু করেছে।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর ক্ষতিপূরণে ধীরে ধীরে বহুপক্ষীয় উদ্যোগ কিছুটা হলেও সক্রিয় হচ্ছে। জাতিসংঘ এই প্রথম একজন বিশেষ প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়েছে যিনি জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মানবাধিকারের উন্নয়ন ও সুরক্ষা পর্যালোচনা করে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল এ প্রতিবেদন পেশ করবেন। গত ৪ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ এই বিশেষ প্রতিবেদক বাংলাদেশের বিভিন্ন জলবায়ু দুর্গত অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন। তিনি তার প্রাথমিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে তাদের বাড়িঘর ছাড়তে হচ্ছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অন্য অঞ্চলে এবং আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করতে বাধ্য হচ্ছে। নারী, বয়স্ক ব্যক্তি ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তিনি তার প্রাথমিক প্রতিবেদনে যে সুপারিশ প্রদান করেছেন সেখানে বলেছেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কিত একটি তহবিল গঠন করা দরকার, পাশাপাশি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার সংরক্ষণে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ে উন্নত দেশগুলো থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের পাশাপাশি এই জনগোষ্ঠীর প্রতি দেশ ও সরকারের ভূমিকাও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আর এজন্য ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীকে কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হচ্ছে সেটা যেমন বিবেচ্য, পাশাপাশি তাদের জন্য পরিকল্পনা কী তাও বিশেষভাবে বিবেচনা পাওয়ার দাবি রাখে। আর এখানেই তাদের জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের বিষয়টি সামনে চলে আসে। এবারের সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা কিংবা উপকূলীয় অঞ্চলে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে মানুষের সম্পদের যে ক্ষয়ক্ষতি তা মোকাবিলায় বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। এজন্য ওই অঞ্চলের সেবা সংস্থাসমূহকে এমনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে যে তারা জলবায়ু পরিবর্তনের এই বিরূপ পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করতে তো পারবেই পাশাপাশি প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধা ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে কাক্সিক্ষত পরিবর্তনের পথ নিশ্চিত করবে।
লেখক : উন্নয়নকর্মী
আমাকে যারা একটু-আধটু চেনেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে সামান্য হলেও আমার লেখালেখির সঙ্গে পরিচিত, তারা জানেন বাম রাজনীতির প্রতি আমার কিঞ্চিৎ দুর্বলতা আছে। আমি এখনো বিশ্বাস করি, পুঁজির বল্গাহীন অত্যাচারের বিরুদ্ধে একমাত্র বামপন্থাই জনতাকে স্বস্তি দিতে পারে।
তবে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই, আমি যান্ত্রিকভাবে বামেদের যাবতীয় বিষয়কে মেনে নিই। বামেদের বলতে আপাতত আমি পশ্চিমবঙ্গের মূলধারার বামেদের কথা বলছি। কয়েক বছর আগে দেয়ালে লেখা হতো ‘মার্ক্সবাদ সর্বশক্তিমান, কারণ ইহা বিজ্ঞান।’ এ ধরনের উদ্ভট স্লোগান দেওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই ৩৪ বছরের বাম শাসন আক্ষরিক অর্থেই তাসের ঘরের মতো হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল।
কিছুমাত্র রাজনৈতিক দিশা ছাড়াই রাজ্যের ক্ষমতা দখল করল কংগ্রেসের ভেতরের চরমপন্থি অংশ। তৃণমূল ক্ষমতায় এলো স্রেফ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তি ক্যারিশমা ও অন্ধ সিপিআই এম বিরোধিতাকে কাজে লাগিয়ে। এখনো তৃণমূল কংগ্রেসের মূল শক্তি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন মোহিনী ভাবমূর্তি। এবং নিশ্চিতভাবেই কিছু কিছু সামাজিক প্রকল্প গ্রাম স্তরে পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু হালে মমতার অতি বড় সমর্থকও স্বীকার করবেন তৃণমূল কিছুটা হলেও আজ ব্যাকফুটে।
তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই যে, সিবিআই, ইডি, এনআইএ প্রমুখ কেন্দ্রীয় সরকারের এজেন্সি রাজনৈতিক স্বার্থে তৃণমূল দলকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলছে, যা কিছুটা ঠিক, তাহলেও গ্রামে-গঞ্জে, মফস্বলে তৃণমূল কংগ্রেসের দুর্নীতি যে চরমে উঠেছে তা একটু-আধটু খোঁজ করলেই জানা যায়। তার সঙ্গে প্রবল হয়ে উঠেছে ঔদ্ধত্য ও সীমাহীন স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতা।
তার ওপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইদানীং অনেক কর্মসূচিতেই যেভাবে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি প্রকট হচ্ছে, তাতে তৃণমূলের বড় শক্তি মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে এরই মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মুসলমানদের আরও খারাপ লেগেছে ছাত্রনেতা আনিস খানকে যেভাবে রাতের অন্ধকারে বাড়ি ঢুকে খুন করা হলো, হিন্দু বা মুসলমান বলেও নয়, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে ভালো নয়, তা চোখ-কান খোলা রাখলে যে কেউই বুঝবেন।
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠবেই যে, পরের বিধানসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের ক্ষমতায় আসতে পারবেন কি না! বিধানসভা ভোটের অবশ্য অনেক দেরি আছে। ছাব্বিশ সালে। তার আগে সেমিফাইনাল চব্বিশ সালে। লোকসভা ভোট। তারও আগে, সামনের বছর পঞ্চায়েত নির্বাচন। গ্রামের মানুষ যেদিকে, ক্ষমতাও সেদিকে; এ রকম একটা কথা অনেক দিন ধরেই এ রাজ্যে চালু রয়েছে। ফলে পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফল আগামী দিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে অল্প হলেও একটা আভাস দেবে।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসবে যদি তৃণমূল হারে তাহলে কি বিজেপি ক্ষমতায় আসবে! দেখুন, বহুদিন ধরে মিডিয়ায় আছি। ঠান্ডা ঘরে না বসে গ্রামে গ্রামে ঘুরে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে যেটুকু যা বুঝছি, তাতে বিজেপি এ রাজ্যে আসবে না। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারাও তা বোধহয় চান না। বরং ঔপনিবেশিক কায়দায় জো হুজুর কাউকে রাজ্যে বসিয়ে নিজেদের এজেন্ডা হাসিল করলে লাভ বেশি এটা বিজেপির মূল চালিকাশক্তি সংঘ পরিবারের নেতৃত্ব বোঝেন। গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবির পরেও আরএসএস নেতারা খোলাখুলি বলেছিলেন যে বিজেপি না জিতলেও আমরা চিন্তিত না। দেখতে হবে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জিতেছে কি না!
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এরই মধ্যে বলতে শুরু করেছেন যে আরএসএসএ অনেক ভালো লোক আছেন। এমনকি নরেন্দ্র মোদি ভালো। অমিত শাহ খারাপ এসব ভুলভাল কথাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন। আবেগের তোড়ে অথবা ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে তিনি ভুলে গেছেন ব্যক্তি নয়, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির কাছে বিপদ সংঘ পরিবারের মতাদর্শ।
তা ছাড়া বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে এখনো তেমন কোনো শক্তি নয়। তাদের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছেন। বিজেপি কাগুজে বাঘ। তাকে প্রবল পরাক্রমশালী আসল বাঘ করা দেখানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মিডিয়া। এ নিয়ে কোথাও কোনো সন্দেহ নেই। কোনোদিন কেউ শুনেছেন যে বিজেপির সামান্য আইন অমান্য কর্মসূচি বিভিন্ন চ্যানেলে লাইভ টেলিকাস্ট হচ্ছে। পৃথিবীর কোথাও এমন হয়!
আসলে করপোরেট পুঁজি বিনিয়োগ করে মিডিয়াকে শাসকদের পুতুল করে তুলেছে। শাপে বর হয়েছে তৃণমূলের। বিজেপির জুজু দেখিয়ে মুসলিম ও ধর্মনিরপেক্ষ ভোটের একাংশকে সংহত করা সহজ হয়ে গেছে।
আমি দীর্ঘদিন অনেক বিষয়েই পশ্চিমবঙ্গের বামেদের সমালোচনা করি। তাদের অতিরিক্ত নরম সংসদনির্ভরতা বিরক্ত লাগে। তা ছাড়া তাদের, বিশেষ করে বামফ্রন্টের বড় শরিকের রাজত্বকালের শেষ দিকে অজস্র নেতিবাচক দিক জনমনে তাদের সম্পর্কে খুব খারাপ ইমেজ তৈরি করেছিল। আমার বাম বন্ধুরা ক্ষুব্ধ হবেন। তাও না বললে মিথ্যে বলা হবে যে নিজেদের কবর নিজেরাই না খুঁড়লে, হাজার যুক্তি থাকলেও বামেদের হটিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্যমন্ত্রী হতে পারা সহজ ছিল না। বামেদের পাশ থেকে অনেক দিন ধরেই গরিব মানুষ মুখ ফেরাচ্ছিলেন। মুসলিম, আদিবাসী, দলিত জনগোষ্ঠীর বড় অংশ একদা ছিল সিপিআই এমের জন ভিত্তি। তাদের জায়গায় ক্রমে ক্রমে পার্টির নীতিনির্ধারক হয়ে উঠতে লাগল শহরের বাবু ভদ্দরলোকরা। পঞ্চায়েত, প্রশাসন হয়ে উঠল পার্টির কুক্ষিগত। পাড়ায় পাড়ায় পার্টি অফিস হয়ে উঠতে লাগল বিকল্প প্রশাসনিক দপ্তর।
তার সঙ্গে ছিল ছোট-বড়-মাঝারি নেতাদের অনেকের মধ্যে গগনচুম্বী অহংকার। পাশাপাশি আর এক বিষয় হয়ে উঠেছিল সিপিআই এমের পতনের কারণ। পার্টির মধ্যে রাজনৈতিক পড়াশোনা শিকেয় উঠেছিল। তৈলমর্দন ছিল দলে ওপরে ওঠার গুরুত্বপূর্ণ পথ। জনবিচ্ছিন্ন এই আমলাতান্ত্রিক দলকে সরাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খুব অসুবিধে হয়নি। পালাবদলের পরপরই রাতারাতি পার্টি কর্মী সমর্থক, এমনকি নেতাদের কেউ কেউ ভোল বদলে তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য হয়ে গেলেন।
তাহলে দলে থাকলেন কারা? যারা পার্টি ও বাম মতাদর্শকে ভালোবাসেন তারা। সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে ক্ষমতা চলে যাওয়ার পর যে বেনো জল চলে গেল তা একদিকে সিপিআই এমকে অনেক সংহত করেছে। গত নির্বাচনে বামেদের ভরাডুবি হয়েছে। তারা স্বাধীনতার পরে এই প্রথম একটি আসনেও জিততে পারেনি। তবুও আজ যদি আমাকে কেউ জিজ্ঞেস করেন, বামেদের অবস্থা কেমন! তারা কতটা রাজনৈতিক জমি পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে! আগামী নির্বাচনে তারা কতটা সফল হতে পারেন! জ্যোতিষী না। ওই বিদ্যের ওপর আস্থাও নেই, তাই সব প্রশ্নের উত্তর এখনই দিতে পারব না। কিন্তু এটা জোরের সঙ্গে বলতে পারি, এ মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বিরোধী পরিসরে ধীরে ধীরে উঠে আসছে সিপিআই এম ও তার জোট সঙ্গীরা।
মহম্মদ সেলিম সিপিআই এমের রাজ্য সম্পাদক হওয়ার পরপরই দলটির মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সেলিমের নেতৃত্বে গোটা দল এখন যথেষ্ট উজ্জীবিত ভূমিকায় প্রায় প্রত্যেক দিন বহুবিধ কর্মসূচি নিয়ে জেলায় জেলায় প্রশাসনকে বেকায়দায় ফেলছে। মিছিল-মিটিংয়ে ভিড় হচ্ছে চোখে পড়ার মতো।
অনেক বামপন্থি বন্ধু আক্ষেপ করে বলেন, গ্রামের গরিবরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দান-খয়রাতির লোভে এখনো শত অন্যায় দেখেও ভোট দেবে সেই তৃণমূলকেই। ভুল। সম্পূর্ণ ভুল চিন্তা। শহরে বসে রাজনীতি করার ফলে জনচেতনা সম্পর্কে এই অজ্ঞতা। আমি গ্রামে গ্রামে ঘুরি। গরিবের বড় অংশ মমতার দিক থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন। ভয়ে, আতঙ্কে তারা সেভাবে এখনো মুখ খুলতে পারছেন না। এমনকি মুসলিম ভোটারদের অনেকেই আজ বামমুখী হচ্ছেন। বিশেষ করে তরুণ, শিক্ষিত অংশ। মুসলমানদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে বুঝতে পেরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেশি বেশি করে চ-ীপাঠ থেকে দুর্গা পুজো, গঙ্গা সাগর মেলা, গণেশ চতুর্থী, রথযাত্রা, জগন্নাথ দেবের মূর্তি নির্মাণে মন দিচ্ছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অর্থনৈতিক নীতি আজ সব মহলেই সমালোচনার মুখে। ধমক-ধামক দিয়ে নিজেকে এখনো প্রাসঙ্গিক করে রাখলেও, ছবিটা বদলাচ্ছে। গ্রামে-গঞ্জে প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া বৈছে, তা স্পষ্ট। এই মৃদু হাওয়াকে ঝড়ে পরিণত করতে সিপিআই এমকে আরও অনেক পথ যেতে হবে। পথ খুবই কঠিন। ভোট করতে তৃণমূল দেবে বলে মনে হয় না। তাদের হাতে আজ প্রচুর টাকা। এ দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় টাকা সময়ে নির্ণায়ক শক্তি হয়ে ওঠে। সিপিআই এমের সামনে নিরন্তর গণ-আন্দোলন ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। আর দরকার লড়াকু কর্মীবাহিনী। ভোট লুট আটকাতে না পারলে হাজারো মিছিল-মিটিং কোনো কাজে আসবে না।
লেখক: ভারতীয় প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা ও লেখক
১৯৮৯ সালের এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন সংগীতশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। জন্ম ১৯২০ সালের ১৬ জুন ভারতের কাশীতে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যান। কিন্তু তিনি সংগীতের জন্য অধ্যয়ন ত্যাগ করেন। তার সাহিত্যিক হওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিছুদিন তিনি দেশ পত্রিকার জন্য লেখেন। শৈলেশ দাসগুপ্তর সাহায্যে হেমন্তর প্রথম গান করেন ১৯৩৫ সালে। ১৯৩৭ সালে তিনি গ্রামোফোন রেকর্ড ঈড়ষঁসনরধ লেবেলে জানিতে যদি গো তুমি ও বলো গো বলো মোরে গানগুলো করেন। এরপর থেকে প্রতি বছর তিনি গ্রামোফোন কোম্পানি অব ইন্ডিয়ার জন্য গান রেকর্ড করেছেন। ১৯৪০ সালে সংগীতপরিচালক কমল দাসগুপ্ত হেমন্তকে দিয়ে ফাইয়াজ হাস্মির কথায় কিতনা দুঃখ ভুলায়া তুমনে ও প্রীত নিভানেভালি গাওয়ান। প্রথম ছায়াছবির গান তিনি গেয়েছেন ‘নিমাই সন্ন্যাস’ ছবির জন্য। ১৯৪৭ সালে ‘অভিযাত্রী’ সিনেমায় সংগীত পরিচালনা করেন। আধুনিক গান ছাড়াও হেমন্ত মুখোপাধ্যায় রবীন্দ্রসংগীত ও রজনীকান্তের গান গেয়েছেন। স্বীকৃতি হিসেবে বিভিন্ন পুরস্কারের পাশাপাশি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেয়েছেন সম্মানসূচক ডি.লিট।
টেস্ট ক্রিকেটে সিলেটের পথচলা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। অভিজাত সংস্করণে যা ছিল দেশের অষ্টম ভেন্যু। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ম্যাচ দিয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে পা রাখে দেশের সবচেয়ে সুন্দর এই স্টেডিয়ামটি। তবে মাঠের অভিষেক ম্যাচেই হেরে যায় বাংলাদেশ। তারপর আর কোনো পাঁচ দিনের খেলা গড়ায়নি এই মাঠে। এ নিয়ে স্থানীয়দের আক্ষেপের শেষ নেই।
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর ফুরাচ্ছে। পাঁচ বছর পর আবারও টেস্ট ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
ক্রিকবাজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, ‘আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে আমরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজের প্রথম টেস্ট আয়োজন করতে পারব বলে আশা করছি। এটি আমাদের জন্য খুব একটি উপলক্ষ হবে। কারণ পাঁচ বছর পর সিলেটের মাঠে টেস্ট ক্রিকেট ফিরবে।’
সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল সিলেট সফর করেছে। তারা সেখানকার মাঠসহ সব সুযোগ সুবিধা পরিদর্শন করেছেন। পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়ে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। সবকিছু দেখে তারা এখানে আরও বেশি ম্যাচ আয়োজনের জন্য উন্মুখ বলে জানিয়েছেন বিসিবির নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান নাদেল।
তিনি যোগ করেছেন, ‘নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল আমাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বেশ মুগ্ধ। তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়েছে আমরা তাদের সব প্রত্যাশা ও প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারব।’
এফটিপি সূচি অনুযায়ী চলতি বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে ও দুই টেস্ট ম্যাচের সিরিজে খেলার কথা নিউজিল্যান্ডের। তবে সিরিজটি হবে দুই ভাগে। প্রথম ভাগে সেপ্টেম্বরের শেষভাগে বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়ানডে খেলবে কিউইরা। এই সিরিজ খেলেই বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাবে দুই দল।
বিশ্বকাপের পর হবে দুই দলের টেস্ট সিরিজ। নভেম্বরের শেষ দিকে আবারও বাংলাদেশে আসবে কিউইরা। বিসিবি প্রস্তাবিত সূচি অনুযায়ী ২১ নভেম্বর ঢাকায় পা রাখার কথা সফরকারীদের। এরপর একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে দলটি। ২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর হবে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের প্রথম টেস্ট।
রাজধানীর সরকারি কবি নজরুল সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এম ওয়াসিম রানার (৩০) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছেন তার বন্ধুরা। শুক্রবার (০২ জুন) রাত সাড়ে ১২টার দিকে চানখারপুলের একটি বাসায় তার বন্ধুরা তাকে দরজা ভেঙে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে।
অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
রানার বন্ধু ইমরান হোসেন বাবু জানান, 'রানা কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলায়। কয়েক দিন যাবৎ রানার খু্ব মন খারাপ ছিল। একাকী থাকতে চাইত। চুপচাপ থাকত। তবে কী চিন্তা করত সে ব্যাপারে কিছু বলত না। তাই আমি তাকে বলেছিলাম- বন্ধু, তুমি কিছুদিনের জন্য কক্সবাজার ঘুরে আস।'
ঘটনার পরপরই রানার স্ত্রী পরিচয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে রাত দেড়টার সময় সানজিদা নামে এক মেয়েকে আহাজারি করতে দেখা যায়। সানজিদা আক্তার (জান্নাতি) কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
সানজিদা আক্তারের প্রতিবেশী মাইদুল ইসলাম জানান, 'সানজিদা আপুকে আমরা জান্নাতি আপু বলে ডাকি। রানা ভাইয়ের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে অনেকদিন আগে। রাজনৈতিক কারণে বিষয়টি জানাজানি হয়নি। জান্নাতি আপু ডেমরা রূপগঞ্জের তারাবো এলাকায় একটি বাসায় থাকতেন।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক এক সহসভাপতি বলেন, 'আমরা জানতাম, সানজিদার সঙ্গে প্রেম ছিল। বিয়ে হয়েছিল কি-না তা সঠিক জানি না।' মৃত্যুর কারণ যা-ই হোক, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আসল রহস্য উন্মোচন করে বিচারের দাবি জানান তিনি।
রানার মৃত্যুর খবরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন এবং তারা শোক জানান। আজ (০৩ জুন) শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় কবি নজরুল সরকারি কলেজ মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রথম দুই সেটই গড়িয়েছে টাইব্রেকারে। প্রথমটি নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৫ মিনিটে। দ্বিতীয়টিও টাইব্রেকারে। সেটির নিষ্পত্তি ঘণ্টার ওপরে। দুটোতেই জয় নোভাক জকোভিচের। তারপরেরটিও জিতে যান এই সার্বিয়ান। ১৪তম ফ্রেঞ্চ ওপেনের খেলায় স্পেনের আলেজান্দ্রো ফোকিনার সঙ্গে ৩-০ সেটে জয়লাভ করেন তিনি। যে জয়ে মধুর প্রতিশোধ নিয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছেন তিনি।
৩৬ বছর বয়সী এই নাম্বার ওয়ান টেনিস তারকা প্রথম সেটে কিছুটা ছন্দহীন ছিলেন। তবে চ্যাম্পিয়নদের ঘুরে দাঁড়াতে তো সময় বেশি লাগে না। জকোভিচও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তারপর ফোকিনাকে কোনো সেট জিততে না দিয়েই ম্যাচ শেষ করেন তিনি।
প্রায় ৪ ঘণ্টাব্যাপী চলা এই ম্যাচটিতে এক পেশে জয় হলেও প্রতিটি সেটেই উত্তেজনার পারদ ছড়িয়েছেন দুজন। সমর্থকেরাও বারবার হয়েছেন রোমাঞ্চিত। তবে শেষ পর্যন্ত নোভাক জকোভিচের সমর্থকেরাই হাসি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আগামী সোমবার জকোভিচ শেষ ষোলোর ম্যাচ খেলতে নামবেন। সেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে কার্লোস আলকারাজকে পেতে পারেন তিনি।
স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট কো-স্পোর্টস যতটা না তাদের কর্মগুণে সমাদৃত, তার চেয়ে বেশি আলোচিত নানা নেতিবাচক কারণে। একটা সময় কে-স্পোর্টস ও এর প্রধান নির্বাহী ফাহাদ করিমে আস্থা রেখেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বড় বড় সব চুক্তিও সে সময় হয়েছিল দুই পক্ষের। তবে চুক্তির নানা শর্ত ভঙ্গ করে বিসিবির গুড বুক থেকে কাটা গেছে তাদের নাম।
বিসিবিতে সুবিধা করে উঠতে না পেরে গেল কয়েক বছর ফাহাদ করিম সওয়ার হয়েছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনে। বাফুফের এই আলোচিত সভাপতি একটা সময় বড় গলায় ভারতীয় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ, বিসিবির বিপিএলের কঠোর সমালোচনা করে বলেছিলেন, ফুটবলকে জনপ্রিয় করতে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের মতো সস্তা আয়োজনের প্রয়োজন নেই।
অথচ ফাহাদের পাল্লায় পড়ে সেই সালাউদ্দিনই নিজের বলা কথা ভুলে গেছেন। তৎপর হয়েছেন নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আয়োজনে। যদিও এমন আয়োজনের জন্য কোনো রকম পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না কে-স্পোর্টসের। যার জ্বলন্ত উদাহরণ ফ্র্যাঞ্চাইজি চূড়ান্ত না করেই আসর মাঠে গড়ানোর তারিখ ঘোষণা করা এবং অনুমিতভাবেই ঘোষিত তারিখে খেলা শুরু করতে না পারা।
কে-স্পোর্টসের সিইও ফাহাদ করিমের সঙ্গে সালাউদ্দিনের দহরম মহরম বেশ কয়েক বছর আগে থেকে। সেটা কখনো কখনো ফুটবলের স্বার্থ ছাড়িয়ে চলে যায় ব্যক্তিস্বার্থে। সাফল্যপ্রসবা নারী ফুটবলে বেশি আগ্রহ সালাউদ্দিনের। ক্রীড়া-বেনিয়া ফাহাদও সালাউদ্দিনের নারী ফুটবলের প্রতি বাড়তি অনুরাগটা ধরে ফেলে ২০১৯ সালে বাফুফেতে প্রবেশ করেন ঢাকায় অনূর্ধ্ব-১৯ আন্তর্জাতিক নারী টুর্নামেন্ট আয়োজনের মধ্য দিয়ে।
এর পরের বছর টিভি সম্প্রচারস্বত্ব পাইয়ে দিতে বাফুফের সঙ্গে তিন বছরের বড় অঙ্কের চুক্তি করে কে-স্পোর্টস। চুক্তি অনুযায়ী বাফুফেকে ফি-বছর আড়াই কোটি টাকা করে দেওয়ার কথা কে-স্পোর্টসের। সেই অর্থ বুঝে না পেয়ে সম্প্রতি ফাহাদ করিমকে চিঠি দেয় বাফুফে।
বিষয়টি সমাধান না হলে নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ নিয়ে চুক্তি না করার ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছিল চিঠিতে। তবে এই চিঠি দেওয়া যে শুধুই আনুষ্ঠানিকতার, তা সালাউদ্দিন-ফাহাদ করিমের হাবভাবেই বোঝা যায়। চুক্তির বিষয়টাকে এক পাশে রেখে আসলে তাদের বড় দুর্ভাবনা নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ।
পাঁচ তারকা হোটেলে সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানীদের নিয়ে দেশ-বিদেশ থেকে নামীদামি নায়ক-নায়িকা-মডেল ভাড়া করে এনে ফাহাদ করিম এর মধ্যেই আসরের লোগো, ট্রফি ও বল উন্মোচন করেছেন একাধিক অনুষ্ঠানে। ১ মে হওয়ার কথা ছিল আসরের প্লেয়ার্স ড্রাফটস। সেদিন ড্রাফটসের জায়গায় হয়েছে ট্রফি ও বল উন্মোচন অনুষ্ঠান। কে-স্পোর্টস যে ফ্র্যাঞ্চাইজিও চূড়ান্ত করতে পারেনি, প্লেয়ার ড্রাফটসটা হবেই বা কাদের নিয়ে?
এই অবস্থা এখনো চলমান। ১৫ মে শুরু হওয়ার কথা ছিল খেলা। সেই তারিখও ভেস্তে গেছে। আসলে অনিয়ম-জালিয়াতির আখড়ায় রূপ নেওয়া বাফুফের প্রতি আস্থা হারিয়েছে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। যেচে কেউই চায় না ফাহাদ-সালাউদ্দিনের দেওয়া টোপ গিলতে। এমনকি ফুটবলের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক আছে এমন কোম্পানিগুলোও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
শুরুতে এ আসরটি ছয় দল নিয়ে আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছিল কে-স্পোর্টস। পরে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সাড়া না পেয়ে দলসংখ্যা নামিয়ে আনা হয় চারে। জানা গেছে, বাফুফেকে পৃষ্ঠপোষকতা করা বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে বারবার গিয়েও খেলতে রাজি করাতে পারেননি ফাহাদ। অথচ তারপরও এই ফাহাদে সালাউদ্দিনের আস্থা টলেনি।
সম্প্রতি সালাউদ্দিন, বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি সালাম মুর্শেদী ও বাফুফের নারী কমিটির প্রধান মাহফুজা আক্তারের সঙ্গে দীর্ঘ সভা করেন। বৈঠক শেষে বাফুফে ভবন ছাড়ার সময় ফাহাদ করিম যা বলেছিলেন, তাতে পরিষ্কার নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের কোনো অগ্রগতিই হয়নি।
দেশ রূপান্তরকে ফাহাদ বলেছেন, ‘দুটি ফ্র্যাঞ্চাইজি চূড়ান্ত হয়েছে। বাকিগুলো শিগগিরই হয়ে যাবে। বড় কোনো অগ্রগতি হলে আমি সবাইকে ডেকে জানাব।’
গত সোমবার বাফুফের জরুরি সভা শেষে কাজী সালাউদ্দিন নতুন করে লিগ শুরুর তারিখ ঘোষণা করেন। পরে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘ওমেন্স ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ ১০ জুন থেকে শুরু হবে। ১২ দিনে হবে ১৩ টি ম্যাচ। এটা এখন বলা দরকার যে, ফিফা উইন্ডোতে লিগ করছি। যেন বিদেশি খেলোয়াড় আসতে পারে। না হলে আসতে পারবে না।’
নতুন তারিখ ঘোষণা করেছেন ঠিকই। তবে আদৌ নির্ধারিত তারিখে খেলা হবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট শঙ্কা।
গত বছর নেপালে সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকেই মাঠে ফেরার দিন গুনছেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা। সাফ জয়ের পর সালাউদ্দিন শুনিয়েছিলেন গালভরা বুলি। সাবিনাদের নিয়মিত খেলার ব্যবস্থা করবেন। অথচ লিগের কিছু ম্যাচ ছাড়া আর খেলারই সুযোগ আসেনি। অথচ অর্থ সংকটের খোঁড়া অজুহাত দেখিয়ে বাফুফে মেয়েদের মিয়ানমারে পাঠায়নি অলিম্পিক বাছাই খেলতে।
ফিফা উইন্ডোতেও বাফুফে পারেনি দলের জন্য প্রতিপক্ষ জোগাতে। পাঁচ তারকা হোটেলের চোখ ঝলসানো মায়াবী আলো আর সুরের মূর্ছনায় ফাহাদ করিম আয়োজন করেছিলেন লোগো, ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠান। সেখানে গিয়ে সাবিনারাও দেখেছিলেন বাড়তি কিছু উপার্জনের রঙিন স্বপ্ন। তবে বাফুফের অদূরদর্শী সভাপতি অপ্রস্তুত এক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আয়োজনের দায়িত্ব তুলে দিয়ে যেন সাবিনাদের স্বপ্নটাকেই আরেকবার গলাটিপে ধরতে চাইছেন।
এক লোক হজরত সুফিয়ান সাওরি (রহ.) কে প্রশ্ন করল, নামাজের সময় কাতারের কোন পাশে দাঁড়ানো উত্তম? প্রথম কাতারের ডান পাশে না কি বাম পাশে? তখন সুফিয়ান সাওরি (রহ.) বলেন, প্রথমে দেখো খাবারের জন্য রুটির যে টুকরোটা নিয়েছে তা হালাল না কি হারাম? তুমি কাতারের যেখানেই নামাজ আদায় করো তা তোমার কোনো ক্ষতি করবে না। তুমি নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে খুব ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করো, তুমি নামাজ কোথায় আদায় করবে? অথচ তুমি এমন একটি কাজে লিপ্ত যা তোমাকে নামাজ কবুল হওয়া থেকে বিরত রাখে!
একবার হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে উদ্দেশ করে বলেন, তোমরা কি জানো প্রকৃত দরিদ্র কে? তারা বললেন, দরিদ্র তো সে যার কোনো দিনার-দেরহাম নেই (অর্থকড়ি নেই)। তখন তিনি বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে দরিদ্র সে, কিয়ামতের দিন নামাজ, রোজা ও জাকাতের সওয়াব নিয়ে আসবে; কিন্তু সে একে গালি দিয়েছে, ওকে প্রহার করেছে, অন্যায়ভাবে অন্যের মাল ভক্ষণ করেছে, তখন এই লোক তার সওয়াব থেকে নেবে, ওই লোক তার সওয়াব থেকে নেবে, অতঃপর যখন তার সওয়াব শেষ হয়ে যাবে তখন অন্য পাওনাদাররা তাদের অপরাধগুলো এই লোককে দিয়ে দেবে, এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
এরপর সুফিয়ান সাওরি (রহ.) লোকটিকে বলেন, তুমি প্রথম কাতারে নামাজ আদায় করলে তাতে কী লাভ; যদি তুমি মানুষের হক নষ্ট করো, অন্যের মাল অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো? সুতরাং তুমি হালাল ও পবিত্র খাবার গ্রহণ করো।
নবী কারিম (সা.) বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র এবং তিনি পবিত্র জিনিস ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করেন না এবং তিনি মুমিন বান্দাদের তাই আদেশ করেছেন যা তিনি নবী-রাসুলদের আদেশ করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে রাসুলরা, পবিত্র বস্তু আহার করুন এবং সৎ কাজ করুন। আপনারা যা করেন সে বিষয়ে আমি পরিজ্ঞাত।’ সুরা মুমিনুন : ৫১
এই আয়াতে আল্লাহতায়ালা পবিত্র খাবারকে নেক আমলের পূর্বে এনেছেন। অর্থাৎ নামাজ আদায়, দিনের বেলা রোজাপালন, রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি ও কোরআন তেলাওয়াতের পূর্বে হালাল খাবারকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আল্লাহতায়ালা এখানে রাসুলদের উদ্দেশ করে বলেছেন, হে রাসুলরা! তোমরা হালাল খাবার গ্রহণ করো। এরপর তিনি বলেছেন এবং সৎ আমল করো। অর্থাৎ নেক আমলের পূর্বে হালাল ও পবিত্র খাবার গ্রহণ করো, যাতে হারাম খাবার গ্রহণের কারণে নেক আমলগুলো নষ্ট না হয়ে যায়। এ কারণেই আল্লাহতায়ালা বলেছেন, তোমরা পবিত্র বস্তু গ্রহণ করো এবং সৎ আমল করো।
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) দীর্ঘ সফরে ক্লান্ত ধূলোমলিন চুল ও চেহারাওয়ালা এক লোকের উপমা দিয়ে বলেছেন, সে আসমানের দিকে হাত তুলে বলে, হে আমার রব! হে আমার রব! তিনি বলেন, অথচ তার খানাপিনা হারাম, তার পোশাক-পরিচ্ছেদ হারাম, সে যা ভক্ষণ করে তা হারাম, তাহলে তার দোয়া কবুল হবে কীভাবে?
ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, হালাল খাবার মানুষের মেধা, ইলম ও আমলের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। সুতরাং এ প্রশ্ন করা অবান্তর, আমাদের দোয়া কবুল করা হয় না। দোয়া কবুল না হওয়ার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো হালাল ও পবিত্র খাবার গ্রহণ না করা। বস্তুত সমস্যা দোয়ার মধ্যে নয়, সমস্যা আমার-আপনার মধ্যে। আপনি খাবারকে পবিত্র রাখুন, দেখবেন আপনার দোয়াগুলো কবুল হচ্ছে।
একজন হারাম কজে লিপ্ত, অন্যায়ভাবে মানুষের হক ভক্ষণকারী, শ্রমিকের পারিশ্রমিক পরিশোধ করেন না, বাড়ির অসহায় কাজের মেয়েটির প্রাপ্য ভাতা প্রদান করেন না, অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন না আর সেই আপনিই আবার অভিযোগ করেন আমার দোয়া কবুল হয় না?
একটু ভাবুন, চিন্তা করুন। সর্বদা পবিত্র খাবার খাওয়ার, পবিত্র পোশাক পরিধানের চেষ্টা করুন। দয়াময় আল্লাহ আপনাকে বঞ্চিত করবেন না।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।