
ডিম্বাস্ত্র আবার কী? প্রক্ষিপ্ত মিসাইল। মাথায় পড়লে টের পাবেন। নিক্ষিপ্ত ডিমের কথা শুনলে বেশি বিচলিত হয়ে থাকেন রাজনীতিবিদরা। বহু বছর আগে পচা ডিমের ব্যবহার নামে একটি প্রতিবেদন পড়েছিলাম। প্রশ্ন ছিল এত পচা ডিম যায় কোথায়? প্রায় সব বিক্রেতাই ‘কমন ক্রেতা’র কথা বলেছেনবেকারি মালিক। কেক তৈরি করতে পাইকারি দরে কিনে নেন। একজন বিক্রেতা তার দৃঢ় বিশ্বাস থেকে এমনও বলেছেন যে পচা ডিম না হলে কেক সুস্বাদু হয় না। রাজনীতিবিদদের ওপর নিক্ষেপ করার উদ্দেশ্যে কয়েকজন বিক্রেতার কাছ থেকে সতর্ক কিছু ক্রেতা ডিম কিনে থাকেন।
ডিন মার্টিনের গানটা এমনকি রাজনীতিবিদরাও ভালোবাসেন। গানের সারমর্ম অনেকটা এ রকম : তুমি যদি কারও ভালোবাসা না পাও, তুমি মানুষই না; ছুড়ে দেওয়া ডিম যদি তোমার মাথায় না ভাঙে তুমি রাজনীতিবিদই না।
বিশেষ করে ছুড়ে দেওয়া পচা ডিম যতক্ষণ না রাজনীতিবিদকে আঘাত করছে রাজনীতিবিদ হিসেবে তার নাবালকত্ব কাটছে না। এই সাবালকত্বের সঙ্গে চুল-দাড়ি-গোঁফ গজানোর সম্পর্ক অতি সামান্য। চুল-দাড়ি-গোঁফ কেবল গজায়নি, পেকে টাক পড়ার দশা হয়েছে এমন একজন বাহাত্তর-উত্তীর্ণ তিয়াত্তরে রাজা তৃতীয় চার্লস প্রায় মাতৃসম রানী ক্যামিলা পার্কারকে নিয়ে ইয়র্কশায়ার সফরে এসেছিলেন। উদ্দেশ্য সদ্য প্রয়াত রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের ভাস্কর্য উন্মোচন। এ সময়ই এক তরুণের ছুড়ে দেওয়া ডিম্ব-মিসাইল রাজাকে ও রানীকে আঘাত করতে চেষ্টা করে।
এই ডিম্ব-মিসাইলে একদা সূর্য না ডোবা সাম্রাজ্যের বৃদ্ধ রাজাকে সাবালক বানানোর উদ্যোগ নিয়ে এক তরুণ গ্রেপ্তার হন এবং তার এই টার্গেট শুটিংয়ের জন্য মোটেও অনুতপ্ত নন বলে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন। দেরিতে সাবালকত্বের দিকে ধাবিত তৃতীয় চার্লস নাবালকসুলভ আচরণ করে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেননি, কোনো রাজনৈতিক দলের অপকীর্তি বলে পাড়া মাত করেননি, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রও মনে করেননি, নিজেও ডিমকামানের গোলন্দাজের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেননি, এমনকি টাকা খরচ করে প্ল্যাকার্ড, পোস্টার, ফেস্টুন ইত্যাদি বানিয়ে রসিক তরুণটির ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই ধ্বনি দেওয়ার জন্য ছাত্র ও যুব ফ্রন্টকে রাস্তায় নামিয়ে দেননি। এটাই হচ্ছে ডিম্বাঘাতী সাবালকত্ব। ডিমের আঘাতে গত আড়াই হাজার বছরে কোনো রাজনীতিবিদ মৃত্যুবরণ করেননি। তবুও দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশে হলে নিক্ষেপকারী তাৎক্ষণিক মৃত্যু ভাগ্যক্রমে এড়াতে পারলেও হত্যাপ্রচেষ্টা মামলার আসামি হতোই। সাবালকত্ব পরিমাপে ডিম্বসূচকটি সমাদৃত।
‘গড সেইভ দ্য কিং’জাতীয় সংগীত হলেও ইয়র্কের তরুণরা চেঁচিয়েছে ‘তোমাকে রাজা মানি না’, নুয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ বছর বয়সী ডিম নিক্ষেপকারী চেঁচিয়ে বলেছেও ‘ক্রীতদাসের রক্তের ওপর এই দেশ দাঁড়িয়েছে’।
নিক্ষিপ্ত ডিম একটি নয় একাধিক। ৯ সেপ্টেম্বরের অনুষ্ঠানের সংবাদ কাভার করতে আসা গার্ডিয়ান প্রতিনিধি দেখেছেন তিনটি নিক্ষিপ্ত ডিম-মিসাইল আর বিবিসির প্রতিনিধি দেখেছেন পাঁচটি। তিন বা পাঁচ বিতর্কের চেয়ে হতাশাব্যঞ্জক বিষয়টি হচ্ছে উভয় মাধ্যমই দাবি করেছে ডিম রাজাকে আঘাত করতে পারেনি। রাজা ডিমকে ডজ দিয়েছেন। এই সংবাদে আবার দুটি আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে; প্রয়াত রাজার সাবালকসুলভ আচরণ তাহলে সাময়িক। দ্বিতীয়ত. একালের তরুণরা টার্গেট শুটিংয়ে ব্যর্থ। দুটোই চিন্তার কারণ।
পাঁচটি হোক কী তিনটি হোক একাধিক ডিম রাজার দিকে ধেয়ে এসেও তাকে ছুঁতে পারেনি টার্গেট শুটিংয়ে ব্যর্থতার কারণে তার সাজা হোক এতে কেউ আপত্তি করবে না। কিন্তু এটাকে যেন হত্যাপ্রচেষ্টা বলে প্রচার না করা হয়। এমনকি নিক্ষেপকারীর ইচ্ছে ছিল রাজাকে ব্যথা দেওয়াএ কথাও যেন বলা না হয়। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে ডিম নিক্ষেপ করা হয়েছেসরকারের পক্ষে এ কথা ছড়ানো হলেও ধৃত আসামির পক্ষে বলা হয় ব্যথা দেওয়ার ইচ্ছে থাকলে তো সেদ্ধ ডিম ছোড়া হতোডিমটা কাঁচা ছিল। সেদ্ধ বেশি হলে শক্তও বেশি, আঘাতে ব্যথা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
টার্গেট মিস করা নিয়ে আফসোস করে গেছেন সর্দার উধম সিং। লন্ডনের ক্যাক্সটন হলে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকা-ের সময়কার পাঞ্জাবের গভর্নর মাইকেল ও ডায়ার এবং তখনকার সেক্রেটারি অব স্টেট ফর ইন্ডিয়া লর্ড জেটল্যান্ডকে (১৯১৭ থেকে ১৯২২ বাংলা গভর্নর) হত্যার উদ্দেশ্যেই গুলি করেন। মাইকেল ও ডায়ার সেখানেই লুটিয়ে পড়েন কিন্তু টার্গেট হয়তো মিস করেছেন এমনই আশঙ্কা করেছিলেন তরুণ উধম সিং। পুলিশবেষ্টিত অবস্থায় তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘জেটল্যান্ড কি মরেছেন? তারও মরা উচিত। আমি তার ডানদিকে দুটো গুলি করেছিলাম।’
সর্দার উধম সিংয়ের সংশয় সঠিক। জেটল্যান্ড কেবল আহত হয়েছেন। তার গুলি টার্গেট ছুঁয়ে গেলে যথাস্থানে আঘাত করেনি। তিনি আফসোস করে বললেন, মাত্র একজন মরেছেন। আমি তো ভেবেছি আরও বেশি মারতে পারব। আমি নিশ্চয়ই খুব ধীরে ধীরে কাজটা করেছি। অনেক মহিলা ছিলেন তো তাই।
(মার্ডার অ্যাট ক্যাক্সটন হল ও অন্যান্য ইতিহাস : প্রকাশক এপিপিএল)
ডিমের দাম এতটাই বেড়েছে, কোথাও কোথাও সম্ভবত গুলির দামকেও ছাড়িয়ে গেছে। তার পরও যারা গাঁটের পয়সা খরচ করে ডিম কিনে কাঁচা অবস্থায় অথবা সেদ্ধ করে ছুড়ে মারেন তাদের উদ্দেশ্য যে উধম সিংয়ের মতো হত্যা করা নয় তা যে স্পষ্ট, আর যাই হোক ডিম নিক্ষেপকারীকে রাষ্ট্রদ্রোহীর মর্যাদা দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার কোনো মানে নেই। বরং টার্গেট মিস করার জন্য তাকে অদক্ষ বলে গালাগাল দিয়ে পিজিয়ন টার্গেট শুটিংয়ে হাত পাকানের সুযোগ করে দেওয়া উচিত বলেও পশ্চিমের ‘এগ প্রোজেক্টাইল অ্যানালিস্টরা’ মনে করেন।
মুনতাজার আল জাইদি নামের জুতো-ছোড়া সাংবাদিকের কথা মনে করুন। ১৪ ডিসেম্বর ২০০৮ প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ইরাকি প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকিকে নিয়ে বাগদাদে বহুসংখ্যক টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে যখন লাইভ সংবাদ সম্মেলন করছিলেন মুনতাজার নিজের পায়ের জুতো খুলে প্রেসিডেন্টের মাথা বরাবর ছুড়লেন, দক্ষ আক্রোব্যাটের মতো প্রেসিডেন্ট জুতোকে ডজ দিলেন। এক জুতোতে আর কাজ কীভেবে মুনতাজার দ্বিতীয়টিও ছুড়লেন। এবার প্রেসিডেন্ট মাথা সরালেন আর ইরাকি প্রধানমন্ত্রী নিক্ষিপ্ত দ্রব্যটি ধরার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেন। অনস্বীকার্য, সেদিন থেকে মুনতাজার আল জাইদি সেলিব্রিটি হিসেবে যাই নাম কামিয়ে থাকুন না কেন টার্গেট শুটিংয়ে তিনি যে অদক্ষ এটা কাঁচা শুটাররাও বলতে ছাড়েননি। তার কারাবাসকে তারা অদক্ষতার শাস্তি হিসেবে মেনে নিয়েছেন। মুনতাজার দুটো বাক্যমিসাইলও নিক্ষেপ করেছিলেন। প্রথম নিক্ষেপের সময় বলেছিলেন, ‘তোর মতো কুত্তার জন্য ইরাকি জনগণের শেষ চুম্বন।’ দ্বিতীয় নিক্ষেপের সময় বলেছেন, ‘এই জুতোটি ইরাকের বিধবা, এতিম ও নিহতদের পক্ষ থেকে।’
মুনতাজার মাত্র ৯ মাস জেল খেটে বেরিয়ে এসে প্যারিসে গিয়ে তারই এক স্বদেশির জুতো হামলার শিকার হয়েছেন। টার্গেট শুটাররা মনে করেন টার্গেট মিস করার শাস্তি এত কম হলে শুটিংয়ের সিরিয়াসনেস কমে যাবে।
* * *
খ্রিস্টজন্মের ৬৩ বছর পর রোমান গভর্নর ভেসপাসিয়ানকে যে প্রজা টার্গেট করেছিলেন তিনি লক্ষ্যভ্রষ্ট হননি। সেকালে ডিম কিংবা জুতো (কজনই বা জুতো পরতেন!) জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি, ছোড়া হতো আহার্য ও ফলমূল। ভেসপাসিয়ানের গায়ে লেগেছিল শালগম।
অপরাধী ও রাজনীতিবিদদের ডিম পাওয়ার ব্যাপারটি বেশ পুরনো। প্রথম এলিজাবেথের যুগে থিয়েটার দর্শকদের কেউ কেউ পকেটে পুরে দু-একটি ডিম নিয়ে যেতেন। কারও অভিনয় বিরক্তিকর হলে তার ওপর ডিম এসে পড়ত। শত শত দর্শকের মধ্যে কাজটা কোন অসন্তুষ্ট দর্শকেরকখনো কখনো তা শনাক্ত করা গেলেও তারা মামলা-মোকদ্দমা বা হেনস্তার শিকার হননি। বরং নাট্যপরিচালক অভিনেতাকে বদলে দিয়েছেন কিংবা তার চরিত্রে গতি সংযোজন করেছেন।
রাজনীতিবিদ নিজ দলের হলেও বক্তৃতার সময় যদি অসমীচীন কথা বলেন তাতে দলের ভাবমূর্তিও ক্ষুণœ হয়। সমর্থকদের বরাবরই প্রত্যাশা নেতার কথা জাদুতে তাদের মুগ্ধ করবেন, বিরক্তির উদ্রেক করবেন না। ইংরেজরা তাদের রাজনৈতিক সভাগুলোতেও ওভারকোটের ভেতর ডিম নিয়ে অংশগ্রহণ করতে শুরু করলেন। ১৮৭১ সালে প্রকাশিত জর্জ এলিয়টের বিখ্যাত উপন্যাস ‘মিডল মার্চ’-এ রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষী চরিত্র মিস্টার ব্রুক নির্বাচন প্রচারণায় যে ভাষণ দিলেন তা ছিল অগোছালো এবং দুর্বল। সুতরাং ভাষণের একপর্যায়ে তার ওপর ডিম বর্ষিত হতে শুরু করলরীতিমতো শিলাবৃষ্টির মতো।
ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে যে এগ ক্রিয়াপদ হিসেবে ব্যবহৃত হতে চলেছেপ্রাইম মিনিস্টার এগড্ মানে প্রধানমন্ত্রী ডিম্বাক্রান্ত হয়েছেন। সদ্য ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ঢোকা ঋষি সুনাক এখনো এগড্ হননি, তার মানে সাবালকত্বপ্রাপ্তি ঘটেনি। লিজ ট্রাসকে নাবালিকা অবস্থাতেই বিদায় নিতে হয়েছেমাত্র ৪৫ দিনের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, তিনি কোনো ডিম্বাস্ত্র আকর্ষণ করতে পারেননি। অথচ তাদের পূর্বসূরিদের সাফল্যের ইতিহাসে ডিম্বাস্ত্রের ভূমিকা খাটো করে দেখার উপায় নেই। বিংশ শতকের সবচেয়ে সফল প্রধানমন্ত্রীদের একজন (কেবল ব্রিটেনে নয় সমগ্র বিশে^ সাফল্যের নিরিখে) মার্গারেট থেচার ডিম খেয়েছেন। বাংলা অভিধান ডিম্বাক্রান্ত হওয়া শব্দটি গ্রহণ করেনি। ডিম খাওয়া দ্ব্যর্থবোধক শব্দযুগল হিসেবে গৃহীত হতে পারেনাশতায় ডিম খাওয়া কিংবা জনসভায় ডিম খাওয়া। থেচারের আগে ডিম খেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড উইলসন। পরে ডিম খেয়েছেন জন মেজর, টনি ব্লেয়ার, ডেভিড ক্যামেরন। ডিমভাগ্যই তাদের ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে বহাল রেখেছে। তাদের সাবালকত্বপ্রাপ্তি ঘটেছে।
বিংশ শতকের সবচেয়ে সফলদের একজন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর এপিসোডটি তুলে না ধরলেই নয়। ১৯৬৭-এর ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন প্রচারণায় ভুবনেশ্বর এসেছেন ইন্দিরা গান্ধী। ডিম্বাকৃতির একটি প্রক্ষিপ্ত মিসাইল (ব্রিটিশরা বলে থাকে ডেয়ারি মিসাইল) বক্তৃতারত ইন্দিরা গান্ধীর নাকে আঘাত করল। গুরুতর আঘাত নাকের হাড় ভেঙে দিল, রক্তপাত শুরু হলো, তিনি নাকমুখ চেপে ধরলেন। এ অবস্থাতেই তিনি বললেন, এটা গণতন্ত্রের জন্য অশুভ সংকেত। কাকে ভোট দেবেন? নিক্ষেপকারীকে? বেশি রক্তপাত হতে থাকায় তাকে দ্রুত ডায়াস থেকে নামিয়ে দিল্লিতে হাসপাতালে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, ডাক্তারের নির্দেশ উপেক্ষা করে ব্যান্ডেজ বাঁধা নাক নিয়ে আবার জনসমক্ষে আসেন এবং বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে পাকাপাকি প্রধানমন্ত্রী হন।
জেরেমি ওয়েবস্টার জীবদ্দশায় মার্গারেট থেচারকে হাতের কাছে পাননি বলে তখন ডিম খাওয়াতে পারেননি। ২৬ মে ২০২২ লিঙ্কনশায়ারে মার্গারেট থেচারের ১০ ফুট উঁচু ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য স্থাপিত হওয়ার আগে থেকেই লিস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পকলা বিভাগের প্রধান ৫৯ বছর বয়সী জেরেমি ওয়েবস্টারের হাত পকেটের ভেতর নিশপিশ করছিল। ভাস্কর্যটি স্থাপিত হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি পকেট নয়, ডিমের বাক্স থেকেই ডিম বের করে ‘ম্যাগি’র ওপর ছুড়ে মারলেন। ব্যাপারটা লোকচক্ষুর অন্তরালে ঘটেনি। তার ডিম প্রক্ষেপণের চিত্রধারণের সুযোগও নিয়েছেন রসিক ফটোগ্রাফার। পুলিশ তাকে ছাড়েনি। মার্গারেট থেচারের পক্ষে তার কোনো স্বজন কিংবা তার রক্ষণশীল দল তার ফাঁসি দাবি না করলেও সংক্ষিপ্ত বিচারের বিলেতি পুলিশ আইনের ৫ ধারায় তার ৯০ পাউন্ড জরিমানা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা মোটেও থেচারবিরোধী নন এবং তার ভাস্কর্য স্থাপনে তাদের কোনো অসন্তোষও নেই, ব্যাপারটা জেরেমির নিজস্ব চিন্তাপ্রসূত।
কী জানি জেরেমি হয়তো ভেবেছেন মার্গারেট থেচার (১৯২৫-২০১৩) জীবদ্দশায় পর্যাপ্ত ডিম খাননি, তার ভাস্কর্যকেও কিছু খাওয়ানো দরকার।
শ্রমিকদলীয় প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড উইলসন ১৯৭০ সালে হ্যারোতে ডিম খেলেন। নিক্ষিপ্ত একাধিক ডিমের একটি তার গায়ে লেগে ভেঙেও গেল। হ্যারল্ড উইলসন হেসে উঠলেন এবং মাইক্রোফোনে জনতার উদ্দেশে বললেন, হ্যারোতে দ্রব্যমূল্যের কথা যদি বিবেচনা করা হয় তাহলে স্বীকার করতেই হবে শ্রমিক দলের শাসনকালে ডিম এত সস্তা হয়েছে যে তা নিক্ষেপও করা যায়। যদি রক্ষণশীল দল ক্ষমতায় আসে তাহলে নিশ্চিত থাকতে পারেন আগামী ৫ বছর ব্রিটেনের জনগণ ডিম কিনে নিক্ষেপ করার সক্ষমতা অর্জন করবে না।
হ্যারল্ড উইলসন ১৯৬৪ থেকে ১৯৭০ এবং ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৬ ব্রিটেনে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
ডিম খাওয়ার পর টনি ব্লেয়ার বলেছিলেন, শুধু ডিম কেন, মাখনও নিক্ষেপ করুক, তাহলে কেক বানিয়ে খাওয়া যেত। এর নামই রাজনৈতিক সাবালকত্ব।
বিবেচনা করুন ‘ডিমপরিপক্বতা’ হ্যারল্ড উইলসনকে কত সম্মানিত করেছে আর দক্ষিণ এশিয়ায় প্রক্ষিপ্ত ডিমকে হয়তো বলা হবে আণবিক বোমাহিরোশিমা ও নাগাসাকির বোমার চেয়ে হাজার গুণ শক্তিশালী। এর নাম রাজনৈতিক নাবালকত্ব।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক
প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক ইতিহাসেও বিশ্ববিদ্যালয়মাত্রই ছিল আবাসিক। অর্থাৎ সব শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের আবাসন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য শুধু শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পাঠ দেওয়া নয়; বরং জ্ঞানচর্চা করা, নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করা। তাই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষণিক নিবিড় আদান-প্রদানের সুবিধার্থে এই আবাসিক ব্যবস্থা। এভাবে শ্রেণিকক্ষ, পাঠাগার, আর গবেষণাগারে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নতুন জ্ঞান বিকাশের পথ তৈরি হয়। কিন্তু সেই বাস্তবতা আজ আর নেই। প্রশাসন শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট দূর করতে সচেষ্ট নয় বলেই বছরের পর বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হলে গাদাগাদি করে থাকছে শিক্ষার্থীরা। একই কারণে প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতেই তৈরি হয়েছে বহুল সমালোচিত ‘গণরুম’
সংস্কৃতি। প্রশ্ন হলো শিক্ষার্থীরা যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেও বছরের পর বছর যথাযথ আবাসনের সুবিধা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হয় তাহলে তারা শিক্ষায় মনোনিবেশ করবে কীভাবে?
দেশ রূপান্তরে মঙ্গলবার ‘এক কক্ষে ২০০ ছাত্রী’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের আবাসন সংকট নিয়ে হলেও আদতে দেশের বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রায় একই দশা। আবাসিক হলের সাধারণ কক্ষগুলোতে খানিকটা স্বস্তি মিললেও গণরুমের দশা সবসময়ই করুণ। গণরুমেও তিন ফুট প্রস্থের একেকটি বিছানায় থাকতে হচ্ছে দুজনকে। দুজনের জন্য বরাদ্দ মাত্র একটি করে টেবিল-চেয়ার। প্রতিটি বিছানার মাঝে দুই ফুটের ফাঁকা স্থানে রাখা টেবিলে বা নিচে রাখতে হয় দুজনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। ফলে ঘুম, খাওয়া, পড়াশোনা সবই করতে হয় বিছানায়। এভাবে একটি গণরুমে দুই শতাধিক ছাত্রীকে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীহলগুলোর গণরুমে। গণরুমের এসব বাসিন্দাকে ভোগান্তি পোহাতে হয় রান্না করতে গিয়েও। নিত্য বিড়ম্বনা আছে শৌচাগার নিয়েও; গড়ে ৩০ জন ছাত্রীর জন্য আছে মাত্র একটি শৌচাগার। শিক্ষার্থী, প্রশাসন থেকে শুরু করে সবাই বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি ছাত্রীহলের গণরুমের বর্তমান দশা যেকোনো শরণার্থী শিবিরের চেয়েও করুণ। এসব হলের হাজারের বেশি ছাত্রীর দিন কাটছে মানবেতর অবস্থায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, ৯ হাজার ৩৪৬ জন ছাত্রীর বিপরীতে সিট রয়েছে ৪ হাজার ৩৫৪টি; যা মোট আবাসনের মাত্র ৪৬ শতাংশ। পর্যাপ্ত আবাসন সুবিধা না থাকায় ছাত্রীদের ছয়টি আবাসিক হলেই গণরুম সৃষ্টি হয়েছে। হল প্রাধ্যক্ষরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছাত্রী নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা। আর্থিক অসচ্ছলতার কথা উল্লেখ করে তারা গণরুমের সিটের জন্য বিভিন্ন অনুরোধ করেন। অনেকের অভিভাবক এসে মেয়ের নিরাপত্তার কথা বলে গণরুমে সিটের জন্য কাকুতি-মিনতি করেন। তখন বাধ্য হয়ে সিটের তুলনায় অধিক শিক্ষার্থী রাখতে হয়। সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষ ও দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্রীদের গণরুমে থাকতে দেওয়া হয়। এর মধ্যে মন্নুজান হলের চারটি গণরুমে প্রায় দুই শতাধিক ছাত্রী, তাপসী রাবেয়া হলের দুটি গণরুমে ২৮০ জন, খালেদা জিয়া হলের দুটি গণরুমে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী থাকেন। এছাড়া বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের একটিমাত্র গণরুমে এ বছর ২১০ জন ছাত্রীকে থাকতে দেওয়া হয়েছে, বেগম রোকেয়া হলে পাঁচটি রুমে প্রায় ২৫০ জন ছাত্রী ও রহমতুন্নেছা হলে কয়েকটি গণরুমে প্রায় ২৫০ ছাত্রী থাকেন। এই পরিস্থিতি সম্পর্কে তাপসী রাবেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ফেরদৌসী মহলের বক্তব্য বেশ স্পষ্ট। তিনি সরাসরিই বলেছেন, ছাত্রীদের জন্য হলের সংখ্যা না বাড়ালে এসব সংকট কাটবে না। অন্যদিকে, প্রশাসন জানিয়েছে, প্রতি বছর যত সংখ্যক মেয়ে ভর্তি হচ্ছে তাদের সবাইকে জায়গা দেওয়ার মতো সিট ক্যাপাসিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই। কারণ আগে ছাত্রীদের সংখ্যা কম থাকলেও এখন ছেলে-মেয়ে প্রায় সমান হারে ভর্তি হচ্ছে। কিন্তু ছেলেদের জন্য ১১টি হল থাকলেও মেয়েদের জন্য পর্যাপ্ত হল নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সংকটের এমন করুণ পরিস্থিতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা ইউজিসি কারুরই অজানা নয়। কিন্তু আবাসন সংকট দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেই। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ২০১৯ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৯৫৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে আবাসন সুবিধা রয়েছে মাত্র ৯৯ হাজার ৭২৩ জন শিক্ষার্থীর। প্রতিবেদন অনুযায়ী শতকরা ৬৬ শতাংশ শিক্ষার্থীই আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। তুলনায় কম হলেও বহু বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষকদের আবাসনেরও সংকট রয়েছে। অথচ আবাসন সংকটের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা দরকার। কারণ শিক্ষা কেবল শ্রেণিকক্ষের বিষয় নয়। শ্রেণিকক্ষের মতোই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মুক্ত পরিসর আর মানসম্মত আবাসনের নিশ্চয়তাও সমান জরুরি। এসব জরুরি বিষয় নিশ্চিত করা না গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক জ্ঞানতাত্ত্বিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক পরিসরও বিকশিত হবে না। আমরা আশা করব কেবল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সব বিশ্ববিদ্যালয়ই ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসন সংকট দূর করতে সচেষ্ট হবে।
বাংলাদেশে টিকে থাকতে হলে একটু ‘কায়দা করে’ চলতে হয়। সোজা পথে না চলে কিছুটা বাঁকা রাস্তায় যাওয়াই যেন এখানকার রীতি। এখানে নৈতিকভাবে ভালো লোকদের বলা হয় ‘সহজ-সরল’। এই বলার মধ্যে আবার একটুখানি প্রচ্ছন্ন দরদ থাকে। সৎ লোকদের প্রতি দরদ না দেখিয়েও উপায় নেই, কেননা এরা পদে পদে বিপদে পড়েন। বেশিরভাগ সরকারি অফিসে বৈধ এবং নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে কোনো কাজ করাতে চাইলে যে কাজটার জন্য যে সময় লাগে সেই একই কাজে যখন অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়, তার অর্ধেক সময় লাগে। অনিয়ম যখন সমস্ত ব্যবস্থাকে গ্রাস করে তখন শিক্ষাব্যবস্থাও এর বাইরে যেতে পারে না। কোনো জাতিকে ধ্বংস করতে হলে এর শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করলেই চলে। বিগত কয়েক বছর ধরে আমরা দেখছি উচ্চমাধ্যমিকে খুব ভালো রেজাল্টধারী শিক্ষার্থীরাও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় টিকছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি দূরে থাক, এসব শিক্ষার্থী পাস নম্বরও পাচ্ছে না। অর্থাৎ, ধরে নিতে হবে গলদটা গোড়ায়। প্রায় শতভাগ পাস আসলে কতটা সংখ্যাগত আর কতটুকু গুণগত সেটা এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে। সময় এসেছে পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকেই প্রশ্ন করার। নানা সময়ে সংবাদ মাধ্যমে এসেছে পরীক্ষার খাতা যারা দেখেন তাদের প্রতি এক ধরনের মৌখিক নির্দেশনা আছে শিক্ষার্থীদের যেন ফেল করানো না হয়। নির্দেশনা যেহেতু মৌখিক, তাই এ অভিযোগ প্রমাণ করা শক্ত। কিন্তু সত্যিকার অর্থেই যে ‘পাস করা’ শিক্ষার্থীদের ঘটে তেমন বিদ্যাবুদ্ধি নেই তার প্রমাণও তো নেহাত কম নয়।
অনেকদিন ধরে ‘সৃজনশীল’ নামক এক ধরনের শিক্ষাপদ্ধতি বাংলাদেশে চলমান। নামে সৃজনশীল হলেও এটা আসলে প্রকৃত অর্থে সৃজনশীল নয়। প্রশ্নপত্রে আসা ‘উদ্দীপক’ নামক কয়েক লাইনের রচনার সঙ্গে পাঠ্যবইয়ে থাকা কোনো একটি গদ্যের তুলনামূলক বিচার ছাড়া ‘সৃজনশীল’ শিক্ষাপদ্ধতিতে নতুন কিছু আমাদের চোখে পড়েনি। তা ছাড়া সৃজনশীল প্রশ্ন শিক্ষকরা কতটুকু বোঝেন তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ফলে পাঠদানে রয়ে যাচ্ছে প্রচুর খামতি। সৃজনশীল শিক্ষাপদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা আবার মুখস্ত করছে ‘সহায়ক’ বই। গাইড বই বন্ধ হয়েছে বেশ আগে। কিন্তু ঠিকই ‘কায়দা করে’ চলছে এসব ‘সহায়ক বই’। শুধু নামেই আলাদা।
সম্প্রতি এইচএসসির প্রশ্নপত্রের কয়েকটি প্রশ্ন নিয়ে কথা উঠেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে তুমুল সমালোচনা। প্রশ্নপত্রে কমপক্ষে তিনটি সমালোচনাযোগ্য উপাদান ছিল। ৬ নভেম্বর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের বাংলা-২য় প্রশ্নপত্রের একটি প্রশ্ন ছিল এমন ‘প্রখ্যাত সাহিত্যিক আনিসুল হক লেখালিখি করে সুনাম অর্জন করতে চান। ২১শে বইমেলায় তাড়াহুড়ো করে আনিসুল হক বই প্রকাশ করেন। পাঠকদের কাছে তার লেখা খাপছাড়া মনে হয়। ফলে পাঠকদের কাছে তিনি সমাদৃত হন না।’ এরপর প্রশ্ন করা হয়েছে, (ক) ‘যশ’ শব্দের অর্থ কী? (খ) ‘লেখা ভালো হইলে সুনাম আপনি আসিবে।’ উক্তিটি ব্যাখ্যা করো। (গ) আনিসুল হক কোন কারণে ব্যর্থ, তা ‘বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন’ রচনার আলোকে ব্যাখ্যা করো। (ঘ) সাহিত্যের উন্নতিকল্পে ‘বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন’ রচনায় লেখকের পরামর্শ বিশ্লেষণ করো। এই প্রশ্নে প্রথম মূল সমস্যা হলো ব্যক্তি আক্রমণ এবং বিদ্বেষ ছড়ানো। আনিসুল হক লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। ফলে প্রশ্নকর্তা না জেনেই আনিসুল হকের নাম নিয়েছেন সেটা ভাবার অবকাশ নেই। এ রকম একটা পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে তাকে হেয় করা অত্যন্ত নিম্নরুচির কাজ। তাছাড়া উদ্দীপকের প্রথম বাক্যটিও ভুল। যিনি ‘প্রখ্যাত’ সাহিত্যিক তিনি কেন ‘সুনাম’ অর্জন করতে চাইবেন! প্রখ্যাত মানেই তো যিনি ইতিমধ্যে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করার মতো দায়িত্বশীল লোকজন ভুল বাক্য লিখবেন এটাও মেনে নেওয়া মুশকিল। আরেকটি প্রশ্নে ছড়ানো হয়েছে সাম্প্রদায়িকতা। সেখানকার উদ্দীপকে বলা হয়েছে ‘নেপাল ও গোপাল দুই ভাই। জমি নিয়ে বিরোধ তাদের দীর্ঘদিন। অনেক সালিশ-বিচার করেও কেউ তাদের বিরোধ মেটাতে পারেনি। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এখন জমির ভাগ- বণ্টন মামলা চলছে আদালতে। ছোট ভাই নেপাল বড় ভাইকে শায়েস্তা করতে আব্দুল নামের এক মুসলমানের কাছে ভিটের জমি এক অংশ বিক্রি করে। আব্দুল সেখানে বাড়ি বানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। কোরবানির ঈদে সে নেপালের বাড়ির সামনে গরু কোরবানি দেয়। এই ঘটনায় নেপালের মন ভেঙে যায়। কিছুদিন পর কাউকে কিছু না বলে জমি-জায়গা ফেলে সপরিবারে ভারতে চলে যায় সে।’
সাম্প্রদায়িকতার সমস্যা ও সংকট নিয়ে যখন বাংলাদেশে বহুল আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে তখন এমন প্রশ্ন এইচএসসির শিক্ষার্থীদের মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে সেটা বিবেচনায় নেওয়া উচিত ছিল। উল্টোদিকে দেশে অনেক ইতিবাচক দৃষ্টান্ত আছে অসাম্প্রদায়িক মানসিকতার। হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় গিয়ে দেখেছি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সম্মান রেখে সেখানকার বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হয় না। অথচ প্রশ্নের উদ্দীপকটিতে ঘৃণা ও বিদ্বেষের বাড়াবাড়ি রয়েছে। দুই সম্প্রদায়ের মানুষের জন্যই উদ্দীপকটি অস্বস্তিকর। দায়িত্ববোধ ও কাণ্ডজ্ঞানের অভাব থাকলেই কেবল এমন প্রশ্ন করা সম্ভব। আরেকটি উদ্দীপকে বলা হয়‘ফারজানা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত একজন কলেজ শিক্ষিকা। অনেক আগেই বিয়ের বয়স পেরিয়েছেনতাই তিনি বিয়ে করেননি। ছাত্রজীবনে তিনি ভালোবেসেছিলেন ব্যক্তিত্বহীন একজনকে। কারণ বাবা-মার যৌতুকের চাপের মুখে সে ফারজানাকে বিয়ের কথা অস্বীকৃতি জানায়। এরপর থেকে ফারজানা তার কলেজ আর একাকিত্ব জীবন কাটায়।’ উদ্দীপকটিতে সংবেদনশীলতার লেশমাত্র নেই। নারীশিক্ষার প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিও এখানে স্পষ্ট। আলোচ্য তিনটি উদ্দীপকই রচনা হিসেবে খুব নিম্নমানের তো বটেই, এসবের অভিঘাত সম্পর্কেও প্রশ্ন প্রণয়নকারীরা সচেতন নন।
সৃজনশীল প্রশ্ন নামে বাংলাদেশে যা চালু আছে তাতে কোনো প্রকার সৃজনশীলতা শেখানো সম্ভব না। সত্যিকার অর্থে যদি সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হয় তাহলে যেসব দেশে সৃজনশীল শিক্ষা চালু আছে সেখান থেকে পদ্ধতি দেখে-শুনে-বুঝে প্রথমে আমাদের শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করতে হবে। প্রকৃত বিদ্বান মানুষদের যুক্ত করতে হবে এসব কাজের সঙ্গে। তারপর ভাবতে হবে এটি চালু করার কথা। গোঁজামিল দেওয়া নামসর্বস্ব শিক্ষাপদ্ধতিকে সৃজনশীল নামে চালিয়ে দেওয়া কোনো কাজের কথা নয়।
বাংলাদেশে যেহেতু ‘কায়দা করে’ অনেক কিছু হওয়া সম্ভব, শিক্ষকতার চাকরিও এর ব্যতিক্রম নয়। সবাই জানে সরকারি চাকরি পেতে বড় অঙ্কের টাকা দিতে হয়। মেধাহীন মানুষদের শিক্ষকতার মতো গুরুত্বপূর্ণ পেশায় বসালে তার খেসারত পুরো জাতিকেই দিতে হবে। আমরা, আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকেরা অন্ধ হয়ে থাকতে পছন্দ করি, কিন্তু তাতে প্রলয় বন্ধ হয় না।
লেখক : কবি ও সাংবাদিক
রাজধানী ঢাকায় ছোট্ট একটি কম্পোজ ও ফটোকপির দোকান চালান জালাল। মাসে যা আয় করেন তা দিয়েই চলে তার চার সদস্যের পরিবার। দোকানে শিক্ষার্থীদের খাতা-কলম আর কাগজও বিক্রি করেন তিনি। কিন্তু মাস দু-এক ধরে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই তার জন্য কষ্টকর হয়ে পড়েছে। হঠাৎ করে কাগজের বাজারে অস্থিরতাই এর প্রধান কারণ। কয়েক গুণ বেশি টাকা দিয়েও নিয়মিত মিলছে না প্রিন্ট ও ফটোকপির কাগজ। বেশি টাকায় কাগজ মিললেও কাস্টমার বাড়তি টাকায় প্রিন্ট ও ফটোকপি করতে নারাজ। এ নিয়ে নিয়মিত চলছে বচসা। তার ভাষায়, ‘কাস্টমার সাফ বলে দেয়আপনারা তো ডাকাত। সরকার তো কাগজের দাম বাড়ায়নি। আপনি কেন বেশি নেবেন? আমরা কীভাবে বোঝাব যে সরকার তো কাগজের বাজারটা নিয়ন্ত্রণও করছে না।’
জালাল বলছিলেন, ‘কাগজের দাম বাড়ার কারণে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের খাতার বিক্রিও কমেছে কয়েক গুণ। কাগজের প্যাকেট, কার্টুনসহ কাগজসংশ্লিষ্ট পণ্যের দামও অনেক। এভাবে কাগজের দাম বাড়লে আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের পথে বসতে হবে। শিক্ষার্থী আছে এমন পরিবারগুলোকেও গুনতে হবে খরচের বাড়তি টাকা। এর প্রভাব পড়বে সরকারের ওপরও। তাই কাগজের দামের লাগাম টানতে সরকারকেই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।’
কাগজের মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের ওপরও যে এর প্রভাব পড়ছে তা উঠে আসে ঢাকার কাফরুল এলাকার এ ব্যবসায়ীর ভাষ্যে। কয়েক মাস পরেই বইমেলা আর জানুয়ারি মাসে নতুন বই লাগে স্কুল-কলেজে। ঠিক তখনই কাগজের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বাজারে সরবরাহেও টান পড়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানান সংশ্লিষ্টরা। এ সুযোগে হু-হু করে বাড়ছে কাগজের দাম। পাইকারিতে কাগজের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা পণ্যের দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে পাইকারি বাজারে কাগজের দাম প্রতিদিনই বেড়েছে।
হোয়াইট প্রিন্ট কাগজের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে টনপ্রতি ২৫ হাজার টাকা বেড়ে দাম দাঁড়ায় ১ লাখ ৩৫ হাজার থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। প্রতি টন হোয়াইট নিউজপ্রিন্ট কাগজের দাম বেড়েছে ১৫ হাজার টাকা। এ কাগজের দাম ২০ হাজার থেকে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে প্রতি টন ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকায়। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে লেজার কাগজের দাম। প্রতি টনের দাম ৩০ হাজার টাকা বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। প্রতি টন নিউজপ্রিন্ট কাগজের দাম ৬৪ হাজার থেকে বেড়ে ৮৫ হাজার টাকা হয়েছে। এ কাগজের দাম গত দুই সপ্তাহে বেড়েছে ৩৩ শতাংশ। শুধু যে কাগজের দাম বেড়েছে তা নয়। বেড়েছে মলাটের কাগজ, আর্ট কার্ড ও রঙিন কাগজের দামও। কিন্তু কাগজের এ দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের তদারকি, কোনো উদ্যোগ কিংবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তির বক্তব্যও আমরা পাইনি।
বর্তমান সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে বই তুলে দেওয়া। কাগজের বাজারে অস্থিরতার কারণে সেটিও অনেকটা শঙ্কার মুখে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে দেরিতে কাজ পাওয়া, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কাগজের দাম বেড়ে যাওয়া, বিদ্যুৎ-বিভ্রাটসহ নানা চ্যালেঞ্জের কথা বলছেন মুদ্রণ ব্যবসায়ীরা।
তবে বই পাওয়া বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জোর আশ্বাস দিলেও বই ছাপার কাজ যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে নতুন বছরের প্রথম দিন প্রাথমিকের সব পাঠ্যবই পাওয়ার সুযোগ কম বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। কাগজের মূল্যবৃদ্ধি সরাসরি শিক্ষা ও শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট কাজকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। প্রতিটি পরিবারের শিক্ষার খরচও তখন বেড়ে যায়, যা চলছে বর্তমানে।
কিন্তু কেন কাগজের এই লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি? গণমাধ্যমের সংবাদ বলছে, কাগজের কাঁচামালের সংকট রয়েছে। বিদ্যুতের সংকটের কথাও তুলে ধরছেন ব্যবসায়ীরা। ব্রাইটনেস কাগজের জন্য লাগে ভার্জিন পাল্প। চাহিদা থাকলেও যেটা পর্যাপ্ত পরিমাণ আমদানি হয়নি। ডলার সংকটের কারণে এখন আমদানিও করা যাচ্ছে না। পাল্পের দাম দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় কাগজকল মালিকরা তা আমদানিও করছেন না। ফলে কাগজের চাহিদার এই সময়ে সংকট তৈরি হচ্ছে।
এ অবস্থা চলতে থাকলে কাগজের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হবে প্রকাশনা শিল্প। এমনটাই মনে করছেন প্রকাশকরা। করোনা পরিস্থিতির পর সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৩ সালেই স্বাভাবিক সময়ে বইমেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। মেলা উপলক্ষে দেশীয় প্রকাশনীগুলোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে এখন থেকেই। কিন্তু কাগজের দামসহ সব খরচ বেড়ে যাওয়ায় বইয়ের দামও অনেকটাই বাড়বে। এতে পাঠকরা বই কিনতে এসে বড় একটা ধাক্কা খাবেন এবং বই বিক্রি স্বাভাবিকভাবেই কমে যাবে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। ফলে দেশে বই বিক্রির সবচেয়ে বড় মৌসুমে বাড়তি দামে বইয়ের বেচাকেনা নিয়ে এখনই চিন্তার ভাঁজ অনেকের কপালেই।
অনেক প্রকাশক বাছাই করে নতুন বই বা কেউ কেউ নতুন বই করবেন না বলেও পরিকল্পনা করছেন। এতে প্রকাশনা শিল্প যেমন হুমকির মুখে পড়বে, তেমনি দেশের শিল্প-সাহিত্যের অগ্রগতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যা মোটেই কাম্য নয়। তবে বিক্ষিপ্তভাবে প্রকাশকরা গণমাধ্যমের কাছে কাগজের মূল্যবৃদ্ধিতে তাদের ক্ষতির কথা তুলে ধরলেও সম্মিলিতভাবে এখনো সরকারের কাছে তারা এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এমন কোনো খবর আমরা পাইনি। যেটি হওয়ার উচিত ছিল বলে মনে করেন অনেকেই। এ বিষয়ে প্রকাশকদের ঐক্যবদ্ধতার ঘাটতি রয়েছে এবং সে সুযোগে একশ্রেণির ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সময় কাগজের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন বলে মত দেন কেউ কেউ। প্রকাশনা শিল্পে সৃজনশীল বই প্রকাশের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে কাগজের দামসহ বই-সংক্রান্ত সব বিষয়ের প্রতি নজর দিতে সরকারিভাবে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করাও উচিত বলে মনে করেন লেখক ও প্রকাশকরা। এতে শিল্প-সাহিত্যের অগ্রগতিতে বাধাগ্রস্ত হওয়ার সুযোগও কমে আসবে বলে মনে করেন তারা।
একসময় কাগজের মূল্যবৃদ্ধিকে জাতীয় সংকট হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ সালের ৮ জানুয়ারি বরিশালে ঘূর্ণিঝড় এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি। সেখানে অবস্থানকালে তার সঙ্গে দেখা করতে যান বরিশাল থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকার প্রকাশকরা। তারা কেন্দ্রীয় সরকারের নিউজপ্রিন্ট কাগজ বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানান। প্রকাশকদের সব কথা শুনে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ইহা জাতীয় জীবনের একটি আশু সংকট। দুই বৎসরে দুই ধাপে কাগজের টনপ্রতি মূল্যবৃদ্ধির কারণে এর তীব্র প্রভাব পড়িবে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতিতে, যা এই অঞ্চলের মানুষের ওপর নতুন আরেকটি বোঝার শামিল। জাতীয় সংবাদপত্র শিল্প যাহাতে এই সংকট থেকে উত্তরণ পায় তাহার ব্যবস্থা লওয়া হইবে।’
তাই বঙ্গবন্ধুকন্যার আমলে কাগজের সংকট ও লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিকে সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে দ্রুত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেএমনটাই আমাদের আশা।
লেখক: লেখক ও গবেষক
ব্যবসায়ী, সমাজসেবক ও দানবীর রণদাপ্রসাদ সাহা ‘আর পি সাহা’ নামেও পরিচিত। তিনি ১৮৯৬ সালের ১৬ নভেম্বর ঢাকার অদূরে সাভারের কাছৈড় গ্রামে দরিদ্র একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৪ বছর বয়সে আরপি সাহা কলকাতায় যান এবং বিপ্লবী দলে যোগ দেন। কয়েকবার কারাবরণও করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ-বেঙ্গল সেনা মেডিকেল কোরে যোগ দিয়ে ইরাকে যান; সেনাবাহিনীতে কমিশনও লাভ করেন। এরপর কয়লা সরবরাহের ব্যবসা শুরু করেন। চার বছরেই তিনি কলকাতায় বিশিষ্ট কয়লা ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান। ১৯৩৮ সালে নিজ গ্রাম মির্জাপুরে তিনি ২০ শয্যার হাসপাতাল এবং ২০০ ছাত্রীর থাকা ও পড়াশোনার উপযোগী আবাসিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিনি গরিবদের কল্যাণে ‘কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল’ নামে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করান। মায়ের স্মরণে মির্জাপুরে ‘কুমুদিনী মহিলা কলেজ’ ও বাবার নামে ‘দেবেন্দ্র কলেজ’ স্থাপন করেন। মির্জাপুরে ভারতেশ্বরী হোমস প্রতিষ্ঠা তার অন্যতম কীর্তি। স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ১৭ মে তিনি পাকিস্তানি সেনাদের হাতে শহীদ হন। ১৯৭৮ সালে সরকার তাকে এবং ১৯৮৪ সালে তার প্রতিষ্ঠিত কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টকে সমাজসেবায় অবদানের জন্য স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার দেয়।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আজমপুর ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামে স্ত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় চাচাতো ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে পলাশ হোসেন (২৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
শনিবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত পলাশ হোসেন ওই গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, নিহত পলাশ হোসেনের চাচাতো ভাই সুমন প্রায়ই পলাশের স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করত। শনিবার সন্ধ্যায় আবারো উত্ত্যক্ত করে। পলাশ বাড়িতে এলে বিষয়টি তাকে জানায় তার স্ত্রী। এ ঘটনায় পলাশ তার চাচাতো ভাইয়ের কাছে বিষয়টির প্রতিবাদ করতে গেলে উভয়ের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সুমন ছুরি দিয়ে পলাশকে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই পলাশ মারা যায়।
মহেশপুর থানার ওসি খন্দকার শামীম উদ্দিন বলেন, নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। নিহত পলাশ পেশায় ভ্যানচালক ছিলেন, সঙ্গে কৃষিকাজও করত।
মার্চে ঘরের মাঠে দুটি প্রীতি ম্যাচের পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে দেখা যায়নি আর্জেন্টিনাকে। তিন মাস পর আগামী মাসে তারা খেলবে আরও দুটি প্রীতি ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে সেই ম্যাচের জন্য ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করেছেন লিওনেল স্কালোনি। তবে ঘোষিত সেই দলে নেই লাউতারো মার্তিনেজ।
আর্জেন্টিনার ক্রীড়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস ও ওলে তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গোড়ালির চোটের কারণে মার্তিনেজ চিকিৎসাধীন আছেন। তাই তাকে জাতীয় দলের স্কোয়াডে রাখা হয়নি।
চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে ইন্টার মিলানের হয়ে গোল করেছিলেন। ফাইনালেও তাকে ইতালিয়ান ক্লাবটির হয়ে খেলতে দেখা যেতে পারে। তারপরই তিনি মাঠের বাইরে চলে যাবেন। ঐ সময়ে তিনি বিশ্রামে থাকবেন। আর তাই কোচ স্কালোনি তাকে দলে রাখবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ের অন্যতম সদস্য মার্তিনেজ। তবে পুরো টুর্নামেন্টে তিনি ব্যাথানাশক ঔষধ খেয়ে খেলছিলেন।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ও ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৪ জন নেতা কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার সাফল্যে খুশি বিএনপি। দলটির নেতারা মনে করছেন, প্রতিকূল পরিবেশে জয়ী হয়ে আসা দুষ্কর। ক্ষমতাসীনদের দাপটের মধ্যে জয়ী হয়ে আসায় আগামীর আন্দোলন সংগ্রামে স্থানীয় রাজনীতিতে তারা আরও প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন। তবে জয়ী হলেও দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় এখনই এই নেতাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হচ্ছে না। পরবর্তিত পরিস্থিতিতে এসব নেতার দলের সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলে, সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে নিজেদের ভূমিকা রাখতে পারলে এবং দলের শক্তি বাড়ানোর প্রয়োজনে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত দিতে পারে বিএনপি।
যদি নিজেদের ভুল স্বীকার করে নির্বাচিত কাউন্সিলরদের অনেকেই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে দলের নীতিনির্ধারকদের কাছে চিঠি দিয়েছেন। ওই চিঠিতে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বাস্তবতা তুলে ধরে দলীয় কর্মকা-ে যোগদানের সুযোগ চাওয়া হয়েছে। এই নেতারা মনে করেন, বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা দাবিতে সর্বক্ষেত্রে শক্তির অংশ হিসেবে গাজীপুরেও তারা ভূমিকা রাখতে চান।
বহিষ্কৃতদের এমন মনোভাবের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিএনপির একাধিক নেতা জানান, চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২০০১-পরবর্তী সময়ে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটির বর্তমান ও সাবেক জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সারা দেশের জনপ্রতিনিধিদের ১০টি ভাগে ভাগ করে প্রায় ৪ হাজার জনপ্রতিনিধির উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তারেক রহমান বলেছেন, সব মান-অভিমান ভুলে সুষ্ঠু নির্বাচন আদায়ে দলটির কেন্দ্রীয় নির্দেশ পালন ও বাস্তবায়ন করুন।
জানতে চাইলে ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর ও সদর থানা যুবদলের আহ্বায়ক হাসান আজমল ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে জানান, কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়রদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে আমরা দেখিনি। ফলে গাজীপুর নির্বাচনে কাউন্সিলর যারা প্রার্থী হয়েছেন তারাও পূর্বের সিদ্ধান্তগুলো ফলো করেছেন। কিন্তু দল যখন আমাদের নির্বাচন থেকে সরে আসার কথা জানিয়েছে, তখন মনোনয়ন প্রত্যাহারের সুযোগ ছিল না। ফলে ১৭ মে বহিষ্কারাদেশের চিঠি দেওয়ার পর ১৯ মে আমি সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথা জানিয়েছি। যেহেতু আমি ২০ বছর ধরে এই এলাকার জনপ্রতিনিধি, তাই ভোটাররাই আমাকে জয়ী করেছেন। তিনি জানান, আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভুল করেছি, দলের সিদ্ধান্তই সঠিক এমনটি জানিয়ে ১৯ মে আমি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বরাবর ক্ষমা চেয়ে চিঠি দিয়েছি, বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়ার জন্য। দলের মহাসচিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকদের বরাবর প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছে। তবে নির্বাচিত হওয়ার পর এখনো কেন্দ্রে যোগাযোগ করিনি। খুব শিগগিরই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরবর্তী দিকনির্দেশনা চাইব।
২৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী কাউন্সিলর ও সদর থানার বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক হান্নান মিয়াও জানিয়েছেন, ক্ষমা চেয়ে কেন্দ্রে চিঠি দেবেন।
গত ১৭ মে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির ২৯ নেতার আজীবন বহিষ্কারের কথা জানিয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠানো হয়।
দলটির নীতিনির্ধারকদের শঙ্কা ছিল, অনেক জনপ্রতিনিধিকে নানা প্রলোভনে ফেলে কিংবা তাদের রাগ-ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে দলের ব্যানারে নির্বাচনে নিতে চেষ্টা করবে সরকার। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া উপনির্বাচনের পর সেই প্রবণতা দেখা গেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলের একটি অংশকে এই প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে নিতে চায় এমন আলোচনা রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। এখনই কঠোর না হলে দলের শৃঙ্খলা ফেরানো যাবে না মনে করেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এমন বাস্তবতায় দলের নেতাদের আগেই সতর্ক করা হয়েছিল। সতর্কতা আমলে না নিয়ে যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি কার্যকর করে ভবিষ্যতে নেতাদের শৃঙ্খলার মধ্যে রাখার কৌশল নিয়েছে দলটি।
জানতে চাইলে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেখানে আমরা এই সরকারের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়া জন্য আন্দোলন করছি, এই মুহূর্তে তাদের নির্বাচনে যাওয়া উচিত ছিল না। দলীয় শৃঙ্খলা ফেরাতে আমাদের কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন মূল ভিত্তি বিএনপির রাজনীতি করার মধ্য দিয়ে। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে তারা নির্বাচন করে জয়ী হলে বিএনপির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ দেওয়া যেত। কিন্তু তারা দলের বৃহত্তর স্বার্থের প্রতি নজর না দিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থের প্রতি মনোযোগ বেশি দিয়েছেন।
তবে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান পর্যায়ের এক নেতা জানান, কাউন্সিলর পদে জয়ী হওয়ায় মূলত বিএনপি খুশি। কেননা, দলের স্বার্থে যেকোনো সময় তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে কাজে লাগানো যাবে। আবার বহিষ্কার থাকায় দলে ফিরতে এসব নেতারা দলীয় কর্মকা-ে আরও বেশি সক্রিয় থাকবেন। ফলে বিএনপির তাদের বিষয়টি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে অংশ নেওয়া দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক তৈমুর আলম খন্দকারের মতো ক্ষমা চেয়ে আবেদন করলেও গ্রহণ না করে ঝুলিয়ে রাখবে।
সূত্রগুলো বলছে, ১৫, ১৯, ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৮, ৩০, ৪০, ৪২, ৪৮ ও ৫৫ এবং সংরক্ষিত ১৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিএনপির বহিষ্কৃতরা জয়ী হয়েছেন। এই ভোটের এমন ফলাফল নিয়ে স্থানীয়ভাবে নানা আলোচনা হচ্ছে। স্থানীয় রাজনীতিকদের অনেকে মনে করছেন, ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা ও বিএনপির নীরব ভোটারদের সমর্থনের কারণেই তারা জয়ী হয়েছেন। তবে আলোচনা রয়েছে- যেসব ওয়ার্ডে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীরা জিতেছেন, সেসব ওয়ার্ডে মেয়র পদে জায়েদা খাতুন বেশি ভোট পেয়েছেন। বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীরা সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে ‘আঁতাত করায়’ ফলাফল এমন হয়েছে।
তবে স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলছেন, নির্বাচনের পরিবেশ ভালো থাকায় বিএনপি সমর্থকদের অনেকেই নিজ দলের কাউন্সিলর প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। আর নৌকা প্রতীকের পরাজয় ঘটাতে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনকে ভোট দিয়েছেন।
গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নান গত শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তারা দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার হয়েছেন। তাদের নির্বাচিত হওয়া বা না হওয়ায় বিএনপির কিছু যায় আসে না।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।