
ব্যবসায়ী, সমাজসেবক ও দানবীর রণদাপ্রসাদ সাহা ‘আর পি সাহা’ নামেও পরিচিত। তিনি ১৮৯৬ সালের ১৬ নভেম্বর ঢাকার অদূরে সাভারের কাছৈড় গ্রামে দরিদ্র একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৪ বছর বয়সে আরপি সাহা কলকাতায় যান এবং বিপ্লবী দলে যোগ দেন। কয়েকবার কারাবরণও করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ-বেঙ্গল সেনা মেডিকেল কোরে যোগ দিয়ে ইরাকে যান; সেনাবাহিনীতে কমিশনও লাভ করেন। এরপর কয়লা সরবরাহের ব্যবসা শুরু করেন। চার বছরেই তিনি কলকাতায় বিশিষ্ট কয়লা ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান। ১৯৩৮ সালে নিজ গ্রাম মির্জাপুরে তিনি ২০ শয্যার হাসপাতাল এবং ২০০ ছাত্রীর থাকা ও পড়াশোনার উপযোগী আবাসিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিনি গরিবদের কল্যাণে ‘কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল’ নামে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করান। মায়ের স্মরণে মির্জাপুরে ‘কুমুদিনী মহিলা কলেজ’ ও বাবার নামে ‘দেবেন্দ্র কলেজ’ স্থাপন করেন। মির্জাপুরে ভারতেশ্বরী হোমস প্রতিষ্ঠা তার অন্যতম কীর্তি। স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ১৭ মে তিনি পাকিস্তানি সেনাদের হাতে শহীদ হন। ১৯৭৮ সালে সরকার তাকে এবং ১৯৮৪ সালে তার প্রতিষ্ঠিত কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টকে সমাজসেবায় অবদানের জন্য স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার দেয়।
প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক ইতিহাসেও বিশ্ববিদ্যালয়মাত্রই ছিল আবাসিক। অর্থাৎ সব শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের আবাসন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য শুধু শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পাঠ দেওয়া নয়; বরং জ্ঞানচর্চা করা, নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করা। তাই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষণিক নিবিড় আদান-প্রদানের সুবিধার্থে এই আবাসিক ব্যবস্থা। এভাবে শ্রেণিকক্ষ, পাঠাগার, আর গবেষণাগারে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নতুন জ্ঞান বিকাশের পথ তৈরি হয়। কিন্তু সেই বাস্তবতা আজ আর নেই। প্রশাসন শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট দূর করতে সচেষ্ট নয় বলেই বছরের পর বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হলে গাদাগাদি করে থাকছে শিক্ষার্থীরা। একই কারণে প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতেই তৈরি হয়েছে বহুল সমালোচিত ‘গণরুম’
সংস্কৃতি। প্রশ্ন হলো শিক্ষার্থীরা যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেও বছরের পর বছর যথাযথ আবাসনের সুবিধা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হয় তাহলে তারা শিক্ষায় মনোনিবেশ করবে কীভাবে?
দেশ রূপান্তরে মঙ্গলবার ‘এক কক্ষে ২০০ ছাত্রী’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের আবাসন সংকট নিয়ে হলেও আদতে দেশের বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রায় একই দশা। আবাসিক হলের সাধারণ কক্ষগুলোতে খানিকটা স্বস্তি মিললেও গণরুমের দশা সবসময়ই করুণ। গণরুমেও তিন ফুট প্রস্থের একেকটি বিছানায় থাকতে হচ্ছে দুজনকে। দুজনের জন্য বরাদ্দ মাত্র একটি করে টেবিল-চেয়ার। প্রতিটি বিছানার মাঝে দুই ফুটের ফাঁকা স্থানে রাখা টেবিলে বা নিচে রাখতে হয় দুজনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। ফলে ঘুম, খাওয়া, পড়াশোনা সবই করতে হয় বিছানায়। এভাবে একটি গণরুমে দুই শতাধিক ছাত্রীকে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীহলগুলোর গণরুমে। গণরুমের এসব বাসিন্দাকে ভোগান্তি পোহাতে হয় রান্না করতে গিয়েও। নিত্য বিড়ম্বনা আছে শৌচাগার নিয়েও; গড়ে ৩০ জন ছাত্রীর জন্য আছে মাত্র একটি শৌচাগার। শিক্ষার্থী, প্রশাসন থেকে শুরু করে সবাই বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি ছাত্রীহলের গণরুমের বর্তমান দশা যেকোনো শরণার্থী শিবিরের চেয়েও করুণ। এসব হলের হাজারের বেশি ছাত্রীর দিন কাটছে মানবেতর অবস্থায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, ৯ হাজার ৩৪৬ জন ছাত্রীর বিপরীতে সিট রয়েছে ৪ হাজার ৩৫৪টি; যা মোট আবাসনের মাত্র ৪৬ শতাংশ। পর্যাপ্ত আবাসন সুবিধা না থাকায় ছাত্রীদের ছয়টি আবাসিক হলেই গণরুম সৃষ্টি হয়েছে। হল প্রাধ্যক্ষরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছাত্রী নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা। আর্থিক অসচ্ছলতার কথা উল্লেখ করে তারা গণরুমের সিটের জন্য বিভিন্ন অনুরোধ করেন। অনেকের অভিভাবক এসে মেয়ের নিরাপত্তার কথা বলে গণরুমে সিটের জন্য কাকুতি-মিনতি করেন। তখন বাধ্য হয়ে সিটের তুলনায় অধিক শিক্ষার্থী রাখতে হয়। সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষ ও দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্রীদের গণরুমে থাকতে দেওয়া হয়। এর মধ্যে মন্নুজান হলের চারটি গণরুমে প্রায় দুই শতাধিক ছাত্রী, তাপসী রাবেয়া হলের দুটি গণরুমে ২৮০ জন, খালেদা জিয়া হলের দুটি গণরুমে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী থাকেন। এছাড়া বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের একটিমাত্র গণরুমে এ বছর ২১০ জন ছাত্রীকে থাকতে দেওয়া হয়েছে, বেগম রোকেয়া হলে পাঁচটি রুমে প্রায় ২৫০ জন ছাত্রী ও রহমতুন্নেছা হলে কয়েকটি গণরুমে প্রায় ২৫০ ছাত্রী থাকেন। এই পরিস্থিতি সম্পর্কে তাপসী রাবেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ফেরদৌসী মহলের বক্তব্য বেশ স্পষ্ট। তিনি সরাসরিই বলেছেন, ছাত্রীদের জন্য হলের সংখ্যা না বাড়ালে এসব সংকট কাটবে না। অন্যদিকে, প্রশাসন জানিয়েছে, প্রতি বছর যত সংখ্যক মেয়ে ভর্তি হচ্ছে তাদের সবাইকে জায়গা দেওয়ার মতো সিট ক্যাপাসিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই। কারণ আগে ছাত্রীদের সংখ্যা কম থাকলেও এখন ছেলে-মেয়ে প্রায় সমান হারে ভর্তি হচ্ছে। কিন্তু ছেলেদের জন্য ১১টি হল থাকলেও মেয়েদের জন্য পর্যাপ্ত হল নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সংকটের এমন করুণ পরিস্থিতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা ইউজিসি কারুরই অজানা নয়। কিন্তু আবাসন সংকট দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেই। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ২০১৯ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৯৫৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে আবাসন সুবিধা রয়েছে মাত্র ৯৯ হাজার ৭২৩ জন শিক্ষার্থীর। প্রতিবেদন অনুযায়ী শতকরা ৬৬ শতাংশ শিক্ষার্থীই আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। তুলনায় কম হলেও বহু বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষকদের আবাসনেরও সংকট রয়েছে। অথচ আবাসন সংকটের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা দরকার। কারণ শিক্ষা কেবল শ্রেণিকক্ষের বিষয় নয়। শ্রেণিকক্ষের মতোই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মুক্ত পরিসর আর মানসম্মত আবাসনের নিশ্চয়তাও সমান জরুরি। এসব জরুরি বিষয় নিশ্চিত করা না গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক জ্ঞানতাত্ত্বিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক পরিসরও বিকশিত হবে না। আমরা আশা করব কেবল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সব বিশ্ববিদ্যালয়ই ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসন সংকট দূর করতে সচেষ্ট হবে।
ডিম্বাস্ত্র আবার কী? প্রক্ষিপ্ত মিসাইল। মাথায় পড়লে টের পাবেন। নিক্ষিপ্ত ডিমের কথা শুনলে বেশি বিচলিত হয়ে থাকেন রাজনীতিবিদরা। বহু বছর আগে পচা ডিমের ব্যবহার নামে একটি প্রতিবেদন পড়েছিলাম। প্রশ্ন ছিল এত পচা ডিম যায় কোথায়? প্রায় সব বিক্রেতাই ‘কমন ক্রেতা’র কথা বলেছেনবেকারি মালিক। কেক তৈরি করতে পাইকারি দরে কিনে নেন। একজন বিক্রেতা তার দৃঢ় বিশ্বাস থেকে এমনও বলেছেন যে পচা ডিম না হলে কেক সুস্বাদু হয় না। রাজনীতিবিদদের ওপর নিক্ষেপ করার উদ্দেশ্যে কয়েকজন বিক্রেতার কাছ থেকে সতর্ক কিছু ক্রেতা ডিম কিনে থাকেন।
ডিন মার্টিনের গানটা এমনকি রাজনীতিবিদরাও ভালোবাসেন। গানের সারমর্ম অনেকটা এ রকম : তুমি যদি কারও ভালোবাসা না পাও, তুমি মানুষই না; ছুড়ে দেওয়া ডিম যদি তোমার মাথায় না ভাঙে তুমি রাজনীতিবিদই না।
বিশেষ করে ছুড়ে দেওয়া পচা ডিম যতক্ষণ না রাজনীতিবিদকে আঘাত করছে রাজনীতিবিদ হিসেবে তার নাবালকত্ব কাটছে না। এই সাবালকত্বের সঙ্গে চুল-দাড়ি-গোঁফ গজানোর সম্পর্ক অতি সামান্য। চুল-দাড়ি-গোঁফ কেবল গজায়নি, পেকে টাক পড়ার দশা হয়েছে এমন একজন বাহাত্তর-উত্তীর্ণ তিয়াত্তরে রাজা তৃতীয় চার্লস প্রায় মাতৃসম রানী ক্যামিলা পার্কারকে নিয়ে ইয়র্কশায়ার সফরে এসেছিলেন। উদ্দেশ্য সদ্য প্রয়াত রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের ভাস্কর্য উন্মোচন। এ সময়ই এক তরুণের ছুড়ে দেওয়া ডিম্ব-মিসাইল রাজাকে ও রানীকে আঘাত করতে চেষ্টা করে।
এই ডিম্ব-মিসাইলে একদা সূর্য না ডোবা সাম্রাজ্যের বৃদ্ধ রাজাকে সাবালক বানানোর উদ্যোগ নিয়ে এক তরুণ গ্রেপ্তার হন এবং তার এই টার্গেট শুটিংয়ের জন্য মোটেও অনুতপ্ত নন বলে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন। দেরিতে সাবালকত্বের দিকে ধাবিত তৃতীয় চার্লস নাবালকসুলভ আচরণ করে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেননি, কোনো রাজনৈতিক দলের অপকীর্তি বলে পাড়া মাত করেননি, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রও মনে করেননি, নিজেও ডিমকামানের গোলন্দাজের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেননি, এমনকি টাকা খরচ করে প্ল্যাকার্ড, পোস্টার, ফেস্টুন ইত্যাদি বানিয়ে রসিক তরুণটির ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই ধ্বনি দেওয়ার জন্য ছাত্র ও যুব ফ্রন্টকে রাস্তায় নামিয়ে দেননি। এটাই হচ্ছে ডিম্বাঘাতী সাবালকত্ব। ডিমের আঘাতে গত আড়াই হাজার বছরে কোনো রাজনীতিবিদ মৃত্যুবরণ করেননি। তবুও দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশে হলে নিক্ষেপকারী তাৎক্ষণিক মৃত্যু ভাগ্যক্রমে এড়াতে পারলেও হত্যাপ্রচেষ্টা মামলার আসামি হতোই। সাবালকত্ব পরিমাপে ডিম্বসূচকটি সমাদৃত।
‘গড সেইভ দ্য কিং’জাতীয় সংগীত হলেও ইয়র্কের তরুণরা চেঁচিয়েছে ‘তোমাকে রাজা মানি না’, নুয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ বছর বয়সী ডিম নিক্ষেপকারী চেঁচিয়ে বলেছেও ‘ক্রীতদাসের রক্তের ওপর এই দেশ দাঁড়িয়েছে’।
নিক্ষিপ্ত ডিম একটি নয় একাধিক। ৯ সেপ্টেম্বরের অনুষ্ঠানের সংবাদ কাভার করতে আসা গার্ডিয়ান প্রতিনিধি দেখেছেন তিনটি নিক্ষিপ্ত ডিম-মিসাইল আর বিবিসির প্রতিনিধি দেখেছেন পাঁচটি। তিন বা পাঁচ বিতর্কের চেয়ে হতাশাব্যঞ্জক বিষয়টি হচ্ছে উভয় মাধ্যমই দাবি করেছে ডিম রাজাকে আঘাত করতে পারেনি। রাজা ডিমকে ডজ দিয়েছেন। এই সংবাদে আবার দুটি আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে; প্রয়াত রাজার সাবালকসুলভ আচরণ তাহলে সাময়িক। দ্বিতীয়ত. একালের তরুণরা টার্গেট শুটিংয়ে ব্যর্থ। দুটোই চিন্তার কারণ।
পাঁচটি হোক কী তিনটি হোক একাধিক ডিম রাজার দিকে ধেয়ে এসেও তাকে ছুঁতে পারেনি টার্গেট শুটিংয়ে ব্যর্থতার কারণে তার সাজা হোক এতে কেউ আপত্তি করবে না। কিন্তু এটাকে যেন হত্যাপ্রচেষ্টা বলে প্রচার না করা হয়। এমনকি নিক্ষেপকারীর ইচ্ছে ছিল রাজাকে ব্যথা দেওয়াএ কথাও যেন বলা না হয়। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে ডিম নিক্ষেপ করা হয়েছেসরকারের পক্ষে এ কথা ছড়ানো হলেও ধৃত আসামির পক্ষে বলা হয় ব্যথা দেওয়ার ইচ্ছে থাকলে তো সেদ্ধ ডিম ছোড়া হতোডিমটা কাঁচা ছিল। সেদ্ধ বেশি হলে শক্তও বেশি, আঘাতে ব্যথা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
টার্গেট মিস করা নিয়ে আফসোস করে গেছেন সর্দার উধম সিং। লন্ডনের ক্যাক্সটন হলে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকা-ের সময়কার পাঞ্জাবের গভর্নর মাইকেল ও ডায়ার এবং তখনকার সেক্রেটারি অব স্টেট ফর ইন্ডিয়া লর্ড জেটল্যান্ডকে (১৯১৭ থেকে ১৯২২ বাংলা গভর্নর) হত্যার উদ্দেশ্যেই গুলি করেন। মাইকেল ও ডায়ার সেখানেই লুটিয়ে পড়েন কিন্তু টার্গেট হয়তো মিস করেছেন এমনই আশঙ্কা করেছিলেন তরুণ উধম সিং। পুলিশবেষ্টিত অবস্থায় তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘জেটল্যান্ড কি মরেছেন? তারও মরা উচিত। আমি তার ডানদিকে দুটো গুলি করেছিলাম।’
সর্দার উধম সিংয়ের সংশয় সঠিক। জেটল্যান্ড কেবল আহত হয়েছেন। তার গুলি টার্গেট ছুঁয়ে গেলে যথাস্থানে আঘাত করেনি। তিনি আফসোস করে বললেন, মাত্র একজন মরেছেন। আমি তো ভেবেছি আরও বেশি মারতে পারব। আমি নিশ্চয়ই খুব ধীরে ধীরে কাজটা করেছি। অনেক মহিলা ছিলেন তো তাই।
(মার্ডার অ্যাট ক্যাক্সটন হল ও অন্যান্য ইতিহাস : প্রকাশক এপিপিএল)
ডিমের দাম এতটাই বেড়েছে, কোথাও কোথাও সম্ভবত গুলির দামকেও ছাড়িয়ে গেছে। তার পরও যারা গাঁটের পয়সা খরচ করে ডিম কিনে কাঁচা অবস্থায় অথবা সেদ্ধ করে ছুড়ে মারেন তাদের উদ্দেশ্য যে উধম সিংয়ের মতো হত্যা করা নয় তা যে স্পষ্ট, আর যাই হোক ডিম নিক্ষেপকারীকে রাষ্ট্রদ্রোহীর মর্যাদা দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার কোনো মানে নেই। বরং টার্গেট মিস করার জন্য তাকে অদক্ষ বলে গালাগাল দিয়ে পিজিয়ন টার্গেট শুটিংয়ে হাত পাকানের সুযোগ করে দেওয়া উচিত বলেও পশ্চিমের ‘এগ প্রোজেক্টাইল অ্যানালিস্টরা’ মনে করেন।
মুনতাজার আল জাইদি নামের জুতো-ছোড়া সাংবাদিকের কথা মনে করুন। ১৪ ডিসেম্বর ২০০৮ প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ইরাকি প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকিকে নিয়ে বাগদাদে বহুসংখ্যক টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে যখন লাইভ সংবাদ সম্মেলন করছিলেন মুনতাজার নিজের পায়ের জুতো খুলে প্রেসিডেন্টের মাথা বরাবর ছুড়লেন, দক্ষ আক্রোব্যাটের মতো প্রেসিডেন্ট জুতোকে ডজ দিলেন। এক জুতোতে আর কাজ কীভেবে মুনতাজার দ্বিতীয়টিও ছুড়লেন। এবার প্রেসিডেন্ট মাথা সরালেন আর ইরাকি প্রধানমন্ত্রী নিক্ষিপ্ত দ্রব্যটি ধরার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেন। অনস্বীকার্য, সেদিন থেকে মুনতাজার আল জাইদি সেলিব্রিটি হিসেবে যাই নাম কামিয়ে থাকুন না কেন টার্গেট শুটিংয়ে তিনি যে অদক্ষ এটা কাঁচা শুটাররাও বলতে ছাড়েননি। তার কারাবাসকে তারা অদক্ষতার শাস্তি হিসেবে মেনে নিয়েছেন। মুনতাজার দুটো বাক্যমিসাইলও নিক্ষেপ করেছিলেন। প্রথম নিক্ষেপের সময় বলেছিলেন, ‘তোর মতো কুত্তার জন্য ইরাকি জনগণের শেষ চুম্বন।’ দ্বিতীয় নিক্ষেপের সময় বলেছেন, ‘এই জুতোটি ইরাকের বিধবা, এতিম ও নিহতদের পক্ষ থেকে।’
মুনতাজার মাত্র ৯ মাস জেল খেটে বেরিয়ে এসে প্যারিসে গিয়ে তারই এক স্বদেশির জুতো হামলার শিকার হয়েছেন। টার্গেট শুটাররা মনে করেন টার্গেট মিস করার শাস্তি এত কম হলে শুটিংয়ের সিরিয়াসনেস কমে যাবে।
* * *
খ্রিস্টজন্মের ৬৩ বছর পর রোমান গভর্নর ভেসপাসিয়ানকে যে প্রজা টার্গেট করেছিলেন তিনি লক্ষ্যভ্রষ্ট হননি। সেকালে ডিম কিংবা জুতো (কজনই বা জুতো পরতেন!) জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি, ছোড়া হতো আহার্য ও ফলমূল। ভেসপাসিয়ানের গায়ে লেগেছিল শালগম।
অপরাধী ও রাজনীতিবিদদের ডিম পাওয়ার ব্যাপারটি বেশ পুরনো। প্রথম এলিজাবেথের যুগে থিয়েটার দর্শকদের কেউ কেউ পকেটে পুরে দু-একটি ডিম নিয়ে যেতেন। কারও অভিনয় বিরক্তিকর হলে তার ওপর ডিম এসে পড়ত। শত শত দর্শকের মধ্যে কাজটা কোন অসন্তুষ্ট দর্শকেরকখনো কখনো তা শনাক্ত করা গেলেও তারা মামলা-মোকদ্দমা বা হেনস্তার শিকার হননি। বরং নাট্যপরিচালক অভিনেতাকে বদলে দিয়েছেন কিংবা তার চরিত্রে গতি সংযোজন করেছেন।
রাজনীতিবিদ নিজ দলের হলেও বক্তৃতার সময় যদি অসমীচীন কথা বলেন তাতে দলের ভাবমূর্তিও ক্ষুণœ হয়। সমর্থকদের বরাবরই প্রত্যাশা নেতার কথা জাদুতে তাদের মুগ্ধ করবেন, বিরক্তির উদ্রেক করবেন না। ইংরেজরা তাদের রাজনৈতিক সভাগুলোতেও ওভারকোটের ভেতর ডিম নিয়ে অংশগ্রহণ করতে শুরু করলেন। ১৮৭১ সালে প্রকাশিত জর্জ এলিয়টের বিখ্যাত উপন্যাস ‘মিডল মার্চ’-এ রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষী চরিত্র মিস্টার ব্রুক নির্বাচন প্রচারণায় যে ভাষণ দিলেন তা ছিল অগোছালো এবং দুর্বল। সুতরাং ভাষণের একপর্যায়ে তার ওপর ডিম বর্ষিত হতে শুরু করলরীতিমতো শিলাবৃষ্টির মতো।
ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে যে এগ ক্রিয়াপদ হিসেবে ব্যবহৃত হতে চলেছেপ্রাইম মিনিস্টার এগড্ মানে প্রধানমন্ত্রী ডিম্বাক্রান্ত হয়েছেন। সদ্য ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ঢোকা ঋষি সুনাক এখনো এগড্ হননি, তার মানে সাবালকত্বপ্রাপ্তি ঘটেনি। লিজ ট্রাসকে নাবালিকা অবস্থাতেই বিদায় নিতে হয়েছেমাত্র ৪৫ দিনের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, তিনি কোনো ডিম্বাস্ত্র আকর্ষণ করতে পারেননি। অথচ তাদের পূর্বসূরিদের সাফল্যের ইতিহাসে ডিম্বাস্ত্রের ভূমিকা খাটো করে দেখার উপায় নেই। বিংশ শতকের সবচেয়ে সফল প্রধানমন্ত্রীদের একজন (কেবল ব্রিটেনে নয় সমগ্র বিশে^ সাফল্যের নিরিখে) মার্গারেট থেচার ডিম খেয়েছেন। বাংলা অভিধান ডিম্বাক্রান্ত হওয়া শব্দটি গ্রহণ করেনি। ডিম খাওয়া দ্ব্যর্থবোধক শব্দযুগল হিসেবে গৃহীত হতে পারেনাশতায় ডিম খাওয়া কিংবা জনসভায় ডিম খাওয়া। থেচারের আগে ডিম খেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড উইলসন। পরে ডিম খেয়েছেন জন মেজর, টনি ব্লেয়ার, ডেভিড ক্যামেরন। ডিমভাগ্যই তাদের ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে বহাল রেখেছে। তাদের সাবালকত্বপ্রাপ্তি ঘটেছে।
বিংশ শতকের সবচেয়ে সফলদের একজন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর এপিসোডটি তুলে না ধরলেই নয়। ১৯৬৭-এর ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন প্রচারণায় ভুবনেশ্বর এসেছেন ইন্দিরা গান্ধী। ডিম্বাকৃতির একটি প্রক্ষিপ্ত মিসাইল (ব্রিটিশরা বলে থাকে ডেয়ারি মিসাইল) বক্তৃতারত ইন্দিরা গান্ধীর নাকে আঘাত করল। গুরুতর আঘাত নাকের হাড় ভেঙে দিল, রক্তপাত শুরু হলো, তিনি নাকমুখ চেপে ধরলেন। এ অবস্থাতেই তিনি বললেন, এটা গণতন্ত্রের জন্য অশুভ সংকেত। কাকে ভোট দেবেন? নিক্ষেপকারীকে? বেশি রক্তপাত হতে থাকায় তাকে দ্রুত ডায়াস থেকে নামিয়ে দিল্লিতে হাসপাতালে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, ডাক্তারের নির্দেশ উপেক্ষা করে ব্যান্ডেজ বাঁধা নাক নিয়ে আবার জনসমক্ষে আসেন এবং বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে পাকাপাকি প্রধানমন্ত্রী হন।
জেরেমি ওয়েবস্টার জীবদ্দশায় মার্গারেট থেচারকে হাতের কাছে পাননি বলে তখন ডিম খাওয়াতে পারেননি। ২৬ মে ২০২২ লিঙ্কনশায়ারে মার্গারেট থেচারের ১০ ফুট উঁচু ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য স্থাপিত হওয়ার আগে থেকেই লিস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পকলা বিভাগের প্রধান ৫৯ বছর বয়সী জেরেমি ওয়েবস্টারের হাত পকেটের ভেতর নিশপিশ করছিল। ভাস্কর্যটি স্থাপিত হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি পকেট নয়, ডিমের বাক্স থেকেই ডিম বের করে ‘ম্যাগি’র ওপর ছুড়ে মারলেন। ব্যাপারটা লোকচক্ষুর অন্তরালে ঘটেনি। তার ডিম প্রক্ষেপণের চিত্রধারণের সুযোগও নিয়েছেন রসিক ফটোগ্রাফার। পুলিশ তাকে ছাড়েনি। মার্গারেট থেচারের পক্ষে তার কোনো স্বজন কিংবা তার রক্ষণশীল দল তার ফাঁসি দাবি না করলেও সংক্ষিপ্ত বিচারের বিলেতি পুলিশ আইনের ৫ ধারায় তার ৯০ পাউন্ড জরিমানা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা মোটেও থেচারবিরোধী নন এবং তার ভাস্কর্য স্থাপনে তাদের কোনো অসন্তোষও নেই, ব্যাপারটা জেরেমির নিজস্ব চিন্তাপ্রসূত।
কী জানি জেরেমি হয়তো ভেবেছেন মার্গারেট থেচার (১৯২৫-২০১৩) জীবদ্দশায় পর্যাপ্ত ডিম খাননি, তার ভাস্কর্যকেও কিছু খাওয়ানো দরকার।
শ্রমিকদলীয় প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড উইলসন ১৯৭০ সালে হ্যারোতে ডিম খেলেন। নিক্ষিপ্ত একাধিক ডিমের একটি তার গায়ে লেগে ভেঙেও গেল। হ্যারল্ড উইলসন হেসে উঠলেন এবং মাইক্রোফোনে জনতার উদ্দেশে বললেন, হ্যারোতে দ্রব্যমূল্যের কথা যদি বিবেচনা করা হয় তাহলে স্বীকার করতেই হবে শ্রমিক দলের শাসনকালে ডিম এত সস্তা হয়েছে যে তা নিক্ষেপও করা যায়। যদি রক্ষণশীল দল ক্ষমতায় আসে তাহলে নিশ্চিত থাকতে পারেন আগামী ৫ বছর ব্রিটেনের জনগণ ডিম কিনে নিক্ষেপ করার সক্ষমতা অর্জন করবে না।
হ্যারল্ড উইলসন ১৯৬৪ থেকে ১৯৭০ এবং ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৬ ব্রিটেনে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
ডিম খাওয়ার পর টনি ব্লেয়ার বলেছিলেন, শুধু ডিম কেন, মাখনও নিক্ষেপ করুক, তাহলে কেক বানিয়ে খাওয়া যেত। এর নামই রাজনৈতিক সাবালকত্ব।
বিবেচনা করুন ‘ডিমপরিপক্বতা’ হ্যারল্ড উইলসনকে কত সম্মানিত করেছে আর দক্ষিণ এশিয়ায় প্রক্ষিপ্ত ডিমকে হয়তো বলা হবে আণবিক বোমাহিরোশিমা ও নাগাসাকির বোমার চেয়ে হাজার গুণ শক্তিশালী। এর নাম রাজনৈতিক নাবালকত্ব।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক
বাংলাদেশে টিকে থাকতে হলে একটু ‘কায়দা করে’ চলতে হয়। সোজা পথে না চলে কিছুটা বাঁকা রাস্তায় যাওয়াই যেন এখানকার রীতি। এখানে নৈতিকভাবে ভালো লোকদের বলা হয় ‘সহজ-সরল’। এই বলার মধ্যে আবার একটুখানি প্রচ্ছন্ন দরদ থাকে। সৎ লোকদের প্রতি দরদ না দেখিয়েও উপায় নেই, কেননা এরা পদে পদে বিপদে পড়েন। বেশিরভাগ সরকারি অফিসে বৈধ এবং নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে কোনো কাজ করাতে চাইলে যে কাজটার জন্য যে সময় লাগে সেই একই কাজে যখন অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়, তার অর্ধেক সময় লাগে। অনিয়ম যখন সমস্ত ব্যবস্থাকে গ্রাস করে তখন শিক্ষাব্যবস্থাও এর বাইরে যেতে পারে না। কোনো জাতিকে ধ্বংস করতে হলে এর শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করলেই চলে। বিগত কয়েক বছর ধরে আমরা দেখছি উচ্চমাধ্যমিকে খুব ভালো রেজাল্টধারী শিক্ষার্থীরাও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় টিকছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি দূরে থাক, এসব শিক্ষার্থী পাস নম্বরও পাচ্ছে না। অর্থাৎ, ধরে নিতে হবে গলদটা গোড়ায়। প্রায় শতভাগ পাস আসলে কতটা সংখ্যাগত আর কতটুকু গুণগত সেটা এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে। সময় এসেছে পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকেই প্রশ্ন করার। নানা সময়ে সংবাদ মাধ্যমে এসেছে পরীক্ষার খাতা যারা দেখেন তাদের প্রতি এক ধরনের মৌখিক নির্দেশনা আছে শিক্ষার্থীদের যেন ফেল করানো না হয়। নির্দেশনা যেহেতু মৌখিক, তাই এ অভিযোগ প্রমাণ করা শক্ত। কিন্তু সত্যিকার অর্থেই যে ‘পাস করা’ শিক্ষার্থীদের ঘটে তেমন বিদ্যাবুদ্ধি নেই তার প্রমাণও তো নেহাত কম নয়।
অনেকদিন ধরে ‘সৃজনশীল’ নামক এক ধরনের শিক্ষাপদ্ধতি বাংলাদেশে চলমান। নামে সৃজনশীল হলেও এটা আসলে প্রকৃত অর্থে সৃজনশীল নয়। প্রশ্নপত্রে আসা ‘উদ্দীপক’ নামক কয়েক লাইনের রচনার সঙ্গে পাঠ্যবইয়ে থাকা কোনো একটি গদ্যের তুলনামূলক বিচার ছাড়া ‘সৃজনশীল’ শিক্ষাপদ্ধতিতে নতুন কিছু আমাদের চোখে পড়েনি। তা ছাড়া সৃজনশীল প্রশ্ন শিক্ষকরা কতটুকু বোঝেন তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ফলে পাঠদানে রয়ে যাচ্ছে প্রচুর খামতি। সৃজনশীল শিক্ষাপদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা আবার মুখস্ত করছে ‘সহায়ক’ বই। গাইড বই বন্ধ হয়েছে বেশ আগে। কিন্তু ঠিকই ‘কায়দা করে’ চলছে এসব ‘সহায়ক বই’। শুধু নামেই আলাদা।
সম্প্রতি এইচএসসির প্রশ্নপত্রের কয়েকটি প্রশ্ন নিয়ে কথা উঠেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে তুমুল সমালোচনা। প্রশ্নপত্রে কমপক্ষে তিনটি সমালোচনাযোগ্য উপাদান ছিল। ৬ নভেম্বর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের বাংলা-২য় প্রশ্নপত্রের একটি প্রশ্ন ছিল এমন ‘প্রখ্যাত সাহিত্যিক আনিসুল হক লেখালিখি করে সুনাম অর্জন করতে চান। ২১শে বইমেলায় তাড়াহুড়ো করে আনিসুল হক বই প্রকাশ করেন। পাঠকদের কাছে তার লেখা খাপছাড়া মনে হয়। ফলে পাঠকদের কাছে তিনি সমাদৃত হন না।’ এরপর প্রশ্ন করা হয়েছে, (ক) ‘যশ’ শব্দের অর্থ কী? (খ) ‘লেখা ভালো হইলে সুনাম আপনি আসিবে।’ উক্তিটি ব্যাখ্যা করো। (গ) আনিসুল হক কোন কারণে ব্যর্থ, তা ‘বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন’ রচনার আলোকে ব্যাখ্যা করো। (ঘ) সাহিত্যের উন্নতিকল্পে ‘বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন’ রচনায় লেখকের পরামর্শ বিশ্লেষণ করো। এই প্রশ্নে প্রথম মূল সমস্যা হলো ব্যক্তি আক্রমণ এবং বিদ্বেষ ছড়ানো। আনিসুল হক লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। ফলে প্রশ্নকর্তা না জেনেই আনিসুল হকের নাম নিয়েছেন সেটা ভাবার অবকাশ নেই। এ রকম একটা পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে তাকে হেয় করা অত্যন্ত নিম্নরুচির কাজ। তাছাড়া উদ্দীপকের প্রথম বাক্যটিও ভুল। যিনি ‘প্রখ্যাত’ সাহিত্যিক তিনি কেন ‘সুনাম’ অর্জন করতে চাইবেন! প্রখ্যাত মানেই তো যিনি ইতিমধ্যে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করার মতো দায়িত্বশীল লোকজন ভুল বাক্য লিখবেন এটাও মেনে নেওয়া মুশকিল। আরেকটি প্রশ্নে ছড়ানো হয়েছে সাম্প্রদায়িকতা। সেখানকার উদ্দীপকে বলা হয়েছে ‘নেপাল ও গোপাল দুই ভাই। জমি নিয়ে বিরোধ তাদের দীর্ঘদিন। অনেক সালিশ-বিচার করেও কেউ তাদের বিরোধ মেটাতে পারেনি। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এখন জমির ভাগ- বণ্টন মামলা চলছে আদালতে। ছোট ভাই নেপাল বড় ভাইকে শায়েস্তা করতে আব্দুল নামের এক মুসলমানের কাছে ভিটের জমি এক অংশ বিক্রি করে। আব্দুল সেখানে বাড়ি বানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। কোরবানির ঈদে সে নেপালের বাড়ির সামনে গরু কোরবানি দেয়। এই ঘটনায় নেপালের মন ভেঙে যায়। কিছুদিন পর কাউকে কিছু না বলে জমি-জায়গা ফেলে সপরিবারে ভারতে চলে যায় সে।’
সাম্প্রদায়িকতার সমস্যা ও সংকট নিয়ে যখন বাংলাদেশে বহুল আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে তখন এমন প্রশ্ন এইচএসসির শিক্ষার্থীদের মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে সেটা বিবেচনায় নেওয়া উচিত ছিল। উল্টোদিকে দেশে অনেক ইতিবাচক দৃষ্টান্ত আছে অসাম্প্রদায়িক মানসিকতার। হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় গিয়ে দেখেছি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সম্মান রেখে সেখানকার বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হয় না। অথচ প্রশ্নের উদ্দীপকটিতে ঘৃণা ও বিদ্বেষের বাড়াবাড়ি রয়েছে। দুই সম্প্রদায়ের মানুষের জন্যই উদ্দীপকটি অস্বস্তিকর। দায়িত্ববোধ ও কাণ্ডজ্ঞানের অভাব থাকলেই কেবল এমন প্রশ্ন করা সম্ভব। আরেকটি উদ্দীপকে বলা হয়‘ফারজানা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত একজন কলেজ শিক্ষিকা। অনেক আগেই বিয়ের বয়স পেরিয়েছেনতাই তিনি বিয়ে করেননি। ছাত্রজীবনে তিনি ভালোবেসেছিলেন ব্যক্তিত্বহীন একজনকে। কারণ বাবা-মার যৌতুকের চাপের মুখে সে ফারজানাকে বিয়ের কথা অস্বীকৃতি জানায়। এরপর থেকে ফারজানা তার কলেজ আর একাকিত্ব জীবন কাটায়।’ উদ্দীপকটিতে সংবেদনশীলতার লেশমাত্র নেই। নারীশিক্ষার প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিও এখানে স্পষ্ট। আলোচ্য তিনটি উদ্দীপকই রচনা হিসেবে খুব নিম্নমানের তো বটেই, এসবের অভিঘাত সম্পর্কেও প্রশ্ন প্রণয়নকারীরা সচেতন নন।
সৃজনশীল প্রশ্ন নামে বাংলাদেশে যা চালু আছে তাতে কোনো প্রকার সৃজনশীলতা শেখানো সম্ভব না। সত্যিকার অর্থে যদি সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হয় তাহলে যেসব দেশে সৃজনশীল শিক্ষা চালু আছে সেখান থেকে পদ্ধতি দেখে-শুনে-বুঝে প্রথমে আমাদের শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করতে হবে। প্রকৃত বিদ্বান মানুষদের যুক্ত করতে হবে এসব কাজের সঙ্গে। তারপর ভাবতে হবে এটি চালু করার কথা। গোঁজামিল দেওয়া নামসর্বস্ব শিক্ষাপদ্ধতিকে সৃজনশীল নামে চালিয়ে দেওয়া কোনো কাজের কথা নয়।
বাংলাদেশে যেহেতু ‘কায়দা করে’ অনেক কিছু হওয়া সম্ভব, শিক্ষকতার চাকরিও এর ব্যতিক্রম নয়। সবাই জানে সরকারি চাকরি পেতে বড় অঙ্কের টাকা দিতে হয়। মেধাহীন মানুষদের শিক্ষকতার মতো গুরুত্বপূর্ণ পেশায় বসালে তার খেসারত পুরো জাতিকেই দিতে হবে। আমরা, আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকেরা অন্ধ হয়ে থাকতে পছন্দ করি, কিন্তু তাতে প্রলয় বন্ধ হয় না।
লেখক : কবি ও সাংবাদিক
রাজধানী ঢাকায় ছোট্ট একটি কম্পোজ ও ফটোকপির দোকান চালান জালাল। মাসে যা আয় করেন তা দিয়েই চলে তার চার সদস্যের পরিবার। দোকানে শিক্ষার্থীদের খাতা-কলম আর কাগজও বিক্রি করেন তিনি। কিন্তু মাস দু-এক ধরে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই তার জন্য কষ্টকর হয়ে পড়েছে। হঠাৎ করে কাগজের বাজারে অস্থিরতাই এর প্রধান কারণ। কয়েক গুণ বেশি টাকা দিয়েও নিয়মিত মিলছে না প্রিন্ট ও ফটোকপির কাগজ। বেশি টাকায় কাগজ মিললেও কাস্টমার বাড়তি টাকায় প্রিন্ট ও ফটোকপি করতে নারাজ। এ নিয়ে নিয়মিত চলছে বচসা। তার ভাষায়, ‘কাস্টমার সাফ বলে দেয়আপনারা তো ডাকাত। সরকার তো কাগজের দাম বাড়ায়নি। আপনি কেন বেশি নেবেন? আমরা কীভাবে বোঝাব যে সরকার তো কাগজের বাজারটা নিয়ন্ত্রণও করছে না।’
জালাল বলছিলেন, ‘কাগজের দাম বাড়ার কারণে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের খাতার বিক্রিও কমেছে কয়েক গুণ। কাগজের প্যাকেট, কার্টুনসহ কাগজসংশ্লিষ্ট পণ্যের দামও অনেক। এভাবে কাগজের দাম বাড়লে আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের পথে বসতে হবে। শিক্ষার্থী আছে এমন পরিবারগুলোকেও গুনতে হবে খরচের বাড়তি টাকা। এর প্রভাব পড়বে সরকারের ওপরও। তাই কাগজের দামের লাগাম টানতে সরকারকেই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।’
কাগজের মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের ওপরও যে এর প্রভাব পড়ছে তা উঠে আসে ঢাকার কাফরুল এলাকার এ ব্যবসায়ীর ভাষ্যে। কয়েক মাস পরেই বইমেলা আর জানুয়ারি মাসে নতুন বই লাগে স্কুল-কলেজে। ঠিক তখনই কাগজের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বাজারে সরবরাহেও টান পড়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানান সংশ্লিষ্টরা। এ সুযোগে হু-হু করে বাড়ছে কাগজের দাম। পাইকারিতে কাগজের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা পণ্যের দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে পাইকারি বাজারে কাগজের দাম প্রতিদিনই বেড়েছে।
হোয়াইট প্রিন্ট কাগজের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে টনপ্রতি ২৫ হাজার টাকা বেড়ে দাম দাঁড়ায় ১ লাখ ৩৫ হাজার থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। প্রতি টন হোয়াইট নিউজপ্রিন্ট কাগজের দাম বেড়েছে ১৫ হাজার টাকা। এ কাগজের দাম ২০ হাজার থেকে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে প্রতি টন ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকায়। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে লেজার কাগজের দাম। প্রতি টনের দাম ৩০ হাজার টাকা বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। প্রতি টন নিউজপ্রিন্ট কাগজের দাম ৬৪ হাজার থেকে বেড়ে ৮৫ হাজার টাকা হয়েছে। এ কাগজের দাম গত দুই সপ্তাহে বেড়েছে ৩৩ শতাংশ। শুধু যে কাগজের দাম বেড়েছে তা নয়। বেড়েছে মলাটের কাগজ, আর্ট কার্ড ও রঙিন কাগজের দামও। কিন্তু কাগজের এ দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের তদারকি, কোনো উদ্যোগ কিংবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তির বক্তব্যও আমরা পাইনি।
বর্তমান সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে বই তুলে দেওয়া। কাগজের বাজারে অস্থিরতার কারণে সেটিও অনেকটা শঙ্কার মুখে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে দেরিতে কাজ পাওয়া, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কাগজের দাম বেড়ে যাওয়া, বিদ্যুৎ-বিভ্রাটসহ নানা চ্যালেঞ্জের কথা বলছেন মুদ্রণ ব্যবসায়ীরা।
তবে বই পাওয়া বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জোর আশ্বাস দিলেও বই ছাপার কাজ যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে নতুন বছরের প্রথম দিন প্রাথমিকের সব পাঠ্যবই পাওয়ার সুযোগ কম বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। কাগজের মূল্যবৃদ্ধি সরাসরি শিক্ষা ও শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট কাজকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। প্রতিটি পরিবারের শিক্ষার খরচও তখন বেড়ে যায়, যা চলছে বর্তমানে।
কিন্তু কেন কাগজের এই লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি? গণমাধ্যমের সংবাদ বলছে, কাগজের কাঁচামালের সংকট রয়েছে। বিদ্যুতের সংকটের কথাও তুলে ধরছেন ব্যবসায়ীরা। ব্রাইটনেস কাগজের জন্য লাগে ভার্জিন পাল্প। চাহিদা থাকলেও যেটা পর্যাপ্ত পরিমাণ আমদানি হয়নি। ডলার সংকটের কারণে এখন আমদানিও করা যাচ্ছে না। পাল্পের দাম দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় কাগজকল মালিকরা তা আমদানিও করছেন না। ফলে কাগজের চাহিদার এই সময়ে সংকট তৈরি হচ্ছে।
এ অবস্থা চলতে থাকলে কাগজের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হবে প্রকাশনা শিল্প। এমনটাই মনে করছেন প্রকাশকরা। করোনা পরিস্থিতির পর সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৩ সালেই স্বাভাবিক সময়ে বইমেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। মেলা উপলক্ষে দেশীয় প্রকাশনীগুলোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে এখন থেকেই। কিন্তু কাগজের দামসহ সব খরচ বেড়ে যাওয়ায় বইয়ের দামও অনেকটাই বাড়বে। এতে পাঠকরা বই কিনতে এসে বড় একটা ধাক্কা খাবেন এবং বই বিক্রি স্বাভাবিকভাবেই কমে যাবে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। ফলে দেশে বই বিক্রির সবচেয়ে বড় মৌসুমে বাড়তি দামে বইয়ের বেচাকেনা নিয়ে এখনই চিন্তার ভাঁজ অনেকের কপালেই।
অনেক প্রকাশক বাছাই করে নতুন বই বা কেউ কেউ নতুন বই করবেন না বলেও পরিকল্পনা করছেন। এতে প্রকাশনা শিল্প যেমন হুমকির মুখে পড়বে, তেমনি দেশের শিল্প-সাহিত্যের অগ্রগতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যা মোটেই কাম্য নয়। তবে বিক্ষিপ্তভাবে প্রকাশকরা গণমাধ্যমের কাছে কাগজের মূল্যবৃদ্ধিতে তাদের ক্ষতির কথা তুলে ধরলেও সম্মিলিতভাবে এখনো সরকারের কাছে তারা এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এমন কোনো খবর আমরা পাইনি। যেটি হওয়ার উচিত ছিল বলে মনে করেন অনেকেই। এ বিষয়ে প্রকাশকদের ঐক্যবদ্ধতার ঘাটতি রয়েছে এবং সে সুযোগে একশ্রেণির ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সময় কাগজের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন বলে মত দেন কেউ কেউ। প্রকাশনা শিল্পে সৃজনশীল বই প্রকাশের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে কাগজের দামসহ বই-সংক্রান্ত সব বিষয়ের প্রতি নজর দিতে সরকারিভাবে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করাও উচিত বলে মনে করেন লেখক ও প্রকাশকরা। এতে শিল্প-সাহিত্যের অগ্রগতিতে বাধাগ্রস্ত হওয়ার সুযোগও কমে আসবে বলে মনে করেন তারা।
একসময় কাগজের মূল্যবৃদ্ধিকে জাতীয় সংকট হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ সালের ৮ জানুয়ারি বরিশালে ঘূর্ণিঝড় এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি। সেখানে অবস্থানকালে তার সঙ্গে দেখা করতে যান বরিশাল থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকার প্রকাশকরা। তারা কেন্দ্রীয় সরকারের নিউজপ্রিন্ট কাগজ বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানান। প্রকাশকদের সব কথা শুনে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ইহা জাতীয় জীবনের একটি আশু সংকট। দুই বৎসরে দুই ধাপে কাগজের টনপ্রতি মূল্যবৃদ্ধির কারণে এর তীব্র প্রভাব পড়িবে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতিতে, যা এই অঞ্চলের মানুষের ওপর নতুন আরেকটি বোঝার শামিল। জাতীয় সংবাদপত্র শিল্প যাহাতে এই সংকট থেকে উত্তরণ পায় তাহার ব্যবস্থা লওয়া হইবে।’
তাই বঙ্গবন্ধুকন্যার আমলে কাগজের সংকট ও লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিকে সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে দ্রুত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেএমনটাই আমাদের আশা।
লেখক: লেখক ও গবেষক
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।
এক যুগের ব্যবধানে ঘটা সহিংসতার দুটি ঘটনায় করা তিন শতাধিক মামলা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর তদন্ত করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মামলাগুলো ২০০১ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা এবং ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের করা হয়েছিল। পাশাপাশি যেসব মামলা বিচারাধীন আছে সেগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশের সব ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে।
পুুলিশের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ ও দুদক সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন করে তদন্ত করার সময় অহেতুক নিরপরাধ লোকজন যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। মামলায় যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ২০০১ ও ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংসতা মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, রাজনৈতিক কারণে মামলা জিইয়ে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। সব সরকারের আমলেই এসব করা হচ্ছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছিল এই নিয়ে দেশে বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ অনেকেই আসামি হয়েছেন। ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংতার ঘটনা মামলা হয়েছে এসব মামলা দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন ও যেসব মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে সেগুলোর দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন ওইসব মামলা আদালতে ঝুলছে। এতে ভুক্তভোগীরা বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই যারা এসব অপকর্ম করেছে তাদের তাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।
সহিংসতা মামলার পাশাপাশি গত ১০ বছরের ব্যবধানে দুর্নীতি দমন কমিশনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ অনুসন্ধান করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি ও জামায়াত ২০১৩-২০১৫ সালে তান্ডবলীলা চালিয়েছে। ২০০১ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক অত্যাচার করা হয়েছিল। ওইসব মামলার বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাছাড়া আন্দোলনের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। সারা দেশেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলা কী অবস্থায় আছে তাও পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা করে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল, তাদের বিচার করা হবে। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তবে নিরপরাধ কাউকে আমরা হয়রানি করছি না। ভবিষতেও করব না।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তাদের দমন করতে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে হবে না। এতে সাধারণ জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। আন্দোলনের নামে তারা জ্বালাও-পোড়াও করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলা আদালতে রয়েছে সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।
একই কথা বলেছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, হামলায় পেশিশক্তি যেমন থাকে, রাজনৈতিক শক্তিও থাকে। সাধারণভাবে এমন একটি ধর্মীয় জিগির তোলা হয় তখন অনেক ক্ষেত্রেই সব দল এক হয়ে হামলা চালায়। বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলার তদন্ত শেষ হয়নি তা সঠিকভাবে তদন্ত করতে হবে। ঢালাওভাবে রাজনৈতিক নেতাদের দোষারোপ করা যাবে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখনো বেশ কিছু মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। তাছাড়া জ্বালাও-পোড়াওয়ের অনেক মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। সবমিলিয়ে অন্তত তিন শতাধিক মামলা হবে। এসব মামলা সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পুুলিশের সব ইউনিটকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার না হওয়ায় আবারও একটি মহল দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, স্পর্শকাতর মামলায় দীর্ঘদিনে বিচারকাজ শেষ না হওয়ার কারণে বাদীপক্ষের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আসামিপক্ষ ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। আর এসব কারণে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঝুলে থাকা মামলাগুলো সক্রিয় করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। তবে অহেতুক কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার কারণ উদঘাটন এবং জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে ‘হিউম্যান রাইট ফর পিস’ নামের একটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। ২০০৯ সালের ৬ মে এসব নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয় আদালত। ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মো. সাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যর বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন দীর্ঘ সময় তদন্ত করে ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে একটি প্রতিবেদন দেয়। তদন্তকালে কমিশন ৫ হাজার ৫৭১টি অভিযোগ পেয়েছিল। বিএনপি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাসহ অন্তত ১৮ হাজার নেতাকর্মী জড়িত ছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। সহিংসতার পর বরিশাল বিভাগে ২ হাজার ১৮৯টি, ঢাকায় ১৮৪টি, চট্টগ্রামে ৩৫০টি, রাজশাহীতে ১১৭টি এবং খুলনায় ৪০৫টি হামলার ঘটনা ঘটে। তাছাড়া হামলায় খুলনা বিভাগে ৭৩, ঢাকা বিভাগে ৯২, রাজশাহী বিভাগে ৫৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৭, বরিশাল বিভাগে ৩৮ এবং সিলেট বিভাগে ২ জন হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। তারমধ্যে ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, যশোর, নাটোর, রাজবাড়ী, পাবনা, ফেনী, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, দৌলতখান, চরফ্যাশন, লালমোহন, বোরহানউদ্দিন, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা এবং মৌলভীবাজার জেলায় হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড বেশি ঘটে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ২২১টি। এর মধ্যে ৫৭টি মামলা তদন্তাধীন। বাকিগুলোতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে পেট্রলবোমা হামলায় দেশজুড়ে মারা গেছে শতাধিক নিরীহ মানুষ। তারমধ্যে আগুনেই পুড়ে মারা গেছে ৪০ জনের মতো। এ সময় রেললাইন পর্যন্ত উপড়ে ফেলাসহ সরকারি সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ওই সময় মামলা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার। বেশির ভাগ মামলার তদন্ত হয়েছে। ৪৫০টি মামলা বিচারধীন। এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা আসামি। তারা কৌশলে বারবার শুনানির তারিখ নেয়, যে কারণে মামলা পিছিয়ে যায়। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, কয়েকটি তারিখ দেওয়ার পর মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হবে।
এছাড়া ৩১২টি মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে নাশকতা মামলার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ মামলার আসামি এলাকায় থাকেন না। তাদের নাম-ঠিকানা খুঁজে বের করে অভিযোগপত্র দেওয়া তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে খুব কঠিন হয়ে যায়। আর যেসব মামলায় আদালতে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোরও বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না। তাছাড়া পলাতক আসামিদের বিষয়ে কিছু আইনি জটিলতার কারণেই দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুনরায় নাশকতা ঘটানো হতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। এই নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তার জানামতে, মামলাগুলো নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা একাধিক সভা করেছেন।
দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, গত দশ বছরে দুদকে ‘অনেক ভিআইপির’ বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। ওইসব অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। অনুসন্ধানের জন্য আলাদা কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।
দুর্ঘটনা ঘটেছিল শুক্রবার রাতে। তারপর থেকে আসছিল হতাহতের ভিন্ন ভিন্ন তথ্য। তবে প্রকৃত ভয়াবহতার চিত্র ফুটতে শুরু করে গতকাল শনিবার ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে। সকালে দেখা যায় তিনটি ট্রেনের বেশিরভাগ কামরা পড়ে আছে মাটিতে। কোনো কামরা পুরোপুরি উল্টে গেছে। কোনোটি আবার উঠে গেছে আরেকটির ওপর। আশপাশে, সামনে-পেছনে শুধু মৃতদেহ। কয়েক ঘণ্টা আগেও যারা বেঁচে ছিলেন, যাদের চোখে স্বপ্ন ছিল তারা লাশ হয়ে পড়ে আছেন খোলা আকাশের নিচে। আহত ও স্বজনহারাদের আর্তনাদ-হাহাকার আর অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের শব্দে গতকাল সারা দিনই বিভীষিকাময় ছিল ভারতের ওড়িশার বালাশ্বরের কাছের বাহানগায়ের বাতাস। ওড়িশা রাজ্যে ঘোষণা করা হয়েছে এক দিনের শোক।
শুক্রবার রাতে বালাশ্বরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার পর উদ্ধার শেষে দেশটির সরকার ২৮৮ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংখ্যাও হাজার ছুঁইছুঁই করছে। উদ্ধারকাজ শেষ হলেও এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও মানুষ আটকে থাকার আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। উদ্ধারকাজের নেতৃত্ব দেওয়া ওড়িশা ফায়ার সার্ভিসের ডিরেক্টর জেনারেল সুধাংশু সারাঙ্গি জানান, নিহতের সংখ্যা ২৮৮। অবশ্য উদ্ধারকাজ শেষ হওয়ার পর রেল কর্র্তৃপক্ষ জানিয়েছে নিহতের সংখ্যা ২৬১। ভারতের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াও দাবি করেছে নিহতের সংখ্যা ২৬১। দেশটির আরেক সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিও প্রথমে ২৬১ জনের কথা বললেও গতকাল সন্ধ্যার পরে তারা নিহতের সংখ্যা ২৮৮ বলেই জানায়। একই সঙ্গে সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। দেশটির কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মাও তেমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘উদ্ধারকাজ শেষ হয়েছে। এখন আমরা সংযোগ পুনঃ প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করব। তবে এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে মানুষ থাকার আশঙ্কা রয়েছে।’
এনডিটিভি জানায়, যাত্রীবাহী ট্রেন করমণ্ডল এক্সপ্রেস কলকাতা থেকে চেন্নাই যাচ্ছিল। বেলা ৩টার দিকে শালিমার স্টেশন থেকে ছাড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ট্রেনটি পৌঁছায় বালাশ্বরে। কাছেই বাহানগা বাজারের কাছে মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ট্রেনটি। সে সময় তৃতীয় ট্রেন যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসও এই দুর্ঘটনার শিকার হয়।
ওড়িশা রাজ্যের মুখ্যসচিব প্রদীপ জেনা দুর্ঘটনার পরপর জানিয়েছিলেন, দুর্ঘটনাস্থলে অন্তত ২০০টি অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ১০০ জন অতিরিক্ত ডাক্তার সেখানে সেবায় নিয়োজিত করা হয়েছে।
ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনার কারণ কী, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। স্থানীয় মানুষ বলছে, মালগাড়ি গিয়ে ধাক্কা দেয় করমণ্ডল এক্সপ্রেসে। সেই ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। উল্টোদিক থেকে আসছিল সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। উল্টে যাওয়া কামরায় ধাক্কা লেগে সেই ট্রেনের অধিকাংশ কামরা উল্টে যায়। গতকাল দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একজন ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর আমি ১০ থেকে ১৫ জনের নিচে চাপা পড়ি। আমি ওই মানুষের স্তূপে সবার নিচে ছিলাম। আমার হাতে আর ঘাড়ে আঘাত লাগে। আমি যখন ট্রেনের বগি থেকে বের হই, তখন দেখি কেউ হাত হারিয়েছে, কেউ পা হারিয়েছে, কারও আবার মুখ সম্পূর্ণ বিকৃত হয়ে গেছে।’
এদিকে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দেবেন রেলওয়ে সেফটি বিভাগের কমিশনার। এ সংস্থাটি বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে।
এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে সুনিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও সিগন্যালের সমস্যার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, এই রুটে ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষ প্রতিরোধী ব্যবস্থা ‘কবচ’ ব্যবহার করা হতো না। রেলওয়ের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা জানান, কবচ সিস্টেমটি এই রুটে নেই। বর্তমানে দিল্লি-হাওড়া এবং দিল্লি-বোম্বে রুটে কবচ স্থাপন করা হচ্ছে।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে যে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসের চারটি বগি ও ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হয়ে পাশের রেললাইনে পড়ে, যে লাইন দিয়ে যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস যাচ্ছিল। দ্বিতীয় ট্রেনটির পেছন দিকের দুটি বগি তখন লাইনচ্যুত হয়।
রেলওয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ১২টি বগি বাহানগার বাজার স্টেশন পার করার সময় লাইনচ্যুত হয় এবং পাশের লাইনের ওপর পড়ে। সে সময় ওই লাইন দিয়ে হাওড়া এক্সপ্রেস ট্রেন যাওয়ার সময় সেগুলোর সঙ্গে ধাক্কা খায় এবং ট্রেনের তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়।
পত্রিকাটির খবর অনুযায়ী, বাহানগা বাজার স্টেশনে চারটি রেললাইন আছে, যার একটিতে দুর্ঘটনার সময় একটি মালবাহী ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিল। যাত্রীবাহী ট্রেন দুটি ভিন্ন ভিন্ন লাইনে একে অপরকে বিপরীত দিক দিয়ে পার করার কথা ছিল। কিন্তু একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে পাশের লাইনে পড়ে গেলে বিপরীত দিক থেকে আসা হাওড়া এক্সপ্রেসের সঙ্গে সেটির সংঘর্ষ হয়।
হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকা বলছে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ১৫টি কোচ লাইনচ্যুত হয়ে পাশের লাইনের ওপরে পড়ে এবং পরে হাওড়া এক্সপ্রেসের সঙ্গে সংঘর্ষ হলে সেই ট্রেনের দুটি বগি লাইনের বাইরে চলে যায়।
অন্য একটি সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য হিন্দু পত্রিকা খবর প্রকাশ করেছে যে প্রথমে হাওড়া এক্সপ্রেস ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়। করমণ্ডল এক্সপ্রেস পশ্চিমবঙ্গ থেকে তামিলনাড়ু যাতায়াতের মাধ্যম। দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগে ট্রেনটি শালিমার স্টেশন অতিক্রম করে। পত্রিকাটি বলছে, মূলত তামিলনাড়ুতে কাজের জন্য ও উন্নত চিকিৎসার জন্য যারা গিয়ে থাকেন, তারা এই ট্রেন ব্যবহার করে থাকেন।
এদিকে বিবিসি বলছে, দুর্ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে উপস্থিত সাংবাদিকদের পাঠানো খবর ও ছবি দিয়ে সেখানকার সবশেষ পরিস্থিতির আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। রেললাইনসহ আশপাশের জায়গাগুলোতে ট্রেনে থাকা মানুষের জিনিসপত্র ছড়িয়ে রয়েছে। লাইনের পাশে প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরা মৃতদেহ সারিতে রাখা ছিল। কিছুক্ষণ পরপর এই মৃতদেহগুলো গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ট্রেনের বগির ভেতরে মানুষের স্যান্ডেল, কাপড় এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। উদ্ধারকাজ চলাকালে কয়েকজনকে পড়ে থাকা কাপড় ও দড়ির সাহায্যে টেনে বের করা হয়।
ওড়িশার মুখ্য সচিব প্রদীপ জেনা জানিয়েছেন, ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত মানুষকে গোপালপুরে একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে কিছু মানুষকে বালাশ্বর মেডিকেল কলেজেও নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের বাইরে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, বালাশ^র হাসপাতালের পোস্টমর্টেম বিভাগের বাইরে শত শত মানুষ ভিড় করেছে। শুক্রবার রাতেই ৫০০ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রদীপ জেনা। মানুষ নিজে থেকে উদ্যোগী হয়ে এসে রক্তদান করে যাচ্ছে।
ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব শুক্রবার দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভুক্তভোগীদের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের আশ্বাস দেন। দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, তদন্তের জন্য উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেন দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা শিগগিরই বোঝা যাবে। এই দুর্ঘটনার দায় নিয়ে তিনি পদত্যাগ করবেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের চিন্তা মানুষের জীবন বাঁচানো ও উদ্ধারকাজ শেষ করা।’
রেলমন্ত্রী অশি^নী বৈষ্ণব বলেছেন, প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া গুরুতর আহতদের জন্য দুই লাখ রুপি ও অপেক্ষাকৃত কম আহতদের জন্য ৫০ হাজার রুপি ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে শনিবার সন্ধ্যার দিকে ওড়িশায় ট্রেন দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিনি বলেছেন, এই মর্মান্তিক ঘটনায় যারা পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছেন তাদের পাশে রয়েছে সরকার। এটা বেদনাদায়ক ঘটনা। আহতদের চিকিৎসার জন্য সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। এটা গুরুতর ঘটনা। তিনি বলেন, এই দুর্ঘটনার প্রতিটি দিক বিবেচনায় নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
ট্রেন দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গে ঘুরে দেখেন দুর্ঘটনাস্থল। পরিদর্শনকালে মমতা বলেন, এই দুর্ঘটনার পেছনে কিছু আছে। ভালো করে তদন্ত করতে হবে। তিনি অভিযোগ তোলেন, রেলের কাজে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের অ্যান্টিকলিশন ডিভাইস ছিল না। ভারতের সবচেয়ে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে ১৯৮১ সালে। সে সময় অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন বিহার রাজ্যে সাইক্লোনের সময় লাইনচ্যুত হয়ে নদীতে পড়ে যায়। ওই দুর্ঘটনায় অন্তত ৮০০ মানুষ মারা গিয়েছিল।
গত ১৪ বছর ধরে গুম-খুনের শিকার নেতাকর্মীদের তালিকা করছে বিএনপি। গায়েবি মামলাকারী কর্মকর্তাদের তালিকাও করছে তারা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশে গুম-খুনের শিকার নেতাকর্মীদের এই তালিকা করা হচ্ছে। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিস্তারিত তথ্যও সংগ্রহ করছে দলটি।
গত শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে একথা জানিয়েছে বিএনপি। দলের দপ্তর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও অনুরূপ কথা জানিয়েছেন। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুন, গুম, গায়েবি মামলায় জড়িত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিস্তারিত তথ্য কেন্দ্রে পাঠাতে জেলা নেতাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। সমন্বিত তথ্য জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের কাছে পাঠানো হবে।’
তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুন, গুমের শিকার নেতাকর্মীর স্বজনদের কান্না থামছে না। নিখোঁজদের ব্যাপারে সরকারের কাছে আবেদন করেও লাভ হচ্ছে না। আমরা খুন, গুমের শিকার নেতাকর্মীদের তালিকা করছি এবং জড়িতদের তথ্যও সংগ্রহ করছি। জনগণ একদিন তাদের বিচার করবে।’
নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম তুলির নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ নিখোঁজদের খুঁজে পেতে নানা কর্মসূচি পালন করছে। সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে বারিধারার আমেরিকান সেন্টারে বৈঠক করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। বৈঠকে নিখোঁজ নেতাদের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে তথ্য নিয়েছেন তিনি।
বিএনপির দপ্তর সংশ্লিষ্ট নেতারা বলেন, গত ১৫ মে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় জেলা সভাপতি/আহ্বায়ককে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। গত ১৮ মে দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠি জেলা নেতাদের কাছে পাঠানো হয়। এ সংক্রান্ত একটি সেল গঠন করা হয়েছে। তথ্য সেলে পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গায়েবি মামলাকারী ও তদন্তকারী কর্মকর্তাদের নাম-পরিচয়ও পাঠাতে বলা হয়েছে।’
চিঠিতে সারা দেশে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের খুন ও গুম সংক্রান্ত এবং মিথ্যা ও গায়েবি মামলাসংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট সার্কেলের এডিসি, জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), মিথ্যা ও গায়েবি মামলাকারী ও তদন্ত কর্মকর্তার নাম-পরিচয় পাঠাতে বলা হয়েছে। সারা দেশে ৪২৭ জন গুমের শিকার নেতাকর্মীর নাম রয়েছে। খুনের তালিকায় রয়েছে ১ হাজার ২৭৩ জন।’
সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘সম্প্রতি উচ্চ আদালত নেতাকর্মীদের জামিন দিলেও নিম্ন আদালত জামিন বাতিল করে নেতাকর্মীদের কারাগারে পাঠিয়েছে। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের নামও তালিকাভুক্ত করতে বলা হয়েছে।’
আমেরিকান সেন্টারে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মায়ের ডাকের সদস্যদের বৈঠক : গত ১০ মে ‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে রাজধানীর বারিধারার আমেরিকান সেন্টারে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। বৈঠক শেষে সংগঠনের নেত্রী তুলি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মার্কিন রাষ্ট্রদূতের আমন্ত্রণে আমরা আমেরিকান সেন্টারে গিয়েছিলাম। সেখানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের বিষয় তুলে ধরা হয়। তাদের ফিরে পেতে রাষ্ট্রদূতের সহযোগিতা কামনা করা হয়। জানানো হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহযোগিতা না করে উল্টো নানাভাবে হয়রানি করছে।’ মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘যেখানেই মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়, সেখানেই আমরা তা বন্ধে কাজ করি। বাংলাদেশে গুমের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে আমরা কাজ করছি।’
একটি আদর্শ শহরে ১২ শতাংশ জলাভূমি ও ১৫ শতাংশ এলাকা সবুজ থাকা প্রয়োজন। কিন্তু রাজধানী ঢাকায় বর্তমানে ২ দশমিক ৯১ শতাংশ জলাভূমি এবং ৭ দশমিক ৯ শতাংশ সবুজ রয়েছে। চাহিদার তুলনায় জলাশয় ৯ শতাংশ ও সবুজ প্রায় ৮ শতাংশ কম। বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে গতকাল শনিবার ‘২৮ বছরে রাজধানীর জলাধার ও সবুজ নিধন : বাস্তবতা ও উত্তরণের পথনকশা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ ও গোলটেবিল বৈঠকে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) ও নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম, বাংলাদেশ যৌথভাবে রাজধানীর বিআইপি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইপির সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান। সভাপতিত্ব করেন বিআইপির সভাপতি পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৮ বছরে ঢাকা থেকে ২৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের জলাধার উধাও হয়ে গেছে। এ সময়ে প্রায় ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকার সবুজ নিধন হয়েছে। ১৯৯৫ সালে ঢাকার জলাধার ও জলাভূমি ছিল ৩০ দশমিক ২৫ বর্গকিলোমিটার। ২০২৩ সালে সেটা মাত্র ৪ দশমিক ২৮ বর্গকিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। আর গত ২৮ বছরে রাজধানীর সবুজ, জলাধার, জলাভূমি, উন্মুক্ত স্থান, গণপরিসর, পতিত জমি সবই ব্যাপক মাত্রায় কমেছে। কেন্দ্রীয় নগর এলাকায় সবুজের পরিমাণ ১৯ দশমিক ৭৮ বর্গকিলোমিটার থেকে কমে ১০ দশমিক ৪২ একরে নেমেছে। জলাধার ও জলাভূমি ৩০ দশমিক ২৫ বর্গকিলোমিটার থেকে কমে ৪ দশমিক ২৮ বর্গকিলোমিটার হয়েছে। ফাঁকা জায়গা ও পতিত জমিও কমেছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘নানা অব্যবস্থাপনা ও দুর্বৃত্তায়ন উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্তির ফলে ভরাট-দখলদারিত্ব সংস্কৃতি থেকে মুক্ত হতে সময় লাগছে। মানুষই পরিবেশ দূষণ করে এবং মানুষই দূষণ প্রতিরোধ করতে পারে। দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ না হলে ঢাকার নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা যাবে না।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী সংবিধানকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন উল্লেখ করে সংবিধানের ১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সবুজ ও জলাভূমি দখলমুক্ত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। ঢাকা মহানগরকে দেশের অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বসবাসযোগ্য ঢাকা অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য এবং ঢাকা না বাঁচলে আমাদের অর্থনীতি বাঁচবে না।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘পুরনো ঢাকার গেন্ডারিয়ার পুকুর ভরাট, হাতিরঝিলের লেক ভরাট এবং গাবতলীতে বিএডিসির জন্য নিম্নভূমি ভরাট এখনই বন্ধ করতে হবে।’
বিআইপির যুগ্ম সম্পাদক রাসেল কবিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন রাজউকের বোর্ড সদস্য মেজর (অব.) শামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, সোসাইটি অব এক্সপার্টস অন এনভায়রনমেন্ট ডেভেলপমেন্টের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ইসরাত ইসলাম, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সহসভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার, নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম, বাংলাদেশের সভাপতি অমিতোষ পাল, সাধারণ সম্পাদক সোহেল মামুন প্রমুখ।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।