
কেবল আমরা সাধারণ মানুষরা নই, বড় বড় মানুষও ভুল করেন। কেউ কেউ বলেন, বড় বড় মানুষ যে ভুল করেন সেটা ভালোই করেন, তাদের দেখে আমরা সান্ত¡না পাই এই ভেবে যে, তারাই যদি ভ্রান্ত হন তবে আমরা কোন ছার! তা ব্যক্তিগত ব্যাপারে ভুল করুন ঠিকই আছে, বিপদ হয় রাজনৈতিক ব্যাপারে ভুল করলে। আমরা জড়িয়ে পড়ি। প্রহৃত, বিপদগ্রস্ত, বিপর্যস্ত হই। মারা পড়ি। মওলানা আজাদ বলেছেন, তিনি ভুল করেছিলেন। মস্ত বড় ভুল। ঠিক একই কথা বলেছিলেন জিন্নাহও। বলেছেন, মস্ত বড় ভুল করেছিলেন। এবং কী আশ্চর্য, পরিহাস কত বড়, একই বিষয়ে ভ্রান্তি তাদের পাকিস্তান বিষয়ে। দুজনে দুই শিবিরের মানুষ ছিলেন তারা। পাকিস্তান প্রশ্নে ঠিক আকাশপাতালের ব্যবধান তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে, কিন্তু ঠিক ওই ব্যাপারেই মস্ত বড় ভুল করলেন তারা উভয়েই। পরিহাস তো বটেই। ইতিহাসের? নাকি মানুষের?
মওলানা আজাদের সেই ত্রিশ পৃষ্ঠার রহস্য আজ বিশ বছরের প্রতীক্ষা ও নানা মামলা-মোকদ্দমার বাধা পার হয়ে প্রকাশিত হয়ে পড়েছে। তিনি লিখে গেছেন, তার মৃত্যুর পূর্বে, যে ১৯৪৬ সালে জওয়াহেরলাল নেহরুকে কংগ্রেসের সভাপতি করার প্রস্তাব দিয়ে তিনি তার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে মারাত্মক ভুলটি করেছেন। কেননা সভাপতি হয়েই নেহরু একটা কা- করলেন। বলে বসলেন যে, ক্যাবিনেট মিশন প্ল্যান গ্রহণের দ্বারা কংগ্রেসের হাত-পা বাঁধা পড়ে যায়নি, কংগ্রেস ইচ্ছা করলেই ওই প্ল্যান যেমন ইচ্ছা বদলে নিতে পারবে। জিন্নাহ যেন এই বক্তব্যের অপেক্ষাতেই ছিলেন। ভারতীয় ইউনিয়নের মধ্যে থাকার ক্যাবিনেট মিশন প্ল্যান জিন্নাহ না পারতে মেনে নিয়েছিলেন, এখন কংগ্রেস তা মেনে নেয়নি বলার সুযোগ পেয়ে তিনিও বলে বসলেন, তাহলে আমরাও মানি না। উল্টো তিনি প্রত্যক্ষ কর্মপন্থা দিবস ঘোষণা করলেন। দাঙ্গা-হাঙ্গামা বেধে গেল। অনিবার্য হয়ে পড়ল পাকিস্তান সৃষ্টি। এভাবে নেহরু যে পাকিস্তানকে ঠেকাবেন বলে ভেবেছিলেন, চেয়েছিলেন, সেই পাকিস্তানকেই প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে দিলেন। মওলানার দুঃখ নেহরুর নাম তিনিই প্রস্তাব করেছিলেন, না-করলে নেহরু সভাপতি হতেন না, এবং ওই কথা বলার সুযোগও পেতেন না।
দুঃখ জিন্নাহরও। মৃত্যুর পূর্বে তিনিও বলে গেছেন পাকিস্তান সৃষ্টি ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। কাকে বলেছেন? খোদ ‘কায়েদে মিল্লাত’ ‘উজিরে আজম’ লিয়াকত আলী খান সাহেবকে। কথাগুলো মারাত্মক ‘নিজেকে তুমি এখন মস্ত মানুষ মনে করছো তাই না? তুমি কে? কিচ্ছু না। আমিই তোমাকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছি। তুমি ভাবছো তুমিই পাকিস্তান বানিয়েছো। তুমি না। বানিয়েছি আমি। কিন্তু এখন আমি বুঝতে পারছি যে, আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটি করে ফেলেছি। এখন যদি সুযোগ পাই আমি দিল্লি যাব, জওয়াহেরলালকে বলব অতীতের ভুল-ভ্রান্তি ভুলে গিয়ে আবার বন্ধু হতে।’ মৃত্যুপথযাত্রী জিন্নাহ বলেছেন এ কথা, লিয়াকত আলী খানকে। বলে হাত তুলে ভঙ্গি করেছেন হাত মেলানোর। নেহরুর সঙ্গে।
সাক্ষী তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক লে. ক. ইলাহী বক্স। পরে, লিয়াকত আলী খান সেই তাদের পরস্পরের শেষ সাক্ষাৎ সেরে চলে গেলে, ফাতেমা জিন্নাহ বলেছেন ইলাহী বক্সকে, ‘লিয়াকত আলী খান এসেছিলেন নিজের চক্ষে দেখে যেতে ভাই আর কতক্ষণ বাঁচবেন।’ ভ্রাতার রোগশয্যার পাশে দাঁড়িয়ে বলেছেন তিনি ওকথা। ফাতেমা জিন্নাহর উক্তিটি এর আগেই প্রকাশ পেয়েছে, এবং তার ভিন্ন রকম অর্থ এত দিন করা হচ্ছিল, কিন্তু জিন্নাহর নিজের উক্তির আলোকে ফাতেমা জিন্নাহর উক্তির অর্থ এখন একটাই দাঁড়ায়, অন্য কোনোটা নয়।
জিন্নাহ লিখে যাননি এসব কথা। সময় ছিল না। লিখলেও প্রকাশ পেত না। পাকিস্তানে তখন অন্য রকম অবস্থা। এমনকি ওই যে চিকিৎসক তিনিও এসব কথা লেখেননি নিজে, যদিও জিন্নাহর শেষ দিনগুলোর ওপর একটি বই লিখেছেন তিনি। তবে এক বন্ধুকে বলেছেন সব কথা। সেই বন্ধুও ফেলনা কেউ নন, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন এক সময়ে। এই দ্বিতীয় ভদ্রলোক পেশোয়ারের এক দৈনিকে একটি প্রবন্ধে ফাঁস করে দিয়েছেন এসব কথা। তিনি বলেছেন, ১৯৫২ সালে লে. ক. ইলাহী বক্স তাকে বিবরণ দিয়েছিলেন সমগ্র ঘটনার। ‘আল্লাহ আমাকে শাস্তি দেবেন, যদি ইলাহী বক্সের কথা এক বর্ণও বাড়িয়ে বলে থাকি আমি।’ ইনি কসম খেয়ে বলেছেন। ইলাহী বক্স নিজে একটা বই লিখলেন, কিন্তু তাতে এসব তথ্য কিছুই দিলেন না। কেন? এ প্রশ্নের জবাবে ইলাহী বক্স বলেছেন, জবাব সোজা। ভয়। ‘ভয় ছিল সত্য কথা বললে লোকে আমাকে ফেড়ে ফেলবে।’ কে অস্বীকার করবে এর যথার্থতা?
পাকিস্তান যে একটা ভুল এত কংগ্রেস বলবে, জিন্নাহ কেন বললেন? সে-প্রশ্ন খুবই জরুরি, বিশেষ করে আমাদের জন্য, আমরা যারা জড়িত এবং ভুক্তভোগী। কিন্তু তারও আগে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা দরকার : ইতিহাসে ব্যক্তির ভূমিকা কী? পাহাড় বেয়ে গাড়িটা নামছিল তখন ঘোড়া গাড়িকে টানছিল, নাকি গাড়ি ঘোড়াকে ঠেলছিল পেছন থেকে? এ জিজ্ঞাসা টলস্টয়ের ‘যুদ্ধ ও শান্তি’ উপন্যাসে। আরও একটি উপমা দিয়েছেন তিনি, আপেলটি যে পড়ে গেল তার কারণ কী? বোঁটাটি শুকিয়ে গিয়েছিল? জোরে বাতাস বইছিল? পাখিতে ঠুকরে দিয়েছিল? নাকি নিচে দাঁড়ানো বালকটি ইচ্ছা করেছিল বলেই টুপ করে পড়ে গেল ফলটি। বালক তাই মনে করে। আমরাও তাই মনে করি। ইতিহাসের গাছের নিচে অপেক্ষমাণ বালক হয়ে যাই আমরা থেকে থেকে ভাবি যা কিছু ঘটছে সব আমাদের মঙ্গলের জন্যই। না-ভাবলেও ভাবানো হয়। এ ক্ষেত্রেও হয়েছে। প্রচার করা হয়েছে পাকিস্তান আমাদের মঙ্গলের জন্যই, যদিও মঙ্গল হয়েছে অল্পকজনেরই। ধনীদের। বিশেষভাবে পাঞ্জাবি ধনীদের। ওদিকে মওলানা আজাদ মনে করেছেন, পাকিস্তান তিনিই সৃষ্টি করলেন, পরোক্ষে। মাউন্টব্যাটেন অবশ্যই মনে করতে পারেন যে, তিনিই তো দিলেন পাকিস্তান-হিন্দুস্তান। এটলি বলতে পারেন তিনিই দায়ী। আর জিন্নাহ তো বলবেনই, বলেছেনই।
কিন্তু ইতিহাস কি অত সরল, অমন একরৈখিক? না, তা নয়। ইতিহাস বড় জটিল।
এবং ইতিহাস বড়ই পরিহাসপ্রিয়, নইলে দ্বি-জাতিতত্ত্বের ঘোরবিরোধী নেহরু ও আজাদকে দিয়ে দ্বি-জাতিতত্ত্বের সেবা করিয়ে নেবে কেন সে, অমনভাবে? জিন্নাহর ক্ষেত্রেও ওই পরিহাস একবার নয়, বারবার দেখা গেছে। এককালে তিনি ছিলেন ‘হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের অগ্রদূত,’ কালে তিনিই হলেন সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রধান প্রবক্তা। ইংরেজি ছাড়া যিনি কথা বলতেন না, সাহেবি পোশাক ছাড়তেন না, খাদ্য-অখাদ্যের ব্যাপারে যার কোনো বাছ-বিচার ছিল না। কোন মাসে রোজা তার খবর রাখতেন না, নিজে বিয়ে করেছিলেন পার্সি মহিলাকে, কন্যা পার্সি যুবককে, তিনিই হলেন ইসলামি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা। দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে যখন ভারতবর্ষকে দ্বিখ-িত করতে বদ্ধপরিকর সেই সময়েই তিনি মাউন্টব্যাটেনকে বলেছিলেন, ‘পাঞ্জাব ও বাংলার হিন্দুস্তান-পাকিস্তান বিভাজন তিনি কিছুতেই মেনে নেবেন না।’ যুক্তি কী? যুক্তি খুব স্পষ্ট। ‘আপনি বুঝতে পারছেন না কেন,’ মাউন্টব্যাটেনকে তিনি যুক্তি দিয়ে বুঝিয়েছেন ‘পাঞ্জাব হচ্ছে একটি জাতি। হিন্দু বা মুসলমান তো পরে, আগে আমরা পাঞ্জাবি কিংবা বাঙালি।’ তাহলে দ্বি-জাতিতত্ত্বের বাকি থাকে কি? বাকি তিনি কিছু রাখতে চাননি, যেজন্য পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে, পাকিস্তান সৃষ্টির আগেই তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, পাকিস্তানে কেউ আর আলাদা করে হিন্দু থাকবে না, মুসলমানও থাকবে না, সবাই মিলে হবে এক জাতি। যে মুসলমানরা ভারতে পড়ে রইল তারা কোন জাতি সে প্রশ্নেরও জবাব দেননি। ওদিকে আবার পাকিস্তান সৃষ্টির পর বাঙালি যখন চঞ্চল হয়েছে, পাঠান অস্থির, বেলুচ উদ্বিগ্ন তখন তিনি তাদের ধমকে দিয়েছেন, বলেছেন, ‘তোমরা কেউ বাঙালি নও, পাঠান নও, বেলুচ নও, সবাই পাকিস্তানি।’ পরিহাসের কী কোনো অবধি আছে?
তা থাক পরিহাস, কিন্তু জিন্নাহ কেন বললেন যে, তিনি ভুল করেছেন পাকিস্তান সৃষ্টি করে, নেহরুই বা কেন বলতে গেলেন ক্যাবিনেট মিশন প্ল্যান মানি-না-মানি আমার ইচ্ছা? হতে পারে নেহরু ভেবেছিলেন, সভাপতি হিসেবে তিনি কর্তৃত্ব প্রকাশ করবেন। অন্তত তাই মনে হয় মওলানা আজাদের আত্মজীবনী যদি পড়ি। জিন্নাহ? তার ক্ষেত্রেও ওই একই সন্দেহ আমাদের। তিনি দেখছিলেন পাকিস্তানে তার কর্তৃত্ব নেই। তিনি কর্তৃত্ব ভালোবাসতেন, যেজন্য তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী না হয়ে গভর্নর জেনারেল হয়েছিলেন এবং যে, তার পাকিস্তানে গভর্নর জেনারেলই হবেন সর্বেসর্বা, প্রধানমন্ত্রী আজ্ঞাবহ। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর দেখলেন এক পাহাড়ি অঞ্চলে তাকে ফেলে রাখা হয়েছে, কেউ খোঁজ নেয় না, টেলিগ্রাম পাঠালে ওষুধ আসে না। বুঝে ফেললেন পাকিস্তান কী বস্তু। রেগেমেগে তাই ওই কথা বললেন, লিয়াকত আলী খানকে। লিয়াকত আলী কী করলেন? ইলাহী বক্স বলছেন লিয়াকত আলী একটুও বিচলিত হননি। জিন্নাহকে শায়িত রেখে হেঁটে চলে এলেন। পাশের কামরা পার হয়ে বারান্দায় গেলেন। ‘তারপর তিনি খুব জোরে হাসলেন এবং উঁচু গলায় বললেন, বৃদ্ধ এখন বুঝতে পেরেছেন যে, তিনি ভুল করে ফেলেছেন।’ আবার হাসি।
এর কদিন পরেই জিন্নাহর মৃত্যু হয়। লিয়াকত আলী খান নিজেও এরপর বেশি দিন বাঁচেননি। বছর-তিনেক পরে তিনিও মারা গেলেন। জিন্নাহর তবু স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল, লিয়াকত আলী খুন হলেন। মৃত্যুর আগে সেই প্রসিদ্ধ উক্তিটি করে গেলেন, ‘খোদা পাকিস্তান কি হেফাজত করে।’ সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে যে, যারা তাকে হত্যা করেছেন তারাই ওই উক্তি বসিয়ে দিয়েছেন তার মুখে। মারলেনই যখন, তখন অমর করে রাখতে অসুবিধা কী। গরু মেরে জুতা দান। পরিহাস। কিন্তু আরও বড় পরিহাস তো এখানে যে, ওই দোয়ার খুব প্রয়োজন ছিল পাকিস্তানকে রক্ষার জন্য। কেননা খোদা ছাড়া পাকিস্তানকে বাঁচাতে পারে এমন শক্তি কারও ছিল না। তারা, যারা খুন করেছিলেন লিয়াকত আলীকে, তারা পাকিস্তান চাননি, পাকিস্তানকে রক্ষার ব্যাপারেও তাদের মাথাব্যথা ছিল না, কেবল নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার চেয়েছিলেন। কার স্বার্থ? পুঁজিপতির ও জমিদারের, বিশেষ অর্থে পাঞ্জাবির। জিন্নাহ পাঞ্জাবি ছিলেন না, লিয়াকত আলীও না, পাঞ্জাবিরা পাকিস্তান আনেনি, কিন্তু স্থির হয়ে গিয়েছিল যে তারাই পাকিস্তান শাসন করবে। তাই ঘটল। জিন্নাহ ও লিয়াকতের পরে প্রথম এলেন পাঞ্জাবি আমলারা, পরে সেনাপতিরা।
খ-িত পাকিস্তানে এখনো পাঞ্জাবিরাই প্রধান। বেনজির ভুট্টোর প্রধান অযোগ্যতা ছিল তিনি যে মহিলা তা নয়, অযোগ্যতা তিনি পাঞ্জাবি নন, সিন্ধি। আর ওই যে মোহাজের, ভারত থেকে এসেছে সর্বস্ব খুইয়ে, তারাও এখন বুঝছে পাঞ্জাবি সাথী কী বস্তু। মোহাজের নেতা আলতাফ হোসেন পাঞ্জাবি নেতা নেওয়াজ শরিফকে বলে দিতে কসুর করেননি, ‘আপনারা তো আমাদের ভারতের চর মনে করেন, তাহলে?’ পাঞ্জাবিরা যেহেতু নিজেদের পাঞ্জাবিই বলে পাকিস্তানি না-বলে, মোহাজেররা তাই বলছেন, তাহলে স্বীকার করতে হবে যে, পাকিস্তানে এখন জাতিসত্তা চারটি নয়, পাঁচটি পাঞ্জাবি, সিন্ধি, পাঠান, বেলুচ ও মোহাজের। তাহলে? পাঁচ জাতির আবির্ভাব। পঞ্চজাতির সম্মেলন। আসল কথা স্বার্থ। জাগতিক স্বার্থই নানা রকম আধ্যাত্মিক ছদ্মবেশ গ্রহণ করে, নানা সময়ে। বেনজির ভুট্টো নিজেকে সিন্ধি বলেননি, বলেছেন পাকিস্তানি। সিন্ধি বললে সুবিধা নেই, অসুবিধা রয়েছে। সমূহ।
বড় মানুষরা বড় বড় ভুল করেন এবং দুঃখ প্রকাশ করে আরও বড় হন। কিন্তু তারা কী করবে যারা : উলুখাগড়া, রাজায় রাজায় যুদ্ধে যাদের প্রাণ যায়? কিংবা যারা গাছের তলের বালক, যেভাবে ফলটা তার জন্যই পড়েছে, কিন্তু তুলতে গেলেই দেখে বিপদ, দারোয়ান আসছে ছুটে। ঘাড় ধরে বলে, তুমি চোর। মূল্য যা দেওয়ার এই সাধারণ মানুষই দেয়। দিয়েছে বৈকি সাতচল্লিশে, একাত্তরে। লাখ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছে। তাদের জন্য ভুল করার কোনো সুযোগ ছিল না, সুযোগ ছিল কেবল প্রাণ দেওয়ার। অর্থাৎ মৃত্যুবরণ করার। ওদিকে নেপোরা কিন্তু দই মেরেই চলেছে।
লেখক : ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ নামক এই ভূখন্ডের মানুষ নিজস্ব রাষ্ট্রব্যবস্থা তৈরি করার সুযোগ পেয়েছে ১৯৭১ সালের দেশের স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে। আমরা সবাই জানি আমাদের এই স্বাধীনতা অর্জন করতে হয়েছে অনেক ত্যাগ ও তিতিক্ষার মাধ্যমে। বাংলাদেশ নামক দেশটি যখন তৈরি হয় তখন উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত নানান সমস্যায় দেশের মানুষ ছিল জর্জরিত। ভঙ্গুর অবকাঠামো, অতি দারিদ্র্যের হার, পুষ্টিহীনতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো মৌলিক চাহিদা ও অধিকারের অপ্রাপ্তি ছিল প্রায় সর্বব্যাপী। উল্লেখ্য, এর পেছনে রয়েছে ঔপনিবেশিক যুগ থেকে শুরু করে ধারাবাহিকভাবে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ-বঞ্চনা ও পরাধীনতা। আর এ কাজে তারা ব্যবহার করেছে তাদের প্রশাসন ও সামরিক তন্ত্রকে। গত পঞ্চাশ বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পরিবর্তন চোখে পড়ার মতো। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি বিভিন্ন আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে এ দেশের অগ্রগতি অনেকের জন্য বিস্ময়কর। অনেকে একে ‘প্যারাডক্স’ বা স্ববিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। প্যারাডক্স এই অর্থে যে শাসনব্যবস্থায় ধারাবাহিক চ্যুতি থাকা সত্ত্বেও কীভাবে ধারাবাহিক উন্নয়ন করা সম্ভব? এতসব পরিবর্তন সত্ত্বেও এ দেশে ধীরে ধীরে ধনী-দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতার প্রকট ঘাটতি, ক্ষমতার কেন্দ্রিকতা, গোষ্ঠীগত স্বার্থের প্রাধান্য এবং জনগণের একটা বড় অংশের প্রান্তিকতা এখনো একটি বড় উন্নয়ন ইস্যু। অনেকে এটাকেই ‘প্যারাডক্স’-এর ফলাফল হিসেবে দেখে থাকেন আর এটিই আমাদের দেশের সার্বিক উন্নয়ন পরিস্থিতি পরবর্তী ধাপে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা।
১৯৭১ সালে স্বাধীন হলেও, স্বাধীন দেশেও রাষ্ট্র পরিচালনার কাঠামো ছিল সেই ঔপনিবেশিক আমলের পুরনো ব্যবস্থাপনায়। বিজ্ঞজনরা বলেন, এখনো আমরা পাকিস্তান আমল তো বটেই অনেক ক্ষেত্রে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক কাঠামো অনুসরণ করে রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিচালনা করছি।
অনেক সময় ঔপনিবেশিকতার দর্শন শুধু রাষ্ট্রকাঠামোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, আমরা জনগণও এর দ্বারা প্রভাবিত। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলার আকাশ-বাতাস ও প্রকৃতিকে যতটা অন্তরে ধারণ করেছিলেন, ততটাই বুঝেছিলেন এ দেশের মানুষকে। তিনি তো আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করনি’। কবিগুরু বাঙালি ও মানুষ হওয়ার মধ্যে কী পার্থক্য খুঁজে পেয়েছেন তা এত সহজ করে বলা সহজ হয়। তবে স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু এর একটি ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে রেসকোর্স ময়দানের এক সমাবেশে তিনি কবিগুরুকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘সাত কোটি বাঙালি আজ মানুষ হয়েছে।’ স্বাধীনতার সমসাময়িককালে বাঙালি জাতীয়তাবোধ ও সংস্কৃতির মধ্যে সমতা ও সাম্য বোধের যে উন্মেষ ঘটেছিল তা ক্ষমতার মোহের আবহে খুব বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি। যেমন পারেনি সমাজ কাঠামোকে দুর্নীতির গ্রাস থেকে মুক্ত করতে। স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধু এই সংকট বুঝতে পেরে রাষ্ট্রকাঠামো পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তার কাছে যে বিকল্প ছিল তা থেকে তিনি একটি বেছে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, অবশ্য, এই কাঠামো কতটুকু ভালো, কতটুকু মন্দ, কতটুকু গণতান্ত্রিক বা উদার তা নিয়ে প্রশ্ন করার যথেষ্ট সুযোগ আছে এবং থাকবেও।
বঙ্গবন্ধুর সেই প্রচেষ্টা যেমন সফল হয়নি, তাই শাসনব্যবস্থা নিয়ে আমাদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর পরও আমরা বৈষম্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। অনেকেই বলে থাকেন, স্বাধীন বাংলাদেশে ক্ষমতার কেন্দ্র পরিবর্তন হলেও ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামো ও তথাকথিত ঔপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হতে পারেনি। এখনো কেন্দ্রীভূত ক্ষমতার দাপট ও পদে পদে সাধারণ মানুষের অসহায়ত্ব চোখে পড়ার মতো। এর প্রধানতম কারণ মনে হয় দেশ স্বাধীন হলেও আমরা শাসনব্যবস্থার কাঠামো যেমন স্বাধীন করতে পারিনি, তেমনি পারিনি আমাদের পুরাতন চিন্তাভাবনা বদলাতে। অন্যদিকে এই দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরে দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় কয়েক গুণ। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা যায়নি, গড়ে তোলা যায়নি অত্যাবশ্যকীয় অবকাঠামো। জনসংখ্যার একটা অংশ দারিদ্র্যসীমার নিচ থেকে বের হয়েছে সত্য কিন্তু একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ধনী ও গরিবের মধ্যে বৈষম্য এবং ক্ষমতাবান ও ক্ষমতাহীনদের মধ্যে পার্থক্য। দেশকে আমরা যতই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ বলি না কেন বর্তমান ব্যবস্থাপনায় সেবা প্রদানকে কোনোভাবেই নাগরিকের অধিকার হিসেবে দেখা হয় না। বরং সেবা গ্রহণের প্রক্রিয়া অনেকে বেশি ভারসাম্যহীন ক্ষমতা সম্পর্ক দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক দলের নেতারাসহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে শাসন কাঠামোর পুনর্গঠনের বিষয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। অনেকেই শাসনব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়টি বেশ জোরেশোরে নিয়ে আসছেন। আসলে আমাদের শাসন কাঠামোতে বিভিন্ন গোষ্ঠী ক্ষমতা আহরণ করেছে কিন্তু প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য শাসনব্যবস্থার সংকট সব সময়ই ছিল। অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির প্রশ্ন প্রায় সব সময় উত্থাপিত হয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সরকারি সেবা পেতে প্রায় সব সময়ই কাঠখড় পোহাতে হয়েছে। আর এখানেই মূল সংকটটি দৃশ্যমান। আর এই সংকট দূর করাই নতুন শাসনব্যবস্থার লক্ষ্য হওয়া উচিত, যেখানে সমতা ও সাম্য এবং ক্ষমতাহীনদের মর্যাদা নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি সরকারি সেবা প্রদানের জন্য জনগণের কাছে স্বচ্ছতার পাশাপাশি জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে প্রক্রিয়ার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে বর্তমান দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের বড়ই প্রয়োজন রয়েছে। বর্তমান ব্যবস্থাপনায় একদিকে যেমন নীতিগত ও কাঠামোগত সংকট রয়েছে এবং একই সঙ্গে এই বিশেষজ্ঞ জ্ঞানেরও ঘাটতি। প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির ধারণ করা বা প্রথাগত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে বর্তমান প্রতিযোগিতায় তাল মেলানো সম্ভব হবে না।
নতুন যুগে নতুন ব্যবস্থাপনা ও নতুন কাঠামোর প্রশাসন হবেÑসেটাই প্রত্যাশিত। কাঠামো ঠিক রেখে শুধু পাত্র-পাত্রী পরিবর্তন করে প্রত্যাশিত পরিবর্তন আশা করা উচিত হবে না। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে আজকে আমাদের বড় অর্জন বাংলাদেশ এখন দরিদ্র দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল বিশ্বে পদার্পণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো। এই উন্নয়নশীল বাংলাদেশের কাছে প্রত্যাশাও অনেক বেশি। পুরনো কাঠামো কিন্তু উন্নয়নশীল বাংলাদেশ বড় বেশি বেমানান। নিঃসন্দেহে এই উত্তরণ দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে নতুন চাহিদা তৈরি করবে এবং এই চাহিদা পূরণ করাই একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে তৈরি হতে পারে। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে উত্তরণের এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার এখনই সময় এবং যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজন প্রচলিত চিন্তাভাবনা থেকে মুক্তি ও জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং এর মধ্য দিয়ে নতুন ব্যবস্থার গ্রহণ।
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
টেলিভিশন নাট্যাভিনেতা মীর সাব্বিরের একটি উক্তিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বেশ সরগরম। লাইভ অনুষ্ঠানে পোশাক নিয়ে মন্তব্য করায় আক্রান্ত বোধ করেছেন এমন অভিযোগ করেছেন অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা ইসরাত পায়েল। এর পক্ষে-বিপক্ষে তুমুল আলোচনা চলছে। অনেকে বলছেন উপস্থাপিকা তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেননি কিন্তু পরে এটা নিয়ে কথা বলেছেন কারণ তিনি আলোচনায় থাকতে চান। আবার অনেকের মতে মীর সাব্বিরের এমন রসিকতা করা উচিত হয়নি। এসব ক্ষেত্রে যা হয় মঞ্চে অপ্রীতিকর কোনো কিছু ঘটলেও সেটাকে সামলে নিয়ে অনুষ্ঠান চালিয়ে নিয়ে যেতে হয় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের। সে কারণেই সঞ্চালনা বা উপস্থাপনার জায়গাগুলোতে উপস্থিত বুদ্ধিসম্পন্ন, স্মার্ট নারী-পুরুষকে বেছে নেওয়া হয়। সেদিনের ঘটনাতে ইসরাত পায়েলও একই কাজ করেছেন। তিনি আক্রান্ত হয়েছেন এমনটা অন্তত মঞ্চে প্রকাশ করেননি। কেননা তিনি সেখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব পালন করছিলেন। অনুষ্ঠানের সুরটি কাটতে না দেওয়াতে তার পেশাদারি মনোভাবই প্রকাশ পেয়েছে।
কিন্তু অনুষ্ঠানের পরে তিনি অভিযোগ করেছেন যে তিনি এতে আক্রান্ত বোধ করেছেন। মঞ্চে এ ধরনের জোকস নতুন কিছু নয়, নারীরা খুব কম ক্ষেত্রে এসবের প্রতিবাদ করেন, অধিকাংশ সময়েই এড়িয়ে যান, যেমন রাস্তাঘাটের উটকো লোকের ছোটখাটো টিপ্পনী তারা প্রতিনিয়ত এড়িয়ে যান। ইসরাত পায়েল প্রতিবাদ করেছেন সেজন্য তাকে সাধুবাদ জানানো উচিত। কারণ এই চুপ করে থাকার চর্চা বন্ধ হওয়া দরকার।
প্রাপ্তবয়স্কদের যেসব জোকস চালু আছে সারা দুনিয়ায়, তার বেশিরভাগই নারীদের হেয় করে বানানো। কবি জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে কথা হচ্ছিল সেই মঞ্চে, তিনি তার কবিতায় বলেছেন ‘অপরের মুখ মলিন করে দেওয়া ছাড়া প্রিয় সাধ নেই।’ বেশিরভাগ জোকসই কারও না কারও মুখ মলিন করে দেয়। তাহলে কি আমরা জোকস বলা বন্ধ করে দেব? তার দরকার নেই, কিন্তু মনে রাখতে হবে স্থান-কাল-পাত্রভেদে অনেক কিছুর অর্থই বদলে যায়। বন্ধুচক্রে বা ঘরোয়া আড্ডায় আমরা যেসব জোকস বলি বড় পরিসরের একটা লাইভ অনুষ্ঠানে সেগুলো না বলাই হলো কাণ্ডজ্ঞান।
আমরা এখন এমন এক দুনিয়ায় বাস করি যেখানে মামুলি ছাই থেকে শুরু করে সোনার প্রলেপ দেওয়া লাখ টাকার আইসক্রিম সবকিছুরই ক্রেতা আছে। আমাদের অনেক প্রয়োজন এখন কৃত্রিম এবং আদতে তাকে প্রয়োজনও বলা যায় না, কিন্তু তার জন্য লাখ টাকা, কোটি টাকা খরচ করি আমরা। আইফোনের জন্য লোকে কিডনি পর্যন্ত বিক্রি করে দিচ্ছে। বাজারব্যবস্থায় আমাদের সামনে এমন সব রঙিন স্বপ্ন তুলে ধরা হয় যার কারণে বিলাসিতাকে আমরা প্রয়োজন ভাবি এবং তার জন্য নিজের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বিক্রি করে দিতেও ভাবি না। বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ড আপনাকে বলে দিচ্ছে কোন জিনিসটা আপনার ‘দরকার’, কোনটা এখন ‘ফ্যাশন’, কোনটা ‘ট্রেন্ডি’। এ-সবই ব্যবসার কৌশল। এমনকি বিজ্ঞাপনের খরচ কিছু কিছু ক্ষেত্রে দ্রব্যের তৈরি-খরচের চেয়ে বেশি। সমাজ যেমন নারীকে আটকে রাখতে চায়, পুঁজিবাদী দুনিয়া চায় নারীর পণ্যায়ন।
এই যে পণ্যায়নের দুনিয়া, তার অন্যতম অভিশাপ হলো, ধনী-গরিবে বৈষম্য এখন আকাশচুম্বী। কারও বাসায় এত কাপড় যে রাখার জায়গা নেই আবার কেউ শতচ্ছিন্ন কাপড় গায়ে খোলা আকাশের নিচে জীবনপাত করছে। সবকিছুরই পণ্যায়ন হয়েছে এখন। যিনি ভাবছেন, আমি তো সারা দিন বিজ্ঞাপন দেখি কিন্তু কিছু কিনি না, তিনিও আসলে বাজারচক্রের বাইরে নন। কেননা বিজ্ঞাপন তাকে আটকে রাখছে ফোন অথবা টেলিভিশনের স্ক্রিনে। আটকে রাখছে তার সময়, উৎপাদনশীলতা, সৃজনশীলতা। আপনি কতক্ষণ কোন বিজ্ঞাপন দেখবেন সেটাও ঠিক করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নামক অত্যাধুনিক নতুন প্রযুক্তি। পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নারীর যৌনতা বিক্রির ইতিহাস অনেক পুরনো। এখন পুরুষের যৌনতাও বিকোচ্ছে বাজারে। তবে, কে কী বিক্রি করবে সেটাও তার স্বাধীনতা। তা নিয়ে কটূক্তি শোভন নয়।
আপনাদের হয়তো মনে আছে এ বছরের শুরুর দিকে অস্কারের মঞ্চেও এমন একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিল। অস্কারজয়ী বিখ্যাত অভিনেতা উইল স্মিথ তার স্ত্রী জেডা পিঙ্কেটের রোগ নিয়ে রসিকতা করায় ক্ষেপে গিয়ে চড় মেরেছিলেন উপস্থাপক ক্রিস রককে। এই চড় মারার ঘটনা নিয়েও সারা দুনিয়া সেদিন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। একদল বলেছিল উইল স্মিথ ঠিক কাজটি করেছে, অন্যদলের অভিমত ছিল প্রকাশ্যে এমন কাণ্ড করা উচিত হয়নি স্মিথের। তবে, লক্ষণীয় হলো, জেডা কিন্তু নিজের অপমানে নিজে কোনো ভূমিকা পালন করেননি, করছিলেন উইল স্মিথ। চড় মারার আগে তিনি স্ত্রীর অনুমতি বা পরামর্শ নেননি, এটিকে ‘স্বামী-সুলভ’ দায়িত্ব মনে করেছেন।
পোশাকের জন্য আমাদের দেশের নারীদের প্রতিনিয়ত কটূক্তির শিকার হতে হয়। আমাদের সমাজ এখনো নারীর স্বাধীনতা, তার স্বাধীন মতামত বা ইচ্ছেমতো পোশাক নির্বাচনের অধিকার মেনে নেওয়ার মতো অবস্থায় আসেনি। সম্প্রতি রাস্তাঘাটে অচেনা মানুষদের কাছেও পোশাকের জন্য হয়রানির শিকার হতে হয়েছে বেশ কয়েকজন নারীকে। সেই দিক থেকে চিন্তা করলে মীর সাব্বিরের অন্তত পোশাক নিয়ে প্রকাশ্যে এমন রসিকতা করা উচিত হয়নি, সেটা তিনি যত নির্দোষ মনেই করেন না কেন। তিনি নিজে অবশ্য ভুল স্বীকার করে বলেছেন তিনি কিছু ভেবে কথাটি বলেননি, তাৎক্ষণিকভাবে বলে ফেলেছেন। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব এমনই যা আচমকা আমাদের আচরণে প্রকাশ পেয়ে যায়। মীর সাব্বিরের মতো বরিশালের স্থানীয় অনেকেই হয়তো এটিকে নির্দোষ রসিকতা ভাবতে পারেন, কিন্তু অনুষ্ঠানটি আঞ্চলিক ছিল না। তা ছাড়া আপাত নির্দোষ রসিকতাতেই নারীকে হেয় করার প্রচুর উপাদান থাকে। মানুষ এসব রসিকতাতে অভ্যস্ত থাকে বলে এগুলো বিশ্লেষণযোগ্য বা ভিন্নভাবে ভেবে দেখার মতো বলে মনে করে না।
অভিযোগ করার পর থেকে ইসরাত পায়েল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচুর কটূক্তির শিকার হচ্ছেন এবং এর সিংহভাগ তার পোশাক নিয়ে। আমাদের সমাজের পুরুষতান্ত্রিক এবং কর্র্তৃত্ববাদী আচরণ এসব কটূক্তি ও গালাগালের মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। মেয়েদের যে ‘বড় গলায়’ কথা বলতে নেই সেটা আমাদের মেয়েশিশুরা ছোটবেলা থেকেই শুনে বড় হয়। আমরা সবসময় মেয়েদের দমিয়ে রাখতে পছন্দ করি। নারী কোনো অভিযোগ করলে আমরা বলি ‘মানিয়ে চলতে’। যেন মানিয়ে চলা শুধু নারীদের দায়িত্ব। নারীদের অভিভাবকের কোনো অভাব নেই এই সমাজে। পাশের বাসার আন্টি থেকে শুরু করে পথচলতি অচেনা লোক, সবাই নারীর মুরব্বি। নারী কেমন করে হাঁটবে, কথা বলবে, কোথায় যাবে, কী খাবে, কী পরবে সবটাই ঠিক করে দিতে চান এই অভিভাবকরা। মীর সাব্বিরের কথাতেও অভিভাবকত্বের প্রকাশ রয়েছে। উপস্থাপক পুরুষ হলে এই রসিকতা তার মাথায় আসত কি?
কিছু পেশা আছে যাদের কাজের ধরন এমন যে তারা না চাইলেও মানুষের প্রতি তাদের কিছু দায়বদ্ধতা তৈরি হয়। অভিনয় এমনই এক পেশা। সমাজের একটা বড় অংশের মানুষ অভিনয়শিল্পীদের অনুসরণ করেন, তাদের কাজকর্মে প্রভাবিত হন, তাদের মতো হতে চেষ্টা করেন। সে কারণে আমাদের মতো নারীবিদ্বেষী ও পশ্চাৎপদ সমাজে অভিনয়শিল্পীদের দায়িত্বও অনেক বেশি। ফলে মীর সাব্বিরের মতো মানুষদের আপাত নির্দোষ কিন্তু সামান্য রকমের ত্রুটিবিচ্যুতিও মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। লেখক: কবি ও সাংবাদিক
জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি প্রচারণা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাফল্যের দাবির কথা আমরা শুনে আসছি। তার অর্থ এই নয় যে, সরকার জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে পেরেছে। এই প্রেক্ষাপটে ঢাকার আদালতপাড়া থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের দুই সদস্য তাদের সহযোগীদের সহায়তায় পুলিশের চেখে স্প্রে ছিটিয়ে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা বিশেষ বিবেচনার দাবি রাখে। কারণ, আদালতপাড়া থেকে ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গি জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন এবং লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। পলাতক দুই জঙ্গির নাম মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির ও মো. আবু ছিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব। উল্লেখ্য, আদালতে চার জঙ্গির হাজিরা শেষে তাদের নিয়ে যাচ্ছিলেন একজন পুলিশ ও একজন আনসার সদস্য। গেটের সামনে আসার পরপরই জঙ্গিরা পুলিশ ও আনসার সদস্যকে কিল-ঘুসি মারতে শুরু করে। বাইরে আরও চার জঙ্গি বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। ঘুসি দেওয়ায় পুলিশ সদস্য আহত হন। ফলে তার হাতে থাকা দুই আসামি ছেড়ে দেন তিনি। আনসার সদস্যকেও অনেক মারধর করা হয়েছে, স্প্রে মেরেছে প্রচুর। কিন্তু আনসার সদস্য দুই জঙ্গিকে ছাড়েননি। পুলিশ সদস্য যে দুই আসামিকে ছেড়ে দিয়েছেন তারা বাইরে রাখা মোটরসাইকেলে উঠে চলে যায়। এখানে আনসার সদস্যের কর্তব্যপরায়ণতা এবং পুলিশ সদস্যের পরাভূত হওয়া দুই রকম পেশাদারত্ব দেখতে পাই আমরা। পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিদের ধরতে সারা দেশে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা করে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে। পাঁচ সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন ডিএমপি কমিশনার। কারোর দায়িত্ব পালনে অবহেলা থাকলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
দেশ রূপান্তরের আরেক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালে পুলিশের প্রিজন ভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেওয়া তিন জঙ্গির মধ্যে একজনের সন্ধান আজো মেলেনি। অপর দুজনের একজন বন্দুকযুদ্ধে নিহত, আরেক জন ভারতে গ্রেপ্তার রয়েছে। ওই ঘটনার তদন্তে গঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাটি ছিল সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত। পুরো ঘটনায় পুলিশ ও কারাগারের কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে। গত রবিবার ফের আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গিকে ফিল্মি স্টাইলে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাটিও যে পরিকল্পিত, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ৪ জঙ্গি আসামিকে হাজিরা শেষে নিতান্ত সাধারণ কয়েদির মতো প্রিজন ভ্যানে নিয়ে যাচ্ছিলেন মাত্র একজন পুলিশ ও একজন আনসার সদস্য! এমন দুটি স্পর্শকাতর হত্যামামলার আসামিকে এমন নিরাপত্তাহীনভাবে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে নেওয়ার বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এ দায় কারা কর্তৃপক্ষ এবং আদালতের নিরাপত্তায় নিয়োজিতরা এড়াতে পারেন না। এবার তো জঙ্গিরা আগ্নেয়াস্ত্রের পরিবর্তে স্প্রে ছিটিয়েই কার্যসিদ্ধি করেছে। অন্যদিকে স্মরণযোগ্য যে, হলি আর্টিজান হামলার বিচারকালে আদালত প্রাঙ্গণে আসামিদের আইএসের টুপি পরিধানের ঘটনা ওই মামলার সাত আসামির মৃত্যুদ-াদেশের রায়কে কিছুটা মøান করে দিয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছিল, কী করে আসামিদের কাছে আইএসের প্রতীক সংবলিত টুপি এলো? আমাদের কথা হচ্ছে পরিকল্পিত হোক অথবা হঠাৎ উদ্ভূত পরিস্থিতিই হোক, কোনো অবস্থাতেই ঘটনাগুলো মোকাবিলা করতে না পারার দায় সরকার এড়াতে পারে না।
বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মীয় জঙ্গিগোষ্ঠী বিভিন্ন সময়ে নাম পরিবর্তন করে, কৌশল পরিবর্তন করে তৎপরতা চালিয়ে আসছে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কিশোর-তরুণদের জঙ্গি দলে নাম লিখিয়ে নিরুদ্দেশ হওয়া, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সন্ধান ও গ্রেপ্তারের খবর নিয়মিতই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে আসছে। সর্বশেষ ঘটনায় সহযোগীদের ছিনিয়ে নিতে যে অভিনব অস্ত্রের ব্যবহার করেছে, তাতে মোটেও চিন্তামুক্ত হওয়া যাচ্ছে না। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) এক গবেষণায় দেখা যায়, দেশে জঙ্গিবাদে যারা জড়াচ্ছেন তাদের ৬১ ভাগের বেশি তরুণ। তাদের মধ্যে ৭৩ ভাগের বেশি সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত। সচ্ছল পরিবারের এসব তরুণ পারিবারিক, রাজনৈতিক, ভাবাদর্শগতসহ আটটি কারণে ছয়টি ধাপে জঙ্গিবাদে জড়াচ্ছেন। যাদের অধিকাংশেরই অভিভাবকরা শুরুতে বিষয়টি বুঝে উঠতেও পারছেন না। গবেষণায় জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে করণীয় বিষয়েও বিস্তর নির্দেশনা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাঙালি সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধারণ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ লালন, মননশীল চর্চা কিংবা খেলাধুলায় উৎসাহিত করা। অন্যদিকে, বাকস্বাধীনতা, ভিন্নমত, মুক্তবুদ্ধি ও বিজ্ঞানমনস্কতাই জঙ্গিবাদের টার্গেট হয়ে আসছে। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় পুলিশ ও গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করার পাশাপাশি, দেশে সামাজিক ন্যায়বিচার, বৈষম্যহীন ও ধর্মীয় বিদ্বেষমুক্ত সমাজ গঠনের মতো মৌলিক বিষয়গুলোতে জোর দেওয়া জরুরি।
প্রখ্যাত বাঙালি সংগীতশিল্পী, কবি, লেখক এবং সুরকার হেমাঙ্গ বিশ্বাস ১৯১২ সালের ১৪ ডিসেম্বর, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৩১৯ বঙ্গাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মস্থান তৎকালীন শ্রীহট্ট বা সিলেট জেলার হবিগঞ্জ মহকুমার চুনারুঘাট উপজেলার মিরাসি গ্রামে। বাবা হরকুমার বিশ্বাস ও মা সরোজিনী দেবী। কলেজে থাকতেই স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৩২ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসেন। রাজনৈতিক আন্দোলনের কারণে ১৯৩৫ সালে প্রথমবার কারাবন্দি হওয়ার পর তিনি যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হন। ১৯৪৮ সালে তেলেঙ্গানা আন্দোলনের সময় তিনি আবারও গ্রেপ্তার হন এবং তিন বছর কারাবন্দি থাকেন। ১৯৩৮-৩৯ সালে বিনয় রায়, নিরঞ্জন সেন, দেবব্রত বিশ্বাস প্রমুখের সঙ্গে মিলে ভারতীয় গণনাট্য সংঘ বা ‘আইপিটিএ’ গঠন করেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে বাংলার প্রগতিশীল লেখক শিল্পীদের আমন্ত্রণে তিনি প্রথম কলকাতায় আসেন সংগীত পরিবেশন করতে। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে তার উদ্যোগে এবং জ্যোতিপ্রকাশ আগরওয়ালের সহযোগিতায় ‘সিলেট গণনাট্য সংঘ’ তৈরি হয়। স্বাধীনতার আগে ভারতীয় গণনাট্য সংঘের গানের সুরকারদের মধ্যে তিনিই ছিলেন প্রধান। চীন-ভারত মৈত্রীর ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল। ‘মাস সিঙ্গার্স’ নামে নিজের দল গঠন করে তিনি গ্রাম-গ্রামান্তর ঘুরে ঘুরে গান গেয়ে বেড়িয়েছেন। তিনি ‘কল্লোল’, ‘তীর’, ‘লাললণ্ঠন’ প্রভৃতি নাটকের সংগীত পরিচালক ছিলেন। রাঢ় বঙ্গের ঝুমুর, বরেন্দ্রীর ভাওয়াইয়া, চটকা, জারি-সারি, মুর্শিদি, বঙ্গের ভাটিয়ালি, বীরভূমের বাউল, নদীয়ার ফকির বাউল হয়ে হাছন রাজায় মিলেছে তার গানের পথচলা। তিনি গাজীর গান, ধামাইল গান, বাইদ্যার গান, কবি গান, হোরি গানসহ নানা রাগের সুরকে আত্মস্থ করে গেয়েছেন অনেক গান। ১৯৮৭ সালের ২২ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল দলের রক্ষণভাগের অন্যতম সেরা আঁখি খাতুন। সেই ছোট থেকেই গড়ন, উচ্চতা ও লড়াকু ফুটবল দিয়ে আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন। মেয়েদের ফুটবলে বাংলাদেশের প্রায় সব সাফল্যেই ছিলেন অগ্রনায়ক হয়ে। সম্প্রতি তিনিও জাতীয় দলের ক্যাম্প ছেড়েছেন। তবে সতীর্থ সিরাত জাহান স্বপ্নার মতো অবসরের সিদ্ধান্ত নেননি। বরং নিজেকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাফুফের বন্দী জীবনকে বিদায় জানিয়েছেন।
সম্প্রতি চীনের বন্দরনগরী হাইকোউ শহরের একটি ফুটবল অ্যাকাডেমিতে খেলার পাশাপাশি পড়ালেখার প্রস্তাব পেয়েছেন আঁখি। এখন চলছে চীনের ভিসা নেওয়ার প্রক্রিয়া। সবকিছু ঠিক থাকলে আসছে ঈদের পর দেশ ছাড়বেন তিনি। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন আঁখি।
তিনি যে আর দশজন ফুটবলারের মতো নন, তা আগেই বুঝিয়েছেন আঁখি। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ের পর বিশ্ব ফুটবলের নজর কাড়েন দীর্ঘদেহী এই ডিফেন্ডার। তার নির্ভীক ফুটবল বড্ড মনে ধরে সুইডেনের শীর্ষ লিগের একটি ক্লাবের। সাফে বাংলাদেশ মাত্র একটি গোল হজম করেছিল।
এই কৃতিত্বের বড় দাবীদার সেন্টারব্যাক আঁখি। তাই সুইডিশ ক্লাবটি তাকে দলে নেওয়ার প্রস্তাবও দেয়। প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবে ইউরোপের কোন দেশের শীর্ষ লিগে খেলার প্রস্তাবে আঁখি দেখতে শুরু করেছিলেন বড় মঞ্চে নিজেকে প্রমাণের স্বপ্ন। তবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের হঠকারি সিদ্ধান্তে সুইডেনে খেলতে যাওয়া হয়নি। জাতীয় দলের খেলা থাকবে বলে সুইডেনের দরজা বন্ধ করে দেয় বাফুফে। পরে অবশ্য অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে জাতীয় দলকে সিঙ্গাপুরে ফিফা ফ্রেন্ডলি ও মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইপর্ব খেলতে পাঠানো হয়নি।
বিষয়টা ভীষণ কষ্ট দিয়েছিল সদ্য এইচএসসি পাস করা আঁখিকে। অভিমানে কিছুদিন ক্যাম্প ছেড়েও চলে গিয়েছিলেন। পরে অবশ্য ক্যাম্পে যোগ দেন। তবে হতাশা একটুও কমেনি। দিনের পর দিন লক্ষ্যহীণ পথ চলতে কারই বা ভালো লাগে? দেশের ফুটবলের যে ভবিষ্যত নেই ঢের বুঝতে পেরেছিলেন। তাই চীনের প্রস্তাবটাকে লুফে নেন আঁখি।
দেশ রূপান্তরের কাছে ক্যাম্প ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'আমি ওখান থেকে চলে এসেছি ঠিক, তবে ফুটবলেই থাকবো। চীনে ভাল অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন ও লিগ খেলার সুযোগ পাচ্ছি। তাই ওইখানে যাবো। এখন ভিসা নিয়ে কাজ করছি। আমার জন্য দোয়া করবেন।'
গত ফেব্রুয়ারিতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন সিরাজগঞ্জের গর্ব আঁখি। দেশে সুযোগ ছিল বেসরকারী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। তবে তিনি যে স্বপ্ন বুনেছেন চীনে লেখাপড়া করার, ‘মূলত আমি ওখানে পড়াশোনা ও খেলা এক সঙ্গে করবো। এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। তবে ভর্তি হইনি।’
তার এই সিদ্ধান্ত বাফুফেকে জানিয়েই নেওয়া। তবে জাতীয় দলের প্রয়োজনে যেখানেই থাকেন না কেন, চলে আসবেন, 'আমি পল স্যারকে (বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি) জানিয়েই ক্যাম্প ছেড়েছি। তাকে এটাও বলেছি আমি যেখানেই থাকি, জাতীয় দলের প্রয়োজন হলে চলে আসবো।'
সম্প্রতি মেয়েদের ক্যাম্পে লেগেছে দ্রোহের আগুন। তিনদিন আগে অভিমানে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের অন্যতম স্ট্রাইকার স্বপ্না। একই দিনে মেয়েদের ফুটবলের সকল সাফল্যের রূপকার অভিজ্ঞ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। মূলত বাফুফের গঞ্জনার শিকার হয়েই ছোটনের এই সিদ্ধান্ত। তাতেই হুলস্থুল লেগে গেছে ফুটবল অঙ্গনে। সালাউদ্দিন-কিরণের হাতে বন্দী নারী ফুটবল নিয়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। প্রিয় কোচ ছোটনের জন্য ভীষণ মন খারাপ আঁখির, 'সত্যি খুব খারাপ লাগছে স্যারের সরে যাওয়ার কথা শুনে।'
তাকে সুইডেনে খেলতে যেতে দেওয়া হয়নি। স্বপ্নাকেও ভারতের লোভনীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। আঁখি অবশ্য এই অপ্রিয় বিষয়গুলো এড়িয়েই যেতে চাইলেন। শুধু বলেছেন, 'স্বপ্না আপুর ভারতে খেলার সুযোগ ছিল। তার সঙ্গে কী হয়েছে, সেটা সবার জানা। আমার সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছে।'
শেষটায় আঁখি যা বলেছেন, তা দিয়েই নারী ফুটবলের ভেতরের চিত্রটা ফুটে উঠেছে। তারা দেশকে অসংখ্য সাফল্য এনে দিয়েছেন। গোটা দেশের কাছে তারা একেকজন খেলার মাঠের বীর সেনানী। তবে তাতে তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। বাফুফের চতুর্থ তলায় গাদাগাদি করে থাকতে হয়। মাস শেষে জুটে নামকোয়াস্তে পারিশ্রমিক। সেটা বাড়ানোর দাবী করলেই নাম কাটা যায় গুডবুক থেকে। আঁখির কথায়, 'ভাইয়া, আমরা তো মেয়ে। আর কত কষ্ট করবো যদি ঠিকভাবে পারিশ্রমিকই না পাই?'
দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল হওয়ার পরও আঁখিদের আকাশ ঢেকে আছে নিকশ কালো অন্ধকারে। এর দায় কী এড়াতে পারবেন, বছরের পর বছর মসনদ আঁকড়ে রাখা ফুটবল কর্তারা?
হার দিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শেষ করলো চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। অন্যদিকে ৫-০ গোলের দাপুটে জয়ে শেষ করেছে দ্বিতীয় স্থানের আর্সেনাল। জিতেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। আর ৪-৪ গোলে ড্র করেছে লিভারপুল। সাউদাম্পটনের অবনমন আগেই নিশ্চিত হয়েছিল। রবিবার তাদের সঙ্গে নেমে গেছে লিস্টার ও লিডস। লিডস ১-৪ গোলে হেরে গেছে টটেনহ্যাম হটস্পারের কাছে। আর ২-১ গোলে ওয়েস্টহ্যামকে হারিয়েও লাভ হয়নি লিস্টারের। বেন্টফোর্ডের মাঠে হালান্ড-গুনদোয়ানসহ প্রথমসারির কয়েকজনকে খেলানইনি পেপ গার্দিওলা। সামনে ছিলেন আলভারেজ, মাহরেজ, তাদের পেছেন ফোডেন। ৮৫ মিনিট পর্যন্ত অরক্ষিত রেখেছিল সিটি তাদের গোল। ঠিক ওই সময়ে ব্রেন্টফোর্ডের ইথান পিনোক। পঞ্চম হার দিয়ে লিগ শেষ করে সিটি।
নগর প্রতিদ্বন্দ্বি ম্যানইউ ঘরের মাঠে জেডন সানচো ও ব্রুনো ফার্নান্দেজের দ্বিতীয়ার্ধের দুগোলে ফুলহ্যামকে হারিয়ে তৃতীয় হয়েছে। চেলসির সঙ্গে নিউক্যাসলে ১-১ গোলে ড্র করায় চতুর্থ স্থান নিয়ে শেষ করলো সৌদি যুবরাজের মালিকানধীন নিউক্যাসল। সাউদাম্পটনের সঙ্গে ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েও একপর্যায়ে ৪-২ গোলে পিছিয়ে পড়ে হারের শঙ্কায় পড়েছিল লিভারপুল। ৭২ ও ৭৩ মিনিটে কোডি গাকপো ও ডিয়েগো জোতার গোল ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে ইয়ুর্গেন ক্লপের শিষ্যরা। ৬৭ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম হয়েছে লিভারপুল। ব্রাইটন হয়েছে ষষ্ঠ। ঘরে মাঠে জাকার দুই ও সাকার এক গোলে উলভসের বিপক্ষে প্রথমার্ধেই ৩-০তে এগিয়ে যায় গানার্সরা। দ্বিতীয়ার্ধে জেসুস ও কিইয়োর আরো দুই গোল করলে বড় জয়ের স্বস্তিতে মৌসুম শেষ করে একসময় শিরোপা লড়াইয়ে থাকা আর্সেনাল।
ত্রাসবুর্গের মাঠে তাদের বিপক্ষে ড্র করে ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানের শিরোপা নিশ্চিত করেছে পিএসজি। তাই সময়টা এখন তাদের উৎসবের। সময়টা উপভোগ করতে ঘোড়দৌড়ে অংশ নিয়েছিলেন পিএসজি গোলরক্ষক সার্জিও রিকো। কিন্তু সেখানে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারাত্মক আহত হয়েছেন তিনি।
বর্তমান রিকোকে ইনটেনসিভ কেয়ারে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। পিএসজির এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘রিকোর অবস্থা আশঙ্কাজনক।’ পরে ক্লাব থেকে জানানো হয়, তার প্রিয়জনদের সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগ করা হচ্ছে।
লিগ ওয়ান শিরোপা নিষ্পত্তি হওয়ার পর প্যারিসে ছুটি না কাটিয়ে নিজ দেশ স্পেনের সেভিয়ায় ফিরে যান রিকো। সেখানেই দুর্ঘটনার শিকার হোন তিনি।
স্পেনের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, ২৯ বছর বয়সী রিকো স্পেনের হুয়েলভা অঞ্চলের এল রোসিওতে ঘোড়দৌড়ে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে দৌড়ে থাকা আরেকটি ঘোড়ার সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হোন তিনি। রিকোকে দুর্ঘটনাস্থল থেকে সেভিয়ার এক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় হেলিকপ্টারে করে।
সেভিয়ার সাবেক এই গোলরক্ষক ২০২০ সালে পিএসজিতে যোগ দেন। তার আগে ২০১৮-১৯ মৌসুমে ধারে কাটান প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ফুলহামে। পিএসজির হয়ে রিকো ২৯ ম্যাচ খেলেছেন। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সেভিয়া থেকে চলে যান তিনি।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।