
১৯৭১ সালে পদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা কে কোথায় ছিলেন তা শুধু কৌতূহলের বিষয়ই নয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে আমলাদের ভূমিকা কী ছিল তা বুঝতেও এই তথ্য গুরুত্বপূর্ণ। তখন এখনকার মতো পলিটিসাইজড ব্যুরোক্রেসি-রাজনীতিকীকরণকৃত আমলাতন্ত্র না থাকলেও যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ পদায়নের আগে প্রধান বিবেচ্য ছিল(ক) প্রস্তাবিত কর্মকর্তা উপযুক্ত কি না? (খ) প্রস্তাবিত কর্মকর্তা নির্ভরযোগ্য কি না?
উপসচিব মর্যাদার পদ হলেও ডেপুটি কমিশনার ও ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট পদটি এই মর্যাদার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর সে পদটি যদি হয় ঢাকার জেলা প্রশাসক তাহলে গুরুত্ব আরও অনেক বেশি। সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে ঢাকার ডিসিকে পূর্ব পাকিস্তানের চিফ সেক্রেটারি, পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর এবং আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কার্যগত সম্পর্কের কারণে চিনবেন এটাই স্বাভাবিক।
১৯৭১-এ ঢাকার ডিসি ছিলেন দুজনআগস্ট পর্যন্ত ১৯৬০ ব্যাচের সিএসপি এ টি এম শামসুল হক এবং আগস্টের পর একই ব্যাচের আহমেদ ফরিদউদ্দিন।
এ টি এম শামসুল হক স্মৃতিকথা লিখেছেন- ‘মোজাইক অব মেমোয়ার্স : ভ্যারিড এক্সপেরিয়েন্সেস অব অ্য মেম্বার অব দ্য সিভিল সার্ভিস।’ তিনি বাকেরগঞ্জ জেলার প্রশাসনের প্রধান ছিলেন। বদলি সূত্রে ২৬ জানুয়ারি ১৯৭০ তিনি ঢাকা জেলার ডেপুটি কমিশনার ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পদে যোগ দিলেন। এই রচনার উল্লেখযোগ্য অংশ তার স্মৃতিগ্রন্থ থেকে অনূদিত/অনুসৃত।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার পর ১৯৭০-এর শুরুতেই ঢাকা রাজনৈতিকভাবে উষ্ণ হতে শুরু করেছে। তার পূর্বসূরি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে অবিবেচকের মতো কাজ করেছেনএই অভিযোগে তড়িঘড়ি করে তাকে প্রত্যাহার করা হয় বলে এ টি এম শামসুল হক উল্লেখ করেছেন। যোগ দিয়েই তিনি পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস এডমিরাল এস এম আহসানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। অত্যন্ত ভদ্রজন গভর্নর আহসানকে একাত্তরের মার্চের মাঝামাঝি সময়ে পদ থেকে অপসারণ করা হয়। তাকে বিদায় জানাতে ঢাকা এয়ারপোর্টে বহু বাংলাদেশির সমাগম হয়েছিল, তাদের মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও ছিলেন। গভর্নর আহসানের সঙ্গে দুটি সাক্ষাতের একান্ত সুখস্মৃতি তিনি উদ্ধৃত করেছেন, একটি উপস্থাপন করছি :
অপর বৈঠকটি সত্তরের নির্বাচনের ঠিক আগে, গভর্নর আহসান কেমন মানুষবৈঠক আমাকে জানতে সাহায্য করেছে। এক সকালে শেখ মুজিবুর রহমানের টেলিফোন পাই। আমি বুঝতে পারি তিনি উত্তেজিত অবস্থায় আছেন এবং মেজাজও চড়ে আছে। তিনি বললেন, খাজা খয়েরউদ্দিন আহসান মঞ্জিলের দেয়ালে আওয়ামী লীগ কর্মীদের ব্যানার ও পোস্টার লাগাতে দিচ্ছেন না। এটা তিনি সহ্য করবেন না (এই নির্বাচনী এলাকায় তিনি খাজা খয়েরউদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বী)। আমি তাকে বললাম, যেহেতু আপনি বিষয়টি আমার নজরে এনেছেন, নিশ্চিত থাকতে পারেন এর একটি সুরাহা হবেই। বিকেল বেলা তিনি যেন তার কর্মীদের পাঠিয়ে দেন, আহসান মঞ্জিলের বাইরের দেয়ালে তারা যত খুশি পোস্টার লাগাবে। আমি ভেবেছিলাম ব্যাপারটা সেখানেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি হটলাইনে (লাল টেলিফোন) গভর্নর আহসানের ফোন পেলাম, জানতে চাইলেন আমি গবর্নমেন্ট হাউজে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারব কি না। যেহেতু তখন জরুরি কোনো কর্মসূচি ছিল নাবললাম যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আসছি। আমাকে যখন তার চেম্বারে নেওয়া হলো তিনি আমাকে বললেন, আওয়ামী লীগের হুমকিতে আতঙ্কিত খাজা খয়েরউদ্দিন তার কাছে চলে এসেছেন এবং ভেতরের লাগোয়া কক্ষে অপেক্ষা করছেন। গভর্নর জানতে চাইলেন এ বিষয়ে আমি কিছু জানি কি না এবং আমি কোনো প্রতিকার করতে পারি কি না। তিনি বরাবরের মতোই শান্ত, ধীর ও সুসমন্বিত। তার কথার মধ্যে কোনো ধরনের নির্দেশনা বা কর্তৃত্ব ফলানোর বহিঃপ্রকাশ নেই। আমি তাকে জানালাম যে, এ বিষয়টি সম্পর্কে আমি সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল এবং এ বিষয়ে শেখ মুজিবের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি তাকে আশ^স্ত করলাম যে, কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না এবং আমি নিজেও খাজা খয়েরউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করব ও কথা বলব। মুজিব কী চেয়েছেন এবং তা সামলে নিতে আমাকে কীভাবে এগোতে হবে সে কথা গভর্নর ও খাজা খয়েরউদ্দিনকে জানালাম। গণতান্ত্রিক অধিকার হচ্ছে প্রত্যেক রাজনৈতিক দল তাদের পার্টির কথা পোস্টার কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো ব্যাঘাত না ঘটিয়ে অবাধে প্রচার করতে পারবেন এবং তারা অন্যদের অবাধে প্রচার করার সুযোগ দেবেন। আমি খাজা খয়েরউদ্দিনকে আশ^স্ত করলাম তিনি যদি কোথাও তার পোস্টার সাঁটাতে চান এবং তাতে যদি কোনো বাধা আসে আমরা সে বাধা অপসারণ করে দেব। এভাবেই সংকটটি মিটে গেল। সেদিন বিকেলে আহসান মঞ্জিল ও সংলগ্ন এলাকায় শেখ মুজিবের অনুসারীরা বহুসংখ্যক পোস্টার ও ব্যানার লাগালেন, খাজা খয়েরউদ্দিননের সমর্থকরা কোনো ধরনের বাধার সৃষ্টি করেননি। পুরান ঢাকার একই নির্বাচনী এলাকা থেকে শেখ মুজিব ও খাজা খয়েরউদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। নির্বাচনে শেষোক্ত ব্যক্তির অসম্মানজনক পরাজয় ঘটেছে।
ঢাকা ১৯৭০ সালেই উত্তেজনায় টগবগে হয়ে উঠেছিল এবং তা অব্যাহত থাকে ২৫ মার্চ ১৯৭১ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যা শুরু করা পর্যন্ত। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত অশান্ত ও বিস্ফোরণোন্মুখ। কোথাও না কোথাও একটা মারাত্মক কিছু ঘটছে না এমন কোনো দিন নেই। একটা ঘটনার কথা বলছি। নরসিংদীর চাঁদপুর জুটমিল, মেঘনা জুটমিল ও অপর কোনো জুটমিল ঘেরাও হয়েছে। শ্রমিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিরোধে সেসব পাটকলের ম্যানেজার ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শ্রমিকদের হাতে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঘেরাও অবস্থায় রয়েছেন। আসন্ন বিপদ থেকে রক্ষা পেতে তাদের পক্ষ থেকে ‘আমাদের বাঁচাও’ ধ্বনি উঠছে। সরকার খুব উদ্বিগ্ন। সরকার চাচ্ছে ঢাকা জেলা প্রশাসন অবিলম্বে উদ্যোগ নিয়ে একটা বিহিত করুক। পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আমাদের অধীনে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেল : (পরে বিডিআর আরও পরে বিজিবি) ন্যস্ত করা হলো। আমার কৌশল ছিল ভিন্ন। ই এ চৌধুরী ছিলেন ঢাকার এসপি (পরে পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল) ঢাকা দক্ষিণের এসডিও নুরুজ্জামান এবং আমিআমরা তিনজন একটি সমঝোতাপূর্ণ চমৎকার টিম ছিলাম এবং আমাদের পরস্পরের ওপর আস্থা ছিল। আমাদের ওপর সরকারের আস্থা ছিল এবং আওয়ামী লীগ এবং এই দলের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানেরও আস্থা ছিল। নুরুজ্জামান কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে শেখ মুজিবুর রহমানের সহপাঠী ছিলেন, পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি সময়ে মুজিব যখন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের শিল্পমন্ত্রী তিনি তার প্রাইভেট সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেছেন। কুমিল্লার বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা জহুরুল কাইয়ুম এবং এসপি ই এ চৌধুরী ছিলেন আত্মীয়তার সূত্রে ‘ব্রাদার-ইন-ল’।
আমি এসপিকে বললাম, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ শিল্প এলাকার বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা সাদু যেখানেই থাকুক খুঁজে বের করুন। আমি বললাম, আমার পাশে সাদুকে না নিয়ে আমি নরসিংদী যাচ্ছি না। এসপি তার গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের কাজে লাগিয়ে দিলেন। পূর্ব পাকিস্তান সচিবালয়ের একটি কক্ষে সাদুকে শনাক্ত করা হলো। এসপিকে বললাম, তাকে নিয়ে এবং একই সঙ্গে আমার সঙ্গে নরসিংদী যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে আমার আবাসিক অফিসে চলে আসুন। এটা ছিল বাস্তবিকই একটি নরসিংদী অভিযান। বেশ কটি গাড়ি ও ইপিআর বাহিনী নিয়ে আমাদের ক্যারাভান। এসপি নিজে ড্রাইভিং সিটে। আমাদের দুজনের মাঝখানে সাদু। আমাদের গাড়ি সবার আগে, অন্য গাড়িগুলো অনুসরণ করছে। অবাঙালি ইপিআর কর্নেল আনোয়ারের হাত আক্ষরিক অর্থেই গুলি চালানোর জন্য নিশপিশ করছিল। তিনি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে জনতার মোকাবিলা করার অনুমতি চাচ্ছিলেন। আমি বললাম, দরকার নেই, আপনি বরং পুলিশের পেছনে চলে যান যাতে আপনাকে সবচেয়ে কম দেখা যায়। আমি তাকে চুপচাপ থেকে পরবর্তী নির্দেশনা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে বললাম। আমরা যখন ঘেরাও করা জুটমিলের কাছে পৌঁছি মিলের শ্রমিকদের ব্যবস্থাপনাবিরোধী এবং সরকারবিরোধী স্লোগান শুনতে থাকি। কিন্তু তারা যখন আমার আর এসপির মাঝখানে সাদুকে দেখল পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত হয়ে এলো। আমি সাদুকে দিয়ে শ্রমিকদের উদ্দেশে বক্তৃতা দেওয়ালাম এবং আমাদের ভেতরে যাওয়ার পথ করে দিতে বললাম। কৌশল কাজে লাগল।
(পরের অংশ সাফল্য, কোনো বলপ্রয়োগ না করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে কর্মকর্তাদের মুক্ত করা হলো, কর্নেল চুপচাপই রইলেন। বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতি সামাল দিতে পারার জন্য কর্তৃপক্ষ বাহবা দিল। সেই অগ্নিঝরা দিনগুলোতে সাইদুল হক সাদু সত্যিই শ্রমিকদের অবিসংবাদী নেতা ছিলেন। মূলত তার আহ্বানেই পাটকল শ্রমিকরা ঘেরাও প্রত্যাহার করে নেয়।) এ টি এম শামছুল হক গভীর মর্মবেদনার একটি কাহিনী উপস্থাপন করেছেনআর তা হচ্ছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট ফজলুর রহমানের মর্মান্তিক মৃত্যু। লেখকের বর্ণনা :
সেই দুর্ভাগ্যজনক শুক্রবারের কথা আমার মনে পড়ছে। ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট ফজলুর রহমান সকাল ১০টার দিকে পুলিশ ওয়্যারলেসে আমাকে জানালেন যে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ হাইওয়ের পাশে পোস্তগোলার ঢাকা মেটাল ইন্ডাস্ট্রিতে ভয়ংকর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তিনি স্থানীয় পুলিশকে সতর্ক ও প্রস্তুত করলেও কাজের ব্যাপ্তির তুলনায় তাদের সংখ্যা অনেক কম। সুতরাং তাদের সমর্থন ও সহায়তা করতে অতিরিক্ত বাহিনী নিয়ে তিনি নিজেই রওনা হচ্ছেন। আমি কখনো ভাবতে পারিনি এমন একজন দায়িত্বসচেতন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে এটাই হবে শেষ কথা। আমি এসডিও নুরুজ্জামানকে তার সঙ্গে যেতে বললাম। তখন থেকে এক ঘণ্টা বা কাছাকাছি সময় পর পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট ই এ চৌধুরী উত্তেজিত অবস্থায় ফোনে জানালেন পোস্তগোলার পরিস্থিতি খুবই খারাপ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফজলুর রহমানের ভাগ্যে কী ঘটেছে তিনি নিশ্চিত নন। তিনি আমাকে বলা মাত্রই পুলিশ ফোর্সসহ তৈরি হয়ে আমাকেও সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে রওনা হওয়ার কথা বললাম।
আমরা একসঙ্গেই পোস্তগোলা রওনা হলাম। মেটাল ইন্ডাস্ট্রির কাছে পৌঁছে আক্ষরিক অর্থেই আমাদের জনতা ঠেলে এক ইঞ্চি, দুই ইঞ্চি করে এগোতে হয়েছে। জনতার আতঙ্কিত দৃষ্টি ছাড়িয়ে হঠাৎ এসডিও নুরুজ্জামানের ওপর চোখ পড়ল, ছেঁড়া কাপড়, অবিন্যস্ত চুল, শূন্য দৃষ্টিআমাদের দিকে এগিয়ে আসছেন। তিনি কাঁপছিলেন, তার কণ্ঠ থেকে স্বর সরছিল না, নিঃশ্বাসও বন্ধ হয়ে আসছিল। আমরা যখন তাকে জিপে তুললাম নুরুজ্জামান কাঁদতে শুরু করলেন। গাল বেয়ে অঝোরে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু, বললেন সহিংস মিল শ্রমিকরা ফজলুর রহমানকে মেরে ফেলেছে, আশপাশে কোনো ডোবায় তার লাশ পাওয়া যেতে পারে। আক্রমণকারীদের দু-একজন তাকে চিনতেন বলে তারাই তাকে অন্যদের হাত থেকে রক্ষা করে জীবন বাঁচিয়েছেন। কিছু সময় পর আমরা ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) বাঁধের পাশে একটি জলাশয়ে ফজলুর রহমানের মৃতদেহ আবিষ্কার করলাম। এ এক মর্মান্তিক দৃশ্য। এমন একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হওয়ার ঘটনা অস্বাভাবিক।
চারদিকে গুজব ছড়িয়ে পড়ল পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনকে বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে তারা সার্বিকভাবে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। এসব হচ্ছে তাদের সৃষ্টি করা অজুহাত। জেলা ও পুলিশ প্রশাসন যখন ফজলুর রহমানের লাশ উঠিয়ে আনে সেখানে শেখ মুজিবুর রহমান, তোফায়েল আহমেদ এবং আওয়ামী লীগের আরও কজন নেতা এসে উপস্থিত হন। তারা অত্যন্ত বিচলিত, যা ঘটেছে তা বিস্তারিতভাবে শেখ মুজিবের কাছে বর্ণনা করা হয়। তিনি বললেন, আসছে সাধারণ নির্বাচনে দৃশ্যমান জনগণের বিজয় নস্যাৎ করতে এ এক ষড়যন্ত্র।
পরিস্থিতি এসেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। এ টি এম শামসুল হক লিখেছেন :
এমন উত্তেজক পরিস্থিতিতে আমি শেখ মুজিবুর রহমানের টেলিফোন পেলাম। তার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত একজনকে বন্দুকের লাইসেন্স দিতে বললেন, কারণ তার নিজের জীবনের ওপর হুমকি আসছে। আমি নির্দ্বিধায় লাইসেন্স ইস্যু করে দিলাম। ঘটনাচক্রে এই লাইসেন্স ইস্যুর কয়েক দিন পরই ধানম-ি ৩২ নম্বর সড়কে (শেখ মুজিবুর রহমানের বাসস্থান, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর) তার বাড়িসংলগ্ন এলাকায় পকেটে রিভলবার থাকা এক ব্যক্তিকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়। এসপি জানালেন, আওয়ামী লীগ সমর্থকরা তাকে শেখ মুজিবের বাড়িতে আটকে রেখে তার উদ্দেশ্য জানার চেষ্টা করছেন। আমরা সেখানে গেলে মুজিবের কাছে নেওয়া হলো। সন্দিহান ঘাতককেও সামনে আনা হলোএসপি তার প্রেক্ষাপট বিবেচনা করার জন্য কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেন, কিন্তু তাতে কোনো ফায়দা হলো না। তাকে বলা হলো যদি দোষ স্বীকার করে শেখ মুজিবের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে তাহলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে, অন্যথায় তাকে কঠোর জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হবে। কিন্তু সে সহজে টলার পাত্র নয়, তাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় সোপর্দ করা হলো। সে সময় শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা পরিকল্পনার অসংখ্য গুজব আসতে থাকে।
একাত্তরের ২৫ মার্চ এ টি এম শামসুল হকই ঢাকার ডিসি ছিলেন। আগস্টে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় সচিবালয়ে বদলি হন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের সচিব হিসেবে অবসর নেন এবং আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হন।
লেখক: সরকারের সাবেক কর্মকর্তা ও কলামিস্ট
আর্জেন্টিনার জার্সি পরা শিশু আয়াতের ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছবির ক্যাপশন মনুষ্যত্বকে একবার হলেও নাড়া দিচ্ছে। আয়াতকে হত্যার পর শরীর ছয় টুকরো করার খবর প্রায় সমস্ত দৈনিক পত্রিকার প্রধান শিরোনাম হয়েছে। আয়াত ১৫ নভেম্বর বিকেলে পড়তে গেলে আর বাসায় ফিরে আসেনি। খবর নিয়ে আয়াতের বাবা-মা জানতে পারে তাদের মেয়ে পড়তে যায়নি। খুঁজে না পেয়ে কাছাকাছি থানায় সাধারণ ডায়েরি করার ১০ দিন পর শিশু আয়াতকে তার পরিবার খুঁজে পায় কিন্তু জীবিত নয়, ছয় খন্ড অবস্থায়। আবীর নামে একজন ১৯ বছরের তরুণ এই হত্যাকান্ড ঘটায়। আবীর শিশু আয়াতকে প্রথমে অপহরণ করে মুক্তিপণের জন্য। কিন্তু আয়াতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে ক্রাইম পেট্রোল দেখার অভিজ্ঞতা থেকে আয়াতকে হত্যার পর ছয় টুকরো করে সাগরে ভাসিয়ে দেয়। উল্লেখ্য, আবীর নামের এই তরুণটির কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড ছিল না।
শিশু অপহরণ, ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন, হত্যা এবং হত্যার পর শরীর টুকরো টুকরো করার খবর কি আয়াতই প্রথম? যদি প্রথম না হয়ে থাকে তবে এমন জঘন্যতম অপরাধ দিনে দিনে চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে চলছে কেন? এর জন্য কি সমাজ দায়ী? যদি সমাজ দায়ী হয়ে থাকে তবে কেমন করে? আজ আমরা পথেঘাটে কী দেখছি? আমরা দেখছি ৫/৭ জন্য কিশোর বা তরুণকে একসঙ্গে দেখলেই মানুষ আশঙ্কা প্রকাশ করে এই ভেবে যে, না জানি তারা কী অপরাধ করে বসে। এই ভাবনা কি হঠাৎ একদিনে তৈরি হয়েছে? না, হয়নি। হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসা কিশোর গ্যাংয়ের জঘন্যতম অপরাধগুলো প্রতিনিয়ত ঘটার ফলে। শিশুদের নিয়ে কাজ করেন এমন ব্যক্তিরা বলছেন, শিশুহত্যার সংখ্যা ও ধরন উদ্বেগজনক। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, বিচারহীনতা ও পারিবারিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে এসব বাড়ছে।
সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলায় এক দম্পতির মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরেই ঝগড়ার জের ধরে বাবার বাড়ি চলে যান স্ত্রী। স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে শ্বশুরবাড়িতে আসেন স্বামী। সেখানেও তাদের ঝগড়া বাধে। স্বামী ক্ষিপ্ত হয়ে একপর্যায়ে সাত মাস বয়সী ছেলেকে নলকূপের সঙ্গে আঘাত করেন। এতে শিশুটির মৃত্যু হয়। ঘটনাটি ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বরের। ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণের আশায় প্রতিবেশীদের হাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে পাঁচ বছরের রিফাত হোসেনকে প্রথমে অপহরণ, পরে খুন করা হয়। ঘটনাটি ২০১৮ সালের জানুয়ারির। ২০২০ সালের ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর মিরপুরে শামনুন নামের চতুর্থ শ্রেণির এক স্কুলছাত্রকে অপহরণের পর হত্যা করেছে অপহরণকারীরা। ২০২১ সালে ১২ জানুয়ারি ময়মনসিংহের তারাকান্দায় দিনেদুপুরে বাড়ির উঠান থেকে সানজিদা আক্তার নামের এক সাত বছরের শিশুকে অপহরণ করা হয়। এর তিনদিন পর পার্শ্ববর্তী জঙ্গল থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এরকম একটার পর একটা ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেওয়া যাবে।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য মতে, ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে পাশবিক নির্যাতন ও নির্মম হত্যার শিকার হয়েছে ১৩ হাজার ১২ শিশু। এর মধ্যে হত্যার শিকার হয়েছে ১ হাজার ৫২৬ শিশু। নিপীড়নের শিকার হয়েছে ১ হাজার ৪৭৫ শিশু। ২০১৭ সালে শিশু হত্যা ৩৩৯। ২০১৮ সালে সে সংখ্যা ছিল ৪১৮। ২০১৯ সালে ৪৪৮ শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। ২০২০ সালে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছিল ৭৭৬ জন শিশু। ২০২১ সালে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার ৯০১ শিশু। অপহরণ, শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যাকাণ্ডসহ জঘন্যতম অপরাধের পরিমাণ দিনে দিনে কীভাবে বেড়ে চলেছে তা এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে।
এ ধরনের জঘন্যতম অপরাধের সঙ্গে যুক্ত অপরাধীদের কি কখনো স্মরণ করিয়ে দেওয়া যাবে না যে, তারা যা করে চলেছে তা আইনের চোখে জঘন্যতম অপরাধ এবং বিবেকের কাছে মনুষ্যত্বহীন, মূল্যবোধহীনতার পরিচয়! রাষ্ট্রযন্ত্র কি এর দায় এড়াতে পারে? বিচারহীনতার সংস্কৃতিও কি এসব বেড়ে চলার কারণ নয়? রাষ্ট্রের সর্বত্র ভূমিকা পালন করতে হবে। আর তার জন্য পাঠ্যবইয়ে এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি সঠিক মূল্যবোধ ও মনুষ্যত্ব তৈরিতে গঠনমূলক লেখা প্রকাশ করা প্রথম স্টেপ মনে করছি।
এসব জঘন্যতম অপরাধের সঙ্গে যুক্ত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে না পারলে সমাজ তথা দেশ বর্বর সমাজে পরিণত হবে। ঢাকা জেলার পাঁচটি নারী নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে প্রায় ১৫ বছরের (২০০২-১৬) ধর্ষণসংক্রান্ত পাঁচ হাজারের মতো মামলার পরিস্থিতি অনুসন্ধানে দেখা যায়, ধর্ষণজনিত মৃত্যু ও হত্যার ২১ শতাংশ মামলা ১১ থেকে ১৫ বছর ধরে ঝুলে ছিল। আর ধর্ষণসংক্রান্ত নিষ্পত্তি হওয়া মামলাগুলোর মাত্র ৩ শতাংশের সাজা হয়েছে। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি ভাঙতে হবে। সমাজের বিবেকবান মানুষেরও এক্ষেত্রে চুপ করে থাকার সুযোগ নেই। এরকম জঘন্যতম অপরাধ আজ আয়াতের সঙ্গে হয়েছে, আগামীকাল যে আপনার এবং আপনার পরিবারের সঙ্গে ঘটবে না গ্যারান্টি কী? শিশু অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা এবং হত্যার পর শরীর টুকরো করার মতো জঘন্যতম অপরাধ বৃদ্ধির কারণগুলো অনুসন্ধান করে মূল সমস্যার সমাধান করতে হবে।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও লেখক
গত ২০ নভেম্বর ২০২২-এ পর্দা উঠল ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ বা ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল-২০২২-এর। আয়োজক দেশ কাতারের দেওয়া তথ্য মতে নিশ্চিতভাবেই এটি পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে খরুচে ক্রীড়া ইভেন্ট। কাতার বিশ্বকাপের আয়োজনে ২২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হচ্ছে। যদিও বিশ্বের অন্যতম সেরা ডেট এনালিটিক্স ও ফাইন্যান্সিয়াল প্রেডিকটর ‘ব্লুমবার্গ’র মতে এই খরচের পরিমাণ ৩০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে!
মধ্যপ্রাচ্যের অপেক্ষাকৃত অনুর্বর অঞ্চলে অবস্থিত মাত্র ১১,৫৮১ বর্গকিলোমিটার আয়তন এবং ২৮ লাখ জনসংখ্যার দেশ কাতার। বাহরাইনি-সৌদি-অটোম্যান সাম্রাজ্য থেকে ব্রিটিশ শাসনামল হয়ে ২০০ বছরের পরাধীনতার গ্লানি বহন করা দেশ কাতার। বাংলাদেশের সমসাময়িক অর্থাৎ ১৯৭১ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর গত ৫১ বছরে কাতারের অর্থনৈতিক অগ্রগামিতা, বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা, ব্যবসা-বাণিজ্যে ভূমিকা চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার মতো। তাদের এই অর্থনৈতিক বিপ্লব শুরু হয়েছে গত শতকের ৮০-এর দশকে যখন ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামের সহায়তায় প্রথম তাদের ভূ-গর্ভস্থ তেল উত্তোলন করতে সক্ষম হয়।
২০০৮ সালে প্রণীত কাতারের প্রধানত কাতার ৪টি লক্ষ্য নিয়ে ন্যাশনাল ভিশন- ২০৩০ ছিল অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী একটি প্রকল্প। যার মধ্যে রয়েছেমানব উন্নয়ন, সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং পরিবেশগত উন্নয়ন। প্রশ্ন হলোমধ্যপ্রাচ্যের অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র রাষ্ট্র এবং একমাত্রিক অর্থনীতিবহুল একটি দেশ কীভাবে এমন বৈপ্লবিক ও উচ্চাভিলাষ দেখানোর সাহস করল? এর উত্তর লুকিয়ে রয়েছে তাদের তেলের মজুদের তথ্যে। ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য মতে, কাতার তাদের মজুদ তেলের মাত্র ১% উত্তোলন করেছে এবং বর্তমান হারে তেল উত্তোলন অব্যাহত থাকলে এই মজুদ শেষ হতে সময় লাগবে আরও ৪০২ বছর। বস্তুত আরব অঞ্চলের তথাকথিত যাযাবর ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতি না থাকা দেশ কাতার তার প্রাকৃতিক রিসোর্স ব্যবহার করে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী রাষ্ট্রে পরিণত হতে চাইছে। এটা সর্বজনবিদিত যে বিশ্বের কাছে নিজেদের তুলে ধরতে ক্রীড়ার চেয়ে ভালো ও প্রভাবশালী মাধ্যম কমই আছে। আর তা দেশটির সরকার ও বিনিয়োগকারীরা উপলব্ধি করেছেন। সেজন্যই বিশ্বের নানা প্রান্তের ফুটবল, টেনিস, ক্রিকেট, বেইসবলসহ নানান ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় কাতারি বিনিয়োগ দৃশ্যমান হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে ফরাসি ফুটবল ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন কিংবা ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যানচেস্টার সিটিতে কাতারি বিনিয়োগের কথা বলা যায়।
শুরুতে তারা ছোট ছোট কিছু ক্রীড়া ইভেন্টের আয়োজন করে সাফল্যের বার্তা পৌঁছে দেয় বিশ্বের কাছে। এরপর ইউএসএ, জাপানের মতো দেশকে পাশ কাটিয়ে বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের দায়িত্ব পায় কাতার। যদিও বিশ্বকাপ আয়োজনের অনুমতি পেতে কাতার অনৈতিকভাবে ফিফার নানান পর্যায়ের কর্মকর্তাকে ঘুষ দিয়েছিল বলে পরে প্রমাণ মেলে। কাতার যখন বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের দায়িত্ব পায় তখন তাদের মাত্র একটি আন্তর্জাতিক মানের ফুটবল স্টেডিয়াম ছিল। কাতারের বাহ্যিক অবকাঠামো, জনপরিবহন ব্যবস্থা, হোটেল ইত্যাদি অত্যাধুনিক ছিল না। ফলে কাতারকে শুরুতেই ফিফার কাছে প্রতিশ্রুতি দিতে হয় যে তারা এসব ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।
উষ্ণ জলবায়ুর দেশ কাতারে গ্রীষ্মে তাপমাত্রা থাকে প্রায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যেটি ফুটবল খেলা কিংবা মাঠে বসে তা উপভোগের অনুপযোগী। তাই কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে ফিফাকে বেশ বিপাকে পড়তে হয়। এমনকি ওই সময়ের ফিফা প্রেসিডেন্ট সেফ ব্লাটার পর্যন্ত স্বীকার করেছেন, কাতারকে বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া চরম ভুল একটি সিদ্ধান্ত ছিল! পরে সিদ্ধান্ত হয় প্রথমবারের মতো ফুটবল বিশ্ব একটি শীতকালীন বিশ্বকাপ দেখবে। কাতার বিশ্বকাপে খেলা হবে সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি পরিবেশে, যেখানে মাঠের তাপমাত্রা থাকবে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গ্যালারিতে তা হবে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৩৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মধ্যে গড়ে ওঠা ৮টি স্টেডিয়াম ও সংশ্লিষ্ট অবকাঠামোর শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা গড়ে তুলতে কাতারকে অবিশ্বাস্য রকমের বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়েছে, যা আমরা আগে কখনো অন্য কোথাও দেখিনি। কাতার বিশ্বকাপ আয়োজন উপলক্ষে সম্পূর্ণ অটোমেটেড ও অত্যাধুনিক সাবওয়ে, নতুন বিমানবন্দর, প্রায় ১০০ হোটেল, নতুন রাস্তাসহ ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নতি করেছে।
২২০ বিলিয়ন ডলারের যে ব্যয়ের হিসাব পাওয়া যাচ্ছে তা আসলে কত বড়? এটি বাংলাদেশের গত চার বছরের বাজেটের কাছাকাছি। ২০১০-এ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের খরচ ছিল ৩.৬ বিলিয়ন ডলার। সর্বশেষ রাশিয়া বিশ্বকাপ-২০১৮-এর খরচ ছিল ১১.৬ বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে আয়োজিত ব্রাজিল বিশ্বকাপ- ২০১৪, ব্রাজিল অলিম্পিক-২০১৬ এবং টোকিও অলিম্পিক-২০২০-এ ব্যয় ছিল যথাক্রমে ১৫, ১৩.১ এবং ১৩.৪ বিলিয়ন ডলার। এই বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য মূল্য শুরু অর্থ দিয়েই চুকাতে হয়নি। এই বিশ্বকাপ উপলক্ষে ২০১০-২২ পর্যন্ত ৬৫০০+ কর্মী নিহত হয়েছেন। আর কোনো বৈশ্বিক ইভেন্টের জন্য এত বিপুলসংখ্যক মানবসন্তানকে প্রাণ দিতে হয়নি।
কাতার সরকারের নেওয়া নানা সিদ্ধান্ত বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছে। তীব্র গরমের মধ্যে কর্মীদের অমানবিক পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য করেছে, দেশটি সমপ্রেমীদের অধিকারকে স্বীকার করে না, খেলার মাঠে নারীর পোশাকের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ, স্টেডিয়ামে বিয়ার নিষিদ্ধ করাসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। সমপ্রেম ও নারীর পোশাক পরার স্বাধীনতা খর্ব করার ইস্যুতে শাকিরার মতো আইকনিক গায়িকা বিশ্বকাপ ফুটবলের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন।
অসম্ভব ব্যয়বহুল এই ফুটবল বিশ্বকাপ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে কীভাবে ভূমিকা রাখবে সেটি ভাবা জরুরি। পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় বিশ্বে যেকোনো প্রান্তের অর্থবিনিয়োগের মূল্য সারা বিশ্বের সব মানুষকে পরিশোধ করতে হয়। সমগ্র বিশ্ব যখন ২০২৩ সালে একটি ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট ও দুর্ভিক্ষের আশঙ্কায় ভীত এমন সময়ে কাতারে অনুষ্ঠিত ফুটবল বিশ্বকাপ মানবজাতির জন্য একটি চরম মূল্যের বিনিময়ে পাওয়া আনন্দ-উৎসবে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা এড়িয়ে যাওয়া যায় না।
লেখক: ডিজিটাল এনালিটিক্স রিসার্চার ও কলামিস্ট নোভা ইউনিভার্সিটি, লিসবন, পর্তুগাল
রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হওয়া জনগণের শ্রম ও ঘামের কষ্টার্জিত অর্থ ব্যয় করে সরকার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। পরিতাপের বিষয়, মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, অধিদপ্তর ও প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ, দায়িত্ব বণ্টন প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রায় প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। সরকারি অর্থে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ সংস্থা ‘শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে’ (ইইডি) চলছে নানান অনিয়ম। একশ্রেণির প্রকৌশলী এই প্রতিষ্ঠানটিকে টাকা কামানোর মেশিনে পরিণত করেছেন। অভিযোগ রয়েছে ঠিকাদারদের সঙ্গে তাদের যোগসাজশে নিম্নমানের উপকরণে নির্মিত হচ্ছে ভবন। অবস্থা এমন যে, উদ্বোধনের আগেই কোনো কোনো ভবন হেলে পড়ছে। কোথাও বছর না যেতেই খসে পড়ছে প্রতিষ্ঠানের পলেস্তারা।
গত রবিবার দেশ রূপান্তরে “১১ নির্বাহী প্রকৌশলীর ‘সৌভাগ্য’” শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অন্য জোনের নির্বাহী প্রকৌশলীদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে দপ্তরপ্রধানের কাজ চালানো হচ্ছে। কিন্তু তারা অতিরিক্ত দায়িত্বের জোনে তেমনভাবে সময় দিতে পারছেন না। এতে এসব জোনের স্কুল-কলেজের নির্মাণকাজে ধীরগতির পাশাপাশি মান নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। জানা যায়, নির্মাণকাজে ঠিকাদারদের কমিশন দেওয়া একটা অবধারিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিটি কাজে তিন থেকে ছয় শতাংশ পর্যন্ত কমিশন আদায় করে সংশ্লিষ্ট জোন। এর বড় অংশই পান ওই জোনের দপ্তরপ্রধান, অর্থাৎ নির্বাহী প্রকৌশলী। কাজে কোনো অনিয়ম থাকলে কমিশনের পরিমাণ বেড়ে যায়। তবে, হাতেগোনা কিছু প্রকৌশলী আছেন, যারা সেভাবে কমিশন নেন না। এ পরিস্থিতিতে ইইডিতে সৌভাগ্যবান ১১ নির্বাহী প্রকৌশলীর প্রত্যেকে একেকটি অতিরিক্ত জোনের দায়িত্বে আছেন। ফলে তাদের দ্বিগুণ হারে কমিশন আদায়েরও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সূত্র জানায়, সারা দেশের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা নির্মাণের জন্য ইইডির ৬৫টি জোন রয়েছে। এসব জোনে নিয়মিত দায়িত্বে আছেন মাত্র ২৮ জন নির্বাহী প্রকৌশলী। চলতি দায়িত্বে আছেন ২৬ জন। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সহকারী প্রকৌশলী থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী হতে হলে নিয়োগবিধি অনুযায়ী ৭ বছরের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। এর কিছুটা ব্যত্যয় ঘটিয়ে কাউকে কাউকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, অন্তত সাড়ে তিন বছর অভিজ্ঞতা থাকলে চলতি দায়িত্ব দেওয়া যাবে। তবে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কেউ এখনো সাড়ে ৩ বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করেননি।’ এখন অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে ১১টি জোন চালানোয় যারা জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রকৌশলী আছেন, তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। যদি ২৬ জনকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া যায়, তাহলে বাকি ১১ জনকে দেওয়া যাবে না কেন? সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কারও কারও অভিজ্ঞতা সামান্য কম থাকলেও সেটা সমন্বয় করে চলতি দায়িত্ব দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। অন্যদিকে, জানা যায়, ইইডির প্রশাসন বিভাগের কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও নিয়োগবিধি যথাযথ অনুসরণ না হওয়ায় পুরো নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। পরস্পরবিরোধী অভিযোগ এবং নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনায় যথাযথ বিধি অনুসরণ না করায় আটকে গেছে ১ হাজার ৪৫৬ পদে চলমান নিয়োগ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে একটি চক্র আছে। বছরের পর বছর তারা প্রধান কার্যালয়ে প্রায় ঘাঁটি গেড়ে বসে আছে। যে কারণে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া সহজ হয়েছে। ইইডিতে চলমান বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্ত্রণালয় অবগত। গত ৪ নভেম্বর এ সংস্থার এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি প্রকৌশলীদের সততা, দক্ষতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব মুহাম্মদ দেলোয়ার বখত বলেছেন ‘যেকোনো কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা না গেলে দুর্নীতি রোধ সম্ভব হবে না। তাই সরকারি প্রতিষ্ঠান কিংবা কর্মকর্তা সবার প্রতিটি কাজেই স্বচ্ছতা রাখতে হবে।’ রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে জনপরিসরে রাষ্ট্রীয় যেসব বিষয় নিয়ে সবচেয়ে বেশি কথা হয় তার অন্যতম হলো দুর্নীতি। বলা বাহুল্য দুর্নীতির অভিযোগের কম সংখ্যক ঘটনারই যথাযথ তদন্ত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দোষী হিসেবে প্রমাণ হওয়ার পরও দুর্নীতিতে যুক্তদের বিচার হয়নি। এর অনিবার্য ফল হিসেবে সংশ্লিষ্ট সবাই যাতে সুবিধাভোগী হতে পারেন সেটা নিশ্চিত করা হয়। সর্বশেষ দেখা গেল, সরকারের একটি অধিদপ্তর মন্ত্রণালয়ের বিধিবিধান ও নিয়োগবিধি লঙ্ঘন করে নিজেদের মতো ছক কেটে দুর্নীতির এক অভিনব প্রাতিষ্ঠানিক রূপ তৈরি করে নিয়েছে। একাধিক জোনের দায়িত্ব পাওয়া নির্বাহী প্রকৌশলীদের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং নিয়ন্ত্রণহীন ক্ষমতা ভোগ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। দুর্নীতির লাগাম টানতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক অনিয়মকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
অভিনেতা ও চলচ্চিত্র পরিচালক প্রমথেশ চন্দ্র বড়ুয়ার জন্ম ভারতের আসাম রাজ্যের গৌরীপুরে ১৯০৩ সালের ২৪ অক্টোবর। বাবা প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া ও মা সরোজবালা বড়ুয়া। ১৯২৪ সালে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ইউরোপ ভ্রমণ করার সময় চলচ্চিত্র জগতের প্রতি তার আগ্রহ জন্মে। ১৯২৬ সালে মাতৃবিয়োগের পর তিনি আসামে ফিরে আসেন এবং বাবার সঙ্গে জমিদারির কাজে মনোনিবেশ করেন। ১৯২৮ সালে মনোনীত সদস্য হিসেবে আসাম আইনসভায় যোগ দেন। কিছুদিন পর তিনি চলচ্চিত্র জগতে জড়িয়ে পড়েন। প্রথমে অভিনেতা হিসেবে তিনি নাম করেন। পরে চলচ্চিত্র পরিচালক ও চিত্রনাট্য লেখক হিসেবেও কাজ করেন। তিনি দ্বিতীয়বার ইউরোপ ভ্রমণে যান এবং লন্ডন থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য প্রশিক্ষণ নেন। প্যারিসে লাইট বয় হিসেবে কাজ করে চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজ আয়ত্ত করেন। প্যারিস থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের সামগ্রী ক্রয় করে তিনি ভারতে বড়ুয়া পিকচার্স নামে স্টুডিও স্থাপন করেন। ১৯৩১ সালে এই স্টুডিওর প্রথম চলচ্চিত্র ‘অপরাধী’ মুক্তি পায়। এতে তিনি সর্বপ্রথম কৃত্রিম আলোর ব্যবহার করেন এবং এটিই ভারতীয় চলচ্চিত্রশিল্পে প্রথম কৃত্রিম আলোর ব্যবহার। তিনিই সর্বপ্রথম ‘দেবদাস’ চলচ্চিত্রে ফ্লাশব্যাক মন্তাজ, টেলিপ্যাথি শট ও সাবজেকটিভ ক্যামেরা ব্যবহার করেন। তিনি ১৪টি বাংলা ও সাতটি হিন্দি ছবি পরিচালনা করেন। ১৯৫১ সালের ২৯ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
রাজধানীর সরকারি কবি নজরুল সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এম ওয়াসিম রানার (৩০) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছেন তার বন্ধুরা। শুক্রবার (০২ জুন) রাত সাড়ে ১২টার দিকে চানখারপুলের একটি বাসায় তার বন্ধুরা তাকে দরজা ভেঙে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে।
অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
রানার বন্ধু ইমরান হোসেন বাবু জানান, 'রানা কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলায়। কয়েক দিন যাবৎ রানার খু্ব মন খারাপ ছিল। একাকী থাকতে চাইত। চুপচাপ থাকত। তবে কী চিন্তা করত সে ব্যাপারে কিছু বলত না। তাই আমি তাকে বলেছিলাম- বন্ধু, তুমি কিছুদিনের জন্য কক্সবাজার ঘুরে আস।'
ঘটনার পরপরই রানার স্ত্রী পরিচয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে রাত দেড়টার সময় সানজিদা নামে এক মেয়েকে আহাজারি করতে দেখা যায়। সানজিদা আক্তার (জান্নাতি) কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
সানজিদা আক্তারের প্রতিবেশী মাইদুল ইসলাম জানান, 'সানজিদা আপুকে আমরা জান্নাতি আপু বলে ডাকি। রানা ভাইয়ের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে অনেকদিন আগে। রাজনৈতিক কারণে বিষয়টি জানাজানি হয়নি। জান্নাতি আপু ডেমরা রূপগঞ্জের তারাবো এলাকায় একটি বাসায় থাকতেন।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক এক সহসভাপতি বলেন, 'আমরা জানতাম, সানজিদার সঙ্গে প্রেম ছিল। বিয়ে হয়েছিল কি-না তা সঠিক জানি না।' মৃত্যুর কারণ যা-ই হোক, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আসল রহস্য উন্মোচন করে বিচারের দাবি জানান তিনি।
রানার মৃত্যুর খবরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন এবং তারা শোক জানান। আজ (০৩ জুন) শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় কবি নজরুল সরকারি কলেজ মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
টেস্ট ক্রিকেটে সিলেটের পথচলা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। অভিজাত সংস্করণে যা ছিল দেশের অষ্টম ভেন্যু। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ম্যাচ দিয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে পা রাখে দেশের সবচেয়ে সুন্দর এই স্টেডিয়ামটি। তবে মাঠের অভিষেক ম্যাচেই হেরে যায় বাংলাদেশ। তারপর আর কোনো পাঁচ দিনের খেলা গড়ায়নি এই মাঠে। এ নিয়ে স্থানীয়দের আক্ষেপের শেষ নেই।
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর ফুরাচ্ছে। পাঁচ বছর পর আবারও টেস্ট ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
ক্রিকবাজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, ‘আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে আমরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজের প্রথম টেস্ট আয়োজন করতে পারব বলে আশা করছি। এটি আমাদের জন্য খুব একটি উপলক্ষ হবে। কারণ পাঁচ বছর পর সিলেটের মাঠে টেস্ট ক্রিকেট ফিরবে।’
সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল সিলেট সফর করেছে। তারা সেখানকার মাঠসহ সব সুযোগ সুবিধা পরিদর্শন করেছেন। পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়ে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। সবকিছু দেখে তারা এখানে আরও বেশি ম্যাচ আয়োজনের জন্য উন্মুখ বলে জানিয়েছেন বিসিবির নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান নাদেল।
তিনি যোগ করেছেন, ‘নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল আমাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বেশ মুগ্ধ। তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়েছে আমরা তাদের সব প্রত্যাশা ও প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারব।’
এফটিপি সূচি অনুযায়ী চলতি বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে ও দুই টেস্ট ম্যাচের সিরিজে খেলার কথা নিউজিল্যান্ডের। তবে সিরিজটি হবে দুই ভাগে। প্রথম ভাগে সেপ্টেম্বরের শেষভাগে বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়ানডে খেলবে কিউইরা। এই সিরিজ খেলেই বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাবে দুই দল।
বিশ্বকাপের পর হবে দুই দলের টেস্ট সিরিজ। নভেম্বরের শেষ দিকে আবারও বাংলাদেশে আসবে কিউইরা। বিসিবি প্রস্তাবিত সূচি অনুযায়ী ২১ নভেম্বর ঢাকায় পা রাখার কথা সফরকারীদের। এরপর একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে দলটি। ২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর হবে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের প্রথম টেস্ট।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণ করে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রকাশিত গেজেটে কয়েকটি আসনে পরিবর্তন এসেছে।
গত বৃহস্পতিবার ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত গেজেট শনিবার (৩ জুন)বিজি প্রেসের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন, ২০২১-এর ধারা ৬-এর উপধারা (৩)-এর অধীনে সংসদের পুনর্নির্ধারিত নির্বাচনী এলাকার প্রাথমিক তালিকা গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত হয় এবং ওই বিজ্ঞপ্তির অনুচ্ছেদ ৩-এর অধীন পুনর্নির্ধারিত নির্বাচনী এলাকার বিষয়ে দাবি/আপত্তি/সুপারিশ/মতামত আহ্বান করা হয়।
আরও বলা হয়, পরে নির্ধারিত সময়সূচি মোতাবেক প্রাপ্ত দাবি/আপত্তি/সুপারিশ/মতামতের ওপর কমিশন কর্তৃক প্রকাশ্য শুনানি গ্রহণ করা হয়। নির্বাচন কমিশন উক্ত আইনের ধারা ৬-এর উপধারা (৪) অনুযায়ী দাবি/আপত্তি/সুপারিশ/মতামত পর্যালোচনা করে প্রাথমিক তালিকায় প্রকাশিত নির্বাচনী এলাকার প্রয়োজনীয় সংশোধন করে সংযুক্ত তপশিল মোতাবেক জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের পুনর্নির্ধারিত সীমানার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করল।
চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চাপ চাপ রক্ত, ছেঁড়া জামাকাপড়, খাবার, ব্যাগপত্র, রক্তমাখা দেহ। এসবের মাঝেই ভাঙা লাইনের উপর পাওয়া গেলো ছোপ ছোপ রক্তমাখা একটি কবিতার খাতা।
খাতায় লেখা বিভিন্ন রকমের ভালোবাসার কবিতা, মাঝে মাঝে আবার নকশাও আঁকা। হাতে নিয়ে পাতা উল্টাতেই চোখে পড়ল,
‘‘অল্প অল্প মেঘ থেকে হালকা হালকা বৃষ্টি হয়, ছোট্ট ছোট্ট গল্প থেকে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়....’’
পাতা উল্টাতেই চোখে পড়ল আরও একটি কবিতা। তার শুরুতে লেখা,
‘ভালোবাসা এই মন তোকে চায় সারাক্ষণ,
আছিস তুই মনের মাঝে
পাশে থাকিস সকাল সাঁঝে।
কী করে তোকে ভুলবে এই মন,
তুই যে আমার জীবন...’
কবিতাটি লেখক কে, কার জন্য এই কবিতা লিখা, তা জানার উপায় নেই। সম্ভবত, কবিতার খাতার মালিক দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটিতেই ছিলেন। দুর্ঘটনার ভয়াবহতা এতটাই বেশি ছিল যে, সেই কবিতার খাতা ছিটকে এসে পড়েছে ভাঙা লাইনে।
কবিতার খাতার মালিক সুস্থ, আহত না মৃত, তাও জানা সম্ভব হয়নি। যিনি লিখেছেন, তিনি পুরুষ না মহিলা তা-ও জানা সম্ভব হয়নি। তবে লেখা পড়ে বোঝা যায়, কবিতাটি প্রিয় কারও উদ্দেশে লেখা। যাঁর উদ্দেশে এই কবিতা লেখা, এই কবিতার খাতা কি তাঁর কাছেও কোনও দিন পৌঁছাবে! তাও জানার উপায় নেই।
ভারতের ওড়িশার বালেশ্বরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনাস্থলে এই কবিতার খাতা হাতে পায় আনন্দবাজারের প্রতিনিধি। এভাবেই এক প্রতিবেদনে বর্ণনা তুলে ধরে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির তথ্যমতে, শনিবার ভোর পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৩৩। আহত ৯০০ জনের বেশি। ভেতরে এখনও আটকে আছে অনেক মানুষ।
প্রথম দুই সেটই গড়িয়েছে টাইব্রেকারে। প্রথমটি নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৫ মিনিটে। দ্বিতীয়টিও টাইব্রেকারে। সেটির নিষ্পত্তি ঘণ্টার ওপরে। দুটোতেই জয় নোভাক জকোভিচের। তারপরেরটিও জিতে যান এই সার্বিয়ান। ১৪তম ফ্রেঞ্চ ওপেনের খেলায় স্পেনের আলেজান্দ্রো ফোকিনার সঙ্গে ৩-০ সেটে জয়লাভ করেন তিনি। যে জয়ে মধুর প্রতিশোধ নিয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছেন তিনি।
৩৬ বছর বয়সী এই নাম্বার ওয়ান টেনিস তারকা প্রথম সেটে কিছুটা ছন্দহীন ছিলেন। তবে চ্যাম্পিয়নদের ঘুরে দাঁড়াতে তো সময় বেশি লাগে না। জকোভিচও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তারপর ফোকিনাকে কোনো সেট জিততে না দিয়েই ম্যাচ শেষ করেন তিনি।
প্রায় ৪ ঘণ্টাব্যাপী চলা এই ম্যাচটিতে এক পেশে জয় হলেও প্রতিটি সেটেই উত্তেজনার পারদ ছড়িয়েছেন দুজন। সমর্থকেরাও বারবার হয়েছেন রোমাঞ্চিত। তবে শেষ পর্যন্ত নোভাক জকোভিচের সমর্থকেরাই হাসি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আগামী সোমবার জকোভিচ শেষ ষোলোর ম্যাচ খেলতে নামবেন। সেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে কার্লোস আলকারাজকে পেতে পারেন তিনি।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।