
আর্জেন্টিনার জার্সি পরা শিশু আয়াতের ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছবির ক্যাপশন মনুষ্যত্বকে একবার হলেও নাড়া দিচ্ছে। আয়াতকে হত্যার পর শরীর ছয় টুকরো করার খবর প্রায় সমস্ত দৈনিক পত্রিকার প্রধান শিরোনাম হয়েছে। আয়াত ১৫ নভেম্বর বিকেলে পড়তে গেলে আর বাসায় ফিরে আসেনি। খবর নিয়ে আয়াতের বাবা-মা জানতে পারে তাদের মেয়ে পড়তে যায়নি। খুঁজে না পেয়ে কাছাকাছি থানায় সাধারণ ডায়েরি করার ১০ দিন পর শিশু আয়াতকে তার পরিবার খুঁজে পায় কিন্তু জীবিত নয়, ছয় খন্ড অবস্থায়। আবীর নামে একজন ১৯ বছরের তরুণ এই হত্যাকান্ড ঘটায়। আবীর শিশু আয়াতকে প্রথমে অপহরণ করে মুক্তিপণের জন্য। কিন্তু আয়াতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে ক্রাইম পেট্রোল দেখার অভিজ্ঞতা থেকে আয়াতকে হত্যার পর ছয় টুকরো করে সাগরে ভাসিয়ে দেয়। উল্লেখ্য, আবীর নামের এই তরুণটির কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড ছিল না।
শিশু অপহরণ, ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন, হত্যা এবং হত্যার পর শরীর টুকরো টুকরো করার খবর কি আয়াতই প্রথম? যদি প্রথম না হয়ে থাকে তবে এমন জঘন্যতম অপরাধ দিনে দিনে চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে চলছে কেন? এর জন্য কি সমাজ দায়ী? যদি সমাজ দায়ী হয়ে থাকে তবে কেমন করে? আজ আমরা পথেঘাটে কী দেখছি? আমরা দেখছি ৫/৭ জন্য কিশোর বা তরুণকে একসঙ্গে দেখলেই মানুষ আশঙ্কা প্রকাশ করে এই ভেবে যে, না জানি তারা কী অপরাধ করে বসে। এই ভাবনা কি হঠাৎ একদিনে তৈরি হয়েছে? না, হয়নি। হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসা কিশোর গ্যাংয়ের জঘন্যতম অপরাধগুলো প্রতিনিয়ত ঘটার ফলে। শিশুদের নিয়ে কাজ করেন এমন ব্যক্তিরা বলছেন, শিশুহত্যার সংখ্যা ও ধরন উদ্বেগজনক। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, বিচারহীনতা ও পারিবারিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে এসব বাড়ছে।
সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলায় এক দম্পতির মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরেই ঝগড়ার জের ধরে বাবার বাড়ি চলে যান স্ত্রী। স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে শ্বশুরবাড়িতে আসেন স্বামী। সেখানেও তাদের ঝগড়া বাধে। স্বামী ক্ষিপ্ত হয়ে একপর্যায়ে সাত মাস বয়সী ছেলেকে নলকূপের সঙ্গে আঘাত করেন। এতে শিশুটির মৃত্যু হয়। ঘটনাটি ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বরের। ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণের আশায় প্রতিবেশীদের হাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে পাঁচ বছরের রিফাত হোসেনকে প্রথমে অপহরণ, পরে খুন করা হয়। ঘটনাটি ২০১৮ সালের জানুয়ারির। ২০২০ সালের ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর মিরপুরে শামনুন নামের চতুর্থ শ্রেণির এক স্কুলছাত্রকে অপহরণের পর হত্যা করেছে অপহরণকারীরা। ২০২১ সালে ১২ জানুয়ারি ময়মনসিংহের তারাকান্দায় দিনেদুপুরে বাড়ির উঠান থেকে সানজিদা আক্তার নামের এক সাত বছরের শিশুকে অপহরণ করা হয়। এর তিনদিন পর পার্শ্ববর্তী জঙ্গল থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এরকম একটার পর একটা ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেওয়া যাবে।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য মতে, ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে পাশবিক নির্যাতন ও নির্মম হত্যার শিকার হয়েছে ১৩ হাজার ১২ শিশু। এর মধ্যে হত্যার শিকার হয়েছে ১ হাজার ৫২৬ শিশু। নিপীড়নের শিকার হয়েছে ১ হাজার ৪৭৫ শিশু। ২০১৭ সালে শিশু হত্যা ৩৩৯। ২০১৮ সালে সে সংখ্যা ছিল ৪১৮। ২০১৯ সালে ৪৪৮ শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। ২০২০ সালে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছিল ৭৭৬ জন শিশু। ২০২১ সালে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার ৯০১ শিশু। অপহরণ, শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যাকাণ্ডসহ জঘন্যতম অপরাধের পরিমাণ দিনে দিনে কীভাবে বেড়ে চলেছে তা এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে।
এ ধরনের জঘন্যতম অপরাধের সঙ্গে যুক্ত অপরাধীদের কি কখনো স্মরণ করিয়ে দেওয়া যাবে না যে, তারা যা করে চলেছে তা আইনের চোখে জঘন্যতম অপরাধ এবং বিবেকের কাছে মনুষ্যত্বহীন, মূল্যবোধহীনতার পরিচয়! রাষ্ট্রযন্ত্র কি এর দায় এড়াতে পারে? বিচারহীনতার সংস্কৃতিও কি এসব বেড়ে চলার কারণ নয়? রাষ্ট্রের সর্বত্র ভূমিকা পালন করতে হবে। আর তার জন্য পাঠ্যবইয়ে এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি সঠিক মূল্যবোধ ও মনুষ্যত্ব তৈরিতে গঠনমূলক লেখা প্রকাশ করা প্রথম স্টেপ মনে করছি।
এসব জঘন্যতম অপরাধের সঙ্গে যুক্ত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে না পারলে সমাজ তথা দেশ বর্বর সমাজে পরিণত হবে। ঢাকা জেলার পাঁচটি নারী নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে প্রায় ১৫ বছরের (২০০২-১৬) ধর্ষণসংক্রান্ত পাঁচ হাজারের মতো মামলার পরিস্থিতি অনুসন্ধানে দেখা যায়, ধর্ষণজনিত মৃত্যু ও হত্যার ২১ শতাংশ মামলা ১১ থেকে ১৫ বছর ধরে ঝুলে ছিল। আর ধর্ষণসংক্রান্ত নিষ্পত্তি হওয়া মামলাগুলোর মাত্র ৩ শতাংশের সাজা হয়েছে। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি ভাঙতে হবে। সমাজের বিবেকবান মানুষেরও এক্ষেত্রে চুপ করে থাকার সুযোগ নেই। এরকম জঘন্যতম অপরাধ আজ আয়াতের সঙ্গে হয়েছে, আগামীকাল যে আপনার এবং আপনার পরিবারের সঙ্গে ঘটবে না গ্যারান্টি কী? শিশু অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা এবং হত্যার পর শরীর টুকরো করার মতো জঘন্যতম অপরাধ বৃদ্ধির কারণগুলো অনুসন্ধান করে মূল সমস্যার সমাধান করতে হবে।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও লেখক
১৯৭১ সালে পদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা কে কোথায় ছিলেন তা শুধু কৌতূহলের বিষয়ই নয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে আমলাদের ভূমিকা কী ছিল তা বুঝতেও এই তথ্য গুরুত্বপূর্ণ। তখন এখনকার মতো পলিটিসাইজড ব্যুরোক্রেসি-রাজনীতিকীকরণকৃত আমলাতন্ত্র না থাকলেও যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ পদায়নের আগে প্রধান বিবেচ্য ছিল(ক) প্রস্তাবিত কর্মকর্তা উপযুক্ত কি না? (খ) প্রস্তাবিত কর্মকর্তা নির্ভরযোগ্য কি না?
উপসচিব মর্যাদার পদ হলেও ডেপুটি কমিশনার ও ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট পদটি এই মর্যাদার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর সে পদটি যদি হয় ঢাকার জেলা প্রশাসক তাহলে গুরুত্ব আরও অনেক বেশি। সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে ঢাকার ডিসিকে পূর্ব পাকিস্তানের চিফ সেক্রেটারি, পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর এবং আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কার্যগত সম্পর্কের কারণে চিনবেন এটাই স্বাভাবিক।
১৯৭১-এ ঢাকার ডিসি ছিলেন দুজনআগস্ট পর্যন্ত ১৯৬০ ব্যাচের সিএসপি এ টি এম শামসুল হক এবং আগস্টের পর একই ব্যাচের আহমেদ ফরিদউদ্দিন।
এ টি এম শামসুল হক স্মৃতিকথা লিখেছেন- ‘মোজাইক অব মেমোয়ার্স : ভ্যারিড এক্সপেরিয়েন্সেস অব অ্য মেম্বার অব দ্য সিভিল সার্ভিস।’ তিনি বাকেরগঞ্জ জেলার প্রশাসনের প্রধান ছিলেন। বদলি সূত্রে ২৬ জানুয়ারি ১৯৭০ তিনি ঢাকা জেলার ডেপুটি কমিশনার ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পদে যোগ দিলেন। এই রচনার উল্লেখযোগ্য অংশ তার স্মৃতিগ্রন্থ থেকে অনূদিত/অনুসৃত।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার পর ১৯৭০-এর শুরুতেই ঢাকা রাজনৈতিকভাবে উষ্ণ হতে শুরু করেছে। তার পূর্বসূরি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে অবিবেচকের মতো কাজ করেছেনএই অভিযোগে তড়িঘড়ি করে তাকে প্রত্যাহার করা হয় বলে এ টি এম শামসুল হক উল্লেখ করেছেন। যোগ দিয়েই তিনি পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস এডমিরাল এস এম আহসানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। অত্যন্ত ভদ্রজন গভর্নর আহসানকে একাত্তরের মার্চের মাঝামাঝি সময়ে পদ থেকে অপসারণ করা হয়। তাকে বিদায় জানাতে ঢাকা এয়ারপোর্টে বহু বাংলাদেশির সমাগম হয়েছিল, তাদের মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও ছিলেন। গভর্নর আহসানের সঙ্গে দুটি সাক্ষাতের একান্ত সুখস্মৃতি তিনি উদ্ধৃত করেছেন, একটি উপস্থাপন করছি :
অপর বৈঠকটি সত্তরের নির্বাচনের ঠিক আগে, গভর্নর আহসান কেমন মানুষবৈঠক আমাকে জানতে সাহায্য করেছে। এক সকালে শেখ মুজিবুর রহমানের টেলিফোন পাই। আমি বুঝতে পারি তিনি উত্তেজিত অবস্থায় আছেন এবং মেজাজও চড়ে আছে। তিনি বললেন, খাজা খয়েরউদ্দিন আহসান মঞ্জিলের দেয়ালে আওয়ামী লীগ কর্মীদের ব্যানার ও পোস্টার লাগাতে দিচ্ছেন না। এটা তিনি সহ্য করবেন না (এই নির্বাচনী এলাকায় তিনি খাজা খয়েরউদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বী)। আমি তাকে বললাম, যেহেতু আপনি বিষয়টি আমার নজরে এনেছেন, নিশ্চিত থাকতে পারেন এর একটি সুরাহা হবেই। বিকেল বেলা তিনি যেন তার কর্মীদের পাঠিয়ে দেন, আহসান মঞ্জিলের বাইরের দেয়ালে তারা যত খুশি পোস্টার লাগাবে। আমি ভেবেছিলাম ব্যাপারটা সেখানেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি হটলাইনে (লাল টেলিফোন) গভর্নর আহসানের ফোন পেলাম, জানতে চাইলেন আমি গবর্নমেন্ট হাউজে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারব কি না। যেহেতু তখন জরুরি কোনো কর্মসূচি ছিল নাবললাম যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আসছি। আমাকে যখন তার চেম্বারে নেওয়া হলো তিনি আমাকে বললেন, আওয়ামী লীগের হুমকিতে আতঙ্কিত খাজা খয়েরউদ্দিন তার কাছে চলে এসেছেন এবং ভেতরের লাগোয়া কক্ষে অপেক্ষা করছেন। গভর্নর জানতে চাইলেন এ বিষয়ে আমি কিছু জানি কি না এবং আমি কোনো প্রতিকার করতে পারি কি না। তিনি বরাবরের মতোই শান্ত, ধীর ও সুসমন্বিত। তার কথার মধ্যে কোনো ধরনের নির্দেশনা বা কর্তৃত্ব ফলানোর বহিঃপ্রকাশ নেই। আমি তাকে জানালাম যে, এ বিষয়টি সম্পর্কে আমি সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল এবং এ বিষয়ে শেখ মুজিবের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি তাকে আশ^স্ত করলাম যে, কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না এবং আমি নিজেও খাজা খয়েরউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করব ও কথা বলব। মুজিব কী চেয়েছেন এবং তা সামলে নিতে আমাকে কীভাবে এগোতে হবে সে কথা গভর্নর ও খাজা খয়েরউদ্দিনকে জানালাম। গণতান্ত্রিক অধিকার হচ্ছে প্রত্যেক রাজনৈতিক দল তাদের পার্টির কথা পোস্টার কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো ব্যাঘাত না ঘটিয়ে অবাধে প্রচার করতে পারবেন এবং তারা অন্যদের অবাধে প্রচার করার সুযোগ দেবেন। আমি খাজা খয়েরউদ্দিনকে আশ^স্ত করলাম তিনি যদি কোথাও তার পোস্টার সাঁটাতে চান এবং তাতে যদি কোনো বাধা আসে আমরা সে বাধা অপসারণ করে দেব। এভাবেই সংকটটি মিটে গেল। সেদিন বিকেলে আহসান মঞ্জিল ও সংলগ্ন এলাকায় শেখ মুজিবের অনুসারীরা বহুসংখ্যক পোস্টার ও ব্যানার লাগালেন, খাজা খয়েরউদ্দিননের সমর্থকরা কোনো ধরনের বাধার সৃষ্টি করেননি। পুরান ঢাকার একই নির্বাচনী এলাকা থেকে শেখ মুজিব ও খাজা খয়েরউদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। নির্বাচনে শেষোক্ত ব্যক্তির অসম্মানজনক পরাজয় ঘটেছে।
ঢাকা ১৯৭০ সালেই উত্তেজনায় টগবগে হয়ে উঠেছিল এবং তা অব্যাহত থাকে ২৫ মার্চ ১৯৭১ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যা শুরু করা পর্যন্ত। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত অশান্ত ও বিস্ফোরণোন্মুখ। কোথাও না কোথাও একটা মারাত্মক কিছু ঘটছে না এমন কোনো দিন নেই। একটা ঘটনার কথা বলছি। নরসিংদীর চাঁদপুর জুটমিল, মেঘনা জুটমিল ও অপর কোনো জুটমিল ঘেরাও হয়েছে। শ্রমিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিরোধে সেসব পাটকলের ম্যানেজার ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শ্রমিকদের হাতে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঘেরাও অবস্থায় রয়েছেন। আসন্ন বিপদ থেকে রক্ষা পেতে তাদের পক্ষ থেকে ‘আমাদের বাঁচাও’ ধ্বনি উঠছে। সরকার খুব উদ্বিগ্ন। সরকার চাচ্ছে ঢাকা জেলা প্রশাসন অবিলম্বে উদ্যোগ নিয়ে একটা বিহিত করুক। পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আমাদের অধীনে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেল : (পরে বিডিআর আরও পরে বিজিবি) ন্যস্ত করা হলো। আমার কৌশল ছিল ভিন্ন। ই এ চৌধুরী ছিলেন ঢাকার এসপি (পরে পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল) ঢাকা দক্ষিণের এসডিও নুরুজ্জামান এবং আমিআমরা তিনজন একটি সমঝোতাপূর্ণ চমৎকার টিম ছিলাম এবং আমাদের পরস্পরের ওপর আস্থা ছিল। আমাদের ওপর সরকারের আস্থা ছিল এবং আওয়ামী লীগ এবং এই দলের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানেরও আস্থা ছিল। নুরুজ্জামান কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে শেখ মুজিবুর রহমানের সহপাঠী ছিলেন, পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি সময়ে মুজিব যখন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের শিল্পমন্ত্রী তিনি তার প্রাইভেট সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেছেন। কুমিল্লার বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা জহুরুল কাইয়ুম এবং এসপি ই এ চৌধুরী ছিলেন আত্মীয়তার সূত্রে ‘ব্রাদার-ইন-ল’।
আমি এসপিকে বললাম, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ শিল্প এলাকার বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা সাদু যেখানেই থাকুক খুঁজে বের করুন। আমি বললাম, আমার পাশে সাদুকে না নিয়ে আমি নরসিংদী যাচ্ছি না। এসপি তার গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের কাজে লাগিয়ে দিলেন। পূর্ব পাকিস্তান সচিবালয়ের একটি কক্ষে সাদুকে শনাক্ত করা হলো। এসপিকে বললাম, তাকে নিয়ে এবং একই সঙ্গে আমার সঙ্গে নরসিংদী যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে আমার আবাসিক অফিসে চলে আসুন। এটা ছিল বাস্তবিকই একটি নরসিংদী অভিযান। বেশ কটি গাড়ি ও ইপিআর বাহিনী নিয়ে আমাদের ক্যারাভান। এসপি নিজে ড্রাইভিং সিটে। আমাদের দুজনের মাঝখানে সাদু। আমাদের গাড়ি সবার আগে, অন্য গাড়িগুলো অনুসরণ করছে। অবাঙালি ইপিআর কর্নেল আনোয়ারের হাত আক্ষরিক অর্থেই গুলি চালানোর জন্য নিশপিশ করছিল। তিনি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে জনতার মোকাবিলা করার অনুমতি চাচ্ছিলেন। আমি বললাম, দরকার নেই, আপনি বরং পুলিশের পেছনে চলে যান যাতে আপনাকে সবচেয়ে কম দেখা যায়। আমি তাকে চুপচাপ থেকে পরবর্তী নির্দেশনা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে বললাম। আমরা যখন ঘেরাও করা জুটমিলের কাছে পৌঁছি মিলের শ্রমিকদের ব্যবস্থাপনাবিরোধী এবং সরকারবিরোধী স্লোগান শুনতে থাকি। কিন্তু তারা যখন আমার আর এসপির মাঝখানে সাদুকে দেখল পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত হয়ে এলো। আমি সাদুকে দিয়ে শ্রমিকদের উদ্দেশে বক্তৃতা দেওয়ালাম এবং আমাদের ভেতরে যাওয়ার পথ করে দিতে বললাম। কৌশল কাজে লাগল।
(পরের অংশ সাফল্য, কোনো বলপ্রয়োগ না করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে কর্মকর্তাদের মুক্ত করা হলো, কর্নেল চুপচাপই রইলেন। বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতি সামাল দিতে পারার জন্য কর্তৃপক্ষ বাহবা দিল। সেই অগ্নিঝরা দিনগুলোতে সাইদুল হক সাদু সত্যিই শ্রমিকদের অবিসংবাদী নেতা ছিলেন। মূলত তার আহ্বানেই পাটকল শ্রমিকরা ঘেরাও প্রত্যাহার করে নেয়।) এ টি এম শামছুল হক গভীর মর্মবেদনার একটি কাহিনী উপস্থাপন করেছেনআর তা হচ্ছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট ফজলুর রহমানের মর্মান্তিক মৃত্যু। লেখকের বর্ণনা :
সেই দুর্ভাগ্যজনক শুক্রবারের কথা আমার মনে পড়ছে। ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট ফজলুর রহমান সকাল ১০টার দিকে পুলিশ ওয়্যারলেসে আমাকে জানালেন যে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ হাইওয়ের পাশে পোস্তগোলার ঢাকা মেটাল ইন্ডাস্ট্রিতে ভয়ংকর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তিনি স্থানীয় পুলিশকে সতর্ক ও প্রস্তুত করলেও কাজের ব্যাপ্তির তুলনায় তাদের সংখ্যা অনেক কম। সুতরাং তাদের সমর্থন ও সহায়তা করতে অতিরিক্ত বাহিনী নিয়ে তিনি নিজেই রওনা হচ্ছেন। আমি কখনো ভাবতে পারিনি এমন একজন দায়িত্বসচেতন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে এটাই হবে শেষ কথা। আমি এসডিও নুরুজ্জামানকে তার সঙ্গে যেতে বললাম। তখন থেকে এক ঘণ্টা বা কাছাকাছি সময় পর পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট ই এ চৌধুরী উত্তেজিত অবস্থায় ফোনে জানালেন পোস্তগোলার পরিস্থিতি খুবই খারাপ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফজলুর রহমানের ভাগ্যে কী ঘটেছে তিনি নিশ্চিত নন। তিনি আমাকে বলা মাত্রই পুলিশ ফোর্সসহ তৈরি হয়ে আমাকেও সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে রওনা হওয়ার কথা বললাম।
আমরা একসঙ্গেই পোস্তগোলা রওনা হলাম। মেটাল ইন্ডাস্ট্রির কাছে পৌঁছে আক্ষরিক অর্থেই আমাদের জনতা ঠেলে এক ইঞ্চি, দুই ইঞ্চি করে এগোতে হয়েছে। জনতার আতঙ্কিত দৃষ্টি ছাড়িয়ে হঠাৎ এসডিও নুরুজ্জামানের ওপর চোখ পড়ল, ছেঁড়া কাপড়, অবিন্যস্ত চুল, শূন্য দৃষ্টিআমাদের দিকে এগিয়ে আসছেন। তিনি কাঁপছিলেন, তার কণ্ঠ থেকে স্বর সরছিল না, নিঃশ্বাসও বন্ধ হয়ে আসছিল। আমরা যখন তাকে জিপে তুললাম নুরুজ্জামান কাঁদতে শুরু করলেন। গাল বেয়ে অঝোরে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু, বললেন সহিংস মিল শ্রমিকরা ফজলুর রহমানকে মেরে ফেলেছে, আশপাশে কোনো ডোবায় তার লাশ পাওয়া যেতে পারে। আক্রমণকারীদের দু-একজন তাকে চিনতেন বলে তারাই তাকে অন্যদের হাত থেকে রক্ষা করে জীবন বাঁচিয়েছেন। কিছু সময় পর আমরা ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) বাঁধের পাশে একটি জলাশয়ে ফজলুর রহমানের মৃতদেহ আবিষ্কার করলাম। এ এক মর্মান্তিক দৃশ্য। এমন একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হওয়ার ঘটনা অস্বাভাবিক।
চারদিকে গুজব ছড়িয়ে পড়ল পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনকে বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে তারা সার্বিকভাবে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। এসব হচ্ছে তাদের সৃষ্টি করা অজুহাত। জেলা ও পুলিশ প্রশাসন যখন ফজলুর রহমানের লাশ উঠিয়ে আনে সেখানে শেখ মুজিবুর রহমান, তোফায়েল আহমেদ এবং আওয়ামী লীগের আরও কজন নেতা এসে উপস্থিত হন। তারা অত্যন্ত বিচলিত, যা ঘটেছে তা বিস্তারিতভাবে শেখ মুজিবের কাছে বর্ণনা করা হয়। তিনি বললেন, আসছে সাধারণ নির্বাচনে দৃশ্যমান জনগণের বিজয় নস্যাৎ করতে এ এক ষড়যন্ত্র।
পরিস্থিতি এসেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। এ টি এম শামসুল হক লিখেছেন :
এমন উত্তেজক পরিস্থিতিতে আমি শেখ মুজিবুর রহমানের টেলিফোন পেলাম। তার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত একজনকে বন্দুকের লাইসেন্স দিতে বললেন, কারণ তার নিজের জীবনের ওপর হুমকি আসছে। আমি নির্দ্বিধায় লাইসেন্স ইস্যু করে দিলাম। ঘটনাচক্রে এই লাইসেন্স ইস্যুর কয়েক দিন পরই ধানম-ি ৩২ নম্বর সড়কে (শেখ মুজিবুর রহমানের বাসস্থান, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর) তার বাড়িসংলগ্ন এলাকায় পকেটে রিভলবার থাকা এক ব্যক্তিকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়। এসপি জানালেন, আওয়ামী লীগ সমর্থকরা তাকে শেখ মুজিবের বাড়িতে আটকে রেখে তার উদ্দেশ্য জানার চেষ্টা করছেন। আমরা সেখানে গেলে মুজিবের কাছে নেওয়া হলো। সন্দিহান ঘাতককেও সামনে আনা হলোএসপি তার প্রেক্ষাপট বিবেচনা করার জন্য কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেন, কিন্তু তাতে কোনো ফায়দা হলো না। তাকে বলা হলো যদি দোষ স্বীকার করে শেখ মুজিবের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে তাহলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে, অন্যথায় তাকে কঠোর জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হবে। কিন্তু সে সহজে টলার পাত্র নয়, তাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় সোপর্দ করা হলো। সে সময় শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা পরিকল্পনার অসংখ্য গুজব আসতে থাকে।
একাত্তরের ২৫ মার্চ এ টি এম শামসুল হকই ঢাকার ডিসি ছিলেন। আগস্টে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় সচিবালয়ে বদলি হন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের সচিব হিসেবে অবসর নেন এবং আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হন।
লেখক: সরকারের সাবেক কর্মকর্তা ও কলামিস্ট
গত ২০ নভেম্বর ২০২২-এ পর্দা উঠল ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ বা ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল-২০২২-এর। আয়োজক দেশ কাতারের দেওয়া তথ্য মতে নিশ্চিতভাবেই এটি পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে খরুচে ক্রীড়া ইভেন্ট। কাতার বিশ্বকাপের আয়োজনে ২২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হচ্ছে। যদিও বিশ্বের অন্যতম সেরা ডেট এনালিটিক্স ও ফাইন্যান্সিয়াল প্রেডিকটর ‘ব্লুমবার্গ’র মতে এই খরচের পরিমাণ ৩০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে!
মধ্যপ্রাচ্যের অপেক্ষাকৃত অনুর্বর অঞ্চলে অবস্থিত মাত্র ১১,৫৮১ বর্গকিলোমিটার আয়তন এবং ২৮ লাখ জনসংখ্যার দেশ কাতার। বাহরাইনি-সৌদি-অটোম্যান সাম্রাজ্য থেকে ব্রিটিশ শাসনামল হয়ে ২০০ বছরের পরাধীনতার গ্লানি বহন করা দেশ কাতার। বাংলাদেশের সমসাময়িক অর্থাৎ ১৯৭১ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর গত ৫১ বছরে কাতারের অর্থনৈতিক অগ্রগামিতা, বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা, ব্যবসা-বাণিজ্যে ভূমিকা চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার মতো। তাদের এই অর্থনৈতিক বিপ্লব শুরু হয়েছে গত শতকের ৮০-এর দশকে যখন ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামের সহায়তায় প্রথম তাদের ভূ-গর্ভস্থ তেল উত্তোলন করতে সক্ষম হয়।
২০০৮ সালে প্রণীত কাতারের প্রধানত কাতার ৪টি লক্ষ্য নিয়ে ন্যাশনাল ভিশন- ২০৩০ ছিল অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী একটি প্রকল্প। যার মধ্যে রয়েছেমানব উন্নয়ন, সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং পরিবেশগত উন্নয়ন। প্রশ্ন হলোমধ্যপ্রাচ্যের অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র রাষ্ট্র এবং একমাত্রিক অর্থনীতিবহুল একটি দেশ কীভাবে এমন বৈপ্লবিক ও উচ্চাভিলাষ দেখানোর সাহস করল? এর উত্তর লুকিয়ে রয়েছে তাদের তেলের মজুদের তথ্যে। ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য মতে, কাতার তাদের মজুদ তেলের মাত্র ১% উত্তোলন করেছে এবং বর্তমান হারে তেল উত্তোলন অব্যাহত থাকলে এই মজুদ শেষ হতে সময় লাগবে আরও ৪০২ বছর। বস্তুত আরব অঞ্চলের তথাকথিত যাযাবর ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতি না থাকা দেশ কাতার তার প্রাকৃতিক রিসোর্স ব্যবহার করে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী রাষ্ট্রে পরিণত হতে চাইছে। এটা সর্বজনবিদিত যে বিশ্বের কাছে নিজেদের তুলে ধরতে ক্রীড়ার চেয়ে ভালো ও প্রভাবশালী মাধ্যম কমই আছে। আর তা দেশটির সরকার ও বিনিয়োগকারীরা উপলব্ধি করেছেন। সেজন্যই বিশ্বের নানা প্রান্তের ফুটবল, টেনিস, ক্রিকেট, বেইসবলসহ নানান ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় কাতারি বিনিয়োগ দৃশ্যমান হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে ফরাসি ফুটবল ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন কিংবা ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যানচেস্টার সিটিতে কাতারি বিনিয়োগের কথা বলা যায়।
শুরুতে তারা ছোট ছোট কিছু ক্রীড়া ইভেন্টের আয়োজন করে সাফল্যের বার্তা পৌঁছে দেয় বিশ্বের কাছে। এরপর ইউএসএ, জাপানের মতো দেশকে পাশ কাটিয়ে বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের দায়িত্ব পায় কাতার। যদিও বিশ্বকাপ আয়োজনের অনুমতি পেতে কাতার অনৈতিকভাবে ফিফার নানান পর্যায়ের কর্মকর্তাকে ঘুষ দিয়েছিল বলে পরে প্রমাণ মেলে। কাতার যখন বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের দায়িত্ব পায় তখন তাদের মাত্র একটি আন্তর্জাতিক মানের ফুটবল স্টেডিয়াম ছিল। কাতারের বাহ্যিক অবকাঠামো, জনপরিবহন ব্যবস্থা, হোটেল ইত্যাদি অত্যাধুনিক ছিল না। ফলে কাতারকে শুরুতেই ফিফার কাছে প্রতিশ্রুতি দিতে হয় যে তারা এসব ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।
উষ্ণ জলবায়ুর দেশ কাতারে গ্রীষ্মে তাপমাত্রা থাকে প্রায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যেটি ফুটবল খেলা কিংবা মাঠে বসে তা উপভোগের অনুপযোগী। তাই কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে ফিফাকে বেশ বিপাকে পড়তে হয়। এমনকি ওই সময়ের ফিফা প্রেসিডেন্ট সেফ ব্লাটার পর্যন্ত স্বীকার করেছেন, কাতারকে বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া চরম ভুল একটি সিদ্ধান্ত ছিল! পরে সিদ্ধান্ত হয় প্রথমবারের মতো ফুটবল বিশ্ব একটি শীতকালীন বিশ্বকাপ দেখবে। কাতার বিশ্বকাপে খেলা হবে সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি পরিবেশে, যেখানে মাঠের তাপমাত্রা থাকবে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গ্যালারিতে তা হবে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৩৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মধ্যে গড়ে ওঠা ৮টি স্টেডিয়াম ও সংশ্লিষ্ট অবকাঠামোর শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা গড়ে তুলতে কাতারকে অবিশ্বাস্য রকমের বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়েছে, যা আমরা আগে কখনো অন্য কোথাও দেখিনি। কাতার বিশ্বকাপ আয়োজন উপলক্ষে সম্পূর্ণ অটোমেটেড ও অত্যাধুনিক সাবওয়ে, নতুন বিমানবন্দর, প্রায় ১০০ হোটেল, নতুন রাস্তাসহ ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নতি করেছে।
২২০ বিলিয়ন ডলারের যে ব্যয়ের হিসাব পাওয়া যাচ্ছে তা আসলে কত বড়? এটি বাংলাদেশের গত চার বছরের বাজেটের কাছাকাছি। ২০১০-এ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের খরচ ছিল ৩.৬ বিলিয়ন ডলার। সর্বশেষ রাশিয়া বিশ্বকাপ-২০১৮-এর খরচ ছিল ১১.৬ বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে আয়োজিত ব্রাজিল বিশ্বকাপ- ২০১৪, ব্রাজিল অলিম্পিক-২০১৬ এবং টোকিও অলিম্পিক-২০২০-এ ব্যয় ছিল যথাক্রমে ১৫, ১৩.১ এবং ১৩.৪ বিলিয়ন ডলার। এই বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য মূল্য শুরু অর্থ দিয়েই চুকাতে হয়নি। এই বিশ্বকাপ উপলক্ষে ২০১০-২২ পর্যন্ত ৬৫০০+ কর্মী নিহত হয়েছেন। আর কোনো বৈশ্বিক ইভেন্টের জন্য এত বিপুলসংখ্যক মানবসন্তানকে প্রাণ দিতে হয়নি।
কাতার সরকারের নেওয়া নানা সিদ্ধান্ত বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছে। তীব্র গরমের মধ্যে কর্মীদের অমানবিক পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য করেছে, দেশটি সমপ্রেমীদের অধিকারকে স্বীকার করে না, খেলার মাঠে নারীর পোশাকের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ, স্টেডিয়ামে বিয়ার নিষিদ্ধ করাসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। সমপ্রেম ও নারীর পোশাক পরার স্বাধীনতা খর্ব করার ইস্যুতে শাকিরার মতো আইকনিক গায়িকা বিশ্বকাপ ফুটবলের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন।
অসম্ভব ব্যয়বহুল এই ফুটবল বিশ্বকাপ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে কীভাবে ভূমিকা রাখবে সেটি ভাবা জরুরি। পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় বিশ্বে যেকোনো প্রান্তের অর্থবিনিয়োগের মূল্য সারা বিশ্বের সব মানুষকে পরিশোধ করতে হয়। সমগ্র বিশ্ব যখন ২০২৩ সালে একটি ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট ও দুর্ভিক্ষের আশঙ্কায় ভীত এমন সময়ে কাতারে অনুষ্ঠিত ফুটবল বিশ্বকাপ মানবজাতির জন্য একটি চরম মূল্যের বিনিময়ে পাওয়া আনন্দ-উৎসবে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা এড়িয়ে যাওয়া যায় না।
লেখক: ডিজিটাল এনালিটিক্স রিসার্চার ও কলামিস্ট নোভা ইউনিভার্সিটি, লিসবন, পর্তুগাল
রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হওয়া জনগণের শ্রম ও ঘামের কষ্টার্জিত অর্থ ব্যয় করে সরকার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। পরিতাপের বিষয়, মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, অধিদপ্তর ও প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ, দায়িত্ব বণ্টন প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রায় প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। সরকারি অর্থে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ সংস্থা ‘শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে’ (ইইডি) চলছে নানান অনিয়ম। একশ্রেণির প্রকৌশলী এই প্রতিষ্ঠানটিকে টাকা কামানোর মেশিনে পরিণত করেছেন। অভিযোগ রয়েছে ঠিকাদারদের সঙ্গে তাদের যোগসাজশে নিম্নমানের উপকরণে নির্মিত হচ্ছে ভবন। অবস্থা এমন যে, উদ্বোধনের আগেই কোনো কোনো ভবন হেলে পড়ছে। কোথাও বছর না যেতেই খসে পড়ছে প্রতিষ্ঠানের পলেস্তারা।
গত রবিবার দেশ রূপান্তরে “১১ নির্বাহী প্রকৌশলীর ‘সৌভাগ্য’” শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অন্য জোনের নির্বাহী প্রকৌশলীদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে দপ্তরপ্রধানের কাজ চালানো হচ্ছে। কিন্তু তারা অতিরিক্ত দায়িত্বের জোনে তেমনভাবে সময় দিতে পারছেন না। এতে এসব জোনের স্কুল-কলেজের নির্মাণকাজে ধীরগতির পাশাপাশি মান নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। জানা যায়, নির্মাণকাজে ঠিকাদারদের কমিশন দেওয়া একটা অবধারিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিটি কাজে তিন থেকে ছয় শতাংশ পর্যন্ত কমিশন আদায় করে সংশ্লিষ্ট জোন। এর বড় অংশই পান ওই জোনের দপ্তরপ্রধান, অর্থাৎ নির্বাহী প্রকৌশলী। কাজে কোনো অনিয়ম থাকলে কমিশনের পরিমাণ বেড়ে যায়। তবে, হাতেগোনা কিছু প্রকৌশলী আছেন, যারা সেভাবে কমিশন নেন না। এ পরিস্থিতিতে ইইডিতে সৌভাগ্যবান ১১ নির্বাহী প্রকৌশলীর প্রত্যেকে একেকটি অতিরিক্ত জোনের দায়িত্বে আছেন। ফলে তাদের দ্বিগুণ হারে কমিশন আদায়েরও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সূত্র জানায়, সারা দেশের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা নির্মাণের জন্য ইইডির ৬৫টি জোন রয়েছে। এসব জোনে নিয়মিত দায়িত্বে আছেন মাত্র ২৮ জন নির্বাহী প্রকৌশলী। চলতি দায়িত্বে আছেন ২৬ জন। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সহকারী প্রকৌশলী থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী হতে হলে নিয়োগবিধি অনুযায়ী ৭ বছরের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। এর কিছুটা ব্যত্যয় ঘটিয়ে কাউকে কাউকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, অন্তত সাড়ে তিন বছর অভিজ্ঞতা থাকলে চলতি দায়িত্ব দেওয়া যাবে। তবে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কেউ এখনো সাড়ে ৩ বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করেননি।’ এখন অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে ১১টি জোন চালানোয় যারা জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রকৌশলী আছেন, তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। যদি ২৬ জনকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া যায়, তাহলে বাকি ১১ জনকে দেওয়া যাবে না কেন? সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কারও কারও অভিজ্ঞতা সামান্য কম থাকলেও সেটা সমন্বয় করে চলতি দায়িত্ব দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। অন্যদিকে, জানা যায়, ইইডির প্রশাসন বিভাগের কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও নিয়োগবিধি যথাযথ অনুসরণ না হওয়ায় পুরো নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। পরস্পরবিরোধী অভিযোগ এবং নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনায় যথাযথ বিধি অনুসরণ না করায় আটকে গেছে ১ হাজার ৪৫৬ পদে চলমান নিয়োগ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে একটি চক্র আছে। বছরের পর বছর তারা প্রধান কার্যালয়ে প্রায় ঘাঁটি গেড়ে বসে আছে। যে কারণে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া সহজ হয়েছে। ইইডিতে চলমান বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্ত্রণালয় অবগত। গত ৪ নভেম্বর এ সংস্থার এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি প্রকৌশলীদের সততা, দক্ষতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব মুহাম্মদ দেলোয়ার বখত বলেছেন ‘যেকোনো কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা না গেলে দুর্নীতি রোধ সম্ভব হবে না। তাই সরকারি প্রতিষ্ঠান কিংবা কর্মকর্তা সবার প্রতিটি কাজেই স্বচ্ছতা রাখতে হবে।’ রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে জনপরিসরে রাষ্ট্রীয় যেসব বিষয় নিয়ে সবচেয়ে বেশি কথা হয় তার অন্যতম হলো দুর্নীতি। বলা বাহুল্য দুর্নীতির অভিযোগের কম সংখ্যক ঘটনারই যথাযথ তদন্ত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দোষী হিসেবে প্রমাণ হওয়ার পরও দুর্নীতিতে যুক্তদের বিচার হয়নি। এর অনিবার্য ফল হিসেবে সংশ্লিষ্ট সবাই যাতে সুবিধাভোগী হতে পারেন সেটা নিশ্চিত করা হয়। সর্বশেষ দেখা গেল, সরকারের একটি অধিদপ্তর মন্ত্রণালয়ের বিধিবিধান ও নিয়োগবিধি লঙ্ঘন করে নিজেদের মতো ছক কেটে দুর্নীতির এক অভিনব প্রাতিষ্ঠানিক রূপ তৈরি করে নিয়েছে। একাধিক জোনের দায়িত্ব পাওয়া নির্বাহী প্রকৌশলীদের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং নিয়ন্ত্রণহীন ক্ষমতা ভোগ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। দুর্নীতির লাগাম টানতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক অনিয়মকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
অভিনেতা ও চলচ্চিত্র পরিচালক প্রমথেশ চন্দ্র বড়ুয়ার জন্ম ভারতের আসাম রাজ্যের গৌরীপুরে ১৯০৩ সালের ২৪ অক্টোবর। বাবা প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া ও মা সরোজবালা বড়ুয়া। ১৯২৪ সালে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ইউরোপ ভ্রমণ করার সময় চলচ্চিত্র জগতের প্রতি তার আগ্রহ জন্মে। ১৯২৬ সালে মাতৃবিয়োগের পর তিনি আসামে ফিরে আসেন এবং বাবার সঙ্গে জমিদারির কাজে মনোনিবেশ করেন। ১৯২৮ সালে মনোনীত সদস্য হিসেবে আসাম আইনসভায় যোগ দেন। কিছুদিন পর তিনি চলচ্চিত্র জগতে জড়িয়ে পড়েন। প্রথমে অভিনেতা হিসেবে তিনি নাম করেন। পরে চলচ্চিত্র পরিচালক ও চিত্রনাট্য লেখক হিসেবেও কাজ করেন। তিনি দ্বিতীয়বার ইউরোপ ভ্রমণে যান এবং লন্ডন থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য প্রশিক্ষণ নেন। প্যারিসে লাইট বয় হিসেবে কাজ করে চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজ আয়ত্ত করেন। প্যারিস থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের সামগ্রী ক্রয় করে তিনি ভারতে বড়ুয়া পিকচার্স নামে স্টুডিও স্থাপন করেন। ১৯৩১ সালে এই স্টুডিওর প্রথম চলচ্চিত্র ‘অপরাধী’ মুক্তি পায়। এতে তিনি সর্বপ্রথম কৃত্রিম আলোর ব্যবহার করেন এবং এটিই ভারতীয় চলচ্চিত্রশিল্পে প্রথম কৃত্রিম আলোর ব্যবহার। তিনিই সর্বপ্রথম ‘দেবদাস’ চলচ্চিত্রে ফ্লাশব্যাক মন্তাজ, টেলিপ্যাথি শট ও সাবজেকটিভ ক্যামেরা ব্যবহার করেন। তিনি ১৪টি বাংলা ও সাতটি হিন্দি ছবি পরিচালনা করেন। ১৯৫১ সালের ২৯ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রোজার মাসে খাবারের জন্য শরীফুল আলমের বাজেট ১২ হাজার টাকা। পাঁচ দিনের বাজার করতে গিয়ে তিনি দেখেন, মাছ কিনলে মুরগি কেনা যায় না, মুরগি কিনলে মাছ বাদ দিতে হয়। গরুর মাংস তো বিলাসী খাবার, তাই সে দোকানে নজরই দেননি তিনি। পাঁচ দিনের মধ্যে তিন দিনই তার পরিবারকে মাছ-মাংসের মতো প্রোটিন খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। আর ইফতারিতে উচ্চ মূল্যের বিদেশি ফল বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত তিনি আগেই নিয়েছেন। শুধু শরিফুলই নন, বাজার করতে আসা নিম্ন মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন আয়ের সব ভোক্তারই একই গল্প। তারা বলছেন, এবারের রমজানে কম খেয়েই রোজা রাখতে হবে।
গত এক বছরে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৮০ শতাংশের বেশি। প্রায় একই হারে বেড়েছে পাকিস্তানি ককসহ অন্যান্য মুরগির দাম। সব ধরনের মাছের দাম গড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
একটু সাধারণ হিসাব করা যাক। চারজনের একটি পরিবার যদি মাছ, মাংস বাদ দিয়ে সাহরিতে গড়ে ২০০ টাকা, সন্ধ্যা রাতের খাবারে যদি গড়ে ১৫০ টাকা আর ইফতারিতে ফল যোগ না করে গড়ে যদি ১০০ টাকা খরচ করেন তবে মাসে ব্যয় হবে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ টাকা। আর যদি মাছ-মাংস যোগ হয় তাহলে সাহরিতে ন্যূনতম ৩০০, রাতের খাবারে ৩০০ ও ইফতারিতে ফল যোগ করলে গড়ে ২০০ টাকা খরচ করলে মাসে খরচ হবে প্রায় ২৪ হাজার টাকা। এ হিসাব চারজনের একটি পরিবারের সর্বনিম্ন হিসাব। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গত অক্টোবরের হিসাবে বলা হয়েছে, চারজনের একটি পরিবারে খাবার তালিকায় মাছ-মাংস যোগ করলে মাসে খরচ হবে ২২ হাজার ৪২১ টাকা। এটি শুধু খাবারের খরচ। যদি কোনো পরিবার মাছ-মাংস যোগ না করেন তাতে মাসিক খরচ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৫৯ টাকা।
সিপিডির গবেষণা সেলের কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, চলতি মাসে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। পরিবারপ্রতি এ মাসে খরচ আরও বেড়ে গেছে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যে আমদানি শুল্ক কমানোর পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। কিছু ক্ষেত্রে ট্যাক্স ভ্যাট পুরোপুরি উঠিয়ে দিলে সেখানে সবাই উপকৃত হবে।
সিপিডির অক্টোবরের হিসাবই যদি ধরা হয়, তাহলে এবারের রোজায় খাবারের তালিকা ছোট করা ছাড়া উপায় নেই ভোক্তাদের। ২২ হাজার টাকার সঙ্গে যদি বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ, গ্যাস বিল ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ভাড়াসহ গড়ে ১৫ হাজার টাকা ধরলে চারজনের একটি পরিবারের খরচ দাঁড়ায় ৩৭ হাজার টাকা।
অবশ্য সিপিডির এ তথ্য যখন প্রকাশ করা হয়, তখন মুরগির মাংসের কেজি ছিল ১৫০ টাকা, এখন তা ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে। গরুর মাংসের দাম ছিল ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায়, এখন তা ৭৫০ টাকায়। চিনির দাম ছিল ৯৮ টাকায় এখন তা ১২২ টাকায়। অর্থাৎ সব পণ্যেরই দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।
দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা হয় কয়েকজন ভোক্তার। বেসরকারি স্কুল শিক্ষক শিহাবউদ্দিন থাকেন রাজধানীর বাড্ডায়। থাকেন ৩ কামরা একটি ফ্ল্যাটে। তার মাসিক খরচ ৩১-৩২ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুধু মাত্র বাসা ভাড়ায় খরচ হয় ১৬ হাজার টাকা। একমাত্র সন্তানের পড়া ও পরিবারের ভরণ-পোষণে খরচ হয় আরও ১৩-১৫ হাজার টাকা। বাদ বাকি খরচ আরও ২ হাজার। তবে এই শিক্ষক মাসে আয় করেন ২৮-৩০ হাজার টাকা। মাসিক আয় হিসেবে তার অতিরিক্ত খরচ হয় ২-৩ হাজার টাকা।
এ শিক্ষক খরচের সমন্বয় করতে সঞ্চয়ও ভেঙেছেন ইতিমধ্যে। তাতেও তার বাড়তি খরচের টাকা প্রতি মাসে ঋণের খাতায় যোগ হয়। উপায়ান্তর না দেখে পরিচয় গোপন করে মাঝেমধ্যে রাইড শেয়ার দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত কাজে এসেছিলাম মহাখালীতে। ভাবলাম একই সঙ্গে রোজার বাজার করে বাসাই ফিরি। তবে বাজারে প্রবেশ করে চিন্তায় পড়ে গেলাম। ব্যাগ দেখিয়ে বলেন, ১ কেজি করে মুরগি, মাছ ও ছোলাসহ আরও দুএকটি পণ্য কিনতেই ১ হাজার টাকা শেষ। দামের অবস্থা দেখে বুঝা যাচ্ছে চাহিদা মতো বাকি সদাইগুলো বাসায় নিয়ে যেতে পারব না। আর নয়তো অর্ধেকের ওপর ভরসা রাখতে হবে।
শুধু স্কুল শিক্ষক শিহাবউদ্দিনই নন, গেল কয়েক মাসে দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহ অবস্থার কারণে মধ্য ও নিম্নমধ্য আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে নিত্যপণ্যের বাজার। মাছ-মাংস থেকে শুরু করে সব ধরনের সবজির দামও মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। গরিবের মাছ বলে খ্যাত পাঙ্গাস, তেলাপিয়াও এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়। গত ৩-৪ মাস আগেও পাঙ্গাস ১৪০-১৪৫ টাকা ও তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হয়েছিল ১৩৫-৪০ টাকা করে। এছাড়া অন্যান্য মাছের মধ্যে মান ভেদে রুই মাছ ২৯০-৩৮০ টাকা, সরপুঁটি ২০০-৪০০ টাকা, চাষের মাগুর ৬০০ টাকা, শোল মাছ ৮০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ১ হাজার টাকা করে বিক্রি করছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
দ্রব্যমূল্য যে সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে, তা শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল মজুমদারও বলছেন। গত বুধবার শিল্প মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারের কোনো মিল নেই। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ব্যবসা করছে। ডলারের দাম বাড়ার অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবেই দেখা যায়, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় এ বছর ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ২ দশমিক ৬১ শতাংশ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। যদিও গত মঙ্গলবার একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, চলতি মার্চে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। চৈত্রের খরা ও রোজায় মানুষের অতিরিক্ত মজুদের কারণে এ মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কার কথা বলেছেন তিনি।
বিবিএসের চিত্রেই আবার ফেরা যাক। গত বছর চিনির কেজি ছিল ৮২ টাকা, সেই চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২২ টাকায়। যদিও বাজারের চিত্র ব্যতিক্রম। গরুর মাংস গত বছরের মার্চে কেজি ছিল ৬১০ টাকা, কিন্তু বছর ঘুরতেই এ পণ্যের দাম এখন ৭৫০ টাকা। মানুষ বেশি দামে গরুর মাংস কিনতে না পেরে কিছুদিন আগেও ভরসা করত ব্রয়লার মুরগির ওপর, যার দাম এখন ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে।
রমজানের ইফতারিতে বেশি চাহিদা থাকে ফলের ওপর। কিন্তু সেই ফলের দামও লাগামছাড়া। ডলার সংকটের কারণে ফল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ফলের ওপর শুল্কারোপ বাড়িয়ে দেয় সরকার। ফলে গত কয়েক মাস ধরেই ফলের দাম অনেক বেশি।
সাহরিতে রোজাদারের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর অন্যতম উপাদান দুধ। গত বছরের মার্চে দুধের লিটার কিনতে হয়েছিল ৭০ টাকায়, এ বছর তা ৯০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতির কারণ হিসেবে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের একটা প্রভাব রয়েছে। তবে আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছি বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। তিনি বলেন, রমজানের ভোক্তা পর্যায়ে ভোগান্তি কমাতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছি। মাঠ পর্যায়ে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। যেখানে অনিয়ম পাচ্ছি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কিছুটা দায়ী। কিন্তু পুরোপুরি না। সম্পূর্ণ দায় এ যুদ্ধের ওপর চাপানো ঠিক না। ভোক্তাদের দায় বেড়েছে, তাদের ওপর চাপও বেড়েছে।
ব্রাজিলের সমুদ্রতীরবর্তী শহর রিও ডি জেনেইরোর কাছে একটি অপরাধী চক্রের প্রধানের গ্রেপ্তারে অভিযানের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার রিও ডি জেনেইরোর উত্তর-পূর্বে অবস্থিত সাও গনসালো শহরের শ্রমিকদের আবাসিক এলাকা সালগেইরোতে এ ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানায়। পুলিশের দাবি, নিহতরা সবাই সন্দেহভাজন অপরাধী।
ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য পারার মাদক-নেতা অভিযুক্ত লিওনার্দো কোস্তা আরাউজো সালগেইরোতে লুকিয়ে আছে- এমন খবরের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। সংঘর্ষে নিহতদের মধ্যে আরাউজোও আছেন। পারার বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার নিহতের ঘটনায় তার হাত আছে বলেও অভিযোগ।
পুলিশ জানিয়েছে, আরাউজোকে গ্রেপ্তারে বৃহস্পতিবার চালানো এই অভিযানে হেলিকপ্টার ও সাঁজোয়া যান ব্যবহার করা হয়।
রিও শহরের পুলিশ প্রায়ই এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করে। শহরটির গভর্নর ক্লডিও কাস্টো সোশালে এক পোস্টে লেখেন, আমরা আমাদের এই শহরকে অন্য কোনো এলাকা থেকে আসা দুর্বৃত্তদের অভয়াশ্রম হতে দেব না।
এ ঘটনায় অপরাধী চক্রের স্থানীয় তিনজন সোর্সও গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।
সিন্ডিকেশন করে মুরগির বাচ্চা ও ব্রয়লার মুরগির দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে মাত্র ৫২ দিনে বড় উৎপাদকদের একটি চক্র ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পোলট্রি খাতের উদ্যোক্তাদের অন্য একটি সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন গতকাল বৃহস্পতিবার এ অভিযোগ করে। এদিকে মুরগির দাম নিয়ে ‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত চার প্রতিষ্ঠানকে গতকাল তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার পর ওই চার কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। অন্য এক মতবিনিময় সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, মুরগি ও গরুর মাংসের দাম না কমালে তা তারা বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করবেন। রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সরকারি তদারকি না থাকায় হরিলুট চলছে পোলট্রি সেক্টরে। প্রতিদিন ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ৩ হাজার ৫০০ টন। কিন্তু অস্বাভাবিক দাম ও প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে উৎপাদন কমায় এখন দুই থেকে আড়াই হাজার টন সরবরাহ হচ্ছে। প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ আগে কম থাকলেও এখন প্রতি কেজিতে ১৬০-১৬৫ টাকা এবং করপোরেট কোম্পানিদের উৎপাদন খরচ ১৩০-১৪০ টাকা। কিন্তু পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকা পর্যন্ত।
সংগঠনটি জানিয়েছে, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজিতে যদি অতিরিক্ত ৬০ টাকা মুনাফা ধরা হয় তবে প্রতিদিন অন্তত ২ হাজার টনে ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ৫২ দিনে শুধু ব্রয়লার মুরগি থেকে ৬২৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ সিন্ডিকেট। এ ছাড়া এক দিনের মুরগির বাচ্চা প্রতিদিন উৎপাদন হয় ২০ লাখ। একটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদন খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা। যা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ১০-১৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত সেই বাচ্চা ৬২ থেকে ৬৮ টাকা মেসেজ করলেও প্রকৃতপক্ষে তা বিক্রয় হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। প্রতি বাচ্চায় ৩০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা ধরা হলে আলোচ্য সময়ে মুরগির বাচ্চা বিক্রি থেকে ৩১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ব্রয়লার মুরগি ও বাচ্চা বিক্রি থেকেই ৫২ দিনে ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শীর্ষ কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চা শতভাগ উৎপাদন করে করপোরেট গ্রুপ। তারাই আবার আংশিক ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে এবং চুক্তিভিক্তিক খামার করেন। এতে বাজার এসব প্রতিষ্ঠানের দখলে চলে যাচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগির দাম কমল ৪০ টাকা : ব্রয়লার মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণে শীর্ষ উৎপাদনকারী ফার্মগুলো নতুন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোজার মাসে ভোক্তা পর্যায়ে অস্বস্তি কমাতে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি খামারি পর্যায়ে ১৯০-১৯৫ টাকা দরে বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় চারটি মুরগি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। যা গেল কয়েক সপ্তাহে ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হয়ে আসছে। হাতবদল হয়ে এসব মুরগি ভোক্তাপর্যায়ে এসে বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকায়।
‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত এই চার প্রতিষ্ঠানকে গতকাল তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার পর ওই চার কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত জাতীয় ভোক্তা অধিকারের কনফারেন্স কক্ষে কাজী ফার্মস, প্যারাগন পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, আফতাব বহুমুখী ফার্মস ও সিপি বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, গতকাল আমরা ২৭০-২৮০ টাকায় ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হতে দেখেছি। এ দাম অযৌক্তিক। এটা ২০০ টাকার বেশি হতে পারে না। ফার্ম পর্যায়ে ২২০-২৩০ টাকা দরে ব্রয়লারের কেজি বিক্রি হচ্ছে। হাতবদল হয়ে ভোক্তাপর্যায়ে এ অবস্থা। ব্রয়লার মুরগি এসএমএসের মাধ্যমে নিলাম হচ্ছে। আমি তাদের আহ্বান করেছি, আপনারা এ রমজান মাসে একটু কম লাভ করেন। তারা একমত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, খামার থেকে আসা ব্রয়লার মুরগি হাতবদলে যেন দাম খুব বেশি না বাড়ে, সে বিষয়ে সংস্থাটি নজর রাখবে। ব্রয়লারের দাম কমাতে প্রয়োজনে বর্ডার উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
এ সময় কাজী ফার্ম কর্তৃপক্ষ জানান, তারা রমজানে ২২০ টাকা থেকে কমিয়ে ব্রয়লার বিক্রি করবেন ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায়। এ বিষয়ে একমত পোষণ করছে আফতাব, প্যারাগন ও সিপি কোম্পানি।
রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে : মুরগি ও গরুর মাংসের দাম বাড়ায় শঙ্কা প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে আগামী দুই-তিন মাসের জন্য মুরগি ও গরুর মাংস বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করবে সংগঠনটি। গতকাল এফবিসিসিআই বোর্ডরুমে ‘রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি, মজুদ, সরবরাহ ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় সভায়’ এ কথা জানানো হয়। এ সময় সংগঠনটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানান, রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশীয় উৎপাদক, ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখার জন্য সরকার কিছু পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপ ও কিছু পণ্য আমদানি বন্ধ রেখেছে। এ সুযোগে বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইচ্ছেমতো দাম বাড়ালে হবে না। ভোক্তার ওপর এত চাপ দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় বেশি খেজুর আছে। পর্যাপ্ত রয়েছে ছোলা, পামঅয়েল, সয়াবিনসহ অন্যান্য পণ্য। আমরা চাই না ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের হেনস্তা করুক। পণ্য ক্রয়-বিক্রয় ও মজুদ বিষয়ে সরকারের নিয়মনীতি রয়েছে। এসব বিষয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে বাজার কমিটিগুলো উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পণ্যের সরবরাহ বিঘ্নিত হলে আমাদের জানান, আমরা সহযোগিতা করব।
জসিম উদ্দিন বলেন, এখন গরু ও পোলট্রির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। দেশীয় এ খাত বাঁচাতে এতদিন মাংস আমদানি বন্ধ ছিল। এখন তারা যদি সঠিক মূল্যে গরুর মাংস ও ব্রয়লার মুরগি দিতে না পারে তাহলে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলব, বাজার ঠিক রাখতে আমদানির অনুমতি দেওয়ার জন্য। আমদানি করলে যদি বাজারে দাম কমে যায়, তাহলে আমদানি করতে হবে। মানুষ যদি ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে না পারে, তাহলে ইন্ডাস্ট্রির কথা চিন্তা করে লাভ নেই।
এফবিসিসিআই সভাপতি ব্যবসায়ীদের বলেন, এবার সরকার বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে কঠোরভাবে। কোনো বাজারে বেশি মূল্য রাখা হলেই সেই বাজার কমিটি বাতিল করবে সরকার। একই সঙ্গে দাম বেশি নেওয়া প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সও বাতিল করা হবে। আমরা চাই না, রোজায় কোনো ব্যবসায়ীর লাইসেন্স বাতিল হোক, কাউকে আটক করা হোক।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের সমস্যা থাকতে পারে। সমস্যাটি আমাদের জানাবেন। আমরা কথা বলব। আমাদের টিমও বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে। আশা করব আপনারা কেউ বেশি মুনাফা করবেন না।
পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ফুল সুজিপানা (ওলফিয়া আরিজাহ)।
এর বৈজ্ঞানিক নাম Wolffia Arrhiza
এটি একবীজপত্রী উদ্ভিদ বর্গের Lemnaceae গোত্রের অন্তর্গত অবাধ ভাসমান জলজ সপুষ্পক উদ্ভিদ। পানিতে চরে বেড়ানো পাখিদের প্রিয়খাদ্য।
দ্রুত বংশবৃদ্ধিতে অন্যান্য গাছগাছালিকে সহজেই ছাড়িয়ে যায় এবং খরা, ঠান্ডা, খাদ্যাভাব ইত্যাদি পরিবেশগত দুর্যোগেও টিকে থাকতে পারে।
সপুষ্পক হলেও সুজিপানায় দৈবাৎ ফুল ফোটে, বংশবৃদ্ধি মূলত অঙ্গজ-মুকুলে। এগুলো বাংলাদেশ এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে আছে গত এক শতক ধরে।
এ ক্ষুদ্রতম ফুল উৎপাদনকারী উদ্ভিদটি থ্যালাস (যে উদ্ভিদ পাতা, শাখা-প্রশাখা এবং মূলে বিন্যস্ত নয়) প্রজাতির উদ্ভিদ।
সবুজ বা হলুদাভ সবুজ বর্ণের এই উদ্ভিদটির কোনো মূল নেই।
উদ্ভিদটির দৈর্ঘ্য ১ থেকে ৫ মিমি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর কোনো স্বতন্ত্র কান্ড ও পাতা নেই। গোটা উদ্ভিদটিই আসলে চ্যাপ্টা ছোট একটি পত্রকল্প কাঠামো বা ফ্রন্ড (frond)। এ ফ্রন্ড নিচে ঝুলন্ত এক বা একাধিক কৈশিক মূলসহ একক বা দলবদ্ধ থাকে।
ফুল সাধারণত উদ্ভিদটির ওপরের স্তরে জন্মে থাকে। এর একটি করে পুংকেশর ও গর্ভকেশর থাকে। এর সম্পূর্ণ পুষ্পবিন্যাসের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ১ মিমি হয়ে থাকে। ওলফিয়া শতকরা ৮০ ভাগ প্রোটিনসমৃদ্ধ একটি উদ্ভিদ। আদর্শ পরিবেশে এগুলোর জীবসত্তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দ্বিগুণ হয়।
সালাদ হিসেবে খাদ্যযোগ্য ওলফিয়া প্রোটিন, ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘বি’ সমৃদ্ধ।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।