
“বইটা কি তর নিজের? নিজের হইলে বাবা দাগা!”
আমাদের এক সহপ্রশিক্ষণার্থীর দিকে চোখ পড়তেই লেকচার থামিয়ে বলে উঠলেন ডক্টর রহমান। সে ১৯৯৮ সালের অক্টোবরের শেষ দিকের কথা। আমি তখন সিনিয়র সহকারী জজ। সাবজজ হওয়ার কথা (কথাটা এ অধমের নয়, আইনের) জজিয়তির সাত বছর পূর্ণ হলে। সাড়ে দশ পেরিয়ে তখন আমাদের পৌনে এগারো বছর কেটে যায়, সাবজজে পদোন্নতির খবরই নেই! সাবজজ পদ খালি হওয়ার প্রার্থনা করে চলেছি! (পদ খালি না হলে, একটা-দুটো নয়, গুচ্ছের পদ খালি না হলে পদোন্নতির প্যানেল ধরার স্বভাবই নেই আইন মন্ত্রণালয়ের! প্যানেল ধরেছিল আরও বছর দুয়েক পরে!) এমন সময় ডাক এলো প্রশিক্ষণে।
‘বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মাত্র আগের বছর ১৯৯৭-তে, যদিও তার আইনটা হয়েছে আরও বছর দুই আগে ১৯৯৫-তে। (বিলম্ব পিছু ছাড়ে না বিচারের কোনো কিছুতে!) প্রতিষ্ঠার বছর খানেক পর এই ১৯৯৮-তেই প্রথম শুরু বিচারকদের প্রশিক্ষণ। ২১ দিনের একেকটা কোর্স। সিনিয়র সহকারী জজ আমাদেরটা ছিল নবম কোর্স। ডাক পেয়ে সাতক্ষীরা থেকে (আমার পোস্টিং তখন সেখানে) ছুটে আসি ঢাকায়। দুদিনের মাইগ্রেন ব্যথা মাথায় নিয়েও যেমন সৌজন্যের উত্তরে দাঁত চেপে বলি ‘ভালো আছি’, এই ‘ছুটে আসি’ হলো তেমনি সকালের বাস ধরে ধুলো-গরমে কুঁথে কুঁথে (সে-লাইনে তখনো এসি বাস চালু হয়নি, হলেও লাভ হতো না স্বল্প-বেতনভোগী এ বিচারীর) সারা দিন জার্নির বিস্তর প্যাচাল চেপে!
ইনস্টিটিউটের ডরমিটরিটা তখন ছিল কাদাপ্যাঁক ওঠা, রিকশার জ্যামে ঠাসা শাজাহানপুর আমতলা মসজিদ গলির পুরাতন এক তিনতলা বাড়িতে। (আহা! কত কষ্টই না করতে হয়েছে কর্র্তৃপক্ষের, এমন একটা গলির ভেতর জুতসই এ বাড়িখানা খুঁজে পেতে! প্রথম দিন সন্ধ্যায় ধুলো-ঘামে মাখা শরীর নিয়ে পৌঁছেই দেখি পানি নেই বাথরুমে!) প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আমাদের একটু কষ্ট করে হেঁটে যেতে-আসতে হতো শুধু হরতালের দিনগুলোতে! জি, হ্যাঁ! ১৯৯৬-তে দু-দুবার (১৫ ফেব্রুয়ারি হরতালের দিনে আর ১২ জুনে তত্ত্বাবধায়কের অধীনে) দু-দুটো (ষষ্ঠ ও সপ্তম) সংসদ নির্বাচনের (দুটোই হয়েছিল কিন্তু রাতের আঁধার কেটে গেলে দিনের ফকফকা আলোতে) বছর না ঘুরতেই ঘুরে আসে হরতাল! সরকার হটাতে! একদা (১৯১৯ সালে) পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ খেদাতে মহাত্মা গান্ধী (মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধী) অহিংস আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বলে চালু করেন যে হরতাল (তার গুজরাটি ভাষায় যা ছিল হাড়তাল, ক্রমেই তা সহিংস ও অশান্তিপূর্ণ হয়ে উঠে চরম অশান্তিতে ভোগায় স্বয়ং মহাত্মাকেই!) সেই হয়েছে আমাদের স্বাধীন দেশের রাজনীতির চিরকেলে তাল! (শাসন ক্ষমতা পেলেই ঘাড়ে চাপে ব্রিটিশ-ভূত, ক্ষমতা হারালেই ধরে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনী-ভূতে! আছি যেন ব্রিটিশেরই কালে! হাড়ে বাতাস লাগাবে কি আর পাবলিকে, পাবলিকেরই হাড় দিয়ে ডুগডুগি বাজায় পাবলিকেরই চামে! ‘জয় বাপুজি তুমহারা হাড়তাল!’) হরতালবিহীন দিনগুলোতে অবশ্য প্রশিক্ষণার্থীদের আনা নেওয়ার ‘ঠাসা ব্যবস্থা’ ছিল ইনস্টিটিউটের ভাড়ায় বাঁধা মাইক্রেবাসে।
প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ইনস্টিটিউট অফিস ছিল পুরাতন (পুরাতনই কপাল বিচারের!) হাইকোর্ট ভবনে (এখন যেটা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল) আইন কমিশনের সঙ্গে এজমালিতে। (আরেক শরিকান জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের জন্ম হয়নি তখনো, হয়েছে ২০০৭ সালে।) আমাদের প্রশিক্ষণ-ক্লাস হতো দোতলায়। প্রশিক্ষণ দিতে ‘রিসোর্স পার্সনস’ আসতেন বিচারপতিরাই বেশিরভাগ, কর্মরত ও কর্মকাল সমাপ্ত (অবসরপ্রাপ্ত বা সাবেক যেহেতু বলতে নেই তাঁহাদের!) মিলিয়ে। আর আসতেন সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি রেজিস্ট্রার থেকে রেজিস্ট্রার পর্যন্ত মহোদয়রা, (রেজিস্ট্রার জেনারেল পদটা হয়নি তখনো, হয়েছে ১৫ জুন ২০১৫ থেকে) আইন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত মহোদয়রা (সিনিয়র সচিব পদটা হয়েছে ২০১২-তে, তবে বিচার বিভাগে আসেনি এখনো, সিনিয়র সহকারী সচিব আছেন যথেষ্ট!) এবং সবার ওপরে খোদ মন্ত্রী মহোদয় নিজে। ঘরের লোকের বাইরে আসতেন দু-একজন এক্সপার্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দু-একজন আইন-শিক্ষক, সুপ্রিম কোর্টের নামকরা দু-একজন অ্যাডভোকেটও। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট, ডক্টর রহমান ছিলেন তাদেরই একজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে পার্টটাইম শিক্ষকতাও করেছেন একসময়ে। (করতেন না, বিশ্ববিদ্যালয়ই বাইরে থেকে এরকম প্র্যাকটিশনারদের ধরে এনে করাত। সে-চল নাকি প্রায় উঠে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আপন যোগীদের ভিড়ে!) পড়াতেন এভিডেন্স অ্যাক্ট (সাক্ষ্য আইন)। এভিডেন্স অ্যাক্টের গুরুদের গুরু বলে খ্যাত তিনি ঢাকার আইন জগতে। সেই এখতিয়ারে তিনি নির্বিচারে ‘তুই’ সম্বোধন করেন তার চেয়ে কম বয়সী সবাইকে।
চিনতাম না তাকে, (ঢাকার মানুষ নই, পড়াশোনা চাকরি কোনোটাই করিনি ঢাকাতে।) জেনেছি সব ওই সেদিনের পরে। আমাদের প্রশিক্ষণেও ডক্টর রহমানের বিষয় ছিল যথারীতি এভিডেন্স অ্যাক্ট। বসেও নয় দাঁড়িয়েও নয়, ক্লাস নিচ্ছিলেন তিনি আমাদের বেঞ্চিগুলোর সামনে দিয়ে হালকা দুটো-একটা থাবড়া মেরে মেরে (কারও গায়ে নয়, বেঞ্চিগুলোর তক্তাতে) হেঁটে হেঁটে। তার এই হাঁটাহাঁটির সুবিধে করতেই বোধ হয় বেঞ্চিগুলো সাজানো হয়েছিল অর্ধবৃত্তাকারে! ঠাণ্ডা-শীতল কণ্ঠে নিরাসক্ত স্বরে ইংরেজি ধারাগুলো মুখস্থ আওড়াতে আওড়াতে নিজ এলাকার আঞ্চলিক টানের বাংলা চালিয়ে তিনি ঢুকে চলেছেন এভিডেন্স অ্যাক্টের গভীর প্যাঁচে! হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে পৌঁছেছেন অর্ধবৃত্তের এক পাশের শেষ প্রান্তে। লেকচার মুখে ফিরতি হাঁটা ধরতে পেছন ঘুরেই চোখ পড়ল তার অর্ধবৃত্তের অপর পাশের এক বেঞ্চিতে। এক প্রশিক্ষণার্থী বুঁদ হয়ে বইয়ের পাতা খুলে ধারার তলে তলে সমানে দাগ টেনে চলেছেন লেকচারের তালে তালে! নিজের বই নিয়ে কেউ আসে না প্রশিক্ষণে, দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় জানা আছে তার ভালো করে। নির্ঘাত তুলেছে ব্যাটা ইনস্টিটিউটের লাইব্রেরি থেকে! না হলে কি আর মায়া-দয়া ভুলে মনের সুখে এমন করে দাগাতে পারে! থাকতে পারলেন না আর তাই দেখে। লেকচারের সঙ্গেই মিকচার করে সেই ঠাণ্ডা-শীতল কণ্ঠে নিরাসক্ত স্বরে আঞ্চলিক টানে বলে উঠলেন : ‘বইটা কি তর নিজের? নিজের হইলে বাবা দাগা!’ সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ দাগ টানা। মিলে গেল ‘কংক্লুসিভ প্রুফ’ (চূড়ান্ত প্রমাণ), বইটা কার! প্রমাণের আর দরকার নেই, ইনস্টিটিউটের লাইব্রেরি থেকেই তোলা।
ফ্যাক্ট (ঘটনা), রেলিভ্যান্ট ফ্যাক্ট (প্রাসঙ্গিক ঘটনা), ফ্যাক্ট ইন ইস্যু (বিবেচ্য ঘটনা)! ওরে বাবা! এক ফ্যাক্টের কত ফেরকা! ‘মে প্রিজ্যুম’ (অনুমান করতে পারেন), ‘শ্যাল প্রিজ্যুম (অনুমান করতেই হবে)! এক প্রিজ্যুমের এত কিসিম! ‘প্রুভড’ (প্রমাণিত), ‘ডিসপ্রুভড’ (মিথ্যা প্রমাণিত), ‘নট প্রুভড’ (অপ্রমাণিত)! এক প্রুভের কত রূপ! কী দিয়ে যে কী প্রমাণ হয় আর প্রমাণের দায় কার ঘাড়ে যে কখন বর্তায় বোঝা দেখি মুশকিল! সাক্ষ্য আইন বড়ই জটিল! মাথায় ঢোকেনি কিচ্ছু। ঢুকে আছে শুধু ওই দৃশ্য : ইনস্টিটিউটের বইয়ের পাতায় মনের সুখে দাগ টানা, আর ঠাণ্ডা-শীতল কণ্ঠের নিরাসক্ত স্বরে আঞ্চলিক টানের সেই আওয়াজ : ‘বইটা কি তর নিজের? নিজের হইলে বাবা দাগা!’
ভেসে ওঠে এখনো তা রিমেক ভার্সনে মাঝে মাঝে। সরকারি ‘আহা আহা’ সব প্রকল্প-কেনাকাটার বহর-বাহার দেখলে মনে ভাসে যেন, সরকারি টাকার বস্তা খুলে আহা কী আনন্দে ঢেলে চলেছে দরিয়ায়! (চড়া কাটতে আর বন্যার ভাঙন ঠেকাতে বস্তা বস্তা বালি তোলা-ফেলার নৌ-পরিবহন আর পানি উন্নয়ন কর্মটা তো দেখতেই তাই! টাকা ছাড়া বস্তা কি মাগনাই! সেখান থেকেই ‘কোম্পানি কা মাল দরিয়া মে ডাল’ কথাটা উঠেছিল কিনা কাজ নেই আর খোঁচাখুঁচি করে, ও ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলই উঠে গেছে সেই ১৮৫৮ সালে। কথাটাই আমলের!) আর, কানে বাজে যেন সেই ঠাণ্ডা-শীতল কণ্ঠে নিরাসক্ত স্বরের আঞ্চলিক টানে, ‘টাকাগুলান কি তর নিজের! নিজের হইলে বাবা চালা!’ কিন্তু, বন্ধ হয় না ঢালা। আসলে তো বলেই না কেউ সেভাবে। তবে, বলতেন নাকি দুদকের এক সাবেক চেয়ারম্যান তার নিজস্ব স্টাইলে। তার নিজের মুখ থেকেই শোনা। (পরবর্তী কিস্তিতে সমাপ্য)
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা জজ ও দুদকের সাবেক মহাপরিচালক
জার্সির কথা বাদই থাক। চলুন লুঙ্গির কথা বলি। ৩৭০ টাকাফিক্সড প্রাইজ ব্রাজিল লুঙ্গি কিংবা আর্জেন্টিনা লুঙ্গি। ফিক্সড প্রাইজ লেখা থাকলেও দর-কষাকষিতে সমস্যা নেই। একই মানের লুঙ্গির (ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা বর্জিত) দাম আড়াইশ টাকা। শুধু ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনা নয়, বড় মাপের অন্য ফুটবলার দেশের জার্সি ঢাকার বাজারে আসে, হয়তো লুঙ্গিও এসে যাবে।
বহু বছর আগেই বিশ্ববাজারে ব্রাজিল বক্ষবন্ধনী এবং আর্জেন্টিনা বক্ষবন্ধনী এসেছে। ইতালি, স্পেন, জার্মানি, ফ্রান্স, পর্তুগাল ও উরুগুয়ে বক্ষবন্ধনীও ফুটবলের আনুষঙ্গিক ক্রয় তালিকায় ঢুকেছে। আরও কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় হচ্ছে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার প্রশ্নে যারা নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকতে চান সে ধরনের ফুটবলপ্রিয় নারীর জন্য মিশ্র ডিজাইন বাজারে এসেছেএকটি কাপ ব্রাজিল জার্সির, একটি কাপ আর্জেন্টাইন জার্সির।
বাংলাদেশের মুদি দোকানে চিপস এবং ক্রিসপস-এর প্যাকেটের নতুনত্ব এসেছে, এবারই প্রথম চোখে পড়ল দশ টাকা দামের ব্রাজিল প্যাকেট, দশ টাকা দামের আর্জেন্টিনা প্যাকেট।
ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা যত প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হোক বিশ্বকাপ শুরুর ৯২ বছরে ফাইনালে কখনো ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হয়নি। মাত্র চারবার পরস্পরকে বিশ্বকাপে মোকাবিলা করেছে; ১৯৭৪-এ দ্বিতীয় রাউন্ডে ব্রাজিল ২-১ গোলে আর্জেন্টিনাকে হারায়, ১৯৭৮-এ দ্বিতীয় রাউন্ডে ০-০ ড্র হয়, ১৯৮২-তে ৩-১ গোলে ব্রাজিল জিতে, ১৯৯০ সালে শেষ ষোলোর রাউন্ডে আর্জেন্টিনা ১-০ গোলে ব্রাজিলকে হারায়।
বাংলাদেশের জন্য বিশ্বকাপের একটি বড় সূচক টেলিভিশন বিক্রয় বৃদ্ধি। শুধু ফুটবলের জন্য আর্থিক অসচ্ছলতার মধ্য থেকেও ধার করে বাংলাদেশের গ্রামেও অনেক বাড়িতে টেলিভিশন কেনা হয়েছে। টেলিভিশন শিল্পের বিকাশে ফুটবল শুধু বাংলাদেশে নয় উন্নয়নশীল সব দেশেই বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
ফুটবল সরঞ্জাম
অবশ্যই ফুটবল। ভালোমানের ফুটবলের দাম ১০০ ডলারও হতে পারে। আর কি লাগে, মাঠ গোলপোস্ট তো লাগবেই, বাকি তালিকাটি করে ফেলি : গোলপোস্ট নেট, কর্নার ফ্ল্যাগ, ফুটবল ব্যাগ, ক্যাপ্টেন’স আর্মব্যান্ড, পানির বোতল, গোলকিপার্স গ্লাভস, গোলকিপার্স জার্সি, প্লেয়ার্স জার্সি, প্লেয়ার্স শর্টস, মোজা, অ্যাথলেটি টেপ, মাউথ গার্ড, পিন গার্ড, শিন প্যাড, রেফারির ইউনিফর্ম, রেফারির ফ্ল্যাগ, স্টপওয়াচ, পেনাল্টি কার্ডহলুদ ও লাল, হুইসেল, ট্রেনিং বল, ওয়ার্মআপ ক্লথস, সকার ক্লিটস, ইনডোর শু, টার্ফ শু, বুট, গিয়ার ব্যাগ, জকস্ট্র্যাপএমন অনেক আইটেম যা অ্যাডিডাস, নাইকির মতো প্রতিষ্ঠান বিশ্ববাজারে সরবরাহ করে থাকে। ফুটবল সরঞ্জাম ফিফা বা অ্যাডিডাসের মতো প্রতিষ্ঠান নিজেরা তৈরি করে না, বাণিজ্যিক সুনাম রয়েছে এমন দেশ ও প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে তৈরি করায়। কাতার বিশ^কাপের ফুটবল আল রিহলা তৈরি হয়েছে পাকিস্তানে, ইন্দোনেশিয়ায়; কাতারের স্টেডিয়ামগুলোতে ফুটবল জার্সি গায়ে যেসব উদ্যমী সমর্থকদের দেখা যাচ্ছে তাদের অনেকের জার্সিই বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানায় তৈরি হয়েছে। কেবলমাত্র বিশ^ ফুটবলের বাজার ২০০০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গেছে। পাকিস্তানের শিয়ালকোট এবং আশপাশে ফুটবল তৈরির ১০০০ কারখানা রয়েছে।
বিশ্বকাপে ব্যবহৃত ফুটবল
১৯৩০ সালের প্রথম বিশ্বকাপে টিয়েন্টো ও টি-মডেল ফুটবল বেছে নেওয়া হয়েছে। ফাইনালের দিন প্রথমার্ধের বল সরবরাহ করেছে আর্জেন্টিনা। বলটি টিয়েন্টো। দ্বিতীয়ার্ধের বল টি-মডেল জোগান দিয়েছে অপর ফাইনালিস্ট উরুগুয়ে। ৪-২ গোলে উরুগুয়েই বিশ্বকাপ জিতে নেয়। রোম বিশ্বকাপে (১৯৩৪) ফেডারেল টি এবং প্যারিস বিশ্বকাপে (১৯৩৮) এলেন ফুটবল মাঠে নামানো হয়। ব্রাজিল বিশ্বকাপে (১৯৫০) সুপারবল কোম্পানি ডুপ্লো টি এবং সুইজারল্যান্ড বিশ্বকাপে (১৯৫৪) সুইস ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন ব্র্যান্ডের ফুটবল ব্যবহার করা হয়। ১৯৫৮-তে স্টকহোম বিশ^কাপে মাঠে নামে টপ স্টার ফুটবল। ১৯৬২-এর চিলির বিশ^কাপে ক্র্যাক ছিল দাপ্তরিক ফুটবল। কিন্তু রেফারি অ্যাস্টন বলটি গ্রহণে রাজি না হওয়ায় ইউরোপিয়ান বল সরবরাহ করা হয়। ইউরোপিয়ান টিমগুলো চিলিতে প্রস্তুত বলে খেলতে রাজি হয়নি। ১৯৬৬-তে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে স্ল্যাজেঞ্জার কোম্পানির চ্যালেঞ্জ-৪ স্টার ফুটবল ব্যবহার করা হয়। ১৯৭০ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপে অ্যাডিডাস প্রথমবারের মতো টেলস্টার ফুটবল সরবরাহ করে। সেই থেকে ২০২২ পর্যন্ত অন্য কোনো কোম্পানি অ্যাডিডাসকে অপসারণ করে জায়গা নিতে পারেনি। এ বছর ৫২ পূর্তি হচ্ছে, সম্ভবত আগামীতে অ্যাডিডাসের রাজত্ব বহাল থাকবে। ১৯৭৪-এ সরবরাহ করে টেলস্টার ভুরলাস্ট বলের ওপর পলিথিন আস্তরণ, ফলে ওয়াটার প্রুফ, সুতা বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও দূর হয়। অ্যাডিডাস ১৯৭৮-এ আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে সরবরাহ করে ট্যাঙ্গো। একই বল ইউরোপিয়ান লিগ এবং অলিম্পিকও গ্রহণ করে। ১৯৮২-এর স্পেন বিশ্বকাপে আসে ট্যাঙ্গো এস্পানা, ১৯৮৬-তে মেক্সিকো বিশ্বকাপে মাঠে নামে সম্পূর্ণ সিনথেটিক অ্যাজটেকা বল। ১৯৯০ সালে রোম বিশ্বকাপে ইলেস্কো ইউনিকো, ১৯৯৪-তে যুক্তরাষ্ট্রে কোয়েস্ত্রা, ১৯৯৮-তে ফ্রান্সে আসে ট্রিকালার, সেবারই বহু রঙের ফুটবল মাঠে ছোটাছুটি করে। ২০০২-এ জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ বিশ্বকাপে ফেভারনোভা, ২০০৬ সালে জার্মানিতে টিমগিস্ট বার্লিন ফুটবল প্রতিটি ম্যাচের তারিখ, স্টেডিয়ামের নাম এবং দলের নাম ফুটবলে মুদ্রণ করা হয়।
২০১০-এ দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপে জাবুলানি নামের ৮ প্যানেলের ফুটবল ব্যবহার করা হয়, তবে এই বলের অ্যারোডিনামিক্স নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। ২০১৪ সালের বল ব্রাজুকা এবং শেষ দিনের জন্য ব্রাজুকা ফাইনাল রিও। এই বিশ্বকাপটি ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৮-এর রাশিয়ার বিশ্বকাপে টেলস্টার এইটিন এবং টেলস্টার মেখতা ব্যবহার করা হয়। ২০২২-এ কাতার বিশ্বকাপে ব্যবহৃত আল রিহলা ধারণ করছে ভিডিও অ্যাসিস্টেড রেফারিং-এর জন্য কার্যকর চিপযুক্ত ফুটবল। ফুটবল খেলোয়াড়কে বিশ্বখ্যাতি এনে দেয়, দারিদ্র্য ঘোচায় এমনকি মহাবিত্তবানও করে তোলে। ফুটবল ক্লাব একসময় কেবল সুস্বাস্থ্য রক্ষা এবং বিনোদনের ক্লাবও ছিল। এখন সবকিছু ছাপিয়ে ফুটবল ক্লাব বৃহৎ বাণিজ্যের ক্লাব। ফুটবল ক্লাবের কাজ বাণিজ্য সফল দল তৈরি করা, তার মানে যেভাবেই হোক উইনিং দল গঠন করা হচ্ছে ক্লাবের সাফল্য। তার পরও ইউরোপের বড় দলগুলোর দিকে তাকালে আতঙ্কিত হতে হয়, বেশ কটার ঋণের অঙ্ক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
ইউরোপা লিগসহ শ্রেষ্ঠ কটি লিগে মূলত বাণিজ্যই মুখ্য হয়ে উঠেছে। এই লিগগুলো হচ্ছে : স্প্যানিশ লা লিগা, প্রিমিয়ার লিগ, বুন্দেসলিগা ইতালিয়ান সেরি এ, পর্তুগিজ লিগা, ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান, ডাচ এরডিভাইস, আর্জেন্টাইন লিগ, ব্রাজিলিয়ান সেরি এ। আর ধনী দলগুলোর মধ্যে রয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, বায়ার্ন মিউনিখ, ম্যানচেস্টার সিটি, আর্সেনাল, প্যারিস-সেইন্ট-জার্মান, চেলসি, লিভারপুল, জুভেন্টাস, টটেনহাম হটস্পার, বরুসিয়া ডর্টমুন্ড, অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ, লিস্টার সিটি ও ইন্টারন্যাশিওনাল। ফুটবল খেলোয়াড়, কোচ থেকে শুরু ম্যানেজার পর্যন্ত সবই নিলামে উঠে চড়া দামে বেচাকেনা চলে। প্রতিটি ক্লাবকেন্দ্রিক হরেক রকম ব্যবসা, চকলেট থেকে শুরু করে পানীয় সবই বিক্রি হয়। যদি বিশ্বকাপের হিসাব ধরা হয়১৯৯০ সালে ইতালি ব্যয় করেছে ৪ বিলিয়ন ডলার, ৩২ বছর পর কাতার ২২০ বিলিয়ন ডলার, সবই বাণিজ্যিক পণ্য ও স্থাপনার পেছনে ব্যয় হচ্ছে। শুধু রেফারির হুইসেলের কথা ভাবি। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ব্যবহৃত কয়েকটি হুইসেল ব্র্যান্ড : হিপাত হুইসেল (২৩ ডলার) একমি টোরনাডো হুইসেল (৬ ডলার), ফক্সফর্টি রেফারি হুইসেল (৯ ডলার), ফক্স ফর্টি ক্ল্যাসিক হুইসেল (৭ ডলার), গিলবার্ট হুইসেল (১০ ডলার), স্কুইজ হুইসেল (১০ ডলার), নিউপ্যাল কোচ হুইসেল (১৩ ডলার), একমি থান্ডার ৫৮ (১৫.১০ ডলার)। দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশ এই হুইসেলও টার্গেট করতে পারেনি।
পৃথিবীতে ফুটবলপ্রেমিকের সংখ্যা ৪ বিলিয়ন। এর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ কোনো না কোনো দলের কোনো না কোনো খেলোয়াড়ের ফ্যান। প্রশ্ন হচ্ছেএই ফ্যানরা কি সমর্থক, না ভোক্তা? বাণিজ্যের সাফল্যনির্ভর করে ভোক্তার সাড়ার ওপর। ফ্যান যদি একটি দলের সাপোর্টার হয়ে থাকেন তার পছন্দ ভীষণ সীমিত। সমর্থন করা দলের জন্য সমর্থনকারী ভালোবাসার শেকলে বাঁধা এখান থেকে বেরিয়ে আসা তার জন্য কঠিন এবং যন্ত্রণারও। কিন্তু কনজিউমার বা ভোক্তার পছন্দ অবারিত। তিনি দর-কষাকষি করতে পারেন, পছন্দ না হলে এক বিক্রেতার কাছ থেকে অন্য বিক্রেতার কাছে যেতে পারেন। কিন্তু সমর্থক হয়ে গেলে ফুটবল ও ক্লাবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পণ্য ক্রয়ে ঠকতেই হয় বেশি। ব্যবসায়ী সে ক্ষেত্রে সমর্থকের আবেগকে এক্সপ্লয়েট করার সুযোগ নেন। সাধারণ ব্যবসায় ভোক্তাকে নির্ধারিত মানের সন্তুষ্টি প্রদান করতে না পারলে বিক্রেতার বাজারে টিকে থাকা কঠিন, কিন্তু সমর্থক হলে তিনি আর বিক্রেতার অস্তিত্বের জন্য হুমকি নন, বরং শোষিত হওয়ার জন্য অবচেতনে প্রস্তুত।
ফুটবলার কি ব্যবসায়ী হতে পারেন; উত্তর না এবং হ্যাঁ, উভয়ই। ‘না’-এর ভাগই বেশি। পেলে লিখেছেন আমি ভালো ব্যবসায়ী নই, আমি হৃদয়ের কথা শুনি। জর্জ ব্রেস্ট টাকার সবচেয়ে দুর্বল ব্যবস্থাপকদের একজন। তিনি বলেছেন, আমার টাকার ৯০ ভাগ নারী, গাড়ি ও অ্যালকোহলের জন্য ব্যয় করেছি, ১০ ভাগ মাত্র অপচয়। আবার ব্যবসাসফল ফুটবলারদের মধ্যে রয়েছেন : জেরার্ড পিকে, ডেভিড বেকহাম, ম্যাথু ফ্ল্যামিনি, অলিভার কান প্রমুখ। ফরাসি ফুটবলার ও ফুটবল ব্যবস্থাপক মিশেল প্ল্যাতিনির কথা স্মরণ করতে হয় :
It’s a game before a product
a sport before a market
a show before a business
ফুটবল পণ্যের আগে একটি খেলা, বাজারের আগে একটি ক্রীড়া, ব্যবসায়ের আগে একটি প্রদর্শনী।
ব্যবসায়ের নব্য ব্র্যান্ড
ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরেও মেসি-শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। নিজের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি পর্যন্ত চার কিলোমিটার দীর্ঘ একটি দক্ষিণ কোরীয় পতাকা বানিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ায় অনেক বছরের কর্মজীবন কাটিয়ে দেশে ফেরা এক যুবক। তিনি মনেপ্রাণে কামনা করেন যে দেশ তার অন্নের সংস্থান করে একটি বিয়ে করার সামর্থ্য সৃষ্টি করেছে, সেই দক্ষিণ কোরিয়া জিতুক। পতাকার ব্যবসাটি রমরমা। এর মধ্যে ভারতের বিরুদ্ধে ক্রিকেটে বাংলাদেশ জিতলেও যে উচ্চস্বর আনন্দ ধনী ওঠার কথা তা হয়নিউল্লেখযোগ্য একটি অংশের নজর কেবল ফুটবলেরই ওপর। বাংলাদেশের পতাকা বিক্রি বাড়তে পারত, আশানুরূপ বাড়েনি। ফিফা ব্যাজ লাগানো কয়েক লাখ জ্যাকেট সরবরাহ করেছে বাংলাদেশের একটি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান। পণ্য বিক্রি বাড়াতে এ সময় জিলেট রেজর নিয়ে ক্যামেরায় দাঁড়িয়েছেন ফুটবলার মেসি।
পতাকা আর জার্সি বিক্রিতে এগিয়ে কোন দেশ? ব্রাজিল না আর্জেন্টিনা? টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ভারতে আগ্রহের শীর্ষে আছে আর্জেন্টিনা, তারপরই ব্রাজিল। বিভিন্ন দেশের প্রতীক ও রংশোভিত আন্ডারওয়্যারও বিক্রি হচ্ছে। পণ্য বিপণনে বিজ্ঞাপনের ভূমিকা অসীম। বিশ্বকাপ পণ্য হিসেবে বিগত কয়েক দশকে প্রচারিত বিজ্ঞাপনে সেরা কটির মধ্যে রয়েছে : ম্যাকডোনাল্ডসের খাবার, ইংল্যান্ডের মার্স চকলেট, পেপসি কার্লসবার্গ বিয়ার, নাইকো জুতো, অ্যাডিডাস জুতো ও ফুটবল।
লেখক: সরকারের সাবেক কর্মকর্তা ও কলামিস্ট
এক। সাম্প্রতিককালে আমাদের দেশ ‘সামষ্টিক সহিংসতা’ নামক যে ভয়াবহ ব্যাধিতে আক্রান্ত, তার শিকার শিশুরা। ছেয়ে যাচ্ছে সব আজ শিশুহত্যার রোমহর্ষক খবরে। মানুষের বিবেককে কাঁপিয়ে দেওয়া একেকটি হত্যাকাণ্ডের পর মানুষ সজাগ হয়ে উঠলেও ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকানো যাচ্ছে না। বাংলাদেশে শিশুহত্যার চালচিত্র ভীষণ আতঙ্কজনক। অবৈধ সম্পর্ক দেখে ফেলায় মায়ের হাতে শিশু খুন, সম্পত্তির বিরোধে শত্রুকে ফাঁসাতে নিজের সন্তান হত্যা, সাবেক স্ত্রী বা স্বামীর সঙ্গে বিরোধের জেরে সন্তান হত্যা ইত্যাকার নানা রকম অস্বাভাবিক শিশুহত্যার খবরও আমাদের পাঠ করতে হয়েছে। অন্যান্য অসংখ্য কারণে হত্যা তো আছেই।
দুই। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৪৩৯টি শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১০৪ জনের বয়স ৬ বছরের নিচে, ৭৯ জনের বয়স ৭ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। ৯৭৫ জন শিশুর ওপর নানা ধরনের সহিংসতা হয়েছে। এগুলো শুধু পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের হিসাব। বাস্তবে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি। শিশু অধিকার সনদে সই করার পর কেটে গেছে ৩৩ বছর। আমরা যখন ঝলমলে আয়োজনে শিশু অধিকার সপ্তাহ বা নারীর প্রতি সহিংতা প্রতিরোধ পক্ষ বা অন্য কোনো দিবস পালন করছি, তখনই হয়তো কোনো শিশুকে কেটে টুকরো করা হচ্ছে বা কোনো ছোট্ট শিশুকে ধর্ষণ করা হচ্ছে এই দেশে।
তিন। এক মাস আগে চট্টগ্রাম শহরের জামালখান এলাকার একটি ঘটনা ছিল মুষড়ে পড়ার মতো। তখন ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বইছিল দমকা হাওয়া। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে মাইকিং করতে নেমেছিলেন এক তরুণী সালেহা আক্তার রুবি। কাতর কণ্ঠে তার আর্তি ভেসে আসছিল মাইক দিয়ে ‘আমার বোন মারজানা হক বর্ষা হারিয়ে গেছে। কেউ তার খোঁজ পেলে আমাদের একটু দয়া করে জানান।’ এক বিকেলে বর্ষা মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছিল দোকানে যাওয়ার জন্য। পরে বাসায় না আসায় খোঁজ নিয়ে জানা যায় দোকানে যায়নি সে। সব জায়গায় খুঁজেও পাওয়া যায়নি বর্ষাকে। কয়েক দিনেও বর্ষাকে খুঁজে না পেয়ে পুলিশের অসহযোগিতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। চিৎকার করে বলতে থাকেন : চারদিকে এতগুলো সিসিটিভি বসিয়ে কী লাভ? অবশেষে কয়েক দিন পর নালায় বস্তাবন্দি অবস্থায় পাওয়া গেল বর্ষার লাশ। বস্তায় টিসিবির সিল দেখে আশপাশের বিভিন্ন দোকান ও হোটেল-রেস্টুরেন্টের গোডাউন অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে আসল ঘটনা। ঘাতক এক দোকান কর্মচারী লক্ষ্মণ দাশ, বর্ষাদের প্রতিবেশী। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া রুবির বক্তব্য ছিল এমন ‘আমার বোন নিখোঁজের পর যদি পুলিশ তৎপর হতো, তাকে হত্যা করা যেত না। তাকে বাঁচানো যেত।’
চার। সংবাদমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সবার মনোযোগ এখন ফুটবলকে ঘিরে। সেখানে কত তর্ক-বিতর্ক, কত আবেগের বহিঃপ্রকাশ। এর মধ্যে গত এক সপ্তাহ ধরে একটি ছবি বারবার হাজির হচ্ছিল। একটি নিখোঁজ সংবাদের পোস্টার। অনেকে ফেইসবুকে শেয়ার দিয়েছেন। বাবা-পরিবার হন্য হয়ে খুঁজছে পাঁচ বছর বয়সী শিশু আয়াতকে। চট্টগ্রাম শহরের ইপিজেড থানার বন্দরটিলা এলাকার ঘটনা এটি। দশদিন পর পাওয়া গেল আয়াতের খোঁজ। তার লাশ কেটে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে ঘাতক। আবির আলী নামে সেই ঘাতককে গ্রেপ্তারও করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপরই বেরিয়ে আসে নিখোঁজ আয়াতের এ করুণ পরিণতি।
পাঁচ। আজ হয়তো বিশ্বকাপ ফুটবল, কাল অন্য কিছু নিয়ে মেতে থাকি আমরা। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যস্ত রাখা হয় বিরোধী দল ঠেকাতে। ফলে যা ঘটার সেটিই ঘটে যায়, যা হওয়ার সেটিই হয়ে যায়! আমাদের শিশুদের জন্য একটি সাজানো বাগানের আকাক্সক্ষা থেকে যায় স্বপ্নে, বাস্তবে তা রূপ পায় না। বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে তোলা তো দূরের কথা, পৃথিবীতে এসেই আমাদের শিশুরা খুন হচ্ছে, ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। গণমাধ্যমে নিষ্ঠুরতা দেখতে দেখতে তাতে অভ্যস্ত হয়ে যাই আমাদের মনে কোনো রেখাপাত করে না। সামাজিক মান-মর্যাদার ভেদাভেদের মতো কোনো কোনো ঘটনার দিকে আমরা ফিরেও তাকাই না, আবার কোনো ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশে দেরি করি না। রাষ্ট্র, সমাজ ও রাজনীতির নানা ধূম্রজালে পথ হারাতে হারাতে আমরা এমন পর্যায়ে এসে ঠেকেছি যে, আমাদের শিশুদের এমন পরিণতিই মেনে নিচ্ছি। এমনকি শিশুরা নিখোঁজের পর তাদের লাশ পেয়ে আমাদের ‘সন্তুষ্ট’ থাকতে হচ্ছে।
ছয়। কেউ কেউ ঘটনাগুলোতে ‘বাজার অর্থনীতি’ দর্শনকে দায়ী করে। কিন্তু তার চেয়ে বেশি ‘সামাজিক অবক্ষয়’ হিসেবেই দেখা উচিত। গত সেপ্টেম্বর মাসে ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে নোয়াখালীর স্কুলছাত্রী তাসনিয়া হোসেন অদিতাকে হত্যার পরিকল্পনা ও হত্যা করা হয়। আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে এসব কথা জানিয়েছেন সাবেক কোচিং শিক্ষক আবদুর রহিম রনি। (সূত্র : ঢাকা মেইল) ভারতীয় টিভি সিরিজ ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে দেশে গত দুই বছরে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রামে ১৯ বছর বয়সী তরুণ আবির আলী ‘ক্রাইম পেট্রোল’ আর ‘সিআইডি’ দেখে যে লোমহর্ষক অপরাধের কৌশল শিখেছে, সেটারই প্রয়োগ করেছে ওই ছোট্ট শিশু আয়াতের ওপর। এসব টিভি সিরিয়ালের মূলে রয়েছে বাজার অর্থনীতি। একই সঙ্গে সমাজের বৈষম্য-সহিষ্ণুতা প্রায় সর্বত্র উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। আমাদের আকাক্সক্ষাগুলো পরিবর্তিত হচ্ছে। ‘রুলিং অর্থনৈতিক মডেল’ এ ধরনের প্রবণতাকে ভর করে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছে। সমাজের মধ্যে প্রচলিত উদাহরণগুলো ভেঙে পড়েছে। নিয়ম ভেঙে, নিয়মকে পাশ কাটিয়ে ও তোয়াক্কা না করে সমৃদ্ধি অর্জনের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। প্রকৃত ও পারিবারিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব হারিয়েছে। বিপরীতে চলছে সনদধারী শিক্ষাব্যবস্থা। যোগ হয়েছে ভোগবাদী দৃষ্টিভঙ্গি। আমাদের সমাজের মূল্যবোধগুলো ক্ষয়িষ্ণু হয়ে গেছে। আমরা ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি’র কথা বলে থাকি কিন্তু বিচারিক আদালতে দ্রুত বিচারে রাকিব, রাজন হত্যার রায় হওয়ার পর একই এলাকায় আমরা শিশুহত্যা হতেও দেখেছি। অনেকেরই ধারণা, এ ধরনের অপরাধে কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় না। আসলে সামাজিক দিকগুলোয় নজর দেওয়ার সময় পার হয়ে গেছে কি না, তাও ভেবে দেখা দরকার।
সাত। দেশ যতই আধুনিক হোক বা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করুক বা উন্নত বিশ্বের কাতারে নাম লেখানোর স্বপ্ন দেখুক, তাতে ভুক্তভোগী শিশুদের বাবা-মা ও পরিবার এবং এমন আরও অসংখ্য পরিবারের কিছুই আসবে-যাবে না। সভ্যতার কাছে এর থেকে বড় লজ্জা আর কী হতে পারে যেকোনো মূল্যে শিশুদের নির্যাতন ও হত্যা রুখতে হবে। এ ধরনের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখানোর পাশাপাশি আরও কঠোর হতে হবে। আমরা শিশু নির্যাতন, খুন, নারী ধর্ষণের আর একটি ঘটনাও দেখতে চাই না। অপরাধীদের বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ এগিয়ে আসুক; পাড়া-মহল্লা, গ্রাম-গঞ্জে শিশু ও নারীদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন রোধে তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলুক এটাই প্রত্যাশা। প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। অন্যথায় নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না।
লেখক : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, ঢাকা মহানগর
বিপুল গতিতে দেশ যখন উন্নয়নের মহাসড়কে উঠে পড়ার দাবি করা হয়, ঠিক তখনই এসব উন্নয়ন পরিকল্পনা, প্রকল্প এবং এসবের জন্য ব্যয় করা অর্থের নিদারুণ অপচয়ের খবরও সামনে আসে। হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে সামান্য একটি সংযোগ সড়ক বা ছোট কোনো নদী-নালা-খালের ওপর সেতুর অভাবে একটি জনপদ বিচ্ছিন্ন থেকে যাচ্ছে। ফলে উন্নয়নের সুফলবঞ্চিত জনপদের মানুষ দিনের পর দিন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। অবকাঠামোগত এই সংকটে কেবল যোগাযোগই নয় তারা অর্থনৈতিকভাবেও পিছিয়ে পড়ছেন। চিকিৎসা ও শিক্ষার মতো অধিকার থেকেও বঞ্চিত থাকছেন। আবার দেখা গেছে কয়েকশ কোটি টাকার প্রকল্প শেষ হলেও অবকাঠামোটি আসবাবপত্রসহ প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না, ফলে তা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। কিন্তু কাদের উদাসীনতা ও গাফিলতিতে জনগণের ভোগান্তি ও অর্থের এমন অপচয় ঘটে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেটা জানা যায় না। এক যাত্রায় দুই ফলের মতো একদিকে অবকাঠামোর অভাবে বিচ্ছিন্ন ও উন্নয়ন সুবিধাবঞ্চিত হয়ে পড়া, অন্যদিকে উন্নয়নের নামে বিপুল ব্যয়ে নির্মিত অবকাঠামোর অব্যবহৃত থাকা।
বুধবার দেশ রূপান্তরে ‘ভেসে ভেসে স্কুলযাত্রা’ ও ‘অকাজের ২৫০ কোটির ভবন’ শীর্ষক প্রতিবেদন দুটির কথাই ধরা যাক। প্রথম ঘটনাটি পটুয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের দিয়ারচর ও উত্তর চরমোন্তাজ গ্রামের। দুই গ্রামের মধ্যে প্রায় আড়াইশ ফুট প্রশস্ত এক খাল। দিয়ারচরের শিক্ষার্থীদের ওই খাল পার হয়েই প্রতিদিন যেতে হয় উত্তর চরমোন্তাজের মাঝেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। খাল পার হওয়ার জন্য কোনো সেতু নেই। নেই খেয়া পারাপারের ব্যবস্থাও। অগত্যা শীত বা বর্ষায় বইখাতার সঙ্গে রান্নার হাঁড়ির মধ্যে বইপুস্তক আর স্কুলের পোশাক নিয়ে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যায়। ভেজা জামাকাপড় রোদে শুকাতে দিয়ে স্কুল পোশাক পরে ছোটে ক্লাসে। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, স্থানীয়দের উদ্যোগে কয়েকবার বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হলেও নোনা জলে সেটি বেশিদিন টেকেনি। ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলে সাঁকো থাকাকালে ৩০০-৪০০ শিক্ষার্থী ছিল। এরমধ্যে প্রায় দুইশ শিক্ষার্থী ছিল ওই দুই চরের। সাঁকো না থাকায় এখন দুই চর থেকে ৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী আসে। গ্রামীণ জনপদের জনগুরুত্বের বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে হাটবাজার, সামাজিক, অর্থনৈতিক কিংবা সেবামূলক প্রতিষ্ঠানসহ স্কুল, কলেজ ও হাসপাতালে যাওয়ার রাস্তায় সেতু নির্মাণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে তার কোনো প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি না। এক্ষেত্রে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেউই দায় এড়াতে পারেন না। আমার আশা করি দ্রুত দুই গ্রামের মধ্যে সেতুর ব্যবস্থা হবে, শিক্ষার্থীরা ভেসে নয়, হেঁটে স্কুলে যাবে।
অন্যদিকে দ্বিতীয় প্রতিবেদনটিতে দেখা যাচ্ছে সরকারি অর্থের বিপুল অপচয়। জানা যায়, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৭১টি নতুন ভবনের জন্য প্রায় ২৫০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ভবন নির্মাণ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেঞ্চ-টেবিলসহ প্রয়োজনীয় ফার্নিচার দেওয়ার কথা। এরপর ভবনের ব্যবহার শুরু হবে। কিন্তু ভবন নির্মাণ ছয় মাস আগে শেষ হলেও আসবাবপত্র সরবরাহ করা হয়নি। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ৭১টি ভবনে সর্বোচ্চ ২৫ কোটি টাকার আসবাবপত্রের প্রয়োজন হতে পারে। দেখা যাচ্ছে, স্কুলভবন তৈরি হয়ে গেলেও বেঞ্চ, চেয়ার, টেবিলের অভাবে শিক্ষার্থীরা সেখানে ক্লাস করতে পারছে না। ‘সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো উন্নয়ন প্রকল্প’-এর পরিচালক অধ্যাপক মো. নাসির উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রকল্পটি অর্থ মন্ত্রণালয় কর্র্তৃক ‘বি’ ক্যাটাগরির ঘোষিত হওয়ায় খাতওয়ারি অর্থছাড় স্থগিত আছে। চলতি অর্থবছরেও এসব ভবনের আসবাবের জন্য বরাদ্দ নেই। ফলে এসব ভবন রক্ষণাবেক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।’ অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, অর্থনৈতিক মন্দার জন্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর শ্রেণিভাগ করার বিষয়টি বাদ দেওয়া না গেলেও, মূল প্রকল্প ‘এ’ ক্যাটাগরির হলে সেগুলোর আসবাবপত্রসহ অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জাকে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে রাখলে সেই উন্নয়ন তো কোনো কাজে আসবে না। বরং এ ধরনের পরিকল্পনা ঘাটতি সরকারি টাকার অপচয়ের কারণ হবে জনগণ কোনো সুফল পাবে না। কাদের পরিকল্পনা ঘাটতি, উদাসীনতা ও গাফিলতির কারণে সরকারের অর্থের এই অপচয় হচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করা দরকার। এ ধরনের কাজ আগামীতে যাতে না হয়, সে বিষয়ে সবাইকে সাবধান হওয়া উচিত। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আশা করব সরকার এসব বিষয়ে দ্রুত নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এবং শিক্ষার্থীরা সেতু পার হয়ে স্কুলে গিয়ে নতুন ভবনে বসে ক্লাস করবে।
বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদ খান সারওয়ার মুরশিদ ভাষা আন্দোলনসহ বাংলাদেশের সব গণ-আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের নেপথ্য রূপকারদের একজন। শিক্ষক হিসেবে তিনি ছিলেন কিংবদন্তিতুল্য প্রতিভা। ১৯৪৭ সালের পর কিছুদিন ইংরেজি ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘নিউ ভ্যালুজ’ প্রকাশ করে তিনি বিদ্যোৎসমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং রাষ্ট্রদূত ছিলেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় তিনি পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও পরে টিআইবির চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ১৯২৪ সালের ১ জুলাই কুমিল্লা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আলী আহমদ খান অবিভক্ত বাংলা এবং পরে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জর্জ হাই স্কুল থেকে ১৯৩৯ সালে প্রবেশিকা পাস করেন। এরপর ফেনী সরকারি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বিএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে ১৯৪৮ সালে এমএ ডিগ্রি নেন। খান সারওয়ার মুরশিদ ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। কিছুদিন পর ব্রিটেনের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য যান। তার গবেষণার বিষয় ছিল ‘ইয়েটস, হাক্সলে এবং এলিয়টের ওপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রভাব’। ১৯৫১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সংস্কৃতি সংসদ’ নামে একটি প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তোলেন। ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ এই দুই বছর তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। ১৯৭৫ সালে তিনি পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত গণ-আদালতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত গণতদন্ত কমিশনের সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া তিনি মানবাধিকারভিত্তিক সংস্থা ‘নাগরিক উদ্যোগ’-এর চেয়ারম্যান ছিলেন। তার একমাত্র গ্রন্থ ‘কালের কথা’ ২০০৪ সালে প্রকাশিত হয়। ২০১০ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। ২০১২ সালের ৮ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল বিশ্বের প্রায় সব দেশই। অধিকাংশ দেশই তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। প্রতিবেশী ভারত ও শ্রীলঙ্কার নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির কথা প্রায় সবারই জানা, তারাও ইতিমধ্যে তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে এসেছে। তবে ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। কোনোভাবেই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সরকার। ফলাফল ভোক্তা মূল্যসূচকে (সিপিআই) বা মূল্যস্ফীতিতে ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড। মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সিপিআই ইনডেক্সে এ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে।
গত ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করে সরকার। এ বাজেটের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আগামী অর্থবছরে সরকার কীভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বাজেট প্রস্তাবে কোনো পদক্ষেপ না থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি পরাবাস্তব বাজেট। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখা আসলে সম্ভব নয়। গত ১১ মাসে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। সে হিসাবে মূল্যস্ফীতি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো, আগের বছরের মে মাসে যে পণ্য গড়ে ১০০ টাকা কিনতে হয়েছে, এ বছরের মে মাসে তা কিনতে হচ্ছে গড়ে ১০৯ টাকা ৯৪ পয়সায়। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, ধরুন আগের বছরের একই সময়ে ৫০০ টাকার একটি নোটে কোনো ব্যক্তি পাঁচটি পণ্য কিনতে পেরেছিলেন। এ বছরের একই সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় এখন একই টাকায় তিনটি পণ্য কিনতে পারছেন। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১ বছরে বেড়েছে ১১.৩২ শতাংশ : ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, অথচ এ বছরের মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ বছরের এপ্রিল মাসেও খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ।
খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে এক বছরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৪ শতাংশ : বিবিএসের তথ্য বলছে, সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ হয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বা ৬৪ শতাংশ।
গ্রামের চেয়ে শহরের মূল্যস্ফীতি বেশি : এক বছর আগেও শহরের মূল্যস্ফীতি গ্রামের চেয়ে কম ছিল। কারণ গ্রামের চেয়ে শহরে পণ্য মজুদের আধুনিক ব্যবস্থা আছে। তবে সরকারি উদ্যোগে শহরের মতো গ্রামেও কিছু স্থানে খাদ্যগুদামের ব্যবস্থা তৈরি হওয়ায় এখন শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতি কমেছে। মে মাসে শহর এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ, একই সময়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
বিশ্বে কমেছে মূল্যস্ফীতি, বাংলাদেশে বাড়ছে : গত শনিবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট-পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, থাইল্যান্ডে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, গত এপ্রিলে তা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। অর্থাৎ আগের তুলনায় দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কমেছে ৬৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। সেখান থেকে ৪৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গত অক্টোবর মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, সেখান থেকে ৩৪ শতাংশ কমিয়ে ৭ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে ইইউ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয়। তবে বাংলাদেশ এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় শুরুর দিকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো গত বছর আগস্টে এক ঘোষণাতেই জ্বালানি তেলের দাম ৫১ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই মাসেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশ দেরিতে হলেও নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। বর্তমানে এ সুদহার ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে নীতি সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে আভাস দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল দাবি করেছে, বিশে^র দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির যে হার, তা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য হুমকি। মূল্যস্ফীতির এই হার ১২ বছর বা এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭-০৮ সালে বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
২০০৯ সালের প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখনো মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপর ছিল। পরে অবশ্য তা কমতে কমতে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে। দীর্ঘদিন ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে।
৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঠিক এরকম এক সময়ে গত বছর ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। এর পরপরই বাড়ানো হয় সব ধরনের পরিবহন ভাড়া। এ দুইয়ের প্রভাবে বেড়ে যায় প্রায় সব পণ্যের দাম। ফলে পরের মাস আগস্টে মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে ওঠে।
যদিও সেপ্টেম্বর থেকে তা কমতে থাকে। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে আসে। জানুয়ারিতে তা আরও কমে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে আসে। তবে রোজাকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারি মাসে তা বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চ মাসে হয় ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এপ্রিলে তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে এসেছিল।
মজুরি সূচক বেড়েছে : বিবিএসের তথ্য বলছে, গত কয়েক মাস ধরেই মজুরি সূচক অল্প অল্প করে বাড়ছে। অক্টোবরে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা মে মাসে এসে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৩২ শতাংশে।
দেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে হাইড্রোলিক পাওয়ার স্টেশনে তীব্র পানির সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। অনাবৃষ্টি এবং তীব্র তাপদাহে কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে এই সংকট দেখা দিয়েছে। ৫টি ইউনিটের মধ্যে কোনরকমে মাত্র ১টি ইউনিট সচল রেখে সর্বনিম্ন ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৬ জুন) সকালে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আবদুজ্জাহের জানান, হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি জানান, পানির অভাবে কেন্দ্রের সব ক’টি ইউনিট সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে ঠেকেছে। তিনি আরও জানান, কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে ১ নম্বর ইউনিটটি চালু রাখা হয়েছে। এই ইউনিট হতে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। অথচ এই কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট সচল থাকলে প্রায় ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে পাঠানো হয়। সেখানে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট।
এটিএম আব্দুজ্জাহের বলেন, বছরের এই সময়ে কখনই পানি এতো নিচে থাকে না। এ বছর এখনো বৃষ্টিপাত শুরু না হওয়ায় খুবই বিপাকে পড়তে হয়েছে আমাদের। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মাত্র একটি ইউনিট চালু আছে। আমরাও বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছি।
কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বরত প্রকৌশলী জানান, গত মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদের পানির পরিমাণ ৭৩ দশমিক ৬২ ফুট (মিন সি লেভেল) ছিল। রুলকার্ভ অনুযায়ী এসময় হ্রদে পানি থাকার কথা ৭৮ দশমিক ২০ ফুট এমএসএল (মিন সি লেভেল)। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচুর বৃষ্টিপাত না হলে এই সংকট হতে উত্তরণ সম্ভব নয় বলে জানান প্রকৌশলীরা।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানায়, অনাবৃষ্টি, বন উজার হওয়া, কাপ্তাই হ্রদে নাব্যতা সংকটের কারণে পানি তলানিতে চলে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে এমন বিপর্যয় ঘটেছে। সঙ্গতকারণে গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে পানি কমে যাওয়ার ফলে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে তা নয়, কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। হ্রদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি উপজেলার সাথে নৌপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে মানুষের দুর্ভোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কাপ্তাই হ্রদের পাশে বসবাসকারী নুরুল ইসলাম জানান, ভারী বৃষ্টিপাত না হলে হ্রদে পানি বাড়ার সম্ভাবনা নেই। তাই দ্রুত সময়ে কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং করা প্রয়োজন। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে কাপ্তাই হ্রদের গভীরতা যেমন বাড়বে তেমনি এই সমস্যা থেকে কিছুটা সমাধান পাওয়া যাবে।
বিলাইছড়ি বাজারের ব্যবসায়ী ইসমাঈল হোসেন জানান, বিলাইছড়িতে নৌপথ বন্ধ মানেই জীবন ও জীবিকার দুর্বিষহ অবস্থা। আমরা বিলাইছড়িবাসীই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছি হ্রদের পানি কমে যাওয়ায়। বৃষ্টি হতে যত দেরি হবে আমাদের কষ্ট তত বেশি দীর্ঘায়িত হবে।
তিনি বলেন, হ্রদের পানি অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় বাজারের পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। বড় বোটতো আসতেই পারছে না, ছোট ছোট বোটে পণ্য পরিবহনে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে, পর্যাপ্ত পণ্যও আনা যাচ্ছে না। আবার অনেক দূর থেকে পণ্য বাজারে তুলতে শ্রমিকদের বাড়তি মজুরি দিতে হচ্ছে। একই সঙ্গে সাপ্তাহিক বাজারও এখন ঠিকমতো জমছে না। কারণ দূর থেকে মানুষজন আসতে পারছে না। এখন বৃষ্টি হওয়া ছাড়া পানি বাড়ার তো আর কোনো সম্ভাবনা নেই।
সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে প্রেম এরপর বিয়ে। দেড় বছরের দাম্পত্য জীবনে আট মাস ধরে চিত্রনায়িকা পরীমণি ও শরিফুল রাজের বনিবনা হচ্ছে না বলেই শোনা যাচ্ছে। চলছে টানাপোড়েন এবং সেই সংসার এখন ভাঙনের পথে। রাজের ফেসবুক থেকে অভিনেত্রী তানজিন তিশা, নাজিফা তুষি ও সুনেরাহ বিনতে কামালের কিছু ছবি ও ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর রাজের সঙ্গে পরীমণির মতপার্থক্য প্রকাশ্যে আসে। সব ছাপিয়ে যা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
রবিবার একটি গণমাধ্যমের ‘লাইভ’ অনুষ্ঠানে এসে শরিফুল রাজ জানান, আপাতত তারা সেপারেশনে আছেন এবং তাদের আর একসাথে হওয়ার কোন সুযোগ নেই। পরীকে তিনি শ্রদ্ধা করেন জানিয়ে সবশেষে পরীমণির উদ্দেশ্যে রাজ বলেন, ‘বেবি, আই লাভ ইউ। যা-ই হোক না কেন, আনন্দে থেকো। আমরা আমাদের সন্তানকে ভালো রাখব।’
রাজের এমন মন্তব্যের উত্তর দিতে সোমবার রাতে গণমাধ্যমটির লাইভে এসে রাজের উদ্দেশ্যে পরীমণি বলেন, ‘গরু মেরে জুতা দান করার কোনো দরকার নেই। কেউ রেসপেক্ট করলে সেটা তার কার্যকলাপ দেখেই বোঝা যায়, মুখ ফুটে বলতে হয় না। আমাকে পাবলিকলি অপমান করে এরপর রেসপেক্ট দেখানোর কোনো দরকার নেই। আর আমার বাচ্চাকে নিয়ে এসব ইমোশনালি কোনো কথা শুনতে চাই না। এসব ইমোশনালি কথা মানুষকে গিলিয়ে লাভ নেই। মানুষ বুঝে।’
ফাঁস হওয়া ভিডিওগুলো পরী বলেন, ‘এত বছর ধরে তারা বন্ধু অথচ আমি জানতাম না। এসব সামনে আসার পর জানতে পারলাম। আর রাজ যতটা তার বন্ধুদের ইমেজ নিয়ে কনসার্ন তার পরিবার নিয়ে এতটাও কনসার্ন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমনিতে অনেক শান্তশিষ্ট। অনেকটা সাপের মতো, লেজে পাড়া না দিলে চুপচাপ থাকি কিন্তু আমার লেজে পাড়া দিলেই আমি ফুঁস করে উঠি আর তখন কামড় দিবই।’
সবশেষে পরী বলেন, ‘আমি চাই এসবের শেষ হোক। আমি আজকে এখানে এসে এসব বলতাম না। তুমিই (রাজ) আমাকে বাধ্য করেছ। এরকম অসুস্থ মানুষের সঙ্গে আমি আর থাকতে চাই না। আমি চাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ আমাকে ডিভোর্স দিক।’
অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল দেশের সর্ববৃহৎ পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। গতকাল সোমবার দুপুরে কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা সংকটে গত ২৫ মে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বন্ধ হয়। ২০২০ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পর এবারই প্রথম কয়লা সংকটে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হলো।
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের এই বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানটিকে কয়লা ক্রয়ে ঋণ দিয়ে আসছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। এপ্রিল পর্যন্ত কয়লার ৩৯০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সিএমসি। পরে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হলে কয়লা আমদানির এলসি খোলার শর্ত দেয় চীনা প্রতিষ্ঠান। গতকাল পর্যন্ত ৯৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এ মাসের শেষদিকে কয়লা দেশে আসার কথা রয়েছে।
কয়লার অভাবে দেশের সবচেয়ে বড় এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক মাসে লোকসান হবে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণে জনদুর্ভোগ ও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে পুরো ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
এদিকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের বাইরে শুধু কয়লাবাবদ পিডিবির কাছে কেন্দ্রটির বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকা এ বকেয়ার টাকা পরিশোধের জন্য দফায় দফায় চিঠি দিয়েও তা পরিশোধ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার কারণেই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিজেদের দায় অস্বীকার করে বলছে, বৈশি^ক মন্দার পরিস্থিতিতে ডলার সংকটের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি কেন্দ্রভাড়া বাবদ প্রতি মাসে পিডিবিকে ২৪৭ কোটি টাকা দিতে হবে। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও নির্ধারিত কেন্দ্রভাড়া পরিশোধ করতে হবে পিডিবিকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্নভাবে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট করে প্রায় তিন কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল কেন্দ্রটি। প্রতি মাসে এর পরিমাণ ছিল ৯০ কোটি ইউনিট। গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য ছিল ৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৬ টাকার মতো।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফার প্রকৃত জানা না গেলেও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানান, সব ধরনের ব্যয় বাদ দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে তাদের নিট মুনাফা হতো ৫ থেকে ৬ শতাংশ। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড়মূল্য সাড়ে ৫ টাকা এবং মুনাফা সাড়ে ৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক মাসে মুনাফার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় এ মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে বিসিপিসিএল। এদিকে কয়লা কেনার জন্য সাড়ে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। গত ছয় মাসের বেশি সময় কয়লার বিল বকেয়া থাকায় সুদের পরিমাণও বেড়ে যাবে। বাড়তি এ সুদের অর্থ বিসিপিসিএলকেই পরিশোধ করতে হবে।
বর্তমানে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রতি ইউনিটের গড়মূল্য প্রায় ১১ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও পিডিবি এ বিদ্যুৎ লোকসান দিয়ে বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে ৮ টাকা ১০ পয়সায়। পায়রা থেকে এক মাস বিদ্যুৎ কিনতে না পারলে পিডিবির লোকসান আরও বাড়বে।
সূত্রমতে, কয়লা দেশে পৌঁছানো এবং কেন্দ্র চালু করতে সব মিলে অন্তত এক মাসের মতো সময় লাগবে। কোনো কারণে যদি কয়লা আসতে আরও দেরি হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিশে^র সেরা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এক সুইচে চালু করার পর নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বৈশি^ক কারণে ডলার সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তবে এ সময়ে আমরা বসে না থেকে কেন্দ্রের মেইনটেনেন্সের কাজটি করে ফেলব, যাতে দীর্ঘদিন আর মেইনটেনেন্স করা না লাগে।’
কেন্দ্রটি বন্ধের ফলে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে তা জানতে চাইলে প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আবদুল মওলা দেশ রূপান্তরকে বলেন ‘আমরা এমনিতেই বকেয়া বিল পাচ্ছি না। এটাই বড় ক্ষতি। অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি কেন্দ্রটি বন্ধের কারণে সাশ্রয়ী দামে দেশের মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এ কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সাড়ে ৫ থেকে ৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ দিতে না পেরে কমফোর্ড ফিল করছি না।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্র ভাড়ার পাশাপাশি লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি এবং কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলেও এ ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয়। আর লোডশেডিং না দিয়ে সরকার যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়, তাহলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো ছাড়া কোনো উপায় নেই এই মুহূর্তে। সে ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে ৪ টাকার ওপর লোকসান হবে।’ তিনি বলেন, ‘ডলার ছাড় ঠিকই হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার আগেই ডলার ছাড় করা উচিত ছিল। এতে বিরাট ক্ষতি হলো। এ ক্ষেত্রে দুটো বিষয় হতে পারে। একটি হলো যারা ডলার ছাড় করছেন তারা বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না অথবা দেশের পরিস্থিতি আসলেই ভয়াবহ। তবে দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে অবশ্যই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডলার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের। আর বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে। এ ক্ষেত্রে খাতের গুরুত্ব বুঝে ডলার ছাড় করা হয়। তবে দেশের প্রয়োজনে ডলার ছাড় করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো ধরনের গাফিলতি নেই।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।