
বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদ খান সারওয়ার মুরশিদ ভাষা আন্দোলনসহ বাংলাদেশের সব গণ-আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের নেপথ্য রূপকারদের একজন। শিক্ষক হিসেবে তিনি ছিলেন কিংবদন্তিতুল্য প্রতিভা। ১৯৪৭ সালের পর কিছুদিন ইংরেজি ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘নিউ ভ্যালুজ’ প্রকাশ করে তিনি বিদ্যোৎসমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং রাষ্ট্রদূত ছিলেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় তিনি পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও পরে টিআইবির চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ১৯২৪ সালের ১ জুলাই কুমিল্লা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আলী আহমদ খান অবিভক্ত বাংলা এবং পরে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জর্জ হাই স্কুল থেকে ১৯৩৯ সালে প্রবেশিকা পাস করেন। এরপর ফেনী সরকারি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বিএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে ১৯৪৮ সালে এমএ ডিগ্রি নেন। খান সারওয়ার মুরশিদ ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। কিছুদিন পর ব্রিটেনের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য যান। তার গবেষণার বিষয় ছিল ‘ইয়েটস, হাক্সলে এবং এলিয়টের ওপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রভাব’। ১৯৫১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সংস্কৃতি সংসদ’ নামে একটি প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তোলেন। ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ এই দুই বছর তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। ১৯৭৫ সালে তিনি পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত গণ-আদালতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত গণতদন্ত কমিশনের সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া তিনি মানবাধিকারভিত্তিক সংস্থা ‘নাগরিক উদ্যোগ’-এর চেয়ারম্যান ছিলেন। তার একমাত্র গ্রন্থ ‘কালের কথা’ ২০০৪ সালে প্রকাশিত হয়। ২০১০ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। ২০১২ সালের ৮ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
জার্সির কথা বাদই থাক। চলুন লুঙ্গির কথা বলি। ৩৭০ টাকাফিক্সড প্রাইজ ব্রাজিল লুঙ্গি কিংবা আর্জেন্টিনা লুঙ্গি। ফিক্সড প্রাইজ লেখা থাকলেও দর-কষাকষিতে সমস্যা নেই। একই মানের লুঙ্গির (ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা বর্জিত) দাম আড়াইশ টাকা। শুধু ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনা নয়, বড় মাপের অন্য ফুটবলার দেশের জার্সি ঢাকার বাজারে আসে, হয়তো লুঙ্গিও এসে যাবে।
বহু বছর আগেই বিশ্ববাজারে ব্রাজিল বক্ষবন্ধনী এবং আর্জেন্টিনা বক্ষবন্ধনী এসেছে। ইতালি, স্পেন, জার্মানি, ফ্রান্স, পর্তুগাল ও উরুগুয়ে বক্ষবন্ধনীও ফুটবলের আনুষঙ্গিক ক্রয় তালিকায় ঢুকেছে। আরও কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় হচ্ছে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার প্রশ্নে যারা নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকতে চান সে ধরনের ফুটবলপ্রিয় নারীর জন্য মিশ্র ডিজাইন বাজারে এসেছেএকটি কাপ ব্রাজিল জার্সির, একটি কাপ আর্জেন্টাইন জার্সির।
বাংলাদেশের মুদি দোকানে চিপস এবং ক্রিসপস-এর প্যাকেটের নতুনত্ব এসেছে, এবারই প্রথম চোখে পড়ল দশ টাকা দামের ব্রাজিল প্যাকেট, দশ টাকা দামের আর্জেন্টিনা প্যাকেট।
ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা যত প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হোক বিশ্বকাপ শুরুর ৯২ বছরে ফাইনালে কখনো ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হয়নি। মাত্র চারবার পরস্পরকে বিশ্বকাপে মোকাবিলা করেছে; ১৯৭৪-এ দ্বিতীয় রাউন্ডে ব্রাজিল ২-১ গোলে আর্জেন্টিনাকে হারায়, ১৯৭৮-এ দ্বিতীয় রাউন্ডে ০-০ ড্র হয়, ১৯৮২-তে ৩-১ গোলে ব্রাজিল জিতে, ১৯৯০ সালে শেষ ষোলোর রাউন্ডে আর্জেন্টিনা ১-০ গোলে ব্রাজিলকে হারায়।
বাংলাদেশের জন্য বিশ্বকাপের একটি বড় সূচক টেলিভিশন বিক্রয় বৃদ্ধি। শুধু ফুটবলের জন্য আর্থিক অসচ্ছলতার মধ্য থেকেও ধার করে বাংলাদেশের গ্রামেও অনেক বাড়িতে টেলিভিশন কেনা হয়েছে। টেলিভিশন শিল্পের বিকাশে ফুটবল শুধু বাংলাদেশে নয় উন্নয়নশীল সব দেশেই বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
ফুটবল সরঞ্জাম
অবশ্যই ফুটবল। ভালোমানের ফুটবলের দাম ১০০ ডলারও হতে পারে। আর কি লাগে, মাঠ গোলপোস্ট তো লাগবেই, বাকি তালিকাটি করে ফেলি : গোলপোস্ট নেট, কর্নার ফ্ল্যাগ, ফুটবল ব্যাগ, ক্যাপ্টেন’স আর্মব্যান্ড, পানির বোতল, গোলকিপার্স গ্লাভস, গোলকিপার্স জার্সি, প্লেয়ার্স জার্সি, প্লেয়ার্স শর্টস, মোজা, অ্যাথলেটি টেপ, মাউথ গার্ড, পিন গার্ড, শিন প্যাড, রেফারির ইউনিফর্ম, রেফারির ফ্ল্যাগ, স্টপওয়াচ, পেনাল্টি কার্ডহলুদ ও লাল, হুইসেল, ট্রেনিং বল, ওয়ার্মআপ ক্লথস, সকার ক্লিটস, ইনডোর শু, টার্ফ শু, বুট, গিয়ার ব্যাগ, জকস্ট্র্যাপএমন অনেক আইটেম যা অ্যাডিডাস, নাইকির মতো প্রতিষ্ঠান বিশ্ববাজারে সরবরাহ করে থাকে। ফুটবল সরঞ্জাম ফিফা বা অ্যাডিডাসের মতো প্রতিষ্ঠান নিজেরা তৈরি করে না, বাণিজ্যিক সুনাম রয়েছে এমন দেশ ও প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে তৈরি করায়। কাতার বিশ^কাপের ফুটবল আল রিহলা তৈরি হয়েছে পাকিস্তানে, ইন্দোনেশিয়ায়; কাতারের স্টেডিয়ামগুলোতে ফুটবল জার্সি গায়ে যেসব উদ্যমী সমর্থকদের দেখা যাচ্ছে তাদের অনেকের জার্সিই বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানায় তৈরি হয়েছে। কেবলমাত্র বিশ^ ফুটবলের বাজার ২০০০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গেছে। পাকিস্তানের শিয়ালকোট এবং আশপাশে ফুটবল তৈরির ১০০০ কারখানা রয়েছে।
বিশ্বকাপে ব্যবহৃত ফুটবল
১৯৩০ সালের প্রথম বিশ্বকাপে টিয়েন্টো ও টি-মডেল ফুটবল বেছে নেওয়া হয়েছে। ফাইনালের দিন প্রথমার্ধের বল সরবরাহ করেছে আর্জেন্টিনা। বলটি টিয়েন্টো। দ্বিতীয়ার্ধের বল টি-মডেল জোগান দিয়েছে অপর ফাইনালিস্ট উরুগুয়ে। ৪-২ গোলে উরুগুয়েই বিশ্বকাপ জিতে নেয়। রোম বিশ্বকাপে (১৯৩৪) ফেডারেল টি এবং প্যারিস বিশ্বকাপে (১৯৩৮) এলেন ফুটবল মাঠে নামানো হয়। ব্রাজিল বিশ্বকাপে (১৯৫০) সুপারবল কোম্পানি ডুপ্লো টি এবং সুইজারল্যান্ড বিশ্বকাপে (১৯৫৪) সুইস ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন ব্র্যান্ডের ফুটবল ব্যবহার করা হয়। ১৯৫৮-তে স্টকহোম বিশ^কাপে মাঠে নামে টপ স্টার ফুটবল। ১৯৬২-এর চিলির বিশ^কাপে ক্র্যাক ছিল দাপ্তরিক ফুটবল। কিন্তু রেফারি অ্যাস্টন বলটি গ্রহণে রাজি না হওয়ায় ইউরোপিয়ান বল সরবরাহ করা হয়। ইউরোপিয়ান টিমগুলো চিলিতে প্রস্তুত বলে খেলতে রাজি হয়নি। ১৯৬৬-তে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে স্ল্যাজেঞ্জার কোম্পানির চ্যালেঞ্জ-৪ স্টার ফুটবল ব্যবহার করা হয়। ১৯৭০ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপে অ্যাডিডাস প্রথমবারের মতো টেলস্টার ফুটবল সরবরাহ করে। সেই থেকে ২০২২ পর্যন্ত অন্য কোনো কোম্পানি অ্যাডিডাসকে অপসারণ করে জায়গা নিতে পারেনি। এ বছর ৫২ পূর্তি হচ্ছে, সম্ভবত আগামীতে অ্যাডিডাসের রাজত্ব বহাল থাকবে। ১৯৭৪-এ সরবরাহ করে টেলস্টার ভুরলাস্ট বলের ওপর পলিথিন আস্তরণ, ফলে ওয়াটার প্রুফ, সুতা বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও দূর হয়। অ্যাডিডাস ১৯৭৮-এ আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে সরবরাহ করে ট্যাঙ্গো। একই বল ইউরোপিয়ান লিগ এবং অলিম্পিকও গ্রহণ করে। ১৯৮২-এর স্পেন বিশ্বকাপে আসে ট্যাঙ্গো এস্পানা, ১৯৮৬-তে মেক্সিকো বিশ্বকাপে মাঠে নামে সম্পূর্ণ সিনথেটিক অ্যাজটেকা বল। ১৯৯০ সালে রোম বিশ্বকাপে ইলেস্কো ইউনিকো, ১৯৯৪-তে যুক্তরাষ্ট্রে কোয়েস্ত্রা, ১৯৯৮-তে ফ্রান্সে আসে ট্রিকালার, সেবারই বহু রঙের ফুটবল মাঠে ছোটাছুটি করে। ২০০২-এ জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ বিশ্বকাপে ফেভারনোভা, ২০০৬ সালে জার্মানিতে টিমগিস্ট বার্লিন ফুটবল প্রতিটি ম্যাচের তারিখ, স্টেডিয়ামের নাম এবং দলের নাম ফুটবলে মুদ্রণ করা হয়।
২০১০-এ দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপে জাবুলানি নামের ৮ প্যানেলের ফুটবল ব্যবহার করা হয়, তবে এই বলের অ্যারোডিনামিক্স নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। ২০১৪ সালের বল ব্রাজুকা এবং শেষ দিনের জন্য ব্রাজুকা ফাইনাল রিও। এই বিশ্বকাপটি ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৮-এর রাশিয়ার বিশ্বকাপে টেলস্টার এইটিন এবং টেলস্টার মেখতা ব্যবহার করা হয়। ২০২২-এ কাতার বিশ্বকাপে ব্যবহৃত আল রিহলা ধারণ করছে ভিডিও অ্যাসিস্টেড রেফারিং-এর জন্য কার্যকর চিপযুক্ত ফুটবল। ফুটবল খেলোয়াড়কে বিশ্বখ্যাতি এনে দেয়, দারিদ্র্য ঘোচায় এমনকি মহাবিত্তবানও করে তোলে। ফুটবল ক্লাব একসময় কেবল সুস্বাস্থ্য রক্ষা এবং বিনোদনের ক্লাবও ছিল। এখন সবকিছু ছাপিয়ে ফুটবল ক্লাব বৃহৎ বাণিজ্যের ক্লাব। ফুটবল ক্লাবের কাজ বাণিজ্য সফল দল তৈরি করা, তার মানে যেভাবেই হোক উইনিং দল গঠন করা হচ্ছে ক্লাবের সাফল্য। তার পরও ইউরোপের বড় দলগুলোর দিকে তাকালে আতঙ্কিত হতে হয়, বেশ কটার ঋণের অঙ্ক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
ইউরোপা লিগসহ শ্রেষ্ঠ কটি লিগে মূলত বাণিজ্যই মুখ্য হয়ে উঠেছে। এই লিগগুলো হচ্ছে : স্প্যানিশ লা লিগা, প্রিমিয়ার লিগ, বুন্দেসলিগা ইতালিয়ান সেরি এ, পর্তুগিজ লিগা, ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান, ডাচ এরডিভাইস, আর্জেন্টাইন লিগ, ব্রাজিলিয়ান সেরি এ। আর ধনী দলগুলোর মধ্যে রয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, বায়ার্ন মিউনিখ, ম্যানচেস্টার সিটি, আর্সেনাল, প্যারিস-সেইন্ট-জার্মান, চেলসি, লিভারপুল, জুভেন্টাস, টটেনহাম হটস্পার, বরুসিয়া ডর্টমুন্ড, অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ, লিস্টার সিটি ও ইন্টারন্যাশিওনাল। ফুটবল খেলোয়াড়, কোচ থেকে শুরু ম্যানেজার পর্যন্ত সবই নিলামে উঠে চড়া দামে বেচাকেনা চলে। প্রতিটি ক্লাবকেন্দ্রিক হরেক রকম ব্যবসা, চকলেট থেকে শুরু করে পানীয় সবই বিক্রি হয়। যদি বিশ্বকাপের হিসাব ধরা হয়১৯৯০ সালে ইতালি ব্যয় করেছে ৪ বিলিয়ন ডলার, ৩২ বছর পর কাতার ২২০ বিলিয়ন ডলার, সবই বাণিজ্যিক পণ্য ও স্থাপনার পেছনে ব্যয় হচ্ছে। শুধু রেফারির হুইসেলের কথা ভাবি। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ব্যবহৃত কয়েকটি হুইসেল ব্র্যান্ড : হিপাত হুইসেল (২৩ ডলার) একমি টোরনাডো হুইসেল (৬ ডলার), ফক্সফর্টি রেফারি হুইসেল (৯ ডলার), ফক্স ফর্টি ক্ল্যাসিক হুইসেল (৭ ডলার), গিলবার্ট হুইসেল (১০ ডলার), স্কুইজ হুইসেল (১০ ডলার), নিউপ্যাল কোচ হুইসেল (১৩ ডলার), একমি থান্ডার ৫৮ (১৫.১০ ডলার)। দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশ এই হুইসেলও টার্গেট করতে পারেনি।
পৃথিবীতে ফুটবলপ্রেমিকের সংখ্যা ৪ বিলিয়ন। এর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ কোনো না কোনো দলের কোনো না কোনো খেলোয়াড়ের ফ্যান। প্রশ্ন হচ্ছেএই ফ্যানরা কি সমর্থক, না ভোক্তা? বাণিজ্যের সাফল্যনির্ভর করে ভোক্তার সাড়ার ওপর। ফ্যান যদি একটি দলের সাপোর্টার হয়ে থাকেন তার পছন্দ ভীষণ সীমিত। সমর্থন করা দলের জন্য সমর্থনকারী ভালোবাসার শেকলে বাঁধা এখান থেকে বেরিয়ে আসা তার জন্য কঠিন এবং যন্ত্রণারও। কিন্তু কনজিউমার বা ভোক্তার পছন্দ অবারিত। তিনি দর-কষাকষি করতে পারেন, পছন্দ না হলে এক বিক্রেতার কাছ থেকে অন্য বিক্রেতার কাছে যেতে পারেন। কিন্তু সমর্থক হয়ে গেলে ফুটবল ও ক্লাবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পণ্য ক্রয়ে ঠকতেই হয় বেশি। ব্যবসায়ী সে ক্ষেত্রে সমর্থকের আবেগকে এক্সপ্লয়েট করার সুযোগ নেন। সাধারণ ব্যবসায় ভোক্তাকে নির্ধারিত মানের সন্তুষ্টি প্রদান করতে না পারলে বিক্রেতার বাজারে টিকে থাকা কঠিন, কিন্তু সমর্থক হলে তিনি আর বিক্রেতার অস্তিত্বের জন্য হুমকি নন, বরং শোষিত হওয়ার জন্য অবচেতনে প্রস্তুত।
ফুটবলার কি ব্যবসায়ী হতে পারেন; উত্তর না এবং হ্যাঁ, উভয়ই। ‘না’-এর ভাগই বেশি। পেলে লিখেছেন আমি ভালো ব্যবসায়ী নই, আমি হৃদয়ের কথা শুনি। জর্জ ব্রেস্ট টাকার সবচেয়ে দুর্বল ব্যবস্থাপকদের একজন। তিনি বলেছেন, আমার টাকার ৯০ ভাগ নারী, গাড়ি ও অ্যালকোহলের জন্য ব্যয় করেছি, ১০ ভাগ মাত্র অপচয়। আবার ব্যবসাসফল ফুটবলারদের মধ্যে রয়েছেন : জেরার্ড পিকে, ডেভিড বেকহাম, ম্যাথু ফ্ল্যামিনি, অলিভার কান প্রমুখ। ফরাসি ফুটবলার ও ফুটবল ব্যবস্থাপক মিশেল প্ল্যাতিনির কথা স্মরণ করতে হয় :
It’s a game before a product
a sport before a market
a show before a business
ফুটবল পণ্যের আগে একটি খেলা, বাজারের আগে একটি ক্রীড়া, ব্যবসায়ের আগে একটি প্রদর্শনী।
ব্যবসায়ের নব্য ব্র্যান্ড
ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরেও মেসি-শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। নিজের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি পর্যন্ত চার কিলোমিটার দীর্ঘ একটি দক্ষিণ কোরীয় পতাকা বানিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ায় অনেক বছরের কর্মজীবন কাটিয়ে দেশে ফেরা এক যুবক। তিনি মনেপ্রাণে কামনা করেন যে দেশ তার অন্নের সংস্থান করে একটি বিয়ে করার সামর্থ্য সৃষ্টি করেছে, সেই দক্ষিণ কোরিয়া জিতুক। পতাকার ব্যবসাটি রমরমা। এর মধ্যে ভারতের বিরুদ্ধে ক্রিকেটে বাংলাদেশ জিতলেও যে উচ্চস্বর আনন্দ ধনী ওঠার কথা তা হয়নিউল্লেখযোগ্য একটি অংশের নজর কেবল ফুটবলেরই ওপর। বাংলাদেশের পতাকা বিক্রি বাড়তে পারত, আশানুরূপ বাড়েনি। ফিফা ব্যাজ লাগানো কয়েক লাখ জ্যাকেট সরবরাহ করেছে বাংলাদেশের একটি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান। পণ্য বিক্রি বাড়াতে এ সময় জিলেট রেজর নিয়ে ক্যামেরায় দাঁড়িয়েছেন ফুটবলার মেসি।
পতাকা আর জার্সি বিক্রিতে এগিয়ে কোন দেশ? ব্রাজিল না আর্জেন্টিনা? টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ভারতে আগ্রহের শীর্ষে আছে আর্জেন্টিনা, তারপরই ব্রাজিল। বিভিন্ন দেশের প্রতীক ও রংশোভিত আন্ডারওয়্যারও বিক্রি হচ্ছে। পণ্য বিপণনে বিজ্ঞাপনের ভূমিকা অসীম। বিশ্বকাপ পণ্য হিসেবে বিগত কয়েক দশকে প্রচারিত বিজ্ঞাপনে সেরা কটির মধ্যে রয়েছে : ম্যাকডোনাল্ডসের খাবার, ইংল্যান্ডের মার্স চকলেট, পেপসি কার্লসবার্গ বিয়ার, নাইকো জুতো, অ্যাডিডাস জুতো ও ফুটবল।
লেখক: সরকারের সাবেক কর্মকর্তা ও কলামিস্ট
এক। সাম্প্রতিককালে আমাদের দেশ ‘সামষ্টিক সহিংসতা’ নামক যে ভয়াবহ ব্যাধিতে আক্রান্ত, তার শিকার শিশুরা। ছেয়ে যাচ্ছে সব আজ শিশুহত্যার রোমহর্ষক খবরে। মানুষের বিবেককে কাঁপিয়ে দেওয়া একেকটি হত্যাকাণ্ডের পর মানুষ সজাগ হয়ে উঠলেও ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকানো যাচ্ছে না। বাংলাদেশে শিশুহত্যার চালচিত্র ভীষণ আতঙ্কজনক। অবৈধ সম্পর্ক দেখে ফেলায় মায়ের হাতে শিশু খুন, সম্পত্তির বিরোধে শত্রুকে ফাঁসাতে নিজের সন্তান হত্যা, সাবেক স্ত্রী বা স্বামীর সঙ্গে বিরোধের জেরে সন্তান হত্যা ইত্যাকার নানা রকম অস্বাভাবিক শিশুহত্যার খবরও আমাদের পাঠ করতে হয়েছে। অন্যান্য অসংখ্য কারণে হত্যা তো আছেই।
দুই। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৪৩৯টি শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১০৪ জনের বয়স ৬ বছরের নিচে, ৭৯ জনের বয়স ৭ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। ৯৭৫ জন শিশুর ওপর নানা ধরনের সহিংসতা হয়েছে। এগুলো শুধু পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের হিসাব। বাস্তবে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি। শিশু অধিকার সনদে সই করার পর কেটে গেছে ৩৩ বছর। আমরা যখন ঝলমলে আয়োজনে শিশু অধিকার সপ্তাহ বা নারীর প্রতি সহিংতা প্রতিরোধ পক্ষ বা অন্য কোনো দিবস পালন করছি, তখনই হয়তো কোনো শিশুকে কেটে টুকরো করা হচ্ছে বা কোনো ছোট্ট শিশুকে ধর্ষণ করা হচ্ছে এই দেশে।
তিন। এক মাস আগে চট্টগ্রাম শহরের জামালখান এলাকার একটি ঘটনা ছিল মুষড়ে পড়ার মতো। তখন ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বইছিল দমকা হাওয়া। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে মাইকিং করতে নেমেছিলেন এক তরুণী সালেহা আক্তার রুবি। কাতর কণ্ঠে তার আর্তি ভেসে আসছিল মাইক দিয়ে ‘আমার বোন মারজানা হক বর্ষা হারিয়ে গেছে। কেউ তার খোঁজ পেলে আমাদের একটু দয়া করে জানান।’ এক বিকেলে বর্ষা মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছিল দোকানে যাওয়ার জন্য। পরে বাসায় না আসায় খোঁজ নিয়ে জানা যায় দোকানে যায়নি সে। সব জায়গায় খুঁজেও পাওয়া যায়নি বর্ষাকে। কয়েক দিনেও বর্ষাকে খুঁজে না পেয়ে পুলিশের অসহযোগিতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। চিৎকার করে বলতে থাকেন : চারদিকে এতগুলো সিসিটিভি বসিয়ে কী লাভ? অবশেষে কয়েক দিন পর নালায় বস্তাবন্দি অবস্থায় পাওয়া গেল বর্ষার লাশ। বস্তায় টিসিবির সিল দেখে আশপাশের বিভিন্ন দোকান ও হোটেল-রেস্টুরেন্টের গোডাউন অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে আসল ঘটনা। ঘাতক এক দোকান কর্মচারী লক্ষ্মণ দাশ, বর্ষাদের প্রতিবেশী। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া রুবির বক্তব্য ছিল এমন ‘আমার বোন নিখোঁজের পর যদি পুলিশ তৎপর হতো, তাকে হত্যা করা যেত না। তাকে বাঁচানো যেত।’
চার। সংবাদমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সবার মনোযোগ এখন ফুটবলকে ঘিরে। সেখানে কত তর্ক-বিতর্ক, কত আবেগের বহিঃপ্রকাশ। এর মধ্যে গত এক সপ্তাহ ধরে একটি ছবি বারবার হাজির হচ্ছিল। একটি নিখোঁজ সংবাদের পোস্টার। অনেকে ফেইসবুকে শেয়ার দিয়েছেন। বাবা-পরিবার হন্য হয়ে খুঁজছে পাঁচ বছর বয়সী শিশু আয়াতকে। চট্টগ্রাম শহরের ইপিজেড থানার বন্দরটিলা এলাকার ঘটনা এটি। দশদিন পর পাওয়া গেল আয়াতের খোঁজ। তার লাশ কেটে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে ঘাতক। আবির আলী নামে সেই ঘাতককে গ্রেপ্তারও করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপরই বেরিয়ে আসে নিখোঁজ আয়াতের এ করুণ পরিণতি।
পাঁচ। আজ হয়তো বিশ্বকাপ ফুটবল, কাল অন্য কিছু নিয়ে মেতে থাকি আমরা। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যস্ত রাখা হয় বিরোধী দল ঠেকাতে। ফলে যা ঘটার সেটিই ঘটে যায়, যা হওয়ার সেটিই হয়ে যায়! আমাদের শিশুদের জন্য একটি সাজানো বাগানের আকাক্সক্ষা থেকে যায় স্বপ্নে, বাস্তবে তা রূপ পায় না। বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে তোলা তো দূরের কথা, পৃথিবীতে এসেই আমাদের শিশুরা খুন হচ্ছে, ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। গণমাধ্যমে নিষ্ঠুরতা দেখতে দেখতে তাতে অভ্যস্ত হয়ে যাই আমাদের মনে কোনো রেখাপাত করে না। সামাজিক মান-মর্যাদার ভেদাভেদের মতো কোনো কোনো ঘটনার দিকে আমরা ফিরেও তাকাই না, আবার কোনো ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশে দেরি করি না। রাষ্ট্র, সমাজ ও রাজনীতির নানা ধূম্রজালে পথ হারাতে হারাতে আমরা এমন পর্যায়ে এসে ঠেকেছি যে, আমাদের শিশুদের এমন পরিণতিই মেনে নিচ্ছি। এমনকি শিশুরা নিখোঁজের পর তাদের লাশ পেয়ে আমাদের ‘সন্তুষ্ট’ থাকতে হচ্ছে।
ছয়। কেউ কেউ ঘটনাগুলোতে ‘বাজার অর্থনীতি’ দর্শনকে দায়ী করে। কিন্তু তার চেয়ে বেশি ‘সামাজিক অবক্ষয়’ হিসেবেই দেখা উচিত। গত সেপ্টেম্বর মাসে ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে নোয়াখালীর স্কুলছাত্রী তাসনিয়া হোসেন অদিতাকে হত্যার পরিকল্পনা ও হত্যা করা হয়। আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে এসব কথা জানিয়েছেন সাবেক কোচিং শিক্ষক আবদুর রহিম রনি। (সূত্র : ঢাকা মেইল) ভারতীয় টিভি সিরিজ ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে দেশে গত দুই বছরে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রামে ১৯ বছর বয়সী তরুণ আবির আলী ‘ক্রাইম পেট্রোল’ আর ‘সিআইডি’ দেখে যে লোমহর্ষক অপরাধের কৌশল শিখেছে, সেটারই প্রয়োগ করেছে ওই ছোট্ট শিশু আয়াতের ওপর। এসব টিভি সিরিয়ালের মূলে রয়েছে বাজার অর্থনীতি। একই সঙ্গে সমাজের বৈষম্য-সহিষ্ণুতা প্রায় সর্বত্র উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। আমাদের আকাক্সক্ষাগুলো পরিবর্তিত হচ্ছে। ‘রুলিং অর্থনৈতিক মডেল’ এ ধরনের প্রবণতাকে ভর করে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছে। সমাজের মধ্যে প্রচলিত উদাহরণগুলো ভেঙে পড়েছে। নিয়ম ভেঙে, নিয়মকে পাশ কাটিয়ে ও তোয়াক্কা না করে সমৃদ্ধি অর্জনের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। প্রকৃত ও পারিবারিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব হারিয়েছে। বিপরীতে চলছে সনদধারী শিক্ষাব্যবস্থা। যোগ হয়েছে ভোগবাদী দৃষ্টিভঙ্গি। আমাদের সমাজের মূল্যবোধগুলো ক্ষয়িষ্ণু হয়ে গেছে। আমরা ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি’র কথা বলে থাকি কিন্তু বিচারিক আদালতে দ্রুত বিচারে রাকিব, রাজন হত্যার রায় হওয়ার পর একই এলাকায় আমরা শিশুহত্যা হতেও দেখেছি। অনেকেরই ধারণা, এ ধরনের অপরাধে কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় না। আসলে সামাজিক দিকগুলোয় নজর দেওয়ার সময় পার হয়ে গেছে কি না, তাও ভেবে দেখা দরকার।
সাত। দেশ যতই আধুনিক হোক বা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করুক বা উন্নত বিশ্বের কাতারে নাম লেখানোর স্বপ্ন দেখুক, তাতে ভুক্তভোগী শিশুদের বাবা-মা ও পরিবার এবং এমন আরও অসংখ্য পরিবারের কিছুই আসবে-যাবে না। সভ্যতার কাছে এর থেকে বড় লজ্জা আর কী হতে পারে যেকোনো মূল্যে শিশুদের নির্যাতন ও হত্যা রুখতে হবে। এ ধরনের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখানোর পাশাপাশি আরও কঠোর হতে হবে। আমরা শিশু নির্যাতন, খুন, নারী ধর্ষণের আর একটি ঘটনাও দেখতে চাই না। অপরাধীদের বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ এগিয়ে আসুক; পাড়া-মহল্লা, গ্রাম-গঞ্জে শিশু ও নারীদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন রোধে তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলুক এটাই প্রত্যাশা। প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। অন্যথায় নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না।
লেখক : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, ঢাকা মহানগর
“বইটা কি তর নিজের? নিজের হইলে বাবা দাগা!”
আমাদের এক সহপ্রশিক্ষণার্থীর দিকে চোখ পড়তেই লেকচার থামিয়ে বলে উঠলেন ডক্টর রহমান। সে ১৯৯৮ সালের অক্টোবরের শেষ দিকের কথা। আমি তখন সিনিয়র সহকারী জজ। সাবজজ হওয়ার কথা (কথাটা এ অধমের নয়, আইনের) জজিয়তির সাত বছর পূর্ণ হলে। সাড়ে দশ পেরিয়ে তখন আমাদের পৌনে এগারো বছর কেটে যায়, সাবজজে পদোন্নতির খবরই নেই! সাবজজ পদ খালি হওয়ার প্রার্থনা করে চলেছি! (পদ খালি না হলে, একটা-দুটো নয়, গুচ্ছের পদ খালি না হলে পদোন্নতির প্যানেল ধরার স্বভাবই নেই আইন মন্ত্রণালয়ের! প্যানেল ধরেছিল আরও বছর দুয়েক পরে!) এমন সময় ডাক এলো প্রশিক্ষণে।
‘বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মাত্র আগের বছর ১৯৯৭-তে, যদিও তার আইনটা হয়েছে আরও বছর দুই আগে ১৯৯৫-তে। (বিলম্ব পিছু ছাড়ে না বিচারের কোনো কিছুতে!) প্রতিষ্ঠার বছর খানেক পর এই ১৯৯৮-তেই প্রথম শুরু বিচারকদের প্রশিক্ষণ। ২১ দিনের একেকটা কোর্স। সিনিয়র সহকারী জজ আমাদেরটা ছিল নবম কোর্স। ডাক পেয়ে সাতক্ষীরা থেকে (আমার পোস্টিং তখন সেখানে) ছুটে আসি ঢাকায়। দুদিনের মাইগ্রেন ব্যথা মাথায় নিয়েও যেমন সৌজন্যের উত্তরে দাঁত চেপে বলি ‘ভালো আছি’, এই ‘ছুটে আসি’ হলো তেমনি সকালের বাস ধরে ধুলো-গরমে কুঁথে কুঁথে (সে-লাইনে তখনো এসি বাস চালু হয়নি, হলেও লাভ হতো না স্বল্প-বেতনভোগী এ বিচারীর) সারা দিন জার্নির বিস্তর প্যাচাল চেপে!
ইনস্টিটিউটের ডরমিটরিটা তখন ছিল কাদাপ্যাঁক ওঠা, রিকশার জ্যামে ঠাসা শাজাহানপুর আমতলা মসজিদ গলির পুরাতন এক তিনতলা বাড়িতে। (আহা! কত কষ্টই না করতে হয়েছে কর্র্তৃপক্ষের, এমন একটা গলির ভেতর জুতসই এ বাড়িখানা খুঁজে পেতে! প্রথম দিন সন্ধ্যায় ধুলো-ঘামে মাখা শরীর নিয়ে পৌঁছেই দেখি পানি নেই বাথরুমে!) প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আমাদের একটু কষ্ট করে হেঁটে যেতে-আসতে হতো শুধু হরতালের দিনগুলোতে! জি, হ্যাঁ! ১৯৯৬-তে দু-দুবার (১৫ ফেব্রুয়ারি হরতালের দিনে আর ১২ জুনে তত্ত্বাবধায়কের অধীনে) দু-দুটো (ষষ্ঠ ও সপ্তম) সংসদ নির্বাচনের (দুটোই হয়েছিল কিন্তু রাতের আঁধার কেটে গেলে দিনের ফকফকা আলোতে) বছর না ঘুরতেই ঘুরে আসে হরতাল! সরকার হটাতে! একদা (১৯১৯ সালে) পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ খেদাতে মহাত্মা গান্ধী (মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধী) অহিংস আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বলে চালু করেন যে হরতাল (তার গুজরাটি ভাষায় যা ছিল হাড়তাল, ক্রমেই তা সহিংস ও অশান্তিপূর্ণ হয়ে উঠে চরম অশান্তিতে ভোগায় স্বয়ং মহাত্মাকেই!) সেই হয়েছে আমাদের স্বাধীন দেশের রাজনীতির চিরকেলে তাল! (শাসন ক্ষমতা পেলেই ঘাড়ে চাপে ব্রিটিশ-ভূত, ক্ষমতা হারালেই ধরে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনী-ভূতে! আছি যেন ব্রিটিশেরই কালে! হাড়ে বাতাস লাগাবে কি আর পাবলিকে, পাবলিকেরই হাড় দিয়ে ডুগডুগি বাজায় পাবলিকেরই চামে! ‘জয় বাপুজি তুমহারা হাড়তাল!’) হরতালবিহীন দিনগুলোতে অবশ্য প্রশিক্ষণার্থীদের আনা নেওয়ার ‘ঠাসা ব্যবস্থা’ ছিল ইনস্টিটিউটের ভাড়ায় বাঁধা মাইক্রেবাসে।
প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ইনস্টিটিউট অফিস ছিল পুরাতন (পুরাতনই কপাল বিচারের!) হাইকোর্ট ভবনে (এখন যেটা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল) আইন কমিশনের সঙ্গে এজমালিতে। (আরেক শরিকান জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের জন্ম হয়নি তখনো, হয়েছে ২০০৭ সালে।) আমাদের প্রশিক্ষণ-ক্লাস হতো দোতলায়। প্রশিক্ষণ দিতে ‘রিসোর্স পার্সনস’ আসতেন বিচারপতিরাই বেশিরভাগ, কর্মরত ও কর্মকাল সমাপ্ত (অবসরপ্রাপ্ত বা সাবেক যেহেতু বলতে নেই তাঁহাদের!) মিলিয়ে। আর আসতেন সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি রেজিস্ট্রার থেকে রেজিস্ট্রার পর্যন্ত মহোদয়রা, (রেজিস্ট্রার জেনারেল পদটা হয়নি তখনো, হয়েছে ১৫ জুন ২০১৫ থেকে) আইন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত মহোদয়রা (সিনিয়র সচিব পদটা হয়েছে ২০১২-তে, তবে বিচার বিভাগে আসেনি এখনো, সিনিয়র সহকারী সচিব আছেন যথেষ্ট!) এবং সবার ওপরে খোদ মন্ত্রী মহোদয় নিজে। ঘরের লোকের বাইরে আসতেন দু-একজন এক্সপার্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দু-একজন আইন-শিক্ষক, সুপ্রিম কোর্টের নামকরা দু-একজন অ্যাডভোকেটও। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট, ডক্টর রহমান ছিলেন তাদেরই একজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে পার্টটাইম শিক্ষকতাও করেছেন একসময়ে। (করতেন না, বিশ্ববিদ্যালয়ই বাইরে থেকে এরকম প্র্যাকটিশনারদের ধরে এনে করাত। সে-চল নাকি প্রায় উঠে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আপন যোগীদের ভিড়ে!) পড়াতেন এভিডেন্স অ্যাক্ট (সাক্ষ্য আইন)। এভিডেন্স অ্যাক্টের গুরুদের গুরু বলে খ্যাত তিনি ঢাকার আইন জগতে। সেই এখতিয়ারে তিনি নির্বিচারে ‘তুই’ সম্বোধন করেন তার চেয়ে কম বয়সী সবাইকে।
চিনতাম না তাকে, (ঢাকার মানুষ নই, পড়াশোনা চাকরি কোনোটাই করিনি ঢাকাতে।) জেনেছি সব ওই সেদিনের পরে। আমাদের প্রশিক্ষণেও ডক্টর রহমানের বিষয় ছিল যথারীতি এভিডেন্স অ্যাক্ট। বসেও নয় দাঁড়িয়েও নয়, ক্লাস নিচ্ছিলেন তিনি আমাদের বেঞ্চিগুলোর সামনে দিয়ে হালকা দুটো-একটা থাবড়া মেরে মেরে (কারও গায়ে নয়, বেঞ্চিগুলোর তক্তাতে) হেঁটে হেঁটে। তার এই হাঁটাহাঁটির সুবিধে করতেই বোধ হয় বেঞ্চিগুলো সাজানো হয়েছিল অর্ধবৃত্তাকারে! ঠাণ্ডা-শীতল কণ্ঠে নিরাসক্ত স্বরে ইংরেজি ধারাগুলো মুখস্থ আওড়াতে আওড়াতে নিজ এলাকার আঞ্চলিক টানের বাংলা চালিয়ে তিনি ঢুকে চলেছেন এভিডেন্স অ্যাক্টের গভীর প্যাঁচে! হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে পৌঁছেছেন অর্ধবৃত্তের এক পাশের শেষ প্রান্তে। লেকচার মুখে ফিরতি হাঁটা ধরতে পেছন ঘুরেই চোখ পড়ল তার অর্ধবৃত্তের অপর পাশের এক বেঞ্চিতে। এক প্রশিক্ষণার্থী বুঁদ হয়ে বইয়ের পাতা খুলে ধারার তলে তলে সমানে দাগ টেনে চলেছেন লেকচারের তালে তালে! নিজের বই নিয়ে কেউ আসে না প্রশিক্ষণে, দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় জানা আছে তার ভালো করে। নির্ঘাত তুলেছে ব্যাটা ইনস্টিটিউটের লাইব্রেরি থেকে! না হলে কি আর মায়া-দয়া ভুলে মনের সুখে এমন করে দাগাতে পারে! থাকতে পারলেন না আর তাই দেখে। লেকচারের সঙ্গেই মিকচার করে সেই ঠাণ্ডা-শীতল কণ্ঠে নিরাসক্ত স্বরে আঞ্চলিক টানে বলে উঠলেন : ‘বইটা কি তর নিজের? নিজের হইলে বাবা দাগা!’ সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ দাগ টানা। মিলে গেল ‘কংক্লুসিভ প্রুফ’ (চূড়ান্ত প্রমাণ), বইটা কার! প্রমাণের আর দরকার নেই, ইনস্টিটিউটের লাইব্রেরি থেকেই তোলা।
ফ্যাক্ট (ঘটনা), রেলিভ্যান্ট ফ্যাক্ট (প্রাসঙ্গিক ঘটনা), ফ্যাক্ট ইন ইস্যু (বিবেচ্য ঘটনা)! ওরে বাবা! এক ফ্যাক্টের কত ফেরকা! ‘মে প্রিজ্যুম’ (অনুমান করতে পারেন), ‘শ্যাল প্রিজ্যুম (অনুমান করতেই হবে)! এক প্রিজ্যুমের এত কিসিম! ‘প্রুভড’ (প্রমাণিত), ‘ডিসপ্রুভড’ (মিথ্যা প্রমাণিত), ‘নট প্রুভড’ (অপ্রমাণিত)! এক প্রুভের কত রূপ! কী দিয়ে যে কী প্রমাণ হয় আর প্রমাণের দায় কার ঘাড়ে যে কখন বর্তায় বোঝা দেখি মুশকিল! সাক্ষ্য আইন বড়ই জটিল! মাথায় ঢোকেনি কিচ্ছু। ঢুকে আছে শুধু ওই দৃশ্য : ইনস্টিটিউটের বইয়ের পাতায় মনের সুখে দাগ টানা, আর ঠাণ্ডা-শীতল কণ্ঠের নিরাসক্ত স্বরে আঞ্চলিক টানের সেই আওয়াজ : ‘বইটা কি তর নিজের? নিজের হইলে বাবা দাগা!’
ভেসে ওঠে এখনো তা রিমেক ভার্সনে মাঝে মাঝে। সরকারি ‘আহা আহা’ সব প্রকল্প-কেনাকাটার বহর-বাহার দেখলে মনে ভাসে যেন, সরকারি টাকার বস্তা খুলে আহা কী আনন্দে ঢেলে চলেছে দরিয়ায়! (চড়া কাটতে আর বন্যার ভাঙন ঠেকাতে বস্তা বস্তা বালি তোলা-ফেলার নৌ-পরিবহন আর পানি উন্নয়ন কর্মটা তো দেখতেই তাই! টাকা ছাড়া বস্তা কি মাগনাই! সেখান থেকেই ‘কোম্পানি কা মাল দরিয়া মে ডাল’ কথাটা উঠেছিল কিনা কাজ নেই আর খোঁচাখুঁচি করে, ও ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলই উঠে গেছে সেই ১৮৫৮ সালে। কথাটাই আমলের!) আর, কানে বাজে যেন সেই ঠাণ্ডা-শীতল কণ্ঠে নিরাসক্ত স্বরের আঞ্চলিক টানে, ‘টাকাগুলান কি তর নিজের! নিজের হইলে বাবা চালা!’ কিন্তু, বন্ধ হয় না ঢালা। আসলে তো বলেই না কেউ সেভাবে। তবে, বলতেন নাকি দুদকের এক সাবেক চেয়ারম্যান তার নিজস্ব স্টাইলে। তার নিজের মুখ থেকেই শোনা। (পরবর্তী কিস্তিতে সমাপ্য)
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা জজ ও দুদকের সাবেক মহাপরিচালক
বিপুল গতিতে দেশ যখন উন্নয়নের মহাসড়কে উঠে পড়ার দাবি করা হয়, ঠিক তখনই এসব উন্নয়ন পরিকল্পনা, প্রকল্প এবং এসবের জন্য ব্যয় করা অর্থের নিদারুণ অপচয়ের খবরও সামনে আসে। হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে সামান্য একটি সংযোগ সড়ক বা ছোট কোনো নদী-নালা-খালের ওপর সেতুর অভাবে একটি জনপদ বিচ্ছিন্ন থেকে যাচ্ছে। ফলে উন্নয়নের সুফলবঞ্চিত জনপদের মানুষ দিনের পর দিন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। অবকাঠামোগত এই সংকটে কেবল যোগাযোগই নয় তারা অর্থনৈতিকভাবেও পিছিয়ে পড়ছেন। চিকিৎসা ও শিক্ষার মতো অধিকার থেকেও বঞ্চিত থাকছেন। আবার দেখা গেছে কয়েকশ কোটি টাকার প্রকল্প শেষ হলেও অবকাঠামোটি আসবাবপত্রসহ প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না, ফলে তা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। কিন্তু কাদের উদাসীনতা ও গাফিলতিতে জনগণের ভোগান্তি ও অর্থের এমন অপচয় ঘটে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেটা জানা যায় না। এক যাত্রায় দুই ফলের মতো একদিকে অবকাঠামোর অভাবে বিচ্ছিন্ন ও উন্নয়ন সুবিধাবঞ্চিত হয়ে পড়া, অন্যদিকে উন্নয়নের নামে বিপুল ব্যয়ে নির্মিত অবকাঠামোর অব্যবহৃত থাকা।
বুধবার দেশ রূপান্তরে ‘ভেসে ভেসে স্কুলযাত্রা’ ও ‘অকাজের ২৫০ কোটির ভবন’ শীর্ষক প্রতিবেদন দুটির কথাই ধরা যাক। প্রথম ঘটনাটি পটুয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের দিয়ারচর ও উত্তর চরমোন্তাজ গ্রামের। দুই গ্রামের মধ্যে প্রায় আড়াইশ ফুট প্রশস্ত এক খাল। দিয়ারচরের শিক্ষার্থীদের ওই খাল পার হয়েই প্রতিদিন যেতে হয় উত্তর চরমোন্তাজের মাঝেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। খাল পার হওয়ার জন্য কোনো সেতু নেই। নেই খেয়া পারাপারের ব্যবস্থাও। অগত্যা শীত বা বর্ষায় বইখাতার সঙ্গে রান্নার হাঁড়ির মধ্যে বইপুস্তক আর স্কুলের পোশাক নিয়ে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যায়। ভেজা জামাকাপড় রোদে শুকাতে দিয়ে স্কুল পোশাক পরে ছোটে ক্লাসে। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, স্থানীয়দের উদ্যোগে কয়েকবার বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হলেও নোনা জলে সেটি বেশিদিন টেকেনি। ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলে সাঁকো থাকাকালে ৩০০-৪০০ শিক্ষার্থী ছিল। এরমধ্যে প্রায় দুইশ শিক্ষার্থী ছিল ওই দুই চরের। সাঁকো না থাকায় এখন দুই চর থেকে ৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী আসে। গ্রামীণ জনপদের জনগুরুত্বের বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে হাটবাজার, সামাজিক, অর্থনৈতিক কিংবা সেবামূলক প্রতিষ্ঠানসহ স্কুল, কলেজ ও হাসপাতালে যাওয়ার রাস্তায় সেতু নির্মাণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে তার কোনো প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি না। এক্ষেত্রে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেউই দায় এড়াতে পারেন না। আমার আশা করি দ্রুত দুই গ্রামের মধ্যে সেতুর ব্যবস্থা হবে, শিক্ষার্থীরা ভেসে নয়, হেঁটে স্কুলে যাবে।
অন্যদিকে দ্বিতীয় প্রতিবেদনটিতে দেখা যাচ্ছে সরকারি অর্থের বিপুল অপচয়। জানা যায়, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৭১টি নতুন ভবনের জন্য প্রায় ২৫০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ভবন নির্মাণ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেঞ্চ-টেবিলসহ প্রয়োজনীয় ফার্নিচার দেওয়ার কথা। এরপর ভবনের ব্যবহার শুরু হবে। কিন্তু ভবন নির্মাণ ছয় মাস আগে শেষ হলেও আসবাবপত্র সরবরাহ করা হয়নি। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ৭১টি ভবনে সর্বোচ্চ ২৫ কোটি টাকার আসবাবপত্রের প্রয়োজন হতে পারে। দেখা যাচ্ছে, স্কুলভবন তৈরি হয়ে গেলেও বেঞ্চ, চেয়ার, টেবিলের অভাবে শিক্ষার্থীরা সেখানে ক্লাস করতে পারছে না। ‘সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো উন্নয়ন প্রকল্প’-এর পরিচালক অধ্যাপক মো. নাসির উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রকল্পটি অর্থ মন্ত্রণালয় কর্র্তৃক ‘বি’ ক্যাটাগরির ঘোষিত হওয়ায় খাতওয়ারি অর্থছাড় স্থগিত আছে। চলতি অর্থবছরেও এসব ভবনের আসবাবের জন্য বরাদ্দ নেই। ফলে এসব ভবন রক্ষণাবেক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।’ অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, অর্থনৈতিক মন্দার জন্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর শ্রেণিভাগ করার বিষয়টি বাদ দেওয়া না গেলেও, মূল প্রকল্প ‘এ’ ক্যাটাগরির হলে সেগুলোর আসবাবপত্রসহ অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জাকে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে রাখলে সেই উন্নয়ন তো কোনো কাজে আসবে না। বরং এ ধরনের পরিকল্পনা ঘাটতি সরকারি টাকার অপচয়ের কারণ হবে জনগণ কোনো সুফল পাবে না। কাদের পরিকল্পনা ঘাটতি, উদাসীনতা ও গাফিলতির কারণে সরকারের অর্থের এই অপচয় হচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করা দরকার। এ ধরনের কাজ আগামীতে যাতে না হয়, সে বিষয়ে সবাইকে সাবধান হওয়া উচিত। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আশা করব সরকার এসব বিষয়ে দ্রুত নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এবং শিক্ষার্থীরা সেতু পার হয়ে স্কুলে গিয়ে নতুন ভবনে বসে ক্লাস করবে।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনকে বলা হয় ‘লাশের সাক্ষ্য’। সেই প্রতিবেদনে প্রায়ই ভুল থাকছে। হত্যা হয়ে যাচ্ছে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা। দেশের মর্গগুলোর আধুনিকায়ন না হওয়া, চিকিৎসকদের অদক্ষতা এবং মর্গে আসার আগেই মরদেহের আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়া ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ভুলের অন্যতম কারণ। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য এরকমই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের বেশিরভাগ মর্গে মরদেহের ভিসেরা বা বিভিন্ন নমুনা সংরক্ষণের আধুনিক সুবিধাসংবলিত জায়গা নেই। এসব ধারণের জন্য কনটেইনার, প্রিজারভেটিভ বা রাসায়নিকের সরবরাহও প্রয়োজনের তুলনায় কম। অনেক সময় প্রিজারভেটিভ না থাকলে লবণ পানির সাহায্যে মর্গে লাশ সংরক্ষণ করা হয় এবং হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল ল্যাবে যেসব স্যাম্পল বা নমুনা পাঠানো হয়, সেসব ভালোমানের ফরমালিন দিয়ে সংরক্ষিত করে পাঠানো হয় না। ফলে আলামত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও ভুলের আশঙ্কা বাড়ে। কখনো চিকিৎসক প্রভাবিত হয়েও ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেন।
ময়নাতদন্তসংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলেন, আমাদের দেশে আধুনিক মর্গ ব্যবস্থাপনা নেই। তাছাড়া লাশ মর্গে আসার আগেই অনেক আলামত নষ্ট হয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে প্রথমে থানায় নেয়; তারপর থানা থেকে নেয় মেডিকেল কলেজে। এরপর অ্যাম্বুলেন্স, লেগুনা বা ট্রাকে বা ভ্যানে করে আনে মর্গে। এত আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে। এসব কারণে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসে।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ময়নাতদন্তের ভুল প্রতিবেদনের প্রধান কারণ আধুনিক যন্ত্রপাতি ও আধুনিক মর্গের অভাব। দ্বিতীয় কারণ, লাশ যখন আমাদের কাছে আসে তখন আমরা সিন অব দ্য ক্রাইম (অপরাধের দৃশ্য) ভিজিট করি না। ফলে অনেক ইনফরমেশন ধরা পড়ে না। উন্নতবিশ্বে কোথাও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে পুলিশ ওই স্থানকে হলুদ টেপ দিয়ে ঘিরে রাখে এবং সবার আগে ভিজিট করে একজন ফরেনসিক স্পেশালিস্ট। ওখান থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগৃহীত হয়ে মর্গে চলে আসে। মর্গে লাশ পাঠায় পুলিশ, পরে পোস্টমর্টেম করে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে মরদেহের ফাইন্ডিংস মিলিয়ে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। সেটাই সঠিক ও নির্ভরযোগ্য হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এমন হয় না।’
ময়নাতদন্ত কী : খুন বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর ভুক্তভোগীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার জন্য একজন ফরেনসিক চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞ মরদেহের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ বা অঙ্গবিশেষের গভীর নিরীক্ষণ করেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করে মন্তব্যসহ যে প্রতিবেদন দেওয়া হয় তাই পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি মনে করেন, ময়নাতদন্ত হওয়া জরুরি, তখন মৃতদেহ সিভিল সার্জন বা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়।
সম্প্রতি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা ও রেল দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর কথা উল্লেখ থাকা ২২টি মামলা তদন্ত করে পিবিআই জানায়, এগুলো ছিল পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। ওই মামলাগুলোতে পুলিশের অন্যান্য সংস্থা তদন্ত করে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল।
পিবিআইপ্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হত্যা বা অপমৃত্যুর মামলার তদন্তে ময়নাতদন্তের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভালো ময়নাতদন্ত মামলার রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে ময়নাতদন্ত সঠিক না হলে তদন্ত ভিন্ন পথে মোড় নেয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তদন্তকারী কর্মকর্তাকে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সাহায্য করে, ঘটনার রহস্য উদঘাটনে দারুণভাবে সহায়তা করে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিটফোর্ড বা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে ২০২১ সালে ৭৪০টি, ২০২২ সালে ৬০০টি ও চলতি বছর ১৫ মে পর্যন্ত ১৪৫টি মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। গত ১৫ মে দুপুরে সেখানকার মর্গে গিয়ে দেখা গেছে জরাজীর্ণ দশা। দুটি মরদেহ পড়ে আছে পোস্টমর্টেমের অপেক্ষায়। মর্গ সহকারী নাম প্রকাশ না করে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘মর্গের লাশ রাখার একমাত্র ফ্রিজটি তিন বছর ধরে নষ্ট। ময়নাতদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় মালামালের সংকট সবসময়ই থাকে। নেই আধুনিক কোনো সুবিধা। তিনজন মর্গ সহকারীই বছরের পর বছর চুক্তিভিত্তিতে কাজ করছেন।’
জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য মর্গের দশা একই।
ময়নাতদন্ত সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে পিবিআইয়ের এক প্রতিবেদনে দেশের মর্গসংশ্লিষ্টদের ফরেনসিক বিষয়ে আধুনিক ও বিশ্বমানের প্রশিক্ষণের অভাব, বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক চিকিৎসকের তুলনায় লাশের সংখ্যা বেশি, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও হিমাগারসহ মানসম্মত অবকাঠামো না থাকাকে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এ ছাড়া মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমের স্বল্পতা, জটিল ও চাঞ্চল্যকর মরদেহের ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্ত না করা, আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা থাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ময়নাতদন্ত কাজে অংশ নিতে চান না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ময়নাতদন্ত বিষয়ে পিবিআইয়ের প্রতিবেদন ও দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলাদেশের মর্গগুলোতে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও আলোর ব্যবস্থাসহ আধুনিক অবকাঠামো ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ঘাটতি রয়েছে। অনেক জেলায় মর্গে বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে জেনারেটর নেই। অনেক জেলায় মর্গে পর্যাপ্ত দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল নেই। বংশ পরম্পরায় মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমরা ময়নাতদন্তের সহযোগী হিসেবে কাজ করলেও তাদের কোনো মৌলিক প্রশিক্ষণ নেই। তাছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ ব্যস্ত মর্গগুলোতে মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্টদের স্বল্পতা প্রকট। অনেক জায়গায় দেখা গেছে, লাশ সংরক্ষণের সুরক্ষিত পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার অভাব। বিদেশি নাগরিক ও বিশেষ ক্ষেত্রে মরদেহ প্রচলিত নিয়মে হিমঘরে সংরক্ষণ করার প্রয়োজন পড়ে। অল্পসংখ্যক মর্গে কুলিং বা ফ্রিজিং বা মর্চুয়ারি কুলার সিস্টেম থাকলেও অধিকাংশ সময় নষ্ট থাকে বলে গরমের সময় লাশে দ্রুত পচন ধরে।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর সম্ভাব্য সময়ের উল্লেখ থাকা জরুরি। মর্গে আধুনিক প্রযুক্তি না থাকায় অভিমত প্রদানে বিশেষজ্ঞদের সমস্যা হয়। পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১ জুন রাজধানীর কলাবাগান থানা এলাকায় নিজ বাসা থেকে ডা. কাজী সাবিরা রহমান লিপির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি খুন হয়েছিলেন। মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে। খুনের ধরন মোটামুটি স্পষ্ট হলেও ঘটনার রহস্য উন্মোচনে খুনের ‘সম্ভাব্য সময়’ জানার জন্য পিবিআই ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকদের সুযোগ-সুবিধা কম হওয়ায় চিকিৎসা শিক্ষায় এ শাখাটি অবহেলিত এবং কম গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত। ফলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক ডাক্তারের স্বল্পতা রয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে আরেকটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে, সিএমএম আদালতের নির্দেশে ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগরের লালমোহন থানা এলাকা থেকে কামাল মাঝির (৪৫) ৩৮ মাসের পুরনো মরদেহ তুলে ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়। সেখানে কর্মরতদের কারও এ ধরনের মরদেহের ময়নাতদন্তের অভিজ্ঞতা না থাকায় মরদেহটি ভোলা থেকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়া হয়। দায়িত্বরত প্রভাষক জানান, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের পদে কেউ কর্মরত নেই। তিনি মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য অন্য কোনো মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়ার অনুরোধ করেন। পিবিআই মরদেহটি বরিশাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সংশ্লিষ্ট বিভাগে নিয়ে যায়।
হত্যা কেন ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা হিসেবে আসে জানতে চাইলে ফরেনসিক চিকিৎসকরা জানান, কাউকে হত্যা করে রেললাইনে ফেলে রাখলে তার ওপর দিয়ে ট্রেন গিয়ে একেবারে ক্ষতবিক্ষত হয়ে হাড়গোড় বেরিয়ে দলিত হয়ে যায়। একে চিকিৎসাশাস্ত্রে মিউটিলেডেট লাশ বলে। ওইসব লাশের আলামত বোঝা যায় না। আগের আলামত নষ্ট হয়ে নতুন আলামত তৈরি হয়। তখন রেল দুর্ঘটনাই মনে হয়। এতে অনেক সময় চিকিৎসকরা মিসগাইডেড হয়।
ফরেনসিক বিভাগে চিকিৎসকের সংকট বিষয়ে এক চিকিৎসক বলেন, ‘আমি ঢাকায়ে আছি, অথচ আমাকে কক্সবাজার বা পঞ্চগড় গিয়ে স্বাক্ষর দিতে হচ্ছে। বাইরে যাওয়ার, বিশেষ করে একা, বিপদ আছে অনেক, সংক্ষুব্ধ পক্ষ হামলা চালাতে পারে। এজন্য অনেক চিকিৎসক এ বিভাগে থাকতে চান না। এখানে সুবিধাও অনেক কম। মফস্বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসককে মিসগাইড করে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে রিপোর্ট লেখানো হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।
ফ্যাটি লিভার রোগটি এখন ঘরে ঘরে। প্রাথমিকভাবে এই রোগের লক্ষণ না বুঝতে পারলে, অনেক সমস্যাই দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকরা জানান, এই রোগ থেকে বাঁচতে জীবনধারায় বদল আনতে হবে।
কোন কোন উপসর্গ দেখলে সতর্ক হবেন? শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া, হঠাৎ ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়া, হলুদ রঙের দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব, ওজন অত্যন্ত বেড়ে যাওয়া, সারাক্ষণ ক্লান্তিভাব— এই উপসর্গগুলি ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ হতে পারে। অনেকের ধারণা, মদ্যপান করলেই এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে। তবে কেবল মদ্যপান ছেড়ে দিলেই এই রোগের ঝুঁকি কমবে না। কম তেলমশলার খাবার খাওয়া, বাড়ির খাবারে অভ্যস্ত হওয়া, মদ ছেড়ে দেওয়া— এই অভ্যাসগুলিই লিভারকে ভাল রাখার অন্যতম উপায়। এই অসুখকে ঠেকিয়ে রাখতে ডায়েটের ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে। তবে এগুলিই শেষ কথা নয়। লিভার ভাল রাখতে মেনে চলতে হয় আরও কিছু নিয়মকানুন। কিন্তু কী কী?
চিনির মাত্রা কমানো
সহজে রোগা হতে চেয়ে অনেকেই নিজের খুশি মতো ডায়েট প্ল্যান বানিয়ে নেন। চিনি বাদ দিয়ে দেদারে কৃত্রিম চিনির উপরেই ভরসা করেন। এতেই আসলে চরম ক্ষতি করছেন শরীরের। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার অভ্যাস আমাদের লিভারের ব্যাপক ক্ষতি করে। ফ্রুকটোজ হোক কিংবা কৃত্রিম চিনি, লিভারের অসুখ ডেকে আনে।
ব্যথার ওষুধ কম খান
বেশকিছু বেদনানাশক ওষুধ লিভারের ক্ষতি করে। কিছু প্যারাসিটামল বা কোলেস্টেরলের ওষুধও লিভারের প্রভূত ক্ষতি করে। ঘুম না হলে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘুমের ওষুধ খেতে শুরু করেন। এই অভ্যাসের কারণে লিভারের জটিল রোগে ভুগতে হতে পারে।
পানি বেশি করে খান
শরীর থেকে যতটা দূষিত পদার্থ বার করে দিতে পারবেন, লিভার ততটাই সুস্থ থাকবে। তাই বেশি করে পানি খেতে হবে। তবেই প্রস্রাবের সঙ্গে শরীরের টক্সিন পদার্থগুলি বেরিয়ে যাবে। দিনে কয়েক বার গরম পানিতে পাতিলেবুর রস দিয়ে সেই পানি খান। ডায়েটে রাখুন টক দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক।
পর্যাপ্ত ঘুম
সারাদিন কর্মব্যস্ততা আর রাত জেগে মোবাইলে চোখ রেখে সিনেমা দেখা— সব মিলিয়ে ঘুমের সঙ্গে আপস। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ঘুমের অভাব হলে তার প্রভাব পড়ে লিভারের উপরেও।
ওজন কমান
শুধু সুন্দর দেখানোর জন্যই নয়, লিভার সুরক্ষিত রাখতে চাইলেও কিন্তু ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আমাদের শরীরে কার্বহাইড্রেট-প্রোটিন-ফ্যাটের সঠিক ভারসাম্য থাকা ভীষণ জরুরি। তবে ইদানিং বাড়ির খাবার নয়, বরং রেস্তোরাঁর খাবার, রেড মিট, বাইরের ভাজাভুজি, প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খেয়ে অভ্যস্ত। আর এর জেরেই শরীরে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা বাড়ছে। লিভারের পক্ষে এই ফ্যাট মোটেই ভাল নয়।
প্রথম সেট ২৫ মিনিট, দ্বিতীয়টি ২৮ মিনিটে জিতলেন কার্লোস আলকারাজ। মনে হচ্ছিল কোয়ালিফায়ার ফ্যাভিও কোবোলিকে বুঝি উড়িয়েই দিচ্ছেন শীর্ষ বাছাই।
না, তৃতীয় সেটতে প্রতিরোধ গড়লেন ইতালিয়ান। সময় গড়ালো ঘন্টায়। শেষপর্যন্ত জয় এসেছে ৬৬ মিনিটে। ৬-০, ৬-২, ৭-৫ গেমে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ জিতে রাফায়েল নাদালের উত্তরসুরি ক্লে কোর্টের সর্বোচ্চ আসর শুরু করলেন।
নাদালের চোটজনিত অনুপস্থিতিতে শীর্ষবাছাই আলকারাজ। ২০২১ এ তৃতীয় রাউন্ড, গতবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছিলেন। এবার আরো এগোলে সেমিফাইনালে নোভাক জকোভিচের সংগে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা।
সে দেখা যাবে। আপাতত দ্বিতীয় রাউন্ডে আলকারাজকে টপকাতে হবে জাপানের টি. দানিয়লেকে।
আইপিএলের পঞ্চম শিরোপা জিততে চেন্নাই সুপার কিংসের চাই ১৫ ওভারে ১৭১ রান। আহমেদাবাদে রাত ১২.৪০ মিনিটে শুরু হবে খেলা। গুজরাট টাইট্যান্সের ২১৪ রানের জবাবে খেলতে নেমে ৩ বলে ৪ রান করার পর বৃ্স্টিতে বন্ধ হয় ফাইনাল। অর্থাৎ বাকি ১৪.৩ ওভারে আরো ১৬৭ রান চাই ধোনীর দলের।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।