
১১ ডিসেম্বর ১৯২২ তখনকার ব্রিটিশ ভারতের, এখনকার পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের পেশোয়ার শহরের কিসসাখানি বাজারের একটি ফল ব্যবসায়ী পরিবারে মোহাম্মদ ইউসুফ খান জন্মগ্রহণ করেন। বাবা লালা গুলাম সারওয়ার খান এবং মা আয়েশা বেগম। এক দিন বাবার চোখে পড়ল রাস্তার দেয়ালে সিনেমার পোস্টার। তাতে সিনেমার নায়কের যে ছবি তা ইউসুফ খানের বলেই তিনি মনে করলেন, কিন্তু নাম ভিন্ন, দিলীপ কুমার। তিনি নিশ্চিত হতে চান। বাড়ি ফিরে ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন।
পোস্টারে লেখা আছে দিলীপ কুমার অভিনীত জোয়ার ভাটা। সেদিন তার বাবার সঙ্গে ছিলেন দেওয়ান বাশেশ^রনাথ কাপুর (ইউসুফের বন্ধু, একই এলাকার রাজ কাপুরের দাদা), তিনিও সন্দেহ করলেন এই ছেলে ইউসুফ না হয়ে যায় না। দুজন একসঙ্গে টোঙ্গাতে ফিরছিলেন। সন্দেহ কাপুরেরও।
লালা গুলাম সারওয়ার খান বললেন, ‘সিনেমার পোস্টারে দিলীপ কুমার নামের একটি ছেলেকে দেখলাম। কসম খোদার সে দেখতে তোর মতো। পোস্টারের ছেলেটি কি তুই?’
ছেলে নিশ্চুপ, ক্ষুব্ধ লালাজি বললেন, ‘জবাব দে, পোস্টারের ছেলেটি তুই, না অন্য কেউ?’
কোমল ও আতঙ্কিত কণ্ঠের জবাব, ‘হ্যাঁ আমি’।
তারপর প্রবল একটা চড় পড়ল তার গালে, মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন। মেঝেতে পড়ে রইলেন, পাঁচ আঙুল বসে গেছে।
পরের আদেশ, ‘এ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যা।’
এ বছরই প্রকাশিত ফয়সাল ফারুকীর ‘দিলীপ কুমার : ইন দ্য শ্যাডো অব অ্যা লেজেন্ড’ গ্রন্থে দিলীপ কুমারের বলা এ কাহিনী প্রকাশিত হয়েছে।
যদি মা আয়েশা খাতুন ও বড় বোন সকিনা না থাকতেন তাকে বাড়িছাড়া হতে হতো।
‘আমি সিনেমায় থাকার কথা কখনো ভাবিনি, আমার প্রিয় কোনো অভিনেতা-অভিনেত্রীও ছিলেন না। আমি দেখেছি আমাদের খাবার জোগাড় করতে আমার আব্বা-আম্মা উদয়াস্ত পরিশ্রম করতেন। কিছু কামাই করে তাদের ভার কিছুটা লাঘব করার চেষ্টাই আমার ছিল।
দিলীপ কুমার কাহিনীর বাকি অংশ তার আত্মজীবনী ‘দ্য সাবস্ট্যান্স অ্যান্ড দ্য স্যাডো : অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’র ‘দ্য টার্নিং পয়েন্ট’ অধ্যায় থেকে কিছুটা সংক্ষেপে উপস্থাপন করছি :
আমি এক দিন সকালে চার্চগেইট স্টেশনে অপেক্ষা করছি, সেখান থেকে লোকাল ট্রেনে সেন্ট্রাল বোম্বের দাদর যাব। সেখানে একজনের সঙ্গে দেখা করব, তিনি একটা ব্যবসা দিতে পারেন। ব্যাপারটা ক্যান্টনমেন্টে সেনাবাহিনীর জন্য কাঠের খাট সরবরাহ-সংক্রান্ত। সেখানে ডক্টর মাসানিকে দেখতে পেলাম। তিনি একজন মনোবিজ্ঞানী, একবার উইলসন কলেজে এসেছিলেন তখন আমি সেখানকার ছাত্র। উইডলসনে আমি এক বছর পড়াশোনা করেছি। চার্চগেইট স্টেশনে আমি এগিয়ে তার কাছে যাই এবং নিজের পরিচয় দিই। যেহেতু তিনি আমার আব্বার পরিচিত আমাকে চিনবেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইউসুফ এখানে কী করছো?’
আমি বললাম চাকরির খোঁজ করছি কিন্তু তেমন কিছু চোখে পড়ছে না। তাই ব্যবসায়ের চেষ্টা করছিলাম। তিনি বললেন, তিনি বোম্বের পশ্চিম উপশহরের দিকে মালাদ-এ যাচ্ছেন সেখানে সিনেমা স্টুডিও বোম্বে টকিজ-এর মালিকের সঙ্গে দেখা করবেন। তিনি বললেন, তুমি যদি আমার সঙ্গে যেতে চাও চলো, তাদের সঙ্গে দেখা হবে। তোমার জন্য তাদের কাছেও কোনো চাকরি থাকতে পারে। খুব সাদামাটাভাবে তিনি কথাগুলো বললেন। আমি এক মুহূর্তের জন্য ভেবে দাদর যাওয়ার ব্যাপারটা বাদ দিলাম এবং তার সঙ্গে যোগ দিলাম। রেলওয়েতে আমার একটা ফার্স্ট ক্লাস সিজন টিকিট ছিল, কিন্তু সেটা বান্দ্রা পর্যন্ত, মালাদ বান্দ্রা পেরিয়ে আরও ১৮ মাইল দূরে। ডক্টর মাসানি টিকিট চেকারকে চিনতেন। সুতরাং বর্ধিত অংশের একটা টিকিট পেয়ে গেলাম। যদিও স্টেশন থেকে বোম্বে টকিজ খুব কাছে তবুও তিনি ট্যাক্সি নিলেন, কারণ লাঞ্চটাইম প্রায় হয়ে গেছে, তিনি চিন্তিত বোম্বে টকিজ-এর বস মিসেস দেবিকা রানী দুপুরের খাবার খেতে আবার না বাসায় চলে যান।
***
এর আগে আমি জীবনেও কখনো সিনেমার স্টুডিও দেখিনি, এমনকি স্টুডিওর ছবিও না। আমি রাজ কাপুরের কাছে বোম্বে টকিজের কথা শুনেছি। তার পিতা পৃথ্বীরাজ কাপুর অভিনীত সিনেমার শ্যুটিং হতো এখানে। বহু একর জমিনের ওপর ছড়িয়ে আছে বোম্বে টকিজ স্টুডিও, একটা বাগান, বাগানে একটা ঝরনা। এর অফিস ভবন দেখতে সনাতন অফিসের মতো নয়, বাংলোর মতন।
ডক্টর মাসানি যখন প্রবেশ করলেন দেবিকা রানী তাকে উষ্ণ সম্ভাষণ জানালেন এবং তাকে বসতে বললেন। পরিচিত হওয়ার জন্য আমি যখন দাঁড়িয়ে আছি তিনি বিস্মিত চোখে আমার দিকে তাকালেন। তিনি রুচিশীলতার প্রতিমূর্তি, ডক্টর মাসানি যখন আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন নমস্তে বলে আমাকে স্বাগত জানিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসতে বললেন। কিন্তু তার দৃষ্টি আমার ওপর নিবদ্ধ যেন আমাকে নিয়ে তিনি কিছু একটা ভাবছেন। তিনি আমাদের অমিয় চক্রবর্তীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন, পরে জেনেছি তিনি বিখ্যাত পরিচালক; তিনি সোফায় বসেছিলেন। দেবিকা রানী আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমি উর্দুতে ভালো কি না। আমি ‘হ্যাঁ’ বললাম। ডক্টর মাসানি আমার পেছনের ইতিহাস ব্যাখ্যা করলেন; বললেন আমরা পেশোয়ার থেকেই উঠে এসেছি। আমার বাবার কথা, তার ব্যবসায়ের কথা বললেন। তিনি আগ্রহ নিয়ে শুনলেন, আমি তার মুখের দিকে তাকাই, স্বাভাবিক দ্যুতিময়তা ও সুস্বাস্থ্যের প্রমাণ তাতে। তিনি কেবল আমার উর্দু জ্ঞানের কথা শুনলেনএতে কোন ধরনের চাকরি তিনি আমাকে দিতে পারেন আমি তাই ভাবছিলাম।
তিনি আমার দিকে ফিরে মিষ্টি হেসে আমাকে যে প্রশ্নটা করলেন তা আমার জীবনের ধারা সম্পূর্ণভাবে এবং অপ্রত্যাশিতভাবে বদলে দিল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন আমি অভিনয় করতে চাই কি না? মাসে সাড়ে বারোশো টাকা বেতনে তা করতে রাজি কি না? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। ডক্টর মাসানির দিকে যখন তাকালাম তাকেও বিস্মিত মনে হলো। তিনি কাঁধ নাড়লেন, আমি বুঝতে পারলাম আমাকে হ্যাঁ বলানোর এটা একটা সংকেত। আমি বেহুদা চিন্তা করে সময় নষ্ট করার মানুষ নই। সুতরাং আমি হাসিমুখে তার হাসির জবাব দিতে গিয়ে বললাম, এটা তার বিশেষ দয়া যে অভিনয় করার একটা চাকরি তিনি আমাকে দিচ্ছেন। কিন্তু আমার কোনো অভিজ্ঞতা নেই, ফিল্ম সম্পর্কে ধারণাও নেই। তা ছাড়া আমি জীবনে একটি মাত্র সিনেমা দেখেছি, সেটাও একটা যুদ্ধের ডকুমেন্টারি। দেওলালির সৈনিকদের জন্য ছবিটি নির্মিত।
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের পারিবারিক ফল ব্যবসায়ী তুমি কতটা অভিজ্ঞ? আমি বললাম, আমি শিখছি, বেশি অভিজ্ঞতার দাবি করতে পারব না।
তিনি বললেন, এই তো ফলের ব্যবসায় এসে তুমি ফল, ফলচাষএসব সম্পর্কে যেমন শিখছো সিনেমা তৈরির শৈলী, অভিনয় এসব একইভাবে শিখে নিতে পারবে। আমার একজন তরুণ, সুদর্শন এবং শিক্ষিত অভিনেতা দরকার। আমি দেখতে পাচ্ছি তোমার মধ্যে ভালো অভিনেতা হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে।
লাঞ্চের সময় এসে গেল, আমরা তার সঙ্গে লাঞ্চে যোগ দেব কি না আন্তরিকভাবেই জিজ্ঞেস করলেন। ডক্টর মাসানি বিনীতভাবে জানালেন লাঞ্চ করবেন না, বিদায় দিয়ে চলে এলেন, আমি তাকে অনুসরণ করলাম। ফেরার পথে ডক্টর মাসানি তেমন কথা বললেন না। দ্রুতগতিতে ছোটা রেলের শব্দ এবং চাকরির অফারের বিস্ময় আমাদের দুজনকে নির্বাক করে দিয়েছে। আমি যে সিনেমা ও অভিনয় নিয়ে কিছুই জানি না এটা আমাকে আর বিচলিত করেনি। ট্রেনের দুলুনিতে আমার মধ্যে যখন আয়েশি ভাব এসে গেল আমি ভালো বোধ করলাম এবং এত বেতনের জন্য কৃতজ্ঞ বোধ করতে থাকলাম। এখন আমার লিখিত সম্পত্তির অপেক্ষা।
* * *
বাড়ি ফিরে ভাইদের মধ্যে তার বড় জন আইয়ুব সাহাবকে তার চাকরির সাড়ে বারোশো টাকা বেতনের অফারটার কথা বললেন (পারিবারিক সংস্কৃতিতে বড় ভাইকে শুধু নাম ধরে ডাকা যাবে না, নামের সঙ্গে সাহাব যোগ করতে হবে, কিন্তু ইউসুফ আইয়ুবকে নাম ধরে ডেকে বকা ও মারও খেয়েছেন।) আইয়ুব বললেন, চাকরি ঠিকই আছে তবে বেতন বছরে সাড়ে বারোশো টাকা। তিনি আরও বললেন, রাজ কাপুর বোম্বে টকিজ থেকে মাসে ১৭০ টাকা পান, এটা তার জানা আছে। আমার মনে হলো আইয়ুব ঠিকই বলেছেন। আমাকে প্রতি মাসে এত টাকা তিনি কেমন করে দেবেন? আমি বুঝলাম আসলেই বছরে সাড়ে বারোশো। আমি ভাবলাম এ চাকরি গ্রহণ করার মানে নেই, তাতে আমার আব্বার ভার তেমন কমবে না।
আইয়ুব ছাড়া বাড়ির কেউ আর আমার এই চাকরি পাওয়ার কথা জানেন না। আমার সবচেয়ে বড় ভাই নূর সাহাব এসব নিয়ে কখনো ভাবেন না, তিনি তার নিজস্ব ভুবনে বাস করেন। তাকে কেবল খাবার সময় বাড়িতে দেখা যায়। আমি ভাবলাম আমার সিদ্ধান্তটি আগে ডক্টর মাসানিকে জানানো সমীচীন হবে। আমি চার্চগেইটে তার বাড়িতে গিয়ে হাজির হলাম, বললাম, ইলেকট্রিক ট্রেনে প্রতিদিন মালাদ আসা-যাওয়া করে যে খরচ হবে তাতে বছরে সাড়ে বারোশো টাকায় আসলে পোষাবে না।
কিন্তু তিনি নিশ্চিত বছরে নয় মাসে ১২৫০ টাকা। তিনি আমার সামনে নিজে থেকেই দেবিকা রানীকে ফোন করে বেতনটা নিশ্চিত হলেন, তিনি যেভাবে ফোন ধরে থাকলেন তাতে আমার মনে হলো তিনি অপর প্রান্ত থেকে সুখকর কিছু শুনছেন। রিসিভার রেখে তিনি বললেন, বার্ষিক নয় মাসিক ১২৫০; দেবিকা মনে করেন আমি প্রতিশ্রুতিশীল, কাজেই আমি সানন্দে গ্রহণ করতে পারি এমন অফারই তিনি দিয়েছেন। পরদিন দুপুরের খাবারের পর চার্চগেইট স্টেশনে ডক্টর মাসানির সঙ্গে দেখা করি। বছরটা ১৯৪২, দিনটা শুক্রবার, তারিখটা মনে নেই। নামাজের পর, ভালো ভোজনের পর আমি নীরবে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম। কেউ জানে না আমি কোথায় যাচ্ছি।
ইউসুফ খান এসে হাজির হলেন বোম্বে টকিজ-এ; দেবিকা রানী বুঝতে পারলেন ইউসুফ চাকরির অফারটা যে গ্রহণ করেছেন তা নিশ্চিত করতে এসেছেন। সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরে আয়েশা বেগমকে বললেন, ‘আম্মা আমি মাসে ১২৫০ টাকা বেতনের একটা চাকরি পেয়েছি, তাতে আপনার রান্নাঘরের খুচরো খরচ, আর আমার ভাই-বোনদের পড়াশোনার খরচটা মেটানো যাবে।’
কিন্তু এত টাকার চাকরি, কাজটা কী? সন্দিগ্ধ আয়েশা খাতুন জিজ্ঞেস করলেন।
তিনি বললেন, সম্মানজনক কাজ, উর্দুতে ভালো বলেই কাজটা পেয়েছেন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ আর ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এই উন্মাতাল সময়ে উর্দুর ভালো জ্ঞান হয়তো গুরুত্বপূর্ণইমা তাই ভাবলেন। মা বোঝেননি এটা ইউসুফ খানের দিলীপ কুমার হওয়ার চাকরি।
লেখকঃ কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক
আমাদের সমবয়সী বা কাছাকাছি বয়সের অনেকের সঙ্গে কথা বললে মনে হয়, আগে সব ঠিক ছিল। এখন কোথাও কিছু আলো নেই। সব অন্ধকার। অনেক সময় ঠাট্টা করে আমরা বলি, সবকিছু ‘ব্যাদে’ অর্থাৎ ‘বেদ’-এ আছে। এই ঠাট্টার লক্ষ্য মনুবাদী, মৌলবাদী ধ্যান-ধারণা। যুক্তিতর্কের বাইরে নিছক আবেগ দিয়ে সব বিশ্লেষণ করা। ইদানীং এই প্রবণতা বাড়ছে। এ একধরনের গোঁড়ামি। কিন্তু এই একই মৌলবাদ তথাকথিত প্রগতিশীল বন্ধুদের মধ্যেও দেখলে বেশ অবাক লাগে। বিশেষ করে এ ধরনের চিন্তাভাবনা বেশি দেখা যায় ষাট-সত্তর দশকের প্রজন্মের মধ্যে। এটা ঠিক, সে সময় সারা দুনিয়ায় বাম মতাদর্শ অনেক সক্রিয় ছিল। পশ্চিমবঙ্গের শিল্প-সাহিত্যে শম্ভু মিত্র, উৎপল দত্ত, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃপ্তি মিত্র, কেয়া চক্রবর্তী, বাদল সরকার নাটকে; উত্তমকুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, রবি ঘোষরা চলচ্চিত্রে রাজত্ব করছেন। পরিচালনায় সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক; গানে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, আরতি মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, কিশোর কুমার আরও অনেকে স্বমহিমায় রাজত্ব করছেন। বামপন্থি রাজনীতি আদর্শের পথে এগিয়ে চলেছে। এক এক সময় তো মনে হচ্ছে, বিপ্লব দরজায় কড়া নাড়ছে। দরজা খুলে দিলেই বিপ্লব হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকে পড়বে।
বাস্তবে তা ঘটল না। সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার পতন ঘটার পর থেকেই গেল গেল রব উঠল বিভিন্ন দেশের বামপন্থিদের একাংশের মধ্যে। তারও পরে গোলকায়নের ধাক্কায় অনেকেই হিমশিম খেয়ে, সহজ রাস্তা, মনের সুখে পুরনো স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরলেন। ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম...’। আমি এই অতীত বিলাসীদের থেকে হাজার হাত দূরে।
আদরের ছোট পুত্র শমীর মৃত্যুর খবর যখন এলো রবীন্দ্রনাথ তখন ট্রেনে কলকাতা ফিরছেন। নীরব কবি বিষাদ বুকে নিয়ে চরাচরের দিকে তাকালেন। বাইরের পৃথিবী বড় চমৎকার। ছোট ছোট নদীর জলে মায়াবী চাঁদের আলো বড় সুন্দর। অজানা কোনো পাখি একমনে ডেকে চলেছে। কবি বুঝলেন, পৃথিবীতে ব্যক্তিশোক যতই যন্ত্রণার হোক, বিপুলা পৃথিবী তার মতো করে এগিয়ে চলে। থামার কোনো লক্ষণ নেই। রবিঠাকুর লিখলেন, ‘আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে...’।
মাও সেতুং বলতেন, ‘যা কিছু পুরনো তাই ঐতিহ্য নয়।’ সত্যিই কি আগে সব ভালো ছিল! কালোবাজারি ছিল না, দুর্নীতি! কিংবা অসততা! এসব কি ছিল না? এক-আধজন নিশ্চয়ই বাঘা যতীন, ক্ষুদিরাম বা প্রীতিলতা, কল্পনা দত্ত বা পরের যুগে মৃত্যু-তুচ্ছ-জ্ঞান করা স্বাধীনতা যোদ্ধা থাকলেও ব্রিটিশদের পা ধরে রায়বাহাদুর, খানবাহাদুররা তো সংখ্যায় কম ছিলেন না। কলকাতা শহরের যত ঐতিহাসিক স্থাপত্য, বসত, ঠাকুর দালান অধিকাংশই গড়ে উঠেছিল ব্রিটিশদের মুৎসুদ্দি পুঁজির দৌলতে। বামপন্থি রাজনীতিতে আদর্শবাদ একসময় নিশ্চিত আজকের চেয়ে বেশি ছিল। কিন্তু তখনো সবাই লেনিন ছিলেন এরকম ভাবার কোনো কারণ নেই। অনেক আগুনখেকো বিপ্লবীর আসল চেহারা শুনলে চমকে যেতে হবে। আমার বাবা বলতেন, জেলে গেলে বোঝা যায় কমরেডদের আসল চেহারা। সামান্য মাছের টুকরো নিয়ে যেভাবে কেউ কেউ কামড়া-কামড়ি করেন, দেখে কে বলবে এরাই সাম্যবাদী সমাজের রূপকার!
জীবন আসলে নদীর মতো। কখনো একদিক শুকিয়ে যায়। চড়া পড়ে। ভাঙনে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় বিস্তীর্ণ এলাকা। কিন্তু অন্য দিকে স্রোতে ভেসে যায়। চড়াতে নতুন বসতির পত্তন হয়। গড়ে ওঠে নতুন স্বপ্ন। এভাবেই সভ্যতা বয়ে চলে নিরন্তর। শতাব্দীর পর শতাব্দী। হাজার বছর ধরে চেষ্টা করতে করতে মানুষ একদিন পাথরে পাথর ঘষে আগুন জ্বালাতে শিখেছিল। আজ সে প্রযুক্তি ব্যবহার করে চাঁদে অবধি পৌঁছে গেছে।
কয়েক দশক আগেও হিন্দু ঘরে বাবাকে সন্তান আপনি সম্বোধন করত। আজ অনেক সংসারেই বাবা-মা দুজনেই সন্তানের বন্ধু হয়ে গেছেন। একদা যে দূরত্ব ছিল তা আজ আর নেই। স্নেহ তখনো ছিল। এখনো আছে। তার প্রকাশভঙ্গি পাল্টে গেছে। একটা সময় ছিল যখন কুন্দনলাল সায়গল, কানন দেবী বা কৃষ্ণ চন্দ্র দের গান লোকের মুখে মুখে ফিরত। এখন তারা নতুন প্রজন্মের কাছে বাতিল হয়ে গেছেন। নতুন কত শিল্পী উঠে আসছেন রোজ। আমরা খোঁজও রাখি না। কোক স্টুডিওতে ভালোমন্দ কত গান শুনি। অনেকেই তরুণ। অনেকের নামও আগে শুনিনি। কিন্তু রাতে একা শুনলে বেশ লাগে।
নিজেও মাঝেমধ্যে বলি বটে, লেখা আর আগের মতো নেই। সত্যি কি তাই! এই পশ্চিমবঙ্গেই মুখে মুখে দশজনের নাম বলে দিতে পারি যারা তথাকথিত অনেক প্রতিষ্ঠিত লেখকের রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। করপোরেট পুঁজি আগ্রাসী চেহারা নিয়ে সমাজের মূল্যবোধ বদলে দিচ্ছে। তার ভেতরেও কত মানুষ কত কত কাজ করে চলেছেন তা আমরা দেখেও দেখি না। যে গায়ক আদ্যোপান্ত সুবিধাবাদী, সেও মঞ্চে দাঁড়িয়ে ডাক্তারদের পেশা নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাততালি কুড়োচ্ছেন। কভিডকালে কত ডাক্তার জীবন তুচ্ছ করে রোগী দেখতে দেখতে মারা গেছেন এটাও সত্যি। আগে মাস্টারমশাইরা কত ভালো ছিলেন। এখন সবাই খারাপ? নিশ্চয়ই অনেক ফাঁকিবাজ, অসৎ লোক শিক্ষা জগতে আছেন। পাশাপাশি কোনো দিন টিউশনি না করে অবসর সময়ে বিনা পয়সায় ছেলেমেয়েদের পড়া দেখিয়ে দিচ্ছেন এ-রকম উদাহরণও কম নেই। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা কত নতুন নতুন পেশায় প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে, যা আগে আমরা কখনো ভাবিনি। বিজ্ঞাপন, হোটেল ম্যানেজমেন্ট, ফ্যাশন ডিজাইনার, আইটি, ব্যবস্থা আরও কত। সবাইকে স্রেফ ভোগবাদী, স্বার্থপর বলতে আমি অন্তত রাজি না। করোনা সংকটের মধ্যে রেড ভলেন্টিয়ার্সের ভূমিকা ইতিহাস মনে রাখবে। এই নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাই আজও গণআন্দোলনের সামনে থাকে। সারা দেশে। এন.আর.সি’র সময় শাহীনবাগের লড়াই ভোলার নয়। এখনো উমর খালিদের মতো ছেলে জেলে থাকে, আমরা যারা ‘ধুর কোথাও কিছু নেই’ বলে হতাশা জনমনে চারিয়ে দিতে সক্রিয়, তারা শুধুই সমালোচনা করি।
গ্রামের পর গ্রামে ঘুরি। স্কুলে যাই। কলেজেও। অনেক খারাপ অভিজ্ঞতা হয়। পাশাপাশি কত ঝকঝকে মুখ দেখি। সোজা হয়ে হাঁটছে। মাটির সঙ্গে যোগ না থাকলে ওই গেল গেল করা ছাড়া রাস্তা নেই। নিন্দুকেরা শুধুই অন্ধকার দেখেন। আমি আলোর খোঁজ করি। প্রাণ বিপন্ন করে মানুষের পাশে থাকা তরুণের মুখের দিকে আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি। গজদন্ত মিনারে বসে ঠিক সুরে রবীন্দ্র সংগীত শুনে তারিফ নিশ্চয়ই করব। কিন্তু গিটার হাতে নিয়ে ঈষৎ বেসুরে যে মেয়েটি জীবনের গান গাইছে, আমি আস্তে করে তার পিঠে হাত রাখব। জীবন কখনো থেমে থাকে না। তাকে হারিয়ে দেওয়া কঠিন, বড্ড কঠিন।
লেখক : ভারতীয় প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা ও লেখক
কাবাডি বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হলেও ফুটবল বাঙালির রক্তে মিশে আছে। আবাহনী, মোহামেডান, শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব, ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাব, রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস ক্লাবসহ দেশের নানা প্রান্তে অসংখ্য ফুটবল ক্লাব বেশ উজ্জ্বল সময় পার করেছে। নদীবিধৌত বাংলাদেশের নদীর চর আর গ্রামের বিস্তীর্ণ মাঠে কিশোর থেকে যুবক সবাই ফুটবল খেলে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন। শহর থেকে গ্রাম যেখানেই ফুটবলের আয়োজন সেখানে কিশোর থেকে বৃদ্ধ খেলা দেখতে ভিড় করেন। ফুটবলের এই এক অদ্ভুত শক্তি সব বয়সীদের আকর্ষণ করতে পারে। বাংলাদেশে ফুটবল একটা জনপ্রিয় খেলা হলেও দেশের জাতীয় ফুটবল দলের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্য নেই বললেই চলে। অব্যবস্থাপনায় জেলা পর্যায়ের ক্লাবগুলোতে কালভদ্রেও প্র্যাকটিস হয় না। যদিও আমাদের অনূর্ধ্ব ১৭ নারী ফুটবল দল সম্প্রতি সাফ শিরোপা জিতে এসেছে। তাদের এই শিরোপা জয় সারা বাংলাদেশের মানুষ উদযাপন করেছে। এয়ারপোর্টে জয়ী দলকে দেওয়া হয় অভূতপূর্ব সংবর্ধনা। ফলে সহজেই অনুমেয় বাংলাদেশের মানুষ ফুটবল নিয়ে কতটা আগ্রহান্বিত।
ইদানীং কালের ফুটবল আলোচনা ও আগ্রহ ইউরোপীয় কিছু ক্লাব ও লাতিন আমেরিকার দুই দল আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের ফুটবল ম্যাচেই সীমাবদ্ধ থাকছে। বিশ্বকাপ এলে দেশের গ্রাম থেকে শহর সবখানে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পতাকায় ছেয়ে যায়। এটা নিয়ে নানা ধরনের সমালোচনাও এসেছে। সংসদে একবার বিদেশি পতাকা ওড়ানোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও উঠেছিল। বরাবরের মতোই এবারের বিশ্বকাপ উপলক্ষেও আমাদের দেশের তরুণ-তরুণীরা ব্রাজিল আর্জেন্টিনার জার্সি পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিদেশি ক্লাব ও ভিনদেশের ফুটবলের প্রতি তরুণ প্রজন্মের বিশেষ আগ্রহের কারণ দেশের মাঠে আর ফুটবল নেই। এখন ফুটবলের আনন্দ খুঁজতে দর্শককে নির্ভর করতে হয় টিভি স্ক্রিনে।
ক্রিকেটে বাংলাদেশের মানুষকে বিদেশি দল সমর্থন করে তাদের জার্সি গায়ে দিয়ে ঘুরতে দেখা যায় না। কিন্তু ফুটবলে দেখা যায়। কারণ আমাদের দেশে ফুটবলের আমেজ আছে কিন্তু ফুটবল নেই। ২০১০-২০১২ সালের দিকে একটা বিজ্ঞাপন দেখা যেত ‘২০২২ বিশ্বকাপ আমাদেরও স্বপ্ন’। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) থেকে এই ধরনের একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল। এমনকি সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেছেন, ‘বিশ্বকাপ ফুটবলে বাংলাদেশ নেই এটা কষ্ট দেয়’। কিন্তু বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ফুটবলে থাকতে পারা খুব একটা অসম্ভব না। বাংলাদেশে একটা ক্রেজি ফুটবল ফ্যান আছে, এটাই যথেষ্ট বিশ্বকাপ ফুটবলে জায়গা করে নিতে। আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার এমন সব দেশ বিশ্বকাপ ফুটবলে দাপট দেখাচ্ছে যেখানে মানুষ দু’বেলা খাবার পায় না। দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে দেশের অর্ধেক মানুষ। বুট কেনার টাকা হয় না ফুটবলারদের। সেখানে শুধুমাত্র ফুটবলপাগল জনগণের সমর্থনে পায়ের জোর খুঁজে পায় ফুটবলাররা। দুঃখের বিষয় ফুটবলপাগল একটি বড় দর্শক থাকার পরও যথাযথ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে আমাদের দেশের ফুটবলকে আমরা মাঠে নিয়ে আসতে পারছি না। ২০০৬ সালে ফরাসি ফুটবলার জিনেদিন জিদান একবার ঢাকা সফর করেন। সে সময় দেশের মানুষ নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা ও হরতাল অবরোধে ত্যক্ত-বিরক্ত। জিদান তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে রাষ্ট্রপ্রধান তাকে নির্বাচনের পর্যবেক্ষক হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সফরের প্রথম দিন গ্রামীণ ব্যাংক ভিজিট করে দ্বিতীয় দিন আবাহনী ও মোহামেডানের অনূর্ধ্ব ১৬ দলের প্রীতি ম্যাচে অংশ নিয়েছিলেন জিদান। দিনটি ছিল ৭ নভেম্বর। সেদিন ঢাকা শহরের মানুষ রাজনৈতিক অস্থিরতার বিরক্তিকে পাশ কাটিয়ে ‘জিদান উৎসবে’ মেতেছিল। আর ঢাকার বাইরে টিভির সামনে ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়। নিজ দেশে প্রিয় ফুটবলারের পায়ের জাদু দেখার সাক্ষী হয়েছিল হাজার হাজার মানুষ। তারা সমস্ত নিরাশা হতাশা ভুলে সেদিন ফুটবল উদযাপনে নিজেদের আনন্দ খুঁজে নিয়েছিল। সেদিনটিই সাক্ষী বাংলাদেশের মানুষ কতটা ফুটবলপাগল।
খেলায় রাজনীতি : অনেক দেশের মধ্যে যুদ্ধের সমাপ্তি হয়েছে খেলার মধ্য দিয়ে আবার মাঠেই হয়েছে অনেক যুদ্ধের সূচনা। যতই বলি খেলার সঙ্গে রাজনীতি মেশাবেন না কিন্তু খেলায়ও রাজনীতি আছে। আধুনিক যে জাতীয়তাবাদের ধারণা সেখানে একটি জনপ্রিয় কনসেপ্ট হলো দেশপ্রেম। যেখানে রাষ্ট্রকে মহান করে তোলা ও রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের আবেগ আনুগত্যকে বিশেষ মানদ- ধরা হয়। ভাষা, সংস্কৃতি, জাতীয় পতাকার পাশাপাশি জাতীয় ক্রীড়া দলও সে জাতীয়তাবাদের ধারক হয়ে উঠেছে। ফলে জাতীয় ক্রীড়া দলের অর্জনকে জাতির অর্জন ও গৌরবের বিষয় হিসেবে দেখা হয়।
যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙে তখন ছোট ছোট দেশগুলো জাতিসংঘের সদস্য হওয়ার আগে ফিফার সদস্য হওয়ার চেষ্টা করেছিল। কলকাতার ইস্ট বেঙ্গল, মোহনবাগান ক্লাব দুটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ও উপমহাদেশের ধর্মীয় রাজনীতির ইতিহাস। যুক্তরাজ্যের স্বাধীনতাকামী অঞ্চল ওয়েলস ফুটবল দল ও স্কটল্যান্ড ক্রিকেট টিমের মাধ্যমে তাদের স্বতন্ত্র জাতিসত্তার প্রকাশ করছে। এমনকি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতে ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল টিম’ অসংখ্য প্রীতি ম্যাচ খেলেছে। কাতারের ওপর সৌদির অবরোধ তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় সৌদি-কাতার প্রীতি ফুটবল ম্যাচ দিয়ে।
১৯৬৮ সালের অলিম্পিকে ‘দি ব্ল্যাক পাওয়ার স্যালুট’ এর ঘটনা ঘটে, যা ছিল আমেরিকার কালো মানুষের অধিকারের পক্ষে যুগান্তরকারী এক প্রতিবাদ। দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা নিরসন করে ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ককে পুনঃস্থাপন করা হয় একটি টেবিল টেনিস টুর্নামেন্টের মাধ্যমে, ইতিহাসে যা পিং পং কূটনীতি নামে পরিচিত। এই বিশ্বকাপে ইসরায়েল ও আর্জেন্টিনার মধ্যে জেরুজালেমে একটি প্রীতি ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল। এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে মূলত ইসরায়েল জেরুজালেম শহরকে নিজেদের বলে বিশ্বদরবারে উপস্থাপন করতে চেয়েছিল। এই রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি বুঝতে পেরে ইসরায়েলের পরিকল্পনায় লাল কার্ড দেখানো হয়েছে। বর্তমানে কাতার বিশ্বকাপে ফিলিস্তিন দল না খেললেও স্টেডিয়ামে স্টেডিয়ামে উড়ছে ফিলিস্তিনের পতাকা। মূলত কাতারে বসবাসরত ও বিভিন্ন দেশ থেকে কাতার ভ্রমণ করা ফিলিস্তিনি নাগরিকরা পতাকা তুলে ধরে নিজেদের দেশের ব্রান্ডিং করছে। সেই সঙ্গে ইসরায়েলের দখলদারিত্বের প্রতিবাদ জানাচ্ছে। ইরানের অনেক সমর্থক তাদের দেশে হিজাব না পরায় পুলিশি গুলিতে নিহত মাশা আমিনির ছবি দেখিয়ে তার মৃত্যুর প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এমনকি ইরানের ফুটবল দল ম্যাচ শুরুর আগে জাতীয় সংগীত না গেয়ে সে দেশে চলমান আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে। বিশ্বরাজনীতিতে বর্তমানে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র ঘোরতর শত্রু। দুই শত্রু যখন বিশ্বকাপে কাতারে মুখোমুখি তখন এমন একটি উত্তেজনা ও আতঙ্ক তৈরি হয় যেন খেলা নয় যুদ্ধ হবে। যতই খেলাকে আলাদা করার কথা বলা হোক। খেলা রাজনীতির এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠেছে।
জঙ্গি হামলার পর নিরাপত্তার অজুহাতে পাকিস্তানে কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট ও সামিট হচ্ছিল না তখন নিজ দেশের ব্রান্ডিংয়ের জন্য বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়া টিমকে বিশেষ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে পাকিস্তানে টুর্নামেন্ট খেলার আমন্ত্রণ জানায়। কাতার বিশ্বকাপের মাধ্যমে বিশ্বের ৮০০ কোটি মানুষের মধ্যে ৫০০ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে কাতারের নাম। ফলে ক্রীড়া, ক্রীড়া আসর এসব কিছু রাজনীতি ও রাজনৈতিক অর্থনীতির অংশ চাইলেই এসবকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই।
আমাদের উৎসবের সীমা : হাজার হাজার মাইল দূরে ফুটবল ম্যাচ নিয়ে আমাদের দেশের মানুষের উৎসব ও উৎসব প্রস্তুতির শেষ নেই। দর্শক প্রিয় দলের জার্সি কিনছে, পতাকা কিনছে। বিজয় র্যালি করছে, তর্ক করছে, বিতর্ক করছে। ফেইসবুকে খুনসুটি করছে। সবই উদযাপনের অংশ। তবে সে উদযাপন প্রায়শই সীমা অতিক্রম করছে। ফেইসবুকের খুনসুটি মাঝে মাঝে ঘৃৃণাসূচক আচরণে রূপ লাভ করছে। অনেক সময় আলোচনা থেকে মারামারি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে। আমরা ভিন্ন একটি টাইম জোনে হওয়ায় বেশিরভাগ খেলা হচ্ছে রাতের বেলা। রাতের বেলা বড় স্ক্রিনে বাড়ির বাইরে খেলা দেখতে ও উৎসব করতে গিয়ে অনেকে সাধারণ মানুষের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। রাত ২/৩টা বাজে মোটরসাইকেলের হর্ন বাজিয়ে, র্যালি করে মাঝরাতে বাচ্চা ও বৃদ্ধদের ঘুম নষ্ট অগ্রহণযোগ্য আচরণ। কারণ এতে ভোরের শিফটে স্কুলগামী বাচ্চাদের সকালের স্কুল মিস হচ্ছে, বাড়ির বৃদ্ধ ও অসুস্থ রোগীরা ঘুমজনিত সমস্যায় ভুগছেন। মাঝরাতে যখন সবদিক নিস্তব্ধ তখন এসব শব্দদূষণ ব্যাপকভাবে আঘাত করার সুযোগ পায়। ফলে আমাদের খেয়াল রাখা উচিত কোনো উৎসব আনন্দ যেন কোনোভাবে অন্যের ক্ষতির কারণ না হয়। লেখকঃ কলামিস্ট
কয়েক বন্ধু মিলে পরিকল্পনা করছিল সমুদ্রে ঘুরতে যাওয়ার। এজন্য তারা আলাপ-আলোচনা করতে মেসেঞ্জারে ‘সাম্পান’ নামে একটি ক্লোজ গ্রুপ খোলেন। তাদের সেই গ্রুপে সাগরে নামার জন্য সাম্পান ভাড়া, নাবিক সংগ্রহ, নিরাপত্তা সরঞ্জাম, টর্চলাইট, রান্না ও নিরাপত্তার জন্য ছুরি, তাঁবু ইত্যাদির তথ্য আদান-প্রদান করছিল। নানান বিষয়ের মধ্যে সেখানে বেকারত্বে থাকা এক বন্ধু সাগর পথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া চলে যেতে চেয়েও মজা করে এবং অন্যরা তাতে সায় দেয়, হাসে। দিন, তারিখ ঠিক হওয়ার পর, বন্ধুরা সাগর ভ্রমণ করতে কক্সবাজারের উদ্দেশে বাসে করে যাত্রাও করল। বিপত্তিটা শুরু হয় তৃতীয় পক্ষের অচেনা এক লোক ওই বন্ধুদের কারও মোবাইল পেয়ে ‘সাম্পান’ গ্রুপের মেসেজ দেখে এবং তাদের ‘মানব পাচারকারী’ সন্দেহ করে বসে। ওই তৃতীয় পক্ষের লোকটি পুলিশকে ‘সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া’ গমন ঠেকাতে এগিয়ে আসতে বলে। ভ্রমণপিপাসু বন্ধুদের কাল্পনিক এই ঘটনার মতো আমরা কি মোবাইলের মেসেজের ওপর নির্ভর করে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারি? মোবাইল ফোনে আমরা খুবই ব্যক্তিগত পরিসরে, আন্তরিক শব্দ ও হাস্যরসে এমন অনেক কথাই বলি, শেয়ার করি যা আমরা পাবলিক করতে চাই না। কথা হচ্ছে মানুষ তাদের ব্যক্তিগত পরিসরে কথা বলতে নানা ধরনের পরিভাষা, ইঙ্গিত ব্যবহার করে, যা অন্যদের কাছে একই সঙ্গে অপ্রাসঙ্গিক, এমনকি যথেষ্ট শোভন নাও মনে হতে পারে; কিন্তু তা তো অপরাধ নয়।
রাজনৈতিক নেতাকর্মী, বিশেষ করে সরকারবিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি করা; গ্রেপ্তার করা; সন্দেহভাজন কাউকে ৫৪ ধারায় আটক করা এমনকি বিরোধী মতের লোকজনের ওপর লাঠিপেটা করাও পুলিশের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড। আবার পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে মাদক মামলার আসামি করার অভিযোগও আছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে মেসেজ, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার চেক করার মতো ঘটনার খবরও আমাদের পড়তে হলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস ১০ ডিসেম্বরের দুই দিন বাকি থাকতে, ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় মহাবেশকে কেন্দ্র করে ‘নিরাপত্তার’ প্রশ্নে! এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চোখ বন্ধ করে থাকতে পারে না।
১৯৪৮ সালে ঘোষিত জাতিসংঘ মানবাধিকার ঘোষণার ১২ নম্বর আর্টিকেলে বলা হয়েছে, ‘কারও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কিংবা তার গৃহ, পরিবার ও চিঠিপত্রের ব্যাপারে খেয়ালখুশিমতো হস্তক্ষেপ কিংবা তার সুনাম ও সম্মানের ওপর আঘাত করা চলবে না। এ ধরনের হস্তক্ষেপ বা আঘাতের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে।’ বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, জনসাধারণের নৈতিকতা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের চিঠিপত্রের ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনতা রক্ষার অধিকার থাকিবে।’ এখানে যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের মধ্যে টেলিফোন, মোবাইল ফোন ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। তার মানে কারও মোবাইল ফোনের গোপনীয়তার সুরক্ষা দেওয়া রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফে বলা হতে পারে যে, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলার স্বার্থে ফোনের মেসেজ চেক করা হচ্ছে। কিন্তু তাতেই কি এটা বৈধ হয়ে যায়? সভ্য কোনো সমাজ ও রাষ্ট্রে কি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য একজন নাগরিকের মোবাইল ফোন চেক করতে পারে, যতক্ষণ না তার বিরুদ্ধে বড় কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় কিংবা তাকে বড় কোনো অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সন্দেহ করে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হয়?
গত বছর ফোনালাপ ফাঁস নিয়েও ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছিল। ফোনে আড়িপাতা এবং ফোনালাপ প্রকাশ (ফাঁস) নিয়ে দেশের কোনো আইনে সুস্পষ্ট কিছু বলা নেই। টেলিযোগাযোগ আইনের একটি ধারায় বলা হয়েছে, নিরাপত্তা সংস্থা তদন্তের ও মামলার স্বার্থে কারও ফোনালাপ চাইলে টেলিফোন সেবাদাতা সংস্থা তাদের সব রকমের তথ্য দিতে বাধ্য থাকবে; কিন্তু তারা কারও ফোনে আড়িপাততে পারবেসে বিষয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। প্রশ্ন উঠেছিল, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রসঙ্গ ছাড়া কারও ফোনকল রেকর্ড করা এবং সেই ফোনকল ফাঁস করে দেওয়া ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন কি না? রাস্তায় দাঁড় করিয়ে পুলিশ যদি নাগরিকদের হাত থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে মেসেজ, হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্য কোনো টেক্সট, ছবি বা ভিডিও চেক করে যেখানে একজন নাগরিকের খুব ব্যক্তিগত কোনো জিনিসও থাকতে পারে রাষ্ট্রের সংবিধান, আইন বা নীতি কি সেটাকে সমর্থন করবে?
পণ্ডিত রবি শঙ্করের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের বারানসিতে ৭ এপ্রিল ১৯২০ সালে। সংগীতজ্ঞ হিসেবে সেতারবাদনে কিংবদন্তিতুল্য শ্রেষ্ঠত্বের জন্য তিনি বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত। আদি পৈতৃক বাড়ি বাংলাদেশের নড়াইল জেলায়। বাবার নাম শ্যাম শঙ্কর চৌধুরী এবং মা হেমাঙ্গিনী। ১৯৩০ সালে তিনি প্যারিসে বড় ভাই উদয় শঙ্করের কাছে শিক্ষাগ্রহণের জন্য যান এবং ১২ বছর বয়স থেকেই তিনি ভাইয়ের নাচের দলের নৃত্যশিল্পী ও সেতারবাদক হয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে বেড়িয়েছেন ভারত ও ইউরোপের নানা শহরে। ১৯৩৮ সালে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর কাছে সেতারের দীক্ষা নিতে শুরু করেন। ১৯৩৯ সালে ভারতের আহমেদাবাদ শহরে রবি শঙ্করের প্রথম সাধারণের জন্য উন্মুক্ত একক সেতার পরিবেশন অনুষ্ঠান হয়। তিনি কবি ইকবালের সারে জাঁহাসে আচ্ছা কবিতাকে সুর দিয়ে ভারতীয় জাতীয় সংগীতের পর সবচেয়ে জনপ্রিয় গান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৯৪৯ সালে তিনি দিল্লিতে অল ইন্ডিয়া রেডিওর সংগীত পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। এ সময়ে তার উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি পথের পাঁচালী, অপরাজিত ও অপুর সংসার চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা। ১৯৬২ সালে তিনি কিন্নর স্কুল অব মিউজিক, বোম্বে এবং ১৯৬৭ সালে কিন্নর স্কুল অব মিউজিক, লস অ্যাঞ্জেলেস স্থাপন করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় ও তহবিল সংগ্রহের জন্য পাশ্চাত্যের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী জর্জ হ্যারিসনসহ অন্যদের নিয়ে নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ারে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চ্যারিটি কনসার্ট ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর অন্যতম সংগঠক রবি শঙ্কর। ভারত সরকারের পদ্মবিভূষণসহ নানা পুরস্কার ও সম্মানে তিনি ভূষিত হয়েছেন। ১২ ডিসেম্বর ২০১২ সালে রবি শঙ্কর মৃত্যুবরণ করেন।
টেস্ট ক্রিকেটে সিলেটের পথচলা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। অভিজাত সংস্করণে যা ছিল দেশের অষ্টম ভেন্যু। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ম্যাচ দিয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে পা রাখে দেশের সবচেয়ে সুন্দর এই স্টেডিয়ামটি। তবে মাঠের অভিষেক ম্যাচেই হেরে যায় বাংলাদেশ। তারপর আর কোনো পাঁচ দিনের খেলা গড়ায়নি এই মাঠে। এ নিয়ে স্থানীয়দের আক্ষেপের শেষ নেই।
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর ফুরাচ্ছে। পাঁচ বছর পর আবারও টেস্ট ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
ক্রিকবাজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, ‘আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে আমরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজের প্রথম টেস্ট আয়োজন করতে পারব বলে আশা করছি। এটি আমাদের জন্য খুব একটি উপলক্ষ হবে। কারণ পাঁচ বছর পর সিলেটের মাঠে টেস্ট ক্রিকেট ফিরবে।’
সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল সিলেট সফর করেছে। তারা সেখানকার মাঠসহ সব সুযোগ সুবিধা পরিদর্শন করেছেন। পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়ে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। সবকিছু দেখে তারা এখানে আরও বেশি ম্যাচ আয়োজনের জন্য উন্মুখ বলে জানিয়েছেন বিসিবির নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান নাদেল।
তিনি যোগ করেছেন, ‘নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল আমাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বেশ মুগ্ধ। তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়েছে আমরা তাদের সব প্রত্যাশা ও প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারব।’
এফটিপি সূচি অনুযায়ী চলতি বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে ও দুই টেস্ট ম্যাচের সিরিজে খেলার কথা নিউজিল্যান্ডের। তবে সিরিজটি হবে দুই ভাগে। প্রথম ভাগে সেপ্টেম্বরের শেষভাগে বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়ানডে খেলবে কিউইরা। এই সিরিজ খেলেই বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাবে দুই দল।
বিশ্বকাপের পর হবে দুই দলের টেস্ট সিরিজ। নভেম্বরের শেষ দিকে আবারও বাংলাদেশে আসবে কিউইরা। বিসিবি প্রস্তাবিত সূচি অনুযায়ী ২১ নভেম্বর ঢাকায় পা রাখার কথা সফরকারীদের। এরপর একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে দলটি। ২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর হবে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের প্রথম টেস্ট।
রাজধানীর সরকারি কবি নজরুল সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এম ওয়াসিম রানার (৩০) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছেন তার বন্ধুরা। শুক্রবার (০২ জুন) রাত সাড়ে ১২টার দিকে চানখারপুলের একটি বাসায় তার বন্ধুরা তাকে দরজা ভেঙে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে।
অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
রানার বন্ধু ইমরান হোসেন বাবু জানান, 'রানা কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলায়। কয়েক দিন যাবৎ রানার খু্ব মন খারাপ ছিল। একাকী থাকতে চাইত। চুপচাপ থাকত। তবে কী চিন্তা করত সে ব্যাপারে কিছু বলত না। তাই আমি তাকে বলেছিলাম- বন্ধু, তুমি কিছুদিনের জন্য কক্সবাজার ঘুরে আস।'
ঘটনার পরপরই রানার স্ত্রী পরিচয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে রাত দেড়টার সময় সানজিদা নামে এক মেয়েকে আহাজারি করতে দেখা যায়। সানজিদা আক্তার (জান্নাতি) কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
সানজিদা আক্তারের প্রতিবেশী মাইদুল ইসলাম জানান, 'সানজিদা আপুকে আমরা জান্নাতি আপু বলে ডাকি। রানা ভাইয়ের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে অনেকদিন আগে। রাজনৈতিক কারণে বিষয়টি জানাজানি হয়নি। জান্নাতি আপু ডেমরা রূপগঞ্জের তারাবো এলাকায় একটি বাসায় থাকতেন।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক এক সহসভাপতি বলেন, 'আমরা জানতাম, সানজিদার সঙ্গে প্রেম ছিল। বিয়ে হয়েছিল কি-না তা সঠিক জানি না।' মৃত্যুর কারণ যা-ই হোক, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আসল রহস্য উন্মোচন করে বিচারের দাবি জানান তিনি।
রানার মৃত্যুর খবরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন এবং তারা শোক জানান। আজ (০৩ জুন) শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় কবি নজরুল সরকারি কলেজ মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রথম দুই সেটই গড়িয়েছে টাইব্রেকারে। প্রথমটি নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৫ মিনিটে। দ্বিতীয়টিও টাইব্রেকারে। সেটির নিষ্পত্তি ঘণ্টার ওপরে। দুটোতেই জয় নোভাক জকোভিচের। তারপরেরটিও জিতে যান এই সার্বিয়ান। ১৪তম ফ্রেঞ্চ ওপেনের খেলায় স্পেনের আলেজান্দ্রো ফোকিনার সঙ্গে ৩-০ সেটে জয়লাভ করেন তিনি। যে জয়ে মধুর প্রতিশোধ নিয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছেন তিনি।
৩৬ বছর বয়সী এই নাম্বার ওয়ান টেনিস তারকা প্রথম সেটে কিছুটা ছন্দহীন ছিলেন। তবে চ্যাম্পিয়নদের ঘুরে দাঁড়াতে তো সময় বেশি লাগে না। জকোভিচও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তারপর ফোকিনাকে কোনো সেট জিততে না দিয়েই ম্যাচ শেষ করেন তিনি।
প্রায় ৪ ঘণ্টাব্যাপী চলা এই ম্যাচটিতে এক পেশে জয় হলেও প্রতিটি সেটেই উত্তেজনার পারদ ছড়িয়েছেন দুজন। সমর্থকেরাও বারবার হয়েছেন রোমাঞ্চিত। তবে শেষ পর্যন্ত নোভাক জকোভিচের সমর্থকেরাই হাসি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আগামী সোমবার জকোভিচ শেষ ষোলোর ম্যাচ খেলতে নামবেন। সেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে কার্লোস আলকারাজকে পেতে পারেন তিনি।
স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট কো-স্পোর্টস যতটা না তাদের কর্মগুণে সমাদৃত, তার চেয়ে বেশি আলোচিত নানা নেতিবাচক কারণে। একটা সময় কে-স্পোর্টস ও এর প্রধান নির্বাহী ফাহাদ করিমে আস্থা রেখেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বড় বড় সব চুক্তিও সে সময় হয়েছিল দুই পক্ষের। তবে চুক্তির নানা শর্ত ভঙ্গ করে বিসিবির গুড বুক থেকে কাটা গেছে তাদের নাম।
বিসিবিতে সুবিধা করে উঠতে না পেরে গেল কয়েক বছর ফাহাদ করিম সওয়ার হয়েছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনে। বাফুফের এই আলোচিত সভাপতি একটা সময় বড় গলায় ভারতীয় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ, বিসিবির বিপিএলের কঠোর সমালোচনা করে বলেছিলেন, ফুটবলকে জনপ্রিয় করতে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের মতো সস্তা আয়োজনের প্রয়োজন নেই।
অথচ ফাহাদের পাল্লায় পড়ে সেই সালাউদ্দিনই নিজের বলা কথা ভুলে গেছেন। তৎপর হয়েছেন নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আয়োজনে। যদিও এমন আয়োজনের জন্য কোনো রকম পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না কে-স্পোর্টসের। যার জ্বলন্ত উদাহরণ ফ্র্যাঞ্চাইজি চূড়ান্ত না করেই আসর মাঠে গড়ানোর তারিখ ঘোষণা করা এবং অনুমিতভাবেই ঘোষিত তারিখে খেলা শুরু করতে না পারা।
কে-স্পোর্টসের সিইও ফাহাদ করিমের সঙ্গে সালাউদ্দিনের দহরম মহরম বেশ কয়েক বছর আগে থেকে। সেটা কখনো কখনো ফুটবলের স্বার্থ ছাড়িয়ে চলে যায় ব্যক্তিস্বার্থে। সাফল্যপ্রসবা নারী ফুটবলে বেশি আগ্রহ সালাউদ্দিনের। ক্রীড়া-বেনিয়া ফাহাদও সালাউদ্দিনের নারী ফুটবলের প্রতি বাড়তি অনুরাগটা ধরে ফেলে ২০১৯ সালে বাফুফেতে প্রবেশ করেন ঢাকায় অনূর্ধ্ব-১৯ আন্তর্জাতিক নারী টুর্নামেন্ট আয়োজনের মধ্য দিয়ে।
এর পরের বছর টিভি সম্প্রচারস্বত্ব পাইয়ে দিতে বাফুফের সঙ্গে তিন বছরের বড় অঙ্কের চুক্তি করে কে-স্পোর্টস। চুক্তি অনুযায়ী বাফুফেকে ফি-বছর আড়াই কোটি টাকা করে দেওয়ার কথা কে-স্পোর্টসের। সেই অর্থ বুঝে না পেয়ে সম্প্রতি ফাহাদ করিমকে চিঠি দেয় বাফুফে।
বিষয়টি সমাধান না হলে নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ নিয়ে চুক্তি না করার ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছিল চিঠিতে। তবে এই চিঠি দেওয়া যে শুধুই আনুষ্ঠানিকতার, তা সালাউদ্দিন-ফাহাদ করিমের হাবভাবেই বোঝা যায়। চুক্তির বিষয়টাকে এক পাশে রেখে আসলে তাদের বড় দুর্ভাবনা নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ।
পাঁচ তারকা হোটেলে সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানীদের নিয়ে দেশ-বিদেশ থেকে নামীদামি নায়ক-নায়িকা-মডেল ভাড়া করে এনে ফাহাদ করিম এর মধ্যেই আসরের লোগো, ট্রফি ও বল উন্মোচন করেছেন একাধিক অনুষ্ঠানে। ১ মে হওয়ার কথা ছিল আসরের প্লেয়ার্স ড্রাফটস। সেদিন ড্রাফটসের জায়গায় হয়েছে ট্রফি ও বল উন্মোচন অনুষ্ঠান। কে-স্পোর্টস যে ফ্র্যাঞ্চাইজিও চূড়ান্ত করতে পারেনি, প্লেয়ার ড্রাফটসটা হবেই বা কাদের নিয়ে?
এই অবস্থা এখনো চলমান। ১৫ মে শুরু হওয়ার কথা ছিল খেলা। সেই তারিখও ভেস্তে গেছে। আসলে অনিয়ম-জালিয়াতির আখড়ায় রূপ নেওয়া বাফুফের প্রতি আস্থা হারিয়েছে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। যেচে কেউই চায় না ফাহাদ-সালাউদ্দিনের দেওয়া টোপ গিলতে। এমনকি ফুটবলের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক আছে এমন কোম্পানিগুলোও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
শুরুতে এ আসরটি ছয় দল নিয়ে আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছিল কে-স্পোর্টস। পরে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সাড়া না পেয়ে দলসংখ্যা নামিয়ে আনা হয় চারে। জানা গেছে, বাফুফেকে পৃষ্ঠপোষকতা করা বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে বারবার গিয়েও খেলতে রাজি করাতে পারেননি ফাহাদ। অথচ তারপরও এই ফাহাদে সালাউদ্দিনের আস্থা টলেনি।
সম্প্রতি সালাউদ্দিন, বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি সালাম মুর্শেদী ও বাফুফের নারী কমিটির প্রধান মাহফুজা আক্তারের সঙ্গে দীর্ঘ সভা করেন। বৈঠক শেষে বাফুফে ভবন ছাড়ার সময় ফাহাদ করিম যা বলেছিলেন, তাতে পরিষ্কার নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের কোনো অগ্রগতিই হয়নি।
দেশ রূপান্তরকে ফাহাদ বলেছেন, ‘দুটি ফ্র্যাঞ্চাইজি চূড়ান্ত হয়েছে। বাকিগুলো শিগগিরই হয়ে যাবে। বড় কোনো অগ্রগতি হলে আমি সবাইকে ডেকে জানাব।’
গত সোমবার বাফুফের জরুরি সভা শেষে কাজী সালাউদ্দিন নতুন করে লিগ শুরুর তারিখ ঘোষণা করেন। পরে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘ওমেন্স ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ ১০ জুন থেকে শুরু হবে। ১২ দিনে হবে ১৩ টি ম্যাচ। এটা এখন বলা দরকার যে, ফিফা উইন্ডোতে লিগ করছি। যেন বিদেশি খেলোয়াড় আসতে পারে। না হলে আসতে পারবে না।’
নতুন তারিখ ঘোষণা করেছেন ঠিকই। তবে আদৌ নির্ধারিত তারিখে খেলা হবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট শঙ্কা।
গত বছর নেপালে সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকেই মাঠে ফেরার দিন গুনছেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা। সাফ জয়ের পর সালাউদ্দিন শুনিয়েছিলেন গালভরা বুলি। সাবিনাদের নিয়মিত খেলার ব্যবস্থা করবেন। অথচ লিগের কিছু ম্যাচ ছাড়া আর খেলারই সুযোগ আসেনি। অথচ অর্থ সংকটের খোঁড়া অজুহাত দেখিয়ে বাফুফে মেয়েদের মিয়ানমারে পাঠায়নি অলিম্পিক বাছাই খেলতে।
ফিফা উইন্ডোতেও বাফুফে পারেনি দলের জন্য প্রতিপক্ষ জোগাতে। পাঁচ তারকা হোটেলের চোখ ঝলসানো মায়াবী আলো আর সুরের মূর্ছনায় ফাহাদ করিম আয়োজন করেছিলেন লোগো, ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠান। সেখানে গিয়ে সাবিনারাও দেখেছিলেন বাড়তি কিছু উপার্জনের রঙিন স্বপ্ন। তবে বাফুফের অদূরদর্শী সভাপতি অপ্রস্তুত এক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আয়োজনের দায়িত্ব তুলে দিয়ে যেন সাবিনাদের স্বপ্নটাকেই আরেকবার গলাটিপে ধরতে চাইছেন।
এক লোক হজরত সুফিয়ান সাওরি (রহ.) কে প্রশ্ন করল, নামাজের সময় কাতারের কোন পাশে দাঁড়ানো উত্তম? প্রথম কাতারের ডান পাশে না কি বাম পাশে? তখন সুফিয়ান সাওরি (রহ.) বলেন, প্রথমে দেখো খাবারের জন্য রুটির যে টুকরোটা নিয়েছে তা হালাল না কি হারাম? তুমি কাতারের যেখানেই নামাজ আদায় করো তা তোমার কোনো ক্ষতি করবে না। তুমি নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে খুব ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করো, তুমি নামাজ কোথায় আদায় করবে? অথচ তুমি এমন একটি কাজে লিপ্ত যা তোমাকে নামাজ কবুল হওয়া থেকে বিরত রাখে!
একবার হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে উদ্দেশ করে বলেন, তোমরা কি জানো প্রকৃত দরিদ্র কে? তারা বললেন, দরিদ্র তো সে যার কোনো দিনার-দেরহাম নেই (অর্থকড়ি নেই)। তখন তিনি বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে দরিদ্র সে, কিয়ামতের দিন নামাজ, রোজা ও জাকাতের সওয়াব নিয়ে আসবে; কিন্তু সে একে গালি দিয়েছে, ওকে প্রহার করেছে, অন্যায়ভাবে অন্যের মাল ভক্ষণ করেছে, তখন এই লোক তার সওয়াব থেকে নেবে, ওই লোক তার সওয়াব থেকে নেবে, অতঃপর যখন তার সওয়াব শেষ হয়ে যাবে তখন অন্য পাওনাদাররা তাদের অপরাধগুলো এই লোককে দিয়ে দেবে, এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
এরপর সুফিয়ান সাওরি (রহ.) লোকটিকে বলেন, তুমি প্রথম কাতারে নামাজ আদায় করলে তাতে কী লাভ; যদি তুমি মানুষের হক নষ্ট করো, অন্যের মাল অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো? সুতরাং তুমি হালাল ও পবিত্র খাবার গ্রহণ করো।
নবী কারিম (সা.) বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র এবং তিনি পবিত্র জিনিস ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করেন না এবং তিনি মুমিন বান্দাদের তাই আদেশ করেছেন যা তিনি নবী-রাসুলদের আদেশ করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে রাসুলরা, পবিত্র বস্তু আহার করুন এবং সৎ কাজ করুন। আপনারা যা করেন সে বিষয়ে আমি পরিজ্ঞাত।’ সুরা মুমিনুন : ৫১
এই আয়াতে আল্লাহতায়ালা পবিত্র খাবারকে নেক আমলের পূর্বে এনেছেন। অর্থাৎ নামাজ আদায়, দিনের বেলা রোজাপালন, রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি ও কোরআন তেলাওয়াতের পূর্বে হালাল খাবারকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আল্লাহতায়ালা এখানে রাসুলদের উদ্দেশ করে বলেছেন, হে রাসুলরা! তোমরা হালাল খাবার গ্রহণ করো। এরপর তিনি বলেছেন এবং সৎ আমল করো। অর্থাৎ নেক আমলের পূর্বে হালাল ও পবিত্র খাবার গ্রহণ করো, যাতে হারাম খাবার গ্রহণের কারণে নেক আমলগুলো নষ্ট না হয়ে যায়। এ কারণেই আল্লাহতায়ালা বলেছেন, তোমরা পবিত্র বস্তু গ্রহণ করো এবং সৎ আমল করো।
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) দীর্ঘ সফরে ক্লান্ত ধূলোমলিন চুল ও চেহারাওয়ালা এক লোকের উপমা দিয়ে বলেছেন, সে আসমানের দিকে হাত তুলে বলে, হে আমার রব! হে আমার রব! তিনি বলেন, অথচ তার খানাপিনা হারাম, তার পোশাক-পরিচ্ছেদ হারাম, সে যা ভক্ষণ করে তা হারাম, তাহলে তার দোয়া কবুল হবে কীভাবে?
ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, হালাল খাবার মানুষের মেধা, ইলম ও আমলের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। সুতরাং এ প্রশ্ন করা অবান্তর, আমাদের দোয়া কবুল করা হয় না। দোয়া কবুল না হওয়ার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো হালাল ও পবিত্র খাবার গ্রহণ না করা। বস্তুত সমস্যা দোয়ার মধ্যে নয়, সমস্যা আমার-আপনার মধ্যে। আপনি খাবারকে পবিত্র রাখুন, দেখবেন আপনার দোয়াগুলো কবুল হচ্ছে।
একজন হারাম কজে লিপ্ত, অন্যায়ভাবে মানুষের হক ভক্ষণকারী, শ্রমিকের পারিশ্রমিক পরিশোধ করেন না, বাড়ির অসহায় কাজের মেয়েটির প্রাপ্য ভাতা প্রদান করেন না, অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন না আর সেই আপনিই আবার অভিযোগ করেন আমার দোয়া কবুল হয় না?
একটু ভাবুন, চিন্তা করুন। সর্বদা পবিত্র খাবার খাওয়ার, পবিত্র পোশাক পরিধানের চেষ্টা করুন। দয়াময় আল্লাহ আপনাকে বঞ্চিত করবেন না।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।