
আমাদের সমবয়সী বা কাছাকাছি বয়সের অনেকের সঙ্গে কথা বললে মনে হয়, আগে সব ঠিক ছিল। এখন কোথাও কিছু আলো নেই। সব অন্ধকার। অনেক সময় ঠাট্টা করে আমরা বলি, সবকিছু ‘ব্যাদে’ অর্থাৎ ‘বেদ’-এ আছে। এই ঠাট্টার লক্ষ্য মনুবাদী, মৌলবাদী ধ্যান-ধারণা। যুক্তিতর্কের বাইরে নিছক আবেগ দিয়ে সব বিশ্লেষণ করা। ইদানীং এই প্রবণতা বাড়ছে। এ একধরনের গোঁড়ামি। কিন্তু এই একই মৌলবাদ তথাকথিত প্রগতিশীল বন্ধুদের মধ্যেও দেখলে বেশ অবাক লাগে। বিশেষ করে এ ধরনের চিন্তাভাবনা বেশি দেখা যায় ষাট-সত্তর দশকের প্রজন্মের মধ্যে। এটা ঠিক, সে সময় সারা দুনিয়ায় বাম মতাদর্শ অনেক সক্রিয় ছিল। পশ্চিমবঙ্গের শিল্প-সাহিত্যে শম্ভু মিত্র, উৎপল দত্ত, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃপ্তি মিত্র, কেয়া চক্রবর্তী, বাদল সরকার নাটকে; উত্তমকুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, রবি ঘোষরা চলচ্চিত্রে রাজত্ব করছেন। পরিচালনায় সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক; গানে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, আরতি মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, কিশোর কুমার আরও অনেকে স্বমহিমায় রাজত্ব করছেন। বামপন্থি রাজনীতি আদর্শের পথে এগিয়ে চলেছে। এক এক সময় তো মনে হচ্ছে, বিপ্লব দরজায় কড়া নাড়ছে। দরজা খুলে দিলেই বিপ্লব হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকে পড়বে।
বাস্তবে তা ঘটল না। সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার পতন ঘটার পর থেকেই গেল গেল রব উঠল বিভিন্ন দেশের বামপন্থিদের একাংশের মধ্যে। তারও পরে গোলকায়নের ধাক্কায় অনেকেই হিমশিম খেয়ে, সহজ রাস্তা, মনের সুখে পুরনো স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরলেন। ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম...’। আমি এই অতীত বিলাসীদের থেকে হাজার হাত দূরে।
আদরের ছোট পুত্র শমীর মৃত্যুর খবর যখন এলো রবীন্দ্রনাথ তখন ট্রেনে কলকাতা ফিরছেন। নীরব কবি বিষাদ বুকে নিয়ে চরাচরের দিকে তাকালেন। বাইরের পৃথিবী বড় চমৎকার। ছোট ছোট নদীর জলে মায়াবী চাঁদের আলো বড় সুন্দর। অজানা কোনো পাখি একমনে ডেকে চলেছে। কবি বুঝলেন, পৃথিবীতে ব্যক্তিশোক যতই যন্ত্রণার হোক, বিপুলা পৃথিবী তার মতো করে এগিয়ে চলে। থামার কোনো লক্ষণ নেই। রবিঠাকুর লিখলেন, ‘আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে...’।
মাও সেতুং বলতেন, ‘যা কিছু পুরনো তাই ঐতিহ্য নয়।’ সত্যিই কি আগে সব ভালো ছিল! কালোবাজারি ছিল না, দুর্নীতি! কিংবা অসততা! এসব কি ছিল না? এক-আধজন নিশ্চয়ই বাঘা যতীন, ক্ষুদিরাম বা প্রীতিলতা, কল্পনা দত্ত বা পরের যুগে মৃত্যু-তুচ্ছ-জ্ঞান করা স্বাধীনতা যোদ্ধা থাকলেও ব্রিটিশদের পা ধরে রায়বাহাদুর, খানবাহাদুররা তো সংখ্যায় কম ছিলেন না। কলকাতা শহরের যত ঐতিহাসিক স্থাপত্য, বসত, ঠাকুর দালান অধিকাংশই গড়ে উঠেছিল ব্রিটিশদের মুৎসুদ্দি পুঁজির দৌলতে। বামপন্থি রাজনীতিতে আদর্শবাদ একসময় নিশ্চিত আজকের চেয়ে বেশি ছিল। কিন্তু তখনো সবাই লেনিন ছিলেন এরকম ভাবার কোনো কারণ নেই। অনেক আগুনখেকো বিপ্লবীর আসল চেহারা শুনলে চমকে যেতে হবে। আমার বাবা বলতেন, জেলে গেলে বোঝা যায় কমরেডদের আসল চেহারা। সামান্য মাছের টুকরো নিয়ে যেভাবে কেউ কেউ কামড়া-কামড়ি করেন, দেখে কে বলবে এরাই সাম্যবাদী সমাজের রূপকার!
জীবন আসলে নদীর মতো। কখনো একদিক শুকিয়ে যায়। চড়া পড়ে। ভাঙনে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় বিস্তীর্ণ এলাকা। কিন্তু অন্য দিকে স্রোতে ভেসে যায়। চড়াতে নতুন বসতির পত্তন হয়। গড়ে ওঠে নতুন স্বপ্ন। এভাবেই সভ্যতা বয়ে চলে নিরন্তর। শতাব্দীর পর শতাব্দী। হাজার বছর ধরে চেষ্টা করতে করতে মানুষ একদিন পাথরে পাথর ঘষে আগুন জ্বালাতে শিখেছিল। আজ সে প্রযুক্তি ব্যবহার করে চাঁদে অবধি পৌঁছে গেছে।
কয়েক দশক আগেও হিন্দু ঘরে বাবাকে সন্তান আপনি সম্বোধন করত। আজ অনেক সংসারেই বাবা-মা দুজনেই সন্তানের বন্ধু হয়ে গেছেন। একদা যে দূরত্ব ছিল তা আজ আর নেই। স্নেহ তখনো ছিল। এখনো আছে। তার প্রকাশভঙ্গি পাল্টে গেছে। একটা সময় ছিল যখন কুন্দনলাল সায়গল, কানন দেবী বা কৃষ্ণ চন্দ্র দের গান লোকের মুখে মুখে ফিরত। এখন তারা নতুন প্রজন্মের কাছে বাতিল হয়ে গেছেন। নতুন কত শিল্পী উঠে আসছেন রোজ। আমরা খোঁজও রাখি না। কোক স্টুডিওতে ভালোমন্দ কত গান শুনি। অনেকেই তরুণ। অনেকের নামও আগে শুনিনি। কিন্তু রাতে একা শুনলে বেশ লাগে।
নিজেও মাঝেমধ্যে বলি বটে, লেখা আর আগের মতো নেই। সত্যি কি তাই! এই পশ্চিমবঙ্গেই মুখে মুখে দশজনের নাম বলে দিতে পারি যারা তথাকথিত অনেক প্রতিষ্ঠিত লেখকের রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। করপোরেট পুঁজি আগ্রাসী চেহারা নিয়ে সমাজের মূল্যবোধ বদলে দিচ্ছে। তার ভেতরেও কত মানুষ কত কত কাজ করে চলেছেন তা আমরা দেখেও দেখি না। যে গায়ক আদ্যোপান্ত সুবিধাবাদী, সেও মঞ্চে দাঁড়িয়ে ডাক্তারদের পেশা নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাততালি কুড়োচ্ছেন। কভিডকালে কত ডাক্তার জীবন তুচ্ছ করে রোগী দেখতে দেখতে মারা গেছেন এটাও সত্যি। আগে মাস্টারমশাইরা কত ভালো ছিলেন। এখন সবাই খারাপ? নিশ্চয়ই অনেক ফাঁকিবাজ, অসৎ লোক শিক্ষা জগতে আছেন। পাশাপাশি কোনো দিন টিউশনি না করে অবসর সময়ে বিনা পয়সায় ছেলেমেয়েদের পড়া দেখিয়ে দিচ্ছেন এ-রকম উদাহরণও কম নেই। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা কত নতুন নতুন পেশায় প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে, যা আগে আমরা কখনো ভাবিনি। বিজ্ঞাপন, হোটেল ম্যানেজমেন্ট, ফ্যাশন ডিজাইনার, আইটি, ব্যবস্থা আরও কত। সবাইকে স্রেফ ভোগবাদী, স্বার্থপর বলতে আমি অন্তত রাজি না। করোনা সংকটের মধ্যে রেড ভলেন্টিয়ার্সের ভূমিকা ইতিহাস মনে রাখবে। এই নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাই আজও গণআন্দোলনের সামনে থাকে। সারা দেশে। এন.আর.সি’র সময় শাহীনবাগের লড়াই ভোলার নয়। এখনো উমর খালিদের মতো ছেলে জেলে থাকে, আমরা যারা ‘ধুর কোথাও কিছু নেই’ বলে হতাশা জনমনে চারিয়ে দিতে সক্রিয়, তারা শুধুই সমালোচনা করি।
গ্রামের পর গ্রামে ঘুরি। স্কুলে যাই। কলেজেও। অনেক খারাপ অভিজ্ঞতা হয়। পাশাপাশি কত ঝকঝকে মুখ দেখি। সোজা হয়ে হাঁটছে। মাটির সঙ্গে যোগ না থাকলে ওই গেল গেল করা ছাড়া রাস্তা নেই। নিন্দুকেরা শুধুই অন্ধকার দেখেন। আমি আলোর খোঁজ করি। প্রাণ বিপন্ন করে মানুষের পাশে থাকা তরুণের মুখের দিকে আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি। গজদন্ত মিনারে বসে ঠিক সুরে রবীন্দ্র সংগীত শুনে তারিফ নিশ্চয়ই করব। কিন্তু গিটার হাতে নিয়ে ঈষৎ বেসুরে যে মেয়েটি জীবনের গান গাইছে, আমি আস্তে করে তার পিঠে হাত রাখব। জীবন কখনো থেমে থাকে না। তাকে হারিয়ে দেওয়া কঠিন, বড্ড কঠিন।
লেখক : ভারতীয় প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা ও লেখক
১১ ডিসেম্বর ১৯২২ তখনকার ব্রিটিশ ভারতের, এখনকার পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের পেশোয়ার শহরের কিসসাখানি বাজারের একটি ফল ব্যবসায়ী পরিবারে মোহাম্মদ ইউসুফ খান জন্মগ্রহণ করেন। বাবা লালা গুলাম সারওয়ার খান এবং মা আয়েশা বেগম। এক দিন বাবার চোখে পড়ল রাস্তার দেয়ালে সিনেমার পোস্টার। তাতে সিনেমার নায়কের যে ছবি তা ইউসুফ খানের বলেই তিনি মনে করলেন, কিন্তু নাম ভিন্ন, দিলীপ কুমার। তিনি নিশ্চিত হতে চান। বাড়ি ফিরে ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন।
পোস্টারে লেখা আছে দিলীপ কুমার অভিনীত জোয়ার ভাটা। সেদিন তার বাবার সঙ্গে ছিলেন দেওয়ান বাশেশ^রনাথ কাপুর (ইউসুফের বন্ধু, একই এলাকার রাজ কাপুরের দাদা), তিনিও সন্দেহ করলেন এই ছেলে ইউসুফ না হয়ে যায় না। দুজন একসঙ্গে টোঙ্গাতে ফিরছিলেন। সন্দেহ কাপুরেরও।
লালা গুলাম সারওয়ার খান বললেন, ‘সিনেমার পোস্টারে দিলীপ কুমার নামের একটি ছেলেকে দেখলাম। কসম খোদার সে দেখতে তোর মতো। পোস্টারের ছেলেটি কি তুই?’
ছেলে নিশ্চুপ, ক্ষুব্ধ লালাজি বললেন, ‘জবাব দে, পোস্টারের ছেলেটি তুই, না অন্য কেউ?’
কোমল ও আতঙ্কিত কণ্ঠের জবাব, ‘হ্যাঁ আমি’।
তারপর প্রবল একটা চড় পড়ল তার গালে, মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন। মেঝেতে পড়ে রইলেন, পাঁচ আঙুল বসে গেছে।
পরের আদেশ, ‘এ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যা।’
এ বছরই প্রকাশিত ফয়সাল ফারুকীর ‘দিলীপ কুমার : ইন দ্য শ্যাডো অব অ্যা লেজেন্ড’ গ্রন্থে দিলীপ কুমারের বলা এ কাহিনী প্রকাশিত হয়েছে।
যদি মা আয়েশা খাতুন ও বড় বোন সকিনা না থাকতেন তাকে বাড়িছাড়া হতে হতো।
‘আমি সিনেমায় থাকার কথা কখনো ভাবিনি, আমার প্রিয় কোনো অভিনেতা-অভিনেত্রীও ছিলেন না। আমি দেখেছি আমাদের খাবার জোগাড় করতে আমার আব্বা-আম্মা উদয়াস্ত পরিশ্রম করতেন। কিছু কামাই করে তাদের ভার কিছুটা লাঘব করার চেষ্টাই আমার ছিল।
দিলীপ কুমার কাহিনীর বাকি অংশ তার আত্মজীবনী ‘দ্য সাবস্ট্যান্স অ্যান্ড দ্য স্যাডো : অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’র ‘দ্য টার্নিং পয়েন্ট’ অধ্যায় থেকে কিছুটা সংক্ষেপে উপস্থাপন করছি :
আমি এক দিন সকালে চার্চগেইট স্টেশনে অপেক্ষা করছি, সেখান থেকে লোকাল ট্রেনে সেন্ট্রাল বোম্বের দাদর যাব। সেখানে একজনের সঙ্গে দেখা করব, তিনি একটা ব্যবসা দিতে পারেন। ব্যাপারটা ক্যান্টনমেন্টে সেনাবাহিনীর জন্য কাঠের খাট সরবরাহ-সংক্রান্ত। সেখানে ডক্টর মাসানিকে দেখতে পেলাম। তিনি একজন মনোবিজ্ঞানী, একবার উইলসন কলেজে এসেছিলেন তখন আমি সেখানকার ছাত্র। উইডলসনে আমি এক বছর পড়াশোনা করেছি। চার্চগেইট স্টেশনে আমি এগিয়ে তার কাছে যাই এবং নিজের পরিচয় দিই। যেহেতু তিনি আমার আব্বার পরিচিত আমাকে চিনবেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইউসুফ এখানে কী করছো?’
আমি বললাম চাকরির খোঁজ করছি কিন্তু তেমন কিছু চোখে পড়ছে না। তাই ব্যবসায়ের চেষ্টা করছিলাম। তিনি বললেন, তিনি বোম্বের পশ্চিম উপশহরের দিকে মালাদ-এ যাচ্ছেন সেখানে সিনেমা স্টুডিও বোম্বে টকিজ-এর মালিকের সঙ্গে দেখা করবেন। তিনি বললেন, তুমি যদি আমার সঙ্গে যেতে চাও চলো, তাদের সঙ্গে দেখা হবে। তোমার জন্য তাদের কাছেও কোনো চাকরি থাকতে পারে। খুব সাদামাটাভাবে তিনি কথাগুলো বললেন। আমি এক মুহূর্তের জন্য ভেবে দাদর যাওয়ার ব্যাপারটা বাদ দিলাম এবং তার সঙ্গে যোগ দিলাম। রেলওয়েতে আমার একটা ফার্স্ট ক্লাস সিজন টিকিট ছিল, কিন্তু সেটা বান্দ্রা পর্যন্ত, মালাদ বান্দ্রা পেরিয়ে আরও ১৮ মাইল দূরে। ডক্টর মাসানি টিকিট চেকারকে চিনতেন। সুতরাং বর্ধিত অংশের একটা টিকিট পেয়ে গেলাম। যদিও স্টেশন থেকে বোম্বে টকিজ খুব কাছে তবুও তিনি ট্যাক্সি নিলেন, কারণ লাঞ্চটাইম প্রায় হয়ে গেছে, তিনি চিন্তিত বোম্বে টকিজ-এর বস মিসেস দেবিকা রানী দুপুরের খাবার খেতে আবার না বাসায় চলে যান।
***
এর আগে আমি জীবনেও কখনো সিনেমার স্টুডিও দেখিনি, এমনকি স্টুডিওর ছবিও না। আমি রাজ কাপুরের কাছে বোম্বে টকিজের কথা শুনেছি। তার পিতা পৃথ্বীরাজ কাপুর অভিনীত সিনেমার শ্যুটিং হতো এখানে। বহু একর জমিনের ওপর ছড়িয়ে আছে বোম্বে টকিজ স্টুডিও, একটা বাগান, বাগানে একটা ঝরনা। এর অফিস ভবন দেখতে সনাতন অফিসের মতো নয়, বাংলোর মতন।
ডক্টর মাসানি যখন প্রবেশ করলেন দেবিকা রানী তাকে উষ্ণ সম্ভাষণ জানালেন এবং তাকে বসতে বললেন। পরিচিত হওয়ার জন্য আমি যখন দাঁড়িয়ে আছি তিনি বিস্মিত চোখে আমার দিকে তাকালেন। তিনি রুচিশীলতার প্রতিমূর্তি, ডক্টর মাসানি যখন আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন নমস্তে বলে আমাকে স্বাগত জানিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসতে বললেন। কিন্তু তার দৃষ্টি আমার ওপর নিবদ্ধ যেন আমাকে নিয়ে তিনি কিছু একটা ভাবছেন। তিনি আমাদের অমিয় চক্রবর্তীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন, পরে জেনেছি তিনি বিখ্যাত পরিচালক; তিনি সোফায় বসেছিলেন। দেবিকা রানী আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমি উর্দুতে ভালো কি না। আমি ‘হ্যাঁ’ বললাম। ডক্টর মাসানি আমার পেছনের ইতিহাস ব্যাখ্যা করলেন; বললেন আমরা পেশোয়ার থেকেই উঠে এসেছি। আমার বাবার কথা, তার ব্যবসায়ের কথা বললেন। তিনি আগ্রহ নিয়ে শুনলেন, আমি তার মুখের দিকে তাকাই, স্বাভাবিক দ্যুতিময়তা ও সুস্বাস্থ্যের প্রমাণ তাতে। তিনি কেবল আমার উর্দু জ্ঞানের কথা শুনলেনএতে কোন ধরনের চাকরি তিনি আমাকে দিতে পারেন আমি তাই ভাবছিলাম।
তিনি আমার দিকে ফিরে মিষ্টি হেসে আমাকে যে প্রশ্নটা করলেন তা আমার জীবনের ধারা সম্পূর্ণভাবে এবং অপ্রত্যাশিতভাবে বদলে দিল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন আমি অভিনয় করতে চাই কি না? মাসে সাড়ে বারোশো টাকা বেতনে তা করতে রাজি কি না? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। ডক্টর মাসানির দিকে যখন তাকালাম তাকেও বিস্মিত মনে হলো। তিনি কাঁধ নাড়লেন, আমি বুঝতে পারলাম আমাকে হ্যাঁ বলানোর এটা একটা সংকেত। আমি বেহুদা চিন্তা করে সময় নষ্ট করার মানুষ নই। সুতরাং আমি হাসিমুখে তার হাসির জবাব দিতে গিয়ে বললাম, এটা তার বিশেষ দয়া যে অভিনয় করার একটা চাকরি তিনি আমাকে দিচ্ছেন। কিন্তু আমার কোনো অভিজ্ঞতা নেই, ফিল্ম সম্পর্কে ধারণাও নেই। তা ছাড়া আমি জীবনে একটি মাত্র সিনেমা দেখেছি, সেটাও একটা যুদ্ধের ডকুমেন্টারি। দেওলালির সৈনিকদের জন্য ছবিটি নির্মিত।
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের পারিবারিক ফল ব্যবসায়ী তুমি কতটা অভিজ্ঞ? আমি বললাম, আমি শিখছি, বেশি অভিজ্ঞতার দাবি করতে পারব না।
তিনি বললেন, এই তো ফলের ব্যবসায় এসে তুমি ফল, ফলচাষএসব সম্পর্কে যেমন শিখছো সিনেমা তৈরির শৈলী, অভিনয় এসব একইভাবে শিখে নিতে পারবে। আমার একজন তরুণ, সুদর্শন এবং শিক্ষিত অভিনেতা দরকার। আমি দেখতে পাচ্ছি তোমার মধ্যে ভালো অভিনেতা হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে।
লাঞ্চের সময় এসে গেল, আমরা তার সঙ্গে লাঞ্চে যোগ দেব কি না আন্তরিকভাবেই জিজ্ঞেস করলেন। ডক্টর মাসানি বিনীতভাবে জানালেন লাঞ্চ করবেন না, বিদায় দিয়ে চলে এলেন, আমি তাকে অনুসরণ করলাম। ফেরার পথে ডক্টর মাসানি তেমন কথা বললেন না। দ্রুতগতিতে ছোটা রেলের শব্দ এবং চাকরির অফারের বিস্ময় আমাদের দুজনকে নির্বাক করে দিয়েছে। আমি যে সিনেমা ও অভিনয় নিয়ে কিছুই জানি না এটা আমাকে আর বিচলিত করেনি। ট্রেনের দুলুনিতে আমার মধ্যে যখন আয়েশি ভাব এসে গেল আমি ভালো বোধ করলাম এবং এত বেতনের জন্য কৃতজ্ঞ বোধ করতে থাকলাম। এখন আমার লিখিত সম্পত্তির অপেক্ষা।
* * *
বাড়ি ফিরে ভাইদের মধ্যে তার বড় জন আইয়ুব সাহাবকে তার চাকরির সাড়ে বারোশো টাকা বেতনের অফারটার কথা বললেন (পারিবারিক সংস্কৃতিতে বড় ভাইকে শুধু নাম ধরে ডাকা যাবে না, নামের সঙ্গে সাহাব যোগ করতে হবে, কিন্তু ইউসুফ আইয়ুবকে নাম ধরে ডেকে বকা ও মারও খেয়েছেন।) আইয়ুব বললেন, চাকরি ঠিকই আছে তবে বেতন বছরে সাড়ে বারোশো টাকা। তিনি আরও বললেন, রাজ কাপুর বোম্বে টকিজ থেকে মাসে ১৭০ টাকা পান, এটা তার জানা আছে। আমার মনে হলো আইয়ুব ঠিকই বলেছেন। আমাকে প্রতি মাসে এত টাকা তিনি কেমন করে দেবেন? আমি বুঝলাম আসলেই বছরে সাড়ে বারোশো। আমি ভাবলাম এ চাকরি গ্রহণ করার মানে নেই, তাতে আমার আব্বার ভার তেমন কমবে না।
আইয়ুব ছাড়া বাড়ির কেউ আর আমার এই চাকরি পাওয়ার কথা জানেন না। আমার সবচেয়ে বড় ভাই নূর সাহাব এসব নিয়ে কখনো ভাবেন না, তিনি তার নিজস্ব ভুবনে বাস করেন। তাকে কেবল খাবার সময় বাড়িতে দেখা যায়। আমি ভাবলাম আমার সিদ্ধান্তটি আগে ডক্টর মাসানিকে জানানো সমীচীন হবে। আমি চার্চগেইটে তার বাড়িতে গিয়ে হাজির হলাম, বললাম, ইলেকট্রিক ট্রেনে প্রতিদিন মালাদ আসা-যাওয়া করে যে খরচ হবে তাতে বছরে সাড়ে বারোশো টাকায় আসলে পোষাবে না।
কিন্তু তিনি নিশ্চিত বছরে নয় মাসে ১২৫০ টাকা। তিনি আমার সামনে নিজে থেকেই দেবিকা রানীকে ফোন করে বেতনটা নিশ্চিত হলেন, তিনি যেভাবে ফোন ধরে থাকলেন তাতে আমার মনে হলো তিনি অপর প্রান্ত থেকে সুখকর কিছু শুনছেন। রিসিভার রেখে তিনি বললেন, বার্ষিক নয় মাসিক ১২৫০; দেবিকা মনে করেন আমি প্রতিশ্রুতিশীল, কাজেই আমি সানন্দে গ্রহণ করতে পারি এমন অফারই তিনি দিয়েছেন। পরদিন দুপুরের খাবারের পর চার্চগেইট স্টেশনে ডক্টর মাসানির সঙ্গে দেখা করি। বছরটা ১৯৪২, দিনটা শুক্রবার, তারিখটা মনে নেই। নামাজের পর, ভালো ভোজনের পর আমি নীরবে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম। কেউ জানে না আমি কোথায় যাচ্ছি।
ইউসুফ খান এসে হাজির হলেন বোম্বে টকিজ-এ; দেবিকা রানী বুঝতে পারলেন ইউসুফ চাকরির অফারটা যে গ্রহণ করেছেন তা নিশ্চিত করতে এসেছেন। সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরে আয়েশা বেগমকে বললেন, ‘আম্মা আমি মাসে ১২৫০ টাকা বেতনের একটা চাকরি পেয়েছি, তাতে আপনার রান্নাঘরের খুচরো খরচ, আর আমার ভাই-বোনদের পড়াশোনার খরচটা মেটানো যাবে।’
কিন্তু এত টাকার চাকরি, কাজটা কী? সন্দিগ্ধ আয়েশা খাতুন জিজ্ঞেস করলেন।
তিনি বললেন, সম্মানজনক কাজ, উর্দুতে ভালো বলেই কাজটা পেয়েছেন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ আর ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এই উন্মাতাল সময়ে উর্দুর ভালো জ্ঞান হয়তো গুরুত্বপূর্ণইমা তাই ভাবলেন। মা বোঝেননি এটা ইউসুফ খানের দিলীপ কুমার হওয়ার চাকরি।
লেখকঃ কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক
কাবাডি বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হলেও ফুটবল বাঙালির রক্তে মিশে আছে। আবাহনী, মোহামেডান, শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব, ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাব, রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস ক্লাবসহ দেশের নানা প্রান্তে অসংখ্য ফুটবল ক্লাব বেশ উজ্জ্বল সময় পার করেছে। নদীবিধৌত বাংলাদেশের নদীর চর আর গ্রামের বিস্তীর্ণ মাঠে কিশোর থেকে যুবক সবাই ফুটবল খেলে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন। শহর থেকে গ্রাম যেখানেই ফুটবলের আয়োজন সেখানে কিশোর থেকে বৃদ্ধ খেলা দেখতে ভিড় করেন। ফুটবলের এই এক অদ্ভুত শক্তি সব বয়সীদের আকর্ষণ করতে পারে। বাংলাদেশে ফুটবল একটা জনপ্রিয় খেলা হলেও দেশের জাতীয় ফুটবল দলের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্য নেই বললেই চলে। অব্যবস্থাপনায় জেলা পর্যায়ের ক্লাবগুলোতে কালভদ্রেও প্র্যাকটিস হয় না। যদিও আমাদের অনূর্ধ্ব ১৭ নারী ফুটবল দল সম্প্রতি সাফ শিরোপা জিতে এসেছে। তাদের এই শিরোপা জয় সারা বাংলাদেশের মানুষ উদযাপন করেছে। এয়ারপোর্টে জয়ী দলকে দেওয়া হয় অভূতপূর্ব সংবর্ধনা। ফলে সহজেই অনুমেয় বাংলাদেশের মানুষ ফুটবল নিয়ে কতটা আগ্রহান্বিত।
ইদানীং কালের ফুটবল আলোচনা ও আগ্রহ ইউরোপীয় কিছু ক্লাব ও লাতিন আমেরিকার দুই দল আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের ফুটবল ম্যাচেই সীমাবদ্ধ থাকছে। বিশ্বকাপ এলে দেশের গ্রাম থেকে শহর সবখানে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পতাকায় ছেয়ে যায়। এটা নিয়ে নানা ধরনের সমালোচনাও এসেছে। সংসদে একবার বিদেশি পতাকা ওড়ানোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও উঠেছিল। বরাবরের মতোই এবারের বিশ্বকাপ উপলক্ষেও আমাদের দেশের তরুণ-তরুণীরা ব্রাজিল আর্জেন্টিনার জার্সি পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিদেশি ক্লাব ও ভিনদেশের ফুটবলের প্রতি তরুণ প্রজন্মের বিশেষ আগ্রহের কারণ দেশের মাঠে আর ফুটবল নেই। এখন ফুটবলের আনন্দ খুঁজতে দর্শককে নির্ভর করতে হয় টিভি স্ক্রিনে।
ক্রিকেটে বাংলাদেশের মানুষকে বিদেশি দল সমর্থন করে তাদের জার্সি গায়ে দিয়ে ঘুরতে দেখা যায় না। কিন্তু ফুটবলে দেখা যায়। কারণ আমাদের দেশে ফুটবলের আমেজ আছে কিন্তু ফুটবল নেই। ২০১০-২০১২ সালের দিকে একটা বিজ্ঞাপন দেখা যেত ‘২০২২ বিশ্বকাপ আমাদেরও স্বপ্ন’। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) থেকে এই ধরনের একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল। এমনকি সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেছেন, ‘বিশ্বকাপ ফুটবলে বাংলাদেশ নেই এটা কষ্ট দেয়’। কিন্তু বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ফুটবলে থাকতে পারা খুব একটা অসম্ভব না। বাংলাদেশে একটা ক্রেজি ফুটবল ফ্যান আছে, এটাই যথেষ্ট বিশ্বকাপ ফুটবলে জায়গা করে নিতে। আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার এমন সব দেশ বিশ্বকাপ ফুটবলে দাপট দেখাচ্ছে যেখানে মানুষ দু’বেলা খাবার পায় না। দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে দেশের অর্ধেক মানুষ। বুট কেনার টাকা হয় না ফুটবলারদের। সেখানে শুধুমাত্র ফুটবলপাগল জনগণের সমর্থনে পায়ের জোর খুঁজে পায় ফুটবলাররা। দুঃখের বিষয় ফুটবলপাগল একটি বড় দর্শক থাকার পরও যথাযথ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে আমাদের দেশের ফুটবলকে আমরা মাঠে নিয়ে আসতে পারছি না। ২০০৬ সালে ফরাসি ফুটবলার জিনেদিন জিদান একবার ঢাকা সফর করেন। সে সময় দেশের মানুষ নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা ও হরতাল অবরোধে ত্যক্ত-বিরক্ত। জিদান তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে রাষ্ট্রপ্রধান তাকে নির্বাচনের পর্যবেক্ষক হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সফরের প্রথম দিন গ্রামীণ ব্যাংক ভিজিট করে দ্বিতীয় দিন আবাহনী ও মোহামেডানের অনূর্ধ্ব ১৬ দলের প্রীতি ম্যাচে অংশ নিয়েছিলেন জিদান। দিনটি ছিল ৭ নভেম্বর। সেদিন ঢাকা শহরের মানুষ রাজনৈতিক অস্থিরতার বিরক্তিকে পাশ কাটিয়ে ‘জিদান উৎসবে’ মেতেছিল। আর ঢাকার বাইরে টিভির সামনে ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়। নিজ দেশে প্রিয় ফুটবলারের পায়ের জাদু দেখার সাক্ষী হয়েছিল হাজার হাজার মানুষ। তারা সমস্ত নিরাশা হতাশা ভুলে সেদিন ফুটবল উদযাপনে নিজেদের আনন্দ খুঁজে নিয়েছিল। সেদিনটিই সাক্ষী বাংলাদেশের মানুষ কতটা ফুটবলপাগল।
খেলায় রাজনীতি : অনেক দেশের মধ্যে যুদ্ধের সমাপ্তি হয়েছে খেলার মধ্য দিয়ে আবার মাঠেই হয়েছে অনেক যুদ্ধের সূচনা। যতই বলি খেলার সঙ্গে রাজনীতি মেশাবেন না কিন্তু খেলায়ও রাজনীতি আছে। আধুনিক যে জাতীয়তাবাদের ধারণা সেখানে একটি জনপ্রিয় কনসেপ্ট হলো দেশপ্রেম। যেখানে রাষ্ট্রকে মহান করে তোলা ও রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের আবেগ আনুগত্যকে বিশেষ মানদ- ধরা হয়। ভাষা, সংস্কৃতি, জাতীয় পতাকার পাশাপাশি জাতীয় ক্রীড়া দলও সে জাতীয়তাবাদের ধারক হয়ে উঠেছে। ফলে জাতীয় ক্রীড়া দলের অর্জনকে জাতির অর্জন ও গৌরবের বিষয় হিসেবে দেখা হয়।
যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙে তখন ছোট ছোট দেশগুলো জাতিসংঘের সদস্য হওয়ার আগে ফিফার সদস্য হওয়ার চেষ্টা করেছিল। কলকাতার ইস্ট বেঙ্গল, মোহনবাগান ক্লাব দুটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ও উপমহাদেশের ধর্মীয় রাজনীতির ইতিহাস। যুক্তরাজ্যের স্বাধীনতাকামী অঞ্চল ওয়েলস ফুটবল দল ও স্কটল্যান্ড ক্রিকেট টিমের মাধ্যমে তাদের স্বতন্ত্র জাতিসত্তার প্রকাশ করছে। এমনকি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতে ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল টিম’ অসংখ্য প্রীতি ম্যাচ খেলেছে। কাতারের ওপর সৌদির অবরোধ তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় সৌদি-কাতার প্রীতি ফুটবল ম্যাচ দিয়ে।
১৯৬৮ সালের অলিম্পিকে ‘দি ব্ল্যাক পাওয়ার স্যালুট’ এর ঘটনা ঘটে, যা ছিল আমেরিকার কালো মানুষের অধিকারের পক্ষে যুগান্তরকারী এক প্রতিবাদ। দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা নিরসন করে ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ককে পুনঃস্থাপন করা হয় একটি টেবিল টেনিস টুর্নামেন্টের মাধ্যমে, ইতিহাসে যা পিং পং কূটনীতি নামে পরিচিত। এই বিশ্বকাপে ইসরায়েল ও আর্জেন্টিনার মধ্যে জেরুজালেমে একটি প্রীতি ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল। এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে মূলত ইসরায়েল জেরুজালেম শহরকে নিজেদের বলে বিশ্বদরবারে উপস্থাপন করতে চেয়েছিল। এই রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি বুঝতে পেরে ইসরায়েলের পরিকল্পনায় লাল কার্ড দেখানো হয়েছে। বর্তমানে কাতার বিশ্বকাপে ফিলিস্তিন দল না খেললেও স্টেডিয়ামে স্টেডিয়ামে উড়ছে ফিলিস্তিনের পতাকা। মূলত কাতারে বসবাসরত ও বিভিন্ন দেশ থেকে কাতার ভ্রমণ করা ফিলিস্তিনি নাগরিকরা পতাকা তুলে ধরে নিজেদের দেশের ব্রান্ডিং করছে। সেই সঙ্গে ইসরায়েলের দখলদারিত্বের প্রতিবাদ জানাচ্ছে। ইরানের অনেক সমর্থক তাদের দেশে হিজাব না পরায় পুলিশি গুলিতে নিহত মাশা আমিনির ছবি দেখিয়ে তার মৃত্যুর প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এমনকি ইরানের ফুটবল দল ম্যাচ শুরুর আগে জাতীয় সংগীত না গেয়ে সে দেশে চলমান আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে। বিশ্বরাজনীতিতে বর্তমানে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র ঘোরতর শত্রু। দুই শত্রু যখন বিশ্বকাপে কাতারে মুখোমুখি তখন এমন একটি উত্তেজনা ও আতঙ্ক তৈরি হয় যেন খেলা নয় যুদ্ধ হবে। যতই খেলাকে আলাদা করার কথা বলা হোক। খেলা রাজনীতির এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠেছে।
জঙ্গি হামলার পর নিরাপত্তার অজুহাতে পাকিস্তানে কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট ও সামিট হচ্ছিল না তখন নিজ দেশের ব্রান্ডিংয়ের জন্য বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়া টিমকে বিশেষ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে পাকিস্তানে টুর্নামেন্ট খেলার আমন্ত্রণ জানায়। কাতার বিশ্বকাপের মাধ্যমে বিশ্বের ৮০০ কোটি মানুষের মধ্যে ৫০০ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে কাতারের নাম। ফলে ক্রীড়া, ক্রীড়া আসর এসব কিছু রাজনীতি ও রাজনৈতিক অর্থনীতির অংশ চাইলেই এসবকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই।
আমাদের উৎসবের সীমা : হাজার হাজার মাইল দূরে ফুটবল ম্যাচ নিয়ে আমাদের দেশের মানুষের উৎসব ও উৎসব প্রস্তুতির শেষ নেই। দর্শক প্রিয় দলের জার্সি কিনছে, পতাকা কিনছে। বিজয় র্যালি করছে, তর্ক করছে, বিতর্ক করছে। ফেইসবুকে খুনসুটি করছে। সবই উদযাপনের অংশ। তবে সে উদযাপন প্রায়শই সীমা অতিক্রম করছে। ফেইসবুকের খুনসুটি মাঝে মাঝে ঘৃৃণাসূচক আচরণে রূপ লাভ করছে। অনেক সময় আলোচনা থেকে মারামারি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে। আমরা ভিন্ন একটি টাইম জোনে হওয়ায় বেশিরভাগ খেলা হচ্ছে রাতের বেলা। রাতের বেলা বড় স্ক্রিনে বাড়ির বাইরে খেলা দেখতে ও উৎসব করতে গিয়ে অনেকে সাধারণ মানুষের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। রাত ২/৩টা বাজে মোটরসাইকেলের হর্ন বাজিয়ে, র্যালি করে মাঝরাতে বাচ্চা ও বৃদ্ধদের ঘুম নষ্ট অগ্রহণযোগ্য আচরণ। কারণ এতে ভোরের শিফটে স্কুলগামী বাচ্চাদের সকালের স্কুল মিস হচ্ছে, বাড়ির বৃদ্ধ ও অসুস্থ রোগীরা ঘুমজনিত সমস্যায় ভুগছেন। মাঝরাতে যখন সবদিক নিস্তব্ধ তখন এসব শব্দদূষণ ব্যাপকভাবে আঘাত করার সুযোগ পায়। ফলে আমাদের খেয়াল রাখা উচিত কোনো উৎসব আনন্দ যেন কোনোভাবে অন্যের ক্ষতির কারণ না হয়। লেখকঃ কলামিস্ট
কয়েক বন্ধু মিলে পরিকল্পনা করছিল সমুদ্রে ঘুরতে যাওয়ার। এজন্য তারা আলাপ-আলোচনা করতে মেসেঞ্জারে ‘সাম্পান’ নামে একটি ক্লোজ গ্রুপ খোলেন। তাদের সেই গ্রুপে সাগরে নামার জন্য সাম্পান ভাড়া, নাবিক সংগ্রহ, নিরাপত্তা সরঞ্জাম, টর্চলাইট, রান্না ও নিরাপত্তার জন্য ছুরি, তাঁবু ইত্যাদির তথ্য আদান-প্রদান করছিল। নানান বিষয়ের মধ্যে সেখানে বেকারত্বে থাকা এক বন্ধু সাগর পথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া চলে যেতে চেয়েও মজা করে এবং অন্যরা তাতে সায় দেয়, হাসে। দিন, তারিখ ঠিক হওয়ার পর, বন্ধুরা সাগর ভ্রমণ করতে কক্সবাজারের উদ্দেশে বাসে করে যাত্রাও করল। বিপত্তিটা শুরু হয় তৃতীয় পক্ষের অচেনা এক লোক ওই বন্ধুদের কারও মোবাইল পেয়ে ‘সাম্পান’ গ্রুপের মেসেজ দেখে এবং তাদের ‘মানব পাচারকারী’ সন্দেহ করে বসে। ওই তৃতীয় পক্ষের লোকটি পুলিশকে ‘সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া’ গমন ঠেকাতে এগিয়ে আসতে বলে। ভ্রমণপিপাসু বন্ধুদের কাল্পনিক এই ঘটনার মতো আমরা কি মোবাইলের মেসেজের ওপর নির্ভর করে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারি? মোবাইল ফোনে আমরা খুবই ব্যক্তিগত পরিসরে, আন্তরিক শব্দ ও হাস্যরসে এমন অনেক কথাই বলি, শেয়ার করি যা আমরা পাবলিক করতে চাই না। কথা হচ্ছে মানুষ তাদের ব্যক্তিগত পরিসরে কথা বলতে নানা ধরনের পরিভাষা, ইঙ্গিত ব্যবহার করে, যা অন্যদের কাছে একই সঙ্গে অপ্রাসঙ্গিক, এমনকি যথেষ্ট শোভন নাও মনে হতে পারে; কিন্তু তা তো অপরাধ নয়।
রাজনৈতিক নেতাকর্মী, বিশেষ করে সরকারবিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি করা; গ্রেপ্তার করা; সন্দেহভাজন কাউকে ৫৪ ধারায় আটক করা এমনকি বিরোধী মতের লোকজনের ওপর লাঠিপেটা করাও পুলিশের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড। আবার পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে মাদক মামলার আসামি করার অভিযোগও আছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে মেসেজ, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার চেক করার মতো ঘটনার খবরও আমাদের পড়তে হলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস ১০ ডিসেম্বরের দুই দিন বাকি থাকতে, ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় মহাবেশকে কেন্দ্র করে ‘নিরাপত্তার’ প্রশ্নে! এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চোখ বন্ধ করে থাকতে পারে না।
১৯৪৮ সালে ঘোষিত জাতিসংঘ মানবাধিকার ঘোষণার ১২ নম্বর আর্টিকেলে বলা হয়েছে, ‘কারও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কিংবা তার গৃহ, পরিবার ও চিঠিপত্রের ব্যাপারে খেয়ালখুশিমতো হস্তক্ষেপ কিংবা তার সুনাম ও সম্মানের ওপর আঘাত করা চলবে না। এ ধরনের হস্তক্ষেপ বা আঘাতের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে।’ বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, জনসাধারণের নৈতিকতা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের চিঠিপত্রের ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনতা রক্ষার অধিকার থাকিবে।’ এখানে যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের মধ্যে টেলিফোন, মোবাইল ফোন ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। তার মানে কারও মোবাইল ফোনের গোপনীয়তার সুরক্ষা দেওয়া রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফে বলা হতে পারে যে, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলার স্বার্থে ফোনের মেসেজ চেক করা হচ্ছে। কিন্তু তাতেই কি এটা বৈধ হয়ে যায়? সভ্য কোনো সমাজ ও রাষ্ট্রে কি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য একজন নাগরিকের মোবাইল ফোন চেক করতে পারে, যতক্ষণ না তার বিরুদ্ধে বড় কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় কিংবা তাকে বড় কোনো অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সন্দেহ করে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হয়?
গত বছর ফোনালাপ ফাঁস নিয়েও ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছিল। ফোনে আড়িপাতা এবং ফোনালাপ প্রকাশ (ফাঁস) নিয়ে দেশের কোনো আইনে সুস্পষ্ট কিছু বলা নেই। টেলিযোগাযোগ আইনের একটি ধারায় বলা হয়েছে, নিরাপত্তা সংস্থা তদন্তের ও মামলার স্বার্থে কারও ফোনালাপ চাইলে টেলিফোন সেবাদাতা সংস্থা তাদের সব রকমের তথ্য দিতে বাধ্য থাকবে; কিন্তু তারা কারও ফোনে আড়িপাততে পারবেসে বিষয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। প্রশ্ন উঠেছিল, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রসঙ্গ ছাড়া কারও ফোনকল রেকর্ড করা এবং সেই ফোনকল ফাঁস করে দেওয়া ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন কি না? রাস্তায় দাঁড় করিয়ে পুলিশ যদি নাগরিকদের হাত থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে মেসেজ, হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্য কোনো টেক্সট, ছবি বা ভিডিও চেক করে যেখানে একজন নাগরিকের খুব ব্যক্তিগত কোনো জিনিসও থাকতে পারে রাষ্ট্রের সংবিধান, আইন বা নীতি কি সেটাকে সমর্থন করবে?
পণ্ডিত রবি শঙ্করের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের বারানসিতে ৭ এপ্রিল ১৯২০ সালে। সংগীতজ্ঞ হিসেবে সেতারবাদনে কিংবদন্তিতুল্য শ্রেষ্ঠত্বের জন্য তিনি বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত। আদি পৈতৃক বাড়ি বাংলাদেশের নড়াইল জেলায়। বাবার নাম শ্যাম শঙ্কর চৌধুরী এবং মা হেমাঙ্গিনী। ১৯৩০ সালে তিনি প্যারিসে বড় ভাই উদয় শঙ্করের কাছে শিক্ষাগ্রহণের জন্য যান এবং ১২ বছর বয়স থেকেই তিনি ভাইয়ের নাচের দলের নৃত্যশিল্পী ও সেতারবাদক হয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে বেড়িয়েছেন ভারত ও ইউরোপের নানা শহরে। ১৯৩৮ সালে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর কাছে সেতারের দীক্ষা নিতে শুরু করেন। ১৯৩৯ সালে ভারতের আহমেদাবাদ শহরে রবি শঙ্করের প্রথম সাধারণের জন্য উন্মুক্ত একক সেতার পরিবেশন অনুষ্ঠান হয়। তিনি কবি ইকবালের সারে জাঁহাসে আচ্ছা কবিতাকে সুর দিয়ে ভারতীয় জাতীয় সংগীতের পর সবচেয়ে জনপ্রিয় গান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৯৪৯ সালে তিনি দিল্লিতে অল ইন্ডিয়া রেডিওর সংগীত পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। এ সময়ে তার উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি পথের পাঁচালী, অপরাজিত ও অপুর সংসার চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা। ১৯৬২ সালে তিনি কিন্নর স্কুল অব মিউজিক, বোম্বে এবং ১৯৬৭ সালে কিন্নর স্কুল অব মিউজিক, লস অ্যাঞ্জেলেস স্থাপন করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় ও তহবিল সংগ্রহের জন্য পাশ্চাত্যের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী জর্জ হ্যারিসনসহ অন্যদের নিয়ে নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ারে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চ্যারিটি কনসার্ট ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর অন্যতম সংগঠক রবি শঙ্কর। ভারত সরকারের পদ্মবিভূষণসহ নানা পুরস্কার ও সম্মানে তিনি ভূষিত হয়েছেন। ১২ ডিসেম্বর ২০১২ সালে রবি শঙ্কর মৃত্যুবরণ করেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) হলের আসন দখল করে রাখার বিরুদ্ধে অনশনরত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ তাকে সমর্থন দেওয়া কয়েকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।তারা বলেন, ওই স্থানে গত বুধবার রাত থেকে অনশনে ছিলেন প্রত্যয়। তাকে মারধরের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায় হামলায় জড়িতরা। এ সময় প্রত্যয়ের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা হয়।
জানা গেছে, তিন দাবিতে গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনের খেলার মাঠে অনশনে বসেন প্রত্যয়। তিনি ওই হলের আবাসিক ছাত্র। তার অন্য দুটি দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা ও হলের গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং নবীন শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। ওই সময় ক্যাম্পাসে লোডশেডিং চলছিল। হঠাৎ করেই প্রত্যয়সহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
হামলায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী, মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সৃষ্টি, চারুকলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মনিকা, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৮তম ব্যাচের সুরসহ আরও কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, হামলায় ৩০ থেকে ৪০ জন অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের কয়েকজন হলেন ছাত্রলীগ নেতা ও রসায়ন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গৌতম কুমার দাস, তুষার, ফেরদৌস, নোবেল, গোলাম রাব্বি, মুরসালিন, মুরাদ, সোহেল, তানভীর, রায়হান, রাহাত, সৌমিক, তারেক মীর, সজীব ও নাফিস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমরা যারা প্রত্যয়ের সঙ্গে ছিলাম তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর প্রত্যয়কে দেখতে চিকিৎসক এসেছিলেন। তখন তারা অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা করে সেটি ফিরিয়ে দেয়। প্রক্টরকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি আসেননি। একাধিক ছাত্রীর দিকেও চড়াও হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ এমন একটি ফোনকল পেয়ে তারা অ্যাম্বুলেন্স পাঠায়। তবে কে কল দিয়েছিল সে সম্পর্কে চিকিৎসা কেন্দ্রের কেউ বলতে পারেননি।
তবে যে ফোন নাম্বার থেকে কল দেওয়া হয়েছিল সেটিতে যোগাযোগ করে দেখা যায় নাম্বারটি শাখা ছাত্রলীগের নেতা গৌতম কুমার দাসের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। দরকার হলে আমি পদত্যাগ করব।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে তারা এ রাত পৌনে ১টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।
তবে অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউলের ওপর হামলারে পেছনে ছাত্রলীগের কোনো হাত নেই বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, মীর মশাররফ হোসেন হলের অনশনরত ওই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। তবে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরা করেছে। সেখানে ছাত্রলীগের একজনও জড়িত নয়।’
অসুস্হ সাবেক ফুটলার মোহাম্মদ মহসীনের পাশে দাড়িয়েছেন তার সাবেক সতীর্থরা। মোহামেডান ক্লাবের সাবেক ফুটবলার ও সোনালী অতীত ক্লাবের সদস্যরা বিকেলে বসে এই সিদ্ধান্ত নেন। পরে মহসীনের বাসায় যান তার সংগে দেখা করতে।সাবেক ফুটবলারদের মধ্যে ছিলেন আব্দুল গাফফার, জোসী, বাবলু, জনি, সাব্বির, রিয়াজ।
এসময় গাফফার জানান, মহসীনের চিকিৎসার জন্য বিসিবি সভাপতির উদ্যোগে বুধবার সকালে অসুস্হ ফুটবলারকে হাসপাতালে ভর্তি করবে।
হাসপাতাল থেকে সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে ফেরার পর মহসীন কানাডায় ফিরে যেতে চাইলে সাবেক ফুটবলাররা সহায়তা করবে। মহসীন কানাডা থেকে দেশে ফিরেছেন মায়ের পাশে থাকতে। প্রায় নব্বই ছুই ছুই মহসিনের মায়ের পায়ে ব্যথা। মহসীনের পাশাপাশি তার মায়ের চিকিৎসার ব্যাপারেও সাবেক ফুটবলাররা পাশে থাকবেন বলে জানান আবদুল গাফফার।
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
প্রথম সেটে হেরে পিছিয়ে পড়েছিলেন। তবে পরের সেটেই ঘুরে দাঁড়ান। ৩ ঘণ্টা ৩৮ মিনিটের লড়াইয়ের পর কোয়ার্টার ফাইনালটা জিতে নিলেন নোভাক জকোভিচ। কারেন খাচানভকে ৪-৬, ৭-৬, ৬-২, ৬-৪ ব্যবধানে পরাজিত করে ফ্রেঞ্চ ওপেনের সেমিফাইনালে উঠলেন এই সার্বিয়ান।
কোয়ার্টার ফাইনালের শুরুটা দেখে মনে হচ্ছিল, দিনটা বোধহয় জকোভিচের নয়। তবে মাথা ঠান্ডা রেখেছিলেন তিনি। খাচানভ প্রথম সেট জিতে নেওয়ার পর দ্বিতীয় সেটেও সমানে সমানে লড়াই করেন। যদিও টাইব্রেকারে জোকোর সামনে দাঁড়াতে পারেননি তিনি।
ম্যাচে সমতা ফেরানোর পর এক বার লকার রুমে ফিরে যান জোকোভিচ। তার পর শুধু কোর্টেই ফিরলেন না। নিজের চেনা ছন্দেও ফিরলেন। তৃতীয় এবং চতুর্থ সেটে আর শুরুর মতো লড়াই করতে পারলেন না প্রতিযোগিতার ১১ নম্বর বাছাই।
ফ্রেঞ্চ ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে মঙ্গলবার প্রতিযোগিতার প্রথম সেট হারলেন জোকোভিচ। হেরে যেতে পারেন এমন মনে না হলেও এ দিন ছন্দ পেতে কিছু সময় লেগেছে তার। ৩৬ বছরের জোকোভিচ কি সর্বোচ্চ পর্যায়ের টেনিসের ধকল আগের মতো সামলাতে পারছেন না আর?
এমন প্রশ্ন যখন উঁকি দিতে শুরু করছে, তখনই নিজের চেনা ছন্দে দেখা দিয়েছেন। কোয়ার্টার ফাইনালে খাচানভের বিরুদ্ধে সময় পেয়েছেন। সুযোগ পেয়েছেন। সেমিফাইনাল বা ফাইনালের প্রতিপক্ষরা কি ছন্দে ফেরার সময় বা সুযোগ দেবেন তাঁকে?
টেনিসপ্রেমীদের মনে এই প্রশ্ন রেখেই ফ্রেঞ্চ ওপেনের শেষ চারে পৌঁছে গেলেন দু’বারের চ্যাম্পিয়ন। পাশাপাশি কিছুটা হয়তো উদ্বেগেও রাখলেন। সেমিফাইনালে জায়গা নিশ্চিত করার পর জোকার স্বীকারও করে নিয়েছেন, কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথম দু’টি সেট তার থেকে ভাল খেলেছেন রুশ প্রতিপক্ষ।
এদিকে ওপর কোয়ার্টার ফাইনালে জয় পেয়েছেন কার্লোস আলকারাজ। সিৎসিপাসের বিপক্ষে তিনি ৩-০ (৬-২, ৬-১, ৭-৬) সেটে জিতে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছেন এই স্পেনিশ টেনিস তারকা।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।