
পণ্ডিত রবি শঙ্করের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের বারানসিতে ৭ এপ্রিল ১৯২০ সালে। সংগীতজ্ঞ হিসেবে সেতারবাদনে কিংবদন্তিতুল্য শ্রেষ্ঠত্বের জন্য তিনি বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত। আদি পৈতৃক বাড়ি বাংলাদেশের নড়াইল জেলায়। বাবার নাম শ্যাম শঙ্কর চৌধুরী এবং মা হেমাঙ্গিনী। ১৯৩০ সালে তিনি প্যারিসে বড় ভাই উদয় শঙ্করের কাছে শিক্ষাগ্রহণের জন্য যান এবং ১২ বছর বয়স থেকেই তিনি ভাইয়ের নাচের দলের নৃত্যশিল্পী ও সেতারবাদক হয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে বেড়িয়েছেন ভারত ও ইউরোপের নানা শহরে। ১৯৩৮ সালে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর কাছে সেতারের দীক্ষা নিতে শুরু করেন। ১৯৩৯ সালে ভারতের আহমেদাবাদ শহরে রবি শঙ্করের প্রথম সাধারণের জন্য উন্মুক্ত একক সেতার পরিবেশন অনুষ্ঠান হয়। তিনি কবি ইকবালের সারে জাঁহাসে আচ্ছা কবিতাকে সুর দিয়ে ভারতীয় জাতীয় সংগীতের পর সবচেয়ে জনপ্রিয় গান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৯৪৯ সালে তিনি দিল্লিতে অল ইন্ডিয়া রেডিওর সংগীত পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। এ সময়ে তার উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি পথের পাঁচালী, অপরাজিত ও অপুর সংসার চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা। ১৯৬২ সালে তিনি কিন্নর স্কুল অব মিউজিক, বোম্বে এবং ১৯৬৭ সালে কিন্নর স্কুল অব মিউজিক, লস অ্যাঞ্জেলেস স্থাপন করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় ও তহবিল সংগ্রহের জন্য পাশ্চাত্যের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী জর্জ হ্যারিসনসহ অন্যদের নিয়ে নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ারে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চ্যারিটি কনসার্ট ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর অন্যতম সংগঠক রবি শঙ্কর। ভারত সরকারের পদ্মবিভূষণসহ নানা পুরস্কার ও সম্মানে তিনি ভূষিত হয়েছেন। ১২ ডিসেম্বর ২০১২ সালে রবি শঙ্কর মৃত্যুবরণ করেন।
১১ ডিসেম্বর ১৯২২ তখনকার ব্রিটিশ ভারতের, এখনকার পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের পেশোয়ার শহরের কিসসাখানি বাজারের একটি ফল ব্যবসায়ী পরিবারে মোহাম্মদ ইউসুফ খান জন্মগ্রহণ করেন। বাবা লালা গুলাম সারওয়ার খান এবং মা আয়েশা বেগম। এক দিন বাবার চোখে পড়ল রাস্তার দেয়ালে সিনেমার পোস্টার। তাতে সিনেমার নায়কের যে ছবি তা ইউসুফ খানের বলেই তিনি মনে করলেন, কিন্তু নাম ভিন্ন, দিলীপ কুমার। তিনি নিশ্চিত হতে চান। বাড়ি ফিরে ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন।
পোস্টারে লেখা আছে দিলীপ কুমার অভিনীত জোয়ার ভাটা। সেদিন তার বাবার সঙ্গে ছিলেন দেওয়ান বাশেশ^রনাথ কাপুর (ইউসুফের বন্ধু, একই এলাকার রাজ কাপুরের দাদা), তিনিও সন্দেহ করলেন এই ছেলে ইউসুফ না হয়ে যায় না। দুজন একসঙ্গে টোঙ্গাতে ফিরছিলেন। সন্দেহ কাপুরেরও।
লালা গুলাম সারওয়ার খান বললেন, ‘সিনেমার পোস্টারে দিলীপ কুমার নামের একটি ছেলেকে দেখলাম। কসম খোদার সে দেখতে তোর মতো। পোস্টারের ছেলেটি কি তুই?’
ছেলে নিশ্চুপ, ক্ষুব্ধ লালাজি বললেন, ‘জবাব দে, পোস্টারের ছেলেটি তুই, না অন্য কেউ?’
কোমল ও আতঙ্কিত কণ্ঠের জবাব, ‘হ্যাঁ আমি’।
তারপর প্রবল একটা চড় পড়ল তার গালে, মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন। মেঝেতে পড়ে রইলেন, পাঁচ আঙুল বসে গেছে।
পরের আদেশ, ‘এ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যা।’
এ বছরই প্রকাশিত ফয়সাল ফারুকীর ‘দিলীপ কুমার : ইন দ্য শ্যাডো অব অ্যা লেজেন্ড’ গ্রন্থে দিলীপ কুমারের বলা এ কাহিনী প্রকাশিত হয়েছে।
যদি মা আয়েশা খাতুন ও বড় বোন সকিনা না থাকতেন তাকে বাড়িছাড়া হতে হতো।
‘আমি সিনেমায় থাকার কথা কখনো ভাবিনি, আমার প্রিয় কোনো অভিনেতা-অভিনেত্রীও ছিলেন না। আমি দেখেছি আমাদের খাবার জোগাড় করতে আমার আব্বা-আম্মা উদয়াস্ত পরিশ্রম করতেন। কিছু কামাই করে তাদের ভার কিছুটা লাঘব করার চেষ্টাই আমার ছিল।
দিলীপ কুমার কাহিনীর বাকি অংশ তার আত্মজীবনী ‘দ্য সাবস্ট্যান্স অ্যান্ড দ্য স্যাডো : অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’র ‘দ্য টার্নিং পয়েন্ট’ অধ্যায় থেকে কিছুটা সংক্ষেপে উপস্থাপন করছি :
আমি এক দিন সকালে চার্চগেইট স্টেশনে অপেক্ষা করছি, সেখান থেকে লোকাল ট্রেনে সেন্ট্রাল বোম্বের দাদর যাব। সেখানে একজনের সঙ্গে দেখা করব, তিনি একটা ব্যবসা দিতে পারেন। ব্যাপারটা ক্যান্টনমেন্টে সেনাবাহিনীর জন্য কাঠের খাট সরবরাহ-সংক্রান্ত। সেখানে ডক্টর মাসানিকে দেখতে পেলাম। তিনি একজন মনোবিজ্ঞানী, একবার উইলসন কলেজে এসেছিলেন তখন আমি সেখানকার ছাত্র। উইডলসনে আমি এক বছর পড়াশোনা করেছি। চার্চগেইট স্টেশনে আমি এগিয়ে তার কাছে যাই এবং নিজের পরিচয় দিই। যেহেতু তিনি আমার আব্বার পরিচিত আমাকে চিনবেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইউসুফ এখানে কী করছো?’
আমি বললাম চাকরির খোঁজ করছি কিন্তু তেমন কিছু চোখে পড়ছে না। তাই ব্যবসায়ের চেষ্টা করছিলাম। তিনি বললেন, তিনি বোম্বের পশ্চিম উপশহরের দিকে মালাদ-এ যাচ্ছেন সেখানে সিনেমা স্টুডিও বোম্বে টকিজ-এর মালিকের সঙ্গে দেখা করবেন। তিনি বললেন, তুমি যদি আমার সঙ্গে যেতে চাও চলো, তাদের সঙ্গে দেখা হবে। তোমার জন্য তাদের কাছেও কোনো চাকরি থাকতে পারে। খুব সাদামাটাভাবে তিনি কথাগুলো বললেন। আমি এক মুহূর্তের জন্য ভেবে দাদর যাওয়ার ব্যাপারটা বাদ দিলাম এবং তার সঙ্গে যোগ দিলাম। রেলওয়েতে আমার একটা ফার্স্ট ক্লাস সিজন টিকিট ছিল, কিন্তু সেটা বান্দ্রা পর্যন্ত, মালাদ বান্দ্রা পেরিয়ে আরও ১৮ মাইল দূরে। ডক্টর মাসানি টিকিট চেকারকে চিনতেন। সুতরাং বর্ধিত অংশের একটা টিকিট পেয়ে গেলাম। যদিও স্টেশন থেকে বোম্বে টকিজ খুব কাছে তবুও তিনি ট্যাক্সি নিলেন, কারণ লাঞ্চটাইম প্রায় হয়ে গেছে, তিনি চিন্তিত বোম্বে টকিজ-এর বস মিসেস দেবিকা রানী দুপুরের খাবার খেতে আবার না বাসায় চলে যান।
***
এর আগে আমি জীবনেও কখনো সিনেমার স্টুডিও দেখিনি, এমনকি স্টুডিওর ছবিও না। আমি রাজ কাপুরের কাছে বোম্বে টকিজের কথা শুনেছি। তার পিতা পৃথ্বীরাজ কাপুর অভিনীত সিনেমার শ্যুটিং হতো এখানে। বহু একর জমিনের ওপর ছড়িয়ে আছে বোম্বে টকিজ স্টুডিও, একটা বাগান, বাগানে একটা ঝরনা। এর অফিস ভবন দেখতে সনাতন অফিসের মতো নয়, বাংলোর মতন।
ডক্টর মাসানি যখন প্রবেশ করলেন দেবিকা রানী তাকে উষ্ণ সম্ভাষণ জানালেন এবং তাকে বসতে বললেন। পরিচিত হওয়ার জন্য আমি যখন দাঁড়িয়ে আছি তিনি বিস্মিত চোখে আমার দিকে তাকালেন। তিনি রুচিশীলতার প্রতিমূর্তি, ডক্টর মাসানি যখন আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন নমস্তে বলে আমাকে স্বাগত জানিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসতে বললেন। কিন্তু তার দৃষ্টি আমার ওপর নিবদ্ধ যেন আমাকে নিয়ে তিনি কিছু একটা ভাবছেন। তিনি আমাদের অমিয় চক্রবর্তীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন, পরে জেনেছি তিনি বিখ্যাত পরিচালক; তিনি সোফায় বসেছিলেন। দেবিকা রানী আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমি উর্দুতে ভালো কি না। আমি ‘হ্যাঁ’ বললাম। ডক্টর মাসানি আমার পেছনের ইতিহাস ব্যাখ্যা করলেন; বললেন আমরা পেশোয়ার থেকেই উঠে এসেছি। আমার বাবার কথা, তার ব্যবসায়ের কথা বললেন। তিনি আগ্রহ নিয়ে শুনলেন, আমি তার মুখের দিকে তাকাই, স্বাভাবিক দ্যুতিময়তা ও সুস্বাস্থ্যের প্রমাণ তাতে। তিনি কেবল আমার উর্দু জ্ঞানের কথা শুনলেনএতে কোন ধরনের চাকরি তিনি আমাকে দিতে পারেন আমি তাই ভাবছিলাম।
তিনি আমার দিকে ফিরে মিষ্টি হেসে আমাকে যে প্রশ্নটা করলেন তা আমার জীবনের ধারা সম্পূর্ণভাবে এবং অপ্রত্যাশিতভাবে বদলে দিল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন আমি অভিনয় করতে চাই কি না? মাসে সাড়ে বারোশো টাকা বেতনে তা করতে রাজি কি না? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। ডক্টর মাসানির দিকে যখন তাকালাম তাকেও বিস্মিত মনে হলো। তিনি কাঁধ নাড়লেন, আমি বুঝতে পারলাম আমাকে হ্যাঁ বলানোর এটা একটা সংকেত। আমি বেহুদা চিন্তা করে সময় নষ্ট করার মানুষ নই। সুতরাং আমি হাসিমুখে তার হাসির জবাব দিতে গিয়ে বললাম, এটা তার বিশেষ দয়া যে অভিনয় করার একটা চাকরি তিনি আমাকে দিচ্ছেন। কিন্তু আমার কোনো অভিজ্ঞতা নেই, ফিল্ম সম্পর্কে ধারণাও নেই। তা ছাড়া আমি জীবনে একটি মাত্র সিনেমা দেখেছি, সেটাও একটা যুদ্ধের ডকুমেন্টারি। দেওলালির সৈনিকদের জন্য ছবিটি নির্মিত।
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের পারিবারিক ফল ব্যবসায়ী তুমি কতটা অভিজ্ঞ? আমি বললাম, আমি শিখছি, বেশি অভিজ্ঞতার দাবি করতে পারব না।
তিনি বললেন, এই তো ফলের ব্যবসায় এসে তুমি ফল, ফলচাষএসব সম্পর্কে যেমন শিখছো সিনেমা তৈরির শৈলী, অভিনয় এসব একইভাবে শিখে নিতে পারবে। আমার একজন তরুণ, সুদর্শন এবং শিক্ষিত অভিনেতা দরকার। আমি দেখতে পাচ্ছি তোমার মধ্যে ভালো অভিনেতা হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে।
লাঞ্চের সময় এসে গেল, আমরা তার সঙ্গে লাঞ্চে যোগ দেব কি না আন্তরিকভাবেই জিজ্ঞেস করলেন। ডক্টর মাসানি বিনীতভাবে জানালেন লাঞ্চ করবেন না, বিদায় দিয়ে চলে এলেন, আমি তাকে অনুসরণ করলাম। ফেরার পথে ডক্টর মাসানি তেমন কথা বললেন না। দ্রুতগতিতে ছোটা রেলের শব্দ এবং চাকরির অফারের বিস্ময় আমাদের দুজনকে নির্বাক করে দিয়েছে। আমি যে সিনেমা ও অভিনয় নিয়ে কিছুই জানি না এটা আমাকে আর বিচলিত করেনি। ট্রেনের দুলুনিতে আমার মধ্যে যখন আয়েশি ভাব এসে গেল আমি ভালো বোধ করলাম এবং এত বেতনের জন্য কৃতজ্ঞ বোধ করতে থাকলাম। এখন আমার লিখিত সম্পত্তির অপেক্ষা।
* * *
বাড়ি ফিরে ভাইদের মধ্যে তার বড় জন আইয়ুব সাহাবকে তার চাকরির সাড়ে বারোশো টাকা বেতনের অফারটার কথা বললেন (পারিবারিক সংস্কৃতিতে বড় ভাইকে শুধু নাম ধরে ডাকা যাবে না, নামের সঙ্গে সাহাব যোগ করতে হবে, কিন্তু ইউসুফ আইয়ুবকে নাম ধরে ডেকে বকা ও মারও খেয়েছেন।) আইয়ুব বললেন, চাকরি ঠিকই আছে তবে বেতন বছরে সাড়ে বারোশো টাকা। তিনি আরও বললেন, রাজ কাপুর বোম্বে টকিজ থেকে মাসে ১৭০ টাকা পান, এটা তার জানা আছে। আমার মনে হলো আইয়ুব ঠিকই বলেছেন। আমাকে প্রতি মাসে এত টাকা তিনি কেমন করে দেবেন? আমি বুঝলাম আসলেই বছরে সাড়ে বারোশো। আমি ভাবলাম এ চাকরি গ্রহণ করার মানে নেই, তাতে আমার আব্বার ভার তেমন কমবে না।
আইয়ুব ছাড়া বাড়ির কেউ আর আমার এই চাকরি পাওয়ার কথা জানেন না। আমার সবচেয়ে বড় ভাই নূর সাহাব এসব নিয়ে কখনো ভাবেন না, তিনি তার নিজস্ব ভুবনে বাস করেন। তাকে কেবল খাবার সময় বাড়িতে দেখা যায়। আমি ভাবলাম আমার সিদ্ধান্তটি আগে ডক্টর মাসানিকে জানানো সমীচীন হবে। আমি চার্চগেইটে তার বাড়িতে গিয়ে হাজির হলাম, বললাম, ইলেকট্রিক ট্রেনে প্রতিদিন মালাদ আসা-যাওয়া করে যে খরচ হবে তাতে বছরে সাড়ে বারোশো টাকায় আসলে পোষাবে না।
কিন্তু তিনি নিশ্চিত বছরে নয় মাসে ১২৫০ টাকা। তিনি আমার সামনে নিজে থেকেই দেবিকা রানীকে ফোন করে বেতনটা নিশ্চিত হলেন, তিনি যেভাবে ফোন ধরে থাকলেন তাতে আমার মনে হলো তিনি অপর প্রান্ত থেকে সুখকর কিছু শুনছেন। রিসিভার রেখে তিনি বললেন, বার্ষিক নয় মাসিক ১২৫০; দেবিকা মনে করেন আমি প্রতিশ্রুতিশীল, কাজেই আমি সানন্দে গ্রহণ করতে পারি এমন অফারই তিনি দিয়েছেন। পরদিন দুপুরের খাবারের পর চার্চগেইট স্টেশনে ডক্টর মাসানির সঙ্গে দেখা করি। বছরটা ১৯৪২, দিনটা শুক্রবার, তারিখটা মনে নেই। নামাজের পর, ভালো ভোজনের পর আমি নীরবে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম। কেউ জানে না আমি কোথায় যাচ্ছি।
ইউসুফ খান এসে হাজির হলেন বোম্বে টকিজ-এ; দেবিকা রানী বুঝতে পারলেন ইউসুফ চাকরির অফারটা যে গ্রহণ করেছেন তা নিশ্চিত করতে এসেছেন। সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরে আয়েশা বেগমকে বললেন, ‘আম্মা আমি মাসে ১২৫০ টাকা বেতনের একটা চাকরি পেয়েছি, তাতে আপনার রান্নাঘরের খুচরো খরচ, আর আমার ভাই-বোনদের পড়াশোনার খরচটা মেটানো যাবে।’
কিন্তু এত টাকার চাকরি, কাজটা কী? সন্দিগ্ধ আয়েশা খাতুন জিজ্ঞেস করলেন।
তিনি বললেন, সম্মানজনক কাজ, উর্দুতে ভালো বলেই কাজটা পেয়েছেন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ আর ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এই উন্মাতাল সময়ে উর্দুর ভালো জ্ঞান হয়তো গুরুত্বপূর্ণইমা তাই ভাবলেন। মা বোঝেননি এটা ইউসুফ খানের দিলীপ কুমার হওয়ার চাকরি।
লেখকঃ কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক
আমাদের সমবয়সী বা কাছাকাছি বয়সের অনেকের সঙ্গে কথা বললে মনে হয়, আগে সব ঠিক ছিল। এখন কোথাও কিছু আলো নেই। সব অন্ধকার। অনেক সময় ঠাট্টা করে আমরা বলি, সবকিছু ‘ব্যাদে’ অর্থাৎ ‘বেদ’-এ আছে। এই ঠাট্টার লক্ষ্য মনুবাদী, মৌলবাদী ধ্যান-ধারণা। যুক্তিতর্কের বাইরে নিছক আবেগ দিয়ে সব বিশ্লেষণ করা। ইদানীং এই প্রবণতা বাড়ছে। এ একধরনের গোঁড়ামি। কিন্তু এই একই মৌলবাদ তথাকথিত প্রগতিশীল বন্ধুদের মধ্যেও দেখলে বেশ অবাক লাগে। বিশেষ করে এ ধরনের চিন্তাভাবনা বেশি দেখা যায় ষাট-সত্তর দশকের প্রজন্মের মধ্যে। এটা ঠিক, সে সময় সারা দুনিয়ায় বাম মতাদর্শ অনেক সক্রিয় ছিল। পশ্চিমবঙ্গের শিল্প-সাহিত্যে শম্ভু মিত্র, উৎপল দত্ত, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃপ্তি মিত্র, কেয়া চক্রবর্তী, বাদল সরকার নাটকে; উত্তমকুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, রবি ঘোষরা চলচ্চিত্রে রাজত্ব করছেন। পরিচালনায় সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক; গানে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, আরতি মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, কিশোর কুমার আরও অনেকে স্বমহিমায় রাজত্ব করছেন। বামপন্থি রাজনীতি আদর্শের পথে এগিয়ে চলেছে। এক এক সময় তো মনে হচ্ছে, বিপ্লব দরজায় কড়া নাড়ছে। দরজা খুলে দিলেই বিপ্লব হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকে পড়বে।
বাস্তবে তা ঘটল না। সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার পতন ঘটার পর থেকেই গেল গেল রব উঠল বিভিন্ন দেশের বামপন্থিদের একাংশের মধ্যে। তারও পরে গোলকায়নের ধাক্কায় অনেকেই হিমশিম খেয়ে, সহজ রাস্তা, মনের সুখে পুরনো স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরলেন। ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম...’। আমি এই অতীত বিলাসীদের থেকে হাজার হাত দূরে।
আদরের ছোট পুত্র শমীর মৃত্যুর খবর যখন এলো রবীন্দ্রনাথ তখন ট্রেনে কলকাতা ফিরছেন। নীরব কবি বিষাদ বুকে নিয়ে চরাচরের দিকে তাকালেন। বাইরের পৃথিবী বড় চমৎকার। ছোট ছোট নদীর জলে মায়াবী চাঁদের আলো বড় সুন্দর। অজানা কোনো পাখি একমনে ডেকে চলেছে। কবি বুঝলেন, পৃথিবীতে ব্যক্তিশোক যতই যন্ত্রণার হোক, বিপুলা পৃথিবী তার মতো করে এগিয়ে চলে। থামার কোনো লক্ষণ নেই। রবিঠাকুর লিখলেন, ‘আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে...’।
মাও সেতুং বলতেন, ‘যা কিছু পুরনো তাই ঐতিহ্য নয়।’ সত্যিই কি আগে সব ভালো ছিল! কালোবাজারি ছিল না, দুর্নীতি! কিংবা অসততা! এসব কি ছিল না? এক-আধজন নিশ্চয়ই বাঘা যতীন, ক্ষুদিরাম বা প্রীতিলতা, কল্পনা দত্ত বা পরের যুগে মৃত্যু-তুচ্ছ-জ্ঞান করা স্বাধীনতা যোদ্ধা থাকলেও ব্রিটিশদের পা ধরে রায়বাহাদুর, খানবাহাদুররা তো সংখ্যায় কম ছিলেন না। কলকাতা শহরের যত ঐতিহাসিক স্থাপত্য, বসত, ঠাকুর দালান অধিকাংশই গড়ে উঠেছিল ব্রিটিশদের মুৎসুদ্দি পুঁজির দৌলতে। বামপন্থি রাজনীতিতে আদর্শবাদ একসময় নিশ্চিত আজকের চেয়ে বেশি ছিল। কিন্তু তখনো সবাই লেনিন ছিলেন এরকম ভাবার কোনো কারণ নেই। অনেক আগুনখেকো বিপ্লবীর আসল চেহারা শুনলে চমকে যেতে হবে। আমার বাবা বলতেন, জেলে গেলে বোঝা যায় কমরেডদের আসল চেহারা। সামান্য মাছের টুকরো নিয়ে যেভাবে কেউ কেউ কামড়া-কামড়ি করেন, দেখে কে বলবে এরাই সাম্যবাদী সমাজের রূপকার!
জীবন আসলে নদীর মতো। কখনো একদিক শুকিয়ে যায়। চড়া পড়ে। ভাঙনে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় বিস্তীর্ণ এলাকা। কিন্তু অন্য দিকে স্রোতে ভেসে যায়। চড়াতে নতুন বসতির পত্তন হয়। গড়ে ওঠে নতুন স্বপ্ন। এভাবেই সভ্যতা বয়ে চলে নিরন্তর। শতাব্দীর পর শতাব্দী। হাজার বছর ধরে চেষ্টা করতে করতে মানুষ একদিন পাথরে পাথর ঘষে আগুন জ্বালাতে শিখেছিল। আজ সে প্রযুক্তি ব্যবহার করে চাঁদে অবধি পৌঁছে গেছে।
কয়েক দশক আগেও হিন্দু ঘরে বাবাকে সন্তান আপনি সম্বোধন করত। আজ অনেক সংসারেই বাবা-মা দুজনেই সন্তানের বন্ধু হয়ে গেছেন। একদা যে দূরত্ব ছিল তা আজ আর নেই। স্নেহ তখনো ছিল। এখনো আছে। তার প্রকাশভঙ্গি পাল্টে গেছে। একটা সময় ছিল যখন কুন্দনলাল সায়গল, কানন দেবী বা কৃষ্ণ চন্দ্র দের গান লোকের মুখে মুখে ফিরত। এখন তারা নতুন প্রজন্মের কাছে বাতিল হয়ে গেছেন। নতুন কত শিল্পী উঠে আসছেন রোজ। আমরা খোঁজও রাখি না। কোক স্টুডিওতে ভালোমন্দ কত গান শুনি। অনেকেই তরুণ। অনেকের নামও আগে শুনিনি। কিন্তু রাতে একা শুনলে বেশ লাগে।
নিজেও মাঝেমধ্যে বলি বটে, লেখা আর আগের মতো নেই। সত্যি কি তাই! এই পশ্চিমবঙ্গেই মুখে মুখে দশজনের নাম বলে দিতে পারি যারা তথাকথিত অনেক প্রতিষ্ঠিত লেখকের রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। করপোরেট পুঁজি আগ্রাসী চেহারা নিয়ে সমাজের মূল্যবোধ বদলে দিচ্ছে। তার ভেতরেও কত মানুষ কত কত কাজ করে চলেছেন তা আমরা দেখেও দেখি না। যে গায়ক আদ্যোপান্ত সুবিধাবাদী, সেও মঞ্চে দাঁড়িয়ে ডাক্তারদের পেশা নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাততালি কুড়োচ্ছেন। কভিডকালে কত ডাক্তার জীবন তুচ্ছ করে রোগী দেখতে দেখতে মারা গেছেন এটাও সত্যি। আগে মাস্টারমশাইরা কত ভালো ছিলেন। এখন সবাই খারাপ? নিশ্চয়ই অনেক ফাঁকিবাজ, অসৎ লোক শিক্ষা জগতে আছেন। পাশাপাশি কোনো দিন টিউশনি না করে অবসর সময়ে বিনা পয়সায় ছেলেমেয়েদের পড়া দেখিয়ে দিচ্ছেন এ-রকম উদাহরণও কম নেই। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা কত নতুন নতুন পেশায় প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে, যা আগে আমরা কখনো ভাবিনি। বিজ্ঞাপন, হোটেল ম্যানেজমেন্ট, ফ্যাশন ডিজাইনার, আইটি, ব্যবস্থা আরও কত। সবাইকে স্রেফ ভোগবাদী, স্বার্থপর বলতে আমি অন্তত রাজি না। করোনা সংকটের মধ্যে রেড ভলেন্টিয়ার্সের ভূমিকা ইতিহাস মনে রাখবে। এই নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাই আজও গণআন্দোলনের সামনে থাকে। সারা দেশে। এন.আর.সি’র সময় শাহীনবাগের লড়াই ভোলার নয়। এখনো উমর খালিদের মতো ছেলে জেলে থাকে, আমরা যারা ‘ধুর কোথাও কিছু নেই’ বলে হতাশা জনমনে চারিয়ে দিতে সক্রিয়, তারা শুধুই সমালোচনা করি।
গ্রামের পর গ্রামে ঘুরি। স্কুলে যাই। কলেজেও। অনেক খারাপ অভিজ্ঞতা হয়। পাশাপাশি কত ঝকঝকে মুখ দেখি। সোজা হয়ে হাঁটছে। মাটির সঙ্গে যোগ না থাকলে ওই গেল গেল করা ছাড়া রাস্তা নেই। নিন্দুকেরা শুধুই অন্ধকার দেখেন। আমি আলোর খোঁজ করি। প্রাণ বিপন্ন করে মানুষের পাশে থাকা তরুণের মুখের দিকে আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি। গজদন্ত মিনারে বসে ঠিক সুরে রবীন্দ্র সংগীত শুনে তারিফ নিশ্চয়ই করব। কিন্তু গিটার হাতে নিয়ে ঈষৎ বেসুরে যে মেয়েটি জীবনের গান গাইছে, আমি আস্তে করে তার পিঠে হাত রাখব। জীবন কখনো থেমে থাকে না। তাকে হারিয়ে দেওয়া কঠিন, বড্ড কঠিন।
লেখক : ভারতীয় প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা ও লেখক
কাবাডি বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হলেও ফুটবল বাঙালির রক্তে মিশে আছে। আবাহনী, মোহামেডান, শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব, ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাব, রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস ক্লাবসহ দেশের নানা প্রান্তে অসংখ্য ফুটবল ক্লাব বেশ উজ্জ্বল সময় পার করেছে। নদীবিধৌত বাংলাদেশের নদীর চর আর গ্রামের বিস্তীর্ণ মাঠে কিশোর থেকে যুবক সবাই ফুটবল খেলে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন। শহর থেকে গ্রাম যেখানেই ফুটবলের আয়োজন সেখানে কিশোর থেকে বৃদ্ধ খেলা দেখতে ভিড় করেন। ফুটবলের এই এক অদ্ভুত শক্তি সব বয়সীদের আকর্ষণ করতে পারে। বাংলাদেশে ফুটবল একটা জনপ্রিয় খেলা হলেও দেশের জাতীয় ফুটবল দলের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্য নেই বললেই চলে। অব্যবস্থাপনায় জেলা পর্যায়ের ক্লাবগুলোতে কালভদ্রেও প্র্যাকটিস হয় না। যদিও আমাদের অনূর্ধ্ব ১৭ নারী ফুটবল দল সম্প্রতি সাফ শিরোপা জিতে এসেছে। তাদের এই শিরোপা জয় সারা বাংলাদেশের মানুষ উদযাপন করেছে। এয়ারপোর্টে জয়ী দলকে দেওয়া হয় অভূতপূর্ব সংবর্ধনা। ফলে সহজেই অনুমেয় বাংলাদেশের মানুষ ফুটবল নিয়ে কতটা আগ্রহান্বিত।
ইদানীং কালের ফুটবল আলোচনা ও আগ্রহ ইউরোপীয় কিছু ক্লাব ও লাতিন আমেরিকার দুই দল আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের ফুটবল ম্যাচেই সীমাবদ্ধ থাকছে। বিশ্বকাপ এলে দেশের গ্রাম থেকে শহর সবখানে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পতাকায় ছেয়ে যায়। এটা নিয়ে নানা ধরনের সমালোচনাও এসেছে। সংসদে একবার বিদেশি পতাকা ওড়ানোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও উঠেছিল। বরাবরের মতোই এবারের বিশ্বকাপ উপলক্ষেও আমাদের দেশের তরুণ-তরুণীরা ব্রাজিল আর্জেন্টিনার জার্সি পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিদেশি ক্লাব ও ভিনদেশের ফুটবলের প্রতি তরুণ প্রজন্মের বিশেষ আগ্রহের কারণ দেশের মাঠে আর ফুটবল নেই। এখন ফুটবলের আনন্দ খুঁজতে দর্শককে নির্ভর করতে হয় টিভি স্ক্রিনে।
ক্রিকেটে বাংলাদেশের মানুষকে বিদেশি দল সমর্থন করে তাদের জার্সি গায়ে দিয়ে ঘুরতে দেখা যায় না। কিন্তু ফুটবলে দেখা যায়। কারণ আমাদের দেশে ফুটবলের আমেজ আছে কিন্তু ফুটবল নেই। ২০১০-২০১২ সালের দিকে একটা বিজ্ঞাপন দেখা যেত ‘২০২২ বিশ্বকাপ আমাদেরও স্বপ্ন’। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) থেকে এই ধরনের একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল। এমনকি সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেছেন, ‘বিশ্বকাপ ফুটবলে বাংলাদেশ নেই এটা কষ্ট দেয়’। কিন্তু বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ফুটবলে থাকতে পারা খুব একটা অসম্ভব না। বাংলাদেশে একটা ক্রেজি ফুটবল ফ্যান আছে, এটাই যথেষ্ট বিশ্বকাপ ফুটবলে জায়গা করে নিতে। আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার এমন সব দেশ বিশ্বকাপ ফুটবলে দাপট দেখাচ্ছে যেখানে মানুষ দু’বেলা খাবার পায় না। দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে দেশের অর্ধেক মানুষ। বুট কেনার টাকা হয় না ফুটবলারদের। সেখানে শুধুমাত্র ফুটবলপাগল জনগণের সমর্থনে পায়ের জোর খুঁজে পায় ফুটবলাররা। দুঃখের বিষয় ফুটবলপাগল একটি বড় দর্শক থাকার পরও যথাযথ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে আমাদের দেশের ফুটবলকে আমরা মাঠে নিয়ে আসতে পারছি না। ২০০৬ সালে ফরাসি ফুটবলার জিনেদিন জিদান একবার ঢাকা সফর করেন। সে সময় দেশের মানুষ নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা ও হরতাল অবরোধে ত্যক্ত-বিরক্ত। জিদান তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে রাষ্ট্রপ্রধান তাকে নির্বাচনের পর্যবেক্ষক হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সফরের প্রথম দিন গ্রামীণ ব্যাংক ভিজিট করে দ্বিতীয় দিন আবাহনী ও মোহামেডানের অনূর্ধ্ব ১৬ দলের প্রীতি ম্যাচে অংশ নিয়েছিলেন জিদান। দিনটি ছিল ৭ নভেম্বর। সেদিন ঢাকা শহরের মানুষ রাজনৈতিক অস্থিরতার বিরক্তিকে পাশ কাটিয়ে ‘জিদান উৎসবে’ মেতেছিল। আর ঢাকার বাইরে টিভির সামনে ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়। নিজ দেশে প্রিয় ফুটবলারের পায়ের জাদু দেখার সাক্ষী হয়েছিল হাজার হাজার মানুষ। তারা সমস্ত নিরাশা হতাশা ভুলে সেদিন ফুটবল উদযাপনে নিজেদের আনন্দ খুঁজে নিয়েছিল। সেদিনটিই সাক্ষী বাংলাদেশের মানুষ কতটা ফুটবলপাগল।
খেলায় রাজনীতি : অনেক দেশের মধ্যে যুদ্ধের সমাপ্তি হয়েছে খেলার মধ্য দিয়ে আবার মাঠেই হয়েছে অনেক যুদ্ধের সূচনা। যতই বলি খেলার সঙ্গে রাজনীতি মেশাবেন না কিন্তু খেলায়ও রাজনীতি আছে। আধুনিক যে জাতীয়তাবাদের ধারণা সেখানে একটি জনপ্রিয় কনসেপ্ট হলো দেশপ্রেম। যেখানে রাষ্ট্রকে মহান করে তোলা ও রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের আবেগ আনুগত্যকে বিশেষ মানদ- ধরা হয়। ভাষা, সংস্কৃতি, জাতীয় পতাকার পাশাপাশি জাতীয় ক্রীড়া দলও সে জাতীয়তাবাদের ধারক হয়ে উঠেছে। ফলে জাতীয় ক্রীড়া দলের অর্জনকে জাতির অর্জন ও গৌরবের বিষয় হিসেবে দেখা হয়।
যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙে তখন ছোট ছোট দেশগুলো জাতিসংঘের সদস্য হওয়ার আগে ফিফার সদস্য হওয়ার চেষ্টা করেছিল। কলকাতার ইস্ট বেঙ্গল, মোহনবাগান ক্লাব দুটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ও উপমহাদেশের ধর্মীয় রাজনীতির ইতিহাস। যুক্তরাজ্যের স্বাধীনতাকামী অঞ্চল ওয়েলস ফুটবল দল ও স্কটল্যান্ড ক্রিকেট টিমের মাধ্যমে তাদের স্বতন্ত্র জাতিসত্তার প্রকাশ করছে। এমনকি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতে ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল টিম’ অসংখ্য প্রীতি ম্যাচ খেলেছে। কাতারের ওপর সৌদির অবরোধ তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় সৌদি-কাতার প্রীতি ফুটবল ম্যাচ দিয়ে।
১৯৬৮ সালের অলিম্পিকে ‘দি ব্ল্যাক পাওয়ার স্যালুট’ এর ঘটনা ঘটে, যা ছিল আমেরিকার কালো মানুষের অধিকারের পক্ষে যুগান্তরকারী এক প্রতিবাদ। দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা নিরসন করে ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ককে পুনঃস্থাপন করা হয় একটি টেবিল টেনিস টুর্নামেন্টের মাধ্যমে, ইতিহাসে যা পিং পং কূটনীতি নামে পরিচিত। এই বিশ্বকাপে ইসরায়েল ও আর্জেন্টিনার মধ্যে জেরুজালেমে একটি প্রীতি ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল। এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে মূলত ইসরায়েল জেরুজালেম শহরকে নিজেদের বলে বিশ্বদরবারে উপস্থাপন করতে চেয়েছিল। এই রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি বুঝতে পেরে ইসরায়েলের পরিকল্পনায় লাল কার্ড দেখানো হয়েছে। বর্তমানে কাতার বিশ্বকাপে ফিলিস্তিন দল না খেললেও স্টেডিয়ামে স্টেডিয়ামে উড়ছে ফিলিস্তিনের পতাকা। মূলত কাতারে বসবাসরত ও বিভিন্ন দেশ থেকে কাতার ভ্রমণ করা ফিলিস্তিনি নাগরিকরা পতাকা তুলে ধরে নিজেদের দেশের ব্রান্ডিং করছে। সেই সঙ্গে ইসরায়েলের দখলদারিত্বের প্রতিবাদ জানাচ্ছে। ইরানের অনেক সমর্থক তাদের দেশে হিজাব না পরায় পুলিশি গুলিতে নিহত মাশা আমিনির ছবি দেখিয়ে তার মৃত্যুর প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এমনকি ইরানের ফুটবল দল ম্যাচ শুরুর আগে জাতীয় সংগীত না গেয়ে সে দেশে চলমান আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে। বিশ্বরাজনীতিতে বর্তমানে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র ঘোরতর শত্রু। দুই শত্রু যখন বিশ্বকাপে কাতারে মুখোমুখি তখন এমন একটি উত্তেজনা ও আতঙ্ক তৈরি হয় যেন খেলা নয় যুদ্ধ হবে। যতই খেলাকে আলাদা করার কথা বলা হোক। খেলা রাজনীতির এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠেছে।
জঙ্গি হামলার পর নিরাপত্তার অজুহাতে পাকিস্তানে কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট ও সামিট হচ্ছিল না তখন নিজ দেশের ব্রান্ডিংয়ের জন্য বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়া টিমকে বিশেষ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে পাকিস্তানে টুর্নামেন্ট খেলার আমন্ত্রণ জানায়। কাতার বিশ্বকাপের মাধ্যমে বিশ্বের ৮০০ কোটি মানুষের মধ্যে ৫০০ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে কাতারের নাম। ফলে ক্রীড়া, ক্রীড়া আসর এসব কিছু রাজনীতি ও রাজনৈতিক অর্থনীতির অংশ চাইলেই এসবকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই।
আমাদের উৎসবের সীমা : হাজার হাজার মাইল দূরে ফুটবল ম্যাচ নিয়ে আমাদের দেশের মানুষের উৎসব ও উৎসব প্রস্তুতির শেষ নেই। দর্শক প্রিয় দলের জার্সি কিনছে, পতাকা কিনছে। বিজয় র্যালি করছে, তর্ক করছে, বিতর্ক করছে। ফেইসবুকে খুনসুটি করছে। সবই উদযাপনের অংশ। তবে সে উদযাপন প্রায়শই সীমা অতিক্রম করছে। ফেইসবুকের খুনসুটি মাঝে মাঝে ঘৃৃণাসূচক আচরণে রূপ লাভ করছে। অনেক সময় আলোচনা থেকে মারামারি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে। আমরা ভিন্ন একটি টাইম জোনে হওয়ায় বেশিরভাগ খেলা হচ্ছে রাতের বেলা। রাতের বেলা বড় স্ক্রিনে বাড়ির বাইরে খেলা দেখতে ও উৎসব করতে গিয়ে অনেকে সাধারণ মানুষের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। রাত ২/৩টা বাজে মোটরসাইকেলের হর্ন বাজিয়ে, র্যালি করে মাঝরাতে বাচ্চা ও বৃদ্ধদের ঘুম নষ্ট অগ্রহণযোগ্য আচরণ। কারণ এতে ভোরের শিফটে স্কুলগামী বাচ্চাদের সকালের স্কুল মিস হচ্ছে, বাড়ির বৃদ্ধ ও অসুস্থ রোগীরা ঘুমজনিত সমস্যায় ভুগছেন। মাঝরাতে যখন সবদিক নিস্তব্ধ তখন এসব শব্দদূষণ ব্যাপকভাবে আঘাত করার সুযোগ পায়। ফলে আমাদের খেয়াল রাখা উচিত কোনো উৎসব আনন্দ যেন কোনোভাবে অন্যের ক্ষতির কারণ না হয়। লেখকঃ কলামিস্ট
কয়েক বন্ধু মিলে পরিকল্পনা করছিল সমুদ্রে ঘুরতে যাওয়ার। এজন্য তারা আলাপ-আলোচনা করতে মেসেঞ্জারে ‘সাম্পান’ নামে একটি ক্লোজ গ্রুপ খোলেন। তাদের সেই গ্রুপে সাগরে নামার জন্য সাম্পান ভাড়া, নাবিক সংগ্রহ, নিরাপত্তা সরঞ্জাম, টর্চলাইট, রান্না ও নিরাপত্তার জন্য ছুরি, তাঁবু ইত্যাদির তথ্য আদান-প্রদান করছিল। নানান বিষয়ের মধ্যে সেখানে বেকারত্বে থাকা এক বন্ধু সাগর পথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া চলে যেতে চেয়েও মজা করে এবং অন্যরা তাতে সায় দেয়, হাসে। দিন, তারিখ ঠিক হওয়ার পর, বন্ধুরা সাগর ভ্রমণ করতে কক্সবাজারের উদ্দেশে বাসে করে যাত্রাও করল। বিপত্তিটা শুরু হয় তৃতীয় পক্ষের অচেনা এক লোক ওই বন্ধুদের কারও মোবাইল পেয়ে ‘সাম্পান’ গ্রুপের মেসেজ দেখে এবং তাদের ‘মানব পাচারকারী’ সন্দেহ করে বসে। ওই তৃতীয় পক্ষের লোকটি পুলিশকে ‘সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া’ গমন ঠেকাতে এগিয়ে আসতে বলে। ভ্রমণপিপাসু বন্ধুদের কাল্পনিক এই ঘটনার মতো আমরা কি মোবাইলের মেসেজের ওপর নির্ভর করে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারি? মোবাইল ফোনে আমরা খুবই ব্যক্তিগত পরিসরে, আন্তরিক শব্দ ও হাস্যরসে এমন অনেক কথাই বলি, শেয়ার করি যা আমরা পাবলিক করতে চাই না। কথা হচ্ছে মানুষ তাদের ব্যক্তিগত পরিসরে কথা বলতে নানা ধরনের পরিভাষা, ইঙ্গিত ব্যবহার করে, যা অন্যদের কাছে একই সঙ্গে অপ্রাসঙ্গিক, এমনকি যথেষ্ট শোভন নাও মনে হতে পারে; কিন্তু তা তো অপরাধ নয়।
রাজনৈতিক নেতাকর্মী, বিশেষ করে সরকারবিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি করা; গ্রেপ্তার করা; সন্দেহভাজন কাউকে ৫৪ ধারায় আটক করা এমনকি বিরোধী মতের লোকজনের ওপর লাঠিপেটা করাও পুলিশের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড। আবার পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে মাদক মামলার আসামি করার অভিযোগও আছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে মেসেজ, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার চেক করার মতো ঘটনার খবরও আমাদের পড়তে হলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস ১০ ডিসেম্বরের দুই দিন বাকি থাকতে, ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় মহাবেশকে কেন্দ্র করে ‘নিরাপত্তার’ প্রশ্নে! এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চোখ বন্ধ করে থাকতে পারে না।
১৯৪৮ সালে ঘোষিত জাতিসংঘ মানবাধিকার ঘোষণার ১২ নম্বর আর্টিকেলে বলা হয়েছে, ‘কারও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কিংবা তার গৃহ, পরিবার ও চিঠিপত্রের ব্যাপারে খেয়ালখুশিমতো হস্তক্ষেপ কিংবা তার সুনাম ও সম্মানের ওপর আঘাত করা চলবে না। এ ধরনের হস্তক্ষেপ বা আঘাতের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে।’ বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, জনসাধারণের নৈতিকতা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের চিঠিপত্রের ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনতা রক্ষার অধিকার থাকিবে।’ এখানে যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের মধ্যে টেলিফোন, মোবাইল ফোন ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। তার মানে কারও মোবাইল ফোনের গোপনীয়তার সুরক্ষা দেওয়া রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফে বলা হতে পারে যে, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলার স্বার্থে ফোনের মেসেজ চেক করা হচ্ছে। কিন্তু তাতেই কি এটা বৈধ হয়ে যায়? সভ্য কোনো সমাজ ও রাষ্ট্রে কি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য একজন নাগরিকের মোবাইল ফোন চেক করতে পারে, যতক্ষণ না তার বিরুদ্ধে বড় কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় কিংবা তাকে বড় কোনো অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সন্দেহ করে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হয়?
গত বছর ফোনালাপ ফাঁস নিয়েও ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছিল। ফোনে আড়িপাতা এবং ফোনালাপ প্রকাশ (ফাঁস) নিয়ে দেশের কোনো আইনে সুস্পষ্ট কিছু বলা নেই। টেলিযোগাযোগ আইনের একটি ধারায় বলা হয়েছে, নিরাপত্তা সংস্থা তদন্তের ও মামলার স্বার্থে কারও ফোনালাপ চাইলে টেলিফোন সেবাদাতা সংস্থা তাদের সব রকমের তথ্য দিতে বাধ্য থাকবে; কিন্তু তারা কারও ফোনে আড়িপাততে পারবেসে বিষয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। প্রশ্ন উঠেছিল, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রসঙ্গ ছাড়া কারও ফোনকল রেকর্ড করা এবং সেই ফোনকল ফাঁস করে দেওয়া ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন কি না? রাস্তায় দাঁড় করিয়ে পুলিশ যদি নাগরিকদের হাত থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে মেসেজ, হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্য কোনো টেক্সট, ছবি বা ভিডিও চেক করে যেখানে একজন নাগরিকের খুব ব্যক্তিগত কোনো জিনিসও থাকতে পারে রাষ্ট্রের সংবিধান, আইন বা নীতি কি সেটাকে সমর্থন করবে?
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
বুধবার (২৯ মার্চ) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
হেফাজতে সুলতানার মৃত্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, ‘হঠাৎ করে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। আপনি প্রায় প্রতিদিনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ধরনের দুর্ঘটনা দেখতে পাবেন।’
‘এই সপ্তাহে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি গণগুলিতে শিশু নিহত হয়েছে। কারও সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে? আমি মনে করি না এই ধরনের দুর্ঘটনা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নষ্ট করবে।’
এর আগে, নওগাঁ পৌরসভা-চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহকারী সুলতানাকে (৩৮) র্যাব-৫ এর একটি টহল দল ২২ মার্চ সকালে কাজে যাওয়ার সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ধরে নিয়ে যায়। হেফাজতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতাল এবং তারপর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ মার্চ তার মৃত্যু হয়।
মোমেন বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র সম্পর্কে অন্যদের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়ার দরকার নেই।
‘বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের সংগ্রামে ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে। অন্য দেশের গণতন্ত্র সম্পর্কে আমাদের কোনো পাঠের প্রয়োজন নেই।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন খুবই শক্তিশালী।
যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের সমস্যা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাদের গণতন্ত্র খুবই দুর্বল। তাই তারা দেশে ও বিদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কারের পক্ষে ওকালতি করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র দেশে ও বিদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কারের বিষয়ে আরও সোচ্চার হওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা আমাদের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি। আমরা এটি সম্পর্কে একই পৃষ্ঠায় আছি। আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো গত এক দশকে ব্যাপক সংস্কারের মধ্য দিয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা ভুয়া ভোটারদের মোকাবিলা করার জন্য ছবিসহ ভোটার আইডি তৈরি করেছি। বিগত ১৪ বছরে নির্বাচন কমিশন হাজার হাজার নির্বাচন পরিচালনা করেছে। তাদের প্রায় সবগুলোই ছিল স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য। এবং ভবিষ্যতেও আমাদের নির্বাচন হবে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য।’
মোমেন বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন বৈশ্বিক গণমাধ্যমে ‘জাদুকরী’ হিসেবে সমাদৃত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান বিশ্বব্যাপী আমাদের গুরুত্ব বাড়িয়েছে। এবং ক্রমাগত উন্নয়নের কারণে, বিশ্বের অনেক দেশ এখন আমাদের সঙ্গে বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী।’
তিনি আরও বলেন,‘এই স্বাধীনতা দিবসে এবং রমজানের শুরুতে, আমরা অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাছ থেকে অভিনন্দনমূলক চিঠি পেয়েছি।’
মেয়েদের বয়সভিত্তিক দল নিয়ে বাফুফে যতটা তৎপর, সিনিয়র জাতীয় দল নিয়ে ততটাই উদাসীন। আরো একবার দেশের ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থার সিদ্ধান্ত সেটাই প্রমাণ করল। অর্থাভাবের অজুহাত দিয়ে সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানী সরকারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বাফুফে বলেছে, ‘মায়ানমার যাতায়াতের বিমান ভাড়া, ইনস্যুরেন্স ফি, সেখানে থাকা-খাওয়া ও ট্রান্সপোর্টশনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচের সংকুলান না হওয়ায় উক্ত প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ মেয়েদের জাতীয় ফুটবল দলের অংশগ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।’
অলিম্পিক বাছাইয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা আছে ‘বি’ গ্রুপে। স্বাগতিক মায়ানমারের সঙ্গে গ্রুপে আরও আছে ইরান ও মালদ্বীপ। গ্রুপের খেলাগুলো হবে আগামী ৫ থেকে ১১ এপ্রিল।
বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে চেয়েছিলাম এই বাছাই পর্বের স্বাগতিক হতে। কিন্তু স্বাগতিক মর্যাদা মায়ানমারকে দেওয়া হয়। টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী এখানে অংশ নিতে হলে সব খরচ নিজেদের বহন করতে হবে, যা বহন করার মতো অবস্থায় নেই বাফুফের।’
আবু নাঈম সোহাগ আরও বলেন, ‘আমরা ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। সেই সাহায্য পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এরপরই আমরা দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
গত সেপ্টেম্বরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পর আর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেননি সাবিনারা। এই সফর বাতিল হওয়ায় মাঠে নামার অপেক্ষাটা তাদের আরো বাড়ল।
মেয়েদের জাতীয় দল নিয়ে বাফুফের উদাসীনতার নজির এটাই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৯ সালের এসএ গেমসে মেয়েদের দল পাঠায়নি বাফুফে।
সেবার যুক্তিটা ছিল অদ্ভুত। যেহেতু তখন মেয়েদের জাতীয় দলটি মূলত বয়সভিত্তিক দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া ছিল, তাই শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে খারাপ করলে তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারে। এই কারণের কথা বলে সেবার এসএ গেমসে দল পাঠায়নি বাফুফে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
চতুর্থ পর্বে মাস্টারদা সূর্য সেনকে নিয়ে লিখেছেন ইসমত শিল্পী
সূর্য সেনের স্বাধীনতার স্বপ্ন
স্বাধীনতার মাস মার্চেই বিপ্লবী সূর্য সেনের জন্ম। ১৮৯৪ সালের ২২ মার্চ তিনি চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
মাস্টারদা সূর্য সেন ছিলেন বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের একজন অন্যতম নেতা এবং ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি’র প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। ১৯৩০ সালে তিনি চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন কওে সেখানে বিপ্লবী সরকার গঠন করেন। ১৯৩৩ সালে তাকে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় এবং বিচারে তাঁর ফাঁসি হয়।
বালক বয়সেই সূর্য সেন বুঝতে পেরেছিলেন যে, সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপার থেকে ছুটে আসা ইংরেজদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতেই হবে। জাস্টিস কিংসফোর্ডকে হত্যাচেষ্টার জন্য ক্ষুদিরামের ফাঁসি সূর্য সেনের হৃদয় ও মনকে দারুণভাবে আলোড়িত করে। কলেজে পড়ার সময়ই ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য তিনি বিপ্লবী সংগ্রামে যোগ দেন। বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে পড়ার সময় শিক্ষক সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী তাকে বিপ্লবী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ করেন। ইংরেজদের শোষণ-নির্যাতন থেকে মুক্তির পথ খুঁজে বের করার জন্য সূর্য সেনের হৃদয়-মন তৈরি হয়। তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ দেশ থেকে ইংরেজ তাড়ানোর অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষা নেন।
সে সময় চট্টগ্রামে একটি গোপন বিপ্লবী দল ছিল। ১৯১৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে এই বিপ্লবী দলের কয়েকজন ছাড়া প্রায় সবাইকে গ্রেপ্তার করে সরকার জেল দেয়। বিপ্লবের জন্য স্বচ্ছ চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধি ও মেধা অন্যদের তুলনায় বেশি থাকায় তিনি কিছু দিনের মধ্যেই দলের একজন নেতা হয়ে ওঠেন। চট্টগ্রামের বিভিন্ন অস্ত্রাগার লুণ্ঠন তার বুদ্ধি-পরামর্শ-নেতৃত্বেই সংঘটিত হয়েছিল।
সূর্য সেনের বিপ্লবী কর্মকাণ্ড, দুঃসাহসী অভিযান, সঠিক নেতৃত্ব¡ এই উপমহাদেশের মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিল। দেশের তরুণ ও যুবশক্তি তার আত্মাহুতিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে মরণপণ স্বাধীনতা সংগ্রামে দলে দলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সূর্য সেনের বাহিনী কয়েক দিনের জন্য ব্রিটিশ শাসনকে চট্টগ্রাম এলাকা থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল। সূর্য সেনের অন্যতম সাথী বিপ্লবী অনন্ত সিংহের ভাষায়, ‘কে জানত যে আত্মজিজ্ঞাসায় মগ্ন সেই নিরীহ শিক্ষকের স্থির প্রশান্ত চোখ দুটি একদিন জ্বলে উঠে মাতৃভূমির দ্বিশতাব্দীব্যাপী অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে উদ্যত হবে? ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহ দমনের জন্য বর্বর অমানুষিক অত্যাচারের প্রতিশোধ, জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ! কে জানত সেই শীর্ণ বাহু ও ততোধিক শীর্ণ পদযুগলের অধিকারী একদিন সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ রাজশক্তির বৃহত্তম আয়োজনকে ব্যর্থ করে তার সব ক্ষমতাকে উপহাস করে বছরের পর বছর চট্টগ্রামের গ্রামে গ্রামে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে তুলবে?’
সূর্য সেন পরে ছাত্রদের মাঝে বিপ্লবের মন্ত্র ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য শিক্ষকতার পেশা গ্রহণ করেন। চরিত্রের মাধুর্য দিয়ে বুঝিয়ে-সুজিয়ে দলে দলে যুবকদের তার বিপ্লবী দলে টেনে আনেন। তিনি দেশপ্রেমের শিখাকে প্রত্যেকের অন্তরে জ্বেলে দেন। ছাত্রদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মেলামেশার কারণে নিজের স্কুল ও শহরের বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ছাত্ররা একান্ত আপনজনের মতো তাকে ‘মাস্টারদা’ বলে ডাকতে শুরু করে।
১৯২৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে মাস্টারদার স্ত্রী পুষ্পকুন্তলা হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে মারা যান। এ সময় মাস্টারদা জেলে ছিলেন। পরে তিনি জেল থেকে ছাড়া পান।
১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে মাত্র কয়েকজন যুবক রাত সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম পাহাড়ের ওপর অবস্থিত অস্ত্রাগারটি আকস্মিকভাবে আক্রমণ করে দখল করে নেন এবং সব অস্ত্র লুণ্ঠন ও ধ্বংস করে ফেলেন। সূর্য সেন সেই রাতে ঘোষণা করেন, চট্টগ্রাম এই মুহূর্তে দুইশ বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করেছে। এই মুহূর্তে চট্টগ্রাম স্বাধীন।
মাস্টারদার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম শহর ৪৮ ঘণ্টার জন্য ইংরেজ শাসনমুক্ত ও স্বাধীন ছিল। জালালাবাদ পাহাড়ে বিপ্লবীদের মুখোমুখি সংঘর্ষ শেষ হওয়ার পরও তারা টানা তিন বছর গেরিলা যুদ্ধ চালিয়েছিলেন। ব্রিটিশ সৈন্যদের দৃষ্টি থেকে মাস্টারদাকে আড়ালে রাখার উদ্দেশ্যেই বিপ্লবীরা এই যুদ্ধ চালিয়েছিলেন।
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনাধীন পরাধীন ভারতের স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীরা। সূর্য সেন ছাড়াও এই দলে ছিলেন গণেশ ঘোষ, লোকনাথ বল, নির্মল সেন, অনন্ত সিং, অপূর্ব সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী, নরেশ রায়, ত্রিপুরা সেনগুপ্ত, বিধুভূষণ ভট্টাচার্য, শশাঙ্ক শেখর দত্ত, অর্ধেন্দু দস্তিদার, হরিগোপাল বল, প্রভাসচন্দ্র বল, তারকেশ্বর দস্তিদার, মতিলাল কানুনগো, জীবন ঘোষাল, আনন্দ গুপ্ত, নির্মল লালা, জিতেন দাসগুপ্ত, মধুসূদন দত্ত, পুলিনচন্দ্র ঘোষ, সুবোধ দে, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এবং কল্পনা দত্ত। ছিলেন সুবোধ রায় নামের এক ১৪ বছরের বালক।
বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তারের হাত থেকে অলৌকিকভাবে রক্ষা পেয়েছেন মাস্টারদা। চট্টগ্রামের কাছেই গইরালা গ্রামে এক বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন মাস্টারদা। এক জ্ঞাতির বিশ্বাসঘাতকতায় ব্রিটিশ সৈন্যরা তার সন্ধান পেয়ে যায়। মাস্টারদা গ্রেপ্তার হন ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। ১৯৩৪ সালে ফাঁসির আগেই স্বাধীনতার স্বপ্নের কথা বলেছিলেন সূর্য সেন। ১৯৩৪ সালে ১২ জানুয়ারি ভোর ১২.৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর হয়। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে সঙ্গীদের উদ্দেশে তিনি লিখে যান, ‘আমি তোমাদের জন্য রেখে গেলাম মাত্র একটি জিনিস, তা হলো আমার একটি সোনালি স্বপ্ন। স্বাধীনতার স্বপ্ন। প্রিয় কমরেডস, এগিয়ে চলো, সাফল্য আমাদের সুনিশ্চিত।’
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’