
কাতার বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন না হলেও গোল্ডেন বুটটি গেছে ফ্রান্সের ঘরে। আর গোল্ডেন বল চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার। অন্যদিকে, বাংলাদেশে অরাজনৈতিক পরিচয়ের হেফাজতে ইসলাম রাজনীতির মাঠে ঘুরছে ‘গোল্ডেন বুট’ নিয়ে। রাজনীতির ভোটের মাঠে সবদিকে বিচরণ তাদের। কদর-সমাদরও মিলছে। দৃশ্যত হেফাজত সরকারের কব্জায়। কিন্তু বোঝা যাচ্ছে ভেতরে-ভেতরে তাদের সংযোগ আরও নানান দিকে। সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়ায় সাড়ে আট বছর পর রাজধানীতে শোডাউন করেছে হেফাজত। রাজকীয় হালে ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলন করেছে মহানগর নাট্যমঞ্চে। ১৭ ডিসেম্বর শনিবার শীতের সকালে শুরু হওয়া সম্মেলনে সারা দেশ থেকে জড়ো করা হয় তাদের নেতাকর্মীদের। হেফাজতের ভাষায় তারা দেশের শীর্ষ আলেম, ওলামা, মাশায়েখ। সম্মেলন থেকে বিকেলে হেফাজত নেতারা চলে যান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গণভবনে। কারাবন্দি নেতাদের মুক্তিসহ ৭ দফা দাবি আছে তাদের। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের খবরটি গণমাধ্যম জেনেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাতে। তিনি জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী হেফাজত নেতাদের কথা দিয়েছেন তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেবেন বলে। হেফাজতের দাবির যুক্তি-অযুক্তি বরাবরই আপেক্ষিক। যাহা যৌক্তিক, তাহাই অযৌক্তিক। পক্ষে বা অনুকূলে থাকলে তারা ইসলামের ‘প্রকৃত সেবক’। তাদের দাবিও যৌক্তিক। আর বিপক্ষে অবস্থান নিলে তারা জঙ্গি, স্বাধীনতার দুশমন, তেঁতুল হুজুর ইত্যাদি। তখন তাদের দাবিও অযৌক্তিক। অন্তত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিরোধী মতের বিএনপি ও জাতীয় পার্টির ক্ষেত্রে হেফাজতের মানদণ্ড এ রকমই।
বাংলাদেশে ইসলামপন্থি আরেক শক্তি স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের এখন দৃশ্যত দুর্দিন। তারা নিজেদের অরাজনৈতিক দাবি করে না। পরিচয় দেয় ‘আল্লাহর আইন কায়েমকারী’ দল হিসেবে। আল্লাহর আইন কায়েমের লক্ষ্যে তারা ‘সৎ লোকের শাসন’ চাই সেøাগান দেয়। যদিও হালে সেøাগান তোলার শক্তিই নেই। রাজনীতিতে নিষিদ্ধ না হলেও নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন নেই তাদের। ‘ফিটনেস সনদ’ না থাকলেও এক ধরনের ‘রুট পারমিট’ নিয়ে রাজনীতির মাঠে চলাচলকারী এ দলটির পায়েও বল আছে। তিন-চারটি উইংয়ে খেলছে জামায়াত। বিএনপির সঙ্গে নেই, আবার আছেও। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পেতে সরকারি মহলের সঙ্গে দেন-দরবার করছে। নিজ নামে সামনে না থেকে ‘আমার বাংলাদেশ’‘এবি’ পার্টি এবং ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি’ ‘বিডিপি’ নতুন দুটি নামে নিবন্ধনের আবেদনও করে রেখেছে কমিশনে।
এর মধ্যেই নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়াকে জামায়াত সংগঠিত করছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ডিএমপি কমিশনারের খন্দকার গোলাম ফারুকের দাবি, জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়াকে শুধু সংগঠিত নয়, অর্থায়নও করছে তারা। তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, জামায়াতের আমির ডা. শফিকের ছেলে ডা. রাফাত নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ায় যোগ দিয়েছেন। বাবা জেনেশুনে বিষয়টি সমর্থন ও তাকে অর্থায়ন করেন। তাই বাপ-ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই অভিযোগ ও ঘটনার সত্যতা এখনো অজানা। তা অনেকটা একতরফাও। পুলিশের দাবির জবাবে জামায়াত বা এর কোনো নেতার বক্তব্য নেই। আমির-সেক্রেটারি জেনারেলসহ শীর্ষ নেতারা গ্রেপ্তার বা পলাতক। এ দৌড়ের ওপর থেকে জবাব দেওয়ার অবস্থাও নেই তাদের। জামায়াতের এমন দুর্গতির বিপরীতে হেফাজত বেশ নির্ভয়ে। শনিবার সপ্তাহের প্রথম দিনে আলিশান সম্মেলন শেষে আসরের নামাজের পর তারা ১১ জন চলে যান গণভবনে। এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তারা কথা বলেছেন। বৈঠককে ৭ দফা দাবি নিয়ে অত্যন্ত ‘ফলপ্রসূ’ উল্লেখ করে হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদরীদ নদভী জানান, প্রধানমন্ত্রী তাদের দাবিগুলো খুব আমল দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নিজেই নোট নিয়েছেন। নেতাকর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী তাদের আশ্বস্ত করেছেন। কয়েকটি দাবি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেখভালের বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন। কয়েকটি বিষয়ে দেখতে বলেছেন বৈঠকে উপস্থিত থাকা গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানকে।
মাওলানা নদভীর দেওয়া এসব তথ্য ঠিক থাকলে হেফাজতের আর পেছনে তাকানোর দরকার হবে না। সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে হেফাজতের আমির শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীও জানিয়েছেন, ‘শাহ আহমদ শফী ঘোষিত হেফাজতের ১৩ দফা আন্দোলনে ক্ষমতাকেন্দ্রিক কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই। তাই দেশের প্রতিটি মুসলমানই হেফাজতের নেতাকর্মী বা সমর্থক।’ এখানে হেফাজতের নতুন ৭ দফা উল্লেখ করা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। বিশ্লেষণে দেখা যায়, হেফাজতের সাবেক আমির শাহ আহমদ শফী ঘোষিত ১৩ দফার একটি সংক্ষিপ্ত রূপই বর্তমান ৭ দফা। কথা কমিয়ে ১৩ থেকে ৭-এ আনা হয়েছে। যেমন : ১. অবিলম্বে হেফাজত নেতাকর্মী ও আলেম-ওলামাদের মুক্তি দিতে হবে। ২. নেতাকর্মীদের নামে সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। ৩. ইসলাম ও মহানবীকে (সা.) কটূক্তিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান রেখে সংসদে আইন পাস করতে হবে। ৪. কাদিয়ানিদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে। ৬. শিক্ষা কারিকুলামে ধর্মীয় শিক্ষার পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। ৬. জাতীয় শিক্ষা কমিশনে হাইয়াতুল উলিয়ার প্রতিনিধি থাকা বাধ্যতামূলক করতে হবে। ৭. বিশ্ব ইজতেমায় বিতর্কিত মাওলানা সা’দকে আসার অনুমতি দেওয়া যাবে না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেওয়ার আগে দাবিগুলোর যৌক্তিকতা নিয়ে হেফাজত নেতারা নাট্যমঞ্চের ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলন কাঁপিয়েছেন। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে আট বছর পর রাজধানীতে এমন সম্মেলনে হেফাজতের অন্যতম নেতা মাওলানা মামুনুল হকসহ নেতাকর্মীদের দ্রুত মুক্তি দাবি করা হয়। সামনে বিশাল আয়োজনে আরও কয়েকটি সম্মেলন করার ঘোষণাও দেওয়া হয়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে জেলা-উপজেলা কমিটি গঠন করা হবে খুব ঘটা করে। স্থানীয় জনগণকে চমকিত করে দিতে এ উপলক্ষে জমায়েতগুলো হবে বিশাল। বিভাগীয় শহরে হবে ‘শানে রেসালত’ সম্মেলন। এরপর রাজধানীতে ‘জাতীয় শানে রেসালাত’। সব মিলিয়ে সামনে অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য-ধারণাতীত সুদিন দেখছেন হেফাজত নেতারা। অন্যদিকে, একসময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা এবং ক্ষমতার আশীর্বাদ ও পারিপার্শ্বিকতায় এমন সুদিনে আসীন জামায়াতই এখন খাবি খাচ্ছে দুর্দিনে। অবশ্য দুর্দিন মোকাবিলার দীর্ঘ অভিজ্ঞতাও রয়েছে দলটির। নিষিদ্ধ হয়ে আবার ফাঁকফোকরে সিদ্ধ হওয়ার অভিজ্ঞতাও আছে জামায়াতের। এ চর্চা তারা পাকিস্তান আমলেও করেছে।
সাম্প্রতিককালে এরশাদের পতনের পর সবদিকে বোলিং-ব্যাটিং শেষে বিএনপির সঙ্গে নেপথ্য বোঝাপড়ায় একানব্বইয়ের সংসদ নির্বাচনে ১৮ আসনে জিতে অবস্থান পোক্ত করে জামায়াত। নিজেদের রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর জন্য দোয়া চাইতে দুই দল ও দুই নেত্রীই সশরীরে ছুটে যান গোলাম আযমের কাছে। বোঝাপড়ায় সরকার গঠনে বিএনপিকে সমর্থন জুগিয়ে দুটি সংরক্ষিত আসন নেয়। বছর কয়েকের মাথাতেই চলে যায় বিএনপির বিরুদ্ধে। কেয়ারটেকার সরকার ফর্মুলা নিয়ে আন্দোলনের মাঠ গরম করে। আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টির সঙ্গে মিলে বিএনপির বিরুদ্ধে ত্রিদলীয় লিয়াজোঁ কমিটিভুক্ত হয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শরিকানা নেয় জামায়াত। তবে, নির্বাচনের মাঠে একা একা সাফল্য পায়নি। ছিয়ানব্বইয়ের নির্বাচনে সংসদে আসন নেমে আসে মাত্র ৩টিতে। এরপর আওয়ামী লীগবিরোধী হয়ে আবার মিত্রতা বিএনপির সঙ্গে। ২০০১ সালে একেবারে ঘোমটা খুলে বিএনপির জোটসঙ্গী। ১৭ আসনে জিতে দুই মন্ত্রিত্ব নিয়ে সরাসরি আসীন হয় রাষ্ট্রক্ষমতায়। জামায়াতের রাজনীতিতে অবিশ্বাস্য ধস নামে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসার পর থেকে। তাদের ভাবনাতেই আসেনি আওয়ামী লীগ সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচার করবে বা করতে পারবে বলে। অল্পতেই এদের ভাবনায় ছেদ পড়ে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে দেশ-বিদেশে তারা গলদঘর্ম চেষ্টা চালায় বিচারটি রোধ করতে। কিন্তু চেষ্টায় সাফল্য হাসিল হয়নি। মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদসহ শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুদণ্ড, মাওলানা সাঈদীর যাবজ্জীবন, সাবেক আমির গোলাম আযমের ৯০ বছর কারাদণ্ড জামায়াতের ওপর সিডর বইয়ে দেয়। এর মধ্যেই ইসিতে দলের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু দলটি এখনো নিষিদ্ধ হয়নি।
একেক সময় একেক ভূমিকা তাদের উত্তরাধিকারের বৈশিষ্ট্যের মতো। পাকিস্তানপন্থি এই দল একসময় ভারতের মুসলমানদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান সৃষ্টির বিরোধিতা করেছে। আবার ছেচল্লিশের নির্বাচনে মুসলিম লীগের বিরোধিতা করেছে। বাষট্টিতে আইয়ুব খানের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের বিরোধিতাও করেছে। দুবছর পর চৌষট্টির ৪ জানুয়ারি জামায়াতের রাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। গ্রেপ্তার করা হয় মওদুদীসহ জামায়াতের ৬০ নেতাকে। এর মধ্যে ছিলেন গোলাম আযমসহ পূর্ব পাকিস্তানের ১৩ জন জামায়াত নেতাও। ওই বছর অক্টোবরেই আবার নিষেধাজ্ঞাটি ওঠে যায়। ওই জামায়াতই আইয়ুব খানের সামরিক আইন ঘোষণার সময় পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশ নেয়। পঁয়ষট্টিতে সর্বদলীয় গণতান্ত্রিক জোটেও যায়। উল্লেখ্য, ছাত্রশিবিরও একটি বদলানো নাম। একাত্তরে জামায়াতের মূলশক্তি ছিল ইসলামী ছাত্র সংঘ। সাতাত্তরের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে মীর কাসেম আলীকে সভাপতি ও মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠন হয় ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির’। শুধু ‘সংঘ’ বাদ দিয়ে ‘শিবির’ যুক্ত করে পতাকা, মনোগ্রাম, প্রশিক্ষণব্যবস্থাসহ সাবেক কাঠামোই বহাল থাকে।
তেমনি এখন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ নতুন কোনো নামে উদয় হলেও তারা বলে বুট চালাবে আগের মতোই।
লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন
‘শৈশবেও আমি শুধু জিততেই চেয়েছি, এখনো’২০১৪-এর ব্রাজিল বিশ্বকাপের আগে ‘ওয়ার্ল্ড সকার’ ম্যাগাজিনকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে লিওনেল মেসি ঠিক এ কথাটাই বলেছেন। তিনি শুধু জিততে চেয়েছেন, সেই শৈশব থেকেই। একাধিক সাক্ষাৎকার থেকে নিজের সম্পর্কে মেসির বলা কিছু কথা তুলে ধরা হচ্ছে :
প্রশ্ন : ফুটবল নিয়ে প্রথম স্মৃতি কোনটা?
মেসি : আমি অনেক ছোট। বড়জোর তিন-চার বছর বয়স। পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল খেলছি, আমি দেখতে পাচ্ছি সেই বয়স থেকেই ফুটবলটা আমারই পায়ে।
প্রশ্ন : যারা আপনাকে আটকাবে, ফাউল করবে তাদের এড়ানোটা কি তখনই শিখেছেন?
মেসি : আমি সব সময়ই একই স্টাইলে খেলেছি, কারা আমাকে লাথি মারবে এ নিয়ে সত্যিই আমি কখনো উদ্বিগ্ন ছিলাম না।
প্রশ্ন : যখন বার্সেলোনায় যোগ দিলেন প্রথম কটা সপ্তাহ কী মাস কেমন কেটেছে, সুখে না দুঃখে?
মেসি : দুটোই। বার্সেলোনায় থাকতে পারছি, নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে এটা আনন্দের। অন্যদিকে আমার চেনাজানা সবাইকে ফেলে নতুন করে নতুন টিমমেটদের সঙ্গে শুরু করতে হচ্ছে; প্রথমদিকে আহত থাকার কারণে খেলা শুরু করতেই পারিনি, তারপর কাগজপত্র ঠিকঠাক করাএসব আমার জন্য কঠিন কাজ।
প্রশ্ন : কে আপনার আদর্শ ছিলেন?
মেসি : আমি সব সময় পাবলো আইমারকে পছন্দ করতাম, তখন তিনি রিভার প্লেট দলে খেলতেন। আমি তাকে যথেষ্ট অনুসরণ করতাম। (পাবলো আইমারের জন্ম ১৯৭৯ সালে, মেসির ১৯৮৭, তার চেয়ে ৮ বছরের বড়। পাবলো আইমার ২০০৬-এর বিশ্বকাপ ফুটবল আর্জেন্টিনার পক্ষে খেলেছেন)।
প্রশ্ন : আপনি যে দেখতে ছোট ছিলেন, এতে সমস্যা হয়নি?
মেসি : না, উচ্চতা নিয়ে আমার কখনো সমস্যা হয়নি। আমি সব সময়ই সবচেয়ে ছোট বালক ছিলামআমার স্কুলে, আমার টিমে।
প্রশ্ন : ১৩ কী ১৪ বছর বয়সেও তো আপনি খেলায় নিয়মিত হননি, আপনার বার্সেলোনার এখনকার কোচ টিটো ভিলানোভা সে সময়ও আপনাদের কোচ ছিলেন। অসুবিধে হয়নিখেলা ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবেননি?
মেসি : না, কখনো নয়। আমি সব সময়ই প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাওয়ার কথা ভেবেছিআমার স্বপ্নটাকে তাড়া করেছি। আমি ভাগ্যবান টিটো যখন যোগ দেন, আমি খেলায় আগের চেয়ে বেশি যোগ দিতে শুরু করেছিতখন থেকেই খুব ফুটবলের জন্য নিজেকে বদলে নিতে থাকি।
প্রশ্ন : টিটো তখন যেমন ছিলেন এখনো কি তেমনই আছেন?
মেসি : তিনি সেই একই মানুষ, ক্যাডেট হিসেবে আমাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, আমি অনেক ছোট ছিলাম, সব আমার মনে নেই। এটা ঠিক তিনি আমাদের যেভাবে গ্রহণ করেছেন, এখনো ঠিক একইভাবে কোচিং করছেন।
প্রশ্ন : বার্সেলোনায় যোগ দিয়ে যা শিখেছেন তাই কি আপনার স্টাইলে পরিণত হয়েছে?
মেসি : আমার খেলার স্টাইল বরাবর একই ধরনের। আমি কোনো সুনির্দিষ্ট স্টাইলে খেলার চেষ্টা কখনো করিনি। একেবারে ছোটবেলা থেকে আমি এভাবেই খেলি। তবে আর্জেন্টিনায় আমাদের অনেক দৌড়াতে হতো, এখানে বলের সঙ্গে সংস্পর্শটা বেশি রাখতে হয়।
প্রশ্ন : আপনি যখন প্রথম বার্সেলোনায় খেলতে শুরু করেন কোচ ফ্যাবিয়ো ক্যাপেল্লো আপনাকে বর্ণনা করেছেন ‘এক খুদে শয়তান’।
মেসি : তিনি বলেছেনএটা অবিশ্বাস্য মনে হয়েছেআমার সম্পর্কে যে তিনি এমন প্রশংসাসূচক বর্ণনা করেছেন এটা তার উদারতা।
প্রশ্ন : আপনি যখন স্পেনে আর্সেনালের পক্ষে খেলতে এলেন আপনার পাসপোর্ট নিয়ে সমস্যা ছিল?
মেসি : আমার জন্য সেটা কঠিন সময় ছিল, তবে ভাগ্য ভালো সমস্যাটার তাড়াতাড়ি সমাধান সম্ভব হয়েছে। এসব ঠুনকো বিষয় কেন খেলতে বাধা হবে বুঝি না।
প্রশ্ন : আপনি কেন বলেছেন ডেকো ও রোনালদিনো আপনাকে ডানার নিচে নিয়েছেন?
মেসি : ঠিক বলতে পারব না, তবে শুরু থেকেই আমি ভাগ্যবান, দুজনকে আমার দুপাশে পেয়েছি, আমি সারা জীবন তাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। থিয়াগো মোত্তা ও সিলভিনোর কাছেও কৃতজ্ঞ।
প্রশ্ন : তারপর সেই দলটার কী হলো? এত তাড়াতাড়ি ভেঙে পড়ল কেন?
মেসি : কী হয়েছিল আমি সত্যিই জানি না। আমরা চ্যাম্পিয়ন লিগের সেমিফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছে হেরে গেলাম; গোলের ব্যবধানে রিয়েল মাদ্রিদের কাছে হারলাম। কী ঘটল না জানলেও একটা শিক্ষা পেলামএমন যেন না ঘটে।
প্রশ্ন : আপনি এখন খাবার-দাবার নিয়ে খুব যতœবান। কোনো বিশেষ কিছু খাওয়া মিস করছেন না তো?
মেসি : আমার খাওয়া-দাওয়া নিয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে, আসলে তেমন কিছুই ঘটেনি। আগে যা খেতাম তাই খাচ্ছি, আগে খেতাম না এমন একটা পদ যোগ হয়েছেমাছ। অধিকাংশই আগের মতো চালাচ্ছি।
প্রশ্ন : আজকাল আপনি অনেক গোল তৈরি করে দিচ্ছেন, নিজেও জালে বল ঢোকাচ্ছেন। আপনার খেলার ধরন কি বদলে গেছে? আগে সবটাই নিজে করে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতেন, অনেকটাই ‘বল হগ’।
মেসি : আমি নিজেকে কখনো লোভী কিংবা ‘বল হগ’ ভাবিনি, যদিও কেউ কেউ তা মনে করে থাকতে পারেন। যাদের সান্নিধ্যে থেকে আমি খেলার উন্নয়ন ঘটিয়েছি, আমি তাদের অনুসরণ করি।
প্রশ্ন : আপনি আপনার অবস্থান, খ্যাতি ও অবিরাম প্রশংসার সামাল দিচ্ছেন কেমন করে? আপনি কি আত্মসমালোচক?
মেসি : আমি অন্য কারও চেয়ে নিজের ব্যাপারে অনেক বেশি সমালোচনামুখর, আমি কখন ভালো করছি, কখন করছি না তা বুঝতে পারিএটা কাউকে বলে দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। আমি পিচে থাকার সময় কী করেছি সেটা দেখি।
প্রশ্ন : যখন আপনার কাছে বল আসে তখন কি আপনি কোন কোন বিকল্প অনুসরণ করা যায় তা ভাবেন, না স্বতঃস্ফূর্তভাবে যা ইচ্ছে হয় তাই করেন?
মেসি : বিরোধী দলের পোস্টে গোল করতে সবচেয়ে ভালো যেটা মনে হয় আমি তাই করি, তা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটে।
প্রশ্ন : ফুটবল খেলার পরিশ্রম ছাড়া আপনি কি অন্য কোনো শারীরিক পরিশ্রম করেন? জিমনেশিয়ামে অনেকটা সময় কাটান?
মেসি : আমি আমার দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠতে, আঘাত ঠেকাতে এবং সব সময়ই আমার শ্রেষ্ঠটি দিতে চেষ্টা করিএটা জিমনেশিয়ামে সারা জীবন কাটিয়ে দেওয়ার মতো কোনো ব্যাপার নয়। আমি জিমভক্ত কেউ নই।
প্রশ্ন : আপনি কি নিজ দলের সহখেলোয়াড়দের কাছ থেকে শিখেন? আপনি কি তাদের কারও দক্ষতাকে ঈর্ষা করেন? যেমন ধরুন শাভি?
মেসি : শাভি (শাভি ফার্নান্দেজ, দীর্ঘ বছর বার্সেলোনায় খেলেছেন, এখন পেশাদার ম্যানেজার) একজন বড় খেলোয়াড়। তিনি কখনো বল হারান না। প্রথম দৃষ্টি তার, খেলাটাকে তিনি পাঠ করেন, খেলার ছন্দ ও গতিনিয়ন্ত্রণ করেন।
প্রশ্ন : আর আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা?
মেসি : তিনিও একই রকম, তবে তার গোল দেওয়ার সামর্থ্য বেশি (আন্দ্রেস বার্সেলোনার মিডফিল্ডার, তিন সিজন দলের ক্যাপ্টেন ছিলেন, শাভির সঙ্গে ২০১০-এর বিশ^কাপ বিজয়ী)। তিনি গভীর থেকে বল নিয়ে ছুটে আসেন, তিনি সে ধরনের খেলোয়াড় যাকে ঘিরে গোটা দলের আবর্তন। যখন শাভি আর আন্দ্রেস একসঙ্গে মাঠে থাকেন অন্যদলের বল পাওয়া কঠিন হয়ে যায়।
প্রশ্ন : বলা হয়ে থাকে যে খেলায় আপনি হেরে যান, এমনকি প্রশিক্ষণের খেলাতেও, আপনার সঙ্গে কথা বলতে না যাওয়াই উত্তম। হেরে গেলে সত্যিই এমন বাজে অবস্থা হয় নাকি?
মেসি : অন্য সবার বেলাতেও ড্রেসিংরুমে তাই ঘটে। এমনকি ট্রায়াল ম্যাচ হলেও পরাজয় তো একটা ক্ষতআর সেটা ঘটা ভালো, কারণ আমরা জিততে চাই, এমনকি ট্রায়াল গেমেও। তার মানে আমাদের সাফল্যের ক্ষুধা তলিয়ে যায় না।
প্রশ্ন : পেপ গার্দিওয়ালা চলে যাওয়ার পর আপনিই দলের লিডার হয়ে উঠেছেন। (পেপ গার্দিওয়ালা এখন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ম্যানেজার)।
মেসি : আমি আগের মতোই আছি। দলের প্রত্যেকেই নিজের ভূমিকা সম্পর্কে অবহিত, কাজেই লিডারের প্রয়োজন হয় না। আমার আগে যেমন ভূমিকা থাকত এখনো ঠিক তা-ই।
প্রশ্ন : পেলে, ডিয়েগো ম্যারাডোনাএখন মানুষ বলাবলি করছে আপনিই হয়ে উঠতে পারেন সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়।
মেসি : আমি প্রতিদিন নিজের উন্নতির চেষ্টা করে যাচ্ছি। যেসব খেলোয়াড় অবসর নিয়েছেন এবং মানুষ এখনো তাদের নাম স্মরণ করছেন এটা অনেক বড় ব্যাপার। তাদের সঙ্গে আমার নাম উচ্চারিত হওয়াটা সৌভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু আমি সেটা ভাবছি না। আমি ভাবছি আমার ফুটবল জীবনের শেষ পর্যন্ত নিজের খেলার উন্নয়ন ঘটিয়ে যাব। তারপর মানুষ যা বিচার করার করবে।
বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসির একটি কথা স্মরণ রাখতেই হবে : আমি গোল করতে পছন্দ করি। কিন্তু যাদের সঙ্গে আমি খেলছি তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখতেও আমি পছন্দ করি। আরও একটি কথায় মানবিক মেসিকে পাওয়া যায় : একটু খ্যাতিমান হওয়ায় যাদের প্রয়োজন তাদের পাশে দাঁড়ানোর একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছেবিশেষ করে শিশুদের।
আন্দালিব রাশদী : কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক
অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে টালমাটাল পাকিস্তান। বিপর্যপ্ত অর্থনীতি, প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যেই দেশটির নতুন সংকট হয়ে উঠছে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান বা (টিটিপি)। তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানভিত্তিক একটি মৌলবাদী গোষ্ঠী যারা শরিয়াহভিত্তিক আইন চায়। আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের পর থেকে টিটিপি’র উৎসাহ বেড়েছে। তারা এই উৎসাহ পাচ্ছে সরাসরি আফগান তালেবান থেকে। গত বছরের মাঝামাঝিতে আফগান তালেবানের মধ্যস্থতায় ইমরান খানের সরকার টিটিপি’র সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। পরবর্তী সময়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে টিটিপি’র সে পাঁচ মাসের যুদ্ধবিরতি শেষ হয় গত ২৮ নভেম্বর। এর ঠিক দুদিন পর বেলুচিস্তান প্রদেশে পুলিশের ট্রাকে আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়, যাতে অন্তত তিনজন নিহত এবং আহত হন ২০ নিরাপত্তাকর্মীসহ ২৮ জন। এই হামলার দায় স্বীকার করেছে টিটিপি। এই হামলা এমন এক সময়ে হয়েছে যখন পাকিস্তানে নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল আসিম মুনির আহমেদ দায়িত্ব নিতে যাচ্ছিলেন। জাতিসংঘের গত সাধারণ অধিবেশনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ টিটিপিকে আল-কায়েদা ও আইএসের সঙ্গে তুলনা করে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বলে উল্লেখ করেছেন। এখন নতুন সেনাপ্রধান ও প্রধানমন্ত্রী টিটিপি’র সঙ্গে নতুন যুদ্ধবিরতি করবেন নাকি অন্য কোনো উপায়ে মোকাবিলা করবেন তার ওপর পাকিস্তানের নিরাপত্তা নির্ভর করছে। ইতিমধ্যে ইসলামাবাদে টিটিপি’র চাঁদাবাজি উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে।
টিটিপি’র উত্থান : টিটিপি’র উত্থানের সঙ্গে আফগানিস্তানের ভূ-রাজনীতি জড়িত। ২০০১ সালে আমেরিকা আফগানিস্তানে হামলা চালালে অনেক আফগান তালেবান সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানের পার্বত্য অঞ্চল ওয়ারিজিস্তানে আশ্রয় নেয়। তাদের দমনে ২০০২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী অভিযান চালালে ওয়ারিজিস্তানের কিছু উপজাতীয় গোষ্ঠী দাবি করে সেনাবাহিনী তাদের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করেছে। সেখান থেকে টিটিপির উত্থান। তাদের লক্ষ্য খাইবার পাখতুন প্রদেশ থেকে পাকিস্তানের সরকার বিতাড়িত করে শরিয়াহ সরকার প্রতিষ্ঠা করা। প্রতিষ্ঠার পর নানাভাবে এই গোষ্ঠীটি দুর্বল হয়ে পড়লেও ২০২০ সালের মাঝামাঝিতে নূর ওয়ালি মেহসুদের নেতৃত্বে উপ-গ্রুপগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়। এর মাধ্যমে টিটিপি তাদের পূর্ণ শক্তি ফিরে পায়। বর্তমানে পাকিস্তানের টালমাটাল অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে তারা খাইবার পাখতুন প্রদেশ নিয়ন্ত্রণের একটি সুযোগ হিসেবে দেখছে। টিটিপি প্রকাশ্যে আফগান তালেবানের আনুগত্য স্বীকার করে। তবে এখানে কিছু প্রশ্ন আছে। আদর্শিকভাবে টিটিপি, আইএস ও আল-কায়েদা থেকে অনুপ্রাণিত। আল-কায়েদা ও আইএসের মতো টিটিপি সালাফি আদর্শে বিশ্বাসী। তাদের হামলার ধরনও একই এবং সিরিয়ায় আসাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে তেহরিক-ই-তালেবানের অনেকেই সিরিয়া গিয়েছিলেন। আফগান তালেবান হানাফি মাজহাবে বিশ্বাসী । আফগান তালেবানের উৎসাহে টিটিপি’র সাম্প্রতিক পরিকল্পনা অগ্রসর হলেও আদর্শিকভাবে তারা আল-কায়েদার এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করতে চায়।
কাবুলে পাকিস্তানি দূতের ওপর হামলা : গত ৩০ নভেম্বর আকস্মিক কাবুল সফরে যান পাকিস্তানি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার। তার সফরের উদ্দেশ্য পাক-আফগান সীমান্তের উত্তেজনা রোধ ও সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করা। কাবুলে তালেবানের সরকার ক্ষমতায় আসার পর যে কয়েকটি দেশ স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে তার মধ্যে পাকিস্তান অন্যতম। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী একজন নারী হওয়ায় তালেবানের সরকার তাকে কীভাবে গ্রহণ করে তা নিয়ে একটা শঙ্কা ছিল। তবে শঙ্কা উতরে তালেবান নেতারা তাকে বিমানবন্দরে অভিবাদন জানিয়েছেন এবং ‘ফলপ্রসূ’ আলোচনায় অংশ নিয়েছে। এই ফলপ্রসূতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে কারণ হিনা রাব্বানির সঙ্গে তালেবান প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সাক্ষাৎ হয়নি। এই আকস্মিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে পাকিস্তানে টিটিপি’র যুদ্ধবিরতির ঘোষণা না মানার ঘোষণার ২ দিন পর। যেদিন হিনা কাবুলে পৌঁছেছেন সেদিনই পাকিস্তানে বোমা হামলা চালিয়েছে টিটিপি। সীমান্ত উত্তেজনা রোধের সে আলোচনায় অবধারিতভাবে টিটিপি ইস্যু ছিল। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বরাবরই অভিযোগ করা হয় আফগান সীমান্তের ভেতরের সহযোগিতার কারণে টিটিপি দেশজুড়ে বোমা হামলা করতে পারছে। তালেবান-হিনা আলোচনা শেষ না হতেই গত ২ ডিসেম্বর কাবুলে নিযুক্ত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত উবায়দুর রহমান নিজামনিকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে দুর্বৃত্তরা। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান দূত। এই হত্যাচেষ্টার দায় স্বীকার করেছে আইএস। যদিওবা ধারণা করা হচ্ছে টিটিপির প্রত্যক্ষ মদদে এই হামলা চালানো হয়েছে। অভিযোগ আছে পাক-তালেবান আলোচনা ভেস্তে দিতে এই হামলা করা হয়েছে।
পাক-তালেবান আলোচনায় আইএস বা টিটিপির স্বার্থটা অভিন্ন। যদিও হানাফি তালেবান ও সালাফি আল-কায়েদা ও আইএস-এর এখানে সূক্ষ্ম অবিশ্বাস ও দ্বন্দ্ব আছে। আল-কায়েদা ও আইএস চাইছে পাকিস্তানে তেহরিক-ই-তালেবানকে নিজেদের মতাদর্শগত (সালাফি) একটি অস্ত্রধারী মৌলবাদী গোষ্ঠী হিসেবে দাঁড় করাতে। পাক-আফগান সীমান্তে উত্তেজনার সুযোগে আল-কায়েদা, আইএস ও টিটিপির যৌথ পরিকল্পনা নিয়ে আফগান-পাক সীমান্তে শক্তিশালী হচ্ছে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। ফলে আলোচনার অংশ হিসেবে সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি হলে তেহরিক-ই-তালেবান সীমান্তের ওপার থেকে যে সমর্থন, ট্রেনিং ও অস্ত্রবারুদের জোগান পাচ্ছে তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আফগানিস্তানের সঙ্গে বৈঠক করে তেহরিক-ই-তালেবানকে দমনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তালেবানকে সহায়তা করলে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী আল-কায়েদা ও আইএস তাদের পাকিস্তানি নেটওয়ার্ক হারাবে। তাই সালাফি মাজহাবে বিশ্বাসী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো টিটিপিকে রক্ষা করতে পাক-তালেবান আলোচনাকে ভেস্তে দিতে চাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাকিস্তান যেমন টিটিপি নিয়ে সংকটে আছে তেমনি আফগানিস্তানের তালেবানও আইএসকেপি নিয়ে সংকটে আছে। তারা তালেবানের কাছ থেকে খোরাসান প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে চায়। তালেবানের বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা তারা পছন্দ করছে না। তারাও ইসলামের সবচেয়ে কট্টর ধারা সালাফি মাজহাবে বিশ্বাসী। তাই হানাফি তালেবানরা ইসলামাবাদকে সহযোগিতা করতে পারে বলে সালাফি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর আশঙ্কা রয়েছে।
তালেবান কী করবে!: তালেবান ক্ষমতা গ্রহণ করার পর বুঝতে পেরেছে গুহায় বসে মাদুর পেতে হামলার পরিকল্পনা করা ও রাষ্ট্র পরিচালনা এক না। রাষ্ট্র পরিচালনা করতে অনেক বিষয়কে আমলে নিতে হয়। রাষ্ট্রকে অনেক উদার ও সহনশীল হতে হয়। ক্ষমতা গ্রহণের প্রায় দেড় বছরে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি তালেবান। পাকিস্তান যে সম্পর্ক বজায় রেখেছে তা তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে, চীন ও রাশিয়ার আগ্রহ তাদের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে। কিন্তু বৈশ্বিক স্বীকৃতি মেলেনি তালেবানের। সাম্প্রতিক সময়ে জাতিসংঘে আফগানিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে তালেবানের পাঠানো প্রতিনিধিকে গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ। নারী অধিকার, মানবাধিকার, উদারনীতি গ্রহণে তালেবানকে আরও বহুপথ পাড়ি দিতে হবে । তালেবানের এসব চ্যালেঞ্জের পর আরও যোগ হলো বিদেশি কূটনীতিকদের নিরাপত্তা ইস্যু। পাক দূতকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার পর অন্য দেশের বিদেশি নাগরিকরাও নিরাপত্তা সংকটে থাকবেন। ফলে অন্য কোনো দেশ কাবুলে দূত পাঠানো বা সফরে যাওয়ার আগে কয়েকবার ভাববে। আর তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তানের নানা সংঘাত ভবিষ্যতে আরও প্রকট হয়ে উঠতে পারে। যার সুবিধা নিয়ে আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো পশ্চিম এশিয়ায় প্রভাব তৈরি করতে পারে।
লেখক : কলামিস্ট
খেলা শেষ। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারের মরুর বুকে এবারের ফুটবল বিশ্বকাপে শেষ হাসি হেসেছে আর্জেন্টিনা। সোমবার ফ্রান্সের বিরুদ্ধে এই ঐতিহাসিক জয়ের জোয়ারে ভেসেছে সবাই। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। চোখের পলকে কেটে গেল একটা মাস, ৬৪টি ম্যাচ। মহামারী, যুদ্ধ, জ্বালানি ও ডলার সংকট, দুর্ভিক্ষের কড়া নাড়া, রাজনৈতিক টানাাড়েন সব দূরে ঠেলে ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’-এর তকমা জয় করে নেওয়া ফুটবল বিশ্বকাপ আসরে বিশ্ব বুঁদ হয়ে ছিল। লাতিন আমেরিকার নোবেলজয়ী সাহিত্যিক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ ফুটবলকে সংক্রামক হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। বিশ^কাপে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের সমর্থক ও ফুটবলারদের ভক্তদের পাশাপাশি যারা সারা বছর ফুটবলের খবর রাখেন না, তাদেরও ফুটবল উন্মাদনায় সংক্রমিত হতে দেখি। মূল্যস্ফীতি, দুর্নীতি, অনিয়মসহ ব্যক্তিগত কিংবা সামাজিক অনেক সমস্যাকেই বাক্সবন্দি করে রেখে ফুটবলের প্রেমে মগ্ন হয়ে থাকার উৎসব এই একটা মাস।
টানটান উত্তেজনার ম্যাচ শেষ হয়, সব আয়োজনের সমাপ্তি আছে, যে কোনো উৎসবের শেষে প্রত্যাশা, প্রাপ্তি আর অসম্পূর্ণতার হিসাব আছে। সেই নিরিখে বলা যায়, মরুভূমির বুকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উৎসব ফুটবল বিশ্বকাপের ২২তম আসরটি সব শঙ্কা আর সমালোচনাকে পাশ কাটিয়ে সফলভাবে শেষ করতে পেরেছে আয়োজক দেশ কাতার। এটিই এ যাবৎকালের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিশ্বকাপ আয়োজন। আয়োজক স্বত্ব পাওয়ার পর থেকেই দেশটির গরম আবহাওয়া নিয়ে সমালোচনার শুরু। যেখানে যোগ হয় দেশটির মানবাধিকার রেকর্ড, অভিবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে ‘অমানবিক আচরণ’ এবং দেশটির আইনে সমকামিতাকে অপরাধ হিসেবে তুলে ধরার মতো বিষয়গুলো। ‘স্পোর্টস ওয়াশিং’ শব্দটি তাই এবারও বেশ উচ্চারিত হয়েছে। সব তর্ক-বিতর্ক, সম্ভাবনা, সমীকরণ, সমালোচনা দূরে ঠেলে কাতার সফলভাবে তাদের ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের সঙ্গে বিশে^র ক্রীড়ামোদী জনতার মেলবন্ধন ঘটাতে সক্ষম হয়েছে।
বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসরে বাংলাদেশ খেলতে না পারলেও তার সগৌরব উপস্থিতি ছিল। অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিশ্বকাপের জন্য আটটি স্টেডিয়াম নির্মাণে অবদান রাখার কারণে কাতার সরকার ১১৯টি দেশের পতাকা দিয়ে ‘ফ্ল্যাগ প্লাজা’ বানিয়েছে, সেখানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঘাম ঝরানো শ্রমে বাংলাদেশের পতাকাও উড়েছে। দেশের তৈরি ৬ লাখ টি-শার্ট ছিল মর্যাদাপূর্ণ এই আসরে। ফিফার অফিশিয়াল ভলান্টিয়ার হিসেবে প্রায় ৪০০ বাংলাদেশি সেখানে ফুটবল পর্যটকদের পথ দেখিয়েছেন, প্রায় আট হাজার বাংলাদেশি ট্যাক্সিচালক তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছেন। এবারের বিশ্বকাপে বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে বাংলাদেশের ফুটবল ফ্যানদের সমর্থন। বিশেষ করে, আর্জেন্টিনার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সরকারও এনিয়ে উচ্ছ্বসিত। যা দূতাবাস খোলার অনুমতির মধ্য দিয়ে আর্জেন্টিনার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। ফুটবলের প্রতি বাংলাদেশিদের আবেগ ও ভালোবাসার জোয়ার দেখে মুগ্ধ সবাই। ফুটবলের প্রতি বাংলাদেশিদের গভীর অনুরাগের প্রশংসা করেছে ফিফা।
দার্শনিক, মার্কসবাদী তাত্ত্বিক আন্তোনিও গ্রামসির কাছে ‘ফুটবল হলো ব্যক্তিকেন্দ্রিক সমাজের মডেল। ফুটবল চায় সৃজনশীলতা। ফুটবল মানে প্রতিযোগিতা, সংঘাত। কিন্তু এটি নিয়ন্ত্রিত হয় একটি শোভনসুন্দর খেলার অলিখিত নিয়মের দ্বারা।’ আলজেরীয় সাহিত্যিক আলবেয়ার কামু ছিলেন পেশাদার ফুটবলার। তিনি বলেছেন, ‘একজন মানুষের নৈতিকতা ও কর্তব্যবোধ সম্পর্কে আমি যতটুকু জেনেছি, তার জন্য আমি ফুটবলের কাছে ঋণী।’ ফুটবল মানে একটাই মাঠ। একটাই বল। সবার জন্য সমান। খেলোয়াড়দের মধ্যে পার্থক্য করে দেয় শুধু পরিশ্রম আর প্রতিভা। কখনো স্বপ্নপূরণ, কখনো স্বপ্নভঙ্গ। কখনো নায়ক, কখনো খলনায়ক। ভাঙাগড়ার বিশ্বকাপ, হাসি-কান্নার বিশ্বকাপ। ম্যাচ শেষে কেউ হাসবে, কেউ কাঁদবে। কাতার বিশ^কাপে যেমন আরব্য রজনীর বুকে লিওনেল মেসির জ্বলজ্বলে তারা হয়ে থাকা, তেমনি কিলিয়ান এমবাপ্পেরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠা। ম্যাচের নির্ধারিত সময় শেষ হয়, আসরের পর্দা নেমে আসে। খেলা ফুরোলে দিন শেষে জয়ী ও বিজিত উভয়েরই মাঠ আর আনন্দ, উন্মাদনা সবার। বিশ্বকাপ শেষ, এবার বাস্তবের পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তনের পালা।
শিশুসাহিত্যিক, চিত্রশিল্পী ও বাংলার আধুনিক মুদ্রণশিল্পের অন্যতম পথিকৃৎ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর জন্ম ময়মনসিংহের মসুয়া গ্রামে ১৮৬৩ সালের ১০ মে। তার বাবার নাম কালীনাথ রায় ওরফে শ্যামসুন্দর মুনশি। ১৮৮০ সালে ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে বৃত্তি নিয়ে তিনি প্রবেশিকা পাস করেন। স্কুলজীবনেই তিনি চিত্রাঙ্কনে দক্ষতা অর্জন করেন। কলকাতা মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউট থেকে ১৮৮৪ সালে তিনি বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৮৮৩ সালে ছাত্রাবস্থায় সখা পত্রিকায় তার প্রথম রচনা প্রকাশিত হয়। সমগ্র জীবনেই নিরবচ্ছিন্নভাবে তিনি সাহিত্যচর্চা অব্যাহত রাখেন। ছড়া, কবিতা, গান, গল্প, নাটক, বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ, রূপকথা, উপকথা, পৌরাণিক কাহিনী ও বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী রচনাসহ শিশু-কিশোর সাহিত্যের প্রায় সব শাখায় বিচরণ করেন। স্বরচিত গ্রন্থে স্ব-অঙ্কিত চমকপ্রদ নানা চিত্র সংযোজন তার প্রকাশনার বৈশিষ্ট্য। তার সম্পাদনায় ১৯১৩ সালে শিশুতোষ মাসিক পত্রিকা সন্দেশ প্রকাশিত হয়। লেখার পাশাপাশি নিজের আঁকা নানা বুদ্ধিদীপ্ত ছবি সংযোজনের মাধ্যমে সন্দেশকে তিনি কিশোর হৃদয়ের যোগ্য পত্রিকা হিসেবে গড়ে তোলেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থছোটদের রামায়ণ, ছোটদের মহাভারত, টুনটুনির বই এবং গুপী গাইন বাঘা বাইন। তিনি তার প্রথম বই ছোটদের রামায়ণের চিত্রমুদ্রণমানে অসন্তুষ্ট হয়ে ১৮৯৫ সালে বিলাত থেকে আধুনিকতম যন্ত্রপাতি নিয়ে এসে নিজেই ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। গণিতে গভীর ব্যুৎপত্তি এবং সূক্ষ্ম বৈজ্ঞানিক দৃষ্টির সাহায্যে তিনি অনেক নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। তার প্রতিষ্ঠিত ‘ইউ রায় অ্যান্ড সন্স’ কোম্পানির মাধ্যমেই ভারতবর্ষে প্রসেস-মুদ্রণশিল্প বিকাশের সূত্রপাত ঘটে। তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। ১৯১৫ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রেকর্ড গড়ে সেঞ্চুরি করেছেন মুশফিকুর রহিম। যে ইনিংসটি চোখে লেগে আছে ওপেনার লিটন দাসের। মুশফিকের এদিনের মতো ইনিংস বাংলাদেশের আর কোনো ক্রিকেটারে ব্যাটেই দেখেননি বলে মন্তব্যও করেছেন তিনি।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যায় বাংলাদেশ ইনিংসের পরই। এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৪৯ রানের পুঁজি গড়ে বাংলাদেশ। যা নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
ছয় নম্বরে খেলতে নেমে মুশফিক ৬০ বলে ১০০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ১৪ চার ও ২ ছক্কায়। ম্যাচ শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন লিটন। এ সময় মুশফিকের ইনিংস নিয়ে তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে আমি যতদিন খেলছি, বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড়ই এভাবে শেষের দিকে গিয়ে ১০০ করেনি।’
মুশফিকে মুদ্ধ লিটন বলে যান, ‘যখন দল থেকে কেউ এরকম একটা সেঞ্চুরি করে, দেখলে অনেক ভালো লাগে। সিনিয়ররা কেউ করলে তো আরও ভালো লাগে। মুশফিক ভাইয়ের শুধু আজকের ইনিংস না, শেষ ম্যাচের ইনিংসটা যদি দেখেন, আমার মনে হয় অসাধারণ ছিল।’
‘যদিও রান বেশি নয়, ৪০ বা এরকম ছিল (২৬ বলে ৪৪)। এটাই কিন্তু বড় ভূমিকা রাখে তিন শর বেশি রান করতে। আজকের ইনিংসটা তো ম্যাচের চিত্র বদলে দিয়েছে।’
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৮ উইকেটে ৩৩৮ রান করেছিল টাইগাররা। এ ম্যাচের আগ পর্যন্ত সেটাই ছিল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতেছিল রেকর্ড ১৮৩ রানের ব্যবধানে। রানের হিসেবে যা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। সুবাদে ১-০ তে সিরিজে এগিয়ে তামিম ইকবালের দল।
একই ভেন্যুতে আগামী বৃহস্পতিবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে।
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।