
একটি উন্নয়নশীল অর্থনীতির সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সুসমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। যেমন অপরিহার্য একটি সার্থক সংগীত নির্মাণে গীতিকার, সুরকার, কণ্ঠশিল্পী ও বাদক যন্ত্রীদের সমন্বিত ও আন্তরিক প্রয়াস। অর্থ বিভাগ জাতীয় বাজেট প্রণয়ন করে ঠিকই কিন্তু সেই বাজেটের আয়-ব্যয়ের চাহিদা প্রাক্কলন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকেই আসে এবং বাজেট বরাদ্দের পর তা ব্যয়ন, বাস্তবায়ন সব মন্ত্রণালয়গুলোই করে থাকে। সুতরাং বাজেট ব্যবস্থাপনায় অর্থ বিভাগের দায়িত্ব একক নয় এবং এর সাফল্য ব্যর্থতার দায়ভার অবশ্যই সবার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেশের আমদানি-রপ্তানির নীতিনির্ধারণ করে মাত্র। কিন্তু আমদানি-রপ্তানির সার্বিক পারঙ্গমতা বেসরকারি খাতের ওপর একান্তভাবে নির্ভরশীল। কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষি খাতের উপায় উপকরণ থেকে শুরু করে চাষাবাদসহ যাবতীয় বিষয়-আশয়ের নীতি নিয়মকানুন ভালোমন্দ তদারকি করে থাকলেও কৃষি কাজে নিয়োজিত দেশের শতকরা ৭০ ভাগ জনগোষ্ঠীই কৃষি উৎপাদন বিপণনের সফলতা-ব্যর্থতার ভাগীদার। একই অবস্থা সব খাত ও ক্ষেত্রে। আমাদের জাতীয় বাজেটের সর্বমোট ব্যয়ের গড়ে ৭০ ভাগ অর্থায়ন হয় অভ্যন্তরীণ সম্পদ দ্বারা যার আহরণের প্রশাসনিক দায়দায়িত্ব জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের। কিন্তু রাজস্ব বোর্ড নিজে ব্যবসা বাণিজ্য, বিনিয়োগ করে না, সম্পদ সৃষ্টিতে কোনো ভূমিকা রাখে না। যারা আয় করেন, যাদের ওপর আয়কর আরোপিত হওয়ার বিষয়, যারা ভোগ করেন, যাদের ওপর ভ্যাট প্রযোজ্য এবং যারা আমদানি করেন, যাদের ওপর আমদানি শুল্ক প্রযোজ্য তাদের কৃতকর্মের ওপর কর আহরণের গতিপ্রকৃতি নির্ভরশীল। আবার ব্যক্তি বা কোম্পানির আয় শুধু ব্যক্তি বা কোম্পানির দক্ষতা-অদক্ষতার ওপর একান্তভাবে নির্ভরশীল নয়। যে পরিবেশে বা যে ব্যবসায় বা যে কর্মকাণ্ডের মধ্য থেকে ব্যক্তি বা কোম্পানি আয় উপার্জন করে সে পরিবেশ, সে লোকবল, সে ব্যবসা বা সে কর্মকাণ্ড নিরাপদ সঞ্চালনের ওপর নির্ভরশীল। একই অবস্থা ভোক্তা ও আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের বেলায়ও প্রযোজ্য। সুতরাং সামষ্টিক অর্থনীতির সামষ্টিকতা সর্বত্র পরিব্যাপ্ত।
দেখা যাচ্ছে কার্যকারণের সঙ্গে ফলাফলের আন্তঃযোগাযোগ বা আন্তঃসম্পর্ক পরস্পর প্রযুক্ত ও নিবিড়ভাবে নির্ভরশীল। যে কোনো পর্যায়কে তাই বিচ্ছিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই, দীর্ঘমেয়াদে অর্জিত সাফল্যকে একটি সীমাবদ্ধ সময়ের অবয়বে শুধু নিজেদের সাফল্য হিসেবে দেখার, প্রচারের ও প্রগলভতা প্রকাশের সুযোগ নেই। সামষ্টিকতার সামষ্টিকতাই থাকে না যদি কজ আর ইফেক্টের মধ্যকার পরস্পর প্রযুক্ততার বিষয়টি নিরপেক্ষভাবে নৈর্ব্যক্তিক বিশ্লেষণে যাওয়া না হয়। অর্থনীতির ক্ষতিকর যে কোনো অপপ্রয়াসের সামনের ও নেপথ্যের উভয় কারণের প্রতি দৃষ্টিদান সমাধান প্রত্যাশা ও প্রয়াসকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে পারে। কার্যকারণ ছাড়া কোনো কিছু উদ্ভব হয় না। শুধমাত্র উদ্ভূত পরিস্থিতি কিংবা উপস্থাপিত ফলাফলকে সমালোচনার কাঠগড়ায় না এনে একই সঙ্গে কী কারণে এই পরিস্থিতির উদ্ভব কিংবা এই ফলাফলের উপলক্ষকেও বিচার বিশ্লেষণের আর্জিতে আনার আবশ্যকতা অনস্বীকার্য। দৃষ্টিভঙ্গি সীমাবদ্ধ হলেই যে কোনো ফলাফলকে নানান অবয়বে উপস্থাপন ও সমালোচনা চলে। তার দাবি, প্রয়োজন ও চাহিদামতো পুষ্টিকর খাবার না পেলে কোনো শিশু ক্ষুধায় কাঁদলে, হাত-পা ছুড়ে একাকার করতে থাকলে তাকে ‘কাঁদুনে শিশু’ বলে অপবাদ দেওয়ার অপপ্রয়াস নিশ্চয়ই সীমাবদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গিপ্রসূত।
দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এককভাবে কোনো মন্ত্রণালয় বা কর্তৃপক্ষের বা কর্তৃত্বের হতে পারে না। এর সঙ্গে সবার সংঘবদ্ধ অথচ স্ব স্ব দায়িত্ব কর্তব্য পালনের ওপর নির্ভরশীলতাকে মানতেই হবে সুতরাং সামগ্রিক অবয়বে দেখেই বিচার করতে হবে সব ফলাফলকে। সামষ্টিক অর্থনীতির সামষ্টিকতায় প্রধান সীমাবদ্ধতা এখানে যে প্রত্যেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে অবস্থান করেই দ্বীপপুঞ্জের সাফল্য ও কল্যাণ কামনা করা হয়। সবার সাফল্য শুধু নিজের বলে জাহির আবার নিজের ব্যর্থতাকে অন্যের ওপর চাপানোর মানসিকতা সব সমন্বয় ও সাযুজ্যকরণকে বাধাগ্রস্ত করে। পরস্পরের দোষারোপের দ্বারা ঐক্যবদ্ধ চেতনা বিকাশ লাভ করে না, সবার প্রয়াস এক সুরে বাঁধা যায় না, হয় না। উন্নয়নের তানপুরায় বারবার ধূলি জমে আর সেখানে ঐকমত্যের সুর সাধা বেসুরো ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
একান্ন বছর বয়সী বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকসমূহের প্রতি দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে সময়ের অবসরে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন ঘটেছে। পরস্পর প্রযুক্ত সাহায্য-সহযোগিতা যেমন একে বলবান করেছে, আবার আত্মঘাতী পদক্ষেপের দ্বারা অগ্রযাত্রাকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এ সাফল্য ও ব্যর্থতায়, আনন্দ ও সর্বনাশে দেশের শিল্পনীতি, সঞ্চয় ও বিনিয়োগ পরিবেশ এবং পুঁজিবাজারের পথপরিক্রমার সামষ্টিক দৃষ্টিভঙ্গির স্বরূপ সন্ধানে আমরা লক্ষ করি এক বিচিত্র গতিপ্রকৃতি।
কোন পদক্ষেপ অর্থনীতির জন্য সুদূরপ্রসারী সুফল বয়ে আনতে পারে তা চটজলদি বলা মুস্কিল, তবে যে কোনো পদ্ধতির ভালোমন্দ উভয় দিক যেহেতু আছে ভালো দিকটা যাতে প্রতিভাত হয় সে জন্য সময় ও মেধা প্রয়োগ সমীচীন। বিগত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অভিযাত্রায় টেকসই উন্নয়ন প্রয়াস প্রচেষ্টা অধিকাংশ ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাময়িক, সীমিত ও খণ্ডিত দৃষ্টিভঙ্গির অবয়বে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায়েই রয়ে গেছে। শিল্পনীতিসমূহে ঘোষিত নীতিমালায় দ্রুত শিল্পায়নের উচ্চভিলাষী ও পরিকল্পিত প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটলেও তার সফল বাস্তবায়ন, নিদেনপক্ষে ফলাফল যাচাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-পর্যালোচনার অবকাশ মেলেনি। ১৯৮২ সালের শিল্পনীতিতে উচ্চারিত বক্তব্য ১৯৮৬, ১৯৯২, ১৯৯৬, ১৯৯৯ এবং ২০১০ এর শিল্পনীতিতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই বলয়ে রয়ে গেলেও দেশের শিল্পায়ন পদ্ধতি প্রক্রিয়ায় এ তিনটি দশকে বেসরকারি খাতের কিছুটা বিকাশ প্রত্যক্ষ করা গেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বেসরকারি খাত নিজস্ব উদ্যোগে উদ্ভূত সমস্যাবলি নিজেরা মোকাবিলা করে নিজেদের মতো করে ওপরে উঠছে। পাবলিক সেক্টর এ সময় আরও লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বিপুল বিদেশি অর্থের বিনিয়োগ ঘটিয়েও শিল্প সহায়ক সংস্থা (টেলিফোন, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, বন্দর) অবকাঠামোগত সহায়তার পূর্ণাঙ্গ সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেনি। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিদেশি পুঁজির অবাধ প্রবেশে নিজেদের ব্যবস্থাদি আরও দুর্বল হয়েছে। সবল হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে করতে নিজস্ব সক্ষম শক্তিগুলো বয়োবৃদ্ধির ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে। দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধির পরিসংখ্যান বাস্তবের কাছাকাছি পৌঁছাতে গিয়ে পরিবর্তিত হয়েছে বারবার আর উক্ত খণ্ডিত ও অসম্পূর্ণ পরিসংখ্যানের আলোকে প্রণীত শুল্ক, কর আরোপ ও অন্য ব্যবস্থাদি বাস্তব ক্ষেত্রে কখনো বা অপ্রতুল, ক্ষেত্রবিশেষ অপ্রাসঙ্গিক এবং কোথাও কোথাও নিরুৎসাহমূলক প্রতীয়মান হয়েছে। ব্যবসায়ী সংগঠন সমিতি থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে শুল্ক করাদির ক্ষেত্রে নিষ্কৃতি কিংবা হ্রাসকরণের দাবি পেশ কালে দাবির সমর্থনে তথ্য-উপাত্তভিত্তিক বিশ্লেষণাত্মক যুক্তি যথাযথভাবে উপস্থাপনে প্রায়শ অপারগ থেকেছেন।
সঞ্চয় বিনিয়োগের প্রধানতম পূর্বশর্ত। জনগণের মাথাপিছু আয়ের মৌল স্তর বৃদ্ধি ছাড়া কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বৃদ্ধির চিন্তাচেতনা বাস্তবসম্মত নয়। সামাজিক কল্যাণ খাতে উন্নয়ন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটিয়ে সঞ্চয় বাড়ানোর পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে। ক্যালরি ইনটেক বাড়িয়ে, বিশুদ্ধ পানি ও মৌল স্বাস্থ্যসেবার আওতায় (জনস্বাস্থ্য) সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে মৃত্যুর হার কমিয়ে জন্মহারকে সুষম নিয়ন্ত্রণ, অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান সংক্রান্ত মৌলিক চাহিদা পূরণ এবং কাজ সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণের মৌলিক আয়ের স্তর বাড়ানো সম্ভব হতে পারে। শিক্ষা, চিকিৎসা খাতে ব্যক্তিগত ব্যয়ের মাত্রা কমিয়েও সঞ্চয়ের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। সঞ্চয়কে উৎসাহিত করতে ব্যাংকিং সৃবিধা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। বিদেশি সাহায্য ও ঋণনির্ভর অর্থনীতিতে সঞ্চয় প্রত্যাশা করা বাতুলতা মাত্র বিধায় জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনায় দেশজ সম্পদ উন্নয়নে গৃহীত পরিকল্পনা নিজস্ব উপায়ে বাস্তবায়ন সক্ষমতার সমাহার আবশ্যক। বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ হার এখনো নিম্নে। বিনিয়োগ হার বৃদ্ধির লক্ষ্যে কার্যকর ও সহনশীল পদক্ষেপ গ্রহণ আবশ্যক। দেখা গেছে বেসরকারি খাতের উন্নয়নে ১৯৭৩ সালে শিল্পনীতিতে ঘোষিত সংরক্ষণবাদী বিধানাবলি ১৯৮২ সালে অপসারিত হলেও ১৯৯১ এর আগে বেসরকারি খাতে প্রকৃত বিনিয়োগ হয়নি। আবার, ১৯৭৬, ১৯৮২, ১৯৮৬’র শিল্পনীততে গার্মেন্টস শিল্প খাতে উন্নয়ন বিষয়ক কোনো পরিকল্পনার আভাস-ইঙ্গিত ততটা না থাকলেও এ-খাতে বিনিয়োগ হয়েছে অভাবিতপূর্ব। শিল্পনীতিতে আবকাঠামো, খাদ্য, কৃষি ও ক্ষুদ্রশিল্প খাতের উন্নয়নে যথাযথ সহায়তা ও প্রযত্ন প্রদানের পর্যাপ্ত ক্ষমতা রাখা হয়নি পোষক প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে। সীমিত ক্ষমতা প্রয়োগের উদ্যোগও লক্ষণীয় হয়ে ওঠেনি। সমন্বয়হীনতা এক্ষেত্রে অন্যতম অন্তরায় হয়ে রয়ে গেছে।
বাংলাদেশের অভ্যুদয় পুঁজিবাদের প্রতি বিদ্বেষপ্রসূত হওয়ায় নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতির প্রভাববলয়ে চলে যায় নতুন অর্থনীতির চালিকাশক্তি। সাবেক পাকিস্তান আমলে পুঁজিবাদী অর্থনীতির রেখে যাওয়া শিল্প-কারখানা বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের পর রাষ্ট্রীয় মালিকানায় এনে সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শে তাদের নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। প্রকৃতপক্ষে স্থানীয় বেসরকারি খাত তখন এমন স্বয়ম্ভর ও সক্ষম ছিল না যে পরিত্যক্ত শিল্প অবকাঠামো দেখাশুনার ভার নিতে পারে। তখন রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ নেওয়া ছাড়া গত্যন্তরও ছিল না।
যে উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায়কে সামনে রেখে স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে জাতীয়করণ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয় তা পূরণ ও বাস্তবায়নে পাবলিক সেক্টরেও দক্ষ ব্যবস্থাপনার অভাব যে প্রকট তা যথাসময়ে উপলব্ধি করা যায়নি। ফলে লাভজনক শিল্প-কারখানাগুলো অধিক লোকসান এবং এমনকি যন্ত্রপাতি যন্ত্রাংশ পাচার হওয়ার মতো দুঃখজনক পরিস্থিতির শিকার হয়। পরবর্তী সময়ে এগুলো বিএমআরই কিংবা বেসরকারি খাতে বিক্রি করাতেও বিপত্তি দেখা দিয়েছে। ফলে এগুলো জাতীয় অর্থনীতিতে জগদ্দল পাথরে পরিণত হয়েছে। পাবলিক সেক্টর দিয়ে জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়ন সম্ভব না হলেও পাশাপাশি প্রাইভেট সেক্টরে উন্নয়নের লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণে বিলম্ব ও উদ্যোগের অভাব আগের মতোই থাকে। সত্তরের দশকের শেষ এবং আশির দশকের শুরুতে নতুন শিল্পনীতিতে অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারি খাতের কার্যকর অংশীদারত্ব নিশ্চিত করতে নীতিমালা ও কৌশল ঘোষিত হয়। ১৯৮২ সালের শিল্পনীতিতে বিদেশি বিনিয়োগ ও স্থানীয় পুঁজির বিকাশকে প্রত্যাশা করে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে শিথিল ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির আগ্রহ প্রকাশ পায়। জাতীয়করণ উদ্দেশ্য অভিপ্রায় বাস্তবায়নের মতো ১৯৮২’র শিল্পনীতি বাস্তবায়নেও বশংবদ অনীহা অদক্ষতা দেশের শিল্প বিকাশের খাত ও ক্ষেত্রকে মাঝেমধ্যে যাত্রাপথে থামিয়ে দেয়। স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের কর্মসূচিতে অমনোযোগিতার অবসরে কার্যকর বিনিয়োগ প্রবাহের পরিবর্তে পুঁজিবাদী বিশ্বের স্বার্থ ও সমর্থনে কম ভ্যালু এডিশন সম্পন্ন শিল্প এদেশের বাজার দখলের পাঁয়তারায় প্রবেশ করে। দেশের বেসরকারি খাতের স্বয়ম্ভর হওয়ার সুযোগ সেখানে সংকুচিত হয়ে দাঁড়ায় এবং অর্থনীতির পরনির্ভরশীলতা থেকেই যায়। উন্নত বিশ্বের পরিত্যক্ত প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি ও পরিবেশ দূষণকারী শিল্প অবকাঠামো বাংলাদেশের অর্থনীতি ও পুঁজিবাজারে প্রবেশ করে।
লেখক: সরকারের সাবেক সচিব এনবিআর-এর সাবেক চেয়ারম্যান
বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বিচার বা দণ্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাবে না। সংবিধানে এমন বিস্তৃত অধিকার থাকা সত্ত্বেও দেখা যায় আইন ও বিধির কথা বলে প্রায়শই নাগরিকের অধিকার ভঙ্গের পাশাপাশি হয়রানি ও অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে। নিকট অতীতে পুলিশ ও কারা কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও উদাসীনতায় জঙ্গি ও দাগি আসামিদের হেফাজত থেকে পালিয়ে যেতে দেখা গেছে। আবার সাধারণ কোনো আসামির বিষয়ে কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত সতর্কতা দেখাতে গিয়ে মানবাধিকার ও সংবিধান পরিপন্থী কাজ করছে। দেখা যাচ্ছে কিছু ক্ষেত্রে তারা উদাসীনতা দেখান। আবার কিছু ক্ষেত্রে তারা সতর্কতা, কারাবিধির নামে বাড়তি উৎসাহ দেখান। অবস্থাদৃষ্টে মনে হতে পারে কর্তৃপক্ষই কারও জন্য পলায়নের পথ তৈরি করছে আর কারও জন্য ডান্ডাবেড়ি-হাতকড়ার আয়োজন করছে। এতে পুলিশ ও কারা কর্তৃপক্ষই বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার গাজীপুরের কালিয়াকৈরের পাবরিয়াচালায় মায়ের জানাজায় ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় অংশ নেন স্থানীয় বিএনপি নেতা আলী আজম। ঘটনাটি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশের পর দেশজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়। স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও কারা কর্র্তৃপক্ষ বলছে, কারাবিধি অনুযায়ীই তাকে ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়া পরানো হয়েছে। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, বিচারের আগেই ডান্ডাবেড়ি পরানো কোনো সভ্য দেশের রীতি হতে পারে না। তবে, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন মনে করেন, কিছু ভুল হয়ে থাকলেও সতর্কতার জন্যই ডান্ডাবেড়ি পরানো হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, জানাজার আগে ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়া খুলে দিতে স্থানীয় লোকজন অনুরোধ করলেও তাতে কান দেয়নি পুলিশ। গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম বলেন, ‘ডান্ডাবেড়ি বা হাতকড়া লাগানো, না লাগানো জেল কর্র্তৃপক্ষের ব্যাপার। এতে পুলিশের কোনো দায় নেই।’ যদিও এ ঘটনায় তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ডান্ডাবেড়ি খুলে দিলে ভালো হতো।
আইনজীবী জেড আই খান পান্না দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিচারের আগেই তাকে কেন ডান্ডাবেড়ি পরানো হবে? বাংলাদেশের সংবিধান, ফৌজদারি কার্যবিধি, দ-বিধি কোথাও ডান্ডাবেড়ির বিষয়টির উল্লেখ নেই। সংবিধান ও আইন অনুযায়ী ন্যায়বিচারের স্বার্থে একজন আসামির দিকেও নজর রাখতে হয়।’ ডান্ডাবেড়ির বিষয়ে উচ্চ আদালতের অন্তত দুটি রায় রয়েছে, যেখানে আদালত আপত্তি তুলে নির্দেশনা দিয়েছে। কারা কর্র্তৃপক্ষ দাবি করে, আসামি যাতে পালিয়ে যেতে না পারে সে জন্য কারাবিধি অনুযায়ী ডান্ডাবেড়ি পরানো হয়। তাহলে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, কারাবিধি কি সংবিধান, হাইকোর্ট, ফৌজদারি আইনের চেয়ে বড়?
গত কয়েক মাসে দেশের বিভিন্ন থানায় নাশকতা, ভাঙচুরসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলার অজ্ঞাত আসামিদের গ্রেপ্তার ও হয়রানির মাধ্যমে পুলিশ অর্থ আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে, পুলিশ সদর দপ্তরের দাবি, বিজয় দিবস, বড়দিন, খ্রিস্টীয় বর্ষবরণ উদ্যাপন নিরাপদ ও নির্বিঘœ করতে এবং ২০ নভেম্বর ঢাকায় আদালত ফটক থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ অভিযান চালায় পুলিশ। কিন্তু ছিনতাই হওয়া দুই জঙ্গি কিংবা যেসব জঙ্গি তাদের ছিনতাই করে নিয়ে গেছে, কারও হদিস করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ১ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলা পুলিশের দুই সপ্তাহব্যাপী এ অভিযানে ২৩ হাজার ৯৬৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে তালিকাভুক্ত জঙ্গি ও সন্ত্রাসী ৭২ জন। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠবে, এর বাইরে কারা গ্রেপ্তার হয়েছে? প্রশ্ন উঠছে জঙ্গি দমনের চেয়ে কর্তৃপক্ষের বিরোধীদের দমন ও ভয়ভীতি প্রদর্শনেই উৎসাহ বেশি কিনা, তা নিয়ে।
গাজীপুরে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। সংবিধান, প্রচলিত আইন সবকিছুর ব্যত্যয় ঘটেছে এ ক্ষেত্রে। ওই ব্যক্তি তো সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি নন। একজন শোকাগ্রস্ত মানুষকে ডান্ডাবেড়ি পরানোর ঘটনায় যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত। দুর্ধর্ষ জঙ্গিকে আদালতে নেওয়ার সময় নিরাপত্তা নিয়ে একেবারে ছেলেখেলা করা হলো। আর এ ক্ষেত্রে একজন রাজনৈতিক সংগঠককে একটি মামলায় এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হলো। সমাজে ভয়ার্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে এরকম করা হলো কি না, সেটি যেমন দেখা উচিত তেমনি কোনো একটি গোষ্ঠীকে খুশি করতে এটা করা হলো কি না, তারও পর্যালোচনা হওয়া উচিত।
আমরা অনেক সময় কাজ করতে করতে বিশ্রামের কথা ভুলে যাই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অর্থের লোভ বিশ্রাম নেওয়ার কথা ভুলিয়ে দেয়। আপনি হয়তো কাজ করেই যাচ্ছেন, করেই যাচ্ছেন। চিন্তা করছেন, এইটুকু কাজ করলেই এত টাকা পাচ্ছি, আরও করি আরও পাব। এই একটু কাজ করলে তো আর মারা যাব না! কিন্তু বুঝতেই পারছেন না, কাজের চাপ এক সময় আপনাকে এতটাই দুর্বল করে দেবে, এক সময় কিছুই করতে পারবেন না। তাই মাঝে মাঝে বিশ্রাম নেওয়া অতি জরুরি। অন্ন-বস্ত্রের মতো বাসস্থানও মানুষের একটি মৌলিক প্রয়োজন। এর আসল উদ্দেশ্য হলো বিশ্রাম, শান্তি ও বসবাস।
মানুষকে সুস্থ থাকার জন্য যেমন রাতের বেলা ঘুমাতে হয়, তেমনি দিনের বেলায়ও সামান্য সময় ঘুমানো সুন্নত। দিনের এই ঘুমকে আমাদের দেশে বলা হয় ভাত-ঘুম, আরবিতে একে বলা হয় ‘কাইলুলা’। দুপুর বেলায় সামান্য ঘুমানোর রীতি আরবেও আছে, নবী কারিম (সা.)-এর যুগেও এই ঘুমের প্রচলন ছিল। সাহাবি হজরত সাহাল ইবনে সাদ (রা.) বলেন, ‘আমরা জুমার নামাজের পর দুপুরের বিশ্রাম গ্রহণ ও খাবার খেতাম।’ -সুনানে আবু দাউদ : ১০৮৬
এমনকি নবী কারিম (সা.) নিজেও দুপুর বেলা কাইলুলা করতেন বলে হাদিসের বর্ণনায় রয়েছে। দুপুর বেলায় সুন্নতের নিয়তে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলে একদিকে যেমন নবীজির সুন্নত পালনের সওয়াব পাওয়া যাবে, তেমনি শারীরিক ও মানসিক প্রফুল্লতা অর্জন হবে। এতো গেল শারীরিক বিশ্রামের কথা। এ ছাড়া জীবনে আরও নানা ধরনের বিশ্রামের প্রাসঙ্গিকতা বিদ্যমান।
আমরা জানি, শরিয়তের দু’টি প্রধান ও প্রতিষ্ঠিত বৈশিষ্ট্য হলো শিথিলতা ও সরলতা। এ দুটি গুণ মুসলমানকে তার ইবাদত-বন্দেগি, কাজ-কর্ম ও আচার-আচরণে সাহায্য করে। এ কারণে আমরা দেখতে পাই, আল্লাহর রাসুল (সা.) হাসি ও কৌতুক উভয়টিই করতেন। কিন্তু সত্য ছাড়া অন্য কিছু (মিথ্যা) বলতেন না। সমাজে এমন অনেক লোক রয়েছে, যারা ভালো নিয়তে অধিক পরিমাণে নফল নামাজ পড়েছে এবং ধর্ম-কর্ম পালনে চরম বাড়াবাড়ি করেছে। কিন্তু এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে না। এক সময় দেখা যায়, তাদের উৎসাহ-উদ্দীপনা আগে যেমন ছিল তার চেয়ে কমে গেছে; এমনটি কাম্য নয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘(হে মুহাম্মদ!) তোমার ওপর আমি কোরআন এ জন্য নাজিল করিনি যাতে তুমি কষ্ট পাও।’ -সুরা ত্বহা: ২
যারা নিজেদের ওপর সাধ্যাতীত বোঝা চাপায়, আল্লাহতায়ালা তাদের তিরস্কার করেন। কোরআন মাজিদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘আর সন্ন্যাসবাদ, তারা একে আবিষ্কার করেছিল, আমি তাদের ওপর এ বিধান দিইনি। তবে তারা নিজেরাই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য এটা পালন করত। কিন্তু এটাকেও তারা যথাযথভাবে পালন করেনি।’ -সুরা আল হাদিদ: ২৭
ইসলাম দেহ-মনের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখার কারণে, ইহ-পরকালের পাথেয় জোগান এবং সবার কাছে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণযোগ্য বিশ্বাস অন্তর্ভুক্তের কারণে অন্য ধর্ম থেকে ব্যতিক্রমধর্মী। ইসলামে অহির মাধ্যমে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে, মানুষের সঙ্গে মিলে থাকতে, জ্ঞানী লোকদের অনুসরণ করতে এবং ধর্মীয় ব্যাপারে সমাজের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকতে। যে ব্যক্তি নিজের ধর্ম এবং সম্পদ রক্ষায় নিজেই যথেষ্ট, তার জন্য একাকিত্ব উত্তম। তবে প্রয়োজনের সময় ও ভালোকাজে অন্যদের সঙ্গে মেশা দরকার। তা সত্ত্বেও তাকে জরুরি কাজগুলো অবশ্যই সম্পাদন করতে হবে; যেমন জামাতে নামাজ আদায়, সালামের উত্তর দেওয়া, রোগী দেখতে যাওয়া, জানাজায় হাজির হওয়া ইত্যাদি। যা দরকার তা হলো অতিমাত্রায় সামাজিক হতে গিয়ে বিভিন্ন ফেতনায় না জড়ানো, ইবাদত-বন্দেগি ভুলে যাওয়া। অতিমাত্রায় সামাজিক হওয়ার ফলে সময় নষ্ট হবে এবং অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে অবহেলা করা হবে। দেহের জন্য পানাহারের প্রয়োজন যেমন, সমাজের অন্যদের সঙ্গে মেলামেশা করা তেমন। উভয় ক্ষেত্রেই যেটুকু প্রয়োজন সেটুকু গ্রহণ করা উচিত।
ইমাম কোশাইরি (রহ.) একাকিত্ব বিষয়ে বলেছেন, যে নিঃসঙ্গতা অন্বেষণ করে তার মনে রাখা উচিত, সে এ কাজ করছে তার ক্ষতি থেকে জনগণকে বাঁচানোর জন্য এবং এর বিপরীতটা নয় (জনগণের ক্ষতি থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য নয়)। এর কারণ, প্রথমজন নিজের সম্বন্ধে বিনয়ী মনোভাব পোষণ করে (মানুষকে নিজের চেয়ে ভালো মনে করা)- যা ধর্ম চায়। দ্বিতীয়জন অন্যদের ওপর নিজের বড়ত্ব আরোপ করেছে (মানুষকে নিজের চেয়ে খারাপ মনে করা)- যা মুমিনের চরিত্রে গ্রহণযোগ্য নয়।
এ বিষয়ে মানুষকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। দু’টি বিপরীতধর্মী, তৃতীয়টি মাঝামাঝি। প্রথম শ্রেণির মানুষ নিজেদের সাধারণ মানুষ থেকে এতটাই আলাদা করে রাখে যে, তারা জুমার নামাজে হাজির হয় না। জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করে না এবং সামাজিক কল্যাণকর কোনো কাজেই যোগ দেয় না। তারা স্পষ্টভাবে ভ্রান্ত। দ্বিতীয় শ্রেণির লোকজন এতটাই সামাজিক যে, তারা মন্দ সমাবেশে অংশগ্রহণ করে- যেখানে মিথ্যা গুজব ও সময়ের অপচয় হয়। তারাও ভুলের মধ্যে রয়েছে। মধ্যপন্থি (তৃতীয় শ্রেণি) লোকেরা যেসব ইবাদত অবশ্যই জামাতে আদায় করতে হয়, সেসবে অন্যদের সঙ্গে একত্রিত হয়। ধর্ম প্রচার এবং আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে তারা অন্যদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করে। যেসব সমাবেশে শয়তানি, মিথ্যা ও অপচয় হয় তারা সেগুলো এড়িয়ে চলে। ইরশাদ হয়েছে, ‘এরূপে আমি তোমাদের এক মধ্যপন্থি জাতিরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছি।’ -সুরা বাকারা: ১৪৩
এমন মধ্যমপন্থাই ইসলামের শিক্ষা। যে শিক্ষার সঙ্গে মানবজীবনে বিশ্রামের প্রয়োজনীয়তা যেমন মিশে আছে, তেমনি রয়েছে অতি বাড়াবাড়ি, ছাড়াছাড়ি ও অলসতা ত্যাগের শিক্ষাও।
লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক
আমাদের মাধ্যমিক পর্যায়ের সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো ধরনের প্রতিষ্ঠানেই পুরোপুরিভাবে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নেই। তবে, গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় যেমন গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞান পড়ানোর জন্য বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক অর্থাৎ যে সব শিক্ষক এ বিষয়গুলোতে অনার্স কিংবা মাস্টার্স করেছেন কিংবা স্নাতক পাস করলেও স্নাতক শ্রেণিতে তাদের ঐ বিষয়গুলো ছিল তাদেরই পড়ানোর কথা। মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশই তাদের বিদ্যালয় জীবন শেষ করছে গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে দুর্বলতা নিয়ে। প্রশ্ন হচ্ছে বর্তমান বাস্তবতায় মাধ্যমিক পর্যায়ে আমরা কি বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক পাওয়ার অবস্থায় আছি?
ব্যানবেইস দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতি বছরই ‘বাংলাদেশ এডুকেশন স্ট্যাটিসটিকস’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ২০২১ সালের তথ্য বলছে, দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে পাঠদানে নিয়োজিত শিক্ষকদের ৮০ শতাংশেরই নেই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। বছরটিতে দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন ৯৬ হাজার ৫৮ জন। তাদের মধ্যে কেবল ৬ হাজার ২৪১ জন শিক্ষক ইংরেজিতে স্নাতক ডিগ্রিধারী আর এ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ছিলেন ৯ হাজার ৪১ জন শিক্ষক। সে হিসেবে দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের পাঠদানে নিয়োজিত শিক্ষকদের ৮৪ শতাংশেরই সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ডিগ্রি নেই। অভিন্ন চিত্র দেখা যায় গণিতের ক্ষেত্রেও। ব্যানবেইসের ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছর দেশের সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোয় গণিতের শিক্ষক ছিলেন সর্বমোট ৬৭ হাজার ৯৫৫ জন। এর মধ্যে মাত্র ৫ হাজার ৮৪৩ জন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক ও ৭ হাজার ২৮৫ জন শিক্ষক গণিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। সে হিসাবে সংশ্লিষ্ট বিষয়টিতে ডিগ্রি রয়েছে কেবল ১৯ শতাংশ শিক্ষকের। বাকি ৮১ শতাংশই অন্য বিষয়ে ডিগ্রিধারী।
বিষয়ভিত্তিক ডিগ্রিধারী শিক্ষকের দিক থেকে বেসরকারির তুলনায় অবশ্য সরকারি বিদ্যালয়গুলোর চিত্র ভালো। সরকারি বিদ্যালয়ে ৪ হাজার ৫০৬ জন ইংরেজি শিক্ষকের মধ্যে ১ হাজার ৪৬৩ জনেরই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ন্যূনতম স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে যা শতকরা ৩০.৪৫ শতাংশ। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত বিদ্যালয়ে ৯১ হাজার ৫৫২ ইংরেজি শিক্ষকের মধ্যে বিষয়ভিত্তিক ডিগ্রি রয়েছে ১৩ হাজার ৮১৯ জনের বা ১৫.০৯ শতাংশ। আর গণিত শিক্ষকদের ক্ষেত্রে সরকারি বিদ্যালয়ে ৩ হাজার ৬০২ শিক্ষকের মধ্যে এক হাজার ২৫৪ জন বা ৩৪.৮১ ভাগের বিষয়ভিত্তিক স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে। বেসরকারির ক্ষেত্রে সেই হার ১৮.৪৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৬৪ হাজার ৩৫৩ শিক্ষকের মধ্যে গণিতের ডিগ্রি রয়েছে কেবল ১১ হাজার ৮৭৪ জনের। সরকারি স্কুলের ৪ হাজার ৫০৬ জন ইংরেজি শিক্ষকের মধ্যে ৬৯০ জনের স্নাতকে ইংরেজি ছিল আর ১৪৬ জন এইচএসসি পাস। আর বেসরকারি স্কুলের ৯১ হাজার ৫৫২ জন ইংরেজি শিক্ষকের মধ্যে ২০ হাজার ৬৫০ জনের স্নাতকে ইংরেজি ছিল না আর ৩ হাজার ৭১১ জন এইচএসসি পাস। ৬৭ হাজার ৯৫৫ জন গণিত শিক্ষকের মধ্যে ১৬ হাজার ২৫৬ জন বা ২৩.৯৩ শতাংশের স্নাতকে গণিত ছিল না। আর ১২.১৫ শতাংশ বা ৮ হাজার ২৫৮ জন এইচএসসিতে গণিত পড়েননি, কিন্তু গণিতে শিক্ষকতা করছেন। এদের মধ্যে ৩ হাজার ৬০২ জন গণিত শিক্ষকের মধ্যে ৭৪৫ জনের স্নাতক পর্যায়ে গণিত ছিল না, আর এইচএসসিতে গণিত ছিল না ২০২ জনের। বেসরকারি স্কুলের ৬৪ হাজার ৩৫৩ জন গণিত শিক্ষকের মধ্যে ১৫ হাজার ৫১১ জনের স্নাতক পর্যায়ে গণিত ছিল না, আর এইচএসসিতে গণিত ছিল না ৮ হাজার ৫৬ জনের।
শিক্ষকদের যোগ্যতাগত ঘাটতির প্রভাব স্বভাবতই শিক্ষার্থীদের শিখনফলে পড়ার কথা এবং পড়ছেও। সরকারের বিভিন্ন গবেষণায়ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে দক্ষতাগত দুর্বলতার চিত্র উঠে এসেছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের তদারক ও মূল্যায়ন বিভাগ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের দক্ষতাবিষয়ক একটি গবেষণা পরিচালনা করে। ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অব সেকেন্ডারি স্টুডেন্টস-২০১৯ শীর্ষক প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি মাউশি। তবে ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, মাধ্যমিকে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী এখনো ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে দক্ষতা অর্জনে পিছিয়ে। এর মধ্যে ইংরেজিতে বেশি খারাপ। ষষ্ঠ শ্রেণির প্রায় ২৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর ইংরেজি অবস্থা খুবই খারাপ, ৩২ শতাংশ খারাপ বা গড়পড়তা স্তরে আছে। এ দুই স্তর মেলালে ৬১ শতাংশ শিক্ষার্থীর অবস্থাই খারাপ বলা যায়। মোটামুটি ভালো স্তরে আছে ১৮ শতাংশের মতো। বাকি শিক্ষার্থীরা ভালো ও খুবই ভালো স্তরে আছে। অষ্টম শ্রেণিতে ইংরেজিতে ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ব্যান্ড ২ ও ৩ স্তরে আছে। ২৮ শতাংশ মোটামুটি ভালো। এ শ্রেণিতে চার ভাগের প্রায় এক ভাগ খুবই ভালো করেছে। এ বিষয়ে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তুলনামূলক ভালো। সাড়ে ১২ শতাংশ খারাপ স্তরে। বাকিরা মোটামুটি ভালো, ভালো ও খুবই ভালো।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, যেসব শিক্ষকের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি নেই, তাদের দিয়ে পাঠদান করিয়ে কোনোভাবেই কাক্সিক্ষত শিখনফল অর্জন সম্ভব নয়। তাদের মতে, শুধু গণিত কিংবা ইংরেজি নয়, বিজ্ঞানসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ডিগ্রিধারীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া জরুরি। একটি গবেষণায় উঠে এসেছে যে, গণিতের গ্র্যাজুয়েট যারা তাদের শিক্ষার্থীরা গণিতে ভালো করেছে, যারা বিজ্ঞানের গ্র্যাজুয়েট তাদের শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানে ভালো করেছে। আর ম্যানেজমেন্ট পড়ে যারা গণিতে পড়াচ্ছেন তাদের শিক্ষার্থীদের দক্ষতা অর্জনের হার কম। প্রশিক্ষণের দিক দিয়েও বেশ পিছিয়ে রয়েছেন গণিত ও ইংরেজি শিক্ষকরা। ২০১৯ সালে দেশের মাধ্যমিক শিক্ষার নানাদিক নিয়ে একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে বেসরকারি সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযান। এর ফলাফলের ভিত্তিতে ‘সেকেন্ডারি স্কুল টিচারস ইন বাংলাদেশ : ইন দ্য লাইট অব এসডিজি ফোর’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি। তাতে উঠে আসে দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোয় গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে নিয়োজিত ৫৫ শতাংশ শিক্ষকেরই বিষয়ভিত্তিক কোনো প্রশিক্ষণ নেই। শিক্ষকের মানের কথা বলতে গেলে সবার আগে যে বিষয়টি আসে সেটি হলো শিক্ষকের যোগ্যতা। কারণ দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক ছাড়া মানসম্মত শিক্ষা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। অথচ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনার বিষয়টি বেশ অবহেলিত। আর যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক না পাওয়ার অন্যতম কারণ আমরা এ পেশায় তাদের আকৃষ্ট করতে পারছি না। বিভিন্ন খাতে যত বড় উন্নয়নই হোক না কেন, শিক্ষাকে অবহেলায় রেখে তা কখনই টেকসই হবে না। তাই আমাদের শিক্ষায় বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে হলেও যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের প্রশিক্ষণের আওতায় প্রয়োজন বলে কোনো কোনো শিক্ষাবিদ মন্তব্য করেছেন।
এরশাদ সরকার জনপ্রিয়তার জন্য ইংরেজি ছাড়া বিএ ও গণিত ছাড়া বিএসসি পড়ার সুযোগ দিয়েছিলেন। তখন পাস করা শিক্ষার্থীদের একটা অংশ শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়ে গণিত ও ইংরেজি বিষয় পড়াচ্ছেন। আমাদের দেশের তখনকার শিক্ষাবিদরা কি বিষয়টিতে খুব একটা বাধা প্রদান করেছিলেন? করেননি। এরশাদ আর্মির লোক। আর্মিতে তো ইংরেজির গুরুত্ব থাকে সবক্ষেত্রেই, কিন্তু এখানে কী ঘটেছিল? তবে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এ সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছেন কেউ কেউ কারণ এসব শিক্ষক অবসরে চলে গেলে ও নতুন যোগ্যতা অনুসারে শিক্ষক নিয়োগ হলে এমনটি আর থাকবে না। চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে উচ্চশিক্ষা সবক্ষেত্রেই ইংরেজিতে দক্ষতা জরুরি। আর বিশে^র সব শিক্ষাব্যবস্থায় গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয় গণিত শিক্ষাকে। আর এ দুটোতেই আমাদের শিক্ষার্থীরা দুর্বলতা নিতে ওপরের শ্রেণিতে উঠতে থাকে।
মাধ্যমিক পর্যায়ে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক না থাকা একটি বাস্তবতা। একে স্বীকার করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। যারা গণিত, ইংরেজি কিংবা বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স কিংবা মাস্টার্স নিয়ে পড়াশুনা করেন তাদের মধ্যে বড় একটি অংশ শিক্ষকতা ছাড়া অন্য কোনো পেশায় চলে যান বা যেতে চান, এটা স্বাভাবিক। শিক্ষকতা অর্থনৈতিকভাবে সব জায়গায় বা সবক্ষেত্রে আকর্ষণীয় নয়। তা ছাড়া এ পেশা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং এবং বর্তমান যুগে খুব চাপেরও। প্রতিষ্ঠান যদি একটু নাম করা হয় তাহলে শিক্ষকদের খাটুনির অন্ত থাকে না। তাই, অনেক মেধাবী এ পেশায় আসতে চান না।
মাধ্যমিকে ভালোভাবে পড়ানোর জন্য শিক্ষকদের আলাদা প্রস্তুতি নিতে হয়। গণিতে তারা যেসব বিষয় গ্র্যাজুয়েশন লেভেলে পড়ে আসেন সেগুলো কিন্তু মাধ্যমিকে নেই। অন্য বিষয়ের শিক্ষক যদি ডেডিকেটেড হন তাহলে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে কিন্তু শ্রেণিকক্ষের শিক্ষাদান আনন্দময় করতে পারেন। গণিতে অনার্স পড়–য়ারাই যে গণিত করাতে পারবেন তা নয়। যারা অর্থনীতি কিংবা অ্যাকাউন্টিং কিংবা ম্যানেজমেন্ট পড়ে আসেন তারাও কিন্তু পারবেন। একইভাবে, ইতিহাস, অর্থনীতিসহ অন্যান্য বিষয়ে যারা অনার্স পড়েন তারা যদি চর্চা করেন, প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তাহলে ইংরেজি পড়াতে পারেন। আমাদের বাস্তবতায় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করার বিকল্প নেই।
লেখক: প্রেসিডেন্ট, ইংলিশ টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইট্যাব)
কবি, ভাষাসংগ্রামী ও ভাষা আন্দোলনের প্রথম কবিতার রচয়িতা মাহবুব উল আলম চৌধুরীর জন্ম চট্টগ্রামের রাউজানে ৭ নভেম্বর ১৯২৭ সালে। তার বাবার নাম আহমাদুর রহমান চৌধুরী এবং মা রওশন আরা চৌধুরী। ১৯৪৭ সালে গহিরা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিনি ডিসটিংশনসহ এন্ট্রান্স পাস করেন। চট্টগ্রাম কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়াকালে রাজনৈতিক কারণে তিনি কলেজ ত্যাগ করেন। ১৯৪৫ সালে বিভাগ-পূর্ব ভারতে ‘ছাত্র ফেডারেশন’ নামে ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে যোগ দেন এবং এ বছরই ‘দ্য বেঙ্গল রিজিওনাল স্টুডেন্ট কনফারেন্স’ অনুষ্ঠিত হয়। কলকাতার প্রতিনিধি হিসেবে এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, গোপাল হালদার, ভবানী সেন ও সুকান্ত ভট্টাচার্য। এতে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে আন্দোলনকারী ভাষাসংগ্রামীদের ওপর পুলিশের গুলি এবং ছাত্র নিহত হওয়ার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদস্বরূপ তিনি ‘একুশে’ শিরোনামে রচনা করেন তার বিখ্যাত কবিতা ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’, যা ভাষা আন্দোলনের প্রথম কবিতা হিসেবে স্বীকৃত। ১৯৫০ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে পাকিস্তানের সংবিধানভুক্ত না করার প্রতিবাদে তিনি পাকিস্তান সরকারের রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদসভার আয়োজন করেন। চট্টগ্রামে পূর্ব পাকিস্তানের বিশ্বশান্তি পরিষদের কমিটি গঠন করা হলে তিনি এ পরিষদের সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত যুক্তফ্রন্টের চট্টগ্রাম শাখা কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে কাজ করেছেন। একুশে পদকসহ নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি। ২০০৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন এই ভাষাসংগ্রামী।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) হলের আসন দখল করে রাখার বিরুদ্ধে অনশনরত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ তাকে সমর্থন দেওয়া কয়েকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।তারা বলেন, ওই স্থানে গত বুধবার রাত থেকে অনশনে ছিলেন প্রত্যয়। তাকে মারধরের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায় হামলায় জড়িতরা। এ সময় প্রত্যয়ের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা হয়।
জানা গেছে, তিন দাবিতে গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনের খেলার মাঠে অনশনে বসেন প্রত্যয়। তিনি ওই হলের আবাসিক ছাত্র। তার অন্য দুটি দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা ও হলের গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং নবীন শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। ওই সময় ক্যাম্পাসে লোডশেডিং চলছিল। হঠাৎ করেই প্রত্যয়সহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
হামলায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী, মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সৃষ্টি, চারুকলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মনিকা, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৮তম ব্যাচের সুরসহ আরও কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, হামলায় ৩০ থেকে ৪০ জন অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের কয়েকজন হলেন ছাত্রলীগ নেতা ও রসায়ন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গৌতম কুমার দাস, তুষার, ফেরদৌস, নোবেল, গোলাম রাব্বি, মুরসালিন, মুরাদ, সোহেল, তানভীর, রায়হান, রাহাত, সৌমিক, তারেক মীর, সজীব ও নাফিস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমরা যারা প্রত্যয়ের সঙ্গে ছিলাম তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর প্রত্যয়কে দেখতে চিকিৎসক এসেছিলেন। তখন তারা অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা করে সেটি ফিরিয়ে দেয়। প্রক্টরকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি আসেননি। একাধিক ছাত্রীর দিকেও চড়াও হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ এমন একটি ফোনকল পেয়ে তারা অ্যাম্বুলেন্স পাঠায়। তবে কে কল দিয়েছিল সে সম্পর্কে চিকিৎসা কেন্দ্রের কেউ বলতে পারেননি।
তবে যে ফোন নাম্বার থেকে কল দেওয়া হয়েছিল সেটিতে যোগাযোগ করে দেখা যায় নাম্বারটি শাখা ছাত্রলীগের নেতা গৌতম কুমার দাসের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। দরকার হলে আমি পদত্যাগ করব।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে তারা এ রাত পৌনে ১টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।
তবে অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউলের ওপর হামলারে পেছনে ছাত্রলীগের কোনো হাত নেই বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, মীর মশাররফ হোসেন হলের অনশনরত ওই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। তবে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরা করেছে। সেখানে ছাত্রলীগের একজনও জড়িত নয়।’
অসুস্হ সাবেক ফুটলার মোহাম্মদ মহসীনের পাশে দাড়িয়েছেন তার সাবেক সতীর্থরা। মোহামেডান ক্লাবের সাবেক ফুটবলার ও সোনালী অতীত ক্লাবের সদস্যরা বিকেলে বসে এই সিদ্ধান্ত নেন। পরে মহসীনের বাসায় যান তার সংগে দেখা করতে।সাবেক ফুটবলারদের মধ্যে ছিলেন আব্দুল গাফফার, জোসী, বাবলু, জনি, সাব্বির, রিয়াজ।
এসময় গাফফার জানান, মহসীনের চিকিৎসার জন্য বিসিবি সভাপতির উদ্যোগে বুধবার সকালে অসুস্হ ফুটবলারকে হাসপাতালে ভর্তি করবে।
হাসপাতাল থেকে সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে ফেরার পর মহসীন কানাডায় ফিরে যেতে চাইলে সাবেক ফুটবলাররা সহায়তা করবে। মহসীন কানাডা থেকে দেশে ফিরেছেন মায়ের পাশে থাকতে। প্রায় নব্বই ছুই ছুই মহসিনের মায়ের পায়ে ব্যথা। মহসীনের পাশাপাশি তার মায়ের চিকিৎসার ব্যাপারেও সাবেক ফুটবলাররা পাশে থাকবেন বলে জানান আবদুল গাফফার।
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
প্রথম সেটে হেরে পিছিয়ে পড়েছিলেন। তবে পরের সেটেই ঘুরে দাঁড়ান। ৩ ঘণ্টা ৩৮ মিনিটের লড়াইয়ের পর কোয়ার্টার ফাইনালটা জিতে নিলেন নোভাক জকোভিচ। কারেন খাচানভকে ৪-৬, ৭-৬, ৬-২, ৬-৪ ব্যবধানে পরাজিত করে ফ্রেঞ্চ ওপেনের সেমিফাইনালে উঠলেন এই সার্বিয়ান।
কোয়ার্টার ফাইনালের শুরুটা দেখে মনে হচ্ছিল, দিনটা বোধহয় জকোভিচের নয়। তবে মাথা ঠান্ডা রেখেছিলেন তিনি। খাচানভ প্রথম সেট জিতে নেওয়ার পর দ্বিতীয় সেটেও সমানে সমানে লড়াই করেন। যদিও টাইব্রেকারে জোকোর সামনে দাঁড়াতে পারেননি তিনি।
ম্যাচে সমতা ফেরানোর পর এক বার লকার রুমে ফিরে যান জোকোভিচ। তার পর শুধু কোর্টেই ফিরলেন না। নিজের চেনা ছন্দেও ফিরলেন। তৃতীয় এবং চতুর্থ সেটে আর শুরুর মতো লড়াই করতে পারলেন না প্রতিযোগিতার ১১ নম্বর বাছাই।
ফ্রেঞ্চ ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে মঙ্গলবার প্রতিযোগিতার প্রথম সেট হারলেন জোকোভিচ। হেরে যেতে পারেন এমন মনে না হলেও এ দিন ছন্দ পেতে কিছু সময় লেগেছে তার। ৩৬ বছরের জোকোভিচ কি সর্বোচ্চ পর্যায়ের টেনিসের ধকল আগের মতো সামলাতে পারছেন না আর?
এমন প্রশ্ন যখন উঁকি দিতে শুরু করছে, তখনই নিজের চেনা ছন্দে দেখা দিয়েছেন। কোয়ার্টার ফাইনালে খাচানভের বিরুদ্ধে সময় পেয়েছেন। সুযোগ পেয়েছেন। সেমিফাইনাল বা ফাইনালের প্রতিপক্ষরা কি ছন্দে ফেরার সময় বা সুযোগ দেবেন তাঁকে?
টেনিসপ্রেমীদের মনে এই প্রশ্ন রেখেই ফ্রেঞ্চ ওপেনের শেষ চারে পৌঁছে গেলেন দু’বারের চ্যাম্পিয়ন। পাশাপাশি কিছুটা হয়তো উদ্বেগেও রাখলেন। সেমিফাইনালে জায়গা নিশ্চিত করার পর জোকার স্বীকারও করে নিয়েছেন, কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথম দু’টি সেট তার থেকে ভাল খেলেছেন রুশ প্রতিপক্ষ।
এদিকে ওপর কোয়ার্টার ফাইনালে জয় পেয়েছেন কার্লোস আলকারাজ। সিৎসিপাসের বিপক্ষে তিনি ৩-০ (৬-২, ৬-১, ৭-৬) সেটে জিতে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছেন এই স্পেনিশ টেনিস তারকা।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।