
প্রকাশক, শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক চিত্তরঞ্জন সাহার জন্ম নোয়াখালীতে ১৯২৭ সালের ১ জানুয়ারি। বাবার নাম কৈলাশচন্দ্র সাহা এবং মা তীর্থবাসী সাহা। কাপড় ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান হয়েও ১৯৫১ সালে চৌমুহনীতে তিনি বইয়ের ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি চৌমুহনী থেকে ঢাকায় তার পুস্তক ব্যবসা স্থানান্তর করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি পুঁথিঘর প্রাইভেট লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী তার পুঁথিঘরের অফিস পুড়িয়ে দেয়। তিনি নিরাপত্তার জন্য কলকাতায় চলে যান। সেখানে তিনি ‘স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ’ গড়ে তোলেন যা পরবর্তী সময়ে ‘মুক্তধারা’ নাম লাভ করে। তিনি নিজ উদ্যোগে ‘রক্তাক্ত বাংলা’ ও ‘বাংলাদেশ কথা কয়’ নামে দুটি সংকলন প্রকাশ করেন। তার উদ্যোগেই প্রথম বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণে বইমেলার সূচনা হয়। পরে বাংলা একাডেমি একুশে বইমেলার প্রবর্তন করে। তিনি ২০০৫ সালে একুশে পদক ও বিদ্যাসাগর পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
নিয়মটা তো এই রকমেরই ধেয, একপক্ষ জয়ী হলে অন্যপক্ষ পরাজিত হবে এবং এ নিয়মেও মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত যে, জয়ীর সংখ্যা হবে অল্প, পরাজিতদের সংখ্যা অধিক। তা বাংলাদেশে জয়ী হয়েছে কারা, কারা ওই অল্পসংখ্যক লোক যারা পরাজিত করেছে বিপুলসংখ্যক দেশবাসীকে?
এ প্রশ্নের মীমাংসা মোটেই জটিল নয়, বরং খুবই সহজ। যেদিকে তাকাই দেখতে পাব জয়ীদের এবং সঙ্গে সঙ্গে দূরে নয়, কাছেই, বলা যাবে পাশেই চোখ পড়বে পরাজিতদের। এই শহরে তিন কোটি টাকা দামের গাড়িও চলে। দাম জানি না, নিরূপণের সুযোগ নেই, যারা জানেন তারা বলেন। এরাই তো জয়ী, এই বিত্তবানরা। আর পাশেই, ওই গাড়ি যখন যানজটের জন্য থেমে যায় তখনই চোখে পড়বে জীর্ণশীর্ণ কিশোরীকে, যে ফুল বিক্রি করে, তিনশ নয়, তিরিশও নয়, তিন টাকা পেলেই বর্তে যায়। এই যে তিন কোটি টাকা ও তিন টাকা এ কোনো স্থির ছবি নয়, সহ-অবস্থানের চমৎকার দৃশ্য বলা যাবে না একে, এ হচ্ছে তিন কোটিওয়ালার নিপীড়ন ও অপমান, তিন টাকাওয়ালাকে। তিন কোটির মালিক অল্প কয়েকজন, তিন টাকার কাঙাল অসংখ্য, লাখ লাখ।
এই জয়, এই পরাজয়, এ কোনো নতুন ব্যাপার নয়। কিন্তু জয়ী এবং পরাজিতের মধ্যে ফারাকটা বাড়ছে, দিনে দিনে, বছরে বছরে। গ্রামে কাজ নেই, আশ্রয়ও নেই, নিরুপায় মানুষ উপায়ের খোঁজে শহরে আসে, এসে বস্তিতে ওঠে তারপর বস্তিতে এক দিন আগুন লাগে, সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়, নিঃস্ব হয়ে পড়ে। বস্তিবাসী গ্রামে পরাজিত হয়ে যে শহরে এসেছিল; শহরে হেরে গিয়ে সে কোথায় চলে যায়, কে জানে। যেখানে বস্তি ছিল সেখানে বিজয় উঠতে বিলম্ব ঘটে না, দর্পিত অ্যাপার্টমেন্ট কিংবা আত্মসন্তুষ্ট বিপণি বিতান দাঁড়িয়ে যায়, জয়ীদের জয়ের তালিকা যেমন, তেমনি পরাজিতদের পরাজয়ের তালিকাও প্রসারিত হতে থাকে, পরস্পর বিরুদ্ধ ফলাফল তৈরি করে দিয়ে। ছোট ব্যবসায়ীদের বাজারটা পুড়ে যায়, যাতে বড় ব্যবসায়ীরা সেখানে আরও বড় বাজার খুলতে পারে।
এসব তো বাইরের দৃশ্য। জয়ী মানুষদের ঘরের ভেতরের ছবি দেখলে সন্দেহ থাকবে না যে, আরব্য রজনীর সেই দৈত্য তাদের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে, হুকুম করার অপেক্ষামাত্র, অমনি যা চাইবে এনে দেবে। এরা ঈদে যায় কলকাতায়, অসুখ হলে ব্যাংককে, ছেলেমেয়েদের রাখে আমেরিকায়। নিজেরা কখনো দেশে থাকে, কখনো বিদেশে। দেশি জিনিস পারতপক্ষে ব্যবহার করে না, দেশি ভাষায় নিজেরা ক্ষমাঘেন্না করে কথা বললেও সন্তানদের কারবার সম্পূর্ণ ভিন্ন।
এসব যখন চলে তখন মঙ্গা ঘটে রংপুরে। দেশের অর্থমন্ত্রী বলেন, মঙ্গা কী তিনি জানেন না। আগের অর্থমন্ত্রী যেমন বলেছিলেন, শেয়ার মার্কেট কী বস্তু তিনি বোঝেন না, যদিও তার চোখের সামনেই ফটকাবাজারে জুয়া খেলতে গিয়ে শত শত মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার নিজেদের সর্বস্ব খুইয়েছে এবং দেশি-বিদেশি ভুয়া কোম্পানি শেয়ারের মূল্যহীন কাগজ তাদের হাতে গছিয়ে দিয়ে নগদ টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছে। মঙ্গা কী, তা মন্ত্রী না বুঝলেও ভুক্তভোগী মাত্রই বোঝে। হাড়ে হাড়ে। কয়েকজন তরুণ গিয়েছিল মঙ্গাপীড়িত এলাকায়। তাদের একটি অভিজ্ঞতাই বলে দেবে মানুষ সেখানে কীভাবে টিকে আছে। অতিশয় বৃদ্ধ একজন এসেছিলেন সাহায্য নিতে। তার পরনের লুঙ্গিটি ছেঁড়া, কিন্তু তিনি চাইলেন একটি শাড়ি। কারণ কী জানতে চাইলে বললেন, তিনি তো তবু ফাটা লুঙ্গি পরে বাইরে আসতে পেরেছেন, তার স্ত্রীর পক্ষে ঘরের বাইরে আসার উপায় নেই। ওই সময়টা ছিল রোজার, ত্রাণকর্মীরা জিজ্ঞাসা করেছিলেন সাহরিতে তিনি কী খেয়েছেন, জবাব পেয়েছেন যে, পান্তাভাত ও কাঁচা মরিচ জুটেছিল, ইফতারির সময় পানি ছাড়া অন্যকিছু পাবেন বলে ভরসা করেন না। তরুণ ত্রাণকর্মীদের কৌতূহল রয়েছে ঈদের দিন তিনি কোন ধরনের খাবার খাবেন বলে আশা করেন, ভদ্রলোক জানিয়েছেন ভাতের সঙ্গে ডিম ভাজা পেলে খুবই খুশি হবেন। গরিবের ঈদ নিয়ে কবিতা আমরা অনেক পড়েছি। কিন্তু সেই ঈদ যে এমন সাদামাটা এবং এই ঈদ যে একজনের নয়, বহুজনেরতার বিপরীতে তিন কোটিওয়ালাদের ঈদ যে কতটা দাপটের হতে পারে তার হদিস কবির পক্ষেও পাওয়া সহজ হবে না।
কে জয়ী আর কে-ইবা পরাজিত তা নিয়ে কি সন্দেহের কোনো অবকাশ আছে? জয়ীর সংখ্যা শতকরা পাঁচজনের বেশি হবে না, বাদবাকি সবাই বিভিন্ন মাত্রায় পরাভূত। জয়ীরা কারা? তাদের পরিচয় কী? পরিচয় একটাই, তারা ধনী। হ্যাঁ, পেশাগত পার্থক্য আছে, আদর্শগত দূরত্বও থাকতে পারে, কিন্তু তাদের জয় সেসব বিভিন্নতাকে অবলুপ্ত করে দিয়েছে। এরাই এ দেশের ব্যবসায়ী, আমলা, রাজনীতিক এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে পেশাজীবী। এদের মধ্যে বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি সবাই রয়েছে। যেন একই পরিবারের সদস্য, কলহ যা তা পারিবারিক বটে; ভাগাভাগি নিয়ে কাড়াকাড়ি মাত্র, নইলে তারা সমান সুবিধাতেই রয়েছে। সরকারি জোটের সদস্য জামায়াতের আমির নিঃসংকোচে বলে যাচ্ছেন যে, সূর্যসেন ছিলেন এ দেশের প্রথম সন্ত্রাসী, জামায়াত একাত্তরে মানুষ খুন করেছে, এখনো যে করছে না তা নয়, কিন্তু তা নিয়ে ক্ষমা চাওয়া দূরের কথা, দুঃখ প্রকাশও করতে হয়নি। জয়ীদের কাতারে তারা অত্যন্ত আরামে বসে আছে।
নব্বইয়ে একটি গণ-অভ্যুত্থান হয়েছিল, পতন ঘটেছিল এক স্বৈরশাসকের। পতনের রাতে তিনি দেশ ছেড়ে পালাতে চেষ্টা করছেন বলে খবর রটেছিল, হাজার মানুষ ছুটেছিল বিমানবন্দরের দিকে, তাকে আটকাতে। তিনি আটকও হয়েছিলেন, কিন্তু পরে শুধু ছাড়াই পাননি, ওই যে যারা জয়ী তাদের মধ্যে একজন প্রধান পুরুষ হিসেবে বিরাজ করছেন। তিনি বিবাহ এবং বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, সম্প্রতি মেয়ের বয়সী ও আগে-বিবাহিত এক পাত্রীকে স্ত্রীর আসনে বসিয়েছেন, সে খবর নয় কেবল, তার নতুন স্ত্রীর রাজনৈতিক বক্তব্যও আমাদের শুনতে হয়েছে। তার প্রথম স্ত্রী নির্বাচিত এমপি, দ্বিতীয় স্ত্রীও শোনা যাচ্ছিল মহিলা কোটায় এমপি হবেন বলে কথা ছিল। পরে আরও তেলেসমাতি কা-। দ্বিতীয় স্ত্রীকে তিনি ত্যাগ করেছেন এবং জেল খাটিয়েছেন। দ্বিতীয় স্ত্রীও বসে নেই, অতবড় মানুষের স্ত্রী, তাই সাবেক হলেও রাজনীতিতে হট্টগোল করছেন। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন ড. মিলন, কাগজে খবর বের হয়েছে যে, যারা সেদিন মিলনকে গুলি করেছিল তাদের নিজ হাতে গোলাবারুদ সরবরাহ করেছিলেন স্বয়ং এরশাদের প্রথম স্ত্রী। কদিন আগে মিলনের মা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে মিলন হত্যার বিচার দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই তাকে আশ্বাস দিয়েছেন, বিচার হবে বলে। এর কদিন পর রওশন এরশাদ তার দলের এমপিদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন বলে যে খবর বের হয়েছিল সে ঘটনার পরিণতি যদি এমন হতো যে, রওশন এরশাদ একজন মন্ত্রী হয়েছেন, তাহলেও বিস্মিত হওয়ার কারণ থাকত না। কিছুই অসম্ভব নয়।
রূপকথায় কল্পজগতের কাহিনী থাকে, সেখানে নিয়মকানুন-কায়দাকানুন সবকিছুই অন্যরকমের, আমাদের দেশে ধনীরাও ওই জগতেরই বাসিন্দা, তাদের কাজ একেবারেই ভিন্ন ধরনের। বিদেশিরা আমাদের গ্যাস-তেল নিতে চায়। সরকার রাজি, বিরোধী দলও যে গররাজি তা নয়। টাটা কোম্পানি আসবে, তাদের গ্যাস দেওয়া হবে; সরকার উৎসাহী, বিরোধী দল যে অনাগ্রহী তাও মনে হয় না। বিদেশিরা বন্দর নিয়ে নেবে এমন আশঙ্কা, সে ব্যাপারে সরকারি এবং বিরোধী দল কারও মনোভাবেই প্রকৃত দেশপ্রেমিকের নয়। এ দেশে যারা ক্ষমতায় যাতায়াত করে তারা সবাই একই শ্রেণির মানুষ। সেটি হলো শাসকশ্রেণি, সেই শ্রেণিতে দেশপ্রেমের বড়ই অভাব; ছড়াছড়ি আত্মপ্রেমের। একাত্তরে কি তাহলে মুক্তিযুদ্ধ হয়নি? সেই যুদ্ধে কি জয় হয়নি জনগণের? শতকরা পঁচানব্বইজনই তো ছিল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, পাঁচজন হয়তো বিপক্ষে। মুক্তিযুদ্ধের বিজয় কি তবে চলে গেল দেশের ধনিক শ্রেণির হাতে?
হ্যাঁ, সেটাই ঘটেছে বটে। ক্ষমতা চলে গেছে ধনীদের হাতে। একাত্তরে কে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল, কে ছিল বিপক্ষে সেটা আজ আর কোনো বিবেচনার বিষয় নয়, বিবেচ্য হলো কার হাতে টাকা আছে, কার হাতে নেই। যার টাকা আছে গেন ক্ষমতাবান, টাকা কোন পথে এসেছে তা কেউ জানতে চায় না। কেননা জানাই আছে যে, সব টাকাই অর্জিত হয়েছে অন্যায় পথে। কিন্তু ব্যাপারটাকে ছিনতাই বলা বোধকরি অন্যায় হবে। ঘটনাটা খুবই স্বাভাবিকভাবে ঘটেছে। সাধারণ মানুষ যুদ্ধ করেছে, প্রাণ দিয়েছে। তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। ঘরের মেয়েরা নানাভাবে লাঞ্ছনা সহ্য করেছে। যুদ্ধ শেষে তারা চলে গেছে নিজ নিজ পুরাতন অবস্থানে, যে অবস্থান এরই মধ্যে আগের তুলনায় ভালো হবে কী আরও খারাপ হয়েছে। তারা কাজ পায়নি। অনেকে দুর্ভিক্ষে পড়েছে। আগে ছিল রাজাকারের আতঙ্ক, পরে দেখা দিয়েছে রক্ষীবাহিনীর ভয়। আর যারা বিত্তবান তাদের সুবিধা হয়েছে, তারা একবার ধন বৃদ্ধির সুবিধা পেয়েছিল পাকিস্তান আসায়, আরেকবার পেল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায়। বিত্তবানদের যে অংশ যুক্ত ছিল আওয়ামী লীগের সঙ্গে তারা তো উৎফুল্ল হলোই, যারা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিল তাদেরও কোনো অসুবিধা হলো না। রাজাকারদের ভেতর চিকন আলীরাই শুধু ধরা পড়েছে, স্ফীতোদররা সহজেই পুনর্বাসিত হয়ে গেছে। বলাবাহুল্য, আদর্শের জোরে নয়, টাকার জোরে। যুদ্ধে জনগণের জয় হয়েছে. এটা একাত্তরের শেষে এবং বাহাত্তরের শুরুতে সত্য ছিল। মনে হয়েছিল বিপ্লব ঘটে গেছে। আমরা নতুন রাষ্ট্র তো বটেই, নতুন এক সমাজও পাব। জনগণ বলতে সেই মুহূর্তে ধনী-দরিদ্র সবাইকে বোঝাত। কেননা সবাই একসঙ্গে লড়ছিল একটি চিহ্নিত শত্রুর বিরুদ্ধে। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রের ঐক্য তো টেকেনি।
ধনীরা চলে গেছে ধনীদের জায়গায়, বাদবাকিরা পরাজিত মানুষের মতো ফিরে গেছে আগে, যেখানে ছিল তার চেয়েও খারাপ জায়গায়। গত ৩৪ বছরের ইতিহাস এ দেশে ধনীদের আরও ধনী হওয়ার ইতিহাস বটে। ধনী হয়েছে উৎপাদন করে নয়, মূলত লুণ্ঠন করে; কাজটি হানাদাররা শুরু করেছিল, স্থানীয়রা তাকে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। একাত্তরে জাতি বিভক্ত হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারে, তারপর বিভক্ত হয়েছে ধনী ও দরিদ্রে। ধনীরা জয়ী হয়েছে, গরিবদের হারিয়ে দিয়ে। যেন ধনীকে আরও ধনী করার জন্যই সবকিছু ঘটেছে।
এমন তো কথা ছিল না। লড়াইটা তো শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতার ছিল না, ছিল সার্বিক মুক্তির, যে মুক্তির মূল ভিত্তিটাই হওয়ার কথা ছিল অর্থনৈতিকশুধু উন্নয়নের নয়, বৈষম্যহীনতারও। জনগণের আশা কেন তাহলে ভেঙে গেল খান খান হয়ে। গেল এজন্য যে, সমাজ মোটেই বদলাল না। রয়ে গেল আগের মতোই। রাষ্ট্র বদলাল বটে, কিন্তু সে শুধু বহিরঙ্গ, ভেতরে সে রয়ে গেল আগের মতোই। সেই একই আমলাতন্ত্র, আইনকানুন, অফিস-আদালত শিক্ষাব্যবস্থা, প্রচারমাধ্যম, ধমক-ধামক, ঠাটবাট। শাসক বদলাল কিন্তু শাসন বদলাল না।
সাতচল্লিশে ব্রিটিশ শাসকরা চলে গিয়েছিল পাকিস্তানিদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে, একাত্তরের পাকিস্তানি শাসকরাও সেই একই কাজ করতে বাধ্য হলো, ক্ষমতা দিয়ে গেল বাঙালি শাসকদের হাতে। রাষ্ট্র হুবহু এক রইল না, কিন্তু একই ধরনের রয়ে গেল। দুবারই যারা রাষ্ট্রক্ষমতা পেয়েছে তাদের প্রধান যোগ্যতা ছিল তাদের বিত্ত। বিত্তবানরাই পাকিস্তান রাষ্ট্রের ক্ষমতায় ছিল, বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায়ও তারাই রয়েছে। জয় তাদেরই। আর তারা যদি জয়ী হয় তবে সাধারণ মানুষ তো পরাজিত হবেই। তারা ঠিকই পরাজিত হয়েছে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মধ্য দিয়ে; বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা সশস্ত্র যুদ্ধের সাহায্যে। এই ব্যবধানটা সামান্য নয়। স্বায়ত্তশাসন নয়, স্বাধীনতাও নয় শুধু; চাই মুক্তি। খুব বড় একটা আশা তৈরি মুক্তির কল্পনাকে ঘিরে হয়েছিল। সফল হলো না বিত্তবানদের কারণে। তারা রাষ্ট্রক্ষমতা পেয়ে সেই কাজই করতে থাকলপাকিস্তানি শাসকরা যা করছে, নিজেরা আরও ধনী হতে থাকলে জনগণকে বঞ্চিত করে। এদের চরিত্র দেশপ্রেমিকের নয়, লুণ্ঠনকারীর বটে।
লেখকঃ ইমেরিটাস অধ্যাপক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সরকারি হিসাবে বর্তমানে বিশ্বের ১৬৮টি দেশে কাজ করছে বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি ৩২ লাখ কর্মী (প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি)। জিডিপিতে প্রবাসী আয় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। দিন দিন প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই কাজ করছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। শ্রমবাজারে ভাষাজ্ঞান একটি শক্তি। যে কোনো শ্রমবাজারে অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হয় ভাষাজ্ঞান। শুধুমাত্র ইংরেজি ভালো জানার জন্য আমাদের দেশের কর্মীদের তুলনায় ফিলিপাইন, ভারত ও শ্রীলঙ্কার কর্মীদের বেতন দ্বিগুণ বা তারচেয়েও বেশি বৈদেশিক শ্রমবাজারে।
বাংলাদেশের প্রায় সমপরিমাণ কর্মী ফিলিপাইনের প্রবাসে কাজ করে। তাদের প্রবাসী আয় বাংলাদেশের চেয়ে দ্বিগুণ ইংরেজির কারণে। পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এডুকেশন ফার্স্ট (ইএফ)। সংস্থাটির সমীক্ষায় ফিলিপাইন ইংরেজি দক্ষতায় উচ্চ অবস্থানে (২০) রয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সৈয়দ মনজুর এলাহী এক সভায় বলেছিলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিপাইনের লোকেরা বাংলাদেশিদের চেয়ে চারগুণ বেশি বেতন পান। কারণ তারা সাবলীল ইংরেজি বলতে পারেন। যে জন্য তারা মধ্যম সারির কাজ পান’। ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল ফিদেন রামোস বিবিসি টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বিদেশে আমাদের দেশের কর্মীরা ইংরেজিতে সাবলীলভাবে কথা বলতে পারেন। ছোটবেলা থেকে তারা ইংরেজিতে অভ্যস্ত। তাই বিদেশে তাদের চাহিদা বেশি।’
শুধুমাত্র ইংরেজি ভালো না জানার কারণে আমরা প্রবাসে প্রতিযোগিতা থেকে পিছিয়ে পড়ছি মেধা থাকা সত্ত্বেও। ক্যারিয়ার গঠনে ইংরেজি যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে তা ভুক্তভোগী প্রবাসীরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘ইংরেজি দক্ষতার অভাবে আমরা আন্তর্জাতিক দেন-দরবারেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’ এত প্রতিকূলতার পরও ইংরেজি ভাষাকে আমরা এখনো ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবেই শিখছি। ‘সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ’ ঘোষণা করতে পারলাম না আজও। ইংরেজি দক্ষতায় বাংলাদেশের অবস্থা খুবই নিম্নস্তরে এমন তথ্য উঠে এসেছে এক আন্তর্জাতিক সমীক্ষায়। অর্থনীতি ফোরামের হিসাবে ‘পৃথিবীতে ইংরেজি ভাষায় কথা বলেন ১৫০ কোটি মানুষ। কিন্তু এদের মধ্যে ৪০ কোটিরও কম মানুষের মাতৃভাষা এটি (বিবিসি বাংলা)’। সারা পৃথিবীতে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ইংরেজি যতটা ব্যবহার হয় অন্য কোনো ভাষা এতটা ব্যবহার হয় না। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে ইংরেজি সবচেয়ে শক্তিশালী ভাষা। ২০৫০ সালেও ইংরেজি সবচেয়ে শক্তিশালী ভাষাই থাকবে (বিবিসি বাংলা ২৬ আগস্ট ২০২০)’। সাহিত্য সংস্কৃতি, জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চায় ইংরেজি এখনো শীর্ষস্থানেই আছে।
আমেরিকার নাগরিকরা অনলাইনে চাইনিজদের ইংরেজি ভাষা শিখিয়ে লাখ লাখ ডলার উপার্জন করছে। ইউরোপের দক্ষ কর্মীর পাশাপাশি অদক্ষ কর্মীরা ইংরেজি ভাষার সুবিধা পেয়ে থাকে শ্রমবাজারে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড এই ৫টি দেশ ইংরেজি ভাষার সুবিধা নিয়ে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যে আধিপত্য বিস্তার করে রয়েছে। বাংলাদেশের শ্রমবাজারেও ভারত ও শ্রীলঙ্কার ইংরেজিতে দক্ষ কর্মীরা অতিরিক্ত বেতনভাতা পাচ্ছে। আমাদের শ্রমবাজারের ঘাটতি পোষাতে ভারত ও শ্রীলঙ্কা থেকে ইংরেজিতে দক্ষ কর্মী আনতে হয়। পেশাগত প্রয়োজনে ইংরেজি শেখার বিকল্প নেই। যদিও দুঃখজনক হলেও সত্য যে কোনো কর্মকর্তা পর্যায়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে ইংরেজিতে প্রত্যাশিত দক্ষ জনবল পাওয়া যাচ্ছে না।
বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত ৩ খাতের আয়ের ওপর নির্ভরশীল। কৃষি, গার্মেন্টস ও প্রবাসী আয়। যত সহজে প্রবাসী আয় বৃদ্ধি করে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করা যাবে; তত সহজে অন্য দুটি খাতে আয় বৃদ্ধি করা সম্ভব না। তাই অর্থনীতির গতি ত্বরান্বিত করতে এই মুহূর্তে প্রবাসী আয়কে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ইংরেজিতে কথা বলা ও শুনে বোঝা খুব কঠিন কাজ নয়। প্রয়োজন দেশব্যাপী একটি সমন্বিত পরিকল্পনা। দক্ষ শ্রমিক তৈরি করতে যত অর্থ, সময় ও শ্রম ব্যয় হবে তার চেয়ে অনেক কম শ্রমে ও অর্থে ইংরেজির মাধ্যমে প্রবাসী আয় বৃদ্ধি করা সম্ভব। সরকারি খরচে ইংরেজি ভাষা শিক্ষাগ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে। বিদেশে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি বাড়াতে হলে প্রাথমিক শিক্ষা থেকেই ভাষার ওপর জোর দিতে হবে। ভাষাচর্চার ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা থাকা দরকার।
আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে লাখ লাখ কর্মীকে ইংরেজি শেখানো সম্ভব। আমাদের দেশে এখন ইংরেজি শেখানোর মতো দক্ষ জনবল রয়েছে। মাত্র কয়েকশ কোটি টাকা খরচ করে কয়েক লাখ নাগরিককে কমিউনিকেটিভ বা বিজনেস ইংলিশ শেখনো যাবে না কেন? আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে ভাষা এক বিরাট শক্তি। আর এ শক্তি অর্জন করতে হলে ইংরেজির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে হবে রাষ্ট্রীয়ভাবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে ও ২০৩০ সালের মধ্যে সাসটেইনেইবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি) অর্জনে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার বাড়াতে হবে কর্মক্ষেত্রে। জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে দেশে ইংরেজি ভাষা চর্চার ব্যবস্থা করে এ ভাষায় দক্ষ জনশক্তি বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। ভাষাই বয়ে আনতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অপার সম্ভাবনা।
লেখক : সাংবাদিক
গত শতকের ষাট সত্তর দশকে, পৃথিবীর ছবিটা ছিল অন্যরকম। তখন দুনিয়াজুড়ে বামপন্থি রাজনীতির বিপুল দাপট। এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকার সর্বত্রই বাতাসে বারুদের গন্ধ। আমার দেশও পিছিয়ে নেই। আমরা বড় হচ্ছি, গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাও, কমরেড মাও-এর চিন্তাধারা শুনতে শুনতে। দেয়ালে দেয়ালে মাও-এর মুখ। জ্বলজ্বলে পোস্টারে জানান দেওয়া হচ্ছে, চীনের চেয়ারম্যান, আমাদের চেয়ারম্যান...।
আবেগের আতিশয্যে কোনো কোনো বিপ্লবী রেড বুক সাক্ষী রেখে বিয়ে অবধি সেরে ফেলতেন। গায়ক অজিত পান্ডে একই ভাবে লাল কেতাব হাতে নিয়ে, প্রেসিডেন্সি কলেজের পোর্টিকোতে বিয়ে করে অনেকের চোখে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিলেন। আজকের পৃথিবী বদলে গেছে। দক্ষিণপন্থি রাজনীতির রমরমা একটা দুটো দেশ বাদ দিয়ে সব জায়গায়। খোদ চীনেও বাজার অর্থনীতির দাপটে সমাজতন্ত্র আদৌ টিকে আছে কি-না তা নিয়েই যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। মাও সেতুং নিয়ে কোনো চর্চাও নিজের দেশেই যেখানে নেই, সেখানে তার তিন দুনিয়ার তত্ত্ব বা গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাওয়ের রাজনীতির প্রাসঙ্গিকতা কতটা তা নিয়ে প-িতেরা আলোচনা করুন। আমরা বরং এদেশে মাওবাদী রাজনীতি নিয়ে যে বিরাট জল্পনা তা নিয়ে একটু-আধটু কথা বলি।
এ লেখা একাধারে ডায়েরি, রিপোর্টাজ, এলোমেলো চলতে চলতে দেখা থেকে। আসলে ডকুমেন্টারি ফিল্ম মেকার হিসেবে ভারতের রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়কে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। এদেশে যারা মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি করেন বা দাবি করেন যে তারাই আসল মাও রাজনীতির ধারক, তারা রাষ্ট্রের কাছে অত্যন্ত বিপজ্জনক শক্তি। এখন তো আর্বান নকশাল শব্দটি রাজনৈতিক ডিসকোর্সে ঢুকে পড়েছে। স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, তাদের নিয়ে লেখালেখি করাও দেশের পক্ষে গর্হিত কাজ। আমি যে সময়ের কথা বলব তখন অবশ্য মাও শব্দটি এমন নিষিদ্ধ ছিল না। কিন্তু তখনো বস্তার, দ-কারণ্য এলাকায় উপদ্রুত ঘোষণা হয়ে গেছে। তল্লাটজুড়ে আধা সামরিক বাহিনীর বিপুল জমায়েত। তার মধ্যেই গড়ে উঠেছে মাওবাদী সংগঠনের গোপন গেরিলা ঘাঁটি।
খানিকটা ঝোঁকের মাথায় ঠিক করে ফেলেছিলাম যে নিষিদ্ধ এই বামদের নিয়ে একটা ছবি করব। প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছিল যে এদেশের সবকটি বাম দলের কর্মসূচি, দলিল, চিন্তাভাবনা নিয়েই একধরনের ভিজ্যুয়াল প্রবন্ধ লিখব যা ভবিষ্যতে গবেষণার কাজে লাগবে। অন্য দলগুলো নিয়ে কাজ করা অনেক সহজ বলে প্রথমেই ঠিক করে নিলাম, রাষ্ট্রের নিরাপত্তার পক্ষে সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক মাওবাদী গেরিলাদের নিয়েই শুরু করব। ভাবা সহজ। কাজটা কঠিন। কুড়ি একুশ বছর আগেও গোপন ঘাঁটিতে গিয়ে শ্যুটিং করা ছিল অকল্পনীয়। একে তো মাওবাদীদের দিক থেকে ছাড়পত্র নাও মিলতে পারে। তারপর যদি তারা অনুমতি দিল, কিন্তু সরকার তো ছাড়বে না। এ একেবারে মারীচের মতো অবস্থা। হয় রামে না হয় রাবণে মারবে।
যাই হোক, অনেক কষ্টে, কাঠখড় পুড়িয়ে প্রায় এক বছর ধরে চেষ্টার পর বস্তার দ-কারণ্যের গভীর জঙ্গলে মাওবাদী ডেরায় গিয়ে শ্যুটিংয়ের অনুমতি পেলাম। একমাস ছিলাম গোপন ঘাঁটিতে। কীভাবে যে এখনো বেঁচে আছি, মাঝেমধ্যে নিজেই নিজেকে জিজ্ঞেস করি। এক এক সময় এখন ভাবি, জীবন বাজি রেখে ডকুমেন্টারি করতে যাওয়ার পেছনে বোধহয় ছিল শৈশব কৈশোরে অবচেতনে মাও-এর প্রভাব। আগেই বলেছি যে, তখন তো এক অন্য সময়। বিশ্বে এনেছে নতুন দিন, মাও সে তুং আর হো চি মিন।
তখন অবশ্য মাওবাদ ছিল না। বলা হতো মাও চিন্তাধারা। সারা বিশ্বে দিচ্ছে নাড়া কমরেড মাও-এর চিন্তাধারা। এদেশে নকশালপন্থিদের দুটো গোষ্ঠী এমসিসি বা মাওবাদী কমিউনিস্ট কেন্দ্র ও সিপিআই-এমএল জনযুদ্ধ এই টার্মটা সামনে আনে মাওবাদ। পরে দুই গোষ্ঠী এক হয়ে নতুন পার্টির নাম রাখে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী)।
বাদ না চিন্তা তা বিতর্ক রয়েছে। নকশালপন্থিদের বড় অংশ মাওবাদ বলে কিছু হতে পারে বলে বিশ্বাস করে না। প্রথম কথা দ্বান্দ্বিক দিক দিয়ে দেখতে গেলে মার্কসবাদী তাত্ত্বিকতায় বৈপ্লবিক চিন্তা, শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের যে নীতি ও কৌশল তার থেকে মাও রাজনীতির নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের ফারাক যথেষ্ট। মাও তৃতীয় বিশ্বে কৃষকদের অগ্রণী ভূমিকা যে বিপ্লবের অনুঘটক হিসেবে কাজ করে তা চোখে আঙুল দিয়ে যান্ত্রিক মার্কসবাদীদের সফল চীন বিপ্লবের মধ্য দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন। ফলে মার্কসবাদী তত্ত্বে মাও-এর নিজস্ব কিছু অবদান আছে তা অনস্বীকার্য।
কৃষিপ্রধান ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিতে তাই মাও সেতুং-এর প্রভাব অন্যান্য অনেক রথীমহারথীদের চেয়ে কিঞ্চিৎ বেশি এটা ঠিক। প্রভাব না বলে আপনি জনপ্রিয়তাও বলতে পারেন। সেক্ষেত্রে কার্ল মার্কস বা লেনিন সাহেবকেও পেছনে ফেলবেন মাও। কিন্তু তা হলেও মাওবাদ কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে মতপার্থক্য থাকবেই। বস্তুত ইদানীং কখনো কখনো খুব মনে হয় যে ১৯৪৯-এ চীন বিপ্লবের সময় সেদেশের পরিস্থিতি মেনে একুশ শতকের ভারতে বিপ্লবের স্বপ্ন দেখাটা বোধহয় একটু বেশিমাত্রায় রোমান্টিক। অ্যাডভেঞ্চারিজম তো বটেই। আজকের দিনে ঘাঁটি এলাকা, লাল ফৌজ, গেরিলা যুদ্ধ, গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাও বাস্তবে কতটা কার্যকর তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।
বস্তারে মাও রাজনীতির সবচেয়ে বড় পরীক্ষাগারে গিয়ে আমার মনে হয়েছে আবেগ, পরিশ্রম, দুর্জয় সাহস এসব বাদ দিলে কোথাও যেন পুরনো দিনের মাও পথকে অন্ধ অনুসরণ করার ঝোঁক খুবই চোখে লাগে। ওড়িশা, বিহার, অন্ধ্র, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড় রাজ্যের যে সব এলাকায় মাওবাদী রাজনীতির প্রভাব রয়েছে সব জায়গাতেই জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ আদিবাসী। উন্নয়নের তথাকথিত ঝলমলে ভারতে এই দলিত, আদিবাসীরাই সব থেকে বঞ্চিত। জল, জঙ্গল, জমি থেকে হাজারে হাজারে তারা নগরায়ণের নামে স্বাধীনতার পর থেকেই পিছু হটছেন। ফলে মাওবাদী রাজনীতির মূল সাফল্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করে বড়মাপের গণআন্দোলন গড়ে তোলা। এ এক আদিবাসী বিদ্রোহ। তেলেঙ্গানার কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে বস্তারের জনযুদ্ধের মিল আছে। বস্তারের জঙ্গল বড় গভীর। ভালুক, চিতা, হায়েনার উৎপাত খুব। মাইলের পর মাইল হাঁটছি। দিন রাতে কম করে দশমাইল হাঁটা বাধ্যতামূলক। জল ফুটিয়ে খেতে হতো। খাওয়া বলতে দিনে ভাত তরকারি, রাতে রুটি সবজি। দশদিন বাদে একদিন ডিম পেয়ে খুব আনন্দ হয়েছিল। নদী, পাহাড় পার হচ্ছি গেরিলাদের সঙ্গে। ছোট ছোট স্কোয়াড। পিঠে রুকস্যাক, তারমধ্যে বাড়তি জামাকাপড় আর বই। পড়া কম্পালসারি। রাতে খোলা আকাশের নিচে ঘুম। ভুল বললাম, গাছের তলায় একটা নীল পলিথিন পেতে ঘুমিয়ে পড়া। থাকতে থাকতে শিখে গেছিলাম কেন বাঁশঝাড়ের নিচে শুতে নেই, কেন বট, অশ^ত্থ শোয়ার পক্ষে ভালো, দূর থেকে প্রাণীর ডাক শুনে বোঝা বিপদ আসছে কিনা আরও কত কিছুই যে শিখেছি, জীবনে ভুলব না। তাইতো কখনো কখনো ফিল্মের ক্লাসে ছাত্রদের বলি সব কথা তোমরা বইয়ে পাবে না। কীভাবে কঠিন পরিস্থিতিতে ডকুমেন্টারি বানাতে হয় তা বাস্তবে ক্যামেরা কাঁধে নিয়েই তোমাকে শিখতে হবে।
হাঁটছি আর গ্রাম দেখছি। শতাব্দী প্রাচীন এক একটা গ্রাম। মূলত গোন্দ জনজাতির বাস। গোন্দ ভারতের প্রাচীনতম বাসিন্দা। আদিতে এই জায়গা ছিল গন্দোয়ানা ল্যান্ড। তখন হিমালয় পর্বতমালার জন্ম হয়নি। অস্ট্রেলিয়া ছিল গন্দোয়ানা ভূখ-ের অংশ। ভূমিকম্পের ফলে অস্ট্রেলিয়া আলাদা হয়ে গেল। আজ মাও সেতুং-এর জন্মদিন। ফলে এলোমেলো অনেক কথা মনে পড়ছে।
লেখকঃ ভারতীয় প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা ও লেখক
দেশে এখন জেলায় জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। এভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ইতিমধ্যেই প্রায় অর্ধশতে পৌঁছে গেছে। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নতি বা বিশেষ অবদানের জন্য নয়, প্রশাসনের দুর্নীতি এবং শিক্ষার মান সংকট নিয়েই বছরজুড়ে এগুলোর কোনো না কোনোটি আলোচনায় থাকছেই। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়ম এর মধ্যে অন্যতম। এছাড়া আর্থিক দুর্নীতি, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে ঘুষবাণিজ্য ও স্বজনপ্রীতির একের পর এক ঘটনা নিয়মিতই আসছে সংবাদমাধ্যমে। আরও দুঃখজনক বিষয় হলো ইদানীং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে। সংগত কারণেই প্রশ্ন উঠছে, শিক্ষক নিয়োগেই যদি অনিয়ম ও দুর্নীতি হয় তাহলে বিশ^বিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কীভাবে বাস্তবায়িত হবে? অনিয়মের মাধ্যমে আত্মীয় বা নিজ পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হলে নিয়োগপ্রাপ্ত ও নিয়োগদাতারা কোন নৈতিকতা নিয়ে শিক্ষকতা করবেন? অনিয়মে শিক্ষক হওয়া ব্যক্তি শিক্ষার্থীদেরই বা কী শেখাবেন?
রবিবার দেশ রূপান্তরে ‘প্রভাষক পদে ফেল করে হতে যাচ্ছেন সহকারী অধ্যাপক!’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি) বিভাগে প্রভাষক পদে একাধিকবার লিখিত পরীক্ষা দিয়ে ফেল করা এক প্রার্থী এবার লিখিত পরীক্ষা ছাড়াই সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার ওই বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে দুজনকে নিয়োগের জন্য মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার কথা রয়েছে নিয়োগ বোর্ডের। যাতে প্রভাষক পদের পরীক্ষায় ফেল করা ওই বিভাগেরই প্রভাবশালী এক শিক্ষকের স্ত্রীর নিয়োগ চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন বিভাগটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক। জানা গেছে, শিক্ষক নিয়োগের এ বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে বেশ কয়েকজন প্রার্থী আবেদন করলেও বিভাগের প্ল্যানিং কমিটি শুধু চারজন প্রার্থীর জন্য সুপারিশ করে রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি পাঠান। এদের মধ্যে একজন বিভাগের প্রভাবশালী এক শিক্ষকের স্ত্রী। ওই শিক্ষক কুবি উপাচার্যের অতি ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তার স্ত্রী এর আগে একাধিকবার প্রভাষক পদে লিখিত পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে পারেননি। প্রভাবশালী ওই শিক্ষক আবার বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির সদস্য। নিয়ম অনুযায়ী প্রার্থীদের কেউ প্ল্যানিং কমিটির কোনো সদস্যের আত্মীয় হলে ওই প্রার্থীর বিষয়ে আলোচনার সময় ওই সদস্য প্ল্যানিং কমিটির সভায় থাকতে পারবেন না। অভিযোগ রয়েছে, ফেল করা ওই প্রার্থী যে কারও আত্মীয় সে বিষয়ে সভায় কোনো আলোচনাই হয়নি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিভাগীয় প্রধান ও প্ল্যানিং কমিটির সভাপতি ড. মো. সাইফুর রহমান ফোন কল কেটে দেন। কুবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নিয়ম দেখতে হবে। রেজিস্ট্রার ভালো বলতে পারবেন।’ কুবির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. আমিরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘এখানে শুধু মৌখিক পরীক্ষা হবে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগের জন্য কখনো লিখিত পরীক্ষা হয়নি। আমি আর কিছু জানি না।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সালে শিক্ষক নিয়োগে লিখিত পরীক্ষা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনার পর সব নতুন নিয়োগে লিখিত পরীক্ষা নিয়েছে কুবি। শুধু অভ্যন্তরীণ প্রার্থী যারা ইতিমধ্যে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন, তারা দ্বিতীয়বার কোনো পদে আবেদন করলে তাদের ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়েই কয়েকবার ফেল করা প্রার্থী এবার সহকারী অধ্যাপক পদে আবেদন করে শিক্ষক হতে যাচ্ছেন। প্রশ্ন হচ্ছে কাউকে অনিয়মের মাধ্যমে বিশেষ সুবিধা দিতে গিয়ে কর্তৃপক্ষ ‘অন্ধ সেজে থাকার অনুরাগে’ নিয়মনীতি দেখতে না পাওয়া অথবা না জানার ভান করে কি পার পেতে পারে?
দুঃখজনক হলো, কেবল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ই (কুবি) নয়, অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও আজকাল শিক্ষক নিয়োগে নিয়মবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। উপাচার্যের স্বজন বা কাছের লোক, প্রভাবশালীর আত্মীয়, রাজনৈতিক পরিচয়ে যোগ্যতা না থাকার পরও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন অনেকে। শিক্ষক পদের মানমর্যাদা রক্ষা এবং সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমন কর্মকা- এই সত্যই মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, জবাবদিহি না থাকা এবং অনিয়ম, অপরাধের বিচার না হওয়ার কারণেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনগুলো এমন লাগামহীন হয়ে পড়ছে। উচ্চশিক্ষা, গবেষণা, জ্ঞানচর্চাকে গৌণ করে ফেলে এসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যেন কেবল সার্টিফিকেট বিতরণ আর কর্মসংস্থানের প্রকল্পে পরিণত হচ্ছে। এই পরিস্থিতি বদলাতে হলে কুবি’র আলোচিত নিয়োগ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন নিয়ে ও শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।
রিয়াল মাদ্রিদের সংগে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন। ৪০ কোটি ইউরো চুক্তিতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আলো ইত্তিহাদে যোগ দিচ্ছেন।
ক'দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল করিম বেনজেমাকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন -এমন কথাও চাউর হয় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে।
কিন্তু সব কিছুতে জল ঢাললেন ব্যালন ডি অর জয়ী। স্পেনের গণমাধ্যম মার্কার দেয়া মার্কা লিজেন্ড এওয়ার্ড নিতে গিয়ে বললেন, 'আমি যখন রিয়ালেই আছি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেনো বলবো। ইন্টারনেটে যা প্রচার হচ্ছে তা ঠিক না। আমি এখানে ভালো আছি। শনিবার রিয়ালের ম্যাচ আছে, সব ফোকাস আমার সেই ম্যাচকে নিয়ে।'
ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে তাকে রিয়ালে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেনজেমা বলেন, '২১ বছরের আমি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই ক্লাবে খেলার মতো আর কিছু হয় না, সান্তিয়াগো বার্নাবু দারুন এক জায়গা।'
রিয়ালের সংগে চুক্তির মেয়াদ এ মাসেই শেষ হচ্ছে বেনজেমার।
পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলে নয়, এশিয়া কাপ হবে একটি দেশে। আর সেটা শ্রীলংকা। পাকিস্তান তাতে অংশ না নিতে চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে এশিয়া কাপ।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দা টেলিগ্রাফ।
বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ যিনি এসিসিরও প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছেন, শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ খেলতে রাজি আছে ভারতসহ চার পূর্ণ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে এসিসির নির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে। পাকিস্তান রাজি না হলে ৫ দল নিয়েই হবে এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ অন্য কোনো দেশে আয়োজনে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজমা শেঠির দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন জয় শাহ। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে ভারতেই খেলতে হবে, না হলে না খেলবে। এ বার্তা পিসিবি এবং আইসিসির দুই কর্মকর্তা যারা সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করেন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলছেন, তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন হামলা করে। ওই সময় গুলি ও ককটেলে অন্তত পাঁচজন আহত হন।
তবে বিদ্রোহী প্রার্থীর অভিযোগ, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা মিছিল নিয়ে তার নির্বাচনী কার্যালয়ে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অন্তত ১৫ নেতাকর্মীকে আহত করেছে।
সংঘর্ষের পর ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষুব্ধরা। পরে রাত সাড়ে ১০টায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আগামী ১২ জুন তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান ফজলুল হক, বিদ্রোহী প্রার্থী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক নুরুজ্জামান সরকার, জাতীয় পার্টির এম এ মাসুদ তালুকদার, ইসলামী আন্দোলনের রফিকুল ইসলাম মণ্ডল।
বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে তারাকান্দা উপজেলা সদর বাজারে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুজ্জামানের প্রধান নির্বাচন পরিচালনা কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা অবস্থান করছিল। রাত ৮টার দিকে তারাকান্দা উত্তর বাজার থেকে উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিদ্রোহী প্রার্থীর কার্যালয়ের কাছে যেতেই ককটেল ও গুলির শব্দ শুনতে পান স্থানীয়রা।
স্থানীরা জানান, এ সময় চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় আহতদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। তাৎক্ষণিক ভাবে আহতদের কারো নাম সংগ্রহ করা যায়নি।
এদিকে ঘটনার পরপর ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কের তারাকান্দার মধুপুর বাজার এলাকায় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে নিয়ে বিক্ষোভ করেন বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুজ্জামানের সর্মথকরা। সড়কের দুই পাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় যানবাহন আটকা পড়ে। পরে পুলিশ রাত সাড়ে ১০টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
নুরুজ্জামান সরকার বলেন, আমার নেতাকর্মীরা নির্বাচনী কার্যালয়ে অবস্থান করার সময় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে একটি মিছিল বের হয়। সেই মিছিল থেকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ককটেল, দেশীয় অস্ত্র ও নাইট শুটারগান দিয়ে আমাকে মারার জন্য হামলা করে। অন্তত ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফজলুল হক দাবি করেন, তারাকান্দা উত্তর বাজার থেকে নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করলে সেই মিছিলে অতর্কিতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ও গুলিবর্ষণ করে হামলা করে বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন। এ সময় তার অন্তত পাঁচ নেতাকর্মী আহত হন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম বলেন, তারাকান্দা থেকে গুলিবিদ্ধসহ আটজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
তারাকান্দা থানার ওসি মো. আবুল খায়ের বলেন, সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়েছে এমন তথ্য আছে আমাদের কাছে। ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে সত্য কিন্তু গুলির বিষয়টি যাচাই করতে হবে। ঘটনার পর সড়ক অবরোধ করলে পরিস্থিতি শান্ত করে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। ঘটনাস্থলসহ আশপাশ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
পলিথিন বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, বিভিন্ন ধরনের পলিথিনজাত মিনিপ্যাকের উৎপাদন, ব্যবহার ও এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সবগুলোই সমস্যা। পলিথিন উৎপাদন ও এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে বাতাসে যেমন কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়, অন্যদিকে এর ব্যবহার প্রাণিকুল ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত। প্লাস্টিকের কণা এখন মানুষের রক্তে, মায়ের দুধে, সামুদ্রিক মাছে। শুধু ব্যবহার সম্পর্কিত সমস্যা না, পলিথিনের মাধ্যমে সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও বেশি সমস্যাসংকুল। কারণ এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, কৃষির উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে, শহরের নর্দমা বন্ধ করে দিচ্ছে তা আবার রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে এবং সবশেষে শহরকে বসবাসের অনুপযোগী করে দিচ্ছে।
এতসব সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ না করা বা বন্ধ করতে না পারার সংকট কোথায় সেটা বুঝতে আমাদের সমস্যা হয়। পলিথিন বন্ধে আইন আছে, নানা ধরনের প্যাকেজিংয়ে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাও অনেক দিন হলো। অন্যদিকে বেশ কিছুদিন ধরে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু তা সহসাই হচ্ছে না। ‘সোনালি ব্যাগ’ নিয়ে অনেক ঢাকঢোল পেটানো হয়েছে কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেই সোনালি স্বপ্ন কেমন জানি ফ্যাকাশে হয়ে আসছে এতদিনে।
পলিথিনের ব্যবহার শহরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি যার অনেকটাই অভ্যাসগত কারণে। শহরের মানুষের পলিথিনের ওপর অভ্যস্ততা যেমন বেশি, তেমনি তারা ভুক্তভোগীও বেশি। রাস্তাঘাট, ড্রেন নোংরা হয়ে তো থাকেই, বাড়তি পাওনা দুর্গন্ধ, তৈরি হয় জলজট ও ডেঙ্গুর মতো রোগবালাই। বাসাবাড়িতে পলিথিনের ব্যবহার তো আছেই, পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য, বেকারিজাত পণ্যের পলিথিনের ব্যবহার ও পলিথিনের মোড়ক যত্রতত্র নিক্ষেপই এই অবস্থার জন্য দায়ী। শুধু ঢাকা নয় অন্যান্য ছোট-বড় সব শহরে প্রায় একই অবস্থা। আর এগুলোই হচ্ছে পলিথিন নির্ভর অর্থনীতির অনুষঙ্গ কিন্তু এর অনর্থনীতি হচ্ছে পলিথিনের কারণে পরিবেশদূষণ ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণভাবে পলিথিন ব্যবহারের ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্যমান নির্ধারণ করা হয় না। তবে দূষণের মাত্রা এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে পলিথিনের অর্থনীতির থেকে এর ক্ষয়ক্ষতির অর্থনীতি যে অনেক বড় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আসছে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম অনুঘটক হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। অর্থমন্ত্রী তার এবারের বাজেট (২০২৩-২৪) বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলেছেন, পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ এর উল্লেখ করেছেন কিন্তু পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে দৃশ্যমান কোনো রূপকল্প এবারের বাজেটে উল্লেখ করতে সমর্থ হননি। এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে’। গত বছরের এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘একটাই পৃথিবী’। পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের যত্রতত্র ব্যবহার আমাদের এই একমাত্র পৃথিবীকে দূষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আইন হয়েছে ২০০২-এ এবং আজ ২০২৩ সাল, এই দীর্ঘ ২১ বছরেও এই আইনের বাস্তবায়ন করা যায়নি। যদিও এবারের বাজেট বক্তৃতায় প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার এর মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাস্টিক সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। ধরেই নেওয়া যায় শুল্ক বৃদ্ধির এই হার কোনোভাবে পলিথিন নিরুৎসাহিত করার জায়গা থেকে না বরঞ্চ কিছুটা বাড়তি কর আদায়ের চিন্তা থেকে।
পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সস্তা পলিথিনের ব্যবহার টেকসই ভোগের ধারণার জন্যও কোনোভাবে সহায়ক না। বরঞ্চ এটা এমন এক ধরনের মনস্তত্ত্ব তৈরি করে যা শুধু পরিবেশকেই ধ্বংস করে। যদিও বিশ্বব্যাপী টেকসই ভোগের ধারণার ওপর ভিত্তি করে এখন ‘সার্কুলার অর্থনীতির’ ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সার্কুলার অর্থনীতি শুধু অপচয় কমায় না, প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা, দূষণরোধ, বর্জ্য থেকে তৈরি পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে। তাই পরিবেশগত ঝুঁকি, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা এবং এ সংশ্লিষ্ট অভীষ্ট ২০৩০ সমূহ অর্জনে সার্কুলার অর্থনীতি অন্যতম হাতিয়ার।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা শহরে রাস্তায় কোনো পেট বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায় না। এর কারণ হচ্ছে এখন পেট বোতলের প্রায় শতভাগ রিসাইকেল করা হয় এবং পেট বোতল সংগ্রহের জন্য অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে হলেও একটি সংগ্রহ-লাইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু পলিথিনের ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। তবে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার সার্কুলার ইকোনমির ধারণার সঙ্গেও একেবারে মানানসই না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রযুক্তিগতভাবে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন রিসাইকেল করা অসম্ভব না হলেও এটি একটি জটিল এবং অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল যে কারণে পেট বোতলের মতো রাস্তা থেকে পলিথিন সংগ্রহ করতে কাউকে দেখা যায় না উলটো রাস্তাঘাটে এখানে সেখানে পলিথিন পড়ে থাকে।
পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের অনর্থনীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখন প্রথম দরকার এর ব্যবহার বন্ধ করা, এর ব্যবহারকে অনেক বেশি দামি করে ফেলতে হবে আর এর প্রতিফলন থাকতে হবে বাজেটে। দ্বিতীয়ত, সার্কুলার অর্থনৈতিক চর্চার উৎসাহিত করার জন্য পরিকল্পনা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, পলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগের মতো উদ্যোগগুলোকে সরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ ও বেসরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। সরকার প্রতি বছর বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবেশ দিবস পালন করে কিন্তু দিবস পালন শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই হবে না এর উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে তার ওপরও নজর দিতে হবে। তা নাহলে পলিথিনের অর্থনীতির নামে শুধু অনর্থনীতিকে বাড়িয়ে তোলা হবে, আর সেটা হবে টেকসই অর্থনীতি তৈরির সম্ভাবনার অপমৃত্যু।
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে ১১ শতাংশ বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ খাতে মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১২ হাজার ৬৯৬ হাজার কোটি টাকা বেশি।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ প্রস্তাব করেন। সামাজিক সুরক্ষা খাতে প্রস্তাবিত এ বরাদ্দ মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ৫২ শতাংশ।
এ খাতে বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ১ লাখ এবং মাসিক ভাতার হার ১০০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের হিসাবে এ ভাতাভোগীর সংখ্যা ৫৭ লাখ ১ হাজার। আর মাসিক ভাতা ৫০০ টাকা।
বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারী ভাতাভোগীর সংখ্যাও ১ লাখ বাড়িয়ে ২৫ লাখ ৭৫ হাজার এবং মাসিক ভাতা ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৫৫০ টাকা করা হচ্ছে। প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা ৫ লাখ ৩৫ হাজার বাড়িয়ে ২৯ লাখ প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর মাসিক শিক্ষা উপবৃত্তি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ১৫০ টাকা বাড়িয়ে যথাক্রমে ৯০০ ও ৯৫০ টাকা এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৯৫০ টাকা করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
প্রস্তাবিত বাজেটে হিজড়া জনগোষ্ঠীর ভাতাভোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৬৫ বাড়িয়ে ৬ হাজার ৮৮০ করা হচ্ছে। এ জনগোষ্ঠীর বিশেষ ভাতাভোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ২০ বাড়িয়ে ৫ হাজার ৬২০ করা হচ্ছে।
অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রমে উপকারভোগীর সংখ্যা ১২ হাজার ৯৩০ বাড়ানো হয়েছে এবং বিশেষ ভাতাভোগীর সংখ্যা ৯ হাজার ৫০ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী ৪ হাজার ৩৮০ জন বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
সামাজিক সুরক্ষা আরও রয়েছে মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি। এতে উপকারভোগীর সংখ্যা ৫০ হাজার বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়াও অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কার্যক্রমে উপকারভোগীর ভাতার হার দৈনিক ২০০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
আগামী অর্থবছর থেকে সর্বজনীন পেনশন চালুর কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন পাস হয়েছে। আশা করছি, ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকেই বাংলাদেশে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা সম্ভব হবে। শিগগির একটি পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে এবং জনবল নিয়োগের মাধ্যমে এ কর্তৃপক্ষকে কার্যকর করা হবে।’
অর্থমন্ত্রী জানান, প্রস্তাবিত স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হলে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সুবিধাভোগী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বছরের অধিক বয়স্ক সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর পর্যন্ত চাঁদা দেওয়ার মাধ্যমে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।