
প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেতা এবং নাট্যকার আবদুল জব্বার খান বাংলা ১৩২২ সালের ৭ বৈশাখ (১৯১৬ ইং) মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে উত্তর মসদগাঁওয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম হাজি মোহাম্মদ জমশের খান। আসামের ধুবড়ী এলাকায় তার শৈশবে ও স্কুলজীবন কাটে। স্কুলে থাকতেই তিনি অভিনয় করেন ‘বেহুলা’ ও ‘সোহরাব রোস্তম’ নাটকে। ১৯৪১ সালে আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল থেকে ডিপ্লোমা পাস করে চাকরিতে যোগ দেন। দেশভাগের পর ১৯৪৯ সালে স্থায়ীভাবে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় এসে সংগঠিত করেন ‘কমলাপুর ড্রামাটিক অ্যাসোসিয়েশন’। ১৯৫৬ সালে তার রচিত নাটক ‘ডাকাত’ অবলম্বনে তৈরি করেন ‘মুখ ও মুখোশ’ নামক চলচ্চিত্র। এটাই ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আবদুল জব্বার খান মুজিবনগর সরকারের চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও পরিবেশনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জুরি বোর্ড, অনুদান কমিটি, সেন্সর বোর্ড, ফিল্ম ইনস্টিটিউট ও আর্কাইভে সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। আবদুল জব্বার খান ১৯৯৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
মহানগর ও রাজধানী ঢাকার আজ এক নবযাত্রা শুরু হলো। নাম ঢাকা’র মতোই নগর ঢাকার ঢাকা পড়া ইতিহাসের অনেক পাতা হারিয়ে গেলেও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এবং ইতিহাসবিদদের রচনায় এটা স্পষ্ট যে, ঢাকা কেবল বাংলাদেশই নয় বরং বঙ্গীয় ভূগোলের অন্যতম প্রাচীন নগরী যা এখনো জীবন্ত ও ক্রমবর্ধমান। পূর্ববাংলার বাণিজ্য ও অর্থনীতির প্রধান কেন্দ্র ঢাকা একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কেন্দ্র হওয়ায় ঢাকার ওপর বহু দুর্যোগ নেমে এসেছিল। এসব কারণে ঢাকার ধারাবাহিক ক্রমোন্নতি পাওয়া যায় না। তবে এটাও ঠিক যে, ১৮৬৪ সালে যে ঢাকায় প্রথম পৌরসভা চালু হয়েছি আর ব্রিটিশ আমলের শেষ দিকে ১৯১৭ সালে যে ঢাকা মহানগরের জন্য প্রথম নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা করা হয়েছিল, সেই তুলনায় আধুনিক মহানগর হিসেবে ঢাকা এখনো অনেক পিছিয়ে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, ঢাকা বারবারই ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং পুরো দেশ ও জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সামনে এগিয়ে গেছে। তা যেমন রাজনীতিতে ও শিক্ষা-সংস্কৃতিতে, তেমনি অর্থনীতিতেও। আশার কথা হলো, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে ঢাকা মহানগর ঘিরে যেসব পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং যেসব পরিকল্পনা এখন বাস্তবায়নাধীন তাতে আগামীতে ঢাকা মহানগর সত্যিকার অর্থেই একটা আধুনিক মেট্রোপলিটন সিটি হিসেবে গড়ে ওঠার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আজ রাজধানী ঢাকার প্রথম মেট্রোরেল চালু মেট্রোপলিটন ঢাকার অগ্রযাত্রায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের চলমান টানা তৃতীয় দফার প্রথম দফায় ২০১২ সালে এই মেট্রোরেল প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। মূল কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল লাইনের দৈর্ঘ্য ২১ কিলোমিটারের কিছু বেশি। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আজ চালু হচ্ছে উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশ। মতিঝিল পর্যন্ত ২০২৩ সালে এবং কমলাপুর পর্যন্ত ২০২৫ সালে চালু হওয়ার কথা। এই মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। ক্রমেই দৃশ্যমান হতে থাকা ঢাকা মেট্রোতে কেবল এই উত্তরা-কমলাপুর রুটই নয়, আওয়ামী লীগ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে রাজধানী ঢাকায় মোট ছয়টি মেট্রোরেলের লাইন নির্মাণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। সব মেট্রোরেল মিলে মোট দৈর্ঘ্য হবে ১২৮ কিলোমিটার। এসব মেট্রো রুটের মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে পূর্বাচল সিটি, গাজীপুর, সাভারের আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জের দ্রুততম সময়ে যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হবে। মেগাসিটি ঢাকার আগামীর চাহিদা পূরণ এবং যানজট নিরসনে সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প এসব। আশা করা যায়, ইতিমধ্যেই চালু হওয়া পদ্মা সেতু যেমন দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভাবনীয় অগ্রগতির দুয়ার খুলে দিয়েছে; তেমনি ভবিষ্যৎমুখী গণপরিবহন ব্যবস্থার শুভসূচনা হিসেবে মেট্রোরেল ঢাকা মহানগরের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে।
ঢাকার মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) জানিয়েছে মেট্রোরেলের চলাচল, স্টেশনে থামা, কোথায় কত গতিতে চলবে সেসবের পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করা হবে কেন্দ্রীয়ভাবে, সফটওয়্যারের মাধ্যমে। এই ব্যবস্থা উত্তরার দিয়াবাড়ির ডিপোতে থাকা অপারেশন কন্ট্রোল সেন্টারে (ওসিসি) থাকবে। আজ থেকে আগামী কিছুদিন মেট্রোরেল চলবে দিনে মাত্র চার ঘণ্টা করে। যদিও অন্তত মেট্রোরেলের বহরে ১২টি ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত আছে, যা দিয়ে প্রতি তিন থেকে পাঁচ মিনিট অন্তর ট্রেন ছাড়া সম্ভব। এ ছাড়া মেট্রোরেলের মাত্রাতিরিক্ত নির্মাণ ব্যয় এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতি নিয়েও সমালোচনা রয়েছে। আলোচনা-সমালোচনা চলছে মেট্রোরেলের নির্ধারিত ভাড়া সবার জন্য উপযোগী কি না তা নিয়েও। এটা মনে রাখতে হবে যে, ঢাকার ৬০-৭০ শতাংশ মানুষই গণপরিবহন ব্যবহার করেন। কিন্তু একটা সেকেলে ও অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ গণপরিবহন ব্যবস্থা থেকে মুক্তি দিয়ে মানুষকে দ্রুতগতির গণপরিবহনে নিয়ে আসার এই ক্রান্তিকালে সবদিক থেকেই মেট্রোরেলকে যাত্রীবান্ধব করে তুলতে হবে।
ঢাকা মহানগরের যানজট কমাতে ও মেট্রোরেলের পূর্ণাঙ্গ সুফল পেতে মেট্রোর পাশাপাশি এক ছাতার নিচে সমন্বিত গণপরিবহন ব্যবস্থায় আধুনিক বাস সার্ভিস চালু করা এবং মেট্রো স্টেশনগুলোর সঙ্গে তা যুক্ত করা খুবই জরুরি। এ ছাড়া মেট্রো স্টেশনের কাছে পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা এবং স্টেশনের আশপাশে পথচারীদের প্রাধান্য দিয়ে স্বচ্ছন্দে হাঁটাচলার উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা জরুরি। তবে মেট্রোরেলের কাক্সিক্ষত সুফল পেতে হলে ঢাকার চারপাশ ঘিরে যে সার্কুলার রুট ও বাইপাসের পরিকল্পনা রয়েছে সেটা বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে এবং এসব সার্কুলার রুটের সঙ্গে মেট্রোরেল রুটগুলোকে যুক্ত করতে হবে। এভাবে ঢাকা মেট্রোকে ঘিরে থাকা গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের মতো শহরগুলো সমন্বিত গণপরিবহন ব্যবস্থায় যুক্ত হয়ে গেলে ঢাকা সত্যিকার অর্থেই যুগোপযোগী ঢাকা মেট্রোতে পরিণত হতে পারবে।
মেট্রো হচ্ছে আধুনিক নগরীর বাহন। এটার প্রভাব পড়ে অনেক জায়গায়। শহরের ভূমি ব্যবহার কেমন হবে, তা মেট্রোই নির্দিষ্ট করে দেয়। বিশেষ করে মেট্রো স্টেশনের আশপাশে। সেখানে ভূমির ঘনত্ব বেড়ে যায়। মেট্রো হলো একধরনের ‘ফ্যাটাল অ্যাট্রাকশন’। মানুষজনের মধ্যে মেট্রোকেন্দ্রিক আগ্রহটা মারাত্মক রকমের বেশি। এখন যেমন অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের স্কুলের আশপাশে বাসা নেওয়া বা থাকাটা প্রাধান্য দেন; তেমনি গ্লোবাল অভিজ্ঞতায় বলে যে, মেট্রো হওয়ার পর মানুষ যখন এর নির্ভরযোগ্যতা, দ্রুতগামিতা এবং আরামদায়কতা দেখে, তখন সে মেট্রোর আশপাশে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করে। এর ফলে মেট্রোর পাশের যে ভূমি মালিকের দোতলা বাড়ি ছিল, তিনি তা ২০ তলা বানিয়ে ফেলেন। ভাড়ার চাহিদা এত বেড়ে যায় যে, এরপরও তার নিজেকে বোকা মনে হতে পারে।
মেট্রো হওয়ার কিছুদিন পরেই দেখা যায়, স্টেশনের পাশে ভূমির ব্যবহারের ঘনত্বটা বাড়তে বাড়তে ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের দিকে চলে যায়। তবে ঢাকার মতো আনপ্ল্যানড সিটিগুলোর ক্ষেত্রে এটা সমান্তরালভাবে পেরিফেরিতে আনুভূমিক ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়ে। এটা এত বড় হয়ে যায় যে, সেটায় আর নিয়ন্ত্রণ থাকে না যেটা আসলে ম্যানেজেবল না। কিন্তু স্মার্ট সিটির ডেফিনেশনই হলো সংক্ষিপ্ত জায়গার। সিঙ্গাপুর, হংকংয়ের মতো ছোট জায়গায় ছোট শহরে যেমনটা হয়েছে ইকোনমিক, ভাইব্রেন্ট অ্যাক্টিভিটি। মেট্রো স্টেশনের পাশে যতই ঊর্ধ্বমুখী যাওয়া যাক না কেন কোনো যানজট হয় না। মানুষ স্টেশনের পাশে থেকে হাঁটার দূরত্বে মেট্রো ধরবে। ভূমি ব্যবহারটা এমন হতে হয় যে, মেট্রো স্টেশনের সামনে থাকে অফিসপাড়া, বাণিজ্যিক এলাকা; এর পেছনে থাকে সার্ভিস; তার পেছেনে থাকে আবাসিক এলাকা। এরকম তিন-চারটা রিং করে কেবলাটা দেওয়া হয় মেট্রো স্টেশনমুখী। সবকিছু আধা কিলোমিটারের দূরত্বে হবে, সবাই সমান দূরত্বে। এই মেট্রো কেবলাকে বলে সাবজেন। মানুষ তখন এই মেট্রোসংশ্লিষ্ট চিন্তাভাবনা করে দিনযাপন করে। মানে, এই অফিসের উদ্দেশে বাসা থেকে কখন বের হবে, আধাঘণ্টা আগে না এক ঘণ্টা পরে রওনা করবে বা সপ্তাহের কোন বার, ভিড় হবে কিনা এসব হিসাবনিকাশ করতে হবে না। সে কেবল মেট্রো আসার ঠিক পাঁচ মিনিট আগে স্টেশনে পৌঁছাবে। এই যে সে হেঁটে স্টেশনে চলে গেল, তার গাড়ি লাগল না, বাসে উঠতে হলো না, বাস-গাড়ি লাগছে না, সরকারকেও রাস্তা বানাতে হচ্ছে না। অন্যদিকে জ¦ালানি তেলও বেঁচে গেল। মেট্রোর ফলে এভাবে একটা নগরী স্মার্ট হয়ে ওঠে। মেট্রোর উদ্দেশ্যও এটাই।
মেট্রোর ক্ষেত্রে আমরা যে গণপরিবহনের কথা বলছি, সেটা আমাদের ক্ষুদ্র বুদ্ধি দিয়ে বলছি। মেট্রোর ব্যাপকতাটা এরকম যে, শহরকে যদি আমরা স্মার্ট করতে চাই; তাহলে মেট্রোকে মেরুদ- করে শহরটাকে মেট্রো স্টেশনকেন্দ্রিক করতে হবে। এটা করা গেলে ব্যক্তিগত গাড়ি, গণপরিবহনের সংখ্যা কমে যাবে, দূষণ কমে যাবে, যানজট কমে যাবে। অন্যদিকে, এখন যাতায়াতের ক্ষেত্রে মানুষের কর্মঘণ্টার যে ১২ বিলিয়ন ডলারের মতো প্রতিবছর লস হচ্ছে, সেটা লস না হয়ে জিডিপিতে যোগ হবে। এ ছাড়া, এখন যে ভাঙাচোরা গণপরিবহনে বাদুড়ঝোলা হয়ে অফিসে যায় মানুষ, এতে তো সে যাত্রাপথেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তার শক্তি তো অফিসে পৌঁছাতে পৌঁছাতেই শেষ, কাজের শক্তি সে পাবে কোথায়! যাত্রাপথের এই ভোগান্তিতে তার প্রোডাক্টিভিটি কমে যায়। তো মেট্রোতে যারা চলবেন তারা এসব ঝঞ্ঝাট এড়িয়ে পুরো শক্তি নিয়ে সজীবতা নিয়ে অফিসের কাজে নিজের সবটুকু দিতে পারবেন। এমনকি কাজ শেষে বাসায় ফেরার পরও সজীবতা নিয়ে ফিরবেন, পরিবারকে কোয়ালিটি টাইম দিতে পারবেন। এজন্যই কিন্তু মেট্রো এত ক্যাপিটাল ইনটেন্সিভ বা ব্যয়বহুল হওয়ার পরও পৃথিবীতে এটাকেই ভিত্তি করে নতুন নতুন শহরগুলো হচ্ছে।
এসব বিবেচনায় মেট্রোকে যদি আমরা একটু সার্বিক বিবেচনায় বানাতে পারতাম, তাহলে এতক্ষণ যে কথাগুলো বললাম, সেগুলো আমাদের অর্জন হতো। কিন্তু আমরা ভূমি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে এর সমন্বয়ই করিনি। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এখানে অনুপস্থিত। রাজউক যে একটা স্পেশাল ড্যাপ দেবে, সেটা কীভাবে? এখন যে শেওড়াপাড়া, সেনপাড়া, মিরপুরে ৬ তলার বেশি আবাসিক ভবন করতে দেওয়া হয় না, মেট্রোর পর তা কি বদলাবে? অন্যান্য দেশে এই মেট্রোর আশপাশে এবং মেট্রো যেই করিডরে থাকে সেখানে পথচারীদের চলাচলের জন্য ফুটপাথগুলো চওড়া থাকে। যাতে লোকজন হাঁটাচলা করতে পারে, স্টেশনে আসতে পারে, যাত্রীরা একসঙ্গে ওঠানামা করতে পারে। স্টেশনের আশপাশে ছোট ছোট গাড়িতে, যেমন রাইড শেয়ার, রিকশা, মাইক্রো, সিএনজি ইত্যাদি যাত্রী নামাতে আসবে; এগুলো যেন মূল সড়কে না দাঁড়ায়, ট্রান্সফার ফ্যাসিলিটিজ দিয়ে মূল রাস্তার থেকে ভেতরের দিকে লোক নামায় সে ব্যবস্থা থাকতে হবে। অন্যান্য দেশের সরকার অধিগ্রহণের দিকে যায় না। এটা সেকেলে হয়ে গিয়েছে। মনে রাখতে হবে মেট্রো হওয়ার পর আশপাশের ভূমির ভ্যালু কিন্তু অনেক বেড়ে যায়। তো এখন যেটা করে সরকার ল্যান্ড ভ্যালুকে ক্যাপচার করে উইন উইন সিচুয়েশন তৈরি করে ভূমির মালিককে গিয়ে বলে ‘তুমি আছ প্লটে, চলো আমরা ব্লকে চলে যাই। তুমি জায়গাটা দাও, তোমার আড়াই কাঠার সাথে আমি আরও সাড়ে তিন কাঠা জোড়া লাগিয়ে ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করে আমরা পার্টনার হয়ে যাই।’ আমিও ইনকাম করব, তুমিও করবে এবং জনগণের জন্য হাঁটার চাহিদা, ট্রান্সফারের চাহিদা মিটিয়ে, কমার্শিয়াল অ্যাক্টিভিটি করে ইনকাম করব। কেবল মেট্রোর ভাড়া থেকে খরচটা তুলব না। স্টেশনের আশপাশের বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপনা করে নন-অপারেশনাল কিছু করে কিছু রেভিনিউ কালেকশন করব। আর মেট্রো ভাড়াকে পানির মতো সস্তা করে দেব। দেখলে মনে হবে যে ফ্রি দেওয়া হচ্ছে। দেউলিয়া হচ্ছি। কিন্তু আসলে তা না। আমি ইনকামের জন্য শুধু যাত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকিনি। অভিজ্ঞতা বলছে বাণিজ্যবিতান, বাজার থেকে শুরু করে অফিস, ব্যবস্থাপনা মেট্রো স্টেশনমুখী করলে, সেখান থেকে টাকা ইনকাম সম্ভব। আর সেই টাকা হিসাবে ধরে মেট্রো ভাড়া কমিয়ে মানুষের ওপর চাপ কমানো যায়। আর ভাড়া একদম কমিয়ে রাখলে মানুষও ব্যক্তিগত গাড়ি, অন্যান্য গণপরিবহনের চেয়ে মেট্রোতে চড়তে বেশি আগ্রহী হবে। তখন দেখা যাবে যে নিচের রাস্তা ফাঁকা পড়ে আছে। এজন্য মেট্রোতে চড়ার ভাড়া কমিয়ে সাধারণ মানুষের নাগালে আনার জন্য ভূমির সমন্বিত ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনায় সমন্বয় ঘটাতে হবে। কিন্তু আমরা এটি করিনি। তাই ব্রেকইভেনে আসতে প্রথমেই যাত্রীর থেকে আশপাশের দেশগুলোর চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করার কথা ভাবছি।
আশপাশের দেশগুলোর মধ্যে যারা ২০১৯/২০/২১ সালে মেট্রো উদ্বোধন করেছে আমরা তাদের থেকে প্রায় দুই-তিনগুণ বেশি ভাড়া ধার্য করলাম। যারা এই ভাড়া ঠিক করেছেন তারা যদি একটু আশপাশের দেশগুলোর দিকে তাকাতেন, তাহলে ভালো করতেন। কিন্তু তারা তো সেটা করবেন না। কারণ অন্যদের দিকে তাকালেই দেখতে পারবেন যে, তাদের অদক্ষতার জন্য নির্মাণের সময় এবং খরচ দুটোই বেড়ে গেছে। দেখা যাচ্ছে, অদক্ষতার জন্য বাড়তি খরচ করলাম, মানুষকে ‘উন্নয়ন যন্ত্রণা’ দিলাম, আবার যে বাড়তি খরচ হলো, সেটাও জনগণের ওপর চাপিয়ে দিলাম। ওনারা মাঝে মাঝে সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া বা কম্ফোর্টের কথা বলেন। কিন্তু তারা একবারও ভাবেন না যে, মেট্রো মানুষকে ডোর টু ডোর ফ্যাসিলিটি দেবে না। তাহলে বাসা থেকে ফিডার হিসেবে বাহন খরচ ব্যয় করে সে মেট্রো স্টেশনে আসবে। মেট্রো থেকে নামার পরও তার গন্তব্যে যেতে আবার অন্য বাহন নিতে হতে পারে। এখানে একটা ট্রিপের মধ্যে সময় এবং তিনটা ভাড়া খরচের হিসাব প্রতিদিনের জন্য ধরতে হবে। এখন স্বল্প বা নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ তাদের কাছে তো দ্রুতগতি ও কম্ফোর্টের চেয়ে প্রতিদিনের খরচের হিসাবটা তো অত্যন্ত জরুরি। এজন্য মেট্রোর ভাড়াটা কৌশলগতভাবে অনেক কমিয়ে রাখা হয়। এজন্য সাবসিডি বা ভর্ভুকি লাগে না।
পাশাপাশি নির্মাণ খরচটাও আমরা অনেক বেশি করে ফেলেছি। জাইকার লোনে পাশের দেশের কলকাতার ইস্ট-ওয়েস্টে যে মেট্রো হলো, সেটাতে ৫৭ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে পার কিলোমিটার করতে। আর আমরা প্রতি কিলোমিটারে খরচ করেছি ১৫৪ মিলিয়ন ডলার। পাকিস্তান আমাদের পরে কাজ শুরু করে প্রায় পৌনে এক বছর আগে তারা মেট্রোর উদ্বোধন করেছে। তাদের প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয়েছে ৬৭ মিলিয়ন ডলার। এসব তথ্য এটাই বলে যে, আমরা বেহিসাবিভাবে উন্নয়ন করেছি। এর দায় তো ভাড়া বাড়িয়ে মানুষের ওপর চাপানো ঠিক নয়।
এর ফলে মেট্রোর যে মূলমন্ত্র আমজনতাকে মেট্রোতে তুলে নিচের রাস্তা ফাঁকা করে আমি যানজট কমাব, সেটাই তো হবে না মনে হয়। এটা ঠিক যে, মেট্রো দিয়ে সবার ট্রিপ হবে না, যাত্রাপথ মিলবে না। কিন্তু নিচে যারা থাকবেন তারাও কিন্তু মেট্রো দ্বারা উপকৃত হবেন বলে আশা করা হয়। এখন যেহেতু স্টেশন সমন্বিত হয়নি, রাইড শেয়ারের জন্য আলাদা জায়গা নেই, ফলে বর্তমানে রাজধানীর সড়কগুলোতে বাসগুলো যেমন জটলা পাকিয়ে একটা বটলনেক তৈরি করে, তেমনি প্রতিটি মেট্রো স্টেশনে একটা করে বটলনেক তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে যা ভোগান্তি বাড়াবে। আমি একজনকে কম্ফোর্ট দিতে গিয়ে আরেকজনকে ক্ষতিগ্রস্ত করব, মেট্রোর উদ্দেশ্য তো তা নয়। আমি বলব এখানে অনেক কিছু আশপাশের দেশগুলো থেকে শিখতে হবে। পাকিস্তানের মেট্রো ড্রাইভারলেস। ওদের চেয়ে বেশি খরচে, বেশি সময়ে আমরা যে মেট্রো করলাম সেখানে ড্রাইভার তৈরি, নিয়োগ, প্রশিক্ষণের আরেক বোঝা মাথায় নিলাম।
আসলে এখানে সরকার ও কর্তৃপক্ষের ভাবনাচিন্তার ব্যাপার আছে। আগামীতে আমরা আরও ৫টি মেট্রো করব। এখানে করাটা বড় না, কত টাকায় করলাম; যেহেতু ফেয়ার বা ভাড়ার সঙ্গে রিলেটেড, এটা তো ফ্লাইওভার না যে করে হাত গুটিয়ে নেব তা সম্ভব নয়। যা করলাম তার মাশুল যদি যাত্রীদের ওপর গিয়ে পড়ে, সেটা কাম্য নয়। স্মার্টলি করতে পারলে, কম খরচে, কম সময়ে করতে পারলে তখনই আমজনতা এর সুফল পাবে। সেই জায়গায় এই মেট্রো-৬ একটি সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে। সেটা হচ্ছে যারা এটি বানালেন তারা যেন এটার মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণ করে পরের প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন।
লেখক: যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়কে চলাচল দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়ছে, অনেকে বেঁচে থাকলেও পঙ্গু হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। শুধু সাধারণ মানুষ নয় জরিপে দেখা যাচ্ছে, সড়ক দুর্ঘটনার শিকার অধিকাংশই শিশু। গ্রামাঞ্চলে অধিকাংশ শিশু হেঁটে স্কুলে যায়। গ্রামীণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতার অভাব রয়েছে। নিয়ম না জানার কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মৃত্যু উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, নিরাপদে বিদ্যালয়ে যাতায়াত ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সড়ক নিরাপত্তা সচেতনতা বাড়াতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কর্র্তৃক বাস্তবায়িত ‘সেকেন্ড রুরাল ট্রান্সপোর্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট-২ (আরটিআইপি-২) প্রকল্পভুক্ত ১৫টি জেলার ১৫টি উপজেলায় সড়ক নিরাপত্তা প্রচারাভিযান পরিচালনা করছে। এ কাজে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে ব্র্যাকের কমিউনিটি রোড সেফটি প্রোগ্রাম।
এই প্রচারাভিযানে ৩৬০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় নব্বই হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ও দুর্ঘটনাপ্রবণ সড়কের তালিকা থেকে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা হয়। পাবনা, সিরাজগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনার ২৫০ কিলোমিটার সড়কসংলগ্ন বিদ্যালয়সমূহে এ প্রচারাভিযান পরিচালিত হয়। বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এ প্রচারাভিযানটি পরিচালিত হয়।
প্রচারাভিযানের আগে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও অনুশীলন মূল্যায়নের জন্য নরসিংদী ও মেলান্দহ উপজেলার শিক্ষার্থীদের ওপর ভিত্তি জরিপ পরিচালনা করা হয়। ভিত্তি জরিপের ওপর পাওয়া ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে শিখন উপকরণগুলো তৈরি করা হয়; যার মধ্যে ছিলফ্লিপ চার্ট, কুইজ বুক।
ভিত্তি জরিপ থেকে জানা যায়, নরসিংদী সদরে শতকরা ৮৭ ভাগ শিক্ষার্থী হেঁটে স্কুলে যায়। মেলান্দহ উপজেলার শতকরা ৭২ ভাগ শিক্ষার্থী হেঁটে স্কুলে যায়। শতকরা ৪০ ভাগ শিক্ষার্থী একা স্কুলে হেঁটে যায় এবং শতকরা ৫৮ ভাগ শিক্ষার্থী তাদের বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে স্কুলে যায়। ভিত্তি জরিপে আরও জানা যায়, ছোট রাস্তার আশপাশে দুর্ঘটনা ঘটেছে প্রায় শতকরা ২৯ ভাগ (মেলান্দহে শতকরা ৩৪ ভাগ এবং নরসিংদী সদরে শতকরা ২৫ ভাগ) এবং প্রধান সড়কে শতকরা ২৫ ভাগ (মেলান্দহে শতকরা ২৬ ভাগ এবং নরসিংদী সদরে শতকরা ২৫ ভাগ)। গত ১২ মাসে প্রায় শতকরা ২১ ভাগ শিক্ষার্থীর সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
প্রচারাভিযান শেষে অনুবর্তী (ফলোআপ) স্টাডিতে, নরসিংদী সদরে প্রায় শতকরা ৬৮ ভাগ শিক্ষার্থী রাস্তার ডান দিক হাঁটা নিরাপদ মনে করেছে, যা বেজলাইন সার্ভেতে ছিল শতকরা ৩৭ ভাগ। রাতে রাস্তা চলাচল প্রসঙ্গে নরসিংদী ও মেলান্দহে প্রায় শতকরা ৩৪ ভাগ শিক্ষার্থী জানত না যে এ সময় রঙিন জামা পরা ভালো, যা এখন শতকরা ৬০ ভাগ শিক্ষার্থী জানে। ‘আগে আমি রাস্তার বাম পাশ দিয়ে হাঁটতাম। এখন আমি রাস্তার সঠিক দিক দিয়ে হাঁটা শিখেছি, আমি জেনেছি রাস্তার ডান দিকে হাঁটা নিরাপদ। আমি নিজে সচেতন হয়ে, আমার পরিবারের সবাইকে রাস্তায় নিরাপদে হাঁটা ও হাঁটার সময় সড়কের নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দিই।’ এভাবেই সড়ক সচেতনতার কথা বলছিলেন নরসিংদী সদর উপজেলার ভাটপাড়া নগেশ চন্দ্র গুপ্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারজানা হামিদ ফিজা।
অধিকাংশ শিক্ষার্থী রাস্তায় হাঁটা বা পারাপারের সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়। শিক্ষার্থীদের সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতার অভাবে এমন দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। সড়ক নিরাপত্তা প্রচারাভিযানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সড়কে নিরাপদে চলাচলের নিয়ম শেখানো হয়। শিক্ষার্থীদের সড়ক নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন করতে ৩৬০ জন প্রধান শিক্ষক ও ৭২০ জন সহকারী শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষিত শিক্ষকরা বিদ্যালয়গুলোতে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সেশন পরিচালনা করেন। এ প্রচারাভিযানে অংশ নেওয়া একজন ছাত্র বলে, ‘আমরা আগে জানতাম না কীভাবে রাস্তা পার হতে হয়। আমরা ছুটে যেতাম। আমাদের শিক্ষক আমাদের ডানে-বামে দেখে দ্রুত রাস্তা পার হতে শিখিয়েছেন। এবং আমরা জেনেছি রাতে রাস্তায় চলাচলের জন্য আমাদের লাইট বা হারিকেন ব্যবহার করতে হবে।’
এই প্রচারাভিযানটি এলজিইডি আওতাভুক্ত ১৫টি জেলার ১৫টি উপজেলার ‘উপজেলা সড়ক নিরাপত্তা কমিটি’র কার্যক্রম গতিশীল করতে স্থানীয় সদস্যদের নিয়ে একটি বড় পরিসরের কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেখানে ৬৭৫ জন সদস্য নিয়ে ৭৫টি ‘কমিউনিটি রোড সেফটি গ্রুপ’ গঠন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সড়ক নিরাপত্তা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পেতে সক্ষম হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দেওয়া ফ্লিপ চার্টের মাধ্যমে তারা ছবি দেখে খুব সহজেই সড়ক নিরাপত্তা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছে। এই প্রকল্পের আগে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী জানত না কোন পাশ দিয়ে হাঁটতে হবে কিন্তু এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পর তারা জানে কোন পাশ দিয়ে রাস্তায় হাঁটা নিরাপদ। রাস্তায় নারী যাত্রী ও পথচারীদের নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতার বিষয়ে তারা জানতে পেরেছে। টাঙ্গাইলের ছনখোলা শেখ ফজিলাতুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র মো. আবু বকর বলে, ‘আমরা সঠিকভাবে রাস্তা পার হতে শিখেছি। প্রথমে বাম-ডানে দেখতে হবে কোনো যানবাহন আসছে কি না। তারপর ডানে, বামে, ডানে তাকাতে হবে, যদি কোনো যানবাহন না থাকে তাহলে দ্রুত রাস্তা পার হতে হবে।’
শিক্ষার্থীদের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা ব্যাপক পরিসরে ছড়িয়ে দিতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে কুইজ বই দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা কুইজ বইয়ের মাধ্যমে তাদের অর্জিত জ্ঞান পুনরায় ঝালাই করতে পারবে। এ ছাড়া তারা তাদের পরিবারকেও সচেতন করতে পারছে। এই সড়ক নিরাপত্তা অভিযানের ফল মূল্যায়নের জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। আমরা আশাবাদী সড়ক নিরাপত্তায় এ প্রচারাভিযান শিক্ষার্থীদের নিরাপদে পথ চলতে সহায়তা করবে, যা তাদের দুর্ঘটনার হাত থেকে নিশ্চিত সুরক্ষা দেবে।
লেখক : প্রকল্প পরিচালক আরটিআইপি-টু (গ্রামীণ পরিবহন উন্নয়ন প্রকল্প)
আজ উদ্বোধন হচ্ছে দেশের প্রথম মেট্রোরেল। আমাদের আর্থিক সক্ষমতা, পরিবেশবান্ধব পরিবহনব্যবস্থা ও টেকসই উন্নয়নের উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে যাচ্ছে আধুনিক এ যোগাযোগ অবকাঠামো। ঢাকা শহরের প্রধান সমস্যা যানজট কমিয়ে নাগরিক জীবনকে গতিশীল করাই যার প্রধান উদ্দেশ্য। ২৫ জুন ২০২২ তারিখে বাংলাদেশের দক্ষিণের দুয়ার উন্মুক্ত করা পদ্মা সেতু যেমন ২১ জেলার সঙ্গে অবিশ্বাস্যভাবে যোগাযোগব্যবস্থাকে পাল্টে দিয়েছে, জীবনে এনেছে গতি, তেমনি আশা করা যাচ্ছে পদ্মা সেতুর মতোই ঢাকাকে নতুন এক অভিজ্ঞতার সুন্দর সকাল উপহার দেবে মেট্রোরেল।
মেট্রোরেল সার্ভিস বর্তমান সময়ে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে চলাচলের প্রধান বাহন হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। ১৮৬৩ সালে লন্ডনে প্রথম চালু হয় ভূগর্ভস্থ মেট্রোরেল। পৃথিবীর ইতিহাসে বিস্ময় জাগানিয়া বিখ্যাত সেই মেট্রোরেল আজও নিরবচ্ছিন্নভাবে লন্ডনবাসীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। চালু হওয়ার প্রথম দিনেই লন্ডনে ৩০ হাজার যাত্রী পরিবহন করে নাটকীয়ভাবে লন্ডনের মানুষের জীবনকে পাল্টে দিয়েছিল মেট্রোরেল। গত ২০১৯ সালে লন্ডনে মেট্রোরেল ব্যবহার করেছেন ১.১৭ বিলিয়ন যাত্রী। ১১০ বছর আগের নিউ ইয়র্ক মেট্রো ২০২০ সালে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টায় ব্যবহার করেছে ১.৭১ বিলিয়ন যাত্রী। শুধু ইউরোপ আমেরিকায় নয় এশিয়ার জাপানে ১৯২৭ সালে চালু হওয়া মেট্রোরেল এখন সেখানকার প্রধান বাহন। মেগাসিটি টোকিওতে প্রতিদিন ৮.৭ মিলিয়ন লোক মেট্রোরেল ব্যবহার করে। বর্তমান বিশে^র বড় শহরগুলোর মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে মেট্রোরেল।
রাজধানী ঢাকা বিশ্বের অন্যতম জনবহুল মেগাসিটি। ঘনবসতির দিক থেকে ২০২২ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩৯,৩৫৩ জন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩০,৩৫৩ জন লোক বসবাস করে। জনসংখ্যার ঘনত্বের দিক দিয়ে ঢাকা পৃথিবীর জনবহুলতম শহর। যেখানে জীবনমান উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় অসহনীয় যানজট। আশা করা যায় এ যানজটের অভিশাপ থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি দিতে পারবে কাক্সিক্ষত মেট্রোরেল।
২০৩০ সালের মধ্যে ছয়টি মেট্রোরেল প্রজেক্ট চালু করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। ১২৮.৭ কিলোমিটার দীর্ঘ উড়াল এবং পাতাল মেট্রোরেল নির্মাণ করে ঢাকাকে যানজটমুক্ত করতে চায় সরকার। সব কটি লাইনের কাজ (সমীক্ষাসহ) চলমান থাকলেও বেশি অগ্রগতি হয়েছে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন লাভ করা ২০.১ কিলোমিটার দীর্ঘ উত্তরা থেকে মতিঝিল-কমলাপুর মেট্রোরেল প্রকল্প। এই মেগা প্রকল্পটি জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ প্রচেষ্টায় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হলে উভয় দিকে থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে। ১৬টি স্টেশনে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের জন্য ১৩.৪৭ মেগাওয়াট নেওয়া হবে জাতীয় গ্রিড থেকে, যার জন্য স্থাপন করা হয়েছে ডেডিকেটেড বিদ্যুৎকেন্দ্র।
উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটি করপোরেশন মিলে ঢাকার জনসংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ ৭৮ হাজার ৮৮২ জন। এ জনসংখ্যার বিপরীতে প্রয়োজনীয় রাস্তাঘাট বা যানবাহন খুবই অপ্রতুল। ২০১৭ সালে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখানো হয় যানজটের কারণে ঢাকা নগরীতে প্রতিদিন গড়ে ৩.২ মিলিয়ন কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, অর্থমূল্যে যার পরিমাণ প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০০৭ সালে ঢাকা শহরে গাড়ির গড় গতি যেখানে ছিল ২১ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা, সেখানে ২০১৭ সালে সে গতি কমে দাঁড়িয়েছে ৬ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। বিশ্বব্যাংক আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, ২০৩৫ সালে ঢাকার গাড়ির গড় গতি ৪ কিলোমিটার ঘণ্টায় নামতে পারে, যা হেঁটে চলা মানুষের গতির থেকেও কম। ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় গণপরিবহনের জন্য রাস্তা ক্রমেই সংকুচিত হয়ে পড়েছে। তথ্য মতে, ব্যক্তিগত গাড়ির দখলে ঢাকার সড়কের ৭৬.৩৫ শতাংশ আর ঢাকায় সড়ক আছে ভূমির ৭-৮ শতাংশ। রাজধানী ঢাকা আমাদের জিডিপির প্রায় ৪০ শতাংশ জোগান দেয়, কেননা ঢাকাতেই সব বড় শিল্প-কারখানা ও অফিস। যানজট না থাকলে এ অবদান আরও অনেক বেশি হতে পারত। উত্তরা থেকে মতিঝিল যাতায়াত করতে যেখানে বর্তমানে সময় লাগে ২-৩ ঘণ্টা, সেখানে মেট্রোরেল চালু হলে উত্তরা থেকে কমলাপুর যেতে সময় লাগবে মাত্র ৩৮ মিনিট। যানজটে শুধু আর্থিক ক্ষতিই হচ্ছে না, মানসিক বিভিন্ন অবসাদের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি ঢাকাবাসী ভুগছে উচ্চ রক্তচাপ, বক্ষব্যাধিসহ আরও নানান স্বাস্থ্য সমস্যায়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হলে ২০৩০ সালে মেট্রোরেলের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ৫০ লাখ মানুষকে পরিবহনসেবা দেওয়া যাবে, যা ঢাকার যানজট এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অসামান্য অবদান রাখবে। সরকারের নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুসারে ঢাকায় মেট্রোরেলের সবগুলো রুট বাস্তবায়িত হলে তীব্র যানজটের শহর ঢাকা হয়ে উঠবে গতিশীল এক চঞ্চল নগরী। আমাদের গণপরিবহনে গর্ভবতী মহিলা, বয়স্ক মানুষ, নারী ও প্রতিবন্ধীরা অপর্যাপ্ত ব্যবস্থার জন্য প্রধানত সমস্যায় পড়ে। মেট্রোরেলে এ বিশেষ মানুষগুলোর জন্য থাকছে বিশেষ সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা। সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার গতি নিয়ে মেট্রোরেল মাত্র ৩৮ মিনিটে যাত্রীদের পৌঁছে দেবে ঢাকার একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। মেট্রোরেলের উন্নতসেবার ফলে মানুষ ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারে অনুৎসাহিত হবে, মেট্রোরেল হয়ে উঠবে প্রধান গণপরিবহন।
বর্তমানে বিশ্বের ৫৬টি দেশের ১৭৮টি শহরে ১৮০টি পাতালরেল ব্যবস্থা চালু রয়েছে। ঢাকায় চালু হলে তা হবে ৫৭তম দেশ। কিন্তু অচিরেই ব্যবহারকরীর সংখ্যার দিক থেকে ঢাকা উঠে আসবে প্রথম সারিতে। এখন যানজটের প্রতি মিনিটেই কোটি কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। আমাদের দেশে বিদেশি বিনিয়োগ তুলনামূলক কম আকৃষ্ট হওয়ার অন্যতম কারণ অসহনীয় যানজট। রিসার্চ গেটের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে ঢাকায় যানজটের কারণে ৬.৫ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে এবং ২০১৮ সালে এ ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৫ বিলিয়ন ডলার, যা জাতীয় অর্থনীতিতে নিম্নমুখী প্রভাব ফেলছে।
মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। অপারেটিং রুম, টিকিট কাউন্টার, ক্যাফেটেরিয়া, পরিচ্ছন্নতা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনাসহ পুরো সিস্টেম পরিচালনা করতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক লোকের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দক্ষতাসম্পন্ন লোকবল বৃদ্ধি পাবে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ মেট্রোরেল প্রকল্পে প্রায় ১২,০০০ জন প্রকৌশলীর কর্মসংস্থান হবে। আমাদের জনশক্তি নতুন এক প্রযুক্তি সম্পর্কে অবগত হবে। এতে আমাদের ভবিষ্যতে এ ধরনের আরও নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ সাশ্রয় করবে। প্রকল্প-সংশ্লিষ্টদের মতে, মেট্রোরেল আমাদের প্রতি বছর ৩৫০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করবে। এ ধরনের বড় প্রজেক্ট চালানোর জন্য চাই দক্ষ কর্মিবাহিনী। তাই আমাদের দেশের লোককে কারিগরি বিষয়গুলোতে দক্ষ করে তুলতে হবে। আশার কথা হচ্ছে, মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রথম দিকে ৭৫ শতাংশ বিদেশি লোক কাজ করলেও বর্তমানে ৮০ শতাংশই বাংলাদেশি কাজ করছে।
মেট্রোরেল রাজধানীর পরিবেশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ঢাকার বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ যানবাহনের বিষাক্ত ধোঁয়া ও ধুলাবালু। শুধু বায়ুদূষণজনিত কারণে প্রতি বছর দেশে কয়েক হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। এ প্রেক্ষাপটে বিদ্যুৎচালিত মেট্রোরেল আমাদের পরিবেশকে খুব কম দূষিত করবে। রাজধানী ঢাকাকে সবার জন্য বসবাসের উপযোগী করতে যথাযথ, সুদূরপ্রসারী ও সমন্বিত মহাপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের অন্যতম পদক্ষেপ মেট্রোরেল ব্যবস্থা। বিপুলসংখ্যক যাত্রী পরিবহনে সক্ষমতার জন্য মেট্রো হয়ে উঠবে ঢাকার প্রধান বাহন। ফলে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা হ্রাস পাবে, যা পরিবেশের জন্য উপকার হবে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় ধারাবাহিকভাবে ছয়টি রুটে ১২৮.৭ কিলোমিটারে (৬১ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ডসহ) ১০৪টি স্টেশন নির্মাণের যে বৃহৎ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার তাতে ঢাকা অনেকটাই যানজটমুক্ত হবে। মেট্রোরেল প্রাথমিকভাবে সর্বোচ্চ ৬০,০০০ যাত্রী পরিবহন করতে সক্ষম হলেও ঢাকায় স্কুল, কলেজ ও অফিস চলাকালীন যাত্রীর সংখ্যা অনেক বেশি থাকবে। মেট্রোরেলের যে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে তা দিয়ে বৃহৎ এ প্রকল্পে লাভ করার চিন্তা সরকারের আপাতত নেই। তার পরও নির্ধারিত ভাড়া শ্রমজীবী মানুষ, সাধারণ ও ভাসমান শ্রমিক, নিম্ন আয়ের মানুষের আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হচ্ছে কি না তা বিশ্লেষণের সুযোগ রয়েছে। দীর্ঘদিনের অপরিকল্পিত ঢাকায় মেট্রো নির্মাণের পরও ফল পাওয়া চ্যালেঞ্জিং। যাত্রীদের মেট্রোরেল থেকে নেমে নিকটবর্তী বা দূরবর্তী স্থানে যেতে সাপোর্টিভ পরিবহনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াতে হবে। তা ছাড়া সংযোগ রাস্তাগুলোকে যথাসম্ভব চলাচল উপযোগী এবং হকারমুক্ত রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে।
২০৪১ সাল নাগাদ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে যোগাযোগব্যবস্থার আধুনিকায়ন ছাড়া সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। গত দেড় দশকে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। কৃষি, শিল্প, সেবা খাতে বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বাংলাদেশ। আর এসবের কেন্দ্রবিন্দু তিলোত্তমা মহানগরী ঢাকা, যার জন্য টেকসই, পরিবেশ ও যাত্রীবান্ধব এবং সময় সাশ্রয়ী গণপরিবহনব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক: সামরিক বাহিনীতে কর্মরত
নওগাঁ শহর থেকে আটকের পর র্যাবের হেফাজতে সুলতানা জেসমিন (৪৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুক্তির মোড় থেকে তাকে আটক করা হয়। এরপর গত শুক্রবার সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
সুলতানা জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন। র্যাবের দাবি, প্রতারণার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুধবার সুলতানা জেসমিনকে আটক করা হয়। আটকের পর অসুস্থ হয়ে তিনি মারা গেছেন। তবে স্বজনদের অভিযোগ, হেফাজতে নির্যাতনের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া সুলতানার মামা এবং নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক মন্টু দেশ রূপান্তরকে বলেন, তার ভাগনি বুধবার সকালে অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুক্তির মোড় থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে র্যাবের লোকজন সুলতানাকে ধরে নিয়ে গেছে বলে মোবাইল ফোনে কল করে বিভিন্নজন তাকে জানান। একপর্যায়ে দুপুর ১২টার দিকে তার ভাগনি সুলতানা জেসমিনের ছেলে সাহেদ হোসেন সৈকত মোবাইল ফোনে কল করে জানান, তার মাকে র্যাব সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছে। এরপর মন্টু তার ভাগনির সন্ধানে থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। কিন্তু সন্ধান পাননি। পরে বেলা ২টার দিকে সুলতানা জেসমিনের ছেলে তাকে আবার মোবাইল ফোনে কল করে জানান তার মা নওগাঁ সদর হাসপাতালে আছেন। এরপর হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারেন তার ভাগনি সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কিন্তু ভেতরে গিয়ে ভাগনির সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করলে র্যাব সদস্যরা বাধা দেন বলে অভিযোগ করেন মন্টু। তবে জেসমিনকে র্যাবের কোন ক্যাম্প নেওয়া হয়েছিল তারা তার কিছুই জানতেন না। এর কিছুক্ষণ পর জেসমিনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে তার মৃত্যু হয়। যদিও লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে গতকাল শনিবার। গতকাল বাদ আসর তার মরদেহ দাফন করা হয়েছে।
সুলতানা জেসমিনের ছেলে সাহেদ হোসেন সৈকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। বিভিন্নভাবে জানতে পারেন তার মাকে র্যাবের সদস্যরা তুলে নিয়ে গেছে। এর পরই তার সন্ধানের চেষ্টা করা হয়। একপর্যায়ে জানতে পারেন তার মা নওগাঁ হাসপাতালে রয়েছেন। সেখানে তার মায়ের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল।
সৈকতের দাবি, তার মা চক্রান্তের শিকার হয়েছেন। র্যাবের হেফাজতে থাকা অবস্থায় তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। যার কারণে মৃত্যু হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাব-৫-এর উপ-অধিনায়ক এএসপি মাসুদ রানা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে সুলতানা জেসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুক্তির মোড় এলাকা থেকে র্যাবের হেফাজতে নেওয়া হয়। কিন্তু আটকের পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে দ্রুত তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর চিকিৎসকরা তাকে রাজশাহীতে নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু রাজশাহীতে নেওয়ার পর তার অবস্থা আরও খারাপ হয়। শুক্রবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্ট্রোক করে তিনি মারা যান।’
সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল দুপুরে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয় বলেও জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।
নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মৌমিতা জলিল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বুধবার দুপুরে সুলতানা জেসমিন নামে এক রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন র্যাবের সদস্যরা। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রোগীর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। হাসপাতালেই সুলতানা জেসমিনের পরিবারের লোকজন র্যাবের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার ওই রোগী মারা যান বলে জানতে পেরেছি।’
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, তারা যতটুকু জানতে পেরেছেন, র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদের সময় সুলতানা জেসমিন পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান। তারপর তাকে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। সিটি স্ক্যান করে তারা জানতে পেরেছেন, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে ওই রোগীর মৃত্যু হয়। তার মাথায় ছোট্ট একটি লাল দাগ ছিল। শরীরে অন্য কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন জানান, ময়নাতদন্ত শেষে সুলতানা জেসমিনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে না আসা পর্যন্ত তার মৃত্যুর কারণ বলা সম্ভব নয়।
মেধাতালিকা বাদ দিয়ে নতুন নিয়মে পদোন্নতি দিতে যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। যার ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পদোন্নতিযোগ্য সোনালী ব্যাংকের শত শত কর্মী। এত দিন শূন্য পদের ভিত্তিতে মেধাতালিকা থেকে দুজন ও জ্যেষ্ঠতা (সিনিয়রিটি) তালিকা থেকে একজনকে পদোন্নতি দেওয়া হতো। কিন্তু হঠাৎ করেই নতুন নিয়ম চালু হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সবচেয়ে বড় ব্যাংকটিতে। পদোন্নতিতে মৌখিক পরীক্ষার জন্য শুধু জ্যেষ্ঠ তালিকার কর্মকর্তাদের বিবেচনা করা হয়েছে। বিশেষ কিছু ব্যক্তিকে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য মেধাবী ও কর্মঠ অফিসারদের বঞ্চিত করার পাঁয়তারা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সোনালী ব্যাংকের কর্মীরা।
ইতিমধ্যে সোনালী ব্যাংকের অফিসার থেকে জিএম পদ পর্যন্ত পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যেখানে লঙ্ঘিত হচ্ছে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কর্মচারী পদোন্নতি নীতিমালা-২০২২। অনুসরণ করা হচ্ছে পর্ষদের ৮১০তম সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত। এই অনিয়ম বন্ধ ও আগের নিয়মে পদোন্নতির প্রক্রিয়া চালু করার জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর আবেদন জানিয়েছেন সোনালী ব্যাংকের শতাধিক কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সোনালী ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতি দিলে বেশির ভাগ মেধাবী কর্মকর্তা বঞ্চিত হবেন। এতে কর্মকর্তারা কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। এই নীতি বাদ দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই এমডির কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি, তিনি বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, পর্ষদের ৮১০তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘অফিসার/সমমান থেকে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার/সমমান পদ পর্যন্ত পদোন্নতির ক্ষেত্রে সম্ভাব্য শূন্য পদের চেয়ে পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা তিন গুণের বেশি হলে জ্যেষ্ঠতা তালিকা থেকে প্রতিটি সম্ভাব্য শূন্য পদের বিপরীতে সর্বোচ্চ তিনজন (১:৩) প্রার্থী নির্বাচনী সাক্ষাৎকার/বাছাইয়ের জন্য বিবেচ্য হবেন,’ যা সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কর্মচারী পদোন্নতি নীতিমালা-২০২২-এর সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। কারণ এর ফলে মেধাতালিকার কর্মীরা পদোন্নতি তো দূরের কথা, সাক্ষাৎকারেও অংশ নিতে পারবেন না।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা, ২০২২’-এ পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ বিষয়ের ৮(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘এই প্রবিধানমালা মোতাবেক এবং তফসিলে বর্ণিত শর্তাবলী পরিপালন সাপেক্ষে, কোনো কর্মচারীকে পরবর্তী উচ্চতর পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে মেধা, কর্মদক্ষতা ও জ্যেষ্ঠতাকে প্রাধান্য দেওয়া হইবে। কিন্তু কেবল জ্যেষ্ঠতার কারণে কোনো কর্মচারী অধিকার হিসেবে তাহার পদোন্নতি বা পদায়ন দাবি করিতে পারিবেন না।’
এদিকে, ২০২৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকারদের পদোন্নতি বিষয়ক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ‘ব্যাংকের চাকরিতে সিনিয়র অফিসার (জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা) অথবা সমতুল্য পদের পরবর্তী সব পদে পদোন্নতি পেতে হলে ব্যাংকিং ডিপ্লোমার দুই পর্বেই পাস করতে হবে,’ অর্থাৎ সোনালী ব্যাংকের ১:৩ নীতিমালা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।
এ বছর সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার থেকে অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার, অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার থেকে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার থেকে জেনারেল ম্যানেজার পদে পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ৭৫০, ৯১ ও ১৩ জন। এর বিপরীতে সম্ভাব্য পদোন্নতিযোগ্য পদের সংখ্যা যথাক্রমে ৬০, ১৯ ও ৩ জন। কিন্তু জ্যেষ্ঠ বিবেচনায় মৌখিক পরীক্ষার জন্য মনোনীত হবেন ১৮০, ৫৭ ও ৬ জন। এতে বঞ্চিত হবে মেধাতালিকা। সুতরাং আলোচ্য পদোন্নতি নীতিমালা স্ববিরোধী ও চাকরি প্রবিধানমালার সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক এবং যেখানে সততা ও ন্যায়ের প্রতিফলন নেই।
সোনালী ব্যাংকের একাধিক সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরের তথ্য যাচাই-বাছাই ও গভীর অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে যেখানে দ্রুত পদোন্নতি হয়ে যায়, সেখানে সোনালী ব্যাংকে ব্যক্তি/গোষ্ঠী স্বার্থে প্রতিবার নতুন নতুন ধ্যান-ধারণা আমদানি করে অনাকাক্সিক্ষত সময়ক্ষেপণ করে একেবারে বছরের শেষে এসে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এভাবে সোনালী ব্যাংকের দক্ষ ও মেধাবী কমকর্তারা এখন সব জায়গায় ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়ছেন। এমন অবস্থায় সোনালী ব্যাংকে একটি স্থায়ী নীতিমালা করা প্রয়োজন। যেখানে কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থ প্রাধান্য পাবে না; বরং তা অপরিহার্য পছন্দরূপে সর্বমহলে প্রশংসিত ও গ্রহণযোগ্য হবে। যত দিন না এরূপ নীতিমালা করা সম্ভব, তত দিন কোনো বিতর্কিত নীতিমালা চাপিয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত বলে মনে করছেন সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা। কারণ মূল্যায়নের ক্ষেত্রে যদি সততা, দক্ষতা ও মেধার পরিবর্তে কেবল জ্যেষ্ঠতাকেই বেছে নেওয়া হয়, তাহলে মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তারা চ্যালেঞ্জ গ্রহণে আগ্রহ ও উৎসাহ-উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলবেন। চ্যালেঞ্জিং পদগুলো সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তার অভাবে দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী আফজাল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোনালী ব্যাংকে যেই নীতিমালা রয়েছে, এটি অন্যান্য জায়গায়ও আছে; বিশেষ করে কৃষি ব্যাংক ও হাউজ বিল্ডিংয়েও একই নীতি মেনে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এখানে একজনের বিপরীতে তিনজনকে ডাকা হচ্ছে। তা ছাড়া এটা বোর্ডের সিদ্ধান্ত।
মেধাবীরা বঞ্চিত হবেন কি না এমন প্রশ্নে আফজাল করিম বলেন, ‘পদোন্নতির ক্ষেত্রে ১০০ নম্বরের মধ্যে ৮৫ হচ্ছে তার অর্জন। বাকি ১৫ নম্বর ভাইভা থেকে পাবেন। এ ক্ষেত্রে তেমন কোনো বৈষম্য হবে বলে মনে করি না। গত বছর অন্যভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। সে সময়ও কর্মকর্তাদের অনেকেই নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। এটা থাকবেই।’
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ভবনেই গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র (ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট) নেই। বহুতল ভবন নির্মাণের আগে এবং পরে তা বসতের বা ব্যবহারের উপযোগী কি না, তার জন্য দুই প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন বা ছাড়পত্র লাগে।
কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনগুলোর জন্য দুই প্রতিষ্ঠানের কোনোটির ছাড়পত্র নেই। অনুমোদন ছাড়াই চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক ও আবাসিক কার্যক্রম।
অনুমোদন তথা ছাড়পত্র না নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও ওয়ার্কস দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান।
অনুমোদন না নিয়ে বিধি অমান্য করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ময়মনসিংহ বিভাগের উপপরিচালক মো. মতিয়ার রহমান।
দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনা ঘটলে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, সে বিবেচনা থেকেই ভবন নির্মাণ করা হয়। সব ঠিক থাকলেই ছাড়পত্র (ক্লিয়ারেন্স সনদ) দেওয়া হয়। সনদের বাইরে গিয়ে ভবন নির্মাণ এবং ব্যবহারের সুযোগ নেই। অভিযোগ এলে আমরা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সুরাহা করার চেষ্টা করব। তবে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের কাছ থেকে ক্লিয়ারেন্স নেয়নি।’
ময়মনসিংহ গণপূর্ত দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্কস ও প্ল্যানিং কমিটির সদস্য এ কে এম কামরুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। তারা তাদের মতো সিদ্ধান্ত নেয়। তবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ক্লিয়ারেন্স নেওয়া দরকার। না নিলে আইন অমান্য করা হয়। আমি উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থাগ্রহণের লক্ষ্যে কাজ করব।’
একদিকে ভবনের অনুমোদন নেই, অন্যদিকে অগ্নিনির্বাপণের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব। দশতলা বঙ্গমাতা ছাত্রী হলে অগ্নিনির্বাপণের জন্য ৬২টি ছোট সিলিন্ডার রয়েছে। এসবের কোনোটিরই মেয়াদ তথা কার্যকারিতা নেই। এ কথা নিশ্চিত করেছেন হলটির প্রাধ্যক্ষ নুসরাত শারমিন তানিয়া।
অগ্নিনির্বাপণের প্রস্তুতি কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা চিন্তিত। বারবার বলেও সমাধান পাইনি। আমাদের কিছু সিলিন্ডার থাকলেও সেগুলোর মেয়াদ নেই। তা ছাড়া এসব কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, সে বিষয়ে কাউকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। মোটকথা, এ ব্যাপারে প্রশিক্ষিত লোকবল নেই। কিছুদিন আগে হলে আগুন লাগার কথা ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্কে হুড়োহুড়ি করে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়। আমরা নিদানের ব্যবস্থার জন্য প্রকৌশল দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেই যাচ্ছি।’
ফায়ার সার্ভিস ও গণপূর্তের ছাড়পত্রহীন ভবনে হলের কার্যক্রম চলছে কি না জানতে চাইলে নুসরাত শারমিন বলেন, ‘আমাদের ডিপিডি ও প্রকৌশল দপ্তর বলেছে, সব অনুমোদন আছে। তবে তারা আমাদের কোনো ডকুমেন্ট দেয়নি।’
একই চিত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দশতলা বঙ্গবন্ধু হল, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবন, কলা ও বিজ্ঞান ভবনসহ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ডরমিটোরি, কোয়ার্টার ও প্রশাসনিক ভবনের। এমনকি নির্মাণাধীন কোনো ভবনের নকশার অনুমোদন নেই।’
আগুন নেভানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫৪টি সিলিন্ডার থাকলেও অধিকাংশের মেয়াদ নেই; এসব ব্যবহারের নিয়মও কেউ জানে না। অগ্নিনির্বাপণের কোনো প্রশিক্ষণের আয়োজনও নেই। ১৫৪টি সিলিন্ডারের মধ্যে বঙ্গমাতা হলে ৬২টি, বঙ্গবন্ধু হলে ২২টি, সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে ৩০টি করে এবং প্রশাসনিক ভবনে ১০টি সিলিন্ডার রয়েছে বলে জানা গেলেও জায়গামতো সেগুলো দৃশ্যমান নয়।
চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি বঙ্গমাতা হলে আগুন লাগার গুজবে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে হাসপাতালেও নিতে হয়েছিল। এরপর প্রশাসন নড়েচড়ে বসলেও অগ্নিনির্বাপণ বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায়নি।
৫৭ একরের বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কোনো পানির উৎস নেই। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে পানির ব্যবস্থা কীভাবে হবে তা নিয়ে শঙ্কিত ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। এত বড় ভবনের আগুন নেভানো তাদের রিজার্ভের পানি দিয়ে সম্ভব নয়।
আগুন নেভানোর সরঞ্জামের ঘাটতি ও ছাড়পত্র না থাকলেও তাদের প্রস্তুতি রয়েছে বলে মনে করেন পরিকল্পনা ও ওয়ার্কস দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান ও ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব হোসেন। হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দুটি আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার রয়েছে। আগুন লাগলে সেখান থেকে পানি সরবরাহ করা যাবে। আর জলাশয় নির্মাণের কাজ চলছে। ভবিষ্যতে ছাড়পত্রের বিষয়টি দেখা যাবে। আগুন লাগলে সৃষ্টিকর্তা না চাইলে আমাদের প্রস্তুতি দিয়েও লাভ হবে না। যা হয়ে গেছে, তা তো হয়েই গেছে।’
ভবনের গণপূর্ত ও ফায়ার সার্ভিসের সনদ না থাকার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার ধারণা নেই। সংশ্লিষ্ট দপ্তর বলতে পারবে। যদি সেসবের প্রয়োজন থাকে আর আমাদের সেসব না থেকে থাকে, তাহলে আমরা প্রশাসনিকভাবে সেসব নিয়ে কাজ করব। এসব বিষয়ে দ্রুতই চিঠি দেওয়া হবে।’
বঙ্গমাতা হলের শিক্ষার্থী ফাইজাহ ওমর তূর্ণা বলেন, ‘আমরা আতঙ্কে থাকি। সারা দেশে যেভাবে আগুন লাগছে, চিন্তা হয়। আমাদের এত বড় হল, তার আগুন নেভানোর কোনো ব্যবস্থা নেই; যা আছে তা ব্যবহার করতেও জানি না আমরা। আগুন লাগলে ভয়েই মরে যাব।’
বঙ্গবন্ধু হলের শিক্ষার্থী ফাহমিদ অর্ক বলেন, ‘আগুন নেভানোর যথেষ্ট ব্যবস্থা নেই। ব্যবস্থা না নিলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিক্ষার্থীরা। সত্বর সুরাহার ব্যবস্থা করা উচিত।’
অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার দুর্দশা নিয়ে চিন্তিত শিক্ষক সমিতির সভাপতি রিয়াদ হাসান। তিনি বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে কাজ শুরু করার উদ্যোগ নেব।’
মোবাইল টেলিফোনে, এক ধরনের বিপ্লব ঘটেছে। বছর ২৫ আগে, বিষয়টি সাধারণের কল্পনার বাইরে ছিল। বর্তমানে এমন কোনো পেশার লোক নেই, যাদের হাতে মোবাইল ফোন দেখা যায় না। এমনকি, যারা নিত্য ভিক্ষা তনু রক্ষায় ব্যস্ত- সেই ভিক্ষুক শ্রেণির অধিকাংশের হাতেও মোবাইল। কিন্তু ৯০ দশকের শেষের দিকে, এই মোবাইল ফোন ব্যবহার করা মোটেও সহজ ছিল না।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা নিয়ে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। দপ্তরটির কতিপয় কর্মকর্তা, কানুনগো, সার্ভেয়ার এবং অফিস সহকারীদের কমিশন বাণিজ্য, দালালদের যোগসাজশে ক্ষতিপূরণের টাকা আত্মসাৎসহ নানান অভিযোগে প্রায় সময় খবরের শিরোনাম হয়। সম্প্রতি এই দপ্তরের যাবতীয় কর্মকান্ডের ওপর অনুসন্ধান চালিয়েছে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা। ভূমি অধিগ্রহণ শাখা ঘিরে শক্তিশালী একটি চক্রের সন্ধানও পেয়েছে সংস্থাগুলো।
ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতির দৈত্য
দেশের পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) অন্যতম। অনেকটা নীরবেই দলটি তার ৭৫ বছর পূর্তি উদযাপন করেছে ৬ মার্চ। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৮ সালের এই দিনে পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই তারিখকেই সিপিবি তার প্রতিষ্ঠার দিন হিসেবে উদযাপন করে।
আল্লাহতায়ালার কাছে বান্দার সব আমল এক রকম আর রোজার হিসাব ভিন্ন রকম। আল্লাহর কাছে বান্দা আমলের প্রতিদান লাভ করবে। তবে রোজার প্রতিদান আল্লাহ নিজে বান্দাকে দান করবেন। আল্লাহ কেমন প্রতিদান দেবেন তা তিনিই ভালো জানেন। আমরা শুধু বুঝি, যে প্রতিদান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ বিশেষভাবে দেবেন, তা তার শান মোতাবেক দেবেন।
রোজার প্রতিদান আল্লাহ নিজে দেবেন
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ভবনেই গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র (ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট) নেই। বহুতল ভবন নির্মাণের আগে এবং পরে তা বসতের বা ব্যবহারের উপযোগী কি না, তার জন্য দুই প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন বা ছাড়পত্র লাগে।
তখনো দিনের আলো ফোটেনি পুরোপুরি, পুব আকাশ সবে একটু একটু করে পরিষ্কার হতে শুরু করেছে। তখন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উপস্থিত হতে শুরু করলেন নীলরঙের টি-শার্ট পরা কিছু মানুষ। প্রথমে একজন-দুজন। তারপর পাঁচজন-দশজনের ছোট ছোট দলে। সংখ্যা দাঁড়াল ১২৭। এরা একটি বিশেষ উদ্যোগে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসেছেন। এরা এসেছেন ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরপরাধ বাঙালির ওপর যে গণহত্যা চালিয়েছিল তার প্রতিবাদ জানাতে, এরা এসেছেন সেদিন যারা আত্মত্যাগ করেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে, এরা এসেছেন শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে দেশ গড়ার দীপ্ত শপথ নিতে, এরা এসেছেন জাতীয় শহীদ মিনার থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত ‘শোক থেকে শক্তি : অদম্য পদযাত্রা’য় অংশ নিতে।
বাজার থেকে মুরগি কিনে ড্রেসিং করার পর অনেকেই মুরগির পা, গিলা-কলিজা (লটপট) ফেলে যান। আর এসব গিলা, কলিজা কম দামে কেনেন নিম্ন আয়ের মানুষ। কিন্তু বাজারে হঠাৎ মুরগির দাম বাড়ায় এসব গিলা, কলিজার কদর বেড়েছে। তবে এখানেও দাম বেড়েছে কেজিতে ৫০ টাকা। এতে নিম্ন আয়ের মানুষ এসব কিনতে হিমশিম খাচ্ছে।
বাজারে গিলা-কলিজাও ২৬০ টাকা কেজি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে অবৈধভাবে টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এই লেনদেন সম্পর্কিত একটি ফোনালাপ দৈনিক দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
১৬ লাখ টাকা ভাগাভাগি ছাত্রলীগের ৫ নেতার
মেধাতালিকা বাদ দিয়ে নতুন নিয়মে পদোন্নতি দিতে যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। যার ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পদোন্নতিযোগ্য সোনালী ব্যাংকের শত শত কর্মী। এত দিন শূন্য পদের ভিত্তিতে মেধাতালিকা থেকে দুজন ও জ্যেষ্ঠতা (সিনিয়রিটি) তালিকা থেকে একজনকে পদোন্নতি দেওয়া হতো। কিন্তু হঠাৎ করেই নতুন নিয়ম চালু হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সবচেয়ে বড় ব্যাংকটিতে। পদোন্নতিতে মৌখিক পরীক্ষার জন্য শুধু জ্যেষ্ঠ তালিকার কর্মকর্তাদের বিবেচনা করা হয়েছে। বিশেষ কিছু ব্যক্তিকে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য মেধাবী ও কর্মঠ অফিসারদের বঞ্চিত করার পাঁয়তারা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সোনালী ব্যাংকের কর্মীরা।
মেধার মূল্যায়ন নেই সোনালী ব্যাংকে
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে একটি গান গেয়েছেন প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী ফাহমিদা নবী। ‘ভোরের আলোয় ঝিকিমিকি’ শিরোনামের গানটি লিখেছেন সুলতানা নূরজাহান রোজ। সুর ও সংগীত করেছেন সজীব দাস। অডিও রেকর্ডিং শেষে এখন চলছে ভিডিও নির্মাণের কাজ। ইয়ামিন এলানের পরিচালনায় মিউজিক ভিডিওটিতে ফাহমিদা নবীও আছেন। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সুন্দর একটি গান করলাম। দেশ রাগের সুরে গানটি করা হয়েছে। এতে ঢোল, বাঁশি, তবলাসহ দেশীয় সংগীতের ছোঁয়া পাবেন শ্রোতারা। সুরকার সজীব দাস অনেক যত্ন নিয়ে গানটি করেছেন। আশা করছি গানের সুর ও মিউজিক ভিডিওটি শ্রোতা-দর্শকদের মন জয় করবে।’ গতকাল গানটি সুলতানা নূরজাহান রোজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয়েছে।
‘তুমি আর নেই সে তুমি’, চন্দিকা হাথুরসিংহের বেলায় শচীন দেব বর্মনের এই গানের কলিটা উপমা হিসেবে আসতেই পারে। দ্বিতীয় মেয়াদে অনেক বদলে গেছেন শ্রীলঙ্কান এই কোচ। আগের মতো কড়া হেডমাস্টারের বদনাম এখনো শোনা যায়নি, সেই সঙ্গে প্রতিভার উপযাচক হিসেবেও তাকে দেখা যাচ্ছে না। হাথুরুসিংহে প্রতিভার প্রয়োগ চান, তাহলে তার দলে জায়গা মিলবে। স্রেফ প্রতিভার জোরে জাতীয় দলে দিনের পর দিন জায়গা ধরে রাখার দিন শেষ, কাল চট্টগ্রামে ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে এসে এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ দলের কোচ।
শুধু প্রতিভায় মন গলবে না হাথুরুর
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম। দারুস সুন্নাহ ওয়াল ফিকর, মিরপুরের প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম এবং মিরপুর সাংবাদিক এলাকার মসজিদে ফারুকের খতিব। হুফফাজুল কুরআন ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি। দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন- রমজানের আমল, ইমামের গুণাবলি ও হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতাসহ সমসাময়িক নানা প্রসঙ্গে।
সকাল ১০টায় রেডিও নতুন সামরিক আদেশের ঘোষণা দিল। যখনই কোনো সাংবাদিক সেনা কর্মকর্তাদের কাছে কোনো তথ্য জানতে চান, তাদের রূঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়। কূটনৈতিক মিশনে পৌঁছার সব চেষ্টা ব্যর্থ হলো। এক দল সাংবাদিক যখন সামনের দরজা দিয়ে একজন ক্যাপ্টেনের সঙ্গে কথা বলতে বেরিয়ে এলেন, ক্যাপ্টেন ভয়ংকর ক্ষুব্ধ হলেন। তাদের ভেতরে ঢোকার হুকুম দিয়ে পেছন থেকে বললেন, ‘আপনাদের কীভাবে সামলাতে হবে আমি জানি। আমি আমার নিজের মানুষদের হত্যা করতে পারি। আমি আপনাদেরও হত্যা করতে পারব।’
রাষ্ট্রায়ত্ত এসেনসিয়াল ড্রাগস সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওষুধের চাহিদার ৭০ শতাংশ পূরণ করে। সাশ্রয়ীমূল্য কিন্তু মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনকারী এ প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন অধ্যাপক ডা. এহ্সানুল কবির, যিনি পেশায় একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। আকর্ষণীয় মুনাফা ও নিয়মিত সম্প্রসারণে অনুকরণীয় প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন দেশ রূপান্তরের বিশেষ প্রতিবেদক আলতাফ মাসুদ-এর সঙ্গে।
গভর্নমেন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস ল্যাবরেটরি ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ১৯৮৩ সালে এটি এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড নামে পুনঃনামকরণ করা হয়। এ কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানসম্মত ওষুধ উৎপাদনের পাশাপাশি নিজস্ব সাপ্লাই চেইনের মাধ্যমে সরকারি স্বাস্থ্যসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে তা পৌঁছে দেওয়া। ২০১৪ সালের ২২ অক্টোবর এসেনসিয়াল ড্রাগসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব নেন অধ্যাপক ডা. এহ্সানুল কবির। এরপর থেকেই পাল্টে যেতে শুরু করে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর গত সাড়ে আট বছরে গতানুগতিক প্রতিষ্ঠানটি আজ সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় অপরিহার্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
এসেনসিয়াল ড্রাগস ইতিমধ্যেই সরকারের একটি ইউনিক কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। প্রতিদিন এক থেকে দেড় কোটি মানুষ এ কোম্পানির উৎপাদিত ওষুধ সেবন করছেন, যা বিনামূল্যে সরকার প্রদান করছে। পরিবার পরিকল্পনায় যেসব ওষুধ প্রয়োজন হয় সেগুলোও উৎপাদন করছে কোম্পানিটি।
দেশ রূপান্তরকে অধ্যাপক ডা. এহ্সানুল কবির জানিয়েছেন, বর্তমানে আমরা ১২৩ ধরনের ওষুধ উৎপাদন করি। এর মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিস্টামিনসহ জেনারেল প্রোডাক্টগুলো উৎপাদন করা হচ্ছে। এর বাইরে কিছু ব্যয়বহুল ওষুধও উৎপাদন করা হচ্ছে। বাইরের কোম্পানির তুলনায় আমরা সরকারকে ১৫-২০ শতাংশ হ্রাসকৃত মূল্যে মানসম্মত ওষুধ দিতে পারছি। আমাদের উৎপাদিত ওষুধের মাধ্যমে প্রতি বছর সরকারের শত শত কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।
২০১৪ সালে এসেনসিয়াল ড্রাগসের বার্ষিক টার্নওভার ছিল প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা, যা এখন ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এহ্সানুল কবির বলেন, সরকার আমাদের উৎপাদিত ওষুধে ৫ থেকে ৭ শতাংশ মুনাফা দেয়। সরকারের কাছে ওষুধ বিক্রির অর্থে উৎপাদনসহ সব খরচ মেটানোর পরও আমরা প্রতি বছর ভালো মুনাফা করছি। সর্বশেষ হিসাববছরে আমাদের প্রতিষ্ঠান ১১০ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছে।
এসেনসিয়াল ড্রাগসের ওষুধ মানসম্মত ও সাশ্রয়ী হলে বাইরে পাওয়া যায় না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে বিশেষজ্ঞ এ চিকিৎসক বলেন, আমরা সরকারের চাহিদাই মেটাতে পারছি না। কারণ আমাদের কারখানাগুলো অনেক পুরনো, যার কারণে এর উৎপাদন সক্ষমতা কম ছিল। যখন আমাদের কারখানাগুলো তৈরি হয় তখন সারা দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছিল আটটা। কিন্তু এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭টিতে। কিন্তু এ সময়ে আমাদের উৎপাদন সক্ষমতা তেমনটা বাড়েনি। বর্তমানে সরকারি হাসপাতালগুলোর ওষুধের কেনার যে বাজেট, তার ৭০ শতাংশ আমরা সরবরাহ করতে পারছি।
কারখানা সম্প্রসারণের বেশ কিছু উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ঢাকার তেজগাঁওয়ের প্ল্যান্টটা মানিকগঞ্জে স্থানান্তর করা হচ্ছে। মানিকগঞ্জে ৩১ একর জমিতে আপাতত ২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। মানিকগঞ্জের প্ল্যান্ট চালু হলে হাসপাতালগুলোর শতভাগ ওষুধ আমরা সরবরাহ করতে পারব বলে আশা করছি। শুধু তাই নয়, রপ্তানিও করতে পারব।
গোপালগঞ্জে নতুন প্ল্যান্ট করা হয়েছে, যেখানে অ্যান্টিবায়োটিক, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, ইনজেকশন, সাল্যাইনসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করা হবে। দেশে প্রথম ভ্যাকসিন প্ল্যান্ট স্থাপনের উদ্যোগের কথা জানিয়ে এহ্সানুল কবির বলেন, আমাদের গোপালগঞ্জের প্ল্যান্টের পাশে সাড়ে ছয় একর জমি অধিগ্রহণ করেছি, যেখানে ১২টি টিকা উৎপাদন করব। ইনফ্লুয়েঞ্জা, ম্যানিনজাইটিস, করোনা, টিউবারকলোসিসসহ বাংলাদেশে শিশুদের যে ১১টি টিকা দেওয়া হয় সেগুলোর সবই আমদানিনির্ভর, যা আমরা উৎপাদন করব। এর বাইরে করোনার টিকাও উৎপাদন করব। সেখানে উৎপাদন, বোতলজাত ও ভ্যাকসিন ম্যানুফ্যাকচারÑ এ তিন পর্যায়ে উৎপাদন হবে। এ ছাড়া গবেষণা উন্নয়নেও ব্যবস্থা থাকছে। গোপালগঞ্জে ডায়ালাইসিস সøুইড তৈরি হবে, যার ফলে ডায়ালাইসিসের খরচ অনেক কমে যাবে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ইতিমধ্যে এ প্রকল্পে ২৫০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আর সরকার দেবে ৫০ কোটি। ইতিমধ্যেই ডিপিপি তৈরি হয়েছে। আগামী জুলাই থেকে কাজ শুরু হবে আশা করছি। কয়েকটি ধাপে প্রকল্পটি সম্পন্ন হতে পাঁচ বছর সময় লাগবে।
তিনি বলেন, বগুড়ায় ২১ বছর আগে একটি প্ল্যান্ট করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। যেখানে অবকাঠামো তৈরির আগেই মেশিন কেনা হয়েছিল। বিভিন্ন কারণে সেখানে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়নি। আমি সেখানে ভবন তৈরিসহ সব ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ করেছি, যা গত ১৫ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন। বগুড়ার প্ল্যান্টে উন্নতমানের অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদন করা হচ্ছে।
এহ্সানুল কবির পেশায় একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, যিনি অবসরে এখনো রোগীদের পরামর্শ সেবা দিয়ে থাকেন। ওষুধ কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় তার মূল পেশা কোনো সহায়ক ভূমিকা পালন করছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলছিলেন, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হওয়ার কারণে কোম্পানি পরিচালনায় অবশ্যই কিছু সুবিধা পেয়েছি। একজন ডাক্তার হওয়ার কারণে আমি বুঝতে পারি কোন ওষুধটি মানুষের বেশি প্রয়োজন। কোন ওষুধটা ডেভেলপ করলে মানুষের সত্যিকারের উপকার হবে সেগুলো আমরা তৈরি করে সাশ্রয়ীমূল্যে সরবরাহ করেছি। তিনি জানান, এসেনসিয়াল ড্রাগসে কাজ শুরুর আগে তিনটি দেশের একাধিক প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক কাজ করতে হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতাও এখানে কাজে লাগছে।
আমি চেষ্টা করছি কর্মিবান্ধব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে। এ জন্য সামর্থ্যরে মধ্য থেকে শ্রমিকদের কী কী সুবিধা দেওয়া যায়, তার পরিকল্পনা হয়েছে এবং ধাপে ধাপে তা বাস্তবায়ন করেছি। আমি যোগ দেওয়ার পর ২০১৫ সালে আমি শ্রমিকদের বেতন দ্বিগুণ করে দিয়েছি। তাদের খাবারের মান উন্নয়ন করেছি। ঢাকার যত শ্রমিক আছে তাদের সবার জন্য বাস সার্ভিস চালু করেছি। মধুপুরে আমাদের একটি কারখানা আছে, যেখানকার শ্রমিকদের জন্য বীরশ্রেষ্ঠদের নামে চারটি ডরমিটরির ব্যবস্থা করে দিয়েছি। কারখানায় ডাক্তারের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমাদের পাঁচটা প্ল্যান্টে শ্রমিকদের বিনোদনের জন্য বার্ষিক বনভোজনসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের কারখানাগুলোতে যেসব অস্থায়ী শ্রমিক কাজ করেন, তারা কিন্তু আগে ঈদ বোনাস পেত না। আমি তাদের জন্য ঈদ অ্যালাউন্সের ব্যবস্থা করে দিয়েছি, যা দিয়ে তারা নিজেদের পরিবারের জন্য কেনাকাটা করতে পারছেন বলেন এহ্সানুল কবির।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
রাজধানীর মিরপুরের একটি মাধ্যমিক-সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে সিফাত। একই এলাকায় বসবাসকারী তার বন্ধু সিয়াম পড়ে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে। সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার থেকে রোজার ছুটি। আর সরকারি প্রাথমিকে ছুটি ১৫ রোজা অর্থাৎ ৭ এপ্রিল থেকে।
এক দেশে একই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভিন্ন নিয়মে ছুটি পাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এতে লেখাপড়ায় কেউ এগিয়ে যাবে, আবার কেউ পিছিয়ে পড়বে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সৈয়দ মামুনুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার বা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলে ভেবেচিন্তেই নেয়। তবে সব ধরনের স্কুলে একটা কো-অর্ডিনেশন থাকলে ভালো হয়। আমরা ছুটির ব্যাপারে আরও আলাপ-আলোচনা করব।’
জানা গেছে, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে আগামী শুক্রবার শুরু হতে পারে রমজান মাস। বছরের শুরুতেই স্কুলগুলোর ছুটির তালিকা অনুমোদন করা হয়। সে অনুযায়ী পবিত্র রমজান, স্বাধীনতা দিবস, ইস্টার সানডে, বৈসাবি, নববর্ষ ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি, বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি কলেজ, আলিয়া মাদ্রাসা ও টিটি (টিচার্স ট্রেনিং) কলেজেও একই সময়ে ছুটির ঘোষণা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ছুটির তালিকা ভিন্ন। তারা পবিত্র রমজান, ইস্টার সানডে, চৈত্র-সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ৭ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ প্রায় ১৫ রমজান পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা থাকবে।
রাজধানীসহ বড় বড় শহরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন। তাই এসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিকের মতোই তাদের ছুটি থাকবে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রোজার ছুটিও একই। তবে মাদ্রাসায় রোজার ছুটি শুরু এক দিন আগেই অর্থাৎ আজ বুধবার, ২২ মার্চ।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান। তাই বুধবার ক্লাস করে বৃহস্পতিবার রোজার ছুটি শুরু হবে। তবে সব স্কুলে একই ধরনের ছুটি থাকা জরুরি। এতে একই সময়ে সিলেবাস শেষ করা যাবে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও সন্তুষ্ট থাকবে।’
রমজানে মাধ্যমিকে স্কুল বন্ধ আর প্রাথমিকে খোলা রাখায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার লাখ শিক্ষকের মধ্যে। তারা বলছেন, যেসব অভিভাবকের সন্তান প্রাথমিক ও মাধ্যমিক দুই স্কুলেই পড়ে তাদের সমস্যা হবে। রমজান মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। প্রাথমিকের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরাও রোজা রাখেন। তাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে মিল রেখে প্রাথমিকের ছুটি নির্ধারণ করা যৌক্তিক হবে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাংগাঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ বছর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরকারি ছুটি ৭৬ দিন, কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ৫৪ দিন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিন্ন ছুটি নির্ধারণের যুক্তি তুলে ধরে আমরা ইতিমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেছি। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনো সাড়া পাইনি।’