
দেশের সর্বশেষ কৃষিশুমারি হয়েছে ২০১৯ সালে, যার ফল প্রকাশিত হয়েছে গত ২৭ ডিসেম্বর। এই শুমারি থেকে জানা যায়, দেশের কৃষি পরিবারের পরিচালনাধীন মোট জমির পরিমাণ ২ কোটি ২৯ লাখ ৪৫ হাজার একর, যা এর আগে ২০০৮ সালের শুমারিতে ছিল ২ কোটি ৩৫ লাখ ৫ হাজার একর। অর্থাৎ গত ১১ বছরে দেশে কৃষিজমির পরিমাণ কমেছে ৫ লাখ ৩০ হাজার একর। বাংলাদেশে জনসংখ্যার অনুপাতে কৃষিজমির পরিমাণ খুবই সীমিত। তারপর এভাবে কৃষিজমি কমতে থাকলে চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়বে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা। খাদ্য, পুষ্টি নিরাপত্তা, বস্ত্র-বাসস্থান, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন, শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহ এবং বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন প্রভৃতি ক্ষেত্রে কৃষির অবদান অপরিসীম। কৃষি ছাড়া বাংলাদেশের উন্নয়ন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার কথ ভাবা যায় না। জীবন রক্ষাকারী ওষুধের কাঁচামাল জোগানেও কৃষির রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। যেহেতু মাটিকে কেন্দ্র করেই কৃষি, তাই কৃষির উন্নয়নের সঙ্গে কৃষিজমি সুরক্ষা এবং মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাদ্য উৎপাদনের জন্য আবাদি জমি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘দেশ ইতিমধ্যে অপকিল্পিত শিল্পায়নের জন্য প্রচুর ভালো মানের ও উর্বর জমি হারিয়েছে। অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, নগরায়ণ এবং আবাসনের কারণে হারিয়ে গেছে বিপুল পরিমাণ উর্বর জমি। কারণ, পূর্ববর্তী সরকারগুলো এতে মনোযোগ দেয়নি। আমরা এ ধরনের জমি হারাতে চাই না।’ গত ১৯ ডিসেম্বর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ^বিদ্যালয়, গাজীপুরের ২৫তম বিশ^বিদ্যালয় দিবস এবং প্রযুক্তি প্রদর্শনী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার ভার্চুয়াল ভাষণে গণভবন থেকে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো আবাদি জমি, যা সারা বছর তিন ধরনের ফসল উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হয়, শিল্পায়নের জন্য তা ব্যবহার করা যাবে না। কেউ যদি এ ধরনের জমিতে শিল্প স্থাপন করে, তবে তারা সরকার থেকে কোনো সুবিধা পাবে না এবং এই লক্ষ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ খুবই ছোট একটি দেশ কিন্তু মানুষের সংখ্যা বিপুল। এ বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য উৎপাদন নিরাপদ করতে বিদ্যমান আবাদি জমি রক্ষা করতে হবে। পাশাপাশি গবেষণা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। গবেষণালব্ধ মেধাস্বত্ব যাতে সঠিক উপায়ে সংরক্ষিত হয়, তা নিশ্চিত করা এবং বর্তমান সরকারের প্রতিষ্ঠিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তুলতে হবে। সেই সঙ্গে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের সঙ্গে সঙ্গে দক্ষ কৃষি উৎপাদন কর্মীও তৈরি করতে হবে।
কৃষিজমি সুরক্ষায় ২০০৯ সালে নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে ‘কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন’-এর খসড়া প্রণয়ন শেষে মতামতের জন্য ২০১৬ সালে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে ভূমি মন্ত্রণালয়। অতীব দুঃখের বিষয় যে, সেই খসড়া এখনো আলোর মুখ দেখেনি। একই লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে একটি বেসরকারি বিল আনা হলেও তা সংসদীয় কমিটিতে পড়ে আছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮০ সালে দেশের মোট জমির ৬৫ শতাংশের বেশি ছিল কৃষিজমি। চার দশকের ব্যবধানে ২০১৯ সালে তা নেমে ৫৯ শতাংশে এসেছে। বর্তমানে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি একর। এর এক-চতুর্থাংশই এখন হুমকির মুখে বলে একাধিক বেসরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে। বছরে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ বৃদ্ধির কারণে প্রতিদিন ৫৫০ একরের বেশি কৃষিজমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। এতে বছরে ৮২ হাজার হেক্টর জমি কমছে, যা মোট জমির এক শতাংশ। এ ছাড়া বছরে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে এক হাজার হেক্টর জমি। নির্মাণকাজের কারণে বছরে বিলীন হচ্ছে তিন হাজার হেক্টর জমি। গত ৩৮ বছরে প্রায় ৬৫ হাজার একর জমিতে শুধু ঘরবাড়ি নির্মাণ হয়েছে।
এ অবস্থায় কৃষিজমির যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে দেশে নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত আইনের খসড়া প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতামত চাওয়া হয়। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে বেসরকারি সদস্যদের বিল ও বেসরকারি সদস্যদের সিদ্ধান্ত প্রস্তাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নানের সংসদে উত্থাপিত ‘কৃষিজমি (যথাযথ ব্যবহার ও সংরক্ষণ) বিল-২০২২’ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনাকালে ওই খসড়া আইনের বিষয়টি উঠে আসে। এ সময় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সর্বশেষ গত নভেম্বরে খসড়াটি যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হলেও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।
একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, কারখানার বর্জ্য ও বিষাক্ত পানিতে নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জের অন্তত ১০টি মৌজার ১ হাজার বিঘার বেশি জমি অনাবাদি হয়ে পড়েছে। ওই এলাকার কৃষকরা গত ৫ বছর ধরে এসব জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেন না। জমিগুলোর আশপাশে ৮ থেকে ১০টি কারখানা রয়েছে। এরমধ্যে পাকিজা গ্রুপের কারখানা সবচেয়ে বড়। এসব কারখানায় সুতা প্রক্রিয়াজাতকরণ, পোশাক ও সুতায় মাড় দেওয়ার কাজ করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে ফসলি জমিতে বিষাক্ত রঙের পানি ও অ্যাসিড থাকায় কোনো আবাদ করা যাচ্ছে না। নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জেই শুধু নয়, ময়মনসিংহের ভালুকা, শ্রীপুর, গাজীপুরেও ঘটছে একই ধরনের ঘটনা। ত্রিশাল ও ভালুকা উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত খরস্রোতা ক্ষীরু নদীতে এক সময় সারা বছর পানি থাকত। মালবোঝাই পাল তোলা নৌকা চলত। মাঝির মুখে শোনা যেত সুমধুর ভাটিয়ালি গান। সুস্বাদু মাছ থাকত, মিল কারখানার তরল বর্জ্য ফেলার কারণে সেই খরস্রোতা ক্ষীরু নদীর অপমৃত্যু ঘটেছে। মাছ তো দূরের কথা, নদীতে ডুব দেওয়ার মতো পানি নেই। যেটুকু আছে, তা তরল বর্জ্য মিশ্রিত ব্যবহার অনুপযোগী রঙিন পানি। বর্ষাকালে এ নদীর তরল বর্জ্য মিশ্রিত পানি আশপাশের কৃষিজমিতে পড়ে নষ্ট হচ্ছে উর্বরতা। মারা যাচ্ছে মাটিতে বসবাসকারী- প্রকৃতির লাঙল; কেঁচোসহ উপকারী ক্ষুদ্র জীবাণু।
আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, শিল্পপার্ক ছাড়া দেশের যেখানে সেখানে কোনো শিল্প কারখানা গড়ে তোলা যাবে না এবং প্রতিটি শিল্প কারখানায় সার্বক্ষণিক ইটিপি ব্যবহার করতে হবে বাধ্যতামূলক, যাতে কারখানার তরল বর্জ্যে প্রাকৃতিক জলাশয় ও কৃষিজমি বিনষ্ট না হয়। প্রয়োজনে সরকারিভাবে স্থাপিত কেন্দ্রীয় পরিশোধন কারাখানার মাধ্যমে প্রতিটি শিল্প কারখানার তরল বর্জ্য শোধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কৃষিজমি নষ্ট করে ঘরবাড়ি, স্কুল-কলেজ ও রাস্তাঘাট নির্মাণ করা যাবে না। এসব কাজে অনুর্বর উঁচু জমি ব্যবহার করা যেতে পারে। কৃষিজমির উপরিভাগের উর্বর মাটি কেটে ইট তৈরির মতো ক্ষতিকর কাজ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে ইটের পরিবর্তে সিমেন্টের ব্লক ব্যবহারে জনগণকে উৎসাহিত করতে হবে। কৃষিজমির মাটি কেটে কোনো রাস্তাঘাটও বানানো ঠিক হবে না। রাস্তাঘাটের মাটির জন্য নদী খনন করে সেই মাটি ব্যবহার করতে হবে। এতে একদিকে নদীর নাব্য বাড়বে, অন্যদিকে রক্ষা পাবে মূল্যবান কৃষিজমি। সেই সঙ্গে নদীভাঙন রোধে গ্রহণ করতে হবে সময় মতো সর্বাধুনিক টেকসই প্রযুক্তি। অন্যথায় দেশের টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না।
লেখক: সাবেক মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন
‘একদিন আমি যদি চলে যাই, আমি খুশি মনে যাব, কারণ আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। আমার খেলাই আমাকে এত কিছু করার সুযোগ দিয়েছে, কারণ এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় খেলা।’এটা পেলের কথা। পৃথিবী তাকে যতই মিস করুক তিনি খুশি মনে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনযাপন করে ৮২ বছর বয়সে বিদায় নিয়েছেন। কে অস্বীকার করবে যে তিনি তার ক্ষমতার সর্বোচ্চটাই দেননি?
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় খেলার সবচেয়ে বড় খেলোয়াড় এডসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো কিংবা কালোমানিক পেলে ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ সত্যিই চলে গেলেন, এদিনই সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে অবস্থানের মাসপূর্তি হয়েছিল। বাইরে সারা পৃথিবীতেই ছিল অসংখ্য বার্তা : পেলে, গেট ওয়েল সুন। পেলে, ইউ মাস্ট কাম ব্যাক। তোমাকে ফিরতেই হবে। তিনি শুনলেন, মুচকি হাসলেন এবং চলে গেলেন।
তার জন্ম ২৩ অক্টোবর ১৯৪০, ব্রাজিলে। তিনিই হয়ে ওঠেন পেলে দ্য কিং। ফুটবলের রাজা পেলে, ১০ নম্বর জার্সির পেলে।
কিংবদন্তির রাজা পেলেকে শ্রদ্ধা জানাতে হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ (জুলাই-আগস্ট ২০১৪) ম্যাগাজিন থেকে এলিসন বেয়ার্ডের নেওয়া সাক্ষাৎকার প্রেক্ষাপট ও টীকা-টিপ্পনীসহ উপস্থাপিত হচ্ছে :
প্রশ্ন : আপনি ছিলেন আপনার সব দলের তারকা। আপনি কি নিজেকে দলের আর সবার নেতা হিসেবে দেখেন?
পেলে : আমি কখনো নেতা হতে চাইনি। আমার ইতিহাস সবার জানা। নেতৃত্ব এসেছে স্বাভাবিকভাবে। সব ফোকাস আমার ওপর। অন্য খেলোয়াড়দের কাছে আমার শ্রেষ্ঠটাই দিতে চেষ্টা করেছি, আমার জীবনে কোনটা গুরুত্বপূর্ণ তাদের বলতে চেষ্টা করেছি। মাঠের বাইরে আমাদের কোচরা থাকতেন, তাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক মধুর, কারণ তারা আমাকে কাজের স্বাধীনতা দিয়েছেন। কিন্তু কখনো কখনো এত বড় মাঠে খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলা তাদের পক্ষে সম্ভব হতো না। কাজেই তাদের বার্তাটা পৌঁছে দিতে, দলকে সংগঠিত করতে হতো, তাতেই নেতৃত্ব এসে যেত।
প্রশ্ন : কিন্তু আপনি তো কখনো দলের ক্যাপ্টেন ছিলেন না।
পেলে : না। সংবাদ সস্মেলনে এ নিয়ে সাংবাদিকরা আমাকে প্রশ্ন করতেন। আমি তাদের বলতাম, ‘শুনুন, আমার ক্যাপ্টেন হওয়ার প্রয়োজন নেই। আর একজন খেলোয়াড় যদি দলের ক্যাপ্টেন হন, তাহলে খেলায় আমাদের দুজন নেতা থাকছেন।
প্রশ্ন : আপনার টিমের সদস্যদের কোচিং করাবেন কেমন করে?
পেলে : নিউ ইয়র্ক কসমসে আমার প্রথম বছর আমাদের অনেক তরুণ খেলোয়াড় ছিল। আমি জানি না তারা আমাকে খুশি করতে চেষ্টা করত না বল ধরে রাখতে ভয় পেত, আমি তাদের বলতাম, ‘সব বল আমাকে দেবে না। টিম হিসেবে আমাদের খেলতে হবে।’
প্রশ্ন : অবসর গ্রহণের পর কসমসের পক্ষে খেলতে এলেন কেন?
পেলে : ১৯৭০-এর বিশ্বকাপে ব্রাজিল বিজয়ী হওয়ার পর আমি প্রথমবার অবসর গ্রহণ করেছিলাম। সেবার আমি ছিলাম টুর্নামেন্টের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়/পরের বিশ্বকাপ আসতে কয়েক বছর বাকি, সে জন্যই বলেছিলাম, ‘আমি আর খেলা চালিয়ে যাব না।’ তখন আমি বহু আমন্ত্রণ পেতে শুরু করি রিয়েল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, মিলান, বায়ার্ন মিউনিখ, যুক্তরাষ্ট্রের তখন ফুটবল কেবল শুরু হতে যাচ্ছে। আমার বন্ধু, ওয়ার্নার কমিউনিকেশনের প্রেসিডেন্ট স্টিভ রস তাদের সাহায্য করতে চাইলেন। তারা আমাকে ডাকলেন। আমি বললাম বেশ, আছি। কারণ ইউরোপে খেলার চেয়ে পরিস্থিতি এখানে ভিন্নরকম। এদেশে ফুটবল চালু করতে অংশগ্রহণ করার মতো একটি ব্যাপার।
প্রশ্ন : আপনি কখন পেশাদার ফুটবল ছাড়লেন? খাপ খাইয়ে নিতে আপনার কেমন কষ্ট হয়েছে?
পেলে : মাঠের বাইরে থাকা, জনতার বাইরে থাকা প্রথম দুবছর আমার কিছু সমস্যাই হয়েছে। আমি এমনকি বাচ্চাদের সঙ্গে ক্যাম্পে ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকে খেলতাম। আমি খুব মিস করি কারণ এটাই ছিল আমার জীবনের সব। কিন্তু আমি অনেক করেছি, ঈশ্বর আমার সহায় হোন, আমি আমার সর্বোত্তম অবস্থানে থেকে থামতে পেরেছি।
প্রশ্ন : আপনি অতি সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসেছেন, কম বয়সে খ্যাতিলাভ করেছেন। এই রূপান্তর আপনি সামলালেন কেমন করে?
পেলে : আমার পরিবারটা ভালো, যখনই আমার প্রয়োজন হয়েছে, আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। আমি বরাবরই ফুটবল নিয়ে থেকেছি, ফুটবল আমার ভালোবাসার, তেমনি ভালোবাসার জনসান্নিধ্য। অবশ্যই সে জন্য আমার জীবন খানিকটা বদলাতে হয়েছে, আমি ব্যক্তিগত গোপনীয়তা হারিয়েছি। কিন্তু এর মধ্য দিয়েই আমার ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠেছে।
প্রশ্ন : আজকাল ক্রীড়ায় এত অর্থের সংশ্লেষ ঘটায় ঋণাত্মক প্রভাব নিয়ে লোকজন কথা বলে। বড় খেলোয়াড়দের কি এত বেশি বেতন হওয়া উচিত?
পেলে : হ্যাঁ, বেশি বেতনই হওয়া উচিত, কারণ ফুটবল সাধারণ পেশার মতো নয় যা আপনি ৮০ বছর পর্যন্ত চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। ভালো খেলোয়াড় এমনকি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম খেলোয়াড় ৩৪, ৩৫ বড়জোর ৪০ বছর পর্যন্ত খেলতে পারে। কিন্তু তারপর তাদেরও তো বাঁচতে হবে। সমস্যা হচ্ছে টাকাটা কেমন করে খরচ করবে। একালে টেলিভিশন ও স্পন্সর কারা। কোনো কোনো দল কোনো কোনো খেলোয়াড় অনেক টাকা পাচ্ছে, বাকিরা কিছুই পাচ্ছে না।
প্রশ্ন : আপনি অনেক কোম্পানির মুখপাত্র হয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু কোনটাকে আপনি অনুমোদন করবেন সে সিদ্ধান্ত কেমন করে নেন?
পেলে : যখন কোনো কোম্পানি আমার কাছে আসে, আমি সবার আগে বুঝতে চেষ্টা করি তারা শিশুদের কোনো বার্তা নিতে যাচ্ছে। বহু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সিগারেট, অ্যালকোহল, বিয়ারের বিজ্ঞাপন করার জন্য আমাকে প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু আমি কখনো সেই ব্র্যান্ডগুলোকে অনুমোদন করিনি, কারণ এসব দ্রব্য তরুণদের জন্য ক্ষতিকর।
প্রশ্ন : আপনি বিশ্ব পর্যটক হিসেবে চষে বেড়াচ্ছেন। কেমন করে বিশ্রাম করেন?
পেলে : সাও পাওলো থেকে দূরে একটা ছোট শহরে আমার ছোট একটা খামার আছে। আমাদের খাল, নদী, কৃষি এবং একটি ঘোড়াও আছে। যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ি সেখানে এক সপ্তাহ কাটিয়ে আসি।
এলিসন বেয়ার্ডকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি যা বলেছেন তার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে একটি ধারণা পেতে তার আত্মজীবনীর (পেলে, দ্য অটোবায়োগ্রাফি) ‘দ্য ফার্স্ট ফেয়ারওয়েল’ অধ্যায়ের কিছুটা তুলে ধরা হচ্ছে :
১৯৭০ সালে (মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত) বিশ্বকাপ ফুটবলে বিজয় আমাকে ফুটবল থেকে অবসর নেওয়া নিয়ে ভাবিয়ে তুলেছে, অবসরের শুরুটা হবে জাতীয় দল থেকে, আমার পরিবারকে বেশি সময় দিতে হবে। আমার তখন দুটো সন্তান, আমাকে যেহেতু এত বেশি সফরেই থাকতে হয় সন্তানদের দেখাশোনা করার বড় বোঝাটাই রোজমেরিকে (পেলের প্রথম স্ত্রী) টানতে হয়। আমার বাবা ডনডিনো বলতেন, মানুষ কখন তোমাকে থামতে বলবে সে কথা শুনে কখনো তোমার থামার উচিত হবে না। তোমাকে থামতে হবে যখন তুমি তোমার শীর্ষস্থানে, তাহলে মানুষ তোমাকে স্মরণ রাখবে। নিজের ক্ষয়ে যাওয়াটা দেখতে থাকা কোনো আনন্দময় বিষয় নয়। আমি তখন সত্যিই শীর্ষে; আমি আমার শ্রেষ্ঠ বিশ্বকাপ খেলেছি, এক হাজার গোল দিয়েছি এবং আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছি। কাজেই এখন ব্রাজিল জেনে যাবে ব্রাজিল জাতীয় দল গঠনের সময় আমাকে আর পাওয়া যাবে না। আমি ক্ষেত্র প্রস্তুত করলাম যেন স্যান্তোস দল ১০ নম্বর জার্সি পরার জন্য খেলোয়াড় অনুসন্ধান শুরু করে দেয়। আমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করছি না কিন্তু আমার দীর্ঘমেয়াদি ইচ্ছেটা জানিয়ে রাখাটা তো জরুরি।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে আমাকে মাঠে নিয়ে ব্রাজিলের শেষ হাততালি জুটল। প্রথম ম্যাচটি ১১ জুলাই ১৯৭১ সাও পাওলোর মরুম্বিতে, অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে। আমি কেবল প্রথমার্ধ খেলেছি। কিন্তু এই প্রথমার্ধের শেষ সময়টাতে ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে আমি আমার জীবনের শেষ গোলটা করলাম। আমি ৭৭টি গোল করেছি, এখনো তা রেকর্ড, আমি গর্ব করেই বলতে পারি। শেষ বিদায় মারাকানা স্টেডিয়াম ছাড়া আর কোথাও হতে পারে না। এক সপ্তাহ পর জুলাই ১৯৭১ খেলা হলো যুগোশ্লাভিয়ার বিরুদ্ধে। এটা আরেক অভিনব অভিজ্ঞতা। এটা কোনো প্রতিযোগিতামূলক খেলা ছিল না কিন্তু মাঠে দর্শকের সংখ্যা ১ লাখ ৮০ হাজার, তিল ধারণের সুযোগ নেই। খেলাটি ২-২ গোলে ড্র হয়, এটি তেমন স্মরণীয় কোনো খেলাও নয়। কিন্তু আমাকে ভালোবাসে এমন জনতার কাছ থেকে যে বিদায়ী সংবর্ধনা পেয়েছি তা কখনো ভোলার নয়। খেলায় মনোনিবেশ করা আমার জন্য কঠিন হয়ে পড়ছিল, আমি শুধু প্রথমার্ধের ৪৫ মিনিট খেলেছি। যখন ম্যাচ শেষ হলো সারা স্টেডিয়াম জুড়ে ধ্বনি উঠল ফিকা, ফিকাথেকে যাও, থেকে যাও। আমাকে ঘিরে রাখা একদল শিশুকে নিয়ে স্টেডিয়ামে চক্কর দিলাম, জনতা তখন আমাকে বলছে, যেয়ো না যেয়ো না। আমার সোনালি সবুজ শার্ট আমার হাতে, কিন্তু তা আমার অশ্রুপাত রুখতে পারছে না।
পরে একটি মহল আমার খুব সমালোচনা করেছে, এমন ভালো শারীরিক অবস্থায় থেকেও আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে আমার বিদায় নেওয়া উচিত হয়নি। এমন সমালোচনা হবে, এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এমনই হয়ে থাকে... সবাইকে খুশি রাখা সম্ভব নয়।
পরের বছরের শেষ দিকে আমার নিজের দল স্যান্তোসের সঙ্গে আমার চুক্তি শেষ হওয়ার কথা। মনে হলো আমার ক্লাব ঠিক করে নিয়েছে চুক্তিমাফিক দেওয়া টাকাটা পুরো উসুল করে নিতে হবে। যে পাখি এতদিন সোনার ডিম পেড়েছে খাঁচা ছেড়ে চলে যাচ্ছে, কাজেই তাকে দিয়ে আরও খেলিয়ে নিতে হবে। ক্লাবের জন্য তাকে দিয়ে যতটা কামাই করে নেওয়া যায়। পরের ১৮ মাসে আমরা দক্ষিণ আমেরিকা, ক্যারিবিয়া, উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় ফুটবল সফর করলাম। আসলে পুরো পৃথিবীই। এয়ারপোর্ট, হোটেল এবং বিভিন্ন দেশে আমার এত ব্যস্ত সময় কখনো কাটেনি। স্যান্তোসের জন্য আমি আমার হাজারতম ম্যাচটি এর মধ্যেই খেলে নিয়েছি, খেলাটি হয়েছে সুরিনামের পারামারিবোতে ট্রান্সভাল দলের বিরুদ্ধে। মনে হচ্ছে আমার ক্লাব প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আমি চলে যাওয়ার আগে আমাকে দিয়ে আরও কয়েকশো ম্যাচ খেলিয়ে নেবে।
প্রতিদিন ক্লাবের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাচ্ছে। আমি আর আগের মতো উপভোগ করতে পারছি না।
আমেরিকায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত মানেই যাওয়া নয়, কেবল প্রক্রিয়ার শুরু কসমসের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছতে ক’মাস লেগে গেল। অন্তত ছ’মাস : টেলিগ্রাম, ফোনালাপ, বৈঠক, আইনজীবীদের মধ্যে বার্তা চালাচালি, কনসালটেন্ট ট্যাক্স কর্মকর্তা, সব ধরনের অনুষঙ্গ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। অফার এর বিপরীত অফার দুই-ই আছে। দরকষাকষি চলতেই থাকল সবই গভীর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে, আমরা চাচ্ছি না আমার এই বদলির চুক্তি চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত জানাজানি হোক। কসমস ক্লাবের মালিক ওয়ার্নার কমিউনিকেশন কোম্পানি যেখানে সম্ভব আলগা দড়ি টেনে ধরছে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট হেনরি কিসিঞ্জারকে দিয়ে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণপত্র লিখিয়েছে তার দেশে ফুটবলের উন্নয়নের জন্য পেলেকে দরকার পাছে ব্রাজিলের আমলাতন্ত্রের চাকা ঘুরতে না চায়!
শেষ পর্যন্ত তিনি এলেন। কিসিঞ্জার যুগের অবসানের পর জেরাল্ড ফোর্ড পেরিয়ে প্রেসিডেন্ট হলেন জিমি কার্টার। তিনি বললেন, পেলে ফুটবলকে আমেরিকাতে যে উচ্চতায় নিয়েছে, সেখানে ফুটবল আগে কখনো ছিল না; পেলের অতুলনীয় মর্যাদা, মেধা ও আবেগময় ভালোবাসার কারণেই এই মিশন সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে।
পেলে গোটা পৃথিবীর ফুটবলকে অনতিক্রম্য উচ্চাসনে নিয়ে গেছেন। সেই উচ্চাসন থেকেই পেলে এবার বিদায় নিলেন। খুশি মনেই।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক
পাহাড় ও সমতল মিলে এ দেশে আদিবাসী তথা ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৭৮টি বলে তথ্য উপস্থাপন করলেন ‘গবেষণা ও উন্নয়ন কালেকটিভ’ (আরডিসি)-এর সাধারণ সম্পাদক জান্নাত-এ ফেরদৌসী গত ১৩ ডিসেম্বর-২০২২ তারিখ সুদূর ঠাকুরগাঁওয়ের ‘লোকায়ন জীবনবৈচিত্র্য জাদুঘর’-এর মুক্তমঞ্চে। এই ঘোষণার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন তথ্যসূত্রে এর সংখ্যা কোথাও ৪৫, কোথাও ৭৩টি বলে জানা গেছে; আর সরকারিভাবে এ যাবৎ ৫০টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে গেজেটে। অর্থাৎ গত একান্ন বছরেও আমরা বাংলাদেশে বসবাসকারী আদিবাসী বা ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলোর সঠিক সংখ্যা নিরূপণে ব্যর্থ হয়েছি।
তার পরও থেমে নেই আদিবাসীদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা। যদিও তা দেশের সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর তুলনায় অতি নগণ্য। কারণ আমাদের সামাজিক উন্নয়নের মূল স্রোতোধারায় তারা এখনো শামিল হতে পারেনি। এ দোষ তাদের নয়, সংখ্যাগুরু সমাজের। সংখ্যাগরিষ্ঠদের দ্বারা আদিবাসীরা সেই অনাদিকাল ধরে শুধু অবহেলা, শোষণ ও বঞ্চনার শিকার হয়ে আসছে। এর কারণ একদিকে তাদের সরলতা, অশিক্ষা এবং দীর্ঘদিন আঁকড়ে থাকা মালিকানাধীন ভূসম্পত্তি; অন্যদিকে প্রতিপক্ষের লোভ, লালসা ও সবলের শক্তিমত্ততা। এ ছাড়া রয়েছে তাদের ঐশ^র্যময় সংস্কৃতি ও জীবনধারা সম্পর্কে সাধারণের সঠিক ও ঘনিষ্ঠ ধারণার অভাব। যদিও এ ধারণা অবশ্যই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও চেতনাগত।
ধারণা করা হয়, পৃথিবীতে প্রায় পাঁচ হাজার আদিবাসী জাতিসত্তার বসবাস নব্বইটি দেশে, যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বিশে^র প্রায় চল্লিশ কোটি আদিবাসীর মধ্যে বাংলাদেশে বসবাস প্রায় ত্রিশ লাখ মানুষের, যারা আনুমানিক ত্রিশটি ভাষায় কথা বলে। এদের জীবনযাপন, সংস্কৃতি, ভাষা ও ইতিহাস-ঐতিহ্য পৃথক পৃথক বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল এবং বহুত্ববাদী রাষ্ট্র হিসেবে তা বাংলাদেশের এক অমূল্য প্রাকৃতিক ও মানবসম্পদ। কিন্তু এই অমূল্য সম্পদ সম্পর্কে আমাদের ধারণা অনেকটা ভাসা-ভাসা। কারণ এদের ব্যাপারে কিছু বাদে আমাদের প্রায় সবারই জ্ঞান ও ধ্যান-ধারণা কিছু বই ও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত বিবরণ এবং তথ্য-উপাত্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ভালোবেসে কাছে না গেলে কাউকে বোঝা যায় না। তেমনি আদিবাসীদের জীবন প্রবাহের সঙ্গে না মিশলে তাদের বোঝা যাবে না। কিন্তু তাদের সঙ্গে সংখ্যাগুরু সমাজের এই দূরত্ব ঘোচাবে কে?
এই দূরত্ব ঘোচানোর মহতী উদ্যোগ হিসেবে কিছুদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে ‘ইকো- সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)’ নামক একটি বেসরকারি সংস্থা। আমার জানা মতে, উত্তরবঙ্গের সমতলের আদিবাসীদের সামাজিক জীবন উন্নয়নের জন্য তারা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর দুদিনব্যাপী ঠাকুরগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ন্যাশনাল কনভেনশন ও সাংস্কৃতিক উৎসব’। হেক্স/ইপার নামক আরেকটি বেসরকারি সংগঠনের সহায়তায় এই বর্ণাঢ্য, বৈচিত্র্যময় ও ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানমালার নান্দনিক উপস্থাপনার প্রধান কৃতিত্ব ইএসডিওর তথা এর কর্ণধার প্রধান নির্বাহী ড. মুহম্মদ শহীদ-উজ-জামানের। তিনি ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর থেকে বাংলাদেশের প্রথিতযশা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, জনপ্রতিনিধি, অধ্যাপক, বুদ্ধিজীবী, সরকারি কর্মকর্তা ও আদিবাসীসহ গ্রাহ্য গুণিজনদের নিয়ে সমন্বিত একটি সমাবেশ উপহার দিতে সক্ষম হয়েছেন। সর্বোপরি বৃহত্তর দিনাজপুরের সমতলের আদিবাসীদের যে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, তা সমগ্র অনুষ্ঠানমালাকে অপার আনন্দ, শ্রী ও সৌন্দর্য এবং পূর্ণতা দিয়েছে।
প্রথম দিনের জন বক্তৃতায় প্রদত্ত সুপারিশমালা ও আলোচনা, কর্ম-অধিবেশন এবং তৃণমূল সংলাপে অংশগ্রহণকারী আদিবাসীদের প্রাণখোলা মতামত; পরের দিন ঠাকুরগাঁও শহর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে ইএসডিওর নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ‘লোকায়ন জীবনবৈচিত্র্য জাদুঘরে’ একদম গ্রামীণ পরিবেশে ১০টি নৃ-তাত্ত্বিক জনজাতির পৃথক পৃথক স্টল প্রদর্শনী ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এসব কিছু পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশের সমতলের আদিবাসীদের চলমান জীবনধারা, হালের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য ও প্রবণতা এবং তাদের বক্তব্যে চাওয়া-পাওয়ার যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে, তা সচেতন মহলের সঙ্গে ভাগাভাগি করা প্রয়োজন বলে আমার মনে হয়েছে। যেমন :
১. ভূমি ও সম্পত্তি হারানোর আশঙ্কায় তাদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবন বিপর্যস্ত। এ সমস্যা নিরসনে রাষ্ট্র ও নাগরিক সমাজের কাছে তাদের বেদনার আর্তি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।
২. রাষ্ট্রের সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং সব নাগরিক অধিকারসহ উন্নয়নের মূল স্রোতোধারায় অংশীদার হওয়া।
৩. ঐতিহ্যগতভাবে নিজেদের হাতে তৈরি ‘হাড়িয়া’ বা দেশি মদ উৎপাদন ও গ্রহণ থেকে সচেতন আদিবাসীরা মুক্তি চায়। কিন্তু সমাজের কিছু অর্থলোভী স্বার্থান্বেষী মানুষ এই ব্যবস্থাকে টিকে রাখতে তৎপর। এ ব্যাপারে তারা প্রশাসন ও সচেতন নাগরিক সমাজের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে প্রকাশ্যে; বিশেষত নারীরা।
৪. আদিবাসীরা তাদের নিজেদের মাতৃভাষায় লেখাপড়া শিখতে চায়।
৫. এই আদিবাসী উৎসবে অংশগ্রহণকারী সমতলের পৃথক পৃথক নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর প্রদর্শিত দৈনন্দিন যাপিত জীবনের বিভিন্ন উপাদান, ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, খাদ্যবস্তু এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় যথেষ্ট মিল পরিলক্ষিত হলো যেন একই সুর, একই ভঙ্গি, একই মুদ্রা। মিল রয়েছে তাদের নৃ-তাত্ত্বিক অবয়বেও, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া। একই এলাকায় পাশাপাশি বসবাস, ধর্মান্তকরণ, সংখ্যাগুরুর ভাষা ও সংস্কৃতির প্রবল চাপ, নিজস্ব সংস্কৃতিচর্চায় পোষকতার অভাব এবং আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব ইত্যাদি নানান কারণে এসব নৃ-তাত্ত্বিক জাতিসত্তার পৃথক পৃথক নিজস্ব বৈশিষ্ট্যগুলোর পার্থক্য দিন দিন কমে আসছে এবং একটি সমজাতীয় আদিবাসী সংস্কৃতির কৃত্রিম রূপরেখা যেন ক্রমে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে।
৬. আদিবাসী ক্ষুদ্র জাতিসত্তার পৃথক জাতিসত্তার বৈশিষ্ট্যগুলো আমাদের জাতীয় সম্পদ। এ দেশে তাদের বিচিত্র জীবনধারা ও সৌন্দর্যম-িত সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যকে ‘পর্যটন আকর্ষণ’ হিসেবে ব্যবহার করার অমিত সম্ভাবনা বিদ্যমান। তাই এদের সাংস্কৃতিক জীবনধারার এসব বৈশিষ্ট্যকে পোষকতা ও প্রণোদনার মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখা জরুরি। এজন্য সরকারি সহায়তা ও আনুকূল্য যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন বেসরকারি সংস্থাগুলোর এ ধরনের নিয়মিত উদ্যোগ ও আয়োজনের। তবে এ কথা সত্য যে, ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনের ন্যূনতম চাহিদা পূরণের পরই শুধু এমন সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের চর্চা বা পরিচর্যা সম্ভব।
উৎসবের দুদিন এদের মলিন মুখগুলোতে যে অকৃত্রিম হাসির উজ্জ্বলতা দেখছি তাতে মনে হয়েছে এমন একটি বা দুটি দিনের জন্য তারা যেন দীর্ঘকাল প্রতীক্ষায় ছিল। তাদের অকৃত্রিম সরলতার জয় হোক।
লেখক : গবেষক ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা
চিনি আমাদের এক অত্যাবশ্যক ভোগ্যপণ্য। কিন্তু একদিকে দেশে লাগাতার চিনির উৎপাদন কমছে আর অন্যদিকে কিছুদিন পরপরই চিনির বাজারে তৈরি হচ্ছে কৃত্রিম সংকট। চিনির দাম হয়ে যাচ্ছে সাধারণ ভোক্তাদের নাগালের বাইরে। গত নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে বাজারে আবার নতুন করে চিনির সংকট দেখা গিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব মেনে গত ১৭ নভেম্বর কেজিপ্রতি দাম ১৩ টাকা বাড়িয়ে প্যাকেটজাত চিনি ১০৮ টাকা এবং খোলা চিনি ১০২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এখনো চিনির বাজার স্বাভাবিক হয়নি। এখনো নির্ধারিত দামের চেয়ে ২৫-৩০ টাকা বেশি দিয়ে চিনি কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই যে, দেশে একের পর এক রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল বন্ধ করার মধ্য দিয়ে চিনিশিল্পের বিকাশ রুদ্ধ করে দেওয়ার কারণেই চিনি ব্যবসায়ীদের হাতে একচেটিয়া ক্ষমতা চলে গেছে চিনির দাম নিয়ন্ত্রণের। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
এই পরিস্থিতি যে হতে পারে সেটা অনুমেয় ছিল। তিন বছর আগে আখভিত্তিক ৬টি চিনিকল বন্ধ ঘোষণার সময় আমরা বলেছিলাম এটি জাতির জন্য হবে একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এর ফলে সয়াবিন তেলের মতো চিনির দাম একশ’ টাকা অতিক্রম করবে। আখের আবাদ হ্রাস পাবে। কৃষি শ্রমিকের কর্মসংস্থান সংকুচিত হবে। গুড়ের দাম বেড়ে যাবে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পুষ্টি, পরিবেশ ও চিনিকল এলাকার গ্রামীণ অর্থনীতিতে। সেই সঙ্গে চিনির বাজারে পরিশোধন কারখানাগুলোর একচেটিয়া আধিপত্যের ফলে ভোক্তা ও আখচাষিরা পড়বে মহাবিপদে। আমরা সরকারকে এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত পরিহারের জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলাম। চিনি ও গুড়ের ক্ষেত্রে আমাদের আশঙ্কা শতভাগ সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। বর্তমানে খোলা চিনির দাম ১০২ টাকা নির্ধারণ করা হলেও ভোক্তাদের তা কিনতে হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়। আর প্রতিকেজি গুড় ১২০ টাকা এবং খেজুর নামের তথাকথিত ভেজাল ও চিনি মিশ্রিত গুড় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২২০ টাকায়। তাহলে শহরাঞ্চল আর গ্রামাঞ্চলের সাধারণ ভোক্তারা কীভাবে এই নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যটি কিনবেন? চিনির দামের এই নৈরাজ্য বন্ধ করতে হলে চিনিশিল্পের সংকটকে পাশ কাটিয়ে কেবল ব্যবসায়ীদের বিষয়ে সমালোচনা করে কোনো লাভ হবে না। আজ থেকে মাত্র এক বছর আগেও প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা। এর আগে যখন দেশে ১৫টি চিনিকল চালু ছিল, তখন প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ৬০ টাকা। দেশে র-সুগার থেকে পরিশোধিত চিনি তৈরির কারখানা স্থাপনের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় দেশীয় চিনি কলগুলোর সঙ্গে এক আত্মঘাতী অসম প্রতিযোগিতা। এসব কারণে সরকারি চিনিকলের চিনি অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে থাকে।
কৃষকের আখের মূল্য, কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, কারখানার উৎপাদন উপকরণ কিনতে পারে না চিনিকলগুলো টাকার অভাবে। ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ সময় মতো পরিশোধ করতে না পারায় সুদের বোঝা বাড়তে থাকে দিন দিন। আর সময় মতো আখচাষিদের পাওনা পরিশোধ না করায় আর টাকার অভাবে সার, কীটনাশক কিনতে না পারায় কমতে থাকে মিল জোন এলাকায় আখের চাষ। আখ উৎপাদন ও চিনিকলে আখ সরবরাহ। এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে অবৈধ পাওয়ার ক্র্যাশার মালিকরা সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবাধে গুড় তৈরি করে। ফলে আখের অভাবে চিনিকলগুলো নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বন্ধ হয়ে যায়। চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় না। লোকসানের বোঝা ভারী হতে থাকে। এভাবেই দেশের একমাত্র কৃষিভিত্তিক চিনিকলগুলোকে ঋণের ফাঁদে ফেলে ধংস করা হয়। অন্যদিকে একদল অসৎ অতিলোভী পরিশোধন কারখানা মালিক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চিনির বাজার এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, যাদের কাছে আখচাষিদের স্বার্থ নয়, ভোক্তার স্বার্থ নয়, শুধু মুনাফাই একমাত্র বিবেচ্য বিষয়। শর্ত ছিল, পরিশোধন কারখানায় উৎপাদিত চিনির ৫০ শতাংশ বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হবে। কিন্তু পরিশোধন কারখানা মালিকরা সে শর্ত পূরণ করেননি। তারা ছলে-বলে-কৌশলে র-সুগার থেকে উৎপাদিত চিনির সম্পূর্ণটাই দেশের বাজারে বিক্রি করে শর্ত ভঙ্গ করছেন। এই সব সমস্যা একদিনে সৃষ্টি হয়নি। সৃষ্টি হয়েছে বহু বছরের অবহেলা, দায়িত্বহীনতা এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে। সমস্যাগুলো সমাধানের মাধ্যমে বিদ্যমান চিনিকলগুলো এখনো টিকিয়ে রাখা সম্ভব। কিন্তু সেটা করতে হলে সরকারকে অবশ্যই নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নিয়ে চিনিশিল্পের পুনরুজ্জীবন ঘটাতে হবে। প্রশ্ন হলো সরকার কি সে পথে যাবে?
বিশিষ্ট বামপন্থি রাজনীতিক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রধান নেতা মণি সিংহের জন্ম ময়মনসিংহে ১৯০১ সালের ২৮ জুন। গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে তিনি কলকাতায় যান। কলকাতায় ১৯১৪ সালে তিনি প্রথমে সশস্ত্র বিপ্লবী গোষ্ঠী অনুশীলন দলে এবং পরে ১৯২৫ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। ১৯২৮ সালে কলকাতার মেটিয়াবুরুজে কেশরাম কটন মিলে শ্রমিকদের ১৩ দিনব্যাপী ধর্মঘটে নেতৃত্ব দিয়ে দাবি আদায়ের মাধ্যমে তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সফলতা অর্জন করেন। ১৯৩০ সালে তিনি গ্রেপ্তার হন। ১৯৩৭ সালে মুক্তি পেয়ে তিনি নিজ এলাকায় ফিরে আসেন এবং কৃষকদের সংগঠিত করে ‘টঙ্ক প্রথা’র বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলন পরিচালনা করেন। ১৯৪৫ সালে নেত্রকোনায় অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত কিষাণসভার মহাসম্মেলনের তিনি অন্যতম সংগঠক ও অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। দেশভাগের পর তিনি পূর্ববাংলায় কমিউনিস্ট আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বে টঙ্ক আন্দোলন সশস্ত্র রূপ পরিগ্রহ করলে পাকিস্তান সরকার ১৯৫১ সালে টঙ্কপ্রথা বাতিল করলেও হুলিয়া জারি করে তার সব সম্পত্তি ক্রোক করে নেয়। ১৯৫১ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯৫৬ সালে গোপনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে তিনি আবার সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালে তিনি গ্রেপ্তার হন। ১৯৭১ সালে রাজশাহী কারাগার থেকে বেরিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭৩ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে পার্টির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮০ সালে অনুষ্ঠিত কমিউনিস্ট পার্টির তৃতীয় কংগ্রেসে তিনি আবার পার্টির সভাপতি নির্বাচিত হন। ‘জীবনসংগ্রাম’ তার প্রকাশিত গ্রন্থ। ১৯৯০ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
গাজীপুরের টঙ্গীর বিসিক শিল্পনগরীতে ৩৬০ টাকা বেতনে কর্মজীবন শুরু করা আসাদুর রহমান কিরণ এখন গাজীপুর মহানগরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর বিভিন্ন দল বদলে ক্ষমতার পাশাপাশি প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। বিভিন্ন সূত্র মতে, কিরণ এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। তার এত সম্পদের মালিক হওয়ার পেছনে রয়েছে দখলবাজি, জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর দুর্নীতি ও অনিয়ম।
কিরণের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ ৩১টি দপ্তরে যে অভিযোগ জমা পড়েছে, তাতে ডিগবাজি দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসা এই ভারপ্রাপ্ত মেয়রের ৬০০ কোটি টাকার দুর্নীতি-অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এই অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য হাইকোর্ট দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছে।
২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর নির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। নগরীর ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ তখন ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পান।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণকে একাধিকবার ফোন করা হয়েছে। মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।
৩১ দপ্তরে অভিযোগ : গত বছর ২০ জুলাই ৩১টি দপ্তরে সচেতন নাগরিক, বাংলাদেশের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন মো. নজরুল ইসলাম। লিখিত অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে, দুদক, স্থানীয় সরকার, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে গত বছর জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি পালন না করেও সিটি করপোরেশনের তহবিল থেকে টাকা আত্মসাৎ করেছেন কিরণ।
জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার অভিযোগপত্রে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের দুর্নীতি ও অনিয়ম চিত্র তুলে ধরেছি।’
কিরণের অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র : ভারপ্রাপ্ত মেয়রের চেয়ারে বসে কিরণ দুর্নীতি-লুটপাট, কমিশন বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। দায়িত্ব নেওয়ার পর তার নজর পড়ে পুবাইলের চিরুলিয়ায় অর্পিত সম্পত্তির ওপর। ২৩ বিঘা জমি নিজের কবজায় নেন কিরণ। এর জন্য ভুয়া জমির মালিক বানান একজনকে। এ জমি নিজের করায়ত্তে নিতে সিটি করপোরেশনের ১৮ লাখ টাকা কর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। জানাজানি হয়ে গেলে কিছুদিন আগে কর পরিশোধ করেন। তবে অবৈধ প্রক্রিয়ায় জমির মালিক হওয়ায় ওই জমির খাজনা এখনো দিতে পারেননি কিরণ।
পোশাকশিল্প কারখানার সবচেয়ে বড় নগরী গাজীপুর। সিটি করপোরেশনের আয়ের সবচেয়ে বড় মাধ্যম শিল্প ও হোল্ডিং ট্যাক্স। আর সেখানেই অনিয়মের বড় ক্ষেত্র তৈরি করেছেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র। তিন/পাঁচ কোটি টাকার বকেয়া হোল্ডিং, শিল্প ট্যাক্স অর্ধেকে নামিয়ে এনে করপোরেশনের কোষাগারে মাত্র ৫০ লাখ টাকা জমা দিয়ে বাকি টাকা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে রেহাই দিয়ে দেন করদাতাদের। কিরণের এই কৌশলে বেঁচে যান কর ফাঁকি দেওয়া শিল্প-মালিকরা। কিন্তু রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় রাষ্ট্র। নগরের আটটি জোনে করের টাকা আত্মসাৎ করার অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিরণ ২০১৬-১৭ সালে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় একটি টেন্ডার আহ্বান করেন। টেন্ডার নম্বর : জিসিসি/জেড। ওই টেন্ডারের কাজের অগ্রগতি না থাকায় জাহাঙ্গীর আলম মেয়র নির্বাচিত হলে ওই টেন্ডারের কোনো বিল পরিশোধ করতে পারেননি কিরণ। ২০২১ সালে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই বিল পরিশোধের উদ্যোগ নেন। ওই সময়ের বিভিন্ন ঠিকাদারকে ডেকে তাদের কাছ থেকে কাজের হিসাব করে তার কমিশন আদায় করেন কিরণ। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির কিছু চিত্র সিটি করপোরেশনের চেক রেজিস্ট্রার বই ঘেঁটেও পাওয়া গেছে।
উত্তরায় ‘অস্থায়ী কার্যালয়’ : উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরে ৭ নম্বর রোডে ১০ নম্বর বাড়ির ছয়তলায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের একটি ‘কার্যালয়’ করেছেন কিরণ। উত্তরার এ কার্যালয়ে বসে ঠিকাদারদের নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। লেনদেন-দরবার সবই হয় এ বাড়িতে বসেই। পার্সেন্টেজ ছাড়া যেমন ঠিকাদারদের কাজের বিল পরিশোধ করা হয় না, তেমনি পার্সেন্টেজ ছাড়া ঠিকাদারি কাজও পান না কেউই। কোন কাজ কে পাবে, কে পাবে না, কে কত পার্সেন্ট কমিশন দেবে এসব হিসাব ও মধ্যরাতের প্রমোদ-ফুর্তির যে ব্যয় হয় সিটি করপোরেশনের এলআর ফান্ড থেকে নির্বাহ করা হয়। শিল্পাঞ্চল-সমৃদ্ধ গাজীপুর নগরীর অধিকাংশ ব্যবসায়ী-ঠিকাদার ‘১০ পার্সেন্ট’ হিসাবেও কিরণকে চিনে-জানে।
বর্তমানে গাজীপুর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা সারা জীবন রাজনীতি করেছি দলের জন্য। অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছি কিন্তু মূল্যায়ন পাইনি। একটি কাজের জন্য আমি ছয় মাস ঘুরছি। কিন্তু কিরণ আমাকে কাজ দিচ্ছেন না। কারণ আমার কাছ থেকে পার্সেন্টেজ নিতে পারবেন না।’
শুধু কী তা-ই, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজনের নামে গত বছর ১৭ মার্চ কোনো আয়োজন না করেই কিরণ সিটি করপোরেশনের খরচের তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগও আছে। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৭৬ জন কাউন্সিলর এবং কিছু কর্মকর্তার সিলেটে পিকনিক আয়োজন করার নামে করপোরেশনের তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা খরচ বাবদ দেখিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগও আছে।
কিরণের সম্পদ : টঙ্গীর পাগাড়, ঢাকার আশুলিয়া এবং গাজীপুরে নিজ নামে, স্ত্রী, শ্যালক ও শ্যালিকার নামে ১১২ বিঘা জমির মালিক কিরণ। টঙ্গীর পাগাড়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কিছু জমি রয়েছে, যা নয়ছয় ও ভয়ভীতি দেখিয়ে দলিল করে নিয়েছেন তিনি। নজরুল ইসলামের অভিযোগ অনুযায়ী, উত্তরায় ১১ নম্বর সেক্টরে ৭ নম্বর রোডের ১০ নম্বর বাড়িটি সাততলা। এটি নির্মাণ করতে কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। একই এলাকার ৭ নম্বর সেক্টরে ১৮ নম্বর রোডে ৯৫ নম্বর বাড়ি রয়েছে। বারোতলা নির্মাণাধীন ওই ভবনের আনুমানিক মূল্য ৩৫ কোটি টাকা। গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কে ফ্ল্যাটের তথ্যও পাওয়া গেছে। ২ হাজার ৫০০ বর্গফুটের ওই ফ্ল্যাটের মূল্য কমপক্ষে সাত কোটি টাকা।
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় স্ত্রী ও নিজের নামে অন্তত ২০০ বিঘা জমির ওপর ভারপ্রাপ্ত মেয়রের কারখানা রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ৩০০ কোটি টাকা হতে পারে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অধীনে টঙ্গীতে তিনটি কারখানা আছে তার। এগুলোর আনুমানিক মূল্য ৩০০ কোটি কোটি টাকা।
কিরণের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত কয়েকশ কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে। তিনি নিজের ও স্ত্রীর নামে যুক্তরাষ্ট্রে নিউ ইয়র্ক শহরে বাড়ি করেছেন বলেও অভিযোগ আছে। কিরণ দ্বৈত নাগরিক বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।
হাইকোর্টের আদেশ : গত বছরের ২০ জুলাই দুদকে জমা পড়া অভিযোগ লাল ফিতায় আটকে গেলে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন হয়। গত বছর ২১ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করা হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালত কিরণের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে। হাইকোর্ট চার মাসের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে সময় বেঁধে দেন। একই সঙ্গে গাজীপুরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদকের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত।
রাজনীতিতে উত্থান : প্রিন্টিং প্রেস কারখানায় বাইন্ডার-ম্যান হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন আসাদুর রহমান কিরণ। ১৯৮৪-৮৫ সালে এলিট প্রিন্টিং প্রেস নামে ওই কারখানায় চাকরি করা কিরণ ১৯৮৬ সালে রাজনীতিতে আসেন। ওই সময় তিনি জাতীয় পার্টির যুব সংগঠন যুব সংহতির টঙ্গীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই সময় গাজীপুর নিয়ন্ত্রণ করতেন হাসান উদ্দিন সরকার। তিনি জাতীয় পার্টি ও পরে বিএনপির রাজনীতিতেও যুক্ত হন। ওই সময়ের সবচেয়ে ক্ষমতাধর হাসান উদ্দিন সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা ও তার ঘনিষ্ঠ পরিচিতি লাভ করে শুরু করেন জমি দখল। টঙ্গী, পাগাড় মৌজায় হিন্দু-খ্রিস্টানের মালিকানায় থাকা জমি দখল করে নেন তিনি। পরে প্লট বানিয়ে চড়া দামে বিক্রি করেন। তবে প্রিন্টিং প্রেসের শ্রমিক কিরণ ওই সময় টঙ্গীর বিসিক এলাকায় শ্রমিক নেতা হিসেবেও আধিপত্য বিস্তার করেন। হিন্দু-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কেউ জমি দিতে না চাইলে রাজনৈতিক চাপ ও সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে উচ্ছেদ করতেন। পাগাড় শিল্পাঞ্চল এলাকা হওয়ায় ওই এলাকায় টার্গেট করে জমি দখল করেন কিরণ। টঙ্গী পৌরসভা হিসেবে প্রথম ভোটে ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কমিশনারও নির্বাচিত হন। তত দিনে ক্ষমতা-সম্পদ ও অঢেল অর্থের মালিক হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর গুরু পাল্টে কিরণ হয়ে যান সাবেক পৌর মেয়র গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লার ‘মাইম্যান’। এই সুযোগে ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত হয়ে ওঠে কিরণের। ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে আজমত উল্লা মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক আবদুল মান্নানের কাছে পরাজিত হন। কিরণ মূলত দুর্নীতি-অনিয়ম শেখেন তখন থেকেই। বিএনপি নেতা মান্নান মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত হলে তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান। গাজীপুরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচন কেন্দ্র করে আজমত উল্লার সঙ্গেও সুসম্পর্ক নেই কিরণের।
গাজীপুরের মাওনা এলাকার আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চেয়ার ছুঁয়েই কিরণ স্বেচ্ছাচারিতা, লুটপাট, ভূমিদখলসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা তিনি করেননি। দলীয় লোককে সরিয়ে রেখেছেন, সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রেখেছেন। কারণ, কিরণ আওয়ামী লীগ নয়, মূলত সুবিধাবাদী।’
ভারপ্রাপ্ত মেয়রের বিষয়ে জানতে চাইলে আজমত উল্লা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কিরণ অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে এসেছেন সত্যি, তবে তিনি দলের জন্য কাজ করেছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের যে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে সেটা তো প্রমাণ হয়নি এখনো। প্রমাণ হলে তখন মন্তব্য করা যাবে।’
আজ রবিবার (২ এপ্রিল) সকাল ৯টায় রাজধানী ঢাকার বায়ুর মানের স্কোর ছিল ১২৫। এই স্কোরের অর্থ- ঢাকার দূষণমাত্রা 'সংবেদনশীলদের জন্য অস্বাস্থ্যকর'। বাতাসের মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের (আইকিউএয়ার) সূচক থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
একই সময়ে বায়ুদূষণের শীর্ষে রয়েছে থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই। শহরটির দূষণের স্কোর ২৫৪ অর্থাৎ 'খুবই অস্বাস্থ্যকর'। দ্বিতীয় চীনের রাজধানী বেইজিং, স্কোর ১৬৬ অর্থাৎ 'অস্বাস্থ্যকর'। আর ১৬৪ স্কোর নিয়ে তৃতীয় ভারতের দিল্লি, এটিও 'অস্বাস্থ্যকর'।
উল্লেখ্য, স্কোর শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকলে বায়ুর মান ভালো বলে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে মাঝারি, সংবেদনশীলদের জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর, ২০১ থেকে ৩০০ খুবই অস্বাস্থ্যকর আর ৩০১-এর বেশি হলে বিপজ্জনক।
বরকতময় রমজান মাস পাওয়া প্রতিটি মুমিনের জন্য মহা সৌভাগ্যের বিষয়। কেননা এ মাসের মর্যাদা অনেক বেশি। যাতে বান্দার জন্য মহান মনিবের সন্তুষ্টি অর্জন করা অন্য সময়ের চেয়ে সহজতর। কোরআনে কারিমের ভাষায়, ‘তোমরা সংখ্যা পূর্ণ করবে এবং তোমাদের সৎপথে পরিচালিত করার কারণে তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করবে এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।’ -সুরা বাকারা : ১৮৫
বর্ণিত আয়াতে ‘শাহিদা’ (উপস্থিত ও বর্তমান থাকা) শব্দ দিয়ে রোজা সম্পর্কিত বহু হুকুম-আহকাম ও মাসয়ালা-মাসায়েলের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। আর আয়াতের শেষাংশে বান্দাকে ‘কৃতজ্ঞ’ হতে বলা হয়েছে। কৃতজ্ঞতর সাধারণ অর্থ উপকারীর উপকার মনে রাখা ও স্বীকার করে। এর সঙ্গে প্রশংসা, মহিমা, মূল্য ও যোগ্যতার বিষয়গুলো জড়িত। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ইসলামের শিক্ষা হলো- সর্বাবস্থায় সবকিছুর জন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো। কেননা তিনিই তো এর প্রাপ্য। চোখের প্রতি পলকে এবং হৃৎপিণ্ডের ওঠানামার সঙ্গে আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে তার দেওয়া অসংখ্য নিয়ামতে ডুবিয়ে রেখেছেন। এই নিয়ামত এবং দান, যেগুলো প্রতি দিনে-রাতে নবায়ন হচ্ছে, সেগুলোর জন্য আমাদের উচিত আল্লাহকে ধন্যবাদ জানানো। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং যারা উপদেশ গ্রহণ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশে ইচ্ছুক, তাদের জন্য রাত এবং দিনকে সৃষ্টি করেছেন পরস্পরের অনুগামীরূপে।’ -সুরা আল ফুরকান : ৬২
ইসলাম কৃতজ্ঞতাকে উচ্চাসন দিয়েছে। তাই তো উপকারী ব্যক্তির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে। এ কৃতজ্ঞতা যদি কেউ প্রকাশ না করে, তাহলে সে সমাজের চোখে তো নিন্দিত হয়ই, সে নিন্দিত হয় মহান রাব্বুল আলামিনের কাছেও। নবী কারিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে মানুষের কৃতজ্ঞতা আদায় করে না, সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞ হয় না।’ -জামে তিরমিজি : ১৯৫৪
উল্লিখিত কোরআনের আয়াত ও হাদিস দ্বারা এটা স্পষ্ট যে মানুষের অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা আদায় করা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশেরই অংশ। ইসলাম বলে, কৃতজ্ঞতার মানসিকতা লালন করে যেতে হবে। এমন যেন না হয়, আমার বিপদে একজন পাশে দাঁড়াল, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিল, কিন্তু আমি তা ভুলে গেলাম, তার প্রতিপক্ষ হয়ে গেলাম। এমন হলে পারস্পরিক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়।
অকৃতজ্ঞতা নীতিহীনতার পরিচয়। এর মাধ্যমে নিয়ামতের অপরিসীম ধারাকে দাতার সামনেই অসম্মান করা হয়। এ ধরনের আচরণের ফলে আরও বেশি কিছু চাওয়া কিংবা পাওয়ার অধিকার হ্রাস পায়। মানবজাতির প্রতি আদেশ হলো, তাদের প্রতিপালকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে।
কৃতজ্ঞতা কোনো কঠিন দায়িত্ব নয়, যেখানে ধৈর্যের সঙ্গে পথ চলতে হয়; বরং এটি হলো পরিপূর্ণতার পথ, যেটি দৃঢ় সংকল্প এবং উদ্দেশ্য নিয়ে পাড়ি দিতে হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ! আমি তোমাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে পবিত্র বস্তু আহার করো এবং আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো; যদি তোমরা শুধু তারই ইবাদত করে থাকো।’ -সুরা বাকারা : ১৭২
মধুর আবেগ এবং হৃদয়ের উপলব্ধি দিয়ে আল্লাহর নিয়ামতের শোকরিয়া আদায়, একজন ব্যক্তিকে আরও বেশি পাওয়ার যোগ্য করে তোলে। তার রহমতের বর্ষণ ঠিক সেই উর্বর জমিতে ঢালা পানির ন্যায়, যা জমিনকে ফুলে-ফলে সুশোভিত করে তোলে। কৃতজ্ঞতা শুধু ঠোঁটে প্রকাশযোগ্য কোনো শব্দ নয়; বরং কৃতজ্ঞতা হলো হৃদয়ের এমন এক অনুভূতি যা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তার জীবনের প্রতিটি কাজ এবং আচরণের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন। অকৃতজ্ঞতার পরিণাম সম্পর্কে মানবজাতিকে ভয়ংকর পরিণতির ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব। তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও, আর অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ -সুরা বাকারা : ১৫২
রমজান মাসে অনেক পুণ্যের সমাহার ঘটে। পুণ্যময় এসব কাজের একটি হতে পারে আল্লাহকে স্মরণ ও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা। কারণ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারীকে অনুগ্রহ লাভের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।
লেখক : খতিব, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ
ভাড়া করা বিমানে উড়িয়ে নিয়েও মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রথম ম্যাচে একাদশে রাখল না দিল্লি ক্যাপিটালস। আসরে তাদের শুরুটাও ভালো হলো না। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারল মোস্তাফিজবিহীন দিল্লি।
ঘরের মাঠে ৫০ রানের জয়ে আসর শুরু করল লক্ষ্ণৌ। ১৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দিল্লি থামে ৯ উইকেটে ১৪৩ রানে। ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচায় ৫ উইকেট নিয়ে লক্ষ্ণৌয়ের জয়ের নায়ক মার্ক উড।
এদিন দিল্লির ব্যাটিং ছিল পুরো ফ্লপ। দলের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ৪৮ বলে ৫৬ রান করেছেন। পাশাপাশি রাইলি রোশো ২০ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলেন। কিন্তু বাকিরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ফলে যা হরার তাই হলো ম্যাচের ফল।
এর আগে স্বাগতিক দলের হয়ে ঝড় তোলেন কাইল মেয়ার্স। এই ক্যারিবীয়ান ৩৮ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন। ২টি চারের সঙ্গে হাঁকান ৭টি ছক্কা। এ ছাড়া নিকোলস পুরান ২১ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন। সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯৩ রানের পুঁজি গড়ে লক্ষ্ণৌ।
গত অক্টোবরের পর আর্সেনালের জার্সিতে প্রথম গোলের দেখা পেলেন গাব্রিয়েল জেসুস। তার আবার জোড়া গোল। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের জ্বলে ওঠার দিনে লিডস ইউনাইটেডকে উড়িয়ে ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে ফের আট পয়েন্টে এগিয়ে গেল আর্সেনাল।
ঘরের মাঠে শনিবার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটি ৪-১ গোলে জিতে আর্সেনাল। স্পট কিকে দলকে প্রথম এগিয়ে দেন জেসুস। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বেন হোয়াইট ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। এর খানিক পরই জোড়া গোল পূর্ণ করেন জেসুস।
এরপর লিডস একটি গোল শোধ করলেও গ্রানিত জাকার গোলে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।
আন্তর্জাতিক বিরতি থেকে ফেরার পর এটিই প্রথম ম্যাচ ছিল আর্সেনালের। বিরতিতে যাওয়ার আগে নিজেদের মাঠে একই ব্যবধানে তারা হারিয়েছিল ক্রিস্টাল প্যালেসকে।
এই জয়ে ২৯ ম্যাচে ৭২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও মজবুত করল গানাররা। ২০০৩-০৪ মৌসুমের পর প্রথমবার প্রিমিয়ার লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখছে আর্সেনাল। তাদের সঙ্গে গত লিগের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট ব্যবধান ৮।
গানারদের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে সিটি। একই দিন তারাও নিজেদের মাঠে লিভারপুলকে উড়িয়ে দিয়েছে ৪-১ গোলে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এক বছরেরও কম। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচন হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করা দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো আন্দোলন করছে।
এ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত বছরের মাঝামাঝি থেকে এই চাপ ক্রমশ বাড়ছে। বিদেশিদের মধ্যে এবার যুক্তরাষ্ট্রের চাপ অনেক বেশি। এর আলামত দেখা যাচ্ছে কয়েক মাস ধরে। নির্বাচন ছাড়াও দেশটি মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীন প্রশ্নে অনেক সোচ্চার। ২০২১ সালের ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি।
সরকারের তরফ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য তারা বিদেশিদের উদ্যোগ নিতে বলছে। একই সঙ্গে সরকার যেকোনো চাপে নতি স্বীকার করবে না, সেটাও বলেছে।
কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৯০ সালে দেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি আসার পর থেকেই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক আগ্রহ বাড়ছে। নির্বাচনের এক বছর আগে থেকেই প্রভাবশালী দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নানা সবক দিতে থাকে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।
তাদের মতে, বরং নির্বাচন ঘিরে পরাশক্তিগুলোর প্রভাব লক্ষণীয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকেই প্রতিবেশী দেশ এবং বড় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতি এবং সরকার নিয়ে সবচেয়ে বেশি আধিপত্য দেখিয়ে আসছিল ভারত। ১৯৯০ সাল থেকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পশ্চিমাদের প্রভাব। আর তিন দশক ধরে বিভিন্ন কূটনৈতিক জোট, আঞ্চলিক জোট এবং সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আগ্রহ বেড়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রভাবশালী দেশগুলোর নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ যতই থাক না কেন, এর মূল কারণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা। তারা মনে করছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সমাধান যদি নিজেরা না করতে পারি, তাহলে বাইরের প্রভাব বাড়তে থাকবে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালী উর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশকে তাদের প্রভাব বলয়ে রাখতে চায়। তাদের নিজেদের দেশেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। বর্তমান সরকারও অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করছে। তাদের এই চাপ কাজে দেবে না।’ আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলের অভিমত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে এবং আঞ্চলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কারণও তাই। কূটনীতিকরা বলছেন, ভারত, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ থাকলেও এক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতা লক্ষণীয়। এ ক্ষেত্রে সরকারবিরোধী বিএনপির পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বারবার নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি কিছুটা হলেও গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন পদ্ধতি এবং নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র অনেক বেশি সোচ্চার হলেও তাদের কূটনীতি সরকারবিরোধী দলগুলোর পক্ষে যাবে এমন ধারণা করার কোনো কারণ নেই। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। এটা যেমন সত্য, তেমনি ইন্দো প্যাসিফিক এবং এ অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বিস্তারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের বোঝাপড়াটা বেশি জরুরি। আর সে কারণেই বিএনপি যতই তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলুক যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে না। তাদের বক্তব্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং নির্বাচনে বিরোধীপক্ষের জন্য সুষ্ঠু ও অবাধ পরিবেশ তৈরি করা।
কূটনীতিক সূত্রগুলো বলছে, আগের কয়েক দফা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী থাকলেও ভারতের সঙ্গে একধরনের সমঝোতা করে বা আলোচনা করে তাদের মতামত দিয়েছে। কিন্তু ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে। এবার যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন নিয়ে পরামর্শ এবং তাদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে বেশি সোচ্চার।
বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক চর্চার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগের বিষয়টি প্রথম প্রকাশ পায় ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে। এরপর থেকেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংলাপও হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল এবং প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করেছেন। তাদের সফরে আগামী নির্বাচন, বিরোধীপক্ষের প্রতি সরকারের আচরণ, মানবাধিকার ও সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সরকার, আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
গত ২১ মার্চ নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের উদ্ধৃত করে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে, নির্বাচনে জাল ভোট দেওয়া হয়েছে এবং বিরোধীদলীয় পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয় দেখানোসহ গুরুতর অনিয়ম রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত সম্মান ও অংশীদারিত্বের মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে মানবাধিকারের বিষয়গুলো উত্থাপন করে। এটা তারা চালিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এমন আগ্রহের কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব বলয় বাড়াতে চায় দেশটি। এরই মধ্যে দেশটি এশিয়ায় তাদের বন্ধু দেশগুলোকে নিয়ে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’ (আইপিএস) পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এর আওতায় ইন্দো-প্যাসিফিক ফোরাম গঠন করা হয়েছে। একই কৌশলের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ভারত সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে কোয়াড গঠন করেছে। এগুলোর লক্ষ্য হলো চীনের বিরুদ্ধে এ অঞ্চলে একটি শক্তিশালী বলয় গঠন করা। ভারতের পাশাপাশি এ বলয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকেও চায়। বাংলাদেশ যেন কোনোভাবেই চীনের বলয়ে না যেতে পারে, সেই কৌশলের অংশ হিসেবেও আগামী নির্বাচন ঘিরে চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছে দেশটি। যদিও বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোনো জোটেই যায়নি। আবার ‘বার্মা অ্যাক্ট’ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রস্তাবে তারা বাংলাদেশকে পাশে চায়। এসব কারণে বাংলাদেশকে চাপে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ নানা ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুসহ ঢাকায় সফররত দেশটির কর্মকর্তারা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের পাশাপাশি দুই দেশের সম্পর্ক নিয়েও ইতিবাচক কথা বলেন। এ ছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বিভিন্ন বক্তব্যেও নির্বাচনের পরিবেশ ও স্বচ্ছতা নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পেয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে ঢাকা সফরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তারও বলেছিলেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে তারা সরকারকে এবং এই দেশকে সহযোগিতা করেব। তিনি সেই সময় দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা দূতাবাস ও ইউএসএইডের বাংলাদেশ কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব তুলে ধরেন।
গত বছরের অক্টোবরে ঢাকায় এসেই এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দেখতে চায়। এরপর থেকে তিনি নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রায় অভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আসছেন। পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো একটি দলকে সমর্থন করে না। তারা চান জনগণ তাদের পছন্দের সরকার নির্বাচন করবে।
এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসহ ১৪টি দেশের কূটনীতিকরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন নিয়ে তাদের মনোভাব তুলে ধরেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অভিনন্দন বার্তায়ও বাংলাদেশে সবার জন্য উন্মুক্ত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। দিবসটি উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শুভেচ্ছা বার্তায় অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে লেখা বাইডেনের এ বার্তায় বর্তমান সরকার ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসাও করা হয়েছে।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক এইচ শোলে তার ঢাকা সফরে বলেছিলেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, অর্থাৎ যারা পরাজিত হবেন, তারাও যেন মনে করেন নির্বাচনটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ হয়েছে এমনটাই তারা চান। তিনি বলেছিলেন, শক্তিশালী সুশীল সমাজ, মুক্ত গণমাধ্যম এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক পরিবেশ চায় যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে নেতিবাচক প্রশ্ন উঠবে না। এই পরিবেশ তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও শোলে জানান।
ডেরেক শোলে চলে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, সরকারপক্ষ থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিকে বলা হয়েছে তারা অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। তারা সরকারের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত। তবে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও পূর্ববর্তী নির্বাচন নিয়ে তারা তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। যখনই প্রয়োজন হবে, তারা সেটা জানাবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশিদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর সুযোগ নেই। এই সুযোগটা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোই করে দিয়ে আসছে। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র একটি শক্তিশালী অবস্থান চায়। এ জন্যই তারা কথা বলছে।’