
আন্দালিব রাশদী কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক। পড়াশোনা ঢাকা, ওয়েলস ও লন্ডনে। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে তিনি লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন, যা বাংলাদেশে বিরল। উপন্যাস, ছোটগল্পের পাশাপাশি তিনি নিয়মিতভাবে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কলাম ও প্রবন্ধ লেখেন। বিদায়ী ও নতুন বছরের প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন দেশ রূপান্তরের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সম্পাদকীয় বিভাগের সাঈদ জুবেরী
দেশ রূপান্তর : বিদায়ী বছরকে কী দিয়ে মূল্যায়ন করবেন মুদ্রাস্ফীতি, মূল্যস্ফীতি, ব্যাংক লুট নাকি পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল দিয়ে?
আন্দালিব রাশদী : যে কটা বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে তার সবগুলোই বাস্তবতা। সময় সংকট ও সাফল্যের মূলে রয়েছে আর্থিক ক্ষমতা এবং ব্যবস্থাপনা। সঙ্গে যোগ হয় বৈশ্বক পরিস্থিতি। বৈশ্বিক মহামারী কিংবা যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারের যে অস্থিতিশীলতা সেখানে বাংলাদেশের হস্তক্ষেপের সুযোগ কম। কিন্তু রাষ্ট্র যা ঠেকাতে পারে তা হচ্ছে তহবিল লুণ্ঠন ও পাচার। ক্ষমতার সমর্থন ছাড়া সংগঠিত দুর্বৃত্তায়ন সম্ভব নয়। ব্যাংক মালিকরা এক সময় রাষ্ট্র গঠনে উদার হাতে অর্থব্যয় করতেন, এখন রাষ্ট্রের অর্থ দুহাতে তুলে নিয়ে ব্যাংক মালিক হওয়া যায়, ব্যাংকের সমুদয় অর্থ লোপাট করে জনগণের সঞ্চয় ফিরিয়ে দেওয়ার দায় সরকারের ঘাড়ে ফেলে হাওয়া খেয়ে বেড়ানো যায়।
কেবল ২০২২ নয়, অনেক বছর ধরেই চলছে প্রতিষ্ঠানের ‘ইন্টেগ্রিটি’ ভেঙে দেওয়ার প্রক্রিয়া। যদি প্রশ্ন করি বলুন বাংলাদেশের কোন প্রতিষ্ঠানটির ইন্টেগ্রিটি নিয়ে আপনি গৌরবান্বিত বিশ্ববিদ্যালয়, আমলাতন্ত্র, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ন্যায়বিচার, প্রশাসন, পূর্ত ও নির্মাণ, ব্যাংক, শুল্ক, সংবাদ মাধ্যম আপনি দ্বিধান্বিত হয়ে পড়বেন। জোর গলায় কেন, মিনমিন করেও গৌরব প্রকাশ করতে দ্বিধান্বিত হবেন। প্রশংসিত থাকবেন এ দেশের সাধারণ মানুষ, কৃষক, শ্রমিক, গার্মেন্টস কর্মী, প্রবাসী ওয়েজ আর্নার প্রমুখ।
অবকাঠামো উন্নয়ন অবশ্যই প্রশংসনীয় এটাই অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি। একই সঙ্গে উন্নয়নের জন্য প্রদেয় মূল্যও পরীক্ষণীয়।
দেশ রূপান্তর : আগামী বছর বাংলাদেশে নির্বাচনের বছর। একে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক টানাপড়েন কি আরও বাড়বে বলে মনে করছেন?
আন্দালিব রাশদী : আমি রাজনীতিবিদ নই, রাজনীতি বিশ্লেষকও নই; গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোটাধিকার এসব বিভ্রান্তিকর বুলি আমরা যাদের কাছে শিখেছি, মূলত ব্রিটেনের কাছে, আমরা মোটেও তাদের মতো মানুষ নই, তাদের চেয়ে হীনমানের। ২০২২ সালেই তো সেখানে তিন প্রধানমন্ত্রীর শাসন চলেছে, একজন লিজ ট্রাস দেড় মাস অতিক্রম করতে পারেননি। ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা কি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীরা করেন না? অবশ্যই করেন। রাজনৈতিক কৌশলে তা করেন। আমরা, ক্ষমতায় যারাই অধিষ্ঠিত হই না কেন ক্ষমতা ধরে রাখতে ছল-বল-কৌশলের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে থাকি। কোনো কোনো দেশের জন্য ভোটার গুরুত্বপূর্ণ নন, গুরুত্বপূর্ণ যিনি ভোট গণনা করেন। ১৯৭০-এর যে নির্বাচন কার্যত বাংলাদেশের স্বাধীনতার রায় দিয়েছিল সে নির্বাচনে চিফ ইলেকশন কমিশনার ছিলেন একজন বাঙালি বিচারপতি। সেই বিচারপতি আবদুস সাত্তার বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিও হয়েছিলেন। যে দল যখন বিরোধী পক্ষ হয় তাদের পছন্দ থাকে ভারতের সেই বিখ্যাত টি এন সেমানের মতো ব্যক্তি যেন চিফ ইলেকশন কমিশনার হন। যেন নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীনদের চিরকালীন চাওয়া একজন দলনফর প্রধান নির্বাচক। পরস্পরবিরোধী চাওয়া উত্তেজনা ও টানাপড়েন সৃষ্টি করতে বাধ্য। বাংলাদেশে নির্বাচনের ইতিহাস হাস্যকর গণতন্ত্র সৃষ্টি করেছে। কর্মজীবনে ব্যক্তিগতভাবে একটি নির্বাচন কন্ট্রোলরুমের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে একজন রিটার্নিং অফিসারকে আমি অনুরোধ করেছিলাম, প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা একটু কমিয়ে বলুন, প্রায় শতভাগ হয়ে যাচ্ছে। তিনি বললেন, আমার আশপাশে কোনো স্ট্যাটিসশিয়ান নেই, যা করার আপনারাই করে নিন। আশির দশকের এক জাতীয় নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ একজন মন্ত্রী বন্ধ-দরজা বৈঠকে নির্দেশ দিয়েছিলেন : এই জেলায় অপজিশনকে একটা সিট দিতেই হবে। কিন্তু কোনোভাবেই যেন তা দুই অতিক্রম না করে। পেশাগত কারণে আমিও বন্ধ দরজা বৈঠকে হাজির ছিলাম। পরিস্থিতি এখন অনেক পাল্টে গেছে। দলমত নির্বিশেষে ‘আমি জিতলেই’ গণতন্ত্রের জয় জয়কার অন্যথায় সব প্রহসন। জর্জ বার্নাড শ প্রায় সোয়া শত বছর আগে বলেছিলেন : নির্বাচন হচ্ছে নৈতিক সন্ত্রাস, যুদ্ধের মতোই তবে রক্তপাতহীন। এর সঙ্গে যুক্ত সবার আত্মাই কর্দমাক্ত হয়ে ওঠে।’ ২০২৪-এর নির্বাচনী অস্থিরতা ও দ্বন্দ্ব ইন্টার পার্টি এবং ইন্ট্রা পার্টি অতি ভয়ংকর হয়ে উঠলে কথিত গণতন্ত্র চর্চা থেমে যাবে।
দেশ রূপান্তর : বর্তমানে সারা বিশ্বেই আমরা একটা কর্র্তৃত্ববাদী শাসন কাঠামোর উত্থান দেখতে পাচ্ছি, এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
আন্দালিব রাশদী : কর্তৃত্ববাদ এখন অজেয় বৈশ্বিক প্রপঞ্চ। গণতন্ত্রের প্রবক্তারা ভাবেননি যে ‘ইললিবারেল ডেমোক্রেসি’ পৃথিবীতে জাঁকিয়ে বসবে। গ্লোবাল ফ্রিডম প্রতিবেদনটি দেখুন। বিভিন্ন সূচক বলে পৃথিবীর ষাটটি দেশের গণতান্ত্রিক অবস্থান নেমে গেছে। পৃথিবীর কুড়ি শতক মানুষ মোটামুটিভাবে লিবারেল গণতন্ত্রের ছায়াতলে বসবাস করছে। প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের দোহাইয়ের আড়ালে গণতান্ত্রিক একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। একদা জনমুখী বাম হিসেবে সমাদৃত নেতৃবৃন্দের অনেকেই গণতান্ত্রিক একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠায় জুনিয়র পার্টনার হয়ে গেছেন। ইউনিয়ন অব সোভিয়েত সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক কর্তৃত্ববাদী হলেও পৃথিবীকে ভারসাম্যপূর্ণ দ্বি-মেরু করে রাখতে সক্ষম ছিল। ভাঙনের পর এক মেরুর কথিত গণতান্ত্রিক বিশ্ব প্রায় বিনা চ্যালেঞ্জেই গণতন্ত্রের লিবারেলিজমকে দেহচ্যুত করতে বিভিন্নমুখী অস্ত্রোপচার চালিয়েছে। গণতন্ত্রায়নের নামে স্বৈরতান্ত্রিক প্রক্রিয়াসমূহের চর্চাই বেশি হয়েছে। সামরিক অভ্যুথান ঘটাতে সামরিক বাহিনী যতটা না এগিয়ে এসেছে তার চেয়ে কথিত গণতান্ত্রিক শক্তিই তাদের আসার পথ সুগম করে স্বাগত জানিয়েছে। ‘দ্য রাস্ট উইদিন ডেমোক্রেসি’- গণতন্ত্রের ভেতরের পচন চেনার জন্য মার্কিন সাধারণ নির্বাচন-উত্তর ক্যাপিটল হিল অবরোধ, তছনছ ও লুণ্ঠনের দৃশ্যই যথেষ্ট। সাড়ে চারশ বছর আগে অসন্তুষ্ট জনতা নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ইউনান ডি উইট ও তার ক্ষমতাধর ভাইকে শুধু হত্যাই করেনি, তাদের মৃতদেহ নিয়ে গণউল্লাস হয়েছে এবং তাদের বুক ফেঁড়ে ক্ষিপ্ত মানুষ কলজেতে কামড় বসিয়েছে, তাদের চোখ তুলে স্যুভেনির হিসেবে নিয়ে গেছে। ক’বছর পর সেই জনতাই বলেছে, ইউনান ডি উইট-ইতো ভালো ছিলেন। ২০২২-এর অন্যতম দৃষ্টি উন্মোচক শ্রীলঙ্কার রাজাপাকসে সরকারের পতন, পলায়ন, রাজভবনের গণদখল। আমরা অবহিত আছি মাহিন্দা রাজাপাকসে ফিরে এসেছেন, নিরাপদ জীবনযাপন করছেন; আসছে নির্বাচনে গণতন্ত্রের হাত ধরেই তিনি আবারও নির্বাচিত হবেন মনে করা হচ্ছে। যে মার্কোসকে ফিলিপাইন গণঅভ্যুথানে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশ থেকে তাড়িয়েছিল তার পুত্র বংবং মার্কোস এখন সে দেশের প্রেসিডেন্ট, বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন।
দেশ রূপান্তর : বছর শেষের দিকে বিশ্বের নানা দেশে ফের করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির খবর যেমন পেয়েছি, তেমনি সারা বছর আলোচনায় ছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে সবাই বলছে ২০২৩ সাল অমঙ্গল বার্তা বয়ে আনতে যাচ্ছে। আপনার মতামত কী?
আন্দালিব রাশদী : নস্ত্রাদামুস কিংবা জিন ডিক্সনের পথে না হেঁটেও এক সপ্তাহের খবরের কাগজ ঘাঁটাঘাঁটি করলে মোটামুটি সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় : যদিও ১৩ বিলিয়ন শট ড্যাক্সিন এর মধ্যেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে তারপরও কভিড-১৯ ভাইরাসের বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট যে বছরভর অবস্থান করবে তা দ্বিধা ঝেড়ে বলে দেওয়া যায়।
আর রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ? যুদ্ধ করিয়েছে গ্লোবাল মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স। করোনাকালে অনেক অস্ত্র গুদামে জমে গেছে, গুদাম খালি করতে হবে। কভিডের মতোই অস্ত্রের নতুন ভ্যারিয়েন্ট বাজারে ছাড়ার আগে গুদামজাত করতে হবে। আসলে ইউক্রেন-ক্রেমলিন-পেন্টাগন-ন্যাটো-জাতিসংঘ সবই মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সের ক্রীড়নক। বাংলাদেশি মানি লন্ডারদের কেউ এই কমপ্লেক্সের গুরুত্বপূর্ণ শেয়ার হোল্ডার এ কথা কোনোদিন প্রকাশিত হলে আমি অন্তত বিস্মিত হব না। ২০২৩ যতটা না আশার তার চেয়ে বেশি আশঙ্কার।
দেশ রূপান্তর : কাগজের মূল্যবৃদ্ধিতে বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্প, সংবাদমাধ্যম একটা বড় ধাক্কা খেয়েছে। আপনার কি মনে হয়, এর প্রভাব আমাদের শিল্প-সাহিত্যের ওপর কতটুকু পড়বে?
আন্দালিব রাশদী : চলুন একটু উল্টো করে ভাবি- যে দামে আমরা কাগজ কিনব বলে প্রত্যাশা করেছিলাম, বাজারে গিয়ে দেখলাম কাগজ প্রত্যাশিত দামের সিকিভাগ দামে পাওয়া যাচ্ছে। প্রকাশক-মুদ্রক সেই টাকায় চারগুণ বেশি পরিমাণ কাগজ কিনে নিয়ে চলে এলেন। এবার এই বাড়তি কাগজ কিংবা সস্তা কাগজ কি আমাদের শিল্পসাহিত্য চেষ্টার ওপর কোনো প্রভাব ফেলতে সক্ষম হবে? কাগজ যদি বিনে পয়সায়ও সরবরাহ করা হয় তাতেও শিল্পসাহিত্য চর্চায় তেমন হেরফের হবে না। মহার্ঘ কাগজ কিংবা পানির দামের কাগজের প্রভাব পড়বে শিল্পসাহিত্য বহির্ভূত অন্যান্য কাগুজে কারবারে।
আমি ব্যক্তিগতভাবে সাইবারফোবিক মানুষ, অবশ্যই ব্যাকডেটেড, আমার কোনো ফেইসবুক অ্যাকাউন্টও নেই, কিন্তু আমি মোটেও ফেইসবুক-বিরোধী নই, ব্লগ-বিরোধী নই, সামাজিক মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করার বিরোধী নই, কিন্তু আমি তাতে নেই কারণ আমি ফোবিক আমার ধারণা আমি ম্যানেজ করতে পারব না। আমার জীবন ধারণের প্রধান সহায় ছাপা বই এবং ছাপা লেখালেখি। কাগজের দুর্মূল্য এবং আনুমনিক আমদানি দ্রব্যেও মূল্যবৃদ্ধিতে আমার বই ছাপা ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলে প্রকাশক অবশ্যই মুখ ফিরিয়ে নেবেন। আমি কি লেখালেখি ছেড়ে দেব? আমি অনলাইন প্রকাশনার দিকে মনোযোগী হব, সাইবারফোরিয়া উতরানোর সবক নেব।
কাগজের দাম বাড়ার আগেই ই-পেপারের কাছে ছাপা পেপার, ই-বুকের কাছে ছাপা বই মার খেয়ে আসছে। বিখ্যাত একটি পত্রিকাসহ যুক্তরাষ্ট্রে বন্ধ হয়েছে ৭০টি দৈনিক এবং ২ হাজারের বেশি সাপ্তাহিক।
দেশ রূপান্তর : এ বছর বেশ রেহানা মরিয়ম নূর, হাওয়া’র মতো কিছু আলোচিত-প্রশংসিত চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে, এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে আশা করছেন, নাকি কয়েকটি ভালো সিনেমা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হয়েই থাকবে?
আন্দালিব রাশদী : ডিসেম্বরের শেষার্ধে এসে জানলাম মুহাম্মদ কাইয়ুম পরিচালিত বাংলাদেশের ভাটি অঞ্চলের হাওর-বাঁওড়ের জলকাদার গল্প নিয়ে তৈরি ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের মর্যাদা পেয়েছে। অথচ দিনের পর দিন তাকে প্রযোজকের অনুসন্ধান করতে হয়েছে, প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। নিজের জীবনের সমুদয় কামাই লগ্নি করে সিনেমা বানিয়েছেন, নিজের শিল্পসাধ মিটিয়ে মেধা ও শ্রম ঢেলে দিয়ে আন্তর্জাতিক মর্যাদা পাওয়ার মতো উঁচু স্থানে একে স্থাপন করতে পেরেছেন। কলকাতাই হোক কি কান-ই হোক কেউ তাকে উত্তম না বলা পর্যন্ত অধমই রয়ে থাকে। রেহানা মরিয়ম নূর কিংবা হাওয়া’র মতো ছবি হতে থাকবে না এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা এ প্রশ্নের জবাবটা কঠিন নয়। সিনেমা হোক কি গান হোক কি সাহিত্য সংস্কৃতির ভালোটার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়নি। সুতরাং প্রতিকূলতা ঠেলে যদি ব্যক্তি মেধা ও সামর্থ্য দিয়ে প্রশংসনীয় কাজ বের করে আনতে পারেন।
দেশ রূপান্তর : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ও শুভ নববর্ষ।
আন্দালিব রাশদী : ধন্যবাদ। আপনাকে ও দেশ রূপান্তরের পাঠকদেরও শুভ নববর্ষ।
আমাদের দেশে সরকারি ও বেসরকারি সব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়ায় লটারি পদ্ধতি চালু হয়েছে ২০২০ সাল থেকে, করোনা মহামারীর সময়ে। তখন এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকার পর এই ব্যবস্থাতেই নতুন ক্লাসে ভর্তি নেওয়া হয় শিশুদের। এর আগ পর্যন্ত ভর্তি যুদ্ধ নামে এক ভয়াবহ যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে হতো কোমলমতি শিশুদের। চার থেকে ছয় বছর বয়সী শিশুদেরও সারা বছর ধরে ভর্তি কোচিংয়ের নামে অমানুষিক চাপ দিয়ে এই সমাজ তাদের ভর্তি যুদ্ধে নামিয়ে দিত। তাই শিক্ষার্থীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক চাপ কমাতে এবং ভর্তির তদবির বন্ধে এই সিদ্ধান্ত।
আগে বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে লটারি ও অন্যান্য শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হতো। এতে মেধা যাচাই করার সুযোগ ছিল বলে অনেকে মনে করেন, আসলেই কি তাই? মেধা যাচাইয়ের পরীক্ষা হয় নাকি কে কতটা তথ্য মুখস্থ করে ধরে রাখতে পারে এবং ভর্তি পরীক্ষার খাতায় সেগুলো উগরে দিতে পারে তার পরীক্ষা হয়? ঢাকার নামকরা কিছু বিদ্যালয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন এসেছিল বাংলাদেশে স্বাধীন বিচারব্যবস্থার যাত্রা কবে শুরু হয়। এটি দ্বিতীয় শ্রেণির জন্য কী ধরনের প্রশ্ন? অতি সৃজনশীল না বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্ন?
দেশের মহানগর পর্যায়ের পরে ২০২১ সাল থেকে জেলা পর্যায়েও চালু হয় লটারি পদ্ধতি। তথাকথিত ভালো স্কুল নামে যেগুলো পরিচিত সেগুলোতে আসন সংখ্যা যত, তাতে এই সব খুদে শিক্ষার্থীদের সবার সংকুলান হতো না স্বাভাবিকভাবেই, ফলে যুদ্ধের মাঠে মারা যেত তাদের উৎসাহ, উদ্দীপনা ও ভেতরকার মানসিক শক্তি। নিজেদের আকক্সক্ষা অনুযায়ী সন্তান ভর্তি করাতে না পারার শোকে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের মানসিক অবস্থার খবর রাখার সময় পান না। তাই অভিভাবকদের কেউ কেউ এই যুদ্ধের বিরোধী ছিলেন, লটারি ব্যবস্থা তাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। কোচিং, ভর্তি বাণিজ্য, শিশুদের অন্যায্য প্রতিযোগিতার চাপ থেকে রক্ষা করতে এই ব্যবস্থা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেছেন, সরকারি ও বেসরকারি স্কুলে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লটারির মাধ্যমে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। এ বছর ক্যাচমেন্ট এরিয়া ৪০ শতাংশের পরিবর্তে ৫০ শতাংশ করার কথাও তিনি বলেছেন। ক্লাস্টারভিত্তিক ভর্তির ক্ষেত্রে লটারিতে পাঁচটি স্কুলের চয়েস দেওয়া যাবে।
লটারিতে ভর্তির ফলে মেধা দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও অনেক শিক্ষার্থী আশানুরূপ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষালাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে বলে অনেকেই মনে করছেন। এ বছর লটারি ব্যবস্থার বেশ কিছু দুর্বলতা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। পত্রপত্রিকায় খবর এসেছে যে, একই তালিকায় এক শিশুর নাম বারবার এসেছে। লটারি ব্যবস্থার ফাঁকফোকর খুঁজে বের করে অনিয়ম শুরু করেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অসৎ শিক্ষক-কর্মচারী থেকে শুরু করে কিছু অভিভাবকও। একই শিশুর নামে অবৈধভাবে একাধিক জন্মসনদ তৈরি করে প্রাণপণে তারা পছন্দের স্কুলে সন্তানকে ভর্তির চেষ্টা চালাচেছন। ভর্তি লটারিতে অনেক শিক্ষার্থীর নাম ৬-১০ বার আসার অভিযোগও উঠেছে। এসব কারণে প্রশ্নের মুখে পড়ে যাচ্ছে পুরো পদ্ধতিটি। ভাগ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়া অভিভাবকদের অসন্তোষ তো রয়েছেই। লটারিতে সুযোগ না পেয়ে শিশুদের মানসিক যন্ত্রণার কথাও বলছেন অনেক অভিভাবক।
প্রতিটি শিশুই কোনো না কোনোভাবে মেধাবী। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় সেই মেধা কীভাবে প্রস্ফুটিত করতে হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেটি কীভাবে বের করবে তার সঠিক কৌশল নেই। শিক্ষার্থীদের সামর্থ্য, আগ্রহ খেয়াল না করে শুধু তথ্য গেলানো হয় এবং খাতায় যার উদগিরণ বলে দেয় একজন শিক্ষার্থী কতটা মেধাবী। ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা অনেক কিছু জানতে পারে, ব্যস্ত থাকে কিন্তু লটারির মাধ্যমে ভর্তির প্রক্রিয়ায় এ বিষয় দুটোতে ছেদ পড়ে বলেও বলছেন কেউ কেউ। বিষয়টি অমূলকও নয়, কিন্তু শিশুদের যে আনন্দের মাধ্যমে শেখানো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাদের জন্য আনন্দের ব্যবস্থা করা সে বিষয়গুলো কিন্তু উপেক্ষিত থেকে যায় যদি তথাকথিত ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের ভর্তি করা হয়। স্কুল সমাপনী, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয় যে বয়সে, সে বয়সে হয়তো এই চাপ নেওয়া যায়, কিন্তু স্কুলপড়ুয়া ছোট ছোট শিশুদের সেই চাপ দেওয়া কোনোভাবেই বিজ্ঞানসম্মত নয় এবং তাদের প্রতি এটি সঠিক মানবিক আচরণও নয়। শিশুরা তাদের বাড়ির পাশে নিজ ক্যাচমেন্ট এরিয়ার বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করবে, এটি আদর্শিক কথা, যুক্তির কথা একং হওয়ার কথাও তাই। তাহলে ট্রাফিক জ্যাম কম হবে, শিশুর শারীরিক ও মানসিক কষ্ট লাঘব হবে, অভিভাবকদের অর্থ, সময় এবং টেনশন কমবে আর দেশের বিদ্যালয়গুলো সমতা অর্জনের দিকে এগোবে, অসুস্থ প্রতিযোগিতা দূর হবে যদি তথাকথিত ভর্তি পরীক্ষা না নেওয়া হয়। কিন্তু লটারির মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়ায় যেসব খবর এসেছে সেগুলোও সুখকর নয়।
আমাদের অভিভাবক একটু সচ্ছল হলেই তার সন্তানকে আর সরকারি প্রাথমিকে দিতে চান না অন্তত যেখানে ব্যক্তিচালিত কিন্ডারগার্টেন আছে। মাধ্যমিকে প্রায় ৯৮ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বেসরকারি। আর এই বেসরকারি হওয়ার কারণে কোনো ধরনের সমতা কিংবা সাধারণ বৈশিষ্ট্য নেই। নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক কিংবা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বা মানসম্মত ও বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক। যেসব বিদ্যালয়ের নাম-ডাক আমরা শুনি সেগুলো বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কমিটির বদৌলতে হয়েছে। তারা শিক্ষকদের সেভাবে তৈরি করেন, প্রতিষ্ঠানের সার্বিক পরিবেশ বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে, বহু অবাঞ্ছিত অবস্থা মোকাবিলা করে ধরে রেখেছেন। এসব প্রতিষ্ঠানে একটি নির্দিষ্ট মানের শিক্ষার্থী ভর্তি করার অধিকার তাদের আছে। তা না হলে মানসম্মত শিক্ষার কোনো উদাহরণই থাকত না। লটারির মাধ্যমে ভর্তির ফলে এ বিষয়টিতে বড় ধরনের এক ধাক্কা লেগে যাবে। কারণ, একই শ্রেণিতে বহু ধরনের শিক্ষার্থীকে পাঠদান করাতে মানসস্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকরা এখনো সেভাবে প্রস্তুত নন। তবে, সমাজ যেভাবেই চিন্তা করুক না কেন, শিক্ষার্থীদের অর্থাৎ দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিকদের অধিকার আছে দেশের ভালো প্রতিষ্ঠানে, তাদের বাড়ির কাছে প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করার। জন্মসনদ তোলায় অনিয়ম, স্কুলে দুর্নীতি, এই ঘটনাগুলো দেশের সব পর্যায়ে অনিয়ম-দুর্নীতি সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। এটি রাষ্ট্রকে দেখতে হবে। তা না হলে অসদুপায় যারা অবলম্বন করেন, তারা ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রেও একই ধারা বজায় রাখবেন। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সংকট নিয়ে গোটা একটা গ্রিক ট্র্যাজেডি লেখে ফেলা সম্ভব বলে একজন মন্তব্য করেছেন। কথাটি অমূলক নয়। আমরা শিক্ষার সঙ্গে যারা সরাসরি সংযুক্ত তারা সহজেই বলতে পারি। তারপরেও বলতে হচ্ছে ভর্তিযুদ্ধ নামে শিশুদের ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছে তা আবার ফিরে আসুক তা কারোরই কাম্য নয়।
লেখক : শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক
২০২২ সালে বিশ্বকে আমরা কভিড-১৯ মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জ্বালানিমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি, বিশ্বজুড়ে অভূতপূর্ব মুদ্রাস্ফীতি, বাণিজ্য ও পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক সব লক্ষণসহ বহুমুখী সংকটের এক অভূতপূর্ব কালপর্বে প্রবেশ করতে দেখেছি। এই সংকটগুলোর কিছু সংকটকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা বিশ্বব্যবস্থায় ক্ষয়ের লক্ষণ হিসেবেও গণ্য করা হচ্ছিল। তবে, বস্তুত এসব এক নতুন বিশ্বব্যবস্থার জন্মেরও লক্ষণ। অর্থাৎ, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন এবং বিশ্বরাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের একচেটিয়া উত্থানের মধ্য দিয়ে যে একমেরু-কেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা অবশেষে ভেঙে পড়ছে এবং বহুমেরু-কেন্দ্রিক এক নতুন বিশ্বব্যবস্থার আবির্ভাব ঘটছে। নতুন এই বিশ্বব্যবস্থার প্রধান দুই খেলোয়াড় একুশ শতকের দুই সামরিক, প্রযুক্তিগত এবং অর্থনৈতিক পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন। অবশ্য, ইউরোপ, রাশিয়া, জাপান, ইরান এবং ভারতও পৃথিবীর বিশাল অংশজুড়ে প্রভাব খাটাবে। যার লক্ষণও আমরা ইতিমধ্যে টের পেয়েছি বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাসের কিছু তৎপরতা নিয়ে সম্প্রতি ঢাকার রুশ দূতাবাসের বিভিন্ন বক্তব্যের মধ্য দিয়ে।
ইরান ও রাশিয়ার জোটবদ্ধতা : গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু করার পর রাশিয়াকে প্রায় প্রকাশ্যেই সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছে ইরান। দেশ দুটির এই জোটবদ্ধতার গ্রাউন্ড হলো মার্কিন আধিপত্যের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। তবে, রাশিয়ার সক্ষমতার ওপর একটি বড় প্রশ্ন চিহ্ন ঝুলে আছে। কারণ বিশ্বরাজনীতিতে এর ভবিষ্যৎ অবস্থান, সক্ষমতা এবং কৌশলগত ভঙ্গি নির্ভর করছে ইউক্রেন যুদ্ধের ফলাফলের ওপর। বছর শেষে মনে হচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্য দিয়ে রাশিয়া শেষ পর্যন্ত নিজের ধ্বংসই ডেকে আনছে। যদিও ইউক্রেন নিয়ে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের অতিরিক্ত আগ্রহ জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি দাবি করে রাশিয়া ‘সামরিক আগ্রাসন’ শুরু করেছিল। অনেকে মনে করছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনের অধীনে রাশিয়া মরিয়া হয়ে ‘সাম্রাজ্যবাদী’ অতীতকে আঁকড়ে ধরছে।
তবে যুদ্ধের সম্ভাব্য চূড়ান্ত পরিণতি সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়তো এখনই ঠিক হবে না। ইউক্রেনে রাশিয়ার পরাজয়ের পর পুতিনের শাসন কি টিকে থাকবে, নাকি দেশটিতে অভ্যন্তরীণ ক্ষয় ও বিচ্ছিন্নতার আরেকটি পর্বের সূচনা হবে? এই প্রশ্নের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত, আমরা বুঝতে পারব না যে, রাশিয়া পূর্ব ইউরোপ এবং ইউরেশিয়ার বেশিরভাগ অংশে তার আধিপত্যের পুরনো দাবিতে অনড় থাকবে কি না। রাশিয়া যদি সেই দাবি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়, তাহলে বিশ্বশক্তি হিসেবে তার ভূমিকা হয়তো শেষ হয়ে যাবে। তবে এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, এমনকি একটি জরাজীর্ণ, অপমানিত রাশিয়াও ভূ-রাজনৈতিকভাবে একেবারে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে না। বরং, সম্ভবত নতুন বিশ্বব্যবস্থায় এবং বিশেষ করে ইউরোপীয় মহাদেশে অস্থিতিশীলতার একটি প্রধান উৎস হিসেবে থেকে যাবে। কিন্তু একটা বিষয় এখন স্পষ্ট যে, রাশিয়ার বিশাল পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার একবিংশ শতাব্দীতে তার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানকে সুরক্ষিত করার জন্য আর যথেষ্ট নয়।
সম্পদ শক্তিতে বলীয়ান চীন : রাশিয়া যেখানে তার ভঙ্গুরতা এবং ক্ষয়ের কারণে নতুন ঝুঁকি তৈরি করছে, চীন সেখানে তার ক্রমবর্ধমান সম্পদ এবং শক্তির কারণে প্রভাবশালী হয়ে উঠছে। ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে শুরু হওয়া ব্যাপক বিশ্বায়নের সুযোগ নিয়ে চীন নিজেকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে পেরেছিল এবং উচ্চ আয়ের মর্যাদা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এ ছাড়া ২০০৮ সালের আর্থিক মন্দা পশ্চিমকে কিছুটা বেকায়দায় ফেলে দেওয়ায় চীন তার নিজস্ব বিশ্ব-নেতৃত্বের ভূমিকা প্রসারিত করতে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী পরাশক্তি হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে স্নায়ুযুদ্ধের কালে সোভিয়েত রাশিয়া যেভাবে শুধুমাত্র নিজের সামরিক শক্তি বাড়ানোর ওপর মনোযোগ দিয়েছিল, চীন সে ভুল করেনি। চীন বরং পশ্চিমের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার সক্ষমতা অর্জনের জন্য বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিতে প্রচুর বিনিয়োগ এবং মুক্তবাজার অর্থনীতির সুবিধা গ্রহণ করে বিশ্ববাজারে ব্যবসা-বাণিজ্যে অংশগ্রহণ করে নিজেদের শক্তিশালী অর্থনীতি গড়ে তোলে। চীনারা অবশ্যই সামরিক বিনিয়োগে পিছিয়ে নেই, তবে তারা বাকি সবকিছু বাদ দিয়ে শুধু প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা খাতেই বেশি ব্যয় করেনি। চীন এবং রাশিয়ার মধ্যে বর্তমানে প্রধান পার্থক্য হলো, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের মতো চীনা নেতৃত্ব মানসিকভাবে অতীতে বসবাস করছেন না, তারা একবিংশ শতাব্দীতেই বসবাস করছেন। গত নভেম্বরে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে জি-টোয়েন্টি শীর্ষ সম্মেলনে চীন ও রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি এবং উদ্দেশ্যের এই মৌলিক পার্থক্যটি ধরা পড়েছে। যেখানে রাশিয়া নিজেকে কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হিসেবে খুঁজে পেয়েছিল, সেখানে চীন ছিল সমস্ত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এবং সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোতেও চীনের প্রভাব ছিল সবচেয়ে বেশি। ইউক্রেন সংকটের বিষয়ে পশ্চিমাদের পক্ষ না নিলেও সম্মেলনে চীন এবং ভারত রাশিয়ার যুদ্ধনীতি এবং পারমাণবিক হুমকির সমালোচনা করে এবং রাশিয়া থেকে নিজেদের লক্ষণীয়ভাবে দূরে রাখার চেষ্টা করে। এছাড়া চীন ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরোধিতা না করলেও ইরানের মতো মস্কোকে প্রায় প্রকাশ্য সমর্থনও জোগায়নি। চীন বরং রাশিয়া-ইরানের মার্কিন আধিপত্যবিরোধী জোটবদ্ধতার কৌশলগত সুবিধা গ্রহণ করে ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তার করার পাশাপাশি নিজেদের শিল্পকারখানাগুলোর জন্য জ্বালানির সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং ওই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগ করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছে। চীন পশ্চিমের সঙ্গে প্রকাশ্যে পুরোপুরিভাবে দ্বন্দ্বে না জড়িয়ে বরং ইরান-রাশিয়ার জোটবদ্ধতায় ইন্ধন জুগিয়ে পশ্চিমের অবস্থানকে দুর্বল করে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টাও করবে।
তুরস্কের কৌশলগত প্রতিভা : তুরস্ক এক অনন্য কূটনৈতিক কৌশল অবলম্বন করে তার রাজনৈতিক শৈল্পিকতার চিত্র তুলে ধরছে। একদিকে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য হিসেবে পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখছে, অন্যদিকে, ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতা করে এবং পুতিনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ইস্যুতে (যেমন সিরিয়া) সহায়ক হয়ে রাশিয়ার সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় রাখছে। এমনকি, তুরস্ক একদিকে, ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করছে, আবার অন্যদিকে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাও মেনে চলতে অস্বীকার করছে। এভাবে সুকৌশলে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া উভয়ের জন্যই নিজেকে অপরিহার্যভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছেন। এরদোয়ানের এই কৌশলগত খেলা বিস্ময়করভাবে তার পক্ষে কাজে লেগেছে এবং ২০২৩ সালে অনুষ্ঠেয় তুরস্কের জাতীয় সাধারণ নির্বাচনেও তাকে জয় এনে দিতে পারে; তুরস্কের অর্থনীতিতে তার বিপর্যয়কর অব্যবস্থাপনা এবং ব্যর্থতা সত্ত্বেও।
ইরানের প্রতি আরবদের নরম সুর : প্রতিরক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীলতা সত্ত্বেও সৌদি আরব এবং আরব আমিরাতের মতো উপসাগরীয় আরব দেশগুলোও ইরানের প্রতি সুর নরম করছে এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাইছে। আরব আমিরাত ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা ইরানের সঙ্গে কূটনেতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়। এমনকি সৌদি যুবরাজও বলেছেন, ইরান আমাদের প্রতিবেশী দেশ। ফলে আমরা একে অপরকে ঝেড়ে ফেলে দিতে পারব না। তার চেয়ে বরং কীভাবে আমরা ভালোভাবে সহাবস্থান করতে পারি সেই উপায় খুঁজে বের করাই মঙ্গলজনক হবে। এ থেকে মনে হচ্ছে যে, মধ্যপ্রাচ্যের শিয়া-সুন্নি বিরোধও হয়তো প্রশমিত হতে চলেছে। এই বিরোধকে কাজে লাগিয়েই যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে ঘাঁটি গেড়েছিল। ডিসেম্বরের শুরুতে সৌদি আরব চীনের সঙ্গেও তিন হাজার কোটি ডলারের ৩৪টি বিনিয়োগ চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্রের ঘুম উড়িয়েছে। মোটকথা, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্য দিয়ে স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যে একমেরু-কেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্ব ইতিমধ্যেই তা থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। গত তিন দশক ধরে মার্কিন নেতৃত্বাধীন মুক্তবাজার অর্থনীতি এবং বিশ্বায়নের ফলেই দুনিয়া আজ অনেক বেশি জটিল এবং অবিচ্ছেদ্যভাবে আন্তঃনির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন আর তার নিজস্ব উৎপাদনশীলতার মারাত্মক ক্ষতি না করে চীনের অর্থনৈতিক উত্থানকে ঠেকাতে পারবে না। ইউরোপীয় অর্থনীতি, যেমন, জার্মানি এবং হাঙ্গেরি, ব্যাপক অর্থনৈতিক ধস এবং বেদনাদায়ক আর্থিক মন্দার মুখোমুখি হওয়া ছাড়া রাশিয়ার ওপর তাদের নির্ভরশীলতা কমাতে পারবে না। মধ্যপ্রাচ্যও ইরানকে বাদ দিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে স্থিতিশীল হতে পারবে না। এককথায়, নতুন এই বিশ্বব্যবস্থার উপাদানগুলো পরস্পরের জন্য অপরিহার্য।
লেখক: সাংবাদিক ও লেখক
শুভ নববর্ষ। বর্ষসংক্রান্তিতে প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির হিসাবনিকাশ যেমন থাকে, তেমনি থাকে নবউদ্যমে নবযাত্রার সংকল্পও। তাই অতীতের বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়নের সঙ্গে প্রয়োজন ভবিষ্যৎ যাত্রার রূপরেখাও। পুরনো অর্জনকে রক্ষা আর ব্যর্থতা ডিঙানোর সুযোগই নতুন দিনের প্রধান বার্তা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়, ‘নব অতিথিরে তবু ফিরাইতে নাই কভু/এসো এসো নূতন দিবস!/ ভরিলাম পুণ্য অশ্রুজলে/আজিকার মঙ্গলকলস।’ স্বাগত ২০২৩। খ্রিস্টীয় নববর্ষে সবার মঙ্গল হোক।
মহামারীকে জয় করে বিশ্ব এগিয়ে যেতে পারবে কি না, সেই প্রশ্ন সঙ্গে নিয়ে ২০২২ সালের আগমন হয়েছিল। বিদায়ের কালে সে প্রশ্ন রেখে যাচ্ছে, বিপদ কি নতুন উদ্যমে ফিরে আসবে? বছর শেষে চীনে ফের বিপুল সংক্রমণের খবরে তৈরি হওয়া আতঙ্ক অমূলক নয়। তবে আশা, বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ ইতিমধ্যে করোনা প্রতিরোধে ভ্যাকসিন নিয়েছে। ফলে আশা করা যায়, সংক্রমণ বাড়লেও করোনা আর প্রাণঘাতী রূপে ফিরছে না। অন্যদিকে, মহামারীর অভিঘাত সামলে নিতে না নিতেই রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত বিশ্বে নতুন আশঙ্কা তৈরি করেছে। মহামারী শেষ হতে না হতেই যুদ্ধের জের ধরে বিশ^জুড়ে তৈরি হওয়া জ্বালানি ও ডলার সংকট বিশ্ব অর্থনীতিকে বড়সড় ধাক্কা দিয়েছে। বিশ্ব জুড়ে চলছে মূল্যস্ফীতি এবং মন্দার সাঁড়াশি আক্রমণ। আছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের আঘাত। খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সামগ্রিকভাবেই ২০২২ সাল দেখিয়ে দিল, মহামারীর মতো বিপর্যয়ও বিশ্বের নীতিনির্ধারকদের সম্বিৎ ফেরাতে পারেনি। ক্ষুদ্র ও স্বল্পমেয়াদি স্বার্থেই রাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি এবং কূটনীতি চলছে। এ পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক হওয়া জরুরি। হাল-ভাঙা পালছেঁড়া বিশ্ব অর্থনীতিও সেই দাবিই জানাচ্ছে। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বৈশ্বি^ক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থাকে স্থিতিশীল বললে ভুল হবে না। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি উপরের সারিতে। বিগত বছর পদ্মা সেতু ও প্রথম মেট্রোরেল দেশের অবকাঠামোগত উন্নতির স্মারক। যদিও দেশের দুর্নীতি, অনিয়ম, ঋণখেলাপের লাগাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে আরেকটি জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক সহনশীলতা, ভোটাধিকারের প্রশ্ন যেমন আলোচনায় এসেছে; তেমনি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মানের অবনমনও বিভিন্ন আলাপে উঠে এসেছে।
অর্থনীতিই মূল চালিকাশক্তি হলেও, উন্নয়ন টেকসই করতে হলে মানবিক প্রগতি অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে কাক্সিক্ষত মান অর্জন করা ছাড়া সেই সামাজিক অগ্রগতি ও মানবিক প্রগতি অর্জন করা সম্ভব নয়। একই সঙ্গে জরুরি সমাজ ও রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতিষ্ঠা। পরমতসহিষ্ণুতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ ছাড়া সমাজের সামগ্রিক সাংস্কৃতিক মান সামনে এগোয় না। রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চায় সামনে এগিয়ে নিতে হলে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। পাশাপাশি, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশকে অবশ্যই নিজের স্বল্প আয়তনের ভূখণ্ডের ব্যবহারে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। কেননা, পরিবেশগত সচেতনতার যথাযথ বিকাশ ছাড়া আগামী পৃথিবীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। নতুন বছরে, অর্থনীতিকে গতিশীলতায় রাখার পাশাপাশি মানবিক প্রগতি অর্জনের পথে এসব বাধা অতিক্রমে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। একই সঙ্গে, নতুন বছরে বহু মত-পথের পারস্পরিক সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতির মাঠে সুবাতাসের প্রত্যাশায় থাকবে দেশবাসী।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব বিকাশ এবং বহুপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের বিশ্ব অর্থনীতির এই যুগে কোনো দেশই আর একে অপরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। বিদ্যমান বাস্তবতায় আন্তঃদেশীয় রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক টানাপড়েন যেন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও তীব্র। বাংলাদেশকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। আরেক প্রতিবেশী মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত প্রায় সাড়ে এগারো লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ অনন্য মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেও রোহিঙ্গা সংকটের কোনো সুরাহা হচ্ছে না। এ অবস্থায় বাংলাদেশকে কূটনৈতিক তৎপরতা আরও জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি আঞ্চলিক রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের অভ্যন্তরেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও পরমতসহিষ্ণুতা জোরদারের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। নতুন বছর দাবি করে জীবন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবন। গত বছর আমরা যা কিছু হারিয়েছি, স্বজন হারানোর শোক পেয়েছি; আমাদের আশা, নতুন বছরে তাদের স্মৃতি উজ্জ্বল হবে এবং বিলীন হবে তাদের শোক। তাদের স্মৃতিকে সমুজ্জ্বল রেখে, শোককে শক্তিতে পরিণত করে শঙ্কা জয় করে সামনে এগোতে হবে। এক্ষেত্রে সবার আগে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পরমতসহিষ্ণুতা ও গণতান্ত্রিক চর্চা জোরদার করা জরুরি।
কবি জসীম উদ্দীনের জন্ম ফরিদপুর জেলায় ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি। তার বাবার নাম আনসারউদ্দীন মোল্লা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ১৯৩১ সালে এমএ পাস করেন। তার কর্মজীবন শুরু হয় পল্লীসাহিত্যের সংগ্রাহক হিসেবে। ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত তিনি দীনেশচন্দ্র সেনের অধীনে রামতনু লাহিড়ী গবেষণা সহকারী ছিলেন। ১৯৩৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগদান করেন। ১৯৪৪ সালে তিনি প্রথমে বঙ্গীয় প্রাদেশিক সরকার এবং পরে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের প্রচার বিভাগের কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে ১৯৬২ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি তার কবিতায় পল্লীপ্রকৃতি ও পল্লীজীবনের সহজ-সুন্দর রূপটি তুলে ধরেন। পল্লীর মাটি ও মানুষের সঙ্গে তার অস্তিত্ব যেন মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছিল। কলেজ জীবনে ‘কবর’ কবিতা রচনা করে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালেই তার এ কবিতা প্রবেশিকা বাংলা সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়। সাহিত্যের নানা শাখায় তিনি কাজ করেছেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘রাখালী’ প্রকাশিত হয় ১৯২৭ সালে। তার প্রধান গ্রন্থগুলো হচ্ছে নকশী কাঁথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাট, পল্লীবধূ, ঠাকুরবাড়ির আঙ্গিনায়, বাঙালীর হাসির গল্প। তিনি জারিগান ও মুর্শিদি গান নামে লোকসংগীতের দুখানি গ্রন্থ সংকলন ও সম্পাদনা করেন। একুশে পদক, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় তিনি ভূষিত হয়েছেন। ১৯৭৬ সালের ১৩ মার্চ তিনি মারা যান।
ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়েই চলছে ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান। নেতৃত্ব পরিবর্তন হয়েছে, তারপরও যেন ভাগ্যটা ফেরানো যাচ্ছিল না। পরাশক্তির তকমাটা খসে যায় গেল এক যুগে। লিগ শিরোপা তাদের কাছে শুধুই মরীচিকা। সাদা-কালোদের কাছে টুর্নামেন্টের শিরোপাও দূর আকাশের তারায় রূপ নিয়েছিল। সেখান থেকে মোহামেডানকে বলতে গেলে একাই শিরোপার স্বাদ দিয়েছেন ‘ঘরের ছেলে’ সুলেমান দিয়াবাতে। মালির এই স্ট্রাইকার টানা পাঁচ মৌসুম ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন মাঝারি মানের মোহামেডানকে। তার জাদুতে গতকাল ফেডারেশন কাপের মহা-ফাইনালে আবাহনীকে হারিয়েছে সাদা-কালোরা। এই অর্জন এসেছে অনেক অপেক্ষার পর। তাই তো এই শিরোপাকে মোহামেডানের ঘুরে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখছেন দিয়াবাতেও। বিশ্বাস করেন, এই শিরোপা বদলে দেবে মোহামেডানের চিন্তাধারাকে।
টাইব্রেকারে শিরোপা জয়ের পর ড্রেসিং রুমে সতীর্থদের হুল্লোড়ের মধ্যে ম্যাচসেরা, টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার নিয়ে এক কোনায় বসে দেশে পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন দিয়াবাতে। সেই ফাঁকেই সাংবাদিকদের কাছে জানালেন প্রতিক্রিয়া, ‘পেনাল্টি শুটআউটের আগ পর্যন্ত ম্যাচটা ভীষণ কঠিন ছিল আমাদের জন্য। আল্লাহ আমাদের সহায়তা করেছেন এই ট্রফিটি জিততে। তাই আমি অনেক খুশি। আমার ক্যারিয়ারে কোনো ফাইনালে প্রথমবারের মতো চার গোল করলাম। তাই সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।’ দিয়াবাতে বলেন, ‘৯ বছর পর আমি একা নই, সব খেলোয়াড় মিলে মোহামেডানকে একটা শিরোপা এনে দিয়েছি। বিশ্বাস ছিল ম্যাচে ফিরতে পারলে আমরাই শিরোপা জিতব, সেটাই হয়েছে। আমি এই অর্জন মালিতে থাকা আমার পরিবার, বিশেষ করে আমার মাকে উৎসর্গ করছি।’ শিরোপাটা মোহামেডানের অন্তর্বর্তীকালীন কোচ আলফাজ আহমেদের জন্যও বিশেষ অর্জন। ফুটবল ক্যারিয়ারে অসংখ্য আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ খেলেছেন এবং জিতেছেন। তবে এই জয়টাকে আলাদা করে রাখছেন তিনি, ‘আজকের খেলাটা অনেক বড় অর্জন। ব্যাকফুটে থেকে ফিরে আসা, ম্যাচ দেখে বোঝা যাচ্ছিল না কে জিতবে। দিয়াবাতে আসাধারণ ফুটবল খেলেছে। মুজাফ্ফারভের হাত ভেঙে দিয়েছিল, ওই অবস্থায়ও সে খেলা চালিয়ে গেছে। খেলোয়াড়দের কমিটম্যান্ট ছিল অসাধারণ। খেলোয়াড় হিসেবে আমি শিরোপা জিতেছি, এবার কোচ হিসেবে শীর্ষ পর্যায়ে প্রথম শিরোপা জিতলাম। তাই শিরোপাটাকেই আমি এগিয়ে রাখব।’ প্রথমার্ধে ২ গোলে পিছিয়ে পড়ার পরও হাল ছাড়েননি আলফাজ। শিষ্যদের শিখিয়েছেন মাথা ঠান্ডা রেখে পাল্টা জবাব দেওয়ার মন্ত্র, ‘প্রথমার্ধের খেলা শেষে শিষ্যদের বলেছি, তোমরা মাথা ঠা-া রেখে খেলো। তারা সেটাই করেছে।’
চোটে পড়ে মাঠ ছাড়া গোলকিপার সুজন সতীর্থ বিপুকে টাইব্রেকারে দারুণ পারফরম্যান্সের জন্য প্রশংসায় ভাসিয়েছেন, ‘মাঠ ছাড়ার এক মিনিটের মধ্যে আবাহনী যখন গোল পরিশোধ করল, তখন ভীষণ খারাপ লাগছিল। মনে হচ্ছিল আমরা আর পারব না। তবে আমার ধারণা ভুল প্রমাণ করেছে বিপু। আমি তাই অনেক বেশি খুশি।’
বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশের প্রয়োজনীয়তার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুসলিম উম্মাহকে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে তাদের সন্তানদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার ক্ষেত্রে আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) ক্যাম্পাসে ৩৫তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমাদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য আরও বেশি পরিমাণে বিনিয়োগ করতে হবে।’
মুসলমানদের যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়নে যথাযথভাবে এই সম্পদ ব্যবহার করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, আমরা এটা করতে পারব।’ তিনি আরও বলেন, ‘যখনই আমি ওআইসি সদস্য দেশে যাই, তাদের আমি এই অনুরোধই করি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘ইসলামের স্বর্ণযুগে বিশ^সভ্যতা, বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য, দর্শন, রসায়ন, গণিত, চিকিৎসা, জ্যোতির্বিদ্যা, ভূগোলসহ জ্ঞানের আরও অনেক শাখায় মুসলিম স্কলারদের ব্যাপক অবদান রয়েছে, যা আমাদের মুসলিমদের ঐতিহ্যের গৌরবময় ইতিহাস গড়েছে। সেই যুগের মুসলিম স্কলাররা সংস্কৃতি, জ্ঞান অর্জন, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এবং সমসাময়িক সাহিত্যে বিশে^ আধিপত্য বিস্তার করেছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘সেই অবস্থান থেকে বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর এই পিছিয়ে থাকার কারণগুলো আমাদের বিশ্লেষণ করা দরকার।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্প্রীতির অভাব, জ্ঞান-বিজ্ঞানের অভাব এবং অন্য অনেক বিষয় মুসলিম উম্মাহর পতনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি এই হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের মুসলিম উম্মাহকে মতভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলোকে, বিশেষ করে তাদের নিজস্ব শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও বিজ্ঞান এবং আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আধুনিক যুগে মুসলিমরা মাত্র তিনটি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে এটাই এই আধুনিক যুগে গবেষণা, প্রযুক্তি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহর অবদানের প্রকৃত উদাহরণ। তিনি অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, ‘মুসলিম জাতির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে জোরালো প্রচেষ্টা প্রয়োজন, যাতে করে তারা এ ক্ষেত্রে আরও অবদান রাখতে পারেন।’
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব দ্বারা উপস্থাপিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মুসলিম সম্প্রদায়ের পিছিয়ে পড়া উচিত নয়; বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিকস, ইন্টারনেট অব থিংস, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও অন্যান্য খাতে।
ওআইসির মহাসচিব ও ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) চ্যান্সেলর হিসেন ব্রাহিম তাহার সভাপতিত্বে এতে স্বাগত বক্তব্য দেন আইইউটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। এ ছাড়া এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনিও বক্তব্য দেন।
সমাবর্তনে ২০২১ এবং ২০২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের স্নাতক, মাস্টার্স, পিএইচডি এবং ডিপ্লোমা ডিগ্রি দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অসামান্য ফলাফলের জন্য দুই ধরনের স্বর্ণপদক আইইউটি স্বর্ণপদক এবং ওআইসি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আইইউটির ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী তার অর্থায়নে আইইউটির নবনির্মিত মহিলা হলেরও উদ্বোধন করেন।।
রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন সুলতান মাহমুদ। ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে ধানমন্ডি এলাকায় ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন এ শিক্ষক। এখনো সেই ফ্ল্যাটের ঋণ পুরোপুরি পরিশোধ হয়নি। সুলতানের ব্যবহৃত ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা দুটি। একটি বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক আর অন্যটি প্রাইম ব্যাংকের।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধা জানতে চাইলেন তিনি জানান, ফ্ল্যাটের কিস্তি পরিশোধ, সন্তানদের বেতন আর ফ্যামিলি খরচ পরিশোধ সব মিলিয়ে প্রায় প্রতি মাসের শেষেই আর্থিক সংকট তৈরি হয়। এ সংকট থেকে বাঁচতেই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন। তবে মাসের শুরুতে বেতন পেয়েই পরিশোধ করে দিচ্ছেন ক্রেডিট কার্ডের বিল। এতে অতিরিক্ত সুদও গুনতে হচ্ছে না তাকে।
সুলতান মাহমুদ বলেন, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার না করলে হয়তো প্রতি মাসেই আমার বিভিন্নজনের কাছ থেকে ধার করে চলতে হতো। এতে সম্মানহানিরও ঝুঁকি থাকে। কিন্তু এখন ব্যাংক থেকে স্বল্প সময়ের জন্য ধার নিয়ে তা আবার ফেরত দিচ্ছি। এতে কারও কাছে হাত পাততে হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, একসময় মানুষ ক্রেডিট কার্ডের প্রতি কম আগ্রহী হলেও বর্তমানে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে দেশের ৩৯টি ব্যাংক কার্ড সেবা দিচ্ছে। গত মার্চ শেষে এসব ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১ লাখ ৭৮ হাজারটি। ঠিক চার বছর আগে ২০১৯ সালে মার্চ শেষে এ কার্ডের পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ৪৯ হাজারটি। অর্থাৎ মাত্র চার বছরের ক্রেডিট কার্ড বেড়েছে ৮ লাখ ২৮ হাজার বা ৬১ দশমিক ৪২ শতাংশ। এই একই সময়ে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। গত মার্চে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের মার্চে এ লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ চার বছরের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ১৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
শুধু সুলতানই নন, ব্যবসায়ী আমিরুল, সাংবাদিক আক্তার আর চাকরিজীবী তারিকুলও একই কারণে ব্যবহার করছেন দেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ক্রেডিট কার্ড। তাদের মতে, ক্রেডিট কার্ডের কারণে সহজ হয়েছে তাদের জীবনযাত্রা। তবে উল্টো চিত্রও আছে। করোনা মহামারীর সময় চাকরি হারানো আজাদুল ইসলাম ক্রেডিট কার্ডে ধার নিয়ে এখন বিপাকে রয়েছেন। তিনি বলেন, করোনার সময় প্রথম দিকে আমাদের বেতন কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়। সে সময় সংসারের খরচ বহন করতে ক্রেডিট কার্ডের সহায়তা নিয়েছেন। যে ঋণ এখন পর্যন্ত টানতে হচ্ছে তাকে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ হবে বলে আশাবাদী এ গ্রাহক।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ক্রেডিট কার্ড জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে এর ‘ধার’ নেওয়ার পদ্ধতির জন্য। পাশাপাশি পণ্যের দামে ডিসকাউন্টের পাশাপাশি কিস্তিতে পরিশোধের পদ্ধতিও এ ব্যাপ্তি বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। যেটি গ্রাহককে এককালীন বেশি দামের পণ্য কিনতে সহায়তা করে। এবার জেনে নেওয়া যাক ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা-অসুবিধাগুলো।
পণ্য কিনতে কিস্তি সুবিধা : ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কিস্তিতে পণ্য কিনতে একসঙ্গে সব টাকা পরিশোধ করতে হবে না। বিনা সুদে বা নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদে গ্রাহক কয়েক মাসের সমান কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। যদিও গ্রাহক তার ক্রেডিট লিমিটের চেয়ে বেশি দামি পণ্য কিনতে পারবেন না। আর কিস্তির টাকাও পরিশোধ করতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। এতে কারও কাছে টাকা ধার করার ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে পরিশোধের ক্ষেত্রে সময়সীমা পার হয়ে গেলে জরিমানা গুনতে হতে পারে।
ঋণের সুবিধা : কিছু ক্রেডিট কার্ড, বিশেষ করে বিদেশে শূন্য শতাংশ সুদে ঋণ দেয়। এসব ক্ষেত্রে মাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ মূল্য পরিশোধ করতে হয়, যা বেশ সুবিধাজনক। আবার কোনো কোনো কার্ডে ঋণে সুদের হার অনেক থাকে। এ ক্ষেত্রেও একটা সুবিধা আছে। বোঝা এড়াতে দ্রুত ঋণ পরিশোধ করা হয়। নিজস্ব ঋণ থাকে না।
পরিবর্তনযোগ্য : এসব ক্ষেত্রে সঠিক কার্ডটি বেছে নিতে পারা জরুরি। একটি ভুল কার্ড দিনের পর দিন ব্যবহার করলে ঋণের বোঝা শুধু বাড়তেই থাকবে। তবে এটা বুঝতে ব্যাংকের পুরো শর্তাবলি মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। যদিও কার্ডের ধরন পরিবর্তন করা যায় খুব সহজে। কারণ প্রতিটি ব্যাংকে বিভিন্ন প্রকারের ক্রেডিট থাকে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী কার্ড যেমন নিতে পারবেন তেমনি পরবর্তী সময়ে সেটির ধরন পরিবর্তনও করতে পারবেন। আবার নির্দিষ্ট পরিমাণ লেনদেন করলে বাৎসরিক ফি এড়ানো যায়। যেমন অনেক ব্যাংকের কার্ডে অন্তত ১৮ বার কেনাকাটা করলে বাৎসরিক ফি দিতে হয় না। ব্যাংকভেদে এ নিয়মের ভিন্নতা রয়েছে। দেশের বাইরেও ব্যবহার করা যায় : ক্রেডিট কার্ড ইন্টারন্যাশনাল হলে সেটি ব্যবহার করা যাবে বিশ্বের অনেক দেশেই। টাকার পাশাপাশি ডলারও ধার করে ব্যবহার করা যায়। হোটেল বুকিং, বিমানভাড়া, রেস্টুরেন্ট ও কেনাকাটায় মেলে নানা ছাড় ও পয়েন্ট জেতার সুযোগ। বিদেশে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে যা খরচ করবেন, মাস শেষে আপনার সেই পরিমাণ বিল হিসেবে ইস্যু করবে ব্যাংক। তারপর সুদ বা জরিমানা এড়াতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই বিল পরিশোধ করতে হবে।
অফারের ছড়াছড়ি
বিভিন্ন সময়ে ক্রেডিট কার্ডে বিভিন্ন অফার দেওয়া হয়। যেমন ‘ক্যাশ ব্যাক অফার’, ‘স্পেশাল ডিসকাউন্ট’। দেশের বাইরে বেড়াতে গেলে, হোটেলে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারে অনেক সময়ই মূল্যছাড় দেওয়া হয়। প্লেনের টিকিট কাটতেও অনেক সময় পাওয়া যায় বিশেষ মূল্যছাড়। আর অনলাইন কেনাকাটার জন্যও এখন ক্রেডিট কার্ড বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন সময়ে দেখা যায়, নামিদামি হোটেল ও রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়ায় ছাড় এবং অফার দিয়ে থাকে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আবাসিক হোটেলগুলোও ক্রেডিট কার্ডে বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে থাকে। একটি কিনলে একটি ফ্রি (বাই ওয়ান গেট ওয়ান) অফারও দেওয়া হয়। এ ছাড়া রয়েছে মূল্যছাড়সহ নানা অফার। অনেকেই পরিবার নিয়ে দেশে ও দেশের বাইরে ঘুরতে যান। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও হোটেলের নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হোটেল বুক করা যায়। এ ক্ষেত্রেও আপনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারেন। তবে বিদেশে হোটেল বুকিংয়ের টাকা পরিশোধের ক্ষেত্রে ডুয়েল কারেন্সি ক্রেডিট কার্ড প্রয়োজন হবে।
অসুবিধা
ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনি অসুবিধাও কম নয়। এজন্য বেশ সতর্ক হতে হবে গ্রাহককে। একটু বেখেয়ালি হলেই পড়তে পারেন ঋণের ফাঁদে।
ঋণের ফাঁদ
ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার সবসময়ই একটি ঋণ নেওয়ার মাধ্যম। মনে রাখতে হবে অর্থ খরচের ৪৫ দিনের মধ্যে সেটি পরিশোধ করতেই হবে। অন্যথায় ঋণের ওপর সুদ শুরু হবে। যা ঋণের পরিমাণ প্রতিদিন বাড়িয়ে দেবে। তাই কিছুটা ঝুঁকি থেকেই যায়।
লুক্কায়িত ব্যয়
সুদের হার পরিশোধই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের একমাত্র ব্যয় নয়। সময়মতো মাসিক বিল পরিশোধ না করলে গ্রাহককে জরিমানা গুনতে হতে পারে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে নগদ অর্থ তুলতে এর জন্য নির্দিষ্ট হারে ফি দিতে হতে পারে। সরাসরি বুথ থেকে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে নগদ অর্থ উত্তোলন করতে গেলে বাড়তি ফি এবং ওইদিন থেকেই (এ ক্ষেত্রে ৪৫ দিন সময় দেওয়া হয় না) সুদ গণনা শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে চেক দিয়ে টাকা সঞ্চয় হিসেবে স্থানান্তর করে তারপর সেটি নগদায়ন করলে ৪৫ দিন সময় পাওয়া যাবে।
ক্রেডিট কার্ড একটি লাইফস্টাইল পণ্য। বাংলাদেশের অধিকাংশ ব্যাংক এখন ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করছে। বাংলাদেশে ইস্যুকৃত মোট ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা ২২ লাখ কিন্তু একক (ইউনিক) গ্রাহক সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। ক্রেডিট কার্ড পুরোপুরি জামানতবিহীন পার্সোনাল ঋণ হলেও ঋণ পরিশোধের হার খুব সন্তোষজনক। গ্রাহক পর্যায়ে একটি ক্রেডিট কার্ড দিতে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী বেশ কিছু অত্যাবশ্যক কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়। এটিকে ঋণ হিসেবে না দেখে লাইফস্টাইল পণ্য হিসেবে দেখে এর আবশ্যকীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা কিছুটা শিথিল করা হলে ক্রেডিট কার্ড ব্যাপ্তি অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। তখন নিম্ন আয়ের মানুষরাও ক্রেডিট কার্ড নিতে পারবেন, যা ক্যাশলেস সোসাইটি গঠনের মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করবে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা দ্রুতগতিতে ডিজিটাল আর্থিক লেনদেনে রূপান্তরিত হচ্ছে। ক্যাশলেস বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেনে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে যেমন পিওএস, এটিএম, সিআরএম, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, কিউআর কোড ইত্যাদি। বিগত বছরগুলোতে ডিজিটাল লেনদেনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২১ সালের মার্চ মাসে ইন্টারনেট ব্যাংকিং এবং ই-কমার্সের মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার কোটি টাকা, ২০২২ সালে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩১ হাজার কোটি টাকা এবং ২০২৩ সালের মার্চ মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। তাই বলা যায়, প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুতগতিতে অত্যন্ত শক্তিশালীভাবে প্রথাগত আর্থিক লেনদেনের পাশাপাশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থা।
তুলনামূলক কম ব্যবহারকারী
আমাদের দেশে তুলনামূলকভাবে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক কম। দেশে ইস্যুকৃত ডেবিট কার্ডের সংখ্যা ৩ কোটি ১০ লাখ যেখানে ইস্যুকৃত ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ। ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যার মধ্যে যে বড় ব্যবধান, এর প্রধান এবং অন্যতম কারণ হলো ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে কাগজপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা। এছাড়া রয়েছে ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে গ্রাহকদের প্রচলিত বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণা।
ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে হলে আগে কার্ড ব্যবহারের ইকোসিস্টেম প্রসারিত করতে হবে। কিউ-আরকোড এবং অ্যাপসভিত্তিক লেনদেন বৃদ্ধি পেলে পুরো দেশে ক্রেডিট কার্ড তথা সামগ্রিকভাবে কার্ডের ব্যবহার ছড়িয়ে পড়বে।
ব্যবহারকারী কারা
ব্যাংকগুলো চাকরিজীবী এবং ব্যবসায়ী উভয় শ্রেণির গ্রাহকদের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করছে, তবে এক্ষেত্রে চাকরিজীবীদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। ক্রেডিট কার্ডের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো ঋণের সহজলভ্যতা এবং সুবিধাজনক পরিশোধ ব্যবস্থা। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রমোশনাল অফার যেমন ইএমআই, ক্যাশব্যাক ডিসকাউন্টসহ বাই ওয়ান গেট ওয়ান, ইন্স্যুরেন্স, রিওয়ার্ড পয়েন্ট, মিট অ্যান্ড গ্রিট, লাউঞ্জ সুবিধা ইত্যাদি।
ঋণ শোধের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়
ক্রেডিট কার্ড আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য পণ্য হয়ে উঠেছে। এটি নিতে হলে ঋণ পরিশোধের যোগ্যতার প্রমাণের সঙ্গে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণও দাখিল করতে হয়। দেশে এখন রিটার্ন জমা দেওয়ার হার বেড়েছে। সবাই প্রতি বছর তার আয়কর রিটার্ন জমা দেয়। কিন্তু অনেকে অসাবধানতাবশত আয়কর রিটার্ন জমা দেয় না। তাছাড়া অনেকের করযোগ্য আয় না থাকায় তারাও রিটার্ন জমা দেয় না। যা ক্রেডিট ইস্যু করার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও প্রভাব বিস্তার করছে বলে মনে করি।
জীবন সহজ করছে ক্রেডিট কার্ড
ক্রেডিট কার্ড আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। এটির ব্যবহারও অত্যন্ত সহজ। ক্রেডিট কার্ড বিলম্বিত বিল পরিশোধের ভিত্তিতে কাজ করে, যার অর্থ আপনি এখন আপনার প্রয়োজনে কার্ড ব্যবহার করে অর্থ ব্যয় করতে পারেন এবং পরে তা সুবিধামতো সময়ে পরিশোধ করতে পারেন। ব্যবহৃত অর্থ গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে ডেবিট হয় না। এভাবে গ্রাহক প্রতিবার তার প্রয়োজনে কার্ড ব্যবহার করতে পারেন, যা আমাদের জীবনযাত্রাকে অত্যন্ত সহজ ও সাবলীল করে তুলেছে। একজন গ্রাহক যদি নিয়মিত সঠিক সময়ে তার ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করেন তাহলে কখনোই সেই গ্রাহক ঋণগ্রস্ত হবেন না। ব্যাংকগুলোর শক্তিশালী মনিটরিং ও রিকভারি ব্যবস্থা থাকার কারণে এই সেক্টরের খেলাপি ঋণের হার তুলনামূলক অনেক কম।
নিরাপত্তায় প্রয়োজন সচেতনতা
ডিজিটাল পেমেন্টগুলো সাধারণত বিভিন্ন ব্যবহারিক কারণে অফলাইন পেমেন্টের চেয়ে বেশি নিরাপদ। যেমন নগদ অর্থ বহনের ঝুঁকি না থাকা, চুরি, জালিয়াতির আশঙ্কা কম থাকা। ডিজিটাল লেনদেনে গ্রাহকের যে ধরনের সচেতনতা প্রয়োজন
কার্ড নম্বর, কার্ডের পেছনের ৩ সংখ্যার কার্ড ভেরিফিকেশন ভ্যালু (CVV2), ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (OTP), মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ এবং নিরাপত্তা পিন কারও সঙ্গে বিনিময় না করা।
সন্দেহজনক কোনো ওয়েবসাইটে ই-কমার্স লেনদেন থেকে বিরত থাকা ও কার্ডের তথ্য সংরক্ষণ থেকে বিরত থাকা।
সন্দেহজনক কোনো ই-মেইল অথবা এসএমএসে থাকা লিঙ্কে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকা।
সাইবার সংক্রান্ত ঝুঁকি বিবেচনায় ডিজিটাল ডিভাইসের সব সফটওয়্যার হালনাগাদ রাখা এবং নিরাপত্তা সফটওয়্যার ব্যবহার করা।
যেকোনো সন্দেহজনক লেনদেন অতিসত্বর ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ব্রাঞ্চ অথবা ব্যাংকের কল সেন্টারে অবহিত করা।
কার্ড হারানোর পরপরই ব্যাংকের কল সেন্টারে অবহিত করা।
সাধারণত, অধিকাংশ ব্যাংকই নির্দিষ্ট লেনদেনের পরিমাণের ভিত্তিতে ক্রেডিট কার্ডের বার্ষিক ফি সম্পূর্ণ বা আংশিক মওকুফ করে দিয়ে থাকে, যার ফলে এটি গ্রাহকের ওপর বাড়তি কোনো চাপ সৃষ্টি করে না। ক্রেডিট কার্ড একটি লাইফস্টাইল পণ্য, বিশ্বের অন্যান্য দেশের ক্রেডিট কার্ডের সুদের হারের তুলনায় বাংলাদেশে তা অপেক্ষাকৃত অনেক কম। তবে ব্যাংকগুলো সেটেলমেন্টের দিন থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ দিন পর্যন্ত বিনাসুদে বিল পরিশোধের সুযোগ দিয়ে থাকে। তাই যদি কোনো গ্রাহক বুঝে সচেতনভাবে নিয়মিত বিল পরিশোধ করে তবে এটা কিন্তু গ্রাহকদের জন্য একটি চমৎকার সুযোগ।
গ্রাহকদের বিভিন্ন চাহিদার কথা মাথায় রেখে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন উৎসবে নানা ধরনের অফার দিয়ে থাকে যার ফলে গ্রাহক বেশি বেশি লেনদেন করতে উদ্বুদ্ধ হয় যা ব্যবসায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এ যেন ২০২২ বিশ্বকাপের ফাইনাল! সুলেমান দিয়াবাতে যেন কিলিয়েন এমবাপ্পে। না, ১৮ ডিসেম্বর লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে ফরাসি যুবরাজ এমবাপ্পের মতো ট্র্যাজিক হিরো হতে হয়নি দিয়াবাতেকে। হয়েছেন বিজয়ী দলের গর্বিত সেনাপতি। দুই ঐতিহ্যবাহী দল মোহামেডান ও আবাহনীর মধ্যে ফেডারেশন কাপের ফাইনালটা হয়ে উঠেছিল এক বাঁক বদলের লড়াই। যতবার আবাহনী এগিয়ে গেছে ততবারই দিয়াবাতে জ্বালিয়েছেন মোহামেডানের আশার প্রদীপ। নির্ধারিত ৯০ মিনিট ৩-৩। অতিরিক্ত সময়ে ৪-৪। আবাহনীর চার গোল চার জনের; কিন্তু মোহামেডানের চারটাই দিয়াবাতের। এরপর টাইব্রেকারের ভাগ্য পরীক্ষার শুরুটাও মালির ফরোয়ার্ডের লক্ষ্যভেদে। শেষ পর্যন্ত ভাগ্য পরীক্ষাটা ৪-২ গোলে জিতে ৯ বছর পর কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপার স্বাদ পেল মোহামেডান।
ভাষা সৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরুতে এগিয়ে ছিল আবাহনীই। তাদের সামনে প্রথমার্ধে বড্ড অগোছালো মনে হয়েছে আলফাজ শিষ্যদের। মারিও লেমস তুণের সব সেরা তীরদের জড়ো করে একাদশ সাজিয়েছিলেন। যার নেতৃত্ব দেন হাফ-ফিট রাফায়েল আগুস্তো। আক্রমণভাগে তার দুপাশে ছিলেন দানিয়েল কলিনদ্রেস ও তরুণ ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। আর ঠিক ওপরে এমেকা ওগবাহ। আকাশির আক্রমণ ঠেকাতে তখন নাজেহাল সাদা-কালোরা। উপর্যুপরি আক্রমণ থেকে আবাহনীকে ১৬ মিনিটে এগিয়ে নেন ফাহিম। কলিনদ্রেসের কাছ থেকে বল পেয়ে এমেকা ওগবাহ ডিফেন্সচেড়া পাস বাড়ান। চলন্ত বলে ফাহিমের বাঁ পায়ের শট মোহামেডান কিপার সুজন হোসেনের গ্লাভস ছুঁয়ে জালে জড়ায়। মোহামেডান অসহায়ত্বের সুযোগ ৪৩ মিনিটে কাজে লাগান কোস্টারিকার বিশ্বকাপার কলিনদ্রেস। নিজেদের অর্ধ থেকে হৃদয়ের বাড়ানো বল আয়ত্তে নিয়ে মার্কার হাসান মুরাদকে কোনো সুযোগ না দিয়ে ডান পায়ের জোরালো শটে বল দূরের পোস্ট দিয়ে জালে জড়ান এই তারকা।
বিরতি থেকে মাঠে ফিরে অন্যরকম এক মোহামেডান। আলফাজ তিনটি পরিবর্তন করে মাঠে পাঠান জাফর ইকবাল, শাহরিয়ার ইমন ও আলমগীর রানাকে। তাতেই গতি পায় সাদা-কালোর আক্রমণ। ৫৬ মিনিটে ২-১ করেন দিয়াবাতে। কামরুলের ক্রস হেড করে ক্লিয়ার করতে গিয়ে ডিফেন্ডার আলমগীর মোল্লা বল দিয়ে দেন দিয়াবাতের কাছে; দুর্দান্ত সাইডভলিতে বল জালে জড়ায় দিয়াবাতে। চার মিনিট পর সমতাসূচক গোল করেন তিনি। উজবেক মিডফিল্ডার মোজাফফরভের জোরালো ভলি আবাহনী কিপার রুখলেও বাঁদিকে জাফর পেয়ে দ্রুত ক্রস ফেলেন গোলমুখে। মার্কারদের ছাপিয়ে দারুণ হেডে সোহেলকে পরাস্ত করে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন দিয়াবাতে। ৬৫ মিনিটে এমেকা ওগবাহর হেড পোস্টে লেগে ফিরলে হতাশ হতে হয় আবাহনীকে। পরের মিনিটে ডান দিক থেকে ফাহিমের শট সুজন কোনোমতে সেভ করলেও আলতো ট্যাপে গোল করে আবাহনীর লিড পুনরুদ্ধার করেন এমেকা (৩-২)। তবে ৮৩ মিনিটে কামরুলের কর্নারে দিয়াবাতে হ্যাটট্রিক করে মোহামেডানকে আবার ম্যাচে ফেরান।
অতিরিক্ত সময়ের শুরুতে দুটি অসাধারণ সেভ করেন মোহামেডান কিপার সুজন। ৯৬ মিনিটে রহমতের কর্নার ঘুরে ফিরে রাফায়েলের কাছে এলে তাতে দারুণ শট নেন। তবে সুজন ঝাঁপিয়ে তা রুখে দেন। পরের মিনিটে কলিনদ্রেসের কর্নারে আসাদুজ্জামান বাবলুর হেড ফিস্ট করে বিপদমুক্ত করে মোহামেডানকে ম্যাচে রাখেন সুজন। ১০৬ মিনিটে মোহামেডানকে পেনাল্টি উপহার দেন সোহেল। শাহরিয়ার ইমনের ঠেলে দেওয়া বল ধরতে ছুটছিলেন দিয়াবাতে। তার এক টাচে বলটা চলে যাচ্ছিল গোললাইনের বাইরে। তবে সোহেলের পা ধরে টান দিলে পড়ে যান দিয়াবাতে। পেনাল্টি থেকে সোজাসুজি শটে প্রথমবারের মতো মোহামেডানকে লিড এনে দেন দিয়াবাতে। এই ম্যাচটা সেখানেই শেষ হয়ে যেতে পারত। তবে বিধাতা যে ফাইনালের চিত্রনাট্য লিখেছেন অন্যভাবে। ম্যাচের ১১৬ মিনিটে মোহামেডানের তেকাঠীর আস্থা সুজনকে ব্যথা পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয়। মাঠে এসে অপ্রস্তুত আহসান হাবিব বিপুকে পরের মিনিটেই গোল হজম করতে হয়। রয়্যালের কাছ থেকে আড়াআড়ি পাস পেয়ে বক্সের অনেক বাইরে থেকে ডানপায়ের জোরালো শটে গোল করেন এই ডিফেন্ডার। তাতে ম্যাচ গড়ায় পেনাল্টিতে।
ভাগ্য পরীক্ষায় অবশ্য বিপু মোহামেডানের বিজয়ের নায়ক হয়ে ওঠেন বিপু। শুরুতেই ঠেকিয়ে দেন রাফায়েলের শট। অন্যদিকে দিয়াবাতে, আলমগীর কবির রানা, রজার দুরাতে টানা ৩ গোল করেন। আবাহনীর হয়ে এমেকা ও ইউসেফ গোল করলে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৩-২। এরপর মোহামেডানের শাহরিয়ার ইমনের শট সোহেল ঠেকিয়ে দিলে আবাহনীর ফেরার আশা জাগে। তবে বিপু কলিনদ্রেসের শট রুখে দিলে উত্তাল হয়ে ওঠে মোহামেডান গ্যালারি। আর কামরুল হাসান ঠিকঠাক লক্ষ্যভেদ করে অনেক চাওয়ার শিরোপা নিশ্চিত করেন মোহামেডানের।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।