
২০২২ সালে বিশ্বকে আমরা কভিড-১৯ মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জ্বালানিমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি, বিশ্বজুড়ে অভূতপূর্ব মুদ্রাস্ফীতি, বাণিজ্য ও পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক সব লক্ষণসহ বহুমুখী সংকটের এক অভূতপূর্ব কালপর্বে প্রবেশ করতে দেখেছি। এই সংকটগুলোর কিছু সংকটকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা বিশ্বব্যবস্থায় ক্ষয়ের লক্ষণ হিসেবেও গণ্য করা হচ্ছিল। তবে, বস্তুত এসব এক নতুন বিশ্বব্যবস্থার জন্মেরও লক্ষণ। অর্থাৎ, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন এবং বিশ্বরাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের একচেটিয়া উত্থানের মধ্য দিয়ে যে একমেরু-কেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা অবশেষে ভেঙে পড়ছে এবং বহুমেরু-কেন্দ্রিক এক নতুন বিশ্বব্যবস্থার আবির্ভাব ঘটছে। নতুন এই বিশ্বব্যবস্থার প্রধান দুই খেলোয়াড় একুশ শতকের দুই সামরিক, প্রযুক্তিগত এবং অর্থনৈতিক পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন। অবশ্য, ইউরোপ, রাশিয়া, জাপান, ইরান এবং ভারতও পৃথিবীর বিশাল অংশজুড়ে প্রভাব খাটাবে। যার লক্ষণও আমরা ইতিমধ্যে টের পেয়েছি বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাসের কিছু তৎপরতা নিয়ে সম্প্রতি ঢাকার রুশ দূতাবাসের বিভিন্ন বক্তব্যের মধ্য দিয়ে।
ইরান ও রাশিয়ার জোটবদ্ধতা : গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু করার পর রাশিয়াকে প্রায় প্রকাশ্যেই সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছে ইরান। দেশ দুটির এই জোটবদ্ধতার গ্রাউন্ড হলো মার্কিন আধিপত্যের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। তবে, রাশিয়ার সক্ষমতার ওপর একটি বড় প্রশ্ন চিহ্ন ঝুলে আছে। কারণ বিশ্বরাজনীতিতে এর ভবিষ্যৎ অবস্থান, সক্ষমতা এবং কৌশলগত ভঙ্গি নির্ভর করছে ইউক্রেন যুদ্ধের ফলাফলের ওপর। বছর শেষে মনে হচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্য দিয়ে রাশিয়া শেষ পর্যন্ত নিজের ধ্বংসই ডেকে আনছে। যদিও ইউক্রেন নিয়ে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের অতিরিক্ত আগ্রহ জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি দাবি করে রাশিয়া ‘সামরিক আগ্রাসন’ শুরু করেছিল। অনেকে মনে করছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনের অধীনে রাশিয়া মরিয়া হয়ে ‘সাম্রাজ্যবাদী’ অতীতকে আঁকড়ে ধরছে।
তবে যুদ্ধের সম্ভাব্য চূড়ান্ত পরিণতি সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়তো এখনই ঠিক হবে না। ইউক্রেনে রাশিয়ার পরাজয়ের পর পুতিনের শাসন কি টিকে থাকবে, নাকি দেশটিতে অভ্যন্তরীণ ক্ষয় ও বিচ্ছিন্নতার আরেকটি পর্বের সূচনা হবে? এই প্রশ্নের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত, আমরা বুঝতে পারব না যে, রাশিয়া পূর্ব ইউরোপ এবং ইউরেশিয়ার বেশিরভাগ অংশে তার আধিপত্যের পুরনো দাবিতে অনড় থাকবে কি না। রাশিয়া যদি সেই দাবি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়, তাহলে বিশ্বশক্তি হিসেবে তার ভূমিকা হয়তো শেষ হয়ে যাবে। তবে এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, এমনকি একটি জরাজীর্ণ, অপমানিত রাশিয়াও ভূ-রাজনৈতিকভাবে একেবারে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে না। বরং, সম্ভবত নতুন বিশ্বব্যবস্থায় এবং বিশেষ করে ইউরোপীয় মহাদেশে অস্থিতিশীলতার একটি প্রধান উৎস হিসেবে থেকে যাবে। কিন্তু একটা বিষয় এখন স্পষ্ট যে, রাশিয়ার বিশাল পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার একবিংশ শতাব্দীতে তার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানকে সুরক্ষিত করার জন্য আর যথেষ্ট নয়।
সম্পদ শক্তিতে বলীয়ান চীন : রাশিয়া যেখানে তার ভঙ্গুরতা এবং ক্ষয়ের কারণে নতুন ঝুঁকি তৈরি করছে, চীন সেখানে তার ক্রমবর্ধমান সম্পদ এবং শক্তির কারণে প্রভাবশালী হয়ে উঠছে। ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে শুরু হওয়া ব্যাপক বিশ্বায়নের সুযোগ নিয়ে চীন নিজেকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে পেরেছিল এবং উচ্চ আয়ের মর্যাদা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এ ছাড়া ২০০৮ সালের আর্থিক মন্দা পশ্চিমকে কিছুটা বেকায়দায় ফেলে দেওয়ায় চীন তার নিজস্ব বিশ্ব-নেতৃত্বের ভূমিকা প্রসারিত করতে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী পরাশক্তি হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে স্নায়ুযুদ্ধের কালে সোভিয়েত রাশিয়া যেভাবে শুধুমাত্র নিজের সামরিক শক্তি বাড়ানোর ওপর মনোযোগ দিয়েছিল, চীন সে ভুল করেনি। চীন বরং পশ্চিমের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার সক্ষমতা অর্জনের জন্য বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিতে প্রচুর বিনিয়োগ এবং মুক্তবাজার অর্থনীতির সুবিধা গ্রহণ করে বিশ্ববাজারে ব্যবসা-বাণিজ্যে অংশগ্রহণ করে নিজেদের শক্তিশালী অর্থনীতি গড়ে তোলে। চীনারা অবশ্যই সামরিক বিনিয়োগে পিছিয়ে নেই, তবে তারা বাকি সবকিছু বাদ দিয়ে শুধু প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা খাতেই বেশি ব্যয় করেনি। চীন এবং রাশিয়ার মধ্যে বর্তমানে প্রধান পার্থক্য হলো, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের মতো চীনা নেতৃত্ব মানসিকভাবে অতীতে বসবাস করছেন না, তারা একবিংশ শতাব্দীতেই বসবাস করছেন। গত নভেম্বরে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে জি-টোয়েন্টি শীর্ষ সম্মেলনে চীন ও রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি এবং উদ্দেশ্যের এই মৌলিক পার্থক্যটি ধরা পড়েছে। যেখানে রাশিয়া নিজেকে কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হিসেবে খুঁজে পেয়েছিল, সেখানে চীন ছিল সমস্ত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এবং সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোতেও চীনের প্রভাব ছিল সবচেয়ে বেশি। ইউক্রেন সংকটের বিষয়ে পশ্চিমাদের পক্ষ না নিলেও সম্মেলনে চীন এবং ভারত রাশিয়ার যুদ্ধনীতি এবং পারমাণবিক হুমকির সমালোচনা করে এবং রাশিয়া থেকে নিজেদের লক্ষণীয়ভাবে দূরে রাখার চেষ্টা করে। এছাড়া চীন ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরোধিতা না করলেও ইরানের মতো মস্কোকে প্রায় প্রকাশ্য সমর্থনও জোগায়নি। চীন বরং রাশিয়া-ইরানের মার্কিন আধিপত্যবিরোধী জোটবদ্ধতার কৌশলগত সুবিধা গ্রহণ করে ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তার করার পাশাপাশি নিজেদের শিল্পকারখানাগুলোর জন্য জ্বালানির সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং ওই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগ করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছে। চীন পশ্চিমের সঙ্গে প্রকাশ্যে পুরোপুরিভাবে দ্বন্দ্বে না জড়িয়ে বরং ইরান-রাশিয়ার জোটবদ্ধতায় ইন্ধন জুগিয়ে পশ্চিমের অবস্থানকে দুর্বল করে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টাও করবে।
তুরস্কের কৌশলগত প্রতিভা : তুরস্ক এক অনন্য কূটনৈতিক কৌশল অবলম্বন করে তার রাজনৈতিক শৈল্পিকতার চিত্র তুলে ধরছে। একদিকে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য হিসেবে পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখছে, অন্যদিকে, ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতা করে এবং পুতিনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ইস্যুতে (যেমন সিরিয়া) সহায়ক হয়ে রাশিয়ার সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় রাখছে। এমনকি, তুরস্ক একদিকে, ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করছে, আবার অন্যদিকে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাও মেনে চলতে অস্বীকার করছে। এভাবে সুকৌশলে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া উভয়ের জন্যই নিজেকে অপরিহার্যভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছেন। এরদোয়ানের এই কৌশলগত খেলা বিস্ময়করভাবে তার পক্ষে কাজে লেগেছে এবং ২০২৩ সালে অনুষ্ঠেয় তুরস্কের জাতীয় সাধারণ নির্বাচনেও তাকে জয় এনে দিতে পারে; তুরস্কের অর্থনীতিতে তার বিপর্যয়কর অব্যবস্থাপনা এবং ব্যর্থতা সত্ত্বেও।
ইরানের প্রতি আরবদের নরম সুর : প্রতিরক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীলতা সত্ত্বেও সৌদি আরব এবং আরব আমিরাতের মতো উপসাগরীয় আরব দেশগুলোও ইরানের প্রতি সুর নরম করছে এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাইছে। আরব আমিরাত ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা ইরানের সঙ্গে কূটনেতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়। এমনকি সৌদি যুবরাজও বলেছেন, ইরান আমাদের প্রতিবেশী দেশ। ফলে আমরা একে অপরকে ঝেড়ে ফেলে দিতে পারব না। তার চেয়ে বরং কীভাবে আমরা ভালোভাবে সহাবস্থান করতে পারি সেই উপায় খুঁজে বের করাই মঙ্গলজনক হবে। এ থেকে মনে হচ্ছে যে, মধ্যপ্রাচ্যের শিয়া-সুন্নি বিরোধও হয়তো প্রশমিত হতে চলেছে। এই বিরোধকে কাজে লাগিয়েই যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে ঘাঁটি গেড়েছিল। ডিসেম্বরের শুরুতে সৌদি আরব চীনের সঙ্গেও তিন হাজার কোটি ডলারের ৩৪টি বিনিয়োগ চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্রের ঘুম উড়িয়েছে। মোটকথা, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্য দিয়ে স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যে একমেরু-কেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্ব ইতিমধ্যেই তা থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। গত তিন দশক ধরে মার্কিন নেতৃত্বাধীন মুক্তবাজার অর্থনীতি এবং বিশ্বায়নের ফলেই দুনিয়া আজ অনেক বেশি জটিল এবং অবিচ্ছেদ্যভাবে আন্তঃনির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন আর তার নিজস্ব উৎপাদনশীলতার মারাত্মক ক্ষতি না করে চীনের অর্থনৈতিক উত্থানকে ঠেকাতে পারবে না। ইউরোপীয় অর্থনীতি, যেমন, জার্মানি এবং হাঙ্গেরি, ব্যাপক অর্থনৈতিক ধস এবং বেদনাদায়ক আর্থিক মন্দার মুখোমুখি হওয়া ছাড়া রাশিয়ার ওপর তাদের নির্ভরশীলতা কমাতে পারবে না। মধ্যপ্রাচ্যও ইরানকে বাদ দিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে স্থিতিশীল হতে পারবে না। এককথায়, নতুন এই বিশ্বব্যবস্থার উপাদানগুলো পরস্পরের জন্য অপরিহার্য।
লেখক: সাংবাদিক ও লেখক
আন্দালিব রাশদী কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক। পড়াশোনা ঢাকা, ওয়েলস ও লন্ডনে। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে তিনি লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন, যা বাংলাদেশে বিরল। উপন্যাস, ছোটগল্পের পাশাপাশি তিনি নিয়মিতভাবে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কলাম ও প্রবন্ধ লেখেন। বিদায়ী ও নতুন বছরের প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন দেশ রূপান্তরের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সম্পাদকীয় বিভাগের সাঈদ জুবেরী
দেশ রূপান্তর : বিদায়ী বছরকে কী দিয়ে মূল্যায়ন করবেন মুদ্রাস্ফীতি, মূল্যস্ফীতি, ব্যাংক লুট নাকি পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল দিয়ে?
আন্দালিব রাশদী : যে কটা বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে তার সবগুলোই বাস্তবতা। সময় সংকট ও সাফল্যের মূলে রয়েছে আর্থিক ক্ষমতা এবং ব্যবস্থাপনা। সঙ্গে যোগ হয় বৈশ্বক পরিস্থিতি। বৈশ্বিক মহামারী কিংবা যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারের যে অস্থিতিশীলতা সেখানে বাংলাদেশের হস্তক্ষেপের সুযোগ কম। কিন্তু রাষ্ট্র যা ঠেকাতে পারে তা হচ্ছে তহবিল লুণ্ঠন ও পাচার। ক্ষমতার সমর্থন ছাড়া সংগঠিত দুর্বৃত্তায়ন সম্ভব নয়। ব্যাংক মালিকরা এক সময় রাষ্ট্র গঠনে উদার হাতে অর্থব্যয় করতেন, এখন রাষ্ট্রের অর্থ দুহাতে তুলে নিয়ে ব্যাংক মালিক হওয়া যায়, ব্যাংকের সমুদয় অর্থ লোপাট করে জনগণের সঞ্চয় ফিরিয়ে দেওয়ার দায় সরকারের ঘাড়ে ফেলে হাওয়া খেয়ে বেড়ানো যায়।
কেবল ২০২২ নয়, অনেক বছর ধরেই চলছে প্রতিষ্ঠানের ‘ইন্টেগ্রিটি’ ভেঙে দেওয়ার প্রক্রিয়া। যদি প্রশ্ন করি বলুন বাংলাদেশের কোন প্রতিষ্ঠানটির ইন্টেগ্রিটি নিয়ে আপনি গৌরবান্বিত বিশ্ববিদ্যালয়, আমলাতন্ত্র, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ন্যায়বিচার, প্রশাসন, পূর্ত ও নির্মাণ, ব্যাংক, শুল্ক, সংবাদ মাধ্যম আপনি দ্বিধান্বিত হয়ে পড়বেন। জোর গলায় কেন, মিনমিন করেও গৌরব প্রকাশ করতে দ্বিধান্বিত হবেন। প্রশংসিত থাকবেন এ দেশের সাধারণ মানুষ, কৃষক, শ্রমিক, গার্মেন্টস কর্মী, প্রবাসী ওয়েজ আর্নার প্রমুখ।
অবকাঠামো উন্নয়ন অবশ্যই প্রশংসনীয় এটাই অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি। একই সঙ্গে উন্নয়নের জন্য প্রদেয় মূল্যও পরীক্ষণীয়।
দেশ রূপান্তর : আগামী বছর বাংলাদেশে নির্বাচনের বছর। একে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক টানাপড়েন কি আরও বাড়বে বলে মনে করছেন?
আন্দালিব রাশদী : আমি রাজনীতিবিদ নই, রাজনীতি বিশ্লেষকও নই; গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোটাধিকার এসব বিভ্রান্তিকর বুলি আমরা যাদের কাছে শিখেছি, মূলত ব্রিটেনের কাছে, আমরা মোটেও তাদের মতো মানুষ নই, তাদের চেয়ে হীনমানের। ২০২২ সালেই তো সেখানে তিন প্রধানমন্ত্রীর শাসন চলেছে, একজন লিজ ট্রাস দেড় মাস অতিক্রম করতে পারেননি। ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা কি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীরা করেন না? অবশ্যই করেন। রাজনৈতিক কৌশলে তা করেন। আমরা, ক্ষমতায় যারাই অধিষ্ঠিত হই না কেন ক্ষমতা ধরে রাখতে ছল-বল-কৌশলের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে থাকি। কোনো কোনো দেশের জন্য ভোটার গুরুত্বপূর্ণ নন, গুরুত্বপূর্ণ যিনি ভোট গণনা করেন। ১৯৭০-এর যে নির্বাচন কার্যত বাংলাদেশের স্বাধীনতার রায় দিয়েছিল সে নির্বাচনে চিফ ইলেকশন কমিশনার ছিলেন একজন বাঙালি বিচারপতি। সেই বিচারপতি আবদুস সাত্তার বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিও হয়েছিলেন। যে দল যখন বিরোধী পক্ষ হয় তাদের পছন্দ থাকে ভারতের সেই বিখ্যাত টি এন সেমানের মতো ব্যক্তি যেন চিফ ইলেকশন কমিশনার হন। যেন নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীনদের চিরকালীন চাওয়া একজন দলনফর প্রধান নির্বাচক। পরস্পরবিরোধী চাওয়া উত্তেজনা ও টানাপড়েন সৃষ্টি করতে বাধ্য। বাংলাদেশে নির্বাচনের ইতিহাস হাস্যকর গণতন্ত্র সৃষ্টি করেছে। কর্মজীবনে ব্যক্তিগতভাবে একটি নির্বাচন কন্ট্রোলরুমের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে একজন রিটার্নিং অফিসারকে আমি অনুরোধ করেছিলাম, প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা একটু কমিয়ে বলুন, প্রায় শতভাগ হয়ে যাচ্ছে। তিনি বললেন, আমার আশপাশে কোনো স্ট্যাটিসশিয়ান নেই, যা করার আপনারাই করে নিন। আশির দশকের এক জাতীয় নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ একজন মন্ত্রী বন্ধ-দরজা বৈঠকে নির্দেশ দিয়েছিলেন : এই জেলায় অপজিশনকে একটা সিট দিতেই হবে। কিন্তু কোনোভাবেই যেন তা দুই অতিক্রম না করে। পেশাগত কারণে আমিও বন্ধ দরজা বৈঠকে হাজির ছিলাম। পরিস্থিতি এখন অনেক পাল্টে গেছে। দলমত নির্বিশেষে ‘আমি জিতলেই’ গণতন্ত্রের জয় জয়কার অন্যথায় সব প্রহসন। জর্জ বার্নাড শ প্রায় সোয়া শত বছর আগে বলেছিলেন : নির্বাচন হচ্ছে নৈতিক সন্ত্রাস, যুদ্ধের মতোই তবে রক্তপাতহীন। এর সঙ্গে যুক্ত সবার আত্মাই কর্দমাক্ত হয়ে ওঠে।’ ২০২৪-এর নির্বাচনী অস্থিরতা ও দ্বন্দ্ব ইন্টার পার্টি এবং ইন্ট্রা পার্টি অতি ভয়ংকর হয়ে উঠলে কথিত গণতন্ত্র চর্চা থেমে যাবে।
দেশ রূপান্তর : বর্তমানে সারা বিশ্বেই আমরা একটা কর্র্তৃত্ববাদী শাসন কাঠামোর উত্থান দেখতে পাচ্ছি, এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
আন্দালিব রাশদী : কর্তৃত্ববাদ এখন অজেয় বৈশ্বিক প্রপঞ্চ। গণতন্ত্রের প্রবক্তারা ভাবেননি যে ‘ইললিবারেল ডেমোক্রেসি’ পৃথিবীতে জাঁকিয়ে বসবে। গ্লোবাল ফ্রিডম প্রতিবেদনটি দেখুন। বিভিন্ন সূচক বলে পৃথিবীর ষাটটি দেশের গণতান্ত্রিক অবস্থান নেমে গেছে। পৃথিবীর কুড়ি শতক মানুষ মোটামুটিভাবে লিবারেল গণতন্ত্রের ছায়াতলে বসবাস করছে। প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের দোহাইয়ের আড়ালে গণতান্ত্রিক একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। একদা জনমুখী বাম হিসেবে সমাদৃত নেতৃবৃন্দের অনেকেই গণতান্ত্রিক একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠায় জুনিয়র পার্টনার হয়ে গেছেন। ইউনিয়ন অব সোভিয়েত সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক কর্তৃত্ববাদী হলেও পৃথিবীকে ভারসাম্যপূর্ণ দ্বি-মেরু করে রাখতে সক্ষম ছিল। ভাঙনের পর এক মেরুর কথিত গণতান্ত্রিক বিশ্ব প্রায় বিনা চ্যালেঞ্জেই গণতন্ত্রের লিবারেলিজমকে দেহচ্যুত করতে বিভিন্নমুখী অস্ত্রোপচার চালিয়েছে। গণতন্ত্রায়নের নামে স্বৈরতান্ত্রিক প্রক্রিয়াসমূহের চর্চাই বেশি হয়েছে। সামরিক অভ্যুথান ঘটাতে সামরিক বাহিনী যতটা না এগিয়ে এসেছে তার চেয়ে কথিত গণতান্ত্রিক শক্তিই তাদের আসার পথ সুগম করে স্বাগত জানিয়েছে। ‘দ্য রাস্ট উইদিন ডেমোক্রেসি’- গণতন্ত্রের ভেতরের পচন চেনার জন্য মার্কিন সাধারণ নির্বাচন-উত্তর ক্যাপিটল হিল অবরোধ, তছনছ ও লুণ্ঠনের দৃশ্যই যথেষ্ট। সাড়ে চারশ বছর আগে অসন্তুষ্ট জনতা নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ইউনান ডি উইট ও তার ক্ষমতাধর ভাইকে শুধু হত্যাই করেনি, তাদের মৃতদেহ নিয়ে গণউল্লাস হয়েছে এবং তাদের বুক ফেঁড়ে ক্ষিপ্ত মানুষ কলজেতে কামড় বসিয়েছে, তাদের চোখ তুলে স্যুভেনির হিসেবে নিয়ে গেছে। ক’বছর পর সেই জনতাই বলেছে, ইউনান ডি উইট-ইতো ভালো ছিলেন। ২০২২-এর অন্যতম দৃষ্টি উন্মোচক শ্রীলঙ্কার রাজাপাকসে সরকারের পতন, পলায়ন, রাজভবনের গণদখল। আমরা অবহিত আছি মাহিন্দা রাজাপাকসে ফিরে এসেছেন, নিরাপদ জীবনযাপন করছেন; আসছে নির্বাচনে গণতন্ত্রের হাত ধরেই তিনি আবারও নির্বাচিত হবেন মনে করা হচ্ছে। যে মার্কোসকে ফিলিপাইন গণঅভ্যুথানে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশ থেকে তাড়িয়েছিল তার পুত্র বংবং মার্কোস এখন সে দেশের প্রেসিডেন্ট, বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন।
দেশ রূপান্তর : বছর শেষের দিকে বিশ্বের নানা দেশে ফের করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির খবর যেমন পেয়েছি, তেমনি সারা বছর আলোচনায় ছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে সবাই বলছে ২০২৩ সাল অমঙ্গল বার্তা বয়ে আনতে যাচ্ছে। আপনার মতামত কী?
আন্দালিব রাশদী : নস্ত্রাদামুস কিংবা জিন ডিক্সনের পথে না হেঁটেও এক সপ্তাহের খবরের কাগজ ঘাঁটাঘাঁটি করলে মোটামুটি সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় : যদিও ১৩ বিলিয়ন শট ড্যাক্সিন এর মধ্যেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে তারপরও কভিড-১৯ ভাইরাসের বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট যে বছরভর অবস্থান করবে তা দ্বিধা ঝেড়ে বলে দেওয়া যায়।
আর রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ? যুদ্ধ করিয়েছে গ্লোবাল মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স। করোনাকালে অনেক অস্ত্র গুদামে জমে গেছে, গুদাম খালি করতে হবে। কভিডের মতোই অস্ত্রের নতুন ভ্যারিয়েন্ট বাজারে ছাড়ার আগে গুদামজাত করতে হবে। আসলে ইউক্রেন-ক্রেমলিন-পেন্টাগন-ন্যাটো-জাতিসংঘ সবই মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সের ক্রীড়নক। বাংলাদেশি মানি লন্ডারদের কেউ এই কমপ্লেক্সের গুরুত্বপূর্ণ শেয়ার হোল্ডার এ কথা কোনোদিন প্রকাশিত হলে আমি অন্তত বিস্মিত হব না। ২০২৩ যতটা না আশার তার চেয়ে বেশি আশঙ্কার।
দেশ রূপান্তর : কাগজের মূল্যবৃদ্ধিতে বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্প, সংবাদমাধ্যম একটা বড় ধাক্কা খেয়েছে। আপনার কি মনে হয়, এর প্রভাব আমাদের শিল্প-সাহিত্যের ওপর কতটুকু পড়বে?
আন্দালিব রাশদী : চলুন একটু উল্টো করে ভাবি- যে দামে আমরা কাগজ কিনব বলে প্রত্যাশা করেছিলাম, বাজারে গিয়ে দেখলাম কাগজ প্রত্যাশিত দামের সিকিভাগ দামে পাওয়া যাচ্ছে। প্রকাশক-মুদ্রক সেই টাকায় চারগুণ বেশি পরিমাণ কাগজ কিনে নিয়ে চলে এলেন। এবার এই বাড়তি কাগজ কিংবা সস্তা কাগজ কি আমাদের শিল্পসাহিত্য চেষ্টার ওপর কোনো প্রভাব ফেলতে সক্ষম হবে? কাগজ যদি বিনে পয়সায়ও সরবরাহ করা হয় তাতেও শিল্পসাহিত্য চর্চায় তেমন হেরফের হবে না। মহার্ঘ কাগজ কিংবা পানির দামের কাগজের প্রভাব পড়বে শিল্পসাহিত্য বহির্ভূত অন্যান্য কাগুজে কারবারে।
আমি ব্যক্তিগতভাবে সাইবারফোবিক মানুষ, অবশ্যই ব্যাকডেটেড, আমার কোনো ফেইসবুক অ্যাকাউন্টও নেই, কিন্তু আমি মোটেও ফেইসবুক-বিরোধী নই, ব্লগ-বিরোধী নই, সামাজিক মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করার বিরোধী নই, কিন্তু আমি তাতে নেই কারণ আমি ফোবিক আমার ধারণা আমি ম্যানেজ করতে পারব না। আমার জীবন ধারণের প্রধান সহায় ছাপা বই এবং ছাপা লেখালেখি। কাগজের দুর্মূল্য এবং আনুমনিক আমদানি দ্রব্যেও মূল্যবৃদ্ধিতে আমার বই ছাপা ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলে প্রকাশক অবশ্যই মুখ ফিরিয়ে নেবেন। আমি কি লেখালেখি ছেড়ে দেব? আমি অনলাইন প্রকাশনার দিকে মনোযোগী হব, সাইবারফোরিয়া উতরানোর সবক নেব।
কাগজের দাম বাড়ার আগেই ই-পেপারের কাছে ছাপা পেপার, ই-বুকের কাছে ছাপা বই মার খেয়ে আসছে। বিখ্যাত একটি পত্রিকাসহ যুক্তরাষ্ট্রে বন্ধ হয়েছে ৭০টি দৈনিক এবং ২ হাজারের বেশি সাপ্তাহিক।
দেশ রূপান্তর : এ বছর বেশ রেহানা মরিয়ম নূর, হাওয়া’র মতো কিছু আলোচিত-প্রশংসিত চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে, এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে আশা করছেন, নাকি কয়েকটি ভালো সিনেমা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হয়েই থাকবে?
আন্দালিব রাশদী : ডিসেম্বরের শেষার্ধে এসে জানলাম মুহাম্মদ কাইয়ুম পরিচালিত বাংলাদেশের ভাটি অঞ্চলের হাওর-বাঁওড়ের জলকাদার গল্প নিয়ে তৈরি ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের মর্যাদা পেয়েছে। অথচ দিনের পর দিন তাকে প্রযোজকের অনুসন্ধান করতে হয়েছে, প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। নিজের জীবনের সমুদয় কামাই লগ্নি করে সিনেমা বানিয়েছেন, নিজের শিল্পসাধ মিটিয়ে মেধা ও শ্রম ঢেলে দিয়ে আন্তর্জাতিক মর্যাদা পাওয়ার মতো উঁচু স্থানে একে স্থাপন করতে পেরেছেন। কলকাতাই হোক কি কান-ই হোক কেউ তাকে উত্তম না বলা পর্যন্ত অধমই রয়ে থাকে। রেহানা মরিয়ম নূর কিংবা হাওয়া’র মতো ছবি হতে থাকবে না এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা এ প্রশ্নের জবাবটা কঠিন নয়। সিনেমা হোক কি গান হোক কি সাহিত্য সংস্কৃতির ভালোটার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়নি। সুতরাং প্রতিকূলতা ঠেলে যদি ব্যক্তি মেধা ও সামর্থ্য দিয়ে প্রশংসনীয় কাজ বের করে আনতে পারেন।
দেশ রূপান্তর : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ও শুভ নববর্ষ।
আন্দালিব রাশদী : ধন্যবাদ। আপনাকে ও দেশ রূপান্তরের পাঠকদেরও শুভ নববর্ষ।
আমাদের দেশে সরকারি ও বেসরকারি সব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়ায় লটারি পদ্ধতি চালু হয়েছে ২০২০ সাল থেকে, করোনা মহামারীর সময়ে। তখন এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকার পর এই ব্যবস্থাতেই নতুন ক্লাসে ভর্তি নেওয়া হয় শিশুদের। এর আগ পর্যন্ত ভর্তি যুদ্ধ নামে এক ভয়াবহ যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে হতো কোমলমতি শিশুদের। চার থেকে ছয় বছর বয়সী শিশুদেরও সারা বছর ধরে ভর্তি কোচিংয়ের নামে অমানুষিক চাপ দিয়ে এই সমাজ তাদের ভর্তি যুদ্ধে নামিয়ে দিত। তাই শিক্ষার্থীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক চাপ কমাতে এবং ভর্তির তদবির বন্ধে এই সিদ্ধান্ত।
আগে বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে লটারি ও অন্যান্য শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হতো। এতে মেধা যাচাই করার সুযোগ ছিল বলে অনেকে মনে করেন, আসলেই কি তাই? মেধা যাচাইয়ের পরীক্ষা হয় নাকি কে কতটা তথ্য মুখস্থ করে ধরে রাখতে পারে এবং ভর্তি পরীক্ষার খাতায় সেগুলো উগরে দিতে পারে তার পরীক্ষা হয়? ঢাকার নামকরা কিছু বিদ্যালয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন এসেছিল বাংলাদেশে স্বাধীন বিচারব্যবস্থার যাত্রা কবে শুরু হয়। এটি দ্বিতীয় শ্রেণির জন্য কী ধরনের প্রশ্ন? অতি সৃজনশীল না বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্ন?
দেশের মহানগর পর্যায়ের পরে ২০২১ সাল থেকে জেলা পর্যায়েও চালু হয় লটারি পদ্ধতি। তথাকথিত ভালো স্কুল নামে যেগুলো পরিচিত সেগুলোতে আসন সংখ্যা যত, তাতে এই সব খুদে শিক্ষার্থীদের সবার সংকুলান হতো না স্বাভাবিকভাবেই, ফলে যুদ্ধের মাঠে মারা যেত তাদের উৎসাহ, উদ্দীপনা ও ভেতরকার মানসিক শক্তি। নিজেদের আকক্সক্ষা অনুযায়ী সন্তান ভর্তি করাতে না পারার শোকে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের মানসিক অবস্থার খবর রাখার সময় পান না। তাই অভিভাবকদের কেউ কেউ এই যুদ্ধের বিরোধী ছিলেন, লটারি ব্যবস্থা তাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। কোচিং, ভর্তি বাণিজ্য, শিশুদের অন্যায্য প্রতিযোগিতার চাপ থেকে রক্ষা করতে এই ব্যবস্থা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেছেন, সরকারি ও বেসরকারি স্কুলে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লটারির মাধ্যমে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। এ বছর ক্যাচমেন্ট এরিয়া ৪০ শতাংশের পরিবর্তে ৫০ শতাংশ করার কথাও তিনি বলেছেন। ক্লাস্টারভিত্তিক ভর্তির ক্ষেত্রে লটারিতে পাঁচটি স্কুলের চয়েস দেওয়া যাবে।
লটারিতে ভর্তির ফলে মেধা দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও অনেক শিক্ষার্থী আশানুরূপ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষালাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে বলে অনেকেই মনে করছেন। এ বছর লটারি ব্যবস্থার বেশ কিছু দুর্বলতা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। পত্রপত্রিকায় খবর এসেছে যে, একই তালিকায় এক শিশুর নাম বারবার এসেছে। লটারি ব্যবস্থার ফাঁকফোকর খুঁজে বের করে অনিয়ম শুরু করেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অসৎ শিক্ষক-কর্মচারী থেকে শুরু করে কিছু অভিভাবকও। একই শিশুর নামে অবৈধভাবে একাধিক জন্মসনদ তৈরি করে প্রাণপণে তারা পছন্দের স্কুলে সন্তানকে ভর্তির চেষ্টা চালাচেছন। ভর্তি লটারিতে অনেক শিক্ষার্থীর নাম ৬-১০ বার আসার অভিযোগও উঠেছে। এসব কারণে প্রশ্নের মুখে পড়ে যাচ্ছে পুরো পদ্ধতিটি। ভাগ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়া অভিভাবকদের অসন্তোষ তো রয়েছেই। লটারিতে সুযোগ না পেয়ে শিশুদের মানসিক যন্ত্রণার কথাও বলছেন অনেক অভিভাবক।
প্রতিটি শিশুই কোনো না কোনোভাবে মেধাবী। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় সেই মেধা কীভাবে প্রস্ফুটিত করতে হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেটি কীভাবে বের করবে তার সঠিক কৌশল নেই। শিক্ষার্থীদের সামর্থ্য, আগ্রহ খেয়াল না করে শুধু তথ্য গেলানো হয় এবং খাতায় যার উদগিরণ বলে দেয় একজন শিক্ষার্থী কতটা মেধাবী। ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা অনেক কিছু জানতে পারে, ব্যস্ত থাকে কিন্তু লটারির মাধ্যমে ভর্তির প্রক্রিয়ায় এ বিষয় দুটোতে ছেদ পড়ে বলেও বলছেন কেউ কেউ। বিষয়টি অমূলকও নয়, কিন্তু শিশুদের যে আনন্দের মাধ্যমে শেখানো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাদের জন্য আনন্দের ব্যবস্থা করা সে বিষয়গুলো কিন্তু উপেক্ষিত থেকে যায় যদি তথাকথিত ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের ভর্তি করা হয়। স্কুল সমাপনী, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয় যে বয়সে, সে বয়সে হয়তো এই চাপ নেওয়া যায়, কিন্তু স্কুলপড়ুয়া ছোট ছোট শিশুদের সেই চাপ দেওয়া কোনোভাবেই বিজ্ঞানসম্মত নয় এবং তাদের প্রতি এটি সঠিক মানবিক আচরণও নয়। শিশুরা তাদের বাড়ির পাশে নিজ ক্যাচমেন্ট এরিয়ার বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করবে, এটি আদর্শিক কথা, যুক্তির কথা একং হওয়ার কথাও তাই। তাহলে ট্রাফিক জ্যাম কম হবে, শিশুর শারীরিক ও মানসিক কষ্ট লাঘব হবে, অভিভাবকদের অর্থ, সময় এবং টেনশন কমবে আর দেশের বিদ্যালয়গুলো সমতা অর্জনের দিকে এগোবে, অসুস্থ প্রতিযোগিতা দূর হবে যদি তথাকথিত ভর্তি পরীক্ষা না নেওয়া হয়। কিন্তু লটারির মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়ায় যেসব খবর এসেছে সেগুলোও সুখকর নয়।
আমাদের অভিভাবক একটু সচ্ছল হলেই তার সন্তানকে আর সরকারি প্রাথমিকে দিতে চান না অন্তত যেখানে ব্যক্তিচালিত কিন্ডারগার্টেন আছে। মাধ্যমিকে প্রায় ৯৮ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বেসরকারি। আর এই বেসরকারি হওয়ার কারণে কোনো ধরনের সমতা কিংবা সাধারণ বৈশিষ্ট্য নেই। নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক কিংবা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বা মানসম্মত ও বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক। যেসব বিদ্যালয়ের নাম-ডাক আমরা শুনি সেগুলো বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কমিটির বদৌলতে হয়েছে। তারা শিক্ষকদের সেভাবে তৈরি করেন, প্রতিষ্ঠানের সার্বিক পরিবেশ বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে, বহু অবাঞ্ছিত অবস্থা মোকাবিলা করে ধরে রেখেছেন। এসব প্রতিষ্ঠানে একটি নির্দিষ্ট মানের শিক্ষার্থী ভর্তি করার অধিকার তাদের আছে। তা না হলে মানসম্মত শিক্ষার কোনো উদাহরণই থাকত না। লটারির মাধ্যমে ভর্তির ফলে এ বিষয়টিতে বড় ধরনের এক ধাক্কা লেগে যাবে। কারণ, একই শ্রেণিতে বহু ধরনের শিক্ষার্থীকে পাঠদান করাতে মানসস্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকরা এখনো সেভাবে প্রস্তুত নন। তবে, সমাজ যেভাবেই চিন্তা করুক না কেন, শিক্ষার্থীদের অর্থাৎ দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিকদের অধিকার আছে দেশের ভালো প্রতিষ্ঠানে, তাদের বাড়ির কাছে প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করার। জন্মসনদ তোলায় অনিয়ম, স্কুলে দুর্নীতি, এই ঘটনাগুলো দেশের সব পর্যায়ে অনিয়ম-দুর্নীতি সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। এটি রাষ্ট্রকে দেখতে হবে। তা না হলে অসদুপায় যারা অবলম্বন করেন, তারা ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রেও একই ধারা বজায় রাখবেন। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সংকট নিয়ে গোটা একটা গ্রিক ট্র্যাজেডি লেখে ফেলা সম্ভব বলে একজন মন্তব্য করেছেন। কথাটি অমূলক নয়। আমরা শিক্ষার সঙ্গে যারা সরাসরি সংযুক্ত তারা সহজেই বলতে পারি। তারপরেও বলতে হচ্ছে ভর্তিযুদ্ধ নামে শিশুদের ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছে তা আবার ফিরে আসুক তা কারোরই কাম্য নয়।
লেখক : শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক
শুভ নববর্ষ। বর্ষসংক্রান্তিতে প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির হিসাবনিকাশ যেমন থাকে, তেমনি থাকে নবউদ্যমে নবযাত্রার সংকল্পও। তাই অতীতের বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়নের সঙ্গে প্রয়োজন ভবিষ্যৎ যাত্রার রূপরেখাও। পুরনো অর্জনকে রক্ষা আর ব্যর্থতা ডিঙানোর সুযোগই নতুন দিনের প্রধান বার্তা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়, ‘নব অতিথিরে তবু ফিরাইতে নাই কভু/এসো এসো নূতন দিবস!/ ভরিলাম পুণ্য অশ্রুজলে/আজিকার মঙ্গলকলস।’ স্বাগত ২০২৩। খ্রিস্টীয় নববর্ষে সবার মঙ্গল হোক।
মহামারীকে জয় করে বিশ্ব এগিয়ে যেতে পারবে কি না, সেই প্রশ্ন সঙ্গে নিয়ে ২০২২ সালের আগমন হয়েছিল। বিদায়ের কালে সে প্রশ্ন রেখে যাচ্ছে, বিপদ কি নতুন উদ্যমে ফিরে আসবে? বছর শেষে চীনে ফের বিপুল সংক্রমণের খবরে তৈরি হওয়া আতঙ্ক অমূলক নয়। তবে আশা, বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ ইতিমধ্যে করোনা প্রতিরোধে ভ্যাকসিন নিয়েছে। ফলে আশা করা যায়, সংক্রমণ বাড়লেও করোনা আর প্রাণঘাতী রূপে ফিরছে না। অন্যদিকে, মহামারীর অভিঘাত সামলে নিতে না নিতেই রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত বিশ্বে নতুন আশঙ্কা তৈরি করেছে। মহামারী শেষ হতে না হতেই যুদ্ধের জের ধরে বিশ^জুড়ে তৈরি হওয়া জ্বালানি ও ডলার সংকট বিশ্ব অর্থনীতিকে বড়সড় ধাক্কা দিয়েছে। বিশ্ব জুড়ে চলছে মূল্যস্ফীতি এবং মন্দার সাঁড়াশি আক্রমণ। আছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের আঘাত। খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সামগ্রিকভাবেই ২০২২ সাল দেখিয়ে দিল, মহামারীর মতো বিপর্যয়ও বিশ্বের নীতিনির্ধারকদের সম্বিৎ ফেরাতে পারেনি। ক্ষুদ্র ও স্বল্পমেয়াদি স্বার্থেই রাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি এবং কূটনীতি চলছে। এ পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক হওয়া জরুরি। হাল-ভাঙা পালছেঁড়া বিশ্ব অর্থনীতিও সেই দাবিই জানাচ্ছে। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বৈশ্বি^ক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থাকে স্থিতিশীল বললে ভুল হবে না। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি উপরের সারিতে। বিগত বছর পদ্মা সেতু ও প্রথম মেট্রোরেল দেশের অবকাঠামোগত উন্নতির স্মারক। যদিও দেশের দুর্নীতি, অনিয়ম, ঋণখেলাপের লাগাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে আরেকটি জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক সহনশীলতা, ভোটাধিকারের প্রশ্ন যেমন আলোচনায় এসেছে; তেমনি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মানের অবনমনও বিভিন্ন আলাপে উঠে এসেছে।
অর্থনীতিই মূল চালিকাশক্তি হলেও, উন্নয়ন টেকসই করতে হলে মানবিক প্রগতি অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে কাক্সিক্ষত মান অর্জন করা ছাড়া সেই সামাজিক অগ্রগতি ও মানবিক প্রগতি অর্জন করা সম্ভব নয়। একই সঙ্গে জরুরি সমাজ ও রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতিষ্ঠা। পরমতসহিষ্ণুতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ ছাড়া সমাজের সামগ্রিক সাংস্কৃতিক মান সামনে এগোয় না। রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চায় সামনে এগিয়ে নিতে হলে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। পাশাপাশি, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশকে অবশ্যই নিজের স্বল্প আয়তনের ভূখণ্ডের ব্যবহারে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। কেননা, পরিবেশগত সচেতনতার যথাযথ বিকাশ ছাড়া আগামী পৃথিবীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। নতুন বছরে, অর্থনীতিকে গতিশীলতায় রাখার পাশাপাশি মানবিক প্রগতি অর্জনের পথে এসব বাধা অতিক্রমে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। একই সঙ্গে, নতুন বছরে বহু মত-পথের পারস্পরিক সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতির মাঠে সুবাতাসের প্রত্যাশায় থাকবে দেশবাসী।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব বিকাশ এবং বহুপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের বিশ্ব অর্থনীতির এই যুগে কোনো দেশই আর একে অপরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। বিদ্যমান বাস্তবতায় আন্তঃদেশীয় রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক টানাপড়েন যেন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও তীব্র। বাংলাদেশকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। আরেক প্রতিবেশী মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত প্রায় সাড়ে এগারো লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ অনন্য মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেও রোহিঙ্গা সংকটের কোনো সুরাহা হচ্ছে না। এ অবস্থায় বাংলাদেশকে কূটনৈতিক তৎপরতা আরও জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি আঞ্চলিক রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের অভ্যন্তরেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও পরমতসহিষ্ণুতা জোরদারের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। নতুন বছর দাবি করে জীবন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবন। গত বছর আমরা যা কিছু হারিয়েছি, স্বজন হারানোর শোক পেয়েছি; আমাদের আশা, নতুন বছরে তাদের স্মৃতি উজ্জ্বল হবে এবং বিলীন হবে তাদের শোক। তাদের স্মৃতিকে সমুজ্জ্বল রেখে, শোককে শক্তিতে পরিণত করে শঙ্কা জয় করে সামনে এগোতে হবে। এক্ষেত্রে সবার আগে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পরমতসহিষ্ণুতা ও গণতান্ত্রিক চর্চা জোরদার করা জরুরি।
কবি জসীম উদ্দীনের জন্ম ফরিদপুর জেলায় ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি। তার বাবার নাম আনসারউদ্দীন মোল্লা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ১৯৩১ সালে এমএ পাস করেন। তার কর্মজীবন শুরু হয় পল্লীসাহিত্যের সংগ্রাহক হিসেবে। ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত তিনি দীনেশচন্দ্র সেনের অধীনে রামতনু লাহিড়ী গবেষণা সহকারী ছিলেন। ১৯৩৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগদান করেন। ১৯৪৪ সালে তিনি প্রথমে বঙ্গীয় প্রাদেশিক সরকার এবং পরে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের প্রচার বিভাগের কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে ১৯৬২ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি তার কবিতায় পল্লীপ্রকৃতি ও পল্লীজীবনের সহজ-সুন্দর রূপটি তুলে ধরেন। পল্লীর মাটি ও মানুষের সঙ্গে তার অস্তিত্ব যেন মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছিল। কলেজ জীবনে ‘কবর’ কবিতা রচনা করে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালেই তার এ কবিতা প্রবেশিকা বাংলা সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়। সাহিত্যের নানা শাখায় তিনি কাজ করেছেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘রাখালী’ প্রকাশিত হয় ১৯২৭ সালে। তার প্রধান গ্রন্থগুলো হচ্ছে নকশী কাঁথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাট, পল্লীবধূ, ঠাকুরবাড়ির আঙ্গিনায়, বাঙালীর হাসির গল্প। তিনি জারিগান ও মুর্শিদি গান নামে লোকসংগীতের দুখানি গ্রন্থ সংকলন ও সম্পাদনা করেন। একুশে পদক, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় তিনি ভূষিত হয়েছেন। ১৯৭৬ সালের ১৩ মার্চ তিনি মারা যান।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আজমপুর ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামে স্ত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় চাচাতো ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে পলাশ হোসেন (২৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
শনিবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত পলাশ হোসেন ওই গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, নিহত পলাশ হোসেনের চাচাতো ভাই সুমন প্রায়ই পলাশের স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করত। শনিবার সন্ধ্যায় আবারো উত্ত্যক্ত করে। পলাশ বাড়িতে এলে বিষয়টি তাকে জানায় তার স্ত্রী। এ ঘটনায় পলাশ তার চাচাতো ভাইয়ের কাছে বিষয়টির প্রতিবাদ করতে গেলে উভয়ের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সুমন ছুরি দিয়ে পলাশকে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই পলাশ মারা যায়।
মহেশপুর থানার ওসি খন্দকার শামীম উদ্দিন বলেন, নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। নিহত পলাশ পেশায় ভ্যানচালক ছিলেন, সঙ্গে কৃষিকাজও করত।
মার্চে ঘরের মাঠে দুটি প্রীতি ম্যাচের পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে দেখা যায়নি আর্জেন্টিনাকে। তিন মাস পর আগামী মাসে তারা খেলবে আরও দুটি প্রীতি ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে সেই ম্যাচের জন্য ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করেছেন লিওনেল স্কালোনি। তবে ঘোষিত সেই দলে নেই লাউতারো মার্তিনেজ।
আর্জেন্টিনার ক্রীড়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস ও ওলে তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গোড়ালির চোটের কারণে মার্তিনেজ চিকিৎসাধীন আছেন। তাই তাকে জাতীয় দলের স্কোয়াডে রাখা হয়নি।
চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে ইন্টার মিলানের হয়ে গোল করেছিলেন। ফাইনালেও তাকে ইতালিয়ান ক্লাবটির হয়ে খেলতে দেখা যেতে পারে। তারপরই তিনি মাঠের বাইরে চলে যাবেন। ঐ সময়ে তিনি বিশ্রামে থাকবেন। আর তাই কোচ স্কালোনি তাকে দলে রাখবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ের অন্যতম সদস্য মার্তিনেজ। তবে পুরো টুর্নামেন্টে তিনি ব্যাথানাশক ঔষধ খেয়ে খেলছিলেন।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ও ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তার বাসায় বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। বৃহস্পতিবার রাত থেকে হাজার হাজার সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ী আসছেন তার ছয়দানার বাসায়। শনিবারও সেখানে ফুল আর মিষ্টির ছড়াছড়ি। মানুষের ভালোবাসার জবাব দিচ্ছেন নবনির্বাচিত মেয়র জায়েদা খাতুন ও তার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম।
তবে এত উচ্ছ্বাসের মধ্যেও আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার হওয়া জাহাঙ্গীরের শিবিরে অস্বস্তি আছে। কারণ তার সহযোগীরা মূল আওয়ামী লীগের। দলের প্রার্থী হেরে যাওয়ার পর পদ-পদবি পাওয়া নিয়ে তাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
অপরদিকে পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খানের বাস ভবনে বিরাজ করছে নীরবতা। নেতাকর্মীদের কোনো আনাগোনা নেই।
শনিবার দুপুরে জাহাঙ্গীর আলমের বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে তার মায়ের নির্বাচনে কাজ করা কর্মী ও সমর্থকরা দল বেঁধে তার বাস ভবনে আসছেন। অনেকের হাতে ফুল ও মিষ্টি। তারা মেয়র জায়েদা খাতুনের বাস ভবনের নিচতলা, দোতলা, তিনতলা ও বাড়ির প্রাঙ্গণে ভিড় করে আছেন। কিছুক্ষণ পরপর জায়েদা খাতুন বের হয়ে এসে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের শুভেচ্ছার জবাব দিচ্ছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জাহাঙ্গীর আলম নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। সবাইকে মিষ্টি মুখ করাচ্ছেন।
জাহাঙ্গীর আলম তার কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। কারও সঙ্গে কোনো বিরোধ সৃষ্টি করা যাবে না। আমরা সবাই মিলেমিশে কাজ করব।
জাহাঙ্গীর আলমের সান্নিধ্যে থেকে এবং তার মায়ের নির্বাচন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনে অনেক নেতাকর্মী বহিষ্কার হয়েছেন। কাউকে কাউকে শোকজ করা হয়েছে। তারা এখন কিছুটা উজ্জীবিত হলেও তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকটা শঙ্কার মধ্যে আছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সালনা এলাকার এক আওয়ামী লীগ নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, জাহাঙ্গীর আলম যখন দলের মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, তখন আমিসহ প্রায় সব নেতাকর্মীই তার সঙ্গে ছিলাম। তিনি দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর তার কাছ থেকে অনেকে চলে গেছে আবার অনেকে গোপনে বা প্রকাশ্যে সম্পর্ক রেখেছে। এখন মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন বাকি আছে। এই কমিটিতে জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে সখ্য থাকার কারণে তারা কোনো পদ-পদবি পাবেন কি না, তা নিয়ে আমরা চিন্তিত। এছাড়া মেয়র পদে জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনের নির্বাচন অনেকে প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছে। আবার বেশিরভাগ গোপনে তার পক্ষে কাজ করেছে। এসব বিষয় নিয়ে আমরা বেশ চিন্তায় আছি।
তিনি মনে করেন, জাহাঙ্গীর আলম আওয়ামী লীগ ছেড়ে অন্য কোনো দলে যোগ দেবেন না। কারণ জাহাঙ্গীর ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। একই সঙ্গে ওই আওয়ামী লীগ নেতা আশা প্রকাশ করেন, যেহেতু জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন তার ছেলের জনপ্রিয়তার কারণেই মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন, সেহেতু তার জনপ্রিয়তা দেখে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা জাহাঙ্গীর আলমকে ফের দলে ফিরিয়ে নেবেন; যা দলের অনেক নেতাকর্মীই বিশ্বাস করেন।
অন্যদিকে টঙ্গীর আরিচপুর এলাকার বাসিন্দা সুজন মিয়া বলেন, আজমত উল্লা খান মেয়র মনোনয়ন পাওয়ার পর অনেকে ধরে নিয়েছিলেন বিজয় নিশ্চিত। নেতাকর্মীদের মাঝেও ছিল এমন আত্মবিশ্বাস। কিন্তু নির্বাচন শেষে ফলাফল দেখে সবাই হতবাক। তারা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি তাদের এমন ফল বিপর্যয় হবে। তিনি জানান, দুপুরের দিকে গিয়ে তিনি জানতে পারেন আজমত উল্লা খান বাসায় নেই। কোনো নেতাকর্মীকেও দেখতে পাননি।
জয়দেবপুর এলাকার আওয়ামী লীগের এক প্রবীণ নেতা নাম প্রকাশ না করে জানান, গাজীপুরের ৪৮০টি ভোটকেন্দ্রের একটিতেও কোনো কর্মীর বুকে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের ব্যাজ ছিল না। কেন্দ্রগুলোতে কোনো এজেন্ট না থাকার পরও ব্যক্তি জাহাঙ্গীর আলমের জনপ্রিয়তায় অপরিচিত এক নারী আওয়ামী লীগের বাঘা প্রার্থীকে পরাজিত করেছেন, যা আওয়ামী লীগকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে।
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের অপর এক নেতা বলেন, তারা সবকিছুর চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। প্রতিটি কেন্দ্রের কেন্দ্র কমিটি, ওয়ার্ড কমিটি, থানা কমিটিসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের কাছ থেকে তাদের এলাকায় নৌকা প্রতীকের ফলাফল খারাপ হওয়ার কারণ জানতে চাইব। তার পর এ বিষয়ে কী করণীয় তা নিয়ে দলের মহানগর ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে এগিয়ে যাব। এখন সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনই দলের জন্য চ্যালেঞ্জ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আজমত উল্লা খানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের কী ভুলত্রুটি ছিল, নেতাকর্মীদের ভূমিকা কী ছিল, এসব বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। উপযুক্ত সময়ে আমরা সব বিষয়ে কথা বলব।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
সংলাপে রাজনৈতিক সংকট দূর হওয়ার নজির তৈরি হয়নি এখনো। তবুও নানা সময়ে সংকট নিরসনে রাজনীতিতে সংলাপ করা নিয়ে আলোচনা হয়। সংলাপের আশ্রয় নিতেও দেখা গেছে দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভিন্ন মেরুতে অবস্থান থাকায় আবারও রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় আলোচনায় এসেছে ‘সংলাপ’। যদিও প্রধান দুই দলের নেতারা সংলাপে অনীহা প্রকাশ করে আসছেন। আবার আড়ালে আলাপে দুই দলের আগ্রহও দেখা গেছে।
অন্তরালের সংলাপ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার আড়ালে আলাপের মূল কারণ হলো বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বড় একটি অংশ বয়স্ক হয়ে গেছেন। তাদের অনেকের এবারের পরে নির্বাচন করার সক্ষমতা আর থাকবে না। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকতে গিয়ে সামাজিক মর্যাদা নষ্ট হয়েছে। এ সময় সংসদ সদস্য হয়ে মর্যাদা নিয়ে চলতে চান তারা। বিএনপির ওই অংশের সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতাও রয়েছেন যারা নির্বাচনে যেতে চান। ফলে নির্বাচনে যেতে আগ্রহী বিএনপির সেই সব নেতা আড়ালে আলাপে থাকতে রাজি আছেন। অন্যদিকে আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখতে চাওয়া বিদেশি শক্তিগুলোর সরকারের ওপর চাপ থাকায় বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে চায় আওয়ামী লীগ। ফলে প্রকাশ্যে সংলাপের আগ্রহ না দেখিয়ে আড়ালের আলাপে আগ্রহী দলটির নেতারা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে এক চুলও নড়বে না। অন্যদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে কোনোভাবেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যাবে না। দুই দলই নিজেদের এমন অনড় অবস্থান দেখাচ্ছে। দুই দলের পরস্পরবিরোধী অবস্থানে সৃষ্ট সংকট সমাধানে বিদেশি তৎপরতা বেশ আগে থেকেই শুরু হয়েছে। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসতে শুরু করেছে বিদেশি সেই তৎপরতায়ও গতি এসেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ-বিএনপি কাউকেই কাছাকাছি অবস্থানে, অর্থাৎ এক মেরুতে আনতে পারেনি এখনো। তবে বিদেশি প্রভাবশালী দেশগুলোর প্রতিনিধিরা সংকট নিরসনে দুই দলকেই সংলাপে বসার জন্য বলছেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা সংলাপের মধ্য দিয়ে সমস্যা সমাধানের রাস্তা ঠিক করতে দুই দলকেই তাগিদ দিয়েছেন। বিদেশিদের অবস্থান হলো আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চান তারা। সে জন্য রাস্তা তৈরি করতে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই সংলাপে অনীহা দেখিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ্যে অনীহার কথা জানিয়েছেন। বিএনপিও প্রায় প্রতিদিনই অনীহা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখছে।
তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও সংলাপে সমাধান আসেনি। এবারও সংলাপে সমাধান আসার সম্ভাবনা কম। যদি সংলাপের আগেই এজেন্ডা নির্ধারণ করে সংলাপে বসে, সেই সংলাপ সফল হওয়ার পথ থাকে না।
দুই দলের একাধিক সূত্র দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, প্রকাশ্যে সংলাপ না করে এবার আড়ালে সংলাপ হতে পারে। অনেকটা হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এমন ঘটনা ঘটে যেতে পারে-বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন দিয়ে বসতে পারেন।’ তিনি বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
নির্বাচন সামনে রেখে দেশে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকেরা সংকট নিরসনে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। ওই সব বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দুই দলেরই অবস্থান জানতে চেয়েছেন তারা। একই সঙ্গে দুই দলকে তারা এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন যে ভিন্নমত থাকলেও স্থিতিশীলতা ও সুশাসনের স্বার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও অবাধ হওয়া জরুরি। এ কারণে নির্বাচনের আগে দুই প্রধান দলের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার আবশ্যকতা রয়েছে। এই সমঝোতার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, কিংবা উভয় পন্থায় দুই দলের মধ্যে ‘আলাপ’ হওয়া দরকার, তা সেটা সংলাপ বা আলোচনা যে নামেই করা হোক না কেন। এদিকে কূটনীতিকদের কাছে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে, বিএনপি কোনো ধরনের সংলাপে আগ্রহী নয়। ২০১৪ সালের নির্বাচন কেন্দ্র করে বিএনপির আচরণ বিদেশিদের কাছে তুলে ধরে সংলাপে বিএনপির অনীহার কথা জানান।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা দাবি করছেন, রাজনীতিতে কোনো কিছু আদায় করতে হলে আন্দোলনের মাধ্যমে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ক্ষমতাসীনদের বাধ্য করতে হয়। কিন্তু সেটা বিএনপি পারছে না। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ আন্দোলন করেছিল। সেখানে জনগণকে সম্পৃক্ত করে বিএনপিকে পদত্যাগে বাধ্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিএনপি এখন সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারবে বলে মনে করছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মাঠে আওয়ামী লীগের অবস্থান আছে। জনগণ সরকারের সঙ্গে আছে। আর তাদের সঙ্গে জনগণই নেই। তাই তো খালেদা জিয়াকে এখনো মুক্ত করতে পারেনি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘যেকোনো সমস্যার সমাধান সংলাপের মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব। সংলাপে বসলে হয়তো শতভাগ পাব না। তবে গিভ অ্যান্ড টেক তো কিছু হবেই। গণতন্ত্রে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই।’
তবে দলটির সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, ‘সংলাপ চলছে। মিডিয়ায়, টক শোতে, মাঠে মঞ্চে। এক দল আরেক দলকে উদ্দেশ্য করে যে বক্তব্য দিচ্ছে, তাও এক ধরনের সংলাপ। এসব অনেকেই সংলাপ বলে টের না পেলেও মূলত এটাও সংলাপ।’
আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, সংলাপের ব্যাপারে পশ্চিমা কূটনীতিকেরা তাদের তেমন কোনো পরামর্শ দেননি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘আমরা তাদের (কূটনীতিক) বলেছি সংলাপের উদ্যোগ আমরা নিয়ে কী করব? তাদের (বিএনপি) যদি কোনো দাবি থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলতে পারে। নির্বাচন কমিশন যদি সুপারিশ করে, সেটা অবশ্যই সরকারের কাছে আসবে। সরকার দেখবে তখন।’
সংলাপ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ভাবনা আমাদের নাই।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। আর আওয়ামী লীগ বলছে, নির্বাচনকালীন এই সরকারই থাকবে এবং তাদের অধীনে নির্বাচনে হবে। নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ অবস্থায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনকালীন সংকট সমাধানে কূটনীতিকদের দূতিয়ালি চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও ইতিবাচক বিএনপি। সাম্প্রতিক সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, জাতিসংঘসহ বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থার দূতসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। ওই বৈঠকগুলোতে কেন এই সরকারের অধীনে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যেতে চায় না তা ব্যাখ্যা করেছে দলটি। বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে যাবে না, সেটিও স্পষ্ট করেছে। একই সঙ্গে কূটনীতিকদের বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে সে বিষয়ে সংলাপের আহ্বান আসলে তাতে সাড়া দেবে বিএনপি। আর এই সংকট মোকাবিলায় কূটনীতিকদের ‘রোল প্লে’ (ভূমিকা রাখা) করার সুযোগ আছে বলে মনে করেন দলটির নেতারা। তাদের মতে, প্রকাশ্যে না হলেও পর্র্দার অন্তরালে সংলাপ হতে পারে। কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপের কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনেও গুঞ্জন রয়েছে ভেতর-ভেতর সংলাপ হচ্ছে।
সর্বশেষ ১৮ মে গুলশানের আমেরিকান ক্লাবে মার্কিন দূতাবাসের পলিটিক্যাল চিফ ব্রান্ডন স্ক্যাট, পলিটিক্যাল অফিসার ম্যাথিউ বে, পলিটিক্যাল কনস্যুলার ডেনিয়েল শেরির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
জানতে চাইলে শামা ওবায়েদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকগুলোতে তারা আমাদের অবস্থান জানতে চান। আমরাও আমাদের অবস্থান তুলে ধরি। সর্বশেষ তারা জানতে চেয়েছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে আপনাদের অবস্থান কী। আমরা বলেছি, আন্দোলন চলছে, সেটা আমরা কন্টিনিউ (চালিয়ে যাব) করব। তারা অন্য পক্ষের (ক্ষমতাসীনদের) কথাও শুনছেন। এ অবস্থায় তারা কী করছে (দূতিয়ালি), নাকি অন্য কিছু হচ্ছে সেটা তাদের বিষয়। তবে আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আরেকটি গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসুক, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত হোক, সে ব্যাপারে তাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকুক।’
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক সংলাপের ব্যাপারে কূটনীতিকেরা কোনো বৈঠকেই আমাদের কিছু বলেনি।’
তবে বৈঠকগুলোতে থাকা দলের আরেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা একাধিকবার সরকারের সঙ্গে সংলাপ করেছি। ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনের সংলাপে পর চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের তিন মাস পর নতুন নির্বাচন দেওয়ার কথা বলে তারা প্রতারণা করেছে। তাই এজেন্ডা ছাড়া কোনো সংলাপে আমরা যাচ্ছি না। কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে আমরা বলেছি, আনুষ্ঠানিক সংলাপের বিষয়ে আমরা ইতিবাচক। কিন্তু সেটি হতে হবে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে তা নিয়ে।’
ওই নেতার আরও বলেন, ‘সরকার এখন বিভিন্ন চাপে আছে। আন্তর্জাতিক চাপ তো আগে থেকেই আছে। এখন নতুন করে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ বেড়েছে। এসব চাপ সামাল দিতে তারা সংলাপের নামে নানা কথা বলবে। কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনায় সরকারের মনোভাবে কিছু হলেও আঁচ করা যায়। হয়তো কয়েক দিন পর সরকার আনুষ্ঠানিক সংলাপের জন্য আমন্ত্রণও জানাতে পারে।’
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।