
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার কৃষকরা যুগ যুগ ধরে স্থানীয় আবহাওয়া ও মাটির সঙ্গে খাপ খাইয়ে তাদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তির সাহায্যে আখ উৎপাদন এবং উৎপাদিত আখ থেকে লাল চিনি তৈরি করে আসছেন। এখানে কৃষক আমন ধান কাটার পর পৌষ-মাঘ-ফাল্গুন মাসে আখ থেকে লাল চিনি তৈরি করেন। আখ কেটে আখের মাথার বীজখন্ড মাটির গর্তে সংরক্ষণ করে ফাল্গুন মাসে ওই মাথার বীজখ- দিয়ে বীজতলায় রোপা আখের চারা তৈরি করেন। সেই চারা বৈশাখ মাসের প্রথম বৃষ্টিপাতের সময় মূল জমিতে রোপণ করেন। বৈশাখ মাস থেকে এই এলাকায় বেশ বৃষ্টিপাত হয়। তাই এমন আখ চাষে কোনো প্রকার সেচের প্রয়োজন হয় না। সারা দেশে আখ রোপণ থেকে শুরু করে আখ মাড়াই পর্যন্ত ১২ থেকে ১৪ মাস সময় লাগলেও এখানকার কৃষকরা তা ৯ মাসে সম্পন্ন করতে সক্ষম হন এটাই এই এলাকার কৃষকের কৃতিত্ব ও উদ্ভাবন। ‘করলে তৈরি লাল চিনির ক্ষীর, খাওয়ার জন্য পড়ে যায় ভিড়’ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়াতে এমন প্রবাদের প্রচলন রয়েছে। ফুলবাড়িয়া ঐতিহ্যবাহী হাতে তৈরি লাল চিনির জন্য বিখ্যাত। লাল চিনি দিয়ে বানানো পিঠা, নাড়ু, মোয়া, ক্ষীর, মিঠাই খেতে খুব সুস্বাদু। এ ছাড়া অনেক আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরিতে লাল চিনি ব্যবহার করা হয়।
লাল চিনি তৈরির একমাত্র কাঁচামাল হলো আখ। আখের রস আগুনে জ্বাল দিয়ে লাল চিনি তৈরি করা হয়। আখ মাড়াইয়ের আগে চাষিরা লাল চিনি তৈরির জন্য জ্বালঘর তৈরি করেন। লাল চিনি তৈরির জন্য প্রথমে যন্ত্রচালিত আখ মাড়াইকলের সাহায্যে আখ থেকে রস বের করা হয়। জ্বালঘরের চুলায় ৭টি লোহার কড়াই বসানো হয়। তারপর প্রথম কড়াইয়ে পরিমাণ মতো কাঁচা রস দিয়ে জ্বাল দেওয়া শুরু করা হয়। জ্বাল দেওয়ার আধা ঘণ্টা পর ১ম কড়াই থেকে ২য় কড়াইয়ে, তারপর ৩য় কড়াইয়ে এভাবে ৭ম কড়াইয়ে জ্বাল দেওয়া রস নারিকেলের মালাইয়ের হাতা দিয়ে স্থানান্তর করা হয়। ৭ম কড়াইয়ের ঘন রস চুলা থেকে নামিয়ে কাঠের তৈরি মুগুর দিয়ে বারবার ঘর্ষণ করে অ-দানাদার বাদামি রঙের লাল চিনি তৈরি করা হয় এবং তা রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়।
বাংলাদেশে একমাত্র ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়াতেই লাল চিনি উৎপাদিত হয়। ইংরেজিতে একে বলা হয় ‘ব্রাউন সুগার’। বিদেশে ব্রাউন সুগারের প্রচুর চাহিদা ও কদর রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দিন দিন বাড়ছে এই কৃষিজাত পণ্যটির চাহিদা। বিদেশে চার রকমের ব্রাউন সুগার উৎপাদন ও বাজারজাত করা হয়। এগুলো হলো : দানাদার ব্রাউন সুগার, পাউডার ব্রাউন সুগার, সিরাপ ব্রাউন সুগার ও চৌকোনাকৃতি ব্রাউন সুগার। মানুষের খাদ্য সচেতনতা, শিক্ষা ও আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সারা পৃথিবীতে বাড়ছে ভালো ও পুষ্টিমান-সম্পন্ন ব্রাউন সুগার বা লাল চিনির ব্যবহার।
বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে, ব্রাউন সুগার বর্তমানে খাদ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২১ সালে বিশ্বে ব্রাউন সুগারের বাজার ছিল ১৭ দশমিক ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রতি বছর পণ্যটির চাহিদা ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে হিসেবে ২০২৯ সালে পণ্যটির বিশ্ববাজার হবে ৩৬ দশমিক ৭৬ মার্কিন ডলার। বিদেশে বেকারি দ্রব্য, কোমল পানীয়, দুগ্ধজাত দ্রব্য ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধসহ বিভিন্ন কাজে ব্রাউন সুগার ব্যবহৃত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো, জার্মানি, সুইডেন, ফ্রান্স, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, তুরস্ক, জাপান, চীন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়া, সিংগাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রাউন সুগারের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। লাল চিনি সাদা চিনির চেয়ে অধিক পুষ্টিকর। সাদা চিনিতে শুধু শর্করা ও সামান্য আয়রন ছাড়া আর কিছু নেই। অন্যদিকে লাল চিনিতে শর্করা ছাড়াও রয়েছে প্রোটিন, ফ্যাট, বিভিন্ন খনিজ লবণ ও ভিটামিন। লাল চিনিতে অধিক পরিমাণে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ থাকার কারণে তা দেহে সরাসরি শক্তি জোগায়। লাল চিনির মোলাসেস অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এতে বিদ্যমান ফলিক এসিড দেহে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। এ চিনি দেহের রক্তকণিকা তৈরিতেও সহায়তা করে। ক্ষুধামন্দা দূর করে। হজমে সহায়তা করে। আয়রন সমৃদ্ধ হওয়ায় প্রসব পরবর্তী সময়ে মায়েদের জন্য লাল চিনি বেশ উপকারী।
লাল চিনি ময়মনসিংহ জেলার একটি ‘ব্র্যান্ড’ পণ্য। এটি নিয়ে ‘সুপার হিট ফুড প্রডাক্ট’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান গত দুই বছর ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ওই প্রতিষ্ঠানটি সংযোগ-চাষির মাধ্যমে আখ উৎপাদন, লাল চিনি, গুড় ও ঝোলাগুড় তৈরি করে দেশের বিভিন্ন জায়গার মানুষের মধ্যে বিপণনের ব্যবস্থা করছে। সুপার হিট ফুড প্রডাক্টের রয়েছে জেলা ও উপজেলায় যথাক্রমে ৬৪ ও ৪৯৫ জন ডিলার। কথা প্রসঙ্গে সুপার হিট ফুড প্রডাক্টের প্রতিষ্ঠাতা জানান, তাদের উৎপাদিত গুড়ে কোনো রাসায়নিক দেওয়া হয় না। রস পরিষ্কারের জন্য শুধু শিমুলের ছালের নির্যাস ব্যবহার করা হয়। ইতিমধ্যে ওই প্রতিষ্ঠানটি লাল চিনি বাজারজাতকরণের জন্য বিএসটিআই-এর অনুমোদন পেয়েছে। শিগগিরই পণ্যগুলোকে সুদৃশ্য প্যাকেট বন্দি করে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বড় বড় শহরে বাজারজাত করার প্রত্যাশা করছে প্রতিষ্ঠানটি। লাল চিনি নিয়ে ‘লোক কুটির’ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা মো. লোকমান হোসেন ‘ফুলবাড়িয়া ব্রাউন সুগার’ বা ফুলবাড়িয়ার অর্গানিক লাল চিনি নামে প্যাকেটজাত করে বাজারজাত করছেন।
ফুলবাড়িয়ার এই ঐতিহ্যবাহী কৃষি টিকিয়ে রেখে লাল চিনির চাষ প্রসার করলে কেবল দেশের চাহিদা মেটানোই নয় বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। এজন্য ফুলবাড়িয়াসহ ময়মনসিংহের আখচাষের অঞ্চলগুলোতে বিশেষ নজর দেওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে একটা বড় সংকট হলো আখ কাটা, আখ মাড়াই এবং রস জ্বাল দিয়ে লাল চিনি উৎপাদনে প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু কৃষি শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির কারণে কৃষকদের মধ্যে আখ চাষ ও লাল চিনি উৎপাদনে অনাগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এই সংকট দূর করতে সরকারি প্রণোদনা প্রয়োজন। এছাড়া ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া ছাড়াও ভালুকার মল্লিকবাড়ি, ঈশ্বরগঞ্জ ও গফরগাঁওয়ের চরাঞ্চলে এবং গৌরীপুরে এখনো বেশ কিছু পরিমাণ জমিতে আখের চাষ এবং গুড় উৎপাদন করা হয়। কিন্তু এসব এলাকায় উচ্চফলনশীল ইক্ষু বীজ, আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণের অভাবে দিন দিন আখের আবাদ হ্রাস পাচ্ছে। তাই আধুনিক পদ্ধতিতে সুগার ক্রপ চাষ এবং প্রযুক্তি বিস্তারের জন্য ময়মনসিংহে বিএসআরআই-এর একটি উপকেন্দ্র খোলা প্রয়োজন। আমরা আশা করব লাল চিনি উৎপাদন, বিপণন ও রপ্তানির বিষয়ে সরকার বিশেষ মনোযোগ দেবে।
লেখক : সাবেক মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন
ক্যালেন্ডারের পাতায় নতুন বছর এলো। আনুষ্ঠানিক উচ্ছ্বাস দেখিয়ে বরণ করে নেওয়া হলো নতুন বছর ২০২৩-কে। কিন্তু বাস্তবতা দেখলে এই বর্ষবরণের আনন্দকে কৃত্রিম বলে আখ্যায়িত করলে দোষ দেওয়া যাবে না। শুধু আমাদের দেশেই নয়, বিশ্বব্যাপী সাধারণ মানুষের জীবন এতটাই নিরানন্দের যে আনন্দ পাওয়ার উপলক্ষ খুঁজতে হয় বছরজুড়েই। করোনার পর নতুন সম্ভাবনা নিয়ে শুরু হয়েছিল ২০২২ সাল। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্য দিয়ে চলেছে প্রায় পুরো বছরটাই। এখন আবারও করোনার আশঙ্কা নিয়েই নতুন বছর শুরু হচ্ছে। তবে মহামারী আর মহাযুদ্ধ যাই হোক না কেন দারিদ্র্যের কশাঘাত থেকে সাধারণ মানুষের রেহাই নেই আর ধনীদের সম্পদ বৃদ্ধিরও যে কমতি নেই, গত বছরেও সেটাই দেখা গেল। অর্থনীতির ভিত্তির ওপর যেমন দাঁড়িয়ে থাকে রাজনীতি তেমনি রাজনীতি পরিচালিকাশক্তি হিসেবে অর্থনৈতিক প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই টানাপড়েন চলতেই থাকে। সাধারণ মানুষ প্রতিদিন অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করে। আয়ের তুলনায় ব্যয় বাড়তে থাকে, সঞ্চয়ে টান পরে, আশঙ্কা থাকে কাজ হারানোর, ভবিষ্যৎ কী হবে তা ভেবে রাতের ঘুম নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু রাজনীতির উত্তেজনা এত ব্যাপক যে, অর্থনৈতিক কারণে সৃষ্ট দুশ্চিন্তা ছাপিয়ে যায় রাজনৈতিক ডামাডোলে। কী হবে দেশের, কী হচ্ছে দেশে, কে আসবে ক্ষমতায় সেই আলোচনায় সরগরম হয়ে ওঠে চারপাশ।
দুর্নীতি, লুণ্ঠন, ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া এবং যা আর ফেরত পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা, দেশের টাকা পাচার, খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, ডলার সংকটে এলসি খুলতে না পারা, আইএমএফের কাছ থেকে শর্তযুক্ত ঋণ নেওয়া, শর্তের অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পরিষেবার দাম বাড়ানোর উদ্যোগ, আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি বিষয় বছরজুড়েই উদ্বেগ ও আলোচনার বিষয় ছিল। আগামী বছরেও এর হাত থেকে মুক্তি মিলবে না এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে সরকারি দমন-পীড়ন আর বিরোধীদের প্রতিরোধ জনগণকে উদ্বিগ্ন করে রেখেছে সবসময়।
ব্যাংকিং খাতে পেশাগত দক্ষতার পরিবর্তে পেশাগত লুণ্ঠন চালিয়ে ৮০ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আজ অনামে-বেনামে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। নানা প্রক্রিয়ায় পুনঃতফসিলিকরণ না করলে এই খেলাপি ঋণের পরিমাণ আড়াই লাখ কোটি টাকায় ঠেকত। রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে এই অন্যায় ও বিপজ্জনক প্রবণতা বেড়েই চলেছে। দেশের মোট সাড়ে ১৪ লাখ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে এই খেলাপি নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। এত বেশি পরিমাণ খেলাপি কি কোনো অর্থনীতির জন্য স্বাস্থ্যকর? এই পরিমাণ শতকরা হারে প্রকাশ করে ক্ষতি বোঝা যাবে না। এই প্রবণতা মারাত্মক ব্যাধির মতো সংক্রামক। দেখা যাচ্ছে যে, খেলাপি আর অর্থ পাচারকারীরা একই গোষ্ঠীর লোক। খেলাপি ঋণের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, রিজার্ভের মারাত্মক কমে যাওয়া, টাকার মানের অধঃপতন, রেমিট্যান্সের দুর্বলতা, ব্যাংক আমানতকারীর অনাস্থা বৃদ্ধি, ব্যাংক থেকে সঞ্চয় উত্তোলন, তারল্য সংকট, মূলধন ঘাটতি, রাজস্ব অনাদায়, শেয়ারবাজারের ক্রম নিম্নগমনএই সবকিছুর পেছনে কারণ চিহ্নিত করা কঠিন নয়। এর প্রধানত তিনটি কারণ : ক. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারণ ও কর্মপরিকল্পনায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্র্তৃত্ব, খ. ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পারিবারিক কর্র্তৃত্ব বৃদ্ধি করতে আইন পাল্টে ফেলা, এবং গ. খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা পরিবর্তন ও পুনঃতফসিলিকরণ করা। এসব কারণে সংকটের যেটুকু দৃশ্যমান হয়েছে পরিস্থিতি তার চেয়ে অনেকগুণ ভয়াবহ।
২০২২ সালের শুরুতে অজুহাত ছিল করোনার। কিন্তু করোনা মহামারী কেবল মৃত্যু, দ্রব্যমূল্য, বেকারত্ব আর বিশৃঙ্খলাই বাড়ায়নি, ধনীদের সম্পদও বাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে করোনা মহামারীর ২১ মাসে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে ১৯ হাজার ৩৫১ জন। আর ইউক্রেন যুদ্ধের টালমাটাল পরিস্থিতিতেও ২০২২ সালের জুন-আগস্ট তিন মাসে কোটিপতি বেড়েছে ৪ হাজার ৮৬০ জন। এ যেন কোটিপতি তৈরির কারখানা! ব্যাপারটা কিন্তু শুধু বাংলাদেশেই ঘটছে তা নয়। এটা ঘটছে বিশ্বব্যাপী। এর কারণ পুঁজিপতিদের শোষণ ও লুণ্ঠন আর ফলাফল বিশ্বজুড়ে মানুষে মানুষে বৈষম্য বৃদ্ধি। অক্সফামের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারীর মধ্যে প্রতি ৩০ ঘণ্টায় নতুন করে একজন বিলিয়নিয়ার জন্ম হয়েছে। বিপরীতে ১০ লাখ মানুষ হয়েছে দরিদ্র। করোনা মহামারী চলাকালে বিশ্বের ১৩১ জন বিলিয়নিয়ারের সম্পদ দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। ২০২০ সালে বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি বার্নার্ড আর্নল্ডের সম্পদ বেড়েছে ৬ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি। দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্কের সম্পদ বেড়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি। আর তৃতীয় শীর্ষ ধনী ভারতের গৌতম আদানির সম্পদ দশ গুণেরও বেশি বেড়েছে। ২০২০ সালের শুরুতে তার সম্পদ ছিল প্রায় ১ হাজার কোটি ডলার, যা এখন ১১ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। অন্যদিকে শুধু ২০২০ সালেই প্রায় ৯ কোটি ৭০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যের কবলে পড়েছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছেই, বাড়ছে মুদ্রাস্ফীতি। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর ভূমিকাও লক্ষ করার মতো। দেখা যাচ্ছে যে, বিশ্বের প্রধান কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ২০২০ সাল থেকে ১১ লাখ কোটি ডলারের (১১ ট্রিলিয়ন) বেশি বিনিয়োগ করেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদহার বাড়ানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে এবং নিচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের ঋণ নেওয়া কমলেও বড় ব্যবসায়ীরা ঋণ নিয়ে নতুন নতুন বিনিয়োগ করছেন। কিন্তু কর্মসংস্থান তো বাড়ছে না। মহামারী ও মন্দার মধ্যে অর্থনীতি চাঙ্গা করতে অনেক দেশ অর্থের সরবরাহ বাড়ানো, কর সুবিধা ও আর্থিক প্রণোদনা দিয়েছে। কিন্তু তা কাদের জন্য? অক্সফামের জরিপে দেখা গেছে, কারোনাকালে বিশ্বের ১৬১টি দেশের মধ্যে ১৪৩টি দেশ ধনীদের জন্য কর সুবিধা বাড়িয়েছিল। এ ছাড়া আরও ১১টি দেশ করের হার কমিয়েছিল। ফলে ধনীরা সুবিধা পেয়েছে দুদিক থেকেই। এসব কারণে ধনীদের সম্পদ বেড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজার থেকে শুরু করে অর্থনীতির অন্যান্য খাতেও। শেয়ারবাজারের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ম্যাককিনসের তথ্যানুসারে, করোনার মধ্যে এক বছরে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বেড়েছে ১৪ ট্রিলিয়ন ডলার, যার ৪০ শতাংশ ২৫টি কোম্পানির হাতে।
ফল তো দেখা যাচ্ছে, কারণ কি অজানা? সোভিয়েতের বিপর্যয়ের পর ১৯৮০-এর দশক থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের হিস্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে উৎপাদন বেড়েছে যত অর্থনীতিতে আয় ও সম্পদের বৈষম্যও বেড়েছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ততই। পুঁজিবাদের নিয়ম মেনেই মহামারী ও মন্দার মধ্যে এই ব্যবধান আরও বেড়ে গেছে। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের অর্থনীতির জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ইয়ানিস ডাফারমোস বলেছেন, ‘যখনই অর্থনৈতিক সংকট আসে, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো উদারনীতি গ্রহণ করে। আর বড় কোম্পানিগুলো বিনিয়োগের জন্য তখন বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ করে। এতে তাদের সম্পদ বেড়ে যায় আর তার বিপরীতে দরিদ্র বা নিম্ন আয়ের মানুষের দরকষাকষির ক্ষমতা কমে যায়। ফলে বৈষম্য আরও তীব্রতর হয়।’ শোষণের এই অমানবিক রূপ দেখছে বিশ্ববাসী। যত উৎপাদন যন্ত্রের আধুনিকীকরণ হচ্ছে, পুঁজির শোষণ তত তীব্র হচ্ছে। ফলে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের আওয়াজ এখন আশার চেয়ে আশঙ্কাই বেশি জাগায় শ্রমজীবীদের মধ্যে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রের বয়স যত বাড়ছে ততই পাল্লা দিয়ে বৈষম্যও বেড়ে চলেছে। মাথাপিছু আয় বাড়ছে, প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, কিন্তু সাধারণ মানুষের আয় সে অনুপাতে বাড়ছে না। রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশ আসে যে গার্মেন্টস খাত থেকে সেই খাতের শ্রমিকদের মজুরি বিশ্বের সবচেয়ে কম। দ্বিতীয় বৃহত্তম গার্মেন্টস রপ্তানির দেশ বলে যতটা গর্ব করা হয় সবচেয়ে কম মজুরির শ্রমিক আখ্যায়িত হলে লজ্জাও কি সেই পরিমাণ বাড়ে না? মুনাফা অর্জনের কাছে লজ্জার কোনো মূল্য নেই, কম মজুরির শ্রমিক সেখানে বিনিয়োগ আকর্ষণের লোভনীয় হাতছানি, বেকারত্ব সেখানে সুযোগ মাত্র। বাংলাদেশের চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। সরকারিভাবে আগামী অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হারও একই অর্থাৎ ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হবে বলে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, বিদ্যুৎ গ্যাসের দাম বাড়ানো, রিজার্ভ সংকটে আমদানি ঝুঁকি ইত্যাদি কারণে এই প্রবৃদ্ধি হবে কীভাবে সে প্রশ্নের উত্তর পাওয়া কঠিন।
বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫.৬ শতাংশ। দুই মাসের মাথায় এ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গত আগস্টে মূল্যস্ফীতি ওঠে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে। এখন বলা হচ্ছে প্রবণতা নিম্নমুখী। সাধারণ মানুষ কি এ কথা বিশ্বাস করে? আগামী অর্থবছরের মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এটা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে? কারণ সরকারি হিসাবে খাদ্যমূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের নিচে নামলেও ওষুধ, কাপড়সহ খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি এখনো ১০ শতাংশের কাছাকাছি। নানা ধরনের ব্যয় সংকোচনের কথা বলা হয়েছিল কিন্তু তার ফল তো দেখা গেল না। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য কমছে কিন্তু দেশে কমছে না কেন তার জবাবও পাওয়া যায়নি। মূল্যস্ফীতি কমানোর অভ্যন্তরীণ কৌশল কী তা দৃশ্যমান না হলেও সরকার ব্যাংক খাত থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে, যা মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির সহায়ক। প্রবৃদ্ধি ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এ হার তো শক্তিশালী অর্থনীতির নির্দেশক। কিন্তু ছয় মাসে দেখা গেছে যে ব্যবসায়ীরা টাকা ফেরত দিতে পারছেন না আর সরকারের প্রাক্কলনের সঙ্গে বাস্তব অঙ্ক কিছুতেই মিলছে না। ২০২৩ সাল দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার তীব্রতা বাড়াবে এটা সহজেই অনুমান করা যায়। কিন্তু যে অর্থনৈতিক সংকট ২০২২ সালে মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তুলেছিল সেই বিপন্ন দশা থেকে মানুষ মুক্তি না পাক স্বস্তি পাওয়ার আশা কি করতে পারবে নতুন বছরে? সহজ উত্তরনা। কারণ বছর নতুন হলেও চলবে তো পুরনো পথেই।
লেখক: রাজনৈতিক সংগঠক ও কলামিস্ট
এবারও উৎকণ্ঠাসহ নানান ঝুঁকি ছিল বছরের প্রথম দিনে নতুন পাঠ্যবই নিয়ে। তা উতরানো গেছে। পহেলা জানুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্রাথমিকের এবং গাজীপুরের কাপাসিয়ায় মাধ্যমিকের বই বিতরণ উদ্বোধন হয়েছে কিছুটা প্রতীকী ধাঁচে। সপ্তাহ দু-একের মধ্যে দেশের সব শিক্ষার্থী বই পেয়ে যাবে বলে আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। সরকারি হিসাবে সারা দেশে এবার ৪ কোটি ৯ লাখ ১৫ হাজার ৩৮১ শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ৩৩ কোটি ৪৮ লাখ ৭৮ হাজার ৮৩৩ টি বই। করোনাসহ নানা সমস্যায় কয়েক বছর ধরেই বছরের প্রথম দিন প্রাথমিক-মাধ্যমিকে নতুন বই বিতরণ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা চলেছে। এবার করোনা না থাকলেও ছিল পারিপার্শ্বিক বাড়তি সমস্যা। মাঝখানে বিদ্যুতের সমস্যা দেখা দেয়। ব্ল্যাকআউটের পর লোডশেডিং গেছে কয়েক দিন। তার ওপর কাগজের সংকট। ২০০৯ সাল থেকে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থীকে বছরের প্রথম দিনে উৎসব করে বিনা মূল্যে পাঠ্যবই দেওয়ার রেওয়াজ চালু হয়। শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের অন্যতম অর্জন এটি। এবার বই উৎসবের সঙ্গে যাত্রা হয়েছে নতুন কারিকুলামেরও। এবার নতুন কারিকুলামের বই দেওয়া হচ্ছে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে। আগামী বছর দেওয়া হবে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে। আর ২০২৫ সালে যুক্ত হবে পঞ্চম ও দশম শ্রেণি। এরপর ২০২৬ সালে একাদশ ও ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণি যুক্ত হবে।
নতুন কারিকুলামে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে শিখনকালীন মূল্যায়নে। উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের যেন বেশি পরীক্ষায় বসতে না হয়। আমাদের সন্তানদের আদতে শিক্ষার্থী না রেখে শুধু পরীক্ষার্থী করে ফেলা হয়েছিল। এ নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। এখন এটা বদলানোর পরিকল্পনা বাস্তবে তা কদ্দূর ফলবে তা দেখার বিষয়। শিক্ষা, শিখন, পাঠ, পঠনের কোনো পদ্ধতিই মন্দ নয়। প্রতিটির পক্ষেই যুক্তি আছে। নতুনত্বের অংশ হিসেবে একসময় ডিভিশন বাদ দিয়ে জিপিএ সিস্টেম চালু হয়েছে। একে শিক্ষাব্যবস্থায় যুগান্তকারী বলা হয়েছে। আবার প্রাথমিক ও অষ্টম শ্রেণিকেও পাবলিক পরীক্ষার আওতায় এনে বলা হয়েছে, সেরার সেরা বিশ্বসেরা কাজ। এখন আবার তা বাতিল করে বৃত্তি পরীক্ষায় ফিরে আসা হয়েছে। বলা হচ্ছে, এটিও আরেকটি চমৎকার কাজ। এভাবে যখন যা করা হচ্ছে, সবই যেন ভালোর চেয়েও ভালো। চমৎকারিত্বে ভরা। কৃতিত্ব দাবি করার উদ্যমতা। আগের ‘খারাপ’টি বাদ দিয়ে নতুন ‘ভালো’ ধরা; পরে আবার পুরনো খারাপকেই ‘ভালো’ নামে ফেরত আনার এই ‘ভালোত্ব’ চর্চা আর কত? সবই ফ্রিস্টাইলে।
করোনায় দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় পাবলিক পরীক্ষাগুলোর ব্যাপারে কিছু ছাড় দেওয়া হয়। দূরশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় সংযুক্ত রাখার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু স্কুল খুলে যাওয়ার পর আগের রুটিনে ফিরে যাওয়াই মুখ্য উদ্দেশ্য হয়ে যায়। পড়াশোনার ক্ষতি যাচাই করে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। পদ্ধতির এ অদলবদলে শিক্ষার মান উন্নয়নের প্রশ্ন ঊহ্যই থেকে যাচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ পুরো শিক্ষাপদ্ধতি ও ব্যবস্থাকে গিনিপিগে নিয়ে ঠেকানো হচ্ছে। একসময় বাছাই করা শিক্ষার্থীদের নিয়ে হতো প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা। সেটি বাদ দিয়ে ২০০৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য শুরু হয় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী-পিইসি পরীক্ষা। এতে সব শিক্ষার্থীই বৃত্তি পাওয়ার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারত; যদিও পিইসি পরীক্ষা নিয়ে ছিল সমালোচনা। করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি ও নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা বিবেচনায় নিয়ে তিন বছর ধরে পিইসি পরীক্ষা হচ্ছে না। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে চালু হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রম। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শ্রেণিতেও তা বাস্তবায়ন করা হবে, যেখানে প্রথাগত পরীক্ষাকে কম গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই ধারাবাহিক মূল্যায়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় বছরের একেবারে শেষবেলায় এসে আকস্মিকভাবেই এ বছর সেই পুরনো ব্যবস্থার মতো প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত আরোপ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তুঘলকি কাণ্ডের মতো হঠাৎ আরোপিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বহু বছর পর এবার প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় ফিরে কী কষ্ট পোহাতে হয়েছে তা শুধু ভুক্তভোগী শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকরাই জানেন। অথচ এ পদ্ধতির কত গিবত করে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পিইসি পরীক্ষা চালু করা হয়েছিল। এ নিয়ে কৃতিত্বের কী বাহাদুরিই না চলেছে। এখন কেন আবার বৃত্তি ফিরিয়ে এনে পিইসি খারাপ হয়ে গেল? জবাব চাওয়ারও যেন কেউ নেই। কর্তার ইচ্ছায় এমন কর্মসাধন প্রকারান্তরে এক ধরনের অকর্ম বৈ কি। একটা ব্যাখ্যা দেওয়ার গরজও বোধ করতে হলো না!
এদিকে, ২০১০ সালের শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে কোনো সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। এর খসড়ায়ও শিক্ষা পদ্ধতি, শিক্ষার মান, শিক্ষার অধিকার, অধিকার পূরণের উপায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এসব ব্যাপারে লক্ষ্য ও কৌশল নির্ধারণ রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও সিদ্ধান্তের বিষয়। কিন্তু রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তদাতারা তা এড়িয়ে সাময়িক কৌশলে আগ্রহী। শিক্ষানীতি ও স্থায়ী বিধিবদ্ধ শিক্ষা কমিশন গঠনের সুপারিশ থাকলেও তা এড়িয়ে যেতে অভ্যস্ত তারা। এসব জরুরি বিষয় না ভেবে তাদের গরজ অন্যদিকে ‘এডহক’-এ। যে কারণে প্রায়ই সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে অবান্তর-অপ্রয়োজনীয় বিষয়-আশয়। কুমিল্লা অঞ্চলে যাকে বলে, উচরাখুচরা-চাতানাতা। আসল কাজ বাদ দিয়ে একেক সময় একেকটা সামনে এনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও এগুলোতে সংশ্লিষ্টদের ফেলা হয় প্যানিকে।
শিক্ষা তছনছের এ সময়েই কদিন আগে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি পদে সরকারি কর্মকর্তাদের মনোনয়ন দেওয়ার আজব ফর্মুলা সামনে আনা হয়েছে। কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত উপসচিব বা সমমান কর্মকর্তা ও স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে সরকারি কর্মকর্তা বা অবসরপ্রাপ্ত প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তাকে মনোনয়নের প্রবিধান নিয়ে অফিশিয়াল চিন্তাভাবনার কথা জানিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে মন্ত্রণালয়। মশকরার মতো ঘটনা। এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা বোর্ডগুলোর কাছে মতামত পাঠাতে বলেছে মন্ত্রণালয়। তাদের চিঠিতে বলা হয়েছে, এ প্রবিধানমালাটি ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের) গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা, ২০২২’ নামে পরিচিত হবে। এত দিন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটিতে স্থানীয় গণ্যমান্যরা সভাপতি হওয়ার সুযোগ পেতেন। কোথাও কোথাও রাজনৈতিক ক্ষমতা ও এলাকায় প্রভাবএ দুই ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি নির্বাচিত হন। আর ছোট মাপের ফলাফলে নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় উদ্যোক্তারাই পালন করেন মুখ্য ভূমিকা। শিক্ষার্থীদের মেধাবী করে গড়ে তোলা এবং ভালো ফলাফলের নানা চেষ্টা করেন নিজস্ব ক্যারিশমায়। তারা মন-মননে, চিন্তা-চেতনা ও চেষ্টায় তাদের প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে যেতে চান নটর ডেম, হলিক্রসপর্যায়ে। তা না পারলেও শতভাগ পাসসহ ভালো ফলাফলের ক্ষেত্রে সাফল্য দেখিয়ে চলছেন। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতিদের বিরুদ্ধে শিক্ষক হয়রানি বা বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগকে সাবজেক্ট বানিয়ে এখন পাইকারিতে সবাইকে এক পাল্লায় তোলার ‘কাজ নাই তো খই ভাজ’ ভাবনা জানিয়ে একটা উটকো আতঙ্কের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা বোর্ডগুলোতে এ বিষয়ে মতামত চেয়ে পাঠানো চিঠিটিতে চরম বিরক্ত-ক্ষুব্ধ এমনকি আতঙ্কিত তারা।
দু-একটি বেসরকারি স্কুল-কলেজের কারণে বাদবাকি সবার ওপর চড়াও হওয়ার চিন্তাকে অবান্তর-অন্যায্য ভাবছেন তারা। পিছিয়ে থাকা বা মেধাহীন নামে অবহেলা করা শিক্ষার্থীদেরও ঘষেমেজে ভালো করে তোলে এসব প্রতিষ্ঠান। তাদের কলেজে পাসের হার ১০০ শতাংশ বা কাছাকাছি। এর বিপরীতে সরকারি কলেজ মেধাবীদের ভর্তি করিয়ে ৫০ শতাংশ পাসও নিশ্চিত করতে পারে না। কথায় কথায় আরও কথা এসে যাচ্ছে। সরকারি স্কুলগুলোতে এখনো টিফিনসহ মাসিক বেতন ১৭ টাকা। এই সুবিধাটা কার প্রাপ্য হওয়া ন্যায্য ছিল? তুলনামূলক পিছিয়ে পড়া ও সুবিধাবঞ্চিতরা তা পেলে সুন্দর হতো। সমাজের উঁচুস্তরের কোটিপতির সন্তানদের ১৭ টাকার বেতনসহ নাশতার সুবিধা নেওয়ার এত দরকার কেন? নানা বিতর্ক থাকলেও লটারি পদ্ধতিতে এর একটা বিহিত যে হয়েছে তা কিছুটা হলেও মন্দের ভালো। ভর্তি পরীক্ষা, ভর্তিযুদ্ধএসব শিশু-কিশোরদের জন্য নেতিবাচক শব্দ। শিশুর সুস্থ মস্তিষ্কে বেড়ে উঠতে প্রতিবন্ধকতাও। অনেক মাকে দেখা গেছে, সন্তান ওইসব স্কুলে চান্স না পেলে সন্তানের ওপর শারীরিক-মানসিক নির্যাতন চালাতেন। বিগত দুটি সালে এমনটি আর হয়নি।
ভালোমন্দ মিলিয়ে এ দেশের নাগরিক হিসেবে সবারই প্রজাতন্ত্রের বিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখার সুযোগ দরকার। কমপক্ষে শিক্ষাটাকে শিক্ষা ব্যবসায়ী আর পুঁজিপতিদের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। বিগত দুই বছরে তথাকথিত বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দীর্ঘদিন পর ঘুম থেকে উঠতে হয়েছে। এখন নিজেরা পড়াশোনা করে ক্লাসে যেতে হয়। বাছাই করে ভর্তি করানো সন্তানদের ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পড়াতে হতো না। মা-বাবা আর কোচিং সেন্টারের ফলাফল ছিল এত দিন। মেধাবীকে মেধাবী বানানো, আর দুর্বলকে মেধাবী বানানো কোনটি চ্যালেঞ্জ? কবে আবার কোন ‘ভালো’ যুক্তিতে এ পদ্ধতিও বদলে দেওয়া হয়, কে জানে?
রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু থাকে না। সকাল-সন্ধ্যা নানান কথা ও সিদ্ধান্ত ফলানো যায় রাজনীতিতে। সেখানে কোনো ভুল থাকে না! সবই সঠিক! সকালেরটা শুদ্ধ, সন্ধ্যারটা আরও শুদ্ধ! কিন্তু শিক্ষাকে এ জায়গায় নেওয়া ছেলেখেলার চেয়েও সর্বনাশা। তাই অন্তত শিক্ষা খাতের রেহাই দরকার।
লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন
কুমির তার বাচ্চাদের লেখাপড়া শেখাতে দিয়েছিল শিয়ালের কাছে। শিয়াল-কুমিরের ছানাগুলোকে খেয়ে ফেলেছিল। প্রতিশোধের আশায় ক্রুদ্ধ কুমির এক দিন ধরে ফেলেছিল শিয়ালকে। শিয়ালের পা ধরে টেনে নেওয়ার সময় ধূর্ত শিয়াল চিৎকার করে ওঠে ওরে আমার লাঠি ছাড়, তুই তো আমার লাঠি ধরেছিস। সরল কুমির ভাবে, সে হয়তো শিয়ালের পায়ের বদলে লাঠি ধরেছে। তাই দ্রুত পা ছেড়ে দিয়ে পা মনে করে লাঠিটাকেই ধরে ফেলে। আর এই সুযোগে লাঠি ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যায় ধূর্ত শিয়াল। এখন শুধু শিয়াল কুমিরের যুগ নয়। এখানে আছে ক্ষমতার ছায়া আর সহায়তা। কুমিরের বাচ্চার মতো জনগণের টাকা থাকে শেয়ারবাজারে। সেখানে আছে ধূর্ত শিয়াল। এরা প্রত্যক্ষ পরোক্ষ সহায়তা পেয়ে খেয়ে ফেলছে সাধারণ মানুষের টাকা।
সোমবার দেশ রূপান্তরে ‘কর্তার প্রশ্রয়ে মহালুটের প্রস্তুতি’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমনই একটি কোম্পানির অপতৎপরতার কথা তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত আলিফ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে অস্বচ্ছ ও বানোয়াট তথ্যে আর্থিক প্রতিবেদন তৈরির অভিযোগ রয়েছে। কোম্পানিটি যে টার্নওভার দেখিয়েছে তার পক্ষে কোনো সহায়ক নথি নেই। শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান হলেও কোনো রপ্তানি প্রক্রিয়ার সনদ (এক্সপোর্ট প্রসিড সার্টিফিকেট) নেই। ব্যাংকের কাছ থেকে কোনো নগদ সহায়তাও আসেনি। কখনো আমদানির ঋণপত্রও খোলেনি তারা। কোম্পানিটি তাদের উৎপাদন চালু দেখালেও কোনো প্রশাসনিক ব্যয় দেখায়নি। এমন কোম্পানিকেই ঢালাওভাবে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন কমিশনের শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তা, যার প্রশ্রয়ে এবার ব্যাপক লুটপাটের আয়োজন করেছে আলিফ গ্রুপ। আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের বানানো আর্থিক প্রতিবেদন যাচাইয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) তদন্ত কমিটি গঠন করলেও কোম্পানিটির অসহযোগিতায় তা পূর্ণতা পায়নি। সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের পাশাপাশি এসইসির নির্দেশনাকেও পাত্তা দেয়নি আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ। তথ্য দিতে অসহযোগিতার দায়ে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ রয়েছে এসইসির তদন্ত কমিটির। কিন্তু শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি এনফোর্সমেন্ট বিভাগে না পাঠানোর নির্দেশনা দিয়ে তা ধামাচাপা দেন কমিশনের শীর্ষস্থানীয় ওই ব্যক্তি। উল্টো ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ থাকা আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজকে বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে ৩০০ কোটি টাকা উত্তোলনের সুযোগ করে দিয়েছে এসইসি। এখন এসইসির ওই কর্মকর্তার প্রশ্রয়ে শেয়ারে রূপান্তরযোগ্য এই বন্ডকে কেন্দ্র করে দীর্ঘমেয়াদে কারসাজির পরিকল্পনা করেছে কোম্পানিটি। অস্বাভাবিক মূল্যে বন্ডকে শেয়ারে রূপান্তরের অংশ হিসেবে কারসাজির মাধ্যমে শেয়ার দর অন্তত ছয় গুণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ব্যাপক লুটপাটের আয়োজন চলছে। অন্যদিকে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের নামে মূলধন বাড়ানোর মাধ্যমে কম দামে শত শত কোটি টাকার শেয়ার হাতিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে, যাতে সায় দিতে যাচ্ছে এসইসি। পাশাপাশি কোম্পানিটি জীবন বীমাসহ দুটি সরকারি ব্যাংক থেকে এই বন্ড দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলে নেওয়ার পায়তাড়াও করছে। এক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাংক নিজেদের লাভ-লোকসানের বিষয়ে তুলনামূলক সচেতন বিধায় তারা সরকারি প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে থাকতে পারে। যেন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভালো-মন্দের, লাভ-লোকসানের দায় নেই!
পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিন ধরে চলমান সংকটের নেপথ্যে সরকারের নীতিনির্ধারক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতাকে দায়ী করে আসছেন পুঁজিবাজার ও আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক বিশেষ প্রতিবেদনেও উঠে আসে যে, নীতিনির্ধারণী ভুলের মাশুল দিচ্ছে পুঁজিবাজার। আর বাজার বিশ্লেষকরা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন, পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে এবং আমানতকারীদের আস্থা ফেরাতে তারল্য সংকট দূর করার সঙ্গে প্রয়োজন বাজারে সরকারি-বেসরকারি-বিদেশি ভালো কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করা তথা ভালো শেয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি করা। কিন্তু বাস্তবে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করে ভালো শেয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি করার তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। বরং শেয়ারবাজারে জালিয়াতির মাধ্যমে নি¤œমানের কোম্পানিকে কাগুজে বাঘ বানিয়ে কারসাজির ঘটনা সামনে আসছে। বাজার পরিস্থিতির উত্তরণে এটি নিঃসন্দেহে একটি বড় বাধা। এ অবস্থায় আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মতো কোম্পানিগুলো যাতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত না হতে পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। এমন মানহীন কোম্পানিকে প্রত্যয়নপত্র দেওয়া ইস্যু ম্যানেজার ও নিরীক্ষকদেরও জবাবদিহি ও শাস্তির আওতায় আনা জরুরি। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন পরিপালনের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে বাজারে কারসাজিসহ যেকোনো ধরনের অপরাধের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে এই সংকট থেকে উত্তরণ কঠিন হয়ে যাবে। বর্তমান মুদ্রাস্ফীতির বাজারে হরিলুটের এই আয়োজনে আগাম সতর্কতা জরুরি।
বাঙালি শিক্ষাবিদ ও কবি কাজী কাদের নেওয়াজ ১৯০৯ সালের ১৫ জানুয়ারি মুর্শিদাবাদের তালেবপুরে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩২ সালে তিনি বিটি পাস করে স্কুলের চাকরিতে যোগ দেন এবং ১৯৪৬ সালে তিনি সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। সাতচল্লিশের দেশবিভাগের পর কাজী কাদের ঢাকায় এসে প্রথমে নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং পরে দিনাজপুর জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হন (১৯৫১)। তিনি ১৯৬৬ সালে অবসর গ্রহণ করে মাগুরার মুজদিয়া গ্রামে বসবাস করেন। একজন আদর্শবান শিক্ষক হিসেবে কাজী কাদের সবার শ্রদ্ধা অর্জন করেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেন। কাজী কাদের অল্প বয়সেই সাহিত্যের প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি রবীন্দ্র-ভাববলয়ের কবি হলেও বিষয়ে, বিন্যাসে, আঙ্গিকে ও প্রকাশনৈপুণ্যে তার কাব্য স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। কাজী কাদের নেওয়াজের গুরুত্বপূর্ণ রচনাবলি হলো : মরাল, দাদুর বৈঠক, নীল কুমুদী, মণিদীপ, কালের হাওয়া, মরুচন্দ্রিকা, দুটি পাখি দুটি তারা, উতলা সন্ধ্যা ইত্যাদি। তিনি প্রেসিডেন্ট পুরস্কার, শিশুসাহিত্যের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৩) এবং মাদার বক্শ পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৩ সালের ৩ জানুয়ারি স্বগ্রামে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ আর নির্বাচনী তাপের মধ্যেই আজ জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট এটি। অনেক যোগ-বিয়োগ কষে বাজেট প্রণয়নের শেষ সময়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচনী চমক হিসেবে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করতে সম্পূর্ণ নতুন পথে হেঁটেছেন। ভর্তুকি নাম দিয়ে বড় অঙ্কের ‘কর ছাড়’ দিয়েছেন। অথচ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে রাজস্ব জাল বিছিয়ে সাধারণ আয়ের মানুষকে আটকে ফেললেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো প্রস্তাবিত বাজেট সারসংক্ষেপ, ভর্তুকির নামে ‘কর ছাড়’কে বৈশি^ক মন্দা মোকাবিলার ঢাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের পরোক্ষ প্রভাবে বাজারে পণ্যের দাম কমার গতিরোধ করবে বলেও সরকারপ্রধানকে জানিয়েছেন।
তবে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ছোটদের কর পরিশোধে চেপে ধরলেও কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের ঠিকই খুশি করলেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমায় খুব বেশি প্রভাব পড়বে এমন আশা করা কঠিন।
এনবিআরের সাবেক সদস্য কর-বিশ্লেষক ড. আমিনুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে কর অব্যাহতি ও কর অবকাশ সুবিধা কমানোর চাপ আছে। এ শর্ত না মানলে ঋণের কিস্তি দেওয়া বন্ধ করা হতে পারে। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় বড় মাপের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার চাপ আছে। বিভিন্নমুখী চাপে সরকার সব পক্ষকে খুশি করতেই আগামীতে কৌশলে কর ছাড় রাখছে ভর্তুকির নাম দিয়ে। অন্যদিকে সাধারণ আয়ের মানুষের ওপর কিন্তু ন্যূনতম কর ধার্য করার কথা শুনছি। অনেক মানুষকে রাজস্বের আওতায় আনার কথাও শুনেছি। এভাবে ছোটদের ওপর ঠিকই কর পরিশোধে চাপ বাড়াল।’
একই মত জানিয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বড় মাপের ব্যবসায়ীদের অনেকে সরাসরি রাজনীতি করেন। অনেকে রাজনীতি না করলেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলেন। এরা সমাজের প্রভাবশালী। বাজেট প্রণয়নকালেই এরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে নিজেদের পক্ষে সুবিধামতো অনেক কিছু আদায় করে নেন। এবারও তাই হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে আইএমএফের জেরার মুখে বলার সুযোগ থাকছে যে কর ছাড় ও ভর্তুকি দুই হিসাব এক করেছি।’
সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকে আশায় আছেন এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী হয়তো জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে সূত্র কষবেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এ বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় কোনো রক্ষাকবচ রাখলেন না। কৌশলী অর্থমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে দেওয়া কথা রেখেছেন। সাধারণ মানুষকে রাজস্ব জালে আটকে ফেলার ছক করেছেন। মূল বাজেটের আকার বাড়ানোর সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের আয়ের হিসাবও বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এখানে কর খাত থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে চলতিবারের তুলনায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করলেন। এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে করবহির্ভূত খাত থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। শেষ সময়ের হিসাবকষে শত সংকটের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করেছেন।
আগামী বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী কর ছাড়সহ ২ লাখ ৮৯ হাজার ২২৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করবেন। জাতীয় বাজেটে নিয়মিত ভর্তুকি হিসাবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা রাখার কথা আছে। বাকিটা প্রত্যক্ষ কর ছাড় দিয়ে ভর্তুকি খাতে অন্তর্ভুক্তি হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষ কর ব্যয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেতনসহ অন্য খাতে ৭৭ হাজার ২১৮ কোটি বা মোট কর ছাড়ের ক্ষুদ্রঋণ খাতে ১২ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি, প্রবাসী আয় খাতে ৯ শতাংশ বা ১১ হাজার ২৮৭ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে ৭ শতাংশ বা ৮ হাজার ৩৮০ কোটি, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক শিল্প খাতে ৪ শতাংশ বা ৪ হাজার ৬১২ কোটি, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ৩ শতাংশ বা ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি, পোলট্রি ও মৎস্য খাতে ২ শতাংশ বা ৩ হাজার ১২০ কোটি, আইটি এবং সফটওয়্যার খাতে ১ শতাংশ বা ১ হাজার ৪৭৭ কোটি এবং পুঁজিবাজার খাতে ১ শতাংশ বা ৯৬৬ কোটি টাকা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইস মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ যেন পুরনো বোতলে নতুন পানীয়। বড়দেরই বিভিন্ন কৌশলে সুবিধা দেওয়া হলো।’
অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ের কৌশল হিসেবে বড় সুবিধা দিলেও ইটিআইএন গ্রহণ ও রিটার্ন দাখিলে কঠোরতা এনেছেন। ইটিআইএন না নিলে ৪০ ধরনের সেবা এবং রিটার্ন দাখিলের সিøপ না নিলে ৩৮ ধরনের সেবা দেওয়া হবে না। এতদিন ইটিআইএন নিয়েও অনেকে করযোগ্য আয় না থাকলে শুধু রিটার্ন দাখিল করেছে, একটি টাকার কর দিতে হয়নি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ১ জুলাই থেকে করযোগ্য আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে।
সাধারণ আয়ের অনেক করদাতা বলেছেন, খাবারের খরচ অনেক বেড়েছে। বাসা ভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসা সবকিছুই এখন বেশি। এর মধ্যে সাধারণ আয়ের ওপর কর পরিশোধে চাপ দেওয়া হলে ভোগান্তি বাড়বে। সাধারণ মানুষকে কর পরিশোধে বাধ্য করলেও সম্পদশালীদের রাজস্ব ফাঁকি কমাতে, বকেয়া আদায়ে এবং অর্থ পাচার রোধে জোরালো কিছু রাখা হয়নি। এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতেও পুরনো পথেই হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী।
আগামী অর্থবছর থেকে রিটার্ন জমা দিতে দেরি হলে বেশি হারে জরিমানা দিতে হবে। বাজেটে আইন করে জরিমানার পরিমাণ প্রদেয় করের পরিমাণ দ্বিগুণ ৪ শতাংশ নির্ধারণে প্রস্তাব করা হয়েছে।
বড়রা সুবিধা দিয়ে রাজস্ব আদায়ে চাপ বাড়ানোয় জীবনযাত্রার অনেক খাতেই খরচ বাড়বে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি কমাতেও বাজেটে রাখা হয়নি কিছু। আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারের অস্থিরতা কবে কমবে তা নিয়ে রয়েছে অশ্চিয়তা। তাই গত মাস ছয়েক থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চাল, ডাল, আট, ময়দা, ভোজ্য তেল, লবণ, চিনি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের খাবারের দাম আপাতত কমছে না। চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষাসহ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়ও কমবে না। গত (নভেম্বর ২০২২-এপ্রিল ২০২৩) ছয় মাসের সাধারণ মূল্যস্ফীতির গড় হার ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বিশেষ কোনো চাপ নেই, অর্থনৈতিক উন্নয়ন গতিশীল রাখতে এবারের বাজেটে থাকছে ধারাবাহিকতা।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেলে ঘোষিত হতে যাওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে 'গরিববান্ধব' উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আরও বলেন, সবাইকে নিয়ে সবার জন্য বাজেট ঠিক করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তার আকার বড় হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে জাতীয় সংসদ ভবনে যাত্রার প্রাক্কালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাজেট সম্পর্কে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বিকেলে জাতীয় সংসদে সাত লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করবেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার অর্জনের লক্ষ্য স্থির করেছে সরকার। সেখানে মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে মোট বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির ৩৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে, এমন আশা করছেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেটে ৫ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেট ঘাটতি হতে পারে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। রবিবার (৪ জুন) থেকে সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হবে।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
দেশের ৬০টি জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে দিনের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এ ছাড়া দেশজুড়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ আরও দুই দিন থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, ঢাকা বিভাগের ১৩টি, খুলনার ১০টি, রাজশাহীর আটটি, বরিশালের ছয়, রংপুরের আটটি, সিলেটের চার ও ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলাসহ চট্টগ্রাম, সীতাকুণ্ড, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
আগামী দুই দিনে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু টেকনাফ উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে এবং বিদ্যমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানান এই আবহাওয়াবিদ।
তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।