
সাহিত্যিক ও প্রথম ভারতীয় সিভিলিয়ান সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে ১৮৪২ সালের ১ জুন। তিনি ছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বিতীয় পুত্র এবং রবীন্দ্রনাথের অগ্রজ। ১৮৬২ সালে তিনি সস্ত্রীক লন্ডন যান এবং ১৮৬৪ সালে আইসিএস হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৮৬৫ সালে আহমেদাবাদের অ্যাসিস্ট্যান্ট কালেক্টর ও ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে তিনি কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। চাকরি থেকে অবসরগ্রহণের পর তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন। ১৮৬৭ সালের ১২ এপ্রিল চৈত্রসংক্রান্তির দিন তিনি কলকাতার বেলগাছিয়ায় হিন্দু মেলার প্রবর্তন করেন। ১৯০০ ও ১৯০১ সালে তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতি নিযুক্ত হন। ১৯০৬ সালে আদি ব্রাহ্মসমাজের আচার্য ও পরে সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ৯টি বাংলা ও তিনটি ইংরেজি গ্রন্থ রচনা করেন। এ ছাড়া তার করা তিলকের ‘ভগবদ্গীতাভাষ্য’, ‘কালিদাসের মেঘদূত’ এবং তুকারামের ‘অভঙ্গে’র অনুবাদ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তিনি কিছুকাল তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ১৯২৩ সালের ৯ জানুয়ারি তিনি মারা যান।
এটা সবাই বলতে চাইবে যে, একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদাররা হেরে গিয়েছিল ঠিকই; কিন্তু তারপর থেকে আমরা কেবলি নিজেরা নিজেদের কাছেই হারছি। চতুর্দিকে পরাজয়ের চিহ্ন। হতাশা, অরাজকতা, মীমাংসিত প্রশ্নের অমীমাংসিত হয়ে যাওয়া কোনটা বাদ দিয়ে কোনটার কথা বলি। পরাজয়টা তাই ভেতর থেকে। বড় দুঃখে। কিন্তু কার কাছে হারলাম? কেই-বা হারাল? কখন? পরাজয়ের সূত্রপাত বিজয়ের সঙ্গে সঙ্গেই। কিন্তু পাকিস্তানিদের কাছে নয়; ওই গৌরব তাদের একেবারেই প্রাপ্য নয়। হার হয়েছে সেই প্রায়-অদৃশ্য কিন্তু অত্যন্ত পরাক্রমশালী শক্তির কাছে যার অধীনে পাকিস্তানিরা তখনো ছিল, এখনো আছে। এই প্রভুটির নাম পুঁজিবাদ। পরাজয় হয়েছে তার কাছেই।
আশা ছিল পাকিস্তানি হানাদারদের পতনের সঙ্গে সঙ্গে তাদের ওই প্রভুরও পতন ঘটবে। ঘোড়া পড়ে গেলে ঘোড়সওয়ারও পড়ে যাবে। কিন্তু তা কি হয়? এই সওয়ারটি অনেক বেশি শক্তি রাখে। তার ক্ষমতা বিশ্বব্যাপী ন্যস্ত; সে কেন পড়ে যাবে খামোখা? একটা ঘোড়া গেছে অন্য ঘোড়া সহজেই পেয়ে যাবে। বাংলাদেশ নামক নতুন রাষ্ট্রটি এই পুঁজিবাদের নতুন ঘোড়া বটে। সওয়ারটি দাবড়ে বেড়াচ্ছে। আর ওই যে আমাদের আশা তার ভিত্তিটাই বা কী ছিল?
ভিত্তি ছিল জনগণের আত্মত্যাগ। তারা এমনভাবে লড়েছে, এত অধিক মূল্য দিয়েছে এবং এতটা ঐক্যবদ্ধ ছিল যে, ভরসা ছিল যে পুঁজিবাদের পতন ঘটবে এবং বাংলাদেশের মানুষ কেবল স্বাধীন নয়, প্রকৃত প্রস্তাবেই মুক্ত হবে; কিন্তু কেবল আত্মত্যাগে তো ওই রকমের পরাক্রমশীল শক্তি, নাম যার পুঁজিবাদ, তার পতন ঘটে না। সাময়িকভাবে পিছু হটলে অনতিবিলম্বে সে ফিরে আসে। আমরা তো বুঝতেই পারছি যে আমাদের ক্ষেত্রেও ডাশ তাই-ই ঘটেছে। পুঁজিবাদ ফিরে এসেছে। কেবল ফেরত আসেনি, আগের চেয়ে বেশি নৃশংস হয়ে এসেছে, যেন তাকে বিরক্ত করার দরুন ক্ষিপ্ত সে, শাস্তি দেবে।
বাংলাদেশ একটি নতুন রাষ্ট্র বটে। কিন্তু কতটা নতুন? নামে নতুন, ভূখ-ে নতুন; কিন্তু স্বভাব-চরিত্রে? না, স্বভাব-চরিত্রে সে এতটুকু বদলায়নি। পুরাতন রাষ্ট্রের মতোই রয়ে গেছে আমলাতান্ত্রিক ও পুঁজিবাদী। হ্যাঁ, শাসক বদলেছে। পুরাতন শাসকদের জায়গায় নতুন শাসক এসেছে; কিন্তু তারা রাষ্ট্রকে বদলাবে, এই রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক করবে, ভেঙে দেবে এর আমলাতান্ত্রিক কাঠামো, ঘটাবে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, প্রতিষ্ঠা করবে মানুষে মানুষে অধিকার ও সুযোগের সাম্য এসব কেন আশা করব আমরা? আশা অবশ্য করেছিলাম ওই আত্মত্যাগের কারণেই। কিন্তু জনগণের আত্মত্যাগের কী মূল্য আছে এই নিপীড়নকারী শাসকশ্রেণি এবং তাদের স্বার্থ-সংরক্ষণকারী আমাদের এই নতুন রাষ্ট্রের কাছে?
কে হারল এই প্রশ্নের জবাবও এই বাস্তবতার ভেতরেই পাওয়া যাবে। হেরে গেছে জনগণ। হেরেছে এই জন্য যে, তাদের রাজনৈতিক সংগঠন নেই, নেতৃত্বের রয়েছে অভাব, অভাব ঘটেছে রাজনৈতিক শক্তির। একাত্তরের পর থেকে যে নেতৃত্বকে আমরা পেয়েছি তারা হারেনি, তারা আত্মসমর্পণ করেছে। হারতে হলে লড়তে হয়। রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বে যারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তারা তো পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি। প্রশ্নই ওঠে না লড়াইয়ের। তারা উদগ্রীব ছিল আত্মসমর্পণে। সেটাই তারা করেছে। আত্মসমর্পণের পর এখন চলছে তোয়াজ করার পালা। এখানে তারা পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। জনতার জয় পদপিষ্ট হচ্ছে বিজয়-উদ্ধত পুঁজিবাদ ও পুঁজিবাদীদের দাপটের নিচে। এই বিজয়টা যেমন স্থানীয় তেমনি আন্তর্জাতিক; পুঁজিবাদ একটি বিশ্বব্যাপী ব্যবস্থা বটে। একাত্তরে এদেশের মানুষের জীবনে যে দুর্ভোগ নেমে এসেছিল সেটা ছিল অপরিমেয়; কিন্তু যুদ্ধের ভেতর দিয়ে যে গৌরব তারা অর্জন করেছিল তাও ছিল অতুলনীয়। ষোলই ডিসেম্বর বাঙালি জাতির ইতিহাসে গৌরবের সবচেয়ে উজ্জ্বল মুহূর্ত। কিন্তু তারপরে?
তারপরের ইতিহাস উত্থানের থাকেনি, পরিণত হয়েছে পতনের। আমরা নামছি। কেবলই নামছি। এই নিম্নধাবমানতা নানাক্ষেত্রে ঘটেছে। সবচেয়ে ক্ষতিকরভাবে ঘটেছে মূল্যবোধের ক্ষেত্রে। খুব জরুরি যে মূল্যবোধ সেটি হচ্ছে দেশপ্রেম। এই দেশপ্রেমেরই চূড়ান্ত প্রকাশ আমরা দেখেছি একাত্তরে; আজ তার অভাব দেখছি পদে পদে। দেশপ্রেমের একটা বড় প্রকাশ ঘটেছিল আজ থেকে একশ বছর আগে, ১৯০৫ সালে, বঙ্গভঙ্গ রদ করবার সংগ্রামে। কিন্তু সেটা ঘটেছিল সীমিত আকারে; সীমাবদ্ধ ছিল মধ্যবিত্তের মধ্যে, যে মধ্যবিত্ত সেদিন ছিল মূলত হিন্দু সম্প্রদায়ের দ্বারা গঠিত। বঙ্গভঙ্গকে প্রতিরোধ করবার আন্দোলনে প্রবল দেশপ্রেমের জোয়ার এসেছিল। প্লাবন দেখা দিয়েছিল জাতীয়তাবাদের। মানুষ কারাভোগ করেছে, প্রাণও দিয়েছে। কিন্তু নেতৃত্বের মারাত্মক রকমের ভ্রান্ত পদক্ষেপের দরুন ওই জাতীয়তাবাদ চলে গেল ধর্মীয় পুনর্জাগরণের অন্ধ পথে।
হিসাব করলে সেদিন দেখা যেত বাঙালিদের মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা মোটেই অল্প ছিল না। আসলে তারাই ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। হিন্দু জাতীয়তাবাদের জোয়ার মুসলমানদের সঙ্গে নিতে পারল না। বরং দেখা দিল সাম্প্রদায়িক বিভাজন। পরিণতিতে দাঙ্গা বাধল এবং সাতচল্লিশে দেশ গেল ভাগ হয়ে। সবটাই ঘটল নেতৃত্বের ব্যর্থতার কারণে, একাত্তরে দাঙ্গা হয়নি, যুদ্ধ হয়েছে। বাঙালি বিভক্ত হয়নি, ঐক্যবদ্ধ ছিল। এ যেন সাতচল্লিশের সেই ভুলের সংশোধন। এবারে দেশভাগের প্রশ্ন নেই, এবারের প্রশ্নটা রাষ্ট্রকে ভাঙার। রাষ্ট্র ভাঙল। এলো স্বাধীনতা। কিন্তু তারপরে? তারপরে দেশপ্রেমের পতন ঘটেছে। কিন্তু কেন? এবারও দায়িত্ব নেতৃত্বেরই। না, যত দোষ নন্দ ঘোষের নয়, পতনের জন্য নেতারাই দায়ী। দোষ তাদেরই। তারা লড়াইতে যেতে চায়নি। যুদ্ধ নয়, তারা চেয়েছিল স্বায়ত্তশাসন, যার অর্থ তাদের জন্য অবাধ স্বাধীনতা; অন্যকিছুর নয়, লুণ্ঠনের। তাদের আন্তরিক দীক্ষা ছিল পুঁজিবাদে। সেই দীক্ষাটাকে যুদ্ধের সময়ে প্রকাশ না-করলেও বিজয়ের সঙ্গে সঙ্গে উন্মোচিত করেছে। উন্মোচনেরও দরকার হয়নি, আপনা আপনি বের হয়ে পড়েছে। দেশপ্রেম ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে পুঁজিবাদের দাপটে। যুদ্ধপরবর্তী পুঁজিবাদীরা লড়াই করেছে নিজেদের মধ্যে, ক্ষমতার (অর্থাৎ লুণ্ঠনের অধিকারের) ভাগাভাগি নিয়ে পাকিস্তানিদের সঙ্গেও তাদের লড়াইটা ছিল ওই ভাগাভাগি নিয়েই। আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়েই সাঙ্গ করা যাবে বলে ভরসা করেছিল।
জনগণের লক্ষ্যটা ছিল ভিন্ন। তারা ক্ষমতার ভাগ পাবে এটা আশা করেনি; ওই লোভে যে উত্তেজিত হয়েছে তাও নয়। তাদের আশাটা ছিল মুক্তির। স্বায়ত্তশাসনের নয়, ক্ষমতার হস্তান্তরেও নয়, তাদের জন্য স্বপ্নটা ছিল অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির। তারা আশা করেছে এমন একটি সমাজ ও রাষ্ট্র পাবে যেখানে মানুষে মানুষে সম্পদ, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা ইত্যাদি নিয়ে বৈষম্য থাকবে না; কেউ কারও শত্রু হবে না, সবাই হবে সবার মিত্র। বলাবাহুল্য জনগণ এই মুক্তি পায়নি।
পুঁজিপন্থিরা কিন্তু স্বাধীনতা পেয়ে গেল। তারা আরও ধনী হলো। তাদের ধনসম্পদ বৃদ্ধি পেল অবিশ্বাস্য গতিতে। তাদের সংখ্যাও যে খুব সীমিত রইল তা নয়, বেশ বেড়ে গেল। কিন্তু জনগণের সংখ্যার তুলনায় তারা অবশ্যই অল্প। তবে তাদের দাপট অসম্ভব প্রবল। বাংলাদেশ এখন সেই দাপটে থর থর করে কাঁপে।
জনগণ দেখল নতুন রাষ্ট্রের চেহারাটা আগের রাষ্ট্রের চেয়ে ভয়ংকর। এ রাষ্ট্র শাসকশ্রেণির অধীনস্ত তো বটেই; কিন্তু রীতিমতো সন্ত্রাসীও বৈকি। সাতচল্লিশের পরে বহু মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছিল, এবারও হলো; নিজের দেশের মধ্যেই তারা গৃহহীন, আশ্রয়হীন। তাদের দেশ নেই, দেশ চলে গেছে অন্যদের হাতে, যাদের হৃদয় ও মস্তিষ্কে দেশের জন্য কোনো স্থান অবশিষ্ট নেই। বাংলাদেশে এখন দেশপ্রেমিক বলতে শ্রমজীবী মানুষকেই বোঝায়। এই মানুষেরাই উৎপাদন করে। দেশকে এরাই টিকিয়ে রেখেছে এবং দেশের বাইরে এদের জন্য কোথাও কোনো স্থান নেই। যতই গৃহহারা হোক এই মানুষেরাই গৃহী এবং দেশপ্রেমিক। আর উদ্বাস্তু হচ্ছে তারা যাদের ধন-সম্পত্তি অনেক। বস্তুত যার বিত্তবেসাত যত অধিক সেই তত বড় উদ্বাস্তু, আমাদের এই বাংলাদেশে। এদের আদর্শ এদেশ নয়, আদর্শ হচ্ছে পুঁজিবাদী বিশ্ব। মানুষের জন্য সবচেয়ে মূল্যবান বিনিয়োগ হচ্ছে সন্তানসন্ততি; সেই বিনিয়োগ এরা দেশে করে না, করে বিদেশে। সন্তানেরা বিদেশে যায় পড়ালেখার অজুহাতে, গিয়ে আর আসে না, এলেও আগমনটা বিদেশিদের মতোই, অবস্থানও সেই প্রকারেরই। ধনীদের জন্য বাংলাদেশ এখন এক প্রকারের জমিদারি। জমিদারদের তবু সরকারি তহবিলে খাজনা দিতে হতো, এরা সেটাও দেয় না।
পুঁজিবাদের দাসানুদাস এই শাসকশ্রেণিই দেশপ্রেমের অবনতির জন্য দায়ী। তারাই হচ্ছে দৃষ্টান্ত। তারা তাদের আদর্শকে জনগণের ভেতর ছড়িয়ে দিয়েছে। মানুষকে যতভাবে পারা যায় উদ্বুদ্ধ করছে আত্মস্বার্থসর্বস্ব ও ভোগবাদী হতে; উসকানি দিচ্ছে সব কিছু ভুলে কেবল নিজের কথা ভাবতে। মানুষকে নিয়ে এসেছে বাজারে। সর্বোপরি সর্বক্ষণ ব্যস্ত রাখছে জীবিকার সন্ধানে। যাতে অন্যকিছু ভাববার সময় না হয়, বিশেষ করে শাসকশ্রেণির অত্যাচার যেন চোখের বাইরে থাকে।
বাংলাদেশের শাসকশ্রেণি দুটি কাজ খুব দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছে, একটি বেকার সৃষ্টি, অপরটি মাদ্রাসা শিক্ষার বিস্তার। দুটোই দেশপ্রেমের বিকাশের পথে মস্ত বড় অন্তরায়। এদেশের ধনীরাই হচ্ছে শাসক এবং তারা বিনিয়োগ করে না, লুণ্ঠন করে। তাদের লুণ্ঠন তৎপরতায় বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হয়। জনগণের আয় এরা ব্যাংকের মাধ্যমে কিছুটা, কিছুটা নানাবিধ প্রতারণার ভেতর দিয়ে আত্মসাৎ করে ফেলে। ফলে কর্মসংস্থান বাড়ে না। লোক বাড়ছে, কাজ বাড়ছে না; অথচ করবার মতো কাজের তো কমতি থাকবার কথা নয় আমাদের মতো অনগ্রসর দেশের। সরকার আসে যায়, কিন্তু কোনো সরকারকেই দেখা যায় না কাজ সৃষ্টির ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হতে। পুঁজিবাদ এমনিতেই শ্রমিকবিরোধী, শ্রমঘন উৎপাদনকে যে ঘৃণা করে, তার পক্ষপাত প্রযুক্তিঘন উৎপাদনের প্রতি। বাংলাদেশি পুঁজিবাদ উৎপাদনে বিশ্বাসই করে না, তার নির্ভরতা লুণ্ঠন ও ব্যবসাতে; বলাবাহুল্য ব্যবসা জিনিসটাও লুণ্ঠন ভিন্ন অন্য কিছু নয়।
যে মানুষটি বেকার তার তো কোনো দেশপ্রেম থাকবার কথা নয়। দেশ তো তাকে কিছুই দিচ্ছে না, বিড়ম্বনা ভিন্ন। তার সার্বক্ষণিক চিন্তা নিজেকে নিয়েই। আর মানুষের মতো আত্মপ্রেমিক সংসারে সত্যি বিরল। বেকারে যখন দেশ ছেয়ে যাচ্ছে, দেশে তখন দেশপ্রেমের বন্যা বইবে এমনটা আশা করা মোটেই যুক্তিসংগত নয়।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সক্কাল সক্কাল ঢাকার এক বন্ধুকে ফোন করতেই ঈষৎ বিরক্ত গলায় সে জানিয়ে দিল, খুব ঠান্ডা, পরে কথা হবে। আমার চট্টগ্রামবাসী এক স্নেহের বোন মোবাইলে নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর কথোপকথন পোস্ট করেছে। করো কি খুব ঠান্ডা, তুমি- ভীষণ ঠান্ডা, কম্বল জড়িয়ে ঘুমিয়ে থাকো, হ্যাঁ বেশ ঠান্ডা, দেখা হবে কবে! খুব ঠান্ডা... ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি আর কী বলি! এ লেখা লিখছিও তো লেপের মধ্যে পা ঢুকিয়ে। আমাদের ব্রিটিশ মালিকদের দস্তুর নাকি শীতকালে দেখা হলেই আগে গুড মর্নিং না বলে ঠান্ডার হাল-হকিকত নিয়ে খোঁজখবর নেওয়া।
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট র্যাডক্লিফ সাহেব অনেক কিছু পারলেও, দেশকে টুকরো করে ভাগ করলেও দুপাড়ের শীতকে নিয়ন্ত্রণ করতে যে ব্যর্থ তা দুই বঙ্গের বাসিন্দারাই মানবেন। যার সঙ্গেই দেখা হোক, কাঁপতে কাঁপতে বলছে, ঠান্ডা কিন্তু জবর পড়েছে। এও এক সমস্যা। শীত পড়লেও দোষ, না পড়লেও কবিতায় লেখা হবে, ‘শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা!’
পশ্চিমবঙ্গের সামনের পঞ্চায়েত নির্বাচনে রিগিং হবে কি হবে না সেসব আলোচনা ছেড়ে সবাই শুধু তার জেলায় কত ঠান্ডা পড়েছে তা নিয়ে মশগুল। এরমধ্যে কোথাও যেন একটু-আধটু আকছাআকছিও পরস্পরের মধ্যে আছে তাও একটু লক্ষ করলেই বোঝা যায়। বর্ধমান ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, শ্রীনিকেতন ৮.৪, আসানসোল ৯, কৃষ্ণনগর ৭, পুরুলিয়া ৬। সবমিলিয়ে ঠান্ডা লড়াইয়ে দক্ষিণবঙ্গ উত্তরবঙ্গকে হারিয়ে দিতে পেরেছে, লেপের তলায় বসে এটুকু খবরেই দক্ষিণ গর্বিত।
শীতকাল নিয়ে যতই লিখি না কেন, মনে হয় কিছুই বলা গেল না। পর্বের পর পর্ব লিখে ফেলা যায় এই রুক্ষ, ধূসর, কুয়াশাঢাকা দিনগুলো নিয়ে। শীতকাল নিয়ে লিখতে বসলেই নিমেষে কেমন ছেলেবেলা ফিরে আসে। পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট, সন্ধ্যেবেলায় ব্যাটমিন্টন এখনো বড় মিস করি। শীত পড়তে না পড়তেই বাড়ির লেপকম্বল রোদ্দুরে দেওয়া, পুরনো হয়ে গেলে ধুনুরি ডেকে মেরামত করা বা নতুন বানানো, এ ছিল শুধু আমাদের নয়, মধ্যবিত্ত পরিবারের দস্তুর। পাড়ায় ধুনুরিওয়ালার হাতের অদ্ভুত যন্ত্রের টুংটাং শব্দ আর লেপ-তোশক বানাবেন বলে হাঁক দেওয়া চোখ বুজলে এখনো শুনতে পাই। আর শুনতে পাই ‘পাটালি গুড় লাগবে ও জয়নগরের মোয়া লেবেন’ ডাক দিতে দিতে ফেরিওয়ালার পাড়া মাত করা মধুর আওয়াজ।
ইদানীং পশ্চিমবঙ্গের সিরিয়ালে সিঁদুরের রমরমা বাড়ছে। হঠাৎ হাত লেগে কোনো মহিলার কপালে সিঁদুর পড়ে গেলেও তাকে বিয়ে না করার মতো ‘অপরাধ’ আর নেই। আবার রোজ লাথিঝাঁটা খাওয়া স্ত্রীর একচিলতে সিঁদুরের সৌজন্যে গভীর কোমায় চলে যাওয়া আর দুশ্চরিত্র স্বামীও দিব্যি বেডে উঠে নিজের ভুল স্বীকার করে স্ত্রীকে প্রেম নিবেদন করেন। এমন সিঁদুরের রমরমার কালেও সেই চীনা সিঁদুর নেবেন গো ডাক শুনতে পাই না। হতে পারে চীন-ভারতের সম্পর্কের জটিলতা একটা কারণ।
শীতকালে কমলালেবু না খাওয়া বাঙালি পাওয়া কঠিন। আমাদের শহরে ভালো, মিষ্টি কমলালেবু মানেই দার্জিলিং। নাগপুরের কমলালেবু সস্তা, বিক্রি হয় বেশি। কিন্তু স্বাদ হয় না। টক। নিন্দুকেরা কেউ কেউ বলেন, নাগপুরে আরএসএসের সদর দপ্তর। সেখানকার কোনো জিনিস মিষ্টি হবে না তাই তো স্বাভাবিক। বেচারা লেবুও খারাপের সঙ্গে কেমন টকে গেল, ভাবতে কষ্ট হয়।
ছোটবেলায় শীতকালে চিড়িয়াখানা যাওয়া ছিল কম্পালসারি। বাঘ, সিংহ, হাতি, জিরাফ দেখার পাশাপাশি যাব যাব বলে সকাল থেকে তোড়জোড় করারও আলাদা আনন্দ ছিল। শীতের রোদে হাঁটাহাঁটি করে ক্লান্ত আমরা চাদর বিছিয়ে খেতে বসতাম লুচি, আলুর দম, নলেনগুড়ের সন্দেশ, আহা স্বাদ যেন আজও মুখে লেগে আছে। মা, বাবা কবেই চলে গেছেন। আমিই দুনিয়া ছেড়ে যাব যাব করছি। অথচ শীতকাল এলেই কেমন যেন মায়ের ওমের স্পর্শ আর বাবার হাঁকডাক টের পাই।
সেদিন এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম শীতে কী ভালো লাগে! বলল, মিঠে রোদে বসে বই পড়া, লেপের তলায় অনেকক্ষণ ল্যাদ খাওয়া, হাফ বয়েল ডিম সেদ্ধ ইত্যাদি বলে আমার কাছে জানতে চাইল, তোমার! আমি বললাম, যা আগেও বলেছি, কাছেপিঠে গেলে খেজুরের রস, রোদে বসে পাটালি খাওয়া, কড়াইশুঁটির কচুড়ি, ফুলকপির শিঙ্গাড়া, নলেনগুড়ের সন্দেশ ইত্যাদি। পিঠে পায়েস দুজনেই ভালোবাসি। এই প্রসঙ্গে অন্য একটি গল্প না বলে পারছি না। এ ঘটনা শুনেছিলাম, আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু অমিতাভ চন্দ্রের কাছে। অমিতাভ নাকি কোনো এক সরকারি অফিসে গিয়ে দেখে কেউ কোনো কাজ করছে না। শীতে জবুথবু হয়ে চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছে সবাই। বিষয় সেই শীতকাল। পরস্পর পরস্পরের কাছে জানতে চাইছে, এই সময় কার কী ভালো লাগে! এক একজন এক একরকম উত্তর দিচ্ছেন। কারও পছন্দ ঝোলাগুড়, রুটি, কারও আবার পেঁয়াজি, আলুর চপ, কেউ আবার রাত হলে দু-এক পাত্তর হলে বেশ হয় বলে আসর জমাচ্ছেন। একজন মাঝবয়সী ভদ্রলোক শুধু একমনে কাজ করে যাচ্ছেন। অন্য সবার তা সহ্য হলো না। একসঙ্গে সবাই চেঁচিয়ে উঠে বলতে লাগল, ও দাদা, ও ভট্টাচার্য দা আপনি কিছু বলুন। তিনি নিরুত্তর। অনেক চেঁচামেচি করার পরে কম্পিউটার থেকে সামান্য মুখ তুলে নির্বিকার গলায় তিনি জানিয়ে দিলেন মুড়ি দিয়া নারীকোল। অমিতাভ অকালে চলে গেছে। এখনো গল্পটা মনে আছে।
শীতকাল এলেই সার্কাস দেখা রেওয়াজ ছিল। কত রকমের সার্কাস, অলিম্পিক, পানামা, ভারত, গ্রেট ইস্টার্ন আরও কত। গ্যালারির টিকিট ছিল সস্তা। সামনের চেয়ারের দাম বেশি। আমরা গ্যালারিতে বসেই আনন্দ পেতাম। কত রকমের খেলা। তখন তো আর পশুক্লেষ নিবারণী সমিতি ছিল না। ফলে বাঘ, সিংহ, হাতির খেলা নিয়ে কোথাও কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। বাঘের হুঙ্কার শুনে ভয় লাগলেও মজাও পেতাম। হাতি ছোট্ট একটা টুলে বসে ট্রেনারের কথায় উঠত-বসত বাধ্য ছেলের মতো। মুগ্ধ হয়ে দেখতাম, ট্র্যাপিজের খেলা। সুন্দরী মেয়েরা ঝলমলে ড্রেস পরে দারুণ দারুণ অ্যাডভেঞ্চার করত। তবে সব থেকে মজা পেতাম জোকারদের কান্ড দেখে। বড় হয়ে জেনেছি, ওরাই ছিল সার্কাসের সম্পদ। ওদের দেওয়া ট্রেনিংয়ে এই ট্র্যাপিজ সুন্দরীরা অমন কসরত শিখতে পারত। একটু বড় হয়ে এও জেনেছিলাম, জোকাররা লোক হাসায়, কিন্তু তাদের জীবনের অনেক অন্ধকার ওই হাসিঠাট্টায় চেপে রাখে। রাজ কাপুরের ‘মেরা নাম জোকার’ সিনেমাতে এই বাইরে হাসি ভেতরে কান্না ব্যাপারটা সুন্দরভাবে ধরা আছে। জোকারদের মনে হতো পৃথিবীর সেরা বিদূষক।
এখন এই পরিণত বয়সে পৌঁছে বুঝি, আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের মতো বড় বিদূষক হয় না। জোকারেরা পেটের দায়ে নানা রকমের কসরত করে উল্টোপাল্টা বকে লোক হাসান। আর আমাদের দেশনেতারা জোকার সাজেন নিজেদের স্বার্থে। তাদের দেখে, কথা শুনেও জনতা মজা করেন, আড়ালে হাসেন। আত্মগর্বী রাজনীতির কারবারিরা ক্ষমতার দম্ভে তা টের পান না।
লেখক : ভারতীয় প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা ও লেখক [email protected]
ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়কের ফুটপাত ও সড়ক দ্বীপে ভাসমান মানুষের বসবাস ও ভিড় যেন বেড়েই চলেছে। তাদের অনেকেরই জীবনযাপনের ধরন দেখে মনে হয় তারা কেউ কেউ পরিবার নিয়ে বসবাস করছে। তাদের কেউ হয়তো মুটে-মজুর, কেউ রিকশাচালক, কেউ-বা ফুটপাতের দোকানদার যাদের কোনো রকমে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। রাস্তা ও ফুটপাত এমন জনগোষ্ঠীর শুধুমাত্র রাতযাপনের জায়গা না, সেটাই যেন তার ঘরবাড়ি, আবাস। যদিও এই আবাস যে এতটুকুও নিরাপদ নয় তা সহজেই অনুমেয় এবং একান্ত নিরুপায় হয়েই বসবাস। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা ইত্যাদির প্রকোপ যেন তার গা-সওয়া অধিকন্তু ঢাকা শহরের বিখ্যাত মশার উৎপাত সহ্য করা, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার হুমকি এবং চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্যে তারা যে কতটুকু অসহায় তা সহজেই অনুমেয়। কে নেই ফুটপাতে বৃদ্ধ-যুবক, নারী-পুরুষ, আরও আছে বেশ কিছু ভবিষ্যৎ না জানা কিশোর-কিশোরীরা। ফুটপাতে থাকা এই কিশোরদের প্রায়ই ছোট ছোট দলে অবস্থান ও ঘুরতে ফিরতে দেখা যায়। এই শিশু-কিশোররা যেমন পারিবারিক আবহ থেকে দূরে এবং একই সঙ্গে বঞ্চিত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো অন্যান্য মৌলিক অধিকার থেকে। অন্যদিকে সড়ক দ্বীপে মাদক গ্রহণরত অবস্থায় যুবক তো বটেই, কিশোর বয়সী মাদকাসক্তদের উপস্থিতিও বিচ্ছিন্ন ঘটনা না বরং স্থান-কাল-জায়গা বিশেষে যেন গা-সওয়া।
ঢাকা শহরের এই চিত্র অনেককেই আতঙ্কিত করবে সেটাই স্বাভাবিক। জনশুমারি ২০২২ অনুযায়ী ঢাকা শহরে বস্তিবাসী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ৯ লাখ এবং ভাসমান জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। সরকারের বাজেট ডকুমেন্ট বলছে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু। যদিও বাংলাদেশে পথশিশু নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, এই সংখ্যাটা কমবেশি এক মিলিয়ন এবং এর ৭৫ শতাংশই ঢাকায় বসবাস করে। কোনো কোনো সংগঠনের তথ্য মতে, ঢাকা শহরের পথশিশুদের প্রায় ৮৫ শতাংশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাদকাসক্ত। এর মধ্য দিয়েই বোঝা যায় পরিস্থিতি কতটুকু আশঙ্কার!
আমরা এখন উন্নয়নের মহাসড়কে, নিঃসন্দেহে সময়ের হাত ধরে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থায় পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু ওপরের চিত্র এটাই প্রমাণ করে উন্নয়নকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করার জন্য এখনো অনেক কিছু বাকি আছে। এখনো উন্নয়নের প্রচেষ্টায় সমাজের একটা বড় অংশ প্রবেশ করতে পারছে না বা বর্তমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো তাদের যুক্ত করতে পারছে না। মানুষ ইচ্ছা করে ফুটপাতে থাকে না যতক্ষণ না পর্যন্ত সে বাধ্য হয়। আবার রাস্তায় মূল্যবান কৈশোরের অপচয় এবং তা মানবসম্পদ তৈরিতে বিনিয়োগ করতে না পারার পেছনে কারণসমূহ কী? কেনই-বা আমরা তাদের জন্য শিক্ষার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করতে পারছি না? কেনই-বা একজন কিশোর ধীরে ধীরে মাদকে আসক্ত হয়ে উঠছে এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছে ও নিজের সম্ভাবনাগুলো বিসর্জন দিচ্ছে। এখন এই প্রশ্নগুলো করার সময় এসেছে কারণ অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ নির্মাণ করা না গেলে সেই সমাজে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা কোনোটাই থাকার সম্ভাবনা নেই এবং সেটাই কোনো একটা জাতিকে অগ্রগতির রাস্তা থেকে টেনে ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট।
আমরা জানি, যে কোনো জনগোষ্ঠীর একটি নির্দিষ্ট অংশকে সহযোগিতা করতে হয়। সেই হারটা হতে পারে দশ শতাংশ বা তার আশপাশে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য, তবে হারটা অনুমেয়ভাবে বেশি। বিবিএস-এর তথ্য মতে, ২০১৮-১৯ সালে বাংলাদেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর হার ছিল ২০.৫ শতাংশ এবং অতিদরিদ্রের হার ১০.৫ শতাংশ। সে হিসাবে নতুন জনশুমারির চূড়ান্ত ফলাফল অনুযায়ী দেশের প্রায় পৌনে দুই কোটি মানুষ অতিদরিদ্র। সংখ্যার হিসাবে অনেক বড়। তথাপি মাঝের কারোনার দুই বছরে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক ভিত্তি ক্ষয়িষ্ণু করেছে, অনেক মানুষ তথাতথিত দারিদ্র্যসীমার নিচে নামতে বাধ্য হয়েছে, আবার করোনা-পরবর্তী সাম্প্রতিক সময়ে যুদ্ধজনিত উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির হার বেশ কিছু মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে ঠেলে দিচ্ছে। ভাসমান মানুষের এই উপস্থিতি কি সেটারই ইঙ্গিত দিচ্ছে? সমাজবিজ্ঞানী ও অর্থনীতিবিদদের এ নিয়ে গবেষণা করার প্রয়োজন আছে। সরকারি তথ্য মতে সারা দেশে ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার রয়েছে। অনুমেয় এই গৃহহীন পরিবারগুলোই শহরের ভাসমান জনগোষ্ঠীর প্রধানতম অংশ; পাশাপাশি নদীভাঙন, গ্রামীণ অর্থনীতিতে কর্মসংস্থানের অভাব ও নানা ধরনের অনিশ্চয়তা তাদের এই অবস্থায় ঠেলে দিচ্ছে।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর এই অনিশ্চয়তাসমূহ দূর করা দরকার। মেগা প্রকল্পসমূহ বাদ দিলেও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বর্তমান সরকারের সবচেয়ে প্রশংসনীয় উদ্যোগ হচ্ছে ভূমিহীনদের জন্য গৃহনির্মাণ প্রকল্প। তথ্য মতে মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকার ইতিমধ্যে প্রায় ১ লাখ ৮৫ হাজার গৃহহীন পরিবারকে ঘর বিতরণ করেছে। এই ধরনের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় এবং সাধারণ জনগণের সঙ্গে রাষ্ট্রের একটা আস্থার সম্পর্ক তৈরি করেছে। তবে ঘর বিতরণই হয়তো সবক্ষেত্রে সবধরনের প্রান্তিকতাকে দূর করতে পারছে না। তাই এই ধরনের উদ্যোগ যেমন আরও গ্রহণ করা দরকার এবং একইসঙ্গে আরও কী কী উপায়ে এই প্রান্তিকতাকে ধারাবাহিকভাবে দূর করা যায় তা বিবেচনায় নিয়ে আসতে হবে।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সক্ষমতাই হচ্ছে অর্থনীতির প্রকৃত শক্তি, এই অংশকে যত বেশি কর্মক্ষম করা যায়, দক্ষ করা যায় ততই পরিবর্তনের ভিত মজবুত করা সম্ভব। চুইয়ে পরা অর্থনীতির আকার বেশি হলেও তা উন্নয়নের বুদবুদ তৈরি করতে পারে কিন্তু বিবেচনায় রাখতে হবে, বুদবুদ ক্ষণস্থায়ী এবং দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হয় না। আমাদের দেশে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সহযোগিতা ও জীবনমান উন্নয়নে ২০২২-২৩ বাজেটে ১১৫টি কর্মসূচিকে সামাজিক সুরক্ষামূলক কার্যক্রমের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অনেক সময় এই প্রকল্পগুলো গৎবাঁধা, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে শুধুমাত্র সাহায্য গ্রহণকারী হিসেবে বিবেচনা করে। কিন্তু সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি কতটুকু ভাসমান হতে বাধ্য হওয়া জনগোষ্ঠীকে উদ্দেশ্য করে পরিকল্পনা করা হয়েছে সেটাও একটা প্রশ্নের বিষয়। সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে শুধু সাহায্য গ্রহণকারী হিসেবে দেখলেই চলবে না, এর জন্য ঐ জনগোষ্ঠীর নির্দিষ্ট পরিস্থিতি ও চাহিদা অনুধাবন করে তাদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। আর কর্মসূচি প্রণয়নের ক্ষেত্রে জীবন ধারণকে নিছক সাহায্য করা থেকে বেরিয়ে এসে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে অবদান রাখার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। আর এই বিষয়গুলোই রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে খতিয়ে দেখা দরকার। কাউকে পেছনে ফেলে রাখা যাবে না। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার যে মূলনীতি তা আমাদের দেশে শুধুমাত্র অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্যই দরকার না, বরঞ্চ আরও বেশি দরকার সামাজিক স্থিতিশীলতা বাজায় রাখার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ টেকসই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য।
লেখক: উন্নয়নকর্মী
আধুনিক ধারণায় কারাগারকে শুধু শাস্তির জায়গা হিসেবে না রেখে বন্দিদের ‘সংশোধনাগার’ হিসেবে দেখা হয়। শাস্তি ভোগ করে বেরিয়ে বন্দিরা যাতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে, সে জন্য আছে নানা ব্যবস্থা। এরপরও সেখানে ঢোকার পর যদি কেউ জঙ্গিবাদে আরও বেশি জড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায় সেটা উদ্বেগের। অন্যদিকে, অভিযোগ রয়েছে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ থাকার পরও দীর্ঘদিন ধরেই দেশের বিভিন্ন কারাগারে মোবাইল ব্যবহার করছে হাজতিরা। এমনকি সেলের ভেতরেই নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা কথা বলছে বাইরে থাকা অন্য সহযোগীদের সঙ্গে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, সর্বশেষ ঢাকার আদালত থেকে ছিনতাই ঘটনার আগের দিনও কারাগারে ছিনতাই হওয়া জঙ্গিদের সঙ্গে কথোপকথন হয়েছে। কখন তাদের আদালতে নেওয়া হবে সেই সময়ও জেনে যায় সহযোগীরা। পাশাপাশি জামিনপ্রাপ্ত জঙ্গিদের অনেকেই আবার উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছে বা কেউ কেউ আত্মগোপনে চলে যাচ্ছে বলেও খবর প্রকাশিত হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে রবিবার দেশ রূপান্তরে ‘কারাগারের জঙ্গিদের মামাবাড়ির আবদার’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি জঙ্গিরা বিক্ষোভ করেছেন। বন্দি জঙ্গিরা নিজেদের চাহিদামতো কম্বল সরবরাহ, স্বজনদের সঙ্গে প্রতি সপ্তাহে এক দিন সাক্ষাৎ ও ফোনে কথা বলার দাবি জানায়। পাশাপাশি তারা সাধারণ বন্দিদের মতো ঘোরাফেরা করার দাবি করে। প্রশ্ন হলো, যেখানে কারাগারে এ ধরনের বন্দিদের আলাদা রাখার কথা; সেখানে তারা সংগঠিত হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শনের সুযোগ পেল কীভাবে! অভিযোগ রয়েছে, কারাগারে জঙ্গিদের ওপর সেভাবে নজরদারি নেই। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কারাগারকে ‘প্রশিক্ষণ সেন্টারে’ পরিণত করেছে জঙ্গিরা। সংবাদপত্রেও এ নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে জঙ্গি বন্দিরা সাধারণ কয়েদিদের মধ্যে ঘোরাফেরা তো দূরের কথা নিজেদের মধ্যেও যেন সলাপরামর্শ করতে না পারে সেদিকে সতর্ক হওয়া উচিত। আমরা চাই না সাধারণ কয়েদি হিসেবে কারাগারে ঢুকে কেউ জঙ্গি হয়ে বেরিয়ে আসুক।
অন্যদিকে, নিষিদ্ধ থাকার পরও দেশের সবক’টি কারাগারেই দেদার মোবাইল ফোনে কথা বলছে বন্দিরা। অপরাধী ও জঙ্গিরা কারাগারের ভেতর থেকেই তথ্য ফাঁস করে দিচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশিরভাগ কারাগারেই জ্যামার থেকেও না থাকার মতো অবস্থা। অভিযোগ উঠেছে, টাকার বিনিময়ে জ্যামারগুলো বিকল করে রেখেছে অসাধু কারারক্ষীরা। ওই সব জ্যামার দ্রুত সচল করা ও নতুন জ্যামার বসানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। অভিযোগের পর কিছুদিন ঠিকমতো সবকিছু চললেও ধীরে ধীরে তা ফিরে যায় আগের অবস্থায়। কিন্তু ঢাকা কেন্দ্রীয় ও কাশিমপুরের চার কারাগারে কীভাবে বন্দিরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর সঙ্গে জড়িত কারারক্ষীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কারাগারের অধিকাংশ দুর্ঘটনার সঙ্গে একশ্রেণির অসাধু কারা কর্মকর্তা-কর্মচারী, কর্তব্যরত পুলিশের কিছু সদস্য জড়িত থাকে। বন্দি আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু পুলিশ সদস্য ওই সময় বন্দিদের মাদক, মোবাইল ফোন ও বিভিন্ন অবৈধ দ্রব্য দিয়ে থাকে বলে তারা তথ্য পেয়েছেন। কারাগারে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে অপরাধীরা তাদের সহযোগীদের আগাম তথ্য পাচার করে দিয়ে থাকে, এমন তথ্য পাওয়া গেছে। কারা কর্তৃপক্ষের এই অনিয়ম, অসততার সুযোগ নিচ্ছে কারাবন্দি জঙ্গিরা। পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে জঙ্গির সংখ্যা প্রায় সাত হাজারের বেশি। জামিনপ্রাপ্ত জঙ্গিদের অনেকেই আবার উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছে। আবার কেউ কেউ আত্মগোপনে চলে যাচ্ছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার সর্বশেষ এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যোগাযোগের জন্য জেলখানাকেই আপাতত নিরাপদ জায়গা মনে করছে জঙ্গিরা। জামিনে বের হয়ে আসা জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে করা প্রতিবেদনেও এর সত্যতা পাওয়া গিয়েছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, ‘বাইরে জঙ্গিরা দুর্বল হয়ে পড়লেও কারাবন্দি জঙ্গিরা বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে। কারাগারে জঙ্গিদের জন্য আলাদা সেল না থাকায় এ সমস্যা তৈরি হচ্ছে। জঙ্গিরা একত্রিত হয়ে নতুন নতুন পরিকল্পনার সুযোগ পাচ্ছে।’ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি প্রচারণা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাফল্যের দাবির কথা আমরা শুনে আসছি। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, সরকার জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে পেরেছে। বিভিন্ন ধর্মীয় জঙ্গিগোষ্ঠী নাম পরিবর্তন করে, কৌশল পরিবর্তন করে তৎপরতা চালিয়ে আসছে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কিশোর-তরুণদের জঙ্গি দলে নাম লিখিয়ে নিরুদ্দেশ হওয়া, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সন্ধান ও গ্রেপ্তারের খবর নিয়মিতই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে আসছে। ফলে সতর্কতা ও পদক্ষেপ জরুরি।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
অপারেশন ছাড়াই সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় আব্দুল মোতালেব হোসেন (৩৫) নামের এক মানসিক রোগীর পেট থেকে ১৫টি কলম বের করেছেন চিকিৎসক।
এ কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক। তাদের এই সাফল্যে রীতিমত হৈচৈ পড়ে গেছে নেট দুনিয়ায়।
এ বিষয়ে আব্দুল মোতালেবের মা লাইলী খাতুন বলেন, তার ছেলে মোতালেব খুব ভাল ছাত্র ছিল। ২টি লেটার মার্ক নিয়ে এসএসসি পাস করে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এরপর খারাপ সঙ্গদোষে সে আস্তে আস্তে মাদকাসক্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এরপর থেকে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ানোর সময় কুড়িয়ে পাওয়া কলমগুলি খাদ্য মনে করে খেয়ে ফেলে। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। গত এক বছর ধরে তার শরীরে জ্বর ও পেটে ব্যথা শুরু হয়। অনেক চিকিৎসার পরও তা ভালো হচ্ছিল না। অবশেষে গত ১৬ মে তাকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। এখানে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার অসুখের কারণ ধরা পড়ে। পরে চিকিৎসকরা তার পেটের ভিতর থেকে বিনা অপারেশনে কলমগুলো বের করে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মোতালেব হোসেন প্রথমে পেটে ব্যথা নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করেও পেটে কি সমস্যা সেটা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। ফলে রোগীটিকে আমার কাছে রেফার্ড করেন। এন্ডোস্কপির মাধ্যমে পরীক্ষা করে তার পেটের ভেতর ১৫টি কলম দেখে প্রথমে চমকে যাই। এটা কীভাবে সম্ভব। পরে এন্ডোস্কপির মাধ্যমেই অপারেশন ছাড়াই আমরা কলমগুলো বের করার সিদ্ধান্ত নেই। তিনি আরও বলেন, কাজটি আমাদের জন্য দারুণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কলমগুলো একে একে পাকস্থলীতে সেট হয়ে গিয়েছিল। কলমগুলো বের করতে আমাদের প্রথমে মাথায় চিন্তা ছিল যেন, কলমগুলোর কারণে কোনোভাবেই শ্বাসনালিতে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ না হয়ে যায়। এছাড়াও রক্তক্ষরণের একটা চিন্তাও মাথায় ছিল। অতঃপর প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আমরা কলমগুলো বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হই।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এন্ডোস্কপি করা ব্যক্তি মানসিক অসুস্থ হওয়ায় তার কলম খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এভাবে খেতে খেতে সে অনেক কলম খেয়ে ফেলে। কলমগুলো তার পেটের মধ্যে জমা হয়েছিল। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তার পেটের ভিতর ১৫টি কলম থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হই। এবং অপারেশন ছাড়াই এন্ডোস্কপির মাধ্যমে তার পেটের ভেতর থেকে একে একে ১৫টি আস্ত কলম বের করে আনি। বর্তমানে রোগীটি সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সুস্থ আছেন।
তিনি আরও বলেন, এন্ডোস্কপির মাধ্যমে মানুষের পেট থেকে কলম বের করার মতো ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। তাও আবার একটি-দু‘টি নয় ১৫টি কলম। এর আগে ঢাকা মেডিকেলে এক ব্যক্তির পেট থেকে এন্ডোসকপির মাধ্যমে একটি মোবাইল বের করেছেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এমন সাফল্য এটাই প্রথম। আমরা অত্যাধুনিক ভিডিও এন্ডোস্কপি মেশিনের মাধ্যমে এবং আমাদের দক্ষ ডাক্তার দ্বারা অপারেশন ছাড়াই শুধু এন্ডোস্কপির মাধ্যমে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পেট থেকে ১৫টি কলম বের করে আনতে সক্ষম হয়েছি। শুধু এটাই নয়, আমরা বিনা অপারেশনে পেটের পাথর, কিডনিতে পাথর থেকে শুরু করে অনেক কিছুই অপারেশন ছাড়াই সেগুলো অপসারণের কাজ করে যাচ্ছি।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।