
ঔপনিবেশিক যুগ শুরুর বহু আগে থেকেই ভারতবর্ষ সম্পর্কে ইউরোপের কৌতূহল আর প্রধান বিস্ময় ছিল তার জাদু-মন্ত্র আর সাধু-সন্ন্যাসীর বিষয়ে। ইংরজি সাহিত্যে এ বিষয়ে নানা আখ্যান গড়ে উঠেছে। ভাগ্য, তন্দ্র, টোটকা, বশীকরণ, জাদুটোনা, ব্ল্যাক ম্যাজিক বা কালাজাদু নিয়ে তারা গবেষণাও করেছে। ফকির, দরবেশ, সাধু-সন্ন্যাসীদের মনও বুঝতে চেয়েছে। বঙ্গ-ভারতীয়দের মানস গঠন সম্পর্কে চেনাশোনা, জানা-বোঝাটা দরকার ছিল শাসন-শোষণের জন্য। ‘মাঙ্কিজ প’ বা ‘বানের থাবা’ নামের ইংরেজি গল্পে গা ছমছম করা চিত্তশিহরণ জাগানো আখ্যান পাওয়া যায়। ভারতবর্ষীয়দের জাদু-মন্ত্র বিশ্বাসের এ এক অপূর্ব গল্প। জনৈক ভারতীয় জাদুকরের কাছ থেকে পাওয়া মন্ত্রপূত বানরের থাবার শক্তিতে দুর্ঘটনায় নিহত পুত্রহারা এক ইংরেজ মহিলার মৃতসন্তানের পুনর্জীবন লাভ করে ফেরার লোমহর্ষক ঘটনা রয়েছে এই গল্পে।
এই বশীকরণ আর কালাজাদুই যে উপনিবেশ শাসনের আসল শক্তি, ইংরেজরা তা বুঝেছিল। যখন বুঝতে পারে আর শাসন করা যাবে না তখনই ধর্ম, ঈশ্বর, দেবদেবীর সহায়তায় দেশ ভেঙে যায়। হিন্দু-মুসলমান লাখো-কোটি মানুষ হারায় তাদের জন্মভূমি। হারায় আইডেনটিটি। উদ্বাস্তু হয়। আজ ৭০ বছর পর আবার তারা সেই ব্ল্যাক ম্যাজিকে পতিত। বশীকরণ বা কালাজাদু রাজনীতিতে কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা ইংরেজরা শিখিয়ে দিয়ে যায় শাসিত ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ-ইয়াঙ্গুন আর শ্রীলঙ্কাকে। বার্মা বা ইয়াঙ্গুনের রোহিঙ্গা, শ্রীলঙ্কার তামিল, ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশের জাতিগত আর ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা টের পাচ্ছে কালাজাদু কী। কেবল তারাই নয়, ওইসব দেশের জনগণও আজ আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় মহাবশীকরণের শিকার। এতো গেল রাজনীতির কথা, সমাজের ভেতরটা কেমন?
আশ্চর্যের বিষয় এই, আধুনিক বিজ্ঞান আর যুক্তিবাদ-বুদ্ধিবাদের উৎকর্ষের এই যুগে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে কুসংস্কার, অন্ধ বিশ্বাস আর জাদুটোনার প্রভাব। পত্রপত্রিকা আর বিভিন্ন চ্যানেলে বিজ্ঞানের নামে এদের উপদ্রব এতই বেড়ে গেছে যে, মনে হবে অপশক্তির ঘোর অন্ধকার নেমে এসেছে মানুষের সমাজে। মানুষ সভ্যতার আলো থেকে দ্রুত অন্ধকারে পালিয়ে বাঁচতে চাইছে। কেন এমন হলো? মানুষের এমন পশ্চাৎপদতার রহস্য কী? আসলে আধুনিক মানুষ, বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের ভরসা ছিল সমাজ বদল বা সমাজতন্ত্র। সারা বিশে^ সমাজতন্ত্রের পতন আর অবক্ষয়ের পর সভ্যতার আর এগোবার সুযোগ হলো না। চরম হতাশায় ডুবে যাচ্ছে মানুষ। ব্যক্তিমানুষের জাগতিক দুঃখ, কষ্ট আর দুর্ভোগ এতই অপ্রতিরোধ্য যে, ব্যর্থ মানুষ হতাশার অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে। চরম হতাশায় পতিত মানুষ বাধ্য হচ্ছে অন্ধবিশ্বাসে ডুবে যেতে। ঘরে-বাইরে কোথাও শান্তি নেই মানুষের। কোথাও তার ইচ্ছা পূরণ হচ্ছে না। তাই ঈশ্বর, ধর্ম, তন্ত্র-মন্ত্র জাদুটোনা বশীকরণে বিশ্বাসী হয়ে উঠছে। মানুষের এই দুর্বলতার খবরটা জানে প্রতারকরা। অসংখ্য সমস্যায় জর্জরিত মানুষ হতাশ হয়ে তাদের শিকারে পরিণত হচ্ছে। ওরা আসছে ছদ্মবেশে। পীরবাবা, সাধুবাবা, মহাতান্ত্রিক, কামাক্ষ্যা সিদ্ধ, তান্ত্রিক মহারাজ, দৈবশক্তির সাধক ইত্যাদি পদবি ধারণ করে তারা। আশ্চর্য এই, অসংখ্য বেকার তরুণী বা অর্থলোভী নারী পর্যন্ত এই কালাজাদু পেশায় নেমে পড়েছে। এদের পদবি মহাসাধিকা, মাতা কামাক্ষ্যানী, মা-খনা, জ্যোতিষী, তন্দ্রসাধিকা, প্রেতাত্মা বশীকরণ সিদ্ধা ইত্যাদি। সুন্দরী, যুবতী হলে তো কথাই নেই। সমস্যা সামধানের জন্য ছুটে যাচ্ছে মানুষ। অভিজ্ঞরা বলছে ওরা নাকি সাক্ষাৎ স্বর্গের দেবি।
কোন কোন সমস্যার সমাধান দেন এসব তান্ত্রিকরা? ব্যবসায় সাফল্য, চাকরি, বিদেশ ভ্রমণ, প্রেমে সফফতা, মামলায় জেতা, সন্তানের শিক্ষায় অমনোযোগিতা, স্ত্রী বা স্বামীকে আজ্ঞাবাহ বানানো ইত্যাদি। এ ধরনের তান্ত্রিক বা বশীকরণ বিদ্যার ট্রেনিং সেন্টারও আছে। কীভাবে মানুষকে হিপ্টোনাইজ করতে হয়, কীভাবে কোন পোশাকে শ্রেণি হিসেবে মানুষকে বশে আনতে হয় সেসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যেমন ভূতে বা জিনে পাওয়া নারীদের বেলায় প্রথমে তন্ত্র-মন্ত্রী ঝাড়ফুঁক। তাতে কাজ না হলে ঝাঁটা দিয়ে পেটানো। এর ফলে ভূত পালায় ঠিকই, কিন্তু সঙ্গে নেয় রোগীর প্রাণ।
এই যে তন্ত্র-মন্ত্র-বশীকরণ রহস্য তার অন্ধকারেই লুকিয়ে রয়েছে ধর্মীয় মৌলবাদী রাজনীতির শেকড়-বাকড়। তুকতাক, বশীকরণে জনগণকে নির্জীব করে রাখো, কাজ না হলে বাহুবল প্রদর্শন করো, হামলা-মামলায় ফেলে দাও। তাতেই মানুষের মাথা থেকে গণতন্ত্র, সাম্য, নাগরিক অধিকার, ন্যায়বিচার আর আইনের শাসনের দাবি-দাওয়ার ভূত পালিয়ে যাবে। শাসকশ্রেণি চিরকালই চায় আনুগত্য। বশ মানা। বাঘের বাচ্চাকে খাঁচায় পুষে মাংসের বদলে ঘাস খাওয়া শিক্ষা দিলে সে ভুলে যায় পশু শিকার, খাদ্যপ্রণালীও ভুলে যায়। বাঘশিশু বড় হয়ে ভীতু ছাগল হয়ে যায়। শাসকরা তাই চায়। কালাজাদু দিয়ে মানুষকে বশে রাখে তারা, ভোট আদায় করে। রাজা-রানীর নামে জয়ধ্বনি দেয়।
মনোবিজ্ঞানীরা দেখেছেন মানুষের মধ্যে দ্বৈতসত্তা বিরাজ করে। একটি তান্ত্রিক সত্তা, অন্যটি বিজ্ঞান সত্তা। অব্যাহত বিজ্ঞান বা সঠিক জিজ্ঞাসার ভেতর দিয়ে বিকশিত হলে মানুষ সংস্কারমুক্ত হতে পারে। হতে পারে যুক্তিবাদী। এর ফলে তার বিপরীত সত্তা, ওই যে তান্ত্রিক সত্তার মৃত্যু ঘটে। সে হয়ে ওঠে প্রকৃত মানুষ। শাসকের প্রতি অন্ধ আনুগত্য, অপরাজনীতির প্রতি বিশ্বাস, ভয়-ভীতিকে জয় করে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। তন্ত্র-মন্ত্রের জগৎ এমন প্রতিবাদী মানুষ চায় না। এমন মানুষ তার প্রতিপক্ষ।
বিভিন্ন কারণে শরীর দুর্বল বা প্রতিরোধক্ষমতা কমে গেলে নানারকম রোগ শরীরে প্রবেশ করে। হতাশাও এমনি একটি মনোরোগ। যারা হতাশায় আক্রান্ত হয় তারা বিজ্ঞানমনস্কতা বা যুক্তিবাদ হারায়। হয়ে ওঠে ভাগ্য বিশ্বাসী। তাদের মন আচ্ছন্ন করে ফেলে অন্ধ বিশ্বাস আর জাদুটোনার রহস্যময় দুনিয়া। আজও আমি ভুলিনি সেই দৃশ্য। ষাটের দশকের গোড়ার দিকে আমি ঢাকার জগন্নাথ কলেজের ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্র ছিলাম। হঠাৎ একদিন দেখতে পাই আমাদের ইংরেজির একজন প্রিয় শিক্ষক ভিক্টোরিয়া পার্কের পশ্চিম পাশে রাস্তার ওপর হাত পেতে বসে আছেন। সামনে বসে টিয়ে পাখিওয়ালা ভাগ্যগণক। বিস্মিত এবং কৌতূহলী হয়েছিলাম। আধুনিক ইংরেজি ভাষার অধ্যাপকের এই দশা! সহপাঠী বন্ধু বাংলাদেশের কথাসাহিত্যের একজন খ্যাতিমান লেখক বুলবুল চৌধুরীকে জিজ্ঞেস করায় বুলবুল কারণটা ব্যাখ্যা করেছিল। বড় কষ্ট পেয়েছিলাম মনে। সেই আমাদের শিক্ষক পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক হয়েছিলেন। দীর্ঘ ৪০/৪৫ বছর পর প্রিয় শিক্ষকের সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎ ঘটে তার বাড়ির লনে। শায়িত ছিলেন তিনি। খানিক বাদে জানাজা হবে। চোখে আমার জল নামে। পুরাতন স্মৃতি বুকের ভেতর আগুন হয়ে জ¦লে। সেদিন আমার সেই অন্তিম দর্শনের সঙ্গী ছিলেন অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তাই বলি হতাশা আর আত্মদ্বন্দ্ব একজন আধুনিক মানুষকেও পেছনে ঠেলে দিতে পারে। বিজ্ঞানবাদীকেও অতি প্রাকৃতবাদী করে তুলতে পারে।
এই জাদুমন্ত্র কিংবা বশীকরণ তন্ত্র আসলে ছদ্মবেশী আধিপত্যবাদ। ব্যক্তির ওপর ব্যক্তির আধিপত্য, রাষ্ট্রের ওপর রাষ্ট্রের আধিপত্য। অসহায় আদিম সমাজ জটিল জীবনের ভেতর দুঃখ, কষ্ট, ক্ষুধা ইত্যাদি, ব্যাধি আর খেয়ালি প্রকৃতির হাত থেকে আত্মরক্ষার জন্যই এই রহস্যময় এক তান্ত্রিক জগতের কল্পনা করেছিল। বৌদ্ধতান্ত্রিক সমাজ আর হিন্দুতান্ত্রিক সমাজ পরবর্তী সময়ে এর সাক্ষ্য বহন করে। কেবল প্রাচীন ভারতবর্ষই নয়, প্রচলিত ধর্মগুলোর উদ্ভবের আগে সারা বিশে^র মানব সমাজটাই ছিল বশীকরণ তন্ত্রের দাস। ওই যে ভূকম্পন আর প্রবল ঝড়ের ধ্বংসলীলা থেকে প্রাণ রক্ষার জন্য আদিম সমাজের পশুবলি বা নরবলি দেওয়ার হিংস্র বাসনা, তার পেছনে রয়েছে তন্ত্রশক্তির মিথ্যে সাধনা।
সারা বিশে্ব সমাজতন্ত্র পতনের পর বিশে^র দেশে দেশে কবর থেকে প্রাচীন মৃত জাদুবিদ্যা, তন্ত্র, বশীকরণ, জাদুটোনার পুনরুত্থান ঘটেছে। বিজ্ঞান যত এগোচ্ছে, পাশাপাশি অধিজ্ঞান বা অতিপ্রাকৃতবাদও ছুটে চলেছে। অতি আধুনিক এই সমাজে আজকের মানুষ অতীতের তুলনায় বহুগুণ অধিক অসুখী এবং হতাশায় আক্রান্ত। এত নিঃসঙ্গ আগে কখনো ছিল না মানুষ। জনসংখ্যা যত বৃদ্ধি পাচ্ছে মানুষও মানুষ থেকে ততই নিঃসঙ্গ হচ্ছে। একাকিত্বের এ যেন মহামারী। আর এই সুযোগটাই নিচ্ছে সর্বগ্রাসী ধনতন্ত্র। প্রতিটি মানুষকে জটিল যন্ত্রে পরিণত করছে। মানুষের মনের ভেতর যে মহাদ্বন্দ্ব আর মহাসংকট চলছে তা আজকের মনোবিজ্ঞানীদেরও বিস্মিত করছে। মনোবিজ্ঞানের প্রাচীন সূত্রগুলো আধুনিক মানুষের মনের এই সংকটের ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ। নিত্যনতুন অনুষঙ্গ তৈরি হচ্ছে আধুনিক মানুষের মনের ভেতর। বিস্ময়কর, অকল্পনীয় শিহরণ জাগানো আচরণ করছে আধুনিক মানুষ। অপরাধ বিজ্ঞানও তাজ্জব! এই যে জটিল মানুষ, তাকে সহজেই তান্ত্রিক বশীকরণের জগতে ঠেলে ফেলে দেওয়া যায়। উদ্ধারের সহজ পথ মেলে না।
ধনতান্ত্রিক বা পুঁজিতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা আজকের এই জটিল মানব সমাজকে মুক্তি বা শান্তি এতে দিতে পারবে না। অসুস্থ এই সমাজকে ভেঙে দিতে হবে। আজকের সমাজে এই যে তুকতাক বশীকরণ দ্রুত বিস্তার লাভ করছে তার পেছনের ইন্ধনদাতা এই ধনতন্ত্র। ধনতন্ত্র সংকটে পতিত বলেই জনগণের মনকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে ঈশ্বরের পাশাপাশি শয়তানকেও ব্যবহার করছে। বাস্তব জগৎ ভুলিয়ে দাও মানুষকে, ডুবিয়ে দাও অতিপ্রাকৃত জগতে, এই হচ্ছে ধূর্ত ধনতন্ত্র।
বিজ্ঞানীর দশ আঙুলে দশটি আংটি। গ্রহরতœ বিচার করে পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক আঙুলে ধারণ করেন বিচিত্র পাথর বসানো রিং। মানুষ তখনই অবাক হয় যখন দেখে কমিউনিস্ট বিপ্লবে বিশ্বাসী রাজনৈতিক বামকর্মীও রোগ সারানোর জন্য তাবিজ ধারণ করেন। বিশ্বাসটা দ্বান্দ্বিক, যদি লেগে যায়? পুঁজিবাদী সমাজ এভাবেই একজন বাম রাজনৈতিক কর্মীর বিশ্বাসে দ্বন্দ্ব এবং ধন্দ তৈরি করে। এখানেই পুঁজিবাদী দর্শনের শক্তি। সে মানুষকে ভেঙে দেয়, দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি করে তার চিন্তা এবং বিশ্বাসের জগতে।
ব্যক্তিমানুষের কোনো সমস্যাই জাদুটোনা-বশীকরণ তন্ত্র-মন্ত্র মীমাংসা করতে পারে না। পুঁথিগত শিক্ষা বা দেশি-বিদেশি বড় বড় ডিগ্রি মানুষকে তার অন্ধ বিশ্বাস থেকে সরাতে পারে না। যুক্তিবাদ, বুদ্ধিবাদ আর বিজ্ঞানমনস্কতাই মানুষের অন্ধ বিশ্বাস দূর করতে পারে। বিজ্ঞানমনস্ক হতে গেলে বিদেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির কোনো প্রয়োজন নেই। সে সব ডিগ্রি বরং সাধারণ মানুষ থেকে ডিগ্রিধারীকে দূরেই ঠেলে দেয়। অহংবোধ-উন্নাসিকতা তৈরি করে। মানুষকে আত্মস্বাধীন মানুষ হতে হবে। তবেই নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব বশীকরণ মহিমার নামের অন্ধকার জগৎ থেকে।
লেখক: কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক
প্রযুক্তির ছোঁয়া এখন আর শুধু উন্নত দেশগুলোতে সীমাবদ্ধ নেই। তুলনামূলকভাবে কম উন্নত দেশগুলোতেও উন্নয়নের মাত্রায় যোগ করেছে ভিন্নতা। প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের জীবনকে সহজ করে দেয় ঠিকই, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, প্রযুক্তির ব্যবহারে দিন দিন কমে যাচ্ছে কর্মসংস্থান।
বইয়ের কথাই ধরা যাক। বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা ছিল, আছে এবং থাকবে। কিন্তু দিন দিন বই পড়ার জন্য আমাজন কিন্ডল, ট্যাবলেট বা ইলেক্ট্রনিক বুক রিডার চাহিদা বেড়েই চলেছে। গড়ে উঠছে গুগল বুকস-এর মতো অনলাইন লাইব্রেরি। এসব লাইব্রেরিতে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা যে কোনো বই পড়া যায় ইচ্ছামতো। ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ইন্টারনেট-ভিত্তিক লাইব্রেরি গড়ে তোলার কাজ শুরু করে দিয়েছে। বড় বড় প্রকাশনীও তাদের মুদ্রিত বইগুলোকে ডিজিটাল ফরম্যাটে রূপান্তরের কাজ শুরু করে দিয়েছে। ফলে প্রথাগত প্রকাশনা ও লাইব্রেরিগুলো খুব দ্রুত আবেদন হারাচ্ছে। এটা অনুমেয় যে, লাইব্রেরিয়ানের কাজটি একসময় নিতান্তই বিরল হয়ে যাবে।
যেকোনো খেলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য দায়িত্বে একজন নিয়োজিত থাকেন। যেমন, ফুটবলে রেফারি আর ক্রিকেটে আম্পায়ার। বর্তমানে ভিডিও প্রযুক্তির উন্নতির ফলে ফুটবলে ও ক্রিকেটে অনেক সিদ্ধান্তই রিভিউ করা হয় প্রযুক্তির মাধ্যমে। তাই সে সময় আর খুব বেশি দেরি নেই, যখন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক খেলার সব সিদ্ধান্তই প্রযুক্তির সাহায্যে নেওয়া হবে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ফিউচার অব জব সার্ভে ২০২০ অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রায় সাড়ে আট কোটি চাকরি গায়েব হয়ে যাবে। তবে, নতুনভাবে উদ্ভব হবে আরও সাড়ে নয় কোটি চাকরির। যেসব চাকরির চাহিদা বাড়বে, তার প্রথম দিকে রয়েছে ডেটা বিশ্লেষক, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং বিশেষজ্ঞ, বিগ ডেটা বিশেষজ্ঞ, ডিজিটাল মার্কেটিং এবং কৌশল বিশেষজ্ঞ, প্রসেস অটোমেশন বিশেষজ্ঞ। আর যে চাকরির চাহিদা কমবে, সে তালিকার প্রথম পাঁচটি হলো ডেটা এন্ট্রি ক্লার্ক, প্রশাসনিক ও নির্বাহী সচিব, অ্যাকাউন্টিং, বুককিপিং এবং পে’রোল ক্লার্ক, হিসাবরক্ষক এবং নিরীক্ষক, উৎপাদন কারখানার শ্রমিক।
১৭৬০ সালের দিকে বাষ্পীয় ইঞ্জিনকে কেন্দ্র করে শুরু হয় প্রথম শিল্পবিপ্লব। বস্ত্র, খনিজ, কৃষি বিভিন্ন খাতে আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে তৈরি হয় শক্তিশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণির। ১৮৭১ সাল থেকে শুরু হয় প্রযুক্তিগত দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লব। রেলপথ, টেলিফোন ও বিদ্যুতের আবিষ্কার সে বিপ্লবের সময় কারখানাগুলোকে দেয় নতুন গতি, অর্থনীতিকে দেয় অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধি। এরপর বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে এসে শুরু হয় তৃতীয় শিল্পবিপ্লব। ইলেক্ট্রনিকস এবং তথ্যপ্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে ঘটে যাওয়া সেই বিপ্লব ডিজিটাল বিপ্লব নামেও পরিচিত। আসে কম্পিউটার, সুপার কম্পিউটার।
বর্তমানে বুদ্ধিদীপ্ত বিভিন্ন ধরনের সাইবার-ফিজিক্যাল সিস্টেমের উদ্ভবের মাধ্যমে আমরা এগিয়ে চলছি চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ভেতর দিয়ে। এই বিপ্লবের চালিকাশক্তি নানা ধরনের বিকাশমান প্রযুক্তির সংমিশ্রণ। এর মধ্যে যেমন আছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট অব থিংস, রোবোটিকস, বিগ ডেটা, ক্লাউড কম্পিউটিং; তেমন আবার আছে জিন প্রকৌশল, ন্যানোটেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি, থ্রি-ডি প্রিন্টিং, অগমেন্টেড রিয়েলিটি, ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মতো প্রযুক্তিগুলো।
জ্ঞানভিত্তিক এই বর্তমান বিশ্বে ভিত্তি যদি দুর্বল হয়, বড়জোর আমরা প্রযুক্তির ব্যবহারকারী হতে পারব, প্রযুক্তির উদ্ভাবনকারী হতে পারব না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রকৌশলী আর বিজ্ঞানীরাই শুধু চাকরির বাজার দখল করে রাখবেন, ব্যাপারটা সে রকমও নয়। একটি প্রযুক্তি অবলম্বন করে সৃষ্টি হয় অনেকগুলো কর্মসংস্থানের, যেগুলো ক্ষেত্রবিশেষে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে আয়ত্ত করা সম্ভব। যেমন মোবাইল ঠিক করার জন্য সবাইকে ইলেকট্রিক্যাল বা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হতে হয় না, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ থাকলে পাড়ার মোড়ের দোকানেই ঠিক করে ফেলা সম্ভব। অতএব, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবকেন্দ্রিক কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব বরাবরের মতোই থাকছে।
পূর্ববর্তী শিল্পবিপ্লবগুলোর সঙ্গে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের অন্যতম পার্থক্য হলো এটি আগের বিপ্লবগুলোর তুলনায় অনেক বেশি দ্রুতগতিতে পরিবর্তনশীল, প্রতিটি দেশের প্রায় প্রতিটি শিল্পকে এটি প্রভাবিত করছে। উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা, পরিষেবা কিংবা পরিচালনা সবকিছুরই রূপান্তরের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন খাতের ওপর এটুআই প্রকল্প দ্বারা পরিচালিত একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ২০৪১ সালের মধ্যে গড়ে এই খাতগুলোতে প্রতি পাঁচজনের দুজন চাকরি হারানোর ঝুঁকির মধ্যে থাকবেন। এর মধ্যে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র এবং ফার্নিচার খাতেই ঝুঁকির মুখে পড়বে ৬০ ভাগ চাকরি। তবে, এই সময়ে ৫৫ লাখ চাকরি হারানোর সম্ভাব্য হুমকির বিপরীত দিক হিসেবে ধারণা করা হয়েছে, ১ কোটি নতুন চাকরির সম্ভাবনাও তৈরি হবে।
একটু ভিন্নভাবে অনেকেই মত দিয়ে থাকেন, বিকাশমান এসব প্রযুক্তি প্রতিস্থাপন নয়, বরং মানুষকে স্মার্ট করবে, দক্ষ করবে। অ্যামাজন তাদের ওয়্যারহাউজে এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখের বেশি রোবট ব্যবহার করেছে। সঙ্গে সঙ্গে নিজ প্রতিষ্ঠানের প্রায় তিন লাখ কর্মীর শিক্ষা এবং দক্ষতা প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার বাজেটের ঘোষণা দিয়েছে। সামনের সময়গুলোতে চাহিদা বাড়বে, যেমন চিকিৎসা সহকারী, পরিসংখ্যানবিদ, সফটওয়্যার প্রকৌশলী, নার্সিং এসব বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্ব প্রদান করবে।
অধিকাংশ মানুষই পণ্য কেনার পর যত দ্রুত সম্ভব টাকা পরিশোধ করে চলে যেতে চান। বর্তমানেই স্বয়ংক্রিয় চেকআউট মেশিনগুলো নির্ভুলভাবে এবং অতি দ্রুত টাকা হিসাব করা ও গ্রহণ করার কাজটি সুন্দরভাবে করে যাচ্ছে। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই, নিকটবর্তী ভবিষ্যতে লেনদেনের জন্য একজন ক্যাশিয়ার রাখা ও তার বেতন দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না।
খাদ্য আমাদের অন্যতম প্রধান মৌলিক চাহিদা। আর খাদ্য উৎপাদনে কাজটি করে থাকেন একজন কৃষক। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবিকার উৎস কৃষিকাজ। কিন্তু কৃষি প্রকৌশলের উন্নতি ও আধুনিকীকরণের ফলে খুব শিগগিরই কৃষিতে মানুষের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে। ড্রোনের সাহায্যে জমির পরিমাণ নির্ণয়, স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের সাহায্যে বীজ বপন, ফসল কাটা, গাছ থেকে ফসল আলাদা করা ও প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ করা হবে। ফলে, এসব আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে মাত্র একজন কৃষকই বিপুল পরিমাণ জমিতে কৃষিকাজ করতে পারবেন। বর্তমানে, আমাদের দেশেই বীজ বপন, ফসল কাটার যন্ত্রের ব্যবহার অল্পবিস্তর শুরু হয়েছে।
এমতাবস্থায় এই জনশক্তিকে বোঝা না বানিয়ে সম্পদে পরিণত করার সময় এসেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো চতুর্থ শিল্পবিপ্লবকেন্দ্রিক কৌশল ঘোষণা দিয়েছে। যেখানে ডিজিটাল গভর্ন্যান্স ও সাইবার নিরাপত্তা, ডিজিটাল অর্থনীতি এবং সমাজের ডিজিটাল রূপান্তরের মতো বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে আমাদের প্রস্তুতি কতটুকু। প্রায় অর্ধযুগ ধরে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নিয়ে আলোচনা চলছে, আয়োজিত হচ্ছে ওয়ার্কশপ, সেমিনার। কিন্তু সে অনুযায়ী যে পরিকল্পনা, দীর্ঘ ও স্বল্প মেয়াদে যে কার্যক্রম হাতে নেওয়ার কথা ছিল, সেটি আশানুরূপভাবে দেখতে পাওয়া যায় না।
লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট
কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ এর ফাইনালে মুখোমুখি ইউরোপের ফ্রান্স ও লাতিন আমেরিকার আর্জেন্টিনা। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ, ক্ষণে ক্ষণে বিজয়ের কাঁটা ঘুরে এদিক ওদিক। শেষ পর্যন্ত জয় উঠেছে আর্জেন্টিনার ঘরে। ম্যাচের পেনাল্টি, অফসাইড হওয়া না হওয়া নিয়ে নানা বিতর্ক হলেও শেষ পর্যন্ত ট্রফি চলে গেছে লাতিনে।
ফ্রান্স একটি ইউরোপের দেশ। অন্যদিকে আর্জেন্টিনা লাতিন আমেরিকার। সাধারণ চিন্তায় লাতিনে মিশ্র বর্ণের ও ইউরোপে শে^তাঙ্গ মানুষের বসবাস বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু বিশ্বকাপ ফাইনালে দেখা গেল উল্টো চিত্র। ফ্রান্স টিমে খেলেছে কৃষ্ণ ও মিশ্র বর্ণের খেলোয়াড় অন্যদিকে আর্জেন্টিনা টিমে খেলেছে শে্বতাঙ্গ খেলোয়াড়রা। বিশ্বকাপ ফুটবলের আসরে প্রতিটি টিম তাদের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে। দুই দলের টিম নিয়ে পূর্ব ধারণা নেই এমন কেউ আর্জেন্টিনার টিমকে ইউরোপীয় টিম ও ফ্রান্সের টিমকে আফ্রিকার টিম ভেবে ভুল করতে পারে। আলোচনাটা খেলোয়াডের গায়ের রং নিয়ে হলেও এটা মোটেও বর্ণবাদী আলোচনা নয়। বরং এখানে যে উপনিবেশবাদ ও বর্ণবাদের আসল চিত্র লুকিয়ে আছে সেটাই দেখার চেষ্টা।
বিশ্বজুড়ে যখন দাস ব্যবসার রমরমা চলছিল তখন লাতিন আমেরিকার আর্জেন্টিনাতেও পৌঁওছছিল দাস বণিকদের জাহাজ। Africana, the Encyclopaedia of the African and African American Experience-এ জয় এলিহান্দ্রো লিখেছেন, ১৭০০ সালের দিকে আর্জেন্টিনার জনসংখ্যার অর্ধেক এবং রাজধানীর ৪০-৪২ ভাগই ছিল কৃষ্ণাঙ্গ অথবা মিশ্র বর্ণের। তারা নানারকম বৈষম্যের মধ্যে বসবাস করত। ১৮১২ সালে আর্জেন্টিনার বিখ্যাত রাজনীতিবিদ বেরনার্ডুকে দেশের এক্সিকিউটিভ বডি থেকে বাদ দেওয়া হয় কারণ তার মা ছিল আফ্রিকান বংশোদ্ভূত। আর্জেন্টিনায় যেখানে শে^তাঙ্গ বাচ্চারা ৪ বছরের মাধ্যমিক শিক্ষা পেত কৃষ্ণাঙ্গরা পেত ২ বছর। ১৮৫৩ সালের আগে কোনো কৃষ্ণাঙ্গের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অনুমতি ছিল না।
আজ লাতিন আমেরিকাতে কৃষ্ণাঙ্গ ও মিশ্র বর্ণের আধিপত্য থাকলেও আর্জেন্টিনায় সাদারাই একচ্ছত্র! আর্জেন্টিনায় কৃষ্ণাঙ্গদের নিধন করা হয় মূলত ১৮৬৫-১৮৭০ সালের প্যারাগুয়ে যুদ্ধে। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ে মিত্র শক্তি প্যারাগুয়ের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে আর্জেন্টিনার কৃষ্ণাঙ্গদের পরিকল্পিতভাবে যোদ্ধা ও মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। আর্জেন্টিনার সরকার যুদ্ধে কৃষ্ণাঙ্গ ও মিশ্র বর্ণের লোকদের বাছাই করে যুদ্ধে যেতে বাধ্য করেছিল। এই পরিকল্পনার মূলহোতা ছিলেন দেশটির সপ্তম রাষ্ট্রপতি ডমিঙ্গো ফিস্তনো সারমিয়েন্তো। ১৮৬৫ এর দিকেই আর্জেন্টিনায় দাসপ্রথা নিষিদ্ধ হয়। ফলে একদিকে আর্জেন্টনায় কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের আসা বন্ধ হয় অন্যদিকে যুদ্ধে তারা হাজারে হাজারে মারা পড়ে। দাসপ্রথা নিষিদ্ধ হওয়া ও পাঁচ বছরের যুদ্ধে অগণিত কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির মৃত্যুর পরও কিছু কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি বেঁচে ছিল। কিন্তু যুদ্ধ শেষে আর্জেন্টিনা ‘বিশুদ্ধ শে^তাঙ্গ জাতি’ তৈরির অভিযানে নামে। হিটলার যেভাবে ইহুদিমুক্ত জার্মানি গড়তে চেয়েছিলেন, রাখাইনরা যেভাবে রোহিঙ্গামুক্ত আরাকান চায় ঠিক তেমনি কৃষ্ণাঙ্গমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে দেশটিতে কৃষ্ণাঙ্গদের জঙ্গলে বসতি গড়তে বাধ্য করা হয়। পরে এসব বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে কলেরা ও পীত রোগে অসংখ্য কৃষ্ণাঙ্গ মৃত্যুবরণ করে। বর্তমানে বিরল হলেও কিছু মিশ্রবর্ণের আফ্রো-আর্জেন্টাইন সেখানে বাস করে। তারা মূলত যুদ্ধে পুরুষদের মৃত্যুর পর জীবিত থাকা কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের গর্ভে জন্ম নেওয়া শে্বতাঙ্গ ঔরসজাত প্রজন্ম। ফলে লাতিন আমেরিকার অন্যান্য টিমে কৃষ্ণাঙ্গ বা মিশ্রবর্ণের খেলোয়াড় দেখা গেলেও আর্জেন্টিনার দলটি একেবারেই ‘ইউরোপীয় ধবধবে শ্বেতবর্ণের টিম’। অবশ্য বোঝাই যাচ্ছে যে- আজ থেকে দেড়শ বছর আগেই বিশ্বে একটি বিশুদ্ধ শ্বেতাঙ্গ জাতি হিসেবে পরিচিতি পেতে চেয়েছিল আর্জেন্টিনা।
২০১৮ এর বিশ্বকাপ ফাইনালের আরেক রোমাঞ্চকর ম্যাচে ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল ফ্রান্স। সে ম্যাচে দুর্দান্ত একটি গোল করে ফ্রান্সের জয় নিশ্চিত করেছেন কিলিয়ন এমবাপ্পে। মাত্র ১৯ বছর বয়সে খেলতে এসে সে বিশ্বকাপে চারটি গোল করে বিশ্বের নজর কেড়েছিলেন এমবাপ্পে। ২০২২ এর বিশ্বকাপে ফ্রান্সের জয়ের জন্য কান্ডারি হিসেবে শেষ পর্যন্ত লড়েছিলেন এই তরুণ। এবার বিশ্বকাপ শিরোপা জিততে না পারলেও হাতে উঠেছে মর্যাদাপূর্ণ গোল্ডেন বুট। কিন্তু এমবাপ্পে মেজরিটি ফ্রেঞ্চদের মতো শ্বেতবর্ণের নন। মিশ্রবর্ণের এই তরুণের বাবা উইলফ্রিদ একজন খ্রিস্টান ও এসেছিলেন ক্যামেরুন থেকে। আর মা হলেন আলজেরিয়ান বংশোদ্ভূত ফেজা লামারি, ধর্মে মুসলিম ও পেশায় একজন হ্যান্ডবল খেলোয়াড়। ফ্রান্সের আরেকজন তারকা খেলোয়াড় পল লাবিল পগবাও একজন মুসলিম কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড। পল পগবার জন্ম ফ্রান্সে হলেও তার শেকড় গিনিতে। গিনির মুসলিম দম্পতির সন্তান পল পগবা। এমনকি তার অপর দুই যমজ ভাই ম্যাথিয়াস পগবা ও ফ্লোরেনটিন পগবা গিনি জাতীয় দলের হয়ে খেলেন।
কিন্তু কীভাবে আফ্রিকান এসব রতœ হয়ে গেলেন ফ্রেঞ্চ জাতীয়তাবাদের প্রতিনিধি! এটাই উপনিবেশবাদের চক্র। টেক দ্য বেস্ট অ্যান্ড লিভ দ্য রেস্ট। দুর্দান্ত খেলে বলে এমবাপ্পে ও পল পগবা ফ্রেঞ্চ। কিন্তু একই ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিম এসব পূর্বপরিচয় নিয়ে ফ্রেঞ্চ হওয়া অন্যান্য তরুণের জীবন কি ফ্রান্সে একই! ফ্রান্স কি অন্যদের নিয়ে যেভাবে গর্ব করে সেভাবেই কি এমবাপ্পে ও পল পগবাকে নিয়ে করে? উত্তর হলো, না।
ফ্রান্সে জন্ম নেওয়া আফ্রিকানদের নানা ধরনের বৈষম্যের মধ্য দিয়ে যেতে হয় এবং তাদের ফ্রেঞ্চ হিসেবে গণ্য করা হয় না। ফ্রান্সে মোট জনসংখ্যার মাত্র ৮ শতাংশ মুসলিম হলেও জেলখানাতে ৫০ শতাংশের অধিক কয়েদি আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মুসলিম, যারা এমবাপ্পে ও পল পগবার জাতভাই। ফলে ফ্রেঞ্চ একজন সাধারণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত কৃষ্ণাঙ্গের জীবন মোটেও ফ্রেঞ্চ জাতীয়তাবাদের গর্ব এমবাপ্পে ও পল পগবার মতো না। তাদের জীবন ওই জেলখানায় বন্দি ৫০ শতাংশ কয়েদির মতো।
প্রতি বছর ফ্রান্স আফ্রিকা থেকে আসা অন্তত ১০ হাজার আশ্রয়প্রার্থীকে ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু এমবাপ্পে ও পল পগবার মতো রতœরা হয়ে ওঠেন ফ্রেঞ্চ জাতীয়তাবাদের পরিচায়ক। এভাবে বছরের পর বছর ধরে আফ্রিকার রতœ দখল করে আজকের ফ্রান্সের নির্মাণ। ঘোষণা দিয়ে আফ্রিকানদের ‘সভ্য’ করে তোলার প্রত্যয়ে আফ্রিকার ২৪টা দেশে ফ্রান্সের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ফ্রান্সের দখল করা ২৪ দেশের মধ্যে ১৪ দেশে এখনো চলছে ফ্রান্সের শোষণ। টোগো, বেনিন, বুরকিনা ফাসো, গিনি বিসাউ, সেনেগাল, আইভরিকোস্ট, মালি, নাইজার, চাদ, ক্যামেরুন, মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র, কঙ্গো (ব্রাজাভিলা), নিরক্ষীয় গিনি ও গ্যাবনসহ ১৪ দেশকে বলা হয়ে থাকে ফ্রান্সফ্রিকা বা ফ্রাংক জোন। কারণ এই ১৪টি দেশকে ব্যবহার করতে হয় ফ্রান্স নিয়ন্ত্রিত মুদ্রা ফ্রাংক।
এসব দেশের জাতীয় আয়ের ৬৫ শতাংশই এখনো জমা রাখতে হয় ফ্রান্সে। আর তাদের আয়ের প্রায় ২০ শতাংশই ব্যয় করতে হয় ফ্রান্সের নানা দেনা মেটাতে। দেশ চালাতে অর্থের প্রয়োজন হলে তাদের অর্থই ফ্রান্সের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে হয়। এই চক্র থেকে বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আফ্রিকায় ফ্রান্সফ্রিকা নামে একটি নেটওয়ার্ক আছে। এই নেটওয়ার্কের কাজ হচ্ছে ফ্রান্সের চক্র থেকে বের হতে চাওয়া রাজনীতিবিদদের ক্যু, রাজনৈতিক হত্যাকা- ও কারচুপির নির্বাচনের মাধ্যমে দমিয়ে রাখা। সিলভানাস অলিম্পিতে ১৯৬৩ সালে টোগোতে নিজস্ব মুদ্রা চালুর লক্ষ্যে জাতীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু তার পরের দিন ফ্রান্সের প্রশিক্ষিত স্বদেশিরা তাকে হত্যা করে। ১৯৬৩ সালের পর থেকে এই পর্যন্ত ফ্রান্সফ্রিকার ১৪ দেশের ২২ জন সরকারপ্রধান হত্যার শিকার হন। যারা প্রত্যেকে নিজেদের জাতীয়তাবাদ নিয়ে সচেতন হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন।
এসব দেশে অন্য দেশের বিনিয়োগের সুযোগও নেই। চীন-ঘেঁষা আইভরি কোস্টের প্রেসিডেন্ট লঁরা বেগবো একটি সেতু গড়তে চেয়েছিলেন। এই সেতু নির্মাণে ফরাসি একটি সংস্থা মার্কিন ডলারে একটি দাম হাঁকে। কিন্তু তার অর্ধেক দাম হাঁকে চীনা প্রতিষ্ঠান। তারা অর্থ পরিশোধের সুযোগ দিয়েছিল আইভরি কোস্টের প্রাকৃতিক সম্পদ কোকো বিন দিয়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লঁরা বেগবোকেই ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হয়।
গৃহযুদ্ধ চলছিল মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রে। ফ্রান্সের অনুগত বনাম বিরোধী দলের মধ্যে। রাজধানী বাঙগুই বিমানবন্দরে মাত্র ৩০০ সৈন্য পাঠিয়ে অনুগতদের ক্ষমতা দখল করে দেয় ফ্রান্স। অন্যতম সম্পদশালী দেশ মালি। মালির ইউরেনিয়ামের পুরোটাই যায় ফ্রান্সে। চলতি দশকের শুরুতে শ’তিনেক মাফিয়া ও বিদ্রোহীদের হাত থেকে সোনার খনি রক্ষার কথা বলে ৪ হাজার ফরাসি সৈন্য ঘাঁটি গেড়ে বসেছে মালিতে। এছাড়া জিবুতি, গ্যাবন, সেনেগালেও সামরিক ঘাঁটি রয়েছে ফ্রান্সের। ২০১১ সালের কথিত আরব বসন্তের প্রাক্কালে লিবিয়ার গাদ্দাফির বিরোধীদের প্রথম সমর্থন দেয় ফ্রান্স। তার অন্যতম কারণ গাদ্দাফির আপসহীন মানসিকতা ও আফ্রিকান জাতীয়তাবাদের নেতৃত্ব দেওয়া যা ফ্রান্সের উপনিবেশের ভিত কাঁপিয়ে দিচ্ছিল।
ফ্রান্সের প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের জোগান দেওয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের চারভাগের তিনভাগই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এসব কেন্দ্রের কাঁচামাল ইউরেনিয়ামের বড় জোগানদাতা গ্যাবন, মালিসহ আফ্রিকার দেশগুলো। তাই গ্যাবনে দশকের পর দশক ধরে ফ্রান্স বসিয়ে রেখেছে তার পুতুল সরকার। আফ্রিকার ইউরেনিয়াম দিয়ে যেভাবে প্যারিস ঝলমল করছে তেমনি আফ্রিকান বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়দের পায়ের জাদুতে ট্রফি যায় ফ্রান্সের ঘরে। ঔপনিবেশিকতার শেষ হলো আর কোথায়!
লেখক: কলামিস্ট
শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, বিচারপতি ও লেখক মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ১৯২৮ সালে অবিভক্ত বাংলার মুর্শিদাবাদের দয়ারামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মৌলভি জহিরউদ্দিন বিশ্বাস, মায়ের নাম গুল হাবিবা। তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯৪৭ সালে আইএ পাস করেন। সাতচল্লিশের পর তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে বিএ (অনার্স) এবং ১৯৫১ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উরস্টার কলেজ থেকে ১৯৫৮ সালে আধুনিক ইতিহাসে বিএ (অনার্স) এবং ১৯৬২ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৫৯ সালে লিঙ্কনস ইন থেকে বার-এট-ল সম্পন্ন করেন। ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে লেকচারার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। শিক্ষকতা ছেড়ে ১৯৬৪ সালে ঢাকা হাইকোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত হন। হাবিবুর রহমান ১৯৭৬ সালে হাইকোর্টের বিচারপতি পদে নিয়োগ লাভ করেন। ১৯৯০-৯১ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এবং ১৯৯৫ সালে প্রধান বিচারপতি পদে অভিষিক্ত হন। ১৯৯৬ সালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। তার গবেষণা ও লেখালেখির ক্ষেত্রে বিস্তৃত ছিল সাহিত্য, রাজনীতি, ধর্ম, সমাজ ও সংস্কৃতির বিচিত্র পরিসরে। ১৯৮৪ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ২০০৭ সালে একুশে পদকসহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির ফেলো, বাংলা একাডেমির ফেলো, লিংকন্স ইনের অনারারি বেঞ্চার এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উরস্টার কলেজের অনারারি ফেলো ছিলেন তিনি। তিনি ২০১৪ সালের ১১ জানুয়ারি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
প্রযুক্তির এই উৎকর্ষের যুগে যত লোভনীয় সময় কাটানোর উপাদানই থাকুক না কেন, বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে প্রত্যেক এলাকার জন্যই আমাদের মাঠ নির্দিষ্ট করতে হবে, মাঠের জন্য জায়গা রাখতে হবে। মাঠ কি আছে? মাঠগুলো থাকবে তো? আশঙ্কাটা নিতান্তই অমূলক নয়। দেশজুড়ে বহু মাঠ বেদখল হয়ে গেছে। খেলার মাঠ কেড়ে নিয়ে কেউ স্টেডিয়াম গড়েনি, নির্মিত হয়েছে বহুতল ভবন কিংবা শপিং মল। আকাশ চুরির মতোই চুরি হয় মাঠ-ময়দান। অন্যদিকে, আমাদের দেশে বড় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলাধুলা আয়োজনের অবকাঠামোগত ঘাটতি রয়েছে। ফুটবল, ক্রিকেটের জনপ্রিয়তার বিপরীতে তার অবকাঠামো বেশ দুর্বল। ঘুরেফিরে বারবার একই ভেন্যুতে হয় আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলো। ঢাকার শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম ও চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম; এই দুটো ভেন্যুতেই আয়োজন করা হয় আন্তর্জাতিক সিরিজগুলো। অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সংস্কারকাজ চলায় বাফুফেকে ফুটবল খেলার আয়োজন করতেও বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। সারা দেশের জেলা স্টেডিয়ামগুলোর বেশিরভাগের বেহাল দশা আর ক্রীড়াঙ্গনের স্থবিরতা ক্রীড়াক্ষেত্রের উন্নয়নে অন্যতম বড় দুই বাধার নাম।
মঙ্গলবার দেশ রূপান্তরে ‘গর্বের স্টেডিয়াম এখন ডোবা’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২৫ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামটি বছরের পর বছর ধরে পানিতে নিমজ্জিত থাকায় স্টেডিয়ামটির ভেতরে ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। দিনেও মাঠের ভেতর উঁকি দিতে কাউকে দেখা যায় না। আর সন্ধ্যা নামতেই মাঠের পাশ দিয়ে যাতায়াত করতে পথচারীদের গা শিউরে ওঠে। এমন একটি আন্তর্জাতিক ভেন্যু চোখের সামনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, অথচ দেখার যেন কেউ নেই। অচিরেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজর না দিলে ঐতিহ্যবাহী এই স্টেডিয়াম পড়বে অস্তিত্বসংকটে। পরিত্যক্ত ডোবায় পরিণত হবে একটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামটির বর্তমান অবস্থা দেখে জনমনে প্রশ্ন এই ডোবায় কি এখন মাছ চাষ হবে? হাঁসেরা ঘুরে বেড়াবে? মাছ আর হাঁস মিলে ক্রিকেট খেলবে? জানা গেছে, স্টেডিয়ামটি ২০০৪ সালে অনুষ্ঠিত আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। ২০১১ ক্রিকেট বিশ্বকাপে এই মাঠে ইংল্যান্ড-পাকিস্তানের একটি প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ হয়েছিল। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপের অন্যতম প্রধান ভেন্যু ছিল এই মাঠ। ২০০৬ সালের ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের মাধ্যমে শুরু হয় এই স্টেডিয়ামে টেস্ট ম্যাচের ইতিহাস। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ-ভারত টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় এখানে। সর্বশেষ এই মাঠে খেলার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের। তবে জলাবদ্ধতার কারণে প- হয়েছিল ম্যাচটি। সেই জলাবদ্ধতা দূর করতে নেওয়া হয়নি কার্যকর কোনো পদক্ষেপ। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, ক্রিকেট বোর্ড বা জেলা ক্রীড়া সংস্থাসহ কোনো সংস্থার কর্মকর্তারাই এ ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তা এ জেড এম ইসমাঈল বাবুল বলেন, ‘দুর্নীতি আর অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণের কারণেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সাত বছর ধরে অস্তিত্বসংকটে পড়ে আছে স্টেডিয়ামটি।’ আমরা চাই জলাবদ্ধতা কাটুক, মাছ চাষ নয় খেলা হোক স্টেডিয়ামটিতে।
বাংলাদেশের ১০টি স্টেডিয়াম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজনে সক্ষম হলেও মাত্র দুটি স্টেডিয়ামে আয়োজন করা হয় ম্যাচগুলো। তবে ওই দুই স্টেডিয়ামে অতিরিক্ত খেলা হওয়ায় ভালো উইকেট তৈরি করতে পারেন না কিউরেটররা। খেলার মান উন্নয়নে স্টেডিয়াম বাড়ানোর বিকল্প নেই। পাশাপাশি বর্তমান মাঠগুলোর উন্নয়নেও অতিসত্বর কাজ শুরু করা উচিত। কারণ ম্যাচের বাইরেও সারা বছর খেলোয়াড়দের প্রস্তুতি ও অনুশীলন করতে হয়। ঢাকার বাইরের বাকি স্টেডিয়ামগুলোতে পর্যাপ্ত অনুশীলনের সরঞ্জাম নেই। ক্রীড়াঙ্গনের প্রাণকেন্দ্র স্টেডিয়ামগুলোর তদারকিতে থাকা ক্রীড়া সংস্থাগুলোর গাফিলতির খবর এখন ওপেন সিক্রেট। স্টেডিয়ামগুলোর এমন ভঙ্গুর দশা যেন দেখার কেউ নেই। উন্নত ক্রীড়া কাঠামো থাকলেও নেই কোনো রক্ষণাবেক্ষণ। বিপুল সরকারি অর্থ খরচ করে তৈরি স্টেডিয়ামগুলো ফেলে রাখায় একদিকে যেমন তা নষ্ট হচ্ছে; অন্যদিকে তা কোনো কাজে তো আসছেই না, বরং অপচয় বাড়ছে। সারা দেশের স্টেডিয়ামগুলো জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অধীনে। আর দেখভালের দায়িত্বে জেলা ক্রীড়া সংস্থা। খেলাধুলার স্থবিরতার অন্যতম কারণ হিসেবে ক্রীড়া সংস্থার উদাসীনতাকে দায়ী করা হয়। তবে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ও দায় এড়াতে পারে না। মন্ত্রণালয়ের কঠোর নজরদারির বিকল্প নেই। সারা দেশের উপজেলা পর্যায়ে স্টেডিয়াম নির্মাণে সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগকেও ভেস্তে দিয়েছে বেশকিছু অসাধু ব্যক্তি। ক্রীড়াঙ্গনের উন্নতিতে সারা দেশের ক্রীড়া কাঠামোগুলোর সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ এখন সময়ের দাবি।
আগের ইনিংসের মতোই ব্যর্থ উসমান খাজা। পারেননি ডেভিড ওয়ার্নারও। প্রথম ইনিংসের দুই সেঞ্চুরিয়ানও ফিরে গেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়ে তাই খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় নেই অস্ট্রেলিয়া। তবুও তৃতীয় দিন শেষে এগিয়ে আছে তারা।
ওভালে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে ২৯৬ রানে আটকে দেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট হারিয়ে ১২৩ রান করে অসিরা। এগিয়ে আছে ২৯৬ রানে।
দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিংয়ের শুরুটা ভালো করেছে ভারত। অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরেছে তারা।
দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাজা ফেরেন ২৪ রানের মধ্যেই। মারনাস লাবুশান ও স্টিভেন স্মিথের ৬২ রানের জুটি ভাঙেন রবীন্দ্র জাদেজা, পরে ট্রাভিস হেডকেও ফেরান এই স্পিনার। টেস্ট ক্যারিয়ারে অষ্টমবারের মতো স্মিথকে আউট করেছেন জাদেজা।
তৃতীয় দিন শেষে মারনাস লাবুশানের সঙ্গে অপরাজিত আছেন ক্যামেরুন গ্রিন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: অস্ট্রেলিয়া: ৪৬৯ ও ৪৪ ওভারে ১২৩/৪ (লাবুশেন ৪১*, স্মিথ ৩৪; জাদেজা ২/২৫, উমেশ ১/২১)ভারত ১ম ইনিংস: ৬৯.৪ ওভারে ২৯৬ (রাহানে ৮৯, শার্দূল ৫১, জাদেজা ৪৮; কামিন্স ৩/৮৩, গ্রিন ২/৪৪, বোল্যান্ড ২/৫৯)।
আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিজের পালন করা সাড়ে ২১ মণ ওজনের গরু উপহার দিতে চেয়েছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার চরকাউনা গ্রামের সাধারণ কৃষক বুলবুল আহমেদ ও তার স্ত্রী ইসরাত জাহান। তাদের এই ভালোবাসার প্রতি সম্মান জানিয়ে উপহারের এই গরু গ্রহণে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
শুক্রবার (৯ জুন) সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুন বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী উপহারের গরু গ্রহণে সম্মতি দেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী খুশি হয়েছেন এবং এই বিরল ভালোবাসার জন্য বুলবুল আহমেদ ও তার স্ত্রীকে ধন্যবাদ দেন।
হাসান জাহিদ তুষার জানান, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা এই গরু বুলবুল আহমেদের নিজ বাড়িতেই থাকবে এবং সেখানেই কোরবানি হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোরবানির গরুর মাংস স্থানীয় দরিদ্র-অসহায় জনগণের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
গরুটি ক্রস ব্রাহমা প্রজাতির। এতে আনুমানিক ৮০০ কেজি মাংস হতে পারে বলে জানিয়েছেন বুলবুল আহমেদ। বুলবুল জানান, ২০২০ সালে নেত্রকোনা জেলা থেকে আড়াই লাখ টাকায় প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেওয়ার জন্য তিনি এই গরু কেনেন। গরু কেনার পর কিশোরগঞ্জের বিখ্যাত পাগলা মসজিদে পাঁচ হাজার টাকা মানতও করছিলেন তিনি যেন তার গরুটি সুস্থ থাকে।
তিনি আরও জানান, তিনি ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে মাঠকর্মী হিসেবে কর্মরত তার স্ত্রী ইসরাত জাহান আওয়ামী লীগ সরকারের একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্প থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্য এই গরু কেনেন। তারা গত তিন বছর গরুটির নিবিড় পরিচর্যা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবেগ ও ভালবাসা থেকে তারা এই গরু ক্রয় ও লালন পালন করেছেন বলে জানান।
উপহার হিসেবে তার গরুটি গ্রহণ করার সম্মতি দেওয়ায় বুলবুল আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। বুলবুল আহমেদ কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
বেশ ক'দিন তীব্র তাপদাহের পর গতকাল রাজধানী ঢাকাজুড়ে হয়েছে স্বস্তির বৃষ্টি। এতে তাপমাত্রা এসেছে কমে, পরিচ্ছন্ন হয়েছে পরিবেশ। তবুও আজ সকালে বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষ পাঁচে আছে ঢাকা। বৃষ্টিধোয়া রাজধানী ঢাকা আজ সকাল সাড়ে ৮টায় ১৫৫ স্কোর নিয়ে দূষণের তালিকায় চতুর্থ।
আজ শনিবার (১০ জুন) সকাল সাড়ে ৮টায় বায়ুমানের সূচক (একিউআই) অনুযায়ী ঢাকায় বাতাসের স্কোর ছিল ১৫৫। বায়ুর মান বিচারে এ মাত্রাকে 'অস্বাস্থ্যকর' বলা হয়। একই সময়ে একিউআই স্কোর ১৬৮ নিয়ে প্রথম অবস্থানে আছে পাকিস্তানের লাহোর। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভিয়েতনামের হ্যানয়, স্কোর ১৫৬। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইসরায়েলের তেলআবিব। আর পঞ্চম স্থানে আছে চীনের শেংডু, স্কোর ১৪৯।
একইসময়ে ১৩৮ স্কোর নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহেনেসবার্গ। ১৩২ স্কোর নিয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। অষ্টম নেপালের কাঠমান্ডু, স্কোর ১২৭। ১১৮ স্কোর নিয়ে নবম স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েট আর ১১৭ স্কোর নিয়ে দশম সৌদি আরবের রিয়াদ।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার দূষিত বাতাসের শহরের এ তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই স্কোর একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে কি না, তা জানায়।
তথ্যমতে, একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত 'অস্বাস্থ্যকর' হিসেবে বিবেচিত হয়। একইভাবে একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকলে 'খুব অস্বাস্থ্যকর' এবং স্কোর ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে থাকলে 'ঝুঁকিপূর্ণ' বলে বিবেচিত হয়।
ষাটের দশকে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের আগুন তরুণদের বুকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠান ক্ষেত্র তৈরি করতে গড়ে তুলেছিলেন ‘নিউক্লিয়াস’। স্বাধীনতার পর তিনি সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের বাঁধভাঙা ঢেউ তুলেছিলেন। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে সবকিছু থেকে দূরে আড়ালে চলে যান। রাজনীতিতে তাকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল রহস্য। সেই রহস্য নায়ক সিরাজুল আলম খান চলে গেলেন চিররহস্যের দেশে।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এ সংগঠক গতকাল শুক্রবার দুপুর আড়াইটার কিছু পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক।
সিরাজুল আলম খানের ব্যক্তিগত সহকারী রুবেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অসুস্থ অবস্থায় তাকে রাজধানীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে প্রথমে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে গত ১ জুন নেওয়া হয় আইসিইউতে। এরপর গত বৃহস্পতিবার রাতে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন গৃহিণী ছিলেন। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সিরাজুল আলম খান।
১৯৬১ সালে ছাত্রলীগের সহসাধারণ সম্পাদক হন সিরাজুল আলম খান। ১৯৬৩ সালে তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করেন।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান (মান্না), জনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক (নুর)।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তার আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি। শোক জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন সংগঠন।
প্রয়াত সিরাজুল আলম খানের ঘনিষ্ঠ ও নাট্য পরিচালক সাকিল সৈকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, সিরাজুল আলম খানের মরদেহ বিকেলে হাসপাতাল থেকে মোহাম্মদপুরের আল-মারকাজুলে নেওয়া হয়েছে। সেখানে গোসল শেষে রাতে শমরিতা হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে। আজ শনিবার সকাল ১০টায় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে জানাজা শেষে নোয়াখালীতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে পুনরায় জানাজা শেষে বেগমগঞ্জের আলীপুরে মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে রাজনীতির এ নায়ককে।
১৯৪১ সালে জন্ম নেওয়া এ কিংবদন্তি রাজনীতিককে বিগত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত হাসপাতালে যেতে হয়েছে। দেশে এবং বিদেশে দীর্ঘ সময় চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি।
জন্মের কয়েক বছর পর পিতার চাকরির সুবাদে সিরাজুল আলম খুলনায় চলে যান। ১৯৫৬ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ১৯৫৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। অনার্স ডিগ্রি অর্জনের পর কনভোকেশন মুভমেন্টে অংশ নেওয়ার কারণে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনায় ১৯৬২ ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার ‘নিউক্লিয়াস’ গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এ ছাত্রনেতারা। ছয় দফার সমর্থনে জনমত গঠনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন সিরাজুল আলম খান। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিল ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন তিনি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। এরপর ১৯৭২ সালে সিরাজুল আলম খানের উদ্যোগে রাজনৈতিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ প্রতিষ্ঠা হয়। তিনি কখনো নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের পরামর্শ দিয়ে তাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে খ্যাতি পান। অনুসারী সবাই তাকে ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকতেন।
মূলত নব্বইয়ের দশকে সিরাজুল আলম খান কখনো জনসমক্ষে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান। নব্বই পর্যন্ত একাধিকবার জেল-জুলুম খেটেছেন তিনি।
দাদা ভাইয়ের মৃত্যুত গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চেয়ারপারসন অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা, গণফোরাম একাংশে সভাপতি মোস্তফা মোহসিন মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।
ব্রাজিলের সান্তোস থেকে বার্সেলোনায় খেলতে এসেছিলেন নেইমার। তখন কাতালানদের মধ্যমণি আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। দুই দেশের রাজনৈতিক বিরোধ চরমে। তবু সেসবকে পাশ কাটিয়ে দুজনে হয়ে ওঠেন বন্ধু।
ক্যাম্প ন্যু ছেড়ে নেইমার পাড়ি জমিয়েছিলেন প্যারিসে। তবুও বন্ধুত্ব ছিল অটুট। তার টানেই মেসিকে যখন বার্সা ছেড়ে দেয়, তখন এই ব্রাজিলিয়ান পার্ক দে প্রিন্সেসে ভেড়াতে মধ্যস্ততা করেন।
পিএসজির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে মেসির। কিংবদন্তি এই ফুটবলার এবার ফুটবল ছেড়ে যাচ্ছেন সকার খেলতে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ইন্টার মায়ামির হয়ে মাঠ মাতাবেন তিনি।
মেসি নিজে সেই ঘোষণা দেওয়ার আগ পর্যন্ত তার দলবদল নিয়ে চলছিল নানা নাটকীয়তা। সেই সব রহস্যময় দিনগুলোতে নেইমার কি জানতেন মেসির ঠিকানা হতে চলেছে কোনটা?
এক সাক্ষাৎকারে নেইমার বলেছেন, 'আমি জানতাম মেসি মায়ামিতে যাবে (হাসি)।'
তারপর নেইমার যোগ করেন, 'মেসি আমার সেরা বন্ধুদের একজন। সে আমাকে দারুণ সব মুহূর্ত উপহার দিয়েছে। আমি তার সঙ্গে খেলার সুযোগ পেয়েছি এটা আমার সৌভাগ্য। আমি জানতাম সে মায়ামিতে যাচ্ছে, এ নিয়ে আমার সঙ্গে তার কথাও হয়েছে। শহর ও জীবনযাত্রার কারণে মেসি সেখানে দারুণ সময় কাটাবে, এটা তাকে বলেছিলাম। আমি নিশ্চিত তার পদচারণায় দেশটির লিগে আসবে আমুল পরিবর্তন।'
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর (৪১) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত্যুর আগে তিনি চিরকুট লিখে গেছেন। তবে সেখানে কি লেখা আছে তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মহাখালীর আমতলী এলাকার বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়ায় মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম। পুলিশের ধারণা, অর্পিতা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে। পরে স্বজনের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়ালেখা করতেন অর্পিতা। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মা ফাতেমা কবিরের মৃত্যুর কারণে তিনি দেশে আসেন। এরপর দেশেই ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্থ ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার তার লণ্ডনে ফেরার কথা ছিল। মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া একটি চিরকুটে (সুইসাইড নোট) তিনি আত্মহত্যার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
মেয়ের মৃত্যুতে শোকে বিবহবল লেখক–কলামিস্ট শাহরিয়ার কবির গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। তবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বলেন, রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে অর্পিতাকে তাঁর মায়ের কবরে দাফন করা হয়েছে। রবিবার তাঁর কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’