
শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, বিচারপতি ও লেখক মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ১৯২৮ সালে অবিভক্ত বাংলার মুর্শিদাবাদের দয়ারামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মৌলভি জহিরউদ্দিন বিশ্বাস, মায়ের নাম গুল হাবিবা। তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯৪৭ সালে আইএ পাস করেন। সাতচল্লিশের পর তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে বিএ (অনার্স) এবং ১৯৫১ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উরস্টার কলেজ থেকে ১৯৫৮ সালে আধুনিক ইতিহাসে বিএ (অনার্স) এবং ১৯৬২ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৫৯ সালে লিঙ্কনস ইন থেকে বার-এট-ল সম্পন্ন করেন। ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে লেকচারার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। শিক্ষকতা ছেড়ে ১৯৬৪ সালে ঢাকা হাইকোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত হন। হাবিবুর রহমান ১৯৭৬ সালে হাইকোর্টের বিচারপতি পদে নিয়োগ লাভ করেন। ১৯৯০-৯১ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এবং ১৯৯৫ সালে প্রধান বিচারপতি পদে অভিষিক্ত হন। ১৯৯৬ সালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। তার গবেষণা ও লেখালেখির ক্ষেত্রে বিস্তৃত ছিল সাহিত্য, রাজনীতি, ধর্ম, সমাজ ও সংস্কৃতির বিচিত্র পরিসরে। ১৯৮৪ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ২০০৭ সালে একুশে পদকসহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির ফেলো, বাংলা একাডেমির ফেলো, লিংকন্স ইনের অনারারি বেঞ্চার এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উরস্টার কলেজের অনারারি ফেলো ছিলেন তিনি। তিনি ২০১৪ সালের ১১ জানুয়ারি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
ঔপনিবেশিক যুগ শুরুর বহু আগে থেকেই ভারতবর্ষ সম্পর্কে ইউরোপের কৌতূহল আর প্রধান বিস্ময় ছিল তার জাদু-মন্ত্র আর সাধু-সন্ন্যাসীর বিষয়ে। ইংরজি সাহিত্যে এ বিষয়ে নানা আখ্যান গড়ে উঠেছে। ভাগ্য, তন্দ্র, টোটকা, বশীকরণ, জাদুটোনা, ব্ল্যাক ম্যাজিক বা কালাজাদু নিয়ে তারা গবেষণাও করেছে। ফকির, দরবেশ, সাধু-সন্ন্যাসীদের মনও বুঝতে চেয়েছে। বঙ্গ-ভারতীয়দের মানস গঠন সম্পর্কে চেনাশোনা, জানা-বোঝাটা দরকার ছিল শাসন-শোষণের জন্য। ‘মাঙ্কিজ প’ বা ‘বানের থাবা’ নামের ইংরেজি গল্পে গা ছমছম করা চিত্তশিহরণ জাগানো আখ্যান পাওয়া যায়। ভারতবর্ষীয়দের জাদু-মন্ত্র বিশ্বাসের এ এক অপূর্ব গল্প। জনৈক ভারতীয় জাদুকরের কাছ থেকে পাওয়া মন্ত্রপূত বানরের থাবার শক্তিতে দুর্ঘটনায় নিহত পুত্রহারা এক ইংরেজ মহিলার মৃতসন্তানের পুনর্জীবন লাভ করে ফেরার লোমহর্ষক ঘটনা রয়েছে এই গল্পে।
এই বশীকরণ আর কালাজাদুই যে উপনিবেশ শাসনের আসল শক্তি, ইংরেজরা তা বুঝেছিল। যখন বুঝতে পারে আর শাসন করা যাবে না তখনই ধর্ম, ঈশ্বর, দেবদেবীর সহায়তায় দেশ ভেঙে যায়। হিন্দু-মুসলমান লাখো-কোটি মানুষ হারায় তাদের জন্মভূমি। হারায় আইডেনটিটি। উদ্বাস্তু হয়। আজ ৭০ বছর পর আবার তারা সেই ব্ল্যাক ম্যাজিকে পতিত। বশীকরণ বা কালাজাদু রাজনীতিতে কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা ইংরেজরা শিখিয়ে দিয়ে যায় শাসিত ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ-ইয়াঙ্গুন আর শ্রীলঙ্কাকে। বার্মা বা ইয়াঙ্গুনের রোহিঙ্গা, শ্রীলঙ্কার তামিল, ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশের জাতিগত আর ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা টের পাচ্ছে কালাজাদু কী। কেবল তারাই নয়, ওইসব দেশের জনগণও আজ আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় মহাবশীকরণের শিকার। এতো গেল রাজনীতির কথা, সমাজের ভেতরটা কেমন?
আশ্চর্যের বিষয় এই, আধুনিক বিজ্ঞান আর যুক্তিবাদ-বুদ্ধিবাদের উৎকর্ষের এই যুগে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে কুসংস্কার, অন্ধ বিশ্বাস আর জাদুটোনার প্রভাব। পত্রপত্রিকা আর বিভিন্ন চ্যানেলে বিজ্ঞানের নামে এদের উপদ্রব এতই বেড়ে গেছে যে, মনে হবে অপশক্তির ঘোর অন্ধকার নেমে এসেছে মানুষের সমাজে। মানুষ সভ্যতার আলো থেকে দ্রুত অন্ধকারে পালিয়ে বাঁচতে চাইছে। কেন এমন হলো? মানুষের এমন পশ্চাৎপদতার রহস্য কী? আসলে আধুনিক মানুষ, বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের ভরসা ছিল সমাজ বদল বা সমাজতন্ত্র। সারা বিশে^ সমাজতন্ত্রের পতন আর অবক্ষয়ের পর সভ্যতার আর এগোবার সুযোগ হলো না। চরম হতাশায় ডুবে যাচ্ছে মানুষ। ব্যক্তিমানুষের জাগতিক দুঃখ, কষ্ট আর দুর্ভোগ এতই অপ্রতিরোধ্য যে, ব্যর্থ মানুষ হতাশার অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে। চরম হতাশায় পতিত মানুষ বাধ্য হচ্ছে অন্ধবিশ্বাসে ডুবে যেতে। ঘরে-বাইরে কোথাও শান্তি নেই মানুষের। কোথাও তার ইচ্ছা পূরণ হচ্ছে না। তাই ঈশ্বর, ধর্ম, তন্ত্র-মন্ত্র জাদুটোনা বশীকরণে বিশ্বাসী হয়ে উঠছে। মানুষের এই দুর্বলতার খবরটা জানে প্রতারকরা। অসংখ্য সমস্যায় জর্জরিত মানুষ হতাশ হয়ে তাদের শিকারে পরিণত হচ্ছে। ওরা আসছে ছদ্মবেশে। পীরবাবা, সাধুবাবা, মহাতান্ত্রিক, কামাক্ষ্যা সিদ্ধ, তান্ত্রিক মহারাজ, দৈবশক্তির সাধক ইত্যাদি পদবি ধারণ করে তারা। আশ্চর্য এই, অসংখ্য বেকার তরুণী বা অর্থলোভী নারী পর্যন্ত এই কালাজাদু পেশায় নেমে পড়েছে। এদের পদবি মহাসাধিকা, মাতা কামাক্ষ্যানী, মা-খনা, জ্যোতিষী, তন্দ্রসাধিকা, প্রেতাত্মা বশীকরণ সিদ্ধা ইত্যাদি। সুন্দরী, যুবতী হলে তো কথাই নেই। সমস্যা সামধানের জন্য ছুটে যাচ্ছে মানুষ। অভিজ্ঞরা বলছে ওরা নাকি সাক্ষাৎ স্বর্গের দেবি।
কোন কোন সমস্যার সমাধান দেন এসব তান্ত্রিকরা? ব্যবসায় সাফল্য, চাকরি, বিদেশ ভ্রমণ, প্রেমে সফফতা, মামলায় জেতা, সন্তানের শিক্ষায় অমনোযোগিতা, স্ত্রী বা স্বামীকে আজ্ঞাবাহ বানানো ইত্যাদি। এ ধরনের তান্ত্রিক বা বশীকরণ বিদ্যার ট্রেনিং সেন্টারও আছে। কীভাবে মানুষকে হিপ্টোনাইজ করতে হয়, কীভাবে কোন পোশাকে শ্রেণি হিসেবে মানুষকে বশে আনতে হয় সেসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যেমন ভূতে বা জিনে পাওয়া নারীদের বেলায় প্রথমে তন্ত্র-মন্ত্রী ঝাড়ফুঁক। তাতে কাজ না হলে ঝাঁটা দিয়ে পেটানো। এর ফলে ভূত পালায় ঠিকই, কিন্তু সঙ্গে নেয় রোগীর প্রাণ।
এই যে তন্ত্র-মন্ত্র-বশীকরণ রহস্য তার অন্ধকারেই লুকিয়ে রয়েছে ধর্মীয় মৌলবাদী রাজনীতির শেকড়-বাকড়। তুকতাক, বশীকরণে জনগণকে নির্জীব করে রাখো, কাজ না হলে বাহুবল প্রদর্শন করো, হামলা-মামলায় ফেলে দাও। তাতেই মানুষের মাথা থেকে গণতন্ত্র, সাম্য, নাগরিক অধিকার, ন্যায়বিচার আর আইনের শাসনের দাবি-দাওয়ার ভূত পালিয়ে যাবে। শাসকশ্রেণি চিরকালই চায় আনুগত্য। বশ মানা। বাঘের বাচ্চাকে খাঁচায় পুষে মাংসের বদলে ঘাস খাওয়া শিক্ষা দিলে সে ভুলে যায় পশু শিকার, খাদ্যপ্রণালীও ভুলে যায়। বাঘশিশু বড় হয়ে ভীতু ছাগল হয়ে যায়। শাসকরা তাই চায়। কালাজাদু দিয়ে মানুষকে বশে রাখে তারা, ভোট আদায় করে। রাজা-রানীর নামে জয়ধ্বনি দেয়।
মনোবিজ্ঞানীরা দেখেছেন মানুষের মধ্যে দ্বৈতসত্তা বিরাজ করে। একটি তান্ত্রিক সত্তা, অন্যটি বিজ্ঞান সত্তা। অব্যাহত বিজ্ঞান বা সঠিক জিজ্ঞাসার ভেতর দিয়ে বিকশিত হলে মানুষ সংস্কারমুক্ত হতে পারে। হতে পারে যুক্তিবাদী। এর ফলে তার বিপরীত সত্তা, ওই যে তান্ত্রিক সত্তার মৃত্যু ঘটে। সে হয়ে ওঠে প্রকৃত মানুষ। শাসকের প্রতি অন্ধ আনুগত্য, অপরাজনীতির প্রতি বিশ্বাস, ভয়-ভীতিকে জয় করে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। তন্ত্র-মন্ত্রের জগৎ এমন প্রতিবাদী মানুষ চায় না। এমন মানুষ তার প্রতিপক্ষ।
বিভিন্ন কারণে শরীর দুর্বল বা প্রতিরোধক্ষমতা কমে গেলে নানারকম রোগ শরীরে প্রবেশ করে। হতাশাও এমনি একটি মনোরোগ। যারা হতাশায় আক্রান্ত হয় তারা বিজ্ঞানমনস্কতা বা যুক্তিবাদ হারায়। হয়ে ওঠে ভাগ্য বিশ্বাসী। তাদের মন আচ্ছন্ন করে ফেলে অন্ধ বিশ্বাস আর জাদুটোনার রহস্যময় দুনিয়া। আজও আমি ভুলিনি সেই দৃশ্য। ষাটের দশকের গোড়ার দিকে আমি ঢাকার জগন্নাথ কলেজের ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্র ছিলাম। হঠাৎ একদিন দেখতে পাই আমাদের ইংরেজির একজন প্রিয় শিক্ষক ভিক্টোরিয়া পার্কের পশ্চিম পাশে রাস্তার ওপর হাত পেতে বসে আছেন। সামনে বসে টিয়ে পাখিওয়ালা ভাগ্যগণক। বিস্মিত এবং কৌতূহলী হয়েছিলাম। আধুনিক ইংরেজি ভাষার অধ্যাপকের এই দশা! সহপাঠী বন্ধু বাংলাদেশের কথাসাহিত্যের একজন খ্যাতিমান লেখক বুলবুল চৌধুরীকে জিজ্ঞেস করায় বুলবুল কারণটা ব্যাখ্যা করেছিল। বড় কষ্ট পেয়েছিলাম মনে। সেই আমাদের শিক্ষক পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক হয়েছিলেন। দীর্ঘ ৪০/৪৫ বছর পর প্রিয় শিক্ষকের সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎ ঘটে তার বাড়ির লনে। শায়িত ছিলেন তিনি। খানিক বাদে জানাজা হবে। চোখে আমার জল নামে। পুরাতন স্মৃতি বুকের ভেতর আগুন হয়ে জ¦লে। সেদিন আমার সেই অন্তিম দর্শনের সঙ্গী ছিলেন অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তাই বলি হতাশা আর আত্মদ্বন্দ্ব একজন আধুনিক মানুষকেও পেছনে ঠেলে দিতে পারে। বিজ্ঞানবাদীকেও অতি প্রাকৃতবাদী করে তুলতে পারে।
এই জাদুমন্ত্র কিংবা বশীকরণ তন্ত্র আসলে ছদ্মবেশী আধিপত্যবাদ। ব্যক্তির ওপর ব্যক্তির আধিপত্য, রাষ্ট্রের ওপর রাষ্ট্রের আধিপত্য। অসহায় আদিম সমাজ জটিল জীবনের ভেতর দুঃখ, কষ্ট, ক্ষুধা ইত্যাদি, ব্যাধি আর খেয়ালি প্রকৃতির হাত থেকে আত্মরক্ষার জন্যই এই রহস্যময় এক তান্ত্রিক জগতের কল্পনা করেছিল। বৌদ্ধতান্ত্রিক সমাজ আর হিন্দুতান্ত্রিক সমাজ পরবর্তী সময়ে এর সাক্ষ্য বহন করে। কেবল প্রাচীন ভারতবর্ষই নয়, প্রচলিত ধর্মগুলোর উদ্ভবের আগে সারা বিশে^র মানব সমাজটাই ছিল বশীকরণ তন্ত্রের দাস। ওই যে ভূকম্পন আর প্রবল ঝড়ের ধ্বংসলীলা থেকে প্রাণ রক্ষার জন্য আদিম সমাজের পশুবলি বা নরবলি দেওয়ার হিংস্র বাসনা, তার পেছনে রয়েছে তন্ত্রশক্তির মিথ্যে সাধনা।
সারা বিশে্ব সমাজতন্ত্র পতনের পর বিশে^র দেশে দেশে কবর থেকে প্রাচীন মৃত জাদুবিদ্যা, তন্ত্র, বশীকরণ, জাদুটোনার পুনরুত্থান ঘটেছে। বিজ্ঞান যত এগোচ্ছে, পাশাপাশি অধিজ্ঞান বা অতিপ্রাকৃতবাদও ছুটে চলেছে। অতি আধুনিক এই সমাজে আজকের মানুষ অতীতের তুলনায় বহুগুণ অধিক অসুখী এবং হতাশায় আক্রান্ত। এত নিঃসঙ্গ আগে কখনো ছিল না মানুষ। জনসংখ্যা যত বৃদ্ধি পাচ্ছে মানুষও মানুষ থেকে ততই নিঃসঙ্গ হচ্ছে। একাকিত্বের এ যেন মহামারী। আর এই সুযোগটাই নিচ্ছে সর্বগ্রাসী ধনতন্ত্র। প্রতিটি মানুষকে জটিল যন্ত্রে পরিণত করছে। মানুষের মনের ভেতর যে মহাদ্বন্দ্ব আর মহাসংকট চলছে তা আজকের মনোবিজ্ঞানীদেরও বিস্মিত করছে। মনোবিজ্ঞানের প্রাচীন সূত্রগুলো আধুনিক মানুষের মনের এই সংকটের ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ। নিত্যনতুন অনুষঙ্গ তৈরি হচ্ছে আধুনিক মানুষের মনের ভেতর। বিস্ময়কর, অকল্পনীয় শিহরণ জাগানো আচরণ করছে আধুনিক মানুষ। অপরাধ বিজ্ঞানও তাজ্জব! এই যে জটিল মানুষ, তাকে সহজেই তান্ত্রিক বশীকরণের জগতে ঠেলে ফেলে দেওয়া যায়। উদ্ধারের সহজ পথ মেলে না।
ধনতান্ত্রিক বা পুঁজিতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা আজকের এই জটিল মানব সমাজকে মুক্তি বা শান্তি এতে দিতে পারবে না। অসুস্থ এই সমাজকে ভেঙে দিতে হবে। আজকের সমাজে এই যে তুকতাক বশীকরণ দ্রুত বিস্তার লাভ করছে তার পেছনের ইন্ধনদাতা এই ধনতন্ত্র। ধনতন্ত্র সংকটে পতিত বলেই জনগণের মনকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে ঈশ্বরের পাশাপাশি শয়তানকেও ব্যবহার করছে। বাস্তব জগৎ ভুলিয়ে দাও মানুষকে, ডুবিয়ে দাও অতিপ্রাকৃত জগতে, এই হচ্ছে ধূর্ত ধনতন্ত্র।
বিজ্ঞানীর দশ আঙুলে দশটি আংটি। গ্রহরতœ বিচার করে পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক আঙুলে ধারণ করেন বিচিত্র পাথর বসানো রিং। মানুষ তখনই অবাক হয় যখন দেখে কমিউনিস্ট বিপ্লবে বিশ্বাসী রাজনৈতিক বামকর্মীও রোগ সারানোর জন্য তাবিজ ধারণ করেন। বিশ্বাসটা দ্বান্দ্বিক, যদি লেগে যায়? পুঁজিবাদী সমাজ এভাবেই একজন বাম রাজনৈতিক কর্মীর বিশ্বাসে দ্বন্দ্ব এবং ধন্দ তৈরি করে। এখানেই পুঁজিবাদী দর্শনের শক্তি। সে মানুষকে ভেঙে দেয়, দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি করে তার চিন্তা এবং বিশ্বাসের জগতে।
ব্যক্তিমানুষের কোনো সমস্যাই জাদুটোনা-বশীকরণ তন্ত্র-মন্ত্র মীমাংসা করতে পারে না। পুঁথিগত শিক্ষা বা দেশি-বিদেশি বড় বড় ডিগ্রি মানুষকে তার অন্ধ বিশ্বাস থেকে সরাতে পারে না। যুক্তিবাদ, বুদ্ধিবাদ আর বিজ্ঞানমনস্কতাই মানুষের অন্ধ বিশ্বাস দূর করতে পারে। বিজ্ঞানমনস্ক হতে গেলে বিদেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির কোনো প্রয়োজন নেই। সে সব ডিগ্রি বরং সাধারণ মানুষ থেকে ডিগ্রিধারীকে দূরেই ঠেলে দেয়। অহংবোধ-উন্নাসিকতা তৈরি করে। মানুষকে আত্মস্বাধীন মানুষ হতে হবে। তবেই নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব বশীকরণ মহিমার নামের অন্ধকার জগৎ থেকে।
লেখক: কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক
প্রযুক্তির ছোঁয়া এখন আর শুধু উন্নত দেশগুলোতে সীমাবদ্ধ নেই। তুলনামূলকভাবে কম উন্নত দেশগুলোতেও উন্নয়নের মাত্রায় যোগ করেছে ভিন্নতা। প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের জীবনকে সহজ করে দেয় ঠিকই, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, প্রযুক্তির ব্যবহারে দিন দিন কমে যাচ্ছে কর্মসংস্থান।
বইয়ের কথাই ধরা যাক। বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা ছিল, আছে এবং থাকবে। কিন্তু দিন দিন বই পড়ার জন্য আমাজন কিন্ডল, ট্যাবলেট বা ইলেক্ট্রনিক বুক রিডার চাহিদা বেড়েই চলেছে। গড়ে উঠছে গুগল বুকস-এর মতো অনলাইন লাইব্রেরি। এসব লাইব্রেরিতে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা যে কোনো বই পড়া যায় ইচ্ছামতো। ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ইন্টারনেট-ভিত্তিক লাইব্রেরি গড়ে তোলার কাজ শুরু করে দিয়েছে। বড় বড় প্রকাশনীও তাদের মুদ্রিত বইগুলোকে ডিজিটাল ফরম্যাটে রূপান্তরের কাজ শুরু করে দিয়েছে। ফলে প্রথাগত প্রকাশনা ও লাইব্রেরিগুলো খুব দ্রুত আবেদন হারাচ্ছে। এটা অনুমেয় যে, লাইব্রেরিয়ানের কাজটি একসময় নিতান্তই বিরল হয়ে যাবে।
যেকোনো খেলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য দায়িত্বে একজন নিয়োজিত থাকেন। যেমন, ফুটবলে রেফারি আর ক্রিকেটে আম্পায়ার। বর্তমানে ভিডিও প্রযুক্তির উন্নতির ফলে ফুটবলে ও ক্রিকেটে অনেক সিদ্ধান্তই রিভিউ করা হয় প্রযুক্তির মাধ্যমে। তাই সে সময় আর খুব বেশি দেরি নেই, যখন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক খেলার সব সিদ্ধান্তই প্রযুক্তির সাহায্যে নেওয়া হবে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ফিউচার অব জব সার্ভে ২০২০ অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রায় সাড়ে আট কোটি চাকরি গায়েব হয়ে যাবে। তবে, নতুনভাবে উদ্ভব হবে আরও সাড়ে নয় কোটি চাকরির। যেসব চাকরির চাহিদা বাড়বে, তার প্রথম দিকে রয়েছে ডেটা বিশ্লেষক, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং বিশেষজ্ঞ, বিগ ডেটা বিশেষজ্ঞ, ডিজিটাল মার্কেটিং এবং কৌশল বিশেষজ্ঞ, প্রসেস অটোমেশন বিশেষজ্ঞ। আর যে চাকরির চাহিদা কমবে, সে তালিকার প্রথম পাঁচটি হলো ডেটা এন্ট্রি ক্লার্ক, প্রশাসনিক ও নির্বাহী সচিব, অ্যাকাউন্টিং, বুককিপিং এবং পে’রোল ক্লার্ক, হিসাবরক্ষক এবং নিরীক্ষক, উৎপাদন কারখানার শ্রমিক।
১৭৬০ সালের দিকে বাষ্পীয় ইঞ্জিনকে কেন্দ্র করে শুরু হয় প্রথম শিল্পবিপ্লব। বস্ত্র, খনিজ, কৃষি বিভিন্ন খাতে আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে তৈরি হয় শক্তিশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণির। ১৮৭১ সাল থেকে শুরু হয় প্রযুক্তিগত দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লব। রেলপথ, টেলিফোন ও বিদ্যুতের আবিষ্কার সে বিপ্লবের সময় কারখানাগুলোকে দেয় নতুন গতি, অর্থনীতিকে দেয় অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধি। এরপর বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে এসে শুরু হয় তৃতীয় শিল্পবিপ্লব। ইলেক্ট্রনিকস এবং তথ্যপ্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে ঘটে যাওয়া সেই বিপ্লব ডিজিটাল বিপ্লব নামেও পরিচিত। আসে কম্পিউটার, সুপার কম্পিউটার।
বর্তমানে বুদ্ধিদীপ্ত বিভিন্ন ধরনের সাইবার-ফিজিক্যাল সিস্টেমের উদ্ভবের মাধ্যমে আমরা এগিয়ে চলছি চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ভেতর দিয়ে। এই বিপ্লবের চালিকাশক্তি নানা ধরনের বিকাশমান প্রযুক্তির সংমিশ্রণ। এর মধ্যে যেমন আছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট অব থিংস, রোবোটিকস, বিগ ডেটা, ক্লাউড কম্পিউটিং; তেমন আবার আছে জিন প্রকৌশল, ন্যানোটেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি, থ্রি-ডি প্রিন্টিং, অগমেন্টেড রিয়েলিটি, ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মতো প্রযুক্তিগুলো।
জ্ঞানভিত্তিক এই বর্তমান বিশ্বে ভিত্তি যদি দুর্বল হয়, বড়জোর আমরা প্রযুক্তির ব্যবহারকারী হতে পারব, প্রযুক্তির উদ্ভাবনকারী হতে পারব না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রকৌশলী আর বিজ্ঞানীরাই শুধু চাকরির বাজার দখল করে রাখবেন, ব্যাপারটা সে রকমও নয়। একটি প্রযুক্তি অবলম্বন করে সৃষ্টি হয় অনেকগুলো কর্মসংস্থানের, যেগুলো ক্ষেত্রবিশেষে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে আয়ত্ত করা সম্ভব। যেমন মোবাইল ঠিক করার জন্য সবাইকে ইলেকট্রিক্যাল বা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হতে হয় না, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ থাকলে পাড়ার মোড়ের দোকানেই ঠিক করে ফেলা সম্ভব। অতএব, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবকেন্দ্রিক কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব বরাবরের মতোই থাকছে।
পূর্ববর্তী শিল্পবিপ্লবগুলোর সঙ্গে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের অন্যতম পার্থক্য হলো এটি আগের বিপ্লবগুলোর তুলনায় অনেক বেশি দ্রুতগতিতে পরিবর্তনশীল, প্রতিটি দেশের প্রায় প্রতিটি শিল্পকে এটি প্রভাবিত করছে। উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা, পরিষেবা কিংবা পরিচালনা সবকিছুরই রূপান্তরের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন খাতের ওপর এটুআই প্রকল্প দ্বারা পরিচালিত একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ২০৪১ সালের মধ্যে গড়ে এই খাতগুলোতে প্রতি পাঁচজনের দুজন চাকরি হারানোর ঝুঁকির মধ্যে থাকবেন। এর মধ্যে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র এবং ফার্নিচার খাতেই ঝুঁকির মুখে পড়বে ৬০ ভাগ চাকরি। তবে, এই সময়ে ৫৫ লাখ চাকরি হারানোর সম্ভাব্য হুমকির বিপরীত দিক হিসেবে ধারণা করা হয়েছে, ১ কোটি নতুন চাকরির সম্ভাবনাও তৈরি হবে।
একটু ভিন্নভাবে অনেকেই মত দিয়ে থাকেন, বিকাশমান এসব প্রযুক্তি প্রতিস্থাপন নয়, বরং মানুষকে স্মার্ট করবে, দক্ষ করবে। অ্যামাজন তাদের ওয়্যারহাউজে এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখের বেশি রোবট ব্যবহার করেছে। সঙ্গে সঙ্গে নিজ প্রতিষ্ঠানের প্রায় তিন লাখ কর্মীর শিক্ষা এবং দক্ষতা প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার বাজেটের ঘোষণা দিয়েছে। সামনের সময়গুলোতে চাহিদা বাড়বে, যেমন চিকিৎসা সহকারী, পরিসংখ্যানবিদ, সফটওয়্যার প্রকৌশলী, নার্সিং এসব বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্ব প্রদান করবে।
অধিকাংশ মানুষই পণ্য কেনার পর যত দ্রুত সম্ভব টাকা পরিশোধ করে চলে যেতে চান। বর্তমানেই স্বয়ংক্রিয় চেকআউট মেশিনগুলো নির্ভুলভাবে এবং অতি দ্রুত টাকা হিসাব করা ও গ্রহণ করার কাজটি সুন্দরভাবে করে যাচ্ছে। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই, নিকটবর্তী ভবিষ্যতে লেনদেনের জন্য একজন ক্যাশিয়ার রাখা ও তার বেতন দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না।
খাদ্য আমাদের অন্যতম প্রধান মৌলিক চাহিদা। আর খাদ্য উৎপাদনে কাজটি করে থাকেন একজন কৃষক। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবিকার উৎস কৃষিকাজ। কিন্তু কৃষি প্রকৌশলের উন্নতি ও আধুনিকীকরণের ফলে খুব শিগগিরই কৃষিতে মানুষের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে। ড্রোনের সাহায্যে জমির পরিমাণ নির্ণয়, স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের সাহায্যে বীজ বপন, ফসল কাটা, গাছ থেকে ফসল আলাদা করা ও প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ করা হবে। ফলে, এসব আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে মাত্র একজন কৃষকই বিপুল পরিমাণ জমিতে কৃষিকাজ করতে পারবেন। বর্তমানে, আমাদের দেশেই বীজ বপন, ফসল কাটার যন্ত্রের ব্যবহার অল্পবিস্তর শুরু হয়েছে।
এমতাবস্থায় এই জনশক্তিকে বোঝা না বানিয়ে সম্পদে পরিণত করার সময় এসেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো চতুর্থ শিল্পবিপ্লবকেন্দ্রিক কৌশল ঘোষণা দিয়েছে। যেখানে ডিজিটাল গভর্ন্যান্স ও সাইবার নিরাপত্তা, ডিজিটাল অর্থনীতি এবং সমাজের ডিজিটাল রূপান্তরের মতো বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে আমাদের প্রস্তুতি কতটুকু। প্রায় অর্ধযুগ ধরে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নিয়ে আলোচনা চলছে, আয়োজিত হচ্ছে ওয়ার্কশপ, সেমিনার। কিন্তু সে অনুযায়ী যে পরিকল্পনা, দীর্ঘ ও স্বল্প মেয়াদে যে কার্যক্রম হাতে নেওয়ার কথা ছিল, সেটি আশানুরূপভাবে দেখতে পাওয়া যায় না।
লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট
কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ এর ফাইনালে মুখোমুখি ইউরোপের ফ্রান্স ও লাতিন আমেরিকার আর্জেন্টিনা। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ, ক্ষণে ক্ষণে বিজয়ের কাঁটা ঘুরে এদিক ওদিক। শেষ পর্যন্ত জয় উঠেছে আর্জেন্টিনার ঘরে। ম্যাচের পেনাল্টি, অফসাইড হওয়া না হওয়া নিয়ে নানা বিতর্ক হলেও শেষ পর্যন্ত ট্রফি চলে গেছে লাতিনে।
ফ্রান্স একটি ইউরোপের দেশ। অন্যদিকে আর্জেন্টিনা লাতিন আমেরিকার। সাধারণ চিন্তায় লাতিনে মিশ্র বর্ণের ও ইউরোপে শে^তাঙ্গ মানুষের বসবাস বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু বিশ্বকাপ ফাইনালে দেখা গেল উল্টো চিত্র। ফ্রান্স টিমে খেলেছে কৃষ্ণ ও মিশ্র বর্ণের খেলোয়াড় অন্যদিকে আর্জেন্টিনা টিমে খেলেছে শে্বতাঙ্গ খেলোয়াড়রা। বিশ্বকাপ ফুটবলের আসরে প্রতিটি টিম তাদের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে। দুই দলের টিম নিয়ে পূর্ব ধারণা নেই এমন কেউ আর্জেন্টিনার টিমকে ইউরোপীয় টিম ও ফ্রান্সের টিমকে আফ্রিকার টিম ভেবে ভুল করতে পারে। আলোচনাটা খেলোয়াডের গায়ের রং নিয়ে হলেও এটা মোটেও বর্ণবাদী আলোচনা নয়। বরং এখানে যে উপনিবেশবাদ ও বর্ণবাদের আসল চিত্র লুকিয়ে আছে সেটাই দেখার চেষ্টা।
বিশ্বজুড়ে যখন দাস ব্যবসার রমরমা চলছিল তখন লাতিন আমেরিকার আর্জেন্টিনাতেও পৌঁওছছিল দাস বণিকদের জাহাজ। Africana, the Encyclopaedia of the African and African American Experience-এ জয় এলিহান্দ্রো লিখেছেন, ১৭০০ সালের দিকে আর্জেন্টিনার জনসংখ্যার অর্ধেক এবং রাজধানীর ৪০-৪২ ভাগই ছিল কৃষ্ণাঙ্গ অথবা মিশ্র বর্ণের। তারা নানারকম বৈষম্যের মধ্যে বসবাস করত। ১৮১২ সালে আর্জেন্টিনার বিখ্যাত রাজনীতিবিদ বেরনার্ডুকে দেশের এক্সিকিউটিভ বডি থেকে বাদ দেওয়া হয় কারণ তার মা ছিল আফ্রিকান বংশোদ্ভূত। আর্জেন্টিনায় যেখানে শে^তাঙ্গ বাচ্চারা ৪ বছরের মাধ্যমিক শিক্ষা পেত কৃষ্ণাঙ্গরা পেত ২ বছর। ১৮৫৩ সালের আগে কোনো কৃষ্ণাঙ্গের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অনুমতি ছিল না।
আজ লাতিন আমেরিকাতে কৃষ্ণাঙ্গ ও মিশ্র বর্ণের আধিপত্য থাকলেও আর্জেন্টিনায় সাদারাই একচ্ছত্র! আর্জেন্টিনায় কৃষ্ণাঙ্গদের নিধন করা হয় মূলত ১৮৬৫-১৮৭০ সালের প্যারাগুয়ে যুদ্ধে। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ে মিত্র শক্তি প্যারাগুয়ের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে আর্জেন্টিনার কৃষ্ণাঙ্গদের পরিকল্পিতভাবে যোদ্ধা ও মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। আর্জেন্টিনার সরকার যুদ্ধে কৃষ্ণাঙ্গ ও মিশ্র বর্ণের লোকদের বাছাই করে যুদ্ধে যেতে বাধ্য করেছিল। এই পরিকল্পনার মূলহোতা ছিলেন দেশটির সপ্তম রাষ্ট্রপতি ডমিঙ্গো ফিস্তনো সারমিয়েন্তো। ১৮৬৫ এর দিকেই আর্জেন্টিনায় দাসপ্রথা নিষিদ্ধ হয়। ফলে একদিকে আর্জেন্টনায় কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের আসা বন্ধ হয় অন্যদিকে যুদ্ধে তারা হাজারে হাজারে মারা পড়ে। দাসপ্রথা নিষিদ্ধ হওয়া ও পাঁচ বছরের যুদ্ধে অগণিত কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির মৃত্যুর পরও কিছু কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি বেঁচে ছিল। কিন্তু যুদ্ধ শেষে আর্জেন্টিনা ‘বিশুদ্ধ শে^তাঙ্গ জাতি’ তৈরির অভিযানে নামে। হিটলার যেভাবে ইহুদিমুক্ত জার্মানি গড়তে চেয়েছিলেন, রাখাইনরা যেভাবে রোহিঙ্গামুক্ত আরাকান চায় ঠিক তেমনি কৃষ্ণাঙ্গমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে দেশটিতে কৃষ্ণাঙ্গদের জঙ্গলে বসতি গড়তে বাধ্য করা হয়। পরে এসব বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে কলেরা ও পীত রোগে অসংখ্য কৃষ্ণাঙ্গ মৃত্যুবরণ করে। বর্তমানে বিরল হলেও কিছু মিশ্রবর্ণের আফ্রো-আর্জেন্টাইন সেখানে বাস করে। তারা মূলত যুদ্ধে পুরুষদের মৃত্যুর পর জীবিত থাকা কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের গর্ভে জন্ম নেওয়া শে্বতাঙ্গ ঔরসজাত প্রজন্ম। ফলে লাতিন আমেরিকার অন্যান্য টিমে কৃষ্ণাঙ্গ বা মিশ্রবর্ণের খেলোয়াড় দেখা গেলেও আর্জেন্টিনার দলটি একেবারেই ‘ইউরোপীয় ধবধবে শ্বেতবর্ণের টিম’। অবশ্য বোঝাই যাচ্ছে যে- আজ থেকে দেড়শ বছর আগেই বিশ্বে একটি বিশুদ্ধ শ্বেতাঙ্গ জাতি হিসেবে পরিচিতি পেতে চেয়েছিল আর্জেন্টিনা।
২০১৮ এর বিশ্বকাপ ফাইনালের আরেক রোমাঞ্চকর ম্যাচে ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল ফ্রান্স। সে ম্যাচে দুর্দান্ত একটি গোল করে ফ্রান্সের জয় নিশ্চিত করেছেন কিলিয়ন এমবাপ্পে। মাত্র ১৯ বছর বয়সে খেলতে এসে সে বিশ্বকাপে চারটি গোল করে বিশ্বের নজর কেড়েছিলেন এমবাপ্পে। ২০২২ এর বিশ্বকাপে ফ্রান্সের জয়ের জন্য কান্ডারি হিসেবে শেষ পর্যন্ত লড়েছিলেন এই তরুণ। এবার বিশ্বকাপ শিরোপা জিততে না পারলেও হাতে উঠেছে মর্যাদাপূর্ণ গোল্ডেন বুট। কিন্তু এমবাপ্পে মেজরিটি ফ্রেঞ্চদের মতো শ্বেতবর্ণের নন। মিশ্রবর্ণের এই তরুণের বাবা উইলফ্রিদ একজন খ্রিস্টান ও এসেছিলেন ক্যামেরুন থেকে। আর মা হলেন আলজেরিয়ান বংশোদ্ভূত ফেজা লামারি, ধর্মে মুসলিম ও পেশায় একজন হ্যান্ডবল খেলোয়াড়। ফ্রান্সের আরেকজন তারকা খেলোয়াড় পল লাবিল পগবাও একজন মুসলিম কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড। পল পগবার জন্ম ফ্রান্সে হলেও তার শেকড় গিনিতে। গিনির মুসলিম দম্পতির সন্তান পল পগবা। এমনকি তার অপর দুই যমজ ভাই ম্যাথিয়াস পগবা ও ফ্লোরেনটিন পগবা গিনি জাতীয় দলের হয়ে খেলেন।
কিন্তু কীভাবে আফ্রিকান এসব রতœ হয়ে গেলেন ফ্রেঞ্চ জাতীয়তাবাদের প্রতিনিধি! এটাই উপনিবেশবাদের চক্র। টেক দ্য বেস্ট অ্যান্ড লিভ দ্য রেস্ট। দুর্দান্ত খেলে বলে এমবাপ্পে ও পল পগবা ফ্রেঞ্চ। কিন্তু একই ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিম এসব পূর্বপরিচয় নিয়ে ফ্রেঞ্চ হওয়া অন্যান্য তরুণের জীবন কি ফ্রান্সে একই! ফ্রান্স কি অন্যদের নিয়ে যেভাবে গর্ব করে সেভাবেই কি এমবাপ্পে ও পল পগবাকে নিয়ে করে? উত্তর হলো, না।
ফ্রান্সে জন্ম নেওয়া আফ্রিকানদের নানা ধরনের বৈষম্যের মধ্য দিয়ে যেতে হয় এবং তাদের ফ্রেঞ্চ হিসেবে গণ্য করা হয় না। ফ্রান্সে মোট জনসংখ্যার মাত্র ৮ শতাংশ মুসলিম হলেও জেলখানাতে ৫০ শতাংশের অধিক কয়েদি আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মুসলিম, যারা এমবাপ্পে ও পল পগবার জাতভাই। ফলে ফ্রেঞ্চ একজন সাধারণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত কৃষ্ণাঙ্গের জীবন মোটেও ফ্রেঞ্চ জাতীয়তাবাদের গর্ব এমবাপ্পে ও পল পগবার মতো না। তাদের জীবন ওই জেলখানায় বন্দি ৫০ শতাংশ কয়েদির মতো।
প্রতি বছর ফ্রান্স আফ্রিকা থেকে আসা অন্তত ১০ হাজার আশ্রয়প্রার্থীকে ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু এমবাপ্পে ও পল পগবার মতো রতœরা হয়ে ওঠেন ফ্রেঞ্চ জাতীয়তাবাদের পরিচায়ক। এভাবে বছরের পর বছর ধরে আফ্রিকার রতœ দখল করে আজকের ফ্রান্সের নির্মাণ। ঘোষণা দিয়ে আফ্রিকানদের ‘সভ্য’ করে তোলার প্রত্যয়ে আফ্রিকার ২৪টা দেশে ফ্রান্সের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ফ্রান্সের দখল করা ২৪ দেশের মধ্যে ১৪ দেশে এখনো চলছে ফ্রান্সের শোষণ। টোগো, বেনিন, বুরকিনা ফাসো, গিনি বিসাউ, সেনেগাল, আইভরিকোস্ট, মালি, নাইজার, চাদ, ক্যামেরুন, মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র, কঙ্গো (ব্রাজাভিলা), নিরক্ষীয় গিনি ও গ্যাবনসহ ১৪ দেশকে বলা হয়ে থাকে ফ্রান্সফ্রিকা বা ফ্রাংক জোন। কারণ এই ১৪টি দেশকে ব্যবহার করতে হয় ফ্রান্স নিয়ন্ত্রিত মুদ্রা ফ্রাংক।
এসব দেশের জাতীয় আয়ের ৬৫ শতাংশই এখনো জমা রাখতে হয় ফ্রান্সে। আর তাদের আয়ের প্রায় ২০ শতাংশই ব্যয় করতে হয় ফ্রান্সের নানা দেনা মেটাতে। দেশ চালাতে অর্থের প্রয়োজন হলে তাদের অর্থই ফ্রান্সের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে হয়। এই চক্র থেকে বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আফ্রিকায় ফ্রান্সফ্রিকা নামে একটি নেটওয়ার্ক আছে। এই নেটওয়ার্কের কাজ হচ্ছে ফ্রান্সের চক্র থেকে বের হতে চাওয়া রাজনীতিবিদদের ক্যু, রাজনৈতিক হত্যাকা- ও কারচুপির নির্বাচনের মাধ্যমে দমিয়ে রাখা। সিলভানাস অলিম্পিতে ১৯৬৩ সালে টোগোতে নিজস্ব মুদ্রা চালুর লক্ষ্যে জাতীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু তার পরের দিন ফ্রান্সের প্রশিক্ষিত স্বদেশিরা তাকে হত্যা করে। ১৯৬৩ সালের পর থেকে এই পর্যন্ত ফ্রান্সফ্রিকার ১৪ দেশের ২২ জন সরকারপ্রধান হত্যার শিকার হন। যারা প্রত্যেকে নিজেদের জাতীয়তাবাদ নিয়ে সচেতন হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন।
এসব দেশে অন্য দেশের বিনিয়োগের সুযোগও নেই। চীন-ঘেঁষা আইভরি কোস্টের প্রেসিডেন্ট লঁরা বেগবো একটি সেতু গড়তে চেয়েছিলেন। এই সেতু নির্মাণে ফরাসি একটি সংস্থা মার্কিন ডলারে একটি দাম হাঁকে। কিন্তু তার অর্ধেক দাম হাঁকে চীনা প্রতিষ্ঠান। তারা অর্থ পরিশোধের সুযোগ দিয়েছিল আইভরি কোস্টের প্রাকৃতিক সম্পদ কোকো বিন দিয়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লঁরা বেগবোকেই ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হয়।
গৃহযুদ্ধ চলছিল মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রে। ফ্রান্সের অনুগত বনাম বিরোধী দলের মধ্যে। রাজধানী বাঙগুই বিমানবন্দরে মাত্র ৩০০ সৈন্য পাঠিয়ে অনুগতদের ক্ষমতা দখল করে দেয় ফ্রান্স। অন্যতম সম্পদশালী দেশ মালি। মালির ইউরেনিয়ামের পুরোটাই যায় ফ্রান্সে। চলতি দশকের শুরুতে শ’তিনেক মাফিয়া ও বিদ্রোহীদের হাত থেকে সোনার খনি রক্ষার কথা বলে ৪ হাজার ফরাসি সৈন্য ঘাঁটি গেড়ে বসেছে মালিতে। এছাড়া জিবুতি, গ্যাবন, সেনেগালেও সামরিক ঘাঁটি রয়েছে ফ্রান্সের। ২০১১ সালের কথিত আরব বসন্তের প্রাক্কালে লিবিয়ার গাদ্দাফির বিরোধীদের প্রথম সমর্থন দেয় ফ্রান্স। তার অন্যতম কারণ গাদ্দাফির আপসহীন মানসিকতা ও আফ্রিকান জাতীয়তাবাদের নেতৃত্ব দেওয়া যা ফ্রান্সের উপনিবেশের ভিত কাঁপিয়ে দিচ্ছিল।
ফ্রান্সের প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের জোগান দেওয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের চারভাগের তিনভাগই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এসব কেন্দ্রের কাঁচামাল ইউরেনিয়ামের বড় জোগানদাতা গ্যাবন, মালিসহ আফ্রিকার দেশগুলো। তাই গ্যাবনে দশকের পর দশক ধরে ফ্রান্স বসিয়ে রেখেছে তার পুতুল সরকার। আফ্রিকার ইউরেনিয়াম দিয়ে যেভাবে প্যারিস ঝলমল করছে তেমনি আফ্রিকান বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়দের পায়ের জাদুতে ট্রফি যায় ফ্রান্সের ঘরে। ঔপনিবেশিকতার শেষ হলো আর কোথায়!
লেখক: কলামিস্ট
প্রযুক্তির এই উৎকর্ষের যুগে যত লোভনীয় সময় কাটানোর উপাদানই থাকুক না কেন, বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে প্রত্যেক এলাকার জন্যই আমাদের মাঠ নির্দিষ্ট করতে হবে, মাঠের জন্য জায়গা রাখতে হবে। মাঠ কি আছে? মাঠগুলো থাকবে তো? আশঙ্কাটা নিতান্তই অমূলক নয়। দেশজুড়ে বহু মাঠ বেদখল হয়ে গেছে। খেলার মাঠ কেড়ে নিয়ে কেউ স্টেডিয়াম গড়েনি, নির্মিত হয়েছে বহুতল ভবন কিংবা শপিং মল। আকাশ চুরির মতোই চুরি হয় মাঠ-ময়দান। অন্যদিকে, আমাদের দেশে বড় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলাধুলা আয়োজনের অবকাঠামোগত ঘাটতি রয়েছে। ফুটবল, ক্রিকেটের জনপ্রিয়তার বিপরীতে তার অবকাঠামো বেশ দুর্বল। ঘুরেফিরে বারবার একই ভেন্যুতে হয় আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলো। ঢাকার শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম ও চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম; এই দুটো ভেন্যুতেই আয়োজন করা হয় আন্তর্জাতিক সিরিজগুলো। অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সংস্কারকাজ চলায় বাফুফেকে ফুটবল খেলার আয়োজন করতেও বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। সারা দেশের জেলা স্টেডিয়ামগুলোর বেশিরভাগের বেহাল দশা আর ক্রীড়াঙ্গনের স্থবিরতা ক্রীড়াক্ষেত্রের উন্নয়নে অন্যতম বড় দুই বাধার নাম।
মঙ্গলবার দেশ রূপান্তরে ‘গর্বের স্টেডিয়াম এখন ডোবা’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২৫ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামটি বছরের পর বছর ধরে পানিতে নিমজ্জিত থাকায় স্টেডিয়ামটির ভেতরে ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। দিনেও মাঠের ভেতর উঁকি দিতে কাউকে দেখা যায় না। আর সন্ধ্যা নামতেই মাঠের পাশ দিয়ে যাতায়াত করতে পথচারীদের গা শিউরে ওঠে। এমন একটি আন্তর্জাতিক ভেন্যু চোখের সামনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, অথচ দেখার যেন কেউ নেই। অচিরেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজর না দিলে ঐতিহ্যবাহী এই স্টেডিয়াম পড়বে অস্তিত্বসংকটে। পরিত্যক্ত ডোবায় পরিণত হবে একটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামটির বর্তমান অবস্থা দেখে জনমনে প্রশ্ন এই ডোবায় কি এখন মাছ চাষ হবে? হাঁসেরা ঘুরে বেড়াবে? মাছ আর হাঁস মিলে ক্রিকেট খেলবে? জানা গেছে, স্টেডিয়ামটি ২০০৪ সালে অনুষ্ঠিত আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। ২০১১ ক্রিকেট বিশ্বকাপে এই মাঠে ইংল্যান্ড-পাকিস্তানের একটি প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ হয়েছিল। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপের অন্যতম প্রধান ভেন্যু ছিল এই মাঠ। ২০০৬ সালের ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের মাধ্যমে শুরু হয় এই স্টেডিয়ামে টেস্ট ম্যাচের ইতিহাস। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ-ভারত টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় এখানে। সর্বশেষ এই মাঠে খেলার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের। তবে জলাবদ্ধতার কারণে প- হয়েছিল ম্যাচটি। সেই জলাবদ্ধতা দূর করতে নেওয়া হয়নি কার্যকর কোনো পদক্ষেপ। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, ক্রিকেট বোর্ড বা জেলা ক্রীড়া সংস্থাসহ কোনো সংস্থার কর্মকর্তারাই এ ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তা এ জেড এম ইসমাঈল বাবুল বলেন, ‘দুর্নীতি আর অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণের কারণেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সাত বছর ধরে অস্তিত্বসংকটে পড়ে আছে স্টেডিয়ামটি।’ আমরা চাই জলাবদ্ধতা কাটুক, মাছ চাষ নয় খেলা হোক স্টেডিয়ামটিতে।
বাংলাদেশের ১০টি স্টেডিয়াম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজনে সক্ষম হলেও মাত্র দুটি স্টেডিয়ামে আয়োজন করা হয় ম্যাচগুলো। তবে ওই দুই স্টেডিয়ামে অতিরিক্ত খেলা হওয়ায় ভালো উইকেট তৈরি করতে পারেন না কিউরেটররা। খেলার মান উন্নয়নে স্টেডিয়াম বাড়ানোর বিকল্প নেই। পাশাপাশি বর্তমান মাঠগুলোর উন্নয়নেও অতিসত্বর কাজ শুরু করা উচিত। কারণ ম্যাচের বাইরেও সারা বছর খেলোয়াড়দের প্রস্তুতি ও অনুশীলন করতে হয়। ঢাকার বাইরের বাকি স্টেডিয়ামগুলোতে পর্যাপ্ত অনুশীলনের সরঞ্জাম নেই। ক্রীড়াঙ্গনের প্রাণকেন্দ্র স্টেডিয়ামগুলোর তদারকিতে থাকা ক্রীড়া সংস্থাগুলোর গাফিলতির খবর এখন ওপেন সিক্রেট। স্টেডিয়ামগুলোর এমন ভঙ্গুর দশা যেন দেখার কেউ নেই। উন্নত ক্রীড়া কাঠামো থাকলেও নেই কোনো রক্ষণাবেক্ষণ। বিপুল সরকারি অর্থ খরচ করে তৈরি স্টেডিয়ামগুলো ফেলে রাখায় একদিকে যেমন তা নষ্ট হচ্ছে; অন্যদিকে তা কোনো কাজে তো আসছেই না, বরং অপচয় বাড়ছে। সারা দেশের স্টেডিয়ামগুলো জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অধীনে। আর দেখভালের দায়িত্বে জেলা ক্রীড়া সংস্থা। খেলাধুলার স্থবিরতার অন্যতম কারণ হিসেবে ক্রীড়া সংস্থার উদাসীনতাকে দায়ী করা হয়। তবে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ও দায় এড়াতে পারে না। মন্ত্রণালয়ের কঠোর নজরদারির বিকল্প নেই। সারা দেশের উপজেলা পর্যায়ে স্টেডিয়াম নির্মাণে সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগকেও ভেস্তে দিয়েছে বেশকিছু অসাধু ব্যক্তি। ক্রীড়াঙ্গনের উন্নতিতে সারা দেশের ক্রীড়া কাঠামোগুলোর সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ এখন সময়ের দাবি।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে ফরমায়েশি বলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য দেশের আইন ও আদালত অবমাননার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির মামলায় এর আগে বিএনপির দুই নেতাকে নিম্ন আদালতের দেওয়া সাজা বহাল রেখে দেশের উচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছে, সে সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিবের দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দেশবাসীকে হতাশ করেছে।’
গতকাল বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদে জানিয়ে এ বিবৃতি দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মনে করেন, মার্কিন নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করার পর বিএনপি তাদের বিদেশি প্রভুদের কাছ থেকে করুণা প্রাপ্তির আশায় সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। উচ্চ আদালতের রায়কে ফরমায়েশি বলা তাদের সেই চলমান ষড়যন্ত্রেরই অংশ। বিএনপির এ দুই নেতার আজকের পরিণতি তাদের ধারাবাহিক অপরাজনীতিরই ফসল বলে মন্তব্য করেন সেতুমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট শাসন আমলে হাওয়া ভবন খুলে তারা দুর্নীতি ও লুটপাটের মহোৎসবে মেতে উঠেছিল, যার পরিণতিতে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সে সময় হাওয়া ভবনের কর্ণধার জিয়াপুত্র তারেক রহমানের দুর্নীতির খতিয়ান বিশ^ গণমাধ্যম ও বিশ^খ্যাত গোপন নথি প্রকাশকারী সংস্থা উইকিলিকসে বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি দুই নেতার দুর্নীতির মামলার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কোনো যোগসূত্র নেই। ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে এবং তাদের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ার পর নিম্ন আদালত সাজা দিয়ে রায় দেয়। প্রায় ১৬ বছর বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ করে আদালত তাদের সাজা দিয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশের পবিত্র সংবিধান অনুযায়ী সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যার কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও আইন ও বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। এমনকি বিশ্বজিৎ হত্যাকা- এবং বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার হত্যা মামলায়ও ছাত্রলীগের নেতারা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ভোগ করছেন।’ তিনি বলেন, বিএনপি দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে তাদের দলীয় গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করেছে এবং দলের চিহ্নিত শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের সুরক্ষা দিয়েছে।
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রসঙ্গ উঠলেই আলোচনায় আসেন সাবেক সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরণ। নগরীর লোকেরা বলে, তার মতো নগর পিতা দরকার। এবার আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত নগরবাসীকে কথা দিয়েছেন, হিরণের মতো করে নগরী গড়বেন তিনি। শওকত হোসেন হিরণের মৃত্যুর এক দশক পেরিয়ে গেছে, তবু তিনি আলোচনায়; শুধু বরিশালে নয়, সারা দেশে।
সংশ্লিষ্ট লোকজন বলে, হিরণের কর্মফলই তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। একসময় সব ক্ষেত্রে বরিশাল সিটির মানুষ অবহেলিত ছিল। সেসব অবহেলার কারণ ঘুচিয়ে এবং মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী নগরীকে আধুনিক করার অঙ্গীকার নিয়ে হাজির হন হিরণ। মেয়র নির্বাচিত হয়ে পাঁচ বছরের মধ্যে নগরীর রূপ পাল্টে দেন তিনি। বরিশালকে সাজান আধুনিক রূপে।
অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য আবদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হিরণ ছিলেন আদর্শ নেতা। মানুষকে বোঝার চেষ্টা করতেন। দক্ষ ও বিচক্ষণ এবং সৃজনশীল মানুষ। তিনি নগরীর উন্নয়ন নিয়ে যেমন ভেবেছেন, ঠিক তেমনি মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন। তাই মানুষ ভুলতে পারে না তাকে।’
বিসিক শিল্পনগরীসংলগ্ন চায়ের দোকানদার মো. হালিম বলেন, ‘হিরণ সবসময় মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করতেন। সাধারণ পোশাকে চলতেন। দলমত নির্বিশেষ সবাইকে ভালোবাসতেন।’
নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সমির বলেন, ‘মেয়র হিরণ আমাদের জন্য রাস্তাঘাট, সড়কে বাতির ব্যবস্থাসহ অনেক কিছু করেছেন। তার কাজগুলোই কোনোমতে অনুসরণ করেছে অন্যরা। যে কাজ করে তাকেই তো মনে রাখব আমরা, তাই হিরণকে মনে রেখেছি।’
রিকশাচালক মো. হারুন বলেন, ‘এ নগরীর রাস্তাঘাট চলাচলের অযোগ্য ছিল। রাতে অন্ধকারে ডুবে থাকত। চুরি-ডাকাতি নিত্যখবর ছিল। কিন্তু হিরণ মেয়র হওয়ার পর রাতারাতি নগরী বদলে গেল। অনেক মানুষকে সিটি করপোরেশনে চাকরি দিয়েছেন তিনি। নগরীর গরিব মানুষকে এক টাকা করে হলেও সাহায্য করেছেন। সবার মন জয় করেছেন। আজ তার মতো একজন মানুষ থাকলে আমরা শান্তিতে নিঃশ্বাস নিতে পারতাম।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যাকে হারিয়েছি তাকে তো আর ফিরে পাব না। কিন্তু তার কর্ম, মানুষের প্রতি তার সম্মান এবং ভালোবাসা তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তিনি বিদ্যালয়ে এলে কখনো রাজনৈতিক আলাপ করতেন না। সবসময় শিক্ষার্থীদের আদর্শ মানুষ হওয়ার জন্য বলতেন, গল্প শোনাতেন।’
একজন ব্যবসায়ী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হিরণ সাহেব থাকাকালে ব্যবসা করতে গিয়ে কখনো হেনস্তার শিকার হইনি। তিনি নিজেও ব্যবসায়ী ছিলেন। আমাদের ব্যবসায়ীদের কষ্ট তিনি বুঝতেন। কিন্তু নগরীর একদল মানুষ তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তাকে নির্বাচনে হারিয়ে দিয়েছে। তারপর হিরণ সাহেব দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন।’
বিএম কলেজের সাবেক ভিপি ও শওকত হোসেন হিরণের ঘনিষ্ঠ মঈন তুষার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হিরণ সাহেব প্রত্যেক নেতাকর্মীর নাম জানতেন। তিনি যার সাঙ্গে কথা বলতেন, সেই মানুষটিকে ভুলতেন না। এজন্য মানুষ তার প্রতি এত দুর্বল এবং আকৃষ্ট। নগরীর জন্য তিনি মাস্টারপ্ল্যান করে কাজ করেছেন। তার সঙ্গে মানুষ সরাসরি কথা বলতে পারত এবং দেখা করত। এখনো মানুষ তাকে ভালোবাসে এবং মনে রেখেছে।’
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সোহেল রানা বলেন, ‘সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণ বরিশালকে আধুনিক নগরীতে রূপান্তরিত করে গেছেন। উন্নয়ন-আন্তরিকতা ও ব্যবস্থাপনার দক্ষতার সমন্বয় ঘটিয়ে তিনি একজন আইকনিক সিটি মেয়র ছিলেন। আন্তরিকতাই একজন প্রশাসকের মূল সূচক। তাই তিনি সাধারণ মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছেন।’
মেয়র হিরণ ব্যক্তিগত জীবনে কেমন ছিলেন এ প্রশ্নের উত্তরে তার সহধর্মিণী ও সাবেক সংসদ সদস্য জেবুন্নেসা আফরোজ হিরণ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২৬ বছর আমি তাকে দেখেছি। তিনি কারও ভাই ছিলেন, একজন স্বামী ছিলেন এবং সন্তানদের বাবা ছিলেন। পরিবারভক্ত একজন মানুষ। মানবিক গুণাবলি ছিল। তার মা-ভক্তির খুব নাম আছে বরিশাল শহরে। স্বজন-সন্তান ও পরিবারের প্রতি যতœ নেওয়ায় কোনো কমতি ছিল না। স্ত্রী হিসেবে তাকে অসাধারণ কর্তব্যপরায়ণ একজন মানুষ হিসেবে দেখেছি আমি।’
তিনি বলেন, ‘উনি রাজনৈতিক মহলে অত্যন্ত বিচক্ষণ একজন ব্যক্তি ছিলেন। কর্মী ও সহযোদ্ধাদের প্রতি ভালোবাসা ছিল; নেতাদের প্রতি সম্মানে কোনো ঘাটতি ছিল না তার। ২০০১ সালের জামায়াত-বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসে, তখন কর্মীদের কীভাবে বুকে আগলে রাখতে হয় আমি তা পাশে থেকে দেখেছি। রাজনীতি এবং নগর উন্নয়নÑ দুই ক্ষেত্রেই তিনি সফল।’
প্রসঙ্গত, শওকত হোসেন হিরণ এলএলবি পাস করার পর জাসদ ছাত্রলীগে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন এবং ১৯৮৮ সালে ২২ বছর বয়সে বরিশাল সদর উপজেলা থেকে বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর আলোচনায় আসেন তিনি। ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। রাজনীতিতে আরেক দফা পরিবর্তন আসে ১৯৯৬ সালের পর। স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে ভালো সখ্য থাকায় আওয়ামী লীগে যোগ দেন হিরণ। তার রাজনৈতিক সক্রিয়তা ও সাংগঠনিক দক্ষতা বিবেচনা করে ২০০৩ সালে কেন্দ্রীয় কমিটি তাকে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মনোনীত করে। ২০০৮ সালের ৪ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন। বরিশাল মহানগরীকে আধুনিক সাজে সাজান। স্থানীয় মানুষ ও তার অনুসারীদের কাছে আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। ২০১২ সালে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামালের কাছে পরাজিত হন। গুঞ্জন রয়েছে, তার দলীয় লোকেরাই তার পরাজয়ের কারণ। হিরণের মন ভাঙলেও তিনি থেমে যাননি। ২০১৪ সালে বরিশাল সদর আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই বছর ৯ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের মুখে থাকা কুড়িগ্রামের চর ভগপতিপুর সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিকটি অবশেষে বিলীন হয়ে গেছে। ক্লিনিকটি সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চলের চর ভগপতিপুর এলাকায় ছিল।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে চর ভগপতিপুর সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিকটি ব্রহ্মপুত্রের গর্ভে বিলীন হয়। এর আগে ওই এলাকার একটি স্কুলও ভাঙনের শিকার হয়। এ ছাড়াও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে একটি মসজিদ ও আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দাদের। ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছে ব্রহ্মপুত্র নদসহ অন্যান্য নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গফুর বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের গাফিলতির কারণে ক্লিনিকটি নিলামে বিক্রি করা সম্ভব হয়নি।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, অনেক চেষ্টা করেও ক্লিনিকটি রক্ষা করা গেল না।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।