
তিন মহাদেশ-জুড়ে বিস্তৃত ছিল ওসমানীয় রাজবংশের শাসন। এই বংশের একজন সুলতান সুলাইমান ১ম ছিলেন তার সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে সম্পদশালী সুলতান। ওসমানীয় সুলতানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময়, ৪৬ বছর শাসন করেছিলেন তিনি।
১৫১৬ থেকে ১৯১৭ পর্যন্ত জেরুজালেমসহ মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ ছিল ওসমানীয় সাম্রাজ্যের অধীন। কিন্তু জেরুজালেমে ক্যাথলিক ও অর্থডক্সদের মধ্যে বিবাদ ধীরে ধীরে তীব্র হয়ে উঠল। বিবাদটি প্রধানত বেথেলহামের নেটিভিটি চার্চের কন্ট্রোল কারা করবেরাশিয়ার অর্থডক্সরা না ফ্রাঞ্চের ক্যাথলিকরা, এ নিয়ে।
১৮৪৫ সালে রাশিয়া ঈসার (আ.) জন্মস্থানের চার্চে পেট্রিয়ার্ক পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিল। ১৮৪৭ সালে ফ্রান্সও পাঠায়। একবার ক্যাথলিকরা একটি রুপার তারকা যিশুখ্রিস্টের জন্মের স্মৃতিস্মারক হিসেবে নেটিভিটি চার্চে স্থাপন করে। ওটা নাকি অর্থডক্স সাধুরা চুরি করে নিয়ে যায়।
তাদের এ ধরনের ঝগড়া দেখে ওসমানীয় সুলতান বিরক্ত হয়ে কমিশন গঠন করে ফয়সালা করার চেষ্টা করেন। ১৮৫২ সালে ফ্রান্স জোরপূর্বক সব খ্রিস্টীয় ধর্মীয় স্থানের নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করে। রাশিয়ার জার সম্রাট এটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন। ১৮৫৩ সালে ওসমানীয় সাম্রাজ্য আর ব্রিটেন-ফ্রান্স জোটবদ্ধ হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেতে প্রস্তুত হয়। হুমকি প্রথম আসে রাশিয়ার জারের তরফ থেকে অভ্যন্তরীণ সংকটে পর্যুদস্ত ওসমানীয় সুলতানের কাছে। জোটবদ্ধ হয়ে সুলতান প্রথম আব্দুল মজিদ যুদ্ধের ঘোষণা দেন। প্রায় তিন বছরের এ যুদ্ধে একেক পক্ষে দুই লক্ষাধিক করে চার লক্ষাধিক সৈন্য মারা যায়। ১৮৫৬ সালে যুদ্ধ শেষ হয়। রাশিয়া হেরে যায়। রাশিয়ার সৈন্যবাহিনীতে অন্যতম কমান্ডার ছিলেন লেফটেন্যান্ট কাউন্ট তলস্তয়। ইনিই বিখ্যাত সাহিত্যিক লেভ তলস্তয়।
ক্রিমিয়ার যুদ্ধে ব্রিটেন, ফ্রান্স ছিল ওসমানীয় সাম্রাজ্যের সঙ্গে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধে এসে রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা যৌথ বাহিনীর সঙ্গে মানে ওসমানীয়-জার্মানি জোটের বিরুদ্ধে। তখন ওসমানীয় সাম্রাজ্যের শেষ সুলতান ষষ্ঠ মুহাম্মাদ মুসলিম বিশ্বকে জিহাদে অংশ নেওয়ার ডাক দিয়েও সাড়া পাননি। ১৯১৮ সালের ৩০ অক্টোবর ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজে সাম্রাজ্যের বাইরে ওসমানীয় আত্মসমর্পণ স্বাক্ষর হয়। যৌথবাহিনীর সৈন্যরা কনস্টান্টিনোপল এসে সুলতানের প্রাসাদ দখল করে রাখে।
কঠিন পরিস্থিতি! কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের মাধ্যমে সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহ যে অবিস্মরণীয় ইতিহাস রচনা করেছিলেন, বাইজেন্টাইন ক্রুসেডারদের সাম্রাজ্যের পতন ঘটিয়েছিলেন, সেই কনস্টান্টিনোপল আবার খোয়া যাবে? তখনের ক্রুসেডার রাজ্য ব্রিটেন ও ফ্রান্স কি অটোমানদের মূল ভূখণ্ড বর্তমান তুরস্ক দখলে নেবে? পাশেই গ্রিস ওঁৎ পেতে আছে আনাতোলিয়া দখলে নিতে। চৌদিকে জেগে উঠল বিস্ময়করভাবে জাতীয়তাবাদী চেতনা। অন্য ইতিহাসের যাত্রা শুরু হলো। কখনো দেশভিত্তিক জাতীয়তাবাদ আত্মরক্ষার কৌশল। তা না হলে আদ্রিয়ানোপল ও কনস্টান্টিনোপল এখন পর্যন্ত তুরস্কের অধীন থাকত না। কিন্তু মুসলমানদের ক্ষতি হয়েছে অন্যদিকে।
চার বছরের প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হতে হতে ওসমানীয় সাম্রাজ্যও বিলুপ্তির শেষ প্রান্তে চলে আসে। ১৯০১ থেকে ১৯২৩ পর্যন্ত, অর্থাৎ মোস্তাফা কামাল পাশার নেতৃত্বে রিপাবলিক অব টার্কি প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত আসলে বহু ঐতিহাসিক ঘটনার ভেতর দিয়ে যায় ওসমানীয় রাজবংশ। ভেতরে ও বাইরে শত্রু।
মোস্তাফা কামাল পাশা ছিলেন ওসমানীয় সাম্রাজ্যের সামরিক বাহিনীর ১৯তম ডিভিশনের কমান্ডার। ১৯১৯ সালের ৮ জুলাই ইস্তফা দিলে সুলতানের সরকার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। কামাল এরমধ্যেই তার দলীয় প্রচারণার মাধ্যমে বর্তমান তুরস্ক ভূখণ্ডের মানুষের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগিয়ে তুলেছেন। তখন ভূখণ্ডের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সুলতানি আমলের পতন চাওয়ার পাশাপাশি সতর্ক হয়ে ওঠে বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে। ওসমানীয় সাম্রাজ্য বিলুপ্ত হওয়ার এ ক্রান্তিকালে, গ্রিকরা দখল করতে চায় তুরস্কের ইজমির প্রদেশ, ফ্রান্স ব্রিটেনের যৌথবাহিনী কনস্টান্টিনোপল প্রাসাদে রয়েছে। ফ্রান্স, ব্রিটেন চাচ্ছে দেশটা টুকরো টুকরো করে দিতে। পূর্ব আনাতোলিয়ার প্রদেশগুলো একত্র করে আর্মেনিয়া স্বাধীন রাষ্ট্র করতে চায়। তারাও মোস্তাফা কামাল পাশাকে গ্রেপ্তার করতে চায়। অন্যদিকে, তিনি চান তুরস্কের জনগণের স্বাধীনতা। এক পর্যায়ে ‘কনস্টান্টিনোপলের রক্ষাকর্তা’ পরিচিত বীরযোদ্ধা কনস্টান্টিনোপল থেকে ৪৮০ কিলোমিটার দূরে আঙ্কারা চলে যান গ্রেপ্তার এড়াতে। রাশিয়ায় ইতিমধ্যে ১৯১৭ সালে বলশেভিক বিপ্লব হয়ে গেছে। সম্রাট জারের আমলে সংঘটিত যুদ্ধে রাশিয়া ফ্রন্টে বীরত্ব প্রদর্শন করতে পারায় মোস্তাফা কামাল জেনারেল পদে উন্নীত হন, তখন থেকেই নামের সঙ্গে পাশা যুক্ত হয়।
আঙ্কারায় ১৯২০ সালের ২৩ এপ্রিল গ্র্যান্ড ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে মোস্তাফা কামালকে রিপাবলিক অব টার্কির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হয়। নবগঠিত সোভিয়েত ইউনিয়ন সবার আগে মোস্তাফা কামাল পাশাকে স্বীকৃতি দেয়। সোভিয়েতের মিলিটারি সহায়তা পেয়ে ইজমির থেকে গ্রিসকে হটিয়ে দিতে সমর্থ হন কামাল আতাতুর্ক। আতাতুর্ক মানে জাতির পিতা।
পরে ১৯২২ সালে শেষ ওসমানীয় সুলতান ক্ষমতাচ্যুত হতে বাধ্য হন। ওসমানীয় রাজবংশের পুরো পরিবারকে নির্বাসনে যেতে বাধ্য করে নতুন প্রতিষ্ঠিত রিপাবলিক তুরস্কের নেতারা। ১৫৬ জন রয়েল পরিবারের সদস্যকে তিন দিনের ভেতর তাদের স্বদেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়। তাদের খাদেমরা যারা তাদের সঙ্গে থাকতে চায়, ওদেরসহ নির্বাসিতের সংখ্যা শত শত হয়ে যায়।
ক্ষমতাচ্যুত ওসমানীয় রয়েল পরিবারের সদস্যদের কেবল বেরিয়ে যাওয়ার পাসপোর্ট দেওয়া হয়। তারা চেয়েছিলেন মিসরে আশ্রয় নিতে। রাজা ফুয়াদ ও ব্রিটিশরাজ সে সুযোগ দেননি। তারা সিরিয়া যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু কামাল আতাতুর্কের সরকার বাধা দেয়। পরে কিছু সদস্য ফ্রান্সশাসিত বৈরুতে যান, বাকিরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেন। রয়েল পরিবারের কাছের মানুষ, যাদের ‘বিশ্বস্ত’ মনে করা হতো, তারাও দুর্দিনে ধোঁকা দিয়ে অর্থ সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছেন। দাদা পরদাদার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বাড়ি-গাড়ি, স্বর্ণালংকার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি পানির দরে ‘বিশ্বস্ত’দের দিয়েও ন্যায্য হকটুকু না পেয়ে সাধের জন্মভূমি ছেড়ে যেতে হয়েছে তাদের।
বিতাড়িত হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই কোনো কোনো অটোমান রয়েল সদস্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কেউ হোটেলে ডিশ সাফ করে, কেউ ভিক্ষা করে, কেউ কেউ আবর্জনার স্তূপ থেকে ক্যান কুড়িয়ে খাবার জোগাড় করেন। কেউ কেউ অনাহারে মারা গেছেন। (দ্য বিটার স্টোরি অব দি অটোমান ডাইনেস্টি’জ অ্যাক্সাইল বাই একরাম বোগরা আকিঞ্জি, ডেইলি সাবাহ, মার্চ ২০১৫।)
১৯৩৪ সালে কামাল পাশা সরকারের আমলে আদালতের রায় অনুসারে হায়াস সোফিয়া মসজিদকে মিউজিয়াম করা হয়। ওসমানীয় সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহ (মুহাম্মাদ দ্বিতীয়), যিনি কনস্টান্টিনোপল জয় করেছিলেন, যিনি এথেন্স জয় করে একেবারে ইতালির কাছে চলে গিয়েছিলেন। যিনি হায়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তর করেছিলেন, যিনি সুলতানদের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্যে, ওসমানীয় সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখার জন্য পরবর্তী সময়ে সুলতান পরিবারের ভেতরে কাকে কাকে মেরে ফেলতে হবে, এ বিষয়ে কানুনও করেছিলেন। এ কানুন অনুযায়ীই পরবর্তী সময়ে ক্ষমতায় আসা সুলতান তৃতীয় মুহাম্মাদের ১৯ সন্তানকে হত্যা করা হয়েছিল। (তুর্কচে ভাষায় আরবি মুহাম্মাদ শব্দটিকে বলা ও লেখা হয় ‘মেহমেত’। তবু টিকল না সাম্রাজ্য। কেন আর টিকে থাকার দরকার নেই? এ প্রশ্নের উত্তর বহু হতে পারে।
সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহের ছেলে দ্বিতীয় বায়েজিদ বাপের কথা শুনতেন না। সমালোচনা করতেন কঠোরভাবে। মনে করা হয়, সম্ভবত এই ছেলেরই ইশারায় অসুস্থ সুলতান মুহাম্মাদকে বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়েছিল। তখন মাত্র ৪৯ বছর বয়স সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহের। (According to the historian Colin Heywood, “there is substantial circumstantial evidence that Mehmed was poisoned, possibly at the behest of his eldest son and successor, Bayezid.)
এরপর সুলতান হন দ্বিতীয় বায়েজিদ। এটা ঠিক যে, কনস্টান্টিনোপল জয় সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহের অসাধারণ কৃতিত্ব। তবু বিষয়টি এমন নয় যে, তিনি যা কিছু করেছেন সব সঠিক; না তা না, তিনি ভুলের ঊর্ধ্বে ছিলেন না। ভুল তার হতেই পারে। (তথ্যসূত্র: এনসিয়েন্ট হিস্টোরি এনসাইক্লোপেডিয়া)
উল্লেখ্য, ওসমানীয় শেষ সুলতান মুহাম্মাদ ষষ্ঠ দোলমাবাশে প্রাসাদ থেকে পেছনের দরজা দিয়ে কনস্টান্টিনোপল ছেড়ে যান, যেতে হয় একেবারে স্বদেশের বাইরে নির্বাসনে, ৬২৪ বছরের তারই রাজবংশের বীরত্বগাথা ইতিহাস পেছনে রেখে।
লেখক: কবি, অনুবাদক, প্রাবন্ধিক
ষোলো শতকের ব্রিটিশ বণিক ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা স্যার টমাস গ্রেশাম (১৫১৯-৭৯) অনেক বুঝেশুনে এই অবস্থাকে Bad money drive away good money from the market বলে বর্ণনা করেছেন। ভালো আর মন্দকে একসঙ্গে এক পাড়ায় বসবাস করতে দিয়ে ভালোর আলোয় মন্দকে কলুষমুক্ত হতে সাহায্য করা যেখানে উচিত, সেখানে ভালোকে পত্রপাঠ মাঠ থেকে সাজঘরে পাঠিয়ে দিয়ে ওয়াকওভারের পরিবেশ সৃষ্টি করা সভ্যতার সংকট সৃষ্টির জন্য অতি উপাদেয় উপাদান। মতৈক্য আর মতানৈক্যের মাঝখানে বিভেদের যে দেয়াল সে দেয়াল ভালো ও মন্দ উভয়েরই জন্য সংকট সৃষ্টি করে। ভালোকে ভালো থাকতে না দেওয়া আর মন্দকে আরও মন্দ হতে বাধ্য করার ক্ষেত্রে এ সংকটের সুনাম সুবিদিত।
সমাজ ও অর্থনীতিতে টেকসই উন্নয়ন ও অগ্রগতির অভীপ্সা আকাক্সক্ষায় সব পক্ষ ও অনুষঙ্গকে নিরবচ্ছিন্ন নিঃশর্ত ঐকমত্যে পৌঁছানোর তাগিদে সবাইকে বিচ্যুতির পরিবর্তে অন্তর্ভুক্তির অবয়বে আসার অবকাশ রয়েছে। সামষ্টিক অর্থনীতির উন্নয়ন ভাবনায় সমন্বিত উদ্যোগের প্রেরণা ও মতবাদ হিসেবে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি (Financial inclusion) তথা সার্বিক সামাজিক অন্তর্ভুক্তির (Social Integration) দর্শন বিশেষ বিবেচনা ও ব্যাপক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসছে। ঝড়পরধষ ইঁংরহবংং-এর ধারণা দ্রুত দৃষ্টিসীমার মধ্যে এসে যাচ্ছে। এমনকি মানবসম্পদ উন্নয়ন কার্যক্রমের দ্বারা দক্ষতা ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি ছাড়াও সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়াসকে সমাজবিজ্ঞানীরা করপোরেট কালচারের প্রেরণা হিসেবেও শনাক্ত করেন। স্থান-কাল-পাত্রের পর্যায় ও অবস্থানভেদে উন্নয়ন ও উৎপাদনে সবাইকে একাত্মবোধের মূল্যবোধে উজ্জীবিত করার প্রেরণা হিসেবে শিল্পোন্নত বিশ্বে অন্তর্ভুক্তীকরণের দর্শনকে ব্যাপক বিবেচনা করা হয়ে থাকে। দারিদ্র্য নিরসন থেকে শুরু করে সমাজে সম্পদের বণ্টন-বৈষম্য দূরীকরণ এবং সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও সবাইকে দল-মত-ধর্ম-লিঙ্গ-অর্থনৈতিক অবস্থান নির্বিশেষে এক শামিয়ানার নিচে শামিল করতে অন্তর্ভুক্তীকরণকে মন্ত্র হিসেবে মানতে ও মানাতে আগ্রহ-উদ্যোগের অভাব নেই।
বিচ্যুতির অবকাশকে নাকচ করে দিয়ে যেকোনো যৌথ সংসারে কিংবা কায়কারবারে সবার সুচিন্তিত মতামত প্রকাশের সুযোগ, কর্তব্যপালনে দৃঢ়চিত্ত মনোভাব পোষণ, উদ্দেশ্য অর্জন তথা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোয় ঐকান্তিক প্রয়াসে সমর্পিতচিত্ত ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস জরুরি বিবেচনা করা হচ্ছে। বলাবাহুল্য, জাতীয় উন্নয়ন প্রয়াস প্রচেষ্টাতেও সমন্বিত উদ্যোগের আবশ্যকতাও একইভাবে অনস্বীকার্য। জাতীয় সঞ্চয় ও বিনিয়োগে থাকা চাই প্রতিটি নাগরিকের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অবদান। নেতিবাচক মনোভাবের দ্বারা এবং দায়দায়িত্ব পালন ছাড়া গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার সুফল ভোগের দাবিদার হওয়া বাতুলতা মাত্র। ‘ফেল কড়ি মাখ তেল’ কথাটি এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রযোজ্য এজন্য যে উৎপাদনে সক্রিয় অংশগ্রহণ না করেই ফসলের অধিক অধিকারপ্রত্যাশী হওয়াটা কোনোভাবেই স্বাভাবিক এবং সংগত কর্ম ও ধর্ম নয়।
একজন কর্মচারীর পারিতোষিক তার সম্পাদিত কাজের পরিমাণ বা পারদর্শিতা অনুযায়ী না হয়ে কিংবা কাজের সফলতা ব্যর্থতার দায়দায়িত্ব বিবেচনায় না এনে যদি তাকে পারিশ্রমিক দিতে হয় অর্থাৎ কাজ না করেও সে যদি বেতন পেতে পারে, তার পদ-পদবিকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ, সম্পদ বা ক্ষমতাকে অপব্যবহার করে নিজে লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকেতাহলে দক্ষতা অর্জনের প্রত্যাশা আর দায়িত্ববোধের বিকাশভাবনা মাঠে মারা যাবেই। এ ধরনের ব্যর্থতার বজরা ভারী হতে থাকলেই যেকোনো উৎপাদনব্যবস্থা কিংবা উন্নয়ন প্রয়াস ভর্তুকির পরাশ্রয়ে যেতে বাধ্য। সমাজে সবার অংশগ্রহণে সম্পদ ও সেবা সৃষ্টি না হয়ে যদি বল্গাহীনভাবে কতিপয়ের চাহিদা বাড়তে থাকে, তাহলে শৃঙ্খলা ও সুশাসনের মাথায় লাঠি মেরে সীমিত সম্পদের লুটপাট, আত্মসাৎ অপব্যবহার বাড়তে থাকবে। উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে, পরিবেশে যেখানে শ্রেণিনির্বিশেষে সবার কঠোর পরিশ্রম, কৃচ্ছ্রতা সাধন ও আত্মত্যাগ আবশ্যক, সেখানে সহজে ও বিনা ক্লেশে কীভাবে অর্থ উপার্জন সম্ভব সেদিকেই ঝোঁক বেশি হওয়াটা সুস্থতার লক্ষণ নয়। অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন এবং তা অপ্রদর্শিত রেখে রাষ্ট্রের প্রাপ্য কর ফাঁকি দেওয়ার মতো অনৈতিক কর্মকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের পরিবেশে বৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও ন্যায্য কর পরিশোধের প্রেরণাকে বিচ্যুতির বলয়ে ঠেলে দেওয়ার নামান্তর।
কর্মচারী ইউনিয়ন কিংবা সমাজসেবাপ্রত্যাশী যেকোনো সমিতির নির্বাচনে প্রার্থীদের যে অঢেল অর্থব্যয়ের প্রতিযোগিতা চলে তা এমন এক বিনিয়োগ ব্যবস্থাকে নির্দেশ করে, যা থেকে অবৈধভাবে অধিক উসুলের সুযোগ আছে। জনসেবা সেখানে বণ্টন-বৈষম্যের, সামাজিক অবিচারের প্রতিভূ হয়ে দাঁড়ায়। শ্রমিক স্বার্থ উদ্ধারের পরিবর্তে আত্মস্বার্থ উদ্ধারে ব্যতিব্যস্ত হয়ে শোষণের প্রতিভূ বনে যায়। বিচ্যুতির সেই দুঃখজনক পরিবেশে দেখা যায় যাদের তারা প্রতিনিধিত্ব করছে তাদেরই তারা প্রথম ও প্রধান প্রতিপক্ষ। প্রচ- স্ববিরোধী এই পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে উৎপাদন, উন্নয়ন তথা শ্রমিক উন্নয়নসবই বালখিল্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
শুধু সবল সক্ষম সর্বভুক ভোক্তা ভজনের দ্বারা নয়তৃণমূলপর্যায়ে সঞ্চয়ের অভ্যাস বাড়িয়ে, বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করে দেশের অর্থনীতিকে স্বয়ম্ভর করার মন্ত্র মানতে ও মানাতে মধ্যস্বত্বভোগীর উপদ্রব এড়িয়ে, প্রতারণা-প্রবঞ্চনার পথ মাড়িয়ে, অপব্যয়-অপচয় রোধে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। সংসার, সমাজ ও দেশের উন্নয়নে সবার সচেতন ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণকে অর্থবহ করতে ঐকান্তিক নিষ্ঠার দরকার। দরকার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির। দেশ, সমাজ অর্থনীতি এভাবেই প্রবৃদ্ধির পথে যাবে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি সব অনুষঙ্গকে সঙ্গ করে সুনিশ্চিত হওয়া দরকার। মাথাপিছু আয়ের হিসাব বৃদ্ধি সব কা-জ্ঞান ও কর্মকা-ের সমন্বিত অবয়বে হওয়া উচিত। ভোগবাদী সমাজে কতিপয়ের প্রচুর উন্নতির অঙ্ক আর সমষ্টির উন্নতিকে কাগজে-কলমে রেখে সমাজে যে বিভাজন তৈরির সংস্কৃতি তা আত্মপ্রবঞ্চনার প্রতীক।
মানবসম্পদ সৃষ্টি, গণসুস্থতা আর আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠার সরোবরে উন্নয়ন অর্থনীতির ফুল বিকশিত হয়। যে সমাজে শিক্ষকতা, চিকিৎসা আর আইন ব্যবসা মহৎ পেশা হিসেবে বিবেচনার সুযোগ দিনে দিনে তিরোহিত হয়, সে সমাজে বুদ্ধি বৃত্তির বিকাশ ও সমাজসেবার আদর্শ প্রতিষ্ঠা অসম্ভব হয়ে ওঠে। সেখানে সামাজিক সুবিচার ও গণকল্যাণ আকাক্সক্ষায় চিড় ধরতে বাধ্য। সুশাসন ও জবাবদিহির পরিবেশ পয়মাল হতে হতে সমূহ সর্বনাশও সহনশীল হয়ে ওঠে। সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিতের সংখ্যা বাড়লেই দেশে শিক্ষার উন্নতিসহ জনসম্পদ বৃদ্ধি ঘটে না বরং তাতে স্বল্পশিক্ষিত বেকারের বিকারজনিত সমস্যারই উদ্ভব ঘটে। অসম্পন্ন শিক্ষা সমাধান আনে না বরং সমস্যা বাড়ায়। শিক্ষা খাতে জিডিপির সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ মিললেও শিক্ষা জনসাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে কি না, শহর ও গ্রামে বিদ্যাচর্চার ব্যবধান বাড়ছে কি না, সে বিচার-বিবেচনা আবশ্যক। প্রাথমিক জুনিয়র মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে শহর আর গ্রামের পাসের হার এর ব্যাপক ব্যবধানে সমাজে ব্যাপক বিচ্যুতির ফাটল স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে। যে শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে পড়ানোর জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক জনগণের করের টাকায় বেতন পান, তার বিনিময়ে তার যে দায়িত্ব পালনের কথা তা পালন না করে বরং তার শিক্ষকতার পরিচয়কে পুঁজি করে অত্যধিক পারিশ্রমিকে গৃহশিক্ষকতার মাধ্যমে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহারই শুধু করেন না, গণশিক্ষার ব্যয় বাড়িয়ে চলেন। সমাজের কাছে যে সম্মান ও সমীহ তার প্রাপ্য তা তার এই ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে দ্রবীভূত হয়ে যায়। অথচ এই একই সমাজে এই কিছুদিন আগেও শিক্ষাদান ছিল নিঃস্বার্থ জ্ঞানদানের বিষয় এবং আত্মত্যাগের আদর্শে ভাস্বর। আর সেই সুবাদে শিক্ষক পেতেন সমাজের সর্বোচ্চ সমীহ ও সম্মান। শিক্ষক দায়িত্ববোধের আদর্শ হতেন শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীদের মনে জ্ঞানের আলো জ্বালানোকে ব্রত মনে করতেন শিক্ষকরা। আর আজ শিক্ষকের মনের দৈন্যতা অধিক অর্থ উপার্জনের অভীপ্সায় অন্তর্লীন। চিকিৎসাবিদ্যার প্রধান লক্ষ্যই যেখানে হওয়ার কথা দুস্থ-পীড়িত জনকে রোগমুক্তির সন্ধান দেওয়া, সেখানে স্রেফ ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি কেন মুখ্য হয়ে দাঁড়াবে এ মহৎ পেশায়। অসুস্থ ব্যক্তির উপযুক্ত চিকিৎসা পাওয়া যেখানে মৌলিক অধিকার, সেখানে রাষ্ট্রীয় চিকিৎসাব্যবস্থা এতই নাজুক ও অবহেলায় ন্যুব্জ যে মনে হতে পারে ক্লিনিকগুলোতে কসাইয়ের সামনে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে অগণিত অসহায় অসুস্থ মানুষকে। এনজিও দ্বারা কমিউনিটি চিকিৎসাব্যবস্থা চালু করা হয়েছেসেখানে হাসিমুখে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে নবীন-প্রবীণ স্বাস্থ্যকর্মী। কিন্তু সরকার পরিচালিত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে কেন সেবার মান আদৌ উন্নত হবে না? যদিও সেখানে বাজেটের বিপুল বরাদ্দ করা অর্থব্যয় দেখানো হয়ে থাকে। জনগণের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বাজেটে বিপুল ব্যয় বরাদ্দ দেখানো হবে আর সেই সেবা পাওয়ার জন্য আবার বাড়তি ব্যয়ের বোঝা কেন বহন করতে হবে রাষ্ট্রের নাগরিককে। অন্যায়-অবিচারের প্রতিকার প্রার্থীর পক্ষাবলম্বনের জন্য আইনজীবী হবেন আসামি, বাদী, বিবাদীর বন্ধু। আইনের মারপ্যাঁচে নিজের ন্যায্য দাবি যাতে হারিয়ে না যায় সে সহায়তা চেয়েই তো অসহায় অশিক্ষিত মক্কেল আসে আইনজীবীর দ্বারে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে নিজের পেশাগত দায়িত্ব ও মূল্যবোধকে জলাঞ্জলি দিয়ে স্রেফ ব্যবসায়িক দৃষ্টিতে বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অনুযোগ, যা বিচারপ্রার্থীর বোবাকান্নার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দেশ ও সমাজের স্বার্থকে থোড়াই কেয়ার করে অনেকে বিদেশি বহুমুখী কোম্পানির অনেক অন্যায্য দাবির সপক্ষে লবিং করেন স্রেফ পেশাগত ও ব্যবসায়িক স্বার্থে। ‘সেবা পরম ধর্ম’ কিংবা ‘সততা সর্বোত্তম পন্থা’ এ মহাজন বাক্যরা কি শুধু নীতিকাহিনীতে ঠাঁই পাবে?
লেখক: উন্নয়ন অর্থনীতির বিশ্লেষক
প্রায় শতবর্ষ আগে ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে মাওলানা ইলিয়াস রহমাতুল্লাহি আলাইহি ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহরানপুর এলাকায় ইসলামি দাওয়াত তথা তাবলিগের প্রবর্তন করেন। একইসঙ্গে এলাকাভিত্তিক সম্মেলন তথা ইজতেমারও আয়োজন হতে থাকে। কাজের ধারাবাহিকতায় তাবলিগ বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। দিন দিন বাড়তে থাকে তাবলিগের প্রচার-প্রসার। তাবলিগের সাথী সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ১৯৬৬ সাল থেকে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন শুরু হয়। এর আগে খুলনা, ঢাকার রমনা পার্ক সংলগ্ন কাকরাইল মসজিদ, চট্টগ্রাম হাজি ক্যাম্প, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এবং টঙ্গীর পাগাড় এলাকায় ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৬৬ সালের পর থেকে প্রতি বছরই ‘কহর দরিয়া’খ্যাত তুরাগ নদীর উত্তর-পূর্ব তীর সংলগ্ন ডোবা-নালা, উঁচু-নিচু জমি মিলিয়ে রাজউকের হুকুমদখলকৃত ১৬০ একর জায়গার বিশাল মাঠে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা। বর্তমানে ইজতেমায় দেশি তাবলিগি সাথী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদেশি মেহমানের সংখ্যাও বেড়েছে। চলতি বছর শতাধিক দেশের মুসল্লি ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন।
২০১১ সালের আগে একসঙ্গে তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হতো। স্থান সংকট, জনদুর্ভোগ বিবেচনা, মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা প্রদানের নিমিত্তে তাবলিগের শুরা সদস্যদের পরামর্শের ভিত্তিতে তিন দিন করে ২ ধাপে ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়।
দুই ধাপে ইজতেমা আয়োজনের পরও মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি হওয়ায় ২০১৬ সাল থেকে প্রতি বছর ৩২ জেলার অংশগ্রহণে ২ ধাপে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করা হয়। এরই মধ্যে তাবলিগের কাজ পরিচালনা, নেতৃত্ব প্রদান এবং দিল্লির মাওলানা সাদের কিছু বক্তব্যকে ঘিরে তাবলিগ জামাতে মতবিরোধ দেখা দেয়। তাবলিগে দুটি ধারা সৃষ্টি হয়। একটি আলমি শুরা (বিশ্বের সব দেশের শীর্ষ মুরব্বিদের নিয়ে গঠিত পরিচালনা কমিটি) অন্যটি মাওলানা সাদের একক নেতৃত্বে পরিচালিত ধারা। এ কারণে ২০২০ সালে বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হয়। পরের দুই বছর করোনা মহামারীর কারণে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়নি। উল্লেখ্য, শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বেই তাবলিগের কাজ দুই ভাগে পরিচালিত হচ্ছে।
দাওয়াতি কাজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামের অস্তিত্ব নির্ভর করে এর ওপর। যতদিন দ্বীনের দাওয়াত থাকবে ততদিন দ্বীন থাকবে। এই চেতনাকে ধারণ করেই হজরত ইলিয়াস (রহ.) দাওয়াতে তাবলিগের বর্তমান পদ্ধতি চালু করেন। এই পদ্ধতির দাওয়াত দ্বারা সব শ্রেণি, পেশা ও বয়সের মানুষ দ্বীন শিখতে পারছে। ইসলাম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হচ্ছে। কোরআন মাজিদে এ কাজকে অতি উত্তম কাজ বলে অভিহিত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমাদের মধ্যে এমন এক দল থাকা উচিত, যারা আহ্বান জানাবে সৎকর্মের প্রতি; নির্দেশ দেবে ভালো কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম।’ -সুরা আলে ইমরান : ১০৪
ইসলামের দৃষ্টিতে নিজের সংশোধন ও দ্বীনের ওপর অটল থাকার জন্য দাওয়াতের কাজ অতি জরুরি। এ লক্ষ্যেই আল্লাহর দেওয়া জানমাল ও সময় আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করার এ কাজে মুসলমানদের উদ্বুদ্ধ করতে কাজ করে তাবলিগের লোকজন। এই উদ্দেশ্য অর্জন ও বিশ্বের আনাচে-কানাচে দ্বীনের কথা পৌঁছানোর জন্য আরও বেশি লোক কাজে লাগানোর চিন্তা-ভাবনা থেকে আয়োজন করা হয় বিশ্ব ইজতেমার। বিশ্ব ইজতেমা বিশ্ববাসীর কাছে এ বার্তা পৌঁছাতে চায়, আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া মানুষের আর কোনো উদ্দেশ্য নেই; থাকতে পারে না। অন্তরের গভীর থেকে এই উপলব্ধি মোতাবেক জীবন পরিচালনার মানসে নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য এখানে আসতে হবে।
মনে রাখতে হবে, মানুষ নিজে নিজে তৈরি হয়নি, তাকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। সে নিজ ইচ্ছায় দুনিয়ায় আসেনি, আল্লাহ পাঠিয়েছেন। একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছায় সে ধনী-দরিদ্র, আরব-অনারব, নারী-পুরুষ, সুস্থ-অসুস্থ অবস্থায় দুনিয়ায় অবস্থান করছে। মানুষের জীবনের সব অবস্থা আল্লাহ প্রদত্ত। তাই মানুষকে দুনিয়ায় আগমনের লক্ষ্য অনুধাবনের পাশাপাশি আল্লাহর দেখানো পথ ও দ্বীনের ওপর চলা জরুরি। যা দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতার চাবিকাঠি। রোগে-শোকে, সুখে-দুঃখে, আনন্দ-বিষাদে এক কথায় সর্বাবস্থায় দ্বীনের ওপর চলার চর্চা শেখায় তাবলিগ। দুনিয়াব্যাপী এ কাজের লোক কীভাবে আরও বাড়ানো যায় বিশ্ব ইজতেমায় সেই চিন্তা করে বেশি বেশি জামাত দেশ-দেশান্তরে পাঠানো হয়।
এক কথায়, বিশ্ব ইজতেমা হচ্ছে, মুসলমানদের জন্য আখেরাতের পথ দেখানোর, আখেরাতের কথা স্মরণ করানোর জমায়েত। ইজতেমায় দাওয়াতের কাজ করা হয়। যেসব দেশ-বিদেশের মুসল্লিরা জমায়েত হন, তারা ইসলামের আলোকে নিজেদের জীবন ও চরিত্র গঠন করেন। সেই সঙ্গে আল্লাহ ও তার প্রেরিত রাসুলের (সা.) প্রতি তাদের ভালোবাসা জন্ম নেয়। ইজতেমা শেষে অংশগ্রহণকারী মুসল্লিরা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে পৃথিবীর যে দেশে মুসলমান আছে, সেখানে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার জন্য ছুটে যান।
আমরা জানি, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দ্বীনকে বোঝা এবং তা আত্মস্থ করার জন্য ইমান প্রয়োজন। ইজতেমায় আগত বরেণ্য আলেমদের বয়ান, আল্লাহর নেয়ামত ও কুদরতের বরকতি আলোচনা, দ্বীনি পরিবেশ তাবলিগের সাথীদের সেই চিন্তাকে সংহত করে ইমানকে মজবুত করে তোলে। বস্তুত ইমান হচ্ছে এমন এক অমূল্য সম্পদ, যা মানুষকে আল্লাহর দেওয়া জানমাল ও সময়কে সর্বদা আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দিয়ে জীবনের আসল লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করে। ইমান হলো সেই প্রেরণা, যা শত বাধা-বিপত্তির মধ্যে আল্লাহর বিধান থেকে মানুষকে চুল পরিমাণ নড়তে দেয় না। ইমান হলো সেই প্রতিজ্ঞা আর শক্তি, যার কারণে আল্লাহর হুকুমে নিজেকে কঠিন থেকে কঠিনতর পরীক্ষায় ফেলতে মুমিন কুণ্ঠিত হয় না। ইমান যত মজবুত হবে দ্বীনের ওপর চলা তত সহজ হবে। দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা মানুষের পদচুম্বন করবে। আল্লাহ তার ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন। একজন মুমিনের জন্য এর চেয়ে বড় সাফল্য আর কিছু নেই, থাকতে পারে না। তাবলিগের যাবতীয় কাজ ইমান লাভ ও মজবুত করার লক্ষ্যে পরিচালিত।
লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক
ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তর ও দক্ষিণ দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে প্রায় এক যুগ আগে। এই বিভক্তির অন্যতম প্রধান যুক্তি ছিল বিপুল জনসংখ্যার ঢাকা মহানগরে নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি করা এবং বিদ্যমান ব্যবস্থাপনার সংকট কাটিয়ে ওঠা। কিন্তু এক যুগেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়নি। অন্যদিকে, দেখা যাচ্ছে দুই করপোরেশনই সাবেক সময়ের সংকটগুলোর উত্তরাধিকার বয়ে চলেছে। একক সিটি করপোরেশন কালে নেওয়া বহু প্রকল্প যেমন এখনো সম্পন্ন হয়নি; তেমনি আগের ধারাতেই নতুন বহু প্রকল্পও গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু দুই ক্ষেত্রেই পুরানা সংকট এখনো বিদ্যমান। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মার্কেট বা বিপণিবিতান প্রকল্পগুলো এই বাস্তবতার নির্মম উদাহরণ। একটা সময় ছিল যখন সিটি করপোরেশনের মার্কেটগুলোতে দোকান বরাদ্দ পেলে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করতেন ব্যবসায়ীরা। কম দামে কিস্তির মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা এসব দোকান বরাদ্দ নিতেন। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এসব দোকান এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধারদেনা করে কিস্তির টাকা পরিশোধ করেও এখন দোকান বুঝে পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হলো, কোনো মার্কেট প্রকল্প দুই থেকে তিন দশকেও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি।
বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরে ‘দোকান নিয়ে ধুঁকছেন ব্যবসায়ীরা’ শিরোনামের প্রতিবেদনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এমন বেশ কয়েকটি নির্মাণাধীন মার্কেটের প্রকল্পে ব্যবসায়ীদের কাছে দোকান বুঝিয়ে দিতে না পারার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত ১৫-২০ বছরের মধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে যেসব দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তার বেশিরভাগই বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। এ ঘটনা বেশি ঘটেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ক্ষেত্রে। ডিএসসিসির কমপক্ষে ১০টি মার্কেটে দোকান বরাদ্দের নামে কিস্তির টাকা আদায় করে গ্রাহকদের দোকান বুঝিয়ে দেওয়ার নামগন্ধও নেই। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বড় তিনটি মার্কেটে হাজারখানেক দোকান নিয়ে বিপাকে রয়েছেন বরাদ্দগ্রহীতারা। সেখানেও বছরের পর বছর অপেক্ষা করে দোকান পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। আবার কবে নাগাদ এসব পাবেন এরও কোনো সদুত্তর নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে। ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেন যে, তার এলাকায় দুটি মার্কেটে বরাদ্দের দোকান বুঝিয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। একটি মিরপুর ১১ নম্বর, আরেকটি মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের শাহআলী মার্কেট। দুটি মার্কেটে বরাদ্দ দেওয়ার পর সেখান থেকে অর্থ অন্য খাতে ব্যয় করা হয়েছে। আবার দোকান দীর্ঘ সময়ে বুঝে না পাওয়ায় কিছু বরাদ্দগ্রহীতা কিস্তির টাকাও দিচ্ছেন না। অন্যদিকে, ডিএসসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আরিফুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, যতটুকু জানি চাঁনখারপুর ও কাপ্তান বাজারে মার্কেট নির্মাণের ঠিকাদার কাজ না করে চলে গেছে। বিধিমতে তাদের সঙ্গে থাকা চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। এখন নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে। তখন কাজ হবে। খেয়াল করা দরকার যে, উত্তরের মেয়রের মতোই দক্ষিণের রাজস্ব কর্মকর্তাও বলেছেন, আগের প্রশাসন মার্কেট নির্মাণের টাকা অন্য খাতে ব্যয় করায় মূলত বেশকিছু মার্কেট নির্মাণের জন্য এখন অর্থ পাওয়া যাচ্ছে না। মূলত এ কারণেই ঝামেলা তৈরি হয়েছে।
দেশ রূপান্তরের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত কয়েক বছরে ডিএসসিসির পক্ষ থেকে ১০-১২টি মার্কেটে দোকান বিক্রি করা হয়েছে। এতে সংস্থাটির কোষাগারে কয়েকশ কোটি টাকা জমাও পড়েছে। অনেক স্থানে মার্কেট নির্মাণেই হাত দিতে পারেনি ডিএসসিসি। অনেক ক্ষেত্রে মার্কেটের জমি পর্যন্ত দখলে নেই। করা হয়নি ডিপিপিও। এরপরও তারা শুধু নকশা তৈরি করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দোকান বিক্রি করেই চলছে। কিন্তু বছরের পর বছর পার হলেও দোকান বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। ডিএনসিসির অবস্থাও একই। সেখানে তিনটি বড় মার্কেটের বিপুলসংখ্যক দোকান বরাদ্দ পেয়ে টাকা জমা দিয়ে এখন তা বুঝে পাচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা। পর্যালোচনায় এটা স্পষ্ট যে, সিটি করপোরেশনের আগের প্রশাসন বিধান লঙ্ঘন করে এক তহবিলের অর্থ অন্য তহবিলে নিয়ে কাজ করে গেছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজের ক্ষেত্রে ম্যাচিং ফান্ড দেওয়া হয়েছে বিধিবহির্ভূতভাবে। সেখানে করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে ম্যাচিং ফান্ড দেওয়ার কথা থাকলেও তা না করে মার্কেট নির্মাণের তহবিল থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। এভাবে দোকান বিক্রির শত শত কোটি টাকাও অন্য খাতে ব্যয় করা হয়েছে। মূলত এ কারণেই মার্কেট নির্মাণ মুখ থুবড়ে পড়েছে। প্রশ্ন হলো ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটি করপোরেশনের নতুন দুই প্রশাসন গত এক যুগে এই সংকটের সুরাহা করতে পারল না কেন? সিটি করপোরেশন কি তাহলে সাবেক ধারাতেই চলতে থাকবে?
শিক্ষাবিদ, পন্ডিত ও অভিধানকার হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৮৬৭ সালের ২৩ জুন চব্বিশ পরগনা জেলার রামনারায়ণপুর গ্রামে। তার পৈতৃক নিবাস ছিল বসিরহাটের জামাইকাটিতে। তার বাবা শিবচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় স্থানীয় এক জমিদারের কাছারিতে চাকরি করতেন। ছাত্রজীবনেই হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে পরিচিত হন। তিনি প্রবেশিকা ও এফএ পরীক্ষা পাস করার পর বৃত্তি নিয়ে বিএ শ্রেণিতে ভর্তি হন। বাবার মৃত্যু হলে তিনি পড়াশোনা ছেড়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। বাংলা ১৩০৮ সনে কলকাতা টাউন স্কুল প্রতিষ্ঠিত হলে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর প্রধান পন্ডিত নিযুক্ত হন। বাংলা ১৩০৯ সনের শ্রাবণ মাসে তিনি রবীন্দ্রনাথের জমিদারির অন্তর্গত পতিসরের কাছারির সুপারিনটেনডেন্ট পদে যোগ দেন। পতিসরে জমিদারি পরিদর্শনে এসে রবীন্দ্রনাথ হরিচরণের জ্ঞানচর্চায় আগ্রহ লক্ষ করে সে বছরেই তাকে শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মচর্যাশ্রম বিদ্যালয়ে সংস্কৃতের শিক্ষক নিযুক্ত করেন। হরিচরণ এ স্কুলে তিরিশ বছর শিক্ষকতা করেন। রবীন্দ্রনাথ পরে তাকে অভিধান রচনায় অনুপ্রাণিত করেন। এরই ফসল হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রণীত বিখ্যাত অভিধান ও কোষগ্রন্থ ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’। এ অভিধানটি শব্দার্থের গভীর ও ব্যাপকতর অর্থ নির্ণয় করার জন্য খুবই উপযোগী। বাংলা, সংস্কৃত, আরবি, ফারসি প্রভৃতি ভাষার শব্দ ছাড়াও এ অভিধানে আছে ইংরেজি, পর্তুগিজ, হিন্দি ও অন্যান্য ভারতীয় ভাষার শব্দ। বঙ্গীয় শব্দকোষ ছাড়াও হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন রবীন্দ্রনাথের কথা, সংস্কৃত-প্রবেশ, ব্যাকরণ-কৌমুদী, Hints on Sanskrit Composition & Translation, পালিপ্রবেশ, শব্দানুশাসন, কবির কথা প্রভৃতি গ্রন্থ। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৪৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরোজিনী বসু স্বর্ণপদক, ১৯৫৪ সালে শিশিরকুমার স্মৃতি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৫৭ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ‘দেশিকোত্তম’ উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৫৯ সালের ১৩ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এক বছরেরও কম। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচন হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করা দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো আন্দোলন করছে।
এ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত বছরের মাঝামাঝি থেকে এই চাপ ক্রমশ বাড়ছে। বিদেশিদের মধ্যে এবার যুক্তরাষ্ট্রের চাপ অনেক বেশি। এর আলামত দেখা যাচ্ছে কয়েক মাস ধরে। নির্বাচন ছাড়াও দেশটি মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীন প্রশ্নে অনেক সোচ্চার। ২০২১ সালের ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি।
সরকারের তরফ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য তারা বিদেশিদের উদ্যোগ নিতে বলছে। একই সঙ্গে সরকার যেকোনো চাপে নতি স্বীকার করবে না, সেটাও বলেছে।
কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৯০ সালে দেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি আসার পর থেকেই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক আগ্রহ বাড়ছে। নির্বাচনের এক বছর আগে থেকেই প্রভাবশালী দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নানা সবক দিতে থাকে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।
তাদের মতে, বরং নির্বাচন ঘিরে পরাশক্তিগুলোর প্রভাব লক্ষণীয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকেই প্রতিবেশী দেশ এবং বড় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতি এবং সরকার নিয়ে সবচেয়ে বেশি আধিপত্য দেখিয়ে আসছিল ভারত। ১৯৯০ সাল থেকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পশ্চিমাদের প্রভাব। আর তিন দশক ধরে বিভিন্ন কূটনৈতিক জোট, আঞ্চলিক জোট এবং সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আগ্রহ বেড়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রভাবশালী দেশগুলোর নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ যতই থাক না কেন, এর মূল কারণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা। তারা মনে করছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সমাধান যদি নিজেরা না করতে পারি, তাহলে বাইরের প্রভাব বাড়তে থাকবে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালী উর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশকে তাদের প্রভাব বলয়ে রাখতে চায়। তাদের নিজেদের দেশেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। বর্তমান সরকারও অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করছে। তাদের এই চাপ কাজে দেবে না।’ আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলের অভিমত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে এবং আঞ্চলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কারণও তাই। কূটনীতিকরা বলছেন, ভারত, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ থাকলেও এক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতা লক্ষণীয়। এ ক্ষেত্রে সরকারবিরোধী বিএনপির পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বারবার নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি কিছুটা হলেও গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন পদ্ধতি এবং নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র অনেক বেশি সোচ্চার হলেও তাদের কূটনীতি সরকারবিরোধী দলগুলোর পক্ষে যাবে এমন ধারণা করার কোনো কারণ নেই। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। এটা যেমন সত্য, তেমনি ইন্দো প্যাসিফিক এবং এ অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বিস্তারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের বোঝাপড়াটা বেশি জরুরি। আর সে কারণেই বিএনপি যতই তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলুক যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে না। তাদের বক্তব্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং নির্বাচনে বিরোধীপক্ষের জন্য সুষ্ঠু ও অবাধ পরিবেশ তৈরি করা।
কূটনীতিক সূত্রগুলো বলছে, আগের কয়েক দফা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী থাকলেও ভারতের সঙ্গে একধরনের সমঝোতা করে বা আলোচনা করে তাদের মতামত দিয়েছে। কিন্তু ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে। এবার যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন নিয়ে পরামর্শ এবং তাদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে বেশি সোচ্চার।
বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক চর্চার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগের বিষয়টি প্রথম প্রকাশ পায় ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে। এরপর থেকেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংলাপও হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল এবং প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করেছেন। তাদের সফরে আগামী নির্বাচন, বিরোধীপক্ষের প্রতি সরকারের আচরণ, মানবাধিকার ও সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সরকার, আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
গত ২১ মার্চ নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের উদ্ধৃত করে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে, নির্বাচনে জাল ভোট দেওয়া হয়েছে এবং বিরোধীদলীয় পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয় দেখানোসহ গুরুতর অনিয়ম রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত সম্মান ও অংশীদারিত্বের মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে মানবাধিকারের বিষয়গুলো উত্থাপন করে। এটা তারা চালিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এমন আগ্রহের কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব বলয় বাড়াতে চায় দেশটি। এরই মধ্যে দেশটি এশিয়ায় তাদের বন্ধু দেশগুলোকে নিয়ে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’ (আইপিএস) পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এর আওতায় ইন্দো-প্যাসিফিক ফোরাম গঠন করা হয়েছে। একই কৌশলের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ভারত সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে কোয়াড গঠন করেছে। এগুলোর লক্ষ্য হলো চীনের বিরুদ্ধে এ অঞ্চলে একটি শক্তিশালী বলয় গঠন করা। ভারতের পাশাপাশি এ বলয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকেও চায়। বাংলাদেশ যেন কোনোভাবেই চীনের বলয়ে না যেতে পারে, সেই কৌশলের অংশ হিসেবেও আগামী নির্বাচন ঘিরে চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছে দেশটি। যদিও বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোনো জোটেই যায়নি। আবার ‘বার্মা অ্যাক্ট’ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রস্তাবে তারা বাংলাদেশকে পাশে চায়। এসব কারণে বাংলাদেশকে চাপে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ নানা ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুসহ ঢাকায় সফররত দেশটির কর্মকর্তারা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের পাশাপাশি দুই দেশের সম্পর্ক নিয়েও ইতিবাচক কথা বলেন। এ ছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বিভিন্ন বক্তব্যেও নির্বাচনের পরিবেশ ও স্বচ্ছতা নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পেয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে ঢাকা সফরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তারও বলেছিলেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে তারা সরকারকে এবং এই দেশকে সহযোগিতা করেব। তিনি সেই সময় দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা দূতাবাস ও ইউএসএইডের বাংলাদেশ কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব তুলে ধরেন।
গত বছরের অক্টোবরে ঢাকায় এসেই এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দেখতে চায়। এরপর থেকে তিনি নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রায় অভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আসছেন। পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো একটি দলকে সমর্থন করে না। তারা চান জনগণ তাদের পছন্দের সরকার নির্বাচন করবে।
এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসহ ১৪টি দেশের কূটনীতিকরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন নিয়ে তাদের মনোভাব তুলে ধরেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অভিনন্দন বার্তায়ও বাংলাদেশে সবার জন্য উন্মুক্ত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। দিবসটি উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শুভেচ্ছা বার্তায় অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে লেখা বাইডেনের এ বার্তায় বর্তমান সরকার ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসাও করা হয়েছে।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক এইচ শোলে তার ঢাকা সফরে বলেছিলেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, অর্থাৎ যারা পরাজিত হবেন, তারাও যেন মনে করেন নির্বাচনটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ হয়েছে এমনটাই তারা চান। তিনি বলেছিলেন, শক্তিশালী সুশীল সমাজ, মুক্ত গণমাধ্যম এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক পরিবেশ চায় যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে নেতিবাচক প্রশ্ন উঠবে না। এই পরিবেশ তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও শোলে জানান।
ডেরেক শোলে চলে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, সরকারপক্ষ থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিকে বলা হয়েছে তারা অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। তারা সরকারের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত। তবে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও পূর্ববর্তী নির্বাচন নিয়ে তারা তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। যখনই প্রয়োজন হবে, তারা সেটা জানাবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশিদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর সুযোগ নেই। এই সুযোগটা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোই করে দিয়ে আসছে। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র একটি শক্তিশালী অবস্থান চায়। এ জন্যই তারা কথা বলছে।’
রমজানের সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষায় সবার দায়িত্ব রয়েছে। কারও কোনো অবহেলা কিংবা গর্হিত কাজে রোজাদারের রোজা পালনে অসুবিধা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা। রমজানের পবিত্রতা রক্ষার পাশাপাশি মুসলমানরা যেন নির্বিঘেœ ইবাদত-বন্দেগি করতে পারে, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করা। মাহে রমজান ও রোজাদারের প্রতি সম্মান বজায় রাখা। সকল প্রকার গোনাহ পাপাচার এবং অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকা।
রোজাদারদের কষ্ট লাঘবে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করা। তারা যেন সুন্দরভাবে মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারে, সে জন্য মসজিদের আশপাশের রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করা। ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং সাহরি ও ইফতারে পচা-বাসি খাবার বিক্রি না করার বিষয়ে নজরদারি করা। মশার কামড় রোধে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া।
নানা কারণে অনেকে রোজা রাখতে পারেন না। এ কারণে ব্যক্তিভেদে মাসয়ালা প্রয়োগ হবে। কিন্তু রমজানের পবিত্রতা নষ্ট করা, রোজা ও রোজাদারের প্রতি সম্মান না দেখানো অনেক বড় ধৃষ্টতা। এগুলো থেকে বিরত থাকা চাই। প্রকাশ্যে ইসলামের কোনো বিধানের অমর্যাদা, রোজার মূল চেতনা ক্ষুণœ হয় এমন বিষয়ে লিপ্ত থাকা নাফরমানির অন্তর্ভুক্ত। জেনেবুঝে সংঘবদ্ধভাবে এমন নাফরমানি আল্লাহর ক্রোধ বাড়িয়ে দেয় এবং অনেক বড় দুর্গতি ডেকে আনে। আল্লাহর ওয়াস্তে রমজানের সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষার স্বার্থে এসব গর্হিত আচরণ থেকে নিবৃত্ত থাকা চাই।
মনে রাখতে হবে, রমজান তাকওয়া (আল্লাহভীতি) অর্জনের মাস। এ মাসে করণীয় হলো তাকওয়া অর্জনে এগিয়ে আসা। কিয়ামুল লাইলের (তারাবি ও তাহাজ্জুদের নামাজ) প্রতি যতœবান হওয়া। কোরআন নাজিলের মাস হিসেবে তেলাওয়াতে কোরআন, তাদাব্বুরে কোরআন (কোরআনের আয়াত ও হেদায়েত নিয়ে চিন্তাভাবনা) এবং আমল বিল কোরআনের (কোরআনের আমল) প্রতি মনোযোগী হওয়া। যাদের কোরআন তেলাওয়াত সহিহ নেই তেলাওয়াত সহিহ করা। বেশি বেশি নফল ইবাদত, দোয়া-দরুদ, তওবা-ইস্তিগফার, জিকির-আজকার ইত্যাদিতে সময় ব্যয় করা। সর্বাবস্থায় সহনশীলতা ও ভ্রাতৃত্ব চর্চায় মনোযোগী হওয়া। অধিক পরিমাণে দান-সদকা করা এবং সব ধরনের কল্যাণকর কাজে এগিয়ে আসা। সংযম বজায় রাখা। প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করা। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের আত্মিক উৎকর্ষের প্রতি মনোনিবেশ করা।
রমজানের বিশেষ বিশেষ মুহূর্তগুলোর ব্যাপারে যতœবান হওয়া। যেমন সাহরি, ইফতার, তারাবি, তাহাজ্জুদ, শবেকদর ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোর ব্যাপারে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা। এ মুহূর্তগুলোর যে বিশেষ আমল রয়েছে তাতে আত্মনিয়োগ করা। বাসাবাড়ি, অফিস-আদালতে ইবাদতের পরিবেশ গড়ে তোলা। মসজিদগুলো ইবাদতের মাধ্যমে আবাদ রাখা। মোদ্দা কথা, এই এক মাসে তাকওয়ার মেহনতের মাধ্যমে গোটা বছরের ইমানি, আমলি এবং রুহানি জিন্দেগির পাথেয় সংগ্রহ করা।
আলেমরা বলে থাকেন, রোজা রেখে ক্লান্ত হয়ে গেলে প্রয়োজনে বিশ্রাম করুন। কিন্তু অনর্থক গল্পে লিপ্ত হবেন না। কারণ কথায় কথা টানতে থাকে এবং আল্লাহ না করুন, বেশি কথা বললে তা ধীরে ধীরে মিথ্যা, গীবত-শেকায়েত ইত্যাদি বিভিন্ন দিকে ছুটতে থাকে।
রমজানে গোনাহের ধারা অব্যাহত রাখা খুবই খারাপ কথা। যেখানে ঘোষণা হতে থাকে নেকির কাজে অগ্রসর হতে, অনিষ্ট থেকে নিবৃত্ত হতে, সেখানে গোনাহের ধারা অব্যাহত রাখা অনেক বড় বঞ্চনার কারণ। বিশেষ করে অনাচার-পাপাচার ও অশ্লীলতা এবং এমন গোনাহ, যা আল্লাহর ক্রোধকে বাড়িয়ে দেয়, এমনসব বিষয় পুরোপুরি বর্জন করা। কারণ ফিরে আসার এটাই মোক্ষম সময়। কিন্তু ফিরে না এসে এর অনুভূতিও জাগ্রত না হওয়া বহুত বড় ক্ষতির বিষয়।
আজ রমজানের ৯ তারিখ। দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাচ্ছে রমজান মাস। এভাবে মানুষের জীবনও একদিন শেষ হয়ে যাবে। বুদ্ধিমান তো সে, যে আগ থেকেই প্রস্তুতি নিতে থাকে। কাজে লাগায় রমজানের বরকতময় প্রতিটি মুহূর্ত। সে অগ্রগামী হয় নেকি ও কল্যাণের পথে, তাকওয়া হাসিলের পথে এবং ব্রত হয় গোনাহ থেকে পাক-পবিত্র হয়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার মেহনতে।
লেখক : খতিব, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ
রাজধানীর পল্লবীতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীরা স্থানীয় যুবদলের নেতা। শুক্রবার ইফতারের আগে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য চলাকালে যুবদলের নেতাকর্মীরা সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেন।
হামলায় বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির বিশেষ প্রতিনিধি ইমরুল আহসান জনি, চ্যানেল আইয়ের প্রতিবেদক আখতার হাবিবসহ বেশ কয়েকটি চ্যানেলের ক্যামেরাপারসন আহত হন। দুটি ক্যামেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জানা গেছে, ইফতার অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের বিপুল উপস্থিতিতে গণমাধ্যমকর্মীদের দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না। এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে দলের কিছু কর্মী কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর চড়াও হন।
উপস্থিত নেতাকর্মীরা জানান, যুবদল নেতাদের হামলা থামাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঞ্চ থেকে নেমে এলেও তাদের নিবৃত্ত করতে পারছিলেন না। পরে তিনি নেতাকর্মীদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ভিডিওতে দেখা যায় হামলায় অংশ নেন পল্লবী থানার ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, পল্লবী থানা যুবদলের পিয়াস, পল্লবী থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি রাজিব হোসেন পিন্টু, রূপনগর থানা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. আসিফ, পল্লবী থানা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. মাসুদ এবং পল্লবী থানা ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের মো. মনির।
নেতাকর্মীরা জানান, এসব নেতা যুবদল কেন্দ্রীয় সংসদের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের অনুসারী। তবে এ বিষয়ে জানতে মিল্টনের মোবাইলে ফোন করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হকের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও সাড়া দেননি তিনি।
তবে ঘটনার পর সংবাদকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনার পর আমিনুল হক দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ক্ষমা চান। মিল্টন ও আমিনুল উভয়ই ঢাকা-১৬ আসনের বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী।
এ ঘটনায় সংবাদকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিএনপির প্রায় অনুষ্ঠানে সংবাদকর্মীদের হেনস্তা হতে হয়। ক্ষমতায় না আসতেই সাংবাদিকদের এ অবস্থা। ক্ষমতায় আসলে তো আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি নির্যাতন করবে। এমন কোনো প্রোগ্রাম নেই যে সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়নি।
তারা আরো বলেন, ‘এর আগে বিএনপির কর্মীরা মাই টিভির সাংবাদিক ইউসুফের ওপর হামলা করেছে। আজকের (শুক্রবার) ঘটনা যে ঘটিয়ে থাকুক, এর দায় উত্তরের শীর্ষ দুই নেতার। আপনারা নিজেরা নিজেরা মারামারি করেন, কিন্তু সাংবাদিকদের ওপর হাত তোলা বরদাশত করা যায় না। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিন, ব্যাখ্যা দিন, ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেন। একই সঙ্গে আর এমন হবে না, সেটি প্রকাশ্যে বলুন। মনে রাখবেন, এই সাংবাদিকরাই আপনাদের বছরের পর বছর সার্ভ করছে। তারা এভাবে মার খেলে আখেরে আপনারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সব হারাবেন’।
এ বিষয়ে বিএনপির মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির ভাই সাংবাদিকদের বলেন, ‘জনি ভাইসহ আহত সাংবাদিকদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বিএনপির মহাসচিব মহোদয়ের প্রতি তিনি নিজে গিয়ে জনি ভাইকে উদ্ধার করেছেন। তবে ফুটেজে দেখলাম হামলাকারীদের ছবি আছে। তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া উচিত। দলের না হলেও চিহ্নিত করে পরিষ্কার করা উচিত তারা কারা’।
জানা গেছে, শুক্রবার রাতে হামলায় আহত সাংবাদিকদের বাসায় গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হক।
এ ঘটনায় মির্জা ফখরুল এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘মনে হয় না তারা (নেতাকর্মীরা) দলকে ভালোবাসে। তারা অতিথিদের সম্মান রক্ষা করতে জানে না।’
এ সময় নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলার মধ্যে আসার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের দালালেরা অনুষ্ঠানে ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে।’
আয়োজকদের পক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে এর সমাধান করা হয়েছে। সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমাও চাওয়া হয়েছে।’
এ বছর ভারতের মাটিতে বসবে ওয়ানডে বিশ্বকাপের আসর। তবে পাকিস্তান নিজেদের ম্যাচগুলো ভারতে না খেলে বাংলাদেশে খেলতে চায় বলে খবর প্রকাশিত ছড়িয়েছিল। যে খবরকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) প্রধান নাজাম শেঠি।
এমন কোনো আলোচনাই হয়নি বলে দাবি করে শেঠি বলেন, ‘বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে কোনো পর্যায়ে আমি আইসিসির প্রসঙ্গ কিংবা অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় ২০২৩ বিশ্বকাপ নিয়ে কোনো মন্তব্য করিনি। এখন পর্যন্ত আইসিসির কোনো সম্মেলনে এই বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’
বিশ্বকাপের আগে সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানে বসবে এশিয়া কাপ। কিন্তু এই টুর্নামেন্টে খেলতে প্রতিবেশী দেশে যেতে রাজি নয় ভারত। তাই তাদের ম্যাচগুলো নিরপেক্ষ ভেন্যুতে আয়োজনের কথা ভাবছে এসিসি। নাজাম জানিয়েছেন এখনো বিষয়টি আলোচনার টেবিলে আছে।
এদিকে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ ম্যাচ বাংলাদেশে হওয়ার খবর প্রসঙ্গে শুক্রবার মুখ খুলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে এ নিয়ে কোনো কথা হয়নি। আসলে আমি এটা টিভিতে দেখেছি। আইসিসি বা পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড কেউ আমাদের কিছু বলেনি।’
রুতুরাজ গয়কোয়াডের দাপুটে ব্যাটিংয়ে চ্যালেঞ্জিং পুঁজি গড়ল চেন্নাই সুপার কিংস। যা তাড়া করতে নেমে শুভমন গিলের পর রাহুল তেওয়াতিয়া ও রশিদ খানের নৈপুণ্যে জয় তুলে নিল গুজরাট টাইটান্স।
আহমেদাবাদে শুক্রবার আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে ৫ উইকেটের জয় তুলে নেয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন গুজরাট। ১৭৯ রানের লক্ষ্য তারা ৪ বল হাতে রেখে ছুঁয়েছে।
গিল সর্বোচ্চ ৩৬ বলে ৬৩ রান করেছেন ৬ চার ও ৩ ছক্কায়। শেষ দিকে তেওয়াতিয়ার ১৪ বলে অপরাজিত ১৫ ও রশিদ খানের ৩ বলে অপরাজিত ১০ রান দলকে জয় এনে দেয়।
চেন্নাইয়ের পক্ষে রাজবর্ধন হাঙ্গার্গেকর ৩৬ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামা চেন্নাই নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭৮ রান সংগ্রহ করে। রুতুরাজ সর্বোচ্চ ৯২ রান করেন। তার ৫০ বলের ইনিংসে ছিল ৪ চার ও ৯ ছক্কা।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।