
শান্ত জলের বুকে লাল শাপলার গালিচা আর কচুরিপানার রক্তাভ নীল ফুলের মধ্যে ঝাঁক বেঁধে ডানা মেলছে অতিথি পাখির দল। পাখির কিচির-মিচিরে মুখরিত পরিবেশ। বাহারি রঙের এসব অতিথি পাখির খুনসুটি আর ছোটাছুটি যে কারও মনকে উদ্বেলিত করে তোলে। শীত মৌসুমের প্রকৃতিতে অপরূপ অতিথি পাখির ঝাঁক বেঁধে উড়ে চলার দৃশ্য দেখে মনে হয় যেন জলরঙে আঁকা ছবি। প্রতি শীতে দূর-দূরান্ত থেকে শীতের পাখিরা আসে আমাদের দেশে। ভ্রমণপিপাসু মানুষ পাখি দেখতে ভিড় করে বিভিন্ন জলাশয়ে। পাখিদের কলকাকলি প্রকৃতির শোভা বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে। গাছের সবুজ, জলের নীল আর পাখিদের নানা রং মনে যে বর্ণিল আবেশ তৈরি করে তার রেশ রয়ে যায় অনেক দিন। শীতপ্রধান দেশ থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বাংলাদেশে আসা শুরু করেছে। এরা নিরাপদে থাকার জন্য এলেও আমরা তাদের জীবন দুর্বিষহ করে থাকি। আইন আছে, নিষেধাজ্ঞাও আছে। স্থানীয় প্রশাসনও সচেতনতামূলক কথা বলে থাকেন। তারপরেও আমরা পাখি হত্যা ও পাখিদের বিরক্ত করে থাকি।
আবাসিক ও পরিযায়ী মিলে বাংলাদেশে পাখির সংখ্যা প্রায় ৬৫০ প্রজাতির। এর মধ্যে ৩৬০ প্রজাতি আবাসিক। বাকি ৩০০ প্রজাতি পরিযায়ী ও অন্যান্য। সব পরিযায়ী শীতের সময় আসে না। ৩০০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখির মধ্যে ২৯০টি শীত মৌসুমে আসে ও ১০টি প্রজাতি থেকে যায়। আন্তর্জাতিকভাবে জলচর পাখির জন্য স্বীকৃত ২৮টি জায়গা বাংলাদেশের সীমানায় রয়েছে। এগুলো হলো : বরিশাল বিভাগের চর বারি, চর বাঙ্গের, কালকিনির চর, চর শাহজালাল, টাগরার চর, ডবা চর, গাগোরিয়া চর, চর গাজীপুর, কালুপুর চর, চর মনপুরা, পাতার চর ও উড়ির চর; চট্টগ্রাম বিভাগের চর বারী, বাটা চর, গাউসিয়ার চর, মৌলভীর চর, মুহুরী ড্যাম, মুক্তারিয়া চর, ঢাল চর, নিঝুম দ্বীপ, পতেঙ্গা সৈকত, সোনাদিয়া ও মহেশখালী দ্বীপ; সিলেট বিভাগের আইলার বিল, ছাতিধরা বিল, হাইল হাওর বাইক্কা, হাকালুকি হাওর, পানা বিল, রোয়া বিল, শনির বিল ও টাঙ্গুয়ার হাওর। শীত এলেই এসব জলাশয়সহ বিভিন্ন হাওর, বাঁওড়, বিল ও পুকুরের পাড়ে চোখে পড়ে নানান রং-বেরঙের নাম জানা, অজানা পাখি। এদের আমরা অতিখি পাখি বলে থাকি। অখচ ক্ষুদ্র আনন্দের বেআইনি শিকার হয়ে প্রাণ দিতে হয় অতিথি পাখিগুলোর! এই অতিথি পাখিগুলো আমাদের বন্ধু, আমাদের প্রকৃতির জন্য আশীর্বাদ। তাই এ পাখিগুলোকে অচেনা পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে আমাদের বন্ধুসুলভ আচরণ করা দরকার। এই পাখিগুলো রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।
অতিথি পাখির বড় আশ্রয়স্থল হচ্ছে চট্টগ্রামের সোনাদিয়া দ্বীপসহ সেখানকার চরাঞ্চল, ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল আর বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলাঞ্চল। আর সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ আর মৌলবীবাজারের বিভিন্ন জলাশয় আর হাওর-বাঁওড় হচ্ছে অতিথি পাখিদের আর একটি বড় আশ্রয়স্থল। বাসস্থান সংকট, বিষটোপ ব্যবহার করে খাদ্যসংকট ও জীবন বিপন্ন করা, শিকার, পাচার ইত্যাদি কারণে আশঙ্কাজনকহারে আমাদের দেশে শীতে পাখি আসার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ক্যামেরার ক্লিক বা নীরবতা ভঙ্গ করলেও পাখিরা বিরক্তবোধ করে এবং অন্যত্র চলে যায়। আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাইক্যার বিল বা অন্যত্র অতিথি পাখি দেখতে গেলেই পাখির খুব কাছে যেতে চাই। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ক্যামেরার ক্লিক দিই। একই কারণে ভারতের পাখির অভয়াশ্রম গজলডোবাসহ পশ্চিমবঙ্গের অনেক পাখির আবাসস্থলে পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এ থেকে আমাদের সতর্ক হতে হবে। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। ক্যামেরা বা শব্দযন্ত্রের ব্যবহার প্রয়োজন ছাড়া একেবারেই কমিয়ে আনতে হবে।
শিকারি পাখি, আবাসস্থল ধ্বংস প্রভৃতিই পরিযায়ী পাখির প্রধান শত্রু। আমাদের দেশে প্রতিনিয়তই পরিযায়ী পাখির আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে, খাবারের অনুপযোগী কিংবা মানুষের বসতি হয়েছে। একশ্রেণির লোভী, ব্যাধের নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য দুর্লভ প্রজাতির অতিথি পাখি। জালের ফাঁদ পেতে, বিষটোপ এবং ছররা গুলি দিয়ে নির্বিচারে ও নির্মমভাবে এসব অতিথি পাখি শিকার চলছে প্রতিনিয়ত। কেউ শখের বশে আবার কেউ বাজারে বিক্রির জন্য অতিথি পাখিদের দিকে বন্দুকের নল উঁচিয়ে নিষ্ঠুর হাতে ট্রিগার টিপে এবং ফাঁদ পেতে অতিথি পাখিদের জীবন হরণ করে চলেছে। অতিথি পাখিদের বিচরণভূমি ক্রমশ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। বন-জঙ্গল কেটে উজাড় করে ফেলায় পাখিরা হারাচ্ছে তাদের নিরাপদ আশ্রয়। আবার ফসলি জমিতে কৃত্রিম সার এবং মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের কারণে অতিথি পাখিরা বিষে আক্রান্ত কীটপতঙ্গ খেয়ে মারা যাচ্ছে। উপকূলে চিংড়ি চাষের ফলেও অতিথি পাখিদের বিচরণ ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে।
অতিথি পাখি নিধন এবং বাজারে বিক্রি নিষিদ্ধ জেনেও আইনের ফাঁক গলিয়ে এক শ্রেণির পেশাদার এবং শৌখিন শিকারি কাজগুলো করে চলেছে। বেআইনিভাবেই শিকার করা হয় অতিথি পাখি। যা দ-নীয় ফৌজদারি অপরাধ। ১৯৭৪ সালে বন্যপ্রাণী রক্ষা আইন ও ২০১২ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে দ-ের বিধান রয়েছে। অতিথি পাখি নিধন বন্ধে আইন থাকলেও মানছেন না কেউ। প্রতি বছর শীত এলেও চলে অতিথি পাখি নিধন। এ ছাড়া বিভিন্ন ধর্মে পশু ও প্রাণীহত্যা চরম পাপের কাজ বলে বিবেচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি চড়ুই বা তার চেয়ে ছোট কোনো প্রাণীকে অযথা হত্যা করে, তাকে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন সে স¤পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন।’(নাসায়ি, হাদিস : ৪৩৪৯)।
আইন ও ধর্মীয় বিধান থাকলেও তা কার্যকর হচ্ছে খুব কম। তাই অতিথি পাখি শিকার রোধে প্রচলিত আইন জোরদার করা জরুরি। সেই সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনকেও তৎপর থাকতে হবে। পাখি শিকার বন্ধের জন্য পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোকে আরও জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। যে এলাকায় অতিথি পাখির পদচারণা ঘটে সে এলাকায় বিভিন্ন সচেতনানূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে। পাখি শিকারিদের নামের তালিকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করতে হবে। শুধু প্রশাসনের পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব নয়। সাধারণ জনগণের সচেতনতাই এ উদ্যোগ সফলতার আলো দেখতে পারে। তাই, এ উদ্যোগকে কার্যকর ও সফল করতে সরকার-পরিবেশবাদী সংগঠন/বুদ্ধিজীবী-জনগণ এই ত্রিমুখী আন্তরিকতা দরকার। আমরা পাখির নাচ-গান আর ওড়াউড়ি দেখব এবং উপভোগ করব। তবে সীমার মধ্যে, সতর্ক থেকে।
লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক
ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার কাজে অতি নিকটের প্রতিবেশী ভারতও কিন্তু আমাদের সাহায্য করেনি। সাতচল্লিশের দেশভাগের সময়ে কংগ্রেস নেতারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তারা তাদের রাষ্ট্রকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র দেবেন। পাকিস্তানের জিন্নাহ সাহেব শুরুতে ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন বটে, কিন্তু সেখান থেকে পিছিয়ে আসতে তিনি বাধ্য হয়েছিলেন; কারণ পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভিত্তিটাই ছিল ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের ওপর প্রতিষ্ঠিত।
ভারতীয় সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু শাসকদল কংগ্রেসের শাসন ওই পথে এগোয়নি। ধর্মনিরপেক্ষতার একটি অভূতপূর্ব সংজ্ঞাই বরং তারা দাঁড় করিয়েছিলেন। সেটা হলো সব ধর্মের সমান মর্যাদা, যাকে আর যাই হোক কোনো দিক দিয়েই ধর্মনিরপেক্ষতা বলা যাবে না। জওয়াহেরলাল নেহরু ধর্মনিরপেক্ষতা চাইতেন, বল্লভভাই প্যাটেল ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষতার চরম বিরোধী এবং হিন্দু রাষ্ট্রের পক্ষে। প্যাটেলপন্থিদের শক্তি ছিল অধিক। তাদের ইচ্ছাই শেষ পর্যন্ত জয়যুক্ত হয়েছে; নেহরুপন্থিদের হটিয়ে দিয়ে হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) রাষ্ট্রক্ষমতা পেয়ে গেছে। তাদের অঘোষিত অভিপ্রায় ‘বিদেশ থেকে আগত’ মুসলমানদের ফেরত পাঠানো। আর ঘোষিত রূপেই তো ওই পার্টির নেতা ও সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে দিয়েছেন যে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে শরণার্থী হয়ে এলে অমুসলিমদের তারা নিয়ে নেবেন। অর্থাৎ আমন্ত্রণই জানাচ্ছেন তাদের আসতে। এর বিপরীতে তিনি চাইছেন তথাকথিত ‘অবৈধ মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের’ ফেরত পাঠাতে। গত নির্বাচনের সময়ে পশ্চিমবঙ্গে এসে তিনি তার নিজস্ব ভাষায় বলে দিয়েছিলেন যে ক্ষমতা পেলে বিজেপি সরকার বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের একজন একজন করে ধরবে এবং বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করবে।
পশ্চিমবঙ্গের ভাগ্য ভালো বিজেপি ক্ষমতা পায়নি। কিন্তু আসামে তো পেয়েছে। এবং সেখানে যারা একই সঙ্গে বাঙালি ও মুসলমান তারা নানা ধরনের নিগ্রহের শিকার হচ্ছে। বিজেপি ত্রিপুরাতেও জিতেছে এবং সেখানেও মুসলমান অধিবাসীরা অস্বস্তিতে পড়েছেন। ভারতের মুসলমানরা বিদেশ থেকে আসেননি; তারা স্থানীয়ই, কিন্তু যেহেতু তারা একে সংখ্যালঘু তদুপরি মুসলমান তাই অবজ্ঞার অবহেলার নীরব শিকার হয়েছে। দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে তাদের আনুপাতিক হার অতি সামান্য; পুলিশ বিভাগে উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো নয়; কিন্তু জেলখানায় গেলে দেখা যাবে তারা রয়েছে ঠাসাঠাসি করে।
মোটকথা, ভারতের রাজনীতি-প্রবাহ বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতিষ্ঠায় সাহায্য তো করছেই না, উল্টো বৈরিতাই করে চলেছে। ভারতের সঙ্গে পানিবণ্টন, অসম বাণিজ্য এবং সীমান্ত সংঘর্ষের অবসান ঘটেইনি, উল্টো বৃদ্ধিই পেয়েছে, তাতেও আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িকতা উৎসাহ পাচ্ছে।
তরুণদের দেশপ্রেমিক ও সৃষ্টিশীল করে তোলার জন্য যে সাংস্কৃতিক কাজ দরকার সেটা বাংলাদেশে এখন নেই। উন্নতির হুকুমদারিতে সংস্কৃতি দমিত হচ্ছে। আর তার কুফল সবচেয়ে গভীরভাবে বহন করছে তরুণ সমাজ।
নিরাপত্তার প্রশ্নটি অবশ্য আসে সবার আগে এবং সব নিরাপত্তার আগে আসে খাদ্যে নিরাপত্তার প্রশ্ন। করোনাকালে অধিকাংশ মানুষের আয়-উপার্জন কমেছে, কিন্তু দাম বেড়েছে খাদ্যের। মানুষ রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকের জন্যই দশাটা খাবি খাওয়ার।
পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় নিরাপত্তার সব উদ্যোগটাই দাঁড়ায় ব্যক্তিগত এবং মানুষের স্বাভাবিক ঝোঁকটা থাকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি সংগ্রহের দিকে। খবরটা অনেকেই পড়ে থাকবেন যে কেন্দ্রীয় পাট গবেষণা কেন্দ্রের একজন অবসরপ্রাপ্ত বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, আনোয়ার শহিদ তার নাম, নিরাপত্তার জন্য সম্পত্তি সংগ্রহের ‘অপরাধে’ খুন হয়েছেন। একসময়ে তিনি কাজ করতেন দিনাজপুরে; ব্যক্তিগত সঞ্চয় থেকে তিনি জমিজমা কিছু কিনেছিলেন, ভবিষ্যতের কথা ভেবে। যার মাধ্যমে কিনেছিলেন আপনজন হিসেবে তাকেই দিয়েছিলেন দেখাশোনা করতে। ওই আপনজন জমি থেকে আয়ের একটা অংশ মালিক ভদ্রলোককে নিয়মিত পৌঁছে দেবে এটাই ছিল শর্ত। আপনজনটি ছোটখাটো ব্যবসা করত, তার জন্য শহিদ সাহেবের কাছ থেকে কর্জ হিসেবে কয়েক লাখ টাকা নেয়। আপনজনটি এর মধ্যে মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে। তাই টাকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। টাকার জন্য আনোয়ার শহিদ তাগাদা দিচ্ছেন। শহিদ সাহেব বিয়ে করেছিলেন, কিন্তু বিয়ে সফল হয়নি, তার কোনো সন্তানও নেই। আপনজনটি দেখল যে শহিদ সাহেবের তাগাদা থেকে অব্যাহতি পাওয়া তো বটেই তার সম্পত্তির মালিক হওয়াও সম্ভব যদি তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া যায়। সেই উদ্দেশ্যে সে ভাড়াটে খুনি জোগাড় করে। খুনিকে নিয়ে ঢাকায় আসে। সরল বিশ্বাসী শহিদ সাহেবকে ফোন করে ডেকে আনে, টাকা দেবে বলে। তিনি এলে শ্যামলী এলাকার এক গলিতে তার সঙ্গে আলাপের ভান করে, আর সেই ফাঁকে খুনিটি শহিদ সাহেবের বুকে ছুরি চালিয়ে তাকে হত্যা করে এবং দুজনে মিলে পালিয়ে যায়। পরে অবশ্য তারা ধরা পড়েছে। তবে তাতে আনোয়ার শহিদের কি-ইবা আসে যায়?
রাষ্ট্র নিরাপত্তা দেবে বলে; নিরাপত্তার জন্য নানা ধরনের আইন আছে, বাহিনী রয়েছে, আছে আদালত। এদের মধ্যে একটি হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। বাংলাদেশ এরই মধ্যে ডিজিটাল যুগে পৌঁছে গেছে; কিন্তু এই প্রযুক্তির অপব্যবহার যাতে না ঘটে, ব্যক্তি এবং রাষ্ট্র কারও স্বার্থেরই যাতে হানি না হয়, আইনের ঘোষিত উদ্দেশ্য সেটাই। অপরাধীদের বিচারের জন্য যে সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে তাতে রুজু করা মামলাগুলোর শতকরা ৯৭টিই নাকি খারিজ হয়ে গেছে। রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্য-প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। সেটা পরের ব্যাপার; কিন্তু অভিযুক্তকে তো তদন্তের আগেই কারাগারে চলে যেতে হয়, থাকতে হয় রিমান্ডে। অভিযুক্ত ও আইনজীবীদের কারও কারও অভিজ্ঞতা এই রকমের যে, বাদীর সঙ্গে রাজনৈতিক, সামাজিক বা আর্থিক আপস-মীমাংসায় পৌঁছাতে হয়। আর বিচারের প্রক্রিয়ায় যে আর্থিক শারীরিক ও সামাজিক দুর্গতি ঘটে তার তো কোনো ক্ষতিপূরণই নেই। মিথ্যা মামলা করা দ-নীয় অপরাধ বটে, কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মিথ্যা মামলাকারীদের শাস্তির কোনো সুনির্দিষ্ট ধারা নেই। ওদিকে আবার সংক্ষুব্ধ নয় কিংবা ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়নি এমন ব্যক্তিও মানহানির মামলা ঠুকে দিতে পারে। আইনটি সংস্কারের দাবি উঠেছে, কিন্তু শোয়ার লোক নেই।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি আইনও কার্যকর অবস্থায় আছে। এ আইনে মামলা হলে পুলিশ তৎক্ষণাৎ গ্রেপ্তার করতে পারে। যেমনটা ঘটেছিল ফটোগ্রাফার শহিদুল আলমের বেলায়। শহিদুল আলম একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এবং আন্তর্জাতিক মানের ফটোগ্রাফার। আমাদের স্মরণে আছে ২০১৮ সালে সড়কে দুজন শিক্ষার্থী বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যায়; এতে ব্যাপক ছাত্রবিক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ঢাকা শহরের ধানম-ি এলাকায় ছাত্রদের বিক্ষোভে পুলিশের সামনেই হেলমেটে সুজ্জিত গু-াবাহিনী দমন-পীড়ন চালায়। শহিদুল আলম সেখানে উপস্থিত ছিলেন, তিনি ছবি তুলছিলেন; আল জাজিরা টেলিভিশনের লোকরাও ছিল; তাদের অনুরোধে শহিদুল আলম তাদের একটি সাক্ষাৎকার দেন।
গণমাধ্যমে তিনি রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর অপপ্রচার করেছেন এই অভিযোগে পুলিশ তার বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেয়। গভীর রাতে বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে দৈহিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। এবং পরে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এতে দেশে তো বটেই বিশ্বের নানা স্থানে প্রতিবাদ ওঠে; প্রতিবাদকারীদের ভেতর বারোজন নোবেল পুরস্কারবিজয়ীও ছিলেন। সাড়ে তিন মাস জেলে কাটানোর পরে তিনি জামিনে মুক্ত হন। শহিদুল আলম জামিন পেয়েছেন জনমতের চাপে। জামিন পাওয়ার চেয়েও অনেক বড় ঘটনা তার ওপর দৈহিক নির্যাতন এবং তাকে আটকে রাখা। ওই স্তরের একজন মানুষ যদি ‘সাইবার অপরাধে’ অতসহজে হেনস্তা হন, তাহলে অন্যদের হালটা কী? আর এই বার্তা তো রটে যাবেই, গেছেও, যে গণমাধ্যমে এমন বক্তব্য দেওয়া একেবারেই অনুচিত যা সরকারের পছন্দ নয়।
ভয়ের বিস্তার থামায় কে? সরকারের দিক থেকে ভয়কে উৎসাহিত করা তো খুবই সুবিধাজনক।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য সরকার দায়ী নয়, দায়ী রুশ-ইউক্রেন আর তাদের মিত্ররাএরা বিশ্বকে অস্থির করে বাজারদর চড়িয়ে দিয়েছে। আর করোনা মহামারী তো এজন্য আরও আগে থেকেই দায়ী। চিবিয়ে-চাবিয়ে বা ইনিয়ে-বিনিয়ে নয়, সোজাসাপ্টা এ কথা খোলাসা করে জানিয়ে দিয়েছেন সরকার ও সরকারি দলের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্ব ওবায়দুল কাদের। রংপুরে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছে বলে স্বীকার করেছেন। পরক্ষণেই ‘তবে-কিন্তু’ যোগ করে বলেছেন, এজন্য সরকারকে দোষারোপ করা যাবে না। দায়ী বিশ্ব পরিস্থিতি।
যুক্তি-বুদ্ধি কত কড়া! নতুন করে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে দেশের মানুষের জীবনযাপনের খরচ আরও বেড়েছে। সরকার এখানেও নির্দোষ? নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রধান পণ্যগুলোর দাম আগে থেকেই বাড়তি। প্রতিদিন তা বেড়েই চলেছে। সরকার ঘটনা মানে, তালগাছ ছাড়ে না। বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও তাই। বিদ্যুৎ বা জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে বাদবাকি পণ্য ও সেবার দাম আর বাড়াতে হয় না। সুই-সুতা থেকে পরিবহনের ভাড়া আপন গতিতেই বাড়তে থাকে। টানা কয়েক বছর ধরে চালের দাম নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এর দাম বেড়েছে কয়েক দফা। বেড়েছে জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল ও ডাল-চিনির দামও। জরুরি ওষুধের দাম বেড়ে গেছে অনেকটা নিঃশব্দে। যার দরকার সে কিনবেই। কিনতে বাধ্য। এজন্য কাউকে দায়বিদ্যুৎ প্রশ্নে কাণ্ডকীর্তি অনেকটা তুঘলকি স্টাইলের। বিদ্যুতের দাম বাড়াতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসির গণশুনানির ফলের অপেক্ষায় থাকার মধ্যেই সরকার নির্বাহী আদেশে গ্রাহকপর্যায়ে ৫ শতাংশ দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তা ১ জানুয়ারি থেকেই কার্যকর। আগামী মাসে আরেক দফা বাড়ানোর বন্দোবস্ত পাকা করে ফেলা হয়েছে। ভর্তুকি কমাতে ধাপে ধাপে ১৫ শতাংশের মতো দাম বাড়ানোর বুদ্ধিও ঠিক করে রাখা হয়েছে। বিদ্যুতের এ বাড়তি দাম কার্যকরের সমান্তরালে গ্যাসের দাম বাড়ানোর এন্তেজামও রয়েছে। তামাশার কাণ্ড হচ্ছে গ্যাস-বিদ্যুতের ‘দাম বৃদ্ধি’ বলতে চায় না সরকার। ‘দাদাকে আদা পড়া দেওয়া’ বা ‘বাঙালকে হাইকোর্ট দেখানো’র মতো করে একে বলা হয় ‘মূল্য সমন্বয়’। কত অসহায় জনগণ! এ তামাশা-মশকরা হজম করা যেন আজন্মের পাপের প্রায়শ্চিত্ত।
সরকারকে এ সবকের নেপথ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণপ্রাপ্তিকে শনাক্ত করা হয়। পুরো বিষয়টা মোটেই তা নয়। এখানে সরকারের নিজস্ব অনেক হিসাব ও কৌশল লুকানো থাকে, যা চালিয়ে দেওয়া হয় আইএমএফের ঘাড়ে। ভর্তুকি কমানোর কথা বলে ‘সমন্বয়’ নামের খড়্গ সরকারেরই বুদ্ধি বা কুবুদ্ধির রকমফের। মানুষ যেন না ক্ষেপে তাই ধাপে-ধাপে বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের দাওয়াই। আর চুরি-দুর্নীতিকে ‘সিস্টেম লস’ নামে সম্বোধন। আর লোকসান ও যথেচ্ছ খরচের নাম ‘অবচয়’। কত হাঁদারাম এবং অসহায় জনগণ।
এই জনগণই আসলে বাংলার প্রকৃত মহাশয়। এদের সবই সয়। সইতে হয়। বলা হয়ে থাকে, জীবনযুদ্ধে পেছনে যেতে যেতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মানুষ তখন নিরুপায় হয়ে ঘুরে দাঁড়ায়, ঘুরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়। এটাও বাস্তবে কথার কথা। এ দেশে মানুষ প্রতিনিয়ত পেছনে যেতে এমন অভ্যস্ত হয়ে গেছেন, সেখানে ঘুরে দাঁড়ানোর পর্বটাই থাকছে না। অমানবিক কষ্ট-গ্লানির নানাবিধ জীবিকার পন্থাকে অবলম্বন করে মানুষ ভাবেন এখনো ‘বেঁচে আছি’! অথবা পিঠে ঠেকে যাওয়া দেয়ালটাই হয়তো ‘স্থানচ্যুত’ হয়ে যায় এবং মানুষ হুমড়ি খেয়েও জীবন্মৃত বেঁচে থাকে! বিদ্যুৎ-গ্যাস, পানি, ওষুধ, নিত্যপণ্যসহ কিছু বিষয়ে মানুষকে ‘মিছাকলা’-কেই ‘কলা’ ভেবে গিলতে হয়।
হিসাবের খাত ও অঙ্কগুলো কী চমৎকার। বাড়তি দামে বিদ্যুৎ কেনা, বসে থাকা কেন্দ্রের ভাড়া মেটানো ও সিস্টেম লসের কারণে বড় অঙ্কের লোকসান গুনতে হয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে। এই লোকসান মেটাতে সরকারের ভর্তুকির ওপর নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০২১-২২ অর্থবছরে পিডিবি ভর্তুকি চেয়েছিল ২৯ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত অর্থ মন্ত্রণালয় ছাড় করেছে ১৮ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের জন্য পিডিবি ভর্তুকি প্রাক্কলন করেছে ৪৪ হাজার ২০ কোটি টাকা। সরকার চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতের জন্য ভর্তুকি বরাদ্দ রেখেছে ১৭ হাজার কোটি টাকা।
লোকসান পোষাতে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন গত ২১ নভেম্বর বিদ্যুতের পাইকারি দাম ১৯.৯২ শতাংশ বৃদ্ধি করে। এরপরই গ্রাহকপর্যায়ে বিদ্যুতের দাম গড়ে ২০ শতাংশ বৃদ্ধির আবেদন করে ৬ বিতরণ কোম্পানি।
তাদের আবেদনের ওপর গত ৮ জানুয়ারি গণশুনানি হয়। শুনানিতে ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ দাম বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়। আর সুপারিশ মানেই সিদ্ধান্ত। এবার তাও না করে রাতের কাণ্ড। গত বৃহস্পতিবার নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের খুচরা মূল্য ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এখন অপেক্ষা গ্যাসের বাড়তি দাম আরোপ। যুক্তি তো আছেই। গত বছরের ৫ জুন গ্যাসের দাম ২২ শতাংশের বেশি বাড়ানো হয়। এই মূল্যবৃদ্ধির পরও লোকসান হচ্ছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট বিতরণ কোম্পানিগুলোর। এবার নির্বাহী আদেশ জারি করে দিলেই হয়ে যাবে। রোখার সাধ্য কার? বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তো বলেই রেখেছেন, এখন থেকে প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয় করা হবে।
চলমান অর্থনৈতিক সংকটের পেছনে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করা হলেও ক্রমবর্ধমান বাজেটঘাটতি, বাণিজ্যঘাটতি, ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে কিংবা আমদানি-রপ্তানিতে মূল্যের তারতম্যের মাধ্যমে বিদেশি পুঁজি পাচার, ঋণনির্ভর ব্যয়বহুল অবকাঠামো নির্মাণ ও জ্বালানি আমদানির ঘটনাগুলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর বহু আগে থেকেই ঘটছিল। আইএমএফের শর্তের কথা বলে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির দায় এড়ানো প্রকারান্তরে একটি ছুঁতো। নানান অব্যবস্থাপনা ও লুটপাটের মাধ্যমে অর্থনীতি আইএমএফের শর্তের জালে ঢোকানোর ব্যবস্থা আগেই হয়ে আছে। তড়িঘড়ি বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়ানোর আগে গত আগস্টে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে রেকর্ড পরিমাণে। আর গত জুনে বেড়েছে গ্যাসের দাম। বাকি আছে পানির দাম, তা-ও বাড়িয়ে দিতেই কতক্ষণ!
চাতুরীটা এখানে পরিষ্কার। বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি বা কোনো সংস্কারের দায় আইএমএফরে ওপর চাপানোও কখনো কখনো আরেক চাতুরী। এমন নয় যে জনমের তরে বাংলাদেশ এবারই প্রথম এই আন্তর্জাতিক মুদা তহবিল থেকে ঋণ নিচ্ছে। এর আগে অন্তত আরও ডজনবার আইএমএফের ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে সদস্য হওয়ার সময়ই সরকার আইএমএফ থেকে প্রথম ঋণ নেয় ১৯৭৪ সালে। ২০১২ সালে নেওয়া সর্বশেষ ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার। সেটাই ছিল আইএমএফের কাছ থেকে নেওয়া সর্বোচ্চ ঋণ। আর এবার ৪৫০ কোটি ডলার। এই অর্থের মধ্যে ৩২০ কোটি ডলার পাওয়া যাবে বর্ধিত ঋণ সুবিধার (ইসিএফ-ইএফএফ) আওতায় এবং বাকি ১৩০ কোটি দেওয়া হবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায়। মোটাদাগে আইএমএফের ঋণ শর্তের ধরন প্রায় একই রকম। দেশে দেশে তেমন পার্থক্য থাকে না। ভিন্নতা যার যার দেশীয় এবং সরকারগুলোর মনমর্জির। আইএমএফ অনেক ধরনের সংস্কারের কথা বললেও জনগণের অর্থে বেসরকারি খাতের অতি মুনাফার বিরুদ্ধে তাদের কোনো অবস্থান থাকে না। তবে, ঋণের জন্য গেলে আইএমএফ ভর্তুকি কমানোর শর্ত দেয়। অব্যবস্থাপনা ও লুটপাট করতে বলে না।
এবারের ঋণের মাঝে কিঞ্চিৎ রকমফের আছে। আইএমএফ রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনিবিলিটি ফান্ড (আরএসএফ) নামে একটি নতুন তহবিল গঠন করেছে গত বছরের ১৩ এপ্রিল। এর প্রায়োরিটিতে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো। বার্বাডোজ, কোস্টারিকা ও রুয়ান্ডা এই ঋণ পেয়েছে। এ কোটায় এশিয়ার প্রথম দেশ বাংলাদেশ। এ প্রশ্ন কিছুটা পর্যবেক্ষণের অপেক্ষা রাখে। এর আগের পর্যবেক্ষণ কিন্তু ছিল দুঃখজনক। ২০১২ সালের ঋণ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার শুরু থেকে ঋণের শেষ কিস্তি পাওয়া পর্যন্ত সময়ে সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছিল পাঁচবার, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় আটবার এবং পানির দাম বাড়ানো হয় পাঁচবার। তবে পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ভর্তুকি কমানোর শর্ত মেনে সরকার এসব সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়ন করলেও ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের কারণে বেশ কিছু সংস্কার সরকার করতে ব্যর্থ হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল নতুন ভ্যাট আইন। ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে ভোটের আগে ভ্যাট আইন করবে না বলে সরকার জানিয়ে দিলে আইএমএফ ঋণের কিস্তি এক বছর আটকে দেয়। ২০১৬ থেকে নতুন আইন বাস্তবায়ন করা হবে, এই প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরই আইএমএফ ২০১৫ সালের নভেম্বরে শেষ দুই কিস্তি একসঙ্গে ছাড় করে। এমনকি সরকার তখন প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ব্যাংকিং খাতের সংস্কারও পুরোপুরি করেনি।
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তেজনাময়। সামনে নির্বাচন। এখন সরকার নির্বাহী আদেশে নানা পরিষেবার দাম বাড়ালেও নির্বাচনের আগে আগে তা গিয়ে কোন মতিগতিতে ঠেকে সেটা ভাবনার বিষয়। লক্ষণীয় হলো এবার আইএমএফের ঋণের চূড়ান্ত অনুমোদনের আগেই সরকার কিছু শর্ত পূরণ করা শুরু করে দিয়েছে। মূলত যেসব শর্ত পূরণ করা সহজ, যা সাধারণ মানুষের ওপর চাপ বাড়ায়, সেগুলোই সরকার দ্রুত করছে। কিন্তু যেসব সংস্কারে প্রভাবশালীরা চাপে পড়বে, তাদের সুযোগ-সুবিধা কমবে, সেদিকে গরজ যায় না সরকারের। উদ্বেগটা তো সেখানেই।
লেখক +সাংবাদিক-কলামিস্ট
বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন
১৯৪৫ সালের ১৮ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দীন। আশির দশকে তিনি মফস্বল সাংবাদিকতায় খ্যাতিলাভ করেন। এ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে করা প্রতিবেদনগুলোর মধ্য দিয়ে তিনি ‘চারণ সাংবাদিক’ হিসেবে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। ১৯৬৬ সালে তিনি দৈনিক আজাদ পত্রিকা দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন। দৈনিক সংবাদে ‘পথ থেকে পথে’ ধারাবাহিক প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে তার জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৭৬ সাল থেকে প্রায় দুই দশক দৈনিক সংবাদে কাজ করেন তিনি। ১৯৯৫ সালে তিনি দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় যোগ দেন। তার উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে রয়েছে ‘সংবাদের নেপথ্য’, ‘পথ থেকে পথে’, ‘কানসোনার মুখ’, ‘নিজস্ব রিপোর্ট’, ‘অনুসন্ধানী প্রতিবেদন’, ‘কাগজের মানুষেরা’ ও ‘নরনারী’। তার রচিত একমাত্র নাটক ‘রাজা কাহিনী’। ১৯৮৪ সালে ‘সাংবাদিক জহুর হোসেন চৌধুরী স্মৃতি পদক’, দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত ‘মানুষ ও সমাজ’ প্রতিবেদনের জন্য বাংলা ১৩৯৩ সালে ফিলিপস পুরস্কার, ১৯৮৭ সালে ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স পুরস্কার’ এবং ১৯৯৫ সালে ‘অশোকা ফেলোশিপ’ লাভ করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। তিনি সংবাদ সংগ্রহের জন্য ১৯৯৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর যমুনা নদীতে ড্রেজিং পয়েন্টের ছবি তুলতে গিয়ে আকস্মিকভাবে পানিতে পড়ে ডুবে মারা যান।
সংবিধান অনুযায়ী স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে মুক্ত স্বাধীন জীবনযাপনের অধিকার প্রত্যেক নাগরিকেরই আছে। কিন্তু এ দায়বদ্ধতা আদৌ রক্ষা হচ্ছে না। যুগের পর যুগ ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেপ্তারের ক্ষমতা স্বেচ্ছাচারীভাবে প্রয়োগ হয়ে আসছে। সন্দেহভাজন কাউকে জেরা ও তল্লাশিতে ব্যক্তির মর্যাদা রক্ষায় উচ্চ আদালতের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে হয়রানি, শারীরিক ও মানসিক নিগ্রহের ঘটনাও এ দেশে নিয়মিত। এ অন্যায় গ্রেপ্তার ও আটকাদেশ সংবিধানের উল্লিখিত বিধানের সঙ্গে সম্পূর্ণ অসংগতিপূর্ণ। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও কর্র্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে সারা দেশে সাদা পোশাকে পুলিশের অভিযান ও ৫৪ ধারার প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে যুগ যুগ ধরে। ১৮৯৮ সালের আইন ২০২৩ সালেও কার্যকর থাকলে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। যারা আইন করেছিল সেই ব্রিটিশরাই এখন বাঙালি কায়দায় কাউকে আর সন্দেহ করে না।
মঙ্গলবার দেশ রূপান্তরে ‘মানুষকে কেন এত সন্দেহ’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল যুগান্তকারী রায়ে হাইকোর্ট ৫৪ ধারা প্রয়োগে কারও সঙ্গে স্বেচ্ছাচারিতা না করা, আটক বা গ্রেপ্তারের সময় পরিচয় দেওয়া, কাউকে নিবর্তনমূলক আটকাদেশ না দেওয়া, রিমান্ডে নির্যাতন না করা, ধারা সংশোধনের তাগিদ প্রভৃতি ১৫ দফা নির্দেশনা দেয়। ২০১৬ সালের ২৪ মে আপিল বিভাগে এ রায় বহাল থাকে। ওই বছরের ১০ নভেম্বর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ সংক্রান্ত নীতিমালা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তব্যবিষয়ক নির্দেশনায় বলা হয়, নাগরিকের সম্মান রক্ষা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে উঁচুমানের পেশাদারিত্ব দেখাতে হবে। সংবিধানে স্বীকৃত নাগরিকের অধিকার রক্ষার নির্দেশনাও দেওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সতর্কতামূলক নির্দেশনা থাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক বা গ্রেপ্তারে কৌশল পাল্টেছে। এখন মাদক বা অন্য কোনো মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৫ ধারায় পুলিশকে ভবঘুরে, অভ্যাসগত অপরাধী, চোরাইমাল বহনকারী ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হলেও তারা যখন-তখন যাকে-তাকে আটক বা গ্রেপ্তার করে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ উঠছে প্রায়ই। অন্যদিকে, প্রতিদিনই বিভিন্ন থানার সাদা পোশাকের টিমের বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আইজিপি কমপ্লেইন সেলেও প্রতিদিন অভিযোগ জমা পড়ছে। সাদা পোশাকের পুলিশ কী করে না করে তা পরিষ্কার। এক কথায় একে বলে ‘জননিবর্তন’। সন্দেহ হলেই বা ‘সন্দেহ হচ্ছে মর্মে সন্দেহ’ হলেই পুলিশ কাজটি করে। মানুষকে নিয়ে কেন এত সন্দেহ? এর পেছনে অর্থযোগের পাশাপাশি রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক ‘সন্দেহের’ কথাও উঠে আসছে।
দীর্ঘদিনেও আইনের সংস্কার ও সংশোধন হয়নি। উপরন্তু ৫৪ ও ১৬৭ ধারা নিয়ে আপিল বিভাগের রায়ের রিভিউ চেয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। ১৯ জানুয়ারি এ বিষয়ে শুনানি রয়েছে। মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীদের ভাষ্য, রাষ্ট্রপক্ষ নিবর্তনমূলক আইনের সংশোধন না চাইলে আইনের ব্যত্যয় ও অপপ্রয়োগ হবেই। অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্নার মতে, ‘জনগণকে শাসন করার জন্য নিবর্তনমূলক আইন থাকা উচিত নয়।’ আসকের নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘৫৪ ধারা নিয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মানা তো হচ্ছেই না, বরং কৌশলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আগেই ব্যক্তিকে আসামি বানিয়ে দিচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাদা পোশাকধারীরা মানুষকে উঠিয়ে নেয়।’ থানা-পুলিশের সিভিল টিম গঠনের বা সাদা পোশাকে অভিযান চালানোর আইনগত ভিত্তি নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন, ‘সাদা পোশাকে পুলিশ অভিযান চালাতে পারে না।’ আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, ১০৩ ধারা অনুযায়ী কাউকে তল্লাশি করতে হলে একাধিক ব্যক্তিকে সাক্ষী রাখার বিধান মানা হয় না বললেই চলে। উচ্চ আদালতের রায়ের পর আশা করা হয়েছিল, গ্রেপ্তার ও রিমান্ড নিয়ে ঔপনিবেশিক ও সংবিধানবিরোধী চর্চার অবসান ঘটবে। কিন্তু রায়ের ২০ বছর পরের বাস্তবতা হলো, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে দুটি ধারার অপপ্রয়োগের অভিযোগ কমছে না। রিমান্ডের প্রশ্নে হাইকোর্টের নির্দেশনাও অমান্য করেছেন তারা। মানবাধিকার, নাগরিকের মৌলিক অধিকার, জনগুরুত্বপূর্ণ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে উচ্চ আদালত প্রায়ই আদেশ, রায় ও নির্দেশনা দেয়। কিন্তু তা বাস্তবায়নে সরকারের সংশ্লিষ্টদের অনীহা, উদাসীনতা ও অবহেলার অভিযোগ রয়েছে। এর জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব যেমন রয়েছে, তেমনি প্রভাবশালীদের অপতৎপরতা, সংশ্লিষ্টদের ইতিবাচক মানসিকতার ঘাটতি, আমলাতান্ত্রিকতাও কম দায়ী নয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশ পালন না করা আদালত অবমাননা ও সংবিধানের প্রতি অবজ্ঞার শামিল হলেও এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নজির খুব বেশি নেই। এসব বিষয়ে জোরালো তদারকি ও সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহির আওতায় আনতে প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টে একটি সেল কিংবা সচিবালয় গঠন করা যেতে পারে।
বাংলাদেশের ৫৩তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস রবিবার।
একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালিদের ওপর অতর্কিত গণহত্যা অভিযান ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু করে এবং বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারের পূর্বে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ রাতের প্রথম প্রহরে ঢাকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকিস্তানি সেনারা বাঙালি বেসামরিক লোকের ওপর গণহত্যা শুরু করে।
তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এবং সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। ওই ঘোষণা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হয়।
বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তারের আগে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পাশাপাশি যে কোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
মুহূর্তের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই সময় বাস্তবতা ও নিরাপত্তা জনিত কারণে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার এই ঘোষণা নথি সংরক্ষণ করা সম্ভব ছিল না। পরবর্তী সময়ে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
তৎকালীন ইপিআর-এর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পরে। পরে চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭ মার্চ বেশ কয়েকজন শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।
দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধর পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে একটি ভূখণ্ডের, যার নাম বাংলাদেশ।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।
রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধির মধ্যেই তৈরি পোশাক খাতের আকাশে দেখা দিয়েছে শঙ্কার মেঘ। কয়েক মাস ধরেই খাতটির উদ্যোক্তারা রপ্তানি আয় কমে যাওয়া নিয়ে নানা ধরনের শঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন। তারা বলছেন, রপ্তানির প্রধান প্রধান অঞ্চলগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি থাকায় আগামীতে ওই সব অঞ্চলে রপ্তানি ব্যাপক হারে কমে গেছে। তাদের ভাষ্য, ইতিমধ্যে তার প্রভাবও স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। অর্ডার কমে যাওয়ায় কমেছে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানিও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যও বলছে সে কথা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খোলার হার নেমেছে প্রায় অর্ধেকে।
দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। তবে এই খাতের কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতির পুরোটাই আমদানিনির্ভর; যা চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাপক হারে কমে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) টেক্সটাইল ফেব্রিক্স আমদানির এলসি বা ঋণপত্র খোলা কমেছে ২৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ৬২৬ কোটি ডলারের এলসি খোলেন গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮৬৫ কোটি ডলার।
তবে প্রস্তুত কাপড়ের চেয়ে বেশি আমদানি কমেছে কাঁচামালের। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে কাঁচা তুলা বা কটন আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৪৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এ সময়ে কাঁচা তুলা আমদানিতে ১৫৩ কোটি ডলারের এলসি খোলেন ব্যবসায়ীরা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে তুলা আমদানিতে ২৭২ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। আবার তুলার চেয়ে সুতা আমদানি আরও কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সুতা আমদানিতে এলসি খোলা হয় ১০৭ কোটি ডলারের, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৪২ কোটি ডলার। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সুতা আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৫৬ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের আট মাসে শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৫৪ দশমিক ১১ শতাংশ। এই সময় টেক্সটাইল যন্ত্রপাতির এলসি খোলা কমেছে ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশ। আর গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ৬৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি করে উদ্যোক্তারা সাধারণত নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন বা কারখানার সম্প্রসারণ করে থাকেন। অর্থাৎ শিল্প খাতে বিনিয়োগ বাড়ে। বিনিয়োগ বাড়লে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে। সামগ্রিক অর্থনীতিতে গতিশীলতা আসে। আর এটি কমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে, ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা ব্যবসা সম্প্রসারণ কিংবা নতুন কলকারখানা স্থাপন অনেক কমিয়ে দিয়েছেন। এতে দেশে বিনিয়োগ ও উৎপাদনে ‘ধস’ নামার একটা অশনিসংকেত পাওয়া যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে কাঁচামাল ও জাহাজভাড়া অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার ব্যাপক পতন, বিভিন্ন দেশে মন্দার শঙ্কাসহ নানা কারণে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে উচ্চ আমদানি ব্যয়ের কারণে দেশে ডলার সংকট দেখা দিলে এলসি খোলায় কড়াকড়ি আরোপ করে সরকার। এতে ডলারের ওপর চাপ কিছুটা কমানো গেলেও আমদানি জটিলতায় পড়েছে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য খাত।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানির ক্রয়াদেশ কিছুটা কমেছে। কিন্তু উচ্চমূল্যের পণ্য রপ্তানি বাড়ায় রপ্তানি আয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রভাব পড়েনি। যেহেতু সাধারণ পোশাক রপ্তানি কমেছে সে কারণে কাঁচামাল ও মেশিনারিজ আমদানিও কমেছে। পাশাপাশি ডলার সংকটও আমদানি কমে যাওয়াতে ভূমিকা রেখেছে। ফারুকের আশঙ্কা, উন্নত দেশগুলোতে ব্যাংকিং খাতে যে সংকট দেখা দিয়েছে, তার কারণেও রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে এসব বিষয় মোকাবিলায় পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংকগুলোতে বিনিয়োগ করার মতো অর্থের সংকট রয়েছে। এ কারণে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করতে পারছে না। পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে টাকার বড় অবমূল্যায়নের কারণে মালিকরা খুব বেশি প্রয়োজন না হলে মূলধনি যন্ত্রপাতি আনছেন না। অবশ্য আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম কমায় আমদানির পরিমাণে প্রভাব পড়েছে বলেও মনে করেন ফজলে শামীম এহসান।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মন্দার আশঙ্কায় কেউ নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এ কারণে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। তবে কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়াটাকে তারাও আসন্ন সংকট হিসেবে দেখছেন। গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এবং ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশে ডলারের সংকটের কারণে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা কাঁচামাল আমদানি করতেই হিমশিম খাচ্ছেন। এটা খুব ভালো লক্ষণ নয়। তবে তিনি আশাও দেখছেন। তার ভাষ্য, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম কমে যাওয়ায় মূলত আমদানি ব্যয় কম হয়েছে। আমদানির পরিমাণ খুব একটা কমেছে বলে মনে করেন না তিনি।
পুলিশ ভেরিফিকেশন না হওয়ায় চাকরি স্থায়ীকরণ হচ্ছিল না। কিন্তু তার দেরি সয়নি। নিজের তত্ত্বাবধানে থাকা সার্ভিস বইয়ের পাতায় কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে স্থায়ী করে নিলেন নিজের চাকরি। এই ব্যক্তি হলেন ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের উচ্চমান সহকারী মো. মনোয়ার হোছাইন। স্থানীয় সরকার বিভাগ তদন্তের পর থানায় মামলা হয়। এরপর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে তার বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগের চারটির প্রমাণ মিলে। দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট আইনের দুটি ধারায় তার ১২ বছর সাজা ও অর্থদ- হয়েছে। পুলিশ মনোয়ারকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৯৪ সালের ১৯ মে ‘ক্রু’ বা মশককর্মী পদে যোগ দেন মনোয়ার হোছাইন। দপ্তরের চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী, এলডিএ কাম টাইপিস্ট হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু অসম্ভবকে সম্ভব করে তিনি ওই পদও বাগিয়েছেন। ওই পদ থেকে উচ্চমান সহকারী (হেড ক্লার্ক) পদেও পদোন্নতি নিয়েছেন। এরপর দপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদের অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে নেন। তথ্য গোপন করে পদোন্নতি নেওয়া এই কর্মকর্তার বাদ ছিল চাকরিতে স্থায়ী হওয়া। প্রথমবার কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে বিধিবহির্ভূত পদোন্নতি নেওয়ার পর তার উচ্চাকাক্সক্ষা বেড়ে যায়। ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি তিনি দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল স্বাক্ষর করে চাকরি স্থায়ী করেন। এর আগে দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. রওশন আরা তালুকদারকে চাকরি স্থায়ী করার জন্য চাপ দেন। কিন্তু তিনি রাজি হননি।
এ ঘটনার পর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্থানীয় সরকার বিভাগ ও দুদকের তদন্ত কমিটির কাছে লিখিতভাবে তার স্বাক্ষর জাল করার বিষয়ে অভিযোগ করেন। ২০১১ সালে মনোয়ারকে বরখাস্ত করা হয়।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. রওশন আরা তালুকদার তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগের পক্ষে বিভিন্ন প্রমাণও জমা দেন। তিনি লিখিত বক্তব্যে জানান, অভিযুক্ত মনোয়ার হোছাইনের চাকরি স্থায়ীকরণ সংক্রান্ত চাকরি বইয়ের দ্বিতীয় খ-ের নবম পৃষ্ঠায় যে স্বাক্ষর রয়েছে তা তার নয়। ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি তারিখের স্বাক্ষরটি মনোয়ারের সৃজনকৃত। চাকরিকালীন তার বিষয়ে কোনো পুলিশ ভেরিফিকেশন করানো হয়নি। এ জন্য তার চাকরিও স্থায়ী করা হয়নি। আর সার্ভিস বইয়ে যে সিল ব্যবহার করা হয়েছে তা তার সময়ে ব্যবহৃত সিল থেকে ভিন্ন। সিলের নিচে যে স্বাক্ষর রয়েছে তিনি বলতে পারবেন সেটা কীভাবে হলো। ইস্যু রেজিস্টার খাতায় ৪৬ নম্বর দিয়ে যে চিঠিটি তৈরি করা হয়েছে তার কোনো কপি কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। ৪৬ নম্বর ক্রমিকটি ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি লেখা রয়েছে। অন্যান্য কলাম খালি রয়েছে। পরের পাতায় ২০১০ সালের ২৫ জানুয়ারি ২৬ নম্বর ক্রমিক দিয়ে একটি বদলির চিঠি ইস্যু করা হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরও জানান, ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের উচ্চমান সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন মনোয়ার হোছাইন। দপ্তরের বিধি-বিধান অনুযায়ী নথি, রেকর্ডপত্র, সার্ভিস বই তার কাছে রক্ষিত ছিল। এ কারণে জাল স্বাক্ষরের দায় তিনি কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। দপ্তরে জমা দেওয়া তার এলএলবি পাসের সনদও সঠিক ছিল না। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় থেকে তার ওই সনদ সঠিক নয় বলে লিখিতভাবে দপ্তরকে জানানো হয়েছে।
মনোয়ারের বিরুদ্ধে অনিয়মতান্ত্রিক কার্যকলাপ, নিয়োগ বাণিজ্য, স্বাক্ষর জাল, নিজেই নিজের চাকরি স্থায়ীকরণ এবং নথি, রেকর্ডপত্র, সার্ভিস বইয়ে ত্রুটি ঘটানোসহ পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে চারটি অভিযোগের প্রমাণ মেলে।
ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তর সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশে ২০১৩ সালের ১৮ জুন দপ্তরের পক্ষ থেকে চকবাজার থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা (নম্বর-৪) করা হয়। পরে মামলাটি তদন্তের জন্য দুদকে পাঠানো হয়। দুদক তদন্ত করে মনোয়ারের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর তাকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট আইনের একটি ধারায় তার পাঁচ বছরের কারাদ- হয়। পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের সশ্রম কারাদ- দেয় আদালত। আরেকটি ধারায় সাত বছরের কারাদন্ড দেওয়ার পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের বরখাস্ত উচ্চমান সহকারী মনোয়ার হোছাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, একটি চক্র তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে চলেছে। তাদের চক্রান্তের শিকার হয়ে তিনি কর্মস্থল থেকে বরখাস্ত হয়েছেন। কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল এবং আদালতের সাজার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা কত কিছু করছে। কোথায় আবার কী করেছে বুঝতে পারছি না। এ প্রসঙ্গটি বারবার উত্থাপন করলেও তিনি এড়িয়ে যান।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, গণহত্যা নিয়ে পাকিস্তান যা বলে, তারাও (বিএনপি) তাই বলে। কারণ তারা পাকিস্তানি ভাবধারায় উজ্জীবিত, তাদের হৃদয়ে পাকিস্তানি চেতনা।
আজ রবিবার (২৬ মার্চ) ভোরে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের দাবি 'আওয়ামী লীগের ভুলের জন্য গণহত্যা হয়েছিল'- এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, তাদের (বিএনপি) হৃদয়ে পাকিস্তানি চেতনা। তারা এমনটা বলবে, এটাই সমীচীন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার শত্রুরা সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ; এমন নানা পোশাকে স্বাধীনতাকে চ্যালেঞ্জ করে। এই অপশক্তিকে পরাস্ত করতে হবে। কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ সোনার বাংলা গড়ার পথে রয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া এখন অন্যতম অঙ্গীকার।
এর আগে, জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুলউল আলম হানিফ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের অপরাধীরা আগে ভারতে গিয়ে আত্মগোপন করত। এরপর জানা গেল, সেখান থেকে দেশে অপরাধ ঘটায় তারা। কারও কারও নেপালে অবস্থানের কথাও জানা যায়। ভারতকে নিরাপদ মনে না করায় আরব আমিরাতের দুবাই বেছে নিচ্ছে অপরাধীরা। সেখানে তারা আস্তানা গেড়েছে।
পুলিশসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দেশের অপরাধজগতের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীরা অপরাধ করেই দুবাই চলে যাচ্ছে। সেখানে বসেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কলকাঠি নাড়ছে। এখন বিতর্কিত মডেল, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরাও দুবাইকে কেন্দ্র করে নানা কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। সেখানে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যও আছে। তাদের কেউ কেউ সোনার কারবারও করছেন। ওই দেশে ভারতের দুর্ধর্ষ অপরাধী দাউদ ইব্রাহিমের শিষ্যত্ব নেওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ওইসব অপরাধীর তথ্য জানার পরও তাদের ফেরত আনতে পারছেন না। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিসের’ দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে পুলিশকে। তালিকাভুক্ত অপরাধীদের ধরতে রেড নোটিস জারি হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তারা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যাকাণ্ডের পর অনেকে পার পেয়ে গেছে। যদিও মামলাটি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। তবে নতুন করে আলোচিত মামলাটির পুনঃতদন্ত করার কথা ভাবছে পুলিশ। এ নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ রূপান্তরকে জানান, ২০২২ সালের ২৪ মার্চ সড়কে গুলি চালিয়ে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যা করা হয়। গুলিতে নিহত হন এক কলেজছাত্রী। চাঞ্চল্যকর এই জোড়া খুনের মূল হোতা সুমন শিকদার ওরফে মুসা ঘটনার রাতেই দেশ ছেড়ে চলে যায় দুবাইয়ে। সেখানে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও জয়ের সঙ্গে তার বৈঠক হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে মুসা চলে যায় ওমানে। জিসান ও জয় এখনো দুবাইতেই বসবাস করছে। যদিও ওমান থেকে মুসাকে ওই বছরের ৯ জুন ইন্টারপোলের মাধ্যমে ঢাকায় ফিরিয়ে আনে পুলিশ সদর দপ্তর। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই ফের আলোচনায় আসে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও হিরো আলমের দুবাই সফরকে কেন্দ্র করে। তারা বনানীতে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের আসামি আরাভ খান নামধারী রবিউল ইসলামের সোনার দোকান উদ্বোধন করতে সেখানে যান। দুবাই যাওয়ার কারণে সাকিব ও হিরো আলমকে যেকোনো সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে ডাকা হতে পারে। এ ছাড়া ‘প্লেজার ট্যুরের’ জন্য এখন দেশের শিল্পপতিদের পছন্দের জায়গা হয়ে উঠেছে দুবাই। কারণ ঢাকাকে তারা নিরাপদ মনে করছেন না। পাশাপাশি দেশে আটক সোনার চালানের ৮০ শতাংশ জব্দ হচ্ছে দুবাইফেরত বিভিন্ন এয়ারলাইনস থেকে। সব মিলিয়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে দুবাই।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অপরাধীরা যে দেশেই থাকুক না কেন, তাদের চিহ্নিত করে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানকে আটক করার পর দুবাই থেকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফেরত আনতে চেয়েছিল পুলিশ। সম্প্রতি আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আরাভকে দুবাই থেকে ফেরত আনতে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করি অল্প সময়ে সুখবর দেওয়া সম্ভব হবে।’
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে জানান, সম্প্রতি আলোচনায় আসা আরাভ খানকে দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি ভারতের পাসপোর্টধারী। দেশে তার নামে ১২টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। ওইসব পরোয়ানার কপি ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে পাঠানোর পর দ্রুতই তাকে ফেরানো সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও এর আগে জিসান ও জয়কে দুবাই থেকে ফেরত আনার উদ্যেগ নিয়েও আনতে পারেনি। টের পেয়ে তারা দুবাই ছেড়ে কানাডায় চলে যায়। তারা আবার দুবাই এসেছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে বিতর্কিত মডেল, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা এই দেশে অপরাধ করে দুবাই গিয়ে আস্তানা গাড়েন। ইতিমধ্যে পুলিশ একটি তালিকা করেছে। ওই তালিকায় গুলশান ও বনানী এলাকার মডেলের সংখ্যা বেশি। বছরখানেক আগে গ্রেপ্তার হওয়া ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ বেশিরভাগ সময় দুবাই থাকেন। তাদের সঙ্গে অপরাধ জগতের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সখ্য আছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে। এমনকি বনানীতে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন হত্যাকান্ডে তাদেরও সম্পৃক্ততা ছিল বলেও অভিযোগ উঠেছিল। ঘটনার পর পিয়াসা, রাজ ও আরাভকে আটকও করা হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের এক বড় মাপের নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তার অনুরোধে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এসব বিষয় নিয়ে পুনরায় তদন্ত করা হতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংগীতশিল্পী, এক ব্যবসায়ীর স্ত্রী ও কয়েকজন মডেল নিয়মিত দুবাই আসা-যাওয়া করেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালে তৎকালীন সরকার ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসী ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। তাদের মধ্যে কয়েকজন ধরা পড়েছে। আবার কেউ ক্রসফায়ারে মারা গেছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার তাড়া খেয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনে আছে কেউ কেউ। আত্মগোপনে থেকেই তারা অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই দুবাই রয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। এ নিয়ে পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তারা কয়েক দফায় বৈঠক করেছেন। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও আলাদাভাবে বৈঠক হয়েছে। ওইসব বৈঠকে বলা হয়েছে, ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করার পরও কেন তারা ধরা পড়ছে না তা খতিয়ে দেখতে হবে। ২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাই চলে যায়। সেখান থেকেও ঢাকায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে আছে। তার সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহেল শাহরিয়ার ওরফে শটগান সোহেল, কামরুল হাসান হান্নান, ইব্রাহীম, রবিন ও শাহাদৎ হোসেন বেশিরভাগ সময় দুবাই থাকে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্দিবিনিময় চুক্তি থাকায় বেশ কয়েকজন শীর্ষ অপরাধীকে বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়। শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ, শাহাদৎ, নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার আসামি নুর হোসেনসহ অনেকেই কলকাতায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। নুর হোসেন ছাড়া অন্য সন্ত্রাসীদের দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। সুব্রত, মোল্লা মাসুদ ও শাহাদৎ ভারতে সুবিধা করতে না পেরে মুম্বাই হয়ে দুবাই চলে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার অপরাধজগতের এক সন্ত্রাসী এ প্রতিবেদককে বলেন, অপরাধীরা এখন আর ভারত যেতে চায় না। কারণ ওই দেশে শান্তিতে থাকা যায় না। ফলে সবাই এখন দুবাইমুখী হচ্ছে। দুবাইয়ে সবাই নিরাপদে থাকতে পারছে।
রাজধানীর মিরপুরের একটি মাধ্যমিক-সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে সিফাত। একই এলাকায় বসবাসকারী তার বন্ধু সিয়াম পড়ে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে। সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার থেকে রোজার ছুটি। আর সরকারি প্রাথমিকে ছুটি ১৫ রোজা অর্থাৎ ৭ এপ্রিল থেকে।
এক দেশে একই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভিন্ন নিয়মে ছুটি পাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এতে লেখাপড়ায় কেউ এগিয়ে যাবে, আবার কেউ পিছিয়ে পড়বে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সৈয়দ মামুনুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার বা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলে ভেবেচিন্তেই নেয়। তবে সব ধরনের স্কুলে একটা কো-অর্ডিনেশন থাকলে ভালো হয়। আমরা ছুটির ব্যাপারে আরও আলাপ-আলোচনা করব।’
জানা গেছে, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে আগামী শুক্রবার শুরু হতে পারে রমজান মাস। বছরের শুরুতেই স্কুলগুলোর ছুটির তালিকা অনুমোদন করা হয়। সে অনুযায়ী পবিত্র রমজান, স্বাধীনতা দিবস, ইস্টার সানডে, বৈসাবি, নববর্ষ ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি, বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি কলেজ, আলিয়া মাদ্রাসা ও টিটি (টিচার্স ট্রেনিং) কলেজেও একই সময়ে ছুটির ঘোষণা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ছুটির তালিকা ভিন্ন। তারা পবিত্র রমজান, ইস্টার সানডে, চৈত্র-সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ৭ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ প্রায় ১৫ রমজান পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা থাকবে।
রাজধানীসহ বড় বড় শহরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন। তাই এসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিকের মতোই তাদের ছুটি থাকবে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রোজার ছুটিও একই। তবে মাদ্রাসায় রোজার ছুটি শুরু এক দিন আগেই অর্থাৎ আজ বুধবার, ২২ মার্চ।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান। তাই বুধবার ক্লাস করে বৃহস্পতিবার রোজার ছুটি শুরু হবে। তবে সব স্কুলে একই ধরনের ছুটি থাকা জরুরি। এতে একই সময়ে সিলেবাস শেষ করা যাবে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও সন্তুষ্ট থাকবে।’
রমজানে মাধ্যমিকে স্কুল বন্ধ আর প্রাথমিকে খোলা রাখায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার লাখ শিক্ষকের মধ্যে। তারা বলছেন, যেসব অভিভাবকের সন্তান প্রাথমিক ও মাধ্যমিক দুই স্কুলেই পড়ে তাদের সমস্যা হবে। রমজান মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। প্রাথমিকের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরাও রোজা রাখেন। তাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে মিল রেখে প্রাথমিকের ছুটি নির্ধারণ করা যৌক্তিক হবে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাংগাঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ বছর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরকারি ছুটি ৭৬ দিন, কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ৫৪ দিন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিন্ন ছুটি নির্ধারণের যুক্তি তুলে ধরে আমরা ইতিমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেছি। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনো সাড়া পাইনি।’