
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য সরকার দায়ী নয়, দায়ী রুশ-ইউক্রেন আর তাদের মিত্ররাএরা বিশ্বকে অস্থির করে বাজারদর চড়িয়ে দিয়েছে। আর করোনা মহামারী তো এজন্য আরও আগে থেকেই দায়ী। চিবিয়ে-চাবিয়ে বা ইনিয়ে-বিনিয়ে নয়, সোজাসাপ্টা এ কথা খোলাসা করে জানিয়ে দিয়েছেন সরকার ও সরকারি দলের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্ব ওবায়দুল কাদের। রংপুরে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছে বলে স্বীকার করেছেন। পরক্ষণেই ‘তবে-কিন্তু’ যোগ করে বলেছেন, এজন্য সরকারকে দোষারোপ করা যাবে না। দায়ী বিশ্ব পরিস্থিতি।
যুক্তি-বুদ্ধি কত কড়া! নতুন করে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে দেশের মানুষের জীবনযাপনের খরচ আরও বেড়েছে। সরকার এখানেও নির্দোষ? নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রধান পণ্যগুলোর দাম আগে থেকেই বাড়তি। প্রতিদিন তা বেড়েই চলেছে। সরকার ঘটনা মানে, তালগাছ ছাড়ে না। বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও তাই। বিদ্যুৎ বা জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে বাদবাকি পণ্য ও সেবার দাম আর বাড়াতে হয় না। সুই-সুতা থেকে পরিবহনের ভাড়া আপন গতিতেই বাড়তে থাকে। টানা কয়েক বছর ধরে চালের দাম নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এর দাম বেড়েছে কয়েক দফা। বেড়েছে জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল ও ডাল-চিনির দামও। জরুরি ওষুধের দাম বেড়ে গেছে অনেকটা নিঃশব্দে। যার দরকার সে কিনবেই। কিনতে বাধ্য। এজন্য কাউকে দায়বিদ্যুৎ প্রশ্নে কাণ্ডকীর্তি অনেকটা তুঘলকি স্টাইলের। বিদ্যুতের দাম বাড়াতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসির গণশুনানির ফলের অপেক্ষায় থাকার মধ্যেই সরকার নির্বাহী আদেশে গ্রাহকপর্যায়ে ৫ শতাংশ দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তা ১ জানুয়ারি থেকেই কার্যকর। আগামী মাসে আরেক দফা বাড়ানোর বন্দোবস্ত পাকা করে ফেলা হয়েছে। ভর্তুকি কমাতে ধাপে ধাপে ১৫ শতাংশের মতো দাম বাড়ানোর বুদ্ধিও ঠিক করে রাখা হয়েছে। বিদ্যুতের এ বাড়তি দাম কার্যকরের সমান্তরালে গ্যাসের দাম বাড়ানোর এন্তেজামও রয়েছে। তামাশার কাণ্ড হচ্ছে গ্যাস-বিদ্যুতের ‘দাম বৃদ্ধি’ বলতে চায় না সরকার। ‘দাদাকে আদা পড়া দেওয়া’ বা ‘বাঙালকে হাইকোর্ট দেখানো’র মতো করে একে বলা হয় ‘মূল্য সমন্বয়’। কত অসহায় জনগণ! এ তামাশা-মশকরা হজম করা যেন আজন্মের পাপের প্রায়শ্চিত্ত।
সরকারকে এ সবকের নেপথ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণপ্রাপ্তিকে শনাক্ত করা হয়। পুরো বিষয়টা মোটেই তা নয়। এখানে সরকারের নিজস্ব অনেক হিসাব ও কৌশল লুকানো থাকে, যা চালিয়ে দেওয়া হয় আইএমএফের ঘাড়ে। ভর্তুকি কমানোর কথা বলে ‘সমন্বয়’ নামের খড়্গ সরকারেরই বুদ্ধি বা কুবুদ্ধির রকমফের। মানুষ যেন না ক্ষেপে তাই ধাপে-ধাপে বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের দাওয়াই। আর চুরি-দুর্নীতিকে ‘সিস্টেম লস’ নামে সম্বোধন। আর লোকসান ও যথেচ্ছ খরচের নাম ‘অবচয়’। কত হাঁদারাম এবং অসহায় জনগণ।
এই জনগণই আসলে বাংলার প্রকৃত মহাশয়। এদের সবই সয়। সইতে হয়। বলা হয়ে থাকে, জীবনযুদ্ধে পেছনে যেতে যেতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মানুষ তখন নিরুপায় হয়ে ঘুরে দাঁড়ায়, ঘুরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়। এটাও বাস্তবে কথার কথা। এ দেশে মানুষ প্রতিনিয়ত পেছনে যেতে এমন অভ্যস্ত হয়ে গেছেন, সেখানে ঘুরে দাঁড়ানোর পর্বটাই থাকছে না। অমানবিক কষ্ট-গ্লানির নানাবিধ জীবিকার পন্থাকে অবলম্বন করে মানুষ ভাবেন এখনো ‘বেঁচে আছি’! অথবা পিঠে ঠেকে যাওয়া দেয়ালটাই হয়তো ‘স্থানচ্যুত’ হয়ে যায় এবং মানুষ হুমড়ি খেয়েও জীবন্মৃত বেঁচে থাকে! বিদ্যুৎ-গ্যাস, পানি, ওষুধ, নিত্যপণ্যসহ কিছু বিষয়ে মানুষকে ‘মিছাকলা’-কেই ‘কলা’ ভেবে গিলতে হয়।
হিসাবের খাত ও অঙ্কগুলো কী চমৎকার। বাড়তি দামে বিদ্যুৎ কেনা, বসে থাকা কেন্দ্রের ভাড়া মেটানো ও সিস্টেম লসের কারণে বড় অঙ্কের লোকসান গুনতে হয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে। এই লোকসান মেটাতে সরকারের ভর্তুকির ওপর নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০২১-২২ অর্থবছরে পিডিবি ভর্তুকি চেয়েছিল ২৯ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত অর্থ মন্ত্রণালয় ছাড় করেছে ১৮ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের জন্য পিডিবি ভর্তুকি প্রাক্কলন করেছে ৪৪ হাজার ২০ কোটি টাকা। সরকার চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতের জন্য ভর্তুকি বরাদ্দ রেখেছে ১৭ হাজার কোটি টাকা।
লোকসান পোষাতে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন গত ২১ নভেম্বর বিদ্যুতের পাইকারি দাম ১৯.৯২ শতাংশ বৃদ্ধি করে। এরপরই গ্রাহকপর্যায়ে বিদ্যুতের দাম গড়ে ২০ শতাংশ বৃদ্ধির আবেদন করে ৬ বিতরণ কোম্পানি।
তাদের আবেদনের ওপর গত ৮ জানুয়ারি গণশুনানি হয়। শুনানিতে ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ দাম বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়। আর সুপারিশ মানেই সিদ্ধান্ত। এবার তাও না করে রাতের কাণ্ড। গত বৃহস্পতিবার নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের খুচরা মূল্য ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এখন অপেক্ষা গ্যাসের বাড়তি দাম আরোপ। যুক্তি তো আছেই। গত বছরের ৫ জুন গ্যাসের দাম ২২ শতাংশের বেশি বাড়ানো হয়। এই মূল্যবৃদ্ধির পরও লোকসান হচ্ছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট বিতরণ কোম্পানিগুলোর। এবার নির্বাহী আদেশ জারি করে দিলেই হয়ে যাবে। রোখার সাধ্য কার? বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তো বলেই রেখেছেন, এখন থেকে প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয় করা হবে।
চলমান অর্থনৈতিক সংকটের পেছনে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করা হলেও ক্রমবর্ধমান বাজেটঘাটতি, বাণিজ্যঘাটতি, ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে কিংবা আমদানি-রপ্তানিতে মূল্যের তারতম্যের মাধ্যমে বিদেশি পুঁজি পাচার, ঋণনির্ভর ব্যয়বহুল অবকাঠামো নির্মাণ ও জ্বালানি আমদানির ঘটনাগুলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর বহু আগে থেকেই ঘটছিল। আইএমএফের শর্তের কথা বলে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির দায় এড়ানো প্রকারান্তরে একটি ছুঁতো। নানান অব্যবস্থাপনা ও লুটপাটের মাধ্যমে অর্থনীতি আইএমএফের শর্তের জালে ঢোকানোর ব্যবস্থা আগেই হয়ে আছে। তড়িঘড়ি বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়ানোর আগে গত আগস্টে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে রেকর্ড পরিমাণে। আর গত জুনে বেড়েছে গ্যাসের দাম। বাকি আছে পানির দাম, তা-ও বাড়িয়ে দিতেই কতক্ষণ!
চাতুরীটা এখানে পরিষ্কার। বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি বা কোনো সংস্কারের দায় আইএমএফরে ওপর চাপানোও কখনো কখনো আরেক চাতুরী। এমন নয় যে জনমের তরে বাংলাদেশ এবারই প্রথম এই আন্তর্জাতিক মুদা তহবিল থেকে ঋণ নিচ্ছে। এর আগে অন্তত আরও ডজনবার আইএমএফের ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে সদস্য হওয়ার সময়ই সরকার আইএমএফ থেকে প্রথম ঋণ নেয় ১৯৭৪ সালে। ২০১২ সালে নেওয়া সর্বশেষ ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার। সেটাই ছিল আইএমএফের কাছ থেকে নেওয়া সর্বোচ্চ ঋণ। আর এবার ৪৫০ কোটি ডলার। এই অর্থের মধ্যে ৩২০ কোটি ডলার পাওয়া যাবে বর্ধিত ঋণ সুবিধার (ইসিএফ-ইএফএফ) আওতায় এবং বাকি ১৩০ কোটি দেওয়া হবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায়। মোটাদাগে আইএমএফের ঋণ শর্তের ধরন প্রায় একই রকম। দেশে দেশে তেমন পার্থক্য থাকে না। ভিন্নতা যার যার দেশীয় এবং সরকারগুলোর মনমর্জির। আইএমএফ অনেক ধরনের সংস্কারের কথা বললেও জনগণের অর্থে বেসরকারি খাতের অতি মুনাফার বিরুদ্ধে তাদের কোনো অবস্থান থাকে না। তবে, ঋণের জন্য গেলে আইএমএফ ভর্তুকি কমানোর শর্ত দেয়। অব্যবস্থাপনা ও লুটপাট করতে বলে না।
এবারের ঋণের মাঝে কিঞ্চিৎ রকমফের আছে। আইএমএফ রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনিবিলিটি ফান্ড (আরএসএফ) নামে একটি নতুন তহবিল গঠন করেছে গত বছরের ১৩ এপ্রিল। এর প্রায়োরিটিতে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো। বার্বাডোজ, কোস্টারিকা ও রুয়ান্ডা এই ঋণ পেয়েছে। এ কোটায় এশিয়ার প্রথম দেশ বাংলাদেশ। এ প্রশ্ন কিছুটা পর্যবেক্ষণের অপেক্ষা রাখে। এর আগের পর্যবেক্ষণ কিন্তু ছিল দুঃখজনক। ২০১২ সালের ঋণ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার শুরু থেকে ঋণের শেষ কিস্তি পাওয়া পর্যন্ত সময়ে সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছিল পাঁচবার, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় আটবার এবং পানির দাম বাড়ানো হয় পাঁচবার। তবে পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ভর্তুকি কমানোর শর্ত মেনে সরকার এসব সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়ন করলেও ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের কারণে বেশ কিছু সংস্কার সরকার করতে ব্যর্থ হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল নতুন ভ্যাট আইন। ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে ভোটের আগে ভ্যাট আইন করবে না বলে সরকার জানিয়ে দিলে আইএমএফ ঋণের কিস্তি এক বছর আটকে দেয়। ২০১৬ থেকে নতুন আইন বাস্তবায়ন করা হবে, এই প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরই আইএমএফ ২০১৫ সালের নভেম্বরে শেষ দুই কিস্তি একসঙ্গে ছাড় করে। এমনকি সরকার তখন প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ব্যাংকিং খাতের সংস্কারও পুরোপুরি করেনি।
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তেজনাময়। সামনে নির্বাচন। এখন সরকার নির্বাহী আদেশে নানা পরিষেবার দাম বাড়ালেও নির্বাচনের আগে আগে তা গিয়ে কোন মতিগতিতে ঠেকে সেটা ভাবনার বিষয়। লক্ষণীয় হলো এবার আইএমএফের ঋণের চূড়ান্ত অনুমোদনের আগেই সরকার কিছু শর্ত পূরণ করা শুরু করে দিয়েছে। মূলত যেসব শর্ত পূরণ করা সহজ, যা সাধারণ মানুষের ওপর চাপ বাড়ায়, সেগুলোই সরকার দ্রুত করছে। কিন্তু যেসব সংস্কারে প্রভাবশালীরা চাপে পড়বে, তাদের সুযোগ-সুবিধা কমবে, সেদিকে গরজ যায় না সরকারের। উদ্বেগটা তো সেখানেই।
লেখক +সাংবাদিক-কলামিস্ট
বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন
ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার কাজে অতি নিকটের প্রতিবেশী ভারতও কিন্তু আমাদের সাহায্য করেনি। সাতচল্লিশের দেশভাগের সময়ে কংগ্রেস নেতারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তারা তাদের রাষ্ট্রকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র দেবেন। পাকিস্তানের জিন্নাহ সাহেব শুরুতে ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন বটে, কিন্তু সেখান থেকে পিছিয়ে আসতে তিনি বাধ্য হয়েছিলেন; কারণ পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভিত্তিটাই ছিল ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের ওপর প্রতিষ্ঠিত।
ভারতীয় সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু শাসকদল কংগ্রেসের শাসন ওই পথে এগোয়নি। ধর্মনিরপেক্ষতার একটি অভূতপূর্ব সংজ্ঞাই বরং তারা দাঁড় করিয়েছিলেন। সেটা হলো সব ধর্মের সমান মর্যাদা, যাকে আর যাই হোক কোনো দিক দিয়েই ধর্মনিরপেক্ষতা বলা যাবে না। জওয়াহেরলাল নেহরু ধর্মনিরপেক্ষতা চাইতেন, বল্লভভাই প্যাটেল ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষতার চরম বিরোধী এবং হিন্দু রাষ্ট্রের পক্ষে। প্যাটেলপন্থিদের শক্তি ছিল অধিক। তাদের ইচ্ছাই শেষ পর্যন্ত জয়যুক্ত হয়েছে; নেহরুপন্থিদের হটিয়ে দিয়ে হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) রাষ্ট্রক্ষমতা পেয়ে গেছে। তাদের অঘোষিত অভিপ্রায় ‘বিদেশ থেকে আগত’ মুসলমানদের ফেরত পাঠানো। আর ঘোষিত রূপেই তো ওই পার্টির নেতা ও সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে দিয়েছেন যে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে শরণার্থী হয়ে এলে অমুসলিমদের তারা নিয়ে নেবেন। অর্থাৎ আমন্ত্রণই জানাচ্ছেন তাদের আসতে। এর বিপরীতে তিনি চাইছেন তথাকথিত ‘অবৈধ মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের’ ফেরত পাঠাতে। গত নির্বাচনের সময়ে পশ্চিমবঙ্গে এসে তিনি তার নিজস্ব ভাষায় বলে দিয়েছিলেন যে ক্ষমতা পেলে বিজেপি সরকার বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের একজন একজন করে ধরবে এবং বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করবে।
পশ্চিমবঙ্গের ভাগ্য ভালো বিজেপি ক্ষমতা পায়নি। কিন্তু আসামে তো পেয়েছে। এবং সেখানে যারা একই সঙ্গে বাঙালি ও মুসলমান তারা নানা ধরনের নিগ্রহের শিকার হচ্ছে। বিজেপি ত্রিপুরাতেও জিতেছে এবং সেখানেও মুসলমান অধিবাসীরা অস্বস্তিতে পড়েছেন। ভারতের মুসলমানরা বিদেশ থেকে আসেননি; তারা স্থানীয়ই, কিন্তু যেহেতু তারা একে সংখ্যালঘু তদুপরি মুসলমান তাই অবজ্ঞার অবহেলার নীরব শিকার হয়েছে। দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে তাদের আনুপাতিক হার অতি সামান্য; পুলিশ বিভাগে উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো নয়; কিন্তু জেলখানায় গেলে দেখা যাবে তারা রয়েছে ঠাসাঠাসি করে।
মোটকথা, ভারতের রাজনীতি-প্রবাহ বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতিষ্ঠায় সাহায্য তো করছেই না, উল্টো বৈরিতাই করে চলেছে। ভারতের সঙ্গে পানিবণ্টন, অসম বাণিজ্য এবং সীমান্ত সংঘর্ষের অবসান ঘটেইনি, উল্টো বৃদ্ধিই পেয়েছে, তাতেও আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িকতা উৎসাহ পাচ্ছে।
তরুণদের দেশপ্রেমিক ও সৃষ্টিশীল করে তোলার জন্য যে সাংস্কৃতিক কাজ দরকার সেটা বাংলাদেশে এখন নেই। উন্নতির হুকুমদারিতে সংস্কৃতি দমিত হচ্ছে। আর তার কুফল সবচেয়ে গভীরভাবে বহন করছে তরুণ সমাজ।
নিরাপত্তার প্রশ্নটি অবশ্য আসে সবার আগে এবং সব নিরাপত্তার আগে আসে খাদ্যে নিরাপত্তার প্রশ্ন। করোনাকালে অধিকাংশ মানুষের আয়-উপার্জন কমেছে, কিন্তু দাম বেড়েছে খাদ্যের। মানুষ রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকের জন্যই দশাটা খাবি খাওয়ার।
পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় নিরাপত্তার সব উদ্যোগটাই দাঁড়ায় ব্যক্তিগত এবং মানুষের স্বাভাবিক ঝোঁকটা থাকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি সংগ্রহের দিকে। খবরটা অনেকেই পড়ে থাকবেন যে কেন্দ্রীয় পাট গবেষণা কেন্দ্রের একজন অবসরপ্রাপ্ত বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, আনোয়ার শহিদ তার নাম, নিরাপত্তার জন্য সম্পত্তি সংগ্রহের ‘অপরাধে’ খুন হয়েছেন। একসময়ে তিনি কাজ করতেন দিনাজপুরে; ব্যক্তিগত সঞ্চয় থেকে তিনি জমিজমা কিছু কিনেছিলেন, ভবিষ্যতের কথা ভেবে। যার মাধ্যমে কিনেছিলেন আপনজন হিসেবে তাকেই দিয়েছিলেন দেখাশোনা করতে। ওই আপনজন জমি থেকে আয়ের একটা অংশ মালিক ভদ্রলোককে নিয়মিত পৌঁছে দেবে এটাই ছিল শর্ত। আপনজনটি ছোটখাটো ব্যবসা করত, তার জন্য শহিদ সাহেবের কাছ থেকে কর্জ হিসেবে কয়েক লাখ টাকা নেয়। আপনজনটি এর মধ্যে মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে। তাই টাকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। টাকার জন্য আনোয়ার শহিদ তাগাদা দিচ্ছেন। শহিদ সাহেব বিয়ে করেছিলেন, কিন্তু বিয়ে সফল হয়নি, তার কোনো সন্তানও নেই। আপনজনটি দেখল যে শহিদ সাহেবের তাগাদা থেকে অব্যাহতি পাওয়া তো বটেই তার সম্পত্তির মালিক হওয়াও সম্ভব যদি তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া যায়। সেই উদ্দেশ্যে সে ভাড়াটে খুনি জোগাড় করে। খুনিকে নিয়ে ঢাকায় আসে। সরল বিশ্বাসী শহিদ সাহেবকে ফোন করে ডেকে আনে, টাকা দেবে বলে। তিনি এলে শ্যামলী এলাকার এক গলিতে তার সঙ্গে আলাপের ভান করে, আর সেই ফাঁকে খুনিটি শহিদ সাহেবের বুকে ছুরি চালিয়ে তাকে হত্যা করে এবং দুজনে মিলে পালিয়ে যায়। পরে অবশ্য তারা ধরা পড়েছে। তবে তাতে আনোয়ার শহিদের কি-ইবা আসে যায়?
রাষ্ট্র নিরাপত্তা দেবে বলে; নিরাপত্তার জন্য নানা ধরনের আইন আছে, বাহিনী রয়েছে, আছে আদালত। এদের মধ্যে একটি হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। বাংলাদেশ এরই মধ্যে ডিজিটাল যুগে পৌঁছে গেছে; কিন্তু এই প্রযুক্তির অপব্যবহার যাতে না ঘটে, ব্যক্তি এবং রাষ্ট্র কারও স্বার্থেরই যাতে হানি না হয়, আইনের ঘোষিত উদ্দেশ্য সেটাই। অপরাধীদের বিচারের জন্য যে সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে তাতে রুজু করা মামলাগুলোর শতকরা ৯৭টিই নাকি খারিজ হয়ে গেছে। রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্য-প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। সেটা পরের ব্যাপার; কিন্তু অভিযুক্তকে তো তদন্তের আগেই কারাগারে চলে যেতে হয়, থাকতে হয় রিমান্ডে। অভিযুক্ত ও আইনজীবীদের কারও কারও অভিজ্ঞতা এই রকমের যে, বাদীর সঙ্গে রাজনৈতিক, সামাজিক বা আর্থিক আপস-মীমাংসায় পৌঁছাতে হয়। আর বিচারের প্রক্রিয়ায় যে আর্থিক শারীরিক ও সামাজিক দুর্গতি ঘটে তার তো কোনো ক্ষতিপূরণই নেই। মিথ্যা মামলা করা দ-নীয় অপরাধ বটে, কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মিথ্যা মামলাকারীদের শাস্তির কোনো সুনির্দিষ্ট ধারা নেই। ওদিকে আবার সংক্ষুব্ধ নয় কিংবা ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়নি এমন ব্যক্তিও মানহানির মামলা ঠুকে দিতে পারে। আইনটি সংস্কারের দাবি উঠেছে, কিন্তু শোয়ার লোক নেই।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি আইনও কার্যকর অবস্থায় আছে। এ আইনে মামলা হলে পুলিশ তৎক্ষণাৎ গ্রেপ্তার করতে পারে। যেমনটা ঘটেছিল ফটোগ্রাফার শহিদুল আলমের বেলায়। শহিদুল আলম একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এবং আন্তর্জাতিক মানের ফটোগ্রাফার। আমাদের স্মরণে আছে ২০১৮ সালে সড়কে দুজন শিক্ষার্থী বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যায়; এতে ব্যাপক ছাত্রবিক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ঢাকা শহরের ধানম-ি এলাকায় ছাত্রদের বিক্ষোভে পুলিশের সামনেই হেলমেটে সুজ্জিত গু-াবাহিনী দমন-পীড়ন চালায়। শহিদুল আলম সেখানে উপস্থিত ছিলেন, তিনি ছবি তুলছিলেন; আল জাজিরা টেলিভিশনের লোকরাও ছিল; তাদের অনুরোধে শহিদুল আলম তাদের একটি সাক্ষাৎকার দেন।
গণমাধ্যমে তিনি রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর অপপ্রচার করেছেন এই অভিযোগে পুলিশ তার বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেয়। গভীর রাতে বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে দৈহিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। এবং পরে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এতে দেশে তো বটেই বিশ্বের নানা স্থানে প্রতিবাদ ওঠে; প্রতিবাদকারীদের ভেতর বারোজন নোবেল পুরস্কারবিজয়ীও ছিলেন। সাড়ে তিন মাস জেলে কাটানোর পরে তিনি জামিনে মুক্ত হন। শহিদুল আলম জামিন পেয়েছেন জনমতের চাপে। জামিন পাওয়ার চেয়েও অনেক বড় ঘটনা তার ওপর দৈহিক নির্যাতন এবং তাকে আটকে রাখা। ওই স্তরের একজন মানুষ যদি ‘সাইবার অপরাধে’ অতসহজে হেনস্তা হন, তাহলে অন্যদের হালটা কী? আর এই বার্তা তো রটে যাবেই, গেছেও, যে গণমাধ্যমে এমন বক্তব্য দেওয়া একেবারেই অনুচিত যা সরকারের পছন্দ নয়।
ভয়ের বিস্তার থামায় কে? সরকারের দিক থেকে ভয়কে উৎসাহিত করা তো খুবই সুবিধাজনক।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
শান্ত জলের বুকে লাল শাপলার গালিচা আর কচুরিপানার রক্তাভ নীল ফুলের মধ্যে ঝাঁক বেঁধে ডানা মেলছে অতিথি পাখির দল। পাখির কিচির-মিচিরে মুখরিত পরিবেশ। বাহারি রঙের এসব অতিথি পাখির খুনসুটি আর ছোটাছুটি যে কারও মনকে উদ্বেলিত করে তোলে। শীত মৌসুমের প্রকৃতিতে অপরূপ অতিথি পাখির ঝাঁক বেঁধে উড়ে চলার দৃশ্য দেখে মনে হয় যেন জলরঙে আঁকা ছবি। প্রতি শীতে দূর-দূরান্ত থেকে শীতের পাখিরা আসে আমাদের দেশে। ভ্রমণপিপাসু মানুষ পাখি দেখতে ভিড় করে বিভিন্ন জলাশয়ে। পাখিদের কলকাকলি প্রকৃতির শোভা বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে। গাছের সবুজ, জলের নীল আর পাখিদের নানা রং মনে যে বর্ণিল আবেশ তৈরি করে তার রেশ রয়ে যায় অনেক দিন। শীতপ্রধান দেশ থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বাংলাদেশে আসা শুরু করেছে। এরা নিরাপদে থাকার জন্য এলেও আমরা তাদের জীবন দুর্বিষহ করে থাকি। আইন আছে, নিষেধাজ্ঞাও আছে। স্থানীয় প্রশাসনও সচেতনতামূলক কথা বলে থাকেন। তারপরেও আমরা পাখি হত্যা ও পাখিদের বিরক্ত করে থাকি।
আবাসিক ও পরিযায়ী মিলে বাংলাদেশে পাখির সংখ্যা প্রায় ৬৫০ প্রজাতির। এর মধ্যে ৩৬০ প্রজাতি আবাসিক। বাকি ৩০০ প্রজাতি পরিযায়ী ও অন্যান্য। সব পরিযায়ী শীতের সময় আসে না। ৩০০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখির মধ্যে ২৯০টি শীত মৌসুমে আসে ও ১০টি প্রজাতি থেকে যায়। আন্তর্জাতিকভাবে জলচর পাখির জন্য স্বীকৃত ২৮টি জায়গা বাংলাদেশের সীমানায় রয়েছে। এগুলো হলো : বরিশাল বিভাগের চর বারি, চর বাঙ্গের, কালকিনির চর, চর শাহজালাল, টাগরার চর, ডবা চর, গাগোরিয়া চর, চর গাজীপুর, কালুপুর চর, চর মনপুরা, পাতার চর ও উড়ির চর; চট্টগ্রাম বিভাগের চর বারী, বাটা চর, গাউসিয়ার চর, মৌলভীর চর, মুহুরী ড্যাম, মুক্তারিয়া চর, ঢাল চর, নিঝুম দ্বীপ, পতেঙ্গা সৈকত, সোনাদিয়া ও মহেশখালী দ্বীপ; সিলেট বিভাগের আইলার বিল, ছাতিধরা বিল, হাইল হাওর বাইক্কা, হাকালুকি হাওর, পানা বিল, রোয়া বিল, শনির বিল ও টাঙ্গুয়ার হাওর। শীত এলেই এসব জলাশয়সহ বিভিন্ন হাওর, বাঁওড়, বিল ও পুকুরের পাড়ে চোখে পড়ে নানান রং-বেরঙের নাম জানা, অজানা পাখি। এদের আমরা অতিখি পাখি বলে থাকি। অখচ ক্ষুদ্র আনন্দের বেআইনি শিকার হয়ে প্রাণ দিতে হয় অতিথি পাখিগুলোর! এই অতিথি পাখিগুলো আমাদের বন্ধু, আমাদের প্রকৃতির জন্য আশীর্বাদ। তাই এ পাখিগুলোকে অচেনা পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে আমাদের বন্ধুসুলভ আচরণ করা দরকার। এই পাখিগুলো রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।
অতিথি পাখির বড় আশ্রয়স্থল হচ্ছে চট্টগ্রামের সোনাদিয়া দ্বীপসহ সেখানকার চরাঞ্চল, ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল আর বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলাঞ্চল। আর সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ আর মৌলবীবাজারের বিভিন্ন জলাশয় আর হাওর-বাঁওড় হচ্ছে অতিথি পাখিদের আর একটি বড় আশ্রয়স্থল। বাসস্থান সংকট, বিষটোপ ব্যবহার করে খাদ্যসংকট ও জীবন বিপন্ন করা, শিকার, পাচার ইত্যাদি কারণে আশঙ্কাজনকহারে আমাদের দেশে শীতে পাখি আসার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ক্যামেরার ক্লিক বা নীরবতা ভঙ্গ করলেও পাখিরা বিরক্তবোধ করে এবং অন্যত্র চলে যায়। আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাইক্যার বিল বা অন্যত্র অতিথি পাখি দেখতে গেলেই পাখির খুব কাছে যেতে চাই। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ক্যামেরার ক্লিক দিই। একই কারণে ভারতের পাখির অভয়াশ্রম গজলডোবাসহ পশ্চিমবঙ্গের অনেক পাখির আবাসস্থলে পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এ থেকে আমাদের সতর্ক হতে হবে। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। ক্যামেরা বা শব্দযন্ত্রের ব্যবহার প্রয়োজন ছাড়া একেবারেই কমিয়ে আনতে হবে।
শিকারি পাখি, আবাসস্থল ধ্বংস প্রভৃতিই পরিযায়ী পাখির প্রধান শত্রু। আমাদের দেশে প্রতিনিয়তই পরিযায়ী পাখির আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে, খাবারের অনুপযোগী কিংবা মানুষের বসতি হয়েছে। একশ্রেণির লোভী, ব্যাধের নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য দুর্লভ প্রজাতির অতিথি পাখি। জালের ফাঁদ পেতে, বিষটোপ এবং ছররা গুলি দিয়ে নির্বিচারে ও নির্মমভাবে এসব অতিথি পাখি শিকার চলছে প্রতিনিয়ত। কেউ শখের বশে আবার কেউ বাজারে বিক্রির জন্য অতিথি পাখিদের দিকে বন্দুকের নল উঁচিয়ে নিষ্ঠুর হাতে ট্রিগার টিপে এবং ফাঁদ পেতে অতিথি পাখিদের জীবন হরণ করে চলেছে। অতিথি পাখিদের বিচরণভূমি ক্রমশ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। বন-জঙ্গল কেটে উজাড় করে ফেলায় পাখিরা হারাচ্ছে তাদের নিরাপদ আশ্রয়। আবার ফসলি জমিতে কৃত্রিম সার এবং মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের কারণে অতিথি পাখিরা বিষে আক্রান্ত কীটপতঙ্গ খেয়ে মারা যাচ্ছে। উপকূলে চিংড়ি চাষের ফলেও অতিথি পাখিদের বিচরণ ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে।
অতিথি পাখি নিধন এবং বাজারে বিক্রি নিষিদ্ধ জেনেও আইনের ফাঁক গলিয়ে এক শ্রেণির পেশাদার এবং শৌখিন শিকারি কাজগুলো করে চলেছে। বেআইনিভাবেই শিকার করা হয় অতিথি পাখি। যা দ-নীয় ফৌজদারি অপরাধ। ১৯৭৪ সালে বন্যপ্রাণী রক্ষা আইন ও ২০১২ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে দ-ের বিধান রয়েছে। অতিথি পাখি নিধন বন্ধে আইন থাকলেও মানছেন না কেউ। প্রতি বছর শীত এলেও চলে অতিথি পাখি নিধন। এ ছাড়া বিভিন্ন ধর্মে পশু ও প্রাণীহত্যা চরম পাপের কাজ বলে বিবেচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি চড়ুই বা তার চেয়ে ছোট কোনো প্রাণীকে অযথা হত্যা করে, তাকে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন সে স¤পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন।’(নাসায়ি, হাদিস : ৪৩৪৯)।
আইন ও ধর্মীয় বিধান থাকলেও তা কার্যকর হচ্ছে খুব কম। তাই অতিথি পাখি শিকার রোধে প্রচলিত আইন জোরদার করা জরুরি। সেই সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনকেও তৎপর থাকতে হবে। পাখি শিকার বন্ধের জন্য পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোকে আরও জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। যে এলাকায় অতিথি পাখির পদচারণা ঘটে সে এলাকায় বিভিন্ন সচেতনানূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে। পাখি শিকারিদের নামের তালিকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করতে হবে। শুধু প্রশাসনের পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব নয়। সাধারণ জনগণের সচেতনতাই এ উদ্যোগ সফলতার আলো দেখতে পারে। তাই, এ উদ্যোগকে কার্যকর ও সফল করতে সরকার-পরিবেশবাদী সংগঠন/বুদ্ধিজীবী-জনগণ এই ত্রিমুখী আন্তরিকতা দরকার। আমরা পাখির নাচ-গান আর ওড়াউড়ি দেখব এবং উপভোগ করব। তবে সীমার মধ্যে, সতর্ক থেকে।
লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক
১৯৪৫ সালের ১৮ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দীন। আশির দশকে তিনি মফস্বল সাংবাদিকতায় খ্যাতিলাভ করেন। এ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে করা প্রতিবেদনগুলোর মধ্য দিয়ে তিনি ‘চারণ সাংবাদিক’ হিসেবে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। ১৯৬৬ সালে তিনি দৈনিক আজাদ পত্রিকা দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন। দৈনিক সংবাদে ‘পথ থেকে পথে’ ধারাবাহিক প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে তার জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৭৬ সাল থেকে প্রায় দুই দশক দৈনিক সংবাদে কাজ করেন তিনি। ১৯৯৫ সালে তিনি দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় যোগ দেন। তার উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে রয়েছে ‘সংবাদের নেপথ্য’, ‘পথ থেকে পথে’, ‘কানসোনার মুখ’, ‘নিজস্ব রিপোর্ট’, ‘অনুসন্ধানী প্রতিবেদন’, ‘কাগজের মানুষেরা’ ও ‘নরনারী’। তার রচিত একমাত্র নাটক ‘রাজা কাহিনী’। ১৯৮৪ সালে ‘সাংবাদিক জহুর হোসেন চৌধুরী স্মৃতি পদক’, দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত ‘মানুষ ও সমাজ’ প্রতিবেদনের জন্য বাংলা ১৩৯৩ সালে ফিলিপস পুরস্কার, ১৯৮৭ সালে ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স পুরস্কার’ এবং ১৯৯৫ সালে ‘অশোকা ফেলোশিপ’ লাভ করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। তিনি সংবাদ সংগ্রহের জন্য ১৯৯৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর যমুনা নদীতে ড্রেজিং পয়েন্টের ছবি তুলতে গিয়ে আকস্মিকভাবে পানিতে পড়ে ডুবে মারা যান।
সংবিধান অনুযায়ী স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে মুক্ত স্বাধীন জীবনযাপনের অধিকার প্রত্যেক নাগরিকেরই আছে। কিন্তু এ দায়বদ্ধতা আদৌ রক্ষা হচ্ছে না। যুগের পর যুগ ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেপ্তারের ক্ষমতা স্বেচ্ছাচারীভাবে প্রয়োগ হয়ে আসছে। সন্দেহভাজন কাউকে জেরা ও তল্লাশিতে ব্যক্তির মর্যাদা রক্ষায় উচ্চ আদালতের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে হয়রানি, শারীরিক ও মানসিক নিগ্রহের ঘটনাও এ দেশে নিয়মিত। এ অন্যায় গ্রেপ্তার ও আটকাদেশ সংবিধানের উল্লিখিত বিধানের সঙ্গে সম্পূর্ণ অসংগতিপূর্ণ। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও কর্র্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে সারা দেশে সাদা পোশাকে পুলিশের অভিযান ও ৫৪ ধারার প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে যুগ যুগ ধরে। ১৮৯৮ সালের আইন ২০২৩ সালেও কার্যকর থাকলে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। যারা আইন করেছিল সেই ব্রিটিশরাই এখন বাঙালি কায়দায় কাউকে আর সন্দেহ করে না।
মঙ্গলবার দেশ রূপান্তরে ‘মানুষকে কেন এত সন্দেহ’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল যুগান্তকারী রায়ে হাইকোর্ট ৫৪ ধারা প্রয়োগে কারও সঙ্গে স্বেচ্ছাচারিতা না করা, আটক বা গ্রেপ্তারের সময় পরিচয় দেওয়া, কাউকে নিবর্তনমূলক আটকাদেশ না দেওয়া, রিমান্ডে নির্যাতন না করা, ধারা সংশোধনের তাগিদ প্রভৃতি ১৫ দফা নির্দেশনা দেয়। ২০১৬ সালের ২৪ মে আপিল বিভাগে এ রায় বহাল থাকে। ওই বছরের ১০ নভেম্বর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ সংক্রান্ত নীতিমালা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তব্যবিষয়ক নির্দেশনায় বলা হয়, নাগরিকের সম্মান রক্ষা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে উঁচুমানের পেশাদারিত্ব দেখাতে হবে। সংবিধানে স্বীকৃত নাগরিকের অধিকার রক্ষার নির্দেশনাও দেওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সতর্কতামূলক নির্দেশনা থাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক বা গ্রেপ্তারে কৌশল পাল্টেছে। এখন মাদক বা অন্য কোনো মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৫ ধারায় পুলিশকে ভবঘুরে, অভ্যাসগত অপরাধী, চোরাইমাল বহনকারী ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হলেও তারা যখন-তখন যাকে-তাকে আটক বা গ্রেপ্তার করে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ উঠছে প্রায়ই। অন্যদিকে, প্রতিদিনই বিভিন্ন থানার সাদা পোশাকের টিমের বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আইজিপি কমপ্লেইন সেলেও প্রতিদিন অভিযোগ জমা পড়ছে। সাদা পোশাকের পুলিশ কী করে না করে তা পরিষ্কার। এক কথায় একে বলে ‘জননিবর্তন’। সন্দেহ হলেই বা ‘সন্দেহ হচ্ছে মর্মে সন্দেহ’ হলেই পুলিশ কাজটি করে। মানুষকে নিয়ে কেন এত সন্দেহ? এর পেছনে অর্থযোগের পাশাপাশি রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক ‘সন্দেহের’ কথাও উঠে আসছে।
দীর্ঘদিনেও আইনের সংস্কার ও সংশোধন হয়নি। উপরন্তু ৫৪ ও ১৬৭ ধারা নিয়ে আপিল বিভাগের রায়ের রিভিউ চেয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। ১৯ জানুয়ারি এ বিষয়ে শুনানি রয়েছে। মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীদের ভাষ্য, রাষ্ট্রপক্ষ নিবর্তনমূলক আইনের সংশোধন না চাইলে আইনের ব্যত্যয় ও অপপ্রয়োগ হবেই। অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্নার মতে, ‘জনগণকে শাসন করার জন্য নিবর্তনমূলক আইন থাকা উচিত নয়।’ আসকের নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘৫৪ ধারা নিয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মানা তো হচ্ছেই না, বরং কৌশলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আগেই ব্যক্তিকে আসামি বানিয়ে দিচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাদা পোশাকধারীরা মানুষকে উঠিয়ে নেয়।’ থানা-পুলিশের সিভিল টিম গঠনের বা সাদা পোশাকে অভিযান চালানোর আইনগত ভিত্তি নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন, ‘সাদা পোশাকে পুলিশ অভিযান চালাতে পারে না।’ আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, ১০৩ ধারা অনুযায়ী কাউকে তল্লাশি করতে হলে একাধিক ব্যক্তিকে সাক্ষী রাখার বিধান মানা হয় না বললেই চলে। উচ্চ আদালতের রায়ের পর আশা করা হয়েছিল, গ্রেপ্তার ও রিমান্ড নিয়ে ঔপনিবেশিক ও সংবিধানবিরোধী চর্চার অবসান ঘটবে। কিন্তু রায়ের ২০ বছর পরের বাস্তবতা হলো, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে দুটি ধারার অপপ্রয়োগের অভিযোগ কমছে না। রিমান্ডের প্রশ্নে হাইকোর্টের নির্দেশনাও অমান্য করেছেন তারা। মানবাধিকার, নাগরিকের মৌলিক অধিকার, জনগুরুত্বপূর্ণ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে উচ্চ আদালত প্রায়ই আদেশ, রায় ও নির্দেশনা দেয়। কিন্তু তা বাস্তবায়নে সরকারের সংশ্লিষ্টদের অনীহা, উদাসীনতা ও অবহেলার অভিযোগ রয়েছে। এর জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব যেমন রয়েছে, তেমনি প্রভাবশালীদের অপতৎপরতা, সংশ্লিষ্টদের ইতিবাচক মানসিকতার ঘাটতি, আমলাতান্ত্রিকতাও কম দায়ী নয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশ পালন না করা আদালত অবমাননা ও সংবিধানের প্রতি অবজ্ঞার শামিল হলেও এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নজির খুব বেশি নেই। এসব বিষয়ে জোরালো তদারকি ও সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহির আওতায় আনতে প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টে একটি সেল কিংবা সচিবালয় গঠন করা যেতে পারে।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
মার্চে ঘরের মাঠে দুটি প্রীতি ম্যাচের পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে দেখা যায়নি আর্জেন্টিনাকে। তিন মাস পর আগামী মাসে তারা খেলবে আরও দুটি প্রীতি ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে সেই ম্যাচের জন্য ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করেছেন লিওনেল স্কালোনি। তবে ঘোষিত সেই দলে নেই লাউতারো মার্তিনেজ।
আর্জেন্টিনার ক্রীড়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস ও ওলে তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গোড়ালির চোটের কারণে মার্তিনেজ চিকিৎসাধীন আছেন। তাই তাকে জাতীয় দলের স্কোয়াডে রাখা হয়নি।
চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে ইন্টার মিলানের হয়ে গোল করেছিলেন। ফাইনালেও তাকে ইতালিয়ান ক্লাবটির হয়ে খেলতে দেখা যেতে পারে। তারপরই তিনি মাঠের বাইরে চলে যাবেন। ঐ সময়ে তিনি বিশ্রামে থাকবেন। আর তাই কোচ স্কালোনি তাকে দলে রাখবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ের অন্যতম সদস্য মার্তিনেজ। তবে পুরো টুর্নামেন্টে তিনি ব্যাথানাশক ঔষধ খেয়ে খেলছিলেন।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ও ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা।
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আজমপুর ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামে স্ত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় চাচাতো ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে পলাশ হোসেন (২৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
শনিবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত পলাশ হোসেন ওই গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, নিহত পলাশ হোসেনের চাচাতো ভাই সুমন প্রায়ই পলাশের স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করত। শনিবার সন্ধ্যায় আবারো উত্ত্যক্ত করে। পলাশ বাড়িতে এলে বিষয়টি তাকে জানায় তার স্ত্রী। এ ঘটনায় পলাশ তার চাচাতো ভাইয়ের কাছে বিষয়টির প্রতিবাদ করতে গেলে উভয়ের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সুমন ছুরি দিয়ে পলাশকে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই পলাশ মারা যায়।
মহেশপুর থানার ওসি খন্দকার শামীম উদ্দিন বলেন, নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। নিহত পলাশ পেশায় ভ্যানচালক ছিলেন, সঙ্গে কৃষিকাজও করত।
রেফারির বাঁশি বাজার তিন মিনিটের মধ্যেই রিয়াল মাদ্রিদের জালে জড়ায় বল। রাফা মিরের দুর্দান্ত এক গোলে লিড পায় সেভিয়া। তবে শেষ অবধি তারা ধরে রাখতে পারেনি সে হাসি। রদ্রিগোর জোড়া গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে রিয়াল।
রাতে লা-লিগার ম্যাচে সেভিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। খেলার তৃতীয় মিনিটেই লিড পেয়েছিল সেভিয়া। তবে ২৯ মিনিটে রদ্রিগো সমতায় ফেরান রিয়ালকে। সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।
বিরতির পর ফের বাড়ে আক্রমণের ধার। যার ফলে ৬৯ মিনিটে দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় রিয়াল। এবারও নায়ক রদ্রিগোই। এবারেরটি অবশ্য টনি ক্রুসের সহায়তায়। পরে আর কোনো গোল না হওয়ায় ২-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে মাদ্রিদের ক্লাবটি।
তবে ম্যাচের ৮৩ মিনিটে লাল কার্ড দেখে আকুনা। হারের আগে সেভিয়ার আর্জেন্টাইন এই ডিফেন্ডারের ভুলে ১০ জনের দল নিয়ে খেলতে হয় রিয়ালকে।
শুরুতে গোল হজম করলেও ৬৭ শতাংশ সময় নিজেদের দখলে বল রেখেছিল রিয়াল। ছয়বার আক্রমণে গিয়েছিল তারা, যার মধ্যে তিনটি শট ছিল গোলবার লক্ষ্য করে।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
সংলাপে রাজনৈতিক সংকট দূর হওয়ার নজির তৈরি হয়নি এখনো। তবুও নানা সময়ে সংকট নিরসনে রাজনীতিতে সংলাপ করা নিয়ে আলোচনা হয়। সংলাপের আশ্রয় নিতেও দেখা গেছে দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভিন্ন মেরুতে অবস্থান থাকায় আবারও রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় আলোচনায় এসেছে ‘সংলাপ’। যদিও প্রধান দুই দলের নেতারা সংলাপে অনীহা প্রকাশ করে আসছেন। আবার আড়ালে আলাপে দুই দলের আগ্রহও দেখা গেছে।
অন্তরালের সংলাপ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার আড়ালে আলাপের মূল কারণ হলো বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বড় একটি অংশ বয়স্ক হয়ে গেছেন। তাদের অনেকের এবারের পরে নির্বাচন করার সক্ষমতা আর থাকবে না। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকতে গিয়ে সামাজিক মর্যাদা নষ্ট হয়েছে। এ সময় সংসদ সদস্য হয়ে মর্যাদা নিয়ে চলতে চান তারা। বিএনপির ওই অংশের সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতাও রয়েছেন যারা নির্বাচনে যেতে চান। ফলে নির্বাচনে যেতে আগ্রহী বিএনপির সেই সব নেতা আড়ালে আলাপে থাকতে রাজি আছেন। অন্যদিকে আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখতে চাওয়া বিদেশি শক্তিগুলোর সরকারের ওপর চাপ থাকায় বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে চায় আওয়ামী লীগ। ফলে প্রকাশ্যে সংলাপের আগ্রহ না দেখিয়ে আড়ালের আলাপে আগ্রহী দলটির নেতারা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে এক চুলও নড়বে না। অন্যদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে কোনোভাবেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যাবে না। দুই দলই নিজেদের এমন অনড় অবস্থান দেখাচ্ছে। দুই দলের পরস্পরবিরোধী অবস্থানে সৃষ্ট সংকট সমাধানে বিদেশি তৎপরতা বেশ আগে থেকেই শুরু হয়েছে। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসতে শুরু করেছে বিদেশি সেই তৎপরতায়ও গতি এসেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ-বিএনপি কাউকেই কাছাকাছি অবস্থানে, অর্থাৎ এক মেরুতে আনতে পারেনি এখনো। তবে বিদেশি প্রভাবশালী দেশগুলোর প্রতিনিধিরা সংকট নিরসনে দুই দলকেই সংলাপে বসার জন্য বলছেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা সংলাপের মধ্য দিয়ে সমস্যা সমাধানের রাস্তা ঠিক করতে দুই দলকেই তাগিদ দিয়েছেন। বিদেশিদের অবস্থান হলো আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চান তারা। সে জন্য রাস্তা তৈরি করতে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই সংলাপে অনীহা দেখিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ্যে অনীহার কথা জানিয়েছেন। বিএনপিও প্রায় প্রতিদিনই অনীহা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখছে।
তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও সংলাপে সমাধান আসেনি। এবারও সংলাপে সমাধান আসার সম্ভাবনা কম। যদি সংলাপের আগেই এজেন্ডা নির্ধারণ করে সংলাপে বসে, সেই সংলাপ সফল হওয়ার পথ থাকে না।
দুই দলের একাধিক সূত্র দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, প্রকাশ্যে সংলাপ না করে এবার আড়ালে সংলাপ হতে পারে। অনেকটা হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এমন ঘটনা ঘটে যেতে পারে-বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন দিয়ে বসতে পারেন।’ তিনি বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
নির্বাচন সামনে রেখে দেশে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকেরা সংকট নিরসনে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। ওই সব বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দুই দলেরই অবস্থান জানতে চেয়েছেন তারা। একই সঙ্গে দুই দলকে তারা এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন যে ভিন্নমত থাকলেও স্থিতিশীলতা ও সুশাসনের স্বার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও অবাধ হওয়া জরুরি। এ কারণে নির্বাচনের আগে দুই প্রধান দলের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার আবশ্যকতা রয়েছে। এই সমঝোতার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, কিংবা উভয় পন্থায় দুই দলের মধ্যে ‘আলাপ’ হওয়া দরকার, তা সেটা সংলাপ বা আলোচনা যে নামেই করা হোক না কেন। এদিকে কূটনীতিকদের কাছে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে, বিএনপি কোনো ধরনের সংলাপে আগ্রহী নয়। ২০১৪ সালের নির্বাচন কেন্দ্র করে বিএনপির আচরণ বিদেশিদের কাছে তুলে ধরে সংলাপে বিএনপির অনীহার কথা জানান।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা দাবি করছেন, রাজনীতিতে কোনো কিছু আদায় করতে হলে আন্দোলনের মাধ্যমে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ক্ষমতাসীনদের বাধ্য করতে হয়। কিন্তু সেটা বিএনপি পারছে না। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ আন্দোলন করেছিল। সেখানে জনগণকে সম্পৃক্ত করে বিএনপিকে পদত্যাগে বাধ্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিএনপি এখন সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারবে বলে মনে করছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মাঠে আওয়ামী লীগের অবস্থান আছে। জনগণ সরকারের সঙ্গে আছে। আর তাদের সঙ্গে জনগণই নেই। তাই তো খালেদা জিয়াকে এখনো মুক্ত করতে পারেনি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘যেকোনো সমস্যার সমাধান সংলাপের মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব। সংলাপে বসলে হয়তো শতভাগ পাব না। তবে গিভ অ্যান্ড টেক তো কিছু হবেই। গণতন্ত্রে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই।’
তবে দলটির সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, ‘সংলাপ চলছে। মিডিয়ায়, টক শোতে, মাঠে মঞ্চে। এক দল আরেক দলকে উদ্দেশ্য করে যে বক্তব্য দিচ্ছে, তাও এক ধরনের সংলাপ। এসব অনেকেই সংলাপ বলে টের না পেলেও মূলত এটাও সংলাপ।’
আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, সংলাপের ব্যাপারে পশ্চিমা কূটনীতিকেরা তাদের তেমন কোনো পরামর্শ দেননি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘আমরা তাদের (কূটনীতিক) বলেছি সংলাপের উদ্যোগ আমরা নিয়ে কী করব? তাদের (বিএনপি) যদি কোনো দাবি থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলতে পারে। নির্বাচন কমিশন যদি সুপারিশ করে, সেটা অবশ্যই সরকারের কাছে আসবে। সরকার দেখবে তখন।’
সংলাপ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ভাবনা আমাদের নাই।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। আর আওয়ামী লীগ বলছে, নির্বাচনকালীন এই সরকারই থাকবে এবং তাদের অধীনে নির্বাচনে হবে। নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ অবস্থায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনকালীন সংকট সমাধানে কূটনীতিকদের দূতিয়ালি চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও ইতিবাচক বিএনপি। সাম্প্রতিক সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, জাতিসংঘসহ বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থার দূতসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। ওই বৈঠকগুলোতে কেন এই সরকারের অধীনে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যেতে চায় না তা ব্যাখ্যা করেছে দলটি। বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে যাবে না, সেটিও স্পষ্ট করেছে। একই সঙ্গে কূটনীতিকদের বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে সে বিষয়ে সংলাপের আহ্বান আসলে তাতে সাড়া দেবে বিএনপি। আর এই সংকট মোকাবিলায় কূটনীতিকদের ‘রোল প্লে’ (ভূমিকা রাখা) করার সুযোগ আছে বলে মনে করেন দলটির নেতারা। তাদের মতে, প্রকাশ্যে না হলেও পর্র্দার অন্তরালে সংলাপ হতে পারে। কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপের কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনেও গুঞ্জন রয়েছে ভেতর-ভেতর সংলাপ হচ্ছে।
সর্বশেষ ১৮ মে গুলশানের আমেরিকান ক্লাবে মার্কিন দূতাবাসের পলিটিক্যাল চিফ ব্রান্ডন স্ক্যাট, পলিটিক্যাল অফিসার ম্যাথিউ বে, পলিটিক্যাল কনস্যুলার ডেনিয়েল শেরির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
জানতে চাইলে শামা ওবায়েদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকগুলোতে তারা আমাদের অবস্থান জানতে চান। আমরাও আমাদের অবস্থান তুলে ধরি। সর্বশেষ তারা জানতে চেয়েছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে আপনাদের অবস্থান কী। আমরা বলেছি, আন্দোলন চলছে, সেটা আমরা কন্টিনিউ (চালিয়ে যাব) করব। তারা অন্য পক্ষের (ক্ষমতাসীনদের) কথাও শুনছেন। এ অবস্থায় তারা কী করছে (দূতিয়ালি), নাকি অন্য কিছু হচ্ছে সেটা তাদের বিষয়। তবে আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আরেকটি গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসুক, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত হোক, সে ব্যাপারে তাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকুক।’
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক সংলাপের ব্যাপারে কূটনীতিকেরা কোনো বৈঠকেই আমাদের কিছু বলেনি।’
তবে বৈঠকগুলোতে থাকা দলের আরেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা একাধিকবার সরকারের সঙ্গে সংলাপ করেছি। ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনের সংলাপে পর চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের তিন মাস পর নতুন নির্বাচন দেওয়ার কথা বলে তারা প্রতারণা করেছে। তাই এজেন্ডা ছাড়া কোনো সংলাপে আমরা যাচ্ছি না। কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে আমরা বলেছি, আনুষ্ঠানিক সংলাপের বিষয়ে আমরা ইতিবাচক। কিন্তু সেটি হতে হবে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে তা নিয়ে।’
ওই নেতার আরও বলেন, ‘সরকার এখন বিভিন্ন চাপে আছে। আন্তর্জাতিক চাপ তো আগে থেকেই আছে। এখন নতুন করে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ বেড়েছে। এসব চাপ সামাল দিতে তারা সংলাপের নামে নানা কথা বলবে। কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনায় সরকারের মনোভাবে কিছু হলেও আঁচ করা যায়। হয়তো কয়েক দিন পর সরকার আনুষ্ঠানিক সংলাপের জন্য আমন্ত্রণও জানাতে পারে।’
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।