
দুঃখজনক হলেও সত্যি দেশের আর্থিক খাত তছনছ করে দিয়ে কেউ কেউ লাখো কোটি টাকার ঋণখেলাপি হয়ে যায়। দেশ থেকে পাচার হওয়া হাজার হাজার কোটি টাকা ফেরত আনার কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। রিজার্ভ কমে যাওয়া আর ডলারের সংকটের কথা শুনি। মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে। ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়ার ফলে জনজীবন অতিষ্ঠ, এখন নয়, বেশ আগেই। বুধবার আরেক দফা গ্যাসের দাম বাড়ার ফলে দৈনন্দিন ব্যয়ের পাশাপাশি জনদুর্ভোগ আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। জ্বালানির দাম বাড়ালে তা যে শিল্প, কৃষি ও পরিবহন খাত সব ক্ষেত্রেই মারাত্মক প্রভাব ফেলবে আর তা মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যেতে পারে সে কথা সরকারের অজানা নয়। কিন্তু তবু সরকার অন্য কোনো সমাধানের দিকে না গিয়ে এই বোঝাও মানুষের কাঁধেই চাপিয়ে দিল। বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরে ‘বিদ্যুচ্চমকের পর গ্যাসে বিস্ফোরণ’ ও ‘জ্বালানির জ্বালাতনে জীবন’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন দুটি পর্যালোচনা করে এই প্রশ্নই সামনে আসে যে, জ্বালানির এই চাপ সয়ে সাধারণ মানুষ কীভাবে টিকে থাকবে?
সরকারের নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পাঁচ দিনের মাথায় বাড়ানো হলো গ্যাসের দাম। পরিবহনে ব্যবহার্য সিএনজি, আবাসিক, সার ও চা শিল্প ছাড়া অন্য খাতে গ্যাসের দাম ১৪ থেকে ১৭৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। গ্যাসের দাম বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ। নতুন দাম ফেব্রুয়ারিতে কার্যকর হবে। গত ১২ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ, যা চলতি মাসে কার্যকর হয়েছে। গণশুনানির মাধ্যমে সর্বশেষ গত ৪ জুন সব শ্রেণির গ্রাহকের গ্যাসের দাম গড়ে ২২.৭৮ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। তবে চলতি মাসে দুই দফা বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বেড়েছে কোনো ধরনের গণশুনানি ছাড়াই। এতদিন গণশুনানির মাধ্যমে শুধু বিইআরসি গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করত। কিন্তু এখন বিইআরসির পাশাপাশি সরকারকেও চাইলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানোর বা কমানোর ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যা নিয়ে সমালোচনা রয়েছে।
বাজার-বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ার কারণে দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। ট্রেডিং করপোরেশনের (টিসিবি) হিসাবেই দেখা যাচ্ছে, প্রতি মাসে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। সরকার বলছে, ভর্তুকি-সমন্বয় ও গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জ্বালানিবিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের ভুলনীতি ও কিছু গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষা করতে গিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে। এর মাশুল গুনতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। সরকার আন্তরিক হলে দাম না বাড়িয়ে বিকল্প কোনো পথেও যেতে পারত। বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি দেশে ডলারের বিপরীতে টাকার ধারাবাহিক অবমূল্যায়নের কারণে কাঁচামাল আমদানিতে ব্যয় বেড়েছে বহুগুণ। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি। রপ্তানিমুখী শিল্প খাতের জন্য এই সংকট সামাল দেওয়া কঠিন হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রশ্ন হলো, বিদ্যুৎ তথা জ্বালানি খাতের এসব অব্যবস্থাপনা আর অনিয়ম-জালিয়াতি কবে বন্ধ হবে? সারা দেশে শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগের মতো সরকারের বড় ধরনের সাফল্যও মøান হয়ে যাচ্ছে এই ধরনের অব্যবস্থাপনা ও অবিবেচক সিদ্ধান্তের কারণে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় যেমন এর দায় এড়াতে পারে না তেমনি সরকারকেও বুঝতে হবে এই সংকটের বড় ধরনের রাজনৈতিক অভিঘাত রয়েছে।
জ্বালানিবিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির এতটা মূল্যবৃদ্ধির কোনো যৌক্তিক কারণ তারা দেখছেন না। আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থনীতির চাপ সামলানোর জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা ‘আইএমএফ’-এর কাছ থেকে প্রত্যাশিত ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ নেওয়ার সঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সম্পর্ক থাকতে পারে। কারণ, আইএমএফের ঋণের শর্তের অন্যতম হলো বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি প্রত্যাহার করা। এই বাস্তবতায় সব ধরনের কৃষি ও শিল্প পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে। অনিবার্যভবেই অতিরিক্ত দামের বোঝাও সাধারণ মানুষের কাঁধেই চাপবে। আইএমএফের শর্তের বেড়াজালে আটকা পড়ে সরকার কি সাধারণ মানুষের টিকে থাকাকে কঠিনতর করে তুলছে? এই পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও সাধারণ মানুষের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে সরকারের উচিত হবে বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানির দাম পুনর্বিবেচনা করা। পাশাপাশি জ্বালানি খাতের সংকট সমাধানে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ও কোম্পানিগুলোকে কঠোর নজরদারির মধ্যে এনে লোকসান কমানোর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। না হলে ইতিমধ্যে মূল্যস্ফীতির বোঝার ভার বহন করে চলা সাধারণ মানুষকে এবার চিঁড়েচ্যাপ্টা হতে হবে।
মোটা বুদ্ধির মানুষদের মাথায় ম্যাক্রো-মাইক্রোর মারপ্যাঁচ সহজে ঢোকার কথা না। বিড়ালকে কোনো কোনো এলাকায় মেকুর বলার চল এখনো আছে। বিড়াল বাঘের মাইক্রো সংস্করণ সে কারণে কিনা আলেফ মিয়া মাঝে মাঝে ভাবে। শব্দের ব্যুৎপত্তি নির্ণয় নিয়ে মাথা ঘামান এমন অধ্যাপকের সঙ্গে মোটামুটি ঘণ্টা তিনেকের মতো সময় কাটালেই আলেফ মিয়া মনে করে তাবৎ শব্দরা তাদের জাতকুল মানসম্ভ্রম বাঁচানোর জন্য হয়তো তার বিরুদ্ধেই রিট মামলা জুড়ে দিতে তেড়ে আসতে চাইবে। গবেষণা শব্দটি তো সেদিন খুব মাইন্ড করে বসল যখন সে শুনল গবেষণার সন্ধিবিচ্ছেদ হলো গো+এষণা। গো মানে গরু, এষণা মানে খোঁজা। এভাবেই গবেষণা শব্দটি ধরাধামে এসেছে অর্থাৎ ভদ্র ভাষায় বলতে গেলে গরু খোঁজার কাজই হলো গবেষণা, এত সব সম্মানীয় গবেষক যাদের সবাই সম্মান ও সমীহ করে, তাহলে তাদের মানসম্মান কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়? সারণী সারসংক্ষেপ হাইপোথিসিস হাইথট পর্যালোচনা পর্যবেক্ষণ নিয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ল্যাবে যাদের দিন কাটে তাদের কিনা গুরুর গরু খোঁজার কাজে হতভম্ব গরুর রাখালের পর্যায়ে নীচে নামানো? গবেষণার ইংরেজি প্রতিশব্দ রিসার্চ, এখানে রি বা বারবার সার্চ বা খোঁজাখুঁজি করার মধ্যে মানসম্মান মোটামুটি চলার মতো থাকে বলে মনে হয়।
ইদানীং রাজনৈতিক সিলসিলার কিছু শব্দ যেমন গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সাম্প্রদায়িকতা, চিন্তা-চেতনা, ধর্মনিরপেক্ষতা, সন্ত্রাসী, সদাচার, সুশাসন ইত্যাদির ঘাটে-অঘাটে ব্যবহার অপ-ব্যবহার নিয়ে বড্ড বিব্রত আলেফ মিয়া। রাত নেই দিন নেই তারা আলেফ মিয়ার মাথায় এসে ঘ্যান ঘ্যান করা শুরু করে। তার এমনিতে সাইনাসের ব্যামো আছে, সে এসব শব্দের ওজর আপত্তি শুনতে না চাইলেও তাকে সেগুলো ভাবিয়ে তুলছে। তার ভয় এরা না জানি কবে আইএমএফের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়। কেননা ইদানীং পরস্পরের দোষারোপের দ্বারা বর্তমানের অপকর্মের বৈতরণী পার পায়োর উপায় যখন খোঁজা হচ্ছে, তখন ‘অপ’ উপসর্গ যোগ করে অনেক বংশীয় ও বলশালী শব্দেরই অপ-ব্যবহারের পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। যেমন অপ-শক্তি, অপ-ব্যবহার, অপ-তৎপরতা ইত্যাদি। অপর পক্ষকে ঘায়েল করার জন্য তাদের যেসব কাজকে দোষারোপ করা হচ্ছে, অন্যদিকে নিজেরা একই কাজ করে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা চলছে। এ ক্ষেত্রে বিরোধী পক্ষ হয়ে যাচ্ছে ‘অপ-শক্তি’। নিজেরাই যে অপ-শক্তির প্রতিভূ সেটি অপর পক্ষ বলবার ক্ষমতা না পাওয়া পর্যন্ত এভাবে আক্রমণাত্মক ভাষায় এভাবেই বলা হবে। যেন অন্যরা অপ-শক্তি আর নিজেরা সাধু। চোরের মার বড় গলা বলে একটা কথা আছে না? বোকাসোকা আলেফ মিয়ারা দেখতে পাচ্ছে অপ-শক্তিরাই পরস্পরকে অপ-শক্তি বলছে, আর সবাই শিলনোড়ার মতো পিষ্ট হয়েই চলছে। নানান শ্রেণীকরণে তারা বিভক্ত হয়েই যাচ্ছে। ডানরা বামপন্থিকে, বামরা ডানপন্থিকে যুগপৎভাবে আক্রমণ-আমন্ত্রণ করেই চলছে। নিরপেক্ষতার নিস্তার নেই। গেল শতকের নব্বইয়ের দশকের আগে পুঁজিবাদ আর সমাজতন্ত্র পরস্পরকে এক হাত নেওয়ার আগে যা যা করত। গর্বাচেভ সাহেবের পেরেস্ত্রোইকা তরিকার অপ-মৃত্যুতে পুঁজিবাদীদের এখন পোয়াবারো। এখন সব কিছুতে একক বাড়াবাড়িতে সর্বসাধারণের প্রাণ ওষ্ঠাগত হলেও অন্যকে অপ-শক্তি বলে গাল দিয়ে নিজেদের মধ্যে গজিয়ে ওঠা বড় বড় অপকর্মকারীকে দুধ-কলা দিয়ে পোষার মহড়া চলছে। কৃষি ব্যাংকের ১২ হাজার টাকার ঋণখেলাপিকে কোমরে দড়ি দিয়ে বাঁধা হয় অথচ হাজার কোটি টাকা লোপাটকারীর বিচার ও তদন্তের ফাইল নড়েও না চড়েও না। বড় বড় আদালতে মৌলিক অধিকারের দাবিতে বড় বড় লোকেরা রাষ্ট্রীয় কর, দায়-দেনা পরিশোধে স্থিতি অবস্থা চান এবং পানও, প্রভাবশালীদের বড় বড় দুর্নীতি এমনকি খুন-খারাবির বিচার বিলম্ব করানো, মোড় ঘোরানোর আনুকূল্য লাভে বেগ পেতে হয় না। সুখের বিষয় দেশের উত্তারাঞ্চলের একজন স্থানীয় নেতা খুন হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে পুলিশের চার্জশিট এমনকি নিম্ন আদালতে অভিযুক্তদের ফাঁসির আদেশও হয়েছে সর্বনিম্ন সময়ে। এই তৎপরতা ও নিষ্পত্তি নিঃসন্দেহে বিচারব্যবস্থায় প্রশংসনীয় আগ্রগতি, কিন্তু ১০ বছরের বেশি সময় আগে সাগর-রুনী হত্যার মামলার চার্জশিট দিতে বিলম্বের রাত কবে শেষ হবে? দেশে লাখো-কোটি বেকারের কর্মসংস্থান না করে, দুর্নীতি করে বা বড় ঋণ নিয়ে দেশে বিনিয়োগ না করে, বিদেশে ধনীর ক্লাবে নাম লেখানোটা যেন ইদানীং দোষের কিছু না। বরং বাহাদুরি।
আলেফ মিয়ার এক প্রশিক্ষক গুরু সুদূর জার্মানি থেকে তার কাছে একবার জানতে চেয়েছিলেন‘মাঠে মারা যাওয়া’ কথাটির বুৎপত্তি কী? বেশ বিব্রতকর প্রশ্ন। মানুষ মাঠে মারা যাবে কেন এবং দৈবাৎ দু-একজন ঘটনাচক্রে মারা গেলেই বা কী? তাকে বাক্যবিন্যাস বিধিমালার আওতায় এনে, অনেকটা ৫৪ ধারার মতো, ভিন্ন ব্যাখ্যা দাঁড় করাবার প্রয়াস কেন? অনেক পরে নওগাঁর জেলা প্রশাসকের কাছে জানা গেল এই শব্দ তিনটির পয়লা ব্যবহারকারী হলেন নোবেল বিজয়ী বিশ্বকবি শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। পতিসরে রবিবাবু কৃষিকাজে বেশ কিছু টাকাকড়ি বিনিয়োগ করেছিলেন, ছেলে রথীনকে মার্কিন মুলুক থেকে সেচবিদ্যা ও রাশিয়া থেকে কৃষিপাঠ দিয়ে নিয়ে এসেছিলেন, কৃষকদের কৃষিঋণ বা পুঁজির জোগান দিতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর তখনো জন্মগ্রহণ করেননি, এমনকি কৃষি ব্যাংকের খোদ চেয়ারম্যান মহোদয়ের পিতাও মনে হয় তখন... যাই হোক রবীন্দ্রনাথ মাঠে কৃষকের কাজে টাকা-পয়সা বিনিয়োগের যে পরিকল্পনা নিয়েছিলেন তাতে ‘পরি’ এবং ‘কল্পনা’ দুটোরই মনে হয় পুষ্টিহীনতা ছিল, যদিও তিনি নিজে কবি ছিলেন, ছিলেন কল্পনার রাজাধিরাজ। কবির মাঠের কৃষিকাজে বিনিয়োগ ব্যবসা সফল হয়নি। কাকে যেন লিখলেন ‘সমুদয় অর্থ মাঠে মারা গেল হে’। সেই থেকে ব্যর্থ প্রয়াসের প্রতিভূ শব্দাবলি হিসেবে মাঠে মারা যাওয়ার প্রচলন।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শব্দের সম্মান-অসম্মান সমানতালে বাড়া-কমার মধ্যে আছে। রোডও নেই ম্যাপও নেই, আছে কিছু হাবিজাবি তালিকা আর কর্মপরিকল্পনা, তার নাম রোডম্যাপ। কাগজে রাষ্ট্র আছে, দখলে নেইএমন দেশের মতো, নরসিংদীর নদীর পাড়ের ৩ ভাইয়ের জমি বিক্রির সময় দেখা গেল যেমন ‘জোতে জমি নেই’, তিন ভাই যে যখন পেরেছে একই দাগ থেকে আলাদা আলাদা করে জমি বিক্রি করেছে। এখন আর বিক্রির হিসাব মিলছে না। যেন সব বিক্রি শেষ!
ম্যাক্রো মাইক্রো শব্দদ্বয় দেখতে দুই ভাইয়ের মতো হলেও এদের বাড়ি কিন্তু এদেশে না এবং এদের নাড়িনক্ষত্র ঘাঁটলে ভালো কিছু বের হবে বলে মনে হয় না। এখনো পর্যন্ত এই দুই বিদেশির উপযুক্ত প্রতিস্থাপনীয় বাংলায় পয়দা হয়েছে বলে শুনিনি। ম্যাক্রোর দৃষ্টি প্রসারিত, প্রলম্বিত ও প্রবহমান। সে তার বাহুতে, কাঁধে, মাথায় অনেক কিছু নিতে পারে। একসঙ্গে পাঁচ ইঁদুর যেমন ধরা যায় না ম্যাক্রোর কাছে তেমনি পরিশীলিত পরিমার্জিত পারিজাত কোনো কিছু চটজলদি আশা করা যায় না। তার সব ফলাফলই সময়সাপেক্ষ এবং অনেকগুলো ফ্যাক্টর যাচাইযোগ্য। সামষ্টিক বলে ম্যাক্রোর একটা প্রতিশব্দ অনেক বলে-কয়ে জোগাড় করা গেছে তাও এপার বাংলায়, ওপার বাংলায় এখনো এককভাবে শব্দটির অন্নপ্রাশন হয়নি বলে মনে হয়। ‘ম্যাক্রো ইকোনমিক্স’-কে সেখানকার সাহিত্য সংসদ তাদের ঢাউস ডিকশনারিতে ‘বৃহত্তর একক বিদ্যা সংক্রান্ত অর্থবিদ্যা বা ধনবিজ্ঞান’ বলে কোনো রকমে পার পেয়েছে। পক্ষান্তরে মাইক্রো ক্ষুদ্র বা অণু পর্যায়ের বলে তাকে একা একা রাস্তায় ছেড়ে দিতে কেউ রাজি না। মাইক্রোসকোপ, মাইক্রোফিল্ম, মাইক্রোবায়োলজি, মাইক্রোফোন এসব ডাকসাইটে শব্দমালার সঙ্গে মাইক্রোকে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সামষ্টিকের বিপরীতে ব্যষ্টিককে মানাবে ভালোএই বিবেচনায় এপার বাংলায় মাইক্রোকে ব্যষ্টিক বলার চল শুরু হলো বলে, ওপার বাংলায় মাইক্রোকে অণু বা ক্ষুদ্র এরকম একটা তকমা (প্রত্যয়) দিয়ে অন্যের পরিচয় দেওয়ার জন্য সাব্যস্ত করা হয়েছেযেমন মাইক্রোবায়োলজি জীবাণু বিজ্ঞান, মাইক্রোসকোপ অণুবীক্ষণ। আগেই বলেছি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয় নিয়ে মাইক্রোর কাজ কারবার। যা কিছু করবার তা ধীরস্থিরভাবে গভীর অভিনিবেশ সহকারে করা তার ধর্ম। মনে হয় মাইক্রোর দিকে বিধাতার ঝোঁক বেশি। সেজন্য মাইক্রোর শব্দভা-ার বেশি। ক্ষুদ্র অতি ক্ষুদ্রকে নিয়ে যেহেতু মাইক্রোর কারবার সেহেতু সে বেশ খানিকটা অন্তর্যামী, অন্তর্গামীও বটে। অনেকের সঙ্গে তাই তার আত্মীয়তা ও জানাশোনা বেশি। মাইক্রোওভেনে চটজলদি অনেক কিছু গরম করা যায়, মাইক্রোওয়েভে শব্দতরঙ্গ নিয়ে ভেল্কিবাজি চলে, মাইক্রোচিপস মুঠোফোনে কমপিউটারে বিপ্লব ঘটিয়ে চলছে। গোটা দুনিয়াটা মাইক্রোচিপসের মধ্যে মোড়ানোর মওকা চলছে। মাইক্রোর জয়জয়কার সবখানে।
আলেফ মিয়ার, কেন জানি তার নিজেরও মাইক্রোর প্রতি প্রেম-মহব্বত বেশি। হতে পারে তার দেশ বাংলাদেশ মাইক্রোক্রেডিটের দেশ বলে। সবাই জানে নোবেল বিজয় লাভ এই মাইক্রোর জন্যই ঘটেছে। বলা যায় আজকের বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক বিশ্ব চিনেছে এই মাইক্রোর কারণে। মানুষ কেন সব কিছুই তো ছোট থেকে বড় হয়। ম্যাক্রোলেভেলে কথা বলে কূলকিনারা মেলে না সহজে, আব্বাসউদ্দিনের গানের মতো আমি কোন কূল হতে কোন কূলে যাব....। ঢাউস বাসে চেপে হট্টগোলে নয়, মাইক্রোবাসে চড়ে প্রেমের মধুপুরে যাওয়ার চেষ্টাই যেন শ্রেয়।
লেখক: সরকারের সাবেক সচিব
এন বি আরের সাবেক চেয়ারম্যান
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গত সোমবার দেশে মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ৫০টি মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকায় যে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র সরকার নির্মাণ করছে, তার মধ্যে দুই দফায় ১০০টির উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে প্রথম পর্যায়ে ৫০টি মডেল মসজিদের উদ্বোধন করা হয় ২০২১ সালের ১০ জুন। সরকার আশা করছে, ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ নাগাদ আরও ৫০টি মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র চালু করা সম্ভব হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি উন্নত মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। ৪০ থেকে ৪৩ শতক জায়গায় তিন ক্যাটাগরিতে এসব মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। জেলা পর্যায়ে চারতলা, উপজেলার জন্য তিনতলা এবং উপকূলীয় এলাকায় চারতলা মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। নান্দনিক নির্মাণশৈলীতে নির্মীয়মাণ এসব মডেল মসজিদে রয়েছে একটি করে মিনার।
মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে নারী ও পুরুষের আলাদা অজু ও নামাজের জায়গা রাখা হয়েছে। হজ গমনেচ্ছুদের জন্য নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, লাইব্রেরি, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র, ইসলামি বই বিক্রয় কেন্দ্র, কোরআন হেফজ বিভাগ, শিশু শিক্ষা, অতিথিশালা, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা, অটিজম কেন্দ্র, ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিস এবং গাড়ি রাখার জায়গা রাখা হয়েছে। এসব মসজিদে প্রতিদিন চার লাখ ৯৪ হাজার ২০০ জন পুরুষ ও ৩১ হাজার ৪০০ জন নারী একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারবেন। একসঙ্গে প্রায় ৩৪ হাজার মানুষ কোরআন তেলাওয়াত করতে পারবেন, ৬ হাজার ৮০০ জন ইসলাম বিষয়ে গবেষণা করতে পারবেন, ৫৬ হাজার মানুষ দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নিতে পারবেন এবং প্রতি বছর এখান থেকে ১৪ হাজার শিক্ষার্থী কোরআন মাজিদের হাফেজ হবেন।
মসজিদকে বলা হয় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালার ঘর ও মুসলিমদের ইবাদতকেন্দ্র। মসজিদ প্রত্যেক মুসলমানের কাছে অত্যন্ত প্রিয় ও পবিত্র জায়গা। ইসলামে মসজিদ নির্মাণ এবং মসজিদ সংরক্ষণের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মসজিদ নির্মাণ করবে, আল্লাহতায়ালা তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ ঘর নির্মাণ করবেন।’ -সহিহ বোখারি : ৪৫০
সারা দেশে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের জন্য এতগুলো মডেল মসজিদ নির্মাণ বিরল এক ঘটনা। ইতিহাস হয়ে থাকবে শেখ হাসিনার এই কর্ম ও মুসলমানদের প্রতি তার মমত্ববোধ ও ভালোবাসার কথা। এক অনন্য, অসাধারণ, বিস্ময়কর ও ইতিহাস সৃষ্টিকারী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে মসজিদ নির্মাণের ইতিহাস সোনালি হরফে লিখিত থাকার মতো ঘটনা। শুধু এই মসজিদ নির্মাণই শেষ নয়। এর আগেও মুসলমানদের প্রতি ভালোবাসা এবং ইসলামের শান্তির বাণী চারদিকে ছড়িয়ে দিতে তিনি নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। এর মধ্যে কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি, দারুল আরকাম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা ও আলিয়া মাদ্রাসার জন্য স্বতন্ত্র আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা উল্লেখযোগ্য।
শতকরা ৯২ জন মুসলিম জনসংখ্যার এই দেশে তিন লক্ষাধিক মসজিদ রয়েছে বলে জানা যায়। এদিক থেকে বাংলাদেশ মসজিদের দেশ হিসেবে অনেক আগেই পরিচিতি লাভ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তার সরকার আরও ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে যে চমক সৃষ্টি করেছেন তা বিস্ময়কর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার এ জন্য সংশ্লিষ্ট সব মহলের সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য এবং আমরাও জানাই অভিনন্দন-মোবারকবাদ।
মডেল মসজিদের উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এগুলোর যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের কথা বলেছেনতা যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের মসজিদের ইতিহাসে এক নয়া অধ্যায়ের সূচনা হবে। এ দেশে মসজিদ সম্পর্কে যাদের মন পরিষ্কার নয়প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মডেল মসজিদ নির্মাণের ঐতিহাসিক পদক্ষেপ এবং ইসলাম সম্পর্কে আলোড়ন সৃষ্টিকারী বক্তব্য তারাও অনুধাবন করতে পারবেন।
প্রধানমন্ত্রী মডেল মসজিদ উদ্বোধনকালে মসজিদের গুরুত্বের ওপর যে অসাধারণ বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন তা প্রত্যেকটি মুসলিম হৃদয়কে নাড়া দেবে। তার গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যের সঙ্গে সবাই একমত হবেন যে, তিনি ‘লেবাস নয়, ইনসাফের ইসলামে বিশ্বাসী’ হওয়ার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি মডেল মসজিদ নির্মাণের যে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের বিবরণ দিয়েছেন, তা তার সুস্থ চিন্তা ও চেতনাসমৃদ্ধ, গভীর ইসলামি চিন্তাধারারই বহিঃপ্রকাশ। তার সুউচ্চ চিন্তাধারার এরূপ মডেল মসজিদ সমাজে অপরাধ প্রবণতা কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে এবং তাতে একটি আদর্শ সমাজ গড়ে উঠতে পারে। এসব মসজিদের মাধ্যমে প্রচলিত বহু সামাজিক অন্যায়, বঞ্চনা এবং নানা কুসংস্কারের অবসান ঘটা সম্ভব।
মডেল মসজিদ উদ্বোধনের বিষয়টি খুবই আনন্দের। তবে এসব মসজিদ নির্মাণে বিভিন্ন স্থানে কিছু অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টির আড়ালে থাকার কথা নয়। মসজিদগুলোকে যেমন রাজনীতির প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে তেমনি দুর্নীতিমুক্তভাবে পরিচালনার জন্য সুষ্ঠু, সুন্দর ও ত্রুটিমুক্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে। মসজিদের আয়-ব্যয় ও পরিচালনায় অপচয় ও দুর্নীতি কঠোর হস্তে দমনের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং মসজিদকে যেন কেউ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে না পারে, সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, মডেল মসজিদগুলো যেন বিদ্যমান মসজিদগুলোর প্রতিপক্ষ হয়ে উম্মতকে বহুধাবিভক্ত না করে। এ জন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, যোগ্য, নিরপেক্ষ ইমাম-খতিব-মুয়াজ্জিন নিয়োগের পাশাপাশি মসজিদ কমিটিকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা।
মডেল মসজিদ নির্মাণে যে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে তা যেন কেবল মসজিদের উন্নয়নের প্রয়োজনেই ব্যবহৃত হয়। কোনোরূপ তছরুফ-অনিয়ম যেন না হয়, সেদিকে কড়া দৃষ্টি রাখতে হবে। কেননা মসজিদের অর্থ অন্যায়ভাবে ব্যবহার করা হলে অথবা তার অপচয় করলে খোদায়ি গজবের আশঙ্কা রয়েছে। অর্থাৎ মসজিদ পরিচালনার ক্ষেত্রে সততা বজায় রাখতে হবে এবং অন্যায়, দুর্নীতিকে কোনো অবস্থাতেই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। কেননা তাতে সরকারের মহৎ উদ্দেশ্য ভেস্তে যেতে পারে।
লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক
সরকারবিরোধিতা আর রাষ্ট্রবিরোধিতা এক কথা নয়। প্রথমটা আইনে সিদ্ধ, আর দ্বিতীয়টা নিষিদ্ধ। কিন্তু আমরা এখন এমন একটা সময়ে বাস করছি যখন রাষ্ট্রগুলো, আরও নির্দিষ্ট করে বললে রাষ্ট্রগুলোর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী এই দুটোকে এক করে ফেলেছে অথবা এক করে দেখাচ্ছে। কিন্তু এই ভাবনা গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। গণতন্ত্রের অন্যতম শর্তই হলো ভিন্নমত প্রকাশ করতে পারা। সেই হিসেবে, ভিন্নমত প্রকাশের অধিকার সংরক্ষণ করাই হলো গণতান্ত্রিক দেশের সরকারগুলোর অন্যতম দায়িত্ব। কিন্তু এখনকার গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সরকার তাদের দায়িত্ব পালনে আগ্রহী তো নয়ই বরং ভিন্নমত দমনে তারা নিত্যনতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করছে। বলাই বাহুল্য এসবের অধিকাংশই নির্যাতনমূলক। প্রকৃতপক্ষে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বাইরে গণতন্ত্রের অস্তিত্ব নেই। ফলে, আজকের দুনিয়ায় যেসব দেশ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচিত, তার মধ্যে অনেকগুলোই স্বৈরতান্ত্রিক।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রর জন্মই হয়েছিল তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকরা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিতে চেয়েছিল বলে। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস হলো, এখন বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করতে হচ্ছে। এই রাষ্ট্রের এই নিয়তি হওয়ার কথা ছিল না। বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা অনেক। এটা গণতন্ত্রের জন্য একটা উল্লেখযোগ্য সূচক। কিন্তু এ দলগুলো সবসময় স্বাধীনভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করতে পারছে কি না সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের জন্মের পর নানা সময়ে সামরিক শাসন এসে গণতন্ত্রকে ব্যাহত করেছে। তবে, গণআন্দোলনের মুখে হটতে হয়েছে তাদের। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় এদেশের গণমানুষ এগিয়ে এসেছে, তারা রাস্তায় নেমেছে, এমনকি প্রাণ বিসর্জন দিতেও ভয় পায়নি। কোনো দেশের গণতন্ত্রের জন্য এটা খুব দরকারি ঘটনা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কি আমরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারছি। যে স্বাধীনতা সংবিধানসম্মত, যে স্বাধীনতা আমাদের অধিকার, সে স্বাধীনতার ওপর আমাদের রাষ্ট্রের দাঁড়িয়ে থাকার কথাতার কতটুকু ভোগ করছে বাংলাদেশের মানুষ?
২০২২ সালে মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) যে সূচক প্রকাশ করে তাতে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬২তম (স্কোর ৩৬ দশমিক ৬৩)। এর আগের বছর থেকে এটা ১০ ধাপ পেছানো। ২০২০ সালের পর থেকেই এ সূচক নিম্নমুখী। অর্থাৎ, মুক্তমত প্রকাশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ক্রমশ তলানির দিকে যাচ্ছে। ২০২২ সালের সূচকে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে মিয়ানমার ছাড়া সবার নিচে বাংলাদেশের অবস্থান। তবে মিয়ানমার আর বাংলাদেশের পরিস্থিতি এক নয়। মনে রাখতে হবে মিয়ানমারে এখন সামরিক শাসন চলছে। তবু মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে তারা আমাদের কাছাকাছি অবস্থানে আছে। এমনকি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য যে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করে স্বাধীন দেশ হিসেবে আমাদের জন্ম হয়েছেল সেই পাকিস্তানও বাংলাদেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। আরএসএফের সূচকে পাকিস্তানের অবস্থান ১৫৭তম।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিরোধী দলগুলোর ওপর সরকারের দমন-পীড়ন বেড়েছে। গণতান্ত্রিক দেশে সভা-সমাবেশ, মিটিং-মিছিল করার অধিকার সংবিধানসম্মত। কিন্তু বাস্তবে তার প্রয়োগ খুব একটা চোখে পড়ে না। ভিন্নমত মানেই দমন-পীড়ন। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বাক স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বড় রকম বাধা মনে করছে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে। এই আইনের কয়েকটি ধারা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হওয়ায় সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কারের আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু তা সংশোধনের ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি এখনো চোখে পড়েনি। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২২ সালে আটটি বিভাগের মধ্যে শুধু রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও ঢাকা এই তিনটি বিভাগেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মোট মামলা হয়েছে দুই হাজার ২৪৯টি। সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীসহ সমাজের প্রগতিশীল মানুষদের নামে অহরহ মামলা দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন চলতে থাকলে সাধারণ মানুষ ন্যায্য কথাটিও আর মুখ ফুটে বলতে চাইবে না।
লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সর্বজনস্বীকৃত। নানা মতের মিথস্ক্রিয়া সমাজে ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। কিন্তু সম্প্রতি ‘সরকারবিরোধী’ বই প্রকাশ করার অভিযোগে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় স্টল বরাদ্দ পাচ্ছে না দেশের অন্যতম উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা সংস্থা ‘আদর্শ’ প্রকাশনী। বাংলা একাডেমির প্রশাসন বিভাগের পরিচালক ড. এ কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেছেন, ‘আদর্শ চার ইউনিটের স্টল পেয়ে আসছিল। এবার তারা প্যাভেলিয়নের আবেদন করেছিল। আমরাও ভেবেছিলাম তাদের প্যাভেলিয়ন দেব। তবে তখনই তাদের কিছু বই নিয়ে আপত্তি আসে। আমরাও দেখেছি তাদের প্রকাশিত বই আমাদের নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ কারণে তাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘সরকারবিরোধী বিভিন্ন বক্তব্য আছে ওই বইয়ে।’ (দেশ রূপান্তর, ১৭ জানুয়ারি ২০২৩)। আমার প্রশ্ন হলো, সরকারবিরোধিতা কবে থেকে এই দেশে নিষিদ্ধ হলো? এ বিষয়ে তিনি কি কোনো আইনের রেফারেন্স দেখাতে পারবেন? যদি সেটা না হয়ে থাকে তাহলে ‘আদর্শ’কে স্টল বরাদ্দ না দেওয়ার কারণ কী? এর আগে ২০১৯ সালেও আদর্শ প্রকাশনীর ব্যাপারে অভিযোগ তোলা হয় কিন্তু সেই অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় তাদের স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়।
বই নিষিদ্ধের ঘটনা এই দেশে নতুন নয়। নানা সময়ে নানা বই নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশের সরকার। যদিও এটা খুব ন্যক্কারজনক ঘটনা, তবু শাসকগোষ্ঠীর অপছন্দের আলামত থাকলেই বইয়ের ওপর নেমে এসেছে খড়গ। ভিন্নমত প্রকাশের কারণে বইমেলায় প্রাণঘাতী হামলার শিকার হয়েছিলেন অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ। বই লেখার জন্য নির্বাসিত হয়ে আছেন বাংলাদেশের আরেক লেখিকাতসলিমা নাসরীন। এ দেশে তার অনেকগুলো বই নিষদ্ধ। বই এমন একটা বিষয় যেটা কেউ আপনাকে জোর করে পড়াবে না। সুতরাং একটা বই ভালো না লাগলে কেউ নাও পড়তে পারে। ফলে, নিষিদ্ধ করার চেয়ে যুক্তিযুক্ত হলো অন্য কোনো বই লিখে তার জবাব দেওয়া। কিন্তু নিষিদ্ধ করা হলে মানুষের সহজাত স্বভাবের কারণে মানুষ তা পড়ার প্রতি আগ্রহী হয় বেশি। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপী নিষিদ্ধ বইয়ের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়।
আদর্শ প্রকাশনী এখন পর্যন্ত এমন কোনো বই প্রকাশ করেনি যা নিষিদ্ধ হয়েছে। তাহলে এই প্রকাশনীর ওপর খড়গহস্ত হওয়ার কারণ কী? আদর্শ প্রকাশনীর প্রধান মাহাবুব রহমান দাবি করেন যে তিনটি বই নিয়ে বাংলা একাডেমির আপত্তি, সেগুলো হলোফাহাম আব্দুস সালামের ‘বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে’, জিয়া হাসানের ‘উন্নয়ন বিভ্রম’ ও ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের ‘অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের অভাবনীয় কথামালা’। এই বইগুলোতে সরকারবিরোধী কথাবার্তা আছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মাহাবুব রহমান বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নেতাদের বরাত দিয়ে জানান, এক প্রকাশক তিনটি বইয়ে সরকারবিরোধী লেখা প্রকাশ করা হয়েছে উল্লেখ করে বাংলা একাডেমিতে অভিযোগ জমা দিয়েছেন। এ তিনটি বইয়ের জন্য একাডেমি স্টল বরাদ্দের তালিকা থেকে নাম বাদ দিয়েছে। যে তিনজনের বই নিয়ে এসব অভিযোগ তারা প্রত্যেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে পরিচিত। সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে তারা নিয়মিত লেখালেখি করেন।
বুদ্ধিসম্পন্ন স্বাধীন মানুষ ভালো কাজের প্রশংসা আর খারাপ কাজের নিন্দা করবে, এটাই স্বাভাবিক। কোনো দেশের কোনো সরকারই সবার জন্য সবসময় ভালো কাজ করে না। এমনকি সরকারের আপাত ভালো কাজেও কারও কারও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে, সরকারের কাজের সমালোচনা সবসময় থাকবে। বুদ্ধিজীবীদের কাজ সরকারের স্তুতি করা নয় বরং সরকারের ভুলগুলো ধরিয়ে দেওয়া এবং সম্ভব হলে এ থেকে উত্তরণের পথ বাতলে দেওয়া। সেই কাজটি করা হয় সরকারের ভালোর জন্যই। সরকারের কাজের সমালোচনা করে সরকারের ভুল ধরিয়ে দিলে জনগণ ও সরকার উভয়ই উপকৃত হয়। গণতান্ত্রিক সমাজে এই চর্চা সবসময়ই দরকারি। কিন্তু এখন সরকার তার সমালোচকদের প্রতিপক্ষ মনে করছে। সরকারের মধ্যে সমালোচনা গ্রহণ করার মানসিকতার অভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। এই অসহিষ্ণু মনোভাব একটা দেশের জন্য ক্ষতিকর। সরকার যখন সমালোচনাকে ভয় পায়, সমালোচকদের প্রতিপক্ষ মনে করে তখন সরকারের জনকল্যামূলক উদ্দেশ্য ব্যর্থ হতে বাধ্য। অন্যদিকে, সরকার যে বই নিষিদ্ধ করেনি, সেই বইতে সরকারের সমালোচনা আছে বলে (খেয়াল করার বিষয়, রাষ্ট্রবিরোধী নয়, সরকারবিরোধী) তার প্রকাশককে একুশে বইমেলায় বাংলা একাডেমি কর্তৃক নিষিদ্ধ করার ঘটনাটি মতপ্রকাশ ও শিল্প-সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে একটি ভয়ংকর ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। পরিহাসের বিষয় হলোবিষয়টি বাংলা একাডেমির মতো একটি প্রতিষ্ঠান মহান একুশের নাম জড়ানো এক আয়োজনের ক্ষেত্রে করার চেষ্টা করছে।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আমাদের সংবিধান ও আইন দ্বারা সংরক্ষিত। বাংলা একাডেমির প্রশাসন বিভাগের পরিচালক ড. এ কে এম মুজাহিদুল ইসলাম তার বক্তব্যের এক জায়গায় বলেছেন, ‘আমরাও দেখেছি তাদের প্রকাশিত বই আমাদের নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’ বাংলা একাডেমি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, তিনি কি বলতে পারবেন, তাদের কোন সেই নীতিমালা যাতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করার কথা লেখা আছে? যদি সত্যিই থাকে, তা কি খোদ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়? আশা করি বাংলা একাডেমি তাদের এই হঠকারী সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে এবং আমরা এবারের অমর একুশে বইমেলায় ‘আদর্শ’ প্রকাশনীর স্টল থেকেই তাদের বই সংগ্রহ করতে পারব।
লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক
চলচ্চিত্র নির্মাতা আলমগীর কবিরের জন্ম রাঙ্গামাটি শহরে ১৯৩৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর। তার বাবার নাম আবু সাইয়েদ আহমেদ ও মা আমিরুন্নেসা বেগম। তার পৈতৃক নিবাস বরিশাল জেলার বানারীপাড়া। ১৯৫২ সালে তিনি ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৫৪ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে বিএসসি অনার্স পাস করে তিনি লন্ডনে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হন। ইঙ্গমার বার্গম্যান নির্মিত ‘সেভেন্থ সিল’ দেখে চলচ্চিত্রশিল্পের প্রতি তার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। ১৯৬৬ সালে দেশে ফিরে বাংলাদেশে বামপন্থি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৬৭ সালে তিনি দৈনিক অবজারভার পত্রিকায় যোগ দেন, পরে সিনিয়র এডিটর হিসেবে সাপ্তাহিক হলিডে পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন। এ সময় একজন চলচ্চিত্র সমালোচক হিসেবে নাম করেন। কিছুদিন তিনি এক্সপ্রেস সাপ্তাহিকের সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬৯ সালে ঢাকা সিনেক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দেন এবং ‘আহমেদ চৌধুরী’ ছদ্মনামে ইংরেজি খবর ও কথিকা পাঠ করেন; পাশাপাশি চলচ্চিত্র নির্মাণে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি লিবারেশন ফাইটার্স নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেন। তার নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র‘ধীরে বহে মেঘনা’ (১৯৭৩), ‘সূর্যকন্যা’(১৯৭৬), ‘সীমানা পেরিয়ে’(১৯৭৭), ‘রূপালী সৈকতে’(১৯৭৯), ‘মোহনা’(১৯৮২), ‘পরিণীতা’(১৯৮৪) ও ‘মহানায়ক’(১৯৮৫)। তিনি চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কারসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৮৯ সালের ২০ জানুয়ারি তিনি মারা যান।
দুর্নীতি দমন কমিশনার (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ বলেছেন, নির্বাচনের বছরে দুদক চোখ-কান খোলা রাখবে। আইন অনুসারে আমাদের যেটুকু অংশ, আমরা তা নিরপেক্ষভাবে পালনের চেষ্টা করব। আমরা সাধ্যমতো কাজ করছি।
মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সন্সেলনে দুদক চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান ও মো. জহুরুল হক এবং দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেনসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনের বছরে সব প্রার্থীর হলফনামায় যে সম্পদ বিবরণী থাকে তা খতিয়ে দেখবে দুদক। এ বছর চোখ-কান খোলা রাখবে। সমস্ত প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করবে। আগামী বছরে দুদকের কাজে আরো গতিশীলতা আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সোমবার রাতে বার্ষিক প্রতিবেদনটি (২০২২) রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়ে কিছু দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থান নিতে বলেছেন। দুদক স্বচ্ছতার সঙ্গে সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছে, এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবগত করা হয়েছে।
ফাঁদ মামলা কেন কমেছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা যতটুকু তথ্য পেয়েছি, সেই অনুসারে ফাঁদ মামলা হয়েছে। আমরা শতভাগ সফল হতে পারিনি। বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় গত বছর সবচেয়ে বেশি মামলা দায়ের করেছি। ওই বছর এফআরটি কম হয়েছে। মামলা বেশি হয়েছে, এফআরটি কমেছে। সাজার হার বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে দুদক ঠিকমতো কাজ করছে না, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, মামলা, তদন্ত, অনুসন্ধান সব কিছুই বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। তারা তাদের বক্তব্য দিয়েছে। আমরা তথ্য দিলাম, এগুলো সংরক্ষিত আছে। আপনারাই বিবেচনা করবেন।
এ সময় বেসিক ব্যাংক দুর্নীতি নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, মামলাগুলো চলমান। এ নিয়ে আর কোনও প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি তিনি।
সম্প্রতি আলোচিত দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের ‘অর্থপাচার’ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে দুদক চেয়ারম্যান জানান, এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই, পেলে কাজ করবে দুদক।
এদিকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, দেশের টাকা বাইরে চলে গেছে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়তো কাজ করতে পারেনি দুদক। পাচারকৃত অর্থ নিয়ে কাজ করে আরো অনেকগুলো সংস্থা। শুধু দুদকের একার কাজ নয় এটি। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি টাকা ফিরিয়ে আনার।
দুদকের অসন্তুষ্টির জায়গা কোনটি এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক বড় বড় দুর্নীতি বিশেষ করে দেশের টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। অনেক দুর্নীতিবাজ দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে, ব্যবসার আড়ালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা বিদেশে নিয়ে গেছে। এই বিষয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমাদের মাত্র একটি অপরাধের এখতিয়ার আছে। বাকি ২৬টি অপরাধের বিষয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের এখতিয়ার। কিন্তু জনগণের মনে এখনো ভ্রান্ত ধারণা দুদক কী কাজ করে। কিন্তু আমাদের অংশে আমরা কাজ করি ও শতভাগ সাফল্য রয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশেরে এক পর্যবেক্ষণের সূত্র ধরে দুদক কমিশনার জহুরুল হক বলেন, দেশে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বাড়ে নাই, বরং কমেছে। তবে আভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বন্ধ করতে পারিনি। মামলা পরিচালনা ক্ষমতা কমেছে এটা মিথ্যা কথা। কারণ মানিলন্ডারিং মামলায় ১০০ ভাগ সাফল্য, অন্যান্য মামলায় সাজার পরিমাণ ৬৭ থেকে ৭০ ভাগ আমাদের পক্ষে। আমাদের সক্ষমতা কমেছে কে এটা বলেছে। এ কথা আমি বিশ্বাস করি না।
দুদকের ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরে দুদকে জমা পড়ে ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগ। এসব যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের জন্য সংস্থাটি হাতে নিয়েছে ৯০১টি অভিযোগ, যা মোট অভিযোগের ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৯৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ অভিযোগই অনুসন্ধানের জন্য আমলে নিতে পারেনি দুদক। ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগের মধ্যে ৩ হাজার ১৫২টি অভিযোগ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়েছে। ২০২২ সালে চার্জশিট অনুমোদন হয়েছে ২২৪টি, মামলা হয়েছে ৪০৬টি, ফাঁদ মামলা হয়েছে মাত্র ৪টি।
২০২১-২২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাজা, নিষ্পত্তি ও খালাসের পরিমাণ বেড়েছে। এরমধ্যে গতবছর সংস্থাটির ৩৪৬টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এছাড়া এই সময়ে কমিশন আমলের ৬৪ দশমিক ১৭ শতাংশ ও ব্যুরো আমলের ৩৫ দশমিক ৯০ মামলার আসামির সাজা হয়েছে। ২০২২ সালের দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন দুদক চেয়ারম্যান। উপস্থাপনকালে এই তথ্য জানানো হয়।
ছেলে ইজহান মালিককে সঙ্গে নিয়ে ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবে রয়েছেন ভারতের সাবেক টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একাধিক ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে মনিদা শরীফে তোলা নিজের একাধিক ছবি পোস্ট করেন সানিয়া। ভিডিও পোস্ট করেছেন ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে।
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা প্রথম ছবিতেই দেখা যাচ্ছে সানিয়া তাকিয়ে আছেন তার ছেলের দিকে। সানিয়ার পরনে কালো রঙের বোরকা।
ছবিগুলো পোস্ট করে ক্যাপশনে সানিয়া লিখেছেন, ‘আলহামদুল্লিাহ। আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করুন।’
সানিয়ার পোস্ট করা ছবিগুলোর কয়েকটিতে পরিবারের অন্য সদস্যরাও রয়েছেন। তবে তার স্বামী পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব মালিককে কোনোটাতেই দেখা যায়নি।
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।