
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভের পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। কিন্তু অসংক্রামক রোগ গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার অন্যতম কারণ তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০১৭-এর হিসাব মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় চার কোটির কাছাকাছি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ধূমপান ও তামাক সেবন করেন।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ মৃত্যুর জন্য অসংক্রামক রোগ দায়ী। অসংক্রামক রোগীদের বেশির ভাগই তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারকারী। জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের কারণে মারা যান।
অসংক্রামক রোগের চিকিৎসা অনেক খরচসাপেক্ষ এবং দীর্ঘমেয়াদি বলে এটি স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য একটি বড় হুমকি এবং জাতীয় অর্থনীতি অগ্রসরের পথেও বড় বাধা। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপসহ অন্যান্য অসংক্রামক রোগের অন্যতম বড় কারণ। গর্ভবতী নারী ও শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে নিকোটিনের ব্যবহার নানা রকম শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। বাংলাদেশে বর্তমানে ১৫ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাকজনিত রোগ এবং ৬১ হাজারেরও বেশি শিশু পরোক্ষ ধূমপানের কারণে শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি এবং বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণ মানুষের তুলনায় তামাক ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ যেমন হৃদরোগ, স্ট্রোক, সিওপিডি ও ফুসফুসের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি ৫৭ শতাংশ বেশি এবং তামাকজনিত ক্যানসারের ঝুঁকি ১০৯ শতাংশ বেশি থাকে। অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি থেকে সাধারণ মানুষকে বাঁচানোর জন্য ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধনের কোনো বিকল্প নেই। তামাক ব্যবহারের কারণে মানুষের আয়ের একটি বড় অংশ চলে যায় তামাক কোম্পানিগুলোর পকেটে। খানা আয়-ব্যয় জরিপ ২০১৬ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, প্রতি বছর দেশের সবচেয়ে দরিদ্র ২০ শতাংশ তামাক-ব্যবহারকারী পরিবারগুলো তাদের বার্ষিক আয়ের এক-পঞ্চমাংশের বেশি (২০.৭ শতাংশ) তামাকপণ্যের পেছনে ব্যয় করে থাকে। তা ছাড়া তামাক-ব্যবহারকারী সব শ্রেণির পরিবার মিলে বছরে তামাকপণ্যের পেছনে ৯ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা ব্যয় করে থাকে। এই অর্থ তামাকপণ্যের পেছনে ব্যয় না করলে তা জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারত।
সম্প্রতি একটি ভ্রান্ত ধারণা ছড়ানো হচ্ছে যে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধনের ফলে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিষয়টি সত্য নয়। আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি এবং বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৮ সালে শুধু তামাকজনিত মৃত্যু এবং রোগের কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যয় প্রায় ৩০ হাজার ৫৬০ কোটির টাকার বেশি, যা ওই বছরের মোট জিডিপির ১ দশমিক ৪ শতাংশের সমান। অন্যদিকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপিতে তামাক খাতের অর্থনৈতিক অবদান ২০১৮-এর মূল্যে হিসাব করলে প্রায় ২২ হাজার ৯০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ, যেটি তামাকের আনুমানিক ব্যয়ের চেয়ে কম। এতে স্পষ্ট যে, শুধু ২০১৮ সালের হিসাবেই বাংলাদেশ তামাকের কারণে প্রায় ৭ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তাই আমাদের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং তামাক ব্যবহারকারীদের সংখ্যা কমানোর লক্ষ্যে তামাকপণ্যে কার্যকর করব্যবস্থা ও মূল্যবৃদ্ধি বাস্তবায়ন জরুরি। ভীতি ছড়ানো হচ্ছে ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন ও কার্যকর হলে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বেন। এ কথার কোনো যৌক্তিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া কঠিন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টোব্যাকো এটলাস ২০২০-এর তথ্য মতে, তামাকের বিকল্প হিসেবে লাল মরিচ, ধান, হাইব্রিড ভুট্টা এবং সয়াবিন চাষ অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। এরই মধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় কৃষকরা তামাকের বিকল্প হিসেবে এসব ফসলের চাষাবাদ শুরু করেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ভারতের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বিড়ি শ্রমিকদের ‘দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ’ দিয়ে থাকে। এর মাধ্যমে বিড়ি শ্রমিকরা পরে বিকল্প উপার্জনের উৎস খুঁজে পান। ২০১৯ সাল পর্যন্ত ভারত ২ হাজার বিড়ি শ্রমিককে প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত করেছে। আমাদের দেশেও যেসব ছোট ব্যবসায়ী বিড়ি বা সিগারেট বিক্রি করেন তারা শুধু তামাকজাত দ্রব্যের ওপর নির্ভরশীল নন। পাশাপাশি চা, বিস্কুট, কলা, লজেন্স, চিপসএসবও বিক্রি করে থাকেন। সুতরাং, ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের ফলে ছোট ব্যবসায়ীদের কর্মহীন হয়ে যাওয়ার তত্ত্বটিও অমূলক। বর্তমানে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার জন্যও তামাক একটি বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য মতে, বাংলাদেশে ২০২০ সালের সরকারি হিসাব অনুযায়ী ৪০ হাজার ৪৭২ হেক্টর জমিতে ৮৫ হাজার ৮৫২ টন তামাকপাতা উৎপাদিত হয়। বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, বাংলাদেশে ২০২০ সালের সরকারি হিসাব অনুযায়ী প্রতি হেক্টর জমিতে ৪ হাজার ৯০১ কেজি খাদ্যশস্যের ফলন হয়েছে। সুতরাং আমরা ২০২০ সালেই ৮৫ হাজার ৮৫২ টন তামাক পাতার পরিবর্তে ২ লাখ ১৮ হাজার ৬৪৭ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন করে আমরা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও মজবুত করতে পারতাম।
উর্বর মাটিকে কাজে লাগানোর জন্য বাংলাদেশে তামাক চাষ বরাবরই নদীভিত্তিক। বার্লিন ওয়ার্কিং গ্রুপ অব এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ২০১৮ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু প্রভাবশালী তামাক কোম্পানির উদ্যোগে ১৯৮০-এর দশকে চট্টগ্রাম অঞ্চলের মাতামুহুরী নদীর তীরের উর্বর জমিতে তামাক চাষ শুরু হয়। বর্তমানে নদীতীরবর্তী প্রায় ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা জুড়ে ওই তামাক চাষ বিস্তৃত। তামাকগাছ মাটির পুষ্টি (ফসফরাস, নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম) নিঃশেষ করে দিয়ে মাটির উর্বরতা শক্তি হ্রাস করে দেয়। তা ছাড়া, প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শুধু ২০০৯ সালেই মাতামুহুরী নদীর তীরে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষে প্রায় ২ হাজার টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছিল, যা পরিবেশের জন্য বিরাট হুমকি। বর্তমানে প্রচলিত ধূমপান ও তামাক পণ্যসমূহের বাইরে আধুনিক কিছু তামাকপণ্য বিশেষ করে ই-সিগারেটের ব্যবহার আমাদের গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ই-সিগারেটে ব্যবহৃত তরল বাষ্পীভূত হয়, যা ব্যবহারকারী প্রশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করে। এই তরলগুলোতে নিকোটিন ছাড়াও ফ্লেভার এবং অন্যান্য রাসায়নিক থাকে, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এরই মধ্যে ভারত, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের ৩০টিরও বেশি দেশ ই-সিগারেটকে নিষিদ্ধ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের তথ্য মতে, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত, যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্য থেকে ই-সিগারেট বা ভ্যাপিং সংশ্লিষ্ট ফুসফুস রোগের ২ হাজার ৮০৭টি ঘটনা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, যার মধ্যে ২৭টি রাজ্যে ৬০ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে।
চটকদার বিজ্ঞাপন ও মোড়ক শিশু-কিশোরদের ই-সিগারেটের প্রতি আগ্রহী করে তোলে, যা পরে ধূমপানে আসক্ত করে। তামাক কোম্পানিগুলোর আকর্ষণীয় বাজারজাতকরণ কৌশল এবং কোম্পানিগুলোর ই-সিগারেট ব্যবসায় সম্প্রসারণ একটি গভীর উদ্বেগের বিষয়। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০১৭ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ই-সিগারেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখনো সীমিত হলেও অনলাইন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এর প্রচারণার ফলে ভবিষ্যতে এ সংখ্যা বহু গুণে বেড়ে যাওয়া, বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের মধ্যে এটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রস্তাবিত ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) সংশোধিত আইনে রয়েছে উন্মুক্ত স্থানে (পাবলিক প্লেস) ধূমপান নিষিদ্ধ করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি বন্ধ করা, ই-সিগারেট বাজারজাত বন্ধ করা, তামাকজাত পণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর আকার বাড়ানো, সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির (সিএসআর) নামে তামাক কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করা এবং তামাকজাত দ্রব্য বিক্রির স্থানে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শন বন্ধ করা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। শুধু ধূমপান নয়, ধোঁয়াবিহীন তামাক জর্দা, গুল, সাদাপাতার ক্ষেত্রেও একই নীতি অনুসরণ করতে হবে।
নিউজিল্যান্ড খুব সম্প্রতি একটি ঐতিহাসিক ধূমপানবিরোধী বিল পাস করেছে, যা ১ জানুয়ারি ২০০৯ বা তার পরে জন্মগ্রহণকারীদের কাছে তামাক বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। এই নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য হলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধূমপান থেকে বিরত রাখা এবং ২০২৫ সালের মধ্যে দেশকে ধূমপানমুক্ত করা। তা ছাড়া, নতুন আইনটি ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ খুচরা তামাক বিক্রেতাদের সংখ্যা দশ ভাগের এক ভাগে নামিয়ে আনবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাক নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা মিলে আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে যাচ্ছি। তা ছাড়া, বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের অন্যতম সিগনেটরি দেশ এবং আমরা তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে বদ্ধপরিকর। বিদ্যমান ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে যুগোপযোগী করার মাধ্যমে তামাকমুক্ত বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে বেগবান করা আজ সময়ের দাবি।
লেখক: চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েল-বিং এবং প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন
ধান থেকে চিড়া হয়। চিড়া বানানোর বিশেষ প্রক্রিয়া আছে। এ ক্ষেত্রে এমনভাবে চাপ দেওয়া হয় যাতে চাল ভেঙে গুঁড়ো না হয়ে বরং চ্যাপ্টা হয়ে যায়। অর্থনীতিতেও এমন কিছু চাপ আছে যাতে ক্রেতা বা ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা একেবারে নিঃশেষ হবে না কিন্তু এমন পরিস্থিতি দাঁড়াবে যে সে জীবন্মৃত হয়ে টিকে থাকবে। একে চিঁড়েচ্যাপ্টা দশা বলা যেতে পারে। ক্ষমতাসীনরা বলবেন কই, না খেয়ে মানুষ তো মরেনি। আর সাধারণ মানুষ ভাববেন এভাবে বেঁচে থাকার কষ্ট যদি আপনারা বুঝতেন?
অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে পাল্টাপাল্টি আলোচনা এখন আর শুধু অ্যাকাডেমিক আলোচনায় সীমাবদ্ধ থাকছে না। এখন সাধারণ মানুষও জানতে চাইছেন এবং জানতে পারছেন কী হচ্ছে ব্যাংকগুলোতে, ডলারের রিজার্ভ কত, খেলাপি ঋণ কত, কে বা কারা ঋণ নিচ্ছেন বিপুল পরিমাণে আর তার প্রভাব কী পড়ছে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে। কিন্তু কী করবেন তারা? না জানাটা অজ্ঞতা আর জেনেও কিছু করতে না পারাটা তাদের অসহায়ত্ব। তার পরও জানতে হয় এবং তারা সেটা জানছেন পত্রিকা মারফত। জ্বালানি ও অন্যান্য পণ্য আমদানি করতে গিয়ে গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলারের চাহিদা আর দাম দুটোই বেড়েছে। ডলারের দাম ৮৬ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১০৬ টাকা। এতে ২০২২ সালে ডলারপ্রতি দাম বেড়েছে প্রায় ২০ টাকা। এর ফলে মেটেনি ডলার-সংকট, বরং বেড়ে গেছে টাকার চাহিদা। ব্যাংকগুলো টাকা দিয়ে ডলার কিনে আমদানি বিল পরিশোধ করেছে আর ডলার কিনতে গিয়ে অনেক ব্যাংক টাকার সংকটে পড়ে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুলাই-নভেম্বর সময়ে আমদানি ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। ২০২১ সালের একই সময়ে আমদানি ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা। ফলে আমদানি খরচও বেড়েছে ৪.৩৫ শতাংশ। অন্যদিকে গত জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৭৩১ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০.৫৮ শতাংশ বেশি। আর জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে প্রবাসী আয় এসেছে ১ হাজার ৪৯ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২.৪৮ শতাংশ বেশি। যদিও গত দুই বছরে ১৮ লাখ মানুষ বিদেশে গেছেন, যাদের ৭০ শতাংশই গেছেন সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে। কিন্তু ওইসব দেশ থেকে বৈধ উপায়ে প্রবাসী আয় তেমন বাড়েনি। এসব সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ (রিজার্ভ) কমে ৩২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১১২ কোটি ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ২৫৭ কোটি ডলার। এর আগে ২০২১ সালের আগস্ট মাসে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে রিজার্ভ ৩ হাজার ২৫৭ কোটি ডলার হলেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবে রিজার্ভের ৮০০ কোটি ডলার ব্যবহারযোগ্য নয়। ফলে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ২ হাজার ৪৫৭ কোটি ডলার। গত নভেম্বর মাসে আকুতে ১৩৫ কোটি ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে ৩৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমেছিল। আমদানি দায় মেটাতে কমছে রিজার্ভ। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে আন্ত-আঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এশিয়ার ৯টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানি-রপ্তানি হয়, তা দুই মাস পরপর নিষ্পত্তি হয়। আকুর সদস্য দেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ। অর্থনৈতিক সংকটে দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় শ্রীলঙ্কা এই তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।
দেশের অভ্যন্তরে ব্যাংকগুলোর আমানত কমছে। গত ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোতে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৫.৪৪ শতাংশ। আর ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩.৮২ শতাংশ। অর্থাৎ দ্বিগুণের বেশি ঋণ বিতরণ করছে ব্যাংকগুলো। এতে ব্যাংকগুলোর তারল্য ব্যবস্থাপনায় অসামঞ্জস্য দেখা দিয়েছে। আমানতের সুদ মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম বলে অনেকেই ব্যাংকে টাকা রাখছে না। এর মধ্যে ইসলামি নামের পাঁচ ব্যাংকের অনিয়ম আলোচনায় আসায় গ্রাহকদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক ছড়িয়েছে। আবার অনেকে খরচ মেটাতে সঞ্চয় ভেঙে ফেলছেন। মূল্যস্ফীতির কারণে নতুন করে সঞ্চয়ও কমে এসেছে। গত ডিসেম্বরে শুধু একটি ইসলামি নামের ব্যাংকেরই আমানত কমেছে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা। ফলে সার্বিকভাবে আমানত কমে গেছে। গত অক্টোবরে আমানতের পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ৯০ হাজার ৪৩ কোটি টাকা, নভেম্বরে যা ৩ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা। পাশাপাশি বেশি দামে ডলার কেনা, রেমিট্যান্স কেনা, রপ্তানি বিল নগদায়নে গ্রাহকদের বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। আবার ব্যবসা মন্দার কথা বলে ব্যবসায়ীরাও ঋণ পরিশোধ করতে গড়িমসি করছেন। ফলে ব্যাংকগুলোর তারল্যের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। গত বছরে (২০২২) বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে সব মিলিয়ে ১ হাজার ২৬১ কোটি ডলার বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই সময় প্রতি ডলার ৯৮ টাকা ধরলে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ২৩ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলো থেকে এই পরিমাণ টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভোল্টে চলে যাওয়াতেও অর্থসংকট বেড়েছে। এতে কিছু ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফলে মাঝেমধ্যেই সমস্যা তৈরি হচ্ছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাহিদামতো নগদ জমা (সিআরআর-ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও) রাখতে পারছে না কিছু ব্যাংক। ইসলামি নামের পাঁচ ব্যাংকের পাশাপাশি গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংক, বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকও চাহিদামতো সিআরআর রাখতে পারেনি। অন্যদিকে গত ৬ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৬৫ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা ধার করেছে বাংলাদেশ সরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া এ ঋণের টাকার অর্ধেকের মতো ব্যয় হয়েছে সরকারের বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে নেওয়া ৩৩ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকার ঋণ শোধ করতে। এর ফলে বেসরকারি ব্যাংকের কাছে নেওয়া ঋণ কমলেও বেড়ে গেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ঋণের পরিমাণ। আমদানি, রপ্তানি, ব্যাংকের তারল্য, ঋণ ব্যবস্থাপনা, ব্যাংকের আমানত সবকিছুর প্রভাব পড়ছে অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে। সামগ্রিক বিবেচনায় বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৫.২ শতাংশ হতে পারেএমন পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্ট’ প্রতিবেদনে জিডিপি প্রবৃদ্ধির এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এই প্রতিবেদনে শুধু বাংলাদেশ নয় অন্যান্য দেশ সম্পর্কেও পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। যেমন, ভারতের প্রবৃদ্ধি ৬.৯ শতাংশ, পাকিস্তানের ২ শতাংশ, নেপালে ৫.১ শতাংশ, ভুটানে ৪.১ শতাংশ, মালদ্বীপে ৮.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে বলে তারা মনে করছেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিষয়ে নানা ধরনের বিশ্লেষণ করে থাকে বিশ্বব্যাংক। ডলার-সংকট ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের বিশ্লেষণ হলো, ২০২২ সালের জুন মাস থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ১৮ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে ৮০০ কোটি ডলার। এ কারণেই বৈদেশিক মুদ্রার মজুদকে সহায়তা করতে এবং বিদেশি মুদ্রার চাহিদার চাপ কমাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণসহায়তা চেয়েছে, যা পাওয়া যাবে সাত কিস্তিতে এবং সুদের হার হবে ২ দশমিক ২ শতাংশ। এই ঋণ এখনো আলোচনার পর্যায়ে আছে, তবে শর্ত পূরণ করা শুরু করে দিয়েছে বাংলাদেশ।
ওপরের স্তরে এসব আলোচনা মানুষকে স্পর্শ না করলেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে কিছুদিন ধরেই। বিশেষ করে এক বছর ধরে মূল্যস্ফীতি লাগামছাড়া। ২০২১ সালের নভেম্বরে জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে বিপুল পরিমাণ বাড়ানোর পর থেকে মূল্যস্ফীতি যেন মাত্রা ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, ২০২২ সালের আগস্টে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯.৮৬ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে তা কিছুটা কমে ৯.১ শতাংশ হলেও এই দুই মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে ছিল। বিবিএসের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২২ সালের আগস্টে গত ১১ বছর ৩ মাসের (১৩৫ মাস) মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ ১০.২০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল। ২০১১ সালের মে মাসের পর মূল্যস্ফীতি আর কখনো ৯ শতাংশের বেশি হয়নি। উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এখন অর্থনীতির বড় চ্যালেঞ্জ হওয়া দরকার। কিন্তু যারা নীতিনির্ধারক তারা কোনো পরামর্শ কানে তুলছেন বলে মনে হচ্ছে না। বরং বিরোধীদের বিরোধিতা করতে তাদের সময় ও শক্তি ব্যয় করছেন।
এরই মধ্যে বছরের শুরুতেই নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে সরকার। এরপর বাড়াল গ্যাসের দাম। এত দিন দাম বাড়ানোর জন্য গণশুনানির যে নামকাওয়াস্তে পদ্ধতি ছিল এবার সেটাও আর রক্ষা করা হলো না। বিদ্যুৎ খাতে কী এমন পরিস্থিতি হয়েছিল যে এত দ্রুত দাম না বাড়ালে চলত না? এর ফলে কী হলো? এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের তো তাহলে আর কিছু করার থাকল না। সংগত কারণে প্রশ্ন উঠতেই পারে, তাহলে এত কষ্টের টাকা খরচ করে কমিশন নামক প্রতিষ্ঠান রাখার কী প্রয়োজন? শুনানি হলে অন্তত কেউ কেউ প্রশ্ন তুলতে পারতেন, দুর্নীতি-অনিয়ম ও কোম্পানির অদক্ষতার বিষয়টা আলোচনা এবং জবাবদিহির মধ্যে আসতে পারত। ফলে এটাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার মানে একটাই, তা হলো যা সিদ্ধান্ত নেব তাই বাস্তবায়ন করব। আর নির্বাহী আদেশে দাম বাড়ানোর পদ্ধতি চালু হলে বাজারে মনোপলি (একচেটিয়া) তৈরি হবে। এতে লাভবান হবে কোম্পানিগুলো, তারা অতিরিক্ত মুনাফা তুলে নেবে। আর কোম্পানিগুলোর জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতা কমবে, অদক্ষতা ও অপচয় বাড়বে। আর মূল্যবৃদ্ধির চাপ বহন করে জনগণ চ্যাপ্টা হতেই থাকবে।
লেখক: রাজনৈতিক সংগঠক ও কলামিস্ট
আমরা জানি ২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। এই কারিকুলামের নতুন বই ৬২টি বিদ্যালয়ে পাইলটিং করা হয়েছিল। আশা ছিল আমরা এই পাইলটিংয়ের ফল জানতে পারব, ফিডব্যাক দিতে পারব; কিন্তু সেসব কিছুই হয়নি। সব বিদ্যালয়ে এখনো বই পৌঁছায়নি। ইতিমধ্যে পাঠ্যবইয়ে একের পর এক ভুল বের হতে শুরু করেছে, কিছু কিছু ভুল মারাত্মক এবং কিছু কাজ রীতিমতো অপরাধের পর্যায়ে পড়ার মতো। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, পুস্তক প্রণয়নে অযত্ন ছিল। বই লেখা ও সম্পাদনায় অসতর্ক ছিলেন লেখক-সম্পাদকরা। আর জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তদারকির অভাব ছিল। ফলে বইয়ের লেখক, সম্পাদক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এগুলোর দায় এড়াতে পারেন না।
নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত বেশিরভাগ মূল্যায়ন হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে। অর্থাৎ বিষয় শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সারা বছর ধরে অ্যাসাইনমেন্টভিত্তিক কাজ, প্রকল্পভিত্তিক শিখনচর্চা, খেলাধুলা, গ্রুপ ওয়ার্ক, কুইজ, পোস্টার প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করাবেন এবং তাদের কাজের মূল্যায়ন করবেন। মূল্যায়ন মানে প্রচলিত পরীক্ষা নয়, নম্বর নয়, গ্রেডিং নয়। নতুন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী কতটুকু যোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছে সে সম্পর্কে শিক্ষক মন্তব্য করবেন। মন্তব্যগুলো হবে খুব ভালো, ভালো, সন্তোষজনক এবং আরও শেখা প্রয়োজনএ ধরনের। ফলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের শ্রেণিতে প্রথম বা দ্বিতীয় হওয়া বা নম্বর ও গ্রেডিংয়ের পেছনে ছোটার যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা সেটি থাকবে না। এখানে শিক্ষকের ভূমিকাই হবে মুখ্য। তাদের বহুমাত্রিক সৃজনশীল, দক্ষ, যোগ্য, অভিজ্ঞ ও মানবিক গুণসম্পন্ন আদর্শ শিক্ষক হতে হবে। এ কথাগুলো খুবই চমৎকার, কিন্তু বাস্তব কী বলে?
সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ের প্রথম অধ্যায়ের তৃতীয় পৃষ্ঠার শুরুতে বলা হয়েছে, জীববৈচিত্র্য কী। পাঠ্যপুস্তকটিতে লেখা হয়েছে, জীববৈচিত্র্য বা বায়োডাইভারসিটি শব্দ দ্বারা পৃথিবীতে জীবনের বিপুল বৈচিত্র্য বর্ণনা করা হয়। হুবহু ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ডট ওআরজি (https://education. nationalgeographic. org/resource/biodiversity) থেকে এখানে তথ্যগুলো উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিদেশি ভাষা থেকে ভাষান্তর করে লেখা পাঠ্যপুস্তক অনেক রয়েছে। তবে প্রাপ্তি স্বীকার না করে হুবহু মেরে দেওয়া একাডেমিক ভাষায় ‘চৌর্যবৃত্তি’ বা প্লেইজারিজম। তাহলে প্রথম প্যারাগ্রাফে নতুন কারিকুলামের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে যে কথাগুলো বলা হয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে নতুন বইয়ের কী মিল রইল? পঞ্চম পাতায় ‘জীবের পারস্পরিক সম্পর্ক’ অনুচ্ছেদে; নবম পৃষ্ঠায় ‘জীববৈচিত্র্যের ঝুঁকি ও প্রতিকার’ শীর্ষক অনুচ্ছেদেও হুবহু জিওগ্রাফিক থেকে অনুবাদ করা হয়েছে। কোনো সূত্রের উল্লেখ নেই। মনে হচ্ছে লেখকগণ নিজেরাই, জরিপ করে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। জাতীয় কারিকুলামের ক্ষেত্রে কি আমরা এ ধরনের কাজ করতে পারি? এ ধরনের বহু নকল, ভুল ও অসংগতি রয়েছে বইয়ে।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এডুকেশনাল সাইট থেকে নিয়ে হুবহু অনুবাদ করে ব্যবহার করার অভিযোগ স্বীকার করেছেন বইটির রচনা ও সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত থাকা অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক ড. হাসিনা খান। জাফর ইকবাল বলেছেন, প্লেইজারিজমের জন্য তারা খুবই লজ্জিত, খুবই বিব্রত। আগামীতে ভুল সংশোধন করবেন বলে তিনি সংকল্পবদ্ধ। তিনি এই অংশটি নিজে লেখেননি, তবে সম্পাদক হিসেবে তার ওপরই দায়িত্ব বর্তায়। তিনি তার দায় স্বীকার করেছেন, যা প্রশংসনীয়। অন্যান্য বইয়েও তো শত শত ভুল বের হচ্ছে। কয়েক দিন আগে দেখলাম বিভিন্ন বইয়ের লেখকরা এনসিটিবির নতুন বইয়ে কে কতটা অবদান রেখেছেন, কে কতটা চ্যাপ্টার লিখেছেন ইত্যাদি প্রকাশ করে ক্রেডিট নেওয়ায় কার্পণ্য করেননি। সব বিষয়ের বইয়েই কিছু কিছু বিষয় ও চ্যাপ্টার অনেক ভালো আছে, কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় হতাশাজনক অবস্থা। এর দায় কি লেখকরা নেবেন?
বিজ্ঞান একটি আনন্দের বিষয়, কনসেপ্ট পরিষ্কার থাকার বিষয়। কিন্তু আমরা অন্য বিষয়ের মতো নকল আর মুখস্থের মতো বিষয় দিয়ে এত বাহবা নেওয়ার চেষ্টা শুরু করেছিলাম যে, এর চেয়ে উৎকৃষ্ট কারিকুলাম আর কোথাও নেই। আর একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, আমাদের দেশের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ কিন্তু এসব বই দেখেননি এবং কোনো কমেন্টও করেননি। সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক ও গবেষক বাংলাদেশের নতুন বই নিয়ে কমেন্ট করেছেন। আমি যে উদাহরণ দিলাম সেটি তাদেরই বের করা বিষয়। অথচ আমাদের দেশের শিক্ষকগণ খবরই রাখেন না যে, দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় এতকিছু ঘটে যাচ্ছে।
চীনের দিকে যদি একটু তাকাই তাহলে দেখা যায় যে, বিজ্ঞান শিক্ষা ও সক্ষমতায় সেখানে নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছে। বিজ্ঞানে চীনের এই আধিপত্য বিশ্বে ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তন করে ফেলে কিনা, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে চীন সরকার বিগত বছরগুলোতে যেসব নীতি নিয়েছে, তারই ফল দেশটির আজকের এই সাফল্য। গত তিন দশক চীন সরকার দেশটির গবেষণা সক্ষমতা বাড়াতে অনেক গুণ বিনিয়োগ বাড়ায়। এ সময়ে চীন শিক্ষার্থী ও গবেষকদের পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে পাঠায়। ব্যবসায়ীদেরও হাই-টেক পণ্য উৎপাদনে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত চীন ৫২ লাখ শিক্ষার্থী ও বিশেষজ্ঞকে পড়াশোনার জন্য বাইরে পাঠিয়েছে। এদের বেশিরভাগই বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিদ্যায় পড়াশোনা করেছেন। তারা বেশিরভাগই দেশে ফিরে বিজ্ঞান গবেষণাগার ও হাই-টেক কোম্পানিগুলোতে কাজ করছেন। আর আমরা কপি পেস্ট করে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান শেখানোর চিন্তা করছি। উচ্চ গুণমানসম্পন্ন বিজ্ঞান সৃষ্টির ক্ষেত্রে চীন বর্তমান বিশ্বে অনেক দেশেরই ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে সেরা বিজ্ঞান সাময়িকীগুলোতে অন্য যেকোনো দেশের গবেষকদের তুলনায় বেশি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করছেন চীন।
গুগল আমাদের বাংলা ভাষাকে এখনো সঠিকভাবে ভাষান্তর করার সক্ষমতা অর্জন করেনি। ভুলভাল ইংরেজিতে বাংলার ভাষান্তর হয়যা শিক্ষার্থীদের ভুল বার্তা দেয়, ভুল শেখার সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। এসব কারণে এনসিটিবির কোনো ক্ষতি হয় না, ক্ষতি হয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের; যারা ভবিষ্যতে দেশকে নেতৃত্ব দেবে। তারপরও আমাদের লেখকরা এটি কেন করলেন? তারা যে সিনসিয়ার নন সেটি প্রকাশ পেল। তারা জানেন যে, বাংলাদেশের কোনো শিক্ষক এসব পড়বেন না, এসব নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করবেন না, অতএব কোনো ঝামেলা নেই। তারা বাংলাদেশের শিক্ষকদের সম্পর্কে ঠিকই চিন্তা করেছিলেন। কিন্তু আমাদের দেশেরই কিছু শিক্ষক ও গবেষক তো আছেন যারা বিদেশের মাটিতে নিজেদের সৃজনশীলতা ও গবেষণাকর্ম প্রদর্শন করে ওইসব দেশের শিক্ষা ও বিজ্ঞানে প্রভূত অবদান রেখে চলেছেন। কারণ শিক্ষা নিয়ে সেখানে রাজনীতি অনেক কম, কিংবা নেই-ই। তারা তো প্রকৃত গবেষক, বিজ্ঞান নিয়ে কোথায় কী হচ্ছে, তারা তো একটু ঘেঁটে দেখবেনই। আর তাদের দেখার কারণে হয়েছে ঝামেলাটা। এনসিটিবি এ পরিস্থিতিতে একটি সুন্দর বিবৃতি দেওয়া ছাড়া আর কী করবে? দেখার বিষয়, সেটিও কোথাও থেকে কপি করা হয় কিনা!
লেখক : শিক্ষাবিশেষজ্ঞ ও গবেষক
দেশে ক্রসফায়ার কমলেও পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগ বেড়েছে। ২০১৩ সালে ‘নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ)’ আইন করে সরকার। তবে এর প্রয়োগ দেখা যায় না খুব একটা। মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা বলছেন, গত ছয় বছরে এ আইনে কারও সাজা হয়েছেএমন নজির নেই। তবে ১৭টি মামলা বিচারাধীন বলে জানা গেছে। ২০২২ সালে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এবং পুলিশের হেফাজতে ১৯ জনের প্রাণ গেছে বলে জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। এর মধ্যে র্যাব সদস্যদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ গেছে চারজনের। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। আসক বলছে, হেফাজতে মৃত্যুর মধ্যে গ্রেপ্তারের পর শারীরিক নির্যাতনে চারজন, হার্ট অ্যাটাকে একজন, গ্রেপ্তারের আগে শারীরিক নির্যাতনে চারজন, থানা হেফাজতে আত্মহত্যা করেছেন দুজন এবং অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন চারজন।
সর্বশেষ হেফাজতে মৃত্যু নিয়ে শুক্রবার দেশ রূপান্তরে ‘পুলিশের তৎপরতা, আতঙ্কে পরিবার’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গাজীপুরে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ ওঠা রবিউল ইসলামের মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়েছে। এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়েছেএমন তথ্য দিয়ে গত বুধবার রাতে গাজীপুরের বাসন থানায় মামলা নথিভুক্ত করেছে পুলিশ। মামলার বাদী দেখানো হয়েছে মারা যাওয়া রবিউল ইসলামের ছোট ভাই মো. মহিদুল ইসলামকে। তবে এজাহারে থাকা তার স্বাক্ষর নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। পুলিশের ভাষ্যের সঙ্গে নিহতের স্বজন ও প্রতিবেশীদের বক্তব্যের কোনো মিল নেই। উপরন্তু ‘হেফাজতে মৃত্যুর’ মতো অভিযোগ ওঠার পরও ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিয়ে যেতে দেওয়ার ঘটনা স্বাভাবিক নয়। স্বজনদের অভিযোগ, অনলাইন জুয়া খেলা ও মাদক কারবারের অভিযোগে সুতা ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামকে বাসা থেকে গত শনিবার তুলে নিয়ে যায় বাসন থানার এএসআই মাহবুবুর রহমান। প্রথমে রবিউলের কাছে এক লাখ টাকা দাবি করা হয়। পরে পরিবারের লোকজন পুলিশকে ৩৫ হাজার টাকা দেয়। এরপর আরও ৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। কিন্তু এই টাকা দিতে না পারায় চার দিন রবিউলকে থানায় আটক রাখা হয়। পরে মঙ্গলবার পুলিশের লোকজন রবিউলের স্ত্রী নূপুর আক্তারের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়। এরপর মধ্যরাতে থানা থেকে নূপুরকে জানানো হয়, রবিউল ইসলাম সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। রবিউলের পরিবার কিংবা এলাকাবাসী পুলিশের এই ভাষ্য মেনে নেয়নি। স্বজন ও প্রতিবেশীরা বলছেন, রবিউলের স্বজনরা অজানা আতঙ্কে ভুগছেন। তারা পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করে নতুন করে আর ঝামেলায় পড়তে চান না। বিপদাপন্ন মানুষের এই ‘ঝামেলায় পড়ার’ আশঙ্কা জন্মানো মনস্তত্ত্ব ও তা এড়াতে চাওয়ার মধ্যে যে অসহায়ত্ত সেখানেই পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জনগণের বন্ধু হয়ে উঠতে পারা, না-পারার সত্য লুকানো রয়েছে। পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নানা অর্জন, শুভ উদ্যোগ থাকার পরও ‘বাঘে ছুঁলে ১৮ ঘা আর পুলিশে ছুঁলে ৩৬ ঘা’এই প্রবচন মানুষ কেন ভুলতে পারছে না; বরং নানা ঘটনায় তা আরও বেশি স্মরণযোগ্য হয়ে থাকছে সেটা ভাবতে হবে। রবিউলের মৃত্যুর ঘটনায় জিএমপির পক্ষ থেকে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি তদন্ত শুরু করেছে। আশা করি, নিহতের পরিবারের স্বজন, এলাকাবাসীর অভিযোগসহ সবকিছু তদন্তের আওতায় থাকবে।
প্রত্যেক মানুষেরই আইনি সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। বাংলাদেশে মানবাধিকারের যে চিত্র তাতে দেশের ভাবমূর্তির প্রশ্ন উঠছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে কারও মৃত্যু কিংবা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। এ ধরনের ঘটনা রোধে যে আইনটি করা হয়েছিল সেটির প্রয়োগ ও বাস্তবায়নে একধরনের ঢিলেমি, গাফিলতি ও অনীহা রয়েছে সংশ্লিষ্টদের। এমনকি পুলিশ বাহিনী বিভিন্ন সময়ে এই আইনের প্রবল বিরোধিতা করেছে। গত সাত বছরে দু-একটি মামলা করা ছাড়া এই আইনে কারও সাজা হয়েছে, এমন জানা নেই। কিছু ক্ষেত্রে শুধু তদন্ত করেই দায় সারা হয়। কিন্তু পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠলে পুলিশ নিজেরাই তদন্ত করে। তাতে ফল যা হওয়ার তা-ই হয়। এই পরিস্থিতি বদলাতে হলে এসব অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা দরকার বলে মত দিয়ে আসছে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলো। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো কি এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে নিজেদের জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে? সরকার কি পুলিশি নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নেবে?
নাট্যকার, চিত্রসমালোচক ও শিক্ষাবিদ সাঈদ আহমদের জন্ম ঢাকায়, ১৯৩১ সালের ১ জানুয়ারি। তার বাবার নাম মির্জা এফ মোহাম্মদ ও মা জামিলা খাতুন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে ১৯৫৪ সালে স্নাতকোত্তর এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস থেকে ১৯৫৬ সালে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি লাভ করেন। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নানা বিভাগে কাজ করেছেন। আধুনিক সংগীতের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ‘সাঈদ আহমদ ও সম্প্রদায়’ নামে একটি দল গঠন করেন, যে দলটি রেডিও স্টেশন থেকে অর্কেস্ট্রা পরিবেশন করত। লন্ডনে পড়ার সময় তিনি প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওয়েস্টার্ন মিউজিক শেখেন। বিবিসিতে খণ্ডকালীন সেতার ও অর্কেস্ট্রা বাজাতেন উর্দু সার্ভিস, বাংলা সার্ভিস, শ্রীলঙ্কা সার্ভিসে। তাকে বাংলা ‘থিয়েটার অব দি অ্যাবসার্ড’ নাট্যধারার পুরোধা বলা হয়। ১৯৮২ সালে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘বিশ্বনাটক’ অনুষ্ঠান করতেন। ‘দ্য থিং’, ‘কালবেলা’, ‘তৃষ্ণায়’, ‘মাইলপোস্ট’, ‘প্রতিদিন একদিন’ তার উল্লেখযোগ্য নাটক। তিনি জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইউনিভার্সিটি ও ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটির অতিথি অধ্যাপক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত ও নাট্যকলা বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে ‘বাংলাদেশের সুর স্রষ্টারা’, ‘জীবনের সাতরং’ ও ‘ঢাকা আমার ঢাকা’ উল্লেখযোগ্য। বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদকসহ নানা পুরস্কারে তিনি ভূষিত হয়েছেন। ২০১০ সালের ২১ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনীতিতে এমন কিছু চরিত্র আছে, যারা সব সময়ই ক্ষমতার কাছাকাছি থাকে, ক্ষেত্র বিশেষে এরা নীতিনির্ধারকও হয়ে ওঠে। ক্ষমতার মধু আহরণে এরা সামনের কাতারে থাকলেও, পালাবদলের আগেই ওরা রূপ পাল্টাতে শুরু করে! ওদের কাছে কি কোনো বার্তা আছে বদলে যাওয়া বা বদলে ফেলার বার্তা?
বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে প্রবাসের মাটিতে কেমন যেন একটা তোড়জোড় শুরু হয়েছে। হতাশা, অনিশ্চয়তা নিয়ে যারা পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, এরাও যেন দৃশ্যপটে আসতে শুরু করেছে। রূপ পাল্টে যারা আওয়ামী সেজে এতদিন চারদিক দাবড়িয়ে বেড়িয়েছেন, খোলস পাল্টাতে এদের কেউ কেউ প্রস্তুতি শুরু করেছেন, প্রবাসের মাটিতে এরা রূপ পাল্টিয়ে ইতিমধ্যে নতুন রূপ ধারণ করতে শুরু করেছেন। এরা কি তাহলে নতুন কোনো আগমনী বার্তায় উজ্জীবিত হয়ে উঠছেন? কী সেই বার্তা? গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিবর্তনের বার্তা দেওয়ার মালিক জনগণ, আর তার একমাত্র উপায় গণভোট। এখনো সেই গণভোটের বাকি এক বছর, তাহলে বসন্তের কোকিলদের মাঝে এত দৌড়ঝাঁপ কেন?
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দাতা নামের লগ্নিকারকদের দারুণ প্রভাব। সরকার ও রাজনীতিতে আড়ালে-আবডালে এরা নানাভাবে কলকাঠি নাড়ে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, উন্নয়ন অংশীদার বা দাতা পরিচয়ে এরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির নানারকম কর্মকা- চালায়। সোজাসাপ্টা ভাষায়, আমরা যাদের ডিপ্লোমেট বা কূটনীতিক নামে চিনি, ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী এদের কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ কর্মকা- নিয়ে সরব হওয়ার সুযোগ নেই। তবুও দরিদ্রতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের নীতিনির্ধারণী বিষয় নিয়েও এরা তৎপর হয়ে ওঠে। মাঝেমধ্যে মানবাধিকারের নামে চাপাচাপির বার্তা চালায়।
প্রকৃত অর্থে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে, নিষেধাজ্ঞার খড়্গ আসতেই পারে। পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট জাতির শ্রেষ্ঠসন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যখন সপরিবারে নির্মম-নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হলো, তাদের মানবাধিকার তখন জাগ্রত হলো না!
একুশে আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আইভী রহমানসহ যারা নিহত হলেন, তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্বকে বরণ করে নিতে হলো, পার্লামেন্টারিয়ান আহসান উল্লাহ মাস্টার, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কূটনীতিক, অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া নিহত হলেন, তখনো এদের মানবাধিকার জাগ্রত হলো না! সাঈদীকে চাঁদ দেখার গুজব রটিয়ে শত শত মানুষকে অগ্নিদগ্ধ করা হলো, ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে অঙ্গার হয়ে অসার দেহ পড়ে থাকল, তখনো তাদের মানবাধিকার জাগ্রত হলো না!
একুশ বছরে বিকৃত ইতিহাস জেনে গড়ে উঠে একটি প্রজন্ম। এই প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস-ই সত্যরূপে আবির্ভূত হয়। গত এক যুগে একাত্তরের পরাজিত আদর্শের অনুসারী একদল সুবিধাবাদী রঙ পাল্টিয়ে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। এই ধারাটি শুধু দেশে নয়, প্রবাসের মাটিতেও সক্রিয় ছিল। কূটনীতিকদের লম্ফঝম্ফ দেখে এরা আবারও রূপ পাল্টাতে শুরু করেছে। এতদিন ‘জয়বাংলা’ বলে যারা হুঙ্কার ছেড়েছিল, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানেও বঙ্গবন্ধুর নাম নিতে তাদের আপত্তি!
অগ্নিঝরা মার্চ আর বিজয়ের ডিসেম্বর! এ মাস দুটি বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম অর্জনের মাস। তবুও এ মাসগুলোতেই যেন কিছু মানুষের হৃদয়ের দহন বেড়ে যায়! যন্ত্রণায় এদের রক্ত টগবগিয়ে ওঠে। অন্তরাত্মাকে শীতল করতে এরা প্রচন্ড প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে। এর অন্তরালে কাজ করে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার এক সুদূরপ্রসারী হীন প্রচেষ্টা। এই ঘৃণ্য অপশক্তির প্রথম টার্গেট ছিল ১৫ আগস্ট।
একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস আমাদের জাতীয় জীবনের গৌরবোজ্জ্বল দিন। পনেরো আগস্ট, ৩ নভেম্বর বাঙালির ইতিহাসের কলঙ্কময় দিবস। প্রবাসে থাকলেও এসব দিবসে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পারি না। ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধ থেকেই নানা অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করি। ২০২২-এর বিজয় দিবসে জাতির শ্রেষ্ঠসন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। আয়োজকদের মতে, প্রবাসের নতুন প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকশিত করাই তাদের লক্ষ্য ছিল। উপস্থিত বারোজন সংবর্ধিত মুক্তিযোদ্ধার একজন বাদে কেউই বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কথা বলেননি! এ মহান নেতার নামটিও উচ্চারণ করেননি। সুকৌশলে বঙ্গবন্ধুকে এড়িয়ে চলার এমন হীন চেষ্টা দেখে বিস্মিত হয়েছি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করেছেন, বিশ্বব্যাংককে অবজ্ঞা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করেছেন, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, ফ্লাইওভারের মতো বড় বড় প্রকল্পের মাধ্যমে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে রাত-দিন কাজ করছেন, তবুও চারদিকে এত ষড়যন্ত্র কেন?
ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির নায়ক শাসক দলের ব্যাপক ক্ষমতাবান নেতাদের মুহূর্তে কপর্দকহীন করে শেখ হাসিনা তাদের আইনের মুখোমুখি করেছেন, ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটালাইজেশনের প্রক্রিয়ায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে উঠছে দুর্নীতিবাজ চক্র, পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণে রেল আর সড়ক যোগাযোগে বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট, পৃথিবীর বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত অবধি বিস্তৃত হচ্ছে রেলওয়ে নেটওয়ার্ক, গড়ে উঠছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দৃষ্টিনন্দন রেলওয়ে স্টেশনসহ বড় বড় মেগা উন্নয়ন প্রকল্প। এতসবের পরও ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে নেই। আবারও বঙ্গবন্ধুর নামকে মুছে দিতে দেশি-বিদেশি লম্ফঝম্ফ দৃশ্যমান হচ্ছে! স্বাধীন বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে ধারণ করেই এই ষড়যন্ত্রকে রুখতে হবে। যারা বঙ্গবন্ধুকে বিসর্জন দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে, এরা দেশপ্রেমের ছদ্মাবরণে একাত্তরের পরাজিত শক্তির সোল এজেন্ট, এদের রুখতেই হবে।
লেখক : কলামিস্ট ও উন্নয়ন গবেষক
ক্যালগেরি, কানাডা
ভারতীয় পারিবারিক হিন্দি চলচ্চিত্র ‘অভিমান’। ১৯৭৩ সালের সাড়া জাগানো এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন প্রখ্যাত অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন ও জয়া ভাদুড়ি। অর্ধশত বছর পার করলেও অভিমানের আবেদন এখনো অটুট। লিখেছেন নাসরিন শওকত
অমিতাভ-জয়া জুটি
১৯৬৯ সালে ‘সাত হিন্দুস্থানি’ চলচ্চিত্র দিয়ে বলিউডে অভিষেক হয় অমিতাভ বচ্চনের। তখন একের পর এক চলচ্চিত্র মুখ থুবড়ে পড়ায় বলিউডে অস্তিত্ব¡ সংকটের মুখে পড়েন অভিনেতা। ঠিক তখনই মুক্তি পায় ‘দিওয়ার’। অমিতাভের সেই ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ ইমেজে মজেন ভারতীয়রা। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি বলিউডের আজকের ‘শাহেনশাহ’ এবং মেগাসুপারস্টার বিগ বি’কে। অন্যদিকে নায়িকা হিসেবে জয়ার ক্যারিয়ার শুরু হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের ‘গুড্ডি’ (১৯৭১ সালে) চলচ্চিত্র দিয়ে। অমিতাভের সঙ্গে একাধিক ছবিতে কাজ করেছেন তিনি, যার মধ্যে অন্যতম ‘জাঞ্জির’, ‘চুপকে চুপকে’, ‘অভিমান’, ‘মিলি’, ‘শোলে’, ‘সিলসিলা’।
একসময় বলিউডের চলচ্চিত্রশিল্পে অমিতাভ-জয়ার প্রেম ছিল চর্চিত বিষয়। অমিতাভ বচ্চন যখন ক্যারিয়ার শুরু করেন, ততদিনে জয়া ভাদুড়ি প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী। ১৯৭১ সালে যখন ‘গুড্ডি’ মুক্তি পায়, তখন থেকেই অমিতাভের সঙ্গে জয়ার প্রেমের সূত্রপাত। শোনা যায়, ওই চলচ্চিত্রের সেট থেকেই জয়ার প্রতি অনুরাগের শুরু তার। এরপর ‘এক নজর’ চলচ্চিত্রে কাজ করতে গিয়ে জয়াতে নিজেকে হারান অমিতাভ। পরে ‘জঞ্জির’ বক্স অফিসে সাফল্য পেলে লন্ডন বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন এই জুটি। পরিকল্পনা অনুযায়ী লন্ডনের টিকিট কেটে ফেলেন অমিতাভ ও জয়া। কিন্তু তাদের লন্ডন ভ্রমণে বাধা হয়ে দাঁড়ান স্বয়ং অমিতাভের বাবা হরিবংশ রাই বচ্চন। ছেলেকে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, বিয়ে না করে একসঙ্গে বিদেশে বেড়াতে যাওয়া যাবে না কোনোভাবেই।
বাবার নির্দেশ অনুয়ায়ী, পরদিন সকালে পরিবার ও বন্ধুদের খবর দেওয়া হয়। ডেকে আনা হয় পুরোহিতকে। রাতে লন্ডনের বিমানে ওঠার কথা ছিল দুজনের। তাই ওই দিন সকালে একেবারে সাদাসিদেভাবে অমিতাভ-জয়ার বিয়ের আসর বসে। বরের পোশাক পরেই অমিতাভ গাড়ি চালিয়ে গিয়ে মালাবার হিলস থেকে তুলে আনেন জয়াকে। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই (১৯৭৩ সালের ৩ জুন ) বিয়ে হয়ে যায় তাদের। বিয়ের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নবদম্পতি রাতে লন্ডনের বিমানে ওঠেন। বিয়ের ১ বছর পর (১৯৭৪ সালে) প্রথম সন্তানের মা হন জয়া বচ্চন। মেয়ের নাম রাখেন শে^তা। এর দুবছর পর জন্ম হয় ছেলে অভিষেকের। বিয়ের পর একেবারে সংসারী হয়ে ওঠেন জয়া। অভিনয় জীবন থেকে লম্বা বিরতি নেন। মন দেন দুই সন্তান শ্বেতা ও অভিষেককে বড় করার দিকে।
অমিতাভ-জয়াকে বলিউডের অন্যতম আদর্শ দম্পতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দেখতে দেখতে দাম্পত্যেরও অর্ধশত বছর পার করেছেন তারা। বর্তমানে ৩ নাতি-নাতনি নিয়ে সুখের সংসার তাদের। অভিষেক-ঐশ্বর্যের মেয়ে আরাধ্য। অন্যদিকে শে^তা বচ্চন নন্দার দুই ছেলেমেয়ে অগাস্ত্য ও নভ্যা নভেলি নন্দা। দীর্ঘ এই দাম্পত্য জীবনে বহু চড়াই-উতরাইয়ের সাক্ষী থেকেছেন অমিতাভ-জয়া। তারপরও শক্ত করে ধরে রেখেছেন একে অপরের হাত ।
সুপারহিট ‘অভিমান’
বাঙালি পরিচালক হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘অভিমান’ নির্মিত হয়েছিল ১৯৭৩ সালে। যেখানে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন অমিতাভ বচ্চন ও জয়া ভাদুড়ি। পরিচালক হৃষিকেশ অমিতাভকে তার স্ত্রী জয়ার সঙ্গে জুটি বাঁধিয়েছিলেন, যে জুটি চুটিয়ে প্রেম করছেন তখন । অভিমান মুক্তির এক মাস আগেই বিয়ে করেন তারা। কিন্তু এরই মধ্যে রুপালি পর্দার নবদম্পতির ব্যক্তিত্বের সংঘাত বাস্তব জীবনে সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তবে জয়া উমা চরিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে মর্যাদাপূর্ণ ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জেতেন।
‘অভিমান’-এর বাণিজ্যিক সাফল্যের কথা হয়তো পরিচালক হৃষিকেশের মাথায় আগে থেকেই ছিল (বাস্তবের অভিমান সব শ্রেণির দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়)। কিন্তু চলচ্চিত্রটিতে ঠুনকো অহংকার ও ভঙ্গুর মানসিকতার কারণে সৃষ্টি হয় দাম্পত্য কলহ, যার সহজাত কিন্তু গভীর উপলব্ধির পুঙ্খানুপঙ্খ চিত্রায়নের মধ্যেই মূলত লুকিয়ে ছিল এর স্থায়ী আবেদন ।
অভিমানে অমিতাভ ‘সুবির’ নামের এক গায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন, যিনি পপগানের জন্য সবার কাছে ভীষণ জনপ্রিয়। স্টেজে তাকে বিখ্যাত গায়ক কিশোর কুমার ও মোহাম্মদ রফির কণ্ঠে গাওয়া নানা সুপারহিট গান গাইতে দেখা যায়। মাঝরাতে উন্মত্ত নারী অনুরাগীদের টেলিফোন কলের জ¦ালাতন এবং চিত্রার মতো ধনী ও অভিজাত বান্ধবীর তার প্রতি গভীর অনুরাগ থাকা সত্ত্বেও ওই গানের নিঃসঙ্গতার মতোই সুবীর নিজেকে বড্ড একা অনুভব করে। এমন একসময়েই সুবীর তার প্রিয় মাসি দুর্গা মৌসির (দুর্গা খোটে) দূরের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যায়। যেখানে ঘটনাচক্রে এক শাস্ত্রীয় সংগীতকারের মেয়ে উমার (জয়া ভাদুরী) সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। সুবীর প্রথমে উমার শিববন্দনার প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং একসময় সে উমার প্রতিও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে।
মজার বিয়ষ হলো, এই দম্পতি যে তখন বাস্তব জীবনেও একে অপরের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন, পরিচালক হৃষিকেশ সূক্ষ্মভাবে অভিমানের মধ্য দিয়েই ভিন্ন আঙ্গিকে তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। সুবীরের পরামর্শে উমা মঞ্চে তার সঙ্গে একটি দ্বৈত গান গাইতে রাজি হয়। পরে সে একক গানের প্রস্তাব পেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়ে। কিন্তু ঘটনাচক্রে উমা যখন জনপ্রিয়তায় তাকে ছাড়িয়ে যায়, তখন সুবীর মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে ও স্ত্রীর প্রতি ঈর্ষাকাতর হয়ে ওঠে। এই কয়েক দৃশ্যে পরিচালক হৃষিকেশ এই দম্পতির মধ্যকার বৈপরীত্যকে গভীর মমতায় সেলুলয়েডে তুলে আনেন।
চলচ্চিত্রটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি দৃশ্যে অন্তজর্¦ালায় জ¦লতে থাকা সুবীরকে (যে কিনা এরই মধ্যে চিত্রার বাড়িতে সময় কাটানো শুরু করেছে) বলতে শোনা যায়, ‘প্রথমেও একাই ছিলাম, আজও একাই আছি।’ তখন চিত্রা উপলব্ধি করে, একাকিত্ব হলো নিজের সৃষ্ট এক ব্যথা, যার জন্ম ছোট ছোট অভিমান আর অহংকার থেকে।
এ সময় উমা স্বেচ্ছায় গান গাওয়া বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এরই মধ্যে সুবীরের ক্ষতবিক্ষত মন আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এমনই এক চরম মুহূর্তে উমাকে সে বলে বসে, তাকে আর তার প্রয়োজন নেই। সুবীরের সন্তানকে গর্ভে নিয়ে উমা তার গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসে। চরম এক বিপর্যয়ের মুহূর্তে উমা তার সন্তানকে হারায়। একপর্যায়ে অনুতপ্ত হয়ে উমাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনে সুবীর। কিন্তু শোকে কাতর উমা একেবারে স্তব্ধ হয়ে যায়। তখন উমার নীরবতা ভাঙার জন্য দিশেহারা হয়ে পড়ে সুবীর। শেষ পর্যন্ত স্টেজ শো করে তাদের দুজনের প্রিয় গান গায় (তেরে মেরে মিলন কি ইয়ে র্যায়না), যা উমাকে স্বামীর ভালোবাসায় ফিরিয়ে আনে আবার। সুবীর উমাকে আবার গান গাইতে অনুরোধ করে।
অমিতাভ-জয়ার দুর্দান্ত অভিনয়ই অভিমানের প্রাণশক্তি। প্রাথমিক অবস্থায় চলচ্চিত্রটির নাম রাখা হয় ‘রাগ রাগিনী’। কিন্তু পরবর্তী সময়ে পরিচালক হৃষিকেশ এর নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘অভিমান’। চলচ্চিত্রটি মুক্তির মাত্র এক মাস আগে অমিতাভ বচ্চন ও জয়া ভাদুড়ি বিয়ে করেন। তাই এর প্রথম দিকের দৃশ্যগুলোতে এই দম্পতিকে বিয়ের প্রাথমিক ঘনিষ্ঠতা উপভোগ করতে দেখা যায়, যা ছিল জীবনঘনিষ্ঠ। এর সংগীত পরিচালক ছিলেন এস ডি বর্মণ।
অভিমান-এর পোস্টমর্টেম
১৯৮০-র দশকের শুরুর দিককার কথা। তখন বলিউডে বারবার অ্যাকশন হিরোর চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক সফলতা পাওয়ায় ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ ইমেজ গড়ে ওঠে অমিতাভের। তখন ‘দিওয়ার’, ‘শোলে’ ও ‘জাঞ্জির’-এর মতো ব্যবসাসফল অ্যাকশন চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। কিন্তু অনেকেই মনে করেন, সে সময়ের সংগীতের নাটকীয়তাকে ঘিরে এক নবদম্পতির ঈর্ষাপরায়ণতা, ভালোবাসা ও মান-অভিমানের কাহিনি নিয়ে নির্মিত ‘অভিমান’ ছিল অমিতাভ অভিনীত সবচেয়ে ভালো চরিত্রগুলোর মধ্যে একটি।
‘অভিমান’ এবছর অর্ধশত বছর পূর্ণ করেছে। ১৯৭৩ সালে অমিতাভের কমপক্ষে অর্ধ ডজন চলচ্চিত্র মুক্তি পায়, যার মধ্যে ‘অভিমান’ একটি। এই তালিকায় রয়েছে ‘সওদাগর’, যেটি আনুষ্ঠানিকভাবে সে বছর ভারতীয় চলচ্চিত্র হিসেবে অস্কারে যায় এবং আরেকটি ছিল ‘জাঞ্জির’, ব্লকবাস্টার এই চলচ্চিত্রটি অমিতাভকে ভারতের শীর্ষ ‘অ্যাকশন হিরো’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা এনে দেয়। কিন্তু চলচ্চিত্র সমালোচক ও লেখক শৈবাল চট্টোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেছেন, ‘‘অভিমান’ ছিল ওই বছরের সবচেয়ে আলোচিত চলচ্চিত্র এবং সে বছরে তার (অমিতাভ) সবচেয়ে বড় হিট চলচ্চিত্রও’’। ‘অভিমান’ দেখতে ভক্তরা দলে দলে ছুটে যান সিনেমা হলগুলোতে। বাবা-মা এবং ছোট বাচ্চাসহ পুরো পরিবারে ভরে যায় থিয়েটারগুলো। সমান তালে ভিড় থাকে ম্যাটিনি ও সান্ধ্য শোতে।
বছরের পর বছর ধরে চলচ্চিত্র শিল্পের ভক্ত, সমালোচক এবং বচ্চন দম্পতির সহকর্মীদের কাছ থেকে ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে ‘অভিমান’। অমিতাভ বচ্চন নিজেও সুযোগ পেলেই ‘অভিমান’-এর প্রতি তার ভালোবাসার কথা উল্লেখ করেন। একবার তিনি বলেছিলেন, ‘এটি সেই চলচ্চিত্র, যা আমাদের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে স্মরণীয় সৃজনশীল কাজ করাতে জয়া ও আমাকে একত্রিত করেছে এবং এর গানগুলো কোনোভাবেই ভোলার নয়। অনেকের কাছেই এখনো তা স্বপ্নের মতোই।’
লেখক শৈবাল চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘ ‘অভিমান’কে সব সময় বচ্চনের ক্যারিয়ারের ‘একটি শীর্ষ সময়’ হিসেবে আলোচনা করতে হবে। কারণ এটি ছিল এমন একটি চলচ্চিত্র, যেখানে তাকে গতানুগতিক পৌরুষদীপ্ত, তেজী বা রাগী যুবক হিসেবে তুলে ধরা হয়নি। এটি এমন একটি চরিত্র ছিল, যেখানে তার ভিন্ন এক রূপ দেখানো হয়েছে। সেখানে তিনি একজন সত্যিকারের নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন, একজন সত্যিকারের মানুষ যিনি নিরাপত্তাহীনতায় ঈর্ষাকাতর হয়ে ওঠেন এবং এখানেই তিনি একজন বহুমুখী অভিনেতার পারদর্শিতা দেখাতে সক্ষম হন। প্রমাণ করেন যে, পরিচালক তার জন্য যে চরিত্রই লেখেন না কেন, তিনি তাতে পারদর্শী।’ ”
সময় যত গড়িয়েছে, ‘অভিমান’-এর কাহিনিকে ঘিরে অনুমানের চর্চাও তত বেড়েছে। তখন ধারণা করা হতো যে, চলচ্চিত্রটি তার দুই প্রধান তারকার সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করেই নির্মাণ করা হয়েছিল। কেননা অমিতাভ তখন বলিউডে একজন নবাগত হলেও জয়া এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠিত একজন অভিনেত্রী ছিলেন। আবার কখনো সেতারবাদক রবিশঙ্কর ও তার প্রথম স্ত্রী অন্নপূর্ণা দেবীর জীবনের সঙ্গেও এর তুলনা করা হয়েছে, যিনি নিজেও একজন প্রতিভাবান সেতারবাদক ছিলেন। কিন্তু পরিচালক হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় এসব তুলনা প্রত্যাখ্যান করেন।
এ ছাড়াও ‘অভিমান’কে হলিউডের চলচ্চিত্র ‘এ স্টার ইজ বর্ন’-এর সঙ্গেও তুলনা করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই একই কাহিনি নিয়ে হলিউডে মোট চারটি চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে। প্রথমটি নির্মিত হয়েছিল ১৯৭৩ সালে এবং এর সবশেষ সংস্করণটি ২০১৮ সালে নির্মাণ হয়। যেখানে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন বিশ্ববিখ্যাত গায়িকা লেডি গাগা ও অভিনেতা ব্রাডলি কুপার। যদিও এই তুলনাকে কখনোই স্বীকার করেননি ‘অভিমান’-র পরিচালক হৃষিকেশ। এর পরিবর্তে তিনি বলেছিলেন, তার চলচ্চিত্রটি বলিউডের কিংবদন্তি গায়ক কিশোর কুমার ও তার প্রথম স্ত্রী রুমা দেবীর জীবনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল, যিনি বাংলা চলচ্চিত্রশিল্পের একজন সফল অভিনেত্রী ও গায়িকা। এক সাক্ষাৎকারে পরিচালক হৃষিকেশ বলেন, ‘অভিনেত্রী রুমা কম প্রতিভাবান ছিলেন না। যেহেতু কিশোর তার ক্যারিয়ারের শুরুতে কিছুটা সংগ্রাম করছিলেন, তাই অভিনয়শিল্পী হিসেবে রুমার প্রতিভার বিষয়ে সব সময় সতর্ক থাকতেন তিনি।’
তবে আজকাল কিছু নারীবাদী ‘অভিমান’-এ জয়াকে নম্র ও পতিব্রতা স্ত্রী হিসেবে চিত্রিত করার জন্য চলচ্চিত্রটির সমালোচনা করেন। যিনি কখনোই নিজের অধিকারের জন্য লড়াই করেননি, যার কাছে তার স্বামীই মুখ্য।
রমজানের পঞ্চম দিনেও রাজধানী ছিল তীব্র যানজটের কবলে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে ইফতারের আগ পর্যন্ত নগরীর প্রায় প্রতিটি এলাকায় ভোগান্তি পোহাতে হয় নগরবাসীকে। এবার রোজার শুরুতে সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে স্বাধীনতা দিবসের ছুটি মিলিয়ে তিন দিন বন্ধ থাকায় রোজার চতুর্থ দিন সোমবার তীব্র যানজটের কবলে পড়েছিল ঢাকা। গতকাল মঙ্গলবার সে তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। যাত্রী, পরিবহন শ্রমিক থেকে শুরু করে সবরাই অভিযোগ, সেবা সংস্থাগুলো তাদের কাজের জন্য বিভিন্ন জায়গার রাস্তা কাটায় যান চলাচাল ব্যাহত হচ্ছে, ভোগান্তি বেড়েছে পথাচারীদের।
গতকাল রাজধানীর সদরঘাট, গুলিস্তান, পল্টন, শাহবাগ, ফার্মগেট, রামপুরা ও মিরপুরসহ বেশ কটি এলাকা ঘুরে সকাল থেকে তীব্র যানজট দেখা যায়। যানজটে আটকা পড়ে অনেককে হাঁসফাঁস করতে দেখা যায়। কাউকে কাউকে আবার বাসে দীর্ঘ সময় বসে থেকে পরে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য হেঁটেই রওনা দিতে দেখা যায়। অনেক জায়গায় শুধু সড়ক নয়, ফ্লাইওভারে দেখা দেয় তীব্র যানজট।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর অনেক জায়গায় রাস্তাঘাটের সংস্কারকাজ চলায় বিকল্প পথ ব্যবহারের কারণে যানজটের শিকার বেশি হতে হচ্ছে ওইসব এলাকার যাত্রীদের। বিশেষ করে অফিসের শুরু ও শেষের দিকে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা যায়।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী মো. জয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাস্তাঘাটের যানজট এখন সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো জায়গায় ঠিকমতো যাওয়া যায় না। তাছাড়া কোনো কিছুরই সঠিক পরিকল্পনা নেই। এক রাস্তা কয়েকবার কাটতে দেখা যায়। আর এজন্যই মূলত এত যানজট।’
যানজটের কারণে যাত্রীদের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ গণপরিবহনের চালক ও কর্মীরাও। দিশারী পরিবহনের চালক মো. সানোয়ার বলেন, ‘সকাল থেকেই রাস্তায় প্রচণ্ড যানজট ছিল। সোমবারের থেকে আজ (গতকাল) আরও যানজট বেড়েছে। কোনোভাবেই গাড়ি সামনে যাচ্ছে না।’
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি শহরের জন্য যতটুকু পরিমাণ রাস্তাঘাট দরকার তার কোনো কিছুই মানা হচ্ছে না এই নগরীতে। আর প্রতিদিন কী পরিমাণ যানবাহন সড়কে চলছে তার সঠিক সংখ্যাও জানা নেই বিআরটিএর। আর গণপরিবহন ব্যবস্থা খুব খারাপ হওয়ায় বিকল্প ব্যবস্থায় মানুষের যাতায়াত বাড়ছে। সে জন্য ছোট গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। যার জন্য সড়কে যানজট বাড়ছে।
বিদেশিদের সম্পত্তি কেনার অনুমতি দিয়ে নতুন একটি আইনের পরিকল্পনা করছে সৌদি আরব সরকার। নতুন এই আইন পাস হলে বিদেশিরা দেশটিতে যেকোনো এলাকায় সম্পত্তি কিনতে পারবেন। অন্যান্য দেশের নাগরিকদেরমতো বাংলাদেশিরাও এই সুযোগ পাবেন। অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনার কৌশলের অংশ হিসেবে আবাসন খাতে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতেই এমন পরিকল্পনা বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো।
সৌদি আরবের রিয়েল এস্টেট জেনারেল অথরিটির (আরইজিএ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আব্দুল্লাহ আলহাম্মাদদের বরাতে সৌদি গেজেটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশিদের সম্পত্তি কেনা সম্পর্কিত নতুন একটি আইন পর্যালোচনাধীন রয়েছে। এই আইনের আওতায় সৌদি নাগরিক নন, এমন বিদেশিরা মক্কা, মদিনাসহ সৌদি আরবের যেকোনো এলাকায় সম্পত্তি কিনতে পারবেন।
আবদুল্লাহ আলহাম্মাদ বলেন, আইনটি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে আইনটির বিষয়ে সবাইকে জানানো হবে।
বিদেশিদের সম্পত্তি কেনার বিষয়ে ২০২১ সালে একটি নির্দেশনা জারি করেছিল সৌদি আরব। এই নির্দেশনায় সৌদির নাগরিক নন, এমন ব্যক্তিসহ দেশটিতে থাকা বৈধ বাসিন্দাদের শর্ত সাপেক্ষে একক সম্পত্তি কেনার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
আবদুল্লাহ আলহাম্মাদ বলেন, সৌদিতে রিয়েল এস্টেটের মালিকানার ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনের চেয়ে নতুন আইনটি আরও বিস্তৃত ও ব্যাপক হবে। নতুন আইনের অধীন বিদেশিরা সৌদিতে বাণিজ্যিক, আবাসিক, কৃষিসহ যেকোনো ধরনের সম্পত্তি কিনতে পারবেন।
আগের আইনে সৌদির পবিত্র শহরগুলোতে বিদেশিদের সম্পত্তি কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে নতুন আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, পবিত্র মক্কা-মদিনাসহ সৌদি আরবের সব জায়গায় বিদেশিরা সম্পত্তির মালিক হতে পারবেন।
নতুন আইনের মাধ্যমে সৌদি আরব তার আবাসন খাতে একটা রূপান্তর আনতে চাইছে। তারা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে এ খাতকে আকর্ষণীয় করে তুলতে চায়। সৌদি কর্র্তৃপক্ষ মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) এ খাতের অবদান আরও বাড়াতে আগ্রহী।
সৌদির রিয়েল এস্টেট জেনারেল অথরিটি নতুন যে আইনটির কথা বলছে, তা কার্যকর হলে দেশটি প্রবাসী ও বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন বিনিয়োগের একটি গন্তব্য হয়ে উঠতে পারে।
সংলাপে নয়, আলোচনার জন্য বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, ‘মূল জিনিসটা হলো, আমরা কিন্তু সংলাপে আহ্বান করিনি। সংলাপ বিষয়টি আনুষ্ঠানিক। আমরা কোনোভাবেই উনাদের (বিএনপি) সংলাপে ডাকিনি। আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি আনুষ্ঠানিক না হলেও (আনুষ্ঠানিক মানে সংলাপ) অন্তত অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় আপনারা আসতে পারেন। অত্যন্ত বিনীতভাবে এ আহ্বানটা করেছি।’
বিএনপিকে চিঠি পাঠানোর পাঁচ দিন পর গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের নিজ কক্ষের সামনে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, “বিএনপিকে চিঠি দেওয়ায় ইসির কোনো ‘কূটকৌশল’ ছিল না, কোনো মহলের ‘চাপও নেই’। অনানুষ্ঠানিকপত্র দিয়েছি বিএনপি মহাসচিবকে। চিঠি বৃহস্পতিবার শেষবেলায় দেওয়া হয়েছে। আমার মনে হয় চিঠিটা উনারা পেয়েছেন। আমার কাছে কোনো জবাব আসেনি। ধরে নিচ্ছি উনারা পেয়েছেন। অনেকে বলতে চেয়েছেন এটা সরকারের একটি কূটকৌশল। আমি আপনাদের মাধ্যম পুরো জাতিকে অবহিত করতে চাই, আশ্বস্ত করতে চাই এ পত্রের সঙ্গে সরকারের কোনো সংস্রব নেই, সংশ্লিষ্টতা ছিল না।’
তিনি আরো বলেন, ‘যদি কেউ এটাকে কূটকৌশল হিসেবে মনে করতে চান তাহলে এটা নির্বাচন কমিশনের কূটকৌশল হতে পারে, সরকারের নয়। আর নির্বাচন কমিশন কখনো কূটকৌশল হিসেবে এ কাজটি করেনি।’
সিইসি বলেন, ‘ইসি একেবারে প্রথম থেকেই অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং কার্যকর প্রতিদ্বন্দ্বীমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করে আসছে। আমরা ব্যথিত হই যখন বলা হয় সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করি। আজ্ঞা বহন করিনি। আমরা নির্বাচন নিয়ে আলাপ করি, আমাদের চিন্তার মধ্যে ফুটে উঠেছে বিএনপির মতো দলকে নির্বাচনে আনতে পারলে ভালো হয়।’
বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় এখনো আগ্রহী জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি আপনাদের (বিএনপির) যদি কোনো কৌশল থাকে তার ওপর ইসির কোনো মন্তব্য থাকবে না। তার পরও আমরা আলোচনা করতে চাই আপনাদের সঙ্গে। ফল ইতিবাচক হতেও পারে, নাও হতে পারে। প্রয়াস থাকবে। প্রয়াস গ্রহণ করতে বাধা থাকা উচিত নয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আমরা কোনো চিঠি পাইনি। আমি চিঠি দিয়েছি, যেকোনো রেসপন্স আমাদের চিঠির মাধ্যমে দিতে হবে। আমরা আশা করি, যেহেতু বিএনপি মহাসচিব মহোদয়কে চিঠি দিয়েছি। যেকোনো বক্তব্য আমাদের কাছে পত্রের মাধ্যমে আসে সেটাই কাক্সিক্ষত। এরপর আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত নেব। আগাম কোনো মন্তব্য নেই।’
বিএনপি যদি আসে তাদের সঙ্গে কী নিয়ে আলোচনা হবে সেই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘উনারা কী বলবেন, আমরা কী বলব আগাম কোনো বক্তব্য দিতে পারব না। বিএনপি যদি আলোচনার জন্য এজেন্ডা ঠিক করে দেয়, তার পরও বসা বিষয়ে ইতিবাচক’ বলে জানান সিইসি।
কূটনৈতিক মহলে সংলাপ আয়োজনের আলোচনার মধ্যে এমন চিঠি দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘এ ধরনের বিষয় আমাদের নলেজে নেই। আমাদের চিন্তা থেকে, উদ্ভূত সিদ্ধান্ত থেকে এ চিঠি দেওয়া হয়েছে। চাপের কথা যেটা বলেছেন এটা সম্পূর্ণ অমূলক ধারণা। কোনো আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর চাপে বিএনপিকে ডাকা হয়নি।’
বিএনপির জবাব পেতে কত দিন অপেক্ষা করবে কমিশন এমন প্রশ্ন করা হলে এড়িয়ে যান সিইসি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গাইবান্ধা ভোট বন্ধের ইস্যুতে ১৩৪ জনের মধ্যে ৪০ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আবারও পদক্ষেপ নেবে ইসি।
সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে চার নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান, মো. আলমগীর, রাশেদা সুলতানা ও আনিছুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
রাজধানীর মিরপুরের একটি মাধ্যমিক-সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে সিফাত। একই এলাকায় বসবাসকারী তার বন্ধু সিয়াম পড়ে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে। সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার থেকে রোজার ছুটি। আর সরকারি প্রাথমিকে ছুটি ১৫ রোজা অর্থাৎ ৭ এপ্রিল থেকে।
এক দেশে একই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভিন্ন নিয়মে ছুটি পাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এতে লেখাপড়ায় কেউ এগিয়ে যাবে, আবার কেউ পিছিয়ে পড়বে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সৈয়দ মামুনুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার বা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলে ভেবেচিন্তেই নেয়। তবে সব ধরনের স্কুলে একটা কো-অর্ডিনেশন থাকলে ভালো হয়। আমরা ছুটির ব্যাপারে আরও আলাপ-আলোচনা করব।’
জানা গেছে, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে আগামী শুক্রবার শুরু হতে পারে রমজান মাস। বছরের শুরুতেই স্কুলগুলোর ছুটির তালিকা অনুমোদন করা হয়। সে অনুযায়ী পবিত্র রমজান, স্বাধীনতা দিবস, ইস্টার সানডে, বৈসাবি, নববর্ষ ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি, বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি কলেজ, আলিয়া মাদ্রাসা ও টিটি (টিচার্স ট্রেনিং) কলেজেও একই সময়ে ছুটির ঘোষণা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ছুটির তালিকা ভিন্ন। তারা পবিত্র রমজান, ইস্টার সানডে, চৈত্র-সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ৭ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ প্রায় ১৫ রমজান পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা থাকবে।
রাজধানীসহ বড় বড় শহরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন। তাই এসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিকের মতোই তাদের ছুটি থাকবে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রোজার ছুটিও একই। তবে মাদ্রাসায় রোজার ছুটি শুরু এক দিন আগেই অর্থাৎ আজ বুধবার, ২২ মার্চ।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান। তাই বুধবার ক্লাস করে বৃহস্পতিবার রোজার ছুটি শুরু হবে। তবে সব স্কুলে একই ধরনের ছুটি থাকা জরুরি। এতে একই সময়ে সিলেবাস শেষ করা যাবে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও সন্তুষ্ট থাকবে।’
রমজানে মাধ্যমিকে স্কুল বন্ধ আর প্রাথমিকে খোলা রাখায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার লাখ শিক্ষকের মধ্যে। তারা বলছেন, যেসব অভিভাবকের সন্তান প্রাথমিক ও মাধ্যমিক দুই স্কুলেই পড়ে তাদের সমস্যা হবে। রমজান মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। প্রাথমিকের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরাও রোজা রাখেন। তাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে মিল রেখে প্রাথমিকের ছুটি নির্ধারণ করা যৌক্তিক হবে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাংগাঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ বছর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরকারি ছুটি ৭৬ দিন, কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ৫৪ দিন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিন্ন ছুটি নির্ধারণের যুক্তি তুলে ধরে আমরা ইতিমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেছি। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনো সাড়া পাইনি।’
'স্যার নয় আপা ডাকলেই চলবে' রংপুরের জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীনের এমন বক্তব্যের পর রাত ৯ টার দিকে আন্দোলন সমাপ্ত করে ক্যাম্পাসে ফিরে গেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক উমর ফারুক ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এর আগে চিত্রলেখা নাজনীনের বিরুদ্ধে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে বুধবার (২২ মার্চ) বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে একাই অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন উমর ফারুক। এর পর তার সাথে একাত্মতা জানিয়ে আন্দোলনে যুক্ত হন বেরোবির বাংলা বিভাগের শিক্ষক তুহিন ওয়াদুদ ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা।
তুহিন ওয়াদুদ তার ফেসবুক পোস্টে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।
জেলা প্রশাসক চিত্রলেখা নাজনীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, বেরোবির একটা অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র নিয়ে উমর ফারুক আমার কাছে এসেছিলেন। এ সময় আমি বাইরে যাওয়ার জন্য সিঁড়ি দিয়ে নামছিলাম। তখন ওই শিক্ষক আমাকে দেখে আপা বলে ডাক দেন। আমি তাকে স্যার না বলে আপা কেন ডাকছেন জানতে চাই। আমার জায়গায় একজন পুরুষ দায়িত্বে থাকলেও কি তিনি স্যার না বলে ভাই ডাকতেন?
জেলা প্রশাসক জানান, রাতে তিনি ওই শিক্ষক ও আন্দোলনকারীদের স্যার ডাকতে হবে না, আপা ডাকলেই চলবে বলে জানান। এরপর তারা আন্দোলন বন্ধ করে দেন এবং ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে চলে যান।