
নাট্যকার, চিত্রসমালোচক ও শিক্ষাবিদ সাঈদ আহমদের জন্ম ঢাকায়, ১৯৩১ সালের ১ জানুয়ারি। তার বাবার নাম মির্জা এফ মোহাম্মদ ও মা জামিলা খাতুন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে ১৯৫৪ সালে স্নাতকোত্তর এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস থেকে ১৯৫৬ সালে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি লাভ করেন। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নানা বিভাগে কাজ করেছেন। আধুনিক সংগীতের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ‘সাঈদ আহমদ ও সম্প্রদায়’ নামে একটি দল গঠন করেন, যে দলটি রেডিও স্টেশন থেকে অর্কেস্ট্রা পরিবেশন করত। লন্ডনে পড়ার সময় তিনি প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওয়েস্টার্ন মিউজিক শেখেন। বিবিসিতে খণ্ডকালীন সেতার ও অর্কেস্ট্রা বাজাতেন উর্দু সার্ভিস, বাংলা সার্ভিস, শ্রীলঙ্কা সার্ভিসে। তাকে বাংলা ‘থিয়েটার অব দি অ্যাবসার্ড’ নাট্যধারার পুরোধা বলা হয়। ১৯৮২ সালে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘বিশ্বনাটক’ অনুষ্ঠান করতেন। ‘দ্য থিং’, ‘কালবেলা’, ‘তৃষ্ণায়’, ‘মাইলপোস্ট’, ‘প্রতিদিন একদিন’ তার উল্লেখযোগ্য নাটক। তিনি জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইউনিভার্সিটি ও ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটির অতিথি অধ্যাপক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত ও নাট্যকলা বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে ‘বাংলাদেশের সুর স্রষ্টারা’, ‘জীবনের সাতরং’ ও ‘ঢাকা আমার ঢাকা’ উল্লেখযোগ্য। বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদকসহ নানা পুরস্কারে তিনি ভূষিত হয়েছেন। ২০১০ সালের ২১ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ধান থেকে চিড়া হয়। চিড়া বানানোর বিশেষ প্রক্রিয়া আছে। এ ক্ষেত্রে এমনভাবে চাপ দেওয়া হয় যাতে চাল ভেঙে গুঁড়ো না হয়ে বরং চ্যাপ্টা হয়ে যায়। অর্থনীতিতেও এমন কিছু চাপ আছে যাতে ক্রেতা বা ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা একেবারে নিঃশেষ হবে না কিন্তু এমন পরিস্থিতি দাঁড়াবে যে সে জীবন্মৃত হয়ে টিকে থাকবে। একে চিঁড়েচ্যাপ্টা দশা বলা যেতে পারে। ক্ষমতাসীনরা বলবেন কই, না খেয়ে মানুষ তো মরেনি। আর সাধারণ মানুষ ভাববেন এভাবে বেঁচে থাকার কষ্ট যদি আপনারা বুঝতেন?
অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে পাল্টাপাল্টি আলোচনা এখন আর শুধু অ্যাকাডেমিক আলোচনায় সীমাবদ্ধ থাকছে না। এখন সাধারণ মানুষও জানতে চাইছেন এবং জানতে পারছেন কী হচ্ছে ব্যাংকগুলোতে, ডলারের রিজার্ভ কত, খেলাপি ঋণ কত, কে বা কারা ঋণ নিচ্ছেন বিপুল পরিমাণে আর তার প্রভাব কী পড়ছে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে। কিন্তু কী করবেন তারা? না জানাটা অজ্ঞতা আর জেনেও কিছু করতে না পারাটা তাদের অসহায়ত্ব। তার পরও জানতে হয় এবং তারা সেটা জানছেন পত্রিকা মারফত। জ্বালানি ও অন্যান্য পণ্য আমদানি করতে গিয়ে গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলারের চাহিদা আর দাম দুটোই বেড়েছে। ডলারের দাম ৮৬ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১০৬ টাকা। এতে ২০২২ সালে ডলারপ্রতি দাম বেড়েছে প্রায় ২০ টাকা। এর ফলে মেটেনি ডলার-সংকট, বরং বেড়ে গেছে টাকার চাহিদা। ব্যাংকগুলো টাকা দিয়ে ডলার কিনে আমদানি বিল পরিশোধ করেছে আর ডলার কিনতে গিয়ে অনেক ব্যাংক টাকার সংকটে পড়ে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুলাই-নভেম্বর সময়ে আমদানি ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। ২০২১ সালের একই সময়ে আমদানি ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা। ফলে আমদানি খরচও বেড়েছে ৪.৩৫ শতাংশ। অন্যদিকে গত জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৭৩১ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০.৫৮ শতাংশ বেশি। আর জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে প্রবাসী আয় এসেছে ১ হাজার ৪৯ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২.৪৮ শতাংশ বেশি। যদিও গত দুই বছরে ১৮ লাখ মানুষ বিদেশে গেছেন, যাদের ৭০ শতাংশই গেছেন সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে। কিন্তু ওইসব দেশ থেকে বৈধ উপায়ে প্রবাসী আয় তেমন বাড়েনি। এসব সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ (রিজার্ভ) কমে ৩২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১১২ কোটি ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ২৫৭ কোটি ডলার। এর আগে ২০২১ সালের আগস্ট মাসে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে রিজার্ভ ৩ হাজার ২৫৭ কোটি ডলার হলেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবে রিজার্ভের ৮০০ কোটি ডলার ব্যবহারযোগ্য নয়। ফলে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ২ হাজার ৪৫৭ কোটি ডলার। গত নভেম্বর মাসে আকুতে ১৩৫ কোটি ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে ৩৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমেছিল। আমদানি দায় মেটাতে কমছে রিজার্ভ। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে আন্ত-আঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এশিয়ার ৯টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানি-রপ্তানি হয়, তা দুই মাস পরপর নিষ্পত্তি হয়। আকুর সদস্য দেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ। অর্থনৈতিক সংকটে দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় শ্রীলঙ্কা এই তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।
দেশের অভ্যন্তরে ব্যাংকগুলোর আমানত কমছে। গত ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোতে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৫.৪৪ শতাংশ। আর ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩.৮২ শতাংশ। অর্থাৎ দ্বিগুণের বেশি ঋণ বিতরণ করছে ব্যাংকগুলো। এতে ব্যাংকগুলোর তারল্য ব্যবস্থাপনায় অসামঞ্জস্য দেখা দিয়েছে। আমানতের সুদ মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম বলে অনেকেই ব্যাংকে টাকা রাখছে না। এর মধ্যে ইসলামি নামের পাঁচ ব্যাংকের অনিয়ম আলোচনায় আসায় গ্রাহকদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক ছড়িয়েছে। আবার অনেকে খরচ মেটাতে সঞ্চয় ভেঙে ফেলছেন। মূল্যস্ফীতির কারণে নতুন করে সঞ্চয়ও কমে এসেছে। গত ডিসেম্বরে শুধু একটি ইসলামি নামের ব্যাংকেরই আমানত কমেছে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা। ফলে সার্বিকভাবে আমানত কমে গেছে। গত অক্টোবরে আমানতের পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ৯০ হাজার ৪৩ কোটি টাকা, নভেম্বরে যা ৩ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা। পাশাপাশি বেশি দামে ডলার কেনা, রেমিট্যান্স কেনা, রপ্তানি বিল নগদায়নে গ্রাহকদের বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। আবার ব্যবসা মন্দার কথা বলে ব্যবসায়ীরাও ঋণ পরিশোধ করতে গড়িমসি করছেন। ফলে ব্যাংকগুলোর তারল্যের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। গত বছরে (২০২২) বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে সব মিলিয়ে ১ হাজার ২৬১ কোটি ডলার বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই সময় প্রতি ডলার ৯৮ টাকা ধরলে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ২৩ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলো থেকে এই পরিমাণ টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভোল্টে চলে যাওয়াতেও অর্থসংকট বেড়েছে। এতে কিছু ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফলে মাঝেমধ্যেই সমস্যা তৈরি হচ্ছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাহিদামতো নগদ জমা (সিআরআর-ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও) রাখতে পারছে না কিছু ব্যাংক। ইসলামি নামের পাঁচ ব্যাংকের পাশাপাশি গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংক, বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকও চাহিদামতো সিআরআর রাখতে পারেনি। অন্যদিকে গত ৬ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৬৫ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা ধার করেছে বাংলাদেশ সরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া এ ঋণের টাকার অর্ধেকের মতো ব্যয় হয়েছে সরকারের বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে নেওয়া ৩৩ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকার ঋণ শোধ করতে। এর ফলে বেসরকারি ব্যাংকের কাছে নেওয়া ঋণ কমলেও বেড়ে গেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ঋণের পরিমাণ। আমদানি, রপ্তানি, ব্যাংকের তারল্য, ঋণ ব্যবস্থাপনা, ব্যাংকের আমানত সবকিছুর প্রভাব পড়ছে অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে। সামগ্রিক বিবেচনায় বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৫.২ শতাংশ হতে পারেএমন পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্ট’ প্রতিবেদনে জিডিপি প্রবৃদ্ধির এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এই প্রতিবেদনে শুধু বাংলাদেশ নয় অন্যান্য দেশ সম্পর্কেও পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। যেমন, ভারতের প্রবৃদ্ধি ৬.৯ শতাংশ, পাকিস্তানের ২ শতাংশ, নেপালে ৫.১ শতাংশ, ভুটানে ৪.১ শতাংশ, মালদ্বীপে ৮.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে বলে তারা মনে করছেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিষয়ে নানা ধরনের বিশ্লেষণ করে থাকে বিশ্বব্যাংক। ডলার-সংকট ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের বিশ্লেষণ হলো, ২০২২ সালের জুন মাস থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ১৮ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে ৮০০ কোটি ডলার। এ কারণেই বৈদেশিক মুদ্রার মজুদকে সহায়তা করতে এবং বিদেশি মুদ্রার চাহিদার চাপ কমাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণসহায়তা চেয়েছে, যা পাওয়া যাবে সাত কিস্তিতে এবং সুদের হার হবে ২ দশমিক ২ শতাংশ। এই ঋণ এখনো আলোচনার পর্যায়ে আছে, তবে শর্ত পূরণ করা শুরু করে দিয়েছে বাংলাদেশ।
ওপরের স্তরে এসব আলোচনা মানুষকে স্পর্শ না করলেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে কিছুদিন ধরেই। বিশেষ করে এক বছর ধরে মূল্যস্ফীতি লাগামছাড়া। ২০২১ সালের নভেম্বরে জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে বিপুল পরিমাণ বাড়ানোর পর থেকে মূল্যস্ফীতি যেন মাত্রা ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, ২০২২ সালের আগস্টে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯.৮৬ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে তা কিছুটা কমে ৯.১ শতাংশ হলেও এই দুই মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে ছিল। বিবিএসের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২২ সালের আগস্টে গত ১১ বছর ৩ মাসের (১৩৫ মাস) মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ ১০.২০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল। ২০১১ সালের মে মাসের পর মূল্যস্ফীতি আর কখনো ৯ শতাংশের বেশি হয়নি। উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এখন অর্থনীতির বড় চ্যালেঞ্জ হওয়া দরকার। কিন্তু যারা নীতিনির্ধারক তারা কোনো পরামর্শ কানে তুলছেন বলে মনে হচ্ছে না। বরং বিরোধীদের বিরোধিতা করতে তাদের সময় ও শক্তি ব্যয় করছেন।
এরই মধ্যে বছরের শুরুতেই নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে সরকার। এরপর বাড়াল গ্যাসের দাম। এত দিন দাম বাড়ানোর জন্য গণশুনানির যে নামকাওয়াস্তে পদ্ধতি ছিল এবার সেটাও আর রক্ষা করা হলো না। বিদ্যুৎ খাতে কী এমন পরিস্থিতি হয়েছিল যে এত দ্রুত দাম না বাড়ালে চলত না? এর ফলে কী হলো? এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের তো তাহলে আর কিছু করার থাকল না। সংগত কারণে প্রশ্ন উঠতেই পারে, তাহলে এত কষ্টের টাকা খরচ করে কমিশন নামক প্রতিষ্ঠান রাখার কী প্রয়োজন? শুনানি হলে অন্তত কেউ কেউ প্রশ্ন তুলতে পারতেন, দুর্নীতি-অনিয়ম ও কোম্পানির অদক্ষতার বিষয়টা আলোচনা এবং জবাবদিহির মধ্যে আসতে পারত। ফলে এটাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার মানে একটাই, তা হলো যা সিদ্ধান্ত নেব তাই বাস্তবায়ন করব। আর নির্বাহী আদেশে দাম বাড়ানোর পদ্ধতি চালু হলে বাজারে মনোপলি (একচেটিয়া) তৈরি হবে। এতে লাভবান হবে কোম্পানিগুলো, তারা অতিরিক্ত মুনাফা তুলে নেবে। আর কোম্পানিগুলোর জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতা কমবে, অদক্ষতা ও অপচয় বাড়বে। আর মূল্যবৃদ্ধির চাপ বহন করে জনগণ চ্যাপ্টা হতেই থাকবে।
লেখক: রাজনৈতিক সংগঠক ও কলামিস্ট
আমরা জানি ২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। এই কারিকুলামের নতুন বই ৬২টি বিদ্যালয়ে পাইলটিং করা হয়েছিল। আশা ছিল আমরা এই পাইলটিংয়ের ফল জানতে পারব, ফিডব্যাক দিতে পারব; কিন্তু সেসব কিছুই হয়নি। সব বিদ্যালয়ে এখনো বই পৌঁছায়নি। ইতিমধ্যে পাঠ্যবইয়ে একের পর এক ভুল বের হতে শুরু করেছে, কিছু কিছু ভুল মারাত্মক এবং কিছু কাজ রীতিমতো অপরাধের পর্যায়ে পড়ার মতো। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, পুস্তক প্রণয়নে অযত্ন ছিল। বই লেখা ও সম্পাদনায় অসতর্ক ছিলেন লেখক-সম্পাদকরা। আর জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তদারকির অভাব ছিল। ফলে বইয়ের লেখক, সম্পাদক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এগুলোর দায় এড়াতে পারেন না।
নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত বেশিরভাগ মূল্যায়ন হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে। অর্থাৎ বিষয় শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সারা বছর ধরে অ্যাসাইনমেন্টভিত্তিক কাজ, প্রকল্পভিত্তিক শিখনচর্চা, খেলাধুলা, গ্রুপ ওয়ার্ক, কুইজ, পোস্টার প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করাবেন এবং তাদের কাজের মূল্যায়ন করবেন। মূল্যায়ন মানে প্রচলিত পরীক্ষা নয়, নম্বর নয়, গ্রেডিং নয়। নতুন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী কতটুকু যোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছে সে সম্পর্কে শিক্ষক মন্তব্য করবেন। মন্তব্যগুলো হবে খুব ভালো, ভালো, সন্তোষজনক এবং আরও শেখা প্রয়োজনএ ধরনের। ফলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের শ্রেণিতে প্রথম বা দ্বিতীয় হওয়া বা নম্বর ও গ্রেডিংয়ের পেছনে ছোটার যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা সেটি থাকবে না। এখানে শিক্ষকের ভূমিকাই হবে মুখ্য। তাদের বহুমাত্রিক সৃজনশীল, দক্ষ, যোগ্য, অভিজ্ঞ ও মানবিক গুণসম্পন্ন আদর্শ শিক্ষক হতে হবে। এ কথাগুলো খুবই চমৎকার, কিন্তু বাস্তব কী বলে?
সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ের প্রথম অধ্যায়ের তৃতীয় পৃষ্ঠার শুরুতে বলা হয়েছে, জীববৈচিত্র্য কী। পাঠ্যপুস্তকটিতে লেখা হয়েছে, জীববৈচিত্র্য বা বায়োডাইভারসিটি শব্দ দ্বারা পৃথিবীতে জীবনের বিপুল বৈচিত্র্য বর্ণনা করা হয়। হুবহু ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ডট ওআরজি (https://education. nationalgeographic. org/resource/biodiversity) থেকে এখানে তথ্যগুলো উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিদেশি ভাষা থেকে ভাষান্তর করে লেখা পাঠ্যপুস্তক অনেক রয়েছে। তবে প্রাপ্তি স্বীকার না করে হুবহু মেরে দেওয়া একাডেমিক ভাষায় ‘চৌর্যবৃত্তি’ বা প্লেইজারিজম। তাহলে প্রথম প্যারাগ্রাফে নতুন কারিকুলামের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে যে কথাগুলো বলা হয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে নতুন বইয়ের কী মিল রইল? পঞ্চম পাতায় ‘জীবের পারস্পরিক সম্পর্ক’ অনুচ্ছেদে; নবম পৃষ্ঠায় ‘জীববৈচিত্র্যের ঝুঁকি ও প্রতিকার’ শীর্ষক অনুচ্ছেদেও হুবহু জিওগ্রাফিক থেকে অনুবাদ করা হয়েছে। কোনো সূত্রের উল্লেখ নেই। মনে হচ্ছে লেখকগণ নিজেরাই, জরিপ করে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। জাতীয় কারিকুলামের ক্ষেত্রে কি আমরা এ ধরনের কাজ করতে পারি? এ ধরনের বহু নকল, ভুল ও অসংগতি রয়েছে বইয়ে।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এডুকেশনাল সাইট থেকে নিয়ে হুবহু অনুবাদ করে ব্যবহার করার অভিযোগ স্বীকার করেছেন বইটির রচনা ও সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত থাকা অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক ড. হাসিনা খান। জাফর ইকবাল বলেছেন, প্লেইজারিজমের জন্য তারা খুবই লজ্জিত, খুবই বিব্রত। আগামীতে ভুল সংশোধন করবেন বলে তিনি সংকল্পবদ্ধ। তিনি এই অংশটি নিজে লেখেননি, তবে সম্পাদক হিসেবে তার ওপরই দায়িত্ব বর্তায়। তিনি তার দায় স্বীকার করেছেন, যা প্রশংসনীয়। অন্যান্য বইয়েও তো শত শত ভুল বের হচ্ছে। কয়েক দিন আগে দেখলাম বিভিন্ন বইয়ের লেখকরা এনসিটিবির নতুন বইয়ে কে কতটা অবদান রেখেছেন, কে কতটা চ্যাপ্টার লিখেছেন ইত্যাদি প্রকাশ করে ক্রেডিট নেওয়ায় কার্পণ্য করেননি। সব বিষয়ের বইয়েই কিছু কিছু বিষয় ও চ্যাপ্টার অনেক ভালো আছে, কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় হতাশাজনক অবস্থা। এর দায় কি লেখকরা নেবেন?
বিজ্ঞান একটি আনন্দের বিষয়, কনসেপ্ট পরিষ্কার থাকার বিষয়। কিন্তু আমরা অন্য বিষয়ের মতো নকল আর মুখস্থের মতো বিষয় দিয়ে এত বাহবা নেওয়ার চেষ্টা শুরু করেছিলাম যে, এর চেয়ে উৎকৃষ্ট কারিকুলাম আর কোথাও নেই। আর একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, আমাদের দেশের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ কিন্তু এসব বই দেখেননি এবং কোনো কমেন্টও করেননি। সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক ও গবেষক বাংলাদেশের নতুন বই নিয়ে কমেন্ট করেছেন। আমি যে উদাহরণ দিলাম সেটি তাদেরই বের করা বিষয়। অথচ আমাদের দেশের শিক্ষকগণ খবরই রাখেন না যে, দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় এতকিছু ঘটে যাচ্ছে।
চীনের দিকে যদি একটু তাকাই তাহলে দেখা যায় যে, বিজ্ঞান শিক্ষা ও সক্ষমতায় সেখানে নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছে। বিজ্ঞানে চীনের এই আধিপত্য বিশ্বে ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তন করে ফেলে কিনা, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে চীন সরকার বিগত বছরগুলোতে যেসব নীতি নিয়েছে, তারই ফল দেশটির আজকের এই সাফল্য। গত তিন দশক চীন সরকার দেশটির গবেষণা সক্ষমতা বাড়াতে অনেক গুণ বিনিয়োগ বাড়ায়। এ সময়ে চীন শিক্ষার্থী ও গবেষকদের পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে পাঠায়। ব্যবসায়ীদেরও হাই-টেক পণ্য উৎপাদনে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত চীন ৫২ লাখ শিক্ষার্থী ও বিশেষজ্ঞকে পড়াশোনার জন্য বাইরে পাঠিয়েছে। এদের বেশিরভাগই বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিদ্যায় পড়াশোনা করেছেন। তারা বেশিরভাগই দেশে ফিরে বিজ্ঞান গবেষণাগার ও হাই-টেক কোম্পানিগুলোতে কাজ করছেন। আর আমরা কপি পেস্ট করে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান শেখানোর চিন্তা করছি। উচ্চ গুণমানসম্পন্ন বিজ্ঞান সৃষ্টির ক্ষেত্রে চীন বর্তমান বিশ্বে অনেক দেশেরই ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে সেরা বিজ্ঞান সাময়িকীগুলোতে অন্য যেকোনো দেশের গবেষকদের তুলনায় বেশি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করছেন চীন।
গুগল আমাদের বাংলা ভাষাকে এখনো সঠিকভাবে ভাষান্তর করার সক্ষমতা অর্জন করেনি। ভুলভাল ইংরেজিতে বাংলার ভাষান্তর হয়যা শিক্ষার্থীদের ভুল বার্তা দেয়, ভুল শেখার সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। এসব কারণে এনসিটিবির কোনো ক্ষতি হয় না, ক্ষতি হয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের; যারা ভবিষ্যতে দেশকে নেতৃত্ব দেবে। তারপরও আমাদের লেখকরা এটি কেন করলেন? তারা যে সিনসিয়ার নন সেটি প্রকাশ পেল। তারা জানেন যে, বাংলাদেশের কোনো শিক্ষক এসব পড়বেন না, এসব নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করবেন না, অতএব কোনো ঝামেলা নেই। তারা বাংলাদেশের শিক্ষকদের সম্পর্কে ঠিকই চিন্তা করেছিলেন। কিন্তু আমাদের দেশেরই কিছু শিক্ষক ও গবেষক তো আছেন যারা বিদেশের মাটিতে নিজেদের সৃজনশীলতা ও গবেষণাকর্ম প্রদর্শন করে ওইসব দেশের শিক্ষা ও বিজ্ঞানে প্রভূত অবদান রেখে চলেছেন। কারণ শিক্ষা নিয়ে সেখানে রাজনীতি অনেক কম, কিংবা নেই-ই। তারা তো প্রকৃত গবেষক, বিজ্ঞান নিয়ে কোথায় কী হচ্ছে, তারা তো একটু ঘেঁটে দেখবেনই। আর তাদের দেখার কারণে হয়েছে ঝামেলাটা। এনসিটিবি এ পরিস্থিতিতে একটি সুন্দর বিবৃতি দেওয়া ছাড়া আর কী করবে? দেখার বিষয়, সেটিও কোথাও থেকে কপি করা হয় কিনা!
লেখক : শিক্ষাবিশেষজ্ঞ ও গবেষক
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভের পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। কিন্তু অসংক্রামক রোগ গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার অন্যতম কারণ তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০১৭-এর হিসাব মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় চার কোটির কাছাকাছি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ধূমপান ও তামাক সেবন করেন।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ মৃত্যুর জন্য অসংক্রামক রোগ দায়ী। অসংক্রামক রোগীদের বেশির ভাগই তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারকারী। জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের কারণে মারা যান।
অসংক্রামক রোগের চিকিৎসা অনেক খরচসাপেক্ষ এবং দীর্ঘমেয়াদি বলে এটি স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য একটি বড় হুমকি এবং জাতীয় অর্থনীতি অগ্রসরের পথেও বড় বাধা। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপসহ অন্যান্য অসংক্রামক রোগের অন্যতম বড় কারণ। গর্ভবতী নারী ও শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে নিকোটিনের ব্যবহার নানা রকম শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। বাংলাদেশে বর্তমানে ১৫ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাকজনিত রোগ এবং ৬১ হাজারেরও বেশি শিশু পরোক্ষ ধূমপানের কারণে শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি এবং বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণ মানুষের তুলনায় তামাক ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ যেমন হৃদরোগ, স্ট্রোক, সিওপিডি ও ফুসফুসের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি ৫৭ শতাংশ বেশি এবং তামাকজনিত ক্যানসারের ঝুঁকি ১০৯ শতাংশ বেশি থাকে। অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি থেকে সাধারণ মানুষকে বাঁচানোর জন্য ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধনের কোনো বিকল্প নেই। তামাক ব্যবহারের কারণে মানুষের আয়ের একটি বড় অংশ চলে যায় তামাক কোম্পানিগুলোর পকেটে। খানা আয়-ব্যয় জরিপ ২০১৬ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, প্রতি বছর দেশের সবচেয়ে দরিদ্র ২০ শতাংশ তামাক-ব্যবহারকারী পরিবারগুলো তাদের বার্ষিক আয়ের এক-পঞ্চমাংশের বেশি (২০.৭ শতাংশ) তামাকপণ্যের পেছনে ব্যয় করে থাকে। তা ছাড়া তামাক-ব্যবহারকারী সব শ্রেণির পরিবার মিলে বছরে তামাকপণ্যের পেছনে ৯ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা ব্যয় করে থাকে। এই অর্থ তামাকপণ্যের পেছনে ব্যয় না করলে তা জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারত।
সম্প্রতি একটি ভ্রান্ত ধারণা ছড়ানো হচ্ছে যে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধনের ফলে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিষয়টি সত্য নয়। আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি এবং বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৮ সালে শুধু তামাকজনিত মৃত্যু এবং রোগের কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যয় প্রায় ৩০ হাজার ৫৬০ কোটির টাকার বেশি, যা ওই বছরের মোট জিডিপির ১ দশমিক ৪ শতাংশের সমান। অন্যদিকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপিতে তামাক খাতের অর্থনৈতিক অবদান ২০১৮-এর মূল্যে হিসাব করলে প্রায় ২২ হাজার ৯০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ, যেটি তামাকের আনুমানিক ব্যয়ের চেয়ে কম। এতে স্পষ্ট যে, শুধু ২০১৮ সালের হিসাবেই বাংলাদেশ তামাকের কারণে প্রায় ৭ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তাই আমাদের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং তামাক ব্যবহারকারীদের সংখ্যা কমানোর লক্ষ্যে তামাকপণ্যে কার্যকর করব্যবস্থা ও মূল্যবৃদ্ধি বাস্তবায়ন জরুরি। ভীতি ছড়ানো হচ্ছে ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন ও কার্যকর হলে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বেন। এ কথার কোনো যৌক্তিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া কঠিন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টোব্যাকো এটলাস ২০২০-এর তথ্য মতে, তামাকের বিকল্প হিসেবে লাল মরিচ, ধান, হাইব্রিড ভুট্টা এবং সয়াবিন চাষ অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। এরই মধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় কৃষকরা তামাকের বিকল্প হিসেবে এসব ফসলের চাষাবাদ শুরু করেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ভারতের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বিড়ি শ্রমিকদের ‘দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ’ দিয়ে থাকে। এর মাধ্যমে বিড়ি শ্রমিকরা পরে বিকল্প উপার্জনের উৎস খুঁজে পান। ২০১৯ সাল পর্যন্ত ভারত ২ হাজার বিড়ি শ্রমিককে প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত করেছে। আমাদের দেশেও যেসব ছোট ব্যবসায়ী বিড়ি বা সিগারেট বিক্রি করেন তারা শুধু তামাকজাত দ্রব্যের ওপর নির্ভরশীল নন। পাশাপাশি চা, বিস্কুট, কলা, লজেন্স, চিপসএসবও বিক্রি করে থাকেন। সুতরাং, ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের ফলে ছোট ব্যবসায়ীদের কর্মহীন হয়ে যাওয়ার তত্ত্বটিও অমূলক। বর্তমানে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার জন্যও তামাক একটি বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য মতে, বাংলাদেশে ২০২০ সালের সরকারি হিসাব অনুযায়ী ৪০ হাজার ৪৭২ হেক্টর জমিতে ৮৫ হাজার ৮৫২ টন তামাকপাতা উৎপাদিত হয়। বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, বাংলাদেশে ২০২০ সালের সরকারি হিসাব অনুযায়ী প্রতি হেক্টর জমিতে ৪ হাজার ৯০১ কেজি খাদ্যশস্যের ফলন হয়েছে। সুতরাং আমরা ২০২০ সালেই ৮৫ হাজার ৮৫২ টন তামাক পাতার পরিবর্তে ২ লাখ ১৮ হাজার ৬৪৭ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন করে আমরা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও মজবুত করতে পারতাম।
উর্বর মাটিকে কাজে লাগানোর জন্য বাংলাদেশে তামাক চাষ বরাবরই নদীভিত্তিক। বার্লিন ওয়ার্কিং গ্রুপ অব এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ২০১৮ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু প্রভাবশালী তামাক কোম্পানির উদ্যোগে ১৯৮০-এর দশকে চট্টগ্রাম অঞ্চলের মাতামুহুরী নদীর তীরের উর্বর জমিতে তামাক চাষ শুরু হয়। বর্তমানে নদীতীরবর্তী প্রায় ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা জুড়ে ওই তামাক চাষ বিস্তৃত। তামাকগাছ মাটির পুষ্টি (ফসফরাস, নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম) নিঃশেষ করে দিয়ে মাটির উর্বরতা শক্তি হ্রাস করে দেয়। তা ছাড়া, প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শুধু ২০০৯ সালেই মাতামুহুরী নদীর তীরে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষে প্রায় ২ হাজার টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছিল, যা পরিবেশের জন্য বিরাট হুমকি। বর্তমানে প্রচলিত ধূমপান ও তামাক পণ্যসমূহের বাইরে আধুনিক কিছু তামাকপণ্য বিশেষ করে ই-সিগারেটের ব্যবহার আমাদের গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ই-সিগারেটে ব্যবহৃত তরল বাষ্পীভূত হয়, যা ব্যবহারকারী প্রশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করে। এই তরলগুলোতে নিকোটিন ছাড়াও ফ্লেভার এবং অন্যান্য রাসায়নিক থাকে, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এরই মধ্যে ভারত, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের ৩০টিরও বেশি দেশ ই-সিগারেটকে নিষিদ্ধ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের তথ্য মতে, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত, যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্য থেকে ই-সিগারেট বা ভ্যাপিং সংশ্লিষ্ট ফুসফুস রোগের ২ হাজার ৮০৭টি ঘটনা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, যার মধ্যে ২৭টি রাজ্যে ৬০ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে।
চটকদার বিজ্ঞাপন ও মোড়ক শিশু-কিশোরদের ই-সিগারেটের প্রতি আগ্রহী করে তোলে, যা পরে ধূমপানে আসক্ত করে। তামাক কোম্পানিগুলোর আকর্ষণীয় বাজারজাতকরণ কৌশল এবং কোম্পানিগুলোর ই-সিগারেট ব্যবসায় সম্প্রসারণ একটি গভীর উদ্বেগের বিষয়। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০১৭ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ই-সিগারেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখনো সীমিত হলেও অনলাইন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এর প্রচারণার ফলে ভবিষ্যতে এ সংখ্যা বহু গুণে বেড়ে যাওয়া, বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের মধ্যে এটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রস্তাবিত ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) সংশোধিত আইনে রয়েছে উন্মুক্ত স্থানে (পাবলিক প্লেস) ধূমপান নিষিদ্ধ করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি বন্ধ করা, ই-সিগারেট বাজারজাত বন্ধ করা, তামাকজাত পণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর আকার বাড়ানো, সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির (সিএসআর) নামে তামাক কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করা এবং তামাকজাত দ্রব্য বিক্রির স্থানে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শন বন্ধ করা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। শুধু ধূমপান নয়, ধোঁয়াবিহীন তামাক জর্দা, গুল, সাদাপাতার ক্ষেত্রেও একই নীতি অনুসরণ করতে হবে।
নিউজিল্যান্ড খুব সম্প্রতি একটি ঐতিহাসিক ধূমপানবিরোধী বিল পাস করেছে, যা ১ জানুয়ারি ২০০৯ বা তার পরে জন্মগ্রহণকারীদের কাছে তামাক বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। এই নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য হলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধূমপান থেকে বিরত রাখা এবং ২০২৫ সালের মধ্যে দেশকে ধূমপানমুক্ত করা। তা ছাড়া, নতুন আইনটি ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ খুচরা তামাক বিক্রেতাদের সংখ্যা দশ ভাগের এক ভাগে নামিয়ে আনবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাক নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা মিলে আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে যাচ্ছি। তা ছাড়া, বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের অন্যতম সিগনেটরি দেশ এবং আমরা তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে বদ্ধপরিকর। বিদ্যমান ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে যুগোপযোগী করার মাধ্যমে তামাকমুক্ত বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে বেগবান করা আজ সময়ের দাবি।
লেখক: চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েল-বিং এবং প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন
দেশে ক্রসফায়ার কমলেও পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগ বেড়েছে। ২০১৩ সালে ‘নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ)’ আইন করে সরকার। তবে এর প্রয়োগ দেখা যায় না খুব একটা। মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা বলছেন, গত ছয় বছরে এ আইনে কারও সাজা হয়েছেএমন নজির নেই। তবে ১৭টি মামলা বিচারাধীন বলে জানা গেছে। ২০২২ সালে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এবং পুলিশের হেফাজতে ১৯ জনের প্রাণ গেছে বলে জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। এর মধ্যে র্যাব সদস্যদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ গেছে চারজনের। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। আসক বলছে, হেফাজতে মৃত্যুর মধ্যে গ্রেপ্তারের পর শারীরিক নির্যাতনে চারজন, হার্ট অ্যাটাকে একজন, গ্রেপ্তারের আগে শারীরিক নির্যাতনে চারজন, থানা হেফাজতে আত্মহত্যা করেছেন দুজন এবং অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন চারজন।
সর্বশেষ হেফাজতে মৃত্যু নিয়ে শুক্রবার দেশ রূপান্তরে ‘পুলিশের তৎপরতা, আতঙ্কে পরিবার’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গাজীপুরে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ ওঠা রবিউল ইসলামের মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়েছে। এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়েছেএমন তথ্য দিয়ে গত বুধবার রাতে গাজীপুরের বাসন থানায় মামলা নথিভুক্ত করেছে পুলিশ। মামলার বাদী দেখানো হয়েছে মারা যাওয়া রবিউল ইসলামের ছোট ভাই মো. মহিদুল ইসলামকে। তবে এজাহারে থাকা তার স্বাক্ষর নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। পুলিশের ভাষ্যের সঙ্গে নিহতের স্বজন ও প্রতিবেশীদের বক্তব্যের কোনো মিল নেই। উপরন্তু ‘হেফাজতে মৃত্যুর’ মতো অভিযোগ ওঠার পরও ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিয়ে যেতে দেওয়ার ঘটনা স্বাভাবিক নয়। স্বজনদের অভিযোগ, অনলাইন জুয়া খেলা ও মাদক কারবারের অভিযোগে সুতা ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামকে বাসা থেকে গত শনিবার তুলে নিয়ে যায় বাসন থানার এএসআই মাহবুবুর রহমান। প্রথমে রবিউলের কাছে এক লাখ টাকা দাবি করা হয়। পরে পরিবারের লোকজন পুলিশকে ৩৫ হাজার টাকা দেয়। এরপর আরও ৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। কিন্তু এই টাকা দিতে না পারায় চার দিন রবিউলকে থানায় আটক রাখা হয়। পরে মঙ্গলবার পুলিশের লোকজন রবিউলের স্ত্রী নূপুর আক্তারের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়। এরপর মধ্যরাতে থানা থেকে নূপুরকে জানানো হয়, রবিউল ইসলাম সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। রবিউলের পরিবার কিংবা এলাকাবাসী পুলিশের এই ভাষ্য মেনে নেয়নি। স্বজন ও প্রতিবেশীরা বলছেন, রবিউলের স্বজনরা অজানা আতঙ্কে ভুগছেন। তারা পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করে নতুন করে আর ঝামেলায় পড়তে চান না। বিপদাপন্ন মানুষের এই ‘ঝামেলায় পড়ার’ আশঙ্কা জন্মানো মনস্তত্ত্ব ও তা এড়াতে চাওয়ার মধ্যে যে অসহায়ত্ত সেখানেই পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জনগণের বন্ধু হয়ে উঠতে পারা, না-পারার সত্য লুকানো রয়েছে। পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নানা অর্জন, শুভ উদ্যোগ থাকার পরও ‘বাঘে ছুঁলে ১৮ ঘা আর পুলিশে ছুঁলে ৩৬ ঘা’এই প্রবচন মানুষ কেন ভুলতে পারছে না; বরং নানা ঘটনায় তা আরও বেশি স্মরণযোগ্য হয়ে থাকছে সেটা ভাবতে হবে। রবিউলের মৃত্যুর ঘটনায় জিএমপির পক্ষ থেকে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি তদন্ত শুরু করেছে। আশা করি, নিহতের পরিবারের স্বজন, এলাকাবাসীর অভিযোগসহ সবকিছু তদন্তের আওতায় থাকবে।
প্রত্যেক মানুষেরই আইনি সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। বাংলাদেশে মানবাধিকারের যে চিত্র তাতে দেশের ভাবমূর্তির প্রশ্ন উঠছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে কারও মৃত্যু কিংবা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। এ ধরনের ঘটনা রোধে যে আইনটি করা হয়েছিল সেটির প্রয়োগ ও বাস্তবায়নে একধরনের ঢিলেমি, গাফিলতি ও অনীহা রয়েছে সংশ্লিষ্টদের। এমনকি পুলিশ বাহিনী বিভিন্ন সময়ে এই আইনের প্রবল বিরোধিতা করেছে। গত সাত বছরে দু-একটি মামলা করা ছাড়া এই আইনে কারও সাজা হয়েছে, এমন জানা নেই। কিছু ক্ষেত্রে শুধু তদন্ত করেই দায় সারা হয়। কিন্তু পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠলে পুলিশ নিজেরাই তদন্ত করে। তাতে ফল যা হওয়ার তা-ই হয়। এই পরিস্থিতি বদলাতে হলে এসব অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা দরকার বলে মত দিয়ে আসছে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলো। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো কি এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে নিজেদের জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে? সরকার কি পুলিশি নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নেবে?
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ আর নির্বাচনী তাপের মধ্যেই আজ জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট এটি। অনেক যোগ-বিয়োগ কষে বাজেট প্রণয়নের শেষ সময়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচনী চমক হিসেবে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করতে সম্পূর্ণ নতুন পথে হেঁটেছেন। ভর্তুকি নাম দিয়ে বড় অঙ্কের ‘কর ছাড়’ দিয়েছেন। অথচ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে রাজস্ব জাল বিছিয়ে সাধারণ আয়ের মানুষকে আটকে ফেললেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো প্রস্তাবিত বাজেট সারসংক্ষেপ, ভর্তুকির নামে ‘কর ছাড়’কে বৈশি^ক মন্দা মোকাবিলার ঢাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের পরোক্ষ প্রভাবে বাজারে পণ্যের দাম কমার গতিরোধ করবে বলেও সরকারপ্রধানকে জানিয়েছেন।
তবে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ছোটদের কর পরিশোধে চেপে ধরলেও কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের ঠিকই খুশি করলেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমায় খুব বেশি প্রভাব পড়বে এমন আশা করা কঠিন।
এনবিআরের সাবেক সদস্য কর-বিশ্লেষক ড. আমিনুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে কর অব্যাহতি ও কর অবকাশ সুবিধা কমানোর চাপ আছে। এ শর্ত না মানলে ঋণের কিস্তি দেওয়া বন্ধ করা হতে পারে। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় বড় মাপের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার চাপ আছে। বিভিন্নমুখী চাপে সরকার সব পক্ষকে খুশি করতেই আগামীতে কৌশলে কর ছাড় রাখছে ভর্তুকির নাম দিয়ে। অন্যদিকে সাধারণ আয়ের মানুষের ওপর কিন্তু ন্যূনতম কর ধার্য করার কথা শুনছি। অনেক মানুষকে রাজস্বের আওতায় আনার কথাও শুনেছি। এভাবে ছোটদের ওপর ঠিকই কর পরিশোধে চাপ বাড়াল।’
একই মত জানিয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বড় মাপের ব্যবসায়ীদের অনেকে সরাসরি রাজনীতি করেন। অনেকে রাজনীতি না করলেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলেন। এরা সমাজের প্রভাবশালী। বাজেট প্রণয়নকালেই এরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে নিজেদের পক্ষে সুবিধামতো অনেক কিছু আদায় করে নেন। এবারও তাই হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে আইএমএফের জেরার মুখে বলার সুযোগ থাকছে যে কর ছাড় ও ভর্তুকি দুই হিসাব এক করেছি।’
সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকে আশায় আছেন এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী হয়তো জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে সূত্র কষবেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এ বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় কোনো রক্ষাকবচ রাখলেন না। কৌশলী অর্থমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে দেওয়া কথা রেখেছেন। সাধারণ মানুষকে রাজস্ব জালে আটকে ফেলার ছক করেছেন। মূল বাজেটের আকার বাড়ানোর সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের আয়ের হিসাবও বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এখানে কর খাত থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে চলতিবারের তুলনায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করলেন। এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে করবহির্ভূত খাত থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। শেষ সময়ের হিসাবকষে শত সংকটের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করেছেন।
আগামী বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী কর ছাড়সহ ২ লাখ ৮৯ হাজার ২২৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করবেন। জাতীয় বাজেটে নিয়মিত ভর্তুকি হিসাবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা রাখার কথা আছে। বাকিটা প্রত্যক্ষ কর ছাড় দিয়ে ভর্তুকি খাতে অন্তর্ভুক্তি হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষ কর ব্যয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেতনসহ অন্য খাতে ৭৭ হাজার ২১৮ কোটি বা মোট কর ছাড়ের ক্ষুদ্রঋণ খাতে ১২ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি, প্রবাসী আয় খাতে ৯ শতাংশ বা ১১ হাজার ২৮৭ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে ৭ শতাংশ বা ৮ হাজার ৩৮০ কোটি, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক শিল্প খাতে ৪ শতাংশ বা ৪ হাজার ৬১২ কোটি, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ৩ শতাংশ বা ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি, পোলট্রি ও মৎস্য খাতে ২ শতাংশ বা ৩ হাজার ১২০ কোটি, আইটি এবং সফটওয়্যার খাতে ১ শতাংশ বা ১ হাজার ৪৭৭ কোটি এবং পুঁজিবাজার খাতে ১ শতাংশ বা ৯৬৬ কোটি টাকা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইস মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ যেন পুরনো বোতলে নতুন পানীয়। বড়দেরই বিভিন্ন কৌশলে সুবিধা দেওয়া হলো।’
অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ের কৌশল হিসেবে বড় সুবিধা দিলেও ইটিআইএন গ্রহণ ও রিটার্ন দাখিলে কঠোরতা এনেছেন। ইটিআইএন না নিলে ৪০ ধরনের সেবা এবং রিটার্ন দাখিলের সিøপ না নিলে ৩৮ ধরনের সেবা দেওয়া হবে না। এতদিন ইটিআইএন নিয়েও অনেকে করযোগ্য আয় না থাকলে শুধু রিটার্ন দাখিল করেছে, একটি টাকার কর দিতে হয়নি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ১ জুলাই থেকে করযোগ্য আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে।
সাধারণ আয়ের অনেক করদাতা বলেছেন, খাবারের খরচ অনেক বেড়েছে। বাসা ভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসা সবকিছুই এখন বেশি। এর মধ্যে সাধারণ আয়ের ওপর কর পরিশোধে চাপ দেওয়া হলে ভোগান্তি বাড়বে। সাধারণ মানুষকে কর পরিশোধে বাধ্য করলেও সম্পদশালীদের রাজস্ব ফাঁকি কমাতে, বকেয়া আদায়ে এবং অর্থ পাচার রোধে জোরালো কিছু রাখা হয়নি। এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতেও পুরনো পথেই হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী।
আগামী অর্থবছর থেকে রিটার্ন জমা দিতে দেরি হলে বেশি হারে জরিমানা দিতে হবে। বাজেটে আইন করে জরিমানার পরিমাণ প্রদেয় করের পরিমাণ দ্বিগুণ ৪ শতাংশ নির্ধারণে প্রস্তাব করা হয়েছে।
বড়রা সুবিধা দিয়ে রাজস্ব আদায়ে চাপ বাড়ানোয় জীবনযাত্রার অনেক খাতেই খরচ বাড়বে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি কমাতেও বাজেটে রাখা হয়নি কিছু। আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারের অস্থিরতা কবে কমবে তা নিয়ে রয়েছে অশ্চিয়তা। তাই গত মাস ছয়েক থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চাল, ডাল, আট, ময়দা, ভোজ্য তেল, লবণ, চিনি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের খাবারের দাম আপাতত কমছে না। চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষাসহ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়ও কমবে না। গত (নভেম্বর ২০২২-এপ্রিল ২০২৩) ছয় মাসের সাধারণ মূল্যস্ফীতির গড় হার ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বিশেষ কোনো চাপ নেই, অর্থনৈতিক উন্নয়ন গতিশীল রাখতে এবারের বাজেটে থাকছে ধারাবাহিকতা।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেলে ঘোষিত হতে যাওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে 'গরিববান্ধব' উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আরও বলেন, সবাইকে নিয়ে সবার জন্য বাজেট ঠিক করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তার আকার বড় হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে জাতীয় সংসদ ভবনে যাত্রার প্রাক্কালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাজেট সম্পর্কে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বিকেলে জাতীয় সংসদে সাত লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করবেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার অর্জনের লক্ষ্য স্থির করেছে সরকার। সেখানে মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে মোট বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির ৩৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে, এমন আশা করছেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেটে ৫ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেট ঘাটতি হতে পারে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। রবিবার (৪ জুন) থেকে সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হবে।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
দেশের ৬০টি জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে দিনের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এ ছাড়া দেশজুড়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ আরও দুই দিন থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, ঢাকা বিভাগের ১৩টি, খুলনার ১০টি, রাজশাহীর আটটি, বরিশালের ছয়, রংপুরের আটটি, সিলেটের চার ও ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলাসহ চট্টগ্রাম, সীতাকুণ্ড, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
আগামী দুই দিনে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু টেকনাফ উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে এবং বিদ্যমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানান এই আবহাওয়াবিদ।
তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।