
১৫৯২ খ্রিস্টাব্দের ৫ জানুয়ারি, লাহোরে জন্মগ্রহণ করেন প্রখ্যাত মোগল সম্রাট শাহজাহান। শৈশবে সম্রাট জাহাঙ্গীরের এই পুত্রের ডাকনাম ছিল খুররম। সিংহাসনে আরোহণের পর তার নতুন নাম হয় ‘আবুল মুজাফফর শিহাবুদ্দিন মুহম্মদ শাহজাহান সাহিব কিরান-ই-সানী’। মোগল সাম্রাজ্যের শাসক হিসেবে তিনি ১৬২৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারত উপমহাদেশ শাসন করেছেন। তিনি ছিলেন বাবর, হুমায়ুন, আকবর এবং জাহাঙ্গীরের পরে পঞ্চম মোগল সম্রাট। শাহজাহান অনেক শোভামণ্ডিত স্থাপনা তৈরি করেন, যার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত আগ্রার তাজমহল যা তার স্ত্রী মমতাজ মহলের সমাধি হিসেবে পরিচিত। অন্যান্য স্থাপত্যকীর্তির মধ্যে রয়েছে দিল্লি জামে মসজিদ, সিন্ধুর শাহজাহান মসজিদ, লাহোরের মতি মসজিদ, লাহোরের শালিমার গার্ডেন ইত্যাদি। ১৬৩০ খ্রিস্টাব্দে উড়িষ্যায় ভয়ানক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এই দুর্ভিক্ষের পরপরই উড়িষ্যায় ব্যাপক মড়ক দেখা দেয়। এই সময়, শাহজাহান সাত লাখ টাকার রাজস্ব মওকুফ করে দেন এবং সরকারি ব্যবস্থাপনায় লঙ্গরখানা খোলা হয়। মোগল সম্রাট আকবর ও জাহাঙ্গীরের বদান্যতায় পর্তুগিজরা এখানে কুঠি সম্প্রসারিত করে তাদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করে এবং নানা ধরনের অনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করতে থাকে। তাদের দমনে ভূমিকা রাখেন সম্রাট শাহজাহান। অন্যদিকে, শাহজাহান সাম্রাজ্যের পূর্ব দিকে আসাম ও আরাকানে রাজ্য বিস্তারের নীতি অনুসরণ করেন। উত্তরাধিকারী নিয়ে অনেক নাটকীয়তা ও লড়াইয়ের পর পুত্র আওরঙ্গজেব সিংহাসনে আরোহণের ৮ বছর পর ১৬৬৬ সালের ২২ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন সম্রাট শাহজাহান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে অধ্যাপনা করছেন ড. আকসাদুল আলম। বাংলা অঞ্চলের ইতিহাসচর্চায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশে ইতিহাস চর্চার রাজনীতি, ধারা, গতি-প্রকৃতি এবং স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ইতিহাস পঠন-পাঠনের সংকট ও করণীয় নিয়ে একজন ইতিহাসবিদ হিসেবে কথা বলেছেন দেশ রূপান্তরের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সম্পাদকীয় বিভাগের সাঈদ জুবেরী
দেশ রূপান্তর : দেশে ইতিহাস চর্চার সার্বিক চিত্রটি কীরকম? একজন ইতিহাসবিদ হিসেবে এর সংকট ও করণীয় কী বলে আপনি মনে করেন?
ড. আকসাদুল আলম : বাংলাদেশে ইতিহাসচর্চা একটা বিশেষ ধারায় চলছে। গত ৫০ বছর ধরে ইতিহাসের যে চর্চা সেটাকে মোটামুটিভাবে বলা যেতে পারে একটা ন্যারেটিভ বেইজড ধারা। এই মেইনস্ট্রিম ইতিহাস চর্চার ধারা ৫০ বছরের আগেই শুরু হয়েছিল এবং এই চর্চায় খুব একটা বড় পরিবর্তন আসেনি।
দেশ রূপান্তর : মানে সেটা কি পাকিস্তান পিরিয়ড নাকি তারও আগের?
ড. আকসাদুল আলম : সেটা যদি সময়ের বিবেচনায় বলি তাহলে ভালো হয়। মোটামুটিভাবে ধরা যেতে পারে বিগত ১০০ বছর। তো এই ১০০ বছরে ইতিহাসচর্চার ধারাটা প্রায় একই রকম। আমরা যদি বলি একটা কনভেনশনাল বা ট্র্যাডিশনাল ওয়ে অব স্ট্যাডিং হিস্ট্রি, সেটাই এখানে প্রধান হিসেবে বিদ্যমান রয়েছে। বলার মতো কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি। ক্রিটিক্যাল এনালিসিস বা একটা ক্রিটিক্যাল থিংকিংয়ের দিকে, মানে হিস্ট্রিকে ক্রিটিক্যালি দেখার অনুপস্থিতি তীব্রভাবে অনুভূত হয় এখানে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। মোটামুটিভাবে যারা এখানে ইতিহাস গবেষণা করছেন তারা মূলত একটা গৎ বাঁধা ন্যারেটিভ বেইজড ইতিহাস চর্চাই করছেন। তাত্ত্বিক কিংবা কনসেপচুয়াল জায়গা অথবা একটা ক্রিটিক্যাল থিংকিংয়ের জায়গাগুলো অথবা ইতিহাস তত্ত্বকে একটা বিশ্লেষণাত্মক সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার চেষ্টার অভাব এখানে রয়েছে।
দেশ রূপান্তর : রাষ্ট্রের তো একটা ন্যারেটিভ বেইজড ইতিহাস থাকে বলে জানি। কিন্তু আমাদের এখানে তো সেই ন্যারেটিভ নিয়েই বিতর্ক হয়। এখানে ক্ষমতার বদল হলে গ্রহণ-বর্জনের মধ্য দিয়ে ইতিহাস চর্চার চেয়ে ইতিহাস নিয়ে রাজনীতিটাই মুখ্য হয়ে ওঠে। এভাবে কি কোনো ন্যারেটিভ দাঁড়ায়, যেটা সর্বজনীন?
ড. আকসাদুল আলম : প্রশ্নটা ইন্টারেস্টিং। দেখেন সারা পৃথিবীতেই ইতিহাস হচ্ছে রাজনীতির একটি উপকরণ। ইতিহাসকে ব্যবহার করা হয় সব ধরনের জ্ঞানের ভিত্তি হিসেবে, রাজনীতির খুঁটি হিসেবে। সুতরাং বাংলাদেশে যেটি হচ্ছে সেটি নতুন কিছু নয়। রাজনীতি তার নিজস্ব ধারায় অনেক কিছুকেই ব্যবহার করবে। এতে কেউ লাভবান হতে পারেন, কেউ বা ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু ইতিহাসের একটা শাস্ত্রীয় প্রথা আছে, পদ্ধতি আছে। ইতিহাসের সেই প্রথা অনুযায়ী চর্চা দরকার। সেই চর্চা বাংলাদেশে কতটা হচ্ছে তা একটা প্রশ্ন। মানে ইতিহাসকে নৈর্ব্যক্তিক হতে হবে, এর স্থানিক এবং কালিক মানদন্ড নিশ্চিত করতে হবে। আপনি ভিন্ন ভিন্ন ভৌগলিক বাস্তবতায় কোন ইতিহাস কোন সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে পড়াচ্ছেন সেই বাস্তবতাকে সামনে রেখে ইতিহাসের বয়ান তৈরি হতে হবে। বিশেষভাবে দেখা যায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে জাতীয়তাবাদী ভাবধারা এখানকার ইতিহাসের বয়ানে, চর্চায় খুব তীব্রভাবে বিদ্যমান। এটাকে ভালো-খারাপ মূল্যায়ন করাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো সর্বসাধারণের জন্য মানুষের সামষ্টিক অভিজ্ঞতার একটা ইতিহাসের শাস্ত্রসম্মত বয়ান তৈরি করা। কিন্তু সেই দিকে যাওয়ার বদলে দক্ষিণ এশিয়া বিশেষ করে বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক ইতিহাস পঠন-পাঠনের ইতিহাসের মূলধারাটি এখনো রাজা-বাদশাহ, রাজনীতি এবং কতিপয় অভিজাতের উচ্চাভিলাষ, জয়-পরাজয়কে মোটা দাগে রিপ্রেজেন্ট করছে। এর বিপরীতে যে প্রবণতা বা প্রয়াস যে একেবারেই নেই, তা কিন্তু নয়। সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতির ভিত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট ভূ-খন্ডের জনগোষ্ঠীর ধারাবাহিক অভিজ্ঞতার চিত্র বাস্তবতা তুলে আনার একটা প্রয়াস কোনো কোনো ইতিহাসবিদেও ব্যক্তিগত গবেষণাচর্চায় হয়তো আছে, তবে সেটা বর্তমান গতানুগতিক চর্চার ডামাডোলে এবং রাষ্ট্রীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।
দেশ রূপান্তর : মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের নানারকম বিরোধাত্মক তথ্য, ক্ষমতাসীন দলের সাপেক্ষে তথ্য সংযোজন-বিয়োজনের পরও আমরা মোটা দাগে একটা বয়ান জানি। এবং আমরা বুঝতে পারি কোন দল কেন কী তথ্য জানাচ্ছে বা বাদ দিচ্ছে। কিন্তু রাজনীতি মূলত যেটা নিয়ে হচ্ছে সেটা হলো প্রাচীন এবং মধ্যযুগের ইতিহাস নিয়ে। বাংলার ইতিহাসের এই রহস্য ও ধোঁয়াশাময় অধ্যায় নিয়ে দেশে চর্চার ধরণটা কেমন? আপনার মূল্যায়ন কি?
ড. আকসাদুল আলম : এমন একটি বিষয় উল্লেখ করলেন যে, আমাকে হতাশাজনক কথাই বলতে হবে। আপনি যথার্থই বলেছেন যে, বাংলাদেশের প্রাচীন এবং মধ্যযুগের ইতিহাসের বয়ান নিয়েই মূলত রাজনীতিটা হয়।
দেশ রূপান্তর : এখানে ওই কালক্রম ধরেই তো কে স্থানীয়, কে বহিরাগত, আর্য-অনার্য, মুসলমান-হিন্দু বিভেদমূলক বয়ান তৈরি ও তর্ক হয়। কাউকে বীর, কাউকে দখলদার বলা হয়।
ড. আকসাদুল আলম : ঠিক বলেছেন। ইতিহাসে এই যে ‘গৌরব’ আর ‘শ্রেষ্ঠত্ব’ আরোপ করা, সেই বয়ানই বাংলাদেশের মূলধারার ইতিহাস চর্চার মধ্যে প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। বিশেষ করে পাঠ্যপুস্তকগুলোতে। বাংলাদেশের ৫০/৬০ বছরের পাঠ্যবইয়ের সিলেবাসে খুব একটা পরিবর্তন আনা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যে সিলেবাসও মোটাদাগে বলা যেতে পারে যে এটা ৬০/৭০ বছর ধরে প্রায় একই ধরনের। সুতরাং এই সিলেবাসগুলোর দিকে আপনি গভীরভাবে খেয়াল করলে দীর্ঘকাল ধরে পরিবর্তন না করার পেছনের রাজনীতি এবং এর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য সহজেই টের পাবেন। যে উদ্দেশ্য, আপনি যেভাবে ব্যাখ্যা করলেন- সেখানে রাজা-বাদশাহকে শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া, কোনো ধর্ম-বর্ণ-ভাষা-জাতিকে গৌরবান্বিত কিংবা খাটো করা, এই শ্রেষ্ঠত্ব, গৌরব, সেরার স্বীকৃতি তৈরির বয়ানই এখানে ইতিহাসচর্চার নামে চলে আসছে, যা দুঃখজনক। এবং এর গোটা প্রক্রিয়াতেই প্রাচীন এবং মধ্যযুগের ইতিহাসকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যবহার করা হয়। দুঃখজনক হচ্ছে বাংলাদেশে প্রাচীন এবং মধ্যযুগের ইতিহাসচর্চায় আমরা ভীষণরকম পিছিয়ে আছি। বাংলাদেশ ৫০ বছর অতিক্রম করেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১০০ বছর অতিক্রম করেছে। কিš‘ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগ স্বাধীন বাংলাদেশের ৫০ বছরেও ২/১ জন প্রাচীন ও মধ্যযুগের ইতিহাস গবেষক তৈরি করতে পারেনি। অথচ ত্রিশ্ থেকে ষাটের দশক পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ প্রাচীন ও মধ্যযুগের ইতিহাসে দৃষ্টান্তমূলক গবেষণাকর্ম উপহার দিয়েছে। সেই ধারা বন্ধ হয়ে গেছে স্বাধীন বাংলাদেশে। কেনো এমন হলো তা খতিয়ে দেখা জরুরি।
দেশ রূপান্তর : ঢাবিতে কি প্রাচীন ও মধ্যযুগের ইতিহাস এখন আর পড়ানো হয় না?
ড. আকসাদুল আলম : পড়ানো হয়। তবে পরিস্থিতি খুবই নাজুক। এক সময় প্রাচীন ও মধ্যযুগের ইতিহাস পঠন-পাঠনের আলাদা আলাদা গ্রুপ ছিল। কিন্তু বিগত ৪০/৫০ বছর যাবত প্রাচীন ও মধ্যযুগের পৃথক দুটি গ্রুপ এক করে একটি গ্রুপ করা হয়েছে। প্রাচীন ইতিহাস গবেষণা, চর্চা ও পঠন-পাঠনের রয়েছে নিজস্ব প্রথা-পদ্ধতি। মধ্যযুগের প্রথা-পদ্ধতিও সম্পূর্ণ ভিন্ন। কিন্তু সম্পূর্ণ দুটি ভিন্ন গ্রুপ এক করে একটি গ্রুপ বানিয়ে পড়ানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীদেরকে এই গ্রুপ পড়তে উৎসাহিতও করা হতো না। লিপিতত্ব, মুদ্রাতত্ব, ভাস্কর্যবিদ্যা, জাদুঘরবিদ্যাসহ প্রাচীন ও মধ্যযুগের ইতিহাসের অসাম্প্রদায়িক গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো ইতিহাস বিভাগের সিলেবাস থেকে বাদ দিয়ে চালু করা হলো প্রাচীন বাংলার কিছু বিষয়াবলী এবং মধ্যযুগের বাংলার কিছু বিষয়াবলী। এর ফলে ঢাবিতে গত ৫০ বছরে প্রাচীন বা মধ্যযুগের ইতিহাসের কোনো সত্যিকারের গবেষক, যেমন প্রত্নতত্ত্ব, এপিগ্রাফি, আইকোনোগ্রাফি জানা কোনো গবেষক তৈরি হয়নি। আপনি সামান্য মনোযোগ দিলে এই পরিস্থিতির পেছনের উদ্দেশ্য ও রাজনীতি বুঝতে পারবেন। পাকিস্তান আমলের ভাবধারায় পরিচালিত ইতিহাস এভাবেই দীর্ঘকাল ধরে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। বর্তমানেও প্রাচীণ ও মধ্য পর্বের গবেষণা হচ্ছে না বললেই চলে। আর এই ব্যর্থতার কারণে যেটি হয়েছে তা হলো একটি জাতিরাষ্ট্র গঠনের ইতিহাসের ভিত্তির জায়গা, শিকড়ের জায়গা নিয়ে ইচ্ছেমতো রাজনীতি করার এবং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী ইতিহাস লেখার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এর খেসারত দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থী, সমাজ এবং দেশকে। প্রাচীন ও মধ্যযুগ নিয়ে এই ৫০ বছরে দুএকটি নোট বই ছাড়া তেমন কোনো কাজই হয়নি। সম্প্রতি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে প্রাচীন ও মধ্যযুগের ইতিহাসের উপর যে চার খন্ড গ্রন্থ রচনা করা হয়েছে সেখানে বিষয়ের বৈচিত্র্য রয়েছে বটে কিন্তু ধর্মভিত্তিক, ভাষাভিত্তিক, রাজবংশভিত্তিক ইতিহাস, সেই পাকিস্তান আমলের প্রচলিত ধর্মভিত্তিক সেই পুরনো বস্তাপঁচা ন্যারেটিভ প্রাধান্য পেয়েছে।
দেশ রূপান্তর : আপনি জানেন স্কুল পর্যায়ে নতুন কারিকুলাম ও পাঠ্যবই এসেছে। সেখানে একপাক্ষিক ইতিহাস নির্মাণের অভিযোগ করছেন কেউ কেউ। আপনি কী মনে করেন?
ড. আকসাদুল আলম : স্কুলের নতুন পাঠ্যবই আমি দেখেছি। পুরো বই প্রণয়নের সঙ্গে থাকতে না পারলেও আমি এর কিছু কিছু পর্যায়ে জড়িতও ছিলাম। আপনি যদি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান পাঠ্যবইয়ের অনুশীলনী খণ্ডে প্রকাশিত ইতিহাসের মাত্র দুটি চ্যাপ্টার একটু কষ্ট করে পড়েন তাহলে দেখতে পাবেন যে, অভিযোগগুলোর সত্যতা সেভাবে নেই। ছোটখাটো কিছু ভুলত্রুটি হয়তো পাওয়া যাবে। ইতিহাসের বয়ান, চিন্তা, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে স্বাভাবিকভাবেই পার্থক্য হতে পারে। কিন্তু না পড়ে সম্পূর্ণ কন্টেক্সটাকে সামনে না নিয়ে একদম পছন্দ মতো দু-একটি লাইনকে সামনে এনে যেভাবে আলোচনা হচ্ছে- সেটা আমার কাছে ইতিহাসম্মত মনে হয়নি। বরং মনে হয়েছে রাজনীতি। একটা সামগ্রিক ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ, মূল্যায়ন হতেই পারে। সেই আলোচনা যারা করছেন, তথ্য-প্রমাণভিত্তিক ও যুক্তিপূর্ণ হলে সেটা গ্রহণযোগ্যও হতে পারে। নিশ্চয়ই এনসিটিবি সেরকম জায়গাগুলোকে চিহ্নিত করে যদি কোথাও তথ্যগত ভুল থাকে সেগুলো সংশোধন বা সংযোজন করবে।
দেশ রূপান্তর : আগের ইতিহাস বইয়ের সঙ্গে নতুন কারিকুলামের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বই দুটিতে কী ধরনের পার্থক্য রয়েছে?
ড. আকসাদুল আলম : দেখেন আমি এই পাঠ্যপুস্তক যতটুকু দেখার ও পড়ার সুযোগ পেয়েছি, সেখান থেকে পরিষ্কার করে বলতে পারি যে, এতদিন স্কুলের ইতিহাস পাঠ্যসূচিতে বাংলাদেশের ইতিহাস সন-তারিখে ভারাক্রান্ত, নাম-যশ-খ্যাতি বিস্তারে ব্যতিব্যস্ত সুদূর ভূ-খণ্ড থেকে আগত ক্ষমতা ও অর্থলিপ্সু রাজা-বাদশাহদের কে কার বাবা, কে কার দাদা, কে কোথায় যুদ্ধ করলেন, কত সালে কোন যুদ্ধ হলো, সেনাপতির নাম, কোন বংশ কোথা থেকে এলো, কোথায় তারা বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করলেন ইত্যাদি এমন সব তথ্য দিয়ে বইগুলো লেখা ছিল যে আমাদের শিশুদের কাছে ইতিহাসকে আতঙ্কের জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এটা বিগত ৫০/৬০ বছর ধরে বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তকে চলেছে। এই প্রক্রিয়াটাকে এবারই সম্ভবত প্রথম যে একটু কিছুটা পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা এনসিটিবি করেছে বলে আমার মনে হয়েছে। আমার ভূল হতে পারে। কিন্তু পাঠ্যক্রম এবার যেভাবে ঢেলে সাজানো হয়েছে সেই প্রক্রিয়াটা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। যে নতুন ধরণের শিখন, পঠন-পাঠন, পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করা হয়েছে, যার একটা পরীক্ষামূলক সংস্করণ এখন চলছে বলে এনসিটিবি জানিয়েছে, তা নিয়ে অবশ্যই সামগ্রিক একটা আলোচনা হতে পারে। বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কী সমস্যা আছে, স্কুলগুলো তৈরি কিনা, শিক্ষকরা তৈরি কিনা; সেই জায়গাটাতে কিন্তু আমাদের আলোচনাটা হচ্ছে না।আমাদের আলোচনা যেটা হচ্ছে, আমি বলছি না যে সেটার গুরুত্ব নেই, ইতিহাসের যে কোনো আলোচনাই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ইতিহাসের তথ্যগুলোর ব্যাখ্যা নানা ধরনের হতে পারে। পাশাপাশি, আমি মনে করি আমাদের গুরুত্ব দেওয়া দরকার নতুন পাঠ্যসূচি, নতুন পাঠ্যক্রম পদ্ধতিগুলো নিয়ে। ইতিহাস গবেষক এবং বিদ্যৎ সমাজের সকলেরই এটা নিয়ে কথা বললে ও পরামর্শ দিলে ভালো হয়। একইসঙ্গে পাঠবইয়ে আমাদের ইতিহাসের বয়ান এমন হওয়া প্রয়োজন যাতে করে শিক্ষার্থীরা বিশ^জনীন, উদার, অসাম্প্রদায়িক, মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।
দেশ রূপান্তর : এ ক্ষেত্রে নতুন বইয়ে কোন কোন বিষয়গুলো গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, এবং কেন? বয়ানের পার্থক্যটা ঠিক কী রকম?
ড. আকসাদুল আলম : বাংলার ইতিহাস বলতে আমরা আসলে কার বিবরণকে বুঝব? আগ্রাসী শাসকদের রাজনীতি, ধর্ম ও ভাষার শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার ইতিহাস নাকি স্থানীয় প্রাকৃতজনের জীবন-জীবিকা-নির্মাণ-ধ্বংস-দুঃখ-সুখ, একইসঙ্গে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে টিকে থাকা এবং সমাজ-সংস্কৃতি (বি)নির্মাণের অভিজ্ঞতার বিবরণ? আবেগ, বর্ণ, ধর্ম ও জাতিগত পক্ষপাতের বাইরে এসে ভিন্ন ভিন্ন স্থানিক-ভৌগোলিক বাস্তবতায় প্রাকৃতিক এবং মনুষ্যসৃষ্ট প্রতিকূলতা জয় করে সাধারণ মানুষের টিকে থাকার সামষ্টিক ও সামগ্রিক অভিজ্ঞতার বয়াণ আমাদের ইতিহাস পঠন-পাঠনে এবং গ্রন্থে কবে স্থান পাবে? এবারের বইতে রাজা-বাদশা, উচ্চাকাঙ্ক্ষী সেনা নায়কদের বদলে সাধারণ মানুষকে ইতিহাসে সামনে আনা হয়েছে বলে আমার মনে হয়েছে।
সাক্ষাৎকারের বাকি অংশ আগামীকাল প্রকাশিত হবে।
এক. বেকারত্বের মিছিলে নতুন সমস্যাতৈরি পোশাক শিল্পে নারীশ্রমিক নিয়োগ কমে যাওয়া। ‘ম্যাপড ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্প মোট ৩ হাজার ৫শটি রপ্তানিযোগ্য পণ্য উৎপাদনকারী কারখানার তথ্য সংগ্রহ করে দেখিয়েছে, নারীশ্রমিকদের হার ৫৮ শতাংশ ও পুরুষদের ৪২ শতাংশ। অথচ একটা সময় ছিল নারীশ্রমিক প্রায় ৮০ শতাংশ। করোনাকালে বাল্যবিবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে, মূল্যস্ফীতিতে শহরে বসবাস কঠিন হয়ে পড়েছে, গরিব মানুষ শহর ছাড়ছে বলে পোশাক শিল্পের নারীশ্রমিক সরবরাহ কমছে। এছাড়া আছে কারিগরি সমস্যা। রোবট, কাটিং মেশিন, লেজার মেশিন, অটোমেটিক যন্ত্রপাতি পরিচালনায় নারীদের পর্যাপ্ত ট্রেনিং দেওয়া হয় না বলে নারীর তুলনায় পুরুষশ্রমিক নিয়োগের হার বাড়ছে।
কমবয়সী নারীর প্রখর আলো, গরম, মাইক্রো ফাইবারের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দীর্ঘ সময়ের শ্রমঘন কাজে নারীর দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যক্ষতি বাড়ছে বলে নারীরা পোশাক শিল্পে আগ্রহ হারাচ্ছেন। প্রান্তিক অর্থনীতির বর্ধিত নারী বেকারত্ব দারিদ্র্য পরিস্থিতিকে শোচনীয় করবে। এসব কাঠামোগত সমস্যার সমাধান জরুরি হয়ে পড়ছে।
বেসরকারি হিসাবে প্রায় ৬০ লাখ উচ্চ শিক্ষিত বেকার, সঙ্গে শুরু হয়েছে স্বল্প দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমবাজারের বেকারত্ব। একদিকে কর্ম তৈরির সরকারি কৌশল নেই, অন্যদিকে জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও ডলার-সংকট, বেসরকারি ঋণ ও বিনিয়োগ খাতে পাচার এবং কেলেঙ্কারিজনিত মন্দার থাবা। দক্ষতা তৈরিতে শিল্পে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা নেই। দেশের বেকারত্বের কেন্দ্রীয় ডেটাবেইস ও চাকরি তৈরির মাসিক ড্যাশবোর্ডও নেই। ফলে সরকার ও পরিসংখ্যান ব্যুরো বেকারত্ব পরিস্থিতি নিয়ে অন্ধকারে রয়েছে।
সরকার দাবি করেছে, দেশের অর্থনীতি পোক্ত। মানুষের আয় বাড়ছে এবং মাথা তুলছে কর্মসংস্থানের হার। কিন্তু সেই দাবিকে প্রশ্নের মুখে ফেলে অতিসম্প্রতি জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সংসদে জানিয়েছেন, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও অফিসে বেসামরিক জনবলের ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি পদ শূন্য রয়েছে।
বেকারত্বের সরকারি সংখ্যা যৌক্তিক কিংবা অযৌক্তিক সেই প্রশ্নে বাড়াব না। তবে এই দিয়ে ফলপ্রসূ কৌশল তৈরিও অসম্ভব। বেকারত্ব বা কাজের বাজারের পূর্ণাঙ্গ কোনো পরিসংখ্যান সরকারের তরফে প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, বেকারত্বের হার এখন এই সময়ে বেশি। বেকারত্বের সরকারি সংখ্যাও রেকর্ড করেছে।
দুই. সম্প্রতি বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে। সেখানে অর্থনীতিবিদ ও গণনীতি বিশ্লেষক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য দেশের বেকার যুবকদের সরকারের সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সর্বশেষ জনশুমারির তথ্যানুযায়ী দেশে এখন পাঁচ কোটি যুবক রয়েছে। এর মধ্যে গড়ে তিনজনের মধ্যে একজন বেকার। বাংলাদেশে কর্মের নিশ্চয়তা দিয়ে একটি আইন প্রণয়ন করা এখন সময়ের দাবি।
তার এ বক্তব্যের সঙ্গে পুরোপুরি সহমত জানাই। একই সঙ্গে মনে করি, কর্মসংস্থান কমিশন গঠনও এখন জরুরি। ওই কমিশন বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করবে। তাছাড়া কমিশন স্বয়ংক্রিয় অনলাইন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কর্মপ্রত্যাশী যুবকদের নিবন্ধন নিশ্চিত করে তাদের প্রশিক্ষণ, দক্ষতা ও চাহিদা অনুযায়ী কাজের ব্যবস্থা নেবে।
দেশে যুবসমাজের ভেতরে নানা ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। অনেকেই হতাশ হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন। অনেকে আবার মাদকাসক্তসহ নানা ধরনের উগ্রবাদী চিন্তার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। এটি আমাদের জন্য বড় ধরনের অ্যালার্মিং বিষয়। এসব থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করতে হলে উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। অনেক দেশে যুবক ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হয়। আমাদের দেশেও সেটি সম্ভব।
তিন. বাংলাদেশের চাকরি বাজারে আগে থেকেই দক্ষ জনবলপ্রাপ্তির সমস্যা রয়েছে। বাজার চাহিদার সঙ্গে শিক্ষার কোর্স-কারিকুলামের সংযোগ স্থাপিত হয়নি বলে এক পদের বিপরীতে শত শত আবেদনকারী থাকেন, কিন্তু যোগ্য ও দক্ষ রিসোর্স পাওয়া যায় না। অন্যদিকে দেশের প্রায় ৮৫ থেকে ৮৯ শতাংশ শ্রমবাজার অপ্রাতিষ্ঠানিক। ফলে চাকরি বাড়াতে বেসরকারি খাতে সত্যিকার বিনিয়োগ বাড়ানোর কার্যকর উদ্যোগ দরকার, এমন স্বচ্ছ উদ্যোগ যেখানে বিনিয়োগের নামে ঋণ নিয়ে সেটা পাচার কিংবা ভোগে ব্যয় হবে না। সরকারকে ক্ষুদ্র, এসএমই ও বৃহৎ ব্যবসা ও শিল্পের ভালো ব্যবসায়ীর ডেটাবেইস তৈরি করতে হবে, যারা ঋণ নিয়ে কিস্তি ফেরত দেন ও ব্যবসা করেন। তথ্যশালার আলোকে ক্রেডিট রেটিং-ভিত্তিক আধুনিক ঋণদান ব্যবস্থা দরকার। ব্যাংক ঋণ দানের ডিজিটাল ফিনটেক সমাধান ও আর্থিক তথ্যনির্ভর নতুন ডিজিটাল কৌশল বের করাও জরুরি। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত, ক্ষুদ্র বা ব্যাস্টিক অর্থনীতির চাকরি বাঁচানো মন্দাকবলিত অর্থনীতির বড় কাজ। প্রশাসনের দুর্নীতি ও সরকারের অপখরচের লাগাম টেনে ধরে সামাজিক নিরাপত্তা ও চাকরি বাড়ানোর উদ্যোগ চাই।
চার. চাকরির জন্য ভিড় বাড়ছে। কিন্তু চাকরি বাড়ছে না। যে অর্থনীতি আয়ের সুযোগ দিতে পারে না, তা কোন অর্থে স্বস্তিদায়ক? শিক্ষা শেষে কাজে যোগ দিতে না পারা মানে শিক্ষিত মানুষের কর্মক্ষমতার অপচয়। অবসরের গড়পড়তা বয়স ৬০ বছর। তাই চাকরি পেতে যত দেরি হবে, তত অপচয় হবে কর্মক্ষমতার। যা দেশের সব থেকে মূল্যবান সম্পদ। বেকারত্বের কারণে মানবসম্পদের অপচয় আখেরে সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই জনবহুল দেশের যুবসমাজকে শুধু চাকরির ওপরে নির্ভর করে না থেকে স্বনির্ভর হওয়ার প্রয়োজন। শিক্ষাগত ডিগ্রি অর্জন নয়, হাতেকলমে শিক্ষার প্রসার ঘটানো জরুরি।
লেখক : প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন
আমাদের জীবনের সঙ্গে রয়েছে পাখির নিবিড় সম্পর্ক। ‘পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল, কাননে কুসুমকলি সকলি ফুটিল’ কিংবা ‘পাখিটার বুকে কেউ তীর মেরো না, ওকে গাইতে দাও’ এই সব স্মৃতিজাগানিয়া কবিতা আর গান আমাদের যাপিত জীবনে পাখির সকণ্ঠ উপস্থিতিকে জানান দিয়ে যায়। ‘তোমরা যখন শিখছো পড়া/ মানুষ হওয়ার জন্য,/ আমি না হয় পাখিই হবো,/ পাখির মতো বন্য।’ অথবা ‘এমন যদি হতো/আমি পাখির মত/উড়ে উড়ে বেড়াই সারাক্ষণ’। গান আর কবিতায় পাখি এসেছে তাই নানা অনুচ্ছেদে নানা মাত্রিকতা নিয়ে।
আমরা সৌভাগ্যবান যে, না চাইতেই আমাদের দেশে প্রতি বছর শীতকালে অসংখ্য পাখি এসে ভিড় করে। সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, তিব্বত, হিমালয়ের পাদদেশ, চীন-সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল পথ পেরিয়ে এখানে আসে তীব্র শীত ও খাদ্যাভাব থেকে বাঁচার জন্য। নভেম্বর মাস থেকে শুরু করে প্রায় এপ্রিল মাস পর্যন্ত এরা আমাদের অতিথি হয়ে থাকে। এসব পাখির বেশির ভাগই জলচর ও হাঁস প্রজাতির। বৃক্ষচারী পাখিও আছে, তবে সংখ্যায় কম। আগন্তুক পাখিদের মধ্যে থাকে বালিহাঁস, চখাচখি, বাদিহাঁস, শামুকখোল ইত্যাদি। প্রকৃতির ক্ষতিকর পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ, ইঁদুর খেয়ে ওরা ফসল ও জলজ প্রাণীর সুরক্ষা সাধন করে। শীতের প্রকোপ কমলে এরা আবার ফিরে যায় নিজেদের দেশে।
ওরা জানে যে কখন ওদের কোন দেশে আশ্রয় নিতে হবে। এজন্য আসার আগে ওরা পাখার নিচে বেশি চর্বি জমা করে রাখে। মাইলের পর মাইল ওরা উড়ে চলে সেই সঞ্চিত চর্বির শক্তিতে। ওদের পরিযায়ন স্বভাবটাও বেশ অদ্ভুত। সাধারণত ওরা দলবেঁধে চলে। যেখানে ওরা একবার আসে, সাধারণত সেসব জায়গাতেই পরের বছরগুলোতেও আসার চেষ্টা করে। সবসময় একই পাখি হয়তো আসে না। তবে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য অবশ্যই পূর্ব অভিজ্ঞ পাখি থাকে যারা ওড়ার সময় ঝাঁকের সামনে থাকে ও পথের নির্দেশ দেয়। এদের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, নিরাপত্তার অভাব বোধ করলে জায়গা পরিবর্তন করে ফেলে। একবার কোনো জায়গা ছেড়ে দিলে তারা আর সেখানে ফিরে যায় না! ওদের দেহে অসাধারণ এক সংবেদ ও সাড়া প্রদান কৌশল আছে যা দিয়ে ওরা শত শত এমনকি হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে ঠিকই আগের জায়গায় ফিরে আসতে পারে। যাত্রাপথের আকাশ, নক্ষত্র, পাহাড়, নদনদী, জলভূমি, অরণ্য ইত্যাদি ওরা চিনে রাখে এবং এসবের সাহায্যে ঠিকই গন্তব্যে পৌঁছে যায়। দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া পাখিগুলো একটু উষ্ণতা, খাদ্য আর আশ্রয়ের আশায় আমাদের দেশের বিভিন্ন বনজঙ্গল, হাওর, বাঁওড়, খাল, নদী, চর, বিল, জলাশয়ে এসে জড়ো হয়। পাখিপ্রেমীরা মেতে ওঠে পাখি দেখার আনন্দে।
এইসব অতিথি পাখিদের জীবন এখন সংকটে। পাখি গবেষকরা এর কারণও খুঁজে বের করেছেন। এখানে পরিযায়ী পাখিদের বাসস্থান ক্রমে সঙ্কুচিত হচ্ছে। নিচু জমিতে গড়ে ওঠা ঝিল, বিল, প্রাকৃতিক সরোবর ছাড়াও মানুষের তৈরি দিঘি, পুকুরেও এদের আস্তানা। এই জলাভূমিগুলো বর্তমানে ভূমিরাক্ষসদের হাতে দারুণভাবে আক্রান্ত। তবে এটাই একমাত্র কারণ নয়। পরিযায়ী পাখিদের অস্তিত্ব সংকটের একটি অন্যতম কারণ হলো হত্যা করার প্রবণতা। যে সব পাখির মাংস সুস্বাদু তাদেরই মূলত শিকার করা হয়। গ্রামেগঞ্জে এদের ধরার জন্য ফাঁদ পাতা হয়। এদেশে পাখি নিধনের ব্যাপারে কড়া আইন থাকলেও মানুষের সচেতনতার অভাবে তা আর সম্পূর্ণরূপে ফলপ্রসূ হয় না।
অন্য দিকে, প্লাস্টিক দূষণ পাখিদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। শুধুমাত্র বিদেশ থেকে আসা পাখিরা নয়, দেশীয় পাখিদের জীবনও আজ হুমকির মুখে। বিশেষ করে হাঁস গোত্রীয়রা প্লাস্টিক দূষণের শিকার বেশি হচ্ছে। এর কারণে মা পাখিদের জীবন বিপন্ন তো বটেই, এদের সন্তানরাও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে অকালে।
এ ছাড়া অনেক পাখি গভীর জলে ডুব দিয়ে খাদ্য সংগ্রহ করে থাকে। এ সময় তারা প্লাস্টিক ব্যাগ ও পরিত্যক্ত জালে আটকা পড়ে জলের ওপরে উঠতে পারে না ও বেঘোরে প্রাণ হারায়। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ ৯৯ শতাংশ পাখির শরীরই কোনো না কোনোভাবে প্লাস্টিক দ্বারা আক্রান্ত হবে। স্থলচর অতিথিরা খাদ্যের ব্যাপারে চাষের জমির ওপর নির্ভর করে থাকে। আর সেখানেই নিঃশব্দে লুকিয়ে থাকে তাদের মরণফাঁদ। উন্নত ফলনের আশায় অতিমাত্রায় কৃত্রিম রাসায়নিক বা কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়। পাখিরা এই সব দানাশস্য খাওয়ার ফলে ফসলের মধ্যে সঞ্চিত বিষ তাদের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
অনেকে আবার পাখির সংখ্যা হ্রাসের কারণ হিসেবে মোবাইল ফোনের টাওয়ারের সংখ্যা অত্যধিক বৃদ্ধিকে দায়ী করছেন। মাত্রাধিক তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণ স্বল্প মেয়াদে তেমন কুপ্রভাব না ফেললেও দীর্ঘদিনের সংস্পর্শে কুপ্রভাব পড়তে বাধ্য। এর প্রভাবে যেসব পাখি প্রজননের জন্য এ দেশে আসে তাদের সে ক্ষমতাই হারিয়ে যাচ্ছে, নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ডিম। শহরের আশপাশে তাই এখন লাল মুনিয়া, নীল কটকটিয়া, পশ্চিমি হলুদ খঞ্জনাদের দেখা মেলা ভার।
ইদানীং আরও একটি ব্যাপার চোখে পড়ছে। কোনো ঝিল বা বিলের কাছে শান্ত পরিবেশে পরিযায়ী পাখিরা আশ্রয় নিলেই তাকে ঘিরে তৈরি হচ্ছে পিকনিক স্পট। অকারণ হুল্লোড় ও আধুনিক ডিজে বক্সের ভয়ানক আওয়াজে পরিবেশ হয়ে উঠছে অশান্ত। তাছাড়া কিছু মানুষ ইট-পাটকেল ছুড়ে পাখিদের বিরক্ত করার মতো বর্বর আচরণও করে থাকেন। পরিযায়ী পাখিদের কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্পের বিকাশের সুযোগ থাকলেও বাসযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারায় আমরা তা হারাচ্ছি।
আমাদের ‘বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২’-এ পরিযায়ী পাখি রক্ষার কথা বলা হলেও অল্পসংখ্যক মানুষ এ সম্পর্কে অবগত। অগত্যা প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে এই সীমিত সংখ্যককেই উদ্যোগী হতে হয়। বিভিন্ন জেলার যেসব জায়গায় পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা সেখানে বিশেষ কর্মশালার মাধ্যমে পাখি হত্যা থেকে বিরত করতে হবে। পরিযায়ী পাখিরা আমাদের আঞ্চলিক অর্থনীতির বিকাশে যে ভূমিকা নিতে পারে সে বিষয়ে অবগত করতে পারলে এদের সুরক্ষার দিকে সবার নজর পড়বে।
এই অতিথিদের আমরা সব রকম সুবিধা হয়তো দিতে পারব না, তবু নিজেদের সাধ্যের মধ্যে চেষ্টা অন্তত করতে পারি। যত্রতত্র প্লাস্টিক আবর্জনা না ফেলে, জোরালো শব্দ না করে, রাসায়নিক ব্যবহারের মাত্রা কমিয়ে তাদের নির্বিঘ্নে দিনযাপন করার পরিবেশ দিতে পারে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষরাই। যে পাখিরা উপকূল রেখা, সূর্যের অবস্থান, নদী-পাহাড় শ্রেণি দেখে পথ খুঁজে খুঁজে এসে কয়েক মাস এখানে আশ্রয় নেয় আমাদের ভরসা করে, তাদের নিরাপদে স্বভূমিতে ফিরতে দেওয়া তো আমাদেরই মানবিক কর্তব্য।
লেখক: লেখক ও কলামিস্ট
রাজনীতিতে একসময় আইনজীবী ও রাজনীতিবিদদের প্রাধান্য ছিল। সময়ের পরিবর্তনে রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের পদচারণা বেড়েছে। জাতীয় সংসদে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ার প্রবণতা এখন আর নতুন কিছু নয়। বামপন্থিদের সভা-সমাবেশে মাঝেমধ্যে আগে শোনা যেত, এখন সেটাও কমে এসেছে। বরং এখন রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের আধিপত্য নিয়েই বিভিন্ন মহলে আলোচনা আছে। শনিবার দেশ রূপান্তরে ‘রাজনীতিতে ব্যবসায়ী রাজ’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ‘বড়, মধ্যম ও ছোট ব্যবসায়ীরা আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ ক্ষমতাকেন্দ্রিক প্রায় সব রাজনৈতিক দলেই দলীয় পদ-পদবি পাওয়া শুরু করেছেন। এ তিনটি দলে পরোক্ষ-প্রত্যক্ষভাবে ব্যবসায়ীরাই নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠতে শুরু করেছেন।’ ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের হলফনামায় উল্লিখিত পেশা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৬১ শতাংশ সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী। বাংলাদেশের প্রথম সংসদে এ হার ছিল ১৮ শতাংশ। একাদশ সংসদে পেশায় রাজনীতি এমন সংসদ সদস্য আছেন মাত্র ৫ শতাংশ। দলভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ ও শরিক দলের সদস্যদের ৫৯ শতাংশ ব্যবসায়ী। অন্যদিকে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ৫৬ শতাংশ সংসদ সদস্যই ব্যবসায়ী। অন্য সব পেশা মিলিয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন ২১ শতাংশ। অন্য পেশা মানে শিক্ষক, চিকিৎসক, কৃষক, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তা, গৃহিণী ও পরামর্শক। ৭৩-এর পরের জাতীয় নির্বাচনগুলোতে সমাজসেবী, কৃষিজীবী, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাংবাদিক ও অন্যান্য পেশার প্রতিনিধিত্ব সংসদে কমেছে। একমাত্র ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব বেড়েছে সংসদে।
পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রাজনীতি ও অন্যান্য পেশার সংসদে প্রতিনিধিত্ব কমতে থাকলেও ব্যবসায়ীদের সংখ্যা আনুপাতিক হারে বেড়েছে। পাশর্^বর্তী দেশ ভারতের ১৭তম লোকসভায় সংসদ সদস্যদের মধ্যে রাজনীতিক ৩৯ শতাংশ আর ব্যবসায়ী ২৩ শতাংশ। অন্যান্য পেশার সংসদ সদস্য রয়েছেন ৩৮ শতাংশ। বিভিন্ন দল ও পর্যায়ের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, সংসদে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব এমন পর্যায়ে চলে গেছে, যা দেখে বলা যায় রাজনীতিকদের ভেতরে হতাশা জেঁকে বসেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, শুধু সংসদ সদস্যই নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বে গঠিত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিত্বেও থাকছেন ব্যবসায়ীরা।
প্রবীণ রাজনীতিক পংকজ ভট্টাচার্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের প্রথম সংসদ নির্বাচনে সব পেশার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও প্রতিনিধিত্ব ছিল। পার্থক্য হলো এখন রাজনীতি ও সংসদে অন্য পেশার লোকের সুযোগ কমে যাচ্ছে।’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন আইনজীবী অথবা পেশাদার রাজনীতিক। তবে ব্যবসায়ী, কৃষক, সেনা কর্মকর্তা, অধ্যাপক বা এমনকি অভিনয় পেশার লোকজনও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। এত পেশার লোকজনের ভিড়ে কারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভালো করেছেন তা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে জরিপ হয়েছে। এসব নানা জরিপ বিবেচনায় নিয়ে মার্কিন সেনাবাহিনীর এক সাবেক কর্নেল উইলিয়াম জি ক্যাম্পবেল জানিয়েছেন, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় ব্যবসায়ী পেশা থেকে যারা এসেছেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে তারা খুব খারাপ করেছেন। থাইল্যান্ডের সফল ব্যবসায়ী থাকসিন সিনাওয়াত্রা দেশটির প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু রাজনীতিতে সফল হতে পারলেন না।
রাজনীতিতে কোনো পেশার লোকজনের দাপট বাড়ছে বা রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ কাদের হাতে চলে যাচ্ছে সেটা অবশ্যই আলোচনা, পর্যালোচনা ও গবেষণার বিষয়। দেশের গণতন্ত্রের মান, অবস্থা ও এর ভবিষ্যতের সঙ্গে এর সম্পর্ক রয়েছে। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সম্প্রতি বলেছিলেন, ‘রাজনীতি এখন ব্যবসায়ীদের পকেটে চলে গেছে। এটি অত্যন্ত দুঃখের বিষয়।’ বিশ্বের সব দেশেই রাজনীতিবিদ ও দলগুলোর চাঁদা ও অনুদানের বড় অংশের জোগান দেয় ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। রাজনীতি এভাবে ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যাওয়া দেশ, দেশের রাজনীতি ও গণতন্ত্রের জন্য ভালো লক্ষণ নয়। নির্বাচনের খরচ দিনে দিনে যত বেড়েছে, নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে ব্যবসায়ীদের দামও তত বেড়েছে। দলগুলোতে মনোনয়ন-বাণিজ্যের সংস্কৃতিও শুরু হয়েছে এসব কারণেই। অন্যদিকে নির্বাচিত হওয়া মানেই ব্যাংক, বীমা ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক হওয়ার পথ খুলে যাওয়া। রাজনীতিই এখন বিনিয়োগের বড় ক্ষেত্র ও ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। শুধু ব্যবসায়ীরাই যে রাজনীতিতে আসছেন বা রাজনীতি দখল করে নিচ্ছেন তাই না, পেশাদার রাজনীতিকরাও রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসায় জড়াচ্ছেন। নির্বাচন করে জেতার পর ব্যবসা করাটা এখানে খুব সহজ হয়ে যায়। কোনো দেশে রাজনীতিই যদি একটা ব্যবসায় পরিণত হয়, তবে সে দেশের রাজনীতিকে ব্যবসায়ীদের পকেট থেকে বের করে আনা কি আদৌ সম্ভব!
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ আর নির্বাচনী তাপের মধ্যেই আজ জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট এটি। অনেক যোগ-বিয়োগ কষে বাজেট প্রণয়নের শেষ সময়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচনী চমক হিসেবে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করতে সম্পূর্ণ নতুন পথে হেঁটেছেন। ভর্তুকি নাম দিয়ে বড় অঙ্কের ‘কর ছাড়’ দিয়েছেন। অথচ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে রাজস্ব জাল বিছিয়ে সাধারণ আয়ের মানুষকে আটকে ফেললেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো প্রস্তাবিত বাজেট সারসংক্ষেপ, ভর্তুকির নামে ‘কর ছাড়’কে বৈশি^ক মন্দা মোকাবিলার ঢাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের পরোক্ষ প্রভাবে বাজারে পণ্যের দাম কমার গতিরোধ করবে বলেও সরকারপ্রধানকে জানিয়েছেন।
তবে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ছোটদের কর পরিশোধে চেপে ধরলেও কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের ঠিকই খুশি করলেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমায় খুব বেশি প্রভাব পড়বে এমন আশা করা কঠিন।
এনবিআরের সাবেক সদস্য কর-বিশ্লেষক ড. আমিনুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে কর অব্যাহতি ও কর অবকাশ সুবিধা কমানোর চাপ আছে। এ শর্ত না মানলে ঋণের কিস্তি দেওয়া বন্ধ করা হতে পারে। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় বড় মাপের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার চাপ আছে। বিভিন্নমুখী চাপে সরকার সব পক্ষকে খুশি করতেই আগামীতে কৌশলে কর ছাড় রাখছে ভর্তুকির নাম দিয়ে। অন্যদিকে সাধারণ আয়ের মানুষের ওপর কিন্তু ন্যূনতম কর ধার্য করার কথা শুনছি। অনেক মানুষকে রাজস্বের আওতায় আনার কথাও শুনেছি। এভাবে ছোটদের ওপর ঠিকই কর পরিশোধে চাপ বাড়াল।’
একই মত জানিয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বড় মাপের ব্যবসায়ীদের অনেকে সরাসরি রাজনীতি করেন। অনেকে রাজনীতি না করলেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলেন। এরা সমাজের প্রভাবশালী। বাজেট প্রণয়নকালেই এরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে নিজেদের পক্ষে সুবিধামতো অনেক কিছু আদায় করে নেন। এবারও তাই হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে আইএমএফের জেরার মুখে বলার সুযোগ থাকছে যে কর ছাড় ও ভর্তুকি দুই হিসাব এক করেছি।’
সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকে আশায় আছেন এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী হয়তো জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে সূত্র কষবেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এ বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় কোনো রক্ষাকবচ রাখলেন না। কৌশলী অর্থমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে দেওয়া কথা রেখেছেন। সাধারণ মানুষকে রাজস্ব জালে আটকে ফেলার ছক করেছেন। মূল বাজেটের আকার বাড়ানোর সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের আয়ের হিসাবও বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এখানে কর খাত থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে চলতিবারের তুলনায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করলেন। এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে করবহির্ভূত খাত থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। শেষ সময়ের হিসাবকষে শত সংকটের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করেছেন।
আগামী বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী কর ছাড়সহ ২ লাখ ৮৯ হাজার ২২৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করবেন। জাতীয় বাজেটে নিয়মিত ভর্তুকি হিসাবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা রাখার কথা আছে। বাকিটা প্রত্যক্ষ কর ছাড় দিয়ে ভর্তুকি খাতে অন্তর্ভুক্তি হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষ কর ব্যয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেতনসহ অন্য খাতে ৭৭ হাজার ২১৮ কোটি বা মোট কর ছাড়ের ক্ষুদ্রঋণ খাতে ১২ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি, প্রবাসী আয় খাতে ৯ শতাংশ বা ১১ হাজার ২৮৭ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে ৭ শতাংশ বা ৮ হাজার ৩৮০ কোটি, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক শিল্প খাতে ৪ শতাংশ বা ৪ হাজার ৬১২ কোটি, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ৩ শতাংশ বা ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি, পোলট্রি ও মৎস্য খাতে ২ শতাংশ বা ৩ হাজার ১২০ কোটি, আইটি এবং সফটওয়্যার খাতে ১ শতাংশ বা ১ হাজার ৪৭৭ কোটি এবং পুঁজিবাজার খাতে ১ শতাংশ বা ৯৬৬ কোটি টাকা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইস মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ যেন পুরনো বোতলে নতুন পানীয়। বড়দেরই বিভিন্ন কৌশলে সুবিধা দেওয়া হলো।’
অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ের কৌশল হিসেবে বড় সুবিধা দিলেও ইটিআইএন গ্রহণ ও রিটার্ন দাখিলে কঠোরতা এনেছেন। ইটিআইএন না নিলে ৪০ ধরনের সেবা এবং রিটার্ন দাখিলের সিøপ না নিলে ৩৮ ধরনের সেবা দেওয়া হবে না। এতদিন ইটিআইএন নিয়েও অনেকে করযোগ্য আয় না থাকলে শুধু রিটার্ন দাখিল করেছে, একটি টাকার কর দিতে হয়নি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ১ জুলাই থেকে করযোগ্য আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে।
সাধারণ আয়ের অনেক করদাতা বলেছেন, খাবারের খরচ অনেক বেড়েছে। বাসা ভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসা সবকিছুই এখন বেশি। এর মধ্যে সাধারণ আয়ের ওপর কর পরিশোধে চাপ দেওয়া হলে ভোগান্তি বাড়বে। সাধারণ মানুষকে কর পরিশোধে বাধ্য করলেও সম্পদশালীদের রাজস্ব ফাঁকি কমাতে, বকেয়া আদায়ে এবং অর্থ পাচার রোধে জোরালো কিছু রাখা হয়নি। এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতেও পুরনো পথেই হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী।
আগামী অর্থবছর থেকে রিটার্ন জমা দিতে দেরি হলে বেশি হারে জরিমানা দিতে হবে। বাজেটে আইন করে জরিমানার পরিমাণ প্রদেয় করের পরিমাণ দ্বিগুণ ৪ শতাংশ নির্ধারণে প্রস্তাব করা হয়েছে।
বড়রা সুবিধা দিয়ে রাজস্ব আদায়ে চাপ বাড়ানোয় জীবনযাত্রার অনেক খাতেই খরচ বাড়বে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি কমাতেও বাজেটে রাখা হয়নি কিছু। আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারের অস্থিরতা কবে কমবে তা নিয়ে রয়েছে অশ্চিয়তা। তাই গত মাস ছয়েক থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চাল, ডাল, আট, ময়দা, ভোজ্য তেল, লবণ, চিনি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের খাবারের দাম আপাতত কমছে না। চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষাসহ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়ও কমবে না। গত (নভেম্বর ২০২২-এপ্রিল ২০২৩) ছয় মাসের সাধারণ মূল্যস্ফীতির গড় হার ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
নির্বাচনের রাজনীতি একটা বিজ্ঞান এখানে হিসাব খুব জটিল। ভুল হলে গরল। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কার পরাজয় হয়েছে? বিশেষ করে জাহাঙ্গীর আলমের ভাষায় ‘এটি নৌকার নয় বরং ব্যক্তি আজমত উল্লার পরাজয়’ মন্তব্যটি আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অন্যদিকে নেটিজেনদের ঠাট্টা সুষ্ঠু ভোটের জন্য আমেরিকার চাপে প্রথম ‘বলি’ হলেন আজমত উল্লা। জাহাঙ্গীর ঠিকই আঁচ করতে পেরেছিলেন তাকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না, তাই মাকে প্রার্থী করে রাখেন। তার এ কৌশলী সিদ্ধান্তের কাছে আওয়ামী লীগ হেরেছে। বাংলাদেশে এতদিন উত্তরাধিকারের রাজনীতির সংস্কৃতিতে বাবা কিংবা মায়ের আসনে সন্তান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন। এবার তার উল্টোটা ঘটতে দেখা গেল।
আওয়ামী লীগ ভেবেছিল জাহাঙ্গীরের মা অখ্যাত। ছেলের মতো প্রভাব ফেলতে পারবেন না তিনি। হালকাভাবে নেওয়াটা আওয়ামী লীগের ভুল ছিল। বহুদিন ধরে তারা এ কাজটি করে আসছে। ‘প্রতিপক্ষকে কখনো দুর্বল ভাবতে নেই’, কথাটা দলটি ভুলে গেছে। প্রার্থী হওয়ার আগে জাহেদা খাতুনকে রাজনৈতিক-সামাজিকভাবে গাজীপুরের মানুষ চিনত না, নির্বাচন তো দূরের কথা কোনো রাজনৈতিক কমর্সূচিতে তিনি ছিলেন না। জাহাঙ্গীর তার সেই মায়ের পক্ষে আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোটকে একাট্টা করেছেন। নীরব সমথর্কদের সংগঠিত করেছেন। তিনি তার মাকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গেছেন, কান্নাকাটি করেছেন। সহানুভূতি আদায় করেছেন। আর আজমত উল্লা ভোটারদের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন না, হয়তো নানাশক্তির ওপর তিনি নির্ভরশীল ছিলেন। প্রতিপক্ষকে খুব একটা হিসাবে ধরেননি। এটা ছিল ক্ষমতাসীনদের ভুল।
এটা ঠিক, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের কাছে এ নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই চ্যালেঞ্জকে অনেকটাই সামাল দিতে পেরেছে সরকার। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে বিজয়ী হলেও সাধারণ মানুষকে আস্থায় নিয়ে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বৈতরণী পার হতে পারবে কি না সেই প্রশ্নটা এখন সামনে চলে এসেছে। আমার মনে হয়, এ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য অস্বস্তিকর সতর্ক সংকেতও। আওয়ামী লীগের ভেতর আরেকটি আওয়ামী লীগ তৈরি হয়েছে, সেটাও প্রমাণ হয়েছে এ নির্বাচনে। এরা যে কখন আওয়ামী লীগের ভেতর প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে, এটা দলটি ধারণা করতে পারেনি। এখন যারা আওয়ামী লীগ করেন তাদের বেশিরভাগই তা করেন স্বার্থসিদ্ধির জন্য, দলের আদর্শের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি খুব ক্ষীণ এটাও এ নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছিল অতি আত্মবিশ্বাসী ও আত্মপ্রত্যয়ী। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় দলটির কারও কারও মধ্যে অহংকার এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস বিপজ্জনকভাবে পর্যায়ে চলে গেছে। তারা মনে করেন দল যাকে মনোনয়ন দেবে তাকে প্রভাব খাটিয়ে জিতিয়ে আনবে। গাজীপুরেও সেই প্রবণতা দেখা গেছে। যার কারণে যেভাবে গুরুত্ব সহকারে মাঠে কাজ করার দরকার ছিল, সেভাবে তারা গাজীপুরে কাজ করেননি। রাজনীতি হুমকি, ধমকের বিষয় নয়। একটি সমঝোতার কৌশল। এ চিরন্তন সত্যটা আওয়ামী লীগ ভুলেই গেছে। ভয় দেখিয়ে, প্রভাব খাটিয়ে রাজনীতিতে জয়ী হওয়া যায় না।
জাহাঙ্গীর ও তার মা যখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন, তখন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ‘দমননীতির’ কৌশল নিয়েছিল। ভোটের আগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা, দুদকে তলব, প্রচারের সময় গাড়ি ভাঙচুর, পেশিশক্তি প্রয়োগ সবই জনগণের মধ্যে জায়েদা খাতুনের পক্ষে এক ধরনের সহানুভূতি তৈরি করেছে। ভোটের দিন দেখা গেছে, নৌকার কার্ড গলায় ঝুলিয়ে তারা ঘড়ি মার্কায় ভোট দিয়েছেন।
গাজীপুরে পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললাম। তারা জানাল ব্যক্তি জাহাঙ্গীর আলমের ইমেজ ও তার উন্নয়ন কাজ নগরবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। তাদের ধারণা, তাকে মেয়র পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে থমকে যাবে উন্নয়ন কাজ। নানা ষড়যন্ত্র ও প্রতিহিংসার শিকার হলেও জাহাঙ্গীরের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অটুট।
জাহাঙ্গীর আলমের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও সাধারণ মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থনের কারণেই তার মায়ের বিজয় সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। ঋণখেলাপির দায়ে তার প্রার্থিতা বাতিল হবে এটা জানত জাহাঙ্গীর। তাই তার পক্ষে মা জায়েদা খাতুনকে তিনি মেয়র পদে দাঁড় করান। সাধারণ নারী ভোটারদের অকুণ্ঠ সমর্থন, শ্রমিকদের মধ্যে জাহাঙ্গীরের জনপ্রিয়তাও জায়েদা খাতুনের জয়ে ভূমিকা রাখে। এছাড়া নির্বাচনের প্রচারে কয়েক দফা হামলা, বাধা দেওয়ার বিষয়টি মানুষের নজর কেড়েছে। ফলে মানুষ অনেকটা বিরক্ত হয়েই আজমত উল্লা খানের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। বিরোধী শিবিরের ভোটও পড়েছে জাহাঙ্গীরের মায়ের ব্যালটে। জায়েদা খাতুন যেসব আসনে এজেন্ট দিতে পারেননি, সেখানেও জিতেছেন তিনি। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় তারা ও তাদের শরিকরা জায়েদা খাতুনের প্রতীকে ভোট দিয়েছেন।
আজমত উল্লা মার্জিত, বিনয়ী ও স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ হিসেবে গাজীপুরের রাজনীতিতে পরিচিত হলেও তার বিরুদ্ধে জনবিচ্ছিন্নতার অভিযোগ রয়েছে। ভোটারদের সঙ্গে পর্যাপ্ত যোগাযোগের অভাব, দলীয় কোন্দল এবং স্থানীয় প্রভাবশালী মন্ত্রী ও এমপিদের উদাসীনতাও রয়েছে। জাহাঙ্গীরের তুলনায় নির্বাচনের প্রচারে নৌকার প্রার্থী তেমন একটা টাকা খরচ করেননি।
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আওয়ামী লীগের বিভক্তি। সেই বিভক্তি নির্বাচনের আগে অতটা দেখা না গেলেও ভোটের দিন প্রকাশ পেয়েছে। প্রচারেও ছিল গাফিলতি। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে ঢিলেমি ছিল প্রচারণায়। বড় বড় শোডাউন এবং রোড শো করলেও মানুষের দ্বারে দ্বারে যাননি। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে একাধিক নেতা পরাজয়ের কারণ হিসেবে বলছেন, দলের স্থানীয় নেতাকর্মীর মধ্যে ভেতরে ভেতরে দ্বন্দ্ব, গ্রুপিং। এতে আওয়ামী লীগের ভোট দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগের একাংশ গোপনে ঘড়ির পক্ষে কাজ করেছে। নৌকার প্রার্থী তা আগে ধরতে পারেননি। ভোটের পর আজমত উল্লা বলেছেন, দলে থাকা বেইমানদের গাদ্দারিতে হেরেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামো ও নির্বাচনী ব্যবস্থাটি এমন জায়গায় চলে গেছে যে, কার চেয়ে কে কতটা যোগ্য ও ভালো মানুষ সেটি তার জয়-পরাজয় নিয়ন্ত্রণ করে না। মানুষ এখন ভোট দেয় কিছু পাওয়ার উদ্দেশ্যে নয়, বরং অনেক সময় ভোট দিয়ে তার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। যে কারণে দেখা যায়, দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকের বাইরে থাকা বিপুল ভোটারের অনেকেই সুযোগ পেলেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে ভোট দিতে নিরুৎসাহিত হন। আবার ক্ষমতাবানের কাছ থেকে তার কমিউনিটির অনেক মানুষ যেমন উপকৃত হন, তার বিপরীতে বিপুল সংখ্যক মানুষ বঞ্চিত এবং নানাভাবে নির্যাতিতও হন। ফলে তারা ভোটের সময় ‘দেখিয়ে দেওয়া’র অপেক্ষায় থাকেন। এ দেখিয়ে দেওয়ার ব্যাপারগুলো গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঘটেছে। মানুষের ক্ষোভের আঁচটা যে মাত্রায় ছড়িয়েছে, এর প্রভাবটা এ নির্বাচনে পড়েছে। প্রশ্ন হলো এ জয় কি তাহলে মানুষের ক্ষোভের বিস্ফোরণ?
বিএনপি এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়েছিল আওয়ামী লীগই। দলের মধ্যে একটা অংশ তো বিরুদ্ধে ছিলই। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন নতুন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতি, অভ্যন্তীরণ দ্বন্দ্ব, জনগণের মনোভাব ইত্যাদি সম্পর্কে দলের নীতিনির্ধারকদের কাছে যে সঠিক তথ্য নেই, সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনগুলোতেও যদি এরকম অন্তঃকলহ থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য গাজীপুরের মতোই পরিণতি অপেক্ষা করছে।
লেখক: প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন
কুষ্টিয়ায় আবারও এনআইডি জালিয়াত চক্রের দৌরাত্ম্যে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন জমির মালিকরা। অভিযোগ উঠেছে, রাজনৈতিক প্রভাবশালীর মদদ, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মুহুরি, দলিল লেখক ও অসাধু কর্মচারী-কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই এসব চলছে নির্বিঘেœ। এরা ভুয়া এনআইডি ব্যবহার করে অন্যের জমির দাতা-গ্রহীতা বা ক্রেতা-বিক্রেতা সেজে একের পর এক দলিল সম্পাদন করে যাচ্ছে। এর আগে কুষ্টিয়ায় একাধিক এনআইডি জালিয়াতির ঘটনা ফাঁস হওয়ায় জেলাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। নড়ে-চড়ে বসেন সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। প্রশাসনের তৎপরতায় জালিয়াত চক্র কিছুদিন গা-ঢাকা দিলেও আবারও চক্রটি নতুন করে জালিয়াতির ঘটনা ঘটাচ্ছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আগের জালিয়াতির ঘটনায় ডজনখানেক মামলা হলেও সেগুলোর বিচারিক প্রক্রিয়ায় কোনো ইতিবাচক দৃষ্টান্ত না থাকায় চক্রটি আবারও মাঠে নেমেছে। প্রতিকার না পেয়ে ভুক্তভোগীরা দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
কুষ্টিয়া জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘শর্তানুযায়ী দলিল সম্পাদনের সময় দাতা-গ্রহীতারা যে এনআইডি আমাদের দেখায় তা আদৌ সঠিক কি না তা যাচাই করার মতো তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা না থাকার সুযোগ নিয়ে একটি অসাধু চক্র একের পর এক জাল দলিল তৈরি করছে।’
তবে এই কর্মকর্তার মন্তব্যকে নাকচ করে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবু আনছার বলেন, ‘এনআইডি যাচাইয়ের সুযোগ নেই বলে জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা দায় এড়িয়েছেন। কুষ্টিয়াতে যে হারে এনআইডি জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে তাতে ছোট্ট একটা ডিভাইস হলেই এনআইডি যাচাই করা সম্ভব।’
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারিতে কুষ্টিয়া সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে জাল এনআইডি নম্বর (৬৪০২৬৬৯৪০৯) ও আমমোক্তারনামা দলিল (১১২১২/১৭ নম্বর) ব্যবহার করে কুষ্টিয়া শহরের প্রায় দুই কোটি টাকার ভূ-সম্পত্তি হস্তান্তরে ২৭ লাখ টাকার একটি দলিল রেজিস্ট্রি হয়। যার নম্বর ১৭৯৪/২৩। কুষ্টিয়া সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ডকিপার সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ওই আমমোক্তারনামা দলিলের সমর্থনে কোনো ধরনের যাচাইকরণ কাগজপত্র সংযুক্ত নেই এবং জালিয়াতির অভিযোগে মামলা বিচারাধীন থাকায় ওই দলিলও আদালতের আদেশে জব্দ করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। তা ছাড়া জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার অবস্থায় দলিলদাতারা ওই আমমোক্তারনামা দলিল জাল বলে এর আগে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেয়। এরপরও ওই দলিলের সূত্র ধরে কুষ্টিয়া শহরের এনএস রোডের বাসিন্দা এমএম আবদুল ওয়াদুদদের পৈতৃক ভূ-সম্পত্তি জালিয়াতি করে দলিল রেজিস্ট্রি করে নেয় চক্রটি।
এ বিষয়ে সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস চত্বরের দলিল লেখক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সহকারী দলিল লেখক শরিফুল ইসলাম সোহেল আমার কাছে একটা দলিলে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। কিন্তু এর মধ্যে এত জটিলতা ছিল সে সময় আমি বুঝতে পারিনি।’
সহকারী দলিল লেখক সোহেল জানান, ‘এই দলিলের গ্রহীতা মিস শেফালী খানমের স্বামী মো. মারজুম খাঁন নিজে ওই দলিল অন্য লেখকের কাছ থেকে লেখা সম্পন্ন করে আমার কাছে এসে বলে, ‘তুমি শুধু দলিল লেখক হিসেবে সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে পেশ করবা, বাদবাকি সবাইকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব আমার।’ সেজন্য আমাকে ১০ হাজার টাকা দেবে বলে আমার সঙ্গে মিটমাট হয়।’
এ বিষয়ে কথা বলতে দলিলদাতা কুষ্টিয়া শহরের উত্তর লাহিনী এলাকার বাসিন্দা মো. দেলোয়ার হোসেনকে (এনআইডি নম্বর : ৬৪০২৬৬৯৪০৯) মোবাইলে কল করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
দলিল গ্রহীতা শেফালী খানমকে তার মোবাইল ফোনে কল দিলে তা ব্যস্ত পাওয়া যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই শেফালী খানমের ফোন থেকে তার স্বামী মারজুম খাঁন এই প্রতিবেদককে কল করেন। প্রতিবেদকের পরিচয় জানার পর মারজুম ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘আপনি কি শেফালী খানমকে চিনেন? দলিলে দেওয়া ঠিকানাটা ভালো করে দ্যাখেন, উনি শেখ সেলিমের বোন, আপনার এত স্পর্ধা? আপনি ওই দলিল নিয়ে টানাটানি করছেন?’
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দবির উদ্দিন বলেন, ‘উল্লিখিত (১৭৯৪/২৩ নম্বর) দলিলটি জাল বলে আবদুল ওয়াদুদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জমির নামজারি প্রক্রিয়া স্থগিত করে রাখা হয়েছে।’
কুষ্টিয়া জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবু আনছার বলেন, ‘দলিলটিতে (১৭৯৪/২৩ নম্বর) দাতা দেলোয়ার হোসেন যে এনআইডি নম্বর (৬৪০২৬৬৯৪০৯) ব্যবহার করেছেন, তার কোনো বৈধ ডেটা নির্বাচন কমিশনের তালিকায় নেই।’
এভাবে দলিল নম্বর ২৫৩৩/২০২২ দাতা জোবায়দা নাহার শেখ ও জামিলা নাহার শেখ এবং গ্রহীতা শাহ মো. মেজবাহুর রহমান, দলিল নম্বর ২৫৩৪/২০২২ দাতা জামিলা নাহার শেখ গ্রহীতা শামসুল ইসলাম, ইউসুফ হাসাইন ও মো. সাদ্দম খাঁ, দললি নম্বর ১১৪৮/২০২২, দাতা জামিলা নাহার শেখ ও জোবায়দা নাহার শেখ এবং গ্রহীতা শামসুল ইসলাম এসব দলিল এনআইডি জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া সিআইডির উপপরিদর্শক মাসুদ পারভেজ।
কুষ্টিয়া সদর সাব-রেজিস্ট্রার কাওছার আলী বলেন, ‘এখানে কাজের চাপ সামলানোর মতো প্রয়োজনীয় জনবল সংকট মাথায় নিয়েই কাজ করতে হচ্ছে। এনআইডি নকল বা আসল কি না তা যাচাই করার কোনো ব্যবস্থা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নেই। যে কারণে জালিয়াত চক্রের এনআইডি জালিয়াতি ঠেকানোর কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারছি না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ছাড়া আমাদের কিছু করণীয় নেই।’
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।