
১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে শহীদ হন ‘শহীদ মতিউর’ নামে খ্যাত মতিউর রহমান মল্লিক। তার জন্ম ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি ঢাকায়। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি কারফিউ ভেঙে ছাত্ররা মিছিল বের করলে পুলিশ সেই মিছিলে গুলি চালায়। তখন শহীদ হন ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান। এরপর ২৪ জানুয়ারি ঢাকা আবার মিছিলে উত্তাল হয়ে উঠলে সেদিন পুলিশ গুলি চালায়। তখন পুলিশের গুলিতে নিহত হন ঐতিহ্যবাহী স্কুল নবকুমার ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্র মতিউর রহমান মল্লিক। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৮ সালে তাকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়। কিশোর সৈনিক শহীদ মতিউরের রক্ত বৃথা যায়নি। তার রক্তের ধারা বেয়েই ঊনসত্তরের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান তুঙ্গস্পর্শী হয়, আর তারই পরিণতিতে স্বৈরাচারী আইয়ুবের ক্ষমতার অবসান ঘটে। এর পরেই আসে সত্তরের নির্বাচন, নির্বাচনে বাঙালির বিজয়, ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে পরবর্তী স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খানের নানা ছলচাতুরী, প্রতারণা এবং সবশেষে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম। কিশোর শহীদ মতিউর শুধু ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানেরই এক অদম্য প্রেরণাশক্তি নয়, বাঙালির মহান মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাসেও তার আত্মদান চিরদিন অম্লান থাকবে।
প্রাণী ইঁদুররা মাটিখেকো নয়, বসবাসের জন্য গর্ত করে। খরগোশ, শজারু, শেয়াল, বন্যকুকুর ইত্যাদি প্রাণীরাও তাই করে। জলাশয়ের মাছদের মধ্যে কোনো কোনো প্রজাতিও মাটি খুঁড়ে গর্তে বসবাস করে। অমেরুদন্ডী প্রাণী কেঁচো মাটি খনন করে বসবাস করে। ওরা মাটিখাদক, কিন্তু উর্বরা শক্তিদান করে মাটিকে। আধুনিক চাষের প্রধান যে উপকরণ জৈব সার, কেঁচো সার নামে যার পরিচয় তা কেঁচোরই দান। আমাদের পরিচিত মাছদের মধ্যে বেলে মাছের পোনা অতিক্ষুদ্র বালিকণা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। এই মাছের নামকরণও বালি থেকেই এসেছে। তা ছাড়া পাখি বা প্রাণীদের কেউ কেউ খাদ্যের বিষক্রিয়া থেকে আত্মরক্ষার জন্য বিশেষ ধরনের খনিজ মাটি খেয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের একশ্রেণির অর্থলোভী মানুষই বোধকরি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মাটিখেকো প্রাণী। ওদেরই অন্য নাম নরইঁদুর।
মানবসভ্যতার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় মাটিকে খেয়ে ফেলা বা অত্যাচারের অভ্যাস খুব প্রাচীন। কৃষিসভ্যতার বিকাশের যুগে শুধু অরণ্য নয়, তৃণ নয়, প্রকৃতির দান হাজার হাজার পাহাড় ধ্বংস করেছে মানুষ। সমতল খামার ভূমি তৈরি করেছে। এতে ওই এলাকার প্রকৃতির চরিত্রই পাল্টে যায়। সর্বনাশের শুরু শিল্পবিপ্লবের আধুনিক যুগে। শিল্প-কারখানা তৈরি থেকে শ্রমিক কলোনি তৈরিতে পাহাড়কে হত্যা করা হয়। এর ফলে ইউরোপে কোনো এলাকায় ঠান্ডা এবং কোনো এলাকায় উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। আফ্রিকা থেকে দাস সংগ্রহ এবং উপনিবেশের প্রজাদের শাসক দেশে আগমনের ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। প্রয়োজন পড়ে ভূমির। আবাসনের। নগরায়ণের। এর ফলে ইংল্যান্ড, হল্যান্ড, ফ্রান্স, স্পেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রকৃতির ওপর প্রভুত্ব বিস্তার করে। দুগ্ধ উৎপাদনের নামে, মাখন বা চিজ তৈরির জন্য হল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া গোচারণভূমির জন্য পাহাড় ধ্বংস করেছে। পুঁজিবাদী মুনাফার লোভ প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করেছে।
আধুনিক এই যুগে মহাসমুদ্রের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র তাদের নগর রক্ষার্থে জনবসতিশূন্য ছোট দ্বীপগুলো থেকে মাটি-পাথর সংগ্রহ করতে গিয়ে সাগরবুকে বিলীন করে দিয়েছে অসংখ্য দ্বীপ। মালদ্বীপ তাদের অন্যতম। রাজধানী মালেকে সমুদ্রের ঢেউ থেকে রক্ষার জন্য অন্য রাষ্ট্রের দ্বীপের মাটিও কিনতে হয় তাকে। সমুদ্রবন্দর বা মার্কিন নৌঘাঁটি নির্মাণের নামে মার্কিন এবং চীনারা এভাবে কত যে দ্বীপ গিলে ফেলেছে তার হিসাব নেই। দুর্বল দ্বীপরাষ্ট্রগুলো সাম্রাজ্যবাদী আর আধিপত্যবাদী রাষ্ট্রের কাছে বাধ্য হয়েছে সামান্য অর্থের বিনিময়ে সার্বভৌম ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপ লিজ দেওয়ার নামে বিক্রি করে দিতে। একই বলে ভূমি সাম্রাজ্যবাদ। সাম্রাজ্যবাদের এতই ক্ষুধা যে, সে মাটি, পাতাল থেকে মহাকাশের, মহাসমুদ্রের সবকিছু গিলে খায়।
সিঙ্গাপুরের মতো ক্ষুদ্র অথচ ধনী রাষ্ট্র কিংবা চীনাদের অধীন স্বায়ত্তশাসিত হংকংয়ে মাটি বলে কিছু দৃশ্যমান নয়। সবই পায়ের তলায় পিষে মেরেছে অতিকায় বাড়িঘর। বাংলাদেশ আয়তনে খুবই ছোট একটি দেশ। বাঙালি জাতির একমাত্র স্বাধীন দেশ। ধনে-মানে যতই সে বড় হচ্ছে অর্থাৎ পুঁজিবাদ শক্তিশালী হচ্ছে, ততই সর্বগ্রাসী হয়ে উঠছে। এমনিতে দেশটির মাটির চেয়ে মানুষ বেশি, তার ওপর দেশটি পুঁজি আর মুনাফার খুদে দানবে পরিণত হচ্ছে। বাঙালির বেশির ভাগ ওই পুঁজির আর মুনাফার শোষণটা ততটা বুঝতে পারে না, ভাবে ওরা দরিদ্র থেকে বিত্তবান হচ্ছে। ওই যে প্রবাদ আছে‘দাদায় কইছে... ভাই, আনন্দের আর সীমা নাই।’ ৯৫ জনকে ঠকিয়ে ৫ জন যে লুটে নিচ্ছে, বিষয়টা তাদের বুঝিয়ে দেওয়ার রাজনীতিটা দেশে খুবই দুর্বল।
দেশটার সমুদ্র আছে, প্রকৃত অর্থে দ্বীপ বলতে তেমন কিছু নেই। সবেধন নীলমণি যা-ও একটা আছে অতিক্ষুদ্র প্রবাল দ্বীপ, তাতে রাক্ষসের মতো হামলে পড়েছে ভূমি নরইঁদুররা। পর্যটনের নামে ধ্বংস করছে তাকে। মূল্যবান পাথর সংগ্রহের নামে দ্বীপটির ভিত্তিভূমি তলদেশ ইঁদুরের মতো ফোকলা করে দিচ্ছে। একটা ভূকম্পন কিংবা সুনামি আঘাত করলে কখন যে সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাবে, তার ভাবনা ভাবার আবার লোকের অভাব। হায়রে সেন্টমার্টিনস!
তা ছাড়া উপকূল বা নদী মোহনায়, যা ভূমি আছে সবই অত্যন্ত দুর্বল পলিমাটিতে গড়া চরমাত্র। ঔপনিবেশিক যুগ শুরুর আগেই সন্দ্বীপ চরটিকে আবিষ্কার করেছিল পর্তুগীজরা। ওরা বুঝেছিল এর স্থায়িত্ব অনন্তকাল নয়। তাই ধর্মপ্রচারের জন্য একটি গির্জা আর নাবিক-জলদস্যুদের জন্য ক্ষণস্থায়ী আবাস গড়েছিল। তাও টিকল না দুটি কারণে। একটি হচ্ছে দ্রুত ভাঙন, সমুদ্র গ্রাসে দ্রুত ভূমি বিলীন হয়ে যাওয়া। অন্য কারণটি হচ্ছে দিল্লির মুঘল সম্রাটের আক্রমণ এবং ইংরেজ বণিকদের প্রবল চাপ। আজ সেই সন্দ্বীপ সমুদ্রের মহাগ্রাসে পতিত। মাটি কেন, এক দিন তার নামটিও হারিয়ে যাবে। বাঙালি ভূমিগ্রাসীরা এটা বুঝতে চায় না। সন্দ্বীপের বনাঞ্চল আর তৃণভূমি দখল করেছে ভূমিদস্যুরা। প্রাচীন বন কেটে, গভীর শেকড় প্রবাহী আদিম তৃণকে ধ্বংস করে দ্রুত ঘটাচ্ছে ভূমিক্ষয়। সর্বনাশ যে দ্রুত এগিয়ে আসছে তা বুঝতে চায় না ওরা। রুদ্র প্রকৃতি যে চরাঞ্চলকে গ্রাস করে ক্রমেই এগিয়ে আসছে মূল ভূখ-ের দিকে তা হয়তো টের পাচ্ছে নোয়াখালী-বরিশালের স্থানীয় দরিদ্র মানুষ। ওরা দুর্বল, কিছু করার নেই তাদের।
শুনতে যতই খারাপ লাগুক, স্বাধীনতার অনেক উদ্দেশ্যের ভেতর গোপন যে উদ্দেশ্যটি ছিল তা হচ্ছে বিত্তবান হওয়া আর ক্ষমতাবান হওয়া। অর্থ-বিত্তের সঙ্গে চুরি-চামারি, লুটপাট, দুর্নীতির গভীর সম্পর্ক। টাকা বানানোর জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিহীন হচ্ছে মাটি বা বালি লুণ্ঠন। বিষয়টি বাঙালি প্রথম জানল একাত্তরের পর। নগরায়ণ বা পরিকাঠামো উন্নয়নের জোয়ার আসে সরকারি ও বেসরকারি খাতে। দ্রুত উদ্ভব ঘটে ঠিকাদার নামক মানবপ্রজাতির। ওদের হাত ধরেই রাজধানী শহর ঢাকার সীমানা সীমান্তের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। নদী-নালা, বিলঝিল জাদুমন্ত্রের মতো হাওয়া। এমন একটি নদী নেই যার তলদেশের বালি থেকে দুই পাড়ের মাটি লুণ্ঠিত না হচ্ছে। নদীর স্তব্ধতা, নির্জনতা খানখান করে নদীগর্ভ থেকে তোলা হচ্ছে বালি, যন্ত্র বা ড্রেজারের মাধ্যমে। অপরিকল্পিতভাবে এই বালি উত্তোলনের ফলে বর্ষার শুরুতেই শুরু হয় নদীভাঙন। বিনেপয়সায় নদীগর্ভ আর চরের বালিখাদান দখল করে কোটি কোটি টাকা উপার্জন এত সহজে আর কোথায় হচ্ছে? ওপরমহল আর পোষা মাস্তান বাহিনী, এই হচ্ছে পুঁজি।
রাতের নির্জনতাকে উচ্চনাদে কাঁপিয়ে শত শত ট্রাকবোঝাই বালি অন্ধকার বিদীর্ণ করে ছুটছে শহরে। এরাই আবার ফিরে আসছে শস্যভূমির মাটি দরিদ্র মানুষকে দুপয়সা দিয়ে বা ভয় দেখিয়ে দখল করে তুলে নিয়ে যথাস্থানকে ভরাট করে বাড়িঘর বানানোর কাজে। শুধু কাঁচামাটি দিয়ে কাজ হয় না। দরকার শক্ত বা পোড়ামাটি অর্থাৎ ইট। ইট তো আর শূন্য আসমান থেকে নেমে আসে না। তৈরি করতে হয় ব্রিকফিল্ডে। মাইলের পর মাইল শস্যভূমির বুক খামচে মাটি তুলে আর নদীর পলিমাটি লুট করে ইট পোড়ানো হয়। ইটের বড় বড় ভাটা দেখলে দূর থেকে মনে হয় ধরিত্রীর বুকে জ¦লছে এক মহাশ্মশান। সভ্যতা পুড়ে রক্তবর্ণ অঙ্গার হয়ে যাচ্ছে। ইট তো নয়, পৃথিবীর জমাট রক্তে তৈরি রক্তশিলা।
বাংলাদেশের শস্যদায়িনী প্রকৃতির দান পলিমাটির অর্ধেক আজ লোহিতবর্ণ পাথর বা ইট হয়ে গেছে। মাতৃভূমির বুকের রক্তমাংস আগুনে পুড়ে বাঙালি আজ নগরবাসী উন্নত জাতিতে পরিণত হচ্ছে! শুধু কি তাই? তা রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করছে বুক চেতিয়ে। নর্থ-ইস্ট ইন্ডিয়া বা উত্তর-পূর্ব ভারতের ত্রিপুরা, মেঘালয়, আসাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ডের মতো রাজ্যগুলোতে সেই ইট, যা বাংলাদেশের পলল মাটি দিয়ে তৈরি, তা রপ্তানি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক নদীগুলো তাদের জলপ্রবাহকে দেশান্তরে পাঠায়, সেই জল প্রাকৃতিক নিয়মে সমুদ্র, বৃষ্টি, মেঘ হয়ে বর্ষায় ফিরে আসে বারবার।
কিন্তু কয়লা, গ্যাসপোড়া মাটির ইট, তা সাধারণ হোক চাই কী উন্নত সিরামিক ইট হোক, রপ্তানি হলে সে আর কি তার ধরিত্রী মাতার বুকে ফিরে আসে? আসে না তো, তা হলে? মাতৃভূমির বুক পরিণত হয় যে পোড়ামাটির অনুর্বর খানাখন্দে, মৃত মাটির কঙ্কালে, সে কি আর কোনো দিন যৌবন ফিরে পায়? পায় না। একাত্তরের বাঙালি শহীদের রক্তে ভেজা উর্বর মাটি নিয়েও মুনাফার বাণিজ্য করতে এতটুকু দ্বিধা করে না। এ না হলে আর বাঙালি!
বুড়িগঙ্গা। ইতিহাসের সাক্ষী। বাংলার প্রথম শহীদ এবং শেষ নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা এই নদীর বুক বেয়েই মুর্শিদাবাদ থেকে ঢাকা নগরীতে এসেছিলেন। শেষবারের মতো খাসমহলে ফিরেও যান। শহীদ বাংলার নবাবের স্মৃতিময় বুড়িগঙ্গার বুকের জলতলের মাটি আজ অদৃশ্য, অস্পর্শ। হাজার হাজার টন প্লাস্টিক-পলিথিন বর্জ্যে নদীর তলদেশ ঢাকা পড়ে গেছে। নদীর দুই তীরের মাটি অদৃশ্য। দ্রুত সংকীর্ণ নালায় পরিণত হচ্ছে এককালের প্রমত্তা বুড়িগঙ্গা। শত কি দুইশত বছর পর এ নদী নগর বর্জ্যবাহী নালায় পরিণত হবে। মাটি রাক্ষসের উদরে চলে গেছে নদীপাড়ের মাটি। বড় বড় অট্টালিকার পদতলে পদভারে আর্তনাদ করছে বুড়িগঙ্গা। বাঙালির শুধু নগরসভ্যতার স্মৃতি নয় বুড়িগঙ্গা। বাঙালির প্রবহমান ইতিহাস, তার সংস্কৃতি, সাহিত্য, অর্থনীতি এবং রাজনীতির সাক্ষ্য বহন করে এ নদী। প্রাচীন বাংলার প্রথম মানচিত্র এঁকেছিলেন যে রেনেল সাহেব তার নদ-নদীর সঙ্গে বুড়িগঙ্গারও নাম ছিল। আক্ষেপ এই, বাঙালি তার জাতীয় ঐতিহ্যের এই নদীটিকে হত্যা করে তার রক্তমাংস গিলে-চিবিয়ে খেয়েছে। প্রাচীন গ্রিকদের ইতিহাসে, মুঘল-সুলতানি ইতিহাসে, গুপ্তযুগের ইতিহাসে এবং ইংরেজদের ইতিহাসে বুড়িগঙ্গা যৌবনবতী নদী ছিল। বার্ধক্য অর্থে নয়, বরং আদরের বালিকা অর্থে তার নাম হয় বুড়িগঙ্গা। ভূমিদস্যু বা মাটিগ্রাসীরা চির কৈশোরের এই নদীটাকে বাঁচতে দিল না। সে যেন ধর্ষিত বিধ্বস্ত করুণ বালিকা।
আমার জন্ম নদী শীতলক্ষ্যা। শীতলক্ষ্যা আমার অস্তিত্ববিশ্ব। আমার সাহিত্যের, চিন্তা-চেতনা-দর্শনের অসীম এক জগৎ সে। মাতৃগর্ভ থেকে তার প্রসবের স্থান বরমী-কাপাসিয়া। ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী কালিবানার নদী থেকে সে জাত। সেখানে গেলে দেখা যায় বালিদস্যুদের ড্রেজার কীভাবে খুঁড়ে খাচ্ছে তার অতল জলের বুক। নদীর কলজে-হৃৎপিন্ড-ফুসফুস চিবিয়ে খাচ্ছে বালিদস্যুরা। বর্ষায় পাড় ভাঙছে। অচেনা হয়ে যাচ্ছে শীতলক্ষ্যার জন্মশয্যা। শীতলক্ষ্যার জন্ম তো বালি-মাফিয়াদের মুনাফার জন্য হয়নি? হয়নি ঢাকা শহরের অট্টালিকা নির্মাণের জন্য? কিন্তু পুঁজিবাদী মুনাফার শক্তি-রহস্য যে বড় জটিল, নির্মম-নিষ্ঠুর। মাটি বা বালির ক্ষুধা যে অন্যসব ক্ষুধার চেয়ে কোনো অংশেই দুর্বল নয়। বরং বলতে হয় ধনতন্ত্রের ভয়ংকর বিভীষণ-বিভীষিকাময় ক্ষুধা। মাটিখেকো নরইঁদুরদের তৈরি রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সিস্টেমের ধ্বংস না হলে মাটির এই ধরিত্রী বাঁচবে না। বাঁচানো যাবে না। মহাসংকটে পড়বে বাঙালি। আজ যে উন্নয়নের ঢাকঢোল পিটিয়ে, নহবত বাজিয়ে নৃত্য করা হচ্ছে তার আড়ালে রয়েছে কী? সস্তাশ্রম আর ভূমি গ্রাস করে রপ্তানিমুখী শিল্প স্থাপনের নামে সাম্রাজ্যবাদী পুঁজির শোষণের ক্ষেত্র তৈরি নয় কি? তার জন্য কি একাত্তরে রক্ত দিয়েছিল মানুষ? এটা কি মিথ্যে যে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের দেশটার মাটি গ্রাস করেছে সাম্রাজ্যবাদী পুঁজি?
লেখক: কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক
একবিংশ শতাব্দীতে চীনের অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উত্থান ও ২০১৩ সালে কাজাখস্তানে প্রস্তাবিত ও ইন্দোনেশিয়া সফরে ব্যাখ্যা করা চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের বেল্ট রোড অ্যান্ড ইনিশিয়েটিভ বা ‘বিআরআই’ প্রকল্প ভারত সাগর থেকে লোহিত সাগর হয়ে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত ভূ-রাজনীতিতে এক অভিনব ভূমিকম্পন তৈরি করেছে। চীনের এই প্রকল্পের বিপরীতে বিশে^র প্রভাবশালী রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘ইন্দো প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’ বা ‘আইপিএস’ এবং যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সমন্বয়ে একটি সামরিক জোট কোয়াড্রিল্যাটেরাল সিকিউরিটি ডায়ালগ বা ‘কোয়াড’ গঠন করে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র কেউই দক্ষিণ এশিয়ার দেশ না হলেও দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে এ দেশ দুটির বর্তমান প্রভাব অনস্বীকার্য। এশিয়ার দুই শীর্ষ অর্থনীতি চীন ও ভারত। সীমান্তে নানা ইস্যুতে বিরোধ সত্ত্বেও চীন-ভারতের বাণিজ্য সম্পর্ক ঈর্ষণীয়। দুই দেশ মার্কিন বলয়ের বিকল্প ‘ব্রিকস’-এর সদস্য। ব্রিকস বিশে^র ২৩ শতাংশ জিডিপি ও ৩২ শতাংশ জিডিপি-পিপিপি নিয়ন্ত্রণ করে। ব্রিকসের নিউ ডেভেলেপমেন্ট ব্যাংকের পুঁজি ১০০ বিলিয়ন ডলার, বার্ষিক ঋণ প্রদান ৩৪ বিলিয়ন ডলার পার করছে। এ ছাড়া নিরাপত্তা সংস্থা সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা বা ‘এসসিও’র প্রভাবশালী সদস্য চীন ও ভারত। ব্রিকস ও সাংহাই করপোরেশনের কমন রাষ্ট্র হলেও চীনের প্রস্তাবিত ‘বিআরআই’ প্রকল্পে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ভারত। যদিওবা বর্তমানে দুদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক ১০০ বিলিয়ন ডলার পার হয়েছে। গত তিন-চার বছরে সীমান্তে বহুবার চীন-ভারত মুখোমুখি হয়ে গেলেও সীমান্তের সে উত্তেজনা দুদেশের বাণিজ্যে খুব একটা আঘাত করতে পারেনি। তবে বাণিজ্য সম্পর্কের বাইরে দুদেশের বাকযুদ্ধ রীতিমতো চলমান ছিল। তাইওয়ানের নতুন সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে ভারতীয় প্রতিনিধি পাঠিয়ে নয়াদিল্লি মূলত চীনকে ছেড়ে কথা না বলারই বার্তা দিয়েছে। ‘বিআরআই’কে এড়িয়ে ভারত বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘আইপিএস’ এবং সামরিক জোট ‘কোয়াড’-এর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। শুধু তাই নয় ভারত মহাসাগরে চীনকে ঠেকাতে পশ্চিমাদের নির্ভরযোগ্য খুঁটিও ভারত।
তবে এরই মধ্যে ‘বিআরআই’ প্রকল্প দিয়ে চীন দক্ষিণ এশিয়াসহ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে নিজস্ব বলয় তৈরি করে ফেলছে। বিআরআই মূলত একটি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প যা রেল, সড়ক ও সাগর পথে ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকাকে সংযুক্ত করবে। এই প্রকল্পের অধীনে চীন আট হাজার কিলোমিটার সড়ক বা রেলপথ নির্মাণ করতে চায়, নিয়ন্ত্রণ করতে চায় বিশ্বের ৪০ শতাংশ জিডিপি। এরই মধ্যে ভারত ও ভুটান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সব কটি দেশের সঙ্গেই চীন বিআরআই নিয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এ ছাড়া বিআরআই প্রকল্পের ছয়টি করিডরের দুটি ‘চীন-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডর’ ও ‘চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর’ যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার ওপর দিয়ে। চীন এই প্রকল্পের অধীনে হংকং, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও মালদ্বীপ হয়ে জিবুতি, সুদান পর্যন্ত সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করে একটি সামুদ্রিক অর্থনৈতিক হাব তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। বিনিয়োগ দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহে রাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি করছে। চীন শুধু ব্যবসা করছে না, করছে ভূ-রাজনীতিও। মালদ্বীপে ২০১১ সালের আগে চীনের দূতাবাস না থাকলেও এখন দুদেশের মধ্যে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি রয়েছে। মালদ্বীপে দ্বীপ কিনছেন চীনা বিনিয়োগকারীরা। রাজধানী মালের সঙ্গে বিমানবন্দর দ্বীপ হুলহুলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনকারী ব্রিজসহ বিআরআই প্রকল্পের অধীনে বহু প্রকল্পের কর্মযজ্ঞ চলছে মালদ্বীপজুড়ে। একসময়কার ‘সিয়েনটো’ ‘সিয়েটো’-এর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ও মার্কিন মিত্র পাকিস্তান পিংপং কূটনীতির মাধ্যমে চীন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক স্থাপনে মধ্যস্থতা করেছিল। সে পাকিস্তান এখন বহুলাংশে চীনের দিকে ঝুঁকে আছে। বিআরআই প্রকল্পের অধীনে চীন পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের মাধ্যমে পাকিস্তানে চীন বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে ৬০-৯০ বিলিয়ন ডলার, যা পাকিস্তানের মোট জিডিপির ১৪-২০ শতাংশ।
বিআরআই প্রকল্পের অধীনে শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা সমুদ্রবন্দর বিনিয়োগ ফাঁদে পড়ে চীনের হস্তগত হওয়ার বিষয়টি এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বেশ আলোচিত হয়েছে। যদিওবা এই দাবির বিপক্ষেও শক্তিশালী মত আছে। কিন্তু এত তুমুল তর্কবিতর্ক শ্রীলঙ্কায় চীনের বাণিজ্য বা বিনিয়োগকে টলাতে পারেনি। কলম্বো বিমানবন্দরের উন্নয়ন ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে চীনা বিনিয়োগের কর্মযজ্ঞ চলছে শ্রীলঙ্কায়। শুধু বিনিয়োগ নয় রাজনৈতিক কূটনীতিতেও চীন শ্রীলঙ্কার ছাতা হচ্ছে। যেভাবে চীন বারবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যু, সামরিক সরকারের নানা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আনা সব নিন্দা প্রস্তাবকে আটকে দিয়ে মিয়ানমারকে বৈশ্বিক কূটনীতিতে চীননির্ভর করে তুলেছে শ্রীলঙ্কায়ও চীন তাই করছে। চীন দক্ষিণ এশিয়ায় একাধিক নীতিতে কাজ করছে কখনো রাজনৈতিক কূটনীতি, কখনো অর্থনৈতিক কূটনীতি, কখনো বা সফট পাওয়ার কূটনীতি নিয়ে তার হেজেমনি প্রতিষ্ঠার কাজ করছে। চীন ও ভারতের মধ্যে ‘বাফার জোন’ হিসেবে কাজ করে ভূবেষ্টিত নেপাল। বর্তমানে নেপালে চীনের বিআরআই প্রকল্পের অধীনে ২৪টি প্রজেক্ট চলমান রয়েছে। তৃতীয় দেশের সঙ্গে বাণিজ্য করতে নেপালকে চীনা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে পেইচিং। নেপালের সীমান্ত শহর খাসা থেকে তিব্বতের লাসা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ, কাঠমুন্ডু-পোখরান-লুম্বিনি রেল প্রজেক্টের মাধ্যমে নেপালের অর্থনীতি ও যোগাযোগব্যবস্থা বদলের পরিকল্পনা নিয়েছে চীন। এসব প্রকল্প নিয়ে বিতর্কের ছোঁয়া ছিল নেপালের সর্বশেষ হয়ে যাওয়া জাতীয় নির্বাচনেও। যেখানে নেপালি কংগ্রেস এই ম্যারাথন রেল প্রকল্পের বিপক্ষে কথা বলছে আর বামপন্থিরা এই প্রকল্পকে ‘নতুন নেপাল’ নির্মাণের মাইলফলক বলছে। ফলে কাঠমুন্ডুর রাজনীতিতে দিল্লির পাশাপাশি পেইচিংও এখন একটি চাবি। বাংলাদেশের বহুল কাক্সিক্ষত পদ্মা বহুমুখী সেতুতে বিশ্বব্যাংক বিনিয়োগ আটকে দিলে কারিগরি সহযোগিতা নিয়ে পাশে দাঁড়ায় চীন। সেতুটির রেলসংযোগ চীনের ‘বিআরআই’ প্রকল্পের অংশ হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া পায়রা বন্দর নির্মাণ প্রকল্প পেয়েছে চীন, নির্মাণ করছে কর্ণফুলীতে দেশের প্রথম টানেল। চীনের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এভাবে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার মতো এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার শতাধিক দেশের হাজারখানেক প্রকল্পে এক ট্রিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে ফেলেছে।
চীন বিআরআই প্রকল্পের অধীনে নিজের প্রভাব বিস্তার করতে চাইলেও কোয়াড রাষ্ট্রসমূহ চীনের রাজনৈতিক বিনিয়োগের আড়ালের ভূ-রাজনীতি মোকাবিলায় বদ্ধ পরিকর। কোয়াড ও পশ্চিমা দেশগুলো এরই মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার যেসব দেশে চীনের বিনিয়োগ বাড়ছে, সেখানে বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে হাজির হচ্ছে। এর ফলে বিআরআই, আইপিএস ও কোয়াডের শক্তি প্রদর্শনের সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল হয়ে উঠতে পারে দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগর সমুদ্র অঞ্চল। কেননা উভয় পক্ষ দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহে প্রভাব তৈরিতে মরিয়া।
লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট
কবে শবে বরাত-কদর? কোন তারিখে শুরু রোজা? এরপর ঈদ! রোজাদার মুসলিমরা এখনো নিশ্চিত নন। এদ্দুর শুনেছেন আগামী ২৩ বা ২৪ মার্চ থেকে রমজান মাস শুরু হতে পারে। এ বিষয়ক সিদ্ধান্ত নিতে রাখা হয়েছে চাঁদ দেখা কমিটি। কিন্তু, বাজার সিন্ডিকেট সব দেখে ফেলেছে। ঈদ-চাঁদ তাদের মুখস্থ। মৌসুম দৃষ্টে তাদের চানরাত চলছে, যা শুরু হয়েছে ঢের আগেই। মৌসুমি বাণিজ্য হাতাতে করণীয়র যাবতীয় ছক আগেই করে শুরু করেছে বাস্তবায়ন। আদা-সাধা থেকে রসুন, বুট, ছোলা, ডাল, তেল, মসলাসহ রোজা-রমজানের জরুরি সব আইটেমের কারসাজি তাদের কব্জায়। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও ডলার সংকট তাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। সব কিছুতে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ আর ডলার সংকটের অজুহাত তাদের। কিশোরগঞ্জের শুঁটকি, কুমিল্লার কচুরলতি বা নরসিংদীর লাউয়ের দরেও শোনানো হয় ডলার ক্রাইসিসের কথা। জ্বালানি তেল পরিস্থিতির জন্য রাশিয়া প্রাসঙ্গিক। চাল, আটা-ময়দার চড়া দামের জন্য ইউক্রেনের দুরবস্থা, আর আদা-রসুনে জানানো হয় চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক বিরোধের তথ্য। এসব তথ্য একদম অমূলক বা ভিত্তিহীন নয়। যোগসূত্র অবশ্যই বিদ্যমান। কিন্তু, দোহাই আর অজুহাতের নমুনা বড় নির্মম। এরা অচেনা নয়, কিন্তু অধরা। ক্ষেত্র বিশেষে যেন সরকারের চেয়েও শক্তিশালী। তার মানে সরকার এদের চেয়ে কমজোরি? নিষ্পত্তিহীন প্রশ্ন।
বিলাসিতা পরিহার করে সংযম চর্চা রমজানের মূল শিক্ষা হলেও বাস্তবে মাসটিতে দেশের সিংহভাগ মানুষের ভোগ-চাহিদা মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। বিশেষ করে ভোজ্য তেল, ছোলা, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি, খেজুর, বেগুনের পাশাপাশি মাছ-মাংসের চাহিদা বাড়ে দ্বিগুণের বেশি। এর লাগাম টানার আহ্বান জানানো হলেও নিয়ন্ত্রণ করা অনেকটাই অসাধ্য। ঝুঁকিপূর্ণও। নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা নয়, কম খরচের আহ্বান বেশি রাখলেও ভিন্ন অর্থ টেনে আনার ভয় কাজ করে। এর পুরো সুযোগটা নেয় বাজার সিন্ডিকেট। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে হাহাকার ছড়ানো, নিত্যপণ্যের বাজার চড়ানোর অবারিত সুযোগ আপনাআপনিই চলে যায় তাদের হাতে। সরকারের নীতিনির্ধারকদের জন্য এটি কিছুটা বিষে আক্রান্ত হওয়া বা বিষ খেয়ে বিষ হজম করার মতো দশা। এবার নিত্যপণ্যের বাড়বাড়ন্ত অবস্থার মধ্যে রমজানকে টার্গেট করে সিন্ডিকেট বেশি তৎপর। গত ক’দিন ধরে প্রতিটা দিনই তাদের কাছে চানরাতের মতো। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও ডলার সংকটকে কাজে লাগিয়ে মুনাফাবাজির ষোলোকলা ভরছে তারা। চাল, ডাল, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, আটা, ময়দা, সয়াবিন তেল, পাম অয়েল, হলুদ, মরিচ, এলাচ ও দারুচিনিসহ প্রায় সবপণ্যেই থাবা বসিয়েছে। নতুন করে কেবল দাম বাড়ায়নি, সামনে মাল পাওয়া কঠিন হবে মর্মে আতঙ্ক তৈরিতেও কামিয়াব হয়ে গেছে।
এরইমধ্যে পরিস্থিতি বিবেচনায় চাহিদার অতিরিক্ত পণ্য না কেনার আহ্বান জানিয়ে ট্রল আইটেম করে ফেলা হয়েছে বাণিজ্যমন্ত্রীকে। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা এসেছে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে। এতে গা মাখা বা ভয় পাওয়া কবেই ভুলে গেছে কথিত সিন্ডিকেট। জটিলতার মধ্যেও এলসির বহু পণ্য বন্দরে এসেছে-আসছে। ডলার সংকটে চালান খালাসে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে তাও সত্য। এ সত্যকে ভিত্তি ধরে আমদানিকারকদের প্রতিদিন লাখ লাখ ডলার ক্ষতির কথা বেশি বেশি প্রচারের মধ্যে সামনের দিনগুলোতে পণ্যমূল্য আরও বৃদ্ধির বার্তা পাচ্ছে মানুষ। যে পর্যায় বা পেশার মানুষই হোক তারা প্রতিদিনই দ্রব্যমূল্যসহ নানা সংকটের উত্তাপ টের পাচ্ছেন। যেসব এলসি হয়ে গেছে, সেসব পণ্যের অর্থ সময়মতো খালাস করতে পারলে সংকট প্রকট হওয়ার কথা নয়। কিন্তু, তা প্রকাশের ভাব-ভঙ্গিতে মতলব পরিষ্কার। রমজান উপলক্ষে নিত্যপণ্যের জোগান নিশ্চিত ও দাম সহনীয় রাখতে সরকারের উদ্যোগকে পারলে আড়ালই করে ফেলা হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগ থেকে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ২০২৩ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ভোজ্য তেল, ছোলা, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি ও খেজুর ৯০ দিনের সাপ্লায়ার্স বা বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় আমদানির সুযোগ পাবেন ব্যবসায়ীরা। যা ডলার সংকটের এই সময়ে এলসির অনিশ্চয়তা কিছুটা কমেছে। কিন্তু, সুযোগের অপেক্ষমাণদের তৎপরতা কমেনি।
কথাচ্ছলে বলা হয়ে থাকে, মুক্তবাজারে সরকার হস্তক্ষেপ করে না বা করতে পারে না। বাজার অর্থনীতি নিয়ে এ ধরনের আরও কিছু কথামালা প্রচলিত আছে। এসব কথার মধ্যে এন্তার ফাঁকফোকর। আগে-পিছে প্রচুর পরিমাণে ‘যদি, কিন্তু, তবে’ লুকানো এসব কথার পিঠে কথার সঙ্গে কিছু প্রশ্নও রয়েছে। বাজারে হস্তক্ষেপের চেয়ে এখানে বাজার নষ্টের হোতাদের শায়েস্তা করা বেশি প্রাসঙ্গিক। সেইক্ষেত্রে কেবল হস্তক্ষেপ নয়, প্রয়োজনে পদক্ষেপও প্রত্যাশিত। এটি সরকারের বিশেষ দায়িত্বও। যে কারণে ধরপাকড়-জরিমানাসহ অভিযান চলে এদের বিরুদ্ধে। কিন্তু, সুফলটা কাক্সিক্ষত মাত্রায় আসে না। অভিযানকারীরা চলে যাওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে বাজার দুর্বৃত্তরা বেঁকে বসে। পারলে আগের চেয়ে আরেকটু বেশি করে। কেবল চিনি-পেঁয়াজ, নুন-মরিচ নয়; কচুরলতি-শুঁটকির বাজারও নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ফেলে। জীবনরক্ষাকারী ওষুধের দাম, মজুদ, সরবরাহের নিয়ন্ত্রকও তারা। এদের রুখতে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একগুচ্ছ জরুরি নির্দেশনা জারি করাই আছে। নির্দেশনাগুলো কম-বেশি পালন হলেও এদের দমানো যাচ্ছে না। এই ছিনিমিনি, চালবাজিসহ বাজার পরিস্থিতির হোতারা অজানা-অচেনা নয়।
বহুদিন ধরে ‘চক্র-গোষ্ঠী’ ধরনের নামে সম্বোধন করা হতো এদের। গত বছর কয়েক ধরে ডাকা হয় ‘সিন্ডিকেট’ নামে। এদের কারণে সিন্ডিকেট নামের সুন্দর শব্দটির অর্থ বদলে গেছে। সিন্ডিকেট শব্দটি ফরাসি ভাষা থেকে আগত। উৎপত্তি ল্যাটিন শব্দ সিন্ডিকাস থেকে। ব্যাখ্যায় সিন্ডিকেট হলো: ব্যক্তি, কোম্পানি, করপোরেশন বা সংস্থার একটি স্ব-সংগঠিত গোষ্ঠী যা কিছু নির্দিষ্ট ব্যবসায় লেনদেন করার জন্য অথবা একটি অংশীদারত্বমূলক স্বার্থ অনুসরণ বা প্রচারের উদ্দেশ্যে গঠিত হয়। অভিধানে সিন্ডিকেটের প্রথম সংজ্ঞা হচ্ছে, ব্যবসায়িক উদ্যোগ বা সংগঠিত সংস্থাগুলোর একটি যৌথ প্রকল্প যা যৌথ মূলধন প্রয়োজনের জন্য গঠিত। কিন্তু, বাস্তবে এখানে অর্থটা ভিন্ন। বলার অপেক্ষা থাকছে না, কিছু লোকের কাণ্ডকীর্তিতে ‘সিন্ডিকেট’ শব্দটির ব্যবহার প্রায়ই অবৈধ কার্যকলাপে জড়িত অর্থ হয়ে গেছে। অথচ এক সময় সিন্ডিকেট শব্দটি স্মার্ট ছিল। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে সিন্ডিকেট-অ্যাসোসিয়েটস ধরনের শব্দ ব্যবহারে জৌলুশ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মেম্বার বলতে অন্যরকম গর্ব হতো। এখন ব্যবহার হয় ‘দুষ্টচক্র’ অর্থে। দেশে সিন্ডিকেট বলতে এখন বোঝায়, মধ্যস্বত্বভোগী। তারা এ সমাজেরই অংশ। আমাদের চারপাশে বা মধ্যেই তাদের বিচরণ। কিন্তু, নিজেকে বা নিজেদের ‘সিন্ডিকেট’ বলে পরিচয় দেয় না। আবার কেউ আঙুল তুলে তাদের সিন্ডিকেট নামে ডাকে না। কিন্তু, নাম-ঠিকানাসহ জানে, চেনে। সরকারের দিক থেকেও সিন্ডিকেট শব্দ ব্যবহার হয়। এই সিন্ডিকেট সাহেবদের কর্মপরিধি কেবল চাল, ডাল, পেঁয়াজ, মাছ, মাংস, তেল, তরিতরকারি, ফলমূল, চিনি, লবণসহ নিত্যপণ্য নিয়ে নয়। পরিবহন, ব্যাংক-বীমা, গ্যাস-বিদ্যুৎ, ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি, ঠিকাদারি, সরকারি কেনাকাটাসহ প্রায় সব সেক্টরেই। এদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য-চিকিৎসাও। একাধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মিলে উদ্দেশ্য হাসিল করে চলছে তারা। শুধু সাধারণ মানুষের জীবন নাজেহাল নয়, সরকারকেও অক্টোপাসের মতো গিলে ফেলার অবস্থা করে দিচ্ছে এ সিন্ডিকেট।
বিভিন্ন সেক্টরে ঘটনাচক্রে নানান সিন্ডিকেটের কথা আসে। সিন্ডিকেট নেই কেবল গরিব ভোক্তাদের। এরাই হচ্ছে টার্গেট গ্রুপ। তাদের উদ্দেশ্য করে সিন্ডিকেট বেশ ক্রিয়াশীল। নিজেদের স্বার্থে এরা যেকোনো সময় জনগণকে জিম্মি করে ভোগান্তিতে ফেলতে কার্পণ্য করে না। এরা এক সেক্টরেও থাকে না। দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারেও এরাই। মানবপাচার, খুন, গুম, ধর্ষণ ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডও চলে বিভিন্ন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। মৌসুম দৃষ্টে সেক্টর বদলায় অদৃশ্য শক্তির মতো। বিভিন্ন সেক্টরে মামুরা আর খালুরার মতো তারা তারাই করে যাচ্ছে নানা অপকর্ম।
চুরির ওপর সিনাজুরিতে এরা কেবল ক্রেতাকুলকে নয়, গোটা দেশ এমনকি সরকারকেও কাহিল করে চলছে। কিন্তু, সরকার সিন্ডিকেটকে সেই অনুপাতে কাবু করতে পারে না। জনগণের সঙ্গে পরিচয় করিয়েও দেয় না। শনাক্ত করার পদক্ষেপও নেয় না। পরিণামে দমনের চেষ্টা করেও কুলাতে পারে না। অথচ সিন্ডিকেটের কাজের দায়-বদনামের সিংহভাগ গড়ায় সরকারের ওপর। অজুহাতে পাকা এই চক্র করোনা মৌসুমে দাবড়িয়েছে সব সেক্টর। এরপর রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধকে আশীর্বাদ হিসেবে পাকাপোক্তভাবে ভর করেছে খাদ্য থেকে ওষুধ পর্যন্ত যাবতীয় নিত্যপণ্যে। যথারীতি গত ক’দিন ধরে তাদের যাবতীয় কর্মযজ্ঞ রমজানকে ঘিরে।
লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন
আমাদের সমাজে কি সহিষ্ণুতা কমে যাচ্ছে? এ শুধু রাজনৈতিক পরমতসহিষ্ণুতার প্রশ্ন নয়, সমাজের সব স্তরে সব খানেই যেন সহিষ্ণুতার বড় অভাব। আর তার বিপরীতে যেকোনো ঘটনা-দুর্ঘটনাতেই আমরা যেন দ্রুতই উত্তেজিত হয়ে পড়ছি, উত্তেজনা ছড়িয়ে দিচ্ছি আর সংঘাত-সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছি। এমন বাস্তবতার খোঁজ পাওয়া যাবে পথে-ঘাটে বাজারে-বিপণিতে হরহামেশাই। অবস্থা দেখে মনে হয় সবাই যেন আপ্তবাক্য হিসেবে সংঘাত উসকে দেওয়া সেই পুরনো গ্রামীণ বচনই মেনে নিয়েছে যে ‘হাত থাকতে মুখে কি!’ এমন সহিংস প্রবণতা যেন সংক্রামক হয়ে গেছে সারা দেশের নগর-বন্দর-জনপদে। এই প্রবণতার পরিণতি যে কত ভয়াবহ হতে পারে সেটা দেখা যায় কোনো সংঘাত যখন জনতার মধ্যে ছড়িয়ে যায় তখন। জনতা একবার উত্তেজিত হয়ে পড়লে সেটা নিয়ন্ত্রণ করা দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। প্রশ্ন জাগছে যে, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে রবিবার সড়ক দুর্ঘটনায় এক কারখানা শ্রমিকের মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় ৩০০ গাড়ি ভাঙচুর এবং সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা কি এমন সহিংস প্রবণতারই ফল নাকি এর নেপথ্যে রয়ে গেছে আরও গূঢ় কোনো কারণ?
সোমবার দেশ রূপান্তরে ‘৩০০ গাড়ি ভাঙচুর ৪ ঘণ্টার যানজটে নাভিশ্বাস’ প্রতিবেদনে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের ঘটনাপ্রবাহে যে ভয়াবহ সন্ত্রাসের চিত্র ফুটে উঠেছে সেটা মেনে নেওয়া সত্যিই কষ্টকর। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, কালিয়াকৈরে সড়ক দুর্ঘটনায় এক নিরাপত্তাকর্মী নিহতের ঘটনার পর তার প্রতিবাদে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে প্রায় তিন শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর চালিয়েছেন কারখানার বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। এতে প্রায় অর্ধশত পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রী আহত হয়েছেন। এ সময় মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপাশে প্রায় ১৫-১৬ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন ইজতেমাগামী মুসল্লিসহ পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীরা। রবিবার সকালে ওই মহাসড়কে ট্রাকচাপায় আজাদুল ইসলাম (৪৫) নিহত ও তিন শ্রমিক আহত হন। এর পর থেকে মহাসড়কে বিক্ষোভ করতে থাকেন শ্রমিকরা। ট্রাকটিতে আগুন দিয়ে গাড়ি ভাঙচুর শুরু করেন তারা। এরপর ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। খেয়াল করা দরকার, এই দুর্ঘটনা এবং পরবর্তী সহিংসতার সঙ্গে মহাসড়কের ওই অংশে ফুট ওভারব্রিজ না থাকার মতো একটা বিষয়। এলাকাবাসী, কারখানার শ্রমিক, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর ওই এলাকায় কোনো ফুটওভার ব্রিজ না থাকায় মাহমুদ জিন্স লিমিটেড, নুর গ্রুপের রাইয়ান নিট কম্পোজিট লিমিটেড, নাগ্ররাসহ কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা ওই স্থানে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়ক পার হন। ফলে প্রায়ই ওই স্থানে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন শ্রমিকসহ স্থানীয়রা। পোশাক কারখানার কর্র্তৃপক্ষ মহাসড়কের ওই স্থানের দুপাশে নিরাপত্তাকর্মী রেখেছেন। প্রতিদিনের মতো সকালে কারখানায় কাজে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন শ্রমিকরা। এ সময় নিরাপত্তাকর্মীরা লাল নিশান উড়িয়ে যানবাহন থামানোর চেষ্টা করেন। এদের মধ্যে মাহমুদ জিন্স লিমিটেড কারখানার নিরাপত্তাকর্মী আজাদুল ইসলামও নিশান উড়িয়ে শ্রমিক পারাপার করছিলেন। এ সময় তাদের নিশান উপেক্ষা করে পাথরভর্তি দ্রুতগতির একটি ট্রাক তাকেসহ চারজন শ্রমিককে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই নিরাপত্তাকর্মী আজাদুল ইসলাম মারা যান।
কালিয়াকৈরে ট্রাকচাপায় আজাদুলের মৃত্যু এবং পরবর্তী অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতা থেকে এটা স্পষ্টভাবেই প্রতীয়মান যে, ‘লাল নিশান’ উড়িয়ে মহাসড়ক পারাপারের মতো একটি অগ্রহণযোগ্য ব্যবস্থাপনার কারণেই সেখানে ট্রাকচাপায় ওই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। প্রশ্ন হলো, একটি শ্রমঘন শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের মহাসড়ক পারাপারের নিয়মিত ব্যবস্থা হিসেবে এমন ‘লাল নিশান ব্যবস্থা’ কীভাবে বৈধতা পেল? সেখানকার কারখানা মালিকরা কেন স্থানীয় প্রশাসন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে শ্রমিকদের মহাসড়ক পারাপারের জন্য স্থায়ী সমাধান হিসেবে সেখানে ফুটওভার ব্রিজ তৈরির পদক্ষেপ নিলেন না? নিজ নিজ কারখানার শ্রমিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে সেটাই করণীয় ছিল কারখানা মালিকদের। অন্যদিকে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, একটি পাথরবোঝাই ভারী ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে এক নিরাপত্তারক্ষীর মৃত্যু সহকর্মীদের ক্ষোভের কারণ হবে। কিন্তু সেই ক্ষোভের কারণে বহু মানুষের মধ্যে সহিংসতা ও সংঘাতকে আরও ছড়িয়ে দেওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। উত্তেজনা থেকে সহিংসতা ছড়িয়ে দেওয়ার এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আর ফুটওভার ব্রিজের মতো একটা কাঠামোর সংকট কীভাবে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে তার শিক্ষা নেওয়ারও তাগিদ দিচ্ছে কালিয়াকৈরের ঘটনা। কালিয়াকৈরের এই লাল নিশান থেকে যদি শিক্ষা না নিই তবে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি সারা দেশেই চলতে থাকবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এক বছরেরও কম। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচন হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করা দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো আন্দোলন করছে।
এ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত বছরের মাঝামাঝি থেকে এই চাপ ক্রমশ বাড়ছে। বিদেশিদের মধ্যে এবার যুক্তরাষ্ট্রের চাপ অনেক বেশি। এর আলামত দেখা যাচ্ছে কয়েক মাস ধরে। নির্বাচন ছাড়াও দেশটি মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীন প্রশ্নে অনেক সোচ্চার। ২০২১ সালের ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি।
সরকারের তরফ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য তারা বিদেশিদের উদ্যোগ নিতে বলছে। একই সঙ্গে সরকার যেকোনো চাপে নতি স্বীকার করবে না, সেটাও বলেছে।
কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৯০ সালে দেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি আসার পর থেকেই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক আগ্রহ বাড়ছে। নির্বাচনের এক বছর আগে থেকেই প্রভাবশালী দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নানা সবক দিতে থাকে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।
তাদের মতে, বরং নির্বাচন ঘিরে পরাশক্তিগুলোর প্রভাব লক্ষণীয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকেই প্রতিবেশী দেশ এবং বড় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতি এবং সরকার নিয়ে সবচেয়ে বেশি আধিপত্য দেখিয়ে আসছিল ভারত। ১৯৯০ সাল থেকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পশ্চিমাদের প্রভাব। আর তিন দশক ধরে বিভিন্ন কূটনৈতিক জোট, আঞ্চলিক জোট এবং সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আগ্রহ বেড়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রভাবশালী দেশগুলোর নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ যতই থাক না কেন, এর মূল কারণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা। তারা মনে করছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সমাধান যদি নিজেরা না করতে পারি, তাহলে বাইরের প্রভাব বাড়তে থাকবে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালী উর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশকে তাদের প্রভাব বলয়ে রাখতে চায়। তাদের নিজেদের দেশেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। বর্তমান সরকারও অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করছে। তাদের এই চাপ কাজে দেবে না।’ আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলের অভিমত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে এবং আঞ্চলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কারণও তাই। কূটনীতিকরা বলছেন, ভারত, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ থাকলেও এক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতা লক্ষণীয়। এ ক্ষেত্রে সরকারবিরোধী বিএনপির পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বারবার নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি কিছুটা হলেও গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন পদ্ধতি এবং নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র অনেক বেশি সোচ্চার হলেও তাদের কূটনীতি সরকারবিরোধী দলগুলোর পক্ষে যাবে এমন ধারণা করার কোনো কারণ নেই। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। এটা যেমন সত্য, তেমনি ইন্দো প্যাসিফিক এবং এ অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বিস্তারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের বোঝাপড়াটা বেশি জরুরি। আর সে কারণেই বিএনপি যতই তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলুক যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে না। তাদের বক্তব্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং নির্বাচনে বিরোধীপক্ষের জন্য সুষ্ঠু ও অবাধ পরিবেশ তৈরি করা।
কূটনীতিক সূত্রগুলো বলছে, আগের কয়েক দফা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী থাকলেও ভারতের সঙ্গে একধরনের সমঝোতা করে বা আলোচনা করে তাদের মতামত দিয়েছে। কিন্তু ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে। এবার যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন নিয়ে পরামর্শ এবং তাদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে বেশি সোচ্চার।
বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক চর্চার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগের বিষয়টি প্রথম প্রকাশ পায় ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে। এরপর থেকেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংলাপও হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল এবং প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করেছেন। তাদের সফরে আগামী নির্বাচন, বিরোধীপক্ষের প্রতি সরকারের আচরণ, মানবাধিকার ও সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সরকার, আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
গত ২১ মার্চ নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের উদ্ধৃত করে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে, নির্বাচনে জাল ভোট দেওয়া হয়েছে এবং বিরোধীদলীয় পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয় দেখানোসহ গুরুতর অনিয়ম রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত সম্মান ও অংশীদারিত্বের মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে মানবাধিকারের বিষয়গুলো উত্থাপন করে। এটা তারা চালিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এমন আগ্রহের কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব বলয় বাড়াতে চায় দেশটি। এরই মধ্যে দেশটি এশিয়ায় তাদের বন্ধু দেশগুলোকে নিয়ে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’ (আইপিএস) পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এর আওতায় ইন্দো-প্যাসিফিক ফোরাম গঠন করা হয়েছে। একই কৌশলের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ভারত সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে কোয়াড গঠন করেছে। এগুলোর লক্ষ্য হলো চীনের বিরুদ্ধে এ অঞ্চলে একটি শক্তিশালী বলয় গঠন করা। ভারতের পাশাপাশি এ বলয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকেও চায়। বাংলাদেশ যেন কোনোভাবেই চীনের বলয়ে না যেতে পারে, সেই কৌশলের অংশ হিসেবেও আগামী নির্বাচন ঘিরে চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছে দেশটি। যদিও বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোনো জোটেই যায়নি। আবার ‘বার্মা অ্যাক্ট’ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রস্তাবে তারা বাংলাদেশকে পাশে চায়। এসব কারণে বাংলাদেশকে চাপে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ নানা ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুসহ ঢাকায় সফররত দেশটির কর্মকর্তারা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের পাশাপাশি দুই দেশের সম্পর্ক নিয়েও ইতিবাচক কথা বলেন। এ ছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বিভিন্ন বক্তব্যেও নির্বাচনের পরিবেশ ও স্বচ্ছতা নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পেয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে ঢাকা সফরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তারও বলেছিলেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে তারা সরকারকে এবং এই দেশকে সহযোগিতা করেব। তিনি সেই সময় দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা দূতাবাস ও ইউএসএইডের বাংলাদেশ কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব তুলে ধরেন।
গত বছরের অক্টোবরে ঢাকায় এসেই এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দেখতে চায়। এরপর থেকে তিনি নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রায় অভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আসছেন। পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো একটি দলকে সমর্থন করে না। তারা চান জনগণ তাদের পছন্দের সরকার নির্বাচন করবে।
এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসহ ১৪টি দেশের কূটনীতিকরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন নিয়ে তাদের মনোভাব তুলে ধরেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অভিনন্দন বার্তায়ও বাংলাদেশে সবার জন্য উন্মুক্ত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। দিবসটি উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শুভেচ্ছা বার্তায় অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে লেখা বাইডেনের এ বার্তায় বর্তমান সরকার ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসাও করা হয়েছে।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক এইচ শোলে তার ঢাকা সফরে বলেছিলেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, অর্থাৎ যারা পরাজিত হবেন, তারাও যেন মনে করেন নির্বাচনটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ হয়েছে এমনটাই তারা চান। তিনি বলেছিলেন, শক্তিশালী সুশীল সমাজ, মুক্ত গণমাধ্যম এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক পরিবেশ চায় যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে নেতিবাচক প্রশ্ন উঠবে না। এই পরিবেশ তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও শোলে জানান।
ডেরেক শোলে চলে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, সরকারপক্ষ থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিকে বলা হয়েছে তারা অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। তারা সরকারের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত। তবে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও পূর্ববর্তী নির্বাচন নিয়ে তারা তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। যখনই প্রয়োজন হবে, তারা সেটা জানাবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশিদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর সুযোগ নেই। এই সুযোগটা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোই করে দিয়ে আসছে। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র একটি শক্তিশালী অবস্থান চায়। এ জন্যই তারা কথা বলছে।’
রমজানের সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষায় সবার দায়িত্ব রয়েছে। কারও কোনো অবহেলা কিংবা গর্হিত কাজে রোজাদারের রোজা পালনে অসুবিধা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা। রমজানের পবিত্রতা রক্ষার পাশাপাশি মুসলমানরা যেন নির্বিঘেœ ইবাদত-বন্দেগি করতে পারে, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করা। মাহে রমজান ও রোজাদারের প্রতি সম্মান বজায় রাখা। সকল প্রকার গোনাহ পাপাচার এবং অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকা।
রোজাদারদের কষ্ট লাঘবে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করা। তারা যেন সুন্দরভাবে মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারে, সে জন্য মসজিদের আশপাশের রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করা। ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং সাহরি ও ইফতারে পচা-বাসি খাবার বিক্রি না করার বিষয়ে নজরদারি করা। মশার কামড় রোধে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া।
নানা কারণে অনেকে রোজা রাখতে পারেন না। এ কারণে ব্যক্তিভেদে মাসয়ালা প্রয়োগ হবে। কিন্তু রমজানের পবিত্রতা নষ্ট করা, রোজা ও রোজাদারের প্রতি সম্মান না দেখানো অনেক বড় ধৃষ্টতা। এগুলো থেকে বিরত থাকা চাই। প্রকাশ্যে ইসলামের কোনো বিধানের অমর্যাদা, রোজার মূল চেতনা ক্ষুণœ হয় এমন বিষয়ে লিপ্ত থাকা নাফরমানির অন্তর্ভুক্ত। জেনেবুঝে সংঘবদ্ধভাবে এমন নাফরমানি আল্লাহর ক্রোধ বাড়িয়ে দেয় এবং অনেক বড় দুর্গতি ডেকে আনে। আল্লাহর ওয়াস্তে রমজানের সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষার স্বার্থে এসব গর্হিত আচরণ থেকে নিবৃত্ত থাকা চাই।
মনে রাখতে হবে, রমজান তাকওয়া (আল্লাহভীতি) অর্জনের মাস। এ মাসে করণীয় হলো তাকওয়া অর্জনে এগিয়ে আসা। কিয়ামুল লাইলের (তারাবি ও তাহাজ্জুদের নামাজ) প্রতি যতœবান হওয়া। কোরআন নাজিলের মাস হিসেবে তেলাওয়াতে কোরআন, তাদাব্বুরে কোরআন (কোরআনের আয়াত ও হেদায়েত নিয়ে চিন্তাভাবনা) এবং আমল বিল কোরআনের (কোরআনের আমল) প্রতি মনোযোগী হওয়া। যাদের কোরআন তেলাওয়াত সহিহ নেই তেলাওয়াত সহিহ করা। বেশি বেশি নফল ইবাদত, দোয়া-দরুদ, তওবা-ইস্তিগফার, জিকির-আজকার ইত্যাদিতে সময় ব্যয় করা। সর্বাবস্থায় সহনশীলতা ও ভ্রাতৃত্ব চর্চায় মনোযোগী হওয়া। অধিক পরিমাণে দান-সদকা করা এবং সব ধরনের কল্যাণকর কাজে এগিয়ে আসা। সংযম বজায় রাখা। প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করা। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের আত্মিক উৎকর্ষের প্রতি মনোনিবেশ করা।
রমজানের বিশেষ বিশেষ মুহূর্তগুলোর ব্যাপারে যতœবান হওয়া। যেমন সাহরি, ইফতার, তারাবি, তাহাজ্জুদ, শবেকদর ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোর ব্যাপারে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা। এ মুহূর্তগুলোর যে বিশেষ আমল রয়েছে তাতে আত্মনিয়োগ করা। বাসাবাড়ি, অফিস-আদালতে ইবাদতের পরিবেশ গড়ে তোলা। মসজিদগুলো ইবাদতের মাধ্যমে আবাদ রাখা। মোদ্দা কথা, এই এক মাসে তাকওয়ার মেহনতের মাধ্যমে গোটা বছরের ইমানি, আমলি এবং রুহানি জিন্দেগির পাথেয় সংগ্রহ করা।
আলেমরা বলে থাকেন, রোজা রেখে ক্লান্ত হয়ে গেলে প্রয়োজনে বিশ্রাম করুন। কিন্তু অনর্থক গল্পে লিপ্ত হবেন না। কারণ কথায় কথা টানতে থাকে এবং আল্লাহ না করুন, বেশি কথা বললে তা ধীরে ধীরে মিথ্যা, গীবত-শেকায়েত ইত্যাদি বিভিন্ন দিকে ছুটতে থাকে।
রমজানে গোনাহের ধারা অব্যাহত রাখা খুবই খারাপ কথা। যেখানে ঘোষণা হতে থাকে নেকির কাজে অগ্রসর হতে, অনিষ্ট থেকে নিবৃত্ত হতে, সেখানে গোনাহের ধারা অব্যাহত রাখা অনেক বড় বঞ্চনার কারণ। বিশেষ করে অনাচার-পাপাচার ও অশ্লীলতা এবং এমন গোনাহ, যা আল্লাহর ক্রোধকে বাড়িয়ে দেয়, এমনসব বিষয় পুরোপুরি বর্জন করা। কারণ ফিরে আসার এটাই মোক্ষম সময়। কিন্তু ফিরে না এসে এর অনুভূতিও জাগ্রত না হওয়া বহুত বড় ক্ষতির বিষয়।
আজ রমজানের ৯ তারিখ। দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাচ্ছে রমজান মাস। এভাবে মানুষের জীবনও একদিন শেষ হয়ে যাবে। বুদ্ধিমান তো সে, যে আগ থেকেই প্রস্তুতি নিতে থাকে। কাজে লাগায় রমজানের বরকতময় প্রতিটি মুহূর্ত। সে অগ্রগামী হয় নেকি ও কল্যাণের পথে, তাকওয়া হাসিলের পথে এবং ব্রত হয় গোনাহ থেকে পাক-পবিত্র হয়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার মেহনতে।
লেখক : খতিব, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ
রাজধানীর পল্লবীতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীরা স্থানীয় যুবদলের নেতা। শুক্রবার ইফতারের আগে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য চলাকালে যুবদলের নেতাকর্মীরা সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেন।
হামলায় বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির বিশেষ প্রতিনিধি ইমরুল আহসান জনি, চ্যানেল আইয়ের প্রতিবেদক আখতার হাবিবসহ বেশ কয়েকটি চ্যানেলের ক্যামেরাপারসন আহত হন। দুটি ক্যামেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জানা গেছে, ইফতার অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের বিপুল উপস্থিতিতে গণমাধ্যমকর্মীদের দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না। এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে দলের কিছু কর্মী কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর চড়াও হন।
উপস্থিত নেতাকর্মীরা জানান, যুবদল নেতাদের হামলা থামাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঞ্চ থেকে নেমে এলেও তাদের নিবৃত্ত করতে পারছিলেন না। পরে তিনি নেতাকর্মীদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ভিডিওতে দেখা যায় হামলায় অংশ নেন পল্লবী থানার ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, পল্লবী থানা যুবদলের পিয়াস, পল্লবী থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি রাজিব হোসেন পিন্টু, রূপনগর থানা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. আসিফ, পল্লবী থানা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. মাসুদ এবং পল্লবী থানা ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের মো. মনির।
নেতাকর্মীরা জানান, এসব নেতা যুবদল কেন্দ্রীয় সংসদের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের অনুসারী। তবে এ বিষয়ে জানতে মিল্টনের মোবাইলে ফোন করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হকের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও সাড়া দেননি তিনি।
তবে ঘটনার পর সংবাদকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনার পর আমিনুল হক দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ক্ষমা চান। মিল্টন ও আমিনুল উভয়ই ঢাকা-১৬ আসনের বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী।
এ ঘটনায় সংবাদকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিএনপির প্রায় অনুষ্ঠানে সংবাদকর্মীদের হেনস্তা হতে হয়। ক্ষমতায় না আসতেই সাংবাদিকদের এ অবস্থা। ক্ষমতায় আসলে তো আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি নির্যাতন করবে। এমন কোনো প্রোগ্রাম নেই যে সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়নি।
তারা আরো বলেন, ‘এর আগে বিএনপির কর্মীরা মাই টিভির সাংবাদিক ইউসুফের ওপর হামলা করেছে। আজকের (শুক্রবার) ঘটনা যে ঘটিয়ে থাকুক, এর দায় উত্তরের শীর্ষ দুই নেতার। আপনারা নিজেরা নিজেরা মারামারি করেন, কিন্তু সাংবাদিকদের ওপর হাত তোলা বরদাশত করা যায় না। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিন, ব্যাখ্যা দিন, ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেন। একই সঙ্গে আর এমন হবে না, সেটি প্রকাশ্যে বলুন। মনে রাখবেন, এই সাংবাদিকরাই আপনাদের বছরের পর বছর সার্ভ করছে। তারা এভাবে মার খেলে আখেরে আপনারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সব হারাবেন’।
এ বিষয়ে বিএনপির মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির ভাই সাংবাদিকদের বলেন, ‘জনি ভাইসহ আহত সাংবাদিকদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বিএনপির মহাসচিব মহোদয়ের প্রতি তিনি নিজে গিয়ে জনি ভাইকে উদ্ধার করেছেন। তবে ফুটেজে দেখলাম হামলাকারীদের ছবি আছে। তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া উচিত। দলের না হলেও চিহ্নিত করে পরিষ্কার করা উচিত তারা কারা’।
জানা গেছে, শুক্রবার রাতে হামলায় আহত সাংবাদিকদের বাসায় গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হক।
এ ঘটনায় মির্জা ফখরুল এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘মনে হয় না তারা (নেতাকর্মীরা) দলকে ভালোবাসে। তারা অতিথিদের সম্মান রক্ষা করতে জানে না।’
এ সময় নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলার মধ্যে আসার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের দালালেরা অনুষ্ঠানে ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে।’
আয়োজকদের পক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে এর সমাধান করা হয়েছে। সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমাও চাওয়া হয়েছে।’
এ বছর ভারতের মাটিতে বসবে ওয়ানডে বিশ্বকাপের আসর। তবে পাকিস্তান নিজেদের ম্যাচগুলো ভারতে না খেলে বাংলাদেশে খেলতে চায় বলে খবর প্রকাশিত ছড়িয়েছিল। যে খবরকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) প্রধান নাজাম শেঠি।
এমন কোনো আলোচনাই হয়নি বলে দাবি করে শেঠি বলেন, ‘বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে কোনো পর্যায়ে আমি আইসিসির প্রসঙ্গ কিংবা অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় ২০২৩ বিশ্বকাপ নিয়ে কোনো মন্তব্য করিনি। এখন পর্যন্ত আইসিসির কোনো সম্মেলনে এই বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’
বিশ্বকাপের আগে সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানে বসবে এশিয়া কাপ। কিন্তু এই টুর্নামেন্টে খেলতে প্রতিবেশী দেশে যেতে রাজি নয় ভারত। তাই তাদের ম্যাচগুলো নিরপেক্ষ ভেন্যুতে আয়োজনের কথা ভাবছে এসিসি। নাজাম জানিয়েছেন এখনো বিষয়টি আলোচনার টেবিলে আছে।
এদিকে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ ম্যাচ বাংলাদেশে হওয়ার খবর প্রসঙ্গে শুক্রবার মুখ খুলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে এ নিয়ে কোনো কথা হয়নি। আসলে আমি এটা টিভিতে দেখেছি। আইসিসি বা পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড কেউ আমাদের কিছু বলেনি।’
রুতুরাজ গয়কোয়াডের দাপুটে ব্যাটিংয়ে চ্যালেঞ্জিং পুঁজি গড়ল চেন্নাই সুপার কিংস। যা তাড়া করতে নেমে শুভমন গিলের পর রাহুল তেওয়াতিয়া ও রশিদ খানের নৈপুণ্যে জয় তুলে নিল গুজরাট টাইটান্স।
আহমেদাবাদে শুক্রবার আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে ৫ উইকেটের জয় তুলে নেয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন গুজরাট। ১৭৯ রানের লক্ষ্য তারা ৪ বল হাতে রেখে ছুঁয়েছে।
গিল সর্বোচ্চ ৩৬ বলে ৬৩ রান করেছেন ৬ চার ও ৩ ছক্কায়। শেষ দিকে তেওয়াতিয়ার ১৪ বলে অপরাজিত ১৫ ও রশিদ খানের ৩ বলে অপরাজিত ১০ রান দলকে জয় এনে দেয়।
চেন্নাইয়ের পক্ষে রাজবর্ধন হাঙ্গার্গেকর ৩৬ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামা চেন্নাই নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭৮ রান সংগ্রহ করে। রুতুরাজ সর্বোচ্চ ৯২ রান করেন। তার ৫০ বলের ইনিংসে ছিল ৪ চার ও ৯ ছক্কা।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।