
আজকের বাংলাদেশে নারীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে বিস্ময়কর অগ্রগতি সাধিত হলেও সারা দেশের বিপুলসংখ্যক নারী এখনো সমাজজীবনের অন্ধকারে রয়ে গেছেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার পাশাপাশি এখন উচ্চশিক্ষায় নারীর সাফল্যও খুবই আশাব্যঞ্জক। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফুটবল ও ক্রিকেটের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক আসরগুলোতে বাংলাদেশের মেয়েদের শিরোপা জয় যেন সামাজিক পরিসরে নারীর আগুয়ান হওয়ার পদধ্বনি। রাজনীতির মাঠেও নারীর নেতৃত্ব ও সরব পদচারণা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্যের সঙ্গে উগ্র ধর্মীয় চিন্তাচেতনা মিলে নারীর এই অগ্রযাত্রাকে যেন পেছন থেকে টেনে ধরা হচ্ছে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় নীতি এবং শাসনব্যবস্থার শিথিলতা যে অনেকাংশ দায়ী, সেটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। এসব কারণেই দেশে নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা, নারীর মুক্তি ও ক্ষমতায়ন এখনো সুদূরপরাহত। তবে সাম্প্রতিক কালে আইনি কাঠামোর সংস্কার এবং রাষ্ট্রীয় কর্মপদ্ধতিতে নানা সংস্কারের মধ্য দিয়ে এসব ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসছে এবং নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হচ্ছে।
আমাদের সমাজে প্রথাগতভাবেই অভিভাবকত্বের প্রশ্নে মায়ের চেয়ে বাবার ভূমিকাই মুখ্য। কিন্তু অভিভাবকত্বের প্রশ্নে মা ও বাবা দুজনের সমান ভূমিকা থাকা যে জরুরি সেটা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন আইনজীবী-মানবাধিকারকর্মী-নারী আন্দোলনকর্মীরা। জন্মনিবন্ধন থেকে শুরু করে শিক্ষাক্ষেত্রে যেমন, তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রের অন্যান্য ক্ষেত্রেও একমাত্র পিতৃপরিচয়ের প্রথাগত ধারণা ও চর্চার কারণে নানা ধরনের বাস্তবিক সংকট মোকাবিলা করতে হয় বহু ব্যক্তিকে। বহু আলোচনা-সমালোচনা ও সামাজিক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জন্মনিবন্ধন, নাগরিকত্বের সনদ, পাসপোর্ট এবং বিয়ে-তালাক নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বাবার পাশাপাশি মাকে যুক্ত করা বাধ্যতামূলক করার মধ্য দিয়ে এক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে সত্যি। কিন্তু এতে সংকট শেষ হয়ে যায়নি। যে কারণে জন্মনিবন্ধন ও শিক্ষাক্ষেত্রের মতো মৌলিক নথিপত্র পূরণে সমস্যায় পড়ছিল দেশের শিশুরা, বিশেষত পিতৃপরিচয় জানা নেই কিংবা জানানোর ক্ষেত্রে সংকট রয়েছে এমন শিশুরা। আশাব্যঞ্জক খবর হলো হাইকোর্টের এক রায়ের মধ্য দিয়ে এখন থেকে কেবল মায়ের নাম লিখেও শিক্ষাক্ষেত্রের সব ধরনের ফরম পূরণ করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের দ্বৈত বেঞ্চের এক রায়ে এমন নির্দেশনা আসে। এতে শিক্ষার্থীদের সব ধরনের এসআইএফ (স্টুডেন্ট ইনফরমেশন ফরম) পূরণে বাবার নাম লেখার বাধ্যবাধকতাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে হাইকোর্ট বলেছে, ফরম পূরণের ক্ষেত্রে অভিভাবক কলামে বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবকের যেকোনো একজনের নাম লেখা যাবে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব শিক্ষা বোর্ডকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
নারী অধিকারকর্মী ও সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা এ রায়কে ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী উল্লেখ করে বলছেন, সংগত নানা কারণেই অনেক শিক্ষার্থীর পিতৃপরিচয় থাকে না। আবার সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হলেও অনেক ক্ষেত্রে পিতার অভিভাবকত্ব প্রধান হয়ে দাঁড়ায়। শিক্ষার্থীদের ফরমে বাবার নাম লেখার বাধ্যবাধকতা থাকা প্রতিবন্ধকতা। এ কারণে অনেক ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের বিপাকে পড়তে হয়। হাইকোর্টের এ রায়ের ফলে শিক্ষার্থীর ফরমে মায়ের অভিভাবকত্ব যেমন প্রতিষ্ঠিত হলো তেমনি বাবা-মা কেউ না থাকলেও শিক্ষার্থীর আইনগত অভিভাবকের নামও লিখতে পারবেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, গত বছরের জুলাই মাসে হাইকোর্ট আরেক রায়ে পিতা-মাতার জন্মনিবন্ধন নেই এমন শিশুদেরও জন্মনিবন্ধনের সুযোগ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এই রায় বাস্তবায়নও এক যুগান্তকারী ঘটনা। একইভাবে, কিছুকাল আগে মুসলিম বিয়ে নিবন্ধন ফরম বা নিকাহনামায় নারী ও পুরুষের অধিকার ও মর্যাদায় যেসব বৈষম্য ছিল তার একটি দূর করা হয়েছে উচ্চআদালতের নির্দেশে। নিকাহনামায় কনের ক্ষেত্রে ‘কুমারী’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘অবিবাহিতা’ যুক্ত করতে এবং বরের ক্ষেত্রেও ‘বিবাহিত/বিপত্নিক/তালাকপ্রাপ্ত’ কি না তা সংযোজন করার নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত। নারী-পুরুষ বৈষম্য বিলোপে এমন পদক্ষেপগুলো সাধুবাদযোগ্য। কিন্তু মনে রাখা দরকার দেশে বিদ্যমান বিভিন্ন আইনে এখনো নারী-পুরুষের মধ্যে অনেক বৈষম্য রয়ে গেছে। ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ে নারী-পুরুষের মধ্যকার এই বৈষম্যের ধরনও ভিন্ন। এক্ষেত্রে মুসলিম, খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ এবং অন্যান্য জাতি-সম্প্রদায়ের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয়-পারিবারিক আইন অনুসরণ করা হয়ে থাকে। মানবাধিকারকর্মী এবং নারী আন্দোলন কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে না পারাই সমাজে নারীর প্রতি নানাবিধ বৈষম্যের অন্যতম বড় কারণ। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সম্পত্তির উত্তরাধিকারে নারীকে বঞ্চিত না করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন এবং বিষয়টি সুরাহার পথ খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা আশা করব এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কারের মধ্য দিয়ে নারী-পুরুষের সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার পথ আরও সুগম হবে।
বহু পণ্যের গায়ে লেখা থাকে ‘এতে ক্ষতিকারক ডিডিটি নেই’। ক্রেতা-ভোক্তা হিসেবে আমরা আশ্বস্ত হই। হয়তো আমাদের বহুজনের কাছেই ডিডিটির বিষয়টি স্পষ্ট নয়। বিশেষ করে মশার স্প্রে, শুঁটকি মাছ বা কৃষিফসলে ডিডিটির ব্যবহারের কথা আমরা কমবেশি জানি। ‘ডাই ক্লোরো ডাই ফিনাইল ট্রাই ক্লোরো ইথেন’ বা ‘ডিডিটি’ হলো বিশ্বব্যাপী রাসায়নিক দূষণের জন্য দায়ী বিপজ্জনক রাসায়নিক।
কৃষি ও খাদ্যব্যবস্থার রাসায়নীকরণের বিরুদ্ধে একটা প্রবল জনভিত্তি বিস্তার লাভ করছে বিশ্বময়। দীর্ঘ করোনা মহামারী, যুদ্ধ ও বৈশ্বিক সংকট সবকিছু ছাপিয়ে রাসায়নিক কৃষিনির্ভর বাংলাদেশ এক বিরল উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘ চার দশক পর বাংলাদেশ ডিডিটিমুক্ত হয়েছে। বলা হয়ে থাকে, বিশ্বের বৃহত্তম ডিডিটির মজুদটি ছিল বাংলাদেশের চট্টগ্রামে। প্রায় চার দশক পর নিষিদ্ধ ঘোষিত এই মারাত্মক রাসায়নিক বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে নেওয়া হলো। ২০২২ সালের ২ ডিসেম্বর ডিডিটির শেষ চালানটি ধ্বংস করার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে ফ্রান্সে যায়। ডিডিটি অপসারণের কাজটি কোনোভাবেই সহজ ছিল না। পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত সতর্কতা, নীতিগত প্রশ্ন, অর্থায়ন এবং সামগ্রিকভাবে রাজনৈতিক অঙ্গীকারÑসবকিছু এক কাতারে আসতে প্রায় চারটি দশক লেগেছে। জীবন ও প্রতিবেশের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এই ডিডিটি অপসারণ ব্যবস্থাপনার নেতৃত্ব দিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটির (জিইএফ) অর্থায়নে, বাংলাদেশ সরকার এবং এফএও এর সহ-অর্থায়নে ‘পেস্টিসাইড রিস্ক রিডাকশন ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায় ডিডিটি অপসারণ ও নিষ্ক্রিয়করণের কাজটি সম্পন্ন হয়েছে।
গণমাধ্যম সূত্র জানায়, ডিডিটি পাউডার নিষ্ক্রিয়করণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৫৫ কোটি টাকা। ৩৫৫ কোটি টাকার এই প্রকল্পে সরকারের নিজের খরচ ২১৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। বাকি ৭০ কোটি ১০ লাখ গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটিজ এবং ৬৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ ম্যালেরিয়া নির্মূলে ৫০০ টন ডিডিটি আমদানি করে এবং এর আগের আরও ৫০০ টনসহ এক হাজার টন ডিডিটি দীর্ঘ ৩৭ বছর চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের কেন্দ্রীয় ওষুধাগারের গোডাউনে পড়েছিল। ডিডিটি অপসারণ প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয় গ্রিসের একটি প্রতিষ্ঠান। বিশেষ পোশাক ও সতর্কতা অবলম্বন করে এসব রাসায়নিক কনটেইনারে ভরা হয় এবং পরিবহন করা হয়। অপসারণের সময় সমগ্র এলাকাকে রেড জোন বা বিপজ্জনক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। অপসারণ প্রক্রিয়ার পরিচালক গণমাধ্যমকে জানান, বিশেষ জাহাজের মাধ্যমে এই রাসায়নিক সমুদ্রপথে ১২টি বন্দর হয়ে ফ্রান্সে যাবে এবং সেখানে আন্তর্জাতিক আইন ও নীতি মেনে বিশেষ চুল্লিতে এসব নিষ্ক্রিয় করা হবে। বেশ কয়েক মাসের এ দীর্ঘ প্রক্রিয়ার সর্বত্র ঝুঁকি ও বিপদ রয়েছে। তারপরও বিশ্ব থেকে বিপজ্জনক ডিডিটির সবচেয়ে বড় মজুদটি অপসারণ করা গেছে।
বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বের প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশের জন্য এটি একটি গুরুত্ববহ ঘটনা। অবিস্মরণীয় এই জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজটির সঙ্গে জড়িত সবাইকে বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। তবে ডিডিটি অপসারণের এই উদাহরণ বাংলাদেশকে আরও বেশি দায়িত্বশীল এবং দায়বদ্ধ করে তুলল। বিশেষত কৃষি ও খাদ্যব্যবস্থায় রাসায়নিকের ব্যবহার এবং নিষিদ্ধকরণ বিষয়ে রাষ্ট্রকে এখন থেকেই আরও বেশি সতর্ক ও মনোযোগী হওয়ার বার্তা জানান দিল। ভাবলেই কেমন শিউরে ওঠে চারধার, দীর্ঘ ৩৭ বছর এক হাজার টন ডিডিটির সঙ্গে বসবাস করেছি আমরা। এমনকি এই মজুদ ছিল দেশের উপকূলের এক দুর্যোগপীড়িত ঘনবসতিপূর্ণ শিল্পাঞ্চল চট্টগ্রামে। ১৯৯১ সালের বন্যায় প্লাবিত হয় চট্টগ্রাম এবং বন্যার পানিতে প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়ে ডিডিটি বিষ। এ ছাড়া কৃষিতে ব্যবহৃত ডিডিটির কারণে আমাদের বাস্তুতন্ত্র ও শরীরে মিশেছে এই ভয়াবহ বিষ। বাংলাদেশের মতো একটা ছোট্ট আয়তনের দেশে ৩৭ বছর ধরে এক হাজার টন ডিডিটি নিরাপদে মজুদ রাখা সবদিক থেকেই এক জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়।
ডিডিটি, অলড্রিন, ডাইএলড্রিন, ক্লোরডেন, এনড্রিন, হেপ্টাক্লোর, মিরেক্স, টক্সাফিন, পিসিবি, হেক্সাক্লোরোবেনজিন, ডাইঅক্সিন ও ফিউরান পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী এই ১২টি মারাত্মক বিষাক্ত রাসায়নিককে একত্রে ‘ডার্টি ডজন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই ডার্টি ডজন সরাসরি মানুষসহ প্রাণ-প্রকৃতির জীবন ও জন্মপ্রক্রিয়ায় বিরূপ প্রভাব তৈরি করে, ক্যানসার, ত্রুটিপূর্ণ জন্ম থেকে শুরু করে নানান দুরারোগ্য মরণব্যাধি ও প্রতিবেশগত বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। মাছসহ জলজ প্রাণবৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাবের কারণে ১৯৬২ সালে এনড্রিন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। ১৯৭২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ডিডিটির ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশে ডিডিটি ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। ২০০০ সালে জোহানেসবার্গে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১২২টি দেশ ডার্টি ডজনের ব্যবহার সীমিত করতে বৈশ্বিক সিদ্ধান্ত নেয়। ২০০১ সালে স্টকহোম সম্মেলনে ডিডিটিসহ ক্ষতিকারক জৈব দূষণকারী কীটনাশকের উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধকরণে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি গৃহীত হয়। ১৭১টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশও ২০০১ সালের ২৩ মে চুক্তিতে স্বাক্ষর করে এবং এটি কার্যকর হয় ২০০৭ সালের ১২ মার্চ। চুক্তির ১৫ বছর পর বাংলাদেশ থেকে ডিডিটি অপসারণ প্রক্রিয়া শুরু হয়।
১৮৭৪ সালে ডিডিটি আবিষ্কৃত হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তা ম্যালেরিয়া ও টাইফাস নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়। ১৯৩৯ সাল থেকে কীটনাশক হিসেবে এর ব্যবহার শুরু হয়। আর তখন থেকে ডিডিটির বহুল উৎপাদন ও বিশ্বব্যাপী ব্যবহার শুরু হয়। ১৯৫০ থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত প্রতি বছর কৃষিক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪০,০০০ টন ডিডিটি ব্যবহৃত হতো। কীটনাশক হিসেবে ডিডিটি আবিষ্কারের জন্য ১৯৪৮ সালে চিকিৎসাবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পান পল হারম্যান মুলার। মার্কিন মনস্যান্টো, সিবা, মনট্রোজ কেমিক্যাল কোম্পানি, পেন্নাওয়াল্ট, ভেলসিকল কোম্পানিগুলো মূলত বৃহৎ ডিডিটি উৎপাদনকারী কোম্পানি। ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য ২০০৯ সালে ভারত ৩,৩১৪ টন ডিডিটি উৎপাদন করে এবং ২০০৭ সালে চীনে ডিডিটি উৎপাদনে নিষেধাজ্ঞা আনা হয়।
বাংলাদেশে ১৯৫৬ সাল থেকে কীটনাশকের ব্যবহার শুরু হয়। তখন প্রতি বছর ৩ টন কীটনাশক এবং ৫০০ ¯েপ্র ব্যবহার করা হতো। প্রথমদিকে যখন কীটনাশকের ব্যবহার কৃষকের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হলো তখন প্রথমত অধিকাংশ কৃষক বিশ্বাসই করতে পারল না উদ্ভিদের রোগবালাই দমনের জন্য বিষ ব্যবহার করা যায়। ক্রমান্বয়ে কৃষির ওপর চেপে বসা এই বিষ মানুষের প্রাণও সংহার করতে থাকল। কৃষিতে বিষের ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুধু আত্মহত্যাই বাড়ল না, বরং এটি আরও নানা ধরনের দুরারোগ্য ব্যাধি তৈরি করে প্রতিনিয়ত মানুষকে আরও বেশি সংকটাপন্ন করে তুলতে লাগল। বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার গবেষণা অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি হেক্টরে ৮৮২ টাকার কীটনাশক ব্যবহৃত হচ্ছে। যেখানে মাত্র ৯৮ টাকার কীটনাশক ব্যবহার করা উচিত। বাংলাদেশের মাটিতে হিউমাসের সঙ্গে মিশে গেছে ১২.৫ শতাংশ ডিডিটি, যা ব্রিটেনের তুলনায় পাঁচ গুণ। এই সর্বনাশা বিষের ফলে নিশ্চিহ্ন হচ্ছে জলাশয়সহ স্থানীয় অগণিত প্রাণবৈচিত্র্য আর মানুষের নানান রোগবালাই বাড়ছে। এই সর্বনাশা বিষের ব্যবহার ১ শতাংশ বাড়ার সঙ্গে কৃষকের চিকিৎসাব্যয় বেড়ে যাচ্ছে দশমিক ৭৪ শতাংশ। বাংলাদেশে বর্তমানে ৯২টি রাসায়নিক গ্রুপের প্রায় ৩৭৭টি বালাইনাশক বাজারজাতকরণের জন্য নিবন্ধনকৃত। প্রায় সব কীটনাশকের প্রয়োগের পর অপেক্ষাকাল তিন দিন থেকে ২১ দিন, কিন্তু বাস্তবতা হলো সকালে কীটনাশক স্প্রে করে বিকেলে বা বিকেলে স্প্রে করে পরদিন জমিন থেকে ফসল তুলে বাজারে বিক্রি করা হয়। বিশেষ করে শসা, টমেটো, ক্ষীরা বা অন্যান্য ফল, যা আমরা সাধারণত কাঁচা খেয়ে থাকি সেসব গ্রহণের মাধ্যমে সেসব ফসলে ব্যবহৃত কীটনাশক সরাসরি আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। কৃষিজমিতে ব্যবহৃত কীটনাশকের প্রায় ২৫ ভাগ আশপাশের জলাশয়ের পানিতে মিশে যায়।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়েই এক ডিডিটিমুক্ত বাংলাদেশে আমরা আজ নতুন প্রজন্মকে স্বাগত জানাতে পারছি। তবে ডিডিটি অপসারণের এই জটিল প্রক্রিয়া আমাদের আরও কী বার্তা দেয়? কেন বা কাদের কথায় আমরা এমন বিপজ্জনক রাসায়নিক আমদানি ও ব্যবহার করলাম? তথাকথিত সবুজবিপ্লব প্রকল্পের মাধ্যমে ডিডিটির মতো এমন বহু বিপদ আমাদের কৃষি ও খাদ্যব্যবস্থায় শুধু মুনাফার জন্য তৈরি হয়েছে। কোম্পানিগুলো মুনাফার পাহাড় চাঙা করার পর যখন জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশে এসব চাপিয়ে দেওয়া বাণিজ্য কারবারগুলো চরম ক্ষতি তৈরি করছে, তখন সেসব বন্ধ করতে আমাদের দীর্ঘ সময় লড়াই করতে হচ্ছে। শুধু ডিডিটি নয়, আমাদের কৃষি ও খাদ্যব্যবস্থা এখনো দখল করে আছে বহুজাতিক কোম্পানি ও এজেন্সির নানামুখী ব্যবস্থাপত্র। মাটি থেকে শুরু করে মায়ের দুধ সর্বত্র মিশে যাচ্ছে বিষ আর প্লাস্টিক কণা। এক ডিডিটি নিষিদ্ধ ও অপসারণে আমরা বহু বছর ও বিপুল বাজেট ব্যয় করেছি। জনগণের টাকায় বিষ কিনে সেই বিষে জনগণের সর্বনাশ করে আবার সেই বিষ তাড়াতে আবারও জনগণের টাকাই গেল। তাহলে আমরা কেন এমন বিষের ব্যবহার শুরু করলাম এই প্রশ্নটি তোলা জরুরি। বিশেষ করে নিরাপদ কৃষি ও খাদ্যব্যবস্থার প্রসঙ্গ যখন আমরা আলাপে তুলেছি বিশ্বময়।
এখনো সময় আছে শুধু ডিডিটি নয়; সব রাসায়নিকের বন্দিদশা থেকেই আমাদের উৎপাদনব্যবস্থাকে মুক্ত করা জরুরি। আর ডিডিটি অপসারণের মতো রাষ্ট্র যেভাবে নীতিগত, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার করেছে সে রকম সব বিপজ্জনক রাসায়নিক বিষের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে সমমনোযোগী হতে হবে। আমরা আশা করব রাষ্ট্র বিপজ্জনক রাসায়নিকমুক্ত কৃষি ও খাদ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে তৎপর ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার জোরালো করবে। শুধু ডিডিটিমুক্ত নয়, ক্ষতিকর রাসায়নিকমুক্ত এক নিরাপদ কৃষিভুবনে আমরা সবাইকে স্বাগত জানানোর অপেক্ষা করছি।
লেখক: লেখক ও গবেষক
করোনাকালীন দুর্যোগ অতিক্রম করে আবারও নির্ধারিত সময়ে শুরু হতে যাচ্ছে অমর একুশে বইমেলা। এবার মেলার মূল প্রতিপাদ্য ‘পড় বই গড় দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে বিশ্বমন্দার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। পাশাপাশি কাগজের অস্বাভাবিক ও নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যবৃদ্ধিতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে প্রকাশনা শিল্প। তবুও ফেব্রুয়ারির বইমেলাকে ঘিরে আশা দেখছেন লেখক ও প্রকাশকরা। নতুন বই প্রকাশ অপেক্ষাকৃত কম হলেও আগে প্রকাশিত মানসম্পন্ন ভালো বইও মেলায় খুঁজে নেবেন পাঠকরা এমনটাই তাদের প্রত্যাশা। ফলে এবারও মেলার মাঠে লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের অন্যরকম সম্মিলন ঘটবে। বই নিয়ে চলবে নানা আলোচনা ও পর্যালোচনা। বই ঘিরেই বাঙালির এই সম্মিলন সত্যিকারভাবে আমাদের অহংকারের বিষয়ও।
কিন্তু শুরুর দিকে অমর একুশে বইমেলার আয়োজনটি কেমন ছিল? সে ইতিহাসটি জানতে একটু পেছনে তাকাতে হবে। অমর একুশে গ্রন্থমেলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা’ নামটি। এদেশে প্রকাশনা শিল্পের পথিকৃৎ তিনি। ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তিনিই প্রথম গ্রন্থমেলার সূচনা করেন। প্রথম মেলাটি হয়েছিল বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গণের বটতলায়, এক টুকরো চটের ওপর। কলকাতা থেকে আনা মাত্র ৩২টি বই সাজিয়ে উনি বইমেলার গোড়াপত্তন করেছিলেন। সে বইগুলোই ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের প্রথম অবদান, যা ছিল চিত্তরঞ্জন সাহার ‘স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ’ (বর্তমানে যা মুক্তধারা প্রকাশনী) থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশি শরণার্থী লেখকদের লেখা বই। ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত চিত্তরঞ্জন সাহা একাই গ্রন্থমেলা চালিয়ে যান। ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী গ্রন্থমেলার সঙ্গে বাংলা একাডেমিকে সম্পৃক্ত করেন। পরের বছরই যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতিও। ১৯৮৪ সালে এ মেলার নামকরণ হয়ে যায় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’। এভাবে চিত্তরঞ্জন সাহার ৩২টি বইয়ের ক্ষুদ্র মেলাটিই এখন বাঙালির প্রাণের মেলায় পরিণত হয়েছে। গ্রন্থমেলার পরিবর্তে বর্তমানে এটিকে বলায় হয়Ñঅমর একুশে বইমেলা।
বইমেলা এলেই কথা ওঠে মানসম্পন্ন বই নিয়ে। যদিও মেলা শেষে বাংলা একাডেমি ঘোষণা দেয় নতুন প্রকাশিত মানসম্পন্ন বইয়ের সংখ্যা কতটি। কিন্তু মান নির্ধারণের পদ্ধতিটি কী সেটি আমরা জানতে পারি না। তবে এটি সত্যি, মেলায় প্রকাশিত মানসম্পন্ন বই খুব বেশি নয়। এর দায় আসলে কার লেখকের, নাকি প্রকাশকের? বিক্রির বিষয়টি মাথায় রেখে অধিকাংশ প্রকাশক এখনো বই প্রকাশ করেন মেলাকে ঘিরে। বছরের বাকি সময়টায় খুব কম বই প্রকাশ করেন তারা। ফলে নতুন বই প্রকাশের তোড়জোড়ে প্রুফ দেখা ও সম্পাদনার কাজটি একেবারেই হয় না। আবার অধিকাংশ প্রকাশনা সংস্থারই নিজস্ব সম্পাদনা দল নেই। এতে তাদের মাধ্যমে রঙচঙা প্রচ্ছদ মোড়ানো ভুলেভরা যে বইগুলো মেলায় আসে, প্রকৃতপক্ষে তা পাঠককে তেমন আন্দোলিত করে না। ফলে বই কিনে অনেক পাঠকই ঠকে গিয়েছেন বলে মনে করেন। এই দায়টি লেখকেরও। বইমেলায় বই বেরিয়েছে বা বেরোবে এমন নব্বই ভাগ লেখকই নিয়মিত পত্রিকায় বা অনলাইন পোর্টালগুলোতে লেখেন না। ফলে লেখালেখির অনেক ক্ষেত্র থাকা সত্ত্বেও তারা লেখার মাধ্যমে পাঠক তৈরির চেষ্টা থেকে অনেক পিছিয়ে থাকেন। প্রতি বছরের মতো এবারও বইমেলায় প্রকাশিত হবে শত শত বই। তার মধ্যে কতটি বই মানসম্পন্ন, তা একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় গুরুত্বসহকারে তুলে ধরার কাজটি আমরা বাংলা একাডেমির কাছ থেকেই আশা করি। ভালো পা-ুলিপি ও ভালো সম্পাদনার মাধ্যমে মানসম্পন্ন বই প্রকাশ না করলে মেলায় প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যাই শুধু বাড়বে, তা দিয়ে শিল্প-সাহিত্যের তেমন কোনো উন্নতি হবে না। আর এ দায় যেমন রাষ্ট্রের, তেমনি প্রকাশকের এবং লেখকেরও।
বইয়ের পাঠক বেড়েছে, নাকি কমেছে? এ নিয়ে নানা মত ছিল ও আছে। পাঠক বৃদ্ধির বিষয়টিকে অনেক প্রকাশকই শুধু মেলায় বই বিক্রির মাপকাঠি হিসেবেই তুলে ধরেন। আবার অনেকেই ফেইসবুক ব্যবহারের ফলে বইয়ের পাঠকের সংখ্যা কমেছে বলে ঢালাওভাবে অভিযোগ তোলেন। অথচ আমরা দেখি কয়েক বছর আগে থেকেই ফেইসবুকেও গ্রুপ তৈরি করে সাহিত্যচর্চার রীতি চালু হয়েছে। শুদ্ধচর্চা, সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ ও নান্দনিক কিছু সৃষ্টির লক্ষ্যে তৈরি হয়েছে অসংখ্য ফেইসবুক গ্রুপ। তারা বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে শিল্প-সাহিত্যের নতুন পাঠক তৈরিতেও ভূমিকা রাখছে।
আবার দেশে বই বিক্রির পরিমাণও বেড়েছে। কীভাবে? সরকার বিভিন্ন প্রকল্পে কোটি কোটি টাকার বই কিনছে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পাঠক তৈরির কর্মসূচি যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে বই কেনার সংখ্যাও। প্রতি বছর শুধু অনলাইনেই বিক্রি হচ্ছে কয়েক কোটি টাকার বই। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, পাবলিক লাইব্রেরি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, নানা এনজিও ও বেসরকারি সংস্থাও বই কেনে প্রতি বছরই। সরকারিভাবে প্রতি জেলায় এবং অনেক উপজেলাতেও বইমেলার আয়োজন হচ্ছে নিয়মিত। বেশ কিছু প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান সম্মিলিতভাবে সারা বছরই ‘কৈশোর তারুণ্যে বই’ ও ‘ক্লাসরুমের পাশে বই’ শিরোনামে বিভিন্ন বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বইমেলার আয়োজন করছে। শ্রাবণ প্রকাশনী গাড়িতে করে মুক্তিযুদ্ধের বই নিয়ে ঘুরছে সারা দেশে। এসব উদ্যোগ যেমন প্রশংসনীয়, তেমনি বইয়ের নতুন পাঠক ও ক্রেতা তৈরিতেও বিশেষ ভূমিকা রাখছে। তাই দেশে বইয়ের পাঠক ও বই বিক্রি কমছেÑএমন ধারণা অনেক যুক্তিতেই টিকে না। এখন দরকার ভালো মানের বই প্রকাশ এবং তা খুব সহজেই পাঠকের কাছে নিয়ে যাওয়া।
প্রায় প্রতি বছরই একটি বিষয় অজ্ঞাত কারণে বাংলা একাডেমির নজর এড়িয়ে যায়। ধর্মের প্রতি আঘাত হানা বই খোঁজার দিকে নজর দিতে গিয়ে কর্তৃপক্ষের অসচেতনতায় অজান্তেই চলে যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধীর লেখা বই বিক্রি ও বিতরণের কাজ। কয়েক বছর আগ থেকেই বইমেলায় যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, কাদের মোল্লা, গোলাম আযমসহ অন্য যুদ্ধাপরাধীদের লেখা বইগুলো বিক্রিসহ বইমেলায় প্রবেশ ও বের হওয়ার রাস্তায় বিতরণে কাজ করে একটি চক্র। তা ছাড়া মওদুদীবাদের বইয়েরও বিক্রি চলে এ সময়। স্বাধীনতাবিরোধী মতাদর্শের এই চক্রটি এবারও নানাভাবে সে চেষ্টাটি চালাবে। তাই বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের উচিত এই দিকটির দিকে বিশেষ নজর দেওয়া। কেননা ভাষা আন্দোলনের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে অমর একুশে বইমেলা। তাই মানসম্পন্ন বইয়ের পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধীর বইমুক্ত বইমেলাও চাই আমরা। কয়েক বছর ধরে বইমেলার পরিসর বাড়ছে। স্টল বিন্যাসেও এসেছে বৈচিত্র্য। বইমেলার ভেতরেই বিভিন্ন স্থানে প্রয়াত নামকরা বিশিষ্ট কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, গল্পকার, শিল্পী ও গবেষকদের পরিচিতিমূলক ছবির বিন্যাস ঘটানো যেতে পারে। তা দেখে মেলায় আগত শিশুরা তাদের সম্পর্কে ধারণা পাবে, যা শিশুদের মনোজগৎকেও প্রভাবিত করবে। একুশে বইমেলা সফলতা ও পরিপূর্ণতা লাভ করবে সবার অংশগ্রহণে। এবারও পাঠক, প্রকাশক ও লেখকদের সম্মিলন ঘটবে সেখানে। পাঠকদের বই কেনার মাধ্যমে আলোর মুখ দেখবে প্রকাশনা শিল্পÑএমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক : লেখক ও গবেষক
পৃথিবীর ইতিহাসে ফরাসি বিপ্লবের সময়খণ্ডটিকে সহিংসতার দাইমা হিসেবে দেখেন বিশে^র রাজনীতির ইতিহাস লেখক কেউ কেউ। তারা দেখান ফরাসি বিপ্লব জগৎবাসীকে সন্ত্রাস এবং নাগরিক সেনাবাহিনী দিয়েছে। তারা দেখান নেপোলিয়নের যুদ্ধক্ষেত্রের দর্শনীয় সাফল্যের পেছনে আসল কারণ, তার সেনাবাহিনী ভাড়াটে ছিল না, দেশপ্রেমিকদের দ্বারা গঠিত ছিল। তারা জাতীয় স্বার্থে উদ্বুদ্ধ হয়ে হত্যাকাণ্ড চালাতেন। ফলে মানুষের সামনে হাজির হলো জাতীয়তাবাদী চেতনার একপ্রকার নাগরিক ধর্মমত।
দার্শনিক হেগেল তার ভাবনা লিখেছিলেন ফরাসি বিপ্লব প্রসঙ্গে বিপ্লব সাধনের লড়াইকে মানুষ তাদের নিজের জীবনের চেয়ে বেশি মূল্যবান মনে করেছিল। তাই তারা প্রাণ দিতে রাজি ছিল। মনে হয় হেগেল এভাবে বললে ভালো হতো যে মানুষ স্বেচ্ছায় এ রকম কারণে হত্যাও করতে চায়। হ্যাঁ, বিগত বিংশ শতকে মানুষ যেভাবে গণহত্যা করেছে নানা অজুহাতে, হয়তো বনের কোনো হিংস্র প্রাণীও এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালায়নি। দুটি বিশ্বযুদ্ধ, ঔপনিবেশিক যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ, বিপ্লব এবং প্রতিবিপ্লব মোটা দাগে গোটা শতাব্দীজুড়ে ছিল।
বৈশ্বিক রাজনীতির পটভূমিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বুদ্ধির ব্যর্থতা দেখার আগে আমরা আধুনিক রাজনৈতিক সহিংসতার একটি অধ্যায় দেখে নিতে পারি, যেখানে ইউরোপে জাতিগত নির্মূলকরণের ইতিহাস বিধৃত। দেখে নিতে পারি কেন ‘একীভূত স্পেনীয় রাষ্ট্র তার ইহুদিদের কড়া শর্ত দিল খ্রিস্টান হও অথবা নির্বাসনে যাও’? সাফ কথা সেদেশে থাকতে হলে খ্রিস্টান হতে হবে, না হও যদি এ দেশ থেকে পালাও। ‘গুড মুসলিম ব্যাড মুসলিম’ বইটির লেখক মাহমুদ মামদানি বিশ্ববাসীকে জানালেন ‘১৪৯২ সাল। এ বছরে ইউরোপীয় রেনেসাঁর শুরু ও তাদের রাজনীতির আধুনিক রূপের জন্মের সময়খণ্ড সেটা। এ বছরেই ক্রিস্টোফার কলম্বাস নতুন দুনিয়া খুঁজতে পাল তুলেছিলেন। এ বছরেই রাজা ফার্দিনান্দ ও রানী ইসাবেলার সৈন্যরা রাজধানী গ্রানাডা জয় করেছিল, যে-গ্রানাডা ছিল পশ্চিমের খ্রিস্টান বলয়ে মুসলিমদের সুরক্ষিত আশ্রয়স্থল। ফলে ১৪৯২ হয়ে উঠল দুটি সম্পর্কযুক্ত প্রচেষ্টার প্রবেশদ্বার। একটি হলো, একটি জাতির ঐক্য, অন্যটি বিশ্বজয় বা সাম্রাজ্য বিস্তার।’
মামদানি আরও জানালেন ‘জাতি একীকরণের ফলে জাতিরাষ্ট্রের জন্ম হয়ে গেল। এ যুগে, রাজনৈতিক আধুনিকতা গণতন্ত্রের সূচনার সঙ্গে সমান করে দেখা হয়। কিন্তু উনিশ শতকের রাজনৈতিক তাত্ত্বিকরা বিশেষত ম্যাক্স ওয়েবারের মতে, রাজনৈতিক আধুনিকতা নিরূপিত হয়, রাষ্ট্রের সহিংসতা একক কর্র্তৃত্বের দ্বারা একচেটিয়া হয়ে গেলে। জাতিরাষ্ট্রে আগের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সহিংসতা একত্র করে, অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক সব শত্রুকে এক দুর্দান্ত ধাক্কা দিতে সক্ষম। এটা ছিল তাদের একটি সুশীল সমাজ তৈরির রাজনৈতিক পূর্বশর্তও।’
‘সংস্কৃতি ও বর্ণের দিক দিয়ে জাতির রাজনৈতিক আধুনিকতার চিন্তার দুয়ারে তখন ইউরোপ। ফার্দিনান্দ এবং ইসাবেলার স্পেনে, যে-জাতির পরিচয় সর্বাগ্রে খ্রিস্টান। স্পেনের একীকরণ শুরু হয়েছিল জাতিগত নির্মূলকরণের মাধ্যমে। ১৪৯২ সালেই রাজা ফার্দিনান্দ এবং রানী ইসাবেলা স্পেন থেকে ইহুদিদের সরানোর আইনে (এডিক্ট অব অ্যাক্সপালশন) স্বাক্ষর করেছিলেন। একীভূত স্পেনীয় রাষ্ট্র তার ইহুদিদের কড়া শর্ত দিলে প্রায় ৭০ হাজার স্পেনীয় ইহুদি খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করে স্পেনে থেকে গিয়েছিল। তাদের এই থাকা নিরাপদ ছিল না। তদন্তের দ্বারা জর্জরিত হয়েছিল। অভিযোগ এনেছিল ওরা খ্রিস্টান জাতিরাষ্ট্রের প্রতি আন্তরিক না। আনুমানিক ৫০ হাজার উত্তর আফ্রিকা ও ওসমানীয় সাম্রাজ্যের বলকান প্রদেশগুলোতে চলে গিয়েছিল। সেখানে তাদের আন্তরিকভাবে স্বাগত জানানো হয়েছিল। বাকি প্রায় ৮০ হাজার সীমান্ত পেরিয়ে পর্তুগালে প্রবেশ করেছিল। স্পেন থেকে এ তাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা পঞ্চদশ শতকের শেষের দিকে। তখন একের পর এক ইউরোপের একেক অংশ থেকে ইহুদিদের বের করে দেওয়া হয়েছিল। ১৪৯৯ সালে, মানে ইহুদি বের করার আদেশের সাত বছর পরে, স্পেন সেদেশের মুসলমানদের একই ধরনের শর্ত দিয়েছে: খ্রিস্টান হও অথবা চলে যাও। সুতরাং আধুনিক রাষ্ট্রের ইতিহাসও বর্ণের ইতিহাস হিসেবে পড়া যেতে পারে।’ কিন্তু পরে বহু কারণে কিংবা ‘ধাক্কা মারলে ধাক্কা খেতে হয়’ এমন বাস্তবতার কারণেই হয়তো-বা রাষ্ট্রীয়ভাবে তাড়িয়ে দেওয়ার চিন্তা থেকে বের হতে হয় ইউরোপকে। যদিও বর্ণবিভেদ আমজনতার মধ্যে সেখানে শেষ হয়ে যায়নি।
এখন আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতার জায়গাগুলো দেখি। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় কবি ওয়াল্ট হুইটম্যান তার সেই বিখ্যাত দীর্ঘ কবিতা ‘সং অব মাইসেলফ’ এর এক জায়গায় বলেছিলেন, ‘ডু আই কন্ট্রাডিক্ট মাইসেলফ? ইয়েস আই ডু’ (আমার মধ্যে কি স্ববিরোধ আছে? হ্যাঁ আছে)। সহজ কথায় এর অর্থ আমার যা করা উচিত না, আমি তা করি। প্রশ্ন হলো কেন করি বা কেন মানুষ করে? আত্মরক্ষার্থে? তাই যদি হয়, আত্মরক্ষার্থে যা করা উচিত না, তা করলে শেষ রক্ষা হয় কি? এ প্রশ্ন থেকে যায়।
মাহমুদ মামদানি ১৯৭৫ সালে, তানজানিয়ার দারুস সালাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন তরুণ প্রভাষক। বছরটি বেশ গুরুত্ববহ ঔপনিবেশিকতামোচনের কাল হিসেবে। এ বছর আমেরিকা ইন্দোচীনে পরাজিত হয়। এ বছরেই আফ্রিকা মহাদেশের মোজাম্বিক, অ্যাঙ্গোলা, গিনি থেকে পর্তুগিজরা বিদায় হয়েছে। এই বছরেই ঠাণ্ডা লড়াইয়ের প্রধান কেন্দ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলে স্থানান্তর হয়। তখন কৌশলগত প্রশ্নটি ছিল, পর্তুগিজ সাম্রাজ্যের টুকরোগুলো কে নেবে সোভিয়েত না যুক্তরাষ্ট্র? প্রধান কেন্দ্র স্থানান্তর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল পরিবর্তন হয়। আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ও কংগ্রেস ইন্দোচীন যুদ্ধের শিক্ষা বিবেচনায় নিয়ে শীতল যুদ্ধ স্থানান্তর করতে বলে। সেই শিক্ষা নিক্সন মতবাদ হিসেবে আইনসভায় গৃহীত এবং তা ক্লার্ক সংশোধনী আকারে পাস হয়। নিক্সনের মতবাদে ছিল ‘এশিয়ার যুদ্ধ এশিয়ার ছেলেদের করা উচিত’। এ শিক্ষা আমেরিকা পেয়েছে ইন্দোচীনে এক যুগের বেশি জড়িয়ে থেকে কোনো লাভ না হওয়াতে। বিশেষত তুলনামূলক লাওসে প্রক্সি যুদ্ধ সফল হলেও ভিয়েতনামে ব্যর্থতার চাপে সেই সফলতাও ব্যর্থ হয়েছে। ভিয়েতনামে সরাসরি যুদ্ধে নামে আমেরিকা হাজার হাজার সৈন্য নিয়ে ভিয়েতনামি কমিউনিস্ট গেরিলাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু লাওসে এসে আমেরিকা দেখে তার হাত বাঁধা ১৯৬২ সালের চুক্তি অনুযায়ী মস্কোর সঙ্গে। সেই চুক্তি মোতাবেক আমেরিকান সৈন্য লাওসে প্রবেশ করতে পারে না। উপায় নেই দেখে আমেরিকা তাৎক্ষণিকভাবে যা মাথায় আসে তা করে লাওস নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।
উল্লেখ্য, ভিয়েতনাম যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ১৯৬৪ সালে, যখন জনসন প্রশাসন দাবি করল দুই আমেরিকান ডেস্ট্রয়ার আঘাত করেছে উত্তর ভিয়েতনামিদের টর্পেডো টনকিন উপসাগরে। আমেরিকান সংবাদ মাধ্যমে একটি চিত্র প্রকাশ পেল, যেখানে দেখানো হয় যুক্তরাষ্ট্রকে অপমান করা হয়েছে। তাই এর একটা জবাব দেওয়া উচিত দাবি করা হয় প্রভাবশালী মিডিয়াতে। মাহমুদ মামদানি জানালেন, ‘প্রেসিডেন্ট জনসন উত্তর ভিয়েতনামিদের ওপর বোমা মারা শুরু করেন। জোরেশোরে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য কংগ্রেসের দুই হাউজ থেকে সেনা পাঠানোর অনুমোদন দিতে বললেন। দ্রুতগতিতে কাজ হলো, প্রেসিডেন্ট দুই হাউজ (হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ ও সিনেট) থেকেই আক্রমণের অনুমোদন পেয়ে গেছেন। অতঃপর যে খবর পাওয়া গেল, যে ডেস্ট্রয়ারের নাবিকরা জানিয়েছিলেন তারা টর্পেডো দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল, তারাই পরে জানালেন আক্রান্ত হওয়ার খবরটি বানোয়াট ছিল। কিন্তু আমেরিকা অন্য হিসাব মাথায় নিয়ে আক্রমণ চালিয়ে যেতে থাকে। কারণ আমেরিকার প্রধান প্রতিপক্ষ রাশিয়া। ডেস্ট্রয়ার আক্রান্তের খবর পেয়ে তখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট যেন পেয়ে গেলেন ব্ল্যাংক চেকÑ বিস্তর শক্তি প্রয়োগের সুযোগ। কিন্তু সফল হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। ‘অপারেশন রোলিং থান্ডার’ করল যুক্তরাষ্ট্র উত্তর ভিয়েতনামে। নিরবচ্ছিন্ন বোমা ফেলতে থাকল। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো, শিল্প কারখানাগুলো ধ্বংস করতে থাকল এ আশায় যে উত্তর ভিয়েতনামিরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হবে।
কিন্তু ব্যর্থ হলো আমেরিকা আশানুরূপ ফল এলো না। প্রেসিডেন্ট জনসন দক্ষিণ ভিয়েতনামে কমব্যাট সৈন্য নামালেন। নতুন নতুন অপারেশন করল। ‘সার্চ অ্যান্ড ডেস্ট্রয়’, ‘বডি কাউন্ট’ ইত্যাদি। কিন্তু ব্যর্থ হলো আমেরিকা। ছোট ছোট ব্যর্থতাগুলো বিশাল ব্যর্থতায় উন্নীত হলো। সেখানে তাদের ‘আমেরিকানাইজেশন’ হয়ে গেল ঐতিহাসিক ‘ভিয়েতনামাইজেশন’। প্রসঙ্গত, মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ ২০০৩ সালের ১৬ অক্টোবর পুত্রজায়াতে ওআইসি-র সম্মেলনে বলেছিলেন- Jews rule the world by proxy. They get others to fight and die for them. কথাটা আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় আসার পর পক্ষে-বিপক্ষে বেশ হইচই হয়েছিল। সিএনএন-র রিপোর্টে বলা হয়, আমেরিকা ও ইসরায়েল মাহাথিরের কথাকে ‘পোলারাইজিং রেটোরি’ বা ‘নতুন অর্থের চটকদার বুলি’ বিবেচনা করেছিল। মাহাথির ঠিক ধরতে পেরেছিলেন ইহুদি পরিচয়ের জায়নবাদীরা অপরের মাধ্যমে দুনিয়া শাসন করছে। আমেরিকার একজন বিখ্যাত ইহুদি সাংবাদিক, ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি উদঘাটনের অন্যতম অনুসন্ধানী কার্ল বার্নস্টাইন ২০১৩ সালের ৪ মে এমএসএনবিসি টিভি’র ‘মর্নিং জো’ টক শো-তে সাফ বলেছিলেন, ইসরায়েলি নিও-কনজার্ভেটিভেরা আমেরিকাকে ইরাক যুদ্ধে যেতে বাধ্য করেছিল তাদের স্বার্থে। ইনি সেই বার্নস্টাইন, যিনি আর বব উডওয়ার্ড মিলে প্রেসিডেন্ট নিক্সন প্রশাসনের ‘ডার্টি ট্রিক্স’ বের করে দিয়েছিলেন, যা ‘ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি’ নামে খ্যাত। ফলে ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে প্রেসিডেন্ট নিক্সন পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এভাবে ভেতরে এবং বাইরে বিস্তর ব্যর্থতা আছে আমেরিকার।
লেখক: কবি, অনুবাদক, প্রাবন্ধিক
সাধক, চিকিৎসক ও সৎসঙ্গ আশ্রমের প্রবর্তক অনুকূলচন্দ্র ঠাকুর। তিনি ১৮৮৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পাবনার হেমায়েতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শিবচন্দ্র চক্রবর্তী, মা মোহিনী দেবী। কলকাতার ন্যাশনাল মেডিকেল স্কুল থেকে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের ডিগ্রি নেন। নিজ গ্রামে ফিরে চিকিৎসাসেবা শুরু করেন। তার বিশ্বাস ছিল, মানুষ শারীরিক, মানসিক ও আত্মিকÑএই তিন ধরনের ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। তাই তিনি মানসিক ব্যাধির চিকিৎসার প্রতিই বেশি জোর দিতেন। মায়ের কাছ থেকে দীক্ষা নিয়ে অনুকূলচন্দ্র মানুষের আত্মিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কীর্তন দল গঠন করেন। মানুষের আত্মিক উন্নতির লক্ষ্যে তিনি পাবনায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘সৎসঙ্গ আশ্রম’। অনুকূলচন্দ্র জনকল্যাণে তপোবন বিদ্যালয়, দাতব্য চিকিৎসালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, পাবলিশিং হাউজ, ছাপাখানা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি বিহারের দেওঘরে যান এবং সৎসঙ্গের আদর্শে নতুন আশ্রম গড়ে তোলেন। ‘শাশ্বতী’ নামে আশ্রমের একটি মুখপত্র প্রকাশ করা হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর তিনি আর ফিরে আসেননি। বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষায় তিনি ৪৬টি বই লিখেছেন। এর মধ্যে ‘পুণ্যপুঁথি’, ‘অনুশ্রুতি’ (ছয় খণ্ড), ‘চলার সাথী’, ‘শাশ্বতী’ (তিন খণ্ড), ‘প্রীতিবিনায়ক’ (দুই খণ্ড) উল্লেখযোগ্য। ১৯৬৯ সালের ২৬ জানুয়ারি বিহারে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ভারত ও বাংলাদেশ দুদেশেই তার ভক্তকুল ছড়িয়ে আছে।
রাজধানীর সরকারি কবি নজরুল সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এম ওয়াসিম রানার (৩০) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছেন তার বন্ধুরা। শুক্রবার (০২ জুন) রাত সাড়ে ১২টার দিকে চানখারপুলের একটি বাসায় তার বন্ধুরা তাকে দরজা ভেঙে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে।
অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
রানার বন্ধু ইমরান হোসেন বাবু জানান, 'রানা কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলায়। কয়েক দিন যাবৎ রানার খু্ব মন খারাপ ছিল। একাকী থাকতে চাইত। চুপচাপ থাকত। তবে কী চিন্তা করত সে ব্যাপারে কিছু বলত না। তাই আমি তাকে বলেছিলাম- বন্ধু, তুমি কিছুদিনের জন্য কক্সবাজার ঘুরে আস।'
ঘটনার পরপরই রানার স্ত্রী পরিচয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে রাত দেড়টার সময় সানজিদা নামে এক মেয়েকে আহাজারি করতে দেখা যায়। সানজিদা আক্তার (জান্নাতি) কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
সানজিদা আক্তারের প্রতিবেশী মাইদুল ইসলাম জানান, 'সানজিদা আপুকে আমরা জান্নাতি আপু বলে ডাকি। রানা ভাইয়ের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে অনেকদিন আগে। রাজনৈতিক কারণে বিষয়টি জানাজানি হয়নি। জান্নাতি আপু ডেমরা রূপগঞ্জের তারাবো এলাকায় একটি বাসায় থাকতেন।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক এক সহসভাপতি বলেন, 'আমরা জানতাম, সানজিদার সঙ্গে প্রেম ছিল। বিয়ে হয়েছিল কি-না তা সঠিক জানি না।' মৃত্যুর কারণ যা-ই হোক, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আসল রহস্য উন্মোচন করে বিচারের দাবি জানান তিনি।
রানার মৃত্যুর খবরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন এবং তারা শোক জানান। আজ (০৩ জুন) শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় কবি নজরুল সরকারি কলেজ মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
টেস্ট ক্রিকেটে সিলেটের পথচলা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। অভিজাত সংস্করণে যা ছিল দেশের অষ্টম ভেন্যু। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ম্যাচ দিয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে পা রাখে দেশের সবচেয়ে সুন্দর এই স্টেডিয়ামটি। তবে মাঠের অভিষেক ম্যাচেই হেরে যায় বাংলাদেশ। তারপর আর কোনো পাঁচ দিনের খেলা গড়ায়নি এই মাঠে। এ নিয়ে স্থানীয়দের আক্ষেপের শেষ নেই।
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর ফুরাচ্ছে। পাঁচ বছর পর আবারও টেস্ট ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
ক্রিকবাজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, ‘আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে আমরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজের প্রথম টেস্ট আয়োজন করতে পারব বলে আশা করছি। এটি আমাদের জন্য খুব একটি উপলক্ষ হবে। কারণ পাঁচ বছর পর সিলেটের মাঠে টেস্ট ক্রিকেট ফিরবে।’
সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল সিলেট সফর করেছে। তারা সেখানকার মাঠসহ সব সুযোগ সুবিধা পরিদর্শন করেছেন। পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়ে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। সবকিছু দেখে তারা এখানে আরও বেশি ম্যাচ আয়োজনের জন্য উন্মুখ বলে জানিয়েছেন বিসিবির নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান নাদেল।
তিনি যোগ করেছেন, ‘নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল আমাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বেশ মুগ্ধ। তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়েছে আমরা তাদের সব প্রত্যাশা ও প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারব।’
এফটিপি সূচি অনুযায়ী চলতি বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে ও দুই টেস্ট ম্যাচের সিরিজে খেলার কথা নিউজিল্যান্ডের। তবে সিরিজটি হবে দুই ভাগে। প্রথম ভাগে সেপ্টেম্বরের শেষভাগে বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়ানডে খেলবে কিউইরা। এই সিরিজ খেলেই বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাবে দুই দল।
বিশ্বকাপের পর হবে দুই দলের টেস্ট সিরিজ। নভেম্বরের শেষ দিকে আবারও বাংলাদেশে আসবে কিউইরা। বিসিবি প্রস্তাবিত সূচি অনুযায়ী ২১ নভেম্বর ঢাকায় পা রাখার কথা সফরকারীদের। এরপর একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে দলটি। ২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর হবে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের প্রথম টেস্ট।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণ করে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রকাশিত গেজেটে কয়েকটি আসনে পরিবর্তন এসেছে।
গত বৃহস্পতিবার ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত গেজেট শনিবার (৩ জুন)বিজি প্রেসের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন, ২০২১-এর ধারা ৬-এর উপধারা (৩)-এর অধীনে সংসদের পুনর্নির্ধারিত নির্বাচনী এলাকার প্রাথমিক তালিকা গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত হয় এবং ওই বিজ্ঞপ্তির অনুচ্ছেদ ৩-এর অধীন পুনর্নির্ধারিত নির্বাচনী এলাকার বিষয়ে দাবি/আপত্তি/সুপারিশ/মতামত আহ্বান করা হয়।
আরও বলা হয়, পরে নির্ধারিত সময়সূচি মোতাবেক প্রাপ্ত দাবি/আপত্তি/সুপারিশ/মতামতের ওপর কমিশন কর্তৃক প্রকাশ্য শুনানি গ্রহণ করা হয়। নির্বাচন কমিশন উক্ত আইনের ধারা ৬-এর উপধারা (৪) অনুযায়ী দাবি/আপত্তি/সুপারিশ/মতামত পর্যালোচনা করে প্রাথমিক তালিকায় প্রকাশিত নির্বাচনী এলাকার প্রয়োজনীয় সংশোধন করে সংযুক্ত তপশিল মোতাবেক জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের পুনর্নির্ধারিত সীমানার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করল।
চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চাপ চাপ রক্ত, ছেঁড়া জামাকাপড়, খাবার, ব্যাগপত্র, রক্তমাখা দেহ। এসবের মাঝেই ভাঙা লাইনের উপর পাওয়া গেলো ছোপ ছোপ রক্তমাখা একটি কবিতার খাতা।
খাতায় লেখা বিভিন্ন রকমের ভালোবাসার কবিতা, মাঝে মাঝে আবার নকশাও আঁকা। হাতে নিয়ে পাতা উল্টাতেই চোখে পড়ল,
‘‘অল্প অল্প মেঘ থেকে হালকা হালকা বৃষ্টি হয়, ছোট্ট ছোট্ট গল্প থেকে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়....’’
পাতা উল্টাতেই চোখে পড়ল আরও একটি কবিতা। তার শুরুতে লেখা,
‘ভালোবাসা এই মন তোকে চায় সারাক্ষণ,
আছিস তুই মনের মাঝে
পাশে থাকিস সকাল সাঁঝে।
কী করে তোকে ভুলবে এই মন,
তুই যে আমার জীবন...’
কবিতাটি লেখক কে, কার জন্য এই কবিতা লিখা, তা জানার উপায় নেই। সম্ভবত, কবিতার খাতার মালিক দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটিতেই ছিলেন। দুর্ঘটনার ভয়াবহতা এতটাই বেশি ছিল যে, সেই কবিতার খাতা ছিটকে এসে পড়েছে ভাঙা লাইনে।
কবিতার খাতার মালিক সুস্থ, আহত না মৃত, তাও জানা সম্ভব হয়নি। যিনি লিখেছেন, তিনি পুরুষ না মহিলা তা-ও জানা সম্ভব হয়নি। তবে লেখা পড়ে বোঝা যায়, কবিতাটি প্রিয় কারও উদ্দেশে লেখা। যাঁর উদ্দেশে এই কবিতা লেখা, এই কবিতার খাতা কি তাঁর কাছেও কোনও দিন পৌঁছাবে! তাও জানার উপায় নেই।
ভারতের ওড়িশার বালেশ্বরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনাস্থলে এই কবিতার খাতা হাতে পায় আনন্দবাজারের প্রতিনিধি। এভাবেই এক প্রতিবেদনে বর্ণনা তুলে ধরে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির তথ্যমতে, শনিবার ভোর পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৩৩। আহত ৯০০ জনের বেশি। ভেতরে এখনও আটকে আছে অনেক মানুষ।
প্রথম দুই সেটই গড়িয়েছে টাইব্রেকারে। প্রথমটি নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৫ মিনিটে। দ্বিতীয়টিও টাইব্রেকারে। সেটির নিষ্পত্তি ঘণ্টার ওপরে। দুটোতেই জয় নোভাক জকোভিচের। তারপরেরটিও জিতে যান এই সার্বিয়ান। ১৪তম ফ্রেঞ্চ ওপেনের খেলায় স্পেনের আলেজান্দ্রো ফোকিনার সঙ্গে ৩-০ সেটে জয়লাভ করেন তিনি। যে জয়ে মধুর প্রতিশোধ নিয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছেন তিনি।
৩৬ বছর বয়সী এই নাম্বার ওয়ান টেনিস তারকা প্রথম সেটে কিছুটা ছন্দহীন ছিলেন। তবে চ্যাম্পিয়নদের ঘুরে দাঁড়াতে তো সময় বেশি লাগে না। জকোভিচও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তারপর ফোকিনাকে কোনো সেট জিততে না দিয়েই ম্যাচ শেষ করেন তিনি।
প্রায় ৪ ঘণ্টাব্যাপী চলা এই ম্যাচটিতে এক পেশে জয় হলেও প্রতিটি সেটেই উত্তেজনার পারদ ছড়িয়েছেন দুজন। সমর্থকেরাও বারবার হয়েছেন রোমাঞ্চিত। তবে শেষ পর্যন্ত নোভাক জকোভিচের সমর্থকেরাই হাসি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আগামী সোমবার জকোভিচ শেষ ষোলোর ম্যাচ খেলতে নামবেন। সেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে কার্লোস আলকারাজকে পেতে পারেন তিনি।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।