
‘নদীর ধারে বাস তো ভাবনা বারো মাস’এ রকম একটি কথা প্রচলিত আছে। আমার বাড়ি এ রকম জেলায় (চুয়াডাঙ্গা) না হওয়ায় বাস্তব অভিজ্ঞতা হয়নি। তবে চাকরি-সুবাদে বিভিন্ন স্টেশনে পদায়ন এবং আমি ভ্রমণপিয়াসি হওয়ায় কিছু অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে। প্রায় দুই বছর লালমনিরহাটে থেকে দেখেছি তিস্তাপাড়ের মানুষের হাহাকার। আজ ‘আবাস’ আছে কাল তা ‘নেই’ হয়ে যায়। কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাটসহ এ এলাকার মানুষের কাছে শুনেছি অনেকের করুণ পরিণতি। এ এলাকার গাইবান্ধার অবস্থা সবচেয়ে করুণ।
বাংলাদেশের প্রধান নদীগুলো হলো পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র। এগুলোই সবচেয়ে বেশি ভাঙনের শিকার হচ্ছে। দেশের মধ্যে সবচেয়ে ভাঙনপ্রবণ নদী হচ্ছে যমুনা। এ ছাড়া তিস্তা, ধরলা, আত্রাই, কুশিয়ারা, খোয়াই, সুরমা, সাঙ্গু, গোমতী, মাতামুহুরী, মধুমতী, বিষখালী ইত্যাদি নদী ভাঙনপ্রবণ।
নদীভাঙন এ দেশের আর্থসামাজিক ব্যবস্থাকে যেকোনো দুর্যোগের চেয়ে বেশি মাত্রায় ধ্বংস করছে। নদীভাঙনকে অনেকে বলে থাকেনঝষড়ি ধহফ ঝরষবহঃ শরষষবৎ-উরংধংঃবৎ। কিন্তু এ নিয়ে আলোচনা, লেখালেখি বা চিন্তাভাবনা খুবই কম হয়।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন অন্বেষণের এক হিসাবে দেখা গেছে, প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ শিকার হচ্ছেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ। এদের আবার বেশির ভাগই পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আশ্রয়হীন হয়ে শহর অভিমুখে ছুটছে। সত্তর ও আশির দশক থেকে এ দেশে নদীভাঙনের তীব্রতা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে ক্ষয়ক্ষতি।
প্রতি বছর বাংলাদেশে গড়ে আট হাজার সাতশ হেক্টর জমি নদীতে বিলীন হয়। যার বেশির ভাগ কৃষিজমি। ক্ষতিগ্রস্ত অর্ধেক লোকেরই টাকার অভাবে আর ঘরবাড়ি তৈরি করা সম্ভব হয় না। তারা হয়ে যান গৃহহীন ও ছিন্নমূল। তারা সাধারণত বাঁধ, রাস্তা, পরিত্যক্ত রেলসড়ক, খাসচর, খাসজমিতে অবস্থান নেন। অনেকেই আবার কাজের খোঁজে আসেন শহরে। নদীভাঙনের কারণে বেড়ে যাচ্ছে সামাজিক ও পারিবারিক সংকট; বাড়ছে বেকারত্ব। উন্নয়ন অন্বেষণের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ভূমিহীনদের ৫০ শতাংশই নদীভাঙনের শিকার। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, নদীভাঙনের শিকার এক ব্যক্তিকে জীবনে গড়ে ২২ বার ঠিকানা বদল করতে হয়।
নদীভাঙনের কারণ বাংলাদেশের পলিমাটির গঠন। বর্ষাকালে নদীর প্রবাহের বিস্তৃতি অনেক বেশি থাকে। বর্ষা শেষে নদীর স্রোত ও পরিধি অনেক কমে যায়। এতে দুকূলে ভাঙন হয়। অনেকস্থানে নদীর দুকূলে স্থাপনা থাকে। এতে নদীর গতিপথ বাধাপ্রাপ্ত হয়। অনেক ক্ষেত্রে নদীপাড়ে শক্তভাবে পাড় দেওয়া হয় না। নদীপথের শেষের দিকে স্রোতের বেগ কম থাকে। কিন্তু বর্ষাকালে নদীর দুকূল স্রোতের জলে নরম হয়ে যায়। পরে সেখানে ভাঙন সৃষ্টি হয়। দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় নদীশাসন বা সরকারি/বেসরকারি বরাদ্দ যথাযথ ব্যবহার হয় না। তাই নদীশাসনের কাজে ফাঁকফোকর থেকেই যায়।
নদীভাঙনের প্রভাব সুদূরপ্রসারী সমাজ জীবনের ওপর যার প্রভাব পড়ছে। এর ফলে গতকালের আমির আজ ফকির ও আশ্রয়হীন হয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে বেকারত্ব ও দারিদ্র্য। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ অভাবের তাড়নায় কিংবা অন্যের চাপের মুখে অবশিষ্ট জমিজমা, গবাদিপশু এবং মূল্যবানসামগ্রী হাতছাড়া করে ফেলে। অনেক পরিবার অতিমাত্রায় ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতিতে পতিত হচ্ছে। খাবার পানি ও পয়ঃপরিচ্ছন্নতার তীব্র সংকট দেখা দেয়। নারীদের ব্যক্তিগত বা দৈহিক নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হয় এবং নারী নির্যাতন বৃদ্ধি পায়। বহুসংখ্যক লোক কর্মসংস্থান লাভের বা বেঁচে থাকার আশায় এলাকা ত্যাগ করে শহর বা অন্য কোনো স্থানে অস্থায়ী বা স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত হয়ে চলে যায়।
অনেকে বস্তিতে বসবাস করছে। বৃদ্ধ, নারী ও শিশুদের মধ্যে ভিক্ষাবৃত্তিকে বেছে নিতে দেখা যায়। অনেক স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে যায়। অনেকের বাস্তুচ্যুত হওয়ার কারণে পড়াশোনার বিঘœ হয় বা অনেকের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। শত-শত বা হাজার হাজার মানুষ বাঁধ বা শহরের বস্তিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হয়। নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের শিশুরা বাঁধ বা বস্তির জীবনে প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়।
দারিদ্র্য ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে পুষ্টিহীনতার প্রসার ঘটায়। শিশুশ্রম ও শিশু-নির্যাতন বৃদ্ধি পায়। নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের সামাজিক অবস্থানের চরম অবনতি ঘটে। বিবাহবিচ্ছেদ, স্বামী বা স্ত্রী কর্তৃক পরিবার-পরিজন ত্যাগ, বহুবিবাহ ইত্যাদি নেতিবাচক ঘটনা বৃদ্ধি পায়। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পার¯পরিক স¤পর্ক ও সহমর্মিতা শিথিল হয়ে পড়ে। নদীতে ভেঙে যাওয়া জমি জেগে উঠলে তা দখলের জন্য প্রতিযোগিতা শুরু হয় কোন্দল, মামলা বাড়ে। অনেক ক্ষেত্রে রক্তপাত হয়। সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে অনেকে।
বাংলাদেশের মোট আয়তনের শতকরা প্রায় ৮০ ভাগই প্রধান তিনটি নদ-নদী অববাহিকার অন্তর্ভুক্ত। প্রধান তিন নদী পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা ছাড়াও নদীবিধৌত বাংলাদেশের ছোট-বড় নদ-নদীর সংখ্যা প্রায় ৩০০টি। এসব নদ-নদীর তটরেখার দৈর্ঘ্য হচ্ছে প্রায় ২৪ হাজার ১৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে কমপক্ষে প্রায় ১২ হাজার কিলোমিটার তটরেখা নদীভাঙনপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। তাই এ দেশের নদীভাঙন একটি অতি প্রাচীন ও ভয়াবহ সমস্যা। পুরো বর্ষাকালেই চলতে থাকে ভাঙনের তা-বলীলা। বর্ষা শেষে ভাঙনের প্রকোপ কিছুটা কমলেও বছরজুড়ে তা কমবেশি মাত্রায় চলতে থাকে।
এসব এলাকায় সরকারের নজর আছে। তবে আরও বরাদ্দ বেশি দেওয়া যেতে পারে। বিদেশি অনেক সাহায্য সংস্থা অপরিকল্পিতভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে থাকে। দেশি অনেক সংস্থাও এ রকম করে থাকে। সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় সমন্বিত বা মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে নদীভাঙন ও পরবর্তী ব্যবস্থাপনা করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। এতে সুষ্ঠু-বণ্টন হতে সহায়তা করবে।
নদীতে চর জেগে উঠলে ভাঙনের শিকার/ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে সুষম বণ্টন করা দরকার। এ ব্যাপারে প্রশাসন কঠোরতা অবলম্বন করতে পারে। ছোট আকারের নদীগুলোর ভাঙন ঠেকাতে কর্তৃপক্ষ কিছুটা সক্ষম হলেও, প্রাকৃতিক কারণের পাশাপাশি বরাদ্দের অভাবে বড় নদীর ক্ষেত্রে উদ্যোগগুলো তেমন সফল হচ্ছে না। এ ব্যাপারে আমরা সমন্বিত পরিকল্পনা করে বরাদ্দের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারি। প্রথমে দু-একটা বাস্তবায়ন করে তার ফলাফল পর্যবেক্ষণ করে পর্যায়ক্রমে বড় প্রকল্প গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে পারি।
লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক
গত সোমবার ২৩ জানুয়ারি আয়কর আইন-২০২৩-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এই আইনের ফলে আয়কর নির্ধারণে কর্মকর্তার ক্ষমতা কিছুটা কমানো হয়েছে। সেই সঙ্গে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন প্রদান আরও সহজ করা হবে। ব্যবসায়ীদের আয়কর নির্ধারণে আগে ২৯টি বিষয় মানদ- ছিল। এখন তা কমিয়ে ১২টিতে নামিয়ে আনা হয়েছে। মানুষ যাতে ট্যাক্স দিতে উৎসাহিত হন এবং ট্যাক্সের পরিধি যাতে বাড়ে সেজন্য এই আইনটি করা হয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়, করদাতার করের পরিমাণ আয়কর কর্মকর্তার নির্ধারণ করে দেওয়ার ক্ষমতা থাকছে না এই আইনে। করদাতার দেওয়ার তথ্যের ভিত্তিতেই কর নির্ধারিত হবে। ফলে কর্মকর্তার চাপিয়ে দেওয়া করের পরিমাণ ঠিক করার ফলে আপিলের পরিমাণ কমবে, কমবে করদাতার হয়রানি।
বাংলাদেশের আয়কর আইনের যদি সুরতহাল রিপোর্ট করা যায় তাহলে বিদ্যমান আয়কর আইনটি জন্মগতভাবে ব্রিটিশ, দৃষ্টিভঙ্গির বিচারে ঔপনিবেশিক এবং প্রায়োগিক দিক থেকে এখনো নিবর্তন ও প্রতিরোধাত্মক প্রতীয়মান হয়। এ দেশে ভূমি কর বা রাজস্ব আদায়ের প্রথা প্রাগৈতিহাসিক আমল থেকে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা প্রদান, বিভিন্ন সেবার বিনিময়, কিংবা উৎপাদন বা সম্পদ ব্যবহার বাবদ নানান নামে নানান উপায়ে রাজস্ব বা টোল বা ট্যাক্স আদায়ের প্রথা সেই আদি যুগ থেকে চলে এলেও আধুনিক আয়কর বলতে যে বিশেষ কর রাজস্বের সঙ্গে আমরা পরিচিত, এ দেশে তথা ভারতীয় উপমহাদেশে তার প্রবর্তন ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে, সাত সাগর তেরো নদীর পাড় থেকে আসা বিদেশি বেনিয়াদের দ্বারা। তাদের তৎকালীন সমাজে শিল্পবিপ্লবের পর পুঁজির প্রসার ঘটে এবং সেখানে সম্পদের ওপর, সম্পদ সৃষ্টি ও বিনিময় প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত আয় অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি হয়। রাষ্ট্র ওই অতিরিক্ত আয়ের ওপর একটা হিস্যা দাবি করে বসে, যুক্তি এই, তুমি রাষ্ট্রের তৈরি অবকাঠামো ব্যবহার করে আয়-উপার্জন করছো, রাষ্ট্রের সেবা ও সুবিধা ভোগ করে লাভবান হচ্ছো সুতরাং এসব অবকাঠামো নির্মাণ, এসব সুযোগ-সুবিধার সমাহার বাবদ রাষ্ট্রের বিনিয়োগে তোমার অংশগ্রহণ চাই।
এ দেশে যারা আয়কর আইন আমদানি করেছিলেন, যে সময় এনেছিলেন, যাদের জন্য এনেছিলেন এবং যাদের ওপর অর্পিত হয়েছিল এর প্রয়োগ-প্রবর্তনের ভার তাদের প্রত্যেকের নাড়ি-নক্ষত্র পরীক্ষা-পর্যালোচনায় বিদ্যমান আয়কর আইনের চরিত্র ও চারিত্র্য, এর শরীর ও শারীর শনাক্তকরণ সহজ হতে পারে। আমরা জানি এ দেশ ১৭৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্তৃত্বাধীনে চলে যায়। রেজা খান, সেতাব রায়দের মাধ্যমে রাজস্ব মাসোহারাপ্রাপ্তির পর্ব পেরিয়ে ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিশ প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে কোম্পানি মূলত এবং মুখ্যত লাভজনক ব্যবসায়িক দৃষ্টি ও রীতি পদ্ধতিতেই চালিয়েছিল শাসনকার্য।
কোম্পানির স্বার্থে ও সুবিধার জন্য ১৭৬৫ সালে বাংলার কৃষিপণ্যকে বাণিজ্যিকীকরণ, ১৭৭৩ সালে রেগুলেটিং অ্যাক্ট পাস, ১৮১৩ সালে ভারতে ফ্রি ট্রেড প্রবর্তন এবং ওই বছরই বাংলার মুখ্য শিল্প খাত টেক্সটাইল এক্সপোর্ট বন্ধ, ১৮২০ সালে টেক্সটাইলকে ইমপোর্ট পণ্য হিসেবে ঘোষণা, ১৮৩০-এ কলকাতা ডকিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠা, ১৮৩৫ সালে ইংরেজিকে অফিস-আদালতের ভাষা হিসেবে ঘোষণা, ১৮৩৮-এ বেঙ্গল বন্ডেড ওয়্যার হাউজ অ্যাসোসিয়েশন গঠন এবং ১৮৪০ সালে বেসরকারি খাতে চা বাগান স্থাপনের মাধ্যমে এ দেশীয় অর্থনীতির স্বনির্ভর সত্তাকে পরনির্ভরকরণের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের পর এ দেশের শাসনভার কোম্পানির থেকে ব্রিটিশ সরকারের হাতে ন্যস্ত হয়। ব্রিটিশ শাসনামলেই শাসকের সঙ্গে শাসিতের দায়-দায়িত্ব পালনের প্রশ্ন সামনে আসে এবং ইউরোপীয় শিল্পবিপ্লবের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রভাবে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় এ দেশের অর্থনীতি।
এই প্রেক্ষাপটেই উৎপাদন, বিপণন, বাণিজ্য ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে আয়কর আদায়ের যৌক্তিকতা দেখা দেয়। প্রথমে ১৮৬২ থেকে ১৮৬৭ পর্যন্ত সীমিত অবয়বে আয়কর আদায়ের আয়োজন চলে। মাঝে বন্ধ হয় কার্যক্রম। আবার ১৮৮০-এর পর কয়েক বছর পরীক্ষামূলকভাবে চলে। সরকার স্থায়ীভাবে কোনো আইন না করে, স্থানীয়ভাবে এসআরও বা সার্কুলার জারি করে আয়কর আদায় কার্যক্রম পরিচালনা করে। তবে এসব সার্কুলার ব্রিটিশ আইনের আদলে ও দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রণীত হলেও এ দেশীয় করদাতাদের প্রতি তাদের বশংবদ অদায়িত্বশীল আচরণ, পারস্পরিক অবিশ্বাস, ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা প্রতিরোধমূলক দৃষ্টিভঙ্গি সেই সার্কুলারের বাকপ্রতিমায় প্রাধান্য পায়।
করযোগ্য আয় নির্ধারণ থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে পরিপালনীয় বিধিবিধানের ভাষায় এমন এক ধরনের মনোভাবের প্রকাশ পায়, যা জটিল ও দ্ব্যর্থবোধক হয়ে ওঠে। এ ধরনের পরিবেশ পরিস্থিতিতে, তৎকালীন প্রশাসনিক সংস্কৃতিতে করদাতাদের শলাপরামর্শ দেওয়ার জন্য স্বাভাবিকভাবেই একটি ব্যবহারজীবী বিজ্ঞ সহায়ক সমাজও গড়ে ওঠে। কিন্তু তাদেরও অগোচরে, কর আইনকে সহজ ও করদাতাবান্ধবকরণে তাদের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ পরামর্শ সত্ত্বেও এ দেশে প্রবর্তিত আয়কর-সংক্রান্ত সার্কুলারসমূহে জটিলতা যুগলবন্দি হয়ে ওঠে সময়ের প্রেক্ষাপটে।
ঔপনিবেশিক সরকারের তরফে করদাতাদের কল্যাণ নিশ্চিত করার বিষয়টি মুখ্য বিবেচনায় না এলেও কর আদায়ের ক্ষেত্রে জমিদারদের পাইক-পেয়াদাসুলভ যুদ্ধংদেহী মনোভাব প্রকাশ পেতে থাকে। উদ্দেশ্য থেকে যায় ‘তোমার আয় হোক আর না হোক অর্থাৎ বাঁচো বা মরো রাজস্ব আমার চাই’। এ ধরনের আইনগত দৃষ্টিভঙ্গির বদৌলতে কর আদায়কারী বিভাগের সঙ্গে করদাতাদের সম্পর্ক যুক্তিসংগতভাবে দর-কষাকষি বা কিছুটা জবরদস্তিমূলক, পরস্পরকে এড়িয়ে চলার কৌশলাভিমুখী হয়ে পড়ে। অন্তরালে ব্রিটিশ প্রশাসনে বহুল কথিত একটা সাধারণ নির্দেশনা ছিল যেন এ রকম, ‘চোর তো চুরি করিবেই কিন্তু গৃহস্থকে সজাগ থাকিতে হইবেই’। করদাতাদের এরূপ বিরূপ ধারণায় বিবেচনা এবং তাদের ধরার ইন্ধন কর আইনের ভাষ্যে যেন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এরূপ পরস্পর অবিশ্বাসের ও প্রতিদ্বন্দ্বী পরিবেশে কর নির্ধারণ ও পরিশোধের ক্ষেত্রে পরস্পরকে এড়িয়ে চলার এবং সে লক্ষ্যে অনৈতিক আঁতাতের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকির সংস্কৃতিরও সূত্রপাত ঘটে।
ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থায় দুর্নীতিগ্রস্ততার এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টিতে সেই সময়কার আয়কর আইনের ভাষায় যেন ছিল পরোক্ষ প্রেরণা। এমন অনেক আইন আছে যা বেআইনি আচরণকে উসকে দেয়। এ রকমই পরিবেশে আঁতাতের মাধ্যমে কর ফাঁকি কার্যক্রমে একটা অনভিপ্রেত সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটে। এই জটিল, অনভিপ্রেত ব্যবস্থাদি আয়কর সার্কুলারের ভাষায় যেন প্রতিফলিত হতে থাকে। তদানীন্তন ব্রিটেনে বিদ্যমান আয়কর আইন ও প্রয়োগ পদ্ধতি প্রক্রিয়া থেকে সে সময় এ দেশে প্রণীত ও প্রবর্তিত আইন ও পদ্ধতি প্রক্রিয়ায় ব্যাপক বিচ্যুতি ও পরিবর্তন পরীক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও তাই-ই ‘ভারতীয় আয়কর আইন’ আকারে ১৯২২ সালে সংকলিত ও প্রবর্তিত হয়।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরও, এক যুগেরও বেশি সময় সেই ১৯২২ সালের আয়কর আইন ভারত স্থলে পাকিস্তান, পাকিস্তান স্থলে বাংলাদেশ প্রতিস্থাপিত ও নামাঙ্কিত হওয়া ছাড়া প্রায় একই মেজাজে বলবৎ ও প্রযোজ্য থাকে। আয়কর অধ্যাদেশ (১৯৮৪ সালের ৩৬ নম্বর অধ্যাদেশ) জারির মাধ্যমে বাংলাদেশে নিজস্ব আয়কর আইন প্রবর্তিত হয়। তবে তখন দেশে আইন পরিষদ বিদ্যমান না থাকায় রাষ্ট্র ও নাগরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট ও গণগুরুত্বপূর্ণ আয়কর আইনটি অধ্যাদেশ হিসেবে জারি হওয়ায় এটির প্রণয়ন ও প্রয়োগযোগ্যতা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। দাবি উঠেছে অধ্যাদেশের স্থলে আয়কর আইন প্রণয়নের। আইনসভার অনুমোদনে প্রণীত না হওয়ায় লক্ষ করা যায় অধ্যাদেশের সংশ্লিষ্ট ধারা, উপধারাসমূহ তথা বিধানাবলি মূলত ১৯২২ সালের মূল আইনেরই স্বাভাবিক ধারাবাহিকতায় দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ প্রদত্ত প্রেসক্রিপশনের আলোকে প্রণীত এবং এটি সে হিসেবেই বিবেচিত হয়ে আসছে।
বাংলাদেশে বিদ্যমান আয়কর অধ্যাদেশের ভাষা ও গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণে গেলে এটা প্রতীয়মান হয় যে, বছর বছর অর্থ আইনে যেসব ছিটেফোঁটা শব্দগত সংযোজন-বিয়োজন অনুমোদিত হয়েছে তা ধারণ করা ছাড়া ১৯২২-এর মূল আইনের ভাব, ভাষায় দৃষ্টিভঙ্গিগত তেমন কোনো পরিবর্তন বা সংস্কার দৃশ্যগোচর হয় না। বরং প্রতি বছর কর নির্ধারণ, শুনানি, বিচার-আচারে কর কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বা এখতিয়ার, কর অবকাশ, নিষ্কৃতি তথা ছাড় কিংবা বিশেষ সুবিধাবলির ধারা-উপধারা সংযোজন-বিয়োজন করতে করতে অনেক ক্ষেত্রেই করারোপ, আদায় ও করদাতার অধিকার, কর অবকাশ নিষ্কৃৃতিও সুবিধা-সংক্রান্ত মৌল দর্শন হয়েছে কখনো বা বিভ্রান্ত, কখনো বিকৃত ও ক্ষেত্রবিশেষে বিস্মৃত। পক্ষান্তরে, যুগধর্মের সঙ্গে সংগতি রেখে কর নির্ধারণ ও আদায়-সংক্রান্ত বিধানাবলি সহজীকরণ, সরলীকরণ তথা করদাতাবান্ধবকরণের পরিবর্তে ক্ষেত্রবিশেষে আরও জটিল হয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনীতির সমকালীন পরিবেশ পরিস্থিতির আলোকে আয়কর ব্যবস্থাকে সংস্কারের মাধ্যমে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ-সংবলিত সংশোধন, সংযোজন, বিয়োজন প্রয়াস বারবার যেন উপেক্ষিতই থেকে গিয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে বাস্তব ও বাস্তবায়ন যোগ্যতার বিবেচনাকে সামনে রেখেই নতুন আয়কর আইনের খসড়া প্রণয়ন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, যা মন্ত্রিপরিষদ নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। নির্বাহী বিভাগ প্রণীত, প্রস্তাবিত খসড়া আইনটিকে প্রকৃত প্রস্তাবে আইনে পরিণত করার দায় এবং দায়িত্ব এখন আইন পরিষদের ওপর। জাতীয় সংসদে এটিকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যুগোপযোগী তথা প্রকৃত প্রস্তাবে বাস্তবায়নযোগ্য করেই অনুমোদিত হবেএটিই বিধিসংগত প্রত্যাশা। এটি যেন শতাব্দী ধরে চলে আসা ঔপনিবেশিক অসম্মান হয়রানির হেতুতে পরিণত না হয়, এটির মধ্যে যেন গণপ্রজাতন্ত্রী মনোভঙ্গির প্রকাশ পায়।
এ ক্ষেত্রে ২০১২ সালে পাস করা নয়া ভ্যাট আইন প্রবর্তনে অনাকাক্সিক্ষত বিড়ম্বনার অভিজ্ঞতা স্মর্তব্য। করদাতাদের কাছে সেবাধর্মী মনোভাব নিয়ে না গেলে, তাদের আস্থায় যেমন আনা হবে না এবং তাদের স্থায়ী করদাতা হিসেবেও পাওয়া যাবে না। আস্থা সৃষ্টির জন্য কর বিভাগে আপিল শোনার জন্য ট্রাইব্যুনালে বিচার বিভাগীয় সদস্যের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার ব্যবস্থা এবং করদাতাদের আস্থা সৃষ্টিতে হয়রানি কমাতে কর কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছা ক্ষমতা হ্রাস পরিকল্পনার পদক্ষেপ হিসেবে এ আইনের মধ্যে প্রতিবিধানের ব্যবস্থার নিশ্চয়তা কল্পে কর ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তার প্রসঙ্গটিও উঠে আসবে। উঠে আসবে কর প্রদানে সবাইকে আগ্রহী করে তোলার ক্ষেত্রে করের টাকা ব্যয়বণ্টনে স্বচ্ছতা বিধানের বিষয়টিও।
লেখক: উন্নয়ন অর্থনীতির বিশ্লেষক
মুসলমানদের মধ্যে সত্যের পরিবর্তে মিথ্যা অবলম্বন করে চলা মানুষ সমাজে আগেও ছিল, এখনো আছে। মিথ্যা বলা, মিথ্যা লেখা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া থেকে শুরু করে মিথ্যাকে সত্য বলে চালিয়ে দেওয়ার মন্দ প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে। নানা সময়ে মিথ্যার প্রচার-প্রোপাগান্ডার সয়লাবে দেশে-বিদেশে বিশৃঙ্খলা ও যুদ্ধের মতো ঘটনা ঘটেছে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দীর্ঘদিন যাবৎ ইসরায়েলি হানাদার বাহিনী মুসলমানদের ওপর নির্যাতন করছে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে। তদ্রুপ দেশেও নানাবিধ মিথ্যা ও অসত্য বক্তব্য দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ কিংবা দখল করা হচ্ছে। একইভাবে ব্যক্তি পর্যায়েও চলছে দমন-নিপীড়ন ও অত্যাচার। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সত্য এসেছে মিথ্যা নির্মূলের জন্য। মিথ্যার পরাজয় অবশ্যম্ভাবী।’ -বনি ইসরাঈল : ৮১
বাংলাদেশকে আল্লাহতায়ালা নিয়ামতে ভরপুর করে দিয়েছেন। আমাদের মাটি ভালো, মিঠা পানি এবং সামুদ্রিক লোনা পানি আছে। আছে দক্ষ জনশক্তি, প্রাকৃতিক সম্পদও রয়েছে। শুধু দরকার সততার সঙ্গে সম্পদগুলো কাজে লাগানো। দলমত-নির্বিশেষে, জনগণকে কোনো ধরনের ধোঁকায় না ফেলে কাজগুলো করতে পারলে বরকত মিলবে। দেশের মানুষ সুখে-শান্তিতে জীবন কাটাতে পারবে।
মনে রাখতে হবে, জীবন চলার পথে মানুষ ভুল করে। কিন্তু ভুল আর মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে জীবন পরিচালনা এক বিষয় নয়। মানুষের ভুল হতেই পারে, ভুল স্বীকার করে নেওয়া মহৎ গুণ। মহান আল্লাহ ভুল স্বীকারকারীকে মাফ করে থাকেন। কিন্তু মিথ্যার আশ্রয় নেওয়াকে মাফ করবেন না। তাই কোনো অবস্থাতেই অসত্য পথে চলা যাবে না।
ব্যক্তিগত হোক কিংবা পারিবারিক, সামাজিক হোক আর রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে- কোথাও অসত্য কথা বলার সুযোগ নেই অথবা অসত্য হয় এর অনুমোদন দেওয়া যাবে না। সততার সঙ্গে, জবাবদিহির মানসিকতা নিয়ে দেশ ও দশের কাজ করতে হবে। দুনিয়ায় এর ফল পাওয়া যাবে। আখেরাতেও এর ভালো ফল পাওয়া যাবে।
আমাদের প্রশাসনের নিম্ন ইউনিট ইউনিয়ন পরিষদ অফিস, থানা, উপজেলা, আদালত, জেলা, বিভাগ, এমপি-মন্ত্রীসহ সর্বক্ষেত্রের দায়িত্বশীলরা সততার সঙ্গে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করলে- আমাদের মতো এই গরিব দেশ উপকৃত হবে।
সততাকে বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায় বস্তুর সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। এর পেছনে হাজারটা কারণ আছে। কিন্তু এটা যে সমাজের জন্য অশনি সংকেত, তা বুঝতে পারছি না। মুরব্বিরা এখন ছোট কাউকে দেখলেই দোয়া করেন, ‘সৎ হও বাছা, ভালো মানুষ হও।’ কথা হচ্ছে, সৎ কী হতে হয়? কোনো মানুষ কি কখনো অসৎ হয়ে জন্ম নেয়? না, অসৎ হয়ে কেউ জন্ম নেয় না। বরং নিষ্পাপ শিশু তার বয়স বৃদ্ধির সময়ে পরিচিত-অপরিচিতজনদের সঙ্গে স্বাভাবিক মেলামেশা এবং সামাজিকতার হাজার নিয়মে যখন বাঁধা পড়তে থাকে, তখনই তার জীবনের লক্ষ্য স্থির করতে হয়।
এই নির্দিষ্ট লক্ষ্য সহজে জয় করা সম্ভব না। হাজারও প্রাপ্তি দিয়ে জীবন সাজানোর জন্য দুনিয়ার কঠিন বাস্তবতার কাছে নিজেকে আত্মসমর্পণ করে এসব মানুষের মধ্য থেকেই কেউ কেউ লোভ-লালসা-মোহ ইত্যাদির কারণে প্রবৃত্তির স্বাভাবিক সততার পথ ছেড়ে অসততার দিকে পা বাড়িয়ে দেয়।
সততা ছোট তিন অক্ষরের একটি শব্দ। যা মানব চরিত্রের একটি বিশেষ গুণ এবং এর প্রয়োজনীয়তা সীমাহীন। এ গুণ যার মধ্যে আছে বা যে এই গুণ অর্জন করতে সক্ষম হন, আল্লাহতায়ালা দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। সত্যিকার মুমিন সততাকে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থেকেও ঊর্ধ্বে মনে করেন। কেননা তারা জানেন, এটি ইমান ও ইসলামের পূর্ণতা দান করে।
সততা ও বিশ্বস্ততার প্রতি আহ্বান জানিয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ইমানদাররা! তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো।’ -সুরা আত তওবা : ১১৯
সততা অন্তরের প্রশান্তি লাভের সঙ্গে সঙ্গে পরকালে মুক্তিলাভ, জান্নাত অর্জন, খোদার সন্তুষ্টি এবং ধনসম্পদে বরকতের মাধ্যম। মহান আল্লাহ মানবসমাজকে যে সীমারেখায় চলতে নির্দেশ দিয়েছেন, এগুলোর মধ্যে সততা অন্যতম।
সততা শুধু মুসলমান নয় বরং প্রত্যেক মানুষের জীবনেই প্রয়োজন, সে ইসলামের অনুসারী হোক বা অন্য ধর্মের, নেককার বা বদকার, অফিসার কিংবা কর্মী, শিক্ষক বা ছাত্র ,পীর কিংবা মুরিদ, ধনী হোক বা গরিব, পিতা-মাতা হোক বা সন্তান। মোটকথা, মানবজীবনের প্রতিটা বিভাগের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলো- সততা।
মানবসমাজের নিরাপত্তা, প্রশান্তি, সুখ-শান্তি, বিনির্মাণ, উন্নতির ভিত্তি- এই সততা। এ কারণেই সততাকে আপন করে নিতে গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম। এই গুণ মানুষকে উন্নত, আদর্শ ও নৈতিকতায় ভূষিত করে এবং এর মাধ্যমেই ইসলামি জীবনের পূর্ণতা আসে এবং অর্জিত হয় মানবতার সর্বোচ্চ গুণ।
যদিও সততার পথ কঠিন। সামান্য কিছু অর্জনের আশায় কিংবা ক্ষুদ্র স্বার্থে খুব সহজেই আমাদের চরিত্র থেকে সততা ধীরে ধীরে চুরি হতে শুরু করে। সততার বর্তমান অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, মানুষ বলতে শুরু করেছে, এখন কেউ নাকি সৎ নয়। তাই কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির দিকে ইঙ্গিত করে যদি বলা হয়, এই লোকটি এখনো ভীষণ সৎ তবে লোকজন এমন দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাবে যে তারা অদ্ভুত কিছু একটা দেখছে! আসলে সত্যি কথা এটাই, সততা নিয়ে থাকতে হলে স্বার্থ-লোভ-মোহ এসব ত্যাগ করতে হয়। কিন্তু এই ত্যাগের পথটা বড়ই বন্ধুর!
কিন্তু ইচ্ছা ও চেষ্টা করলে সৎ থাকা মোটেও কষ্টকর কিছু নয়। মানুষের জীবনযাপন এবং চাহিদার মাপকাঠিই নির্ধারণ করে দেয়, আপনি কতটুকু সৎ থাকতে পারবেন কি আদৌ পারবেন না। নিজের ভেতরে থাকা অসততার শেকড়গুলো উপড়ে ফেলে আপনি খুব সহজেই সৎ মানুষের কাতারে পৌঁছে যেতে পারেন।
এ জন্য দরকার, নিজের মনে থাকা সব ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা-, অন্যায়-অনিয়ম, মোনাফেকি, মিথ্যাচার, প্রতারণাসহ যাবতীয় অনাচার ভুলে সততার সঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া।
কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকাজ করবে, অবশ্যই আমরা তাকে পবিত্র জীবন দান করব। আর অবশ্যই আমরা তাদের তারা যা করত তার তুলনায় শ্রেষ্ঠ প্রতিদান দেব।’ -সুরা নাহল : ৯৭
লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব ওয়াহিদুল হকের পুরো নাম আবুল ফাতাহ মোহাম্মদ ওয়াহিদুল হক। তিনি ১৯৩৩ সালের ১৬ মার্চ কেরানীগঞ্জ উপজেলার ভাওয়াল মনোহারিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মাজহারুল হক ও মা মেওয়া বেগম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তার কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৫৬ সালে ‘দি ডেইলি মর্নিং নিউজ’ পত্রিকার মাধ্যমে। পরে তিনি পিপল, উইকলি ওয়েব, ডেইলি নিউ নেশন ও ডেইলি স্টারে সাংবাদিকতা করেছেন। শেষ বয়সে তিনি কলাম লিখতেন। বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগেও কিছুদিন খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনকে কেন্দ্র করে আইয়ুব সরকারের রবীন্দ্রবিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে তিনি জনমত গঠন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সমমনস্কদের নিয়ে ‘ছায়ানট’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮০ সালে তিনি ‘জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ’ প্রতিষ্ঠা করেন। ‘কণ্ঠশীলন’ নামের আবৃত্তি সংগঠন গড়ে তোলেন। ‘আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ’, ‘নালন্দা (বিদ্যালয়)’, ‘শিশুতীর্থ’, ‘আনন্দধ্বনি’ সংগঠনের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন। তার একটি মাত্র রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম রয়েছে ‘সকল কাঁটা ধন্য করে’ নামে। তিনি তিনটি সংগীতবিষয়ক প্রবন্ধ গ্রন্থ রচনা করেছেন। ১৯৭১ সালে তিনি ‘স্বাধীন বাংলা শিল্পী সংস্থা’ গড়ে তোলার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এ ছাড়া চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনেও তার অবদান ছিল। ২০০৭ সালের ২৭ জানুয়ারি তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশের যে কয়টি গর্ব করার বিষয়, তার মধ্যে অন্যতম পাট ও পাটশিল্প। বহুকাল বিশ্বের বুকে এ ভূখণ্ডের মর্যাদার অন্যতম প্রতীক ছিল সোনালি আঁশ নামে পরিচিত এ কৃষিপণ্য। কেবল অর্থকরী ফসল বলে নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তির হাতিয়ার হিসেবে পাটের ভূমিকা একটি স্বীকৃত ইতিহাস। সেই গর্বের অতীত না থাকলেও পাট এখনো দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের মোট রপ্তানি হয়েছিল ৫ হাজার ২০৮ কোটি ২৬ লাখ ডলার। এর মধ্যে পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয় ছিল ১১২ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। যা ওই বছর মোট রপ্তানি আয়ের ২ দশমিক ১৭ শতাংশ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ পণ্যের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ১২৮ কোটি ডলার। পাট উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় হলেও পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রথম। বর্তমানে বাংলাদেশ পাট দিয়ে ২৮২টি পণ্য উৎপাদন করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করছে। চলতি অর্থবছরে পণ্য ও সেবা রপ্তানি করে ৫৮ বিলিয়ন ডলার আয় করার লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ ক্ষেত্রে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পাট ও পাটজাত পণ্য বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।
বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরে ‘সোনালি আঁশে অফুরান আশা’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আগামী ৫ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্ক সিটিতে ‘এনওয়াই নাও উইন্টার শো’ নামে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বাণিজ্যমেলায় বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের ১৪টি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পাটজাত পণ্য প্রদর্শন করা হবে। এটি আমাদের জন্য দারুণ একটি সুযোগ। পাট ও প্রাকৃতিক আঁশ জাতীয় পণ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে পরিচিত করে তোলার পাশাপাশি রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে। পাটজাত পণ্য পরিবেশবান্ধব ও আন্তর্জাতিক বাজারে এর চাহিদা ক্রমবর্ধমান। বাংলাদেশে প্রচুর পাট উৎপাদন হলেও পাটজাত পণ্য প্রস্তুতকারকদের মধ্যে বৈশি^ক বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও এর প্রয়োগের কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। একই সঙ্গে পাটের উৎপাদনও কমছে। ফলে অনেক এসএমই উদ্যোক্তা পাটভিত্তিক পণ্য উৎপাদন করলেও বিবাজারে তাদের প্রবেশাধিকার সীমিত। বাংলাদেশ হর্টিকালচার অ্যাকটিভিটির এই উদ্যোগের মাধ্যমে স্থানীয় এসএমই প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক বাজার উপযোগী পণ্য দেখার, এ-সম্পর্কে শেখার এবং পণ্যের ডিজাইন করা ছাড়াও আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফরমে বাংলাদেশি পণ্য প্রদর্শনের সুযোগ পাবেন। এই আয়োজনে বাংলাদেশের পাটপণ্য প্রদর্শনের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া সংস্থা ও উদ্যোক্তাদের সাধুবাদ প্রাপ্য। পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে এ ধরনের আন্তর্জাতিক পরিম-লে উদ্যোগ ও আয়োজন আরও প্রয়োজন।
একুশ শতকে এসে সারা বিশ্বে সিনথেটিক ফাইবারের বদলে পাট এবং পাটের মতো অর্গানিক ফাইবারের কদর এবং চাহিদা দুটোই উত্তরোত্তর বাড়ছে। অথচ এই যুগে এসেই একদা সোনালি আঁশের দেশ খ্যাত বাংলাদেশে সব সম্ভাবনা ও সুযোগ থাকা সত্ত্বেও পাটশিল্পের ধারাবাহিক ক্রমাবনতি কোনো যুক্তিতেই ধোপে টেকে না। প্রতিবেশী দেশ ভারতে এবং দেশের বেসরকারি পাটকলগুলোও লাভজনক। আর প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে লোকসানের অজুহাতে রাষ্ট্রায়ত্ত পাট খাত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, যে দেশের বিজ্ঞানীরা পাটের জীবনরহস্য আবিষ্কার করতে পারেন, যে দেশকে বহির্বিশ্ব সোনালি আঁশের দেশ হিসেবে চেনে, সেই দেশে ফের পাটের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনা কঠিন নয়। অন্যদিকে, ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০’ এর প্রয়োগ পাটশিল্পকে বাঁচাতে ভূমিকা রাখতে পারে। পাটপণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকার বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উদ্ভাবন, ব্যবহার সম্প্রসারণে গুরুত্বারোপ করতে হবে। বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশ্বসভায় প্রতিষ্ঠিত করতে পাট ও পাটজাত পণ্য অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে। কারণ আমাদের আছে দক্ষ পাটচাষি, আছে আধুনিক উপযোগী জাত, উন্নত উৎপাদন প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনা, আর আছে বহুমুখী ব্যবহারের বিভিন্ন পাটপণ্য এবং ব্যবহারের বিভিন্ন উপযোগী ক্ষেত্র। সরকারি-বেসরকারি সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় পাট চাষ ও পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যম দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি, দারিদ্র্যবিমোচন এবং সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে আরও বহুদূর। পাটের পুনরুজ্জীবন ঘটাতে চাই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন। পাটের উৎপাদক, পাটকল মালিক, শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট সবার স্বার্থ সমুন্নত রেখে পাট খাতকে এগিয়ে নিতে হবে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।