
কুষ্ঠ মানব ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাচীন রোগ। প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের শেষ রবিবার বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। সে হিসাবে এ বছর জানুয়ারি মাসের ২৯ তারিখে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে দিবসটি পালিত হবে। কুষ্ঠরোগের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে এই দিবস পালন করা হয়। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় এখনই কাজ শুরু করি, কুষ্ঠরোগ নির্মূল করি। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব অ্যান্টি-লেপ্রসি অ্যাসোসিয়েশনস (আইলেপ)-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রাউল ফোলেরো বিশ্বব্যাপী কুষ্ঠরোগ বিষয়ক ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধিকল্পে ও কুষ্ঠরোগের প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য ১৯৫৪ সালে দিবসটি উদযাপনে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক কুষ্ঠবিরোধী সংগঠনসমূহের আন্তর্জাতিক ফেডারেশন ‘আইলেপ’, যা ১৩টি আন্তর্জাতিক এনজিওর সমন্বয়ে গঠিত, এই দিবসটি পালনে উদ্যোগ নেয়। কুষ্ঠ আক্রান্ত ব্যক্তিদের সমাজে পুনঃগ্রহণ, সর্বপ্রকার কুষ্ঠজনিত কুসংস্কার দূরীকরণ, এই সব লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে জনসাধারণ এবং কুষ্ঠ আক্রান্ত ব্যক্তিদের সঠিক তথ্য ও শিক্ষা প্রদান করাই হচ্ছে এই দিবসের লক্ষ্য। বাংলাদেশে এই বছর দিবসটি পালনের গুরুত্ব রয়েছে, কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর রাজধানীতে অনুষ্ঠিত জাতীয় কুষ্ঠ সম্মেলনে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে কুষ্ঠমুক্ত করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
১৮৭৩ সালে নরওয়ের চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. আরমার হ্যানসেন কুষ্ঠরোগের জীবাণু ‘মাইকোব্যাকটেরিয়াম লেপ্রি’ আবিষ্কার করেন। এই আবিষ্কারের ফলে প্রমাণিত হয় যে, কুষ্ঠ একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ, জন্মগত, বংশগত বা অভিশাপের ফল নয়। হাজার হাজার বছর ধরে কুষ্ঠরোগ ও কুষ্ঠরোগাক্রান্ত ব্যক্তিগণকে অভিশপ্ত এবং অস্পৃশ্য বলে গণ্য করা হতো এবং অনেককেই দ্বীপান্তরিত, বনবাস, গৃহচ্যুত করা হতো। কুষ্ঠরোগাক্রান্ত মানুষ মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হতো। হাজার বছরের অন্ধ বিশ্বাস আর কুসংস্কার মানুষের মনে এমনভাবে গেঁথে আছে যে, অনেক রোগী সামাজিকতার ভয়ে যথাসময়ে চিকিৎসা নিতে দেরি করে এবং ভয়াবহতা ডেকে আনে। বর্তমানে বাংলাদেশসহ ব্রাজিল, ভারত, নেপাল, মোজাম্বিক, অ্যাঙ্গোলা, কঙ্গো এবং তানজানিয়ায় কুষ্ঠরোগাক্রান্ত ব্যক্তিরা শনাক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে কুষ্ঠরোগের চিকিৎসা বিনামূল্যে করা হলেও এবং নিয়মিত চিকিৎসায় সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য রোগ হওয়া সত্ত্বেও এখনো রোগটি জনস্বাস্থ্য সমস্যারূপে রয়ে গেছে।
মাল্টি ড্রাগ থেরাপি (এমডিটি) প্রবর্তনের পর থেকে বিশ্বে কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, আশির দশকে যেখানে বিশ্বে কুষ্ঠরোগীর সংখ্যা ছিল ৫২ লাখ, তা এখন দুই লাখে নেমে এসেছে। তবে যে বিষয়টি এখনো যথেষ্ট উদ্বেগের তা হলো, গত ১০ বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি বছর দুই লাখের ওপর নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এর ৫৬ শতাংশই শনাক্ত হয়েছে ভারতে। এরপর একাধিক্রমে রয়েছে ব্রাজিল (১৩.৬%), ইন্দোনেশিয়া (৮.৫%), নেপাল (১.৯%) ও বাংলাদেশ (১.৮%)। ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে প্রায় প্রতি বছরই বাংলাদেশে নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজারের মধ্যে ছিল। দ্য লেপ্রসি মিশন ইন্টারন্যাশনাল-বাংলাদেশ (টিএলএমআই-বি) এর মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতি বছর প্রায় নতুন কুষ্ঠরোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৮-১০% সময়মতো চিকিৎসার অভাবে পরবর্তী সময়ে পঙ্গু হয়ে যায়। জাতীয় কুষ্ঠরোগ নির্মূল কর্মসূচি দেশের ১২ জেলাকে কুষ্ঠরোগের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এগুলো হলো রংপুর বিভাগের রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী ও গাইবান্ধা; রাজশাহী বিভাগের জয়পুরহাট জেলা; খুলনা বিভাগের মেহেরপুর জেলা; সিলেটের মৌলভীবাজার এবং পার্বত্য তিন জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান। এসব জেলায় প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে পাঁচজন বা তার অধিক কুষ্ঠরোগী শনাক্ত করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, প্রতি লাখে পাঁচজন বা তার অধিক কুষ্ঠরোগী পাওয়া গেলে তাকে উচ্চ ঝুঁকি বলতে হবে।
কুষ্ঠ সাধারণত চিকিৎসাবিহীন রোগীর হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায় এবং আক্রান্ত রোগীর প্রান্তিক স্নায়ুর কার্যকারিতা নষ্ট করে। ফলে আঙুল বাঁকা হওয়া, মুখের প্যারালাইসিস, বেদনাহীন ঘা ইত্যাদি বিকলাঙ্গতা দেখা দেয় এবং রোগীর শারীরিক সমস্যার চেয়েও মানসিক ও সামাজিক সমস্যা ও বৈষম্য প্রকটরূপে দেখা দেয়। চামড়ার অবশ দাগ দিয়ে এই রোগ শুরু হয়, অনেক সময় দানা গুটিও দেখা দেয়। চিকিৎসকদের মতে, কুষ্ঠরোগ একটি মৃদু সংক্রামক রোগ। দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতার অধিকারী মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়। কুষ্ঠরোগ প্রাথমিক পর্যায়ে চিহ্নিত হলে ও চিকিৎসার আওতায় এলে কুষ্ঠজনিত প্রতিবন্ধিতা প্রতিরোধ করা সম্ভব। ব্যাপক সচেতনতা কার্যক্রম এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বাংলাদেশে কুষ্ঠ নির্মূলের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। কম গুরুত্ব দেওয়ার কারণে এই খাতে বাজেট প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম, বাজেট স্বল্পতার কারণে কুষ্ঠবিরোধী কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে রোগী খুঁজে বের করার জন্য প্রশিক্ষিত লোকবলের অভাব, এই রোগকে ঘিরে কুসংস্কার দূরীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় সচেতনতামূলক কার্যক্রমের অভাব আছে। চিকিৎসকদের কুষ্ঠ বিষয়ে ধারণা কম থাকায় রোগী চিহ্নিত করা ও চিকিৎসাকাজ ব্যাহত হয়, দেশের সর্বত্র চিকিৎসাসুবিধা সমানভাবে প্রাপ্তিসাধ্য নয় এবং দেশে কুষ্ঠের কারণে বিকলাঙ্গদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধার অভাব। আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত সমাজে কুসংস্কার ও বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকেন। এর ফলে তাদের রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা, আরোগ্যলাভ এবং সামাজিক কার্যাবলি ব্যাহত হয়। আমাদের মেডিকেল কলেজগুলোতে কুষ্ঠরোগ বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে পাঠদান করা হয় না। বাজেট স্বল্পতার জন্য স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের দক্ষতার উন্নয়ন ঘটানো যাচ্ছে না। অ্যাডভোকেসি কার্যক্রম চালানো দরকার, এতে ব্যাপক অর্থের প্রয়োজন। দেশে কুষ্ঠের বিশেষায়িত সেবা খুবই অপ্রতুল। কুষ্ঠরোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশে তিনটি সরকারি কুষ্ঠ হাসপাতাল রয়েছে। কিন্তু এই হাসপাতালগুলোর পূর্ণাঙ্গ সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অন্ততপক্ষে দেশের সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কুষ্ঠ সেবা প্রদানের জন্য উপযোগী করা দরকার।
কুষ্ঠবিষয়ক প্রায় ৮০ ভাগ স্বাস্থ্যসেবা এনজিও কর্র্তৃক পরিচালিত হাসপাতালগুলো দিয়ে থাকে। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে তাদের এই সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সরকার এগিয়ে না এলে সমস্যা বাড়বে, প্রতিবন্ধিতা আরও বেড়ে যাবে। দেশে কুষ্ঠজনিত সব প্রতিবন্ধী লোকজনের সঠিকভাবে সামাজিক পুনর্বাসনের প্রয়োজন যেন তারা সমাজে মর্যাদার সঙ্গে বাস করতে পারে। উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের প্রতিবন্ধিতা কমিয়ে কর্মক্ষম করে তোলা সম্ভব। সমস্ত ধরনের বৈষম্য ও কুসংস্কারের অবসান ঘটিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সামাজিক অন্তর্ভুক্তির ব্যবস্থা করা দরকার। তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও ক্ষমতায়ন করা দরকার যাতে তারা সক্রিয়ভাবে কুষ্ঠ সেবার বিষয়ে অংশ নিতে পারে। আক্রান্তদের ও তাদের পরিবারের জন্য জীবিকা অর্জনে সাহায্য করা দরকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্র্তৃক প্রণীত ‘কৌশলগত পরিকল্পনা ২০১৬-২০২০’ পুরোপুরি বাস্তবায়িত হওয়া উচিত বলে অধিকারকর্মীরা মনে করেন। উক্ত পরিকল্পনাতে কুষ্ঠ ও এর জটিলতা দূর করা, বৈষম্য দূর করা ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তিকে উৎসাহিত করা, সময়মতো রোগী শনাক্তকরণে গুরুত্ব এবং পর্যাপ্ত সম্পদের নিশ্চয়তা প্রভৃতি বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
আমাদের একযোগে অসহায়, দরিদ্র, নিপীড়িত কুষ্ঠরোগাক্রান্ত মানুষগুলোর জন্য কাজ করতে হবে। কারণ এতগুলো মানুষকে বঞ্চিত রেখে সার্বিকভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। কুষ্ঠরোগাক্রান্ত প্রতিবন্ধী মানুষগুলোর পুনর্বাসন এবং সঠিক যত্নের জন্য তাদের পাশে দাঁড়ানো একান্ত প্রয়োজন। যেন আক্রান্ত ব্যক্তিরা পরিপূর্ণ মর্যাদা ও অধিকারের সঙ্গে সমাজে মাথা উঁচু করে চলতে পারেন। কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ও প্রতিবন্ধীরা দেশের বোঝা নয়, তাদেরও রয়েছে সব নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার অধিকার।
লেখক : মেডিকেল অফিসার, সিভিল সার্জন অফিস
শ্রমিকদের বিশেষত গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি বিতর্ক আবার শুরু হয়েছে। শ্রমিকদের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তার মজুরি। এই প্রশ্ন সব সময়ই উঠে থাকে, যুক্তিসংগত অথবা মানবিক মর্যাদা রক্ষা করার মতো মজুরি নির্ধারণ করা হবে কীভাবে? একটু ভেবে দেখা যাক! একটি শ্রমিক পরিবারে কী কী দরকার হয়? অন্তত তিনবেলা খাবার, পোশাক, মাথা গোঁজার ঠাঁই, অসুস্থ হলে চিকিৎসা, সন্তানের শিক্ষা, বৃদ্ধ বয়সের জন্য সঞ্চয়, অতিথি আপ্যায়ন ও বিনোদন ছাড়া মানবিক জীবন কীভাবে হয়? তাই এসব বিবেচনায় নিয়ে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা উচিত। পৃথিবীর অন্তত, ৯০টি দেশে ন্যূনতম মজুরি আইন করে নির্ধারণ করা হয়। ন্যূনতম মজুরি আইন প্রথম করা হয় নিউজিল্যান্ডে ১৮৯৬ সালে। এরপর অস্ট্রেলিয়ায় ১৮৯৯ সালে, ব্রিটেনে ১৯০৯ সালে, শ্রীলঙ্কায় ১৯২৭ সালে এবং ১৯৩৬ সালে ভারতে, ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানে প্রবর্তন করা হয়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিকে বিবেচনায় নিয়ে ফ্রান্স, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, বেলজিয়াম, পর্তুগাল, স্পেন, মরিশাস, মেক্সিকো, কম্বোডিয়াসহ বিভিন্ন দেশে প্রতি বছর মজুরি পুনর্নির্ধারণ করা হয়। কানাডায় করা হয় প্রতি দুই বছর পরপর। বাংলাদেশে পাঁচ বছর পরপর মজুরি পুনর্নির্ধারণের আইন করা হয়েছে। কিন্তু পাঁচ বছর দ্রব্যমূল্য তো এক জায়গায় থাকে না, তাই শ্রমিক প্রতি বছর হারাতে থাকে তার প্রকৃত মজুরি। বাংলাদেশের শ্রম আইনে মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে কী বলা আছে? শ্রম আইনের ১৪১ ধারায় বলা আছেজীবনযাপন ব্যয়, জীবনযাপনের মান, উৎপাদন খরচ, উৎপাদনশীলতা, উৎপাদিত দ্রব্যের মূল্য, মুদ্রাস্ফীতি, কাজের ধরন, ঝুঁকি ও মান, ব্যবসায়িক সামর্থ্য, দেশের ও সংশ্লিষ্ট এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থা এবং অন্য প্রাসঙ্গিক বিষয় বিবেচনা করতে হবে। শ্রম আইনে উল্লিখিত মানদন্ডসমূহ একটু বিশ্লেষণ করে দেখা যাক সে হিসেবে মজুরি কত হতে পারে।
১. জীবনযাপন ব্যয় : শ্রমিকের প্রধান সম্পদ তার কর্মক্ষমতা। তার কর্মক্ষমতা কাজে লাগিয়ে সে যা আয় করে তা দিয়ে তার সংসার চালাতে হয়। কর্মক্ষম মানুষ, শিশু, বৃদ্ধ, সন্তানসম্ভবা মাসবার কথা বিবেচনা করে প্রতিদিন একজন মানুষের গড়ে ২৮০০ থেকে ৩০০০ কিলো ক্যালরি তাপ উৎপাদনের উপযোগী খাবার খেতে হয়। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষকরা সাম্প্রতিক সময়ে বলেছেন, বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী ঢাকায় বসবাসরত চার সদস্যের একটি পরিবারের খাবার খরচের জন্য মাসিক ২২ হাজার ৪২১ টাকা প্রয়োজন হচ্ছে। আর কোনো মাছ-মাংস না খেলেও খাবার বাবদ খরচ হচ্ছে ৯ হাজার ৫৯ টাকা।
আর জাতিসংঘের পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত মত, বাংলাদেশে একজন মানুষের স্বাস্থ্যকর খাবারের জন্য দৈনিক প্রয়োজন ২৭৬ টাকা। অর্থাৎ ৪ সদস্যের পরিবারের খাবার খরচ বাবদ মাসে প্রয়োজন হবে ৩৩,১২০ টাকা। জ্বালানি তেলের সর্বশেষ মূল্যবৃদ্ধির দুই মাস আগে নিত্যপণ্যের বাজারমূল্য বিবেচনায় নিয়ে সিপিডি বলেছিল খাবারের সঙ্গে এক কক্ষের ঘরভাড়া, গ্যাস-বিদ্যুতের বিল, চিকিৎসাব্যয়, স্বাস্থ্য সুরক্ষার পণ্য ক্রয়, সন্তানের পড়ালেখার খরচ, যাতায়াত, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের বিল হিসাব করলে ঢাকার আশপাশের এলাকায় চার সদস্যের এক পরিবারের মাসিক খরচ গিয়ে দাঁড়ায় ৪২ হাজার ৫৪৮ টাকা। বর্তমানে দ্রব্যমূল্য বিবেচনায় নিলে এ খরচের পরিমাণ আরও বেশি হবে।
২. সরকারি হিসাবে মাথাপিছু আয় ২৮২৪ ডলার। তাদের ঘোষণা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশের মাথাপিছু আয় ৩০০৭ ডলারের বেশি হবে। সে হিসেবে ৪ সদস্যের পরিবারের বার্ষিক আয় ১১ লাখ ৫২ হাজার টাকার বেশি। এই আয়কে মাসিক আয়ে পরিণত করলে তার পরিমাণ হবে ৯৯ হাজার টাকার বেশি (১ ডলার = ১০৬ টাকা হিসাবে)। পরিবারের দুজন সদস্য আয় করলেও একজন কর্মক্ষম মানুষের গড় মাসিক আয় ৪৯ হাজার টাকার বেশি হতে হবে। প্রশ্ন উঠতে পারে, মাথাপিছু আয় মানে কি সবার আয় সমান হবে নাকি? কিন্তু যদি পাল্টা প্রশ্ন করা হয়, যারা দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য উৎপাদন করে তারা কি অন্তত মাথাপিছু আয়ের সমান মজুরি পাওয়ার অধিকার রাখে না?
৩. শ্রমিক কাজ করতে আসে দারিদ্র্য দূর করার জন্য। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের মতো দেশে দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠতে প্রতিদিন প্রতিজনের কমপক্ষে দুই ডলার আয় করতে হয়। সে হিসেবে মাসে ২৫ হাজার টাকার কম আয় হলে ৪ সদস্যের একটি পরিবার দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠতে পারবে না। তাহলে একটি উন্নয়নশীল দেশে উৎপাদনের প্রধান চালিকাশক্তি শ্রমিকরা মজুরি পেয়ে দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠবে না, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
৪. সরকার ঘোষিত বেতন কাঠামো অনুযায়ী ২০১৫ সালে পে-স্কেলের সর্বনিম্ন ধাপে বেতন ৮২৫০ টাকা বেসিক ধরে ১৪ হাজার ৫০০ টাকার বেশি নির্ধারণ করা হয়েছিল। গত আট বছরের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির হার বিবেচনা করলে বর্তমানে তা ২৩ হাজার টাকার বেশি দাঁড়ায়। এ ছাড়া তারা নববর্ষ বোনাস, ভ্রমণ-ভাতা, অবসর প্রস্তুতিকালীন সবেতন ছুটি ইত্যাদিসহ নানা রকম সুবিধা পেয়ে থাকেন। পে-স্কেলের সর্বনিম্ন ধাপের কর্মচারী একজন পিয়ন তার ৫৯ বছর বয়সে চাকরি অবসানের পর আজীবন পেনশন পাবেন। কিন্তু বেসরকারি খাতের শ্রমিকরা পেনশনসহ এসব অধিকার পান না। তাই ন্যায্যতার প্রশ্নে তাদের মজুরি সরকারি খাতের চেয়ে বেশি না হলে তা কোনোভাবেই ন্যায়সংগত হবে না।
৫. ২ জুলাই ২০১৮ তারিখে মন্ত্রিসভার বৈঠকে রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানার শ্রমিকদের মজুরি অনুমোদিত হয়। সে অনুযায়ী ২০১৫ সাল থেকে কার্যকর মজুরির মূল বেতন ৮৩০০ টাকা, যা প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি করার নিয়ম কার্যকর আছে। এই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত মূল বেতনের সঙ্গে বাড়িভাড়া, চিকিৎসা-ভাতা, টিফিন-ভাতা, যাতায়াত-ভাতা, ধোলাই-ভাতা, ঝুঁকি-ভাতা, শিক্ষা সহায়তা-ভাতা যুক্ত করলে বর্তমান মজুরি হয় প্রায় ২৪ হাজার টাকা। সরকারি প্রতিষ্ঠানের বেতন কাঠামোকে জাতীয় মানদণ্ড ধরা উচিত।
৬. বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রারম্ভিক বেতন-ভাতা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিরাপত্তাকর্মী, বার্তাবাহক, পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ কর্মচারীদের প্রারম্ভিক বেতন-ভাতা সর্বনিম্ন ২৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করে গত এপ্রিল ২০২২ থেকে বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নির্দেশনা প্রমাণ করে যে মাসে ২৪ হাজার টাকার কম মজুরিতে ন্যূনতম মানসম্পন্ন জীবনযাপনের সুযোগ নেই।
৭. গার্মেন্টস পণ্য যে দেশেই তৈরি হোক না কেন এর বাজার আন্তর্জাতিক। গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিকারক ৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের শ্রমিকদের মজুরি সবচেয়ে কম। চীন, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশ নিয়ে জরিপ চালিয়ে অক্সফাম এই তথ্য জানায়। ২১ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান অক্সফামের গবেষণা জরিপ ‘রিওয়ার্ড ওয়ার্ক নট ওয়েলথ’ নামে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে শ্রমিকদের জন্য শোভন মজুরি হতে হলে তা মাসে ২৫২ ডলার বা ২৪ হাজার ৬৯৬ টাকা হতে হবে। এটা তো ৪ বছর আগের হিসাব। শোভন কাজ, পরিবেশ এবং এসডিজি নিয়ে সারা পৃথিবীর মতো বাংলাদেশেও অনেক আলোচনা এবং পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু শোভন মজুরি ছাড়া শোভন কাজ এই কথার কোনো অর্থ কি আছে?
৮. মজুরি নির্ধারণে একটি প্রধান বিষয় শ্রমিকের শ্রমে উৎপাদিত পণ্যে মূল্য সংযোজন কত হয়? এবং কী দামে তা বিক্রি হয়? পৃথিবীর যেকোনো দেশেই তা উৎপাদিত হোক না কেন গার্মেন্টস পণ্যের টার্গেট প্রধানত ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, রাশিয়ার বাজার। গার্মেন্টসশিল্পে মূল্য সংযোজন কী পরিমাণ হচ্ছে, প্রধান গার্মেন্টস রপ্তানি দেশ যেমন চীন, তুরস্ক, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, ভারতের শ্রমিকদের তুলনামূলক মজুরি কত এ বিষয়গুলোও বিবেচনা করা উচিত।
গার্মেন্টস বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস। বাংলাদেশের রপ্তানির ৮৩ শতাংশের বেশি আসে গার্মেন্টস খাত থেকে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি হয়েছিল ৩০.৬২ বিলিয়ন ডলার আর ইপিবির তথ্যবিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৪২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। এই বাড়তি উৎপাদনের জন্য নিযুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ার পরিবর্তে কমেছে, অর্থাৎ শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। অথচ আমরা দেখছি সেই গার্মেন্টসের শ্রমিকদের মজুরি পৃথিবীর মধ্যে সর্বনিম্ন। শ্রমিকের আয় না বাড়ায় তাদের জীবনমান বাড়ছে না। নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত বাংলাদেশে শ্রমিকরা মানসম্পন্ন জীবনযাপন করার মতো মজুরি পাবেন না এটা হতে পারে না। আবার অর্থনীতির সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী শ্রমিকের ক্রয়ক্ষমতা বাড়লে দেশের অর্থনীতির সামগ্রিক গতিশীলতা বাড়ে। মানসম্পন্ন মজুরি যেমন শ্রমিকদের জীবনমান উন্নত করে, তেমনি দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে। বাংলাদেশকে যদি উন্নত দেশের কাতারে উন্নীত করতে হয় তাহলে শ্রমজীবী মানুষের আয় বাড়াতেই হবে। ন্যায্য মজুরির নির্ধারণ তাই বাংলাদেশের শ্রমিক এবং অর্থনীতির বিকাশের জন্যই প্রয়োজন। গার্মেন্টস শ্রমিকদের উৎপাদিত পণ্য আমেরিকা, ইউরোপের বাজারে বিক্রি হয়। ৫-১০ সেন্ট দাম বাড়লে সেখানকার ক্রেতারা টি-শার্ট কিনবে না এটা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। আসলে শ্রমিককে কম মজুরি দেওয়ার জন্য কাল্পনিক ভয় দেখানো অনুচিত। আর বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টস চলে যাওয়া তো দূরের কথা উল্টো চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের দেশে কাজ আসছে, চীনের ব্যবসায়ীদের দল মাঝেমধ্যেই বাংলাদেশে আসছে, তারা সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করছে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস মালিকরাও ২০৩০ সালের মধ্যে গার্মেন্টস পণ্যের রপ্তানি বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন করার স্বপ্ন দেখছেন। এসব স্বপ্নের সঙ্গে শ্রমিকদের মানসম্পন্ন জীবনযাপনের উপযোগী মজুরির কথাটা যেন চাপা পড়ে না যায়। মজুরি বিতর্কের গ্রহণযোগ্য সমাধান তাই জরুরি।
লেখক: রাজনৈতিক সংগঠক ও কলামিস্ট
বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির দুনিয়ায় এক নীরব সংকট বিরাজমান। উন্নত দেশগুলোয়ও চলছে মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্বসহ নানা অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা। এর পেছনে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের একটি নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে বলে ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে। তবে অনেক অর্থনীতিবিদের দৃষ্টিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এর মূল কারণ নয়; বরং অন্তর্নিহিত মূল কারণগুলো অন্য কিছু। সেগুলো হলো বিশ্বব্যাপী ক্রোনি ক্যাপিটালিজমের চর্চা, দুর্নীতি, অর্থনৈতিক অদক্ষতা, সুদ ও ঋণভিত্তিক অর্থব্যবস্থা, দীর্ঘদিন সম্পদের অসম বণ্টনব্যবস্থা প্রভৃতি। তবে আমাদের মতো দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টির পেছনের মূল কারণ আরও ভয়াবহ। এখানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব নামমাত্র।
একজন ব্যক্তির যেমন চলার এবং প্রয়োজন নির্বাহের জন্য অর্থের প্রয়োজন, একটি কোম্পানির যেমন অর্থের প্রয়োজন হয়, একটি দেশেরও চলার জন্য, ব্যয় নির্বাহের জন্য অর্থের প্রয়োজন হয়। সাধারণত একজন ব্যক্তি বা কোম্পানির অর্থ পকেট একটি থাকে, বিনিময় ক্ষেত্রও একটি থাকে। কিন্তু একটি দেশের জন্য অর্থ পকেট থাকে ভিন্ন ভিন্ন। প্রতিটি দেশেই রাজস্ব ব্যয় হয় দেশের অভ্যন্তরীণ প্রয়োজন পূরণে। এর মধ্যে আছে সামাজিক অবকাঠামো, ভৌত অবকাঠামো, সাধারণ সেবা খাত। এগুলোর মধ্যে সাধারণত ভৌত অবকাঠামো শীর্ষ ব্যয় খাত। ইদানীং অতিমাত্রায় ঘাটতি বাজেট, দুর্নীতি, টেক্স টু জিডিপি রেশিও কমে আসায় যুক্ত হয়েছে সরকারের সুদভিত্তিক ঋণ থেকে সুদ বাবদ ব্যয় ও ভর্তুকি। সম্প্রতি এ দুটিই এখন বাজেটের শীর্ষ ব্যয় খাত। বলার অপেক্ষা রাখে না, চলমান রাজস্ব নীতি ও ব্যয় খাত নানাভাবে অসংগতিপূণর্, এতে অর্থনীতির সুফল প্রত্যাশিত মাত্রায় গণমুখী হচ্ছে না।
কৃষিনির্ভর অর্থনীতি হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এখন সর্বজনস্বীকৃত। মানবসম্পদকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে চলেছে দেশের অর্থনীতি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী, দেশে শ্রমিক রয়েছে ৬ কোটি ৩৫ লাখ, যারা কাজ করেন বিভিন্ন খাতে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৩২ লাখ নারী। ৮০ ভাগেরও বেশি রপ্তানি আয়ে রয়েছে যাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান। মোট জাতীয় উৎপাদনে (জিডিপি) ভূমিকা রাখছে ১৪ ভাগের বেশি। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে, বর্তমানে ঢাকা শহরে চার সদস্যের একটি পরিবারের মাছ, মাংসসহ স্বাভাবিক পুষ্টিকর খাদ্যের চাহিদা মেটাতে মাসে ২৩ হাজার ৬৭৬ টাকা প্রয়োজন। তালিকা থেকে মাছ-মাংস বাদ দিলে এ প্রয়োজন দাঁড়ায় ৯ হাজার ৫৫৭ টাকায়। কিন্তু নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের যে আয় তা দিয়ে খাদ্যপণ্য কিনে টিকে থাকা কঠিন। আর বেশির ভাগ শিল্পের কর্মীদের পক্ষে কেবল বেতনের অর্থ দিয়ে পুষ্টিকর খাদ্যের চাহিদা মেটানো সম্ভব না। এর পক্ষে যুক্তি হিসেবে ২০টি শিল্পের কর্মকর্তা ও শ্রমিকের খাদ্যের চাহিদা মেটানোর সক্ষমতার চিত্র তুলে ধরা হয়। তাতে দেখা যায়, সব শিল্পের কর্মীদেরই চার সদস্যের পরিবারের জন্য রেগুলার ডায়েট বা মাছ ও মাংসসহ খাবারের চাহিদা মেটানোর সক্ষমতা নেই। মাছ-মাংস বাদ দিয়ে চাহিদা মেটানোর সক্ষমতা আছে কেবল আটটি শিল্পের কর্মকর্তাদের এবং ছয়টি শিল্পের শ্রমিকদের। অথচ প্রতি বছরই তাদের ৫ শতাংশ হারে বেতন বেড়েছে।
সিপিডি বলছে, বেশির ভাগ শিল্পের কর্মীদের পক্ষেই পুষ্টিকর খাদ্যের চাহিদা মেটানো সম্ভব না। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে যে হারে পণ্যের দাম বাড়ছে, তার চেয়েও বেশি হারে বাড়ছে দেশের স্থানীয় বাজারে। বিশেষ করে চাল, আটা, চিনি, ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও স্থানীয় বাজারে সেই প্রভাব নেই। অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদিত পণ্যের দামও কারণ ছাড়া ঊর্ধ্বমুখী। লাগামহীন এ মূল্যস্ফীতির কারণে অনেকেই খাদ্য ব্যয় কমিয়ে আনতে খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছেন মাছ-মাংসসহ বিভিন্ন আমিষ। এজন্য ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো উচিত। শ্রমিক নেতাদেরও দাবি, পোশাক শ্রমিকরা এখন যে মজুরি পায়, তা দিয়ে তারা এবং সন্তানেরা পুষ্টিকর খাবার খেতে পারে না। তাই নারী শ্রমিকদের রক্তশূন্যতা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। শুধু এ সমস্যাই নয়, তারা আরও মারাত্মক সব রোগে ভোগেন কিডনি, শ্বাসকষ্ট, যক্ষ্মা ইত্যাদি। এমনকি অতিরিক্ত কাজের চাপে অনেক নারী সন্তানধারণের ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেন। পাশাপাশি ৪০-৪৫ বছর বয়স্ক পোশাক শ্রমিকের পক্ষে আর কাজ করার শক্তি থাকে না। সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই একজন শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। তাতে কিছুটা হলেও সমস্যাগুলো লাঘব হতো।
কারখানার মালিকরা অবশ্য বারবারই দোষ চাপান নারীশ্রমিকদের ওপর। তারা দাবি করেন, এসব নারী গ্রাম থেকে আসায় তাদের অভ্যাস পরিবর্তন করা যাচ্ছে না। একসময় পোশাককর্মীদের দুপুরের খাবার দেওয়া হতো কারখানায়। কিন্তু তারা খাবার না খেয়ে টাকা নিতে চান। অথচ সে টাকায় তারা কোনো খাবারই খান না। ফলে তাদের জীবনযাপনের পদ্ধতি ও খাদ্যাভ্যাসের কারণেই এসব স্বাস্থ্যগত সমস্যা। চিকিৎসকরা অবশ্য বলে থাকেন শুধু দামি খাবারই পুষ্টিকর, এমন ধারণা ভুল। বলা হচ্ছে বৈচিত্র্যপূর্ণ খাদ্যের কথা। একজন শ্রমিক প্রতিদিন একই ধরনের খাবার না খেয়ে এতে পরিবর্তন আনতে পারেন। যেমন একদিন লালশাক খেলে আরেকদিন খাবেন পুঁইশাক। এতে খাবারে যেমন বৈচিত্র্য আসবে তেমনি দূর হবে পুষ্টির অভাবও। বাজারে বিভিন্ন ধরনের ছোট মাছ পাওয়া যায়। একেক দিন একেক রকম ছোট মাছেও শ্রমিকের পুষ্টির অভাব পূরণ হতে পারে। এদিকে মূল্যস্ফীতি যোগ করলে দেখা যায়, গত ২৫ বছরে কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে সব ধরনের পুষ্টিকর খাবারের দাম। ফলে এগুলো দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা বিপুল সংখ্যক মানুষের ক্রয়সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে। আর পরিবারের ব্যয় সংকোচনের ক্ষেত্রে সেই চিরচেনা ভূমিকাতে বরাবরই অবতীর্ণ হন নারী। নানা ব্যয়ভার মেটাতে তারা সমঝোতা করেন নিজের পুষ্টির চাহিদা কিংবা সাধ-আহ্লাদের সঙ্গে। নিজের ও পরিবারের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এ দেশের বেশির ভাগ পোশাক শ্রমিকই দৈনিক ১২ ঘণ্টা শ্রম দেন।
এসব-সহ নানাবিধ কারণে শিল্পকারখানায় দিন দিনই কমে যাচ্ছে নারীশ্রমিকের সংখ্যা। আগে যেখানে ৮০ শতাংশই নারীকর্মী ছিল, এখন তা কমে হয়েছে ৪৬ দশমিক ১৮ শতাংশ। মূলত প্রযুক্তি ও দক্ষতায় ঘাটতি, পুরুষশ্রমিক বেড়ে যাওয়া, অপুষ্টি আর নানা ধরনের নির্যাতনের কারণেই এমনটা হচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। মজুরিবৈষম্য ছাড়াও তারা কারখানার ভেতরে ও বাইরে নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হন। আবার অধিকাংশ নারীশ্রমিকই নিয়োগপত্র পান না, ফলে মাতৃত্বকালীন ছুটি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। তবু বাংলাদেশের নারীশ্রমিকরা থেমে নেই। নিত্যদিনের পুষ্টিহীনতা,রক্তস্বল্পতাসহ শারীরিক নানা ধরনের রোগব্যাধি; সঙ্গে শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক নির্যাতনকে মাড়িয়েই তারা শ্রম দিয়ে চলেছেন। নিজেরাই হয়তো জানেন না তাদের কাঁধেই সওয়ার হয়েছে দেশের অর্থনীতি।
তবে এদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে না পারলে ভবিষ্যতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেই। বিশেষত রপ্তানিমুখী শিল্পে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা গেলে পরবর্তী সময়ে ঋণ পরিশোধের জন্য বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যের ওপর আর চাপ পড়বে না। ২০০৮ সালর বিশ্বজুড়ে খাদ্যমূল্য বাড়ার প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি বড় টানাপড়েনে পড়েছিল। প্রায় দেড় দশক ধরে স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের পরে অর্থনীতি এখন আবার একটা অস্থিরতার দিকে পড়তে যাচ্ছে। এটাও মূলত বিশ্ব অর্থনীতির কারণেই। তবে অর্থনীতিতে এ ধরনের ঝাঁকুনি খেলেই হয়তো টেকসই প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে যে কাঠামোগত মৌলিক প্রতিবন্ধকতাগুলো আছে, সেদিকে নজর পড়ে।
যেমন আগামী দিনে আমাদের উন্নয়ন ব্যয়ে অনেক সাশ্রয়ী হতে হবে এবং রাজস্ব সংগ্রহ অবশ্যই জোরদার করতে হবে। কারণ, পরিবেশবান্ধব শিল্পায়ন ও নগরায়ণ, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, জনস্বার্থ রক্ষা ও প্রযুক্তিগত উন্নতি এসবের জন্যই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের খরচ ক্রমেই বেড়ে যাবে। উন্নয়নশীল বিশ্বে মধ্যমেয়াদে, বিশেষ করে এক দশক সময়ের জন্য উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের অনেক নজির আছে। কিন্তু কয়েক দশক ধরে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা, যেমন দক্ষিণ কোরিয়া পেরেছিল তার উদাহরণ খুবই বিরল। সে কারণেই দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ পরবর্তীকালে সিঙ্গাপুর বা হংকংয়ের মতো কয়েকটি ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র বা অঞ্চল বাদ দিলে দক্ষিণ কোরিয়াই শুধু নিম্ন আয়ের দেশ থেকে শিল্পোন্নত দেশে পরিণত হওয়ার এখন পর্যন্ত একমাত্র দৃষ্টান্ত। সুতরাং এসব বিষয় নিয়েও ভাবতে হবে। বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার শঙ্কা কাটছেই না। ডলার সংকটে এখনো আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক হয়নি। এর মধ্যে রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস অনেক গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ প্রতিদিনই কমছে। এরসঙ্গে যোগ হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা অনুযায়ী, অর্থনীতি এখনো নাজুক অবস্থায় না গেলেও সহসাই চাঙ্গা হবে এমন সম্ভাবনা খুবই কম। যে সূচকগুলোর ঊর্ধ্বমুখীর কারণে অর্থনীতি চাঙ্গা হয়, সেই সব সূচক এখনো স্থিতিশীল। ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার কোনো অবস্থায়ও যাচ্ছে না।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
অর্থনীতির সাধারণ নিয়ম হলো চাহিদা আর জোগানের ভারসাম্য থেকেই বাজারে স্থিতি তৈরি হয়। কিন্তু আমাদের দেশের মুক্তবাজার অর্থনীতি এমনই মুক্ত যে, কেবল চাহিদা আর জোগানই নয়, এক অদৃশ্য হাত রয়েছে যা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। খুচরা ব্যবসায়ী, দোকানি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ এই অদৃশ্য হাতকে সিন্ডিকেট হিসেবে চেনে। চাল, ডাল, চিনি কিংবা ভোজ্য তেলসহ সব নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণেরই নানা সিন্ডিকেট আছে। গত বছর সেপ্টেম্বরে হঠাৎ করে দেশের চিনির বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। চিনির সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। সরকারের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকে ব্যবসায়ীরা খোলা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম বাড়িয়েছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী গত পাঁচ মাসে সরকারি হিসেবে কেজিপ্রতি চিনির দাম বেড়েছে ২৯ টাকা।
শুক্রবার দেশ রূপান্তরে ‘মূল্যবৃদ্ধিতেও কাটেনি চিনির সংকট’ ও ‘রোজার আগে দাম বাড়ছে কেজিতে ৫ টাকা’ শীর্ষক প্রতিবেদন দুটি থেকে জানা যায়, গত কয়েক মাস ধরে বাজারে চিনির চরম সংকট চলছে। এর মধ্যেই দুই দফায় কেজিপ্রতি ২৮ টাকা বাড়িয়েছে চিনি পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। রোজা শুরুর আগের মাস ফেব্রুয়ারি থেকে আরেক দফা দাম বাড়নোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসআরএ)। নতুন দামে প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ৫ টাকা বাড়িয়ে ১০৭ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি ১১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। চিনি সরবরাহ ও দামের বিষয়ে কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, ‘হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানি চিনি প্রক্রিয়াজাতকরণ করে থাকে। তাদের কারণে বাজারে চিনির কৃত্রিম সংকট তৈরি হলে সরকারের উচিত হবে এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া।’ রমজানের পণ্যগুলোর মধ্যে চাহিদার শীর্ষে থাকে চিনি। রোজাদারদের স্বস্তির জন্য চিনির বাজার স্বাভাবিক হওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। আশা করব ভোক্তার কথা চিন্তা করে রমজানের আগেই যেন সরকার দ্রুত চিনির বাজার স্বাভাবিক করার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়। বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ সংস্থার নজরদারি বাড়ানো উচিত। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চিনি পরিশোধনকারী মিলগুলোতে অধিদপ্তরের নজর রয়েছে। তবে লোকবল সংকটের কারণে মিল থেকে বাজারে আসা পর্যন্ত কোনো চক্র চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে কি না তা জানা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ এ জন্য সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপর হওয়া জরুরি, যাতে করে চিনি সংকটের পেছনে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা যায়।
বাণিজ্যমন্ত্রী চিনির মূল্যবৃদ্ধিকে সঠিক সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেছেন, ‘হিসাব-নিকাশ করে চিনির দাম বাড়ানো হয়েছে। এটা যদি সমন্বয় করা না হয় তাহলে ফল ভিন্ন হবে। বাজারে চিনি পাওয়াই যাবে না।’ রমজানের আগে চিনির দাম বৃদ্ধির খারাপ প্রভাব পড়বে বাজারে। মন্ত্রীর কথা সঠিক ধরে নিলেও শুল্ক কমিয়ে চিনির দাম নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। অন্যদিকে, অবিলম্বে সরকারি চিনিকলগুলোকে পূর্ণ উৎপাদনশীল করা এবং বন্ধ চিনিকলগুলোকে পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নিতে হবে। রোজা বা রমজান সংযমের মাস বলে পরিচিত। কিন্তু বাংলাদেশে রোজার মাসে জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি দেখে কোনোভাবেই বিশ্বাস করা যাবে না যে ব্যবসায়ীরা মুনাফার ক্ষেত্রে সংযম করছেন বা সংযত আছেন। রোজার মাসে প্রধানত খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ে। প্রতি বছর ব্যবসায়ীদের ঘুরেফিরে একই যুক্তি- বিশ্ববাজারে দাম বেড়েছে, আমদানি খরচ বেড়েছে, পরিবহন খরচ বেড়েছে প্রভৃতি। সাধারণ মানুষ দুঃখ করে বলেন, বাজারে কোথায় সংযম? অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কিংবা জাতীয় প্রতিযোগিতা কমিশন কারোরই যেন কিচ্ছু করার নেই! অথচ কোন প্রক্রিয়ায় আমদানিকারক-মজুদদার-পাইকারি বিক্রেতারা চিনির মতো নিত্যপণ্যের বাজারে সিন্ডিকেট তৈরি করে আর সেটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিংবা বিবিধ সরকারি দপ্তরের কারোরই অজানা থাকার কথা নয়। সরকারের সংস্থাগুলো (আইন, বিধি, নীতিমালা, নিয়ন্ত্রক-তদারক সংস্থা) সক্রিয় থাকলে এ পরিস্থিতি হয় না। বাজার তদারকি বা নিয়ন্ত্রণ একদিনের কাজ না; আমরা চাই সরকার এ বিষয়ে ৩৬৫ দিনই সতর্ক-সোচ্চার থাকুক। বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের অবশ্যই কঠোর হস্তক্ষেপ দরকার। ভাবা দরকার যে, বিদ্যুৎ-জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো থেকে শুরু করে সরকারের সাম্প্রতিক কোনো সিদ্ধান্তই সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিচ্ছে না। সাধারণ মানুষের সুরক্ষার প্রশ্নে সরকারকে অবশ্যই বাজার নিয়ন্ত্রণে জোর দিতে হবে।
অবিভক্ত ভারতের স্বাধীনতাসংগ্রামী লালা লাজপত রায়ের জন্ম ২৮ জানুয়ারি ১৮৬৫ সালে পাঞ্জাব প্রদেশে। তাকে ‘পাঞ্জাব কেশরি’ নামেও ডাকা হয়। তিনি পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক ও লক্ষ্মী বীমা কোম্পানি স্থাপন করেছিলেন। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের লাল-বাল-পালের তিনি অন্যতম নেতা। তার বাবার নাম মুনশি রাধা কৃষ্ণণ আজাদ। তিনি কিছুকাল হরিয়ানার রোহতক এবং হিসার শহরে ওকালতি করেন। বাল গঙ্গাধর তিলক ও বিপিন চন্দ্র পালের সঙ্গে তিনি লাল-বাল-পাল নামেই বিখ্যাত ছিলেন। এই তিন নেতাই প্রথমদিকে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে ভারতের স্বাধীনতার দাবি করেন। তিনি স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর সঙ্গে আর্যসমাজকে পাঞ্জাবে জনপ্রিয় করে তোলেন। তিনি অনেক স্থানে দুর্ভিক্ষের সময় শিবির স্থাপন করে মানুষের সেবা করেছেন। ১৯২৮ সালের ৩০ অক্টোবর তিনি সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে তিনি পুলিশের লাঠিপেটায় গুরুতর আহত হন এবং ১৭ নভেম্বর মারা যান। তার মৃত্যুতে সমগ্র দেশ উত্তেজিত হয়ে ওঠে। চন্দ্রশেখর আজাদ, ভগত সিং, রাজগুরু, সুখদেব ও অন্যান্য স্বাধীনতাসংগ্রামী তার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা নেয় এবং ১৭ ডিসেম্বর ব্রিটিশ পুলিশ কর্মকর্তা সাংডর্সকে গুলি করে হত্যা করে। এতে ব্রিটিশ সরকারের কারাগার থেকে তাদের ফাঁসিতে ঝুলানোর আদেশ দেওয়া হয়। তিনি হিন্দি ভাষায় মধ্যযুগীয় ভারতের নেতা শিবাজী ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জীবনী রচনা করেন।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনকে বলা হয় ‘লাশের সাক্ষ্য’। সেই প্রতিবেদনে প্রায়ই ভুল থাকছে। হত্যা হয়ে যাচ্ছে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা। দেশের মর্গগুলোর আধুনিকায়ন না হওয়া, চিকিৎসকদের অদক্ষতা এবং মর্গে আসার আগেই মরদেহের আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়া ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ভুলের অন্যতম কারণ। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য এরকমই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের বেশিরভাগ মর্গে মরদেহের ভিসেরা বা বিভিন্ন নমুনা সংরক্ষণের আধুনিক সুবিধাসংবলিত জায়গা নেই। এসব ধারণের জন্য কনটেইনার, প্রিজারভেটিভ বা রাসায়নিকের সরবরাহও প্রয়োজনের তুলনায় কম। অনেক সময় প্রিজারভেটিভ না থাকলে লবণ পানির সাহায্যে মর্গে লাশ সংরক্ষণ করা হয় এবং হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল ল্যাবে যেসব স্যাম্পল বা নমুনা পাঠানো হয়, সেসব ভালোমানের ফরমালিন দিয়ে সংরক্ষিত করে পাঠানো হয় না। ফলে আলামত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও ভুলের আশঙ্কা বাড়ে। কখনো চিকিৎসক প্রভাবিত হয়েও ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেন।
ময়নাতদন্তসংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলেন, আমাদের দেশে আধুনিক মর্গ ব্যবস্থাপনা নেই। তাছাড়া লাশ মর্গে আসার আগেই অনেক আলামত নষ্ট হয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে প্রথমে থানায় নেয়; তারপর থানা থেকে নেয় মেডিকেল কলেজে। এরপর অ্যাম্বুলেন্স, লেগুনা বা ট্রাকে বা ভ্যানে করে আনে মর্গে। এত আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে। এসব কারণে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসে।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ময়নাতদন্তের ভুল প্রতিবেদনের প্রধান কারণ আধুনিক যন্ত্রপাতি ও আধুনিক মর্গের অভাব। দ্বিতীয় কারণ, লাশ যখন আমাদের কাছে আসে তখন আমরা সিন অব দ্য ক্রাইম (অপরাধের দৃশ্য) ভিজিট করি না। ফলে অনেক ইনফরমেশন ধরা পড়ে না। উন্নতবিশ্বে কোথাও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে পুলিশ ওই স্থানকে হলুদ টেপ দিয়ে ঘিরে রাখে এবং সবার আগে ভিজিট করে একজন ফরেনসিক স্পেশালিস্ট। ওখান থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগৃহীত হয়ে মর্গে চলে আসে। মর্গে লাশ পাঠায় পুলিশ, পরে পোস্টমর্টেম করে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে মরদেহের ফাইন্ডিংস মিলিয়ে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। সেটাই সঠিক ও নির্ভরযোগ্য হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এমন হয় না।’
ময়নাতদন্ত কী : খুন বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর ভুক্তভোগীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার জন্য একজন ফরেনসিক চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞ মরদেহের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ বা অঙ্গবিশেষের গভীর নিরীক্ষণ করেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করে মন্তব্যসহ যে প্রতিবেদন দেওয়া হয় তাই পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি মনে করেন, ময়নাতদন্ত হওয়া জরুরি, তখন মৃতদেহ সিভিল সার্জন বা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়।
সম্প্রতি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা ও রেল দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর কথা উল্লেখ থাকা ২২টি মামলা তদন্ত করে পিবিআই জানায়, এগুলো ছিল পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। ওই মামলাগুলোতে পুলিশের অন্যান্য সংস্থা তদন্ত করে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল।
পিবিআইপ্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হত্যা বা অপমৃত্যুর মামলার তদন্তে ময়নাতদন্তের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভালো ময়নাতদন্ত মামলার রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে ময়নাতদন্ত সঠিক না হলে তদন্ত ভিন্ন পথে মোড় নেয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তদন্তকারী কর্মকর্তাকে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সাহায্য করে, ঘটনার রহস্য উদঘাটনে দারুণভাবে সহায়তা করে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিটফোর্ড বা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে ২০২১ সালে ৭৪০টি, ২০২২ সালে ৬০০টি ও চলতি বছর ১৫ মে পর্যন্ত ১৪৫টি মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। গত ১৫ মে দুপুরে সেখানকার মর্গে গিয়ে দেখা গেছে জরাজীর্ণ দশা। দুটি মরদেহ পড়ে আছে পোস্টমর্টেমের অপেক্ষায়। মর্গ সহকারী নাম প্রকাশ না করে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘মর্গের লাশ রাখার একমাত্র ফ্রিজটি তিন বছর ধরে নষ্ট। ময়নাতদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় মালামালের সংকট সবসময়ই থাকে। নেই আধুনিক কোনো সুবিধা। তিনজন মর্গ সহকারীই বছরের পর বছর চুক্তিভিত্তিতে কাজ করছেন।’
জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য মর্গের দশা একই।
ময়নাতদন্ত সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে পিবিআইয়ের এক প্রতিবেদনে দেশের মর্গসংশ্লিষ্টদের ফরেনসিক বিষয়ে আধুনিক ও বিশ্বমানের প্রশিক্ষণের অভাব, বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক চিকিৎসকের তুলনায় লাশের সংখ্যা বেশি, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও হিমাগারসহ মানসম্মত অবকাঠামো না থাকাকে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এ ছাড়া মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমের স্বল্পতা, জটিল ও চাঞ্চল্যকর মরদেহের ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্ত না করা, আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা থাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ময়নাতদন্ত কাজে অংশ নিতে চান না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ময়নাতদন্ত বিষয়ে পিবিআইয়ের প্রতিবেদন ও দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলাদেশের মর্গগুলোতে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও আলোর ব্যবস্থাসহ আধুনিক অবকাঠামো ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ঘাটতি রয়েছে। অনেক জেলায় মর্গে বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে জেনারেটর নেই। অনেক জেলায় মর্গে পর্যাপ্ত দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল নেই। বংশ পরম্পরায় মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমরা ময়নাতদন্তের সহযোগী হিসেবে কাজ করলেও তাদের কোনো মৌলিক প্রশিক্ষণ নেই। তাছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ ব্যস্ত মর্গগুলোতে মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্টদের স্বল্পতা প্রকট। অনেক জায়গায় দেখা গেছে, লাশ সংরক্ষণের সুরক্ষিত পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার অভাব। বিদেশি নাগরিক ও বিশেষ ক্ষেত্রে মরদেহ প্রচলিত নিয়মে হিমঘরে সংরক্ষণ করার প্রয়োজন পড়ে। অল্পসংখ্যক মর্গে কুলিং বা ফ্রিজিং বা মর্চুয়ারি কুলার সিস্টেম থাকলেও অধিকাংশ সময় নষ্ট থাকে বলে গরমের সময় লাশে দ্রুত পচন ধরে।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর সম্ভাব্য সময়ের উল্লেখ থাকা জরুরি। মর্গে আধুনিক প্রযুক্তি না থাকায় অভিমত প্রদানে বিশেষজ্ঞদের সমস্যা হয়। পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১ জুন রাজধানীর কলাবাগান থানা এলাকায় নিজ বাসা থেকে ডা. কাজী সাবিরা রহমান লিপির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি খুন হয়েছিলেন। মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে। খুনের ধরন মোটামুটি স্পষ্ট হলেও ঘটনার রহস্য উন্মোচনে খুনের ‘সম্ভাব্য সময়’ জানার জন্য পিবিআই ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকদের সুযোগ-সুবিধা কম হওয়ায় চিকিৎসা শিক্ষায় এ শাখাটি অবহেলিত এবং কম গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত। ফলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক ডাক্তারের স্বল্পতা রয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে আরেকটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে, সিএমএম আদালতের নির্দেশে ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগরের লালমোহন থানা এলাকা থেকে কামাল মাঝির (৪৫) ৩৮ মাসের পুরনো মরদেহ তুলে ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়। সেখানে কর্মরতদের কারও এ ধরনের মরদেহের ময়নাতদন্তের অভিজ্ঞতা না থাকায় মরদেহটি ভোলা থেকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়া হয়। দায়িত্বরত প্রভাষক জানান, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের পদে কেউ কর্মরত নেই। তিনি মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য অন্য কোনো মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়ার অনুরোধ করেন। পিবিআই মরদেহটি বরিশাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সংশ্লিষ্ট বিভাগে নিয়ে যায়।
হত্যা কেন ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা হিসেবে আসে জানতে চাইলে ফরেনসিক চিকিৎসকরা জানান, কাউকে হত্যা করে রেললাইনে ফেলে রাখলে তার ওপর দিয়ে ট্রেন গিয়ে একেবারে ক্ষতবিক্ষত হয়ে হাড়গোড় বেরিয়ে দলিত হয়ে যায়। একে চিকিৎসাশাস্ত্রে মিউটিলেডেট লাশ বলে। ওইসব লাশের আলামত বোঝা যায় না। আগের আলামত নষ্ট হয়ে নতুন আলামত তৈরি হয়। তখন রেল দুর্ঘটনাই মনে হয়। এতে অনেক সময় চিকিৎসকরা মিসগাইডেড হয়।
ফরেনসিক বিভাগে চিকিৎসকের সংকট বিষয়ে এক চিকিৎসক বলেন, ‘আমি ঢাকায়ে আছি, অথচ আমাকে কক্সবাজার বা পঞ্চগড় গিয়ে স্বাক্ষর দিতে হচ্ছে। বাইরে যাওয়ার, বিশেষ করে একা, বিপদ আছে অনেক, সংক্ষুব্ধ পক্ষ হামলা চালাতে পারে। এজন্য অনেক চিকিৎসক এ বিভাগে থাকতে চান না। এখানে সুবিধাও অনেক কম। মফস্বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসককে মিসগাইড করে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে রিপোর্ট লেখানো হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।
ফ্যাটি লিভার রোগটি এখন ঘরে ঘরে। প্রাথমিকভাবে এই রোগের লক্ষণ না বুঝতে পারলে, অনেক সমস্যাই দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকরা জানান, এই রোগ থেকে বাঁচতে জীবনধারায় বদল আনতে হবে।
কোন কোন উপসর্গ দেখলে সতর্ক হবেন? শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া, হঠাৎ ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়া, হলুদ রঙের দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব, ওজন অত্যন্ত বেড়ে যাওয়া, সারাক্ষণ ক্লান্তিভাব— এই উপসর্গগুলি ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ হতে পারে। অনেকের ধারণা, মদ্যপান করলেই এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে। তবে কেবল মদ্যপান ছেড়ে দিলেই এই রোগের ঝুঁকি কমবে না। কম তেলমশলার খাবার খাওয়া, বাড়ির খাবারে অভ্যস্ত হওয়া, মদ ছেড়ে দেওয়া— এই অভ্যাসগুলিই লিভারকে ভাল রাখার অন্যতম উপায়। এই অসুখকে ঠেকিয়ে রাখতে ডায়েটের ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে। তবে এগুলিই শেষ কথা নয়। লিভার ভাল রাখতে মেনে চলতে হয় আরও কিছু নিয়মকানুন। কিন্তু কী কী?
চিনির মাত্রা কমানো
সহজে রোগা হতে চেয়ে অনেকেই নিজের খুশি মতো ডায়েট প্ল্যান বানিয়ে নেন। চিনি বাদ দিয়ে দেদারে কৃত্রিম চিনির উপরেই ভরসা করেন। এতেই আসলে চরম ক্ষতি করছেন শরীরের। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার অভ্যাস আমাদের লিভারের ব্যাপক ক্ষতি করে। ফ্রুকটোজ হোক কিংবা কৃত্রিম চিনি, লিভারের অসুখ ডেকে আনে।
ব্যথার ওষুধ কম খান
বেশকিছু বেদনানাশক ওষুধ লিভারের ক্ষতি করে। কিছু প্যারাসিটামল বা কোলেস্টেরলের ওষুধও লিভারের প্রভূত ক্ষতি করে। ঘুম না হলে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘুমের ওষুধ খেতে শুরু করেন। এই অভ্যাসের কারণে লিভারের জটিল রোগে ভুগতে হতে পারে।
পানি বেশি করে খান
শরীর থেকে যতটা দূষিত পদার্থ বার করে দিতে পারবেন, লিভার ততটাই সুস্থ থাকবে। তাই বেশি করে পানি খেতে হবে। তবেই প্রস্রাবের সঙ্গে শরীরের টক্সিন পদার্থগুলি বেরিয়ে যাবে। দিনে কয়েক বার গরম পানিতে পাতিলেবুর রস দিয়ে সেই পানি খান। ডায়েটে রাখুন টক দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক।
পর্যাপ্ত ঘুম
সারাদিন কর্মব্যস্ততা আর রাত জেগে মোবাইলে চোখ রেখে সিনেমা দেখা— সব মিলিয়ে ঘুমের সঙ্গে আপস। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ঘুমের অভাব হলে তার প্রভাব পড়ে লিভারের উপরেও।
ওজন কমান
শুধু সুন্দর দেখানোর জন্যই নয়, লিভার সুরক্ষিত রাখতে চাইলেও কিন্তু ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আমাদের শরীরে কার্বহাইড্রেট-প্রোটিন-ফ্যাটের সঠিক ভারসাম্য থাকা ভীষণ জরুরি। তবে ইদানিং বাড়ির খাবার নয়, বরং রেস্তোরাঁর খাবার, রেড মিট, বাইরের ভাজাভুজি, প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খেয়ে অভ্যস্ত। আর এর জেরেই শরীরে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা বাড়ছে। লিভারের পক্ষে এই ফ্যাট মোটেই ভাল নয়।
প্রথম সেট ২৫ মিনিট, দ্বিতীয়টি ২৮ মিনিটে জিতলেন কার্লোস আলকারাজ। মনে হচ্ছিল কোয়ালিফায়ার ফ্যাভিও কোবোলিকে বুঝি উড়িয়েই দিচ্ছেন শীর্ষ বাছাই।
না, তৃতীয় সেটতে প্রতিরোধ গড়লেন ইতালিয়ান। সময় গড়ালো ঘন্টায়। শেষপর্যন্ত জয় এসেছে ৬৬ মিনিটে। ৬-০, ৬-২, ৭-৫ গেমে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ জিতে রাফায়েল নাদালের উত্তরসুরি ক্লে কোর্টের সর্বোচ্চ আসর শুরু করলেন।
নাদালের চোটজনিত অনুপস্থিতিতে শীর্ষবাছাই আলকারাজ। ২০২১ এ তৃতীয় রাউন্ড, গতবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছিলেন। এবার আরো এগোলে সেমিফাইনালে নোভাক জকোভিচের সংগে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা।
সে দেখা যাবে। আপাতত দ্বিতীয় রাউন্ডে আলকারাজকে টপকাতে হবে জাপানের টি. দানিয়লেকে।
আইপিএলের পঞ্চম শিরোপা জিততে চেন্নাই সুপার কিংসের চাই ১৫ ওভারে ১৭১ রান। আহমেদাবাদে রাত ১২.৪০ মিনিটে শুরু হবে খেলা। গুজরাট টাইট্যান্সের ২১৪ রানের জবাবে খেলতে নেমে ৩ বলে ৪ রান করার পর বৃ্স্টিতে বন্ধ হয় ফাইনাল। অর্থাৎ বাকি ১৪.৩ ওভারে আরো ১৬৭ রান চাই ধোনীর দলের।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।