
ব্যবস্থাপনায় ড. তোফায়েল আহমেদ। স্থানীয় শাসন ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ। বর্তমানে কুমিল্লা ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। আগে শিক্ষকতা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। নির্বাচন কমিশন, ইভিএম মেশিন এবং রাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি কথা বলেছেন দেশ রূপান্তরের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সম্পাদকীয় বিভাগের সাঈদ জুবেরী
দেশ রূপান্তর : নির্বাচন কমিশন প্রস্তাবিত দুই লাখ নতুন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার প্রকল্প স্থগিত হওয়ার বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
ড. তোফায়েল আহমেদ : কেন স্থগিত হয়েছে, তার কারণটা দেখতে হবে। কারণটা আমাদের কাছে পরিষ্কার জানা নেই।
দেশ রূপান্তর : বলা হচ্ছে তো অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে বাড়তি খরচ কমাতে, কৃচ্ছ্র সাধনের কথা।
ড. তোফায়েল আহমেদ : সেটা ঠিক আছে। এটা ইমিডিয়েট রিজন। যেটা সবাই দেখছে যে, এই পরিস্থিতিতে বাড়তি টাকা জোগাড় করা সরকারের জন্য কঠিন। কিন্তু সরকার যখন ইভিএম কেনার কথা বলছিল, তখনো কিন্তু দেশে টাকার সংকট ছিল। কিন্তু তারা ৩০০ আসনেই ইভিএমে ভোট হবে, মেশিন কেনা হবে এমন কথাই বলে আসছিল। প্রথম কথা হচ্ছে- এখন ইমিডিয়েট রিজন যেটা বলছে যে টাকার অভাব সেটা হতে পারে। তবে, আরেকটা হতে পারে যে সরকার হয়তো কৌশলগতভাবে পিছু হটেছে, যেহেতু সবাই এটা চাচ্ছে না। ইভিএমের বিষয়ে ঐকমত্য নেই। কারণ এটার জন্য আবার নির্বাচনে না যাওয়ার মতো রিজন দাঁড় করানো হতে পারে। সুতরাং এক্ষেত্রে সরকার হয়তো কৌশলগতভাবে পিছিয়েছে। আর তৃতীয়ত, ম্যানেজমেন্ট প্রবলেম। কারণ, শুধু টাকা দিলেই তো হবে না। এই যন্ত্রগুলো আনা, সেগুলো ঠিকঠাক করা এবং এম মধ্যে এসব নির্বাচনের জন্য রেডি করা...। এসবে তো অনেক ঝক্কি আছে। সেটা সরকার নিতে চাচ্ছে কি না বা নির্বাচন কমিশনও এটা নিয়ে কতটুকু এগ্রিড, কারণ, পুরো নির্বাচন কমিশনই যে এটাই চাচ্ছিল তা মনে হয়নি। বিশেষ করে সিইসির কথায় এমন মনে হচ্ছিল। সবকিছু মিলিয়ে সময় বলে দেবে এটা কৌশলগত কারণেও হতে পারে আবার ইমিডিয়েট রিজন অর্থের অভাবেও হতে পারে।
দেশ রূপান্তর : কিন্তু আগামী সংসদ নির্বাচনে সবগুলো আসনেই ইভিএম মেশিন ব্যবহারে বিভিন্ন বিরোধিতা থাকার পরও একরকম একরোখা মনোভাব দেখানো হচ্ছিল। এটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
ড. তোফায়েল আহমেদ : হ্যাঁ, তবে সিইসি তো সম্ভব হবে না এমন কথাও বলেছেন। কারণ হচ্ছে কি, সরকারের মনোভাবটাই সিইসির মনোভাব। সরকার যেহেতু শক্তভাবে বলেছিল ৩০০ আসনেই ইভিএমে ভোট হবে, সেজন্যই ইসিও তখন অন্য কথা ভাবতে চায়নি বা গ্রহণ করতে চায়নি। এখন সরকার তাদের না জানিয়েই এটা স্থগিত করেছে। কারণ তারা তো প্রস্তাব দিয়েছিলই। সরকার ইভিএমের পক্ষে দেখেই তারাও দৃঢ় মত দেখিয়েছে এবং প্রস্তাবও দিয়েছে। সরকারের বাইরে নির্বাচন কমিশনের শক্ত কোনো মতামত আছে এটা মনে করার কোনোই কারণ নেই।
দেশ রূপান্তর : নতুন মেশিন কেনার প্রস্তাব স্থগিত ঘোষণার পর সিইসি বলছেন পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রাপ্যতা সাপেক্ষে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোট হবে। এতে কি কোন আসনে ইভিএমে আর কোন আসনে ব্যালটে ভোট হবে তা নিয়ে নতুন জটিলতা তৈরি হবে না?
ড. তোফায়েল আহমেদ : হ্যাঁ, এটা নিয়ে একটা নতুন বিতর্ক তৈরি হবে। কারণ বিরোধীদের অনেকেই চাইবে না যে তার আসনে ইভিএমে ভোট হোক। আবার সরকারি দলের কেউ চাইতে পারে যে হোক। বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি, জাতীয় পার্টি তারা তো ইভিএমকে না বলেই দিয়েছে। অন্যরাও একই কথা বলবে হয়তো। তবে, আমি ব্যক্তিগতভাবে অন্যরকম মনে করি ইভিএমকে, মানে প্রযুক্তিকে টোটালি না করাটা একটা খারাপ বার্তা দেয়। কম্প্রোমাইজড ফর্মুলার যে প্রস্তাবটা আসছিল, তারা সে কাজটা করেনি। এখনে প্রযুক্তিকে ভিলেন বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। মানে, প্রযুক্তির যে ত্রুটিগুলো আছে, ধরেন, এই যে পেপার ট্রেইল নেই, তারপর আঙুলের ছাপ না মেলা, ভোটদানের মেশিনে দেরি হওয়া প্রভৃতি শুধরে নেওয়ার দরকার ছিল। সেগুলো তারা করেনি। বরং তারা আরও দুই লাখ ইভিএম কেনার প্রস্তাব দিয়ে দিয়েছিল। তো এসব খুব একটা ভালো দৃষ্টিভঙ্গি না আর কি।
দেশ রূপান্তর : হ্যাঁ, ইভিএমে ভোটারকে পেপার ট্রেইল দেওয়ার ব্যাপারটি তো নাগরিক সমাজেরও কেউ কেউ বলেছিলেন। কিন্তু এ ব্যাপারে ইসি কোনো কথাই বলেনি।
ড. তোফায়েল আহমেদ : এটা নিয়ে কোনো বক্তব্যই পাওয়া যায় না ইসির। কিন্তু মেশিন কেনায় তাদের অনেক আগ্রহ। কিন্তু এসব মেশিন গুদামে মেইনটেন্যান্স ছাড়া পড়ে থেকে নষ্ট হলে তার দায় কে নেবে? আগের কেনা অনেকগুলো মেশিন যে এখন কাজ করছে না, তার দায় তো কেউ নিল না। আবার নতুন মেশিন কেনা হলে সেগুলো যে ওয়ার্কেবল থাকবে তার তো কোনো গ্যারান্টি নেই। তাছাড়া আবার ত্রুটিপূর্ণ মেশিন আমি কেন কিনব? তাছাড়া মেশিনের দামের প্রশ্নেও অনেকের দ্বিমত আছে। যে দামে এটা কিনছি, সেটাই এই মেশিনের আসল দাম কি না তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। ফলে অনেকগুলো কন্ট্রাভার্সি রয়ে গিয়েছে। এটার ইভাল্যুয়েশনগুলো হয়নি। মানে আগে যে মেশিনগুলো কিনেছি এবং সেগুলোর যে কার্যক্ষমতা সেটার ইভাল্যুয়েশন করে তার ভিত্তিতে যে আমরা নতুন জায়গায় যাব সে পরিস্থিতি তো তৈরি করা হয়নি।
দেশ রূপান্তর : সম্প্রতি ইভিএমে ভোটগ্রহণকালে কেন্দ্রের সিসি ক্যামেরায় দেখা গেল যে ভোটবুথে আগে থেকে অবস্থান করা বহিরাগত ভোট দিয়ে দিচ্ছে। ঢাকা থেকে এ দৃশ্য দেখে ভোটও বাতিল করা হয়েছিল। তো ভোটকেন্দ্র কি সিসি ক্যামেরা রাখা উচিত?
ড. তোফায়েল আহমেদ : আপনার দেশে যেহেতু মানুষ এভাবে ভোট সেন্টারে অনুপ্রবেশ করে ভোট দিয়ে দিচ্ছে এমন ইতিহাস আছে, সেহেতু এসব শনাক্তের জন্য অবস্থা বিবেচনায় সিসি ক্যামেরা ব্যবহারের দরকার আছে। এখানে অনেক ক্ষেত্রে ইভিএম মেশিন নিয়ে যে প্রশ্নগুলো উঠেছে তার বেশিরভাগ প্রশ্নই কিন্তু মেশিনের এফিশিয়েন্সি নিয়ে না। মেশিনের দক্ষতা নিয়ে না। এটা হচ্ছে ভোটকেন্দ্রের ম্যানেজমেন্টের সমস্যা। ভোটকেন্দ্রে মেশিনে ভোটার শনাক্ত হওয়ার পরে অবাঞ্ছিত মানুষ ঢুকে তারা বাটন টিপে দিচ্ছে অথবা ভোটারকে নির্দেশ দিচ্ছে যে এখানে ভোট দাও। এগুলো তো গুরুতর অপরাধ। এখানে মেশিনের প্রশ্নের চেয়ে আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে, রাজনৈতিক দলের মধ্যে এই প্রশ্ন কেন কাজ করছে না যে ভোটকেন্দ্রে তো অবাঞ্ছিত কেউ ঢুকতে পারবে না। এটাকে উৎসাহ না দেওয়া বা এটার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে কোনো ঐকমত্য দেখা যায় না। বিশেষ করে রুলিং পার্টির মধ্যে। অপজিশন এবং অন্যদের ভয়টা তো এখানে। প্রশাসন, পুলিশ এবং দলীয় কর্মীরা একসঙ্গে হয়ে যখন রিগিং করে তখন মেশিন কিংবা নো মেশিন কোনো কিছুই কাজে আসছে না। এগুলো সবই মিস ম্যানেজমেন্ট। অনিয়ম করেই করা হচ্ছে। এবং জানাশোনার মধ্যে, ইচ্ছেকৃতভাবেই এসব হচ্ছে। প্রবলেম তো ওখানে, মেশিনে তো এত প্রবলেম দেখি না। প্রথম সমস্যা হচ্ছে ভোটকেন্দ্র ব্যবস্থাপনায়, ম্যানেজমেন্টে।
দেশ রূপান্তর : এটা কি কেবল ইসির ওপর নির্ভর করে? রাজনৈতিক সদিচ্ছা বা সংস্কৃতির ভূমিকা কতটা?
ড. তোফায়েল আহমেদ : রাজনৈতিক সংস্কৃতির দোহাই দিয়ে হবে না। প্রশাসন কেন এমন করবে, পুলিশ কেন এর সঙ্গে যুক্ত হবে? আর ইসি-ইবা কেন চোখ বন্ধ করে থাকবে? রাজনৈতিক দল এটা করতে চাইবে। কিন্তু ম্যানেজমেন্ট যখন ঠিক থাকবে তখন তারা এটা করতে পারবে না। একটা ভোট বাতিল হয়ে গেল না? এই জাতীয় জিনিস, দৃষ্টান্তগুলো তাদের ইন্সট্যান্ট ক্রিয়েট করতে হবে তো। কিন্তু আপনি যদি বলেন, আমি দেখিনি, আমাকে কেউ অভিযোগ করেনি এটা তো কোনো কথা না। তার মানে আপনি সব জানেন এবং আপনি এটা অ্যালাউ করেছেন। সমস্যাটা এখানেই।
দেশ রূপান্তর : বলা হয়ে থাকে বা আইন অনুযায়ী তো নির্বাচনকালীন প্রশাসন ইসির হাতে...
ড. তোফায়েল আহমেদ : এগুলো তো সব কথার কথা হিসেবে বলা আছে। হাতে থাকলে তাদের কথা শোনে না কেন?
দেশ রূপান্তর : ইসির তো সেই দৃঢ়তা দেখাতে হবে।
ড. তোফায়েল আহমেদ : হ্যাঁ, কিন্তু তারা যখন ইসির কথা শুনল না তখন কমিশন কী করেছে? এই যে গাইবান্ধার ইলেকশনে ইসির যে ফাইন্ডিংস, তার সঙ্গে সরকারের মানে প্রশাসনের যে ফাইন্ডিংস, তার মধ্যে তো বিরাট পার্থক্য। এখানে কোনো অ্যাকশন হয়েছে? হয়নি তো। যদি অ্যাকশন হতো, তাহলে শুধু নির্বাচন বাতিল করে দিলেই তো সব হবে না। বাতিলের পর কী কারণে এটা বাতিল হলো, কারা রেসপন্সিবল সেটা ফিক্সড করতে হবে। দায়িত্ব কার ছিল আর কে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে সেটা বের করে উপযুক্ত শাস্তির বন্দোবস্ত করতে হবে তো। এটা হলে আর ওই ঘটনার রিপিট হবে না।
দেশ রূপান্তর : নির্বাচনী আইন, আচরণবিধি ভঙ্গে শাস্তির নজির তো মনে পড়ে না।
ড. তোফায়েল আহমেদ : আচরণবিধিটা ধরেন কেবল প্রার্থীর জন্য। কিন্তু নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে কেউ, সেক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে যারা ছিল, ভোট কাস্টিংয়ের দায়িত্বে যারা ছিল, ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব যাদের ছিল তারা তাহলে ফেইল করেছে। তারা দায়িত্বে থাকলে ভোটকেন্দ্রে অবাঞ্ছিত লোক কীভাবে ঢোকে! সিসি ক্যামেরায় কীভাবে শনাক্ত হলো? সিসি ক্যামেরায় যারা শনাক্ত হলো, তাদের কি কেউ অ্যারেস্ট করেছে? শাস্তি দেওয়া হয়েছে? যাদের দায়িত্বে অবহেলায় অবাঞ্ছিত লোক ঢুকল, তাদের কোনো শাস্তি হয়েছে? এটার ফাইন্ডআউট করা হয়নি। এসব হচ্ছে, এ কারণেই হচ্ছে। এবং এটা জেনেবুঝেই করা হচ্ছে।
দেশ রূপান্তর : নতুন ইভিএম কেনা বাতিল, বিরোধীদের সভা-সমাবেশে অপেক্ষাকৃত নমনীয়তা দেখানোর মধ্য দিয়ে কি বিরোধীদের নির্বাচনে আসার আস্থা তৈরি করা হচ্ছে?
ড. তোফায়েল আহমেদ : আপনার প্রশ্নের সঙ্গে আমি একমত না। আপনি কে যে আপনি ছাড় দেবেন, নমনীয়তা দেখাবেন? ধরে রাখবেন, আবার ছাড়বেন, এগুলো কী? এগুলো কি জাতির সঙ্গে তামাশা? মিটিং, মিছিল করার রাইট আছে, করবে। আপনি ছাড় দেওয়ার বা না দেওয়ার কে? এসব বেশিদিন রাখা যায় না। আমি না মানলে আপনি কী করবেন, আমি মিছিল করব। হ্যাঁ, আপনি হয়তো অ্যারেস্ট করবেন। কিন্তু এসব দেশকে একটা সংঘাতের দিকে নিয়ে যায়। একটা দল যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা যখন কতগুলো দাবি করছে এটা র্যাশনালি নিতে হবে। তাদের সব দাবি মানতে হবে তা না। সব দাবি কোনো সময়ই মানা হয় না। কিন্তু একটা মাঝামাঝি অবস্থায় আসতে হবে। অন্যদিকে, তারাও কালকেই সরকারকে ফেলে দিতে হবে, পদত্যাগ করতে হবেএরকম বলছে, যা ঠিক না। আবার সরকার বলছে যে সংবিধানে যা আছে তাই-ই হবে, এই সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। সেটাও ঠিক না। দুই পক্ষকেই ছাড় দিয়ে একটা জায়গায় আসতে হবে। সমাজটাকে, গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য এক জায়গায় আসতে হবে। কোনো কম্প্রোমাইজ হবে না, এমন একরোখা মনোভাব, এটা একদমই ঠিক না, সম্ভব না।
বেশ আগের একটি জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন চিত্রের কথা মনে পড়ে, ‘পানি নিয়ে ভাবনা আর না আর না’। আমরা সবাই জানি পানিই জীবন এবং সেটা আক্ষরিক অর্থেই। কারণ পানি ছাড়া প্রাণের কল্পনা করা যায় না, এটা সম্ভবও না। সুপেয় পানি মানুষ ও মানব সভ্যতার জন্য যারপরনাই দরকারি, যদিও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এর সংকট প্রকট। যেখানে সুপেয় পানি নেই সেখানে মানব সভ্যতা ও সংস্কৃতি কল্পনা করা যায় না। সাধারণভাবে পানির উৎস বিবিধ যেমন সাগর, নদী, খাল, বিল ইত্যাদি। আবার ভূগর্ভে হাজার হাজার বছর ধরে সঞ্চিত পানি ব্যবহার করতে কুয়া ও টিউবওয়েল তৈরি করা হয়। আমাদের দেশে ব্যবহার উপযোগী পানির মূল উৎস নদী। প্রধানত হিমালয় অঞ্চল, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও বরাক অববাহিকা থেকে বাহিত পানি বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। আমাদের এই ভূমির একটি বড় অংশ তৈরি নদীবাহিত পলি সঞ্চিত হয়ে। নদীর দ্বারাই সৃষ্টি পৃথিবীর বাংলা নামের এই বৃহত্তম এখনো সক্রিয় ব-দ্বীপ। বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে আটশোর মতো নদী ছিল যাদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ এবং এই নদীগুলো আমাদের দেশকে মমতায় আগলে রেখে ভূমিকে সজীব ও সবুজ করে রাখছে।
শুধু আমাদের দেশ না, পৃথিবীতে মানবসংস্কৃতির ইতিহাস নদীর তীর ও পানির অববাহিকা ধরে বিবর্তিত ও সমৃদ্ধ। নদী শুধু জলের ধারা বয়ে নিয়ে আসে না অজানা কাল থেকেই নদী যোগাযোগ, সংস্কৃতি, ধর্মীয় বিশ্বাস ও পবিত্রতার ধারণার সঙ্গে যুক্ত। আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে প্রাচীন গ্রন্থসমূহে নদীকে প্রাণ ও আত্মা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। নদী যেখানে পানির প্রবাহের ধারাকে বয়ে নিয়ে চলে এর পাশাপাশি অন্যান্য সুপেয় পানির অন্যান্য উৎস যেমন পুকুর, খাল, বিল, নালাকে সমৃদ্ধ করে পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানির প্রাকৃতিক সঞ্চয়ন প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রাখে। অতিরিক্ত পানি উত্তোলন ও ধারাবাহিক সঞ্চয়ন ব্যাহত হলেই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যায় এবং মরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। আমাদের দেশের পরিবেশের বিবেচনায় কোনো কোনো অঞ্চলে সেই প্রবণতা আমরা ইতিমিধ্যে দেখতে পাচ্ছি, বিশেষ করে বরেন্দ্র অঞ্চলে।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পানির উৎস নিয়ে নানা ধরনের সংকট থাকলেও আমাদের দেশের প্রকৃতি যেন দুহাত ভরে দিয়েছে। যেটা এ দেশের মানুষকে যেমন নির্ভার করেছে এবং একইসঙ্গে আমাদের সংস্কৃতিকেও করেছে সমৃদ্ধ। পাশাপাশি আমাদের দেশের এই বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য মিষ্টি পানির গুরুত্ব অপরিসীম। এর উৎস কমে গেলে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়ে, খাদ্য উৎপাদন কমে যায়। অনেক সময় উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যয়বহুল হয়ে যায়। ইদানীং কোনো কোনো বছর এমনকি আমন ধান উৎপাদনের সময়ও সেচের পানির ব্যবস্থা করতে হয়। অন্যদিকে কৃষি উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া ও খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে গেলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খাদ্যদ্রব্যের প্রাপ্তি কমে যায়। অন্যদিকে মৎস চাষ, খামার তৈরি সব কিছুই পানির সহজলভ্যতা ও প্রাপ্তির ওপর নির্ভর করে।
প্রাকৃতির দান যেকোনো বিবেচনায়ই সম্পদ, তবে তা নির্ভর করে এর যথাযথ ব্যবহারের ওপর। প্রাকৃতিক সম্পদের দায়িত্বশীল ও পরিমিত ব্যবহারের মাধ্যমেই টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব। তা না হলে প্রকৃতিই ধ্বংস ডেকে নিয়ে আসবে সময়ে-অসময়ে এবং কারণে-অকারণে। নদীর ক্ষেত্রেও তাই। নদী তখনই সম্পদ যখন এটাকে নদী হিসেবে থাকতে দেওয়া হয়। এর প্রবহমানতা অব্যাহত থাকে, এর পানি মানুষের ও প্রকৃতির জন্য ব্যবহারযোগ্য থাকে, এবং পলি বয়ে নিয়ে আসে নতুন ভূমি গঠনের জন্য। নদীর নিজস্ব যে সত্তা তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনগতভাবে বাংলাদেশে সব নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয় আদালতের রায় অনুযায়ী।
আর এখানেই আমাদের সংকট। নিজস্ব সত্তা হিসেবে নয় নদী, খাল, বিলকে আমরা ড্রেন ও ময়লা আবর্জনার ভাগাড় হিসেবে দেখতে ও ব্যবহার করতে শুরু করেছি। আবার দখলদারদের পাল্লায় পরে সুপেয় পানির উৎস যেমন নদী, খাল, বিল বেদখল হয়ে যায়। মানুষের বর্জ্য, প্লাস্টিক বর্জ্য ও শিল্পের রাসায়নিক নদীর পরিবেশ ও মূল্যবান পানি দূষিত করে দেয়, প্রবাহ বন্ধ করে দেয়। এমনভাবে দূষিত করে যাতে কোনো ধরনের জলজ প্রাণী ও অনুজীব বেঁচে থাকতে পারে না, নিরাপদ ফসল উৎপাদন করা যায় না। যে নদী নিরাপদ পানির আধার না, প্রাণের সঞ্চার করে না, সেই নদী আমাদের জন্য সম্পদ না বরঞ্চ বোঝা। নদী ও পানি যেমন মানুষের জীবন ও সংস্কৃতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেই পানির প্রবাহ যখন বন্ধ হয়ে যায় বা দূষিত হয়ে যায় সেটা শুধু মানুষের জীবনকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে না, ক্ষতিগ্রস্ত করে সংস্কৃতি ও খাদ্য নিরাপত্তাকে। অন্যদিকে নদীর গতিপথ রুদ্ধ করে দিলে তার প্রকাশ ঘটে নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্য দিয়ে যেমন প্রলয়ঙ্করী বন্যা, খরা, নদীভাঙন ইত্যাদি।
নদীকে শুধু মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় হিসেবে ভাবলেই হবে না। মানুষ নদীর ব্যবহারকারী মাত্র। নদীকে দেখতে হবে প্রকৃতির একটি আবশ্যিক অনুষঙ্গ হিসেবে, যার বিনাশে প্রকৃতির ধ্বংস। আর নদী যখন মানুষের সংস্কৃতির অনুষঙ্গ, এর সঙ্গে মানুষের প্রাত্যহিক জীবন ধারণ ও জীবিকা যুক্ত তাই নদীর নিরাপদ ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনার ইস্যুগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নদীর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারের মাধ্যমে যে অপার সম্ভাবনা তৈরির সুযোগ আছে অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সেটাই এখন সুদূরপরাহত। অনেক সময় শুধু আমাদের অসচেনতা ও কিছু মানুষের লোভই এর জন্য দায়ী। পাশাপাশি রয়েছে নদী নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও হঠকারী পরিকল্পনা আর এসবের কারণেই আজ কয়েকটি আন্তঃদেশীয় নদীর প্রবাহ বন্ধ হওয়ার পথে, যেমনটা হয়েছে গঙ্গা ও তিস্তা নদীর ক্ষেত্রে।
নদীর অস্তিত্ব রক্ষায় এর নিজস্ব সত্তাকে স্বীকার করা, এ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা, রাষ্ট্রযন্ত্রকে সক্রিয় করা পাশাপাশি এই অঞ্চলের সমস্ত জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে তুলতে হবে। যাতে কোনোভাবে নদীর প্রবহমানতায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করা হয় এবং কোনোভাবে পানি দূষিত না হয়। আন্তঃদেশীয় নদীর প্রবহমানতা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের পার্শ¦বর্তী দেশগুলোর সঙ্গে দেনদরবার করতে হবে এবং এর সঙ্গে সচেতন মহলকে যুক্ত করতে হবে। কারণ নদীর বিনাশে ভুক্তভোগী নদীর সঙ্গে যুক্ত সব দেশের মানুষ। বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো আছেই, এসব প্রতিবন্ধকতার কারণেই একের পর এক নদী মরে যাচ্ছে এবং একই সঙ্গে মরে যাচ্ছে এর সত্তা। সূত্রমতে গত অর্ধশত বছরে বাংলাদেশে প্রায় দেড়শতাধিক নদী মরে গেছে এবং নর্দমায় পরিণত হয়েছে অসংখ্য। আর এভাবে যদি একের পর এক নদী নর্দমায় পরিণত হতে থাকে ও মরতে থাকে তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কী হবে, সেই ভাবনা কে ভাববে?
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
শিক্ষাসহ প্রয়োজনীয় সব ফরম পূরণের ক্ষেত্রে অভিভাবকের জায়গায় বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবককে রাখার নির্দেশ দিয়ে এক ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। এতদিন অভিভাবকের ক্ষেত্রে শুধু বাবার নাম দেওয়ার সুযোগ ছিল। এ রায়ের ফলে সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মাকেও স্বীকৃতি দিয়েছে হাইকোর্ট।
হাইকোর্ট রায়ে বলেছে, পিতৃপরিচয়হীন সন্তান, যৌনকর্মীদের সন্তান যাদের বাবার পরিচয় নেই তারা শুধু মায়ের নাম দিয়েই ফরম পূরণ করতে পারবেন। হাইকোর্ট রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছে, সংবিধান সবাইকে সমান অধিকার দিয়েছে। শুধু বাবার নাম না থাকলে একজন শিশু ফরম পূরণ করতে পারবে না, পাসপোর্ট পাবে না এটা ঠিক না। এটা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংবিধানে সমতার কারণে বাবা অথবা মায়ের পরিচয় থাকলেই যেকোনো ফরম পূরণ বা রেজিস্ট্রেশন পূরণ করার অধিকার পাবে। এই রায়ের ফলে বাবা-মা উভয়ের নাম লেখার বাধ্যবাধকতা থাকল না। শুধু মায়ের নাম লিখেও ফরম পূরণ করা যাবে। পরীক্ষা ও পাসপোর্টসহ সব ফরম পূরণে বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবকের নাম লেখা যাবে।
এই রায়ের প্রেক্ষাপট বেশ পুরনো। ২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগে শিক্ষার্থী তথ্য ফরমে অত্যাবশ্যকীয়ভাবে বাবার নাম পূরণ করতে না পারার কারণে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঠাকুরগাঁওয়ের এক তরুণীকে প্রবেশপত্র দিতে অস্বীকৃতি জানায়। মা ও সন্তানকে কোনোরূপ স্বীকৃতি না দিয়ে বাবা চলে যাওয়ার পর ওই তরুণী তার মায়ের একার আদর-স্নেহে বড় হয়েছেন। পরে এ ঘটনার যথাযথ অনুসন্ধানের ওপর প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এবং সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মায়ের স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠার দাবিতে ২০০৯ সালের ২ আগস্ট তিনটি মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনবাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও নারীপক্ষ যৌথভাবে জনস্বার্থে একটি রিট দায়ের করে। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৩ আগস্ট বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহম্মেদ এবং বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ মানবাধিকার, সমতার পরিপন্থী ও বিশেষভাবে শিক্ষার অধিকারে প্রবেশগম্যতার বাধাস্বরূপ বিদ্যমান বৈষম্যমূলক এ বিধানকে কেন আইনের পরিপন্থী এবং অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না এ মর্মে রুল জারি করে।
এরপর প্রায় এক যুগ চলে গেছে। আইনি প্রক্রিয়ার নানা ধাপ পেরিয়ে অবশেষে পরীক্ষা ও পাসপোর্টসহ সব ফরম পূরণে বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবকের নাম লেখার স্বীকৃতি এলো। এই রায়টি নানা দিক থেকেই তাৎপর্যপূর্ণ। আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে সন্তানের অভিভাবক হিসেবে বাবাই ছিলেন সর্বেসর্বা। প্রচলিত ধ্যান-ধারণা নারীকে অভিভাবক হিসেবে দেখতে বা মানতে নারাজ। তাইতো সব ধরনের নথিপত্রেও দীর্ঘদিন ধরে সন্তানের অভিভাবক হিসেবে শুধু বাবার নাম লেখার রীতি ছিল। ১৯৯৮ সালের ৯ ডিসেম্বর রোকেয়া দিবসে কোনো ব্যক্তির পরিচিতির ক্ষেত্রে বাবার নামের পাশাপাশি মায়ের নাম উল্লেখ রাখতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মায়ের নাম লেখার ঐতিহাসিক ঘোষণা দেন এবং ২০০০ সালের ২৭ আগস্ট এই বিধান কার্যকর হয়।
কিন্তু দিন যত যাচ্ছে, নানা পারিবারিক ও সামাজিক কারণে মানুষের ব্যক্তিগত সংকট বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা। এতে করে সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে শিশুরা। এখনো আমাদের প্রচলিত আইনে মা শুধু সন্তানের জিম্মাদার, অভিভাবক নন! বাংলাদেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাকে সন্তানের হেফাজত ও অভিভাবকত্বের জন্য আইনি লড়াই করতে হয়। মায়ের একক অভিভাবকত্বের আইনি স্বীকৃতি বাংলাদেশে এখনো অধরাই রয়ে গেছে। অভিভাবক ও প্রতিপাদ্য আইন অনুসারে, ১৮ বছরের কম বয়সী সন্তানকে নাবালক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশে শিশুর হেফাজত ও অভিভাবকত্ব মুসলিম শরিয়া আইন, পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ, ১৯৮৫ এবং অভিভাবক এবং প্রতিপালন আইন, ১৮৯০ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এসব আইন ও বিধির কোনোটিতেই মাকে সন্তানের অভিভাবক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। যে মা তার জীবনের সব শখ ও স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিয়ে শুধু সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে লড়াই করতে থাকেন, তাকে বিবাহবিচ্ছেদের পর আদালত অভিভাবকত্ব দেয় না, দেয় জিম্মাদারি। বাংলাদেশ অভিভাবক এবং প্রতিপাল্য আইন ১৮৯০-এর ১৭ [ক] ধারা অনুযায়ী নাবালক সন্তানের জিম্মাদার করা হয়েছে মাকে আর বাবাকে অভিভাবক। ছেলেসন্তান ৭ বছর পর্যন্ত আর মেয়েসন্তান বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত মায়ের হেফাজতে থাকবে। এমনকি আমাদের দেশে এখনো যদি কোনো নারী ধর্ষণের শিকার হন, তাহলে তাকে নির্যাতনকারী ব্যক্তির সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়, যাতে পরে সন্তানের অভিভাবক হিসেবে কোনো একজন পুরুষের নাম লেখা যায়। এটা অত্যন্ত জঘন্য এক মানসিকতা। এমন মানসিকতার কারণে পুরুষের লাম্পট্যের সামাজিক স্বীকৃতি মিলে যাচ্ছে।
পৃথিবীর অনেক দেশে ও অনেক ধর্মে কোনো কারণে মা-বাবা আলাদা হয়ে গেলে দুজনকেই অভিভাবক হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, যেন একজনের অনুপস্থিতিতে অন্যজন দায়িত্ব পালন করতে পারেন। কেউ যদি স্বেচ্ছায় তা গ্রহণ না করতে চান, সেটি তার বিষয়; আর দুজন একসঙ্গে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চাইলে তা পারিবারিক বা সামাজিকভাবে আলোচনা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে দেখা যায়, যিনি সন্তানের কোনো দায়িত্ব নিলেন না, শুধু কাগজে-কলমে মা অথবা বাবা হয়ে থাকলেন, সে ক্ষেত্রে সন্তান মহাবিপদে পড়ে যায়, উন্নত চিকিৎসা বা শিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যেতে চাইলে দুজনেরই সম্মতির প্রয়োজন হয়; আর যদি তাদের একজনকে না পাওয়া যায়, তাহলে দ্বারস্থ হতে হয় আদালতের।
আধুনিক যুগে নারীরা সব ক্ষেত্রে পারদর্শিতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন। এমনকি বিভিন্ন ইসলামিক দেশ কিংবা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে নারীরা ভূমিকা পালন করছেন। যুদ্ধক্ষেত্রে, মহাকাশ মিশনে অংশগ্রহণ করছেন। কিন্তু আইন এখনো নারীদের সন্তানের রক্ষণাবেক্ষণ ও অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে সমানাধিকার দিচ্ছে না। বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদের পর সন্তানের যৌথ হেফাজত ও অভিভাবকত্বের বিষয়টির আইনগত স্বীকৃতি আছে কিছু দেশে। এই স্বীকৃতি প্রথম মেলে সুইডেনে ১৯৭৬ সালে। এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত হচ্ছে, সন্তানের প্রতি বাবা-মা উভয়ের রয়েছে অধিকার। এটা তো অবশ্যই সত্য যে, সাধারণভাবে সন্তানের প্রতি মায়ের পাশাপাশি বাবার স্নেহ-ভালোবাসাও অসীম। পরিবর্তিত সমাজব্যবস্থায় সন্তানের যৌথ হেফাজতের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বটে। কিন্তু যদি একক অভিভাবকত্বের প্রশ্ন চলেই আসে, তাহলে উন্নত বিশ্বে বাবার আগে মাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। বাংলাদেশে যেমন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাকে সন্তানের হেফাজত ও অভিভাবকত্বের জন্য আইনি লড়াই করতে হয়, ঠিক উলটোভাবে পশ্চিমা দেশগুলোতে বাবাকে এমন অধিকারের দাবিতে আদালতে ঘুরতে হয়।
অভিভাবক হওয়ার অধিকার যদি মা-বাবার সমান থাকত, তাহলে কোনো একজন অভিভাবক মারা গেলে বা পালিয়ে গেলে অন্য একজন সহজে দায়িত্ব নিতে পারতেন। বাস্তবতা বিবেচনায় ও সময়ে দাবি অনুযায়ী অভিভাবকত্বের সেকেলে আইন বদলে ফেলার সময় এসেছে। মনে রাখা দরকার যে, মা শুধু জন্মদাত্রী নন, পালন-পোষণ, দায়িত্ব গ্রহণ, সব ব্যাপারে সন্তানের সঙ্গে তিনি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকেন। তাই অভিভাবক হিসেবে তারই নাম প্রথমে থাকা উচিত। যতই আমরা, ‘জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী’ বলি, অভিভাবক হিসেবে তাকে সামাজিক ও আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার স্বতঃস্ফূর্ত চেষ্টা দেখা যায় না।
মহামান্য হাইকোর্ট সব পরিস্থিতিতে অভিভাবক হিসেবে মায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠার রায় দিয়েছে। এখন দরকার সমাজ-মানস পরিবর্তন করা। আমাদের দেশে নারীর কর্র্তৃত্ব, নেতৃত্ব, অধিকার, অভিভাবকত্বকে সামাজিকভাবে মেনে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনো সৃষ্টি হয়নি। সমাজে পুরুষতন্ত্রান্ত্রিক চিন্তাভাবনা এখনো ছড়ি ঘুরিয়ে চলছে। সমাজের সবখানে ‘অভিভাবকত্ব’ ও ‘পৌরুষ’ আজও একই হুঁকোর নল নিয়ে টানাটানি করছে। এই অবস্থার আশু পরিবর্তন দরকার। স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে জাতীয় পরিচয়পত্র এবং শিক্ষা বা কর্মজীবনে যেখানেই দরকার, মায়ের নাম অভিভাবক হিসেবে প্রথমেই রাখতে হবে। ‘অভিভাবক’ কে? যিনি ব্যক্তি বা সম্পত্তির যতœ নিতে পারেন, নিরাপত্তা বিধান করতে পারেন। মা যদি সেই কাজে পারঙ্গম হন, তবুও তাকে কেন ‘অভিভাবক’ মানা হবে না?
লেখক: লেখক ও কলামিস্ট
আত্মহত্যা, আত্মহত্যার চেষ্টা, প্রবণতা বা চিন্তাভাবনা স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। এটি সরাসরি কোনো মানসিক রোগ না হলেও বেশ কিছু মানসিক রোগের শক্তিশালী উপসর্গ। ফলে একজন ব্যক্তি আত্মহত্যার আগে নিজের সম্পর্কে, অন্যের সম্পর্কে বা পৃথিবী সম্পর্কে যেভাবে চিন্তাভাবনা ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে সেটি সবসময় যৌক্তিক বা পূর্ণাঙ্গ চিত্র নাও হতে পারে। কোনো একটি পরিস্থিতি যত কঠিনই হোক, সেই পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এক বা একাধিক বিকল্প থাকে। কিন্তু মানসিকভাবে বিক্ষিপ্ত ও বিপর্যস্ত অবস্থায় মানুষের মস্তিষ্কের আবেগীয় অঞ্চল যতটা উদ্দীপ্ত থাকে, যৌক্তিক অঞ্চল ততটাই নিষ্ক্রিয় থাকে। ফলে সেই মুহূর্তে মানুষ সমস্যা সমাধানের যৌক্তিক ও সহায়ক রাস্তাগুলো দেখার বা আবিষ্কার করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে এবং মস্তিষ্কের আবেগীয় অঞ্চল দ্বারা তাড়িত হয়ে এলোমেলো কিংবা জীবন বিপন্নকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারে। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন আত্মহত্যা প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন বা তুচ্ছ করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। বিচ্ছিন্নতার এ শহরে লাভ নেই মৃত্যুর পর সামাজিক মাধ্যমে নানা মন্তব্য আর জ্ঞানগর্ভ কথা বলে। বরং আত্মহত্যার মতো ঘটনাগুলোর পেছনের কারণ অনুসন্ধান করে ফলপ্রসূ সমাধান প্রয়োজন। কারণ প্রতিটি প্রাণই অমূল্য এবং দেশের সম্পদ এই বিবেচনা করে সেই প্রাণের রক্ষায় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
শনিবার দেশ রূপান্তরের ‘মাসে ৪৪ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা’ প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, পরিবারের সঙ্গে অভিমান, প্রেমের সম্পর্কে টানাপড়েন, পারিবারিক কলহ, ইভটিজিং ও যৌন হয়রানি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যাপ্রবণ করে তুলছে। এ ছাড়া আপত্তিকর ছবি ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া, গেম খেলতে বাধা দেওয়া, পরীক্ষায় অকৃতকার্য, মোবাইল ফোন ও মোটরসাইকেল কিনে না দেওয়াসহ পড়াশোনার চাপ অনুভব করায় কোনো কোনো শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। ২০২২ সালের সারা দেশে ৪৪৬ জন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৮৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। গড় হিসাবে যা দাঁড়ায় প্রতি মাসে প্রায় ৪৪.৩৩ জন। সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে তৈরি করা এক সমীক্ষার এমন তথ্য উঠে এসেছে। এই সমীক্ষামতে, মোট আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীর মধ্যে নারী ৬৩ দশমিক ৯০ শতাংশ। দেশের আটটি বিভাগে স্কুল ও কলেজপড়–য়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে ঢাকা বিভাগে ২৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এরপর চট্টগ্রামে ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ, রাজশাহীতে ১৬ দশমিক ৮১ শতাংশ, খুলনায় ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ, রংপুরে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ, বরিশালে ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৬ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং সিলেটে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।
বিভিন্ন প্রতিবেদন এবং জরিপের তথ্যানুযায়ী দেখা যাচ্ছে, ২০২২ সালে ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী সবচেয়ে বেশি ৪০৫ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। যা মোট আত্মহত্যাকারীর ৭৬ দশমিক ১২ শতাংশ। বয়ঃসন্ধিকালে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মানিয়ে নিতে প্রতিকূল পরিবেশের মুখোমুখি হতে হয় বলেই এ বয়সে আত্মহত্যার হার বেশি বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। এছাড়া পারিবারিক মান-অভিমান তাদের সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ করে তোলে। ২৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ স্কুল ও কলেজশিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে অভিমান করে। এদের বড় অংশেরই অভিমান হয়েছে পরিবারের সঙ্গে। খেয়াল করা দরকার, শিশু-কিশোরদের মন সাধারণত ভঙ্গুর প্রকৃতির হয়। এ বয়সে ছোট ছোট বিষয় তাদের আন্দোলিত করে। বয়ঃসন্ধিকালে মানসিক বিকাশের সঙ্গে অনেকেই খাপ খাওয়াতে পারে না। ফলে তাদের প্রত্যাশার ক্ষেত্রে ছোটখাটো ঘাটতিও তাদের আত্মহত্যার মতো বড় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টরা বলছেন, বয়ঃসন্ধিকালের সময়টি পার করা কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যের যতœ এবং সচেতনতা তৈরির কোনো বিকল্প নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা মোকাবিলায় সংস্থাটি শিক্ষার্থীদের হতাশা, একাকিত্ব ও নেতিবাচক ভাবনা থেকে দূরে রাখতে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার সুযোগ বৃদ্ধি করা, মানসিক বিকাশ এবং তাদের সহানুভূতির সঙ্গে শুনতে ও বুঝতে অভিভাবকদের জন্য প্যারেন্টিং কার্যক্রম চালু করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষক-কর্মচারীদের আচরণ ও পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে কৌশলী ও সহানুভূতিশীল হতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং প্রতিটি আত্মহত্যার ঘটনায় পরিবারের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে ও দায় বৃদ্ধিতে তাদের আইনি বাধ্যবাধকতার অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।
কবি, ঔপন্যাসিক ও সম্পাদক অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত। পৈতৃক নিবাস মাদারীপুর। আইনজীবী বাবা রাজকুমার সেনগুপ্তের কর্মস্থল ছিল নোয়াখালীতে। অচিন্ত্যকুমার ১৯০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সেখানেই জন্মগ্রহণ করেন। ১৯১৬ সালে বাবার মৃত্যুর পর তিনি কলকাতায় বড় ভাই জিতেন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের কাছে চলে যান। আশুতোষ কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্সসহ বিএ পাসের পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ও ল’ পাস করেন। অস্থায়ী মুন্সেফ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে সাবজজ, জেলা জজ ও ল’ কমিশনের স্পেশাল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্রের পর কল্লোল যুগের যেসব লেখক সাহিত্য জগতে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করেন, অচিন্ত্যকুমার তাদের অন্যতম। ১৯২১ সালে প্রবাসী পত্রিকায় ‘নীহারিকা দেবী’ ছদ্মনামে তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। উপন্যাস ও ছোটগল্প রচনায় বিশেষ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। প্রথম উপন্যাস ‘বেদে’। তার গ্রন্থসংখ্যা প্রায় ৭০। ১৯২৫ সালে তিনি কল্লোল পত্রিকা প্রকাশনার দায়িত্ব নেন। তার স্মৃতিচারণামূলক রচনা ‘কল্লোল যুগ’ বেশ সাড়া জাগায়। সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ‘জগত্তারিণী পুরস্কার’, ‘রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার’ ও ‘শরৎচন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার’ লাভ করেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ জানুয়ারি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত মৃত্যুবরণ করেন।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।